-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি তাদের কাজের প্রতিফল দিতে পারেন যারা মন্দ কাজ করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন যারা সৎকাজ করে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার। [1]
[1] অর্থাৎ, হিদায়াত ও ভ্রষ্টতা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে চান হিদায়াত দানে ধন্য করেন এবং যাকে চান তাকে ভ্রষ্টতার গহ্বরে পতিত করেন। আর এটা এই জন্য, যাতে তিনি সৎ লোকদেরকে তাদের সৎকর্মের এবং অসৎ লোকদেরকে তাদের অসৎকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল দেন। (فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأرضِ وَللهِ مَا) এই বাক্যটি পূর্বাপরের সাথে সম্পর্কহীন পৃথক বাক্য (জুমলাহ মু’তারিযাহ) এবং لِيَجْزِيَ এর সম্পর্ক পূর্বে আলোচিত কথার সাথে। (ফাতহুল কাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে, ছোটখাট অপরাধ ব্যতীত(১)৷ নিশ্চয় আপনার রবের ক্ষমা অপরিসীম; তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত—যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্ৰূণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্ৰশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন তার সম্পর্কে যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে।(২)
(১) এতে اللمم শব্দের মাধ্যমে ব্যতিক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। এই ব্যতিক্রমের সারমর্ম হচ্ছে, ছোটখাট গোনাহে লিপ্ত হওয়া তাদেরকে সৎকর্মর উপাধি থেকে বঞ্চিত করে না। اللمم শব্দের তাফসীর প্রসঙ্গে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের কাছ থেকে দু'রকম উক্তি বর্ণিত আছে। (এক) এর অর্থ সগীরা অর্থাৎ ছোটখাট গোনাহ। সূরা আন-নিসার ৩১ নং আয়াতে একে سيئات বলা হয়েছে। এই উক্তি ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে ইবনে-কাসীর বর্ণনা করেছেন। (দুই) এর অর্থ সেসব গোনাহ, যা কদাচিৎ সংঘটিত হয়, অতঃপর তা থেকে তওবা করত চিরতরে বর্জন করা হয়। [ইবন কাসীর] এই উক্তিও ইবনে-কাসীর প্রথমে মুজাহিদ থেকে এবং পরে ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। [দেখুন: বুখারী: ৬৬১২]
(২) أجنة শব্দটি جنين এর বহুবচন। এর অর্থ গর্ভস্থত ভ্ৰূণ। [কুরতুবী] আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “তোমরা নিজেদের পবিত্ৰতা দাবি করো না। কারণ, আল্লাহ-ই ভাল জানেন কে কতটুকু মুত্তাকী”। শ্রেষ্ঠত্ব তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল, বাহ্যিক কাজ-কর্মের ওপর নয়। তাকওয়াও তা-ই ধর্তব্য যা মৃত্যু পর্যন্ত কায়েম থাকে। যয়নব বিনতে আবু সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর পিতামাতা তার নাম রেখেছিলেন ‘বাররা’ যার অর্থ সৎকর্মপরায়ণ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করে এই নাম রাখতে নিষেধ করেন। কারণ, এতে সৎ হওয়ার দাবি রয়েছে। অতঃপর তার নাম পরিবর্তন করে যায়নব রাখা হয়। [মুসলিম: ১৮, ১৯]। অনরূপভাবে, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে অন্য এক ব্যক্তির প্রশংসা করলে তিনি নিষেধ করে বললেনঃ তুমি যদি কারও প্রশংসা করতেই চাও, তবে এ কথা বলে করঃ আমার জানা মতে এই ব্যক্তি সৎ আল্লাহভীরু। সে আল্লাহর কাছেও পাক পবিত্র কিনা আমি জানি না। [বুখারী: ২৬৬২, মুসলিম: ৬৫, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৪১, ৪৫]
এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে একটি বর্ণনা এসেছে, সাবেত ইবনুল হারিস আনসারী বলেন, ইয়াহূদীদের কোন সন্তান ছোট অবস্থায় মারা গেলে তারা তাকে বলত, সে সিদ্দীকীনের মর্যাদায় পৌছে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ কথা পৌছলে তিনি বললেন, ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে। কোন সন্তান তার মায়ের পেটে থাকতেই তার সৌভাগ্যবান হওয়া বা দূৰ্ভাগা হওয়া লিখে নেয়া হয়েছে। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী: ২/৮১, ৮২ হাদীস নং ১৩৬৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া[1] গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকে।[2] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর।[3] অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না।[4] তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে।
[1] لَمَمٌ এর আভিধানিক অর্থ অল্প ও ছোট হওয়া। আর এ থেকেই বলা হয়, أَلَمَّ بالمكان অর্থাৎ, গৃহে অল্পক্ষণ ছিল। ألَمَّ بالطَّعَام অল্প একটু খেয়েছে। অনুরূপ কোন জিনিসকে কেবল স্পর্শ করা বা তার নিকটবর্তী হওয়া অথবা কোন কাজকে লাগাতার নয়; বরং কেবল এক বা দু’বার করা কিংবা অন্তরে কেবল খেয়ালের উদয় হওয়া, এ সবকেই لمم বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) لمم এর এই ভাষাগত প্রয়োগ ও তার অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই তার অর্থ করা হয় ‘সাগীরা গুনাহ’ (ছোট-খাট পাপ)। অর্থাৎ, কোন বড় পাপের প্রাথমিক পর্যায়ের জিনিস করে ফেলা। তবে বড় পাপ থেকে বিরত থাকা অথবা কোন পাপ এক-দু’বার করে ফেলা অতঃপর চিরতরে তা বর্জন করা কিংবা কোন পাপ করার কথা কেবল মনে ভেবে নেওয়া; কিন্তু কার্যতঃ তার ধারে-পাশেও না যাওয়া। এগুলো ছোট গুনাহ বলে গণ্য হবে। যেগুলো মহান আল্লাহ বড় পাপ থেকে বিরত থাকার কারণে ক্ষমা করে দিবেন।
[2] كَبَائِر হল كَبِيْرَةٌ এর বহুবচন। কাবীরা গোনাহ, গুরুতর পাপ তথা মহাপাপের সংজ্ঞায় মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে এমন সব পাপকে কাবীরা তথা মহাপাপ বলা হয়, যার উপর জাহান্নামের হুমকি এসেছে অথবা যে পাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিন্দাবাদ কুরআন ও হাদীসে আলোচিত হয়েছে (অথবা যে পাপের কারণে পাপীকে অভিশাপ করা হয়েছে)। অনুরূপ উলামাগণ এ কথাও বলেছেন যে, অব্যাহতভাবে কোন ছোট পাপ করতে থাকলে তা মহাপাপে পরিণত হয়ে যায়। এ ছাড়া ‘কাবীরা’ গুনাহের অর্থ ও তার প্রকৃতত্বে যেমন মতভেদ রয়েছে, অনুরূপ মতভেদ তার সংখ্যার ব্যাপারেও রয়েছে। কোন কোন আলেম ঐ মহাপাপসমূহকে একটি পুস্তিকার মধ্যে একত্রিতও করেছেন। যেমন, ইমাম যাহাবী (রঃ) রচিত ‘কিতাবুল কাবাইর’ এবং ফকীহ হাইতামী রচিত ‘আয্-যাওয়াজির’ প্রভৃতি। فَوَاحِشُ হল فَاحِشَةٌ এর বহুবচন। অশ্লীল কাজ। যেমন, ব্যভিচার, সমলিঙ্গী ব্যভিচার ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেছেন, যেসব পাপের জন্য দন্ডবিধি আছে, সেগুলো সব فواحش এর অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি অশ্লীলতার দৃশ্যাদি যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সেহেতু আধুনিক সভ্যতায় এটাকেই সভ্যতা ও ফ্যাশন মনে করা হচ্ছে। এমন কি মুসলিমরাও ঐ অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার এই সভ্যতাকে লাফ দিয়ে লুফে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, আজ তাদের ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, ভিসিপি, ভিসিডি ইত্যাদি ব্যাপক হয়ে পড়েছে। মহিলারা কেবল পর্দা ত্যাগ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং সুন্দরভাবে সাজগোজ করে (অর্ধনগ্নাবস্থায়) রূপ-সৌন্দর্য বিতরণ করতে করতে বাইরে বেড়ানোটাকে নিজেদের একটা ফ্যাশন ও অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের যৌথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যৌথ অফিস-আদালত, যৌথ সভাসমিতি এবং (পার্ক, সমুদ্র-সৈকত প্রভৃতি) আরো বিভিন্ন স্থানে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা ও দ্বিধা-সংকোচহীন সংলাপ দিনের দিন বেড়ে চলেছে। (বেড়ে চলেছে অবৈধ ভালবাসা ও তথাকথিত পছন্দ করে বিয়ে করার নামে ‘লাভম্যারেজ’ ও ‘লিভ টুগ্যাদার’।) অথচ এ সবই ‘ফাওয়াহিশ’ (অশ্লীলতা)এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে যাদের ক্ষমা করার কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তারা মহাপাপ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে; তাতে তারা লিপ্ত থাকবে না।
[3] أ جِنَّةٌহল جَنِيْنٌ এর বহুবচন। (এর মূল অর্থঃ গুপ্ত) গর্ভস্থ ভ্রূণকে جَنِيْنٌ বলা হয়। কারণ, তা লোক চক্ষু থেকে গোপনে থাকে।
[4] অর্থাৎ, তাঁর নিকট যখন তোমাদের কোন অবস্থা ও আচরণ লুক্কায়িত নেই; এমনকি তোমরা যখন মাতৃগর্ভে ছিলে, যেখানে তোমাদেরকে দেখার কারো সাধ্য ছিল না, সেখানেও তিনি তোমাদের যাবতীয় অবস্থা ও খবরাখবর সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তখন আত্মপ্রশংসা করার এবং নিজেদের মুখে নিজেদের সততার বর্ণনা দেওয়ার দরকার কি? অর্থাৎ, এ রকম করো না। যাতে লোক দেখানো কাজ থেকে তোমরা বাঁচতে পার।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. আপনি কি দেখেছেন সে ব্যক্তিকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) তুমি কি দেখেছ সে ব্যক্তিকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়?(১)
(১) أكدى শব্দটি كدية থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ সেই প্রস্তরখণ্ড, যা কূপ অথবা ভিত্তি খনন করার সময় মৃত্তিকা গৰ্ভ থেকে বের হয় এবং খননকার্যে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এখানে أكدى এর অর্থ এই যে, প্রথমে কিছু দিল, এরপর হাত গুটিয়ে নিল। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করে অতঃপর তা পরিত্যাগ করে অথবা শুরুতে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে কিছুটা আকৃষ্ট হয়, অতঃপর আনুগত্য বর্জন করে বসে। [মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়? [1]
[1] অর্থাৎ, অল্প দিয়ে হাত টেনে নিল অথবা অল্প কিছু আনুগত্য করে পিছে সরে পড়ল। أَكْدَى এর মূল অর্থ হল, মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শক্ত কোন পাথর এসে পড়লে আর খোঁড়া সম্ভব না হওয়া, পরিশেষে খোঁড়ার কাজ ছেড়ে দিলে বলা হয়, أَكْدَى এখান থেকেই তার ব্যবহার এমন ব্যক্তির ব্যাপারে হতে লাগল, যে কাউকে কিছু দেয়, কিন্তু পূর্ণরূপে দেয় না। অনুরূপ কোন কাজ আরম্ভ করে, কিন্তু তা সমাপ্ত করে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. তার কাছে কি গায়েবের জ্ঞান আছে যে, সে প্রত্যক্ষ করে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) তার কি অদৃশ্যে জ্ঞান আছে যে, সে (সবকিছু) দেখতে পাচ্ছে? [1]
[1] অর্থাৎ, সে কি দেখতে পাচ্ছে যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করলে তার ধন-সম্পদ শেষ হয়ে যাবে? না, অদৃশ্যের এই জ্ঞান তার নেই। বরং আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকার কারণ কেবলমাত্র কৃপণতা, বিষয়াসক্তি ও পরকালের প্রতি অবিশ্বাস। আর আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতার কারণও এগুলোই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. নাকি তাকে জানানো হয়নি যা আছে মূসার সহীফায়,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) তাকে কি অবগত করা হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. এবং ইবরাহীমের সহীফায়(১), যিনি পূর্ণ করেছিলেন (তার অঙ্গীকার)(২)?
(১) মূসা আলাইহিস সালামের সহীফা বলতে তাওরাতকে বোঝানো হয়েছে, কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যার দু'টি স্থানে ইব্রাহীমের সহীফার শিক্ষাসমূহের কোন কোন অংশ উদ্ধৃত হয়েছে। তার একটি স্থান হলো এটি এবং অপর স্থানটি হলো সূরা আল-আ’লার শেষ কয়েকটি আয়াত। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
(২) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পূর্বে ইসলামের ত্রিশ অংশের পূর্ণ বাস্তবায়ন কেউ করতে পারেনি, এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, “আর ইবরাহীম যিনি পূর্ণ করেছেন।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৭০]
রেসালতের কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সংশোধনও এর পর্যায়ভুক্ত। এক হাদীস দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ হে বনী আদম, দিনের শুরুতে আমার জন্যে চার রাকাআত সালাত পড়, আমি দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।” [তিরমিযী: ৪৭৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে পালন করেছিল তার দায়িত্ব?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. তা এই যে(১), কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না,
(১) এ আয়াত থেকে তিনটি বড় মূলনীতি পাওয়া যায়। কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তির শাস্তি অপরের ঘাড়ে চাপানো হবে না এবং অপরের শাস্তি নিজে বরণ করার ক্ষমতাও কারও হবে না। [দেখুন, মুয়াসসার] অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, (وَإِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ) [সূরা ফাতির: ১৮] অর্থাৎ কোন শক্তি যদি পাপের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়ে অপরকে অনুরোধ করে যে, আমার কিছু বোঝা তুমি বহন কর, তবে তার বোঝার কিয়দংশও বহন করার সাধ্য কারও হবে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) তা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে(১),
(১) প্রত্যেক ব্যক্তি যা পরিণতি ভোগ করবে তা তার কৃতকর্মেরই ফল। চেষ্টা সাধনা ছাড়া কেউ-ই কিছু লাভ করতে পারে না। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষ যখন মরে যায় তখন তিনটি কর্ম ব্যতীত আর কোন কাজ তার জন্য বাকী থাকে না। সাদকায়ে জারিয়া বা উপকৃত হওয়ার মত জ্ঞান অথবা এমন সৎ সন্তান যে তার জন্য দোআ করে”। [মুসলিম: ১৬৩১]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। [1]
[1] অর্থাৎ, যেরূপ কেউ কারো পাপের জন্য দায়ী হবে না, অনুরূপ পরকালে প্রতিদানও সে সেই জিনিসের পাবে, যাতে থাকবে তার নিজস্ব মেহনত ও পরিশ্রম। প্রকাশ থাকে যে, এই প্রতিদানের সম্পর্ক পরকালের সাথে, দুনিয়ার সাথে নয়। যেমন, কিছু সমাজবাদী শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ এই অর্থ বুঝিয়ে বলে থাকেন যে, কেউ অপর ব্যক্তিকে জমি চাষ করিয়ে উপার্জন করতে পারবে না। অনুরূপ অপর ব্যক্তিকে ঘর ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। (অথবা সেবাপার্জিত সম্পদ ছাড়া অন্য সম্পদে তার অধিকার নেই। অথচ উত্তরাধিকারসূত্রে তারাও সম্পদের মালিক হয়ে ও করে থাকেন।) পক্ষান্তরে এই আয়াতকে দলীল বানিয়ে যে উলামাগণ বলেছেন যে, কুরআন-খানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে না, তাঁদের কথা ঠিক। কারণ, এ আমল না মৃত ব্যক্তি করে, আর না এতে তার কোন পরিশ্রম থাকে। আর এই জন্য নবী করীম (সাঃ) তাঁর উম্মতকে মৃতদের জন্য কুরআন-খানী করার প্রতি না কোন উৎসাহ দান করেছেন, আর না সুস্পষ্ট অথবা অস্পষ্ট কোন উক্তির মাধ্যমে এর প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন।
অনুরূপ সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-দের থেকেও এ কাজ বিধেয় হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এ কাজ কোন ভাল কাজ হলে, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণ তা অবশ্যই অবলম্বন করতেন। পক্ষান্তরে যাবতীয় ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত কাজ আছে, তার জন্য সুস্পষ্ট দলীল থাকা অত্যাবশ্যক। এ সবে (ব্যক্তিগত) মত ও অনুমান চলে না। হ্যাঁ দু’আ ও দান-খয়রাতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে। এ ব্যাপারে সকল উলামা একমত। কেননা, এটা বিধানদাতার পক্ষ থেকে সুসাব্যস্ত। আর যে হাদীসে মৃত্যুর পর তিনটি জিনিসের নেকী অব্যাহত থাকার কথা এসেছে, তো সেটাও প্রকৃতপক্ষে মানুষের নিজেরই আমল যা কোন না কোনভাবে তার মৃত্যুর পরেও জারী বা চালু থাকে। সন্তানদেরকে নবী করীম (সাঃ) মানুষের নিজস্ব উপার্জন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। (সুনানে নাসাঈ, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়) ‘সাদকায়ে জারিয়াহ’ (প্রবহমান দান) ওয়াকফের ন্যায় মানুষের নিজস্ব কীর্তিসমূহ। আল্লাহ বলেন,(وَنَكتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُم) ‘‘আমিই তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি।’’ অনুরূপ মানুষের মাঝে যে জ্ঞানের সে প্রচার-প্রসার করেছে এবং মানুষ যার অনুসরণ করেছে, সেটাও তার প্রচেষ্টা ও তারই আমল। আর নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করে, তার জন্য রয়েছে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব। এতে তাদের কারো সওয়াব এতটুকু পরিমাণও হ্রাস করা হয় না।’’ (মুসলিম, আবূ দাঊদ) কাজেই এই হাদীস আয়াতের পরিপন্থী বা বিরোধী নয়। (ইবনে কাসীর)
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. আর এই যে, তার প্রচেষ্টার ফল শীঘ্রই দেখা যাবে—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই তাকে দেখানো হবে। [1]
[1] অর্থাৎ, দুনিয়াতে সে ভাল-মন্দ যাই করেছে; গোপনে করে থাকুক বা প্রকাশ্যে, কিয়ামতের দিন তা সব সামনে এসে যাবে এবং তার উপর তাকে পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান