৫৪ : ৩১
اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ صَیۡحَۃً وَّاحِدَۃً فَكَانُوۡا كَهَشِیۡمِ الۡمُحۡتَظِرِ ﴿۳۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. নিশ্চয় আমরা তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম এক বিকট আওয়াজ; ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় প্ৰস্তুতকারীর বিখণ্ডিত শুষ্ক খড়ের ন্যায়।(১)
(১) যারা গবাদি পশু লালন পালন করে তারা পশুর খোয়াড়ের সংরক্ষণ ও হিফাজতের জন্য কাঠ ও গাছের ডাল পালা দিয়ে বেড়া তৈরী করে দেয়। এ বেড়ার কাঠ ও গাছ গাছালীর ডালপালা আস্তে আস্তে শুকিয়ে ঝরে পড়ে এবং পশুদের আসা যাওয়ায় পদদলিত হয়ে করাতের গুড়ার মত হয়ে যায়। সামূদ জাতির দলিত মথিত লাশসমূহকে করাতের ঐ গুড়োর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) নিশ্চয় আমি তাদের উপর এক বিরাট আওয়াজ প্রেরণ করলাম, ফলে তারা খোয়াড় প্রস্তুতকারীর চূর্ণ-বিচূর্ণ ডাল-পাতার মত হয়ে গেল। [1]
[1] حَظِيْرَةٌ এর অর্থ, مَحْظُوْرَةٌ খোয়াড়; যা কাঁটাযুক্ত শুকনো ডালপালা বা কাষ্ঠখন্ড দিয়ে পশুর সংরক্ষণের জন্য তৈরী করা হয়। مُحْتَظِر হল ‘ইসম ফা-য়েল’ (কর্তৃপদ), অর্থঃ صَاحِبُ الْحَظِيْرَةِ (খোয়াড়-ওয়ালা)। আর هَشِيْمٌ হল শুকনো ঘাস বা কর্তিত শুকনো ফসলাদি। অর্থাৎ, যেভাবে একজন বেড়া নির্মাতার শুকনো কাঠের টুকরো ও ডালপালাগুলো লাগাতার পদতলে পিষ্ট হওয়ার কারণে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়, তারাও ঐভাবে আমার আযাবে চূর্ণ হয়ে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩২
وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِنۡ مُّدَّكِرٍ ﴿۳۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. আর অবশ্যই আমরা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৩
كَذَّبَتۡ قَوۡمُ لُوۡطٍۭ بِالنُّذُرِ ﴿۳۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. লুত সম্প্রদায় মিথ্যারোপ করেছিল সতর্ককারীদের প্রতি,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) লূত সম্প্রদায় মিথ্যা মনে করেছিল সতর্ককারীদেরকে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৪
اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ حَاصِبًا اِلَّاۤ اٰلَ لُوۡطٍ ؕ نَجَّیۡنٰهُمۡ بِسَحَرٍ ﴿ۙ۳۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. নিশ্চয় আমরা তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম পাথর বহনকারী প্রচণ্ড ঝাটিকা, কিন্তু লূত পরিবারের উপর নয়; তাদেরকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) নিশ্চয় আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়,[1] কিন্তু লূত পরিবারের উপর নয়; তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম ভোর রাতে--[2]
[1] অর্থাৎ, এমন হাওয়া প্রেরণ করেছিলাম, যা তাদের উপর কাঁকর নিক্ষেপ করছিল। অর্থাৎ, তাদের জনপদকে তাদের উপর এমনভাবে উল্টে দেওয়া হয়েছিল যে, তার উপরের অংশ নীচে এবং নীচের অংশ উপরে করে দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল। যেমন, সূরা হুদ (৭৭-৮৩ আয়াত) প্রভৃতিতে এর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
[2] ‘লূত পরিবার’ বলতে স্বয়ং লূত (আঃ) এবং তাঁর উপর ঈমান আনয়নকারী ব্যক্তিবর্গ। তবে এদের মধ্যে লূত (আঃ)-এর স্ত্রী শামিল ছিল না। কারণ, সে ‘মু’মিনা’ ছিল না। অবশ্য লূত (আঃ)-এর দুই কন্যা তাঁর সাথে ছিলেন। যাঁরা মুক্তি লাভে ধন্য হয়েছিলেন। سحر বলতে রাতের শেষ প্রহর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৫
نِّعۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا ؕ كَذٰلِكَ نَجۡزِیۡ مَنۡ شَكَرَ ﴿۳۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. আমাদের পক্ষ থেকে অনুগ্রহস্বরূপ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আমরা এভাবেই তাকে পুরস্কৃত করে থাকি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) আমার বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ;[1] যারা কৃতজ্ঞ আমি এভাবেই তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
[1] অর্থাৎ, তাদেরকে আযাব থেকে মুক্তি দেওয়াটা ছিল তাদের উপর আমার কৃত দয়া ও অনুগ্রহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৬
وَ لَقَدۡ اَنۡذَرَهُمۡ بَطۡشَتَنَا فَتَمَارَوۡا بِالنُّذُرِ ﴿۳۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. আর অবশ্যই লুত তাদেরকে সতর্ক করেছিল আমাদের কঠোর পাকড়াও সম্পর্কে; কিন্তু তারা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা(১) শুরু করল।
(১) আয়াতের অন্য অর্থ হচ্ছে, তারা সতর্কবাণী সম্পর্কে সন্দেহ করেছিল এবং মিথ্যারোপ করেছিল। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) সে (লূত) আমার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করেছিল,[1] কিন্তু তারা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতন্ডা শুরু করল।[2]
[1] অর্থাৎ, আযাব আসার পূর্বে আমার শক্ত পাকড়াও থেকে তাদেরকে ভয় দেখিয়েছিলেন।
[2] কিন্তু তারা তার কোন পরোয়া করেনি, বরং সন্দেহ পোষণ করেছিল এবং ভীতি প্রদর্শনকারীর সাথে বিবাদে লিপ্ত হল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৭
وَ لَقَدۡ رَاوَدُوۡهُ عَنۡ ضَیۡفِهٖ فَطَمَسۡنَاۤ اَعۡیُنَهُمۡ فَذُوۡقُوۡا عَذَابِیۡ وَ نُذُرِ ﴿۳۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. আর অবশ্যই তারা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে অসদুদ্দেশ্যে দাবি করল(১), তখন আমরা তাদের দৃষ্টি শক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং ভীতির পরিণাম।
(১) رَاوَدَ ও مُرَاوَدَةٌ শব্দের অর্থ কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থকরার জন্যে কাউকে ফুসলানো। কওমে লুত বালকদের সাথে অপকর্মে অভ্যস্ত ছিল। আল্লাহ তা'আলা তাদের পরীক্ষার জন্যেই কয়েকজন ফেরেশতাকে সুশ্ৰী বালকের বেশে প্রেরণ করেন। দুৰ্বত্তরা তাদের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্যে লুত আলাইহিস সালাম-এর গৃহে উপস্থিত হয়। লুত আলাইহিস সালাম দরজা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তারা দরজা ভেঙে অথবা প্রাচীর টপকিয়ে ভিতরে আসতে থাকে। লুত আলাইহিস সালাম বিব্ৰতবোধ করলে ফেরেশতাগণ তাদের পরিচয় প্রকাশ করে বললেনঃ আপনি চিন্তিত হবেন না। এরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমরা তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্যেই আগমন করেছি।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) তারা তার নিকট হতে তার মেহমানদের ব্যাপারে ফুসলাতে লাগল,[1] তখন আমি তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিলাম[2] (এবং বললাম,) আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম!
[1] বা প্ররোচিত করতে লাগল কিংবা লূত (আঃ)-এর নিকট তাঁর মেহমানদেরকে চাইতে লাগল। অর্থাৎ, যখন লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায় জানতে পারল যে, তাঁর কাছে কিছু সুন্দর সুন্দর নব যুবক এসেছে (যাঁরা প্রকৃতপক্ষে ফিরিশতা ছিলেন এবং তাদেরকে আযাব দেওয়ার জন্যই তাঁরা এসেছিলেন), তখন তারা লূত (আঃ)-এর কাছে দাবী করল যে, ঐ অতিথিদেরকে আমাদের হাওয়ালা করে দেওয়া হোক। যাতে আমরা আমাদের বিকৃত যৌনক্ষুধা তাদের দ্বারা নিবৃত্ত করি।
[2] বলা হয় যে, এই ফিরিশতাগণ ছিলেন জিবরীল, মীকাঈল এবং ইস্রাফীল (আলাইহিমুসসালাম)। যখন তারা কুকর্ম করার উদ্দেশ্যে ফিরিশতাদের (অতিথিদের)-কে সঙ্গে নেওয়ার জন্য বেশী পীড়াপীড়ি করতে লাগল, তখন জিবরীল (আঃ) তাঁর ডানার একটি অংশ তাদের উপর মারলেন; যার ফলে তাদের চোখ বেরিয়ে গেল। কেউ কেউ বলেছেন, শুধু চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয়েছিল। যাই হোক ব্যাপক আযাব আসার পূর্বে বিশেষ এই আযাব তাদের উপর এসেছিল, যারা কুমতলব নিয়ে লূত (আঃ)-এর নিকট এসেছিল। চোখ থেকে বা দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা বাড়ী পৌঁছে ছিল। অতঃপর ভোর সকালে সেই ব্যাপক আযাবে ধ্বংস হয়ে গেল, যা সমগ্র জাতির জন্য এসেছিল। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৮
وَ لَقَدۡ صَبَّحَهُمۡ بُكۡرَۃً عَذَابٌ مُّسۡتَقِرٌّ ﴿ۚ۳۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. আর অবশ্যই প্রত্যুষে তাদের উপর বিরামহীন শাস্তি আঘাত করেছিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) ভোর সকালে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল। [1]
[1] অর্থাৎ, ভোর সকালে তাদের নিকট বিরামহীন শাস্তি এসে গেল। مستقر (বিরামহীন)এর অর্থ, তাদের উপর অবতীর্ণ এমন আযাব, যা তাদেরকে ধ্বংস না করে ছাড়েনি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৩৯
فَذُوۡقُوۡا عَذَابِیۡ وَ نُذُرِ ﴿۳۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. সুতরাং আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং ভীতিপ্রদর্শনের পরিণাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) এবং (আমি বললাম,) আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম!
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৪ : ৪০
وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِنۡ مُّدَّكِرٍ ﴿۴۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. আর অবশ্যই আমরা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।[1] অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?
[1] এই সূরার মধ্যে تيسير قرآن তথা কুরআন সহজ করে দেওয়ার কথাটা বারবার উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল, এই কুরআন বোঝা ও তা মুখস্থ করা সহজ বানিয়ে দেওয়া মহান আল্লাহর একটি বড় অনুগ্রহ। তাই তাঁর কৃতজ্ঞতা থেকে উদাসীন হওয়া মানুষের উচিত নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান