৫১ : ২১
وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِكُمۡ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ ﴿۲۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তবুও তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও! তোমরা কি ভেবে দেখবে না?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২২
وَ فِی السَّمَآءِ رِزۡقُكُمۡ وَ مَا تُوۡعَدُوۡنَ ﴿۲۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. আর আসমানে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।(১)
(১) অর্থাৎ আসমানে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত বিষয় রয়েছে। এর নির্মল ও সরাসরি তাফসীর এরূপ বৰ্ণিত আছে যে, আকাশে থাকা অর্থ “লওহে-মাহফুযে” লিপিবদ্ধ থাকা। বলাবাহুল্য প্রত্যেক মানুষের রিযিক, প্রতিশ্রুত বিষয় এবং পরিণাম সবই লওহে-মাহফুযে লিপিবদ্ধ আছে। তাছাড়া ‘আসমান’ বলে ঊর্ধ্বজগতও উদ্দেশ্য হতে পারে। মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার এবং কাজ করার জন্য যা কিছু দেয়া হয় তার সবকিছুই রিযিক। আর সমস্ত আসমানী কিতাব ও এ কুরআনে কিয়ামত, হাশর ও পুনরুত্থান, হিসেবা-নিকেশ ও জবাবদিহি, পুরস্কার ও শাস্তি এবং জান্নাত ও জাহান্নামের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে (وَمَا تُوعَدُونَ) বলে সেসবকেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ায় তোমাদের কাকে কি দিতে হবে তার ফায়সালা ঊর্ধ্বজগত থেকেই হয়। তাছাড়া জবাবদিহি ও কর্মফল দেয়ার জন্য কখন তলব করা হবে সে ফায়সালাও সেখান থেকেই হবে [দেখুন: কুরতুবী]।
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) আকাশে রয়েছে তোমাদের রুযী ও প্রতিশ্রুত সবকিছু। [1]
[1] অর্থাৎ, বৃষ্টিও আকাশ থেকে হয়, (সূর্যও আছে আকাশে,) যার দ্বারা তোমাদের জীবিকা উৎপন্ন হয়। আর জান্নাত ও জাহান্নাম এবং প্রতিদান ও শাস্তির ব্যাপারটাও আসমানে আছে, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৩
فَوَ رَبِّ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ اِنَّهٗ لَحَقٌّ مِّثۡلَ مَاۤ اَنَّكُمۡ تَنۡطِقُوۡنَ ﴿۲۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. অতএব আসমান ও যমীনের রবের শপথ! নিশ্চয় তোমরা যে কথা বলে থাক তার মতই এটি সত্য।(১)
(১) অর্থাৎ তোমরা যেমন নিজেদের কথাবার্তা বলার মাধ্যমে কোন সন্দেহ কর না, কেয়ামতের আগমনও তেমনি সুস্পষ্ট ও সন্দেহমুক্ত, এতে সন্দেহ ও সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। দেখাশোনা, আস্বাদন করা, স্পর্শ করা ও ঘ্রাণ লওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত অনুভূত বিষয়সমূহের মধ্য থেকে এখানে বিশেষভাবে কথা বলাকে মনোনীত করার কারণ সম্ভবত এই যে, উপরোক্ত অনুভূত বিষয়সমূহের মধ্যে মাঝে মাঝে রোগ-ব্যাধি ইত্যাদির কারণে ধোঁকা হয়ে যায়। দেখা ও শোনার মধ্যে পার্থক্য হওয়া সুবিদিত। অসুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে মিষ্ট বস্তুও তিক্ত লাগে, কিন্তু বাকশক্তিতে কখনও কোন ধোঁকা ও ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই তোমাদের কথা বলার মতই তা[1] সত্য।
[1] إِنَّهُ তে সর্বনাম (তা) থেকে বুঝানো সেই সমস্ত জিনিস ও নিদর্শনগুলো, যেগুলো উল্লিখিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৪
هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ ضَیۡفِ اِبۡرٰهِیۡمَ الۡمُكۡرَمِیۡنَ ﴿ۘ۲۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. আপনার কাছে ইবরাহীমের সম্মানীত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? [1]
[1] هَلْ শব্দ প্রশ্নসূচক। এতে নবী করীম (সাঃ)-কে সচেতন করা হচ্ছে যে, এই ঘটনা সম্পর্কে তুমি জানো না, বরং আমি তোমাকে অহী দ্বারা অবহিত করছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৫
اِذۡ دَخَلُوۡا عَلَیۡهِ فَقَالُوۡا سَلٰمًا ؕ قَالَ سَلٰمٌ ۚ قَوۡمٌ مُّنۡكَرُوۡنَ ﴿ۚ۲۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে তিনি বললেন, ‘সালাম’। এরা তো অপরিচিত লোক।(১)
(১) منكر শব্দের অর্থ অপরিচিত। বাক্যের অর্থ এই যে, ফেরেশতাগণ মানব আকৃতিতে আগমন করেছিল। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদেরকে চিনতে পারেননি। তাই মনে মনে বললেন, এরা তো অপরিচিত লোক। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ‘সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক।’ [1]
[1] এ কথাটা তিনি মনে মনে বলেছিলেন। তাঁদেরকে সম্বোধন করে (প্রকাশ্যে) বলেননি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৬
فَرَاغَ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ فَجَآءَ بِعِجۡلٍ سَمِیۡنٍ ﴿ۙ۲۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. অতঃপর ইবরাহীম তার স্ত্রীর কাছে দ্রুত চুপিসারে গেলেন(১) এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসলেন,
(১) راغ শব্দটি روغ থেকে উদ্ভূত। অর্থ গোপনে চলে যাওয়া। উদ্দেশ্য এই যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মেহমানদের খানাপিনার ব্যবস্থা করার জন্যে এভাবে গৃহ থেকে চলে গেলেন যে, মেহমানরা তা টের পায়নি। নতুবা তারা হয়ত এ কাজে বাধা দিত। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) অতঃপর ইব্রাহীম সংগোপনে তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি (ভুনা) গোশতল বাছুর নিয়ে এল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৭
فَقَرَّبَهٗۤ اِلَیۡهِمۡ قَالَ اَلَا تَاۡكُلُوۡنَ ﴿۫۲۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. অতঃপর তিনি তা তাদের সামনে রেখে বললেন, তোমরা কি খাবে না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) তা তাদের সামনে রাখল এবং বলল, ‘তোমরা খাচ্ছ না কেন?’ [1]
[1] অর্থাৎ, সম্মুখে রাখা সত্ত্বে তাঁরা খাওয়ার জন্য সেদিকে হাতই বাড়ালেন না, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৮
فَاَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡا لَا تَخَفۡ ؕ وَ بَشَّرُوۡهُ بِغُلٰمٍ عَلِیۡمٍ ﴿۲۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. এতে তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল।(১) তারা বলল, ভীত হবেন না। আর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্ৰ সন্তানের সুসংবাদ দিল।
(১) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের না খাওয়ার কারণে তাদের ব্যাপারে শংকাবোধ করতে লাগলেন। কেননা, তখন ভদ্র সমাজে এই রীতি প্রচলিত ছিল যে, আহার্য পেশ করলে মেহমান কিছু না কিছু আহার্য গ্ৰহণ করত। কোন মেহমান এরূপ না করলে তাকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে আগমনকারী শত্রু বলে আশংকা করা হত। [কুরতুবী]।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) তখন তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল।[1] তারা বলল, ‘ভয় পেয়ো না।’[2] অতঃপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিল।
[1] ভয় এই কারণে অনুভব করছিলেন যে, ইবরাহীম (আঃ) ভাবলেন এরা খাবার খাচ্ছেন না, তার অর্থ আগন্তুকরা কোন কল্যাণের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অকল্যাণের উদ্দেশ্যেই এসেছেন।
[2] ইবরাহীম (আঃ) এর মুখমন্ডলে ভয়ের চিহ্ন দেখে ফিরিশতারা এ কথা বললেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ২৯
فَاَقۡبَلَتِ امۡرَاَتُهٗ فِیۡ صَرَّۃٍ فَصَكَّتۡ وَجۡهَهَا وَ قَالَتۡ عَجُوۡزٌ عَقِیۡمٌ ﴿۲۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. তখন তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে সম্মুখে আসল এবং তার গাল চাপড়িয়ে বলল, বৃদ্ধা-বন্ধ্যা।(১)
(১) সারা যখন শুনলেন যে, ফেরেশতারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে পুত্র-সন্তান জন্মের সুসংবাদ দিতেছে, আর এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সন্তান স্ত্রীর গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করে, তখন তিনি বুঝলেন যে, এই সুসংবাদ আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যে। ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবেই তার মুখ থেকে কিছু আশ্চর্য ও বিস্ময়ের বাক্য উচ্চারিত হয়ে গেল। তিনি বললেন, প্রথমত, আমি বৃদ্ধা, এরপর বন্ধ্যা। যৌবনে আমি সন্তান ধারণের যোগ্য ছিলাম না। এখন বার্ধক্যে এটা কিরূপে সম্ভব হবে? জওয়াবে ফেরেশতাগণ যা বললেন তার অর্থ, আল্লাহ তা'আলা সবকিছু করতে পারেন। এ কাজও এমনিভাবেই হবে। কোন কোন বর্ণনা মতে, এই সুসংবাদ অনুযায়ী যখন ইসহাক আলাইহিসসালাম জন্মগ্রহণ করেন, তখন সারার বয়স নিরানব্বই বছর এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর বয়স একশত বছর ছিল। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) তখন তার স্ত্রী বিস্ময়ে হতবাক[1] হয়ে সামনে এল এবং মুখমন্ডল চাপড়িয়ে বলল, ‘(আমি তো) বন্ধ্যা বৃদ্ধা, (আমার সন্তান হবে কি করে?)’
[1] صَرَّةٍ এর দ্বিতীয় অর্থ হল, চিৎকার করা। অর্থাৎ, চিৎকার করে বলল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫১ : ৩০
قَالُوۡا كَذٰلِكِ ۙ قَالَ رَبُّكِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡحَكِیۡمُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۳۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. তারা বলল, আপনার রব এরূপই বলেছেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) তারা বলল, ‘তোমার প্রতিপালক এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।’ [1]
[1] অর্থাৎ, যেভাবে আমরা তোমাকে বললাম, তা আমরা নিজের পক্ষ হতে বলিনি। বরং তোমার প্রতিপালকই এ কথা বলেছেন। আমরা কেবল তোমাকে অবগত করাচ্ছি। কাজেই এতে না আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে, আর না সন্দেহ করার। কারণ, আল্লাহ যা চান তা অবশ্যই হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান