بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২৭/ আন-নামাল | An-Naml | ٱلنَّمْل আয়াতঃ ৯৩ মাক্কী

২৭ : ৩১

اَلَّا تَعۡلُوۡا عَلَیَّ وَ اۡتُوۡنِیۡ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۳۱﴾

الا تعلوا علی و اتونی مسلمین ﴿۳۱﴾
'যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে আস'।

-আল-বায়ান

আমার প্রতি উদ্ধত হয়ো না, অনুগত হয়ে আমার কাছে হাজির হও।

-তাইসিরুল

অহমিকা বশে আমাকে অমান্য করনা, এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও।

-মুজিবুর রহমান

Be not haughty with me but come to me in submission [as Muslims].' "

-Sahih International

৩১. যাতে তোমরা আমার বিরোধিতার ঔদ্ধত্য প্রকাশ না করো এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।(১)

(১) ‘মুসলিম’ হয়ে হাযির হবার দুটি অর্থ হতে পারে। এক, অনুগত হয়ে হাযির হয়ে যাও। দুই, তাওহীদবাদী হয়ে যাও বা দ্বীন ইসলাম গ্ৰহণ করে হাযির হয়ে যাও। প্রথম হুকুমটি সুলাইমানের শাসকসুলভ মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। দ্বিতীয় হুকুমটি সামঞ্জস্য রাখে তার নবীসুলভ মর্যাদার সাথে। [বাগভী; ইবন কাসীর] সম্ভবত এই ব্যাপক অৰ্থবোধক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে পত্রে উভয় উদ্দেশ্য অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) তোমরা অহমিকাবশে আমাকে অমান্য করো না এবং আত্মসমর্পণ করে (মুসলমান হয়ে) আমার নিকট উপস্থিত হও।’[1]

[1] যেমন, নবী (সাঃ) বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদেরকে পত্র দিয়েছিলেন, যাতে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অনুরূপ সুলাইমান (সাঃ) বিলকীসকে পত্র দ্বারা ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আজ-কাল প্রাপকের নাম আগে লেখা হয়। কিন্তু সালাফদের নিয়ম ছিল, প্রেরকের নাম আগে লেখা; যেমন সুলাইমান (আঃ) লিখলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩২

قَالَتۡ یٰۤاَیُّهَا الۡمَلَؤُا اَفۡتُوۡنِیۡ فِیۡۤ اَمۡرِیۡ ۚ مَا كُنۡتُ قَاطِعَۃً اَمۡرًا حَتّٰی تَشۡهَدُوۡنِ ﴿۳۲﴾

قالت یایها الملؤا افتونی فی امری ما كنت قاطعۃ امرا حتی تشهدون ﴿۳۲﴾
সে (রাণী) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তোমরা আমার ব্যাপারে আমাকে অভিমত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া আমি কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।

-আল-বায়ান

সে বলল, ওহে সভাসদরা! তোমরা আমার কর্তব্য সম্পর্কে আমাকে সিদ্ধান্ত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত আমি কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’

-তাইসিরুল

সেই নারী বললঃ হে পরিষদবর্গ! আমার এই সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও; আমি যা সিদ্ধান্ত নিই তাতো তোমাদের উপস্থিতিতেই নিই।

-মুজিবুর রহমান

She said, "O eminent ones, advise me in my affair. I would not decide a matter until you witness [for] me."

-Sahih International

৩২. সে নারী বলল, হে পরিষদবৰ্গা! আমার এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত দাও।(১) আমি কোন ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করি না তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া।

(১) أَفْتُونِي শব্দটি فتوى শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ কোন বিশেষ প্রশ্নের জওয়াব দেয়া। এখানে পরামর্শ দেয়া এবং নিজের মত প্ৰকাশ করা বোঝানো হয়েছে। সম্রাজ্ঞী বিলকীসের কাছে যখন সুলাইমান আলাইহিস সালামের পত্র পৌছল তখন সে তার সভাসদদেরকে একত্রিত করে ঘটনা বর্ণনা করল এবং তাদের পরামর্শ তলব করল যে, এ ব্যাপারে কি করা উচিত। সে তাদের অভিমত জিজ্ঞাসা করার পূর্বে মনোরঞ্জনের জন্য একথাও বলল, আমি তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত কোন ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করি না। [ফাতহুল কাদীর]

এর ফলেই সেনাধ্যক্ষগণ ও মন্ত্রীবর্গ এর জওয়াবে সম্পূর্ণ তৎপরতা সহকারে আদেশ পালনের জন্য সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারে সম্মতি জ্ঞাপন করল। এ থেকে বোঝা গেল যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ গ্ৰহণ করার পদ্ধতি সুপ্রাচীন। ইসলাম পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দান করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বিভিন্ন কাজে সাহাবায়ে কিরামের সাথে পরামর্শ করতেন এবং তাকে পরামর্শ করার নির্দেশও প্ৰদান করা হয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) (বিলকীস) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও। আমি যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৩

قَالُوۡا نَحۡنُ اُولُوۡا قُوَّۃٍ وَّ اُولُوۡا بَاۡسٍ شَدِیۡدٍ ۬ۙ وَّ الۡاَمۡرُ اِلَیۡكِ فَانۡظُرِیۡ مَاذَا تَاۡمُرِیۡنَ ﴿۳۳﴾

قالوا نحن اولوا قوۃ و اولوا باس شدید و الامر الیك فانظری ماذا تامرین ﴿۳۳﴾
তারা বলল, ‘আমরা শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা, আর সিদ্ধান্ত আপনার কাছেই। অতএব চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী নির্দেশ দেবেন’।

-আল-বায়ান

তারা বলল- ‘আমরা শক্তির অধিকারী ও কঠোর যোদ্ধা, কিন্তু সিন্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী আপনিই, কাজেই চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী আদেশ করবেন।’

-তাইসিরুল

তারা বললঃ আমরাতো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। কি আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন।

-মুজিবুর রহমান

They said, "We are men of strength and of great military might, but the command is yours, so see what you will command."

-Sahih International

৩৩. তারা বলল, আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কি আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) ওরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা;[1] তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কি আদেশ করবেন, তা আপনি ভেবে দেখুন।’ [2]

[1] অর্থাৎ, আমাদের শক্তি ও অস্ত্র-শস্ত্র রয়েছে এবং যুদ্ধের সময় আমরা বীরত্বের সাথে লড়ার ক্ষমতাও রাখি। এই জন্য নতি স্বীকার করা ও দমিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

[2] যেহেতু, আমরা আপনার অনুগত, আপনি যে আদেশ করবেন, আমরা তা মান্য করব।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৪

قَالَتۡ اِنَّ الۡمُلُوۡكَ اِذَا دَخَلُوۡا قَرۡیَۃً اَفۡسَدُوۡهَا وَ جَعَلُوۡۤا اَعِزَّۃَ اَهۡلِهَاۤ اَذِلَّۃً ۚ وَ كَذٰلِكَ یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۳۴﴾

قالت ان الملوك اذا دخلوا قریۃ افسدوها و جعلوا اعزۃ اهلها اذلۃ و كذلك یفعلون ﴿۳۴﴾
সে বলল, ‘নিশ্চয় রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার সম্মানিত অধিবাসীদেরকে অপদস্থ করে। আর তা-ই তারা করবে’।

-আল-বায়ান

সে বলল- ‘রাজারা যখন কোন জনপদে ঢুকে তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং তথাকার সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অপমানিত করে ছাড়ে আর এরাও তাই করবে।

-তাইসিরুল

সে বললঃ রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন ওকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে; এরাও এ রূপই করবে।

-মুজিবুর রহমান

She said, "Indeed kings - when they enter a city, they ruin it and render the honored of its people humbled. And thus do they do.

-Sahih International

৩৪. সে নারী বলল, রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তো সেটাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্ত করে, আর এরূপ করাই তাদের রীতি(১);

(১) আর এরূপ করাই তাদের রীতি। এ কথাটি যদি ‘সাবা’ সম্রাজ্ঞীর হয় তবে এর অর্থ দু'টি হতে পারেঃ এক, কথাটি তিনি আগের কথার তাকিদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ রাজা বাদশাহগণ কোন দেশ জোর করে দখল করেন তখন সেখানকার সম্মানিত অধিবাসীদের অসম্মানিত করে তাদের মনে ভয়ভীতি ঢুকিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা তাদের চিরাচরিত নিয়ম। [মুয়াস্‌সার] দুই, অথবা তিনি একথা বলতে চেয়েছেন যে, যেহেতু রাজা-বাদশাহগণ এরূপ করে থাকেন তাই সুলাইমান ও তার সৈন্য-সামন্তরা অনুরূপ কাজই করবে। [জালালাইন] আর যদি এ কথাটি আল্লাহর কথা হয় তবে তা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা সাবা সম্রাজ্ঞীর কথাকে বাস্তব বলে স্বীকৃতি দিলেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) সে বলল, ‘রাজা-বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে,[1] তখন ওকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে; [2] এরাও এরূপই করবে। [3]

[1] অর্থাৎ, শক্তি দ্বারা বিজয়ী হয়ে।

[2] অর্থাৎ হত্যা, লুটতরাজ ও বন্দী করার মাধ্যমে।

[3] কোন কোন তফসীরকারের মতে এটি আল্লাহর উক্তি, যা সাবা’-রাণীর সমর্থনে বলা হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, এটি বিলকীসেরই কথা ও তার শেষাংশ। আর এ মতই বাগধারার বেশী নিকটবর্তী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৫

وَ اِنِّیۡ مُرۡسِلَۃٌ اِلَیۡهِمۡ بِهَدِیَّۃٍ فَنٰظِرَۃٌۢ بِمَ یَرۡجِعُ الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿۳۵﴾

و انی مرسلۃ الیهم بهدیۃ فنظرۃ بم یرجع المرسلون ﴿۳۵﴾
‘আর নিশ্চয় আমি তাদের কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে’।

-আল-বায়ান

আমি তাঁর কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি, দূতেরা কী (জবাব) নিয়ে আসে।’

-তাইসিরুল

আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, দেখি দূতেরা কি বার্তা নিয়ে ফিরে আসে!

-মুজিবুর রহমান

But indeed, I will send to them a gift and see with what [reply] the messengers will return."

-Sahih International

৩৫. আর আমি তো তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, দেখি, দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে।(১)

(১) বিলকীস সুলাইমান আলাইহিস সালামকে পরীক্ষা করার মনস্থ করলেন। তিনি কি নবী নাকি আধিপত্যবাদী অর্থালিপ্সু কোন অত্যাচারী শাসক। তিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনকে বেশী গুরুত্ব দেন নাকি আধিপত্য বিস্তারের গুরুত্ব তার কাছে বেশী। এই পরীক্ষা দ্বারা বিলকিসের লক্ষ্য ছিল এই যে, বাস্তবিকই তিনি নবী হলে তার আদেশ পালন করা হবে এবং বিরোধিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না। পক্ষান্তরে যদি তিনি আধিপত্যবাদের নেশায় আমাদেরকে দাসে পরিণত করতে চান, তবে তার মোকাবেল কিভাবে করা হবে, সে সম্পর্কে চিন্তা করা হবে। [দেখুন: ইবন কাসীর]

এ পরীক্ষার জন্য তিনি সুলাইমান ও তার সভাষদদের জন্য কিছু উপঢৌকন পাঠালেন। যদি তিনি উপঢৌকন পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে বোঝা যাবে যে, তিনি একজন সম্রাটই। পক্ষান্তরে তিনি নবী হলে ইসলাম ও ঈমান ব্যতীত কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হবেন না। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) আমি তার নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি, দূতেরা কি উত্তর আনে।’ [1]

[1] এর দ্বারা অনুমান করা যাবে যে, তিনি পৃথিবীর নিছক কোন রাজা-বাদশা, নাকি আল্লাহর প্রেরিত রসূল। যাঁর উদ্দেশ্য আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। পক্ষান্তরে যদি উপহার গ্রহণ না করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তাঁর উদ্দেশ্য দ্বীনের প্রচার-প্রসার। তখন আমাদের তাঁর অনুসরণ করা ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৬

فَلَمَّا جَآءَ سُلَیۡمٰنَ قَالَ اَتُمِدُّوۡنَنِ بِمَالٍ ۫ فَمَاۤ اٰتٰىنِۦَ اللّٰهُ خَیۡرٌ مِّمَّاۤ اٰتٰىكُمۡ ۚ بَلۡ اَنۡتُمۡ بِهَدِیَّتِكُمۡ تَفۡرَحُوۡنَ ﴿۳۶﴾

فلما جآء سلیمن قال اتمدونن بمال فما اتىن الله خیر مما اتىكم بل انتم بهدیتكم تفرحون ﴿۳۶﴾
অতঃপর দূত যখন সুলাইমানের কাছে আসল, তখন সে বলল, ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাচ্ছ? সুতরাং আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে উত্তম। বরং তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে খুশি হও’।

-আল-বায়ান

অতঃপর দূতরা যখন সুলাইমানের কাছে আসল, সুলাইমান বলল- ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ, কিন্তু আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম, বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে আনন্দ কর।

-তাইসিরুল

অতঃপর যখন দূত সুলাইমানের নিকট এলো তখন সুলাইমান বললঃ তোমরা আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে কি সাহায্য করবে? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট। অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে আনন্দ বোধ করছ।

-মুজিবুর রহমান

So when they came to Solomon, he said, "Do you provide me with wealth? But what Allah has given me is better than what He has given you. Rather, it is you who rejoice in your gift.

-Sahih International

৩৬. অতঃপর দূত সুলাইমানের কাছে আসলে সুলাইমান বললেন, তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ? আল্লাহ্‌ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট(১) বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ কর।(২)

(১) এখানে সুলাইমান আলাইহিস সালাম হাদীয়া বা উপঢৌকন গ্ৰহণ করেননি। এটা কি এ জন্যে যে, কাফেরের উপঢৌকন গ্রহণ করা জায়েয নেই নাকি তিনি এজন্যে গ্ৰহণ করেননি যে, ঈমান ও ইসলাম ছাড়া তার কাছে আর কোন কিছুর তেমন গুরুত্বই নেই। শেষোক্তটিই এখানে বেশী স্পষ্ট। তারপর এটাও আমাদের জানা দরকার যে, কাফেরদের দেয়া হাদীয়া বা উপঢৌকন গ্রহণ করা যাবে কি না? এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’ধরনের সহীহ বৰ্ণনা এসেছে। কখনও কখনও তিনি গ্ৰহণ করেছেন আবার কখনো কখনো তিনি কাফের-মুশরিকদের হাদীয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন এবং বলেছেন আমি মুশরিকদের হাদীয়া বা উপঢৌকন গ্রহণ করি না।

এমতাবস্থায় সঠিক মত হলো, যদি কাফেরের হাদীয়া বা উপঢৌকন গ্ৰহণ করার মাধ্যমে দ্বীনি কোন স্বাৰ্থ থাকে যেমন সে ইসলাম গ্ৰহণ করবে বা তার শক্ৰতা থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকবে তখন তা গ্রহণ জায়েয। আর যদি এটা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের অন্তরে ইসলাম সম্পর্কে ভিন্ন কোন ধারনা সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ থাকে। তবে তা গ্রহণ করা জায়েয নয়। মূলকথাঃ পুরো ব্যাপারটি দ্বীনী “মাসলাহাত” বা স্বাৰ্থ চিন্তা করে করতে হবে। [দেখুন: কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ হাদীয়া ও উপঢৌকন নিয়ে খুশী হওয়া তোমাদের কাজ, আমার কাজ নয়। কারণ, তোমরা দুনিয়ার সম্পদ ভালবাসো। আমি দুনিয়ার সম্পদের তোয়াক্কা করি না। আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন তদুপরি তিনি আমাকে নবুওয়তও দিয়েছেন। আমি সম্পদ চাই না, চাই তোমাদের ঈমান। অহংকার ও দাম্ভীকতার প্রকাশ এ কথা বা কাজের উদ্দেশ্য নয়। আসল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের অর্থ-সম্পদ আমার লক্ষ্য নয় বরং তোমরা ঈমান আনো এটাই আমার কাম্য। [ফাতহুল কাদীর]

তোমরা কি মনে করেছ যে সম্পদ নিয়ে আমি তোমাদেরকে শির্ক এর উপর রেখে দেব? তোমাদের সম্পদের তুলনায় আমার রব নবুওয়ত ও রাজত্বের আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা ঢের বেশী। কাজেই তোমাদের সম্পদের প্রতি আমার লোভাতুর হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। হাদীয়া নিয়ে তোমরাই খুশী হয়ে থাক, আমি তো কেবল ইসলাম অথবা তরবারী এ দু’টোর যে কোন একটায় শুধু খুশী হই। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) দূত সূলাইমানের নিকট এলে (সুলাইমান) বলল, ‘তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও?[1] আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা হতে শ্রেষ্ঠ। বরং তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে খোশ হও। [2]

[1] তোমরা কি প্রত্যক্ষ করো না যে, মহান আল্লাহ আমাকে সমস্ত কিছু দান করেছেন। সুতরাং এ সব উপহার দিয়ে আমার ধন দৌলতে কি এমন বৃদ্ধি সাধন করতে পার? এটি অস্বীকৃতিমূলক প্রশ্ন। অর্থাৎ, কিছুই বৃদ্ধি করতে পার না।

[2] এটি তিরস্কার স্বরূপ বলা হয়েছে যে, তোমরাই এই সব উপহার নিয়ে গর্ব কর ও আনন্দ উপভোগ কর। আমি তো এ নিয়ে আনন্দিত হতে পারি না। কারণ প্রথমতঃ পার্থিব সম্পদ আমার উদ্দেশ্যই নয়। দ্বিতীয়তঃ মহান আল্লাহ আমাকে এমন কিছু দিয়েছেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকেই দেননি। তৃতীয়তঃ আমাকে নবুঅতের সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৭

اِرۡجِعۡ اِلَیۡهِمۡ فَلَنَاۡتِیَنَّهُمۡ بِجُنُوۡدٍ لَّا قِبَلَ لَهُمۡ بِهَا وَ لَنُخۡرِجَنَّهُمۡ مِّنۡهَاۤ اَذِلَّۃً وَّ هُمۡ صٰغِرُوۡنَ ﴿۳۷﴾

ارجع الیهم فلناتینهم بجنود لا قبل لهم بها و لنخرجنهم منها اذلۃ و هم صغرون ﴿۳۷﴾
‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাও। তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে এমন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় বের করে দেব আর তারা অপমানিত।’

-আল-বায়ান

তাদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবালা করার শক্তি তাদের নেই, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদেরকে অপমানিত করে সেখানে থেকে বের করে দেব আর তারা হবে অপদস্থ।’

-তাইসিরুল

তাদের নিকট ফিরে যাও, আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসব এক সৈন্যবাহিনী যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান হতে বহিস্কার করব লাঞ্ছিতভাবে এবং তারা হবে অপমানিত।

-মুজিবুর রহমান

Return to them, for we will surely come to them with soldiers that they will be powerless to encounter, and we will surely expel them therefrom in humiliation, and they will be debased."

-Sahih International

৩৭. তাদের কাছে ফিরে যাও, অতঃপর আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসব এক সৈন্য বাহিনী যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আর আমরা অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে বহিস্কৃত করব লাঞ্ছিতভাবে এবং তারা হবে অপদস্থ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) ওদের নিকট তুমি ফিরে যাও,[1] আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হব, যার মুকাবিলা করার শক্তি ওদের নেই। আমি অবশ্যই ওদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিতভাবে বহিষ্কৃত করব এবং ওরা হবে অবনমিত।’ [2]

[1] এখানে একবচন ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও এর আগে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, কখনো পুরো দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। আবার কখনো কেবল তাদের নেতাকে।

[2] সুলাইমান (আঃ) কেবলমাত্র সম্রাট ছিলেন না বরং নবীও ছিলেন। সেই কারণে তাঁর পক্ষ হতে মানুষকে ছোট করে লাঞ্ছিত করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু যুদ্ধের পরিণাম এই হয়ে থাকে। কারণ, যুদ্ধ হচ্ছে হত্যা, রক্তপাত ও বন্দী করারই নাম। অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা বলতে তাই বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর কোন নবী মানুষকে শুধু শুধু অপমান করতে পারেন না। যেমন, যুদ্ধের সময় মহানবী (সাঃ)-এর সুন্দর নীতি ও উত্তম আদর্শ ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৮

قَالَ یٰۤاَیُّهَا الۡمَلَؤُا اَیُّكُمۡ یَاۡتِیۡنِیۡ بِعَرۡشِهَا قَبۡلَ اَنۡ یَّاۡتُوۡنِیۡ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۳۸﴾

قال یایها الملؤا ایكم یاتینی بعرشها قبل ان یاتونی مسلمین ﴿۳۸﴾
সুলাইমান বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার (রাণীর) সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে’?

-আল-বায়ান

সুলাইমান বলল- ‘হে সভাসদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে?’

-তাইসিরুল

সুলাইমান আরও বললঃ হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আমার নিকট এসে আত্মসমর্পন করার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে?

-মুজিবুর রহমান

[Solomon] said, "O assembly [of jinn], which of you will bring me her throne before they come to me in submission?"

-Sahih International

৩৮. সুলাইমান বললেন, হে পরিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে(১) আমার কাছে আসার(২) আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে?

(১) মূলে مسلمين শব্দ আছে। যার আভিধানিক অর্থ, আত্মসমৰ্থন। এখানে কোন কোন মুফাস্‌সির আভিধানিক অর্থ হওয়াটাকেই বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা, সে তখনো ইসলাম গ্ৰহণ করেনি। সে মূলতঃ আত্মসমৰ্পন করতেই আসছিল। পরবর্তী বিভিন্ন আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, সাবার রাণী সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবারে আসার পর বিভিন্ন নিদর্শণাবলী দেখার পর ঈমান এনেছিল। তাই এখানে ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ গ্রহণই অধিক যুক্তিসম্মত। [দেখুন, মুয়াসসার] তবে এখানে পারিভাষিক অর্থে মুসলিম হয়ে যাওয়ার অর্থও গ্রহণ করা যেতে পারে। কারণ, যদি মুসলিম হয়ে যায় তবে তার সম্পপদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা'দী]

(২) সুলাইমান আলাইহিস সালামের কথা ও কর্মকান্ড ও তার প্রতিপত্তি দেখে সাবার রাণীর দূতগণ। হতভম্ব হয়ে প্রত্যাবর্তন করল। সুলাইমান আলাইহিস সালামের যুদ্ধ ঘোষণার কথা শুনিয়ে দিলে সাবার রাণী তার সম্প্রদায়কে বলল, পূর্বেও আমার এই ধারণা ছিল যে, সুলাইমান দুনিয়ার সম্রাটদের ন্যায় কোন সম্রাট নন; বরং তিনি আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ পদমর্যাদাও লাভ করেছেন। আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নামান্তর। এরূপ শক্তি আমাদের নেই। এ কথা বলে সে সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবারে হাযির হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিল। সুলাইমান আলাইহিস সালাম সেটা বুঝতে পেরে তার সভাষদদের মধ্যে জানতে চাইলেন যে, কে এমন আছে যে বিলকীসের সিংহাসনটি সে আসার আগেই এখানে আনতে পারে? কারণ, তিনি চাইলেন যে বিলকীস রাজকীয় শক্তি ও শান-শওকতের সাথে একটি নবীসুলভ মু'জিযাও প্রত্যক্ষ করুক। এটা তার ঈমান আনার অধিক সহায়ক হবে। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) (সুলাইমান) বলল, ‘হে আমার পারিষদবর্গ! তারা আমার নিকট আত্মসমর্পণ করে (মুসলমান হয়ে) আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’ [1]

[1] সুলাইমান (আঃ)-এর উত্তরে রাণী অনুমান করতে পারলেন যে, তিনি সুলাইমানের মুকাবিলা করতে পারবেন না। অতএব তিনি বশ্যতা স্বীকার করে অনুগত হয়ে আসার প্রস্তুতি শুরু করলেন। সুলাইমান (আঃ)ও তাঁর আগমন সংবাদ পেয়ে তাঁকে নিজ নবীসুলভ মু’জিযা (অলৌকিক শক্তি) দেখানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন এবং তাঁর পৌঁছনোর পূর্বেই তাঁর সিংহাসন নিজের কাছে আনার ব্যবস্থা করলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৩৯

قَالَ عِفۡرِیۡتٌ مِّنَ الۡجِنِّ اَنَا اٰتِیۡكَ بِهٖ قَبۡلَ اَنۡ تَقُوۡمَ مِنۡ مَّقَامِكَ ۚ وَ اِنِّیۡ عَلَیۡهِ لَقَوِیٌّ اَمِیۡنٌ ﴿۳۹﴾

قال عفریت من الجن انا اتیك بهٖ قبل ان تقوم من مقامك و انی علیه لقوی امین ﴿۳۹﴾
এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।

-আল-বায়ান

এক শক্তিধর জ্বিন বলল- ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে উঠবার আগে আমি তা আপনার কাছে এনে দেব, এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।

-তাইসিরুল

এক শক্তিশালী জিন বললঃ আপনি আপনার স্থান হতে উঠার পূর্বে আমি ওটা আপনার নিকট এনে দিব এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান, বিশ্বস্ত।

-মুজিবুর রহমান

A powerful one from among the jinn said, "I will bring it to you before you rise from your place, and indeed, I am for this [task] strong and trustworthy."

-Sahih International

৩৯. এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার আগেই আমি তা এনে দেব(১) এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই শক্তিমান, বিশ্বস্ত।(২)

(১) সুলাইমান আলাইহিস সালামের নিয়ম ছিল যে, তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাষ্ট্র, বিচারকাজ ও খাওয়া দাওয়ার জন্য মজলিসে বসতেন। তাই জিনটি বলেছিল, আপনি সে বসা শেষ করার আগেই আমি সে সিংহাসনটি নিয়ে হাযির হব। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ আপনি আমার প্রতি আস্থা রাখতে পারেন, আমি নিজে তার কোন মূল্যবান জিনিস চুরি করে নেব না। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) এক শক্তিশালী জীন বলল, ‘আপনি আপনার বৈঠক[1] হতে উঠবার পূর্বে আমি তা এনে দেব[2] এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান, বিশ্বস্ত।’ [3]

[1] এখানে বৈঠক বা সভা বলতে বিচার সভাকে বুঝানো হয়েছে, যা বিচারের জন্য সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত চলত।

[2] এখান হতে বুঝা গেল যে, সে নিশ্চিতভাবে এক জীন ছিল। যাদেরকে মহান আল্লাহ মানুষের তুলনায় অসাধারণ শক্তি দান করেছেন। কেননা, সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, কোন মানুষের পক্ষে এ সম্ভব নয় যে, বায়তুল মাকদিস হতে ইয়ামানের সাবা’ বা মা’রাব গিয়ে সিংহাসন তুলে আনবে এবং আসা-যাওয়ার তিন হাজার মাইল পথ ৩/৪ ঘণ্টার ভিতরে অতিক্রম করে নেবে। একজন মানুষ সে যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, এত বিশাল সিংহাসন উঠানো সম্ভব নয়। আর যদি কোন কিছুর সাহায্যে উঠানো সম্ভব হয়েও থাকে, তবুও এত অল্প সময়ে এত দূর পথ অতিক্রম করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।

[3] অর্থাৎ, আমি উঠিয়ে আনতেও সক্ষম এবং ওর মধ্যে কোন কিছু রদ্-বদলও করব না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২৭ : ৪০

قَالَ الَّذِیۡ عِنۡدَهٗ عِلۡمٌ مِّنَ الۡكِتٰبِ اَنَا اٰتِیۡكَ بِهٖ قَبۡلَ اَنۡ یَّرۡتَدَّ اِلَیۡكَ طَرۡفُكَ ؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسۡتَقِرًّا عِنۡدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنۡ فَضۡلِ رَبِّیۡ ۟ۖ لِیَبۡلُوَنِیۡۤ ءَاَشۡكُرُ اَمۡ اَكۡفُرُ ؕ وَ مَنۡ شَكَرَ فَاِنَّمَا یَشۡكُرُ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّیۡ غَنِیٌّ كَرِیۡمٌ ﴿۴۰﴾

قال الذی عندهٗ علم من الكتب انا اتیك بهٖ قبل ان یرتد الیك طرفك فلما راه مستقرا عندهٗ قال هذا من فضل ربی لیبلونی ءاشكر ام اكفر و من شكر فانما یشكر لنفسهٖ و من كفر فان ربی غنی كریم ﴿۴۰﴾
যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’।

-আল-বায়ান

যার কাছে কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান ছিল সে বলল- ‘আপনার দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব।’ সুলাইমান যখন তা তার সামনে রক্ষিত দেখতে পেল তখন সে বলল- ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য- আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ।’

-তাইসিরুল

কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বললঃ আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি ওটা আপনাকে এনে দিব। সুলাইমান যখন ওটা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন সে বললঃ এটা আমার রবের অনুগ্রহ যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় সে জেনে রাখুক যে, আমার রাব্ব অভাবমুক্ত, মহানুভব।

-মুজিবুর রহমান

Said one who had knowledge from the Scripture, "I will bring it to you before your glance returns to you." And when [Solomon] saw it placed before him, he said, "This is from the favor of my Lord to test me whether I will be grateful or ungrateful. And whoever is grateful - his gratitude is only for [the benefit of] himself. And whoever is ungrateful - then indeed, my Lord is Free of need and Generous."

-Sahih International

৪০. কিতাবের জ্ঞান যার ছিল(১), সে বলল, আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলাইমান যখন তা সামনে স্থির অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, এ আমার রব-এর অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, সে জেনে রাখুক যে, আমার রব অভাবমুক্ত, মহানুভব।(২)

(১) বলা হয়েছেঃ ‘কিতাবের জ্ঞান যার কাছে ছিল সে বলল’ এখানে কিতাবের জ্ঞান কার কাছে ছিল তার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এ ব্যক্তি কে ছিল, তার কাছে কোন বিশেষ ধরনের জ্ঞান ছিল এবং যে কিতাবের জ্ঞান তার আয়ত্ত্বাধীন ছিল সেটি কোন কিতাব ছিল, এ সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত ও নিশ্চিত কথা বলা সম্ভবপর নয়। কুরআনে বা কোন সহীহ হাদীসে এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করা হয়নি। তাফসীরকারদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলেন, সে ছিল একজন ফেরেশতা আবার কেউ কেউ বলেন, একজন মানুষই ছিল। তারপর সে মানুষটিকে চিহ্নিত করার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এভাবে কিতাব সম্পর্কেও মুফাস্‌সিরগণের বিভিন্ন বক্তব্য পেশ করেছেন।

কেউ বলেন, এর অর্থ লাওহে মাহফুজ এবং কেউ বলেন, শরীআতের কিতাব। কিন্তু এগুলো সবই নিছক অনুমান। আর কিতাব থেকে ঐ অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কেও বিনা যুক্তি-প্রমাণে ঐ একই ধরনের অনুমানের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে এমন সম্ভাবনাও আছে যে, স্বয়ং সুলাইমান আলাইহিস সালামই তিনি। কেননা, আল্লাহর কিতাবের সর্বাধিক জ্ঞান তারই বেশী ছিল। এমতাবস্থায় গোটা ব্যাপারটাই একটা মু'জিযা এবং সাবার রাণীকে নবীসুলভ মু'জিযা দেখানোই উদ্দেশ্য ছিল। কাজেই এ ব্যাপারে আপত্তির কোন কিছু নেই। কিন্তু অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে, এ লোক সুলাইমান আলাইহিস সালামের সহচর ছিলেন, যার নাম ছিলঃ আসেফ ইবন বরখিয়া। সে হিসেবে এটা একটি কারামত ছিল। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]।

এখানে মু'জিযা ও কারামাতের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বর্ণনা করছিঃ

১. মু'জিযা নবুওয়তের দাবীর সাথে সম্পৃক্ত। আর কারামতের ব্যাপারে এ দাবী থাকতে পারে না।

২. মু'জিযা নবীর ইচ্ছাধীন। তিনি সেটা দেখাতে ও প্রকাশে সমর্থ হন। পক্ষান্তরে কারামত দেখাবার ব্যাপার নয়। আল্লাহ্ তা'আলা কারামতের মাধ্যমে নবীর উম্মতের মধ্যে যাকে ইচ্ছে সম্মানিত করেন। তারা প্ৰকাশ্য সৎকর্মশীল লোকই হয়ে থাকেন।

৩. নবীদের মু'জিযার উপরে তার উম্মাতের কারো কারামত প্রাধান্য পেতে পারে না। অর্থাৎ নবীর মু'জিযা জাতীয় হবে। নবীকে ছাড়িয়ে কেউ কারামত দেখাতে পারে না।

৪. কারামত মূলতঃ নবীর মু'জিযারই অংশ। নবীর অনুসরণ না করলে কারামত কখনো হাসিল হতে পারে না। যারা নবীর অনুসরণ করবে না তারা যদি এ ধরণের কিছু দেখায় তবে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, সেটা কোন যাদু বা সম্মোহনী অথবা ধোঁকার অংশ। [ইমাম আল-লালকায়ী, কারামাতু আওলিয়ায়িল্লাহ এর ভূমিকা; ইবন তাইমিয়্যাহ, আন-নুবুওয়াত ৫০৩; উমর সুলাইমান আল-আশকার; আর-রুসুল ওয়ার রিসালাহ]

(২) অর্থাৎ তিনি কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মুখাপেক্ষী নন। কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফলে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সামান্য পরিমাণও বৃদ্ধি পায় না। আবার কারো অকৃতজ্ঞতার ফলে তাতে এক চুল পরিমাণ কমতিও হয় না। তিনি নিজস্ব শক্তি বলে সর্বময় কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। বান্দাদের মানা না মানার উপর তাঁর কর্তৃত্ব নির্ভরশীল নয়। কুরআন মজীদে একথাটিই এক জায়গায় মূসার মুখ দিয়ে উদ্ধৃত করা হয়েছেঃ “যদি তোমরা এবং সারা দুনিয়াবাসীরা মিলে কুফরী করো তাহলেও তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না, তিনি অমুখাপেক্ষী এবং আপনি সত্তায় আপনি প্রশংসিত।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৮]

অনুরূপভাবে, নিম্নোক্ত হাদীসে কুদসীতেও এ একই বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছেঃ “মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী ব্যক্তির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে তার ফলে আমার বাদশাহী ও শাসন কর্তৃত্বে কিছুমাত্র বৃদ্ধি ঘটে না। হে আমার বান্দারা! যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমরা সকল মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে বেশী বদকার ব্যক্তিটির হৃদয়ের মতো হয়ে যাও, তাহলে এর ফলে আমার বাদশাহীতে কোন কমতি দেখা যাবে না। হে আমার বান্দারা! এগুলো তোমাদের নিজেদেরই কর্ম, তোমাদের হিসেবের খাতায় আমি এগুলো গণনা করি, তারপর এগুলোর পুরোপুরি প্রতিদান আমি তোমাদের দিয়ে থাকি। কাজেই যার ভাগ্যে কিছু কল্যাণ এসেছে তার উচিত। আল্লাহর শোকরগুজারী করা এবং যে অন্যকিছু লাভ করেছে সে যেন নিজেকেই ভর্ৎসনা করে।” [মুসলিমঃ ২৫৭৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) গ্রন্থের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা এনে দেব।’[1] সুতরাং সুলাইমান যখন তা সম্মুখে উপস্থিত দেখল, তখন সে বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ, না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণের জন্য করে এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।’

[1] যে এ কথা বলল, সে কে ছিল? কিতাব কি ছিল? আর জ্ঞানই বা কি ছিল? যার জোরে সে এ দাবী করেছিল? এ ব্যাপারে তফসীরকারদের মাঝে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই তিনের বাস্তব একমাত্র আল্লাহই জানেন। এখানে কুরআনের শব্দ থেকে যা বুঝা যায় তা হল, সে ছিল মানুষ। তার নিকট ছিল আল্লাহর কোন কিতাবের জ্ঞান। আল্লাহ তাকে কারামত বা মু’জিযাস্বরূপ এ শক্তি দান করলেন এবং চোখের পলকে সিংহাসন এনে উপস্থিত করল। কারামত বা মু’জিযা নামই এমন কাজের যা বাহ্যিক কারণ ও নৈসর্গিক কাজের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর তা একমাত্র আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই জন্য ঐ ব্যক্তির শক্তিতে বিস্ময় প্রকাশের কিছু নেই এবং তার ঐ কিতাবী জ্ঞান কি ছিল তা নিয়ে গবেষণারও কোন প্রয়োজন নেই; যা এখানে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এ ছিল সেই ব্যক্তির পরিচয় যার দ্বারা এই কাজ সম্পাদিত হয়েছে। তাছাড়া বাস্তবে এ শুধু আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন, যিনি চোখের পলকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সুলাইমান (আঃ)ও এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। সেই জন্য তিনি যখন দেখলেন যে, সিংহাসন উপস্থিত, তখন তিনি এ ঘটনাকে প্রভুর অনুগ্রহ ও কৃপা বলেই ব্যক্ত করলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 পরের পাতা »