بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭২/ আল-জ্বিন | Al-Jinn | سورة الجن আয়াতঃ ২৮ মাক্কী
৭২ : ২১ قُلۡ اِنِّیۡ لَاۤ اَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرًّا وَّ لَا رَشَدًا ﴿۲۱﴾
قل انی لا املك لكم ضرا و لا رشدا ﴿۲۱﴾
• বল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোন অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোন কল্যাণ করার’।

-আল-বায়ান

• বল- ‘আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি না।

-তাইসিরুল

• বলঃ আমি তোমাদের মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক নই।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Indeed, I do not possess for you [the power of] harm or right direction."

-Sahih International

২১. বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণের মালিক নই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) বল, ‘আমি তোমাদের অপকার অথবা উপকার কিছুরই মালিক নই।’ [1]

[1] অর্থাৎ, তোমাদেরকে হিদায়াত দানের অথবা ভ্রষ্ট করার বা অন্য কোন প্রকারের লাভ-ক্ষতি, ইষ্ট-অনিষ্ট বা উপকার-অপকার করার কোনই এখতিয়ার আমার নেই। আমি কেবল আল্লাহর এমন একজন বান্দা, যাকে তিনি অহী ও নবুঅতের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২২ قُلۡ اِنِّیۡ لَنۡ یُّجِیۡرَنِیۡ مِنَ اللّٰهِ اَحَدٌ ۬ۙ وَّ لَنۡ اَجِدَ مِنۡ دُوۡنِهٖ مُلۡتَحَدًا ﴿ۙ۲۲﴾
قل انی لن یجیرنی من الله احد و لن اجد من دونهٖ ملتحدا ﴿۲۲﴾
• বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছ থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ছাড়া কখনো আমি কোন আশ্রয়ও পাব না।

-আল-বায়ান

• বল- আল্লাহর (শাস্তি) থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না (যদি আমি তাঁর অবাধ্য হই) এবং তাঁর আশ্রয় ছাড়া আমি কোন আশ্রয়ও পাব না।

-তাইসিরুল

• বলঃ আল্লাহর শাস্তি হতে কেহ আমাকে রক্ষা করতে পারবেনা এবং আল্লাহ ব্যতীত আমি কোন আশ্রয় পাবনা।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Indeed, there will never protect me from Allah anyone [if I should disobey], nor will I find in other than Him a refuge.

-Sahih International

২২. বলুন, আল্লাহর পাকড়াও হতে কেউই আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আমি কখনও কোন আশ্রয় পাব না(১),

(১) অর্থাৎ আমি কখনো এ দাবী করি না যে; আল্লাহর প্রভুত্বে আমার কোন দখলদারী বা কর্তৃত্ব আছে, কিংবা মানুষের ভাগ্য ভাঙা বা গড়ার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা আছে। আমি তো আল্লাহর একজন রাসূল মাত্র। আমার ওপর যে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা তোমাদের কাছে আল্লাহ তা'আলার বাণী পৌছিয়ে দেয়ার অধিক আর কিছুই নয়। আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ব্যাপার তো পুরোপুরি আল্লাহরই করায়ত্ব। আমি যদি তাঁর নাফরমানি করি তবে তাঁর শাস্তির ভয় আমি করি। [সা’দী, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) বল, ‘আল্লাহর (শাস্তি) হতে কেউই আমাকে রক্ষা করতে পারবে না[1] এবং আল্লাহ ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়স্থলও পাব না।

[1] যদি আমি তাঁর অবাধ্যতা করি এবং তিনি এর কারণে আমাকে শাস্তি দিতে চান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৩ اِلَّا بَلٰغًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِسٰلٰتِهٖ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَاِنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ﴿ؕ۲۳﴾
الا بلغا من الله و رسلتهٖ و من یعص الله و رسولهٗ فان لهٗ نار جهنم خلدین فیها ابدا ﴿۲۳﴾
• কেবল আল্লাহর বাণী ও তাঁর রিসালাত পৌঁছানোই দায়িত্ব। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।

-আল-বায়ান

• আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পায়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে।

-তাইসিরুল

• কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।

-মুজিবুর রহমান

• But [I have for you] only notification from Allah, and His messages." And whoever disobeys Allah and His Messenger - then indeed, for him is the fire of Hell; they will abide therein forever.

-Sahih International

২৩. শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌছানো এবং তাঁর রিসালতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে-কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।(১)

(১) এর অর্থ এই নয় যে, প্রতিটি গোনাহ ও অপরাধের শাস্তিই হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। বরং যে প্রসঙ্গে একথাটি বলা হয়েছে তার আলোকে আয়াতের অর্থ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে তাওহীদের যে আহবান জানানো হয়েছে তা যে ব্যক্তি মানবে না এবং শির্ককেও বর্জন করবে না। আর কুফরী করবে, তার জন্য অবধারিত আছে জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তি। [দেখুন: সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) শুধু আল্লাহর পক্ষ হতে পৌঁছানো এবং তাঁর বাণী প্রচারই (আমার কাজ)।[1] যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।’

[1] এটা لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ (আমি তোমাদের অপকার অথবা উপকার কিছুরই মালিক নই) বাক্য থেকে ব্যতিক্রান্ত। আবার এটাও হতে পারে যে, এটা لَنْ يُجِيْرَنِي (আল্লাহর (শাস্তি) হতে কেউই আমাকে রক্ষা করতে পারবে না) বাক্য থেকে ব্যতিক্রান্ত। অর্থাৎ, আল্লাহ (শাস্তি) হতে কোন জিনিস যদি বাঁচাতে পারে, তাহলে তা হল এই যে, তাঁর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন, যা তিনি আমার উপর ওয়াজেব করেছেন। رِسَالاَتِهِ (বাণী প্রচার)এর সংযোগ হল اللَه আল্লাহর সাথে অথবা بَلاَغًا (পৌঁছানো)এর সাথে কিংবা বাক্যের গঠন ঠিক এইভাবে হবে, إِلاَّ أن أُبَلِّغُ عَنِ اللهِ وَأَعْمَلَ بِرِسَالاَتِهِ (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৪ حَتّٰۤی اِذَا رَاَوۡا مَا یُوۡعَدُوۡنَ فَسَیَعۡلَمُوۡنَ مَنۡ اَضۡعَفُ نَاصِرًا وَّ اَقَلُّ عَدَدًا ﴿۲۴﴾
حتی اذا راوا ما یوعدون فسیعلمون من اضعف ناصرا و اقل عددا ﴿۲۴﴾
• অবশেষে যখন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, যে সম্পর্কে তাদেরকে সাবধান করা হয়েছিল। তখন তারা জানতে পারবে যে, সাহায্যকারী হিসেবে কে অধিকতর দুর্বল এবং সংখ্যায় কারা সবচেয়ে কম।

-আল-বায়ান

• অবশেষে তারা যখন প্রতিশ্রুত শাস্তি দেখতে পাবে, তখন তারা জানতে পারবে যে, সাহায্যকারী হিসেবে কে সবচেয়ে দুর্বল, আর সংখ্যায় কারা সবচেয়ে কম।

-তাইসিরুল

• যখন তারা প্রতিশ্রুতি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা বুঝতে পারবে, কে সাহায্যকারীর দিক দিয়ে দুর্বল এবং কে সংখ্যায় স্বল্প।

-মুজিবুর রহমান

• [The disbelievers continue] until, when they see that which they are promised, then they will know who is weaker in helpers and less in number.

-Sahih International

২৪. অবশেষে যখন তারা যা প্রতিশ্রুত তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা জানতে পারবে কে সাহায্যকারী হিসেবে অধিকতর দুর্বল এবং সংখ্যায় স্বল্প।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) এমনকি যখন তারা তাদের প্রতিশ্রুত (শাস্তি) প্রত্যক্ষ করবে,[1] তখন তারা জানতে পারবে, কে সাহায্যকারী হিসাবে দুর্বল এবং কে সংখ্যায় অল্প। [2]

[1] অথবা এর অর্থ হল, এরা নবী করীম (সাঃ) এবং মু’মিনদের সাথে শত্রুতা ও নিজেদের কুফরীর উপর অব্যাহত থাকবে দুনিয়াতে বা আখেরাতে সেই আযাব দেখা পর্যন্ত, যার অঙ্গীকার তাদের সাথে করা হয়েছে।

[2] অর্থাৎ, সেদিন তারা জানতে পারবে যে, মু’মিনদের সাহায্যকারী দুর্বল, না মুশরিকদের? আর তওহীদবাদীদের সংখ্যা কম, না গায়রুল্লাহর পূজারীদের? অর্থাৎ, তখন তো মুশরিকদের মোটেই কোন সাহায্যকারী থাকবে না এবং আল্লাহর অসংখ্য সৈন্যের সামনে মুশরিকদের সংখ্যা হবে আটাতে লবণ বরাবর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৫ قُلۡ اِنۡ اَدۡرِیۡۤ اَقَرِیۡبٌ مَّا تُوۡعَدُوۡنَ اَمۡ یَجۡعَلُ لَهٗ رَبِّیۡۤ اَمَدًا ﴿۲۵﴾
قل ان ادری اقریب ما توعدون ام یجعل لهٗ ربی امدا ﴿۲۵﴾
• বল, ‘আমি জানি না তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা কি নিকটবর্তী নাকি এর জন্য আমার রব কোন দীর্ঘ মেয়াদ নির্ধারণ করবেন’।

-আল-বায়ান

• বল- ‘আমি জানি না তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি নিকটবর্তী, না তার জন্য আমার প্রতিপালক কোন দীর্ঘ মেয়াদ নির্দিষ্ট করবেন।’

-তাইসিরুল

• বলঃ আমি জানিনা তোমাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি আসন্ন, না কি আমার রাব্ব এর জন্য কোন দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করবেন?

-মুজিবুর রহমান

• Say, "I do not know if what you are promised is near or if my Lord will grant for it a [long] period."

-Sahih International

২৫. বলুন, আমি জানি না তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি আসন্ন, না আমার রব এর জন্য কোন দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করবেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) বল, ‘আমি জানি না, তোমাদেরকে যে (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তা কি আসন্ন, না আমার প্রতিপালক এর জন্য কোন দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করবেন?’ [1]

[1] অর্থাৎ, আযাব অথবা কিয়ামতের জ্ঞান। এর সম্পর্ক হল অদৃশ্য বিষয়ের সাথে, যা কেবল মহান আল্লাহই জানেন যে, তা নিকটে, না আরো দেরী আছে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৬ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ فَلَا یُظۡهِرُ عَلٰی غَیۡبِهٖۤ اَحَدًا ﴿ۙ۲۶﴾
علم الغیب فلا یظهر علی غیبهٖ احدا ﴿۲۶﴾
• তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না।

-আল-বায়ান

• একমাত্র তিনিই অদৃশ্যের জ্ঞানী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না।

-তাইসিরুল

• তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা –

-মুজিবুর রহমান

• [He is] Knower of the unseen, and He does not disclose His [knowledge of the] unseen to anyone

-Sahih International

২৬. তিনিই গায়েবী বিষয়ের জ্ঞানী, তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না(১),

(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলকে আদেশ করেছেন যে, যেসব অবিশ্বাসী আপনাকে কেয়ামতের নির্দিষ্ট দিন তারিখ বলে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে তাদেরকে বলে দিন, কেয়ামতের আগমন ও হিসাব নিকাশ নিশ্চিত; কিন্তু তার নির্দিষ্ট দিন তারিখ আল্লাহ্ তা'আলা কাউকে বলেন নি। তাই আমি জানি না কেয়ামতের দিন আসন্ন, না আমার রব এর জন্যে দীর্ঘ মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিবেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৭ اِلَّا مَنِ ارۡتَضٰی مِنۡ رَّسُوۡلٍ فَاِنَّهٗ یَسۡلُكُ مِنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ مِنۡ خَلۡفِهٖ رَصَدًا ﴿ۙ۲۷﴾
الا من ارتضی من رسول فانهٗ یسلك من بین یدیه و من خلفهٖ رصدا ﴿۲۷﴾
• তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। আর তিনি তখন তার সামনে ও তার পিছনে প্রহরী নিযুক্ত করবেন।

-আল-বায়ান

• তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। কেননা তিনি তখন তাঁর রসূলের আগে-পিছে পাহারাদার নিযুক্ত করেন।

-তাইসিরুল

• তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে আল্লাহ রাসূলের অগ্রে এবং পশ্চাতে প্রহরী নিয়োজিত করেন,

-মুজিবুর রহমান

• Except whom He has approved of messengers, and indeed, He sends before each messenger and behind him observers

-Sahih International

২৭. তার মনোনীত রাসূল ছাড়া। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁর রাসূলের সামনে এবং পিছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন(১),

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যখন অহীর মাধ্যমে গায়েবী বিষয়ের কোন জ্ঞান তার হেকমত অনুসারে তাঁর রাসূলের কাছে পাঠান তখন তার রক্ষণাবেক্ষণ ও পাহারাদারীর জন্য চারপাশে প্রহরী মোতায়েন করেন। [সা’দী] আর এখানে প্রহরী বলতে ফেরেশতা উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত।[1] সেই ক্ষেত্রে তিনি রসূলের অগ্রে এবং পশ্চাতে প্রহরী নিয়োজিত করেন। [2]

[1] অর্থাৎ, তাঁর পয়গম্বরকে কোন কোন এমন অদৃশ্য বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞাত করিয়ে দেন, যার সম্পর্ক তাঁর নবুঅতের দায়িত্বের সাথে থাকে অথবা তা তাঁর নবুঅত সত্য হওয়ার দলীল হয়। আর আল্লাহর জানিয়ে দেওয়াতে পয়গম্বর ‘আ-লিমুল গায়ব’ হতে পারেন না। কেননা, পয়গম্বর নিজেই যদি অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাতা হন, তাহলে তাঁকে আল্লাহর জানিয়ে দেওয়ার কোন অর্থ হয় না। মহান আল্লাহ যে সময় অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কোন রসূলকে অবগত করেন, সেই সময়ের পূর্বে এ বিষয়ে রসূলের কোন কিছুই জানা থাকে না। অতএব কেবল আল্লাহর সত্তাই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাতা। এই বিষয়টাকেই এখানে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

[2] অর্থাৎ, অহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় পয়গম্বরের আগে-পিছে ফিরিশতাগণ থাকেন। তাঁরা শয়তান এবং জ্বিনদেরকে অহীর বাণী শোনা হতে বিরত রাখেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ : ২৮ لِّیَعۡلَمَ اَنۡ قَدۡ اَبۡلَغُوۡا رِسٰلٰتِ رَبِّهِمۡ وَ اَحَاطَ بِمَا لَدَیۡهِمۡ وَ اَحۡصٰی كُلَّ شَیۡءٍ عَدَدًا ﴿۲۸﴾
لیعلم ان قد ابلغوا رسلت ربهم و احاط بما لدیهم و احصی كل شیء عددا ﴿۲۸﴾
• যাতে তিনি এটা জানতে পারেন যে, তারা* তাদের রবের রিসালাত পৌঁছিয়েছে কিনা। আর তাদের কাছে যা রয়েছে, তা তিনি পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি প্রতিটি বস্তু গুণে গুণে হিসাব করে রেখেছেন।

-আল-বায়ান

• এটা জানার জন্য যে, রসূলগণ তাদের প্রতিপালকের বাণী সত্যিই পৌঁছে দিয়েছে কিনা। রসূলদের কাছে যা আছে তা তিনি (স্বীয় জ্ঞান দ্বারা) পরিবেষ্টন করে রেখেছেন আর প্রত্যেকটি জিনিসকে গুণে গুণে রেখেছেন।

-তাইসিরুল

• রাসূলগণ তাদের রবের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানার জন্য। রাসূলগণের নিকট যা আছে তা তাঁর জ্ঞান গোচর এবং তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।

-মুজিবুর রহমান

• That he may know that they have conveyed the messages of their Lord; and He has encompassed whatever is with them and has enumerated all things in number.

-Sahih International

*রাসূলগণ।

২৮. যাতে তিনি প্রকাশ করেন যে, অবশ্যই তারা তাদের রবের রিসালাত পৌছে দিয়েছেন।(১) আর তাদের কাছে যা আছে তা তিনি জ্ঞানে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি প্রতিটি বস্তু গণনা করে হিসেব রেখেছেন।(২)

(১) এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. রাসূল নিশ্চিতভাবে জানবেন যে, ফেরেশতারা তাঁর কাছে আল্লাহ তা'আলার বাণীসমূহ ঠিক ঠিক পৌঁছিয়ে দিয়েছে। দুই. আল্লাহ তা'আলা জানবেন যে, রাসূলগণ তাঁদের রবের বাণীসমূহ তাঁর বান্দাদের কাছে ঠিকমত পৌছিয়ে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] আয়াতটির শব্দমালা সবগুলো অর্থেরই ধারক।

(২) অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর পরিসংখ্যান আল্লাহ্ তা'আলারই গোচরীভুত। তিনি প্রত্যেকটি বস্তু বিস্তারিতভাবে জানেন, আর সব কিছুই তিনি হিসেব করে রেখেছেন, কোন কিছুই তার অজানা নয়। [মুয়াস্‌সার, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) যাতে তিনি জেনে নেন, তারা তাদের প্রতিপালকের বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছে;[1] আর তাদের নিকট[2] যা আছে, তা তাঁর জ্ঞানায়ত্ত এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের সংখ্যা গুনে রেখেছেন। [3]

[1] لِيَعْلَمَ (যাতে তিনি বা সে---) এর সর্বনাম কার জন্য? কারো নিকট তা রসূল (সাঃ)-এর জন্য। অর্থাৎ, যাতে সে জেনে যায় যে, তার পূর্বের নবীরাও আল্লাহর পয়গাম ঐভাবেই পৌঁছিয়েছে, যেভাবে সে পৌঁছিয়েছে। অথবা দায়িত্বশীল ফিরিশতারা তাদের প্রতিপালকের পয়গাম পয়গম্বরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আবার কারো নিকট সর্বনাম মহান আল্লাহর জন্য ব্যবহার হয়েছে। আর তখন এর অর্থ হবে, মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের মাধ্যমে তাঁর নবীদের হিফাযত করেন, যাতে তারা নবুঅতের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। অনুরূপ নবীদের প্রতি কৃত অহীর হিফাযতও তিনি করেন, যাতে তিনি জেনে যান যে, তাঁর নবীরা তাদের প্রতিপালকের পয়গামগুলো ঠিকমত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে অথবা ফিরিশতারা পয়গম্বরদের কাছে আল্লাহর অহী পৌঁছে দিয়েছে। মহান আল্লাহ যদিও প্রতিটি বিষয়ে পূর্ব থেকেই জ্ঞাত থাকেন, তবুও এই ধরনের স্থানগুলোতে তাঁর জানার অর্থ হল, বিষয় সংঘটিত হওয়ার বাস্তবরূপ দর্শন। যেমন, {لِنَعْلَمَ مَنْ يَتَّبِعُ الرَّسُولَ} (যাতে জানতে পারি যে, কে রসূলের অনুসরণ করে---।) (বাক্বারাহঃ ১৪৩) {وَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيَعْلَمَنَّ المُنَافِقِينَ} (আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা বিশ্বাসী এবং কারা মুনাফিক।) (আনকাবূতঃ ১১) ইত্যাদি আয়াতগুলোতে এসেছে। (ইবনে কাসীর)

[2] ফিরিশতাদের নিকট অথবা পয়গম্বরদের নিকট।

[3] কেননা, তিনিই হলেন অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাতা। যা হয়ে গেছে এবং যা ভবিষ্যতে হবে, সব কিছুকে তিনি গণনা করে রেখেছেন। অর্থাৎ, সব কিছুই তাঁর জ্ঞানায়ত্ত রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ২৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3