-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. তারাই এরা, যাদের জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে(১), তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্ৰ, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে(২); কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল।(৩)
(১) প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহরা সোনার কাঁকন পরতেন। [ফাতহুল কাদীর] জন্নাতবাসীদের পোশাকের মধ্যে এ জিনিসটির কথা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা জানিয়ে দেয়া যে, সেখানে তাদেরকে রাজকীয় পোশাক পরানো হবে। একজন কাফের ও ফাসেক বাদশাহ সেখানে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং একজন মুমিন ও সৎ মজদুর সেখানে থাকবে রাজকীয় জৌলুসের মধ্যে।
(২) বলা হয়েছে তারা আসন গ্ৰহণ করবে। আরাইক এ। এ ‘আরাইক’ শব্দটি বহুবচন। এর এক বচন হচ্ছে ‘আরীকাহ’ আরবী ভাষায় আরাকাহ এমন ধরনের আসনকে বলা হয় যার উপর ছত্ৰ খাটানো আছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এর মাধ্যমেও এখানে এ ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, সেখানে প্রত্যেক জান্নাতী রাজকীয় সিংহাসনে অবস্থান করবে।
(৩) সূরা আল-ফুরকানের ৭৫–৭৬ নং আয়াতেও জান্নাতবাসীদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে অনুরূপ উক্তি করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে,[1] তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ণ ও স্থূ্ল রেশমের সবুজ বস্ত্র[2] ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে আশ্রয়স্থল।
[1] কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার যুগে এবং তারও পূর্বে প্রথা ছিল যে, বাদশাহ, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং গোত্রের সর্দাররা তাদের হাতে সোনার বালা পরিধান করত। যার দ্বারা তারা যে পৃথক মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ, সে কথা ফুটে উঠত। জান্নাতবাসীদেরকেও আল্লাহ জান্নাতে সোনার বালা পরাবেন।
[2] سُنْدُسٍ পাতলা বা মিহি রেশম। এবং اِسْتَبْرَقٍ মোটা রেশম। দুনিয়াতে পুরুষের জন্য সোনা এবং রেশমের পোশাক পরিধান করা নিষেধ। যারা এই নির্দেশের উপর আমল করে দুনিয়াতে এই সব হারাম থেকে বিরত থাকবে, তারা জান্নাতে এ সব জিনিস লাভ করবে। সেখানে কোন জিনিসই নিষিদ্ধ হবে না, বরং জান্নাতবাসী যা চাইবে, তা-ই সেখানে বিদ্যমান পাবে। وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ‘‘সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা দাবী কর।’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩১ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. আর আপনি তাদের কাছে পেশ করুন দু’ব্যক্তির উপমাঃ তাদের একজনকে আমরা দিয়েছিলাম দুটি আঙ্গুরের বাগান এবং এ দুটিকে আমরা খেজুর গাছ দিয়ে পরিবেষ্টিত করেছিলাম ও এ দু’টির মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) তুমি তাদের কাছে পেশ কর দুই ব্যক্তির একটি উপমা;[1] তাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুর বাগান এবং সে দু’টিকে আমি খেজুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছিলাম।[2] আর এই দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র। [3]
[1] এই দুই ব্যক্তি কারা ছিল এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। মহান আল্লাহ কেবল বুঝানোর জন্য তাদের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, না বাস্তবিকই দু’জন এ রকম ছিল? যদি ছিল, তবে তারা বানী-ইস্রাঈলদের মধ্যে ছিল, না মক্কাবাসীদের মধ্যে? এদের মধ্যে একজন মু’মিন এবং দ্বিতীয়জন কাফের ছিল।
[2] যেভাবে চতুর্দিকে দেওয়াল দিয়ে হেফাযত করা হয়, অনুরূপভাবে এই বাগানগুলোর চতুর্দিকে খেজুরের গাছ ছিল। যা আড় ও দেওয়ালের কাজ দিত।
[3] অর্থাৎ, উভয় বাগানের মধ্যস্থলে ক্ষেত ছিল, যাতে ফসলাদি উৎপন্ন হত। আর এইভাবে উভয় বাগানে ছিল শস্য ও ফল-ফসলের সমাবেশ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. উভয় বাগানই ফল দান করত এবং এতে কোন ত্রুটি করত না। আর আমরা উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নহর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) উভয় বাগানই ফল দান করত এবং এতে কোন ত্রুটি করত না।[1] আর উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নদী। [2]
[1] অর্থাৎ, ফল-ফসল উৎপাদনে কোন কমি না করে পরিপূর্ণরূপে ফসল দান করত।
[2] যাতে বাগানের সেচের ব্যাপারে যেন কোন বাধা সৃষ্টি না হয় অথবা বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল অঞ্চলের মত যেন বৃষ্টির মুখাপেক্ষী না হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. এবং তার প্রচুর ফল-সম্পদ(১) ছিল। তারপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ধন-সম্পদে আমি তোমার চেয়ে বেশী এবং জনবলে তোমার চেয়ে শক্তিশালী।
(১) ثمر শব্দের অর্থ বৃক্ষের ফল এবং সাধারণ ধন-সম্পদ। এখানে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ ও কাতাদাহ থেকে দ্বিতীয় অৰ্থ বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর] কামুস গ্রন্থে আছে ثمر একটি বৃক্ষের ফল এবং নানা রকমের ধন-সম্পদের অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ থেকে জানা যায় যে, লোকটির কাছে শুধু ফলের বাগান ও শস্যক্ষেত্রই ছিল না, বরং স্বর্ণ-রৌপ্য ও বিলাস-ব্যসনের যাবতীয় সাজ-সরঞ্জামও বিদ্যমান ছিল। [অনুরূপ দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) তার প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল,[1] ‘ধন-সম্পদে তোমার তুলনায় আমি শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে[2] তোমার তুলনায় আমি বেশী শক্তিশালী।’
[1] অর্থাৎ, বাগানের মালিক যে কাফের ছিল সে তার মু’মিন সাথীকে বলল।
[2] نَفَرٌ (দল, জনবল) বলতে সন্তান-সন্ততি ও ভৃত্য-চাকর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল নিজের প্রতি যুলুম করে। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটা কখনো ধংস হয়ে যাবে;(১)
(১) অর্থাৎ যে বাগানগুলোকে সে নিজের জান্নাত মনে করছিল। সে মনে করেছিল এগুলো স্থায়ী সম্পদ। অর্বাচীন লোকেরা দুনিয়ায় কিছু ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শান-শওকতের অধিকারী হলেই সর্বদা এ বিভ্রান্তির শিকার হয় যে, তারা দুনিয়াতেই জান্নাত পেয়ে গেছে। এখন আর এমন কোন জান্নাত আছে যা অর্জন করার জন্য তাকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে? এভাবে সে ফল-ফলাদি, ক্ষেত-খামার, গাছ-গাছালি, নদী-নালা, ইত্যাদি দেখে ধোঁকাগ্ৰস্ত হবে এবং মনে করবে এগুলো কখনো ধ্বংস হবে না। ফলে সে দুনিয়ার মোহে পড়ে থাকবে এবং আখেরাত অস্বীকার করে বসবে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) এভাবে নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটা কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. আমি মনে করি না যে, কেয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি আমার রব-এর কাছে ফিরিয়ে নেয়াও হয়, তবে আমি তো নিশ্চয় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল পাব।(১)
(১) অর্থাৎ যদি আখেরাত থেকেই থাকে তাহলে আমি সেখানে এখানকার চেয়েও বেশী সচ্ছল থাকবো। কারণ এখানে আমার সচ্ছল ও ধনাঢ্য হওয়া এ কথাই প্ৰমাণ করে যে, আমি আল্লাহর প্ৰিয়। অন্য আয়াতেও ধনবান কাফেরদের এধরনের কথা এসেছে, যেমন, “আর আমি যদি আমার রবের কাছে ফিরেও যাই তাঁর কাছে নিশ্চয় আমার জন্য কল্যাণই থাকবে।” [সূরা ফুসসিলাত: ৫০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) আমি মনে করি না যে, কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই-ই, তাহলে আমি অবশ্যই এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। [1]
[1] অর্থাৎ, সেই কাফের কেবল তার অহংকার ও দাম্ভিকতাতেই পতিত ছিল না, বরং তার উন্মত্ততা ও ভবিষ্যতের সৌন্দর্যময় ও সুদীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা তাকে আল্লাহর পাকড়াও এবং কুকর্মের প্রতিফল পাওয়ার ব্যাপারে একেবারে উদাসীন করে রেখেছিল। এমন কি সে কিয়ামতকেও অস্বীকার করল এবং বড়ই ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে বলল যে, কিয়ামত যদি সংঘটিত হয়ও, তবে সেখানেও আমার ভাগ্যে জুটবে উত্তম পরিণাম। যার কুফরী ও অবাধ্যতা সীমা অতিক্রম করে যায়, সে মাতালের মত এই ধরনের অহংকারমূলক দাবী করে। যেমন, অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, وَلَئِنْ رُجِعْتُ إِلَى رَبِّي إِنَّ لِي عِنْدَهُ لَلْحُسْنَى (فصلت: ৫০) ‘‘আমি যদি আমার পালনকর্তার কাছে যাই, তবে অবশ্যই তাঁর কাছে আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে।’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৫০ আয়াত) أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِآياتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا (مريم:৭৭) ‘‘তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে আমার নিদর্শনাবলীতে অবিশ্বাস করে এবং বলে, আমাকে অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অবশ্যই দেওয়া হবে।’’ (সূরা মারয়্যাম ৭৭ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. তদুত্তরে তার বন্ধু বিতর্কমূলকভাবে তাকে বলল, তুমি কি তাঁর সাথে কুফরী করছ(১) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে বীর্য থেকে এবং তারপর পূর্ণাংগ করেছেন পুরুষ আকৃতিতে?
(১) যে ব্যক্তি মনে করলো, আমিই সব, আমার ধন-সম্পদ ও শান শওকত কারোর দান নয় বরং আমার শক্তি ও যোগ্যতার ফল এবং আমার সম্পদের ক্ষয় নেই, আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার কেউ নেই এবং কারোর কাছে আমাকে হিসেব দিতেও হবে না, সে আল্লাহকে মূলত: অস্বীকারই করল। যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তাকে সে অস্বীকার করল। শুধু তাকে নয়, তিনি প্রথম মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি হচ্ছেন আদম। তারপর নিকৃষ্ট পানি হতে তাদের বংশধারা বজায় রেখেছেন। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা বলেছেন, “তোমরা কিভাবে আল্লাহর সাথে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) উত্তরে তাকে তার বন্ধু বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে ও পরে বীর্য হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য আকৃতিতে? [1]
[1] তার এই ধরনের কথা-বার্তা শুনে তার মু’মিন সাথী তাকে ওয়ায ও নসীহতের ভঙ্গিমায় বুঝাতে লাগল যে, তুমি তোমার সেই স্রষ্টার সাথে কুফরী করছ, যিনি তোমাকে মাটি ও এক ফোঁটা পানি (বীর্যবিন্দু) থেকে সৃষ্টি করেছেন। মানবকুলের পিতা আদম (আঃ)-কে যেহেতু মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই মানুষের মূল হল মাটিই। অতঃপর সৃষ্টির উপাদান হয়েছে বীর্য যা পিতার পৃষ্ঠদেশ থেকে স্খলিত হয়ে মায়ের গর্ভাশয়ে গিয়ে স্থির হয়। সেখানে আল্লাহ নয় মাস পর্যন্ত তার লালন-পালন করেন। অতঃপর তাকে সম্পূর্ণ একজন মানুষরূপে মায়ের পেট থেকে বের করেন। কারো কারো নিকট মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়ার অর্থ হল, মানুষ যে খাবার খায়, তা সবই যমীন অর্থাৎ, মাটি থেকে অর্জিত। এই খাবার হতেই সেই বীর্য তৈরী হয়, যা মহিলার গর্ভাশয়ে গিয়ে মানুষ সৃষ্টির মাধ্যম হয়। এইভাবে প্রত্যেক মানুষের মূল উপাদান মাটিই বিবেচিত হয়। অকৃতজ্ঞ মানুষকে তার (সৃষ্টির) মূল সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার স্রষ্টা এবং প্রতিপালকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হচ্ছে যে, তুমি তোমার প্রকৃত স্বরূপ এবং মৌলিক উপাদানের ব্যাপারে চিন্তা কর। তাঁর এই সমস্ত অনুগ্রহের প্রতি লক্ষ্য কর যে, তিনি তোমাকে কি থেকে কি বানিয়ে দিয়েছেন। এই সৃষ্টি করার কাজে কেউ তাঁর শরীক ও সাহায্যকারী নেই। এ সব কিছুই করেছেন কেবল সেই মহান আল্লাহ, যাঁকে মানতে তুমি প্রস্তুত নও। হায় আফসোস! কত অকৃতজ্ঞ এই মানুষ!
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব এবং আমি কাউকেও আমার রব-এর সাথে শরীক করি না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) কিন্তু আমি বলি, তিনি আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক করি না। [1]
[1] অর্থাৎ, আমি তোমার মত কথা বলব না। আমি তো আল্লাহর প্রতিপালকত্বে এবং তাঁর একতত্ত্ববাদকে স্বীকার করি। এ থেকেও জানা গেল যে, দ্বিতীয়জন মুশরিকই ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করলে তখন কেন বললে না, আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন শক্তি নেই?(১) তুমি যদি ধনে ও সস্তানে আমাকে তোমার চেয়ে নিকৃষ্টতর মনে কর—
(১) অর্থাৎ “আল্লাহ যা চান তাই হবে। আমাদের যদি কোন কিছু চলতে পারে তাহলে তা চলতে পারে একমাত্র আল্লাহরই সুযোগ ও সাহায্য -সহযোগিতা দানের মাধ্যমেই। এ আয়াত থেকে সালফে সালেহীনের কেউ কেউ বলেনঃ কোন পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি (مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) বলে দেয়া হয়, তবে কোন বস্তু তার ক্ষতি করে না। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ পছন্দনীয় বস্তুটি নিরাপদ থাকে বা তাতে চোখ লাগার মত ক্ষতি হয় না। সহীহ হাদীসেও এ আয়াতের মত একটি হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেনঃ “আমি কি তোমাকে জান্নাতের একটি মূল্যবান সম্পদের সন্ধান দেব না? সেটা হলো: “লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” [বুখারী: ৬৩৮৪, মুসলিম: ২৭০৪] আবার কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে, জান্নাতের সে মূল্যবান সম্পদ হলো: “লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৩৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) তুমি যখন ধনে ও সন্তানে তোমার তুলনায় আমাকে কম দেখলে, তখন তোমার বাগানে প্রবেশ করে তুমি কেন বললে না, ‘‘আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে; আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।’’[1]
[1] আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার পদ্ধতি জানিয়ে দেওয়ার জন্য বলল যে, বাগানে প্রবেশ করার সময় অবাধ্যতা ও অহংকার প্রদর্শন না করে এইভাবে বললেই ভাল হত, مَا شَآءَ اللهُ لاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ যা কিছু হয় আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। তিনি চাইলে তা অবশিষ্ট রাখবেন এবং ইচ্ছা করলে ধ্বংস করে দিবেন। এই জন্যই হাদীসে এসেছে যে, ‘‘যাকে কারো মাল, সন্তান-সন্ততি অথবা অবস্থা ভাল লাগে, সে যেন বলে, ‘মা শাআল্লাহু লা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ (তাফসীর ইবনে কাসীর, মুসনাদ আবূ ইয়া’লা)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. তবে হয়ত আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তোমার বাগানে আকাশ থেকে নির্ধারিত বিপর্যয় পাঠাবেন,(১) যার ফলে তা উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত হবে।
(১) ইবনে আব্বাস এর অর্থ নিয়েছেন আযাব। অপর কারও মতে, অগ্নি। আবার কেউ কেউ অর্থ নিয়েছেন প্রস্তর বর্ষণ। কোন কোন মুফাসসিরের মতে এর অর্থ, এমন বৃষ্টিপাত যাতে গাছ-গাছড়া উপড়ে যায়, ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন[1] এবং তোমার বাগানে আকাশ হতে আগুন বর্ষণ করবেন; যার ফলে তা মসৃণ ময়দানে পরিণত হবে।[2]
[1] দুনিয়াতে অথবা আখেরাতে কিংবা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই।
[2] حُسْبَانٌ হল غُفْرَانٌ এর ওজনে حساب ধাতু থেকে গঠিত শব্দ। অর্থাৎ, এমন আযাব যা কারো কৃতকর্মের পরিণাম স্বরূপ আসে। অর্থাৎ, আসমানের আযাব দ্বারা তিনি তাকে ঘিরে নেবেন এবং এই স্থান যেখানে এখন সবুজ-শ্যামল বাগান বিদ্যমান, সেটা শূন্য ও মসৃণ ভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান