-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে মহা শাস্তির পূর্বে কিছু লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব(১), যাতে তারা ফিরে আসে।
(১) নিকটতম শাস্তি বা ‘ছোট শাস্তি’ বলে বোঝানো হয়েছে, এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন, ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্ৰিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুৰ্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। আর বৃহত্তর শাস্তি বা ‘বড় শাস্তি’ বলতে আখেরাতের শাস্তি বোঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসেকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) গুরু শাস্তির পূর্বে ওদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি[1] আস্বাদন করাব, যাতে ওরা (আমার পথে) ফিরে আসে। [2]
[1] العَذَاب الأَدنَى (ছোট, লঘু বা নিকটতম শাস্তি) বলে ইহলৌকিক শাস্তি বা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যাধিকে বুঝানো হয়েছে। অনেকের নিকট এর অর্থ হল, বদর যুদ্ধে কাফেররা হত্যার মাধ্যমে যে কষ্ট পেয়েছিল সেই শাস্তি। অথবা মক্কাবাসীদের উপর যে দুর্ভিক্ষ এসেছিল তা উদ্দেশ্য। অথবা কবরের আযাবকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম শওকানী (রঃ) বলেন, উল্লিখিত সব অর্থই উদ্দেশ্য হতে পারে।
[2] পারলৌকিক বৃহত্তম শাস্তির পূর্বে ক্ষুদ্রতম বা লঘু শাস্তি প্রেরণ করার কারণ হল, সম্ভবতঃ তারা কুফর ও শিরক এবং আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করা থেকে বিরত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. যে ব্যক্তি তার রবের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্ৰাপ্ত হয়ে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় আমরা অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ প্রাপ্ত হয় অতঃপর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে?[1] আমি অবশ্যই অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব।
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর যে আয়াত শ্রবণ করে তার প্রতি ঈমান আনা ও তার অনুসরণ করা ওয়াজেব, সে আয়াত থেকে যে বৈমুখ হয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে? অর্থাৎ সেই সব থেকে বড় যালেম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতএব আপনি তার সাক্ষাত সম্বন্ধে সন্দেহে থাকবেন না(১) এবং আমরা ওটাকে করে দিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতস্বরূপ।
(১) لقاء শব্দের অর্থ সাক্ষাৎ। এ আয়াতে কার সাথে সাক্ষাৎ বোঝানো হয়েছে সে সম্বন্ধে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। لقائه এর ه (সর্বনাম) কিতাব অর্থাৎ কুরআনের দিকে ধাবিত করে এই অর্থ করা যায় যে, যেরূপভাবে মহান আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালামকে গ্ৰন্থ প্ৰদান করেছেন অনুরূপভাবে আপনার প্রতিও আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে গ্ৰন্থ অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করবেন না। যেমন কুরআন সম্পর্কে অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং নিশ্চয় আপনাকে প্রজ্ঞাময় প্রশংসিতের পক্ষ থেকে কুরআন প্ৰদান করা হবে”। [সূরা আন-নামল: ৬]
ইবনে-আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এবং কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, لقائه এর ه (সর্বনাম) মুসা আলাইহিস সালাম এর দিকে ধাবিত হয়েছে। সে হিসেবে এ আয়াতে মুসা আলাইহিস সালাম এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতের সংবাদ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আপনি এ সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করবেন না যে, মূসা আলাইহিস সালামের সাথে আপনার সাক্ষাত সংঘটিত হবে। সুতরাং মে'রাজের রাতে এক সাক্ষাৎকার সংঘটিত হওয়ার কথা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত; [দেখুন: বুখারী: ৩২৩৯; মুসলিম: ১৬৫]
অতঃপর কেয়ামতের দিন সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও প্রমাণিত আছে। হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালামকে ঐশী গ্রন্থ প্রদানের দরুন যেভাবে মানুষ তাঁকে নানাভাবে দুঃখ-যন্ত্রণা দিয়েছে আপনিও এসব কিছুর সম্মুখীন হবেন বলে নিশ্চিত থাকুন। তাই কাফেরদের প্রদত্ত দুঃখ-যন্ত্রণার ফলে আপনি মনক্ষুন্ন হবেন না; বরং নবীগণের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক রীতি মনে করে আপনি তা বরদাশত করুন।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) আমি তো মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ বিষয়ে সন্দেহ করো না।[1] আমি একে[2] বনী ইস্রাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম।
[1] বলা হয় যে, এটা মি’রাজের রাত্রে মূসা (আঃ)-এর সাথে নবী (সাঃ)-এর যে সাক্ষাৎ হয়েছিল তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সাক্ষাতে মূসা (আঃ) নামায কম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
[2] ‘একে’ বলতে তাওরাত বা মূসা (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. আর আমরা তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমাদের নির্দেশ অনুসারে হেদায়াত করত; যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর তারা আমাদের আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।(১)
(১) অর্থাৎ আমি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মাঝে কিছু লোককে নেতা ও অগ্রপথিক নিযুক্ত করেছিলাম। যারা তাঁদের পয়গম্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মহান প্রভুর নির্দেশানুসারে লোকদেরকে হেদায়াত করতেন। [দেখুন: মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) ওরা যেহেতু ধৈর্যশীল ছিল তার জন্য আমি ওদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত। ওরা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী। [1]
[1] এই আয়াত দ্বারা ‘সবর’ বা ধৈর্যের ফযীলত পরিষ্ফুটিত হয়। সবরের অর্থ হল, আল্লাহর আদেশ পালন করতে ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে এবং আল্লাহর রসূলদেরকে সত্য মনে করে তাঁদের অনুসরণ করাতে যে কষ্ট আসে তা হাসিমুখে বরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের ধৈর্য ও আল্লাহর আয়াতের উপর দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে আমি তাদেরকে দ্বীনী নেতৃত্ব পদের জন্য মনোনীত করেছিলাম। কিন্তু যখন তারা তার বিপরীত (আল্লাহর কিতাবে) পরিবর্তন ও হেরফের করতে আরম্ভ করল, তখন তাদের এই সম্মান কেড়ে নেওয়া হল। সুতরাং এর পর তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল। অতঃপর না তাদের নেক আমল রইল, আর না রইল তাদের সঠিক বিশ্বাস।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. নিশ্চয় আপনার রব, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে তিনি কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেটার ফয়সালা করে দিবেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) ওরা নিজেদের মধ্যে যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, অবশ্যই তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন তার ফায়সালা করে দেবেন।[1]
[1] এখানে মতবিরোধ বলতে আহলে কিতাবদের নিজেদের মাঝের মতবিরোধকে বুঝানো হয়েছে। এর মধ্যে মু’মিন ও কাফের, হকপন্থী ও বাতিলপন্থী, তাওহীদবাদী ও অংশীবাদীদের মাঝে পৃথিবীতে যে মতভেদ ছিল ও আছে, তাও আনুষঙ্গিকভাবে এসে যায়। যেহেতু পৃথিবীতে প্রত্যেক দল নিজ যুক্তি-প্রমাণের উপর তুষ্ট এবং নিজ রাস্তার উপর অবিচল থাকে, সেহেতু এই মতভেদসমূহের ফায়সালা আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন করবেন। যার উদ্দেশ্য হল, তিনি হকপন্থীকে জান্নাতে এবং কুফরী ও বাতিলপন্থীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. এটাও কি তাদেরকে হেদায়াত করলো না যে, আমরা তাদের পূর্বে ধংস করেছি। বহু প্ৰজন্মকে—যাদের বাসভূমিতে তারা বিচরণ করে থাকে? নিশ্চয় এতে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি তারা শুনবে না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) এ কথা কি তাদেরকে পথনির্দেশ করে না যে, আমি তো এদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি, যাদের বাসভূমিতে এরা বিচরণ করে থাকে,[1] এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি এরা শুনবে না?
[1] অর্থাৎ, পূর্ববর্তী উম্মত যারা মিথ্যাজ্ঞান করা ও ঈমান না আনার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এরা কি দেখে না যে, পৃথিবীতে আজ তাদের অস্তিত্বই নেই। অবশ্য তাদের জমি-জায়গাসমূহ আছে, যার তারা ওয়ারেস হয়ে আছে। উদ্দেশ্য মক্কাবাসীদেরকে এই সতর্ক করা যে, যদি তোমরা ঈমান না আনো, তাহলে তোমাদেরও অবস্থা অনুরূপ হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমরা শুকনো ভূমির(১) উপর পানি প্রবাহিত করে, তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে আহার্য গ্ৰহণ করে তাদের চতুষ্পদ জন্তু এবং তারা নিজেরাও? তারপরও কি তারা লক্ষ্য করবে না?(২)
(১) অর্থাৎ তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ভূমিতে পানি প্রবাহিত করি যদ্বারা নানা প্রকারের শস্যাদি উদগত হয়। (الْأَرْضِ الْجُرُزِ) শুষ্ক ভূমিকে বলা হয় যেখানে কোন বৃক্ষলতা উদগত হয় না। ইবন আব্বাস বলেন, এখানে এমন ভূমির কথা বলা হচ্ছে, যে ভূমিতে অল্প পানি পড়লে কোন কাজে লাগে না। তবে সেখানে যদি প্রবল বর্ষণের পানি আসে তবেই সেটা কাজে লাগে। [তাবারী]
(২) শুষ্ক ভূমিতে পানি প্রবাহে; এবং সেখানে নানাবিধ উদ্ভিদ ও তরু-লতা উদগত হওয়ার বর্ণনা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে করা হয়েছে যে, ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হয় ফলে ভূমি রসালো হয়ে শস্যাদি উৎপাদনের যোগ্য হয়ে উঠে। কিন্তু এ আয়াতে বৃষ্টির স্থলে ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে শুষ্ক ভূমির দিকে পানি প্রবাহিত করে গাছপালা উদগত করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কোন ভূমির উপর বৃষ্টি বর্ষণ করে সেখান থেকে নদী-নালার মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে যেসব শুষ্ক ভূ-ভাগে সাধারণত বৃষ্টি হয় না সেদিকে প্রবাহিত করা হয়। [কুরতুবী; সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) ওরা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উদ্ভিদশূন্য ভূমির উপর পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে ফসল উদগত করি, যা থেকে ওদের জীবজন্তুসমূহ এবং ওরা নিজেরাও আহার্য গ্রহণ করে।[1] ওরা কি তবুও লক্ষ্য করবে না?
[1] পানি থেকে উদ্দেশ্য হল আকাশের পানি, নদী-নালা, ঝরনা ও উপত্যকার পানি। যা আল্লাহ তাআলা অনাবাদ ভূমির দিকে প্রবাহিত করে নিয়ে যান, ফলে তাতে ঘাস ও ফল-ফসল উৎপন্ন হয়; যা মানুষ ভক্ষণ করে এবং তা তাদের পশুখাদ্যও হয়। এখানে কোন নির্দিষ্ট এলাকা বা ভূমি উদ্দেশ্য নয়। বরং তা সাধারণ (অর্থে ব্যবহার হয়েছে)। যাতে সকল অনাবাদ ও অনুর্বর ভূমি এবং মরুভূমি শামিল আছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. আর তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, কখন হবে এ বিজয়?(১)
(১) তাফসীরকার মুজাহিদ আলোচ্য আয়াতে বিজয় এর অর্থ কেয়ামতের দিন বলে বর্ণনা করেছেন। [ইবন কাসীর; বাগভী] কাতাদাহ বলেন, এখানে فتح বলে বিচার ফয়সালাই বোঝানো হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] আল্লামা শানকীতী বলেন, কারণ, কুরআনের বহু আয়াতে এ শব্দটি বিচার-ফয়সালা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন শু'আইব আলাইহিস সালাম এর যাবানীতে এসেছে, “হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।” [সূরা আল-আরাফ: ১৮৯] [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, এ বিচার-ফায়সালা কবে হবে?’[1]
[1] উক্ত ফায়সালা বলতে উদ্দেশ্য, আল্লাহর ঐ শাস্তি যা মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-এর নিকট চাইত এবং (বিদ্রূপ করে) বলত, ওহে মুহাম্মাদ! তোমার আল্লাহর সাহায্য তোমার জন্য কখন আসবে; যে বিষয়ে তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ? বর্তমানে আমরা তো দেখছি, তোমার প্রতি ঈমান আনয়নকারিগণ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে!
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. বলুন, বিজয়ের দিন কাফেরদের ঈমান আনা তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।(১)
(১) অর্থাৎ যখন আল্লাহর আযাব এসে যাবে এবং তার ক্ৰোধ আপতিত হবে, তখন কাফেরদের ঈমান কোন কাজে আসবে না। আর তাদেরকে তখন আর কোন সুযোগও দেয়া হবে না। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “অতঃপর তাদের কাছে যখন স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের রাসূলগণ আসলেন, তখন তারা নিজেদের কাছে বিদ্যমান থাকা জ্ঞানে উৎফুল্ল হল। আর তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তা-ই তাদেরকে বেষ্টন করল। অতঃপর তারা যখন আমাদের শাস্তি দেখল তখন বলল, “আমরা একমাত্র আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদের সাথে কুফরী করলাম।” কিন্তু তারা যখন আমার শাস্তি দেখল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহর এ বিধান পূর্ব থেকেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং তখনই কাফিররা ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে।” [সূরা গাফির: ৮৩–৮৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) বল, ‘বিচার-ফায়সালার দিনে অবিশ্বাসীদের বিশ্বাস ওদের কোন কাজে আসবে না, এবং ওদের অবকাশও দেওয়া হবে না।’ [1]
[1] يوم الفتح এর অর্থ হল শেষ ফায়সালার দিন, কিয়ামতের দিন। যেদিন না ঈমান গ্রহণ করা হবে, না কোন অবকাশ দেওয়া হবে। এখানে ‘ফাতহে মক্কা’ (মক্কা বিজয়ে)র দিন উদ্দেশ্য নয়। কারণ সেদিন ক্ষমাপ্রাপ্ত মুক্ত মানুষদের ইসলাম গ্রহণ করে নেওয়া হয়েছিল; যারা গণনায় দুই হাজারের মত ছিল। (ইবনে কাসীর) ক্ষমাপ্রাপ্ত মুক্ত মানুষ হল ঐ সকল মক্কাবাসী, যাদেরকে মহানবী (সাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং এই কথা বলে তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন যে, আজ তোমাদের পূর্বকৃত যুলমের কোন প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। সুতরাং তাদের অধিকাংশই মুসলমান হয়ে গিয়েছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. অতএব আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন এবং অপেক্ষা করুন, তারাও তো অপেক্ষমান।(১)
(১) যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “নাকি তারা বলে, সে একজন কবি? আমরা তার মৃত্যুর প্রতীক্ষা করছি। বলুন, “তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আত-তূর: ৩০–৩১]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) অতএব তুমি ওদেরকে উপেক্ষা কর[1] এবং অপেক্ষা কর।[2] নিশ্চয় ওরাও অপেক্ষা করছে।[3]
[1] অর্থাৎ, সেই মুশরিকদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং দাওয়াত ও তবলীগের কাজ আপন গতিতে চালাতে থাক। যে অহী তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। যেমন দ্বিতীয় স্থানে বলা হয়েছে, (اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ) অর্থাৎ, তোমার নিকট তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করা হয়েছে, তুমি তারই অনুসরণ করে চল। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সূরা আন্আমঃ ১০৬ আয়াত)
[2] অর্থাৎ, অপেক্ষা কর যে, আল্লাহর ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে এবং তিনি তোমার বিরোধীদের উপর তোমাকে বিজয়ী করবেন। তা নিঃসন্দেহে পূর্ণ হবেই।
[3] অর্থাৎ, এই সকল কাফেররা অপেক্ষায় আছে যে, সম্ভবতঃ পয়গম্বর (সাঃ) নিজেই মুসীবতের শিকার হবেন ও তাঁর দাওয়াত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবী দেখে নিয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সাঃ)-এর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করেছেন এবং তাঁর উপর মুসীবতের অপেক্ষমাণ বিরোধীদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন কিংবা তাদেরকে তাঁর দাস বানিয়ে দিয়েছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান