-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেব কিংবা তাকে যবেহ করব(১) অথবা সে আমার নিকট উপযুক্ত কারণ দর্শাবে।(২)
(১) এ আয়াত থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমরা পাই, এক. শাস্তি দিতে হবে অপরাধ মোতাবেক শরীর মোতাবেক নয়। দুই. যদি কোন পালিত জন্তু গাভী, বলদ, গাধা, ঘোড়া, উট ইত্যাদি কাজে অলসতা করে তবে প্রয়োজনমাফিক প্ৰহারের সুষম শাস্তি দেয়া জায়েয। তবে বিনা কারণে কাউকে শাস্তি দেয়া জায়েয নেই। [কুরতুবী]
(২) এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া বিচারকের কর্তব্য। উপযুক্ত ওযর পেশ করলে তা গ্ৰহণ করা উচিত। [দেখুন: তাবারী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) সে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি অবশ্যই ওকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা জবাই করব।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. কিছুক্ষণ পরেই হুদাহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি যা জ্ঞানে পরিবেষ্টন করতে পারেননি আমি তা পরিবেষ্টন করেছি(১) এবং সাবা(২) হতে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি।
(১) এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবী-রাসূলগণ গায়েব জানেন না। তাদেরকে আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান দান করেন। তাই শুধু জানতে পারেন। [কুরতুবী]
(২) সাবা ছিল আরবের দক্ষিণ এলাকার একটি বিখ্যাত ব্যবসাজীবী জাতি। তাদের রাজধানী মারিব বর্তমান ইয়ামানের রাজধানী সান’আ থেকে তিন দিনের পথের দূরত্বে (৫৫ মাইল উত্তরপূর্বে) অবস্থিত ছিল। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, ‘আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি[1] এবং সাবা[2] হতে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি।
[1] إحَاطَة অর্থ কোন জিনিসের ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান ও অবগতি অর্জন করা। লক্ষণীয় যে, পাখীও জানে, নবী গায়ব জানেন না।
[2] ‘সাবা’ এক ব্যক্তির নাম, যা পরে এক জাতি ও এক শহরের নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এখানে সাবা শহরকে বুঝানো হয়েছে। ইয়ামানের সানআ’ হতে তিন দিনের যাত্রাপথ। যা এখন মা’রাবুল ইয়ামান নামে প্রসিদ্ধ। (ফতহুল কাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. আমি তো এক নারীকে দেখলাম তাদের উপর রাজত্ব করছে।(১) তাকে দেয়া হয়েছে সকল কিছু হতেই(২) এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন।
(১) ‘সাবা’ জাতির এ সমাজ্ঞীর নাম কোন কোন বর্ণনায় বিলকীস বিনত শারাহীল বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর] এ আয়াত থেকে কোন ক্রমেই নারীদেরকে রাষ্ট্রপ্রধান বানানোর প্রমাণ নেয়া জয়েয নয়। কারণ, এটা ছিল বিলকীসের ইসলাম গ্রহণের পূর্বের ঘটনা। ইসলাম গ্রহণের পরে সুলাইমান আলাইহিস সালাম তাকে এ পদে বহাল রেখেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদুপরি ইসলামী শরীয়তে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শোনলেন যে, পারস্যবাসীরা তাদের সম্রাটের মৃত্যুর পর তার কন্যাকে রাজ-সিংহাসনে বসিয়েছে তখন তিনি বললেনঃ “যে জাতি তাদের শাসনক্ষমতা একজন নারীর হাতে সমর্পণ করেছে, তারা কখনও সাফল্য লাভ করতে পারবে না।” [বুখারীঃ ৪১৬৩]
এ কারণেই আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কোন নারীকে শাসনকর্তৃত্ব, খেলাফত অথবা রাজত্ব সমর্পণ করা যায় না; বরং সালাতের ইমামতির ন্যায় বৃহৎ ইমামতি অর্থাৎ শাসনকর্তৃত্বও একমাত্র পুরুষের জন্যই উপযুক্ত। [কুরতুবী; উসাইমীন, তাফসীরু সূরাতায়িল ফাতিহা ওয়াল বাকারাহ: ৩/১০৬]
(২) অর্থাৎ একজন রাষ্ট্রনায়কের যা প্রয়োজন সে সবই তার আছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] সে যুগে যেসব বস্তু অনাবিস্কৃত ছিল, সেগুলো না থাকা এর পরিপন্থী নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) আমি এক মহিলাকে দেখলাম যে, সে সাবাবাসীদের উপর রাজত্ব করছে।[1] তাকে সব কিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। [2]
[1] অর্থাৎ, হুদহুদ পাখীর কাছেও এ কথা আশ্চর্যজনক ছিল যে, সাবায় একজন নারী রাজ্য পরিচালনা করছে। কিন্তু আজ-কাল বলা হচ্ছে যে, নারীরা সব ব্যাপারেই পুরুষদের সমান। যদি পুরুষরা রাজ্য চালাতে পারে, তাহলে নারীরা কেন পারবে না? অথচ এই মতবাদ ইসলামী শিক্ষার বিপরীত। কিছু লোক সাবার রাণী ‘বিলকীসের’ এই ঘটনা থেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, নারীর নেতৃত্ব বৈধ। অথচ কুরআনে তা কেবল একটি ঘটনা হিসাবেই বর্ণিত হয়েছে। এ ঘটনার সাথে নারী-নেতৃত্ব বৈধ-অবৈধতার কোন সম্পর্ক নেই। নারী-নেতৃত্ব অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-হাদীসে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
[2] কথিত আছে যে, সিংহাসনটি ছিল ৮০ হাত লম্বা আর ৪০ হাত চওড়া ও ৩০ হাত উঁচু। যার মধ্যে ছিল মুক্তা, লাল রঙের পদ্মরাগ ও সবুজ রঙের পান্না ইত্যাদির কারুকার্য। আর আল্লাহই ভালো জানেন। (ফাতহুল কাদীর) তবে মনে হয় এ কথায় অতিরঞ্জন রয়েছে। ইয়ামানে রাণী বিলকীসের প্রাসাদের যে ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, তার মধ্যে এত বিশাল সিংহাসন সংকুলান হওয়ার জায়গাই নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে(১)। আর শয়তান(২) তাদের কার্যাবলী তাদের কাছে সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধাগ্রস্থ করেছে, ফলে তারা হেদায়াত পাচ্ছেনা;
(১) এ থেকে জানা যায়, সেকালে এ জাতিটি সূর্যের পূজা করতো। আরবের প্রাচীন বর্ণনাগুলো থেকেও এ জাতির এ একই ধর্মের কথা জানা যায়। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
(২) বক্তব্যের ধরণ থেকে অনুমিত হয় যে, হুদহুদের বক্তব্য এর পূর্বের অংশটুকু। অর্থাৎ ‘সূর্যের সামনে সিজদা করে’ পর্যন্ত তার বক্তব্য শেষ হয়ে যায়। এরপর এ উক্তিগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। [কুরতুবী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এ অনুমানকে যে জিনিস শক্তিশালী করে তা হচ্ছে এ বাক্যটি “আর তিনি সবকিছু জানেন, যা তোমরা লুকাও এবং প্রকাশ করো।” এ শব্দগুলো থেকে প্ৰবল ধারণা জন্মে যে, বক্তা হুদাহুদ এবং শ্রোতা সুলাইমান ও তার দরবারীগণ নন বরং বক্তা হচ্ছেন আল্লাহ এবং তিনি সম্বোধন করছেন মক্কার মুশরিকদেরকে, যাদেরকে নসিহত করার জন্যই এ কাহিনী শুনানো হচ্ছে। তবে কারও কারও মতে পুরো কথাটিই হুদহুদের। [তাবারী।]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদাহ করছে। শয়তান ওদের নিকট ওদের কার্যাবলীকে সুশোভন করেছে এবং ওদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে,[1] ফলে ওরা সৎপথ পায় না।’
[1] এর অর্থ এই যে, পাখীদের এই অনুভব শক্তি রয়েছে যে, গায়বের খবর নবীরা জানতেন না। যেমন, হুদহুদ পাখী নবী সুলাইমান (আঃ)-কে বলল, আমি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এনেছি, যা আপনার জানা নেই। অনুরূপ পাখীরা আল্লাহর একত্ববাদের বুঝশক্তিও রাখে। সেই জন্যই এখানে হুদহুদ বিস্ময়ের সাথে বলেছিল, এই রাণী ও তার প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের পূজা করে এবং তারা শয়তানের অনুসরণ করে; যে তাদের জন্য সূর্য-পূজাকে সুশোভন করেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. নিবৃত্ত করেছে এ জন্যে যে, তারা যেন সিজদা না করে আল্লাহকে, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের লুক্কায়িত বস্তুকে বের করেন।(১) আর যিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর।
(১) যিনি প্রতিমুহূর্তে এমন সব জিনিসের উদ্ভব ঘটাচ্ছেন যেগুলো জন্মের পূর্বে কোথায় কোথায় লুকিয়ে ছিল কেউ জানে না। ভূ-গর্ভ থেকে প্রতি মুহুর্তে অসংখ্য উদ্ভিদ, বিভিন্ন ধরনের রিযিক এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ বের করছেন। উর্ধ্ব জগত থেকে প্রতিনিয়ত এমন সব জিনিসের আর্বিভাব ঘটাচ্ছেন, যার আবির্ভাব না ঘটলে মানুষের ধারণা ও কল্পনায়ও কোনদিন আসতে পারতো না। যেমন বৃষ্টির পানি। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) (সুশোভন করেছে এই জন্য যে,) যাতে ওরা আল্লাহকে সিজদা না করে, [1] যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর গুপ্ত বস্তুকে প্রকাশ করেন,[2] যিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর।
[1] أَلاَّ يَسجُدُوا (যাতে ওরা সিজদা না করে) এর সম্পর্কও زَيَّن (সুশোভন করেছে) ক্রিয়ার সঙ্গে। অর্থাৎ শয়তান তাদের সামনে এটিও সুশোভন করেছিল যে, যেন তারা আল্লাহকে সিজদা না করে। অথবা أَلاَّ يَسجُدُوا টি لاَ يَهتَدُون ক্রিয়ার কর্মকারক এবং لاَ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তাদের একথা বুঝে আসে না যে, সিজদা কেবলমাত্র আল্লাহকে করা উচিত। (ফাতহুল কাদীর)
[2] আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাটি হতে তার গুপ্ত বস্তু; গাছ-পালা, খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য জিনিস প্রকাশ করেন। خَبء মাসদার (ক্রিয়ামূল) যা مَخبُوء মাফঊল (কর্মকারক) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই, তিনি মহা আরশের রব।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে প্রকাণ্ড সৃষ্টি আরশের রব। আর যেহেতু হুদহুদ কল্যাণের প্রতি আহবানকারী, এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত প্রদানকারী, একমাত্র তাঁর জন্যই সিজদা করার আহবান করে থাকে, তাই হাদীসে তাকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। [দেখুন: আবু দাউদ ৫২৬৭; ইবন মাজাহ ৩২২৪]
এ আয়াত পড়ার পর সিজদা করা ওয়াজিব। [দেখুন: কুরতুবী; আদওয়াউল বায়ান] এখানে সিজদা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মুমিনের সূর্যপূজারীদের থেকে নিজেকে সচেতনভাবে পৃথক করা এবং নিজের কর্মের মাধ্যমে একথার স্বীকৃতি দেয়া ও একথা প্রকাশ করা উচিত যে, সে সূর্যকে নয় বরং একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেই নিজের সিজদার ও ইবাদাতের উপযোগী এবং যোগ্য মনে করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি মহা আরশের অধিপতি। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] মহান আল্লাহ এ বিশ্বের সকল জিনিসের মালিক। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র মহা আরশের মালিক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ আরশ বিশ্ব-জাহানের সব থেকে বড় ও শ্রেষ্ঠ জিনিস। দ্বিতীয়তঃ এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য যে, সাবা’র রাণীর সিংহাসন ছিল বিশাল। কিন্তু আল্লাহর মহাসনের তুলনায় তা নিতান্ত নগণ্য। যার উপর আল্লাহ তাঁর মহিমানুসারে সমাসীন আছেন। হুদহুদ যেহেতু একত্ববাদের উপদেশ দিয়েছে, শিরক খন্ডন করেছে এবং আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছে, সেহেতু হাদীসে এসেছে যে, চার শ্রেণীর জীবকে হত্যা করবে না; পিঁপড়ে, মৌমাছি, হুদহুদ ও শ্রাইক (শিকারী পাখি বিশেষ)। (আহমাদ ১/৩৩২, আবু দাঊদঃ আদব অধ্যায়, ইবনে মাজাহঃ শিকার অধ্যায়) শ্রাইক পাখী, যার মাথা বড়, পেট সাদা, পিঠ সবুজ ও ছোট ছোট পাখী শিকার করে খায়। (টীকা ইবনে কাসীর)
* (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. সুলাইমান বললেন, আমরা দেখব তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) (সুলাইমান) বলল, ‘আমি দেখব, তুমি কি সত্য বলেছ, না তুমি মিথ্যাবাদী?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. তুমি যাও আমার এ পত্র নিয়ে এবং এটা তাদের কাছে নিক্ষেপ কর: তারপর তাদের কাছ থেকে সরে থেকো(১) এবং লক্ষ্য করো তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
(১) সুলাইমান আলাইহিস সালাম হুদহুদকে পত্ৰবাহকের দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং এ শিষ্টাচারও শিক্ষা দিলেন যে, সম্রাজ্ঞীর হাতে পত্ৰ অৰ্পণ করে মাথার উপর সওয়ার হয়ে থাকবে না বরং সেখান থেকে কিছুটা সরে যাবে। এটাই রাজকীয় নিয়ম। এতে জানা গেল যে, সামাজিক শিষ্টাচার ও মানবিক চরিত্র সবার সাথেই কাম্য। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) তুমি আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং তাদের নিকট অর্পণ কর; অতঃপর তাদের নিকট হতে সরে পড় এবং দেখ, তারা কি উত্তর দেয়।’[1]
[1] অর্থাৎ, একদিকে সরে গিয়ে লুকিয়ে পড় এবং দেখ যে, তারা আপোসে কি কথাবার্তা বলে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. সে নারী বলল, হে পরিষদবর্গ আমাকে এক সম্মানিত পত্ৰ(১) দেয়া হয়েছে;
(১) সম্মানিত পত্র বলে কোন কোন মুফাস্সিরের মতেঃ মোহরাঙ্কিত পত্র বুঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] অথবা এর কারণ, পত্রটি এসেছে অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক পথে। কোন রাষ্ট্রদূত এসে দেয়নি বরং তার পরিবর্তে এসেছে একটি পাখি। কারও কারও মতে, যখন তিনি দেখলেন যে, একটি হুদহুদ এটি বয়ে এনেছে আর সে হুদহুদ আদব রক্ষা করে সরে দাঁড়িয়েছে, তার বুঝতে বাকী রইল না যে, এটা কোন সম্মানিত ব্যক্তি থেকেই এসে থাকবে। তারপর যখন চিঠি পড়লেন, তখন বুঝলেন যে, এটি নবী সুলাইমানের পক্ষ থেকে। সুতরাং নবীর পত্র অবশ্যই সম্মানিত হবে।
পূর্বোক্ত দিকনির্দেশনাগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি কারণেও পত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। পত্রটি শুরু করা হয়েছে আল্লাহ রহমানুর রহীমের নামে। সর্বোপরি যে বিষয়টি এর গুরুত্ব আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে তা হচ্ছে এই যে, পত্রে আমাকে একেবারে পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দাওয়াত দেয়া হয়েছে, আমি যেন অবাধ্যতার পথ পরিহার করে আনুগত্যের পথ অবলম্বন করি এবং হুকুমের অনুগত বা মুসলিম হয়ে সুলাইমানের সামনে হাজির হয়ে যাই। আর এতে এটাও বলা হয়েছে যে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার তাদের কারও নেই। এসবই প্রমাণ করে যে চিঠিটি অত্যন্ত সম্মানিত। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) (সাবা’র রানী বিল্কীস) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেওয়া হয়েছে;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. নিশ্চয় এটা সুলাইমানের কাছ থেকে এবং নিশ্চয় এটা রহমান, রহীম আল্লাহর নামে(১),
(১) এ একটি আয়াতে অনেকগুলো পথনির্দেশ বা হেদায়াত রয়েছে: তন্মধ্যে সর্বপ্রথম দিকনির্দেশ এই যে, পত্রের প্রারম্ভেই প্রেরকের নাম লেখা নবীদের সুন্নাত। এর উপকারিতা অনেক। উদাহরণতঃ পত্র পাঠ করার পূর্বেই প্রাপক জানতে পারবে যে, সে কার পত্ৰ পাঠ করছে, যাতে সে সেই পরিবেশে পত্রের বিষয়বস্তু পাঠ করে এবং চিন্তা-ভাবনা করে এবং যাতে কার পত্র, ‘কোথা থেকে এলো?’ এরূপ খোঁজাখুঁজি করার কষ্ট ভোগ করতে না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এভাবেই তার যাবতীয় পত্ৰ লিখতেন। এতে ছোট-বড় ভেদাভেদ করা উচিত নয়। কারণ সাহাবায়ে কিরাম যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চিঠি লিখতেন তখনও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। যেমন, রাসূলের কাছে লিখা আলী ইবনুল হাদরামীর চিঠি। তবে এটা জানা আবশ্যক যে, এর বিপরীত করলে সুন্নাত মোতাবেক না হলেও তা জায়েয। বর্তমানে খামের উপর প্রেরকের নাম লিখা থাকলে তার মাধ্যমে উপরোক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।
আলোচ্য ঘটনাতে দ্বিতীয় পত্রের উত্তর দেয়াকে সালামের উত্তরের মত ওয়াজিব মনে করতেন। এখানে তৃতীয় আরেকটি দিক নির্দেশ হলো, বিসমিল্লাহ লেখা। তবে এখানে দেখা যায় যে, আগে প্রেরকের নাম লিখার পর বিসমিল্লাহ বলা হয়েছে। এর দ্বারা প্রেরকের নামের পরে বিসমিল্লাহ লিখা জায়েয প্রমাণিত হলো। যদিও আগেই বিসমিল্লাহ লেখার নিয়ম বেশী প্রচলিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ কাজটি বেশী করতেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) এ সুলাইমানের নিকট হতে এবং তা এইঃ অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি)।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান