بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২৫/ আল-ফুরকান | Al-Furqan | سورة الفرقان আয়াতঃ ৭৭ মাক্কী
২৫ : ৩১ وَ كَذٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِیٍّ عَدُوًّا مِّنَ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ؕ وَ كَفٰی بِرَبِّكَ هَادِیًا وَّ نَصِیۡرًا ﴿۳۱﴾
و كذلك جعلنا لكل نبی عدوا من المجرمین و كفی بربك هادیا و نصیرا ﴿۳۱﴾
• আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি। আর পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট।

-আল-বায়ান

• এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য হতে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।

-তাইসিরুল

• এভাবেই প্রত্যেক নাবীর জন্য আমি অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু করেছি। তোমার জন্য তোমার রাব্ব পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী রূপে যথেষ্ট।

-মুজিবুর রহমান

• And thus have We made for every prophet an enemy from among the criminals. But sufficient is your Lord as a guide and a helper.

-Sahih International

৩১. আল্লাহ বলেন, আর এভাবেই আমরা প্ৰত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের থেকে শক্ৰ বানিয়ে থাকি। আর আপনার রবই পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে যথেষ্ট।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছিলাম।[1] তোমার জন্য তোমার প্রতিপালকই পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে যথেষ্ট। [2]

[1] অর্থাৎ, হে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)! যেরূপ তোমার জাতির ঐ সমস্ত লোক তোমার শত্রু যারা কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছে, এইরূপ পূর্ববর্তী উম্মতেও ছিল। অর্থাৎ, প্রত্যেক নবীর শত্রু ওরাই হয়, যারা পাপী, তারা অন্যদেরকে ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে। সূরা আনআমের ১১২নং আয়াতে এই বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

[2] অর্থাৎ, কাফেররা যদিও অন্যদেরকে আল্লাহর পথে বাধা দেয়, কিন্তু তোমার প্রভু যাকে হিদায়াত দিতে চান, তাকে হিদায়াত হতে কে বাধা দিতে পারে? সত্যিকার হিদায়াতদানকারী ও সাহায্যকারী তো শুধুমাত্র তোমার প্রভু।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩২ وَ قَالَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا لَوۡ لَا نُزِّلَ عَلَیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ جُمۡلَۃً وَّاحِدَۃً ۚۛ كَذٰلِكَ ۚۛ لِنُثَبِّتَ بِهٖ فُؤَادَكَ وَ رَتَّلۡنٰهُ تَرۡتِیۡلًا ﴿۳۲﴾
و قال الذین كفروا لو لا نزل علیه القران جملۃ واحدۃ كذلك لنثبت بهٖ فؤادك و رتلنه ترتیلا ﴿۳۲﴾
• আর কাফিররা বলে, ‘তার উপর পুরো কুরআন একসাথে কেন নাযিল করা হল না? এটা এজন্য যে, আমি এর মাধ্যমে তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করব। আর আমি তা আবৃত্তি করেছি ধীরে ধীরে।

-আল-বায়ান

• কাফিররা বলে- তার কাছে পুরো কুরআন এক সাথে অবতীর্ণ করা হল না কেন? আমি এভাবেই অবতীর্ণ করেছি। তোমার হৃদয়কে তা দ্বারা সুদৃঢ় করার জন্য আমি তোমার কাছে তা ধীরে ধীরে পরিকল্পিত স্তরে ক্রমশঃ আবৃত্তি করিয়েছি।

-তাইসিরুল

• কাফিরেরা বলেঃ সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারেই অবতীর্ণ হলনা কেন? এভাবেই অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমার হৃদয় ওর দ্বারা মযবূত হয় এবং তা সম্পূর্ণ রুপে আস্তে আস্তে আত্মস্থ করতে পার।

-মুজিবুর রহমান

• And those who disbelieve say, "Why was the Qur'an not revealed to him all at once?" Thus [it is] that We may strengthen thereby your heart. And We have spaced it distinctly.

-Sahih International

৩২. আর কাফেররা বলে, সমগ্র কুরআন তার কাছে একবারে নাযিল হলো না কেন? এভাবেই আমরা নাযিল করেছি আপনার হৃদয়কে তা দ্বারা মযবুত করার জন্য এবং তা ক্রমে ক্ৰমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) অবিশ্বাসীরা বলে, ‘সমগ্র কুরআন তার নিকট একেবারে অবতীর্ণ করা হল না কেন?’ [1] এ আমি তোমার নিকট এভাবেই (কিছু কিছু করে) অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি তোমার হৃদয়কে শক্ত ও দৃঢ় করার জন্য। [2]

[1] যেমন তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর একেবারে অবতীর্ণ হয়েছিল।

[2] আল্লাহ উত্তরে বলছেন, আমি অবস্থা অনুসারে ও প্রয়োজন মত এই কুরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে কিছু কিছু করে অবতীর্ণ করেছি। যাতে হে নবী তোমার ও ঈমানদারদের অন্তর সুদৃঢ় হয় এবং যাতে তাদের সুন্দরভাবে মুখস্থ হয়ে যায়। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে। {وَقُرْآنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنزِيلًا} অর্থাৎ, আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড-খন্ডভাবে, যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা বানী ঈস্রাইল ১০৬ আয়াত) এই কুরআন বৃষ্টির পানির মত। বৃষ্টি হলে মৃত পৃথিবী তার জীবন ফিরে পায়। আর এই উপকার তখনই সাধিত হবে, যখন প্রয়োজন ও পরিমাণ মত বৃষ্টি হবে। বছরের সমস্ত পানি একবারে বর্ষণ হলে এ উপকার স‎ম্ভব নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৩ وَ لَا یَاۡتُوۡنَكَ بِمَثَلٍ اِلَّا جِئۡنٰكَ بِالۡحَقِّ وَ اَحۡسَنَ تَفۡسِیۡرًا ﴿ؕ۳۳﴾
و لا یاتونك بمثل الا جئنك بالحق و احسن تفسیرا ﴿۳۳﴾
• আর তারা তোমার কাছে যে কোন বিষয়ই নিয়ে আসুক না কেন, আমি এর সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি।

-আল-বায়ান

• তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।

-তাইসিরুল

• তারা তোমার নিকট এমন কোন সমস্যা উপস্থিত করেনি যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।

-মুজিবুর রহমান

• And they do not come to you with an argument except that We bring you the truth and the best explanation.

-Sahih International

৩৩. আর তারা আপনার কাছে যে বিষয়ই উপস্থিত করে না কেন, আমরা সেটার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আপনার কাছে নিয়ে আসি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) ওরা তোমার নিকট কোন সমস্যা উপস্থিত করলেই আমি তোমাকে ওর সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা দান করি। [1]

[1] এখানে সময়ের ব্যবধানে কিছু কিছু করে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, মুশরিকরা যখনই কোন উদাহরণ অথবা আপত্তি বা কোন সন্দেহ উপস্থাপিত করবে, আমি তখনই কুরআনের মাধ্যমে তার উত্তর বা ব্যাখ্যা প্রদান করব। এর ফলে তাদের অন্যদেরকে পথহারা করার সুযোগ থাকবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৪ اَلَّذِیۡنَ یُحۡشَرُوۡنَ عَلٰی وُجُوۡهِهِمۡ اِلٰی جَهَنَّمَ ۙ اُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَّ اَضَلُّ سَبِیۡلًا ﴿۳۴﴾
الذین یحشرون علی وجوههم الی جهنم اولٓئك شر مكانا و اضل سبیلا ﴿۳۴﴾
• যাদেরকে মুখের উপর ভর দেয়া অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে। এরা মর্যাদায় অধিক নিকৃষ্ট এবং পথের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট।

-আল-বায়ান

• যাদেরকে মুখের ভরে জাহান্নামের পানে একত্রিত করা হবে, তারা মর্যাদার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট আর পথের দিক থেকে সবচেয়ে গুমরাহ্।

-তাইসিরুল

• যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তাদেরই স্থান হবে অতি নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট।

-মুজিবুর রহমান

• The ones who are gathered on their faces to Hell - those are the worst in position and farthest astray in [their] way.

-Sahih International

৩৪. যাদেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তারা স্থানের দিক থেকে অতি নিকৃষ্ট এবং অধিক পথভ্রষ্ট।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় একত্রিত করা হবে ও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, ওদেরই স্থান হবে অতি নিকৃষ্ট এবং ওরাই পথভ্রষ্ট ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৫ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡكِتٰبَ وَ جَعَلۡنَا مَعَهٗۤ اَخَاهُ هٰرُوۡنَ وَزِیۡرًا ﴿ۚۖ۳۵﴾
و لقد اتینا موسی الكتب و جعلنا معهٗ اخاه هرون وزیرا ﴿۳۵﴾
• আর আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার সাথে তার ভাই হারূনকে সাহায্যকারী বানিয়েছিলাম।

-আল-বায়ান

• আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম আর তার সাথে তার ভাই হারূনকে আমি সাহায্যকারী বানিয়েছিলাম।

-তাইসিরুল

• আমিতো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার ভাই হারূনকে তার সাহায্যকারী করেছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

• And We had certainly given Moses the Scripture and appointed with him his brother Aaron as an assistant.

-Sahih International

৩৫. আর আমরা তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার সাথে তাঁর ভাই হারূনকে সাহায্যকারী করেছিলাম,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) আমি অবশ্যই মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম এবং তার ভাই হারূনকে করেছিলাম তার সহযোগী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৬ فَقُلۡنَا اذۡهَبَاۤ اِلَی الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا ؕ فَدَمَّرۡنٰهُمۡ تَدۡمِیۡرًا ﴿ؕ۳۶﴾
فقلنا اذهبا الی القوم الذین كذبوا بایتنا فدمرنهم تدمیرا ﴿۳۶﴾
• অতঃপর আমি বলেছিলাম, তোমরা দু’জন সেই কওমের নিকট যাও, যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলাম।

-আল-বায়ান

• অতঃপর তাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা সেই জাতির নিকট যাও যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ অতঃপর আমি তাদেরকে পূর্ণ বিধ্বস্তিতে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলাম।

-তাইসিরুল

• এবং বলেছিলামঃ তোমরা সেই সম্প্রদায়ের নিকট যাও যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছে; অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

• And We said, "Go both of you to the people who have denied Our signs." Then We destroyed them with [complete] destruction.

-Sahih International

৩৬. অতঃপর আমরা বলেছিলাম, তোমরা সে সম্প্রদায়ের কাছে যাও যারা আমার নিদর্শনাবলীতে মিথ্যারোপ করেছে।(১) তারপর আমরা তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করেছিলাম;

(১) এতে ফিরআউন সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা অভিহিত করেছে। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) এবং বলেছিলাম, ‘তোমরা সে সম্প্রদায়ের নিকট যাও, যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যাজ্ঞান করেছে।’ অতঃপর আমি সে সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করেছিলাম।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৭ وَ قَوۡمَ نُوۡحٍ لَّمَّا كَذَّبُوا الرُّسُلَ اَغۡرَقۡنٰهُمۡ وَ جَعَلۡنٰهُمۡ لِلنَّاسِ اٰیَۃً ؕ وَ اَعۡتَدۡنَا لِلظّٰلِمِیۡنَ عَذَابًا اَلِیۡمًا ﴿ۚۖ۳۷﴾
و قوم نوح لما كذبوا الرسل اغرقنهم و جعلنهم للناس ایۃ و اعتدنا للظلمین عذابا الیما ﴿۳۷﴾
• আর নূহের কওমকে, যখন তারা রাসূলদেরকে অস্বীকার করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আর আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।

-আল-বায়ান

• আর নূহের জাতি যখন রসূলদেরকে মিথ্যারোপ করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম, আর মানুষের জন্য তাদেরকে নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আমি যালিমদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।

-তাইসিরুল

• আর নূহের সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করে রাখলাম; যালিমদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।

-মুজিবুর রহমান

• And the people of Noah - when they denied the messengers, We drowned them, and We made them for mankind a sign. And We have prepared for the wrongdoers a painful punishment.

-Sahih International

৩৭. আর নূহের সম্প্রদায়কেও, যখন তারা রাসূলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করল(১) তখন আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। আর শাস্তি প্ৰস্তুত করে রেখেছি।

(১) এর উদ্দেশ্য এই যে, তারা স্বয়ং নূহ আলাইহিস সালামের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। দ্বীনের মূলনীতি সকল নবীগণের বেলায়ই অভিন্ন, তাই একজনের প্রতি মিথ্যারোপ সবার প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। [বাগভী, মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) নূহের সম্প্রদায় যখন রসূলগণকে মিথ্যা মনে করল, তখন আমি ওদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং ওদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আমি মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৮ وَّ عَادًا وَّ ثَمُوۡدَا۠ وَ اَصۡحٰبَ الرَّسِّ وَ قُرُوۡنًۢا بَیۡنَ ذٰلِكَ كَثِیۡرًا ﴿۳۸﴾
و عادا و ثمودا و اصحب الرس و قرونا بین ذلك كثیرا ﴿۳۸﴾
• আর ধ্বংস ‘আদ, সামূদ, ‘রাস’ এর অধিবাসী এবং তাদের মধ্যবর্তী কালের বহু প্রজন্মের উপরও।

-আল-বায়ান

• সে রকমই আমি ধ্বংস করেছি ‘আদ, সামূদ, কূপবাসী আর তাদের মধ্যবর্তী বহু বহু বংশধরকে।

-তাইসিরুল

• আমি ধ্বংস করেছিলাম ‘আদ, ছামূদ, রা’স্ এবং তাদের অর্ন্তবর্তী কালের বহু সম্প্রদায়কেও।

-মুজিবুর রহমান

• And [We destroyed] 'Aad and Thamud and the companions of the well and many generations between them.

-Sahih International

৩৮. আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম ‘আদ, সামুদ, রাস’(১) এর অধিবাসীকে এবং তাদের অন্তর্বর্তীকালের বহু প্ৰজন্মকেও৷

(১) (أَصْحَابَ الرَّسِّ) অভিধানে رَسّ শব্দের অর্থ কাঁচা কুপ। তারা ছিল সামূদ গোত্রের অবশিষ্ট জনসমষ্টি এবং তারা কোন একটি কুপের ধারে বাস করত। [দেখুন: আদওয়াউল বায়ান, বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) আমি আদ, সামূদ, রাসবাসী[1] এবং ওদের অন্তর্বর্তীকালের বহু সম্প্রদায়কেও ধ্বংস করেছিলাম।[2]

[1] ‘রাসস্’ অর্থ কুয়া ‘আসহাবুর রাসস্’ অর্থাৎ, কুয়া-ওয়ালা। উক্ত জাতি সম্পর্কে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর তাবারী বলেছেন, এর দ্বারা ‘আসহাবুল উখদূদ’কে বুঝানো হয়েছে; যার বর্ণনা সূরা বুরুজে এসেছে। (ইবনে কাসীর)

[2] ‘قرن’ এর সঠিক অর্থ সমসাময়িক কালের লোকদের একটি দল। যখন একটি জাতি শেষ হয়ে যায় ও অন্য এক জাতির সৃষ্টি হয়, তখন তাকেও ‘ক্বার্‌ন’ বলা হয়। (ইবনে কাসীর) এই অর্থে প্রত্যেক নবীর উম্মত এক একটি ‘ক্বার্‌ন’ হতে পারে। (বাংলায় প্রজন্ম, জাতি বা সম্প্রদায় বলা যায়।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৩৯ وَ كُلًّا ضَرَبۡنَا لَهُ الۡاَمۡثَالَ ۫ وَ كُلًّا تَبَّرۡنَا تَتۡبِیۡرًا ﴿۳۹﴾
و كلا ضربنا له الامثال و كلا تبرنا تتبیرا ﴿۳۹﴾
• আর আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি এবং তাদের প্রত্যেককেই আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছি।

-আল-বায়ান

• আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম (যাতে তারা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারে) আর তাদের প্রত্যেককেই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম (তাদের পাপের কারণে)।

-তাইসিরুল

• আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম, আর তাদের সকলকেই আমি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

• And for each We presented examples [as warnings], and each We destroyed with [total] destruction.

-Sahih International

৩৯. আর আমরা তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম এবং তাদের সকলকেই আমরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) আমি ওদের প্রত্যেককে দৃষ্টান্ত বর্ণনা (দ্বারা সতর্ক) করেছিলাম[1] এবং ওদের সকলকে আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম। [2]

[1] অর্থাৎ, দলীলাদি দ্বারা সত্য প্রমাণিত করেছিলাম।

[2] অর্থাৎ, দলীলাদি দ্বারা সত্যতা প্রমাণের পর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ : ৪০ وَ لَقَدۡ اَتَوۡا عَلَی الۡقَرۡیَۃِ الَّتِیۡۤ اُمۡطِرَتۡ مَطَرَ السَّوۡءِ ؕ اَفَلَمۡ یَكُوۡنُوۡا یَرَوۡنَهَا ۚ بَلۡ كَانُوۡا لَا یَرۡجُوۡنَ نُشُوۡرًا ﴿۴۰﴾
و لقد اتوا علی القریۃ التی امطرت مطر السوء افلم یكونوا یرونها بل كانوا لا یرجون نشورا ﴿۴۰﴾
• আর অবশ্যই তারা সে জনপদ দিয়ে অতিক্রম করেছে, যাতে অকল্যাণের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। তবে কি তারা তা দেখেনি? বরং তারা পুনরুত্থানের প্রত্যাশা করত না।

-আল-বায়ান

• তারা (অর্থাৎ কাফিররা) তো সে জনপদ দিয়েই অতিক্রম করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তারা কি তা দেখে না? আসলে তারা পুনরুত্থানের কথা চিন্তা করে না।

-তাইসিরুল

• তারাতো সেই জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি; তাহলে কি তারা এটা প্রত্যক্ষ করেনা? বস্তুতঃ তারা পুনরুত্থানের আশংকা করেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And they have already come upon the town which was showered with a rain of evil. So have they not seen it? But they are not expecting resurrection.

-Sahih International

৪০. আর তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি, তবে কি তারা এসব দেখতে পায় না?(১) বস্তুত তারা পুনরুত্থানের আশাই করে না।

(১) অর্থাৎ লুত জাতির জনপদ। নিকৃষ্টতম বৃষ্টি মানে পাথর বৃষ্টি। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় একথা বলা হয়েছে। হিজায বাসীদের বানিজ্য কাফেলা ফিলিস্তিন ও সিরিয়া যাবার পথে এ এলাকা অতিক্রম করতো। সেখানে তারা কেবল ধ্বংসাবশেষ দেখতো না বরং আশপাশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মুখে লুত জাতির শিক্ষণীয় ধ্বংস কাহিনীও শুনতো। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) তারা তো সে জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে, যার উপর অকল্যাণের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, [1] তবে কি ওরা এ প্রত্যক্ষ করে না? বস্তুতঃ ওরা পুনরুত্থানের আশংকা করে না। [2]

[1] ‘জনপদ’ বা বসতি বলতে লূত জাতির বসতি সাদূম ও আম্মূরাহকে বোঝানো হয়েছে। এবং ‘অকল্যাণের বৃষ্টি’ বলতে পাথরের বৃষ্টি বুঝানো হয়েছে। ঐ সমস্ত গ্রামকে উল্টে দেওয়া হয়েছিল ও পরে তাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষানো হয়েছিল। যেমন সূরা হুদ ৮২নং আয়াতে বলা হয়েছে। এই সমস্ত জনপদ সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের রাস্তায় অবস্থিত ছিল, যে রাস্তা দিয়ে মক্কার লোকেরা যাতায়াত করত।

[2] সেই কারণে এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া বসতি ও তার ধ্বংসাবশেষ দেখেও তারা উপদেশ গ্রহণ করে না এবং আল্লাহর আয়াত ও রসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হতে বিরত থাকে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 পরের পাতা »