بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران আয়াতঃ ২০০ মাদানী
৩ : ৩১ قُلۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡكُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳۱﴾
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونی یحببكم الله و یغفر لكم ذنوبكم و الله غفور رحیم ﴿۳۱﴾
• বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

-আল-বায়ান

• বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসেন ও তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করেন; এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।

-মুজিবুর রহমান

• Say, [O Muhammad], "If you should love Allah, then follow me, [so] Allah will love you and forgive you your sins. And Allah is Forgiving and Merciful."

-Sahih International

৩১. বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর(১), আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্‌ অত্যান্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(১) ভালবাসা একটি গোপন বিষয়। কারো প্রতি কারো ভালবাসা আছে কি না, অল্প আছে কি বেশী আছে, তা জানার একমাত্র মাপকাঠি হল, অবস্থা ও পারস্পরিক ব্যবহার দেখে অনুমান করা অথবা ভালবাসার চিহ্ন ও লক্ষণাদি দেখে জেনে নেয়া। যারা আল্লাহকে ভালবাসার দাবীদার এবং আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার আকাঙ্খী, আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ভালবাসার মাপকাঠি তাদের বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ জগতে যদি কেউ আল্লাহর ভালবাসার দাবী করে, তবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণের কষ্টিপাথরে তা যাচাই করে দেখা অত্যাবশ্যকীয়। এতে আসল ও মেকী ধরা পড়বে। যার দাবী যতটুকু সত্য হবে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে ততটুকু যত্নবান হবে এবং তার শিক্ষার আলোকে পথের মশালরূপে গ্রহণ করবে।

পক্ষান্তরে যার দাবী দুর্বল হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে তার দুর্বলতা সেই পরিমানে পরিলক্ষিত হবে। ভালবাসা অনুসারে মানুষের হাশরও হবে। হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এর জন্য কি তৈরী করেছ? লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন সালাত, সাওম ও সাদকা করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালবাস”। [বুখারী: ৬১৭১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর।[1] ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। [2] বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

[1] ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই দাবী ছিল, আমরা আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসি এবং মহান আল্লাহ আমাদেরকে ভালবাসেন। বিশেষ করে খ্রিষ্টানরা ঈসা এবং তাঁর মা মারয়্যাম (আলাইহিমাসসালাম)-এর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসায় এত বাড়াবাড়ি করল যে, তাঁদেরকে উপাস্যের আসনে বসিয়ে দিল। আর এটাও তারা এই মনে করে করত যে, এর দ্বারা তারা আল্লাহর নৈকট্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা লাভে ধন্য হতে পারবে। মহান আল্লাহ বললেন, কেবল মৌখিক দাবী এবং মনগড়া তরীকায় আল্লাহর ভালবাসা এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না। এ সব লাভ করার পথ তো একটাই। আর তা হল, শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনা এবং তাঁর অনুসরণ করা। এই আয়াতে সমস্ত ভালবাসার দাবীদারদের জন্য একটি পথই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অতএব আল্লাহর ভালবাসার অনুসন্ধানী যদি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসরণের মাধ্যমে তা অনুসন্ধান করে, তাহলে অবশ্যই সে সফল হবে এবং স্বীয় দাবীতে সত্য প্রমাণিত হবে। অন্যথা সে মিথ্যুক হবে এবং উদ্দেশ্য হাসিলেও ব্যর্থ হবে। নবী করীম (সাঃ)-এর উক্তিও হল, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল, যে কাজের নির্দেশ আমি দিইনি, তার সে কাজ প্রত্যাখ্যাত।’’ (বুখারী, মুসলিম) অর্থাৎ, রসূল (সাঃ)-এর প্রদর্শিত তরীকা বহির্ভূত আমল প্রত্যাখ্যাত হবে; তথা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

[2] অর্থাৎ, রসূল (সাঃ)-এর অনুসরণ করার কারণে কেবল তোমাদের পাপই ক্ষমা করা হবে না, বরং তোমরা আল্লাহর ভালবাসার পাত্র হয়ে যাবে। আর কোন মানুষের আল্লাহর নিকট প্রিয় হয়ে যাওয়া যে অতীব উচ্চ মর্যাদা তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩২ قُلۡ اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوۡلَ ۚ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۳۲﴾
قل اطیعوا الله و الرسول فان تولوا فان الله لا یحب الكفرین ﴿۳۲﴾
• বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।

-আল-বায়ান

• বল, ‘তোমরা আল্লাহর ও রসূলের আজ্ঞাবহ হও’। অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ কর; কিন্তু যদি তারা ফিরে যায় তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে ভালবাসেন না।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Obey Allah and the Messenger." But if they turn away - then indeed, Allah does not like the disbelievers.

-Sahih International

৩২. বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।(১)

(১) আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, “নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না”। এ থেকে বুঝা গেল যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা ফরয। আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্যে তারতম্য করা যাবে না। আল্লাহর নির্দেশ যেমন মানতে হবে, তেমনি রাসূলের নির্দেশও মানতে হবে। কেউ আল্লাহর আনুগত্য করল কিন্তু রাসূলের আনুগত্য করল না, সে কুফরীর গণ্ডি থেকে বের হতে পারল না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি যেন কাউকে এ রকম না দেখতে পাই যে, সে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে, তখন তার কাছে আমি যে সমস্ত আদেশ-নিষেধ দিয়েছি সে সমস্ত আদেশ-নিষেধের কোন কিছু এসে পড়ল, তখন সে বললঃ আমরা জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি তার অনুসরণ করেছি।” [আবু দাউদ ৪৬০৫; তিরমিযী: ২৬৬৩; ইবনে মাজাহ: ১৩] সুতরাং কোন ঈমানদারের পক্ষে রাসূলের আদেশ-নিষেধ পাওয়ার পর সেটা কুরআনে নেই বলে বাহানা করার কোন সুযোগ নেই। যদি তা করা হয় তবে তা হবে সুস্পষ্ট কুফরী।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হও।’ কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে ভালবাসেন না। [1]

[1] এই আয়াতে আল্লাহর আনুগত্য করার সাথে সাথে রসূল (সাঃ)-এর অনুসরণ করার প্রতি পুনরায় তাকীদ করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, এখন মুক্তির পথই হল কেবল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসরণ করা। আর এ থেকে বিমুখ হলে, তা হবে কুফরী এবং এমন কুফরীর কাফেরদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাতে তারা আল্লাহর ভালবাসা ও তাঁর নৈকট্য লাভের যতই দাবী করুক না কেন। এই আয়াতে তাদের প্রতি বড় তিরস্কার রয়েছে, যারা হাদীসকে হুজ্জত (শরীয়তের দলীল) মানে না এবং রসূল (সাঃ)-এর অনুসরণকেও জরুরী মনে করে না। উভয় শ্রেণীর মানুষই সব সব পদ্ধতিতে এমন মত ও পথ অবলম্বন করে যাকে কুফরী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে পানাহ দিন। আমীন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৩ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰۤی اٰدَمَ وَ نُوۡحًا وَّ اٰلَ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اٰلَ عِمۡرٰنَ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۙ۳۳﴾
ان الله اصطفی ادم و نوحا و ال ابرهیم و ال عمرن علی العلمین ﴿۳۳﴾
• নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম, নূহ ও ইবরাহীমের পরিবারকে এবং ইমরানের পরিবারকে সৃষ্টিজগতের উপর মনোনীত করেছেন।

-আল-বায়ান

• নিশ্চয়ই আল্লাহ আদাম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের ও ‘ইমরানের গোত্রকে বিশ্বজগতের উপর মনোনীত করেছেন।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীম ও ইমরানের সন্তানগণকে বিশ্ব জগতের উপর মনোনীত করেছেন।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, Allah chose Adam and Noah and the family of Abraham and the family of 'Imran over the worlds -

-Sahih International

৩৩. নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ ও ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের(১) বংশধরকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের উপর মনোনীত করেছেন(২)।

(১) এখানে ইমরান বলতে মারইয়াম 'আলাইহাস সালামের পিতাকে বুঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মূসা আলাইহিস সালাম এর পিতার নামও ইমরান ছিল। [মুসলিম: ১৬৫] তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। পরবর্তী আয়াত থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

(২) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে ইবরাহীম, ইমরান, ইয়াসীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের মধ্যে যারা ঈমানদার কেবল তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাদেরকেই আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বাণী ও রহমত বহনের জন্য মনোনীত করেছেন। এদের বংশধরদের মধ্যে যারা কাফের বা মুশরিক তাদের বোঝানো হয়নি। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ, ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্বজগতে মনোনীত করেছেন। [1]

[1] নবীদের বংশে ইমরান নামে দু’জনের আবির্ভাব ঘটেছিল। একজন হলেন মূসা এবং হারুন (আলাইহিমাস্ সালাম)-এর পিতা এবং দ্বিতীয়জন হলেন, মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)-এর পিতা। অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট এই আয়াতে দ্বিতীয় ইমরানকে বুঝানো হয়েছে। এই বংশ মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম) ও তাঁর পুত্র ঈসা (আঃ)-এর কারণে সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। মারয়্যামের মায়ের নাম মুফাসসিরগণ হান্নাহ বিনতে ফাক্বূয লিখেছেন। (তাফসীরে ক্বুরত্ববী ও ইবনে কাসীর) এই আয়াতে মহান আল্লাহ ইমরানের বংশ ছাড়াও আরো তিনটি এমন বংশের কথা উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে তিনি তাদের যুগে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রথম হলেন আদম (আঃ)। তাঁকে তিনি নিজ হাত দ্বারা সৃষ্টি করে তাঁর মধ্যে স্বীয় রূহ সঞ্চার করেন। ফিরিশতামন্ডলী দ্বারা তাঁকে সিজদা করান। সকল জিনিসের নাম তাঁকে শিখিয়ে দেন এবং তাঁকে জান্নাতে বাসস্থান দান করেন। অতঃপর তাঁকে সেখান থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। এতেও ছিল তাঁর বহু হিকমত। দ্বিতীয় হলেন, নূহ (আঃ)। তাঁকে এমন সময় নবী করে প্রেরণ করেন, যখন মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিসমূহকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। তাঁকে তিনি সুদীর্ঘ আয়ু দান করেছিলেন। তিনি তাঁর জাতির মাঝে সাড়ে ন’শ’ বছর পর্যন্ত দ্বীনের তবলীগ করেছিলেন। কিন্তু অল্প কিছু লোক ছাড়া কেউ তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। শেষে তাঁর বদ্দুআয় ঈমানদার লোকগুলো ব্যতীত সমস্ত লোককে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশ যে বৈশিষ্ট্য লাভে ধন্য হয়েছিল তা হল, মহান আল্লাহ পর্যায়ক্রমে তাঁর বংশ থেকে নবী ও বাদশাহ প্রেরণ করেন। বলা বাহুল্য, অধিকাংশ নবী তাঁরই বংশ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন। এমন কি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)ও ছিলেন তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এরই বংশধর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৪ ذُرِّیَّۃًۢ بَعۡضُهَا مِنۡۢ بَعۡضٍ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿ۚ۳۴﴾
ذریۃ بعضها من بعض و الله سمیع علیم ﴿۳۴﴾
• তারা একে অপরের বংশধর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

-আল-বায়ান

• এরা একে অন্যের বংশধর এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

-তাইসিরুল

• তারা একে অপরের বংশধর এবং আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

-মুজিবুর রহমান

• Descendants, some of them from others. And Allah is Hearing and Knowing.

-Sahih International

৩৪. তারা একে অপরের বংশধর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) এরা হল পরস্পর পরস্পরের বংশধর[1] এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

[1] অথবা এর দ্বিতীয় অর্থ হল, দ্বীনের ব্যাপারে একে অপরের সহযোগী ও সাহায্যকারী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৫ اِذۡ قَالَتِ امۡرَاَتُ عِمۡرٰنَ رَبِّ اِنِّیۡ نَذَرۡتُ لَكَ مَا فِیۡ بَطۡنِیۡ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلۡ مِنِّیۡ ۚ اِنَّكَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۳۵﴾
اذ قالت امرات عمرن رب انی نذرت لك ما فی بطنی محررا فتقبل منی انك انت السمیع العلیم ﴿۳۵﴾
• যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, ‘হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ’।

-আল-বায়ান

• (স্মরণ কর) যখন ‘ইমরানের স্ত্রী আরয করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার উদরে যা আছে, তাকে আমি একান্ত তোমার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

-তাইসিরুল

• যখন ইমরান-পত্নী নিবেদন করল, হে আমার রাব্ব! নিশ্চয়ই আমার গর্ভে যা রয়েছে তা আমি মুক্ত করে আপনার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, সুতরাং আপনি আমা হতে তা গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

-মুজিবুর রহমান

• [Mention, O Muhammad], when the wife of 'Imran said, "My Lord, indeed I have pledged to You what is in my womb, consecrated [for Your service], so accept this from me. Indeed, You are the Hearing, the Knowing."

-Sahih International

৩৫. স্মরণ করুন, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, 'হে আমার রব! আমার গর্ভে যা আছে নিশ্চয় আমি তা একান্ত আপনার জন্য মানত করলাম।(১) কাজেই আপনি আমার নিকট থেকে তা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

(১) কাতাদা বলেন, ইমরানের স্ত্রী তার গর্ভে যা কিছু আছে তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দিয়ে দেয়ার মনস্থ করেছিলেন। তারা সাধারণত: পুরুষ সন্তানদেরকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। যদি কাউকে উপসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হত, সে কখনো উপাসনালয় ত্যাগ করত না। তার কাজই হতো উপাসনালয়ের দেখাশোনা করা। কোন মহিলাকে এ কাজের জন্য দেয়া হতো না। কারণ, মহিলাকে এ কাজের উপযুক্ত বিবেচনা করা হতো না। কারণ, তার সৃষ্টিগত কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন, হায়েয ও নিফাস। যা উপাসনালয়ে অবস্থানের জন্য উপযুক্ত ছিল না। এ জন্যই ইমরান স্ত্রী যখন সন্তান প্রসব করে দেখলেন যে, তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন, তখন কি করবেন স্থির করতে না পেরে বলেছিলেন, ‘রব! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি। পরবর্তীতে মানত অনুসারে সে কন্যা সন্তানকেই উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) (স্মরণ কর) যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে, তা আমি একান্ত তোমার উদ্দেশ্যে স্বাধীন করার মানত করলাম।[1] সুতরাং আমার পক্ষ থেকে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’

[1] ‘স্বাধীন করলাম’-এর অর্থ হল, তোমার উপাসনালয়ের খেদমতের জন্য ওয়াকফ করলাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৬ فَلَمَّا وَضَعَتۡهَا قَالَتۡ رَبِّ اِنِّیۡ وَضَعۡتُهَاۤ اُنۡثٰی ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا وَضَعَتۡ ؕ وَ لَیۡسَ الذَّكَرُ كَالۡاُنۡثٰی ۚ وَ اِنِّیۡ سَمَّیۡتُهَا مَرۡیَمَ وَ اِنِّیۡۤ اُعِیۡذُهَا بِكَ وَ ذُرِّیَّتَهَا مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ ﴿۳۶﴾
فلما وضعتها قالت رب انی وضعتها انثی و الله اعلم بما وضعت و لیس الذكر كالانثی و انی سمیتها مریم و انی اعیذها بك و ذریتها من الشیطن الرجیم ﴿۳۶﴾
• অতঃপর সে যখন তা প্রসব করল, বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি তা প্রসব করেছি কন্যারূপে’। আর আল্লাহই ভাল জানেন সে যা প্রসব করেছে তা সম্পর্কে। ‘আর পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মত নয় এবং নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারইয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় দিচ্ছি’।

-আল-বায়ান

• অতঃপর যখন সে তাকে প্রসব করল, বলে উঠল, হে আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি এবং আল্লাহ ভাল করেই জানেন যা সে প্রসব করেছে; বস্তুতঃ পুত্র কন্যার মত নয় এবং আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়ত্বান হতে তোমার আশ্রয়ে ছেড়ে দিলাম।

-তাইসিরুল

• অনন্তর যখন সে তা প্রসব করল তখন বললঃ হে আমার রাব্ব! আমিতো কন্যা প্রসব করেছি; এবং সে যা প্রসব করেছে তা আল্লাহ সম্যক অবগত আছেন, এবং কোনো পুত্র এই কন্যার সমকক্ষ নয়! আর আমি কন্যার নাম রাখলাম ‘মারইয়াম’ এবং আমি তাকে ও তার সন্তানগণকে বিতাড়িত শাইতান হতে আপনার আশ্রয়ে সমর্পন করলাম।

-মুজিবুর রহমান

• But when she delivered her, she said, "My Lord, I have delivered a female." And Allah was most knowing of what she delivered, "And the male is not like the female. And I have named her Mary, and I seek refuge for her in You and [for] her descendants from Satan, the expelled [from the mercy of Allah]."

-Sahih International

৩৬. তারপর যখন সে তা প্রসব করল তখন সে বলল, “হে আমার রব! নিশ্চয় আমি তা প্রসব করেছি কন্যারূপে সে যা প্রসব করেছে তা সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। আর পুত্রসন্তান কন্যা সন্তানের মত নয়। আর আমি তার নাম মারইয়াম রেখেছি(১) এবং অভিশপ্ত শয়তান হতে তার ও তার সন্তানকে আপনার আশ্রয়ে দিচ্ছি(২)।

(১) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, জন্মের দিনই নাম রাখা জায়েয। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘গত রাতে আমার এক সন্তান জন্ম হয়েছে, আমি তার নাম আমার পিতার নামানুসারে ইবরাহীম রাখলাম। [মুসলিমঃ ২৩১৫] অন্য এক হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, গত রাতে আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, আমি তার কি নাম রাখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার নাম রাখ আব্দুর রহমান। [বুখারীঃ ৬১৮৬, মুসলিমঃ ২১৩৩]

(২) এ দোআর বরকতে আল্লাহ্ তা'আলা মারইয়াম ও ঈসা আলাইহিমাস্ সালামকে শয়তান থেকে হেফাযত করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে সাথে শয়তান তাকে স্পর্শ করে, ফলে সে চিৎকার করে। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার সন্তান এর ব্যতিক্রম ৷ [বুখারীঃ ৩৪৩১, ৪৫৪৮, মুসলিমঃ ২৩৬৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) অতঃপর যখন সে (ইমরানের স্ত্রী) ওকে (সন্তান) প্রসব করল, তখন সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি, বস্তুতঃ আল্লাহ সম্যক অবগত সে যা প্রসব করেছে। আর (ঐ কাঙ্ক্ষিত) পুত্র তো (এ) কন্যার মত নয়,[1] আমি তার নাম মারয়্যাম রেখেছি[2] এবং অভিশপ্ত শয়তান হতে তার ও তার বংশধরদের জন্য তোমার পানাহ দিচ্ছি।’[3]

[1] এই বাক্যে আফসোস প্রকাশ করা হয়েছে এবং ওযরও। আফসোস এই জন্য যে, মেয়ে হয়েছে যা আমার আশার বিপরীত। আর ওযর পেশ করা হয়েছে এইভাবে যে, মানত করার উদ্দেশ্য ছিল তোমার সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে একজন খাদেম উৎসর্গ করা, আর এই কাজ একজন পুরুষই উত্তমভাবে সম্পাদন করতে পারে। এখন যা কিছু পেয়েছি, হে আল্লাহ! তুমি তো তা জানো। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[2] হাফেয ইবনে কাসীর এই আয়াত এবং আরো অন্য হাদীসমূহকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে লিখেছেন যে, শিশুর নাম জন্মের প্রথম দিনেই রাখা উচিত। তিনি সাত দিনে নাম রাখার হাদীসকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। তবে হাফেয ইবনুল কাইয়্যেম এ ব্যাপারে হাদীসগুলিকে নিয়ে গবেষণা করে শেষে লিখেছেন যে, প্রথম দিনে, তৃতীয় দিনে এবং সপ্তম দিনে নাম রাখা যায়। এ ব্যাপারে পথ প্রশস্ত। (তুহফাতুল মাউলূদ)

[3] মহান আল্লাহ এই দু’আ কবুল করেন। বলা বাহুল্য, হাদীসে এসেছে যে, ‘‘যখন কোন সন্তান জন্ম নেয়, তখন শয়তান তাকে স্পর্শ করে, ফলে সে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা শয়তানের এই স্পর্শ থেকে মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম) এবং তাঁর পুত্র ঈসা (আঃ)-কে রক্ষা করেছেন।’’ (বুখারী ৩৪৩১, মুসলিম ২৩৬৬নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৭ فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوۡلٍ حَسَنٍ وَّ اَنۡۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا ۙ وَّ كَفَّلَهَا زَكَرِیَّا ۚؕ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَیۡهَا زَكَرِیَّا الۡمِحۡرَابَ ۙ وَجَدَ عِنۡدَهَا رِزۡقًا ۚ قَالَ یٰمَرۡیَمُ اَنّٰی لَكِ هٰذَا ؕ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ﴿۳۷﴾
فتقبلها ربها بقبول حسن و انبتها نباتا حسنا و كفلها زكریا كلما دخل علیها زكریا المحراب وجد عندها رزقا قال یمریم انی لك هذا قالت هو من عند الله ان الله یرزق من یشآء بغیر حساب ﴿۳۷﴾
• অতঃপর তার রব তাকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়্যার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়্যা তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি’? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিয্ক দান করেন’।

-আল-বায়ান

• তখন তার প্রতিপালক তাকে সন্তুষ্টি সহকারে গ্রহণ করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন পালন করলেন এবং যাকারিয়াকে তার তত্ত্বাবধায়ক করলেন। যখনই যাকারিয়া মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করত, তার কাছে খাদ্য সামগ্রী দেখতে পেত; জিজ্ঞেস করত- হে মারইয়াম! ‘এসব কোত্থেকে তোমার কাছে আসে’? মারইয়াম বলত, ‘ওসব আল্লাহর নিকট হতে (আসে)’। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বেহিসাব রিযক দান করেন।

-তাইসিরুল

• অনন্তর তার রাব্ব তাকে উত্তম রূপে গ্রহণ করলেন এবং তাকে উত্তম প্রবৃদ্ধি দান করলেন এবং যাকারিয়াকে তার ভারার্পন করলেন; যখনই যাকারিয়া তার নিকট উক্ত প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করত তখন তার নিকট খাদ্য সম্ভার দেখতে পেত; সে বলতঃ হে মারইয়াম! এটা কোথা হতে প্রাপ্ত হলে? সে বলতঃ এটা আল্লাহর নিকট হতে, নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।

-মুজিবুর রহমান

• So her Lord accepted her with good acceptance and caused her to grow in a good manner and put her in the care of Zechariah. Every time Zechariah entered upon her in the prayer chamber, he found with her provision. He said, "O Mary, from where is this [coming] to you?" She said, "It is from Allah. Indeed, Allah provides for whom He wills without account."

-Sahih International

৩৭. তারপর তার রব তাকে ভালভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন-পালন করলেন(১) এবং তিনি তাকে যাকারিয়্যার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন(২)। যখনই যাকারিয়্যা তার কক্ষে প্রবেশ করত তখনই তার নিকট খাদ্য সামগ্রী দেখতে পেত। তিনি বলতেন, হে মারইয়াম! এ সব তুমি কোথায় পেলে? (মারইয়াম) বলতেন, তা আল্লাহর নিকট হতে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছে অপরিমিত রিযক দান করেন।

(১) এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, তিনি তাকে দেহসৌষ্ঠবে মনোমুগ্ধকর বানিয়েছিলেন, ফলে যে কেউ তাকে দেখত তার ভক্ত হয়ে যেত। কাতাদা বলেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, মারইয়াম ও ঈসা দুনিয়ার অন্যান্য আদম সন্তানের মত গোনাহের কাজে জড়াত না। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) কিভাবে মারইয়াম আলাইহাস সালাম যাকারিয়্যা আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে আসলেন এখানে বর্ণনা করা হয় নি। পরবর্তী ৪৪ নং আয়াত থেকে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। যাদেরকে উপাসনালয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হতো তারা সাধারণত উপাসনালয়েই থাকত। তাদের আর কোন অভিভাবকের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু যেহেতু মারইয়াম আলাইহাস সালাম কন্যা সন্তান ছিলেন, সেহেতু তৎকালীন সবাই চিন্তা করলেন যে, তার তত্ত্বাবধান করার মত লোকের প্রয়োজন। সবাই তার তত্ত্বাবধান চাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তাদের কলম দিয়ে তারা লটারী করেছিল। সে লটারীতে যাকারিয়া আলাইহিস সালামের নাম উঠে এসেছিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে উত্তমরূপেই গ্রহণ করলেন এবং উত্তমরূপেই তার প্রতিপালন করলেন এবং তিনি তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রাখলেন।[1] যখনই যাকারিয়া মিহরাবে (কক্ষে) তার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখনই তার নিকট খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত।[2] সে বলত, ‘হে মারয়্যাম! এসব তুমি কোথা থেকে পেলে?’ সে বলত, ‘তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপর্যাপ্ত জীবিকা দান করে থাকেন।’

[1] যাকারিয়া (আঃ) যেহেতু মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)-এর খালু ছিলেন এবং সেই সময়কার পয়গম্বরও। তাই সর্বোত্তম অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার জন্য তিনিই ছিলেন উপযুক্ত। মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)-এর আর্থিক প্রয়োজন এবং শিক্ষা ও নৈতিক তরবিয়াতের সমূহ দাবী পূরণের সঠিক যত্ন নেওয়া কেবল তাঁরই পক্ষে সম্ভব ছিল।

[2] ‘মিহরাব’ বলতে ছোট একটি ঘর যেখানে মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম) থাকতেন। ‘রিযক’ (খাদ্য-সামগ্রী) বলতে ফলমূল। প্রথমতঃ এই ফলগুলো হত অসময়ের। গ্রীষেমর ফল শীতে এবং শীতের ফল গ্রীষেমর মৌসুমে তাঁর ঘরে বিদ্যমান থাকত। দ্বিতীয়তঃ এই ফলগুলো না যাকারিয়া (আঃ) এনে দিতেন, না অন্য কেউ। তাই তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো কোত্থেকে এসেছে? তিনি বললেন, আল্লাহর পক্ষ হতে। এটা আসলে মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)এর একটি অলৌকিক ব্যাপার (কারামত) ছিল। অস্বাভাবিক অলৌকিক কার্যকলাপকে মু’জিযা ও কারামত বলা হয়। অর্থাৎ, বাহ্যিক ও সাধারণ কারণ-উপকরণ ছাড়াই যা ঘটে (তাই অতিপ্রাকৃত ও অনৈসর্গিক ঘটনা)। এটা যদি কোন নবীর জন্য সংঘটিত হয়, তাহলে তা হবে মু’জিযা। আর কোন ওলীর জন্য সংঘটিত হলে, তাকে বলা হয় কারামত। দু’টোই সত্য। তবে তা ঘটে আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর ইচ্ছাক্রমে। কোন নবী ও ওলীর এখতিয়ারে নেই যে, তাঁরা যখনই চাইবেন, তখনই তা সংঘটিত করতে পারবেন। এই জন্যই মু’জিযা ও কারামত এ কথা অবশ্যই প্রমাণ করে যে, যাঁদের জন্য তা সংঘটিত হয়, তাঁদের আল্লাহর নিকট রয়েছে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা। কিন্তু তার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, আল্লাহর নিকট সম্মান লাভকারী এই বান্দারা সার্বভৌমত্বের কর্তৃত্বে কোন এখতিয়ার রাখেন। যেমন, বিদআতীরা আওলিয়াদের কারামতের মাধ্যমে সাধারণ লোকদেরকে এমন কিছু বুঝিয়ে তাদেরকে শিরকীয় আকীদায় লিপ্ত করে। এর আরো বিস্তারিত আলোচনা কোন কোন মু’জিযার বর্ণনার সাথে আসবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৮ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِیَّا رَبَّهٗ ۚ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡكَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّكَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ ﴿۳۸﴾
هنالك دعا زكریا ربهٗ قال رب هب لی من لدنك ذریۃ طیبۃ انك سمیع الدعآء ﴿۳۸﴾
• সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।

-আল-বায়ান

• ওখানেই যাকারিয়া নিজ প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার পক্ষ হতে একটি সুসন্তান দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।

-তাইসিরুল

• তখন যাকারিয়া তার রবের নিকট প্রার্থনা করেছিল, সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আমাকে আপনার নিকট হতে পবিত্র সন্তান প্রদান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।

-মুজিবুর রহমান

• At that, Zechariah called upon his Lord, saying, "My Lord, grant me from Yourself a good offspring. Indeed, You are the Hearer of supplication."

-Sahih International

৩৮. সেখানেই যাকারিয়্যা তার রবের নিকট প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে আপনি আপনার নিকট থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।(১)

(১) যাকারিয়্যা 'আলাইহিস সালাম তখনো পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। সময়ও ছিল বার্ধক্যের- যে বয়সে স্বাভাবিকভাবে সন্তান হয় না। তবে আল্লাহর শক্তি-সামর্থের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল যে, অলৌকিকভাবে এহেন বার্ধক্যের মধ্যেও তিনি সন্তান দিতে পারেন। তবে অসময়ে ও অস্থানে দান করার আল্লাহর মহিমা ইতিপূর্বে তিনি কখনো প্রত্যক্ষ করেননি। কিন্তু এসময় যখন তিনি দেখতে পেলেন যে, আল্লাহ তা'আলা ফলের মওসুম ছাড়াই মারইয়ামকে ফল দান করেছেন, তখনই তার মনের সুপ্ত আকাঙ্খা জেগে উঠল এবং তার মনে হলো যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ মওসুম ছাড়াই যদি ফল দিতে পারেন, তবে বৃদ্ধ দম্পতিকে হয়ত সন্তানও দেবেন। বললেনঃ ‘হে আমার রব! আমাকে আপনি আপনার নিকট থেকে সৎ সন্তান দান করুন’, এতে বুঝা যায় যে, সন্তান হওয়ার জন্য দোআ করা রাসূলগণের ও নেককারদের সুন্নাত।

অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “আপনার আগে তো আমি অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেরূপ স্ত্রী ও সন্তান দান করা হয়েছে, তদ্রুপ এই নেয়ামত পূর্ববর্তী রাসূলগণকেও দেয়া হয়েছিল। এখন কেউ যদি কোন পন্থায় সন্তান জন্মগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করে, তবে সে শুধু স্বভাবধর্মের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে না; বরং রাসূলদের একটি সার্বজনীন ও সর্বসম্মত সুন্নাহ থেকেও বঞ্চিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ ও সন্তানের প্রশ্নটিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দান করেছেন। তাই যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্বেও বিবাহ কিংবা সন্তান গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে, তাকে তিনি স্বীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি বলেনঃ বিবাহ আমার সুন্নাহ। যে ব্যক্তি এ সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ কর। কেননা, তোমাদের আধিক্যের কারণে আমি অন্যান্য উম্মতের উপর গর্ব করব। [ইবনে মাজাহঃ ১৮৪৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৩৯ فَنَادَتۡهُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ وَ هُوَ قَآئِمٌ یُّصَلِّیۡ فِی الۡمِحۡرَابِ ۙ اَنَّ اللّٰهَ یُبَشِّرُكَ بِیَحۡیٰی مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ سَیِّدًا وَّ حَصُوۡرًا وَّ نَبِیًّا مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۳۹﴾
فنادته الملٓئكۃ و هو قآئم یصلی فی المحراب ان الله یبشرك بیحیی مصدقا بكلمۃ من الله و سیدا و حصورا و نبیا من الصلحین ﴿۳۹﴾
• অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী’।

-আল-বায়ান

• যখন যাকারিয়া ‘ইবাদাত কক্ষে সলাতে দন্ডায়মান তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল : আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়া’র সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত কালেমার সত্যতার সাক্ষ্যদাতা, নেতা, গুনাহ হতে বিরত ও নেক বান্দাগণের মধ্য হতে একজন নাবী।

-তাইসিরুল

• অতঃপর যখন সে মেহরাবের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিল তখন মালাইকা/ফেরেশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্বন্ধে সুসংবাদ দিচ্ছেন - তার অবস্থা এই হবে যে, সে আল্লাহর একটি বাক্যের সত্যতা প্রকাশকারী হবে, নেতা হবে, স্বীয় প্রবৃত্তিকে দমনকারী হবে এবং সৎ কর্মশীলগণের মধ্যে নাবী হবে।

-মুজিবুর রহমান

• So the angels called him while he was standing in prayer in the chamber, "Indeed, Allah gives you good tidings of John, confirming a word from Allah and [who will be] honorable, abstaining [from women], and a prophet from among the righteous."

-Sahih International

৩৯. অতঃপর যখন যাকারিয়্যা ইবাদত কক্ষে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন তখন ফেরেশতারা তাকে আহবান করে বলল, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগমনকৃত এক কালেমাকে সত্যায়নকারী(১), নেতা(২), ভোগ আসক্তিমুক্ত(৩) এবং পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী।

(১) এখানে কালেমা বলতে ঈসা আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বা আল্লাহর বাণী বলা হয়েছে, কারণ, তিনি শুধু আল্লাহর কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এখানে তাকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহর কালেমার মাধ্যমেই হয়। তার কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না।

(২) কাতাদা বলেন, আল্লাহর শপথ তিনি ইবাদাত, সহিষ্ণুতা, জ্ঞান ও পরহেযগারীতে সবার শীর্ষ নেতা হিসেবে ছিলেন। পক্ষান্তরে মুজাহিদ বলেন, সাইয়্যেদ অর্থ হচ্ছে, তিনি আল্লাহর কাছে সম্মানিত ছিলেন। [তাবারী]

(৩) এটা ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এর অর্থ, যিনি যাবতীয় কামনা-বাসনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। উদাহরণতঃ উত্তম পানাহার, উত্তম পোষাক পরিধান এবং বিবাহ ইত্যাদি। এ গুণটি প্রশংসার ক্ষেত্রে উল্লেখ করায় বাহ্যতঃ মনে হয় যে, এটাই উত্তম পন্থা ৷ অথচ বিভিন্ন হাদীসে বিবাহিত জীবন-যাপন করাই যে উত্তম একথা প্রমাণিত আছে। এ সম্পর্কে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কারো অবস্থা ইয়াহইয়া 'আলাইহিস সালামের মত হয়- অর্থাৎ অন্তরে আখেরাতের চিন্তা প্রবল হওয়ার কারণে স্ত্রীর প্রয়োজন অনুভুত না হয় এবং স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায় করার মত অবকাশ না থাকে, তবে তার পক্ষে বিবাহ না করাই উত্তম। এ কারণেই যে সব হাদীসে বিবাহের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে এ কথাও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখে এবং স্ত্রীর হক আদায় করতে পারে, তার পক্ষেই বিবাহ করা উত্তম। [বুখারীঃ ১৮০৬, মুসলিমঃ ১৪০০] এতে বুঝা যাচ্ছে যে, এর ব্যতিক্রম হলে বিবাহ ওয়াজিব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) যখন (যাকারিয়া) মিহরাবে নামাযে রত ছিল, তখন ফিরিশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহয়্যার সুসংবাদ দিচ্ছেন,[1] সে হবে আল্লাহর এক বাণী (ঈসা)র সমর্থক,[2] সে হবে নেতা, জিতেন্দ্রিয় এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।’

[1] অসময়ের ফল দেখে যাকারিয়া (আঃ)-এর অন্তরে (বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়া এবং স্ত্রী বাঁঝা হওয়া সত্ত্বেও) আশা জেগে উঠলো যে, তাঁকেও যেন মহান আল্লাহ এইভাবে (যেভাবে তিনি মারয়্যামকে অসময়ের ফল দিয়েছেন) কোন সন্তান দানে ধন্য করেন। সুতরাং মনের অজ্ঞাতসারে আল্লাহর সমীপে তাঁর দু’আর মুখ খুলে গেল। আল্লাহ তাঁর এই দু’আ কুবলও করলেন।

[2] আল্লাহর এক বাণীর সমর্থন ও সত্যায়ন করার অর্থ, ঈসা (আঃ)-কে সত্য বলে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ, ইয়াহ্য়্যা (আঃ) ঈসা (আঃ)-এর চেয়ে বড় ছিলেন। তাঁরা আপোসে খালাতো ভাই ছিলেন। উভয়েই একে অপরকে সমর্থন করেছেন। سيِّد এর অর্থ সর্দার বা জননেতা। حَصور এর অর্থ পাপসমূহ থেকে পবিত্র; যে পাপের কাছেও ঘেঁষে না। অর্থাৎ তাঁকে যেন পাপ থেকে নিবারিত রাখা হবে। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন নপুংসক বা হিজড়া। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ তা একটি দোষ, অথচ এখানে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে প্রশংসা ও ফযীলত হিসেবে। (অবশ্য জিতেন্দ্রিয় বা সংযমী অনুবাদ বেঠিক নয়।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৪০ قَالَ رَبِّ اَنّٰی یَكُوۡنُ لِیۡ غُلٰمٌ وَّ قَدۡ بَلَغَنِیَ الۡكِبَرُ وَ امۡرَاَتِیۡ عَاقِرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللّٰهُ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ ﴿۴۰﴾
قال رب انی یكون لی غلم و قد بلغنی الكبر و امراتی عاقر قال كذلك الله یفعل ما یشآء ﴿۴۰﴾
• সে বলল, ‘হে আমার রব, কীভাবে আমার পুত্র হবে? অথচ আমার তো বার্ধক্য এসে গিয়েছে, আর আমার স্ত্রী বন্ধা’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন’।

-আল-বায়ান

• যাকারিয়া বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান হবে কীভাবে, আমি তো বার্ধক্যে পৌঁছেছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। তিনি বললেন, ‘এভাবেই, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই সম্পন্ন করে থাকেন’।

-তাইসিরুল

• সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! কিরূপে আমার পুত্র হবে? নিশ্চয়ই আমার বার্ধক্য উপস্থিত হয়েছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; তিনি বললেনঃ এইরূপে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা’ই করে থাকেন।

-মুজিবুর রহমান

• He said, "My Lord, how will I have a boy when I have reached old age and my wife is barren?" The angel said, "Such is Allah; He does what He wills."

-Sahih International

৪০. তিনি বললেন, 'হে আমার রব! আমার। পুত্র হবে কিভাবে? অথচ আমার বার্ধক্য এসে গিয়েছে(১) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘এভাবেই’। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন(২)।

(১) এ আয়াতে বার্ধক্যের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পক্ষান্তরে সূরা মারইয়ামে বার্ধক্যের পরিমাণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, আমি বার্ধক্যে এমনভাবে উপনীত হয়েছি যে আমার জোড়া ও হাড়ের মজ্জাও শুকিয়ে গেছে। [সূরা মারইয়াম: ৮]

(২) যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র শক্তি-সামর্থ্যে বিশ্বাসী ছিলেন। সন্তানের জন্য নিজে দোআও করেছিলেন। দোআ কবুল হওয়ার বিষয়ও তিনি অবগত ছিলেন। এতসবের পরেও কিভাবে ‘আমার পুত্র হবে’ বলার অর্থ, খুশী হওয়া এবং আশ্চর্যাম্বিত হওয়া। [মুয়াসসার, সাদী] তিনি পুত্র হওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন যে, আমরা স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে বার্ধক্যের যে পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছি, তা বহাল রেখেই পুত্র দান করা হবে, না এতে কোনরূপ পরিবর্তন করা হবে? [বাগভী] আল্লাহ্ তা'আলা উত্তরে বলেছিলেন যে, না তোমরা বাৰ্ধক্যাবস্থায়ই থাকবে এবং এ অবস্থাতেই তোমাদের সন্তান হবে। [কাশশাফ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) সে (যাকারিয়া) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র হবে কিরূপে? আমার তো বার্ধক্য এসেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা!’ তিনি বললেন, ‘এভাবেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 17 18 19 20 পরের পাতা »