بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৯/ মারইয়াম | Maryam | مَرْيَم আয়াতঃ ৯৮ মাক্কী
১৯ : ২১ قَالَ كَذٰلِكِ ۚ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَیَّ هَیِّنٌ ۚ وَ لِنَجۡعَلَهٗۤ اٰیَۃً لِّلنَّاسِ وَ رَحۡمَۃً مِّنَّا ۚ وَ كَانَ اَمۡرًا مَّقۡضِیًّا ﴿۲۱﴾
قال كذلك قال ربك هو علی هین و لنجعلهٗ ایۃ للناس و رحمۃ منا و كان امرا مقضیا ﴿۲۱﴾
সে বলল, ‘এভাবেই। তোমার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আর যেন আমি তাকে করে দেই মানুষের জন্য নিদর্শন এবং আমার পক্ষ থেকে রহমত। আর এটি একটি সিদ্ধান্তকৃত বিষয়’।

-আল-বায়ান

সে বলল, ‘এভাবেই হবে, তোমার প্রতিপালক বলেছেন- ‘ওটা আমার জন্য সহজ, আমি তাকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চাই আর আমার পক্ষ থেকে এক রহমত, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’

-তাইসিরুল

সে বললঃ এরূপই হবে; তোমার রাব্ব বলেছেন - এটা আমার জন্য সহজ সাধ্য এবং তাকে আমি এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন এবং আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; এটাতো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।

-মুজিবুর রহমান

He said, "Thus [it will be]; your Lord says, 'It is easy for Me, and We will make him a sign to the people and a mercy from Us. And it is a matter [already] decreed.' "

-Sahih International

২১. সে বলল, এ রূপই হবে। তোমার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আর আমরা তাকে এজন্যে সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন(১) ও আমাদের কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।

(১) এটা এমন এক নিদর্শন যা সৰ্বকালের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে নেয়া যায়। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর অপার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] তিনি আদমকে পিতা-মাতা ব্যতীত, হাওয়াকে মাতা ব্যতীত আর সমস্ত মানুষকে পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ঈসা আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন পিতা ব্যতীত। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর সব ধরনের শক্তি ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তার নিকট কোন কিছুই কঠিন নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) সে বলল, ‘এই ভাবেই হবে;[1] তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং তাকে আমি এই জন্য সৃষ্টি করব, যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন[2] ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ;[3] এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’ [4]

[1] অর্থাৎ, এ কথা তো সত্য যে তোমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি বৈধ উপায়ে, আর না অবৈধ উপায়ে। যদিও স্বাভাবিক গর্ভ ধারণের জন্য তা অতি আবশ্যক। তবুও এভাবেই হবে।

[2] অর্থাৎ, আমি স্বাভাবিক হেতুর (মিলন সংসাধনের) মুখাপেক্ষী নই। আমার জন্য এটা অতি সহজ আর তাকে আমি আমার সৃজন-শক্তির এক নির্দশন করতে চাই। এর আগে আমি তোমাদের আদি পিতা আদমকে বিনা পুরুষ ও নারীতে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের মাতা হাওয়াকেও কেবল পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। এবার ঈসাকে সৃষ্টি করে চতুর্থ পদ্ধতি সৃষ্টি করার যে ক্ষমতা তা প্রকাশ করতে চাই; আর তা হল শুধু মায়ের গর্ভ হতে বিনা পুরুষের মিলনে সৃষ্টি করা। আমি সৃষ্টির চারটি পদ্ধতিতেই সৃষ্টি করতে সমভাবে ক্ষমতাবান।

[3] এর অর্থ নবুঅত যা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ তাঁর জন্য এবং ওদের জন্যও যারা তাঁর নবুঅতের উপর ঈমান আনবে।

[4] এটি জিবরীলের কথারই পরিশিষ্ট; যা তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, মু’জিযামূলক (অস্বাভাবিক) সৃষ্টি আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর মহাশক্তি ও ইচ্ছায় স্থিরীকৃত আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২২ فَحَمَلَتۡهُ فَانۡتَبَذَتۡ بِهٖ مَكَانًا قَصِیًّا ﴿۲۲﴾
فحملته فانتبذت بهٖ مكانا قصیا ﴿۲۲﴾
তারপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা নিয়ে দূরবর্তী একটি স্থানে চলে গেল।

-আল-বায়ান

অতঃপর ছেলে তার গর্ভে আসল। তখন সে তা নিয়ে দূরবর্তী জায়গায় চলে গেল।

-তাইসিরুল

অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।

-মুজিবুর রহমান

So she conceived him, and she withdrew with him to a remote place.

-Sahih International

২২. অতঃপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা সহ দূরের এক স্থানে চলে গেল;(১)

(১) দূরবর্তী স্থানে মানে বাইত লাহিম। [কুরতুবী] কাতাদা বলেন, পূর্বদিকে। [তাবারী] মারইয়াম আলাইহাস সালাম হঠাৎ গর্ভধারণ করলেন। এ অবস্থায় যদি তিনি নিজের ইতিকাফের জায়গায় বসে থাকতেন এবং লোকেরা তাঁর গর্ভধারণের কথা জানতে পারতো, তাহলে শুধুমাত্র পরিবারের লোকেরাই নয়, সম্প্রদায়ের অন্যান্য লোকরাও তাঁর জীবন ধারণ কঠিন করে দিতো। তাই তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবার পর ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিজ সম্প্রদায়ের তিরস্কার, নিন্দাবাদ ও ব্যাপক দুৰ্ণাম থেকে রক্ষা পান। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর] ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম যে পিতা ছাড়াই হয়েছিল এ ঘটনাটি নিজেই তার একটি বিরাট প্রমাণ। যদি তিনি বিবাহিত হতেন এবং স্বামীর ঔরসে সন্তান জন্মলাভের ব্যাপার হতো তাহলে তো সন্তান প্রসবের জন্য তাঁর শ্বশুরালয়ে বা পিতৃগৃহে না গিয়ে একাকী একটি দূরবর্তী স্থানে চলে যাওয়ার কোন কারণই ছিল না। সুতরাং নাসারাদের মিথ্যাচার এখানে স্পষ্ট। তারা তাকে বিবাহিত বানিয়ে ছাড়ছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল ও তাকে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৩ فَاَجَآءَهَا الۡمَخَاضُ اِلٰی جِذۡعِ النَّخۡلَۃِ ۚ قَالَتۡ یٰلَیۡتَنِیۡ مِتُّ قَبۡلَ هٰذَا وَ كُنۡتُ نَسۡیًا مَّنۡسِیًّا ﴿۲۳﴾
فاجآءها المخاض الی جذع النخلۃ قالت یلیتنی مت قبل هذا و كنت نسیا منسیا ﴿۲۳﴾
অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে খেজুর গাছের কান্ডের কাছে নিয়ে এলো। সে বলল, ‘হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হতাম’!

-আল-বায়ান

সন্তান প্রসবের বেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষতলের দিকে তাড়িত করল। সে বলে উঠল, ‘হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম আর (মানুষের) স্মৃতি থেকে পুরোপুরি মুছে যেতাম!’

-তাইসিরুল

প্রসব বেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; সে বললঃ হায়! এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম!

-মুজিবুর রহমান

And the pains of childbirth drove her to the trunk of a palm tree. She said, "Oh, I wish I had died before this and was in oblivion, forgotten."

-Sahih International

২৩. অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, হায়, এর আগে যদি আমি মরে যেতাম(১) এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম!

(১) বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন বিপদে পড়ে অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা না করে” [বুখারীঃ ৫৯৮৯, মুসলিমঃ ২৬৮০, ২৬৮১, আবুদাউদঃ ৩১০৮] সম্ভবত: মারইয়াম ধর্মের দিক চিন্তা করে মৃত্যু কামনা করেছিলেন। অর্থাৎ মানুষ দুর্নাম রটাবে এবং সম্ভবতঃ এর মোকাবেলায় আমি ধৈর্যধারণ করতে পারব না, ফলে অধৈর্য হওয়ার গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ব। মৃত্যু হলেও গোনাহ থেকে বেঁচে যেতাম, তাই এখানে মৃত্যু কামনা মূল উদ্দেশ্য নয়, গোনাহ থেকে বাঁচাই উদ্দেশ্য। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের তলে নিয়ে এল; সে বলল, ‘হায়! এর পূর্বে যদি আমি মারা যেতাম ও লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম।’ [1]

[1] মৃত্যু কামনা এই ভয়ে যে, আমি সন্তানের ব্যাপারে লোকেদেরকে কিভাবে সন্দেহমুক্ত করব; যখন তারা আমার কোন কথাই বিশ্বাস করতে চাইবে না। তথা এই চিন্তাও ছিল যে, আমি মানুষের নিকট আবেদা-যাহেদা (ইবাদত কারিণী, সংসার-বিরাগিণী) হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছি। কিন্তু এরপর আমি তাদের চোখে একজন ব্যভিচারিণী হিসাবে গণ্য হব।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৪ فَنَادٰىهَا مِنۡ تَحۡتِهَاۤ اَلَّا تَحۡزَنِیۡ قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِیًّا ﴿۲۴﴾
فنادىها من تحتها الا تحزنی قد جعل ربك تحتك سریا ﴿۲۴﴾
তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে, ‘তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন’।

-আল-বায়ান

নিম্নদিক থেকে তাকে ডাক দেয়া হল, ‘তুমি দুঃখ করো না, তোমার প্রতিপালক তোমার পাদদেশ দিয়ে এক নির্ঝরিণী প্রবাহিত করে দিয়েছেন।

-তাইসিরুল

মালাক/ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহবান করে তাকে বললঃ তুমি দুঃখ করনা, তোমার পাদদেশে তোমার রাব্ব এক নহর সৃষ্টি করেছেন।

-মুজিবুর রহমান

But he called her from below her, "Do not grieve; your Lord has provided beneath you a stream.

-Sahih International

২৪. তখন ফেরেশতা তাঁর নিচ থেকে ডেকে তাকে বলল, তুমি পেরেশান হয়ো না(১), তোমার পাদদেশে তোমার রব এক নহর সৃষ্টি করেছেন;(২)

(১) এখানে কে মারইয়াম আলাইহাস সালামকে ডেকেছিল তা নিয়ে দু'টি মত রয়েছে। এক. তাকে ফেরেশতা জিবরীলই ডেকেছিলেন। তখন “তার নীচ থেকে” এর অর্থ হবে, গাছের নীচ থেকে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] দুই. কোন কোন মুফাসসির বলেছেনঃ তাকে তার সন্তানই ডেকেছিলেন। তখন এটিই হবে ঈসা আলাইহিস সালামের প্রথম কথা বলা। ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] কোন কোন কেরাআতে (مِنْ تَحْتِهَا) (যে তার নীচে আছে) পড়া হয়েছে। যা শেষোক্ত অর্থের সমর্থন করে। তবে অধিকাংশ মুফাসসির প্রথম অর্থটিকেই গুরুত্বসহকারে বর্ণনা করেছেন।

(২) এর আভিধানিক অর্থ ছোট নহর। [ইবন কাসীর] এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরাত দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে একটি ছোট নহর জারী করে দেন [ফাতহুল কাদীর] অথবা সেখানে একটি মৃত নহর ছিল। আল্লাহ সেটাকে পানি দ্বারা পূর্ণ করে দেন। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) (জিবরীল) তার নিম্নপাশ হতে আহবান করে তাকে বলল, ‘তুমি দুঃখ করো না, তোমার নিম্নদেশে তোমার প্রতিপালক এক নদী সৃষ্টি করেছেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৫ وَ هُزِّیۡۤ اِلَیۡكِ بِجِذۡعِ النَّخۡلَۃِ تُسٰقِطۡ عَلَیۡكِ رُطَبًا جَنِیًّا ﴿۫۲۵﴾
و هزی الیك بجذع النخلۃ تسقط علیك رطبا جنیا ﴿۲۵﴾
‘আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’।

-আল-বায়ান

খেজুর গাছের কান্ড ধরে তুমি তোমার দিকে নাড়া দাও, তা তোমার উপর তাজা পরিপক্ক খেজুর পতিত করবে।

-তাইসিরুল

তুমি তোমার দিকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে নাড়া দাও, ওটা তোমাকে সুপক্ক তাজা খেজুর দান করবে।

-মুজিবুর রহমান

And shake toward you the trunk of the palm tree; it will drop upon you ripe, fresh dates.

-Sahih International

২৫. আর তুমি তোমার দিকে খেজুর-গাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, সেটা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কান্ড হিলিয়ে দাও; ওটা তোমার সামনে সদ্যঃপক্ব তাজা খেজুর ফেলতে থাকবে। [1]

[1] سَري ছোট নদী বা ঝরনাকে বলা হয়। অর্থাৎ মু’জিযা বা কারামত স্বরূপ মারয়্যামের পদতলে পান করার জন্য পানির ছোট নদী এবং খাওয়ার জন্য একটি শুকনো খেজুর গাছ হতে টাটকা পাকা খেজুরের ব্যবস্থা করলেন। আহবানকারী ছিলেন জিবরীল (আঃ) যিনি উপত্যকার নীচে হতে আহবান করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে, سَري অর্থ সরদার বা নেতা, আর সে অর্থে ঈসা (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে এবং তিনিই মা মারয়্যামকে নিম্নদেশ হতে আওয়াজ দিয়েছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৬ فَكُلِیۡ وَ اشۡرَبِیۡ وَ قَرِّیۡ عَیۡنًا ۚ فَاِمَّا تَرَیِنَّ مِنَ الۡبَشَرِ اَحَدًا ۙ فَقُوۡلِیۡۤ اِنِّیۡ نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمٰنِ صَوۡمًا فَلَنۡ اُكَلِّمَ الۡیَوۡمَ اِنۡسِیًّا ﴿ۚ۲۶﴾
فكلی و اشربی و قری عینا فاما ترین من البشر احدا فقولی انی نذرت للرحمن صوما فلن اكلم الیوم انسیا ﴿۲۶﴾
‘অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোন মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’।

-আল-বায়ান

অতঃপর খাও, পান কর আর (তোমার) চোখ জুড়াও। যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলবে- আমি রহমান আল্লাহর জন্য সাওম পালনের মানৎ করেছি, কাজেই আমি কোন মানুষের সঙ্গে আজ কিছুতেই কথা বলব না।’

-তাইসিরুল

সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়িয়ে নাও; মানুষের মধ্যে কেহকে যদি তুমি দেখ তখন বলঃ আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবনা।

-মুজিবুর রহমান

So eat and drink and be contented. And if you see from among humanity anyone, say, 'Indeed, I have vowed to the Most Merciful abstention, so I will not speak today to [any] man.' "

-Sahih International

২৬. কাজেই খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। অতঃপর মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ তখন বলো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি।(১) কাজেই আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলব না।(২)

(১) কাতাদাহ বলেন, তিনি খাবার, পানীয় ও কথা-বার্তা এ তিনটি বিষয় থেকেই সাওম পালন করেছিলেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) কোন কোন মুফাস্‌সির বলেন, ইসলাম পূর্বকালে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা এবং কারও সাথে কথা না বলার সাওম পালন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। [ইবন কাসীর] ইসলাম একে রহিত করে মন্দ কথাবার্তা, গালিগালাজ, মিথ্যা, পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকাকেই জরুরী করে দিয়েছে। সাধারণ কথাবার্তা ত্যাগ করা ইসলামে কোন ইবাদত নয়। তাই এর মানত করাও জায়েয নয়। এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “সন্তান সাবালক হওয়ার পর পিতা মারা গেলে তাকে এতীম বলা হবে না এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা কোন ইবাদত নয়।” [আবু দাউদঃ ২৮৭৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) সুতরাং আহার কর, পান কর ও চোখ জুড়াও;[1] মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ, তাহলে বল, [2] আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে চুপ থাকার মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।’

[1] অর্থাৎ খেজুর খাও, নদী বা ঝরনার পানি পান কর এবং সন্তানকে দেখে চোখ জুড়াও।

[2] এখানে বলার অর্থ ইশারা বা ইঙ্গিতে বলা; মুখের বলা নয়। যেহেতু তাদের শরীয়তে রোযার অর্থই ছিল খাওয়া ও কথা বলা হতে বিরত থাকা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৭ فَاَتَتۡ بِهٖ قَوۡمَهَا تَحۡمِلُهٗ ؕ قَالُوۡا یٰمَرۡیَمُ لَقَدۡ جِئۡتِ شَیۡئًا فَرِیًّا ﴿۲۷﴾
فاتت بهٖ قومها تحملهٗ قالوا یمریم لقد جئت شیئا فریا ﴿۲۷﴾
তারপর সে তাকে কোলে নিয়ে নিজ কওমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভূত বিষয় নিয়ে এসেছ’!

-আল-বায়ান

অতঃপর সে তার সন্তানকে বয়ে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে আসল। তারা বলল, ‘হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত জিনিস নিয়ে এসেছ!

-তাইসিরুল

অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বললঃ হে মারইয়াম! তুমিতো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ!

-মুজিবুর রহমান

Then she brought him to her people, carrying him. They said, "O Mary, you have certainly done a thing unprecedented.

-Sahih International

২৭. তারপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হল; তারা বলল, হে মারইয়াম! তুমি তো এক অঘটন করে বসেছ।(১)

(১) فريًّا আরবী ভাষায় এ শব্দটির আসল অর্থ, কর্তন করা ও চিরে ফেলা। যে কাজ কিংবা বস্তু প্ৰকাশ পেলে অসাধারণ কাটাকাটি হয় তাকে فرى বলা হয়। [কুরতুবী] উপরে সেটাকেই ‘অঘটন’ অনুবাদ করা হয়েছে। শব্দটির অন্য অর্থ হচ্ছে, বড় বিষয় বা বড় ব্যাপার। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বলল, ‘হে মারয়্যাম! তুমি তো এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৮ یٰۤاُخۡتَ هٰرُوۡنَ مَا كَانَ اَبُوۡكِ امۡرَ اَ سَوۡءٍ وَّ مَا كَانَتۡ اُمُّكِ بَغِیًّا ﴿ۖۚ۲۸﴾
یاخت هرون ما كان ابوك امر ا سوء و ما كانت امك بغیا ﴿۲۸﴾
‘হে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’।

-আল-বায়ান

ওহে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না, আর তোমার মাও ছিল না কোন অসতী নারী।’

-তাইসিরুল

হে হারূন ভগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলনা এবং তোমার মাতাও ছিলনা ব্যভিচারিণী।

-মুজিবুর রহমান

O sister of Aaron, your father was not a man of evil, nor was your mother unchaste."

-Sahih International

২৮. হে হারূনের বোন!(১) তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মা'ও ছিল না ব্যভিচারিণী।(২)

(১) মুসা আলাইহিস সালাম-এর ভাই ও সহচর হারূন আলাইহিস সালাম মারইয়ামের আমলের শত শত বছর পুর্বে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এখানে মারইয়ামকে হারুন-ভগ্নি বলা বাহ্যিক অর্থের দিক দিয়ে শুদ্ধ হতে পারে না। মুগীরা ইবনে শো'বা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানবাসীদের কাছে প্রেরণ করেন, তখন তারা প্রশ্ন করে যে, তোমাদের কুরআনে মারইয়ামকে হারূন-ভগিনী বলা হয়েছে। অথচ মুগীরা এ প্রশ্নের উত্তর জানতেন না। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঘটনা ব্যক্ত করলে তিনি বললেনঃ তুমি বলে দিলে না কেন যে, বনী ইসরাঈলগণ নবীদের নামে নাম রাখা পছন্দ করতেন” [মুসলিমঃ ২১৩৫, তিরমিযীঃ ৩১৫৫] এই হাদীসের উদ্দেশ্য দু'রকম হতে পারে।

(এক) মারইয়াম হারূন আলাইহিস সালাম এর বংশধর ছিলেন বলেই তাঁর সাথে সম্বন্ধ করা হয়েছে- যদিও তাদের মধ্যে সময়ের অনেক ব্যবধান রয়েছে; যেমন আরবদের রীতি রয়েছে। যেমন তারা তামীম গোত্রের ব্যক্তিকে أخا تميم এবং আরবের লোককে أخا العرب বলে অভিহিত করে। [ইবন কাসীর]

(দুই) এখানে হারূন বলে মুসা আলাইহিস সালাম এর সহচর হারূন নবীকে বোঝানো হয়নি বরং মারইয়ামের কোন এক জ্ঞাতি ভ্রাতার নামও ছিল হারূন যিনি তৎকালিন সময়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং এ নাম হারূন নবীর নামানুসারে রাখা হয়েছিল। এভাবে মারইয়াম হারুন-ভগিনী বলা সত্যিকার অর্থেই শুদ্ধ। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(২) কুরআনের এই বাক্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের সন্তান-সন্ততি মন্দ কাজ করলে তাতে সাধারণ লোকদের মন্দ কাজের তুলনায় বেশী গোনাহ হয়। কারণ, এতে তাদের বড়দের লাঞ্ছনা ও দুর্নাম হয়। কাজেই সম্মানিত লোকদের সন্তানদের উচিত সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে অধিক মনোনিবেশ করা। গোনাহ ও অপরাধ থেকে দূরে থাকা। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) হে হারূন ভগ্নী![1] তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিণী।

[1] হারূন বলতে মারয়্যামের সহোদর বা বৈমাত্রেয় কোন ভাইকে বুঝানো হয়েছে। অথবা হারূন বলতে মূসা (আঃ)-এর ভাই হারূন (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে এবং আরবের পরিভাষা অনুযায়ী তাঁর প্রতি সম্বদ্ধ করা হয়েছে। যেমন, আরবের লোকেরা বলে থাকে, يَا أخَا تَمِيم! يَا أخَا العَرَب (অর্থাৎ, হে তামীম বংশের লোক, হে আরবের লোক!) অথবা তাকওয়া-পরহেযগারী, পবিত্রতা ও ইবাদতে হারূন (আঃ)-এর মত মনে করে তাঁকে তাঁরই সাদৃশ্যে ‘হে হারূনের বোন’ বলা হয়েছে। এ ধরনের উদাহরণ কুরআনেও রয়েছে। (আইসারুত তাফাসীর ও ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ২৯ فَاَشَارَتۡ اِلَیۡهِ ؕ قَالُوۡا كَیۡفَ نُكَلِّمُ مَنۡ كَانَ فِی الۡمَهۡدِ صَبِیًّا ﴿۲۹﴾
فاشارت الیه قالوا كیف نكلم من كان فی المهد صبیا ﴿۲۹﴾
তখন সে শিশুটির দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু আমরা কিভাবে তার সাথে কথা বলব’?

-আল-বায়ান

তখন মারইয়াম তার ছেলের দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘আমরা কোলের বাচ্চার সঙ্গে কীভাবে কথা বলব?’

-তাইসিরুল

অতঃপর মারইয়াম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল; তারা বললঃ যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?

-মুজিবুর রহমান

So she pointed to him. They said, "How can we speak to one who is in the cradle a child?"

-Sahih International

২৯. তখন মারইয়াম সন্তানের প্রতি ইংগিত করল। তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) অতঃপর মারয়্যাম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল। তারা বলল, যে দোলনার শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ : ৩০ قَالَ اِنِّیۡ عَبۡدُ اللّٰهِ ۟ؕ اٰتٰنِیَ الۡكِتٰبَ وَ جَعَلَنِیۡ نَبِیًّا ﴿ۙ۳۰﴾
قال انی عبد الله اتنی الكتب و جعلنی نبیا ﴿۳۰﴾
শিশুটি বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন’।

-আল-বায়ান

শিশুটি বলে উঠল, ‘আমি আল্লাহর বান্দাহ, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আর আমাকে নবী করেছেন।

-তাইসিরুল

সে (ঈসা) বললঃ আমিতো আল্লাহর দাস; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নাবী করেছেন।

-মুজিবুর রহমান

[Jesus] said, "Indeed, I am the servant of Allah. He has given me the Scripture and made me a prophet.

-Sahih International

৩০. তিনি বললেন, আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) (শিশুটি) বলল, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর দাস; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। [1]

[1] আল্লাহ তাঁর লিখিত তকদীরে আমার ব্যাপারে ফায়সালা করে রেখেছিলেন যে, তিনি আমাকে কিতাব ও নবুঅত দান করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 পরের পাতা »