-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২১. আর এভাবে আমরা মানুষদেরকে তাদের হদিস জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জানে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই।(১) যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল তখন অনেকে বলল, তাদের উপর সৌধ নির্মাণ করা। তাদের রব তাদের বিষয় ভাল জানেন।(২) তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা(৩) বলল, আমরা তো নিশ্চয় তাদের পাশে মসজিদ নির্মাণ করব।(৪)
(১) সেকালে সেখানে কেয়ামত ও আখেরাত সম্পর্কে বিষম বিতর্ক চলছিল। যদিও রোমান শাসনের প্রভাবে সাধারণ লোক ঈসায়ী ধর্ম গ্ৰহণ করেছিল এবং আখেরাত এ ধর্মের মৌলিক আকীদা বিশ্বাসের অংগ ছিল তবুও তখনো রোমীয় শির্ক ও মূর্তি পূজা এবং গ্ৰীক দর্শনের প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। এর ফলে বহু লোক আখেরাত অস্বীকার অথবা কমপক্ষে তার অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতো। ঠিক এ সময় আসহাবে কাহফের ঘুম থেকে জেগে উঠার ঘটনাটি ঘটে এবং এটি মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের সপক্ষে এমন চাক্ষুষ প্রমাণ পেশ করে যা অস্বীকার করার কোন উপায় ছিল না। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) বক্তব্যের তাৎপর্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি ছিল ঈসায়ী সজ্জনদের উক্তি। তাদের মতে আসহাবে কাহফ গুহার মধ্যে যেভাবে শুয়ে আছেন সেভাবেই তাদের শুয়ে থাকতে দাও এবং গুহার মুখ বন্ধ করে দাও। তাদের রবই ভাল জানেন তারা কারা, তাদের মর্যাদা কি এবং কোন ধরনের প্রতিদান তাদের উপযোগী। [ইবন কাসীর]
(৩) সম্ভবত: এখানে রোম সাম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ এবং খৃষ্টীয় গীর্জার ধৰ্মীয় নেতৃবর্গের কথা বলা হয়েছে, যাদের মোকাবিলায় সঠিক আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী ঈসায়ীদের কথা মানুষের কাছে ঠাই পেতো না। পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছতে পৌঁছতে সাধারণ নাসারাদের মধ্যে বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক গীর্জাসমূহে শির্ক, আউলিয়া পূজা ও কবর পূজা পুরো জোরেশোরে শুরু হয়ে গিয়েছিল। বুযৰ্গদের আস্তানা পূজা করা হচ্ছিল এবং ঈসা, মারইয়াম ও হাওয়ারীগণের প্রতিমূর্তি গীর্জাগুলোতে স্থাপন করা হচ্ছিল। আসহাবে কাহফের নিদ্রাভিংগের মাত্র কয়েক বছর আগে মতান্তারে ৪৩১ খৃষ্টাব্দে সমগ্র খৃষ্টীয় জগতের ধর্মীয় নেতাদের একটি কাউন্সিল এ ‘আফসোস’ নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সেখানে ঈসা আলাইহিস সালামের ইলাহ হওয়া এবং মারইয়াম আলাইহাস সালামের “ইলাহ-মাতা” হওয়ার আকীদা চার্চের সরকারী আকীদা হিসেবে গণ্য হয়েছিল। এ ইতিহাস সামনে রাখলে পরিষ্কার জানা যায়, এখানে (الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَىٰ أَمْرِهِمْ) বাক্যে যাদেরকে প্রাধান্য লাভকারী বলা হয়েছে তারাহচ্ছে এমন সব লোক যারা ঈসা আলাইহিস সালামের সাচ্চা অনুসারীদের মোকাবিলায় তৎকালীন খৃষ্টান জনগণের নেতা এবং তাদের শাসকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়াবলী যাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। মূলত এরাই ছিল শির্কের পতাকাবাহী এবং এরাই আসহাবে কাহফের সমাধি সৌধ নির্মাণ করে সেখানে মসজিদ তথা ইবাদাতখানা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা রাহেমাহুল্লাহ এ সম্ভাবনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। [দেখুন, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম: ১/৯০]
(৪) মুসলিমদের মধ্যে কিছু লোক কুরআন মজীদের এ আয়াতটির সম্পূর্ণ উল্টা অৰ্থ গ্রহণ করেছে। তারা এ থেকে প্রমাণ করতে চান যে, নবী-রাসূল সাহাবী ও সৎ লোকদের কবরের উপর সৌধ ও মসজিদ নির্মাণ জায়েয। অথচ কুরআন এখানে তাদের এ গোমরাহীর প্রতি ইংগিত করছে যে, এ যালেমদের মনে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও আখেরাত অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রত্যয় সৃষ্টি করার জন্য তাদেরকে যে নির্দশন দেখানো হয়েছিল তাকে তারা শির্কের কাজ করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি সুযোগ মনে করে নেয় এবং ভাবে যে, ভালই হলো পূজা করার জন্য আরো কিছু আল্লাহর অলী পাওয়া গেলো।
তাছাড়া এই আয়াত থেকে “সালেহীন” তথা সৎ লোকদের কবরের উপর মসজিদ তৈরী করার প্রমাণ কেমন করে সংগ্ৰহ করা যেতে পারে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন উক্তির মধ্যে এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছেঃ কবর যিয়ারতকারী নারী ও কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের প্রতি আল্লাহ্ লানত বর্ষণ করেছেন।” [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৩১৮০, মুসনাদে আহমদঃ ১/২২৯, ২৮৭, ৩২৪, তিরমিযীঃ ৩২০, আবু দাউদঃ ৩২৩৬]।
আরো বলেছেনঃ “সাবধান হয়ে যাও, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবীদের কবরকে ইবাদাতখানা বানিয়ে নিতো। আমি তোমাদের এ ধরনের কাজ থেকে নিষেধ করছি।” [মুসলিমঃ ৫৩২]। আরো বলেনঃ “আল্লাহ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি লানত বর্ষণ করেছেন। তারা নিজেদের নবীদের কবরগুলোকে ইবাদতখানায় পরিণত করেছে।” [আহমদঃ ১/২১৮, মুসলিমঃ ৩৭৬]। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “এদের অবস্থা এ ছিল যে, যদি এদের মধ্যে কোন সৎ লোক থাকতো তার মৃত্যুর পর এরা তার কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করতো এবং তার ছবি তৈরী করতো। এরা কিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবে গণ্য হবে।” [বুখারীঃ ৪১৭, মুসলিমঃ ৫২৮]।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ সুস্পষ্ট বিধান থাকার পরও কোন আল্লাহভীরু ব্যক্তি কুরআন মজীদে ঈসায়ী পাদ্রী ও রোমীয় শাসকদের যে ভ্রান্ত কর্মকাণ্ড কাহিনীচ্ছলে বর্ণনা করা হয়েছে তাকেই ঐ নিষিদ্ধ কর্মটি করার জন্য দলীল ও প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাবার দুঃসাহস কিভাবে করতে পারে? [এ ব্যাপারে আরও দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২১) এভাবে আমি লোকেদেরকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম,[1] যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই।[2] যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল[3] তখন অনেকে বলল, ‘তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর।’[4] তাদের প্রতিপালক তাদের বিষয়ে ভাল জানেন।[5] তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বলল, ‘আমরা তো নিশ্চয়ই তাদের উপর মসজিদ নির্মাণ করব।’[6]
[1] অর্থাৎ, যেভাবে আমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়েছি ও জাগিয়েছি, অনুরূপভাবে মানুষদেরকেও তাদের ব্যাপারে অবহিত করিয়েছি। কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী এই অবহিত করণ এইভাবে সুসম্পন্ন হয় যে, যখন গুহা অধিবাসীদের একজন রূপার সেই মুদ্রা নিয়ে শহরে গেল, যা ৩০০ বছর পূর্বের রাজা দাকয়ানুসের আমলে প্রচলিত ছিল এবং সেই মুদ্রা সে একজন দোকানদারকে দিল, তখন সে বিস্মিত হল। সে পাশের দোকানদারকেও দেখাল। তারাও আশ্চর্যানিত হল। এদিকে এ লোক তাদেরকে বলছিল যে, আমি এই শহরেরই অধিবাসী, গত কালই এখান থেকে গেছি। কিন্তু এই ‘কাল’এর যে তিন শতাব্দি অতিবাহিত হয়ে গেছে। অতএব মানুষ কিভাবে তার কথা মেনে নিবে? লোকদের এই সন্দেহ হল যে, হতে পারে এ লোক কোন গুপ্ত ধন-ভান্ডার পেয়েছে। পরিশেষে ধীরে ধীরে এ কথা রাজা বা শাসক পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং সে (গুহা অধিবাসীদের) এই সঙ্গীর সাহায্যে গুহা পর্যন্ত যায় এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে। পরে মহান আল্লাহ পুনরায় তাদেরকে সেখানেই মৃত্যু দেন। (ইবনে কাসীর)
[2] অর্থাৎ, গুহার অধিবাসীদের এই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার এবং মৃত্যুর পর আল্লাহর পুনরুত্থানের ওয়াদা সত্য। অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে এই ঘটনার মধ্যে আল্লাহর মহাশক্তির এক নিদর্শন।
[3] إِذْ হয় أَعْثَرْنَا (ক্রিয়াপদের) এর ‘যারফ’ (যার দ্বারা সময়-কাল বুঝানো হয়)। অর্থাৎ, আমি তাদেরকে সেই সময় এদের ব্যাপারে জানালাম, যখন তারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে আপোসে বিতর্কে লিপ্ত ছিল। অথবা এখানে أذْكُرْ ক্রিয়া ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন তারা আপোসে বিতর্ক করছিল।
[4] এ কথা কে বলেছিল? কেউ বলেন, সেই যুগের ঈমানদাররা। কেউ বলেন, বাদশাহ ও তার সাথের লোকেরা যখন সেখানে গিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করল এবং এরপর আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় ঘুম পাড়িয়ে দিলেন, তখন বাদশাহ ও তার সাথীরা বলল যে, এদের হেফাযতের জন্য একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে দেওয়া যাক।
[5] বিতর্ককারীদেরকে মহান আল্লাহ বললেন যে, তাদের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান কেবল আল্লাহই রাখেন।
[6] এই প্রবল দলটি ঈমানদারদের ছিল, না কাফের ও মুশরিকদের? ইমাম শওকানী প্রথম মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং ইমাম ইবনে কাসীর দ্বিতীয় মতকে। কারণ, নেক লোকদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা আল্লাহর পছন্দ নয়। রসূল (সাঃ) বলেছেন, (لَعَنَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ) ‘‘ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের আম্বিয়াদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছে।’’ (বুখারীঃ জানাযা অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়) উমার (রাঃ)-এর খেলাফত কালে ইরাকে দানিয়াল (আঃ)-এর কবর পাওয়া গেল। তিনি নির্দেশ দিলেন যে, গোপনে সেটাকে সাধারণ কবরে পরিণত করা হোক। যাতে মানুষ যেন জানতে না পারে যে, এটা কোন নবীর কবর। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২২. কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল তিনজন তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর এবং কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল পাঁচজন, তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর, গায়েবী বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুন, আমার রবই তাদের সংখ্যা ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা কম সংখ্যক লোকই জানে।(১) সুতরাং সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করবেন না এবং এদের কাউকেও তাদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন না।(২)
(১) এ থেকে জানা যায়, এ ঘটনার পৌনে তিনশো বছর পরে কুরআন নাযিলের সময় এর বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে নাসারাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কাহিনী প্রচলিত ছিল। তবে নির্ভরযোগ্য তথ্যাদি সাধারণ লোকদের জানা ছিল না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মৌখিক বর্ণনার সাহায্যে ঘটনাবলী চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো এবং সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে তাদের বহু বিবরণ গল্পের রূপ নিতো। তবুও যেহেতু তৃতীয় বক্তব্যটির প্রতিবাদ আল্লাহ করেননি তাই ধরে নেয়া যেতে পারে যে, সঠিক সংখ্যা সাতই ছিল। তাছাড়া ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলতেন। আমি সেই কম সংখ্যক লোকদের অন্যতম যারা তাদের সংখ্যা জানে, তারা সংখ্যায় ছিল সাতজন।” [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সংখ্যাটি জানা আসল কথা নয়। বরং আসল জিনিস হচ্ছে এ কাহিনী থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করা। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) অচিরেই তারা বলবে,[1] ‘তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর।’ কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল পাঁচজন; তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।’ ওরা অজানা বিষয়ে অনুমান (তীর) চালায়।[2] আর কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল সাতজন; তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর।’[3] বল, ‘তাদের সংখ্যা আমার প্রতিপালকই ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে।’ [4] সুতরাং সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না[5] এবং তাদের কাউকেও তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করো না।[6]
[1] এ কথার বক্তা এবং বিভিন্ন সংখ্যার ব্যাপারে বিভিন্ন উক্তি পেশকারীরা ছিল নবী (সাঃ)-এর যুগের মু’মিন ও কাফেররা। বিশেষ করে কিতাবধারীরা, যারা যাবতীয় আসমানী কিতাব সম্পর্কে অবগতি ও জ্ঞানের দাবী করত।
[2] অর্থাৎ, জ্ঞান এদের মধ্যে কারো কাছে নেই। যেমন, লক্ষ্যবস্তু না দেখেই কেউ তীর ছুঁড়ে, এরাও অনুরূপ অনুমানের তীর চালিয়ে যাচ্ছে।
[3] মহান আল্লাহ কেবল তিনটি উক্তি বর্ণনা করেছেন। প্রথম দু’টি উক্তিকে رَجْمًا بِالْغَيْبِ (অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমান করা) বলে দুর্বল উক্তি গণ্য করেছেন। এর পর তৃতীয় উক্তির উল্লেখ করেছেন। এ থেকে মুফাসসিরগণ প্রমাণ করেছেন যে, এই অনুমান সঠিক। আর বাস্তবিকই তাদের সংখ্যা এটাই ছিল। (ইবনে কাসীর)
[4] কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলতেন, আমিও সেই অল্প লোকদের অন্তর্ভুক্ত, যারা গুহার অধিবাসী কতজন ছিল তা জানে। তারা ছিল মাত্র সাতজন। যেমন, তৃতীয় উক্তিতে বলা হয়েছে। (ইবনে কাসীর)
[5] অর্থাৎ, এই কথাগুলোর উপরেই ক্ষান্ত থাক, যা তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথবা সংখ্যা নির্দিষ্টীকরণের ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করো না। কেবল এতটা বলে দাও যে, এই নির্দিষ্টীকরণের কোন দলীল নেই।
[6] অর্থাৎ, বিতর্ককারীদেরকে কিছুই জিজ্ঞাসা করো না। কারণ, যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার জ্ঞান জিজ্ঞাসাকারীর চেয়েও অধিক থাকা উচিত। আর এখানে তো ব্যাপার উল্টা। তোমার কাছে তবুও নিশ্চিত জ্ঞানের একটি মাধ্যম -- অহী -- রয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যদের কাছে অনুমান ও ধারণা ব্যতীত কিছুই নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৩. আর কখনই আপনি কোন বিষয়ে বলবেন না, আমি তা আগামীকাল করব,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ‘আমি ওটা আগামীকাল করব’--
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৪. ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ এ কথা না বলে(১) আর যদি ভুলে যান তবে আপনার রবকে স্মরণ করবেন(২) এবং বলবেন, সম্ভবত আমার রব আমাকে এটার চেয়ে সত্যের কাছাকাছি পথ নির্দেশ করবেন।
(১) এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোন কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে “ইনশাআল্লাহ” বাক্যটি যুক্ত করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে জীবিত থাকবে কিনা তা কারো জানা নেই। জীবিত থাকলেও কাজটি করতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুমিনের উচিত মনে মনে এবং মুখে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বললে এভাবে বলা দরকারঃ যদি আল্লাহ চান, তবে আমি এ কাজটি আগামী কাল করব। ইনশাআল্লাহ বাক্যের অর্থ তাই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সুলাইমান ইবনে দাউদ ‘আলাইহিমোস সালাম বললেনঃ আমি আজ রাতে আমার সত্তর জন স্ত্রীর উপর উপগত হব। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- নব্বই জন স্ত্রীর উপগত হব, তাদের প্রত্যেকেই একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাকে ফিরিশতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন যে, বলুনঃ ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তিনি বললেন না। ফলে তিনি সমস্ত স্ত্রীর উপর উপনীত হলেও তাদের কেউই কোন সন্তান জন্ম দিল না। শুধু একজন স্ত্রী একটি অপরিণত সন্তান প্রসব করল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ, সে যদি বলত ইনশাআল্লাহ, তবে অবশ্যই তার ওয়াদা ভঙ্গ হত না। আর তা তার ওয়াদা পূর্ণতায় সহযোগী হত’৷ [বুখারীঃ ৩৪২৪, ৫২৪২,৬৬৩৯, ৭৪৬৯, মুসলিমঃ ১৬৫৪, আহমাদঃ ২/২২৯, ৫০৬]
(২) কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হলো, যখনি আপনি কোন কিছু ভুলে যাবেন তখনই আল্লাহকে স্মরণ করবেন। কারণ, ভুলে যাওয়াটা শয়তানের কারসাজির ফলে ঘটে। আর মহান আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে দূরে তাড়িয়ে দেয় যা পুনরায় স্মরণ করতে সাহায্য করবে। এ অর্থটির সাথে পরবর্তী বাক্যের মিল বেশী। অপর কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতটি পূর্বের আয়াতের সাথে মিলিয়ে অর্থ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ইনশাল্লাহ ভুলে যান তবে যখনই মনে হবে তখনই ইনশাআল্লাহ বলে নেবেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে;[1] যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো[2] ও বলো, ‘সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’[3]
[1] মুফাসসিরগণ বলেন যে, ইয়াহুদীরা নবী (সাঃ)-কে তিনটি কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্মার স্বরূপ কি এবং গুহার অধিবাসী ও যুল-কারনাইন কে ছিল? তাঁরা বলেন যে, এই প্রশ্নগুলোই ছিল এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ। নবী (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আগামী কাল উত্তর দেব। কিন্তু এর পর ১৫ দিন পর্যন্ত জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে এলেন না। অতঃপর যখন এলেন, তখন মহান আল্লাহ ‘ইন শা-আল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিলেন। আয়াতে غَدًا (আগামী কাল) বলতে ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে বা দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ করার সংকল্প করলে, ‘ইন শা-আল্লাহ’ অবশ্যই বলে নিও। কেননা, মানুষ তো জানেই না যে, যা করার সে সংকল্প করে, তা করার তাওফীক সে আল্লাহর ইচ্ছা থেকে পাবে, না পাবে না?
[2] অর্থাৎ, বাক্যালাপ অথবা অঙ্গীকার করার সময় যদি ‘ইনশা-আল্লাহ’ বলতে ভুলে যাও, তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই তা বলে নাও। অথবা প্রতিপালককে স্মরণ করার অর্থ, তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর, তাঁর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।
[3] অর্থাৎ, আমি যা করার সংকল্প করছি, হতে পারে মহান আল্লাহর তার থেকেও উত্তম এবং ফলপ্রসূ কাজের প্রতি আমার দিক নির্দেশনা করবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৫. আর তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ বছর, আরো নয় বছর বেশী।(১)
(১) এ আয়াতে একটি বিরোধপূর্ণ আলোচনার ফয়সালা করা হয়েছে। অর্থাৎ গুহায় নিদ্রামগ্ন থাকার সময়কাল। এ আয়াতের তাফসীরে কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ বাক্যে তিনশ ও নয় বছরের যে সংখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে তা লোকদের উক্তি, এটা আল্লাহর উক্তি নয়। অর্থাৎ এখানে মতভেদকারীদের মত উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে যে, এখানে আল্লাহ্ তা'আলা পক্ষ থেকে তাদের গুহায় অবস্থানের কাল বর্ণনা করা হয়েছে। সে হিসাবে এ আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, এই সময়কাল তিনশ' নয় বছর। এখন কাহিনীর শুরুতে (فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا) বলে যে বিষয়টি সংক্ষেপে বলা হয়েছিল, এখানে যেন তাই বর্ণনা করে দেয়া হল। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশ’ বছর, অতিরিক্ত আরো নয় বছর। [1]
[1] অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এটাকে আল্লাহর উক্তি গণ্য করেছেন। সৌর মাস হিসাবে ৩০০ এবং চান্দ্র মাস হিসাবে ৩০৯ বছর হয়। কোন কোন আলেমের ধারণা হল, এটা তাদেরই কথা, যারা তাদের সংখ্যার ব্যাপারে বিভিন্ন মত পেশ করছিল। আর এর দলীল হল আল্লাহর এই বাণী, ‘‘তুমি বল, তারা কত কাল ছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন।’’ বলা বাহুল্য তাঁরা এরই ভিত্তিতে (আয়াতে) উল্লিখিত মেয়াদের খন্ডন করার অর্থ নিয়ে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ মুফাসসিরদের তফসীর অনুযায়ী এর অর্থ এই যে, আহলে-কিতাব অথবা অন্য কেউ যদি (আয়াতে) বর্ণিত এই সময়-কালের ব্যাপারে বিরোধিতা করে, তবে তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ? তিনি যখন ৩০৯ বছরের কথা বলেছেন, তখন এটাই সঠিক। কেননা, তিনিই জানেন তারা কত বছর গুহায় ছিল?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৬. আপনি বলুন, তারা কত কাল অবস্থান করেছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আসমান ও যমীনের গায়েবের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্ৰোতা! তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) তুমি বল, ‘তারা কত কাল ছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই; তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! [1] তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই; তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না।’
[1] এটা হল আল্লাহর সবকিছু জানার ও খবর রাখার গুণেরই অধিক আলোকপাত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৭. আর আপনি আপনার প্রতি ওহী করা আপনার রব-এর কিতাব থেকে পড়ে শুনান। তাঁর বাক্যসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই। আর আপনি কখনই তাকে ছাড়া অন্য কোন আশ্রয় পাবেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর; [1] তার বাক্য পরিবর্তন করার কেউই নেই। আর তুমি কখনই তিনি ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। [2]
[1] যদিও এই নির্দেশ এই দিক দিয়ে সাধারণ যে, যে জিনিসেরই অহী তোমার প্রতি করা হয়, তা তেলাঅত কর এবং লোকদেরকে তা শিক্ষা দাও, তবুও গুহা অধিবাসীদের ঘটনার শেষে এই নির্দেশের অর্থ এও হতে পারে যে, তাদের ব্যাপারে লোকেরা যা ইচ্ছা তাই বলুক, কিন্তু মহান আল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে তাদের ব্যাপারে যা এবং যতটা বলেছেন, সেটাই হচ্ছে সঠিক। সুতরাং তাই মানুষদেরকে পড়ে শুনিয়ে দাও এবং এর অধিক বর্ণিত অন্যান্য কথা-বার্তার প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করো না।
[2] অর্থাৎ, যদি এর (অহীর) প্রচার না কর এবং এ থেকে বিমুখতা অবলম্বন কর অথবা তার (অহীর) বাক্যাবলীতে কোন হেরফের করার প্রচেষ্টা কর, তবে আল্লাহর হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। সম্বোধন রসূল (সাঃ)-কে করা হলেও এর প্রকৃত লক্ষ্য হল উম্মত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৮. আর আপনি নিজকে ধৈর্যের সাথে রাখবেন তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকে তাদের রবকে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে(১) এবং আপনি দুনিয়ার জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না।(২) আর আপনি তার আনুগত্য করবেন না—যার চিত্তকে আমরা আমাদের স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে ও যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর স্মরণে অনুষ্ঠিত মজলিসে যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে একত্রিত হবে তাদের ব্যাপারে আকাশ থেকে আহবান করে বলা হয় তোমরা যখন তোমাদের মজলিস শেষ করবে তখন তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। আর তোমাদের গোনাহসমূহ সৎকাজে পরিবর্তিত হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৪২]
(২) এ আয়াতটির মূল বক্তব্য সূরা আল-আন’আমের ৫২ নং আয়াতের মতই। সেখানে আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে যে, কাফেরদের আব্দার ছিল, আপনি যদি গরীব মুসলিমদেরকে আপনার মজলিস থেকে দূরে সরিয়ে দেন তবেই আমরা আপনার সাথে বসার কথা চিন্তা করে দেখতে পারি? [দেখুন, মুসলিম: ২৪১৩, মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৬১]
এ ধরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতে তাদের পরামর্শ গ্ৰহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু নিষেধই নয়- নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি নিজেকে তাদের সাথে বেঁধে রাখুন। সম্পর্ক ও মনোযোগ তাদের প্রতি নিবদ্ধ রাখুন। কাজেকর্মে তাদের কাছ থেকেই পরামর্শ নিন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, তারা সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত ও যিকর করে। তাদের কার্যকলাপ একান্তভাবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত। অপরদিকে কাফেরদের মন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল এবং তাদের সমস্ত কার্যকলাপ তাদের খেয়ালখুশীর অনুসারী। এসব অবস্থা মানুষকে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে[1] তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।[2] আর তুমি তার আনুগত্য করো না, যার হৃদয়কে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে। [3]
[1] এটা হল সেই নির্দেশই, যা সূরা আনআমের ৫২নং আয়াতে অতিবাহিত হয়েছে। এখানে লক্ষ্য সেই সাহাবায়ে কেরাম, যাঁরা গরীব ও দুর্বল ছিলেন। কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত লোকেরা যাঁদের সাথে ওঠা-বসা করতে পছন্দ করত না। সা’দ ইবনে আবী অক্কাস বলেন, আমরা ছয়জন সাহাবী রসূল (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমাদের সাথে বিলাল, ইবনে মাসউদ, এবং একজন হুযালী ও দু’জন অন্য সাহাবীও ছিলেন। মক্কার কুরাইশগণ রসূল (সাঃ)-এর কাছে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করল যে, যদি তুমি ঐ লোকদেরকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কাছে উপস্থিত হয়ে তোমার কথা শুনব। নবী করীম (সাঃ)-এর অন্তরে এই খেয়াল জাগল যে, হতে পারে আমার কথা শুনে তাদের মনের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁকে এ রকম করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিলেন। (মুসলিমঃ ফাযায়েলে সাহাবা)
[2] অর্থাৎ, এদেরকে দূরে ঠেলে দিয়ে এই সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালীদেরকে নিজের কাছে টেনে নিও না।
[3] فُرُطًا যদি إفراط থেকে হয়, তবে অর্থ হবে, যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে। আর যদি تفريط থেকে হয়, তবে অর্থ হবে, যার কার্যকলাপ অবহেলাপূর্ণ; যার পরিণাম হল বিনাশ ও ধ্বংস।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২৯. আর বলুন, সত্য তোমাদের রব-এর কাছ থেকে; কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে কুফরী করুক। নিশ্চয় আমরা যালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!(১)
(১) সূরা আল-ফুরকানের ৬৬ নং আয়াতেও অনুরূপ কাফেরদের শেষ আবাসস্থান সম্পর্কে অনুরূপ উক্তি করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) বল, ‘সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করুক।’ আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়; যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে; কত নিকৃষ্ট সেই পানীয় এবং কত নিকৃষ্ট সেই (অগ্নির) আশ্রয়স্থল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩০. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে – আমরা তো তার শ্ৰমফল নষ্ট করি না- যে উত্তমরূপে কাজ সম্পাদন করেছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) যারা বিশ্বাস রাখে ও সৎকর্ম করে, আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি। যে ভালো কর্ম করে, আমি তার কর্মফল নষ্ট করি না। [1]
[1] কুরআনের বর্ণনা-রীতি অনুযায়ী জাহান্নামীদের পর জান্নাতীদের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। যাতে মানুষের মধ্যে জান্নাত লাভের প্রেরণা ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান