بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৪/ ইবরাহীম | Ibrahim | إِبْرَاهِيم আয়াতঃ ৫২ মাক্কী

১৪ : ২১

وَ بَرَزُوۡا لِلّٰهِ جَمِیۡعًا فَقَالَ الضُّعَفٰٓؤُا لِلَّذِیۡنَ اسۡتَكۡبَرُوۡۤا اِنَّا كُنَّا لَكُمۡ تَبَعًا فَهَلۡ اَنۡتُمۡ مُّغۡنُوۡنَ عَنَّا مِنۡ عَذَابِ اللّٰهِ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ قَالُوۡا لَوۡ هَدٰىنَا اللّٰهُ لَهَدَیۡنٰكُمۡ ؕ سَوَآءٌ عَلَیۡنَاۤ اَجَزِعۡنَاۤ اَمۡ صَبَرۡنَا مَا لَنَا مِنۡ مَّحِیۡصٍ ﴿۲۱﴾

و برزوا لله جمیعا فقال الضعفٓؤا للذین استكبروا انا كنا لكم تبعا فهل انتم مغنون عنا من عذاب الله من شیء قالوا لو هدىنا الله لهدینكم سوآء علینا اجزعنا ام صبرنا ما لنا من محیص ﴿۲۱﴾
আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে, অতঃপর যারা অহঙ্কার করেছে দুর্বলরা তাদেরকে বলবে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। সুতরাং তোমরা কি আল্লাহর আযাবের মোকাবেলায় আমাদের কোন উপকারে আসবে’? তারা বলবে, ‘যদি আল্লাহ আমাদের হিদায়াত করতেন, তাহলে আমরাও তোমাদের হিদায়াত করতাম, এখন আমরা অস্থির হই কিংবা সবর করি, উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান, আমাদের পালানোর কোন জায়গা নেই’।

-আল-বায়ান

তারা সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন যারা অহঙ্কার করেছিল তাদেরকে দুর্বলরা বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, কাজেই এখন আল্লাহর শাস্তির কোন কিছু আমাদের থেকে তোমরা দূর করতে পার কি?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সত্যপথে পরিচালিত করলে আমরাও অবশ্যই তোমাদেরকে সত্য পথ দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যহারা হই কিংবা ধৈর্যধারণ করি দু’টোই আমাদের জন্য সমান, আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’

-তাইসিরুল

সবাই আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবেই। যারা অহংকার করত, দুর্বলেরা তাদেরকে বলবেঃ আমরাতো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা আল্লাহর শাস্তি হতে কি আমাদেরকে কিছু মাত্র রক্ষা করতে পারবে? তারা বলবেঃ আল্লাহ আমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করতাম; এখন আমাদের ধৈর্যচ্যূত হওয়া অথবা ধৈর্যশীল হওয়া একই কথা; আমাদের কোন নিস্কৃতি নেই।

-মুজিবুর রহমান

And they will come out [for judgement] before Allah all together, and the weak will say to those who were arrogant, "Indeed, we were your followers, so can you avail us anything against the punishment of Allah?" They will say, "If Allah had guided us, we would have guided you. It is all the same for us whether we show intolerance or are patient: there is for us no place of escape."

-Sahih International

২১. আর তারা সবাই আল্লাহর কাছে প্রকাশিত হবে।(১) তখন দুর্বলেরা যারা অহংকার করত তাদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি হতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে?(২) তারা বলবে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই- উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান; আমাদের কোন পালানোর জায়গা নেই।(৩)

(১) মূল শব্দ ‘বারাযা’। ‘বারাযা’ মানে সামনে উন্মুক্ত হওয়া। প্রকাশ হয়ে যাওয়া। [কুরতুবী] অর্থাৎ তারা কবর থেকে উন্মুক্ত হয়ে আল্লাহর সামনে হাযির হবে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর] প্রকৃতপক্ষে বান্দা তো সবসময় তার রবের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু তারা যেহেতু গোনাহ করার সময় মনে করে যে, আল্লাহর কাছে সেটা গোপন থাকবে, তাই আল্লাহ তাদের সে সন্দেহ অপনোদন করে দিলেন। [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে উন্মুক্ত হওয়ার অর্থ, কিয়ামতের দিন নেককার-বদকার সমস্ত সৃষ্টির এক প্রবল প্রতাপশালী আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। তারা সেখানে এমন এক খোলা ভূমিতে একত্রিত হবে যেখানে কেউ নিজেকে গোপন করার কোন সুযোগ পাবে না। [ইবন কাসীর] এ জন্য অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “মানুষ উন্মুক্তভাবে উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে যিনি এক, প্রবল প্রতাপশালী।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮]

(২) এটি এমন সব লোকের জন্য সতর্কবাণী যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালেমদের আনুগত্য করে, তাদের কথামত একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা থেকে দূরে ছিল, তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেনি, তাদের জানানো হচ্ছে, আজ যারা তোমাদের নেতা হয়ে আছে আগামীকাল এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতম নিস্কৃতিও দিতে পারবে না। কাজেই আজই ভেবে নাও, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে চলছো অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছে তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।

(৩) আয়াতদৃষ্টে মনে হয়, এ ঝগড়াটি জাহান্নামে প্রবেশের পরে হবে। যেমন, কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ ধরনের বর্ণনা এসেছে। বলা হয়েছে, “যখন যাদের অনুসরণ করা হয়েছে তারা, যারা অনুসরণ করেছে তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে। আর তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, আর যারা অনুসরণ করেছিল তারা বলবে, ‘হায়! যদি একবার আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হতো তবে আমরাও তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন তারা আমাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এভাবে আল্লাহ তাদের কার্যাবলী তাদেরকে দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ। আর তারা কখনো আগুন থেকে বহির্গমণকারী নয় [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৬৬–১৬৭]

আরও এসেছে, “আর যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন দুর্বলেরা যারা অহংকার করেছিল তাদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম সুতরাং তোমরা কি আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ গ্রহণ করবে? অহংকারীরা বলবে, নিশ্চয় আমরা সকলেই এতে রয়েছি, নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের বিচার করে ফেলেছেন [সূরা গাফিরঃ ৪৭–৪৮] আরও বলেন, “অবশেষে যখন সবাই তাতে একত্র হবে, তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববতীদের সম্পর্কে বলবে, হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল; কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন। আল্লাহ বলবেন, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না। আর তাদের পূর্ববতীরা পরবর্তীদেরকে বলবে, আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কাজেই তোমরা যা অর্জন করেছিলে, তার জন্য শাস্তি ভোগ কর।” [সূরা আল-আরাফঃ ৩৮–৩৯]

আরও এসেছে, “যেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলট-পালট করা হবে সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম আর রাসূলকে মানতাম তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; ‘হে আমাদের রব! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে দিন মহাঅভিসম্পাত। [সূরা আল-আহযাবঃ ৬৬–৬৮]

কিন্তু বিভিন্ন আয়াতদৃষ্টে মনে হয় যে, হাশরের ময়দানেও তারা ঝগড়া করবে, যেমন কুরআনের অন্যত্র এসেছে, “হায়! আপনি যদি দেখতেন যালিমদেরকে যখন তাদের রবের সামনে দাঁড় করানো হবে তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম। যারা ক্ষমতাদর্পী ছিল তারা, যাদেরকে দূর্বল মনে করা হত তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী।

যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবে, প্রকৃত পক্ষে তোমরাই তো দিনরাত চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, যখন তোমরা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহর সাথে কুফর করি এবং তার জন্য সমকক্ষ (শির্ক) স্থাপন করি। আর যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং যারা কুফরী করেছে আমরা তাদের গলায় শৃংখল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে। [সূরা সাবাঃ ৩১–৩৩] এ ঝগড়াটি হবে হাশরের মাঠে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) সবাই আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে;[1] যারা অহংকার করত দুর্বলেরা তাদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা কি আল্লাহর শাস্তি হতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম; এখন আমাদের ধৈর্যচ্যুত হওয়া অথবা ধৈর্যশীল হওয়া একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’[2]

[1] অর্থাৎ, সকলেই হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, কেউ কোথাও লুকাতে পারবে না।

[2] কতিপয় উলামা বলেন যে, জাহান্নামীরা পরস্পর বলাবলি করবে, ‘জান্নাতীরা জান্নাত এ কারণে পেয়েছে যে, তারা আল্লাহর সমীপে কাকুতি-মিনতি ও রোদন করত, এসো আমরাও আল্লাহর সমীপে কান্নাকাটি করি।’ অতএব তারা অত্যধিক কান্নাকাটি করবে, কিন্তু এর কোন ফল হবে না। অতঃপর বলবে, ‘জান্নাতীরা জান্নাত ধৈর্যের কারণে পেয়েছে, চলো আমরাও ধৈর্য ধারণ করি।’ অতএব তারা পরিপূর্ণ ধৈর্য প্রদর্শন করবে, কিন্তু তাতেও কোন লাভ হবে না। তখন তারা বলবে, ‘আমরা ধৈর্য ধারণ করি অথবা কান্নাকাটি করি, নিষ্কৃতির কোন পথ নেই।’ এই পারস্পরিক কথোপকথন জাহান্নামের মধ্যে হবে। কুরআন কারীমের মধ্যে এ বিষয়টি আরো কয়েক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন; সূরা মু‘মিন ৪৭-৪৮, সূরা আ‘রাফ ৩৮-৩৯, সূরা আহযাব ৬৬-৬৮ নং আয়াত। এ ছাড়া তারা পরস্পর ঝগড়াও করবে এবং একে অপরকে পথভ্রষ্ট করার অপবাদ দিবে। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, ঝগড়া হাশরের ময়দানে হবে। মহান আল্লাহ এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা সাবা’ ৩১-৩৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২২

وَ قَالَ الشَّیۡطٰنُ لَمَّا قُضِیَ الۡاَمۡرُ اِنَّ اللّٰهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ الۡحَقِّ وَ وَعَدۡتُّكُمۡ فَاَخۡلَفۡتُكُمۡ ؕ وَ مَا كَانَ لِیَ عَلَیۡكُمۡ مِّنۡ سُلۡطٰنٍ اِلَّاۤ اَنۡ دَعَوۡتُكُمۡ فَاسۡتَجَبۡتُمۡ لِیۡ ۚ فَلَا تَلُوۡمُوۡنِیۡ وَ لُوۡمُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ ؕ مَاۤ اَنَا بِمُصۡرِخِكُمۡ وَ مَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُصۡرِخِیَّ ؕ اِنِّیۡ كَفَرۡتُ بِمَاۤ اَشۡرَكۡتُمُوۡنِ مِنۡ قَبۡلُ ؕ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۲۲﴾

و قال الشیطن لما قضی الامر ان الله وعدكم وعد الحق و وعدتكم فاخلفتكم و ما كان لی علیكم من سلطن الا ان دعوتكم فاستجبتم لی فلا تلومونی و لوموا انفسكم ما انا بمصرخكم و ما انتم بمصرخی انی كفرت بما اشركتمون من قبل ان الظلمین لهم عذاب الیم ﴿۲۲﴾
আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না, বরং নিজদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব’ ।

-আল-বায়ান

বিচার-ফায়সালা সম্পন্ন হলে শয়ত্বান বলবে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ওয়া‘দা করেছিলেন তা ছিল সত্য ওয়া‘দা। আর আমিও তোমাদেরকে ওয়া‘দা দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তার খেলাপ করেছি, তোমাদের উপর আমার কোনই প্রভাব ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান জানিয়েছিলাম আর তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজেদেরকেই তিরস্কার কর, এখানে না আমি তোমাদের ফরিয়াদ শুনতে পারি, না তোমরা আমার ফরিয়াদ শুনতে পার। ইতোপূর্বে তোমরা যে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি। যালিমদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি।’

-তাইসিরুল

যখন সব কিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শাইতান বলবেঃ আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিনি; আমারতো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিলনা, আমি শুধু তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে; সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করনা, তোমরা তোমাদের প্রতিই দোষারোপ কর; আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও; তোমরা যে পূর্বে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই; যালিমদের জন্যতো বেদনাদায়ক শাস্তি আছেই।

-মুজিবুর রহমান

And Satan will say when the matter has been concluded, "Indeed, Allah had promised you the promise of truth. And I promised you, but I betrayed you. But I had no authority over you except that I invited you, and you responded to me. So do not blame me; but blame yourselves. I cannot be called to your aid, nor can you be called to my aid. Indeed, I deny your association of me [with Allah] before. Indeed, for the wrongdoers is a painful punishment."

-Sahih International

২২. আর যখন বিচারের কাজ সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি(১) আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে ডাকছিলাম তাতে তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, তোমরা নিজেদেরই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। তোমরা যে আগে আমাকে আল্লাহর শরীক করেছিলে(২) আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ সত্যবাদী ছিলেন এবং আমি ছিলাম মিথ্যেবাদী। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র।” [সূরা আন-নিসাঃ ১২০] আরও বলেন, “আর তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও, আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান ছলনা ছাড়া তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতিই দেয় না।” [সূরা আল-ইসরা: ৬৪]

(২) এখানে আবার বিশ্বাসগত শির্কের মোকাবিলায় শির্কের একটি স্বতন্ত্র ধারা অর্থাৎ কর্মগত শির্কের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। যাকে শির্ক ফিত তা'আহ বা আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক বলা হয়। একথা সুস্পষ্ট, বিশ্বাসগত দিক দিয়ে শয়তানকে কেউই আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে শরীক করে না এবং কেউ তার পূজা, আরাধনা ও বন্দেগী করে না। সবাই তাকে অভিশাপ দেয়। তবে তার আনুগত্য ও দাসত্ব এবং চোখ বুজে বা খুলে তার পদ্ধতির অনুসরণ অবশ্যি করা হচ্ছে। এটিকেই এখানে শির্ক বলা হয়েছে। কুরআনে কর্মগত শির্কের একাধিক প্রমাণ রয়েছে। “আহবার” (উলামা) ও “রাহিব” (সংসার বিরাগী সন্ন্যাসী) দেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। [সূরা আত-তাওবাঃ ৩১] প্রবৃত্তির কামনা বাসনার পূজারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। [সূরা আল ফুরকানঃ ৪৩] নাফরমান বান্দাদের সম্পর্কে এসেছে, “তারা শয়তানের ইবাদাত করতে থেকেছে। [সূরা ইয়াসীনঃ ৬০]

এ থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, আল্লাহর অনুমোদন ছাড়াই অথবা আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কোন গাইরুল্লাহর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে থাকাও শির্ক। শরীআতের দৃষ্টিতে আকীদাগত মুশরিকদের জন্য যে বিধান তাদের জন্য সেই একই বিধান, কোন পার্থক্য নেই। [দেখুন, আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস, আশ-শির্ক ফিল উলুহিয়্যাহ ফিত তা'আহ অধ্যায়]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) যখন সব কিছুর ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে,[1] ‘আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি। আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম; কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিনি;[2] আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না,[3] আমি শুধু তোমাদেরকে আহবান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে।[4] সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করো না, তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতিই দোষারোপ কর।[5] আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও;[6] তোমরা যে পূর্বে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে, সে কথা তো আমি মানিই না।’[7] অত্যাচারীদের জন্য তো বেদনাদায়ক শাস্তি আছে। [8]

[1] অর্থাৎ, ঈমানদারগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে, তখন শয়তান জাহান্নামীদেরকে বলবে।

[2] আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি নবীগণের মাধ্যমে দিয়েছিলেন যে, মুক্তি আমার নবীগণের প্রতি ঈমান আনার উপর নির্ভরশীল, তা সত্য। পক্ষান্তরে আমার সমূহ প্রতিশ্রুতি ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা ছিল। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا﴾ অর্থাৎ, শয়তান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং আশা প্রদান করে। কিন্তু শয়তানের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা মাত্র। (সূরা নিসা ১২০ আয়াত)

[3] দ্বিতীয় এই যে, আমার কথার না কোন দলীল-প্রমাণ ছিল, আর না আমার পক্ষ থেকে তোমাদের উপর কোন চাপই ছিল।

[4] হ্যাঁ, শুধু আমার ডাক ও আহবান ছিল। আর তোমরা আমার সেই দলীলহীন আহবান মেনে নিয়েছিলে এবং নবীগণের পরিপূর্ণ দলীল-প্রমাণ সমর্থিত কথাকে খন্ডন ও প্রত্যাখ্যান করেছিলে।

[5] কেননা সম্পূর্ণ দোষ তো তোমাদেরই, তোমরা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করনি, স্পষ্ট দলীল-প্রমাণকে তোমরা উপেক্ষা করেছিলে এবং শুধুমাত্র দলীলহীন দাবীর অনুসরণ করেছিলে।

[6] অর্থাৎ, না আমি তোমাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারব, যাতে তোমরা গ্রেপ্তার হয়েছ, আর না তোমরা আমাকে সেই শাস্তি ও ক্রোধ থেকে বাঁচাতে পারবে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উপর এসেছে।

[7] আমি এ কথাও অস্বীকার করি যে, আমি আল্লাহর শরীক বা অংশীদার। যদি তোমরা আমাকে অথবা অন্য কাউকে শরীক মনে করতে, তাহলে এটা তোমাদের নিজেদেই ভুল ও মূর্খতা। কেননা যে আল্লাহ নিখিল বিশ্ব সৃষ্টি করে তা পরিচালনাও করতেন, তাঁর শরীক কেউ কি করে হতে পারে?

[8] কতিপয় উলামা বলেন যে, এ উক্তিটিও শয়তানেরই এবং এটি তার উল্লিখিত বক্তব্যের সম্পূরক। পক্ষান্তরে কতিপয় উলামা বলেন, শয়তানের কথা مِن قَبل ‘---মানিই না’ পর্যন্ত শেষ। পরের এই বাক্যটি মহান আল্লাহর কথা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৩

وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ؕ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ﴿۲۳﴾

و ادخل الذین امنوا و عملوا الصلحت جنت تجری من تحتها الانهر خلدین فیها باذن ربهم تحیتهم فیها سلم ﴿۲۳﴾
আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।

-আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।

-তাইসিরুল

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদেরকে দাখিল করা হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী হবে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।

-মুজিবুর রহমান

And those who believed and did righteous deeds will be admitted to gardens beneath which rivers flow, abiding eternally therein by permission of their Lord; and their greeting therein will be, "Peace!"

-Sahih International

২৩. আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।(১)

(১) এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতবাসীদের পরস্পর সাদর সম্ভাষন হবে সালাম। [আদওয়াউল বায়ান] আবার কারও কারও মতে, এ সালাম আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে। [বাগভী] অন্যত্র আছে যে, ফেরেশতাগণ জান্নাতবাসীদেরকে এ শব্দে সাদর সম্ভাষণ জানাবে। যেমনঃ “যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে ও এর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি ‘সালাম', তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।” [সূরা আয-যুমারঃ ৭৩] “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও, এবং ফিরিশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে, এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত ভাল এ পরিণাম! [সূরা আর-রাদঃ ২৩–২৪] “তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। [সূরা আল-ফুরকানঃ ৭৫] “সেখানে তাদের ধ্বনি হবেঃ হে আল্লাহ্! আপনি মহান, পবিত্র এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে, সালাম’ এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ সকল প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহর প্রাপ্য।” [সূরা ইউনুসঃ ১০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে;[1] সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। [2]

[1] এটা দুর্ভাগ্যবান ও কাফেরদের মুকাবেলায় সৌভাগ্যবান ও ঈমানদারদের বর্ণনা। এদের উল্লেখ তাদের সাথে এই জন্য করা হয়েছে যে, যাতে মানুষের মধ্যে ঈমানদারদের মত চরিত্র গ্রহণ করার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়।

[2] অর্থাৎ, তাদের পরস্পরের উপহার হবে একে অপরকে সালাম করা। এ ছাড়া ফিরিশতাবর্গও প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদেরকে সালাম পেশ করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৪

اَلَمۡ تَرَ كَیۡفَ ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا كَلِمَۃً طَیِّبَۃً كَشَجَرَۃٍ طَیِّبَۃٍ اَصۡلُهَا ثَابِتٌ وَّ فَرۡعُهَا فِی السَّمَآءِ ﴿ۙ۲۴﴾

الم تر كیف ضرب الله مثلا كلمۃ طیبۃ كشجرۃ طیبۃ اصلها ثابت و فرعها فی السمآء ﴿۲۴﴾
তুমি কি দেখ না, আল্লাহ কীভাবে উপমা পেশ করেছেন? কালিমা তাইয়েবা, যা একটি ভাল বৃক্ষের ন্যায়, যার মূল সুস্থির আর শাখা-প্রশাখা আকাশে।

-আল-বায়ান

তুমি কি দেখ না কীভাবে আল্লাহ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন? উৎকৃষ্ট বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট গাছের ন্যায় যার মূল সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত আর শাখা-প্রশাখা আকাশপানে বিস্তৃত।

-তাইসিরুল

তুমি কি লক্ষ্য করনা আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎ বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ যার মূল সুদৃঢ় এবং যার প্রশাখা উর্ধ্বে বিস্তৃত ।

-মুজিবুর রহমান

Have you not considered how Allah presents an example, [making] a good word like a good tree, whose root is firmly fixed and its branches [high] in the sky?

-Sahih International

২৪. আপনি কি লক্ষ্য করেন না আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎবাক্যের(১) তুলনা উৎকৃষ্ট গাছ যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা উপরে বিস্তৃত,(২)

(১) মূল আয়াতে (كَلِمَةً طَيِّبَةً) বলা হয়েছে। “কালেমা তাইয়েবা”র শাব্দিক অর্থ “পবিত্র কথা।” পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এ কালেমা। [বাগভী] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ (كَلِمَةً طَيِّبَةً) হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেয়া আর (كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ) হলো মু'মিন। [ইবন কাসীর] এরপর (أَصْلُهَا ثَابِتٌ) এর অর্থ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুমিনের অন্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত। (وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ) অর্থ, এ কালেমার কারণে এর মাধ্যমে মুমিনের আমল আসমানে উত্থিত হয়। [ইবন কাসীর] আর এ তাফসীরই দাহহাক, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, ইকরিমাহ এবং কাতাদা সহ অনেক মুফাসসেরীন থেকে বর্ণিত হয়েছে। যার সারকথা হলো, উত্তম বৃক্ষ হলো মুমিন যার তুলনা খেজুর গাছের সাথে বিভিন্ন হাদীসে দেয়া হয়েছে। খেজুর গাছ শুধু ভাল কিছুই উপহার দেয়। তেমনি ঈমানদার, শুধু ভালকাজই তার কাছ থেকে আসমানে উঠতে থাকে। সে ভাল কথা, ভাল কাজ করেই যেতে থাকে আর তা দুনিয়াতে হলেও তার ফলাফল নির্ধারিত হয় আকাশে। [ইবন কাসীর]

(২) এ আয়াতে মুমিন ও তার ক্রিয়াকর্মের উদাহরণে এমন একটি বৃক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার কাণ্ড মজবুত ও সুউচ্চ এবং শিকড় মাটির গভীরে প্রেথিত। ভূগর্ভস্থ ঝর্ণা থেকে সেগুলো সিক্ত হয়। গভীর শিকড়ের কারণে বৃক্ষটি এত শক্ত যে, দমকা বাতাসে ভূমিসাৎ হয়ে যায় না। ভূপৃষ্ঠ থেকে উর্ধ্বে থাকার কারণে এর ফল ময়লা ও আবর্জনা থেকে মুক্ত। এ বৃক্ষের দ্বিতীয় গুণ এই যে, এর শাখা উচ্চতায় আকাশ পানে ধাবমান। তৃতীয় গুণ এই যে, এর ফল সবসময় সর্বাবস্থায় খাওয়া যায়। এ বৃক্ষটি কি এবং কোথায়, এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। সর্বাধিক তথ্যনির্ভর উক্তি এই যে, এটি হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ। [আত-তাফসীরুস সহীহ] এর সমর্থন অভিজ্ঞতা এবং চাক্ষুষ দেখা দ্বারাও হয় এবং বিভিন্ন হাদীস থেকেও পাওয়া যায়। খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড যে উচ্চ ও মজবুত, তা প্রত্যক্ষ বিষয়-সবাই জানে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ কুরআনে উল্লেখিত পবিত্র বৃক্ষ হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ এবং অপবিত্র বৃক্ষ হচ্ছে হানযল তথা মাকাল বৃক্ষ। [তিরমিযিঃ ৩১১৯, নাসায়ীঃ ২৮২]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ‘একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। জনৈক ব্যক্তি তার কাছে খেজুর বৃক্ষের শাস নিয়ে এল। তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে একটি প্রশ্ন করলেনঃ বৃক্ষসমূহের মধ্যে একটি বৃক্ষ হচ্ছে মর্দে-মুমিনের দৃষ্টান্ত। (বুখারীর রেওয়ায়েত মতে এ স্থলে তিনি আরো বললেন যে, কোন ঋতুতেই এ বৃক্ষের পাতা ঝরে না।) বল, এ কোন বৃক্ষ? ইবনে উমর বললেনঃ আমার মন চাইল যে, বলে দেই- খেজুর বৃক্ষ। কিন্তু মজলিশে আবু বকর, উমর ও অন্যান্য প্রধান প্রধান সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে চুপ দেখে আমি বলার সাহস পেলাম না। এরপর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এ হচ্ছে খেজুর বৃক্ষ। [বুখারীঃ ৭২, ১৩১, ২২০৯, ৪৬৯৮, মুসলিমঃ ২৮১১, মুসনাদে আহমাদঃ ২/১২, ২/৬১]

এ বৃক্ষ দ্বারা মুমিনের দৃষ্টান্ত দেয়ার কারণ এই যে, কালেমায়ে তাইয়্যেবার মধ্যে ঈমান হচ্ছে মজবুত ও অনড় শিকড়বিশিষ্ট, দুনিয়ার বিপদাপদ একে টলাতে পারে না। সাহাবী ও তাবেয়ী; বরং প্রতি যুগের খাঁটি মুসলিমদের দৃষ্টান্ত বিরল নয়, যারা ঈমানের মোকাবেলায় জান, মাল ও কোন কিছুর পরওয়া করেনি। দ্বিতীয় কারণ তাদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। তারা দুনিয়ার নোংরামী থেকে সবসময় দূরে সরে থাকেন যেমন ভূপৃষ্ঠের ময়লা-আবর্জনা উচু বৃক্ষকে স্পর্শ করতে পারে না। এ দুটি গুণ হচ্ছে (أَصْلُهَا ثَابِتٌ) এর দৃষ্টান্ত। তৃতীয় কারণ এই যে, খেজুর বৃক্ষের শাখা যেমন আকাশের দিকে উচ্চে ধাবমান, মুমিনের ঈমানের ফলাফলও অর্থাৎ সৎকর্মও তেমনি আকাশের দিকে উত্থিত হয়। কুরআন বলেঃ (إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ) [সূরা ফাতিরঃ ১০]- অর্থাৎ পবিত্র বাক্যাবলী আল্লাহ্ তা'আলার যেসব যিকর, আল্লাহর দরবারে পৌছতে থাকে।

চতুর্থ কারণ এই যে, খেজুর বৃক্ষের ফল যেমন সব সময় সর্বাবস্থায় এবং সব ঋতুতে দিবারাত্র খাওয়া হয়, মুমিনের সৎকর্মও তেমনি সবসময়, সর্বাবস্থায় এবং সব ঋতুতে অব্যাহত রয়েছে এবং খেজুর বৃক্ষের প্রত্যেকটি অংশই যেমন উপকারী, তেমনি মুমিনের প্রত্যেক কথা ও কাজ, ওঠাবসা এবং এসবের প্রতিক্রিয়া সমগ্র বিশ্বের জন্য উপকারী ও ফলদায়ক। তবে শর্ত এই যে, আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিক্ষা অনুযায়ী হতে হবে। [দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, ইলামুল মুওয়াক্কেয়ীন, ১/১৩৩; আল-বদর, তাআম্মুলাত কী মুমসালাতিল মুমিন বিন নাখলাহ] উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেল যে, (تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ) বাক্যে أُكُلٌ শব্দের অর্থ হচ্ছে ফল ও খাদ্যোপযোগী বস্তু এবং حِين শব্দের অর্থ প্রতিমুহুর্ত। এটিই সবচেয়ে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [তাবারী] যদিও এখানে অন্যান্য মতও রয়েছে। [দেখুন, তাবারী; বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎবাক্যের উপমা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ; যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৫

تُؤۡتِیۡۤ اُكُلَهَا كُلَّ حِیۡنٍۭ بِاِذۡنِ رَبِّهَا ؕ وَ یَضۡرِبُ اللّٰهُ الۡاَمۡثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَذَكَّرُوۡنَ ﴿۲۵﴾

تؤتی اكلها كل حین باذن ربها و یضرب الله الامثال للناس لعلهم یتذكرون ﴿۲۵﴾
সেটি তার রবের অনুমতিতে সব সময় ফল দান করে; আর আল্লাহ মানুষের জন্য নানা দৃষ্টান্ত প্রদান করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

-আল-বায়ান

তার প্রতিপালকের হুকুমে তা সব সময় ফল দান করে। মানুষদের জন্য আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

-তাইসিরুল

যা প্রত্যেক মওসুমে ফল দান করে তার রবের অনুমতিক্রমে, এবং আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

-মুজিবুর রহমান

It produces its fruit all the time, by permission of its Lord. And Allah presents examples for the people that perhaps they will be reminded.

-Sahih International

২৫. যা সব সময়ে তার ফলদান করে তার রবের অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ্‌ মানুষের জন্য উপমাসমূহ পেশ করে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহন করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) যা তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অহরহ ফল দান করে।[1] আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা বর্ণনা করে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

[1] এর অর্থ এই যে, মু‘মিনদের উদাহরণ ঐ (বারমেসে ফলদার) গাছের ন্যায়, যে গাছ শীত-গ্রীষ্ম সব সময় ফল দান করে। অনুরূপ মু‘মিনদের সৎ কার্যাবলী দিবানিশির ক্ষণে ক্ষণে আকাশের দিকে (আল্লাহর কাছে) নিয়ে যাওয়া হয়। كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ (সৎবাক্য) থেকে উদ্দেশ্য, ইসলাম অথবা কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং شَجَرَة طَيِّبَة (উৎকৃষ্ট বৃক্ষ) বলতে খেজুর বৃক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যেমন সহীহ হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত। (বুখারীঃ কিতাবুল ইলম, মুসলিম, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৬

وَ مَثَلُ كَلِمَۃٍ خَبِیۡثَۃٍ كَشَجَرَۃٍ خَبِیۡثَۃِۣ اجۡتُثَّتۡ مِنۡ فَوۡقِ الۡاَرۡضِ مَا لَهَا مِنۡ قَرَارٍ ﴿۲۶﴾

و مثل كلمۃ خبیثۃ كشجرۃ خبیثۃ اجتثت من فوق الارض ما لها من قرار ﴿۲۶﴾
আর অপবিত্র বাক্যের উপমা নিকৃষ্ট বৃক্ষের ন্যায়, যাকে মাটির উপর থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয়েছে, যার কোন স্থিতি নেই।

-আল-বায়ান

মন্দ বাক্য মন্দ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনীয়, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগেই যাকে মূল থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।

-তাইসিরুল

কু-বাক্যের তুলনা এক মন্দ বৃক্ষ যার মূল ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।

-মুজিবুর রহমান

And the example of a bad word is like a bad tree, uprooted from the surface of the earth, not having any stability.

-Sahih International

২৬. আর অসৎবাক্যের তুলনা এক মন্দ গাছ যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্নকৃত, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।(১)

(১) (كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ) এটি কালেমা তাইয়্যেবার বিপরীত শব্দ। এখানে কাফেরদের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে খারাপ বৃক্ষ দ্বারা। কালেমায়ে তাইয়্যেবার অর্থ যেমন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ ঈমান, তেমনি কালেমায়ে খবীসার অর্থ কুফর বাক্য ও কুফর কাজকর্ম। [কুরতুবী] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর তাফসীরে (كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ) অর্থাৎ খারাপ বৃক্ষের উদ্দিষ্ট অর্থ হানযল বৃক্ষ সাব্যস্ত করা হয়েছে। [কুরতুবী] কেউ কেউ রসুন ইত্যাদি বলেছেন। [বাগভী] কুরআনে এই খারাপ বৃক্ষের অবস্থা এরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, এর শিকড় ভূগর্ভের অভ্যন্তরে বেশী যেতে পারে না। ফলে যখন কেউ ইচ্ছা করে, এ বৃক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করতে পারে। [কুরতুবী] কাফেরের কাজকর্মকে এ বৃক্ষের সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে, ইবন আব্বাস বলেন, শির্কের কোন মূল নেই, কোন প্রমাণ নেই যে, কাফের তা ধারণ করবে। আর আল্লাহ শির্ক মিশ্রিত কোন আমল কবুল করেন না। [তাবারী] অর্থাৎ কাফেরের দ্বীনের বিশ্বাসের কোন শিকড় ও ভিত্তি নেই। অল্পক্ষণের মধ্যেই নড়বড়ে হয়ে যায়। অনুরূপভাবে এ বৃক্ষের ফল-ফুল অর্থাৎ কাফেরের ক্রিয়াকর্ম আল্লাহর দরবারে ফলদায়ক নয়। গ্রহণযোগ্য নয়। [বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) পক্ষান্তরে কুবাক্যের উপমা এক মন্দ বৃক্ষ; যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।[1]

[1] كَلِمَة خَبِيْثَة (কুবাক্য) থেকে কুফরী এবং شَجَرَة خَبِيْثَة (মন্দ বৃক্ষ) থেকে হানযাল (তেলাকচু বা মাকাল) গাছকে বুঝানো হয়েছে যার শিকড় মাটির উপরেই থাকে এবং একটু টান দিতেই উপড়ে যায়। অর্থাৎ কাফেরদের আমল একেবারেই মূল্যহীন; তা না আকাশে যায়, আর না আল্লাহর দরবারে তা গৃহীত হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৭

یُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِالۡقَوۡلِ الثَّابِتِ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ یُضِلُّ اللّٰهُ الظّٰلِمِیۡنَ ۟ۙ وَ یَفۡعَلُ اللّٰهُ مَا یَشَآءُ ﴿۲۷﴾

یثبت الله الذین امنوا بالقول الثابت فی الحیوۃ الدنیا و فی الاخرۃ و یضل الله الظلمین و یفعل الله ما یشآء ﴿۲۷﴾
আল্লাহ অবিচল রাখেন ঈমানদারদেরকে সুদৃঢ় বাণী দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ যালিমদের পথভ্রষ্ট করেন এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

-আল-বায়ান

যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণীর অবলম্বনে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন আর যালিমদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। তিনি যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।

-তাইসিরুল

যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা যালিম, আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

-মুজিবুর রহমান

Allah keeps firm those who believe, with the firm word, in worldly life and in the Hereafter. And Allah sends astray the wrongdoers. And Allah does what He wills.

-Sahih International

২৭. যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন(১) এবং যারা যালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন(২)।

(১) এ আয়াত থেকে আমরা আরো যে শিক্ষা পাই তা হলো, মুমিনের ঈমান ও কালেমায়ে তাইয়্যেবার একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা হলোঃ মুমিনের কালেমায়ে তাইয়্যেবা মজবুত ও অনড় বৃক্ষের মত একটি প্রতিষ্ঠিত উক্তি। একে আল্লাহ তা'আলা চিরকাল কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত রাখেন দুনিয়াতেও এবং আখেরাতেও। শর্ত এই যে, এ কালেমা আন্তরিকতার সাথে বলতে হবে এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মর্ম পূর্ণরূপে বুঝতে হবে এবং সে অনুসারে আমল করতে হবে। এ কালেমায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে দুনিয়াতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শক্তি যোগানো হয়। যখন কোন সন্দেহ আসে তাদেরকে সে সন্দেহ থেকে উত্তরণ করে দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতি পথনির্দেশ দেয়া হয়। অনুরূপভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে যায়, তখনও তাদেরকে নিজের আত্মার অনিষ্টতা ও খারাপ ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালবাসাকে সবকিছুর উপর স্থান দেয়ার তাওফীক দেয়া হয়।

আখেরাতেও মৃত্যুর পূর্বমূহুর্তে দ্বীনে ইসলামীর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার মাধ্যমে তাকে উত্তম পরিসমাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়। তারপর কবরে তাকে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের সহযোগিতা করা হয়, ফলে সে উত্তর দিতে পারে যে, আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নবী। [সা’দী] অধিকাংশ মুফাসসির ও মুহাদ্দিস বলেন, এ আয়াত কবরের ফিতনা তথা প্রশ্নোত্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। বস্তুত: কবরের শাস্তি ও শান্তি কুরআন ও হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এবং এটাও বলবে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর বাণী- (يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ) এর উদ্দেশ্য। [বুখারীঃ ৪৬৯৯, মুসলিম: ২৮৭১] এছাড়া আরো প্রায় চল্লিশ জন সাহাবী থেকে এ বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এগুলো উল্লেখ করেছেন। হাদীসগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। [সা’দী] সাহাবাগণ তাদের তাফসীরে আলোচ্য আয়াতে আখেরাতের অর্থ কবর এবং আয়াতটিকে কবরের আযাব সওয়াব সম্পর্কিত বলে সাব্যস্ত করেছেন। [বিস্তারিত দেখুন, ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যা চান, তাই করেন। তিনি চাইলে কাউকে তাওফীক দেন, কাউকে তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন। কাউকে সুদৃঢ় রাখেন। কাউকে পদস্থলিত করেন। [বাগভী] কাউকে আযাব দেন, কাউকে পথভ্রষ্ট করেন। [কুরতুবী] তাঁর ইচ্ছাকে রুখে দাঁড়ায়, এমন কোন শক্তি নেই। উবাই ইবনে কা’ব, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবন ইয়ামান প্রমুখ সাহাবী বলেনঃ মুমিনের এরূপ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, তার যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা আল্লাহর ইচ্ছায়ই অর্জিত হয়েছে। এটা অর্জিত না হওয়া অসম্ভব ছিল। এমনিভাবে যে বস্তু অর্জিত হয়নি, তা অর্জিত হওয়া সম্ভব ছিল না। তারা আরো বলেনঃ যদি তুমি এরূপ বিশ্বাস না রাখ, তবে তোমার আবাস হবে জাহান্নাম। কারণ, এটাই মূলতঃ তাকদীরের উপর ঈমান। আর যে কেউ তাকদীরের ভাল বা মন্দ হওয়ার উপর ঈমান আনবে না তার ঈমানই শুদ্ধ হবে না। তার আবাস জাহান্নাম হবেই। [ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইন: ১/৮২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) যারা বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণী দ্বারা ইহজীবনে ও পরজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন[1] এবং যারা সীমালংঘনকারী আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্ত করেন; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

[1] এর ব্যাখ্যা হাদীসে এরূপ এসেছে যে, মৃত্যুর পর কবরে মুসলিমকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে উত্তরে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল। সুতরাং এটাই অর্থ হচ্ছে আল্লাহর এই বাণীর ﴿يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ﴾ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা ইবরাহীম, মুসলিমঃ কিতাবুল জান্নাতি ওয়া সিফাতি নাঈমিহা) অন্য এক হাদীসে আছে যে, যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা চলে আসে, তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনে। অতঃপর তার নিকট দু’জন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে (নবী (সাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করেন যে, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মত কি?’ সে মু‘মিন হলে উত্তর দেয় যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল। ফিরিশতাগণ তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে বলেন যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে দিয়েছেন। সে উক্ত উভয় ঠিকানা দেখে এবং তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং তার কবরকে কিয়ামত অবধি নিয়ামত সম্ভার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, উপরোক্ত পরিচ্ছেদ) আরেক হাদীসে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে?’ সুতরাং আল্লাহ তাআলা অটলতা দান করেন এবং সে উত্তর দেয়, ‘আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)।’ (তাফসীর ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৮

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ بَدَّلُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ كُفۡرًا وَّ اَحَلُّوۡا قَوۡمَهُمۡ دَارَ الۡبَوَارِ ﴿ۙ۲۸﴾

الم تر الی الذین بدلوا نعمت الله كفرا و احلوا قومهم دار البوار ﴿۲۸﴾
তুমি কি তাদেরকে দেখ না, যারা আল্লাহর নিআমতকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করেছে এবং তাদের কওমকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে দিয়েছে?

-আল-বায়ান

তুমি কি তাদের ব্যাপারে চিন্তা কর না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বিনিময়ে অকৃতজ্ঞতার নীতি অবলম্বন করে আর তাদের জাতিকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে আনে।

-তাইসিরুল

তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনা যারা আল্লাহর অনুগ্রহের পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধ্বংসের আলয়ে ।

-মুজিবুর রহমান

Have you not considered those who exchanged the favor of Allah for disbelief and settled their people [in] the home of ruin?

-Sahih International

২৮. আপনি কি তাদেরকে লক্ষ্য করেন না যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধবংসের ঘরে(১)—

(১) অর্থাৎ “আপনি কি তাদেরকে দেখেন না, যারা আল্লাহ তা'আলার নেয়ামতের পরিবর্তে কুফর অবলম্বন করেছে এবং তাদের অনুসারী জাতিকে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের অবস্থানে পৌছে দিয়েছে? তারা জাহান্নামে প্রজ্জ্বলিত হবে। জাহান্নাম অত্যন্ত মন্দ আবাস।” অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট এখানে মক্কার কাফেরদের বুঝানো হয়েছে। [বুখারী: ৪৭০০] মুজাহিদ বলেন, এর দ্বারা কুরাইশদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা বদরে মারা গেছে। [ইবন কাসীর] এখানে “আল্লাহর নেয়ামত” বলে সাধারণভাবে অনুভূত, প্রত্যক্ষ ও মানুষের বাহ্যিক উপকার সম্পর্কিত নেয়ামত বোঝানো যেতে পারে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বোঝানো হয়েছে। তারা তার সাথে কুফরি করে তাদের প্রতি প্রেরিত নেয়ামতকে পরিবর্তন করে নিয়েছে। [বাগভী] মূলতঃ যাবতীয় কাফের ও মুশরিকরা নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা, অবাধ্যতা ও নাফরমানী করেছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যারা আল্লাহর অনুগ্রহের (কৃতজ্ঞতার) বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে এনেছে ধ্বংসের মুখে; [1]

[1] এর ব্যাখ্যা সহীহ বুখারীতে আছে যে, এ থেকে কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। (বুখারী, তাফসীর সূরা ইবরাহীম) যারা (আল্লাহর নিয়ামত) মুহাম্মাদী রিসালতকে অস্বীকার করে (কৃতঘ্ন হয়ে) এবং বদরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই লড়ে নিজ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ধ্বংস করল। তবে ভাবার্থের দিক থেকে এটা ব্যাপক। আর এর অর্থ এই যে, মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও নিয়ামত করে পাঠিয়েছেন, যে এই নিয়ামতকে গ্রহণ করে তার কদর করবে, সে কৃতঘ্ন এবং সে জান্নাতী হবে। পক্ষান্তরে যে এই নিয়ামতকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তার বদলে কুফরীকে এখতিয়ার করবে, সে কৃতঘ্ন এবং সে জাহান্নামী হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ২৯

جَهَنَّمَ ۚ یَصۡلَوۡنَهَا ؕ وَ بِئۡسَ الۡقَرَارُ ﴿۲۹﴾

جهنم یصلونها و بئس القرار ﴿۲۹﴾
জাহান্নামে, যাতে তারা দগ্ধ হবে, আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান!

-আল-বায়ান

(তা হল) জাহান্নাম, তাতে তারা প্রবেশ করবে, বসবাসের এ জায়গা কতই না নিকৃষ্ট!

-তাইসিরুল

জাহান্নাম, যার মধ্যে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট ঐ আবাসস্থল!

-মুজিবুর রহমান

[It is] Hell, which they will [enter to] burn, and wretched is the settlement.

-Sahih International

২৯. জাহান্নামে, যার মধ্যে তারা দগ্ধ হবে, আর কত নিকৃষ্ট এ আবাসস্থল!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) জাহান্নামে, যার মধ্যে তারা প্রবেশ করবে। আর কত নিকৃষ্ট সে আবাসস্থল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৪ : ৩০

وَ جَعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا لِّیُضِلُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِهٖ ؕ قُلۡ تَمَتَّعُوۡا فَاِنَّ مَصِیۡرَكُمۡ اِلَی النَّارِ ﴿۳۰﴾

و جعلوا لله اندادا لیضلوا عن سبیلهٖ قل تمتعوا فان مصیركم الی النار ﴿۳۰﴾
আর তারা আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করে, যেন তারা তাঁর পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বল, ‘তোমরা ভোগ করতে থাক। কেননা, তোমাদের গন্তব্য তো আগুনের দিকে’।

-আল-বায়ান

আর তারা (অন্যকে) আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে তাঁর পথ থেকে বিপথগামী করার উদ্দেশে। বল, ‘ভোগ করে নাও, শেষ পর্যন্ত জাহান্নামেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।

-তাইসিরুল

আর তারা আল্লাহর সমকক্ষ উদ্ভাবন করে তাঁর পথ হতে বিভ্রান্ত করার জন্য; তুমি বলঃ ভোগ করে নাও, পরিণামে আগুনই তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল।

-মুজিবুর রহমান

And they have attributed to Allah equals to mislead [people] from His way. Say, "Enjoy yourselves, for indeed, your destination is the Fire."

-Sahih International

৩০. আর তারা আল্লাহর জন্য সমকক্ষ(১) নির্ধারণ করে তার পথ হতে বিভ্রান্ত করার জন্য। বলুন, ‘ভোগ করে নাও(২), পরিণামে আগুনই তোমাদের ফিরে যাওয়ার স্থান।

(১) أَنْدَادًا শব্দটি نِدٌّ এর বহুবচন। এর অর্থ সমতুল্য, সমান। প্রতিমাসমূহকে أَنْدَاد বলার কারণ এই যে, মুশরিকরা স্বীয় কর্মে তাদেরকে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করে রেখেছিল। তারা আল্লাহর সাথে সেগুলোরও ইবাদত করত এবং অন্যদেরকে সেগুলোর ইবাদতের প্রতি আহবান জানাত। [ইবন কাসীর] সূরা আল-বাকারাহ এর তাফসীরে এর বিস্তারিত আলোচনা চলে গেছে।

(২) تمتع শব্দের অর্থ কোন বস্তু দ্বারা সাময়িকভাবে কয়েকদিন উপকৃত হওয়া। আয়াতে মুশরিকদের ভ্রান্ত মতবাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে যে, তারা প্রতিমাসমূহকে আল্লাহর সমতুল্য ও তার অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আদেশ দেয়া হয়েছেঃ আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, তোমরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী নেয়ামত দ্বারা উপকৃত হতে থাক; তোমাদের শেষ পরিণতি জাহান্নামের অগ্নি দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ীত্বের কথা আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। [দেখুনঃ সূরা লুকমানঃ ২৪, সূরা ইউনুসঃ ৭০, সূরা আয-যুমারঃ ৮, সূরা আলে ইমরানঃ ১৯৭, সূরা আন-নিসাঃ ৭৭, সূরা আত-তাওবাহঃ ৩৮, সূরা আর-রাদঃ ২৬, সূরা আন-নাহলঃ ১১৭, সূরা গাফেরঃ ৩৯, সূরা আযযুখরুফঃ ৩৫, সূরা আল-হাদীদঃ ২০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) তারা আল্লাহর সমকক্ষ উদ্ভাবন করেছে তাঁর পথ হতে বিভ্রান্ত করার জন্য। তুমি বল, ‘ভোগ করে নাও, পরিণামে দোযখই তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল।’ [1]

[1] এটা ধমক ও তিরস্কার যে, পৃথিবীতে যাচ্ছে তাই করে নাও, কিন্তু কতক্ষণ পর্যন্ত? শেষে তোমাদের বাসস্থান তো জাহান্নামই বটে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »