-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা তার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় যালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) আর যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যাজ্ঞান করে, তার থেকে অধিক যালেম (অত্যাচারী) আর কে? [1] যালেমরা অবশ্যই সফলকাম হবে না। [2]
[1] অর্থাৎ, যেমন আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপকারী (অর্থাৎ, নবী হওয়ার মিথ্যা দাবীদার) সবচেয়ে বড় যালেম, অনুরূপ সে ব্যক্তিও বড় যালেম, যে আল্লাহর নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সত্য রসূলকে মিথ্যা মনে করে। নবী হওয়ার মিথ্যা দাবীদারদের উপর এত কঠোর হুমকি আসা সত্ত্বেও এটা বাস্তব যে, প্রত্যেক যুগে একাধিক ব্যক্তি নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী উত্থাপন করেছে এবং এইভাবে নবী করীম (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীও বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ত্রিশজন মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং তারা প্রত্যেকে দাবী করবে যে, সে নবী।’’ বিগত শতাব্দীতেও কাদিয়ানের (গুলাম আহমাদ নামক) এক ব্যক্তি নবী হওয়ার দাবী করেছিল। আর বর্তমানে তার অনুসারীরা তাকে সত্য নবী এবং কেউ কেউ ‘প্রতিশ্রুত মসীহ’ এই জন্য মনে করে যে, অল্প সংখ্যক কিছু লোক তাকে নবী বলে স্বীকার করে। অথচ কিছু মানুষের কোন মিথ্যুককে সত্যবাদী মনে করে নেওয়া, তার সত্যবাদী হওয়ার দলীল হতে পারে না। সত্যতার জন্য তো কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট দলীলের প্রয়োজন।
[2] যেহেতু এরা উভয়েই যালেম, তাই না সে সফল হবে, যে মিথ্যা রচনা করে, আর না সে, যে মিথ্যাজ্ঞান করে। কাজেই প্রয়োজন হল প্রত্যেকেই যেন নিজেদের পরিণামের ব্যাপারে ভালভাবে চিন্তা-ভাবনা করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. আর স্মরণ করুন, যেদিন আমরা তাদের সবাইকে একত্র করব, তারপর যারা শির্ক করেছে তাদেরকে বলব, যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায়?(১)
(১) এখানে একটি সর্ববৃহৎ পরীক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে যা হাশরের ময়দানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর সামনে অনুষ্ঠিত হবে। বলা হয়েছে ঐ দিনটিও স্মরণ যোগ্য, যেদিন আমরা সবাইকে অর্থাৎ মুশরিক ও তাদের তৈরী করা উপাস্যসমূহকে একত্রিত করব। অতঃপর আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করব যে, তোমরা যেসব উপাস্যকে আমার অংশীদার, স্বীয় স্বীয় অভাব পূরণকারী ও বিপদ বিদূরণকারী মনে করতে, আজ তারা কোথায়? তারা তোমাদের সাহায্য করে না কেন? হাশরের মাঠে একত্রিত সবাই তখন তারা সে সব উপাস্যদের থেকে নিজদেরকে বিমুক্ত ঘোষণা করবে এবং বলবে, আল্লাহর শপথ আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না। এভাবে তারা বাতিল ও মিথ্যা কথা বলবে এবং ওযর-আপত্তি পেশ করতে চেষ্টা করবে। [তাবারী, কুরতুবী, মুয়াসসার, আইসারুত তাফসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) এবং (স্মরণ কর) যেদিন তাদের সকলকে একত্র করব, অতঃপর অংশীবাদীদেরকে বলব, ‘যাদেরকে তোমরা (আমার) অংশী মনে করতে তারা (আজ) কোথায়?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. তারপর তাদের এ ছাড়া বলার অন্য কোন অজুহাত থাকবে না, আমাদের রব আল্লাহর শপথ! আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।(১)
(১) এ আয়াতে তাদের উত্তরকে فِتْنَةُ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এ শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তখন আয়াতের অর্থ হবে, তাদের পরীক্ষায় তারা উপরোক্ত উত্তর দিবে। এ অর্থে তাদের পরীক্ষার উত্তরকেই পরীক্ষা বলা হয়েছে। আবার শব্দটির অন্য অর্থ হতে পারে, তাদের ফিতনার শাস্তি। তখন ফিতনা অর্থ কুফর ও শির্ক। অর্থাৎ তাদের কুফর ও শির্কের শাস্তি তাই হবে যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। কাতাদা বলেন, এখানে ফিতনা বলে তাদের ওযর আপত্তি পেশ করাকে বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী]
তাছাড়া ফিতনা শব্দটি কারো প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ অর্থের উদ্দেশ্য এই যে, এরা পৃথিবীতে এসব মূর্তি ও স্বহস্ত নির্মিত উপাস্যদের প্রতি আসক্ত ছিল, স্বীয় অর্থ-সম্পদ এদের জন্যই উৎসর্গ করত। কিন্তু আজ সব ভালবাসা ও আসক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং এ ছাড়া তাদের মুখে কোন উত্তর যোগাচ্ছে না। কাজেই তাদের থেকে নির্লিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হওয়ারই দাবী করে বসল। [বাগভী]
তাদের উত্তরে একটি বিস্ময়কর বিষয় এই যে, কেয়ামতের ভয়াবহ ও লোমহর্ষক দৃশ্যাবলী এবং রাব্বুল আলামীন-এর শক্তি-সামর্থ্যের অভাবনীয় ঘটনাবলী দেখার পর তারা কোন সাহসে রাব্বুল আলামীন-এর সামনে দাঁড়িয়ে এমন নির্জলা মিথ্যা বলবে! তাও এমন বলিষ্ঠ চিত্তে যে, আল্লাহর মহান সত্তার কসম খেয়ে বলবে যে, আমরা মুশরিক ছিলাম না। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এর উত্তরে বলেনঃ তাদের এ উক্তি বিবেক-বুদ্ধি ও পরিণামদৰ্শিতার উপর ভিত্তিশীল নয়, বরং ভয়ের আতিশয্যে হতবুদ্ধিতার আবেশে মুখে যা এসেছে, তাই বলেছে।
কিন্তু হাশরের সাধারণ ঘটনাবলী ও অবস্থা চিন্তা করলে এ কথাও বলা যায় যে, আল্লাহ্ তাআলা তাদের পূর্ণ অবস্থা দৃষ্টির সামনে আনার জন্য এ শক্তিও দিয়েছেন যে, তারা পৃথিবীর মত অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে যা ইচ্ছা বলুক- যাতে কুফর ও শির্কের সাথে সাথে তাদের এ দোষটিও হাশরবাসীদের জানা হয়ে যায় যে, তারা মিথ্যা ভাষণে অদ্বিতীয় পটু, এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও তারা মিথ্যা বলতে দ্বিধা করে না। কুরআনুল কারীমের অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফিররা হাশরের মাঠে “আল্লাহর সাথে শপথ করে মিথ্যা বলবে, যেমন আজ মুসলিমদের সামনে মিথ্যা শপথ করে থাকে।” [দেখুন, সূরা আল-মুজাদালাহ ১৮]
সুতরাং বোঝা গেল যে, তারা স্বয়ং রাব্বুল আলামীন-এর সামনেও মিথ্যা কসম খেতে দ্বিধা করবে না। হাশরের ময়দানে যখন তারা কসম খেয়ে নিজ নিজ শির্ক ও কুফরী অস্বীকার করবে, তখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলা তাদের মুখে মোহর এঁটে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হস্ত-পদকে নির্দেশ দিবেন যে, তোমরা সাক্ষ্য দাও, তারা কি করত। তখন প্রমাণিত হবে যে, আমাদের হস্ত-পদ, চক্ষু-কর্ণ -এরা সবাই ছিল আল্লাহ্ তা'আলার গুপ্ত পুলিশ। তারা সব কাজকর্ম একটি একটি করে সামনে তুলে ধরবে। এ সম্পর্কেই সূরা ইয়াসীনে বলা হয়েছেঃ “আমি আজ এদের মুখে মোহর মেরে দেব, এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।” [ইয়াসীনঃ ৬৫]
এহেন ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করার পর আর কেউ কোন তথ্য গোপনে ও মিথ্যা ভাষণে দুঃসাহসী হবে না। অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ (وَلَا يَكْتُمُونَ اللَّهَ حَدِيثًا) অর্থাৎ “আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।” [সূরা আন-নিসাঃ ৪২] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মতে এর অর্থ এই যে, প্রথমে তারা খুব মিথ্যা বলবে এবং মিথ্যা শপথ করবে, কিন্তু স্বয়ং তাদের হস্ত-পদ যখন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, তখন কেউ ভুল কথা বলতে সাহসী হবে না। মহা বিচারপতির আদালতে সম্পূর্ণ মুক্ত পরিবেশে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হবে। পৃথিবীতে যেভাবে সে মিথ্যা বলত, তখনো তার মিথ্যা বলার এ ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হবে না। কেননা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার মিথ্যার আবরণ স্বয়ং তার হস্তপদের সাক্ষ্য দ্বারা উন্মোচিত করে দেবেন। ফলে তারা কোন কিছুই গোপন করতে সমর্থ হবে না। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]
মৃত্যুর পর কবরে মুনকীর-নকীর ফিরিশতাদ্বয়ের সামনে প্রথম পরীক্ষা হবে। এ পরীক্ষা সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ মুনকীর-নকীর যখন কাফেরকে জিজ্ঞেস করবে, مَنْ رَبُّكَ، وَمَا دِينُكَ، وَمَنْ نَبِيُّكَ অর্থাৎ তোমার রব কে, তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে? কাফের বলবেঃ هٰاهْ هٰاهْ لاٰ أدرِي অর্থাৎ হায়! হায়!! আমি কিছুই জানি না! এর বিপরীতে মুমিন বলবে, আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মাদ। [আবু দাউদ: ৪৭৫৩] এতে বুঝা যায় যে, এ পরীক্ষায় কেউ মিথ্যা বলার ধৃষ্টতা দেখাতে পারবে না। নতুবা কাফেরও মুমিনের ন্যায় উত্তর দিতে পারতো।
কারণ এই যে, এখানে পরীক্ষক হচ্ছেন ফিরিশতা। তারা অদৃশ্য বিষয় জ্ঞাত নয় এবং তারা হস্তপদের সাক্ষ্যও গ্রহণ করতে অক্ষম। এখানে মিথ্যা বলার ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হলে ফিরিশতা তার উত্তর অনুযায়ীই কাজ করত, ফলে পরীক্ষার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যেত। হাশরের পরীক্ষা এরূপ নয়। সেখানে প্রশ্ন ও উত্তর সরাসরি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত ও সর্বশক্তিমানের সাথে হবে। সেখানে কেউ মিথ্যা বললেও তা কার্যকরী হবে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'আলা বান্দার সাথে হাশরের মাঠের সাক্ষাতে বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি?
তোমাকে নেতা বানাইনি? তোমাকে বিয়ে-শাদী দেইনি? তোমার জন্য ঘোড়া উট করায়ত্ত্ব করে দেইনি? তোমাকে নেতৃত্ব দিতে ও আরামে ঘুরতে ফিরতে দেইনি। তখন সে বলবে, হ্যাঁ, তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বিশ্বাস করতে যে, আমার সাথে তোমার সাক্ষাত হবে? সে বলবে, না। তখন তিনি বলবেন, আজ আমি তোমাকে ছেড়ে যাব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে।
তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে অনুরূপ করবেন, সেও তা বলবে আর আল্লাহ্ তা'আলাও তদ্রুপ উত্তর করবেন। তারপর তৃতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ বলবেন, সে বলবে, হে রব! আমি আপনার উপর, আপনার কিতাবের উপর ও আপনার রাসূলের উপর ঈমান এনেছিলাম, সালাত ও রোযা আদায় করেছিলাম, দান করেছিলাম এবং যত পারে প্রশংসা করবে। তখন তাকে বলা হবে এখানে তাহলে (অপেক্ষা কর)। তারপর তাকে বলা হবে, এখন তোমার উপর সাক্ষ্য উত্থাপন করা হবে। সে তখন তার মনে চিন্তা করবে, সেটা আবার কে যে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে? তখন তার মুখে মোহর মেরে দেয়া হবে, আর তার উরু, মাংস ও অস্থিকে কথা বলতে নির্দেশ দেয়া হবে, ফলে তার উরু, মাংস ও অস্থি তার আমল সম্পর্কে বলবে ... [মুসলিম: ২৯৬৮]
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, যারা মিথ্যা কসম খেয়ে মিথ্যা শির্ককে অস্বীকার করবে, তারা হলো সেসব লোক, যারা কোন সৃষ্টজীবকে খোলাখুলি আল্লাহ কিংবা আল্লাহর প্রতিনিধি না বলেও আল্লাহর সব ক্ষমতা সৃষ্টজীবে বন্টন করে দিয়েছিল। তারা নিজেদেরকে মুশরিক মনে করতো না। তাই হাশরের ময়দানেও কসম খেয়ে বলবে যে, তারা মুশরিক ছিল না। [ফাতহুল কাদীর] কিন্তু কসম খাওয়া সত্বেও আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) অতঃপর তাদের এ কথা বলা ভিন্ন অন্য কোন ওজুহাত থাকবে না যে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শপথ! আমরা তো অংশীবাদী ছিলাম না।’ [1]
[1] فتنة এর একটি অর্থ ‘হুজ্জত’ এবং আর একটি অর্থ ‘ওজুহাত’ করা হয়েছে। পরিশেষে এরা হুজ্জত অথবা ওজুহাত পেশ করে নিষ্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে বলবে যে, ‘আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।’ ইমাম ইবনে জারীর এর অর্থ করেছেন, ‘যখন আমি তাদেরকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবো, তখন দুনিয়াতে যে শিরক তারা করেছে তার স্বপক্ষে ওজুহাত পেশ করার জন্য এ কথা বলা ছাড়া তাদের আর অন্য কোন উপায় থাকবে না যে, আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।’ এখানে এই জটিলতা সৃষ্টি যেন না হয় যে, ওখানে (আখেরাতে) তো মানুষের হাত-পা সাক্ষী দিবে এবং জিহ্বার উপর তালা-মোহর লেগে যাবে, অতএব এই অস্বীকার করা কিভাবে সম্ভব হবে? এর উত্তর ইবনে আব্বাস (রাঃ) এটাই দিয়েছেন যে, যখন মুশরিকরা দেখবে যে, তাওহীদবাদী মুসলিমরা জান্নাতে যাচ্ছে, তখন এরা আপোসে পরামর্শ করে নিজেদের শিরক করার কথাকে অস্বীকার করে দেবে। তখন মহান আল্লাহ তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তাদের হাত-পা তাদের যাবতীয় কৃতকর্মের সাক্ষী দেবে। ফলে তারা আল্লাহর নিকটে কোন জিনিস গোপন করার সামর্থ্য রাখবে না। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. দেখুন, তারা নিজেদের প্রতি কিরূপ মিথ্যাচার করে এবং যে মিথ্যা তারা রটনা করত তা কিভাবে তাদের থেকে উধাও হয়ে গেল।(১)
(১) এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হয়েছে যে, দেখুন, তারা নিজেদের বিপক্ষে কেমন মিথ্যা বলছে; আল্লাহর বিরুদ্ধে যাদেরকে মিছেমিছি শরীক তৈরী করেছিল, আজ তারা সবাই উধাও হয়ে গেছে। নিজেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অর্থ এই যে, এ মিথ্যার শাস্তি তাদের উপরই পতিত হবে। মনগড়া তৈরী করার অর্থ এই যে, দুনিয়াতে তাদেরকে আল্লাহর অংশীদার করার ব্যাপারটি ছিল মিছামিছি (শরীক) ও মনগড়া। আজ বাস্তব সত্য সামনে এসে যাওয়ায় এ মিথ্যা অকেজো হয়ে গেছে। মনগড়া তৈরীর অর্থ মিথ্যা কসমও হতে পারে, যা হাশরের ময়দানে উচ্চারণ করবে। অতঃপর হস্তপদ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য দ্বারা সে মিথ্যা ধরা পড়ে যাবে।
কোন কোন মুফাসসির বলেছেনঃ মনগড়া তৈরী করা বলতে মুশরিকদের ঐ সব অপব্যাখ্যাকে বুঝানো হয়েছে, যা তারা দুনিয়াতে মিথ্যা উপাস্যদের সম্পর্কে মনে করত। উদাহরণতঃ তারা বলতো (مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ) অর্থাৎ আমরা উপাস্য মনে করে মূর্তির উপাসনা করি না, বরং উপাসনা করার কারণ এই যে, তারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে আমাদেরকে তার নিকটবর্তী করে দেবে। হাশরে তাদের এ মনগড়া ব্যাখ্যা এমনভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হবে যে, তাদের মহাবিপদের সময় কেউ তাদের সুপারিশ করবে না।
উভয় আয়াতে এ বিষয়টি বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য যে, হাশরের ভয়াবহ ময়দানে মুশরিকদেরকে যা ইচ্ছা বলার স্বাধীনতা দানের মধ্যে সম্ভবতঃ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মিথ্যা বলার অভ্যাস এমন খারাপ অভ্যাস যা পরিত্যাগ করা অতি কঠিন। সুতরাং যারা দুনিয়াতে মিথ্যা কসম খেত, তারা এখানেও তা থেকে বিরত থাকতে পারেনি। ফলে সমগ্র সৃষ্ট জগতের সামনে তারা লাঞ্ছিত হয়েছে। এ কারণেই কুরআন ও হাদীসে মিথ্যা বলার নিন্দা জোরালো ভাষায় করা হয়েছে। কুরআনের স্থানে স্থানে মিথ্যাবাদীদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, মিথ্যা পাপাচারের দোসর। মিথ্যা ও পাপাচার উভয়ই জাহান্নামে যাবে। [ইবনে হিব্বান: ৫৭৩৪]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ যে কাজের দরুন মানুষ জাহান্নামে যাবে, তা কি? তিনি বললেনঃ সে কাজ হচ্ছে মিথ্যা। [মুসনাদে আহমাদ: ২/১৭৬] অনুরূপভাবে, মে'রাজের রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ করেছিলেন যে, এক ব্যক্তির চোয়াল চিরে দেয়া হচ্ছে। তার সাথে এ কার্যধারা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘এ ব্যক্তি কে? জিবরীল বললেনঃ ‘এ হলো মিথ্যাবাদী’। [বুখারী ১৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) দেখ, তারা নিজেরাই নিজেদেরকে কিরূপ মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করবে এবং যে মিথ্যা তারা রচনা করত, তা কিভাবে উধাও হয়ে যাবে। [1]
[1] তবে সেখানে সুস্পষ্ট এই মিথ্যার কোন লাভ তাদের হবে না। যেমন, দুনিয়াতে কোন কোন সময় মানুষ এ রকম (মিথ্যা ফলপ্রসূ বলে) অনুভব করে। অনুরূপ যে বাতিল উপাস্যগুলোকে এরা তাদের সমর্থক, সাহায্যকারী এবং সুপারিশকারী মনে করত, তারাও অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং এই শরীকদের প্রকৃত অবস্থা সেখানে স্পষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু সেখানে এই অবস্থাকে দূরীভূত করার কোন উপায় থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. আর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আপনার প্রতি কান পেতে শুনে, কিন্তু আমরা তাদের অন্তরের উপর আবরণ করে দিয়েছি যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে; আর আমরা তাদের কানে বধিরতা তৈরী করেছি।(১) আর যদি সমস্ত আয়াতও তারা প্রত্যক্ষ করে তবুও তারা তাতে ঈমান আনবে না। এমনকি তারা যখন আপনার কাছে উপস্থিত হয়, তখন তারা আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, যারা কুফরী করেছে তারা বলে, এটাতো আগেকার দিনের উপকথা ছাড়া আর কিছু নয়।
(১) মুজাহিদ বলেন, এখানে কুরাইশদের কথা বলা হচ্ছে, তারাই কান পেতে শুনত। [আত-তাফসীরুস সহীহ] কাতাদাহ বলেন, মুশরিকরা তাদের কান দিয়ে শুনত কিন্তু সেটা তারা বুঝতো না। তারা জন্তু-জানোয়ারদের মতো, যারা কেবল হাকডাকই শুনতে পায়। তাদেরকে কি বলা হচ্ছে সেটা জানে না। [তাফসীর আবদির রাযযাক]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) আর তাদের মধ্যে কিছু লোক তোমার দিকে কান পেতে রাখে,[1] কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি।[2] সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেও তারা তাতে বিশ্বাস করবে না। এমন কি তারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তখন অবিশ্বাসীগণ বলে, ‘এ তো সে কালের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’[3]
[1] অর্থাৎ, এই মুশরিকরা তোমার কাছে এসে কুরআন তো শোনে, কিন্তু হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্য না থাকার কারণে তা তাদের জন্য ফলপ্রসূ হয় না।
[2] এ ছাড়াও কুফরীর ফলস্বরূপও তাদের অন্তরে আমি আবরণ রেখে দিয়েছি এবং তাদের কান বোঝাল করে দিয়েছি। ফলে তাদের অন্তর সত্য কথা বুঝতে অক্ষম এবং তাদের কান সত্য শুনতে অপারগ।
[3] এখন ওরা ভ্রষ্টতার এমন ফাঁদে ফেঁসে গেছে যে, বৃহৎ থেকে বৃহত্তর মু’জিযাও যদি তারা দেখে নেয়, তবুও ঈমান আনার তাওফীক লাভ থেকে বঞ্চিতই থাকবে এবং তারা বিরুদ্ধাচরণ ও অমান্য করাতে এমন সীমা ছাড়িয়ে গেছে যে, কুরআন কারীমকে পূর্ববর্তীদের কেচ্ছা-কাহিনী বৈ কিছুই ভাবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. আর তারা অন্যকে এগুলো শুনা থেকে বিরত রাখে এবং নিজেরাও এগুলো শুনা থেকে দুরে থাকে। আর তারা নিজেরাই শুধু নিজেদেরকে ধ্বংস করে, অথচ তারা উপলব্ধি করে না।(১)
(১) দাহহাক, কাতাদাহ, মুহাম্মদ ইবনে হানফিয়া রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণের মতে এ আয়াত মক্কার কাফেরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা কুরআন শুনতে ও অনুসরণ করতে লোকদেরকে বারণ করত এবং নিজেরাও তা থেকে দূরে সরে থাকত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, এ আয়াত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা আবু তালেব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, তিনি তাকে কাফেরদের উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করতেন, কিন্তু কুরআনে বিশ্বাস করতেন না। এমতাবস্থায় عنه শব্দের সর্বনামটির অর্থ কুরআনের পরিবর্তে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আর তারা অপরকে তা (কুরআন ও নবীর অনুসরণ) হতে বিরত রাখে এবং নিজেরাও তা থেকে দূরে থাকে।[1] তারা নিজেরা শুধু নিজেদেরকেই ধ্বংস করে, অথচ তারা অনুভব করে না। [2]
[1] অর্থাৎ, সাধারণ লোকেদেরকেও নবী করীম (সাঃ) থেকে এবং কুরআন থেকে বাধা দেয়, যাতে তারা ঈমান না আনে এবং নিজেরাও দূরে দূরে থাকে।
[2] তবে লোকেদেরকে দূরে রেখে এবং নিজেদেরকেও দূরে সরিয়ে রেখে আমার ও আমার নবীর কি ক্ষতি হবে? এই ধরনের কর্ম দ্বারা তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে, অথচ তারা টেরও পাচ্ছে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. আপনি যদি দেখতে পেতেন(১) যখন তাদেরকে আগুনের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হত, আর আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ না করতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।(২)
(১) ইসলামের তিনটি মৌলনীতি রয়েছে- (১) একত্ববাদ (২) রেসালাত ও (৩) আখেরাতে বিশ্বাস। [তাফসীর মানার: ৯/৩৯] অবশিষ্ট সমস্ত বিশ্বাস এ তিনটিরই অধীন। এ তিন মূলনীতি মানুষকে স্বীয় স্বরূপ ও জীবনের লক্ষ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে আখেরাত ও আখেরাতের প্রতিদান ও শাস্তির বিশ্বাস কার্যতঃ এমন একটি বিশ্বাস, যা মানুষের প্রত্যেক কাজের গতি একটি বিশেষ দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এ কারণেই কুরআনুল কারীমের সব বিষয়বস্তু এ তিনটির মধ্যেই চক্রাকারে আবর্তিত হয়। আলোচ্য আয়াতসমূহে বিশেষভাবে আখেরাতের প্রশ্ন ও উত্তর, কঠোর শাস্তি, অশেষ সওয়াব এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বরূপ বৰ্ণিত হয়েছে।
(২) এ আয়াতে অবিশ্বাসী, অপরাধীদের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, আখেরাতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে এবং তারা কল্পনাতীত ভয়াবহ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে বলবে, আফসোস, আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করা হলে আমরা রব-এর প্রেরিত নিদর্শনাবলী ও নির্দেশাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না, বরং এগুলো বিশ্বাস করে ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। [মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদেরকে দোযখের পাশে দাঁড় করানো হবে[1] এবং তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদের (পৃথিবীতে) প্রত্যাবর্তন ঘটত, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে মিথ্যা বলতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ [2]
[1] এখানে لو (যদি) এর জওয়াব ঊহ্য আছে। বাক্যের বাহ্যিক গঠন এইভাবে হবে, ‘‘তাহলে তুমি ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে।’’
[2] কিন্তু সেখান থেকে পুনরায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। কাজেই তারা তাদের এই আশা পূরণ করতে পারবে না। কাফেরদের এই ধরনের আশার কথা কুরআন বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছে।{رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ* قَالَ اخْسَأُوا فِيهَا وَلا تُكَلِّمُونِ} ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা (বড়ই) যালেম গণ্য হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিক্কৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।’’ (সূরা মু’মিনূন ১০৭-১০৮) {رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ} ‘‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা দেখলাম ও শুনলাম। এখন আমাদেরকে ফেরৎ পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে গেছি।’’ (সূরা সাজদাহ ১২)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. বরং আগে তারা যা গোপন করত তা এখন তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তাদের আবার (দুনিয়ায়) ফেরৎ পাঠানো হলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল আবার তারা তাই করত এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।(১)
(১) তাদের এ উক্তিকে মিথ্যা বলা পরিণতির দিক দিয়েও হতে পারে। অর্থাৎ তারা ওয়াদা করেছে যে, আমরা দুনিয়াতে পুনঃ প্রেরিত হলে মিথ্যারোপ করবো না, এর পরিণতি কিন্তু এরূপ হবে না; তারা দুনিয়াতে পৌছে আবারো মিথ্যারোপ করবে। [ইবন কাসীর] আবার এ মিথ্যা বলার এ অর্থও হতে পারে যে, তারা এখনো যা কিছু বলছে, তা সদিচ্ছায় বলছে না, বরং সাময়িক বিপদ টলানোর উদ্দেশ্যে, শাস্তির কবল থেকে বাঁচার জন্যে বলছে- অন্তরে এখনো তাদের সদিচ্ছা নেই। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) বরং পূর্বে তারা যা গোপন করত, তা তখন তাদের নিকট প্রকাশ পেয়ে যাবে।[1] তারা প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল, পুনরায় তারা তাই করবে। আর অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। [2]
[1] بَلْ যেটা إِضْرَاب (অর্থাৎ, পূর্বের কথাকে প্রত্যাহার করার) জন্য আসে। এ বাক্যের কয়েকটি ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে। (ক) তাদের সেই কুফরী, বিরুদ্ধাচরণ এবং মিথ্যাজ্ঞান প্রকাশিত হয়ে যাবে, যা ইতিপূর্বে তারা দুনিয়াতে অথবা আখেরাতে গোপন করত। অর্থাৎ, যেটাকে অস্বীকার করত। যেমন, সেখানে প্রথম পর্যায়ে বলবে, مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ ‘‘আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।’’ (খ) অথবা রসূল (সাঃ) এবং কুরআনে কারীমের যে সত্যতার জ্ঞান তাদের অন্তরে ছিল, কিন্তু তা তাদের অনুসারীদের নিকট গোপন করত, সেখানে প্রকাশিত হয়ে যাবে। (গ) কিংবা মুনাফেকদের সেই মুনাফেকী সেখানে প্রকাশিত হয়ে যাবে, যা তারা দুনিয়াতে ঈমানদারদের নিকট গোপন করত। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
[2] অর্থাৎ, পুনরায় দুনিয়াতে আসার ইচ্ছা ঈমান আনার জন্য নয়, বরং কেবল সেই আযাব থেকে বাঁচার জন্য, যা কিয়ামতের দিন প্রকাশ হয়ে যাবে এবং যা তারা প্রত্যক্ষ দেখেও নেবে। তাছাড়া দুনিয়াতে যদি এদেরকে পুনরায় পাঠানোও যায়, তবুও তারা তা-ই করবে, যা পূর্বে করেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. আর তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদেরকে পুনরুত্থিতও করা হবে না।(১)
(১) অর্থাৎ যদি তারা দুনিয়াতে পুনঃ প্রেরিত হয়, তবে সেখানে পৌছে একথাই বলবে যে, আমরা এ পার্থিব জীবন ছাড়া অন্য কোন জীবন মানি না; এ জীবনই একমাত্র জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে না। [ইবন কাসীর] মোটকথাঃ কাফের ও পাপীরা হাশরের ময়দানে প্রাণ রক্ষার্থে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নানা ধরণের কথাবার্তা বলবে। কখনো মিথ্যা কসম খাবে, কখনো দুনিয়ায় পুনঃ প্রেরিত হওয়ার আকাঙ্খা করবে। এতে ফুটে উঠল যে, পার্থিব জীবন অনেক বড় নেয়ামত এবং অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়। যদি তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। তাই ইসলামে আত্মহত্যা হারাম এবং মৃত্যুর জন্য দো'আ ও মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ। কারণ এতে আল্লাহ তা'আলার একটি বিরাট নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সারকথা এই যে, দুনিয়াতে যে বস্তুটি প্রত্যেকেই প্রাপ্ত হয়েছে এবং যা সর্বাধিক মূল্যবান ও প্রিয়, তা হচ্ছে মানুষের জীবন। এ কথাও সবার জানা যে, মানুষের জীবনের একটা সীমাবদ্ধ গণ্ডি রয়েছে কিন্তু তার সঠিক সীমা কারো জানা নেই যে, তা সত্তর বছর হবে, না সত্তর ঘন্টা হবে, না একটি শ্বাস ছাড়ারও সময় পাওয়া যাবে না। সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জন্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) তারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হব না।’ [1]
[1] এটা হলো بَعْث بَعْدَ المَوت (মৃত্যুর পর পুনরুত্থান) এর কথা অস্বীকার যা প্রত্যেক কাফের করে এবং এই বাস্তবতাকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করাই হলো প্রকৃতপক্ষে তাদের কুফরী ও অবাধ্যতার সবচেয়ে বড় কারণ। তাছাড়া মানুষের অন্তরে যদি পরকালের প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে তারা কুফরী ও অবাধ্যতার পথ থেকে সত্বর ফিরে আসবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. আর আপনি যদি দেখতে পেতেন, যখন তাদেরকে তাদের রব-এর সম্মুখে দাঁড় করান হবে; তিনি বলবেন, এটা কি প্রকৃত সত্য নয়? তারা বলবে, আমাদের রব-এর শপথ! নিশ্চয়ই সত্য। তিনি বলবেন, তবে তোমরা যে কুফরী করতে তার জন্য তোমরা এখন শাস্তি ভোগ কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) তুমি যদি তাদেরকে দেখতে পেতে, যখন তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং তিনি বলবেন, ‘এ (পুনরুত্থান) কি প্রকৃত সত্য নয়!’ তারা বলবে, ‘আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই এটা সত্য।’ তিনি বলবেন, ‘তবে তোমরা যে অবিশ্বাস করতে, তার জন্য তোমরা এখন শাস্তি ভোগ কর।’ [1]
[1] অর্থাৎ, স্বচক্ষে দর্শন করার পর তো তারা স্বীকার করবেই যে, আখেরাতের জীবন বাস্তব ও সত্য। তবে সেখানে এই স্বীকারোক্তির কোন লাভ হবে না এবং মহান আল্লাহ বলবেন, "এখন তোমরা তোমাদের কুফরীর কারণে আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।"
তাফসীরে আহসানুল বায়ান