بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭/ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف আয়াতঃ ২০৬ মাক্কী
৭:২১ وَ قَاسَمَهُمَاۤ اِنِّیۡ لَکُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیۡنَ ﴿ۙ۲۱﴾
و قاسمهما انی لکما لمن النصحین ۙ۲۱

আর সে তাদের নিকট শপথ করল যে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন’। আল-বায়ান

সে শপথ করে তাদের বলল, ‘আমি তোমাদের সত্যিকারের হিতাকাঙ্ক্ষী।’ তাইসিরুল

সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বললঃ আমি তোমাদের হিতাকাংখীদের অন্যতম। মুজিবুর রহমান

And he swore [by Allah] to them, "Indeed, I am to you from among the sincere advisors." Sahih International

২১. আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন।(১)

(১) কাতাদা বলেন, শয়তান তাদের দু'জনের কাছে শপথের মাধ্যমে এগিয়ে এসে ধোঁকা দিয়েছিল। কখনও কখনও আল্লাহর উপর খাঁটি ঈমানদার ব্যক্তিও ধোঁকা খেয়ে থাকে। অনুরূপ এখানেও শয়তান তাদের দু’জনকে ধোঁকা দিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘আমি তোমাদের আগে সৃষ্ট হয়েছি। আমি তোমাদের থেকে ভাল জানি। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। কোন কোন মনীষী বলেন, কেউ আমাদেরকে আল্লাহর কথা বলে ধোঁকা দিলে আমরা ধোঁকাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, ‘আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন।’ [1]

[1] জান্নাতের যেসব নিয়ামত এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম) লাভ করেছিলেন তারই কারণে শয়তান তাঁদের উভয়কে প্ররোচিত করল এবং এই মিথ্যার আশ্রয় নিল যে, আল্লাহ তোমাদেরকে স্থায়ীভাবে জান্নাতে রাখতে চান না, তাই তিনি এই গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা, এর প্রতিক্রিয়াই হল এই যে, যে তা খেয়ে নেয়, সে ফিরিশতা হয়ে যায় অথবা সে চিরস্থায়ী জীবন লাভ করে। অতঃপর কসম খেয়ে সে তাদের কল্যাণকামী হওয়ার কথা প্রকাশ করল। আর এতেই আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম) প্রভাবিত হয়ে পড়লেন। যেহেতু আল্লাহওয়ালারা আল্লাহর নামে সহজেই ধোঁকা খেয়ে যান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২২ فَدَلّٰىهُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡاٰتُهُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَ نَادٰىهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡهَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَ اَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۲۲﴾
فدلىهما بغرور ۚ فلما ذاقا الشجرۃ بدت لهما سواتهما و طفقا یخصفن علیهما من ورق الجنۃ و نادىهما ربهما الم انهکما عن تلکما الشجرۃ و اقل لکما ان الشیطن لکما عدو مبین ۲۲

অতঃপর সে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজদেরকে ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদেরকে ডাকলেন যে, ‘আমি কি তোমাদেরকে ঐ গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি যে নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু’? আল-বায়ান

এভাবে সে ধোঁকা দিয়ে তাদের অধঃপতন ঘটিয়ে দিল। যখন তারা গাছের ফলের স্বাদ নিল, তখন তাদের গোপনীয় স্থান পরস্পরের নিকট প্রকাশিত হয়ে গেল, তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে লাগল। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এ গাছের কাছে যেতে নিষেধ করিনি আর বলিনি- শয়ত্বান হচ্ছে তোমাদের উভয়ের খোলাখুলি দুশমন?’ তাইসিরুল

অতঃপর সে (শাইতান) তাদের উভয়কে বিভ্রান্ত করল। যখন তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের ফলের স্বাদ গ্রহণ করল তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা বাগানের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তাদের রাব্ব তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি কি এই বৃক্ষ সম্পর্কে তোমাদেরকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শাইতান তোমাদের প্রকাশ্য শক্র? মুজিবুর রহমান

So he made them fall, through deception. And when they tasted of the tree, their private parts became apparent to them, and they began to fasten together over themselves from the leaves of Paradise. And their Lord called to them, "Did I not forbid you from that tree and tell you that Satan is to you a clear enemy?" Sahih International

২২. অতঃপর সে তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বার অধঃপতিত করল। এরপর যখন তার সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) এভাবে সে তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে নিচে নামিয়ে দিল।[1] অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষের আস্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা উদ্যানের পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল।[2] তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ সম্বন্ধে সাবধান করিনি এবং শয়তান যে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তা আমি কি তোমাদেরকে বলিনি?’[3]

[1] تَدْلِيَةٌ এবং إِدْلاَءٌ এর অর্থ হল, কোন জিনিসকে উপর থেকে নীচে ছেড়ে দেওয়া। অর্থাৎ, শয়তান তাঁদেরকে সুউচ্চ স্থান থেকে নামিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়া পর্যন্ত নিয়ে এল।

[2] এ হল সেই অবাধ্যাচরণের প্রতিক্রিয়া, যা আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম) দ্বারা অজানা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়ে যায় এবং লজ্জায় তাঁরা উভয়েই জান্নাতের কিছু পাতা একে অপরের সাথে জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করেন। অহাব ইবনে মুনাব্বিহ বলেন, এর পূর্বে তাঁরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এমন এক নূরানী (জ্যোতির) পোশাক পেয়েছিলেন, যা যদিও দৃষ্টিগোচর হত না, তবুও অপরের দৃষ্টি থেকে লজ্জাস্থান আবৃত রাখত। (ইবনে কাসীর)

[3] অর্থাৎ, এই সতর্কবাণী সত্ত্বেও তোমরা শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে গেলে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শয়তানের জাল এত সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক যে, তা থেকে বাঁচার জন্য বড় প্রচেষ্টা ও মেহনত করা এবং সব সময় তার ব্যাপারে সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকার প্রয়োজন হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৩ قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾
قالا ربنا ظلمنا انفسنا ٜ و ان لم تغفر لنا و ترحمنا لنکونن من الخسرین ۲۳

তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’। আল-বায়ান

তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর আর দয়া না কর তাহলে আমরা অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ তাইসিরুল

তারা বললঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব। মুজিবুর রহমান

They said, "Our Lord, we have wronged ourselves, and if You do not forgive us and have mercy upon us, we will surely be among the losers." Sahih International

২৩. তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।(১)

(১) কাতাদা বলেন, তারা দু’জন নিজেদের লজ্জাস্থান পরস্পর দেখতে পেত না। কিন্তু অপরাধের পর সেটা প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন আদম আলাইহিস সালাম বললেন, হে রব! যদি আমি তাওবা করি এবং ক্ষমা চাই তাহলে কি হবে আমাকে জানান। আল্লাহ বললেন, তাহলে আমি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। কিন্তু ইবলীস ক্ষমা চাইলো না, বরং সে অবকাশ চাইল। ফলে আল্লাহ প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বিষয় দান করলেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ [1]

[1] তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার এ হল সেই বাক্যসমূহ, যা আদম (আঃ) বরকতময় মহান আল্লাহর কাছ থেকে শেখেন। যেমন সূরা বাক্বারার ৩৭নং আয়াতে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। (উক্ত আয়াতের টীকা দ্রঃ) শয়তান আল্লাহর অবাধ্যতা করল এবং তারপর সে কেবল এর উপর অটলই থাকেনি, বরং এটাকে বৈধ ও সাব্যস্ত করার জন্য জ্ঞান ও অনুমানভিত্তিক দলীলসমূহ পেশ করতে লাগল। ফলে সে আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বিতাড়িত এবং চিরদিনকার জন্য অভিশপ্ত গণ্য হল। পক্ষান্তরে আদম (আঃ) স্বীয় ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার প্রতি যত্নবান হলেন। ফলে তিনি আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমা লাভের যোগ্য গণ্য হলেন। এইভাবে দু’টি পথের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে গেল। শয়তানের পথের এবং আল্লাহওয়ালাদের পথেরও। পাপ করে অহংকার প্রদর্শন করা, তার উপর অটল থাকা এবং তাকে সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য দলীলাদির স্তূপ খাড়া করা ইত্যাদি হল শয়তানী পথ। আর পাপ করার পর অনুতাপে দগ্ধ হয়ে আল্লাহ-সমীপে নত হয়ে যাওয়া এবং তওবা ও ক্ষমা চাওয়ায় সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি হল আল্লাহর বান্দাদের পথ। اللَّهُمَّ! اجْعَلْنَا مِنْهُمْ

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৪ قَالَ اهۡبِطُوۡا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ وَ لَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّ مَتَاعٌ اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۲۴﴾
قال اهبطوا بعضکم لبعض عدو ۚ و لکم فی الارض مستقر و متاع الی حین ۲۴

তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু এবং যমীনে তোমাদের জন্য ক্ষণস্থায়ী আবাস ও ভোগ-উপকরণ রয়েছে’। আল-বায়ান

তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু, পৃথিবীতে তোমাদের অবস্থান ও জীবিকা থাকবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।’ তাইসিরুল

তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তোমরা একে অন্যের শক্র রূপে এখান থেকে নেমে যাও, তোমাদের জন্য পৃথিবীতে বাসস্থান রয়েছে, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সেখানে জীবন ধারণের উপযোগী সামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুজিবুর রহমান

[Allah] said, "Descend, being to one another enemies. And for you on the earth is a place of settlement and enjoyment for a time." Sahih International

২৪. তিনি বললেন, তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শক্র এবং যমীনে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তিনি বললেন, ‘তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও এবং কিছু কালের জন্য পৃথিবীতে তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’

[1] سَوْأتٌ হল শরীরের সেই অংশগুলো, যা ঢেকে রাখা জরুরী। যেমন, লজ্জাস্থান। আর رِيْشًَا হল সেই পোশাক, যা সৌন্দর্য প্রকাশ ও বেশভূষার জন্য পরিধান করা হয়। অর্থাৎ, পোশাকের প্রথম প্রকার হল প্রয়োজনীয় বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এবং তার দ্বিতীয় প্রকার হল পরিপূরক ও বাড়তি। মহান আল্লাহ উভয় প্রকার পোশাকের জন্য সরঞ্জাম ও উপাদান সৃষ্টি করেছেন।

[2] এ থেকে কারো কারো নিকট সেই পোশাক উদ্দিষ্ট, যা সংযমশীল পরহেযগারগণ কিয়ামতের দিন পরিধান করবেন। কারো নিকট এর অর্থ ঈমান এবং কারো নিকট নেক আমল ও আল্লাহভীরুতা ইত্যাদি। তবে সবগুলির অর্থ কাছাকাছি প্রায় একই, আর তা হল এমন পোশাক, যা পরিধান করে মানুষ (প্রয়োজনীয় অঙ্গ আবৃত করবে,) অহংকার করার পরিবর্তে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ঈমান ও নেক আমলের দাবীসমূহ পূরণ করার প্রতি যত্ন নেবে।

[3] এ থেকে এ অর্থও ফুটে ওঠে যে, সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জার জন্য যদিও পোশাক পরা বৈধ, তবুও পোশাকের ব্যাপারে এমন সাদামাঠা হওয়া বেশী উত্তম, যাতে পরহেযগারী ও আল্লাহভীরুতা প্রকাশ পায়। (পোশাক যেহেতু আল্লাহর দান, সেহেতু তা পরিধানের সময় তাঁর যিকর করা কর্তব্য, اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ। অর্থাৎ, সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাকে এই কাপড় পরিয়েছেন এবং আমার নিজস্ব কোন শক্তি ও চেষ্টা ছাড়াই তা আমাকে দান করেছেন। এই দু’আ কোন কাপড় পরিধান করার সময় পাঠ করলে পূর্বেকার (স্বাগীরাহ) গোনাহ মাফ হয়ে যায়। (সুনানে আরবাআহ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৫ قَالَ فِیۡهَا تَحۡیَوۡنَ وَ فِیۡهَا تَمُوۡتُوۡنَ وَ مِنۡهَا تُخۡرَجُوۡنَ ﴿۲۵﴾
قال فیها تحیون و فیها تموتون و منها تخرجون ۲۵

তিনি বললেন, ‘তোমরা তাতে জীবন যাপন করবে এবং তাতে মারা যাবে। আর তা থেকে তোমাদেরকে বের করা হবে’। আল-বায়ান

বললেন, ‘ওখানে তোমরা জীবন যাপন করবে, ওখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে, আর তাথেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে।’ তাইসিরুল

তিনি বললেনঃ সেই পৃথিবীতেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু সংঘটিত হবে এবং সেখান হতেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। মুজিবুর রহমান

He said, "Therein you will live, and therein you will die, and from it you will be brought forth." Sahih International

২৫. তিনি বললেন, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে।(১)

(১) ইবন কাসীর বলেন, এ আয়াতের অর্থ অন্য আয়াতের মত, যেখানে এসেছে, “আমরা মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং তা থেকেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করব।” [সূরা ত্বা-হাঃ ৫৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তিনি বললেন, ‘সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান হতেই তোমাদের বের করে আনা হবে।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৬ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِکَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّکَّرُوۡنَ ﴿۲۶﴾
یبنی ادم قد انزلنا علیکم لباسا یواری سواتکم و ریشا و لباس التقوی ۙ ذلک خیر ذلک من ایت الله لعلهم یذکرون ۲۶

হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। আল-বায়ান

হে আদাম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পোষাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। ওটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। তাইসিরুল

হে বানী আদম! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি। (বেশ-ভূষার তুলনায়) আল্লাহভীতির পরিচ্ছদই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন, সম্ভবতঃ মানুষ এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করবে। মুজিবুর রহমান

O children of Adam, We have bestowed upon you clothing to conceal your private parts and as adornment. But the clothing of righteousness - that is best. That is from the signs of Allah that perhaps they will remember. Sahih International

২৬. হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোষাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভূষার জন্য। আর তাকওয়ার পোষাক(১), এটাই সর্বোত্তম।(২) এটা আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।(৩)

(১) لِبَاسُ التَّقْوَىٰ শব্দ থেকে এদিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাহ্যিক পোষাক দ্বারা গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া ও আল্লাহভীতি। এ আল্লাহভীতি পোষাকের মধ্যেও এভাবে প্রকাশ পায়। তাই পোষাকে যেন গুপ্তাঙ্গগুলি পুরোপুরি আবৃত হয়। উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর না হয়। অহংকার ও গর্বের ভঙ্গিও না থাকা চাই। অপব্যয় না থাকা চাই। মহিলাদের জন্য পুরুষের পোষাকের মত আর পুরুষের জন্য মহিলাদের পোষাকের মত না হওয়া চাই। পোষাকে বিজাতির অনুকরণ না হওয়া চাই। এর প্রত্যেকটির ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

(২) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত আদম সন্তানকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ তোমাদের পোষাক আল্লাহ তা'আলার একটি মহান নেয়ামত। একে যথার্থ মূল্য দাও। এখানে মুসলিমদেরকে সম্বোধন করা হয়নি- সমগ্র বনী-আদমকে করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদন ও পোষাক মানব জাতির একটি সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রয়োজন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এ নিয়ম পালন করে। অতঃপর এর বিশদ বিবরণে তিন প্রকার পোশাকের উল্লেখ করা হয়েছে।

(এক) (لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ) এখানে يُوَارِي শব্দটি موارة থেকে উদ্ভুত, এর অর্থ আবৃত করা। আর سَوْآت শব্দটি سوءة এর বহুবচন, এর অর্থ মানুষের ঐসব অঙ্গ, যেগুলো খোলা রাখাকে মানুষ স্বভাবতই খারাপ ও লজ্জাকর মনে করে। উদ্দেশ্য এই যে, আমি তোমাদের মঙ্গলার্থে এমন একটি পোষাক সৃষ্টি করেছি, যা দ্বারা তোমরা গুপ্তাঙ্গ আবৃত করতে পার। মুজাহিদ বলেন, আরবের কিছু লোক আল্লাহ্‌র ঘরের তাওয়াফ উলঙ্গ হয়ে সম্পাদন করত। আবার কোন কোন লোক যে পোষাক পরিধান করে তাওয়াফ করেছে সে পোষাক আর পরিধান করত না। এ আয়াতে তাদেরকেও উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী]

(দুই) وَرِيشًا অৰ্থাৎ সাজ-সজ্জার জন্য মানুষ যে পোষাক পরিধান করে, তাকে ريش বলা হয়। অর্থ এই যে, গুপ্তাঙ্গ আবৃত করার জন্য তো সংক্ষিপ্ত পোষাকই যথেষ্ট হয়; কিন্তু আমি তোমাদেরকে আরো পোষাক দিয়েছি, যাতে তোমরা তা দ্বারা সাজ-সজ্জা করে বাহ্যিক দেহাবয়বকে সুশোভিত করতে পার। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে ‘রীশ’ বলে ‘সম্পদ' বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] বাস্তবিকই পোষাক একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ।

(তিন) আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তৃতীয় এক প্রকার পোশাকের কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ (وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ) অর্থাৎ তা হচ্ছে তাকওয়ার পোষাক আর এটিই সর্বোত্তম পোষাক। ইবন আব্বাস ও উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমের তাফসীর অনুযায়ী তাকওয়ার পোষাক বলে সৎকর্ম ও আল্লাহভীতি বুঝানো হয়েছে। এটি মানুষের চারিত্রিক দোষ ও দুর্বলতার আবরণ এবং স্থায়ী কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে মুক্তিলাভের উপায়। এ কারণেই এটি সর্বোত্তম পোষাক। কাতাদা বলেন, তাকওয়ার পোষাক বলে ঈমানকে বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]

(৩) অর্থাৎ মানুষকে এ তিন প্রকার পোষাক দান করা আল্লাহ্ তা'আলার শক্তির নিদর্শনসমূহের অন্যতম- যাতে মানুষ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) হে বনী আদম (হে মানবজাতি)! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি।[1] আর সংযমশীলতার পরিচ্ছদই[2] সর্বোৎকৃষ্ট।[3] এ হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম; যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৭ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ لَا یَفۡتِنَنَّکُمُ الشَّیۡطٰنُ کَمَاۤ اَخۡرَجَ اَبَوَیۡکُمۡ مِّنَ الۡجَنَّۃِ یَنۡزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِیُرِیَهُمَا سَوۡاٰتِهِمَا ؕ اِنَّهٗ یَرٰىکُمۡ هُوَ وَ قَبِیۡلُهٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا الشَّیٰطِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ لِلَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۲۷﴾
یبنی ادم لا یفتننکم الشیطن کما اخرج ابویکم من الجنۃ ینزع عنهما لباسهما لیریهما سواتهما انهٗ یرىکم هو و قبیلهٗ من حیث لا ترونهم انا جعلنا الشیطین اولیاء للذین لا یومنون ۲۷

হে বনী আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের জন্য অভিভাবক বানিয়েছি, যারা ঈমান গ্রহণ করে না। আল-বায়ান

হে আদাম সন্তান! শয়ত্বান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ফিতনায় ফেলতে না পারে যেমনভাবে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম ও হাওয়াকে) জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের পরস্পরকে লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য তাদের দেহ হতে পোষাক খুলিয়ে ফেলেছিল। সে আর তার সাথীরা তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে পায় যে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। যারা ঈমান আনে না তাদের জন্য আমি শয়ত্বানকে অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। তাইসিরুল

হে আদম সন্তান! শাইতান যেন তোমাদেরকে সেরূপ প্রলুব্ধ করতে না পারে যেরূপ তোমাদের মাতা-পিতাকে (প্রলুব্ধ করে) জান্নাত হতে বহিস্কার করেছিল এবং তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। সে (শাইতান) নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে দেখতে পায়, অথচ তোমরা তাদেরকে দেখতে পাওনা। নিঃসন্দেহে আমি অবিশ্বাসীদের জন্য শাইতানকে বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি। মুজিবুর রহমান

O children of Adam, let not Satan tempt you as he removed your parents from Paradise, stripping them of their clothing to show them their private parts. Indeed, he sees you, he and his tribe, from where you do not see them. Indeed, We have made the devils allies to those who do not believe. Sahih International

২৭. হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল, সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য(১) বিবস্ত্র করেছিল(২)৷ নিশ্চয় সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমরা শয়তানকে তাদের অভিভাবক করেছি, যারা ঈমান আনে না।

(১) শয়তান মানুষের এ দুর্বলতা আঁচ করে সর্বপ্রথম হামলা গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের উপর করেছে। তাই মানুষের সর্বপ্রথম মঙ্গল বিধানকারী শরীআত গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছে যে, ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয গুপ্তাঙ্গ আবৃত করা। সালাত, সিয়াম ইত্যাদি সবই এরপর।

(২) মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের সর্বপ্রথম আক্রমণের ফলে তার পোষাক খসে পড়েছিল। আজও শয়তান তার শিষ্যবর্গের মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছায় সভ্যতার নামে সর্বপ্রথম তাকে উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ করে পথে নামিয়ে দেয়। শয়তানের তথাকথিত প্রগতি নারীকে লজ্জা-শরম থেকে দূরে ঠেলে সাধারণ্যে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় নিয়ে আসা ছাড়া অর্জিতই হয় না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) হে আদমের সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ফিতনায় জড়িত না করে; যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (ফিতনায় জড়িত করে) বেহেশ্ত হতে বহিষ্কৃত করেছিল, তাদের লজ্জাস্থান তাদেরকে দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করে ফেলেছিল। নিশ্চয় সে নিজে এবং তার দলবল তোমাদেরকে এমন স্থান হতে দেখে থাকে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না।[1] যারা বিশ্বাস করে না, শয়তানকে আমি তাদের অভিভাবক (বন্ধু) করেছি। [2]

[1] এতে ঈমানদারদেরকে শয়তান ও তার চেলাদের থেকে এই ভয় দেখানো হয়েছে যে, তারা যেন তোমাদের উদাসীনতার সুযোগ গ্রহণ করে তোমাদেরকেও ঐভাবে ফিতনা ও ভ্রষ্টতায় না ফেলে, যেভাবে তোমাদের পিতা-মাতা (আদম ও হাওয়া)-কে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং জান্নাতের পোশাকও খুলে ফেলেছিল; অথচ সে পোশাক দৃষ্টিগোচরও হত না। সুতরাং তার অনিষ্টকারিতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অধিক যত্নবান হওয়া এবং কৌশল অবলম্বন করা উচিত।

[2] অর্থাৎ, বেঈমান প্রকৃতির মানুষই তার বন্ধু এবং তার বিশিষ্ট শিকার। তবে ঈমানদারদের উপরও সে তার জাল ফেলতে থাকে। কিছু না পারলেও ছোট শিরক (লোকপ্রদর্শন করা আমল) অথবা বড় শির্কে পতিত করে। তাতেও সক্ষম না হলে তাদেরকে ঈমান আনার পর শুদ্ধ ঈমানের পুঁজি থেকে বঞ্চিত করে ছাড়ে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৮ وَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً قَالُوۡا وَجَدۡنَا عَلَیۡهَاۤ اٰبَآءَنَا وَ اللّٰهُ اَمَرَنَا بِهَا ؕ قُلۡ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَاۡمُرُ بِالۡفَحۡشَآءِ ؕ اَتَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۸﴾
و اذا فعلوا فاحشۃ قالوا وجدنا علیها اباءنا و الله امرنا بها قل ان الله لا یامر بالفحشاء اتقولون علی الله ما لا تعلمون ۲۸

আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’? আল-বায়ান

তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করে তখন তারা বলে- ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এ কাজই করতে দেখেছি, আর আল্লাহ আমাদেরকে এসব কাজ করার আদেশ দিয়েছেন।’ বল, ‘আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না, আল্লাহর সম্বন্ধে তোমরা কি এমন কথা বলছ যা তোমরা জান না?’ তাইসিরুল

যখন তারা কোন লজ্জাস্কর ও অশ্লীল আচরণ করে তখন তারা বলেঃ আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে এসব কাজ করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তুমি বলঃ না আল্লাহ কখনও অশ্লীল ও লজ্জাস্কর আচরণের নির্দেশ দেননা, তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন সব কথা বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই? মুজিবুর রহমান

And when they commit an immorality, they say, "We found our fathers doing it, and Allah has ordered us to do it." Say, "Indeed, Allah does not order immorality. Do you say about Allah that which you do not know?" Sahih International

২৮. আর যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে(১) তখন বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এতে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন। বলুন, আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না।(২)

(১) فحشاء، فحشفاحشة এমন প্রত্যেক মন্দ কাজকে বলা হয়, যা চূড়ান্ত পর্যায়ের মন্দ এবং যুক্তি, বুদ্ধি ও সুস্থ বিবেকের কাছে পূর্ণমাত্রায় সুস্পষ্ট। [ফাতহুল কাদীর]

(২) ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াত যুগে শয়তান মানুষকে যেসব লজ্জাজনক ও অর্থহীন কুপ্রথায় লিপ্ত করেছিল, তন্মধ্যে একটি ছিল এই যে, কুরাইশ ছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় কা'বা গৃহের তাওয়াফ করতে পারত না। তাকে হয় কোন কুরাইশীর কাছ থেকে বস্ত্র ধার করতে হত, না হয় উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে হত। এটা জানা কথা যে, আরবের সব মানুষকে বস্ত্র দেয়া কুরাইশদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। তাই পুরুষ মহিলা অধিকাংশ লোক উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত। মহিলারা সাধারণতঃ রাতের অন্ধকারে তাওয়াফ করত। তাদের নিকট এ শয়তানী কাজের যুক্তি হলো, যেসব পোষাক পরে আমরা পাপকাজ করি, সেগুলো পরিধান করে আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা বেআদবী।

এ জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টি বুঝত না যে, উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা আরো বেশী বেআদবীর কাজ। হারামের সেবক হওয়ার সুবাদে শুধু কুরাইশ গোত্র এ উলঙ্গতা আইনের ব্যতিক্রম ছিল। এ নির্লজ্জ প্রথা ও তার অনিষ্ট বর্ণনা করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়। [তাবারী] এতে বলা হয়েছেঃ তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করত, তখন কেউ নিষেধ করলে তারা উত্তরে বলতঃ আমাদের বাপ-দাদা ও মুরুবিবরা তাই করে এসেছেন। তাদের তরিকা ত্যাগ করা লজ্জার কথা। তারা আরো বলত আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। প্রথমটি সত্য হলেও দ্বিতীয়টি নিঃসন্দেহে মিথ্যা।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে, তখন বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষগণকে এটা করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।’ বল, ‘আল্লাহ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ, যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই?’ [1]

[1] ইসলামের পূর্বে মুশরিকরা উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করত এবং বলত যে, আমরা সেই সময়ের অবস্থাকে অবলম্বন করে তাওয়াফ করি, যে অবস্থায় আমাদের মায়েরা আমাদেরকে প্রসব করেছিল। কেউ কেউ বলেছেন, তারা এর (উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করার) ব্যাখ্যা এই করত যে, আমরা যে পোশাক পরে থাকি তাতে আমরা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ অনেক করি। অতএব, এই পোশাকে তাওয়াফ করা উচিত নয়। তাই পোশাক খুলে তাওয়াফ করত এবং মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। কেবল নিজেদের লজ্জাস্থানের উপর কাপড়ের অথবা চামড়ার কোন টুকরা রেখে নিত। নিজেদের এই লজ্জাকর কাজের জন্য আরো দু’টি ওজুহাত তারা পেশ করত। একটি হল, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এইভাবে করতে দেখেছি। আর দ্বিতীয়টি হল, আল্লাহই আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের কথা খন্ডন করে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব যে, তিনি নির্লজ্জতার নির্দেশ দেবেন? অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপর এমন কথা চাপিয়ে দিচ্ছ, যা তিনি বলেননি। এই আয়াতে সেই অন্ধ অনুকরণকারীদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয়েছে, যারা বাপ-দাদা ও পীর-বুযুর্গদের অন্ধ অনুকরণ এবং ব্যক্তিপূজায় ডুবে রয়েছে। তাদেরকেও যখন হক কথা শুনানো হয়, তখন তারাও এই ওজুহাত পেশ করে বলে যে, আমাদের বুযর্গরা এইভাবেই করেছেন অথবা আমাদের ইমাম, পীর বা শায়খের এটাই নির্দেশ। আর এটাই হল এমন অভ্যাস, যার কারণে ইয়াহুদীরা ইয়াহুদী ধর্মের উপর, খ্রিষ্টানরা খ্রিষটধর্মের উপর এবং বিদআতীরা তাদের বিদআতী কার্যকলাপের উপর কায়েম রয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:২৯ قُلۡ اَمَرَ رَبِّیۡ بِالۡقِسۡطِ ۟ وَ اَقِیۡمُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ ادۡعُوۡهُ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ؕ کَمَا بَدَاَکُمۡ تَعُوۡدُوۡنَ ﴿ؕ۲۹﴾
قل امر ربی بالقسط ۟ و اقیموا وجوهکم عند کل مسجد و ادعوه مخلصین له الدین ۬ کما بداکم تعودون ۲۹

বল, ‘আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন আর তোমরা প্রত্যেক সিজদার সময় তোমাদের চেহারা সোজা রাখবে এবং তাঁরই ইবাদাতের জন্য একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাক’। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে তোমরা প্রথমে ফিরে আসবে। আল-বায়ান

বল, ‘আমার প্রতিপালক ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দিয়েছেন’, আর প্রত্যেক সলাতে তোমাদের লক্ষ্য ও মনোযোগকে (তাঁর প্রতি) নিবদ্ধ কর, তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধ-চিত্ত হয়ে তাঁকে ডাক। যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে (তোমাদের মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে) সেভাবেই তোমরা ফিরে আসবে। তাইসিরুল

তুমি বলঃ আমার রাব্ব ন্যায় বিচারের আদেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সালাতে তোমাদের মনযোগ স্থির রেখ এবং তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধ মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁকেই ডাক; তোমাদেরকে প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে। মুজিবুর রহমান

Say, [O Muhammad], "My Lord has ordered justice and that you maintain yourselves [in worship of Him] at every place [or time] of prostration, and invoke Him, sincere to Him in religion." Just as He originated you, you will return [to life] - Sahih International

২৯. বলুন, আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের।(১) আর তোমরা প্রত্যেক সাজদাহ বা ইবাদতে তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ কর(২) এবং তারই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাকে ডাক।(৩) তিনি যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে।(৪)

(১) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যেসব মূখ উলঙ্গ তাওয়াফ বৈধ করার ভ্রান্ত সম্বন্ধ আল্লাহর দিকে করে, আপনি তাদের বলে দিনঃ আল্লাহ্ তা'আলা সর্বদা قسط এর নির্দেশ দেন। قسط এর আসল অর্থ ন্যায়বিচার ও সমতা। এখানে ঐ কাজকে বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনরূপ ক্রটিও নেই এবং নির্দিষ্ট সীমার লঙ্ঘনও নেই। অর্থাৎ স্বল্পতা ও বাহুল্য থেকে মুক্ত। শরীআতের সব বিধি-বিধানের অবস্থা তাই। এজন্য قسط শব্দের অর্থে যাবতীয় ইবাদাত, আনুগত্য ও শরীআতের সাধারণ বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

(২) এখানে ইবাদতের সময় সবকিছু বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ইখলাসের সাথে আল্লাহকে উদ্দেশ্য নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদসমূহে যখন ইবাদত করা হয়। [মুয়াসসার] ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, এ আয়াতে কিয়ামুল ওয়াজহ বলে অন্য আয়াত ‘ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া’ যা বুঝানো হয়েছে, তাই বোঝানো হয়েছে। এ সবের অর্থ হচ্ছে, ইখলাসের সাথে যাবতীয় ইবাদত কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা। [ইসতিকামাহ ২/৩০৬] এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইবাদতের জন্য বিশেষ করে ইখলাসের সাথে ইবাদতের জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান হচ্ছে মাসজিদ, মাযার নয়। যেমনটি কোন কোন মানুষ মনে করে থাকে। [ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম ১/৩৯২] মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ আয়াতের অর্থে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের চেহারাকে প্রতিটি মসজিদেই কিবলামুখী কর, যেখানেই সালাত আদায় কর না কেন’। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(৩) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাকে এমনভাবে ডাক, যেন ইবাদাত খাঁটিভাবে তারই জন্য হয়; এতে যেন অন্য কারো অংশীদারিত্ব না থাকে; এমন কি গোপন শির্ক অর্থাৎ লোক দেখানো ও নাম-যশের উদ্দেশ্য থেকেও পবিত্র হওয়া চাই। এতে বোঝা গেল যে, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাকেই শরীআতের বিধান অনুযায়ী সংশোধন করা অবশ্য কর্তব্য। আন্তরিকতা ব্যতীত শুধু বাহ্যিক আনুগত্যই যথেষ্ট নয়। এমনিভাবে শুধুমাত্র আন্তরিকতাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী’আতের অনুসরণ ব্যতীত গ্রহনযোগ্য নয়।

(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে জমায়েত হবে খালি পা, কাপড় বিহীন, খতনাবিহীন অবস্থায়। তারপর তিনি বললেনঃ “তিনি যেভাবে প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে” এখান থেকে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়লেন। তারপর বললেনঃ মনে রেখ! কেয়ামতের দিন প্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইবরাহীম। মনে রেখ! আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে তারপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।

তখন আমি বলবঃ হে রব! এরা আমার প্রিয় সাথীবৃন্দ। তখন বলা হবেঃ আপনি জানেন না তারা আপনার পরে কি নতুন পদ্ধতির আবিস্কার করেছে। তারপর আমি তা বলব যা নেক বান্দা বলেছিল, “আর আমি তাদের মাঝে যতদিন ছিলাম তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম, তারপর যখন আপনি আমাকে মৃত্যু দেন আপনিই তো তখন তাদের উপর খবরদার ছিলেন” তখন বলা হবেঃ আপনি তাদের কাছ থেকে চলে আসার পর থেকেই এরা তাদের পিছনে ফিরে গিয়েছিল। [বুখারীঃ ৪৬২৫, মুসলিমঃ ২৮৫৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) বল, ‘আমার প্রতিপালক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[1] প্রত্যেক নামাযে তোমাদের লক্ষ্য স্থির রাখ[2] এবং তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাক। তিনি যেভাবে প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে।’

[1] ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা’ বলতে এখানে কারো কারো নিকট لاَإِلَهَ إلاَّ اللهُ অর্থাৎ, তাওহীদ প্রতিষ্ঠা বুঝানো হয়েছে।

[2] ইমাম শাওকানী এর অর্থ বর্ণনা করেছেন, ‘‘তোমাদের নামাযে নিজেদের চেহারাকে ক্বিবলার দিকে করে নাও, তাতে তোমরা যে মসজিদেই থাক না কেন।’’ আর ইমাম ইবনে কাসীর এই ‘স্থির বা সোজা’ রাখা বলতে রসূল (সাঃ)-এর আনুগত্য এবং পরবর্তী বাক্য থেকে আল্লাহর জন্য নিষ্ঠাবান হওয়াকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক আমল কবুল হওয়ার জন্য জরুরী হল তা শরীয়তের অনুবর্তী হওয়া এবং দ্বিতীয়তঃ তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য হওয়া। আয়াতে এই কথাগুলোর প্রতি তাকীদ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭:৩০ فَرِیۡقًا هَدٰی وَ فَرِیۡقًا حَقَّ عَلَیۡهِمُ الضَّلٰلَۃُ ؕ اِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّیٰطِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّهُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ ﴿۳۰﴾
فریقا هدی و فریقا حق علیهم الضللۃ انهم اتخذوا الشیطین اولیاء من دون الله و یحسبون انهم مهتدون ۳۰

এক দলকে তিনি হিদায়াত দিয়েছেন এবং আরেক দলের উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। নিশ্চয় তারা শয়তানদেরকে আল্লাহ ছাড়া অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে। আর তারা মনে করে যে, নিশ্চয় তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত। আল-বায়ান

একদলকে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর অন্য দলের প্রতি গোমরাহী নির্ধারিত হয়েছে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়ত্বানদেরকে তাদের অভিভাবক করে নিয়েছে আর মনে করছে যে তারা সঠিক পথে আছে। তাইসিরুল

আল্লাহ এক দলকে সৎ পথে পরিচালিত করেছেন এবং অপর দলের জন্য সংগত কারণেই ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে,তারা আল্লাহকে ছেড়ে শাইতানকে অভিভাবক ও বন্ধু বানিয়েছিল এবং নিজেদেরকে সৎ পথগামী মনে করত। মুজিবুর রহমান

A group [of you] He guided, and a group deserved [to be in] error. Indeed, they had taken the devils as allies instead of Allah while they thought that they were guided. Sahih International

৩০. একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর অপরদল, তাদের উপর পথ ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে(১)। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক-রূপে গ্রহণ করেছিল এবং মনে করত(২) তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।

(১) এ আয়াতের সমর্থনে আরও আয়াত ও অনেক হাদীস এসেছে। সূরা আত-তাগাবুনের ২নং আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা এ কথাটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এটা তাকদীরের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত মানুষকে কাফের ও মুমিন এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। কিন্তু মানুষ জানেনা সে কোনভাগে। সুতরাং তার দায়িত্ব হবে কাজ করে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদীসেও তা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে সে জান্নাতের অধিবাসী অথচ সে জাহান্নামী। আবার তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হয় সে জাহান্নামী অথচ সে জান্নাতী। কারণ মানুষের সর্বশেষ কাজের উপরই তার হিসাব নিকাশ। [বুখারীঃ ২৮৯৮, ৪২০২, মুসলিমঃ ১১২, আহমাদ ৫/৩৩৫] অন্য হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক বান্দাহ পুনরুত্থিত হবে সেটার উপর যার উপর তার মৃত্যু হয়েছে। [মুসলিমঃ ২৮৭৮]

(২) আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা এটা বর্ণনা করেছেন যে, কাফেররা শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়েছে। তাদের এ অভিভাবকত্বের স্বরূপ হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর শরীআতের বিরোধিতা করে শয়তানের দেয়া মত ও পথের অনুসরণ করে থাকে। তারপরও মনে করে থাকে যে, তারা হিদায়াতের উপর আছে। অন্য আয়াতে যারা এ ধরণের কাজ করবে তাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। “বলুন, আমরা কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব কাজে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে।” [সূরা আল-কাহাফ: ১০৩–১০৪] [আদওয়াউল বায়ান]

মূলতঃ শরীআতের বিধি-বিধান সম্পর্কে মূর্খতা ও অজ্ঞতা কোন স্থায়ী ওযর নয়। যদি কেউ ভ্রান্ত পথকে বিশুদ্ধ মনে করে পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তা অবলম্বন করে, তবে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমার যোগ্য নয়। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেককে চেতনা, ইন্দ্রিয় এবং জ্ঞান বুদ্ধি এ জন্যই দিয়েছেন, যাতে সে তা দ্বারা আসল ও মেকী এবং অশুদ্ধ ও শুদ্ধকে চিনে নেয়। অতঃপর তাকে এ জ্ঞান বুদ্ধির উপরই ছেড়ে দেননি, নবী প্রেরণ করেছেন এবং গ্রন্থ নাযিল করেছেন। এসবের মাধ্যমে শুদ্ধ ও ভ্রান্ত এবং সত্য ও মিথ্যাকে পুরোপুরিভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) একদলকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করেছেন এবং সঙ্গত কারণেই অপর দলের পথভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে নিজেদের অভিভাবক (বা বন্ধু)রূপে গ্রহণ করেছে এবং তারা ধারণা করছে যে, তারাই সৎপথগামী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 18 19 20 21 পরের পাতা »