-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলেছিল, নিশ্চয় আমরা এ জনপদবাসীকে ধ্বংস করব(১), এর অধিবাসীরা তো যালিম।
(১) “এ জনপদ” বলে লুত জাতির এলাকা সাদূমকে বুঝানো হয়েছে। [বাগভী; মুয়াস্সার] ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ সময় ফিলিস্তিনের বর্তমান আল খলীল শহরে থাকতেন। এ শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কয়েক মাইল দূরে মৃত্যসাগরের অংশ রয়েছে। সেখানে পূর্বে বাস করতো লুত জাতির লোকেরা এবং বর্তমানে এ সমগ্র এলাকা রয়েছে সাগরের পানির তলায়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) যখন আমার প্রেরিত ফিরিশতাগণ সুসংবাদসহ ইব্রাহীমের নিকট এল, তখন তারা বলল, ‘আমরা এ শহরের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব।[1] এর অধিবাসিগণ অবশ্যই সীমালংঘনকারী।’
[1] অর্থাৎ, লূত (আঃ)-এর দু’আ কবুল হল এবং মহান আল্লাহ লূত-জাতিকে ধ্বংস করার জন্য ফিরিশতাও প্রেরণ করলেন। তাঁরা প্রথমে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গেলেন ও তাঁকে ইসহাক ও ইয়াকূব দুই সন্তানের সুসংবাদ দিলেন এবং সেই সঙ্গে এ কথাও শুনিয়ে দিলেন যে, আমরা লূত (আঃ)-এর বস্তি ধ্বংস করতে এসেছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. ইবরাহীম বললেন, এ জনপদে তো লুত রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কারা আছে, তা আমরা ভাল করে জানি, নিশ্চয় আমরা লূতকে ও তার পরিজনবৰ্গকে রক্ষা করব, তার স্ত্রীকে ছাড়া(১); সে তো পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
(১) এ মহিলা সম্পর্কে অন্যত্র বলা হয়েছে যে, লুতের এই স্ত্রী তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। এ জন্য তার ব্যাপারে এ ফায়সালা করা হয় যে, একজন নবীর স্ত্রী হওয়া সত্বেও তা তার কোন কাজে লাগবে না। [যেমন, সূরা আত-তাহরীম: ১০] যেহেতু আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে ফায়সালা হয় তার ঈমান ও চরিত্রের ভিত্তিতে, তাই নবীর স্ত্রী হওয়ায় তার কোন লাভ হয়নি। তার পরিণাম তার স্বামীর অনুরূপ হয়নি। বরং যে জাতির ধর্ম ও চরিত্র সে গ্রহণ করে রেখেছিল তার অনুরূপ হয়েছিল। সে তার কাওমের কুফরিকে সমর্থনা করছিল এবং তাদের সীমালঙ্ঘনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছিল। [দেখুন: ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) ইবরাহীম বলল, ‘এ জনপদে তো লূত রয়েছে।’ ওরা বলল, ‘সেখানে কারা আছে তা আমরা ভাল জানি;[1] আমরা তো লূতকে ও তার পরিজনবর্গকে অবশ্যই রক্ষা করব; তবে তার স্ত্রীকে নয়; সে হবে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ [2]
[1] অর্থাৎ আমার জানা আছে যে, ভালো ও মু’মিন লোক কারা এবং মন্দ লোক কারা।
[2] অর্থাৎ, ঐ সকল পিছনে পড়ে থাকা লোকেদের দলভুক্ত হবে, যাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করা হবে। কারণ সে মু’মিন মহিলা ছিল না; বরং সে ছিল নিজের জাতির পক্ষ অবলম্বনকারিণী। সেই জন্য তাকে ধ্বংস করে দেওয়া হল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আসল, তখন তাদের জন্য তিনি বিষন্ন হয়ে পড়লেন এবং নিজেকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করলেন। আর তারা বলল, ভয় করবেন না, দুঃখও করবেন না; আমরা আপনাকে ও আপনার পরিজনবৰ্গকে রক্ষা করব, আপনার স্ত্রী ছাড়া; সে তো পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) যখন আমার প্রেরিত ফিরিশতাগণ লূতের নিকট এল, তখন সে তাদের ব্যাপারে চিন্তিত হল এবং তাদের কারণে তার হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল।[1] ওরা বলল, ‘ভয় করো না এবং চিন্তাও করো না; আমরা তোমাকে ও তোমার পরিজনবর্গকে রক্ষা করব। তবে তোমার স্ত্রীকে নয়; সে তো ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [2]
[1] سِيءَ بِهِم এর অর্থ তাঁর নিকট ফিরিশতা এলে তাঁদেরকে দেখে তাঁর খারাপ লাগল, (তিনি তাঁদের আগমনকে অপছন্দ করলেন, বিষণ্ণ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন) এবং ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ তাঁর নিকট যে সমস্ত ফিরিশতা (সুদর্শন কিশোর) মানুষের রূপ ধরে এসেছিলেন, তাঁদেরকে তিনি মানুষই ভেবেছিলেন। সুতরাং নিজ জাতির বদ অভ্যাস ও উদ্ধত আচরণের জন্য এই ভয় পেলেন যে, যদি তারা এই সকল সুদর্শন মেহমানদের আসার খবর জানতে পারে, তাহলে তারা বলপূর্বক এদের সাথে অশ্লীল কাজ করতে চাইবে, যার কারণে আমি অপমানিত হব। ضَاقَ بِهِم ذَرعًا (তাদের কারণে তার হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল) কথায় তাঁর অক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন ضَاقَت يَدُه (হাত সংকীর্ণ হওয়ার) কথা বলে দরিদ্র হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। অর্থাৎ, ঐ সকল সুশ্রী চেহারাবিশিষ্ট মেহমানদেরকে বদ-অভ্যাসে অভ্যাসী জাতির হাত হতে বাঁচানোর যখন কোন রাস্তা খুঁজে পেলেন না, তখন তিনি চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হলেন।
[2] ফিরিশতাগণ যখন লূত (আঃ)-এর বিষণ্ণ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কথা অনুভব করলেন, তখন তাঁরা তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন যে, তুমি কোন প্রকার ভয় ও চিন্তা করবে না। আমরা আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতা। আমাদের উদ্দেশ্য তোমার স্ত্রী ব্যতীত তোমাকে ও তোমার পরিবারকে পরিত্রাণ দেওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. নিশ্চয় আমরা এ জনপদবাসীদের উপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচার করছিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) আমরা এ জনপদবাসীদের উপর আকাশ হতে আযাব (শাস্তি) অবতীর্ণ করব,[1] কারণ এরা সত্যত্যাগী।’
[1] আকাশের শাস্তি বলতে ঐ শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা লূত জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। জিব্রাঈল (আঃ) তাদের জনপদগুলোকে শূন্যে তুলে নিয়ে গিয়ে উল্টে দিলেন। তারপর তাদের উপর পাথর বর্ষণ করা হল এবং ঐ জায়গাটিকে একটি অতি দুর্গন্ধময় উপসাগরে পরিণত করা হল। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. আর অবশ্যই আমরা এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছি।(১)
(১) এই সুস্পষ্ট নিদর্শনটি হচ্ছে মৃতসাগর। একে লুত সাগরও বলা হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এই যালেম জাতিটির ওপর তার কৃতকর্মের বদৌলতে যে আযাব নাযিল হয়েছিল তার একটি চিহ্ন আজো প্রকাশ্যে রাজপথে বর্তমান রয়েছে। তোমরা সিরিয়ার দিকে নিজেদের বাণিজ্য সফরে যাবার সময় দিনরাত এ চিহ্নটি দেখে থাকো। [দেখুন: সূরা আল-হিজর: ৭৫–৭৭; সূরা আস-সাফফাত: ১৩৭] বর্তমান যুগে এখানে পানির মধ্যে কিছু ডুবন্ত জনপদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) আমি এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন ছেড়ে রেখেছি[1] সেই সম্প্রদায়ের জন্য যাদের বোধশক্তি আছে।[2]
[1] অর্থাৎ, সেই পাথরের চিহ্ন যা তাদের উপর বর্ষিত হয়েছিল, কালো দুর্গন্ধময় পানি, উল্টে দেওয়া বসতি এ সকল নিদর্শন ও শিক্ষণীয় বিষয়। কিন্তু কাদের জন্য? যারা বুদ্ধিমান তাদের জন্য।
[2] কারণ, তারাই এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে পরিণাম ও প্রভাব লক্ষ্য করে। কিন্তু যারা জ্ঞান-বুদ্ধিহীন তাদের উক্ত বিষয়ের সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না। তারা তো ঐ পশুর ন্যায় যাদেরকে যবেহ করার জন্য কসাই খানায় নিয়ে যাওয়া হয়, অথচ তাদের কোন অনুভূতিও থাকে না। এর মাধ্যমে মক্কার মুশরিকদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যে মিথ্যাজ্ঞান ও অস্বীকার করার পথ অবলম্বন করেছে, তা একমাত্র জ্ঞান-বুদ্ধিহীন লোকেদের আচরণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. আর আমরা মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শু’আইবকে পাঠিয়েছিলাম অতঃপর তিনি বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, এবং শেষ দিনের আশা কর।(১) আর যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।
(১) এর দু’টো অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, আখেরাতের আগমন কামনা করো। একথা মনে করো না, যা কিছু আছে ব্যস। এ দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই এবং এরপর আর এমন কোন জীবন নেই, যেখানে তোমাদের নিজেদের যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসেব দিতে হবে এবং তার পুরস্কার ও শাস্তি লাভ করতে হবে। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এমন কাজ করো যার ফলে তোমরা আখেরাতে ভালো পরিণতি লাভের আশা করতে পারো। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “তোমরা যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রত্যাশা কর অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে ওদের মধ্যে উত্তম আদর্শী।” [সূরা আল-মুমতাহিনাহ: ৬] [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) আমি মাদ্য়্যানবাসীদের প্রতি[1] তাদের ভাই শুআইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর, শেষ দিনকে ভয় কর[2] এবং পৃথিবীতে অশান্তি ঘটিয়ে বেড়ায়ো না।’ [3]
[1] মাদয়্যান ইবরাহীম (আঃ)-এর এক ছেলের নাম ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, তা ছিল তাঁর পৌত্রের নাম। আর ছেলের নাম ছিল মিদয়ান। তাঁর নামেই এই জাতির নামকরণ করা হয় এবং তারা ছিল তাঁরই বংশধর। উক্ত মাদয়্যান জাতির জন্যই শুআইব (আঃ)-কে নবী হিসাবে পাঠানো হয়। আবার কেউ বলেন, মাদয়্যান ছিল শহরের নাম। এই জাতি বা শহর লূত (আঃ)-এর বসতির নিকটেই বসবাস করত।
[2] আল্লাহর ইবাদতের পর তাদেরকে পরকাল স্মরণ করানো এই জন্য হতে পারে যে, তারা পরকালকে অবিশ্বাস করত কিংবা তারা পরকাল সম্পর্কে উদাসীন ছিল ও বিভিন্ন পাপে ডুবে ছিল। আর যে জাতি পরকালে উদাসীন তারা পাপ করার ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে যায়। যেমন আজ-কালের অধিকাংশ মুসলমানদের অবস্থা।
[3] মাপে ও ওজনে কম করা ও লোকদের কম দেওয়া ছিল তাদের সাধারণ অভ্যাস। আর পাপ করার ব্যাপারেও ছিল তারা শঙ্কাহীন। যার কারণে পৃথিবী অশান্তি ও বিপর্যয়ে ভরে গিয়েছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. অতঃপর তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল; ফলে তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) কিন্তু ওরা তাকে মিথ্যাবাদী মনে করল; অতঃপর ওরা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল; ফলে ওরা নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। [1]
[1] শুআইব (আঃ)-এর উপদেশে তাদের উপর কোন প্রভাব পড়ল না। শেষ পর্যন্ত মেঘাচ্ছন্ন ছায়াময় দিনে জিবরীল (আঃ)-এর বিকট এক শব্দে মাটিতে কম্পন শুরু হল এবং তারা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় সবাই শেষ হয়ে গেল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. আর আমরা আদ ও সামূদকে ধ্বংস করেছিলাম; তাদের বাড়ীঘরের কিছু তোমাদের জন্য উন্মোচিত হয়েছে।(১) আর শয়তান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল এবং তাদের সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ।(২)
(১) আরবের যেসব এলাকায় এ সব জাতির বসতি ছিল আরবের লোকেরা তা জানতো। দক্ষিণ আরবের যেসব এলাকা বর্তমানে আহকাফ, ইয়ামন ও হাদরামাউত নামে পরিচিত, প্রাচীনকালে সে এলাকাগুলোতে ছিল আদ জাতির বাস। হিজাযের দক্ষিণ অংশে রাবেগ থেকে আকাবাহ পর্যন্ত শু'আইব জাতির এবং মদীনার ওয়াদিউল কুরা থেকে তাইমা ও তাবুক পর্যন্ত সমগ্র এলাকা আজো সামূদ জাতির ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ দেখা যায়। কুরআন নাযিল হবার যুগে এ ধ্বংসাবশেষগুলোর অবস্থা বর্তমানের তুলনায় আরো কিছু বেশী সুস্পষ্ট থেকে থাকবে। [দেখুন: ইবন কাসীর]
(২) مُسْتَبْصِر এর অর্থ বিচক্ষণ বা চক্ষুষ্মান। উদ্দেশ্য এই যে, যারা কুফর ও শির্ক করে আযাব ও ধ্বংসে পতিত হয়েছে, তারা মোটেই বেওকুফ অথবা উম্মাদ ছিল না। তারা দলীল-প্রমাণাদি থেকে সত্য গ্ৰহণ করতে সমর্থ ছিল, কিন্তু পার্থিব স্বাৰ্থ তাদেরকে অস্বীকারে বাধ্য করে রেখেছিল। তারা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে ও খোলা চোখে শয়তান যে পথ দেখিয়েছিল এবং যে পথে তারা বড়ই লাভ ও ভোগের সন্ধান পেয়েছিল সে পথে পাড়ি জমিয়েছিল এবং এমন পথ পরিহার করেছিল যা তাদের কাছে নীরস, বিস্বাদ এবং নৈতিক বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হবার কারণে কষ্টকর মনে হচ্ছিল। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] অন্যত্র বলা হয়েছে: “তারা জাগতিক কাজ কর্ম খুব বোঝে; কিন্তু আখেরাতের ব্যাপারে উদাসীন।” [সূরা আর-রূম: ৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) আর আমি আ’দ ও সামূদকে ধ্বংস করেছিলাম; ওদের বাড়ি-ঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ।[1] শয়তান ওদের কাজকে ওদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং ওদেরকে সৎপথ অবম্বনে বাধা দিয়েছিল; যদিও ওরা ছিল বিচক্ষণ। [2]
[1] আ’দ জাতির বসতি আহ্কাফ ইয়ামানের ‘হাযরামাওত’-এর নিকটে অবস্থিত ছিল। আর সামূদের বসতি ‘হিজর’ আজকাল যাকে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয় এবং যা হিজাজের (মদীনার) উত্তরে অবস্থিত। উক্ত এলাকার উপর দিয়ে আরবের বাণিজ্য কাফেলা যাতায়াত করত। সেই জন্য ঐ সকল বসতি তাদের অজানা ছিল না। বরং তাদের নিকট পরিচিত ছিল।
[2] অর্থাৎ, তারা জ্ঞানী ও চালাক-চতুর তো ছিল; কিন্ত দ্বীন ও ধর্মের ব্যাপারে তারা নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগায়নি। সেই জন্য তাদের জ্ঞান-গরিমা তাদের কোন কাজে আসেনি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফির'আউন ও হামানকে। আর অবশ্যই মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল; অতঃপর তারা যমীনে অহংকার করেছিল; কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) এবং আমি ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফিরআউন ও হামানকে; মূসা ওদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ এসেছিল;[1] তখন তারা দেশে অহংকার প্রদর্শন করল; কিন্তু ওরা আমার শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারেনি। [2]
[1] অর্থাৎ, প্রমাণ ও মু’জিযার কোন প্রভাব তাদের উপর হল না। আর তারা অহংকারের পথ পরিহার করল না। অর্থাৎ, ঈমান ও তাকওয়ার রাস্তা হতে মুখ ফিরিয়ে রইল।
[2] অর্থাৎ, আমার পাকড়াও হতে বাঁচতে সক্ষম হয়নি; বরং তারা আমার আযাবে পতিত হয়েছে। এর অন্য এক অনুবাদ হল, তাঁরা কুফরীতে অগ্রগামী ছিল না; বরং এর পূর্বে অনেক এমন জাতি পৃথিবীতে এসেছিল যারা অনুরূপ কুফরীর রাস্তা অবলম্বন করেছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. সুতরাং তাদের প্রত্যেককেই আমরা তার অপরাধের জন্য পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমরা পাঠিয়েছিলাম পাথরকুচিসম্পন্ন প্ৰচণ্ড ঝটিকা(১) তাদের কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ, কাউকে আমরা প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে আমরা করেছিলাম নিমজ্জিত। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলুম করবেন; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিল।
(১) অর্থাৎ আদি জাতির। তাদের ওপর অবিরাম সাত রাত ও আট দিন পর্যন্ত ভয়াবহ তুফান চলতে থাকে। [সূরা আল-হাক্কাহ: ৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) সুতরাং ওদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অপরাধের জন্য পাকড়াও করলাম;[1] ওদের কারও প্রতি প্রেরণ করলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়,[2] কাকেও আঘাত করল মহাগর্জন,[3] কাকেও আমি মাটির নিচে ধসিয়ে দিলাম[4] এবং কাকেও মারলাম ডুবিয়ে।[5] আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি; আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।[6]
[1] অর্থাৎ, উপরোক্ত প্রত্যেককে তার পাপের জন্য পাকড়াও করলাম।
[2] এ ছিল আ’দ জাতি। যাদের উপর কঠিন ঝড় আযাবরূপে এসেছিল। এ ঝড় মাটি হতে কাঁকর উড়িয়ে তাদের উপর বর্ষণ করেছিল এবং তার বেগ ও গতি ছিল এত বেশি যে, তাদেরকে আকাশের উপর উড়িয়ে নিয়ে মাটিতে আছড়ে মেরেছিল। যার ফলে তাদের মাথা ও শরীর আলাদা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে দেখে মনে হয়েছিল, যেন সারশূন্য খেজুরের কান্ড। (ইবনে কাসীর) কোন কোন মুফাসসির ‘পাথর বর্ষণকারী ঝড়’ এর শাস্তিপ্রাপ্ত লূতের জাতিকে বলেছেন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর এটিকে ভুল বলেছেন। আর এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাসের দিকে সম্পৃক্ত উক্তিটিকে সূত্রছিন্ন বলেছেন।
[3] এরা ছিল সালেহ (আঃ)-এর জাতি সামূদ। তাদেরকে তাদের কথামত পাহাড়ের এক পাথর থেকে একটি উটনী বের করে দেখানো হয়। কিন্তু অনাচারীর দল ঈমান আনার পরিবর্তে উটনীকেই মেরে ফেলে। যার তিনদিন পর তাদের উপর এক কঠিন বিকট শব্দের আযাব আসে; যা তাদেরকে চিরতরের জন্য চুপ করিয়ে দেয়।
[4] এ ছিল কারূন, যাকে ধন-দৌলতের ভান্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে এই গর্বের শিকার হল যে, এই ধন-দৌলত এই কথার প্রমাণ যে, সে আল্লাহর নিকট সম্মানিত ও প্রিয়পাত্র। আমার মূসার কথা শোনার কি প্রয়োজন? অতঃপর তাকে তার ধন ও প্রাসাদসহ মাটিতে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
[5] এ ছিল ফিরআউন, মিসর রাজ্যের অধিপতি। কিন্তু সীমালংঘন করে সে নিজে ‘রব’ হওয়ার কথা দাবী করে বসে। মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনতে ও তাঁর জাতি বানী ইস্রাঈল যাদেরকে সে দাসে পরিণত করেছিল, তাদেরকে মুক্ত করতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্তু এক দিন সকালে লোহিত সাগরে তার ও তার পূর্ণ সেনাবাহিনীর সলিল সমাধি ঘটানো হয়।
[6] আল্লাহর কাজ কারো উপর অত্যাচার করা নয়। এই জন্য পূর্বের যে সকল জাতির উপর আযাব এসেছিল কেবলমাত্র এই জন্যই তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে যে, তারা কুফর ও শিরক, মিথ্যাজ্ঞান ও পাপাচার করে নিজেরা নিজেদের উপরই অত্যাচার করেছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান