بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৫/ আল-হিজর | Al-Hijr | سورة الحجر আয়াতঃ ৯৯ মাক্কী
১৫ : ২১ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا عِنۡدَنَا خَزَآئِنُهٗ ۫ وَ مَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿۲۱﴾
و ان من شیء الا عندنا خزآئنهٗ و ما ننزلهٗ الا بقدر معلوم ﴿۲۱﴾
• আর প্রতিটি বস্তুরই ভান্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।

-আল-বায়ান

• এমন কোন জিনিসই নেই যার ভান্ডার আমার কাছে নেই, কিন্তু আমি সেগুলো আমার জ্ঞান মোতাবেক নির্দিষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি।

-তাইসিরুল

• আমারই কাছে আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার এবং আমি তা সুসম পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।

-মুজিবুর রহমান

• And there is not a thing but that with Us are its depositories, and We do not send it down except according to a known measure.

-Sahih International

২১. আর আমাদের কাছেই আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার এবং আমরা তা পরিজ্ঞাত পরিমানেই নাযিল করে থাকি।(১)

(১) এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সবকিছুর খয়ীনা তো তাঁর কাছেই। خزينة বলা হয় এমন স্থানকে যেখানে মূল্যবান সামগ্ৰী হেফাযত করা হয়। খযীনা বলে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, যত কিছু হওয়া সম্ভব সবই তার কাছে। তিনিই সেগুলোকে পরিমানমত অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এখানে বৃষ্টি বোঝানো হয়েছে। কারণ, বৃষ্টির কারণে সেগুলো উৎপন্ন হয়। [ফাতহুল কাদীর] সুতরাং বায়ু, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণী ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য একটি সীমা নির্ধারিত রয়েছে। কোন কিছুই তাঁর নির্ধারিত সীমার বাইরে কেউ পেতে পারে না। আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, “আর যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করে দিতেন তবে তারা যমীনে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত; কিন্তু তিনি তার ইচ্ছেমত পরিমাণেই নাযিল করে থাকেন। নিশ্চয় তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত ও সর্বদ্ৰষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা: ২৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) আমারই কাছে আছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার[1] এবং আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।

[1] কেউ কেউ خزائن (ভান্ডার) থেকে বৃষ্টি অর্থ নিয়েছেন। কারণ বৃষ্টিই শস্য উৎপাদনের মূল উপাদান। কিন্তু এখানে সঠিক অর্থে পৃথিবীর সকল ভান্ডারকে বুঝানো হয়েছে। যে সবকে মহান আল্লাহ নিজ ইচ্ছানুসারে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিতত্ত্ব দান করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২২ وَ اَرۡسَلۡنَا الرِّیٰحَ لَوَاقِحَ فَاَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسۡقَیۡنٰكُمُوۡهُ ۚ وَ مَاۤ اَنۡتُمۡ لَهٗ بِخٰزِنِیۡنَ ﴿۲۲﴾
و ارسلنا الریح لواقح فانزلنا من السمآء مآء فاسقینكموه و ما انتم لهٗ بخزنین ﴿۲۲﴾
• আর আমি বায়ুকে ঊর্বরকারীরূপে প্রেরণ করি অতঃপর আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করাই। তবে তোমরা তার সংরক্ষণকারী নও।

-আল-বায়ান

• আমি বৃষ্টি-সঞ্চারী বাতাস প্রেরণ করি, অতঃপর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করি আর তা তোমাদের পান করাই, তোমরা তার স্টোর কীপার নও।

-তাইসিরুল

• আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, অতঃপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদেরকে পান করতে দিই; ওর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই।

-মুজিবুর রহমান

• And We have sent the fertilizing winds and sent down water from the sky and given you drink from it. And you are not its retainers.

-Sahih International

২২. আর আমরা বৃষ্টি-গর্ভ বায়ু পাঠাই, তারপর আকাশ হতে পানি নাযিল করে তা তোমাদেরকে পান করতে দেই(১); অথচ তোমরা নিজেরা তা ভাণ্ডারে জমাকারী নও।(২)

(১) আলোচ্য আয়াতে প্রথমে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কুদরত কিভাবে সমুদ্রের পানিকে ভূ-পৃষ্ঠের সর্বত্র পৌছানোর অভিনব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি বাতাস পাঠান, সেগুলো আকাশ থেকে পানি বয়ে নিয়ে যায়। তারপর মেঘের উপর দিয়ে যাওয়ার পরে সেটা এমনভাবে পড়ার মত হয় যেমন দোহানোর আগে জন্তুর দুধ পড়ার অবস্থা হয়। দাহহাক বলেন, আল্লাহ মেঘমালার উপর বায়ু পাঠান তখন সেটা এমনভাবে সেটাকে পরাগায়ণের মত করে যে, তা পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। [ইবন কাসীর] এর ব্যাখ্যা এভাবে করা যেতে পারে যে, তিনি সমুদ্রে বাষ্প সৃষ্টি করেন। বাষ্পে বৃষ্টির উপকরণ বায়ু সৃষ্টি হয় এবং তা উপরে বায়ু প্রবাহিত করে একে পাহাড়সম মেঘমালার পানিভর্তি জাহাজে পরিণত করে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা এসব পানি পৃথিবীর সর্বত্র যেখানে দরকার পৌছে দিয়ে থাকেন।

এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সেখানে যতটুকু পানি দেয়ার আদেশ হয়েছে আল্লাহর ফিরিশতারা এই উড়ন্ত মেঘমালা থেকে সেখানে সে পরিমাণ পানি বর্ষণ করছে। আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ “তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাক। তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর গাছ, দ্রাক্ষা এবং সব রকমের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। [সূরা আন-নাহলঃ ১০–১১] “তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহীরূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি— যা দ্বারা আমি মৃত ভূ-খণ্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ৪৮–৪৯]

(২) এ আয়াতের দুটি অর্থ করা হয়ে থাকেঃ একঃ তোমরা এ পানির কোন ভান্ডারের মালিক নও যে তোমরা চাইলেই তা পাবে। এটা তো শুধু আমার পক্ষ থেকে দান করা। [ফাতহুল কাদীর] এ আয়াতে আল্লাহর কুদরতের ঐ ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ, জীব-জন্তু, পশু-পক্ষী ও হিংস্র জানোয়ারদের জন্য প্রয়োজনানুযায়ী পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। এর ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বত্র, সর্বাবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী পান, গোসল ও ধৌতকরণ এবং খেত-খামার ও উদ্যান সেচের জন্য বিনামূল্যে পানি পেয়ে যায়। কুপ খনন ও পাইপ সংযোজনে কারো কিছু ব্যয় হলে তা সুবিধা অর্জনের মূল্য বৈ নয়। এক ফোঁটা পানির মূল্য পরিশোধ করার ক্ষমতা কারো নেই এবং কারো কাছে তা দাবীও করা হয় না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরা কি ওটা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমি ওটা বর্ষণ করি?” [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৬৮–৬৯]

দুই. দুনিয়াতে আল্লাহ তা'আলা যে পানি নাযিল করান তা নাযিল করার পর তোমরা ইচ্ছে করলেই তা সংরক্ষন করে রাখতে পার না। [ফাতহুল কাদীর] যতক্ষন আল্লাহ তা'আলা সে ব্যবস্থা করে না দিবেন। কারণ তা নাযিল হওয়ার পর নষ্ট করে দেয়া, ব্যবহার উপযোগী না থাকা অসম্ভব কিছু নয়। আল্লাহ বলেন, “আমি ইচ্ছে করলে ওটা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?ঠ [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৭০] আরো বলেনঃ “এবং আমি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; তারপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আমি তাকে অপসারিত করতেও সক্ষম।” [সূরা আল-মুমিনুনঃ ১৮] আরো বলেনঃ “অথবা তার পানি ভূগর্ভে হারিয়ে যাবে এবং তুমি কখনো সেটার সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না।” [সূরা আল-কাহফঃ ৪১] আরো বলেনঃ “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?” [সূরা আল-মুলকঃ ৩০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি[1] অতঃপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদেরকে পান করাই এবং ওর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই। [2]

[1] لواقح বৃষ্টিগর্ভ, বৃষ্টিবাহী বা ভারী বায়ু এই জন্য বলা হয়েছে, যেহেতু বায়ু বৃষ্টি ভর্তি মেঘমালাকে বহন করে। যেমন لقحة এমন গাভীন উটনীকে বলা হয়, যে তার পেটে বাচ্চা বহন করে।

[2] এই বৃষ্টি যা আমি বর্ষণ করি, তাকে তোমরা জমা করে রাখতে সক্ষম নও। এটি আমারই কুদরত ও অনুগ্রহ যে আমি তাকে ঝর্ণা, কূপ ও নদী-নালার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে থাকি। তাছাড়া আমি চাইলে পানিকে এত নীচে পৌছে দিতে পারি যে, ঝর্ণা ও কূপ হতে পানি সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। যেমন কখনও কখনও কোন কোন এলাকায় মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতের কিছু কিছু নমুনা দেখিয়ে থাকেন। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৩ وَ اِنَّا لَنَحۡنُ نُحۡیٖ وَ نُمِیۡتُ وَ نَحۡنُ الۡوٰرِثُوۡنَ ﴿۲۳﴾
و انا لنحن نحیٖ و نمیت و نحن الورثون ﴿۲۳﴾
• আর নিশ্চয় আমি জীবিত করি ও মৃত্যু দেই এবং আমিই ওয়ারিস।

-আল-বায়ান

• আমিই জীবন দেই আর মৃত্যু ঘটাই আর আমিই চূড়ান্ত উত্তরাধিকারী।

-তাইসিরুল

• আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

-মুজিবুর রহমান

• And indeed, it is We who give life and cause death, and We are the Inheritor.

-Sahih International

২৩. আর আমরাই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমরাই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) নিশ্চয় আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৪ وَ لَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَقۡدِمِیۡنَ مِنۡكُمۡ وَ لَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَاۡخِرِیۡنَ ﴿۲۴﴾
و لقد علمنا المستقدمین منكم و لقد علمنا المستاخرین ﴿۲۴﴾
• আর অবশ্যই আমি জানি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং অবশ্যই জানি পরবর্তীদেরকে।

-আল-বায়ান

• তোমাদের মধ্যেকার যারা পূর্বে গত হয়ে গেছে আমি তাদেরকে জানি আর পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি।

-তাইসিরুল

• তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি।

-মুজিবুর রহমান

• And We have already known the preceding [generations] among you, and We have already known the later [ones to come].

-Sahih International

২৪. আর অবশ্যই আমরা তোমাদের মধ্য থেকে যারা অগ্রগামী হয়েছে তাদেরকে জানি এবং অবশ্যই জানি তাদেরকে যারা পশ্চাতে গমনকারী।(১)

(১) এখানে সাহাবী ও তাবেয়ী তাফসীরবিদদের পক্ষ থেকে الْمُسْتَقْدِمِينَ (অগ্রগামী দল) এবং الْمُسْتَأْخِرِينَ (পশ্চাদগামী দল) এর তাফসীর সম্পর্কে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত রয়েছে।

১) কাতাদাহ ও ইকরিমা বলেনঃ যারা পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছে তারা অগ্রগামী। আর যারা এ পর্যন্ত জন্মগ্রহণ করেনি, তারা পশ্চাদগামী।
২) ইবনে আব্বাস ও দাহহাক বলেনঃ যারা মরে গেছে, তারা অগ্রগামী এবং যারা জীবিত আছে, তারা পশ্চাদগামী [ফাতহুল কাদীর]
৩) মুজাহিদ বলেনঃ পূর্ববর্তী উম্মতের লোকেরা অগ্রগামী এবং উম্মতে মুহাম্মদী পশ্চাদগামী। [ফাতহুল কাদীর]
৪) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ ইবাদতকারী ও সংকর্মশীলরা অগ্রগামী আর গোনাহগাররা পশ্চাদগামী। [তাবারী; বাগভী]
৫) সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব, কুরতুবী, শা'বী প্রমুখ তাফসীরবিদের মতে যারা সালাতের কাতারে অথবা জিহাদের সারিতে এবং অন্যান্য সৎকাজে এগিয়ে থাকে তারা অগ্রগামী এবং যারা এসব কাজে পেছনে থাকে এবং দেরী করে, তারা পশ্চাদগামী। [ইবন কাসীর; বাগভী]

বলাবাহুল্য, এসব উক্তির মধ্যে মৌলিক কোন বিরোধ নেই। সবগুলোর সমন্বয় সাধন করা সম্ভবপর। কেননা, আল্লাহ তা'আলার সর্বব্যাপী জ্ঞান উল্লেখিত সর্বপ্রকার অগ্রগামী ও পশ্চাদগামীতে পরিব্যপ্ত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) অবশ্যই আমি তোমাদের অগ্রগামীদেরকে জানি এবং অবশ্যই জানি তোমাদের পশ্চাতগামীদেরকেও।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৫ وَ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ یَحۡشُرُهُمۡ ؕ اِنَّهٗ حَكِیۡمٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵﴾
و ان ربك هو یحشرهم انهٗ حكیم علیم ﴿۲۵﴾
• আর নিশ্চয় তোমার রব তাদেরকে একত্র করবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞানী।

-আল-বায়ান

• অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তিনি সববাইকে একত্রিত করবেন, তিনি মহাবিজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ।

-তাইসিরুল

• তোমার রাব্বই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

-মুজিবুর রহমান

• And indeed, your Lord will gather them; indeed, He is Wise and Knowing.

-Sahih International

২৫. আর নিশ্চয় আপনার রব তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।(১)

(১) অর্থাৎ তার অপার কর্মকুশলতা ও প্রজ্ঞার বলেই তিনি সবাইকে একত্র করবেন। আবার তাঁর জ্ঞানের পরিধি এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে তার নাগালের বাইরে কেউ নেই। বরং পূর্ববতী ও পরবর্তী কোন মানুষের মাটি হয়ে যাওয়া দেহের একটি কণাও তার কাছ থেকে হারিয়ে যেতে পারে না। তাই যে ব্যক্তি আখেরাতের জীবনকে দূরবর্তী ও অবাস্তব মনে করে সে মূলত আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কুশলতা সম্পর্কে বেখবর। আর যে ব্যক্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, মরার পরে যখন আমাদের মৃত্তিকার বিভিন্ন অণু-কণিকা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে তখন আমাদের কিভাবে পুনর্বার জীবিত করা হবে, সে আসলে আল্লাহর জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। এজন্যই যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহর কুদরতের সাথে শির্ক করে। এটা শির্ক ফির রবুবিয়াহ। [দেখুন, আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৬ وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ ﴿ۚ۲۶﴾
و لقد خلقنا الانسان من صلصال من حما مسنون ﴿۲۶﴾
• আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে।

-আল-বায়ান

• আমি কাল শুষ্ক ঠনঠনে মাটির গাড়া থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছি।

-তাইসিরুল

• আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে।

-মুজিবুর রহমান

• And We did certainly create man out of clay from an altered black mud.

-Sahih International

২৬. আর অবশ্যই আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে কালচে মাটি হতে,(১)

(১) মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে কুরআন বলছে, সরাসরি মৃত্তিকার উপাদান থেকে তার সৃষ্টিকর্ম শুরু হয়। (صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ) “শুকনো কালো ঠনঠনে পচা মাটি” শব্দাবলীর মাধ্যমে একথা ব্যক্ত করা হয়েছে। حمأ বলতে আরবী ভাষায় এমন ধরনের কালো কাদা মাটিকে বুঝায় যার মধ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে গেছে, যাকে আমরা নিজেদের ভাষায় পংক বা প্যাঁক বলে থাকি অথবা অন্য কথায় বলা যায়, যা মাটির গোলা বা মন্ড হয়ে গেছে। [সা'দী] مَسْنُون শব্দের দুই অর্থ হয়। একটি অর্থ, পরিবর্তিত, অর্থাৎ এমন পচা, যার মধ্যে পচন ধরার ফলে চকচকে ও তেলতেলে ভাব সৃষ্টি হয়ে গেছে। [সা'দী] আর দ্বিতীয় অর্থ, চিত্রিত। অর্থাৎ যা একটি নির্দিষ্ট আকৃতি ও কাঠামোতে রুপান্তরিত হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] صَلْصَال বলা হয় এমন পচা কাদাকে যা শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠনঠন করে বাজে। [এর জন্য আরও দেখুন, বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর] এ শব্দাবলী থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে, গাজানো কাদা মাটির গোলা বা মন্ড থেকে প্রথমে প্রথম মানুষকে বানানো হয় এবং তা তৈরী হবার পর যখন শুকিয়ে যায় তখন তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেয়া হয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে।[1]

[1] মাটির বিভিন্ন অবস্থার কারণে বিভিন্ন নামে নামকরণ হয়ে থাকে। শুকনো মাটিকে تراب, ভিজে মাটিকে طين, দুর্গন্ধযুক্ত পচা কাদা মাটিকে حمأ مسنون বলা হয়। যেমন তা শুকিয়ে গিয়ে তা থেকে ঠনঠন্ শব্দ বের হলে তাকে صلصال এবং আগুনে পোড়ালে فخَّار বলা হয়। এখানে মহান আল্লাহ মানুষের সৃষ্টির কথা যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে মনে হয় যে, আদমের দেহ প্রথমে দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং যখন তা শুকিয়ে তা থেকে ঠনঠন্ শব্দ বের হতে শুরু করল, তখন তার মধ্যে জীবন দান করেছিলেন। এই صلصال কে কুরআনের অন্যত্র كالفخّار বলা হয়েছে। (সূরা রাহমান ১৪ আয়াত দ্রঃ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৭ وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰهُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ ﴿۲۷﴾
و الجآن خلقنه من قبل من نار السموم ﴿۲۷﴾
• আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে।

-আল-বায়ান

• এর পূর্বে আমি জ্বীনকে আগুনের লেলিহান আগুন থেকে সৃষ্টি করেছি।

-তাইসিরুল

• এর পূর্বে সৃষ্টি করেছি জিনকে, প্রখর শিখাযুক্ত অগ্নি হতে।

-মুজিবুর রহমান

• And the jinn We created before from scorching fire.

-Sahih International

২৭. আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ(১) নির্ধুম আগুন থেকে।

(১) سموم বলা হয় গরম বাতাসকে। [বাগভী] আর আগুনকে সামুমের সাথে সংযুক্ত করার ফলে এর অর্থ হয় আগুনের প্রখর উত্তাপ। [সা’দী] কুরআনের যেসব জায়গায় জিনকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ আয়াত থেকে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হয়ে যায়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) আর এর পূর্বে জীনকে সৃষ্টি করেছি ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে।[1]

[1] جن মানে ঢাকা। জীনকে জীন এই কারণেই বলা হয়, যেহেতু তারা মানুষের চোখে অদৃশ্য থাকে। সূরা রাহমান ১৫নং আয়াতে জিনের সৃষ্টি অগ্নিশিখা থেকে বলা হয়েছে এবং সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসেও ঐ একই কথাই বলা হয়েছে। এই হিসাবে অগ্নিশিখা ও ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি থেকে উদ্দেশ্য একই হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৮ وَ اِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلٰٓئِكَۃِ اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ ﴿۲۸﴾
و اذ قال ربك للملٓئكۃ انی خالق بشرا من صلصال من حما مسنون ﴿۲۸﴾
• আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, ‘আমি কাল শুষ্ক ঠনঠনে মাটির কাদা থেকে মানুষ সৃষ্টি করছি।

-তাইসিরুল

• স্মরণ কর, যখন তোমার রাব্ব মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।

-মুজিবুর রহমান

• And [mention, O Muhammad], when your Lord said to the angels, "I will create a human being out of clay from an altered black mud.

-Sahih International

২৮. আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে কালচে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) স্মরণ কর; যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বললেন, ‘আমি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ২৯ فَاِذَا سَوَّیۡتُهٗ وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ ﴿۲۹﴾
فاذا سویتهٗ و نفخت فیه من روحی فقعوا لهٗ سجدین ﴿۲۹﴾
• ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’।

-আল-বায়ান

• আমি যখন তাকে পূর্ণ মাত্রায় বানিয়ে দেব আর তাতে আমার পক্ষ হতে রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদায় পড়ে যেও।

-তাইসিরুল

• যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাহবনত হও।

-মুজিবুর রহমান

• And when I have proportioned him and breathed into him of My [created] soul, then fall down to him in prostration."

-Sahih International

২৯. অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ থেকে রূহ সঞ্চার করব(১) তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো,(২)

(১) এ থেকে জানা যায়, মানুষের মধ্যে যে রূহ ফুকে দেয়া হয় অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চার করা হয় তা মূলতঃ আল্লাহর সৃষ্টিকৃত রুহ বা নির্দেশ বিশেষ। এ সম্পর্কটি সম্মানের জন্য করা হয়েছে। নতুবা আল্লাহর কোন অংশ সৃষ্টির কারো কাছে নেই। [ফাতহুল কাদীর] মূলত: সৃষ্টির মধ্যে যেসব গুণের সন্ধান পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটিরই উৎস ও উৎপত্তিস্থল আল্লাহরই কোন না কোন গুণ। যেমন হাদীসে বলা হয়েছেঃ “মহান আল্লাহ রহমতকে একশো ভাগে বিভক্ত করেছেন। তারপর এর মধ্য থেকে ৯৯ টি অংশ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন এবং মাত্র একটি অংশ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। এই একটি মাত্র অংশের বরকতেই সমুদয় সৃষ্টি পরস্পরের প্রতি অনুগ্রহশীল হয়। এমনকি যদি একটি প্রাণী তার নিজের সন্তান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ জন্য তার ওপর থেকে নিজের নখর উঠিয়ে নেয় তাহলে এটিও আসলে এ রহমত গুণের প্রভাবেরই ফলশ্রুতি।” [বুখারী ৬০০০, মুসলিমঃ ২৭৫২]

(২) এ সিজদা কোন ইবাদতের সিজদা ছিল না বরং সম্মানসূচক ছিল। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর] যেমনটি আমাদের সালামের বেলায় হয়ে থাকে। যার প্রকৃত স্বরূপ কেমন ছিল তা আমরা জানি না। [আল-মানার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।’ [1]

[1] সিজদার আদেশ আদমের সম্মানের জন্য ছিল, ইবাদতের জন্য ছিল না। আর যেহেতু এটি ছিল আল্লাহর আদেশ, সেহেতু তার আবশ্যকতায় কোন সন্দেহ নেই। তবে এখন শরীয়তে কারও জন্য সিজদা বৈধ নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ : ৩০ فَسَجَدَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ كُلُّهُمۡ اَجۡمَعُوۡنَ ﴿ۙ۳۰﴾
فسجد الملٓئكۃ كلهم اجمعون ﴿۳۰﴾
• অতঃপর, ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল।

-আল-বায়ান

• তখন ফেরেশতারা সবাই সাজদাহ করল।

-তাইসিরুল

• মালাইকা/ফেরেশতাগণ সবাই একত্রে সাজদাহ করল।

-মুজিবুর রহমান

• So the angels prostrated - all of them entirely,

-Sahih International

৩০. অতঃপর ফেরেশতাগণ সবাই একত্রে সিজদা করল,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) তখন ফিরিশতাগণ সবাই একত্রে সিজদা করল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 পরের পাতা »