-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. তখন তিনি ভীত সতর্ক অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে পড়লেন এবং বললেন, হে আমার রব! আপনি যালিম সম্প্রদায় থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় সন্তর্পণে সে সেখান হতে বের হয়ে পড়ল[1] এবং বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায় হতে আমাকে রক্ষা কর।’ [2]
[1] যখন মূসা (আঃ) একথা জানতে পারলেন, তখন সেখান থেকে পলায়ন করলেন, যাতে ফিরআউন তাঁকে বন্দী করতে না পারে।
[2] অর্থাৎ, ফিরআউন ও তার পারিষদের কবল হতে, যারা আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। কথিত আছে যে, মূসা (আঃ)-এর জানাই ছিল না যে, তাঁকে কোথায় যেতে হবে? কারণ, মিসর ছেড়ে চলে যাওয়ার এ ঘটনা ছিল আকস্মিক; পূর্ব হতে কোন পরিকল্পনা ছিল না। মহান আল্লাহ ঘোড়-সওয়ার এক ফিরিশতাকে পাঠালেন। তিনিই তাঁকে পথ নির্দেশ করেছিলেন। والله أعلم (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. আর যখন মূসা মাদইয়ান(১) অভিমুখে যাত্রা করলেন তখন বললেন, আশা করি আমার রব আমাকে সরল পথ দেখাবেন।(২)
(১) মাদইয়ান নামক এ শহরটি মতান্তরে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ছেলে মাদইয়ানের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। জায়গাটি সম্পর্কে বলা হয় যে, সেটি ফেরা'আউনী রাষ্ট্রের বাইরে ছিল। মূসা আলাইহিস সালাম ফিরআউনের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্বাভাবিক আশংকাবোধ করে মিশর থেকে হিজরত করার ইচ্ছা করলেন। বলাবাহুল্য, এই আশংকাবোধ নবুওয়ত ও তাওয়াক্কুল কোনটিরই পরিপন্থি নয়। মাদইয়ানের দিক নির্দিষ্ট করার কারণ সম্ভবতঃ এই ছিল যে, মাদইয়ানেও ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধরদের বসতি ছিল। মূসা আলাইহিসসালামও এই বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। [দেখুন: কুরতুবী]
(২) অর্থাৎ এমন পথ যার সাহায্যে সহজে মাদয়ানে পৌছে যাবো। উল্লেখ্য, সে সময় মাদইয়ান ছিল ফেরাউনের রাজ্য-সীমার বাইরে। মূসা আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ নিঃসম্বল অবস্থায় মিশর থেকে বের হন। তার সাথে পাথেয় বলতে কিছুই ছিল না এবং রাস্তাও জানা ছিল না। এই সংকটময় অবস্থায় তিনি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে এ দো'আ করেছিলেন, আল্লাহ তা’আলা তার দো'আ কবুল করলেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) যখন মূসা মাদ্য়্যান অভিমুখে যাত্রা করল, তখন বলল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’ [1]
[1] মহান আল্লাহ তাঁর এই দু’আ কবুল করলেন এবং এমন এক সোজা রাস্তা প্রদর্শন করলেন, যাতে তাঁর ইহকাল ও পরকাল উভয় সফল হল। তিনি হলেন নিজে সুপথপ্রাপ্ত ও অন্যদের পথপ্রদর্শক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. আর যখন তিনি মাদয়ানের কূপের কাছে পৌছলেন(১), দেখতে পেলেন, একদল লোক তাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পিছনে দুজন নারী তাদের পশুগুলোকে আগ্লে রাখছে। মূসা বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার?(২) তারা বলল, আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আর আমাদের পিতা খুব বৃদ্ধ।(৩)
(১) এ স্থানটি, যেখানে মূসা পৌঁছেছিলেন, এটি আকাবা উপসাগরের পশ্চিম তীরে। বর্তমানে এ জায়গাটিকে আল বিদ’আ বলা হয়। সেখানে একটি ছোট মতো শহর গড়ে উঠেছে। আমি ২০০৪ সালে তাবুক যাওয়ার পথে এ জায়গাটি দেখেছি। স্থানীয় অধিবাসীরা আমাকে জানিয়েছে, বাপ-দাদাদের আমল থেকে আমরা শুনে আসছি মাদয়ান এখানেই অবস্থিত ছিল। এর সন্নিকটে সামান্য দূরে একটি স্থানকে বর্তমানে “মাগায়েরে শু'আইব” বা “মাগারাতে শু'আইব” বলা হয়। সেখানে সামূদী প্যাটার্নের কিছু ইমারত রয়েছে। আর এর প্রায় এক মাইল দু’মাইল দূরে কিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর মধ্যে আমরা দেখেছি দুটি অন্ধকূপ। স্থানীয় লোকেরা আমাদের জানিয়েছেন, নিশ্চিতভাবে আমরা কিছু বলতে পারি না তবে আমাদের এখানে একথাই প্রচলিত যে, এ দু'টি কুয়ার মধ্য থেকে একটি কুয়ায় মূসা তাঁর ছাগলের পানি পান করিয়েছেন।
(২) মূসা আলাইহিস সালাম নারীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমাদের কি ব্যাপার? তোমরা তোমাদের ছাগলগুলোকে আগলিয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? অন্যদের ন্যায় কূপের কাছে এনে পানি পান করাও না কেন? তারা জওয়াব দিল, আমাদের অভ্যাস এই যে, আমরা পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে আত্মরক্ষার জন্যে ছাগলগুলোকে পানি পান করাই না, যে পর্যন্ত তারা কুপের কাছে থাকে। তারা চলে গেলে আমরা ছাগলগুলোকে পানি পান করাই। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(৩) অর্থাৎ নারীদ্বয়ের পূর্বোক্ত বাক্য শুনে এ প্রশ্ন দেখা দিতে পারত যে, তোমাদের কি কোন পুরুষ নেই যে, নারীদেরকে একাজে আসতে হয়েছে? নারীদ্বয় এই সম্ভাব্য প্রশ্নের জওয়াবও সাথে সাথে দিয়ে দিল যে, আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি একাজ করতে পারেন না। তাই আমরা করতে বাধ্য হয়েছি। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
এ মেয়েদের পিতার ব্যাপারে আমাদের সাধারণভাবে এ কথা প্রচার হয়ে গেছে যে, তিনি ছিলেন শু'আইব আলাইহিস সালাম। কিন্তু কুরআন মজীদে ইশারা ইংগিতে কোথাও এমন কথা বলা হয়নি যা থেকে বুঝা যেতে পারে তিনি শু'আইব আলাইহিস সালাম ছিলেন। অথচ শু'আইব আলাইহিস সালাম কুরআনের একটি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এ মেয়েদের পিতা যদি তিনিই হতেন তাহলে এখানে একথা সুস্পষ্ট না করে দেয়ার কোন কারণই ছিল না। শু'আইব নবী না হলেও এ সৎ ব্যক্তিটির দ্বীন সম্পর্কে অনুমান করা হয় যে, মূসা আলাইহিস সালামের মতো তিনিও ইবরাহীমী দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। কেননা, যেভাবে মূসা ছিলেন ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আলাইহিমাস সালামের আওলাদ ঠিক তেমনি তিনিও ছিলেন মাদইয়ান ইবনে ইবরাহীমের বংশধর।
কুরআন ব্যাখ্যাতা নিশাপুরী হাসান বাসরীর বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ “তিনি একজন মুসলিম ছিলেন। শু'আইবের দ্বীন তিনি গ্ৰহন করে নিয়েছিলেন”। মোট কথা তিনি নবী শু'আইব ছিলেন না। কোন মহৎ ব্যক্তি ছিলেন। তবে তার নাম ‘শু'আইব’ থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। কারণ, বনী ইসরাঈলগণ তাদের নবীদের নামে নিজেদের সন্তানদের নামকরণ করতেন। আর হয়ত সে কারণেই লোকদের মধ্যে এ ব্যাপারে সংশয় বিরাজ করছে। [শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ এ ব্যাপারটি তার কয়েকটি গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন, আল-জাওয়াবুস সহীহ, ২/২৪৯–২৫০; জামেউর রাসায়িল: ১/৬১–৬২; মাজমু ফাতাওয়া: ২০/৪২৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) যখন সে মাদ্য়্যানের কূপের নিকট পৌঁছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছে[1] এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন রমণী তাদের পশুগুলিকে আগলে আছে। মূসা বলল, ‘তোমাদের কি ব্যাপার?’ [2] ওরা বলল, ‘রাখালেরা ওদের পশুগুলিকে নিয়ে সরে না গেলে আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না।[3] আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ মানুষ।’[4]
[1] যখন মাদয়্যান গিয়ে পৌঁছলেন তখন সেখানে এক কুয়ার নিকট কিছু মানুষের ভিড় দেখলেন, যারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিল। মাদয়্যান একটি গোত্রের নাম, এরা ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর ছিল। আর মূসা (আঃ) ছিলেন ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর; যিনি (ইয়াকূব) ইবরাহীম (আঃ)-এর পৌত্র ও ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র ছিলেন। এই হিসাবে মাদয়্যানবাসী ও মূসা (আঃ)-এর মধ্যে বংশগত একটি সম্পর্ক ছিল। (আইসারুত তাফাসীর) আর এটিই ছিল শুআইব (আঃ)-এর বাসস্থান ও নবুঅতের এলাকা।
[2] দু’টি মেয়েকে তাদের ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মূসা (আঃ)-এর মনে দয়ার সঞ্চার হল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেন তোমাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছ না?
[3] যাতে পুরুষদের সাথে আমাদের সহ (মিশ্র) অবস্থান না ঘটে। رِعَاء শব্দটি رَاعٍ শব্দের বহুবচন।
[4] সেই জন্য তিনি নিজে পানি পান করানোর জন্য এখানে আসতে পারেন না। (ফলে মেয়ে হয়েও আমরা আসতে বাধ্য হই।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. মূসা তখন তাদের পক্ষে জানোয়ারগুলোকে পানি পান করালেন। তারপর তিনি ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহন করে বললেন, হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তার কাঙ্গাল।(১)
(১) মূসা আলাইহিস সালাম বিদেশে অনাহারে কাটাচ্ছেন। তিনি এক গাছের ছায়ায় এসে আল্লাহ তা'আলার সামনে নিজের অবস্থা ও অভাব পেশ করলেন। এটা দোআ করার একটি সূক্ষ পদ্ধতি। خير শব্দটির অর্থ কল্যাণ। এখানে তিনি আহার্য হতে শুরু করে যাবতীয় কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলার মুখাপেক্ষী হলেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) মূসা তখন ওদের পশুগুলিকে পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ অবতীর্ণ করবে, নিশ্চয় আমি তার মুখাপেক্ষী।’ [1]
[1] মূসা (আঃ) এত দূর সফর করে মিসর থেকে মাদয়্যান পৌঁছলেন, খাওয়া ও পান করার মত সঙ্গে কিছু ছিল না। দীর্ঘ সফরের ফলে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত-শ্রান্ত। সেই জন্য তাদের পশুগুলিকে পানি পান করানোর পর একটি গাছের ছায়ার আশ্রয় নিয়ে দু’আয় মগ্ন হলেন। خَير (কল্যাণ) শব্দটি অনেক অর্থে ব্যবহার হয়; যেমন, খাদ্য, কল্যাণময় কর্ম ও ইবাদত, শক্তি-সামর্থ্য এবং ধন-মাল ইত্যাদি। (আয়সারুত তাফাসীর) এখানে উক্ত শব্দটি খাদ্যের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, আমার এখন খাবারের প্রয়োজন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. তখন নারী দুজনের একজন শরম-জড়িত পায়ে তার কাছে আসল(১) এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য। অতঃপর মূসা তার কাছে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বৰ্ণনা করলে তিনি বললেন, ভয় করো না, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ।
(১) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বাক্যাংশটির এরূপ ব্যাখ্যা করেছেনঃ “সে নিজের মুখ ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে লজ্জাজড়িত পায়ে হেঁটে এলো। সেই সব ধিংগি চপলা, মেয়েদের মতো হন হন করে ছুটে আসেনি, যারা যেদিকে ইচ্ছা যায় এবং যেখানে খুশী ঢুকে পড়ে।” এ বিষয়বস্তু সম্বলিত কয়েকটি বর্ণনা সাঈদ ইবনে মানসুর, ইবনে জরীর, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনুল মুনযির নির্ভরযোগ্য সনদ সহকারে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উদ্ধৃত করেছেন। এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামের যুগে কুরআন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বদৌলতে এ মনীষীগণ লজ্জাশীলতার যে ইসলামী ধারণা লাভ করেছিলেন তা অপরিচিত ও ভিন্ পুরুষদের সামনে চেহারা খুলে রেখে ঘোরাফেরা করা এবং বেপরোয়াভাবে ঘরের বাইরে চলাফেরা করার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পরিষ্কার ভাষায় এখানে চেহারা ঢেকে রাখাকে লজ্জাশীলতার চিহ্ন এবং তা ভিন পুরুষের সামনে উন্মুক্ত রাখাকে নির্লজ্জতা গণ্য করেছেন। [দেখুন, বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) তখন রমণী দু’জনের একজন লজ্জা-জড়িত পদক্ষেপে তার নিকট এল[1] এবং বলল, ‘আপনি যে আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন।’[2] অতঃপর মূসা তার নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় করো না। তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল হতে বেঁচে গেছ।’ [3]
[1] আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর দু’আ কবুল করলেন এবং দুটি মেয়ের মধ্যে একজন তাঁকে ডাকতে এল। কুরআন বিশেষভাবে মেয়েটির লজ্জার কথা বর্ণনা করেছে। যেহেতু লজ্জাই হল নারীর ভূষণ। পক্ষান্তরে নারীর জন্য পুরুষদের মত লজ্জা ও পর্দার পরোয়া না করে নির্লজ্জ ও বেপর্দা হওয়া শরীয়তে অবৈধ ও ঘৃণিত।
[2] মেয়ে দু’টির পিতা কে ছিলেন কুরআনে স্পষ্টভাবে তার পরিচয় বা নাম উল্লেখ করা হয়নি। অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারিগণ শুআইব (আঃ) মনে করেছেন। যিনি মাদয়্যানবাসীদের প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। ইমাম শাওকানী (রঃ) এই মতটিকেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন, শুআইব (আঃ)-এর যুগ মূসা (আঃ)-এর নবুঅতের আগে ছিল। সুতরাং তিনি শুআইব (আঃ)-এর কোন ভায়ের ছেলে অথবা তাঁর জাতির কোন লোক হবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন। যাই হোক, মূসা (আঃ) মেয়ে দুটির প্রতি যে সহানুভূতি প্রদর্শন ও উপকার করলেন তা তারা বাড়ি ফিরে বৃদ্ধ পিতার নিকট খুলে বলল। যার ফলে তাঁর অন্তরেও উপকারের বদলা দেওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হল। অথবা তাঁর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক দেওয়া কর্তব্য মনে করলেন।
[3] অর্থাৎ, মিসরের ঘটনাবলী ও ফিরআউনের অত্যাচার-কাহিনী বিস্তারিত বর্ণনা করলেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি বললেন, এই এলাকা ফিরআউনের রাজ্য-সীমার বাইরে। অতএব ভয়ের কোন কারণ নেই। আল্লাহ তোমাকে অত্যাচারী হতে পরিত্রাণ দিয়েছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. নারীদ্বয়ের একজন বলল, হে আমার পিতা! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন, কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।(১)
(১) এ পরামর্শের অর্থ ছিল, আপনার বার্ধক্যের কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়েদের বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হতে হয়। বাইরের কাজ করার জন্য আমাদের কোন ভাই নেই। আপনি এ ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করুন। সুঠাম দেহের অধিকারী বলশালী লোক। সবরকমের পরিশ্রমের কাজ করতে পারবে। আবার নির্ভরযোগ্যও। সে আমাদের মতো মেয়েদেরকে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমাদের সাহায্য করেছে এবং আমাদের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায়ওনি। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) ওদের একজন বলল, ‘হে আব্বা! আপনি এঁকে মজুর নিযুক্ত করুন, কারণ আপনার মজুর হিসাবে নিশ্চয় সে (ব্যক্তি) উত্তম হবে, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ [1]
[1] কোন কোন মুফাসসির লিখেছেন যে, পিতা মেয়েদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কিভাবে জানলে যে, লোকটি শক্তিশালী ও আমানতদার?’ উত্তরে মেয়েরা বলল, ‘তিনি যে কুয়া হতে আমাদের পশুদেরকে পানি পান করালেন সেই কুয়াটি এমন একটি বড় পাথর দিয়ে ঢাকা, যা দশজনের পক্ষে উঠানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, তিনি একাই সেই পাথরটিকে সরিয়েছেন এবং পরে ঢাকাও দিয়েছেন একাই। অনুরূপ আমি যখন তাঁকে এখানে আসার জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম, রাস্তা যেহেতু আমারই জানা, সেই জন্য আমি আগে আগে চলতে শুরু করলাম আর তিনি পিছনে। কিন্তু বাতাসে আমার চাদর উড়তে থাকে, ফলে তিনি আমাকে তাঁর পিছনে চলতে বললেন; যাতে আমার দেহের কোন অংশ তাঁর দৃষ্টিতে না পড়ে। আর রাস্তা ভুল হলে পাথর ছুঁড়ে জানিয়ে দিতে বলেন।’ এ সব কথার সত্যতা আল্লাহই ভাল জানেন। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. তিনি মূসাকে বললেন, আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে, আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছে। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) সে মূসাকে বলল, ‘আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই[1] এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরি খাটবে;[2] অতঃপর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তবে সে তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না।[3] ইন শাআল্লাহ (আল্লাহর ইচ্ছায়) তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।’ [4]
[1] আমাদের দেশে কন্যা পক্ষ হতে বিবাহের পয়গাম দেওয়া লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। কিন্তু আল্লাহর শরীয়তে তা নিন্দনীয় নয়। সুন্দর চরিত্রবান যুবকের সন্ধান মিললে সরাসরি তার সাথে বা তার পরিবারের কারো সাথে নিজ কন্যার বিবাহের ব্যাপারে কথা-বার্তা বলা দোষের নয়; বরং তা প্রশংসনীয়। নবী (সাঃ) ও সাহাবা (রাঃ)-দের যুগেও এই প্রথাই প্রচলিত ছিল।
[2] এখান থেকে উলামাগণ মজদুরী ও মজুরীর বৈধতা প্রমাণ করেছেন। অর্থাৎ, মজুরী বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোন পুরুষ দ্বারা কাজ নেওয়া বৈধ।
[3] অতিরিক্ত দু’ বছর কাজ করা যদি কষ্টকর মনে হয়, তাহলে আট বছর পর যাওয়ার অনুমতি থাকবে।
[4] ঝগড়া-বিবাদ করব না, কোন কষ্টও দেব না এবং তোমার প্রতি কঠোরও হব না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দুটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার কর্মবিধায়ক।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) মূসা বলল, ‘আপনার ও আমার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দুটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না।[1] আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী।’ [2]
[1] অর্থাৎ, আট বছর বা দশ বছর পর আমি যেতে চাইলে অধিক থাকার দাবী করা যাবে না।
[2] কেউ কেউ বলেন, এটি শুআইব বা শুআইবের ভাইপোর উক্তি। আবার কেউ বলেন, এটি মূসা (আঃ)-এর কথা। হয়তো বা উভয়ের কথা; যেহেতু বহুবচন শব্দ ব্যবহার হয়েছে। মনে হয় এ ব্যাপারে দুজনেই আল্লাহকে সাক্ষী রাখলেন। আর এই কথার সাথে সাথেই তাঁর কন্যা ও মূসা (আঃ)-এর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গেল। মহান আল্লাহ অন্য কথা বিস্তারিত আলোচনা করেননি। ইসলামী শরীয়তে উভয় পক্ষের সম্মতির সাথে সাথে বিবাহ-বন্ধনের সময় দু’জন মুসলমান সাক্ষী থাকা আবশ্যক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. অতঃপর মূসা যখন তার মেয়াদ পূর্ণ করার পর(১) সপরিবারে যাত্রা করলেন(২), তখন তিনি তুর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার পরিজনবৰ্গকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবত আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য খবর আনতে পারি অথবা একখণ্ড জলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।
(১) অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম চাকুরীর নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করলেন। এখানে প্রশ্ন হয় যে, মূসা আলাইহিস সালাম আট বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন নাকি দশ বছরের? এ ব্যাপারে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেন যে, অধিক মেয়াদ অর্থাৎ দশ বছর মেয়াদকাল তিনি পূর্ণ করেছিলেন। নবীগণ যা বলেন তা পূর্ণ করেন। [বুখারীঃ ২৫৩৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রাপককে তার প্রাপ্যের চাইতে বেশী দিতেন এবং তিনি উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন যে, চাকুরী, পারিশ্রমিক ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করতে।
(২) এর থেকে প্রমাণ হয় যে, একজন মানুষ তার পরিবারের উপর কর্তৃত্বশীল। সে তাদেরকে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা যাওয়ার অধিকার রাখে। [কুরতুবী] এ সফরে মূসার তুর পাহাড়ের দিকে যাওয়া দেখে অনুমান করা যায় তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে সম্ভবত মিসরের দিকে যেতে চাচ্ছিলেন। কারণ মাদইয়ান থেকে মিসরের দিকে যে পথটি গেছে তুর পাহাড় তার উপর অবস্থিত। সম্ভবত মূসা মনে করে থাকবেন, দশটি বছর চলে গেছে, এখন যদি আমি নীরবে সেখানে চলে যাই এবং নিজের পরিবারের লোকজনদের সাথে অবস্থান করতে থাকি তাহলে হয়তো আমার কথা কেউ জানতেই পারবে না। [দেখুন: ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) মূসা যখন তার মেয়াদ[1] পূর্ণ করার পর সপরিবারে যাত্রা করল,[2] তখন সে তূর পাহাড়ের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিজনবর্গকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোন খবর আনতে পারব অথবা একখন্ড জ্বলন্ত আঙ্গার আনতে পারব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’
[1] ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এখানে মেয়াদ বলতে দশ বছরের মেয়াদ অর্থ নিয়েছেন। কারণ, এই মেয়াদই মূসা (আঃ)-এর শ্বশুরের কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিল। আর মূসা (আঃ)-এর সুন্দর চরিত্র-ব্যবহার নিজ বৃদ্ধ শ্বশুরের ইচ্ছার বিপরীত করতে পছন্দ করল না।
[2] এখান থেকে প্রমাণিত হল যে, স্বামী নিজ স্ত্রীকে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. অতঃপর যখন মূসা আগুনের কাছে পৌছলেন তখন উপত্যকার ডান পাশে(১) বরকতময়(২) ভূমির উপর অবস্থিত সুনির্দিষ্ট গাছের দিক থেকে তাকে ডেকে বলা হল, হে মূসা! আমিই আল্লাহ, সৃষ্টিকুলের রব(৩);
(১) অর্থাৎ মূসার ডান হাতের দিকে যে কিনারা ছিল সেই কিনারা বা পাশ থেকে। [কুরতুবী]
(২) সূরা মারইয়ামের ৩১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বরকত সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে।
(৩) এ আয়াত সংক্রান্ত ব্যাখ্যা সূরা আন-নামলের ৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় গত হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছল, তখন উপত্যকার ডান পাশে পবিত্র ভূমির এক বৃক্ষ হতে[1] তাকে আহবান করে বলা হল, ‘হে মূসা! নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, বিশ্বজগতের প্রতিপালক। [2]
[1] অর্থাৎ, আওয়াজ উপত্যকার এক প্রান্ত থেকে এল; যা পশ্চিম দিক হতে পাহাড়ের ডান দিক ছিল। এখানে গাছ হতে আগুনের শিখা বের হচ্ছিল, যা আসলে মহান আল্লাহর নূর (জ্যোতি) ছিল।
[2] অর্থাৎ, হে মূসা! এখন তোমার সঙ্গে যে কথা বলছে সে, আমিই আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান