بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৫/ আল-মায়েদা | Al-Ma'ida | سورة المائدة আয়াতঃ ১২০ মাদানী
৫ : ২১ یٰقَوۡمِ ادۡخُلُوا الۡاَرۡضَ الۡمُقَدَّسَۃَ الَّتِیۡ كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمۡ وَ لَا تَرۡتَدُّوۡا عَلٰۤی اَدۡبَارِكُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِیۡنَ ﴿۲۱﴾
یقوم ادخلوا الارض المقدسۃ التی كتب الله لكم و لا ترتدوا علی ادباركم فتنقلبوا خسرین ﴿۲۱﴾
• ‘হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে’।

-আল-বায়ান

• হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি আল্লাহ নির্দিষ্ট করেছেন তাতে প্রবেশ কর আর পশ্চাতে ঘুরে দাঁড়িও না, তা করলে ধ্বংসে পতিত হবে।

-তাইসিরুল

• হে আমার সম্প্রদায়! এই পুণ্য ভূমিতে প্রবেশ কর যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন, আর পিছনের দিকে ফিরে যেওনা, তাহলে তোমরা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

-মুজিবুর রহমান

• O my people, enter the Holy Land which Allah has assigned to you and do not turn back [from fighting in Allah 's cause] and [thus] become losers."

-Sahih International

২১. হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি লিখে দিয়েছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর(১) এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।

(১) এখানে পবিত্র ভূমি বলতে কোন ভূমি বোঝানো হয়েছে, এ প্রশ্নে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে বায়তুল-মুকাদ্দাস, কারো মতে কুদস শহর ও ইলিয়া এবং কেউ কেউ বলেন, আরিহা শহর- যা জর্দান নদী ও বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যস্থলে বিশ্বের একটি প্রাচীনতম শহর যা পূর্বেও ছিল এবং এখনও আছে। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, পবিত্র ভূমি বলে দামেস্ক ও ফিলিস্তিনকে এবং কারো মতে জর্দানকে বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেনঃ সমগ্র শামই পবিত্র ভূমি। [ইবন কাসীর, আত-তাফসীরুস সহীহ]

আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালামের মাধ্যমে বনী-ইসরাঈলকে আমালেকা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শামদেশ দখল করতে বলেছিলেন। সাথে সাথে এ সুসংবাদও দিয়েছিলেন যে, এ পবিত্র ভূখণ্ড তাদের জন্যে লেখা হয়ে গেছে। কাজেই তোমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তা সত্বেও বনী-ইসরাঈল চিরাচরিত ঔদ্ধত্য ও বক্র স্বভাবের কারণে এ নির্দেশ পালনে স্বীকৃত হল না; বরং মূসা আলাইহিস সালামকে বললঃ হে মূসা, এ দেশে প্রবল পরাক্রান্ত জাতি বাস করে। যতদিন এ দেশ তাদের দখলে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করব না।

যদি তারা অন্য কোথাও চলে যায়, তবে আমরা সেখানে যেতে পারি। বিভিন্ন তাফসীরে এসেছে, তখন সিরিয়া ও বায়তুল-মুকাদ্দাস আমালেকা সম্প্রদায়ের দখলে ছিল। তারা ছিল আদ সম্প্রদায়ের একটি শাখা। দৈহিক দিক দিয়ে তারা অত্যন্ত সুঠাম, বলিষ্ঠ ও ভয়াবহ আকৃতিবিশিষ্ট ছিল। তাদের সাথেই জিহাদ করে বায়তুল মুকাদ্দাস অধিকার করার নির্দেশ মূসা আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়কে দেয়া হয়েছিল। মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনের জন্য বনী ইসরাঈলকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশ অভিমুখে রওয়ানা হলেন।

কিন্তু বনী-ইসরাঈল যেখানে নবীর কথার প্রতিই কর্ণপাত করল না, সেখানে তাদের উপদেশের আর মূল্য কি? তারা পূর্বের জবাবেরই আরও বিশ্রী ভঙ্গিতে পুনরাবৃত্তি করে বললঃ “আপনি ও আপনার আল্লাহ উভয়ে গিয়েই যুদ্ধ করুন। আমরা এখানেই বসে থাকব”। কথাটি অত্যন্ত বিশ্রী ও পীড়াদায়ক। এ কারণেই তাদের এ বাক্যটি প্রবাদ বাক্যের রূপ পরিগ্রহ করেছে। বদরযুদ্ধে নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত মুসলিমদের মোকাবেলায় কাফেরদের এক হাজার সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে আল্লাহর দরবারে দোআ করতে লাগলেন। এতে সাহাবী মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ ইয়া রসূলাল্লাহ আল্লাহর কসম, আমরা কস্মিন কালেও ঐকথা বলব না, যা মূসা আলাইহিস সালামকে তার স্বজাতি বলেছিল; বরং আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে থেকে শক্রর আক্রমণ প্রতিহত করব। আপনি নিশ্চিন্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। [বুখারীঃ ৩৭৩৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি[1] নির্দিষ্ট করেছেন (লিখে দিয়েছেন), তাতে তোমরা প্রবেশ কর[2] এবং পশ্চাদপসরণ করো না,[3] করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’

[1] বানী ইসরাঈলের প্রধান পুরুষ ইয়াকুব (আঃ)-এর বাসস্থান ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম)। কিন্তু তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) মিসরের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর তাঁরা সকলেই মিসরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরিশেষে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তিলাভের জন্য গোপনভাবে রাতারাতি বানী ইস্রাঈলকে নিয়ে মিসর থেকে চলে আসেন। কিন্তু সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে আমালেকাদের শাসন ছিল, যারা এক বীর-বাহাদুর গোত্র রূপে পরিচিত ছিল। যখন মূসা (আঃ) পুনরায় বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন তার জন্য ক্ষমতাসীন আমালেকাদের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরী ছিল। সুতরাং মূসা (আঃ) নিজ গোত্রকে ঐ পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার নির্দেশ দিলেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্যের সুসংবাদও শুনালেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বানী ইস্রাঈল আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হল না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

[2] এর উদ্দেশ্য, ঐ বিজয় ও সাহায্য; যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ জিহাদের শর্তে দিয়ে রেখেছিলেন।

[3] অর্থাৎ জিহাদ থেকে বিমুখ হয়ো না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২২ قَالُوۡا یٰمُوۡسٰۤی اِنَّ فِیۡهَا قَوۡمًا جَبَّارِیۡنَ ٭ۖ وَ اِنَّا لَنۡ نَّدۡخُلَهَا حَتّٰی یَخۡرُجُوۡا مِنۡهَا ۚ فَاِنۡ یَّخۡرُجُوۡا مِنۡهَا فَاِنَّا دٰخِلُوۡنَ ﴿۲۲﴾
قالوا یموسی ان فیها قوما جبارین ٭ و انا لن ندخلها حتی یخرجوا منها فان یخرجوا منها فانا دخلون ﴿۲۲﴾
• তারা বলল, ‘হে মূসা, নিশ্চয় সেখানে রয়েছে এক শক্তিশালী জাতি এবং আমরা নিশ্চয় সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ না তারা সেখান থেকে বের হয়। অতঃপর যদি তারা সেখান থেকে বের হয়, তবে নিশ্চয় আমরা প্রবেশ করব’।

-আল-বায়ান

• তারা বলল, হে মূসা! ওখানে অত্যন্ত শক্তিধর এক সম্প্রদায় আছে, তারা ওখান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওখানে প্রবেশ করব না, তারা যদি বের হয় তাহলেই আমরা প্রবেশ করব।

-তাইসিরুল

• তারা বললঃ হে মূসা! সেখানেতো পরাক্রমশালী লোক রয়েছে। অতএব তারা যে পর্যন্ত সেখান হতে বের হয়ে না যায় সে পর্যন্ত আমরা সেখানে কখনও প্রবেশ করবনা। হ্যাঁ, যদি তারা সেখান হতে বেরিয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই আমরা যেতে প্রস্তুত আছি।

-মুজিবুর রহমান

• They said, "O Moses, indeed within it is a people of tyrannical strength, and indeed, we will never enter it until they leave it; but if they leave it, then we will enter."

-Sahih International

২২. তারা বলল, হে মূসা! নিশ্চয় সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে এবং তারা সে স্থান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনোই সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করব না। অতঃপর তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলে তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে প্রবেশ করব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) তারা বলল, হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে এবং তারা সেই স্থান হতে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে কক্ষনো প্রবেশ করব না। তারা সেই স্থান হতে বের হয়ে গেলে তবেই আমরা প্রবেশ করব।’[1]

[1] বানী ইস্রাঈলগণ আমালেকাদের বীরত্ব-প্রসিদ্ধির কারণে তাদের ভয়ে ভীতু হয়ে যায় এবং প্রথম ধাপেই শক্তি ও সাহস হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা জিহাদ থেকে বিমুখ হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ আল্লাহর রসূল মূসা (আঃ)-এর হুকুমের কোন পরোয়া করল না এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতির প্রতি প্রত্যয় হল না। ফলে সেখানে যেতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে বসল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৩ قَالَ رَجُلٰنِ مِنَ الَّذِیۡنَ یَخَافُوۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِمَا ادۡخُلُوۡا عَلَیۡهِمُ الۡبَابَ ۚ فَاِذَا دَخَلۡتُمُوۡهُ فَاِنَّكُمۡ غٰلِبُوۡنَ ۬ۚ وَ عَلَی اللّٰهِ فَتَوَكَّلُوۡۤا اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۳﴾
قال رجلن من الذین یخافون انعم الله علیهما ادخلوا علیهم الباب فاذا دخلتموه فانكم غلبون و علی الله فتوكلوا ان كنتم مؤمنین ﴿۲۳﴾
• যারা ভয় করে, তাদের মধ্য থেকে এমন দু’ব্যক্তি বলল, ‘যাদের উপর আল্লাহ নিআমত দিয়েছেন, ‘তোমরা তাদের নিকট দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। যখন সেখানে প্রবেশ করবে, তখন নিশ্চয় জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুমিন হও’।

-আল-বায়ান

• যারা (আল্লাহকে) ভয় করছিল তাদের মধ্যে দু’জন লোক যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন বলল, তাদের দরজায় হানা দাও, ঢুকলেই তোমরা জয়ী হয়ে যাবে। তোমরা মু’মিন হলে আল্লাহর উপর ভরসা কর।

-তাইসিরুল

• সেই দুই ব্যক্তি (যারা আল্লাহকে ভয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন) বললঃ তোমরা তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে (নগরের) দ্বারদেশ পর্যন্ত যাও, অনন্তর যখনই তোমরা দ্বারদেশে পা রাখবে তখনই জয় লাভ করবে; এবং তোমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।

-মুজিবুর রহমান

• Said two men from those who feared [to disobey] upon whom Allah had bestowed favor, "Enter upon them through the gate, for when you have entered it, you will be predominant. And upon Allah rely, if you should be believers."

-Sahih International

২৩. যারা ভয় করত তাদের মধ্যে দুজন, যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা বলল, তোমরা তাদের মুকাবেলা করে দরজায় প্রবেশ কর, প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে এবং আল্লাহ্‌র উপরই তোমরা নির্ভর কর যদি তোমরা মুমিন হও।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) তাদের মধ্যে দু’জন যারা (আল্লাহকে) ভয় করত, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা বলল, ‘তোমরা নগরদ্বারে প্রবেশ করে তাদের মুকাবেলা কর, সেখানে প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে। আর তোমরা বিশ্বাসী হলে আল্লাহর উপরই নির্ভর কর।’[1]

[1] মূসা (আঃ)-এর জাতির মধ্যে কেবল এই দুই ব্যক্তি প্রকৃত ঈমানদার ছিলেন, যাঁদের আল্লাহর শক্তি ও সাহায্যের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় ছিল। তাঁরা জাতিকে বুঝাতে লাগলেন যে, তোমরা সাহস তো কর। তারপর দেখ, কেমন করে আল্লাহ তোমাদেরকে (ঐ শত্রুদের উপর) বিজয় দান করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৪ قَالُوۡا یٰمُوۡسٰۤی اِنَّا لَنۡ نَّدۡخُلَهَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوۡا فِیۡهَا فَاذۡهَبۡ اَنۡتَ وَ رَبُّكَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا هٰهُنَا قٰعِدُوۡنَ ﴿۲۴﴾
قالوا یموسی انا لن ندخلها ابدا ما داموا فیها فاذهب انت و ربك فقاتلا انا ههنا قعدون ﴿۲۴﴾
• তারা বলল, ‘হে মূসা, আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকে। সুতরাং, তুমি ও তোমার রব যাও এবং লড়াই কর। আমরা এখানেই বসে রইলাম’।

-আল-বায়ান

• তারা বলল, হে মূসা! তারা ওখানে যদ্দিন থাকবে তদ্দিন আমরা ওখানে কক্ষনো প্রবেশ করব না, কাজেই তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও আর যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসে রইলাম।

-তাইসিরুল

• তারা বললঃ হে মূসা! নিশ্চয়ই আমরা কখনও সেখানে পা রাখবনা যে পর্যন্ত তারা সেখানে বিদ্যমান থাকে। অতএব আপনি ও আপনার রাব্ব (আল্লাহ) চলে যান এবং উভয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানেই বসে থাকব।

-মুজিবুর রহমান

• They said, "O Moses, indeed we will not enter it, ever, as long as they are within it; so go, you and your Lord, and fight. Indeed, we are remaining right here."

-Sahih International

২8. তারা বলল, “হে মূসা তারা যতক্ষণ সেখানে থাকবে ততক্ষণ আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না; কাজেই তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর। নিশ্চয় আমরা এখানেই বসে থাকব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তারা বলল, ‘হে মূসা! তারা যত দিন সেখানে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবই না, সুতরাং তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসে থাকব।’[1]

[1] কিন্তু এ সত্ত্বেও বানী ইস্রাঈল হীনতর কাপুরুষতা, বেআদবী, অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ প্রকাশ করে (বিদ্রূপের ভঙ্গিতে) বলল যে, ‘তুমি ও তোমার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসলাম!’ কিন্তু এর বিপরীত বদর যুদ্ধের সময়ে যখন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)গণের নিকট রসূল (সাঃ) পরামর্শ চাইলেন তখন তাঁরা সংখ্যায় কম ও যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামও অতি সামান্য থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য পূর্ণরূপে উৎসাহ ও সংকল্প প্রকাশ করলেন এবং এটাও বললেন যে, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনাকে ঐ কথা কখনও বলব না, যে কথা মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায় মূসা (আঃ)-কে বলেছিল। (বুখারীঃ মাগাযী ও তাফসীর অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৫ قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ لَاۤ اَمۡلِكُ اِلَّا نَفۡسِیۡ وَ اَخِیۡ فَافۡرُقۡ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَ الۡقَوۡمِ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿۲۵﴾
قال رب انی لا املك الا نفسی و اخی فافرق بیننا و بین القوم الفسقین ﴿۲۵﴾
• সে বলল, ‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই ছাড়া কারো উপরে অধিকার রাখি না। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন।

-আল-বায়ান

• সে বলল, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার আর আমার ভাইয়ের উপর ছাড়া কারো উপর আমার ক্ষমতা নেই, কাজেই এই বিদ্রোহী সম্প্রদায় থেকে আমাদেরকে পৃথক করে দিন।

-তাইসিরুল

• মূসা বলল- হে আমার রাব্ব! আমি শুধু নিজের উপর ও নিজের ভাইয়ের উপর অধিকার রাখি, সুতরাং আপনি আমাদের উভয়ের এবং এই অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মীমাংসা করে দিন।

-মুজিবুর রহমান

• [Moses] said, "My Lord, indeed I do not possess except myself and my brother, so part us from the defiantly disobedient people."

-Sahih International

২৫. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি ও আমার ভাই ছাড়া আর কারো উপর আমার অধিকার নেই, সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অন্য কারো উপর আমার আধিপত্য নেই, সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফায়সালা করে দাও।’ [1]

[1] এ কথায় অবাধ্য ও বিদ্রোহী জাতির মোকাবেলায় নিজের অক্ষমতা ও দুর্বলতা প্রকাশ এবং তাদের সাথে তাঁর সম্পর্কহীনতার ঘোষণাও রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৬ قَالَ فَاِنَّهَا مُحَرَّمَۃٌ عَلَیۡهِمۡ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً ۚ یَتِیۡهُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ فَلَا تَاۡسَ عَلَی الۡقَوۡمِ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿۲۶﴾
قال فانها محرمۃ علیهم اربعین سنۃ یتیهون فی الارض فلا تاس علی القوم الفسقین ﴿۲۶﴾
• তিনি বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয় তা তাদের জন্য চল্লিশ বছর নিষিদ্ধ; তারা যমীনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে। সুতরাং তুমি ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’।

-আল-বায়ান

• আল্লাহ বললেন, তবে তা চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্য নিষিদ্ধ হল, উদভ্রান্তের মত তারা যমীনে ঘুরে বেড়াবে, কাজেই এই অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্য হা-হুতাশ করো না।

-তাইসিরুল

• তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ (তাহলে মীমাংসা এই যে) এই দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এদের হস্তগত হবেনা, এ রূপেই তারা ভূ-পৃষ্ঠে উদভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, সুতরাং তুমি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্য (একটুও) বিষন্ন হয়োনা।

-মুজিবুর রহমান

• [Allah] said, "Then indeed, it is forbidden to them for forty years [in which] they will wander throughout the land. So do not grieve over the defiantly disobedient people."

-Sahih International

২৬. আল্লাহ বললেন, তবে তা’ চল্লিশ(১) বছর তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হল, তারা যমীনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে, কাজেই আপনি ফাসিক সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করবেন না।(২)

(১) অর্থাৎ সে পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার অধিকার তারা চল্লিশ বছরের জন্য হারিয়েছে। কারণ তারা অবাধ্যতা করেছিল। এটা ছিল তাদের জন্য নির্ধারিত দুনিয়ার শাস্তি। হয়ত এর মাধ্যমে তাদের উপর আপতিত কোন কঠোর শাস্তি লাঘব করা হয়েছিল। চল্লিশ বছর নির্ধারনের কারণ সম্ভবত: এই ছিল যে, এ সময়ের মধ্যে সে জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের মৃত্যু সংঘটিত হবে, যারা ফিরআউনের দাসত্ব ও তাবেদারীর কারণে ইজ্জতের যিন্দেগী যাপন করার মত হিম্মত অবশিষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে যারা সেই কঠোর প্রতিকুল অবস্থায় জন্মলাভ করেছিল তারাই শত্রুদের পরাভূত করার মত সাহসী হতে পেরেছিল। [সা'দী]

(২) মহান আল্লাহ যখন জানলেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম সম্ভবত: তার কাওমের জন্য দয়াপরবশ হবেন এবং তাদের প্রতি নাযিলকৃত শাস্তির জন্য দুঃখবোধ করতে থাকবেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালামকে এ ব্যাপারে আফসোস না করার নির্দেশ দিলেন। যাতে তিনি জানিয়ে দিলেন যে, এ শাস্তিটুকু তাদের অপরাধের কারণে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা বান্দার উপর সামান্যও জুলুম করেননি। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) (আল্লাহ) বললেন, ‘তবে এ (ভূমি) চল্লিশ বছর তাদের জন্য নিষিদ্ধ রইল। তারা ভূ-পৃষ্ঠে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে,[1] সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করো না।’ [2]

[1] এই ভূ-পৃষ্ঠকে ময়দানে ‘তীহ’ বলা হয়। (‘তীহ’ গোলক-ধাঁধার ময়দানকে বলে।) এই ময়দানে চল্লিশ বছর পর্যন্ত এই জাতি নিজেদের বিদ্রোহের ও জিহাদ থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কারণে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এর পরেও (আল্লাহর পক্ষ থেকে) এই ময়দানে ‘মান্ন্’ ও ‘সালওয়া’ অবতরণ হয়। যা (খেতে খেতে) বিরক্ত হয়ে তারা তাদের নবী (মূসা (আঃ))-কে বলে, ‘প্রতিদিন একই খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের অরুচি হয়ে গেছে। অতএব আপনি আপনার প্রভুর নিকট দু’আ করুন যে, তিনি যেন আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সবজী ও ডাল উৎপন্ন করেন।’ এই ময়দানেই তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া দান করা হয়। এখানেই মূসা (আঃ) লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত করলে বারো গোত্রের জন্য বারোটি ঝর্ণা নিঃসৃত হয় এবং অনুরূপ তারা আরো বহুভাবে নিয়ামতপ্রাপ্ত হতে থাকে। পরিশেষে চল্লিশ বছর পর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তখন তারা বায়তুল মাকদিস প্রবেশ করে।

[2] নবী (মূসা (আঃ) দাওয়াত ও তাবলীগ করার পর যখন দেখেন যে, তাঁর গোত্র সোজা ও সরল পথ অবলম্বনে প্রস্তুত নয়; যার মধ্যে তাদের ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে, তখন প্রকৃতিগতভাবে তিনি বড় আক্ষেপ ও আন্তরিকভাবে দুঃখ-দুশ্চিন্তার শিকার হয়ে পড়েন। ঠিক একই অবস্থা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হত, যা কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে যে, যখন তুমি তাবলীগের গুরুভার আদায় করেছ এবং আল্লাহর পয়গাম লোকদের নিকট পৌঁঁছে দিয়েছ, তুমি তোমার জাতিকে এক মহান সফলতার দ্বার প্রান্তে উপস্থিত করেছ, কিন্তু তারা তাদের হীনন্মন্যতা ও দুর্মতির কারণে তোমার কথা মান্য করে না, তখন তুমি তোমার কর্তব্য পালনের দায়িত্ব হতে নিষ্কৃতি পেয়ে গেছ। সুতরাং তোমাকে এ ব্যাপারে দুঃখিত ও চিন্তিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এমন পরিস্থিতিতে দুঃখিত ও চিন্তিত হওয়াটা একটা প্রকৃতগত ব্যাপার ছিল। কিন্তু সান্ত্বনা দানের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, দাওয়াত ও তাবলীগের পর আল্লাহর নিকটে তুমি দায়িত্বমুক্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৭ وَ اتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِهِمَا وَ لَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّكَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۲۷﴾
و اتل علیهم نبا ابنی ادم بالحق اذ قربا قربانا فتقبل من احدهما و لم یتقبل من الاخر قال لاقتلنك قال انما یتقبل الله من المتقین ﴿۲۷﴾
• আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’।

-আল-বায়ান

• আদামের দু’পুত্রের খবর তাদেরকে সঠিকভাবে জানিয়ে দাও। উভয়ে যখন একটি করে কুরবানী হাজির করেছিল তখন তাদের একজনের নিকট হতে কবূল করা হল। অন্যজনের নিকট হতে কবূল করা হল না। সে বলল, আমি তোমাকে অবশ্য অবশ্যই হত্যা করব। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের কুরবানী কবূল করেন,

-তাইসিরুল

• তুমি তাদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) আদমের পুত্রদ্বয়ের (হাবীল ও কাবীলের) ঘটনা সঠিকভাবে পাঠ করে শুনিয়ে দাও; যখন তারা উভয়েই এক একটি কুরবানী উপস্থিত করল এবং তন্মধ্য হতে একজনের (হাবীলের) কুরবানী কবূল হল এবং অপরজনের কবূল হলনা। অপরজন বলতে লাগলঃ আমি তোমাকে নিশ্চয়ই হত্যা করব; প্রথমজন বললঃ আল্লাহ আল্লাহভীরুদের ‘আমলই কবূল করে থাকেন।

-মুজিবুর রহমান

• And recite to them the story of Adam's two sons, in truth, when they both offered a sacrifice [to Allah], and it was accepted from one of them but was not accepted from the other. Said [the latter], "I will surely kill you." Said [the former], "Indeed, Allah only accepts from the righteous [who fear Him].

-Sahih International

২৭. আর আদমের দু'ছেলের কাহিনী আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনান।(১) যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল অতঃপর একজন থেকে কবুল করা হল এবং অন্যজনের কবুল করা হল না। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।(২) অন্যজন বলল, আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন।

(১) কুরআনুল করীম কোন কিচ্ছা-কাহিনী অথবা ইতিহাস গ্রন্থ নয় যে, তাতে কোন ঘটনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করা হবে। এতদসত্ত্বেও অতীত ঘটনাবলী এবং বিগত জাতিসমূহের ইতিবৃত্তের মধ্যে অনেক শিক্ষা ও উপদেশ নিহিত রয়েছে। এগুলোই ইতিহাসের আসল প্রাণ। তন্মধ্যে অনেক অবস্থা ও ঘটনা এমনও রয়েছে, যেগুলোর উপর শরীআতের বিভিন্ন বিধি-বিধান ভিত্তিশীল। এসব উপকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনুল কারীমের সামগ্রিক রীতি এই যে, স্থানে স্থানে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে, অধিকাংশ স্থানে পূর্ণ ঘটনা এক জায়গায় বর্ণনা করে না; বরং ঘটনার যে অংশের সাথে আলোচ্য বিষয়বস্তুর সম্পর্ক থাকে সে অংশটুকুই বর্ণনা করা হয়। আদম 'আলাইহিস সালামের পুত্রদ্বয়ের কাহিনীটিও এই বিজ্ঞ রীতির ভিত্তিতে বর্ণনা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য অনেক শিক্ষা ও উপদেশ এবং প্রসঙ্গক্রমে শরীআতের অনেক বিধি-বিধানের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।

আদম-পুত্রদ্বয়ের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে সংক্ষেপে তা হল, যখন আদম ও হাওয়া 'আলাইহিমাস সালাম পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা- এরূপ যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন ভ্রাতা-ভগিনী ছাড়া আদমের আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা-ভগিনী পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ্ তা'আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম 'আলাইহিস সালামের শরীআতে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা-ভগিনী হিসাবে গণ্য হবে।

তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারিনী কন্যা সহোদরা ভগিনী গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহজাত সহোদরা ভগিনীটি ছিল পরমাসুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত ভগিনীটি ছিল অপেক্ষাকৃত কম সুন্দরী। বিবাহের সময় হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত ভগিনীটি কাবিলের ভাগে পড়ে। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শক্র হয়ে গেল। সে জিদ ধরল যে, আমার সহজাত ভগিনীকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে।

আদম আলাইহিস সালাম তার শতী’আতের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্যে নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী গৃহীত হবে, সেই কন্যার পাণিগ্রহণ করবে। আদম 'আলাইহিস সালামের নিশ্চিত বিশ্বাস যে, যে সত্য পথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানীকে ভস্মিভূত করে আবার অন্তৰ্হিত হয়ে যেত। যে কুরবানী অগ্নি ভস্মিভূত করত না, তাকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত। হাবিল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষিকাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল।

অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল, তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে ভাইকে বলে দিল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করল। এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। সে বলল, আল্লাহর নিয়ম এই যে, তিনি আল্লাহভীরু মুত্তাকীদের কর্মই গ্রহণ করেন। তুমি আল্লাহভীতি অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হত। তুমি তা করনি, তাই কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি? তারপর যা ঘটেছে, আল্লাহ তা'আলা তা পবিত্র কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। [ইবন কাসীর]

(২) আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তখন তার পাপের একাংশ আদমের প্রথম সন্তানের উপর বর্তাবে। [বুখারীঃ ৬৮৬৭] অন্য এক হাদীসে আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গলা কেটে কুফরীর পথে ফিরে যেয়ো না। [বুখারীঃ ৬৮৬৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) আদমের দুই পুত্রের (হাবীল ও ক্বাবীলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও,[1] যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হল এবং অন্য জনের কুরবানী কবুল হল না।[2] (তাদের একজন) বলল, ‘আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব।’ (অপরজন) বলল, ‘আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানীই কবুল করে থাকেন।

[1] আদম (আঃ)-এর এই দুই পুত্রের নাম যথা; ‘হা-বীল’ ও ‘ক্বা-বীল’ ছিল।

[2] এই নযর বা কুরবানী কি উদ্দেশ্যে পেশ করা হয়েছিল? এ ব্যাপারে বিশুদ্ধভাবে কিছু বর্ণিত হয়নি। তবে এটা প্রসিদ্ধ আছে যে, (দুনিয়ার) প্রাথমিক অবস্থায় আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম)-এর মিলনের ফলে একই সময় (যমজ) একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করত। দ্বিতীয় গর্ভেও অনুরূপ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করত। তখন একটি গর্ভের ছেলে-মেয়ের সাথে আর একটি গর্ভের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। হাবীলের যমজ বোন সুন্দরী ছিল না। কিন্তু ক্বাবীলের যমজ বোনটি সুন্দরী ছিল। আর তখনকার রীতি-নীতি অনুসারে হাবীলের বিবাহ ক্বাবীলের যমজ বোনের সাথে আর ক্বাবীলের বিবাহ হাবীলের যমজ বোনের সাথে হওয়ার কথা। কিন্তু ক্বাবীল হাবীলের বোনের পরিবর্তে নিজের যমজ বোনকে বিবাহ করতে চাইল; কারণ সে সুন্দরী ছিল। তখন আদম (আঃ) ক্বাবীলকে বুঝালেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বুঝল না। পরিশেষে আদম (আঃ) উভয়কেই আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন যে, যার কুরবানী কবুল হবে, ক্বাবীলের যমজ বোনের সাথে তার বিবাহ দিয়ে দেওয়া হবে। কুরবানী পেশ করা হলে হাবীলের কুরবানী কবুল হল; অর্থাৎ আসমান থেকে আগুন এসে (হাবীলের) কুরবানীকে জ্বালিয়ে ফেলল; যা ছিল (সে যুগের) কুরবানী কবুল হওয়ার নিদর্শন। কিছু মুফাসসিরগণের মতে তারা উভয়েই নিজ নিজ নযর আল্লাহর দরবারে পেশ করল। হাবীল একটি মোটাতাজা দুম্বা বা মেষ কুরবানী করল। আর ক্বাবীল গমের কিছু শিষ কুরবানীর জন্য পেশ করল। ফলে হাবীলের কুরবানী কবুল হল। আর তা দেখে ক্বাবীল হিংসায় ফেটে পড়ল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৮ لَئِنۡۢ بَسَطۡتَّ اِلَیَّ یَدَكَ لِتَقۡتُلَنِیۡ مَاۤ اَنَا بِبَاسِطٍ یَّدِیَ اِلَیۡكَ لِاَقۡتُلَكَ ۚ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اللّٰهَ رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۲۸﴾
لئن بسطت الی یدك لتقتلنی ما انا بباسط یدی الیك لاقتلك انی اخاف الله رب العلمین ﴿۲۸﴾
• ‘যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর আমাকে হত্যা করার জন্য, আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার হাত তোমার প্রতি প্রসারিত করব না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি’।

-আল-বায়ান

• আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি আমার দিকে হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে হাত বাড়াব না, আমি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।

-তাইসিরুল

• তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্য হাত প্রসারিত কর, তথাপি আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে কখনও আমার হাত বাড়াবনা; আমিতো বিশ্ব জাহানের রাব্ব আল্লাহকে ভয় করি।

-মুজিবুর রহমান

• If you should raise your hand against me to kill me - I shall not raise my hand against you to kill you. Indeed, I fear Allah, Lord of the worlds.

-Sahih International

২৮. আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি তোমার হাত প্রসারিত করলেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি তোমার প্রতি আমার হাত প্রসারিত করব না; নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি।(১)

(১) আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলিম তাদের হাতিয়ার নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হবে, তখন তাদের দু’জনই জাহান্নামে যাবে। বলা হল, এতে হত্যাকারীর ব্যাপারটি তো বোঝা গেল, কিন্তু যাকে হত্যা করা হয়েছে তার ব্যাপারটি কেমন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেও তো তার সাথীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। [বুখারী: ৭০৮৩; মুসলিম: ২৮৮৮]

অন্য হাদীসে এসেছে, সাদ ইবন আবী ওক্কাস বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি সে আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন কি করতে হবে আমাকে জানান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি তখন আদম সন্তানদের মত হয়ে যাও। তারপর বর্ণনাকারী তেলাওয়াত করলেন, যদি তুমি আমার প্রতি তোমার হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমার প্রতি আমার হস্ত প্রসারিত করব না। [আবু দাউদ: ৪২৫৭; তিরমিযী: ২১৯৪] এর অর্থ, তুমি তাকে হত্যা করবে না সেটা জানিয়ে দাও।

অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আবু যর! তোমার কি করণীয় থাকবে, যখন দেখবে যে, আহযারু যাইত স্থানও রক্তে ডুবে গেছে? আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ ও তার রাসূল আমার জন্য যা পছন্দ করবেন। রাসূল বললেন, তোমার উচিত তখন তুমি যেখান থাকো সেখানে থাকা। অর্থাৎ পরিবার পরিজনের বাইরে না যাওয়া। তিনি বললেন, আমি কি আমার তরবারী নিয়ে ঘাড়ে লাগাব না? রাসূল বললেন, তাহলে তো তুমি তাদের সাথে হত্যায় শরীক হলে।

আবু যর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমার করণীয় কি? তুমি তোমার ঘরে অবস্থান করবে। আমি বললাম, যদি তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে? তিনি বললেন, যদি তুমি ভয় পাও যে, তরবারীর চমকানো আলো তোমাকে বিভ্রান্ত করবে, তাহলে তুমি তোমার চেহারার উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও, এতে করে (যদি তোমাকে সে হত্যা করে, তবে) সে তোমার ও তার গোনাহ নিয়ে ফিরে যাবে। [আবু দাউদ: ৪২৬১; ইবন মাজাহ ৩৯৫৮; মুসনাদে আহমাদ ৫/১৬৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি আমার প্রতি হাত তুললেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি তোমার প্রতি হাত তুলব না, আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালককে ভয় করি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ২৯ اِنِّیۡۤ اُرِیۡدُ اَنۡ تَبُوۡٓاَ بِاِثۡمِیۡ وَ اِثۡمِكَ فَتَكُوۡنَ مِنۡ اَصۡحٰبِ النَّارِ ۚ وَ ذٰلِكَ جَزٰٓؤُا الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۚ۲۹﴾
انی ارید ان تبوٓا باثمی و اثمك فتكون من اصحب النار و ذلك جزٓؤا الظلمین ﴿۲۹﴾
• ‘নিশ্চয় আমি চাই যে, তুমি আমার ও তোমার পাপ নিয়ে ফিরে যাও, ফলে তুমি আগুনের অধিবাসী হও। আর সেটিই হচ্ছে যালিমদের প্রতিদান’।

-আল-বায়ান

• আমি চাই তুমি আমার ও তোমার পাপের বোঝা বহন কর আর অগ্নিবাসী হয়ে যাও, অন্যায়কারীদের এটাই প্রতিদান।’

-তাইসিরুল

• আমি চাই যে, (আমার দ্বারা কোন পাপ না হোক) তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ সমস্তই নিজের মাথায় তুলে নাও; অনন্তর তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও, অত্যাচারীদের শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed I want you to obtain [thereby] my sin and your sin so you will be among the companions of the Fire. And that is the recompense of wrongdoers."

-Sahih International

২৯. নিশ্চয় আমি চাই তুমি আমার ও তোমার পাপ নিয়ে ফিরে যাও(১) ফলে তুমি আগুনের অধিবাসী হও এবং এটা যালিমদের প্রতিদান।

(১) কাতাদা ও মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, তুমি আমাকে হত্যা করার কারণে যে পাপ হবে তা তোমার পূর্ব পাপের সাথে যুক্ত হবে। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন কর এবং দোযখবাসী হও এই তো আমি চাই[1] এবং এ হল যালেম (অনাচারী)দের কর্মফল।’

[1] আমার গোনাহ বা পাপের অর্থ হল, দুজনে লড়াই করার সময় যদি তোমাকে আমার হত্যা করার উদ্দেশ্য থাকে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)গণ জিজ্ঞাসা করলেন যে, হত্যাকারী জাহান্নামে যাবে - এটা তো তার উপযুক্ত শাস্তি; কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামে যাবে? প্রত্যুত্তরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বললেন; এই জন্য যে, সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। (বুখারী ও মুসলিমঃ ফিতান অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ : ৩০ فَطَوَّعَتۡ لَهٗ نَفۡسُهٗ قَتۡلَ اَخِیۡهِ فَقَتَلَهٗ فَاَصۡبَحَ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۳۰﴾
فطوعت لهٗ نفسهٗ قتل اخیه فقتلهٗ فاصبح من الخسرین ﴿۳۰﴾
• সুতরাং তার নফস তাকে বশ করল তার ভাইকে হত্যা করতে। ফলে সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।

-আল-বায়ান

• অতঃপর তার আত্মা তাকে ভ্রাতৃহত্যার কাজে প্ররোচিত করল। ফলতঃ সে তাকে হত্যা করল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।

-তাইসিরুল

• অতঃপর তার প্রবৃত্তি তাকে স্বীয় ভ্রাতৃ হত্যার প্রতি প্রলুব্ধ করে তুলল। সুতরাং সে তাকে হত্যা করেই ফেলল, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।

-মুজিবুর রহমান

• And his soul permitted to him the murder of his brother, so he killed him and became among the losers.

-Sahih International

৩০. অতঃপর তার নফস তাকে তার ভাই হত্যায় বশ করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল; এভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) অতঃপর তার চিত্ত ভ্রাতৃ-হত্যায় তাকে উত্তেজিত করল, সুতরাং সে (কাবীল) তাকে (হাবীলকে) হত্যা করল, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।[1]

[1] হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তার খুনের বোঝা আদম (আঃ)-এর ঐ প্রথম সন্তানের উপরেই পতিত হয়। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে রক্ত বইয়েছিল।" (বুখারী ও মুসলিম) প্রকাশ থাকে যে, হাবীলকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার শাস্তি ক্বাবীলকে ততক্ষণাৎ দুনিয়াতেই দেওয়া হয়েছে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, "যতগুলো পাপ এরই উপযুক্ত যে, আল্লাহ সত্বর তার শাস্তি দুনিয়াতেই প্রদান করবেন এবং পরকালেও তার জন্য ভীষণ শাস্তি জমা রাখবেন, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে, যুলুম ও সীমালঙ্ঘন করা এবং আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক ছেদন করা।" আর ক্বাবীলের মধ্যে এ দু’টো পাপই জমা হয়েছিল। ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »