بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১২/ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف আয়াতঃ ১১১ মাক্কী
১২ : ২১ وَ قَالَ الَّذِی اشۡتَرٰىهُ مِنۡ مِّصۡرَ لِامۡرَاَتِهٖۤ اَكۡرِمِیۡ مَثۡوٰىهُ عَسٰۤی اَنۡ یَّنۡفَعَنَاۤ اَوۡ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا ؕ وَ كَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِیُوۡسُفَ فِی الۡاَرۡضِ ۫ وَ لِنُعَلِّمَهٗ مِنۡ تَاۡوِیۡلِ الۡاَحَادِیۡثِ ؕ وَ اللّٰهُ غَالِبٌ عَلٰۤی اَمۡرِهٖ وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۱﴾
و قال الذی اشترىه من مصر لامراتهٖ اكرمی مثوىه عسی ان ینفعنا او نتخذهٗ ولدا و كذلك مكنا لیوسف فی الارض و لنعلمهٗ من تاویل الاحادیث و الله غالب علی امرهٖ و لكن اكثر الناس لا یعلمون ﴿۲۱﴾
• আর মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘এর থাকার সুন্দর সম্মানজনক ব্যবস্থা কর। আশা করা যায়, সে আমাদের উপকার করবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করব’ এবং এভাবেই আমি যমীনে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং যেন আমি তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেই। আল্লাহ নিজ কর্ম সম্পাদনে প্রবল; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।

-আল-বায়ান

• মিসরের যে লোক তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘তার থাকার সুব্যবস্থা কর, সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে কিংবা তাকে আমরা পুত্র হিসেবেও গ্রহণ করে নিতে পারি।’ এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্ন ব্যাখ্যার কিছু জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তাঁর কাজের ব্যাপারে পূর্ণ কর্তৃত্বশীল। কিন্তু অধিকাংশ লোকই (তা) জানে না।

-তাইসিরুল

• মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ সম্মানজনকভাবে এর থাকার ব্যবস্থা কর, সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা একে পুত্র রূপেও গ্রহণ করতে পারি এবং এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।

-মুজিবুর রহমান

• And the one from Egypt who bought him said to his wife, "Make his residence comfortable. Perhaps he will benefit us, or we will adopt him as a son." And thus, We established Joseph in the land that We might teach him the interpretation of events. And Allah is predominant over His affair, but most of the people do not know.

-Sahih International

২১. আর মিসরের যে ব্যক্তি তাকে কিনেছিল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ এর থাকার সম্মানজনক ব্যবস্থা কর, সম্ভবত সে আমাদের উপকারে আসবে বা আমরা একে পুত্ররূপেও গ্রহণ করতে পারি(১)। আর এভাবেই আমরা ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম(২); এবং যাতে আমরা তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেই(৩)। আর আল্লাহ তার কাজ সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না(৪)।

(১) অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে মিসরে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ ইউসুফের বসবাসের সুন্দর বন্দোবস্ত কর। ইবনে কাসীর বলেনঃ যে ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে ক্রয় করেছিলেন, তিনি ছিলেন মিসরের অর্থমন্ত্রী। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ দুনিয়াতে তিন ব্যক্তি অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং চেহারা দেখে শুভাশুভ নিরূপণকারী প্রমাণিত হয়েছেন। প্রথম- আযীযে মিসর। তিনি স্বীয় নিরূপণ শক্তি দ্বারা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গুণাবলী অবহিত হয়ে স্ত্রীকে উপরোক্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়- ঐ কন্যা, যে মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তার পিতাকে বলেছিলঃ পিতা, তাকে কর্মচারী রেখে দিন। কেননা, উত্তম কর্মচারী ঐ ব্যক্তি, যে সবল, সুঠাম ও বিশ্বস্ত হয়। [আল-কাসাসঃ ২৬] তৃতীয়-আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু, যিনি ফারূকে আযম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পরবর্তী খলীফা মনোনীত করেছিলেন। [তাবারী; ইবনে কাসীর]

(২) অর্থাৎ যেভাবে ইউসুফকে কুপ থেকে বের করে আযীযে মিসর পর্যন্ত পৌছে দিলাম তেমনিভাবে তাকে আমি যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(৩) (وَلِنُعَلِّمَهُ مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ) এখানে শুরুতে واو কে عطف এর অর্থ নিলে এ অর্থেরই একটি বাক্য উহ্য মেনে নেয়া হবে। অর্থাৎ আমি ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাতে তিনি এ সময়টুকুতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। আহকাম বিষয়ক ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিষয়ক সব জ্ঞান অর্জন করার সুযোগই তিনি লাভ করতে পারবেন। সুতরাং এভাবে তাকে আমরা বাক্যাদির পরিপূর্ণ মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি শিক্ষা দেই [সা’দী] অথবা এ বাক্যটি পূর্ববতী বাক্যের কারণ হিসেবে এসেছে অর্থাৎ তাকে আমি যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠা দান করেছি, যার ভূমিকা হিসাবে আমি তাকে স্বপ্নের তা'বীর শিক্ষা দিয়েছি। [বাগভী] বস্তুতঃ তিনি এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। অথবা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পূর্ব ঘোষিত বাণী, আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন। এ কথাটির সত্যয়ণ হিসেবে আমি আপনাকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। [কুরতুবী]

(৪) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা স্বীয় কর্মে প্রবল ও শক্তিমান। তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। [ইবন কাসীর] কেউই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে গিয়ে কোন কাজ হাসিল করতে পারে না। কোন কিছু করতে হলে তিনি তো শুধু বলেন ‘হও’ আর সাথে সাথে তা হয়ে যায়। [কুরতুবী] এর উদাহরণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম চেয়েছিলেন যেন ইউসুফের স্বপ্ন তার ভাইয়েরা না জানে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তারা জানুক, সুতরাং তাই হয়েছে। ইউসুফের ভাইয়েরা চেয়েছিল ইউসুফকে হত্যা করতে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, সে বেঁচে থাকবে এবং কর্ণধার হবে, বাস্তবে হয়েছেও তাই। ইউসুফের ভাইয়ের চেয়েছিল ইয়াকুবের মন থেকে ইউসুফের কথা ঘুচে যাক কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তা জাগরুক থাকুক।

সুতরাং ইয়াকুব সর্বক্ষণ ইউসুফের কথাই বলেছিল। তারা চাইলে যে, তাদের পিতাকে চোখের পানি দিয়ে ধোঁকা দিবে, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, ইয়াকুব তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন না, ফলে তাই হলো। আযীয পত্নী চেয়েছিল ইউসুফকে দোষারোপ করতে কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, তিনি দোষমুক্ত ঘোষিত হবেন, ফলে আযীযের মুখ থেকে আযীয পত্নীই দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ পেলেন। ইউসুফ চাইলেন যে, শরাব পরিবেশনকারী তার কথা বাদশাহকে বলে তাকে বিমুক্ত করে দিক, কিন্তু আল্লাহ চাইলেন যে, শরাব পরিবেশনকারী তা ভুলে যাক, ফলে তাই হলো। এসবই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তার ইচ্ছায় প্রবল। [কুরতুবী] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা'আলা ইউসুফ আলাইহিস সালামের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রবল। তিনি নিজে ইউসুফের কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তার কোন ব্যাপার অন্যের উপর ন্যস্ত করেননি। যাতে করে তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রকারীর যড়যন্ত্র সফল হতে না পারে। [বাগভী]

তারপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্য বোঝে না। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশ বলে সকল মানুষকেই বোঝানো হয়েছে। কারণ, কেউই গায়েব জানে না। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশই উদ্দেশ্য, কারণ, কোন কোন নবী-রাসূলকে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কোন কাজের হিকমত সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবহিত করেন। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে অধিকাংশ মানুষ বলে মুশরিক এবং যারা তাকদীরের উপর ঈমান রাখে না তাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে[1] বলল, ‘সম্মানজনকভাবে এর থাকবার ব্যবস্থা কর, সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা একে পুত্ররূপে গ্রহণ করব।’ আর এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম[2] তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়।

[1] বলা হয় যে, সে সময় মিসরের বাদশাহ ছিলেন রাইয়ান বিন অলীদ এবং মিসরের ‘আযীয’ যিনি ইউসুফকে খরিদ করেছিলেন, তিনি বাদশার খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নাম অনেকে রাঈল এবং অনেকে যুলাইখা বলেছেন। আর আল্লাই ভালো জানেন।

[2] অর্থাৎ, যেমন আমি ইউসুফ (আঃ)-কে কূপ থেকে, যালেম ভাইদের কবল থেকে পরিত্রাণ দিলাম, অনুরূপ আমি ইউসুফকে মিসরের ভূখন্ডে একটি উৎকৃষ্ট বাসস্থান প্রদান করলাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২২ وَ لَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗۤ اٰتَیۡنٰهُ حُكۡمًا وَّ عِلۡمًا ؕ وَ كَذٰلِكَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۲۲﴾
و لما بلغ اشدهٗ اتینه حكما و علما و كذلك نجزی المحسنین ﴿۲۲﴾
• আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম এবং এভাবেই আমি ইহসানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।

-আল-বায়ান

• যখন সে তার পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছল, তখন তাকে বিচার-বুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম, আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি।

-তাইসিরুল

• সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমি তাকে হিকমাত ও জ্ঞান দান করলাম, এবং এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি।

-মুজিবুর রহমান

• And when Joseph reached maturity, We gave him judgment and knowledge. And thus We reward the doers of good.

-Sahih International

২২. আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম(১)। আর এভাবেই আমরা ইহসানকারীদের পুরস্কৃত করি।(২)

(১) অর্থাৎ যখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম পূর্ণ শক্তি ও যৌবনে পদার্পণ করলেন, তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও বুৎপত্তি দান করলাম। শক্তি ও যৌবন কোন বয়সে অর্জিত হল, এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। আর ইলম বা বুৎপত্তি দান করার অর্থ এস্থলে নবুওয়াত দান করা। [ইবন কাসীর] মূলতঃ কুরআনের ভাষায় সাধারণভাবে এমন শব্দের মানে হয় “নবুওয়াত দান করা”। ফায়সালা করার শক্তিকে কুরআনের মূল ভাষ্যে বলা হয়েছে “হুকুম”। এ হুকুম অর্থ কর্তৃত্বও হয়। [কুরতুবী]

(২) আমি ইহসানকারীদেরকে এমনিভাবে প্রতিদান দিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য এই যে, নিশ্চিত ধ্বংসের কবল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজত্ব ও সম্মান পর্যন্ত পৌছানো ছিল ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম-এর সদাচরণ, আল্লাহ ভীতি ও সৎকর্মের পরিণতি। এটা শুধু তারই বৈশিষ্ট নয়, যে কেউ এমন সৎকর্ম করবে, সে এমনিভাবে আমার পুরস্কার লাভ করবে। সুতরাং যেভাবে আমি ইউসুফকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত পার করে সফলতা দিয়েছি তেমনি আপনাকেও হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার কাওমের মুশরিকদের শক্রতা থেকে নাজাত দেব এবং আপনাকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করব। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম।[1] আর এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।

[1] অর্থাৎ, নবুঅত অথবা নবী হওয়ার পূর্বের জ্ঞান ও বিচার ক্ষমতা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৩ وَ رَاوَدَتۡهُ الَّتِیۡ هُوَ فِیۡ بَیۡتِهَا عَنۡ نَّفۡسِهٖ وَ غَلَّقَتِ الۡاَبۡوَابَ وَ قَالَتۡ هَیۡتَ لَكَ ؕ قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اِنَّهٗ رَبِّیۡۤ اَحۡسَنَ مَثۡوَایَ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۳﴾
و راودته التی هو فی بیتها عن نفسهٖ و غلقت الابواب و قالت هیت لك قال معاذ الله انهٗ ربی احسن مثوای انهٗ لا یفلح الظلمون ﴿۲۳﴾
• আর যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে বলল, আল্লাহর আশ্রয় (চাই)। নিশ্চয় তিনি আমার মনিব, তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমগণ সফল হয় না।

-আল-বায়ান

• যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে (মহিলাটি) তার থেকে অসৎ কর্ম কামনা করল। সে দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে (ইউসুফ) বলল, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি। তিনি আমার রবব, তিনি আমার থাকার ব্যবস্থা কত উত্তম করেছেন, যালিমরা কক্ষনো সাফল্য লাভ করতে পারে না।

-তাইসিরুল

• সে যে স্ত্রী লোকের গৃহে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎ কাজ কামনা করল এবং দরজাগুলি বন্ধ করে দিল ও বললঃ চলে এসো (আমরা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি), সে বললঃ আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি (আযীয) আমার প্রভু! তিনি আমাকে সম্মানজনকভাবে থাকতে দিয়েছেন, সীমালংঘনকারীরা সফলকাম হয়না।

-মুজিবুর রহমান

• And she, in whose house he was, sought to seduce him. She closed the doors and said, "Come, you." He said, "[I seek] the refuge of Allah. Indeed, he is my master, who has made good my residence. Indeed, wrongdoers will not succeed."

-Sahih International

২৩. আর তিনি যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিলেন সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল, আর বলল, আস(১)। তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি(২), নিশ্চয় তিনি আমার মনিব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হয় না।(৩)

(১) অর্থাৎ যে মহিলার গৃহে ইউসুফ আলাইহিস সালাম থাকতেন, সে তার প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ল এবং তার সাথে কু বাসনা চরিতার্থ করার জন্য তাকে ফুসলাতে লাগল। সে গৃহের সব দরজা বন্ধ করে দিল এবং তাকে বললঃ শীঘ্রই এসে যাও, তোমাকে বলছি। (هَيْتَ لَكَ) শব্দের এক অর্থ, আমার কাছে এস, তোমার কাজ সম্পাদনের জন্য। দ্বিতীয় অর্থ, আমি তোমার জন্য প্রস্তুত। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

প্রথম আয়াতে জানা গিয়েছিল যে, এ মহিলা ছিল আযীযে মিসরের স্ত্রী। কিন্তু এস্থলে কুরআন ‘আযীয-পত্নী’ এই সংক্ষিপ্ত শব্দ ছেড়ে যার গৃহে সে ছিল -এ শব্দ ব্যবহার করেছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ কারণে আরো অধিক কঠিন ছিল যে, তিনি তারই গৃহে- তারই আশ্রয়ে থাকতেন। তার আদেশ উপেক্ষা করা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পক্ষে সহজসাধ্য ছিল না। [ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিব্বীন: ২৯৭-৩০০]

আর এজন্যই ঐ সমস্ত লোকদেরকে কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে বলে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যারা সুন্দরী-ধনী মহিলার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে। এবং তাকে ভয় করে বলে ঘোষণা দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সাত শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা আরশের নীচে ছায়া দেবেন। তন্মধ্যে ঐ ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন, যাকে কোন ধনাঢ্য-পদস্থ-সুন্দরী মহিলা খারাপ কর্মকাণ্ডের আহবান জানালে সে আল্লাহকে ভয় করে ঘোষণা দিয়ে তা হতে দূরে থাকে। [বুখারীঃ ৬৬০]

(২) এর বাহ্যিক কারণ ঘটে এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম যখন নিজেকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টিত দেখলেন, তখন নবীসুলভ ভঙ্গিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলেন, তিনি শুধু নিজ ইচ্ছা ও সংকল্পের উপর ভরসা করেননি। এটা জানা কথা যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয় লাভ করে, তাকে কেউ বিশুদ্ধ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। বস্তুতঃ গোনাহ থেকে বাঁচার প্রধান অবলম্বন হল আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

(৩) তিনি নবীসুলভ বিজ্ঞতা ও উপদেশ প্রয়োগ করে স্বয়ং সেই মহিলাকে উপদেশ দিতে লাগলেন যে, তারও উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং মন্দ বাসনা থেকে বিরত থাকা। তিনি বললেনঃ (إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ) তিনি আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে সুখে রেখেছেন। মনে রেখো, অত্যাচারীরা কল্যাণপ্রাপ্ত হয় না। বাহ্যিক অর্থ এই যে, তোমার স্বামী আযীযে-মিসর আমাকে লালন-পালন করেছেন, আমাকে উত্তম জায়গা দিয়েছেন। অতএব তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহকারী। আমি তার ইযযতে হস্তক্ষেপ করব? এটা জঘন্য অনাচার, অথচ অনাচারীরা কখনো কল্যাণপ্রাপ্ত হয় না। [কুরতুবী]

এভাবে তিনি যেন স্বয়ং সেই মহিলাকেও এ শিক্ষা দিলেন যে, আমি কয়েকদিন লালন-পালনের কৃতজ্ঞতা যখন এতটুকু স্বীকার করি, তখন তোমাকে আরো বেশী স্বীকার করা দরকার। এ ব্যাখ্যা অনুসারে সমস্যা হলো, এখানে ইউসুফ আলাইহিস সালাম আযীযে-মিসরকে স্বীয় রব শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত এর কারণ, এখানে ربي বলে سيدي বা আমার মনিব বোঝানো হয়েছে।

তখন সাধারণ নিয়মানুসারে তা ব্যবহার করার ব্যাপক প্রচলন ছিল। এর দ্বারা বাহ্যিক নেয়ামতের মালিক বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ মূলতঃ ইউসুফ আলাইহিস সালাম তখন দাস হিসেবেই আযীযে-মিসরের ঘরে অবস্থান করছিলেন। সে হিসেবে তিনি আযীযের স্ত্রীকে এ কথার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন যে, আমার উপর আমার মনিবের অনেক নেয়ামত রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি আমাকে লালন করছেন, আমার পক্ষে আমার মনিবের খেয়ানত করা সম্ভব নয়। আয়াতের দ্বিতীয় তাফসীর হচ্ছে, এখানে إِنَّهُ শব্দের সর্বনামটির দ্বারা আল্লাহকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম আল্লাহকেই রব বলেছেন। বসবাসের উত্তম জায়গাও প্রকৃতপক্ষে তিনিই দিয়েছেন। সেমতে তার অবাধ্যতা সর্ববৃহৎ যুলুম। এরূপ যুলুমকারী কখনো সফল হয় না। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল, সে তার কাছে (উপযাচিকা হয়ে) যৌন-মিলন কামনা করল এবং দরজাগুলি বন্ধ করে দিয়ে বলল, ‘এস! (আমরা কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি।)’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি (আযীয) আমার প্রভু! তিনি আমাকে সম্মানজনকভাবে স্থান দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা সফলকাম হয় না।’ [1]

[1] এখান থেকে ইউসুফ (আঃ)-এর এক নতুন পরীক্ষা আরম্ভ হল। মিসরের আযীযের স্ত্রী, যাকে তার স্বামী বলেছিল যে, ইউসুফকে সম্মানের সাথে রাখবে, সে ইউসুফ (আঃ)-এর রূপ-সৌন্দর্য দেখে আসক্তা হয়ে পড়ল এবং উপযাচিকা হয়ে তাঁকে ব্যভিচারের দিকে আহবান করতে লাগল। কিন্তু ইউসুফ (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করতে থাকলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৪ وَ لَقَدۡ هَمَّتۡ بِهٖ ۚ وَ هَمَّ بِهَا لَوۡ لَاۤ اَنۡ رَّاٰ بُرۡهَانَ رَبِّهٖ ؕ كَذٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ السُّوۡٓءَ وَ الۡفَحۡشَآءَ ؕ اِنَّهٗ مِنۡ عِبَادِنَا الۡمُخۡلَصِیۡنَ ﴿۲۴﴾
و لقد همت بهٖ و هم بها لو لا ان را برهان ربهٖ كذلك لنصرف عنه السوٓء و الفحشآء انهٗ من عبادنا المخلصین ﴿۲۴﴾
• আর সে মহিলা তার প্রতি আসক্ত হল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত, যদি না তার রবের স্পষ্ট প্রমাণ* প্রত্যক্ষ করত। এভাবেই, যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দেই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

-আল-বায়ান

• সেই মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সে (ইউসুফ)ও তার প্রতি আসক্ত হয়েই যেত যদি সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন না দেখত। আমি তা দেখিয়েছিলাম তাকে অসৎ কর্ম ও নির্লজ্জতা থেকে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, সে ছিল বিশুদ্ধ-হৃদয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

-তাইসিরুল

• সেই রমণীতো তার প্রতি আসক্ত হয়ে ছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার রবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। তাকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে ছিল আমার বিশুদ্ধ চিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

-মুজিবুর রহমান

• And she certainly determined [to seduce] him, and he would have inclined to her had he not seen the proof of his Lord. And thus [it was] that We should avert from him evil and immorality. Indeed, he was of Our chosen servants.

-Sahih International

* برهان অর্থ উজ্জ্বল প্রমাণ এখানে নিদর্শন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সে নিদর্শনটি কী ছিল এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায় । তাফসীরে ইবনে কাছীরে এর বিশদ বর্ণনা এসেছে। কেউ কেউ বলেন, তিনি নিজ পিতা ইয়াকূবের মুখচ্ছবি এবং তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ক ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আযীয মিসরের মুখচ্ছবি দেখেছিলেন। আর কারো কারো মতে সেই বুরহান হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত বিবেকের নির্দেশ।

২৪. আর সে মহিলা তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং তিনিও তার প্রতি আসক্ত(১) হয়ে পড়তেন যদি না তিনি তার রবের নিদর্শন দেখতে পেতেন।(২) এভাবেই (তা হয়েছিল), যাতে আমরা তার থেকে মন্দকাজ ও অশ্লীলতা দূর করে দেই(৩)। তিনি তো ছিলেন আমাদের মুখলিস বা বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

(১) আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, উল্লেখিত মহিলাটি অর্থাৎ আযীয-পত্নী তো পাপকাজের কল্পনায় বিভোরই ছিল, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মনেও মানবিক স্বভাববশতঃ কিছু কিছু অনিচ্ছাকৃত ঝোক সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা ঠিক সেই মুহুর্তে স্বীয় যুক্তি-প্রমাণ ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সামনে তুলে ধরেন, যদ্দরুন সেই অনিচ্ছাকৃত ঝোঁক ক্রমবর্ধিত হওয়ার পরিবর্তে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল এবং তিনি মহিলার নাগপাশ ছিন্ন করে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে লাগলেন।

এ আয়াতে هَمَّ শব্দটি (মনে উদিত হওয়ার অর্থে) ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও আযীয পত্নী উভয়ের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। কেবলমাত্র কোন খারাপ কাজের কথা মনে উদিত হলেই গোনাহ হয় না। [ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিব্বীনঃ ২৯৮] মোটকথা, ইউসুফ আলাইহিস সালাম থেকে এমন কিছু হয়নি যা গোনাহ বলে বিবেচিত হতে পারে। [ইবন তাইমিয়্যা: মাজমু ফাতাওয়া]

বরং আল্লাহ স্বয়ং তার নবী ইউসুফকে নিরপরাধ সাব্যস্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদেরকে বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন পাপ কাজের ইচ্ছা করে, তখনি তা লিখে ফেলো না, যতক্ষণ সে তা করে না বসে। তারপর যদি আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করে, তখন পাপের পরিবর্তে তার আমলনামায় একটি নেকী লিখে দাও এবং যদি পাপকাজটি করেই ফেলে তবে একটি গোনাহই লিপিবদ্ধ কর। আর যদি কোন সৎকাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা করল না, তবুও তার জন্য একটি নেকী লিখে দাও। তারপর যখন সে তা সম্পাদন করে তখন তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ বর্ধিত করে লিখে দাও। [বুখারীঃ ৭৫০১, মুসলিমঃ ১২৮]

মোটকথা এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর অন্তরে যে কল্পনা অথবা ঝোঁক সৃষ্টি হয়েছিল, তা গোনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়। অতঃপর এর বিপক্ষে কাজ করার দরুন আল্লাহ তা'আলার কাছে তার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। [ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিব্বীন: ২৯৮] কোন কোন মুফাসসিরের মতে (لَوْلَا أَنْ رَأَىٰ بُرْهَانَ رَبِّهِ) এ অংশটি পরে উল্লেখ করা হলেও তা আসলে অগ্রে রয়েছে। অতএব, আয়াতের অর্থ এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মনেও কল্পনা সৃষ্টি হত, যদি তিনি আল্লাহর প্রমাণ অবলোকন না করতেন। কিন্তু পালনকর্তার প্রমাণ অবলোকন করার কারণে তিনি এ কল্পনা থেকে বেঁচে গেলেন। এ বিষয়বস্তুটি সঠিক, কিন্তু কোন কোন তাফসীরবিদ এ অগ্র-পশ্চাৎকে ব্যাকরণিক ভুল আখ্যা দিয়েছেন। [তাবারী; ইবন কাসীর; ইবন তাইমিয়্যা, মাজমু ফাতাওয়া ১০/১০১, ২৯৬-২৯৭, ৭৪০]

(২) স্বীয় পালনকর্তার যে প্রমাণ ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর দৃষ্টির সামনে এসেছিল, তা কি ছিল কুরআনুল কারীম তা ব্যক্ত করেনি। এ কারণেই এ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তাফসীরবিদ ইবনে কাসীর সেসব উক্তি উদ্ধৃত করার পর যে মন্তব্য করেছেন, তা সব সুধীজনের কাছেই সর্বাপেক্ষা সাবলীল ও গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেছেনঃ কুরআনুল কারীম যতটুকু বিষয় বর্ণনা করেছে, ততটুকু নিয়েই ক্ষান্ত থাকা দরকার। অর্থাৎ ইউসুফ আলাইহিস সালাম এমন কিছু দেখেছেন, যদ্দরুন তার মন থেকে সীমালংঘন করার সামান্য ধারণাও বিদূরিত হয়ে গেছে। এ বস্তুটি কি ছিল তা নিশ্চিতরূপে নির্দিষ্ট করা যায় না।

(৩) অর্থাৎ তার রবের প্রমাণ দেখা ও গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া আমার দেয়া সুযোগ ও পথ প্রদর্শনের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। কেননা, আমরা নিজের এ নির্বাচিত বান্দাটি থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করতে চাচ্ছিলাম। যেভাবে আমরা তাকে এ অশ্লীলতা থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম তেমনি আমরা তাকে এর পরেও অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা থেকে ফিরিয়ে রাখব। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) নিশ্চয় সেই মহিলা তার প্রতি আসক্তা হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত;[1] যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত।[2] তাকে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখবার জন্য এইভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম।[3] অবশ্যই সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের একজন।

[1] কোন কোন মুফাসসির এর এই মর্মার্থ বর্ণনা করেছেন যে, (لَولاَ أَن رَّأى بُرْهَانَ رَبِّهِ) বাক্যটির পূর্ব বাক্য (وَهَمَّ بِهَا) এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই; বরং তার উত্তর ঊহ্য আছে। অর্থাৎ বাক্যটি হল এরূপ لَولاَ أنْ رَأى بُرْهَانَ رَبِّهِ لَفَعَلَ مَا هَمَّ بِهِ অর্থ হবে, ‘‘যদি ইউসুফ আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ না করত, তাহলে যে কাজের সংকল্প সে করেছিল তা করে বসত।’’ এই অর্থই অধিকাংশ মুফাসসিরগণের তফসীর সমর্থন করে। আর যাঁরা তা لَولاَ শব্দের সাথে জুড়ে এই অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, (সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত; যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। অর্থাৎ) ইউসুফ (আঃ) (নিদর্শন দেখার ফলে মন্দের) কোন সংকল্পই করেননি। কিন্তু পূর্বেকার তফসীরবিদগণ তা আরবীর বর্ণনাভঙ্গির পরিপন্থী বলেছেন এবং এই অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, ইউসুফ (আঃ)ও সংকল্প করে ফেলেছিলেন, কিন্তু প্রথমতঃ এই সংকল্প ও ইচ্ছা এখতিয়ারী ছিল না; বরং আযীযের স্ত্রীর প্রলোভন ও চাপ তাতে প্রভাবশীল ছিল। দ্বিতীয়তঃ কোন পাপ করার ইচ্ছা করাটা পবিত্রতার পরিপন্থী নয়; বরং পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া পবিত্রতার পরিপন্থী। (ফাতহুল কাদীর, ইবনে কাসীর) কিন্তু সত্যানুসন্ধানী মুফাসসিরগণ এই অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, যদি আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট প্রমাণ না দেখতেন, তবে ইউসুফ (আঃ)ও পাপের সংকল্প করে নিতেন। অর্থাৎ, তিনি তাঁর প্রভুর স্পষ্ট প্রমাণ দেখেছিলেন, ফলে আযীযের স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার ইচ্ছাই করেননি। বরং পাপের দিকে আহবান শুনেই مَعَاذَ الله বলেছিলেন। অবশ্য পাপ-ইচ্ছা না করার অর্থ এ নয় যে, তাঁর মনে কোন কামনা ও বাসনাই জাগ্রত হয়নি। মনের ভিতর পাপের কামনা ও বাসনা জাগা, আর তার ইচ্ছা করে নেওয়া দু’টি আলাদা জিনিস। প্রকৃতত্ব এই যে, যদি কারো মনের ভিতর একেবারেই কামনা ও বাসনা না জাগে, তাহলে এমন ব্যক্তির এরূপ পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা কোন কৃতিত্ব নয়। কৃতিত্ব তো তখনই হবে, যখন মনের মাঝে চাহিদা ও বাসনা সৃষ্টি হবে এবং মানুষ তার উপর নিয়ন্ত্রণ এনে তা থেকে বিরত থাকবে। ইউসুফ (আঃ) এরূপই পরিপূর্ণ ধৈর্য ও সহ্যের নযীরবিহীন কৃতিত্ব পেশ করেছেন।

[2] প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী এখানে  لَولاَ শব্দটির জওয়াব (উত্তর) ঊহ্য আছে, আর তা হল (لَفَعَلَ مَا هَمَّ بِه) অর্থাৎ, যদি ইউসুফ (আঃ) আল্লাহ তাআলার নিদর্শন প্রত্যক্ষ না করতেন, তবে তিনি যা ইচ্ছা করেছিলেন, তা করে বসতেন। উক্ত নিদর্শন কি ছিল? এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। উদ্দেশ্য হল যে, প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এমন কোন জিনিস তাকে দেখানো হয়েছিল যে, তা প্রত্যক্ষ করে তিনি যৌন-কামনা সংবরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা নিজ পয়গম্বরগণকে এইভাবেই হিফাযত করে থাকেন।

[3] অর্থাৎ, যেরূপ আমি ইউসুফ (আঃ)-কে নিদর্শন দেখিয়ে, কুকর্ম বা তার ইচ্ছা থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম, অনুরূপ আমি তাকে সর্ববিষয়ে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করেছি। কারণ সে আমার মনোনীত ও বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৫ وَ اسۡتَبَقَا الۡبَابَ وَ قَدَّتۡ قَمِیۡصَهٗ مِنۡ دُبُرٍ وَّ اَلۡفَیَا سَیِّدَهَا لَدَا الۡبَابِ ؕ قَالَتۡ مَا جَزَآءُ مَنۡ اَرَادَ بِاَهۡلِكَ سُوۡٓءًا اِلَّاۤ اَنۡ یُّسۡجَنَ اَوۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۲۵﴾
و استبقا الباب و قدت قمیصهٗ من دبر و الفیا سیدها لدا الباب قالت ما جزآء من اراد باهلك سوٓءا الا ان یسجن او عذاب الیم ﴿۲۵﴾
• আর তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড়ে গেল এবং মহিলা পেছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। আর তারা মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল, ‘যে লোক তোমার পরিবারের সাথে মন্দকর্ম করতে চেয়েছে, তাকে কারাবন্দি করা বা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কী দন্ড হতে পারে’?

-আল-বায়ান

• তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল আর স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। এ সময় স্ত্রীলোকটির স্বামীকে তারা দু’জনে দরজার কাছে পেল। মহিলাটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে অপকর্ম করতে চায় তাকে জেলে পাঠানো অথবা ভয়াবহ শাস্তি ছাড়া উপযুক্ত দন্ড কী আর দেয়া যেতে পারে?’

-তাইসিরুল

• তারা উভয়ে দৌড়ে দরযার দিকে গেল এবং স্ত্রী লোকটি পিছন হতে তার জামা ছিড়ে ফেলল, তারা স্ত্রী লোকটির স্বামীকে দরযার কাছে দেখতে পেল। স্ত্রী লোকটি বললঃ যে তোমার পরিবারের সাথে কু-কাজ কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ অথবা অন্য কোন বেদনাদায়ক শাস্তি ব্যতীত আর কি দন্ড হতে পারে?

-মুজিবুর রহমান

• And they both raced to the door, and she tore his shirt from the back, and they found her husband at the door. She said, "What is the recompense of one who intended evil for your wife but that he be imprisoned or a painful punishment?"

-Sahih International

২৫. আর তারা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিড়ে ফেলল, আর তারা দু’জন স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, যে তোমার পরিবারের সাথে মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তারা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল[1] এবং মহিলাটি পিছন হতে (তাকে টেনে রুখতে গিয়ে) তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। তারা মহিলাটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলাটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে, তার জন্য কারাগারে প্রেরণ অথবা অন্য কোন বেদনাদায়ক শাস্তি ব্যতীত কি দন্ড হতে পারে?’ [2]

[1] ইউসুফ (আঃ) যখন দেখলেন যে, এ নারী মন্দকর্মের ইচ্ছায় অটল, তখন তিনি বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে দৌড়ে পালাতে লাগলেন, আর তাঁকে ধরার জন্য সে নারীও তাঁর পশ্চাতে দৌড়তে লাগল। এইভাবে উভয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল।

[2] অর্থাৎ স্বামীকে দেখেই সে (নারী) সতী-সাধী সেজে গেল এবং ইউসুফকে সর্বপ্রকার দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর জন্য শাস্তিও ঠিক করে ফেলল। অথচ প্রকৃত ঘটনা সম্পূর্ণ এর বিপরীত ছিল। দোষী সে নিজেই ছিল। আর ইউসুফ (আঃ) একেবারে নিষ্পাপ ছিলেন। তিনি সেই কুকর্ম থেকে বাঁচতে আগ্রহী ও সচেষ্ট ছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৬ قَالَ هِیَ رَاوَدَتۡنِیۡ عَنۡ نَّفۡسِیۡ وَ شَهِدَ شَاهِدٌ مِّنۡ اَهۡلِهَا ۚ اِنۡ كَانَ قَمِیۡصُهٗ قُدَّ مِنۡ قُبُلٍ فَصَدَقَتۡ وَ هُوَ مِنَ الۡكٰذِبِیۡنَ ﴿۲۶﴾
قال هی راودتنی عن نفسی و شهد شاهد من اهلها ان كان قمیصهٗ قد من قبل فصدقت و هو من الكذبین ﴿۲۶﴾
• সে বলল, ‘সে-ই আমাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছে’। আর মহিলার পরিবার থেকে এক সাক্ষ্যদাতা সাক্ষ্য প্রদান করল, ‘যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) সত্য বলেছে এবং সে (পুরুষ) মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’।

-আল-বায়ান

• সে (ইউসুফ) বলল, ‘সে-ই আমা হতে অসৎ কর্ম কামনা করেছে’। তখন মহিলাটির পরিবারের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিল- ‘যদি তার জামা সম্মুখ দিক থেকে ছেঁড়া হয়ে থাকে, তবে মহিলাটি সত্য বলেছে আর সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

-তাইসিরুল

• সে (ইউসুফ) বললঃ সে’ই আমা হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিল। স্ত্রী লোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলঃ যদি তার জামার সম্মুখ দিক ছিন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী লোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী ।

-মুজিবুর রহমান

• [Joseph] said, "It was she who sought to seduce me." And a witness from her family testified. "If his shirt is torn from the front, then she has told the truth, and he is of the liars.

-Sahih International

২৬. ইউসুফ বললেন, সে-ই আমাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছে। আর স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং সে পুরুষটি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) সে (ইউসুফ) বলল, ‘সেই আমার কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছিল।’[1] মহিলাটির পরিবারের একজন সাক্ষী[2] সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সম্মুখ দিক ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তাহলে মহিলাটি সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যাবাদী।

[1] ইউসুফ (আঃ) যখন দেখলেন যে, এ মহিলা সমস্ত দোষ তাঁর উপরই চাপিয়ে দিচ্ছে, তখন তিনি আসল রহস্য বর্ণনা করে বললেন যে, সেই আমাকে কুকর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করেছে। আর আমি তার স্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য বাইরের দরজার দিকে ছুটে পালিয়ে এসেছি।

[2] এটা তারই বংশের কোন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিল, যে উক্ত ফায়সালা করেছিল। ফায়সালাকে এখানে شهد (সাক্ষ্য দিল) শব্দে এই জন্য বুঝানো হয়েছে যে, তখনও বিষয়টি যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। কোন কোন বর্ণনায় একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাক্ষ্যদানের কথা পাওয়া যায়। কিন্তু তা সহীহ সূত্রে সাব্যস্ত নয়। সহীহাইন (বুখারী-মুসলিমে) তিনজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা বলার হাদীস আছে। যাদের মধ্যে এ চতুর্থ শিশু নয়, যার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৭ وَ اِنۡ كَانَ قَمِیۡصُهٗ قُدَّ مِنۡ دُبُرٍ فَكَذَبَتۡ وَ هُوَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۲۷﴾
و ان كان قمیصهٗ قد من دبر فكذبت و هو من الصدقین ﴿۲۷﴾
• ‘আর তার জামা যদি পেছন থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) মিথ্যা বলেছে এবং সে (পুরুষ) হচ্ছে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’।

-আল-বায়ান

• আর যদি তার জামা পেছন হতে ছেঁড়া হয়ে থাকে, তবে মহিলাটি মিথ্যে বলেছে আর সে সত্যবাদীদের অন্তুর্ভক্ত।’

-তাইসিরুল

• আর যদি তার জামা পিছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী লোকটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী।

-মুজিবুর রহমান

• But if his shirt is torn from the back, then she has lied, and he is of the truthful."

-Sahih International

২৭. আর তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং সে পুরুষটি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) আর যদি তার জামা পিছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তাহলে মহিলাটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে সত্যবাদী।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৮ فَلَمَّا رَاٰ قَمِیۡصَهٗ قُدَّ مِنۡ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنۡ كَیۡدِكُنَّ ؕ اِنَّ كَیۡدَكُنَّ عَظِیۡمٌ ﴿۲۸﴾
فلما را قمیصهٗ قد من دبر قال انهٗ من كیدكن ان كیدكن عظیم ﴿۲۸﴾
• অতঃপর যখন সে দেখল, তার জামা পেছন থেকে ছেঁড়া তখন বলল, ‘নিশ্চয় এটি তোমাদের ষড়যন্ত্র। নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র ভয়ানক’।

-আল-বায়ান

• স্বামী যখন ইউসুফের জামাটি পেছন হতে ছেঁড়া দেখতে পেল, তখন সে বলল, ‘এ সব হল তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের কূট কৌশল বড়ই কঠিন।

-তাইসিরুল

• সুতরাং গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়েছে তখন সে বললঃ ভীষণ তোমাদের ছলনা।

-মুজিবুর রহমান

• So when her husband saw his shirt torn from the back, he said, "Indeed, it is of the women's plan. Indeed, your plan is great.

-Sahih International

২৮. অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ।(১)

(১) আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, আযীযে-মিসর যখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেল এবং বুঝল যে, তার পত্নীরই দোষ ও ইউসুফ আলাইহিস সালাম পবিত্র। তদানুসারে সে তার স্ত্রীকে সম্বোধন করে বললঃ (إِنَّهُ مِنْ كَيْدِكُنَّ) অর্থাৎ এসব তোমার ছলনা। তুমিই নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাও। নারী জাতির ছলনা খুবই মারাত্মক। একে বোঝা এবং এর জাল ছিন্ন করা সহজ নয়। কেননা, তারা বাহ্যতঃ কোমল, নাজুক ও অবলা হয়ে থাকে। যারা তাদেরকে দেখে, তারা তাদের কথায় দ্রুত বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলে। কিন্তু বুদ্ধি ও আল্লাহভীতির অভাববশতঃ তা অধিকাংশ সময় ছলনা হয়ে থাকে। আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, নারীদের ষড়যন্ত্র শয়তানের ষড়যন্ত্রের চেয়েও মারাত্মক। কারণ, নারীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র তো ভীষণ।” পক্ষান্তরে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল” [সূরা আন-নিসাঃ ৭৬] [আদওয়াউল বায়ান] তবে এখানে সব নারী বোঝানো হয়নি, বরং ঐসব নারী সম্পর্কেই বলা হয়েছে, যারা এ ধরণের ছল-চাতুরীতে লিপ্ত থাকে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) সুতরাং গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছিন্ন করা হয়েছে, তখন সে বলল, ‘এটা তোমাদের (নারীদের) ছলনা; নিশ্চয় তোমাদের ছলনা বিরাট! [1]

[1] এ কথাটি মিসরের আযীযের ছিল, তিনি নিজ স্ত্রীর কুস্বভাব দেখে নারী সম্পর্কে (আমভাবে) এই মন্তব্য করেছিলেন। এটা আল্লাহর মন্তব্য নয়। আর না এই উক্তি সকল নারীর ক্ষেত্রে সঠিক। সুতরাং তা সকল নারীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা এবং এর ভিত্তিতে নারী মাত্রই সকলকে ছলনাময়ী ও চক্রান্তের বেড়াজাল বলে চিহ্নিত করা কখনই কুরআনের উদ্দেশ্য নয়। যেমন অনেকে উক্ত বাক্য দ্বারা নারী সম্পর্কে এরূপ কথাবার্তা বলে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ২৯ یُوۡسُفُ اَعۡرِضۡ عَنۡ هٰذَا ٜ وَ اسۡتَغۡفِرِیۡ لِذَنۡۢبِكِ ۚۖ اِنَّكِ كُنۡتِ مِنَ الۡخٰطِئِیۡنَ ﴿۲۹﴾
یوسف اعرض عن هذا ٜ و استغفری لذنبك انك كنت من الخطئین ﴿۲۹﴾
• ‘ইউসুফ, তুমি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাও, আর (হে নারী) তুমি তোমার পাপের জন্য ইস্তেগফার কর। নিশ্চয় তুমিই পাপীদের অন্তর্ভূক্ত’।

-আল-বায়ান

• ওহে ইউসুফ! তুমি ব্যাপারটা উপেক্ষা কর, আর ওহে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাও, প্রকৃতপক্ষে তুমিই অপরাধী।’

-তাইসিরুল

• হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা কর এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তুমিই অপরাধী।

-মুজিবুর রহমান

• Joseph, ignore this. And, [my wife], ask forgiveness for your sin. Indeed, you were of the sinful."

-Sahih International

২৯. হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা কর এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত।(১)

(১) আযীয-মিসর তার স্ত্রীর ভুল বর্ণনা করার পর ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে বললঃ (يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَٰذَا) অর্থাৎ ইউসুফ, এ ঘটনাকে উপেক্ষা কর এবং বলাবলি করো না, যাতে বেইযযতি না হয়। অতঃপর তার স্ত্রীকে সম্বোধন করে বললঃ (وَاسْتَغْفِرِي لِذَنْبِكِ إِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ) অর্থাৎ ভুল তোমারই। তুমি নিজে ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) হে ইউসুফ! তুমি এ বিষয়কে উপেক্ষা কর[1] এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তুমিই অপরাধিনী।’[2]

[1] অর্থাৎ, এ কথা প্রচার করো না।

[2] এতে বুঝা যায় যে, মিসরের আযীযের নিকট ইউসুফ (আঃ) যে নির্দোষ তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৩০ وَ قَالَ نِسۡوَۃٌ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ امۡرَاَتُ الۡعَزِیۡزِ تُرَاوِدُ فَتٰىهَا عَنۡ نَّفۡسِهٖ ۚ قَدۡ شَغَفَهَا حُبًّا ؕ اِنَّا لَنَرٰىهَا فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۳۰﴾
و قال نسوۃ فی المدینۃ امرات العزیز تراود فتىها عن نفسهٖ قد شغفها حبا انا لنرىها فی ضلل مبین ﴿۳۰﴾
• আর নগরীতে মহিলারা বলাবলি করল, ‘আযীয পত্নী স্বীয় যুবককে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। (যুবকের প্রতি) গভীর প্রেম তাকে আসক্ত করে ফেলেছে, নিশ্চয় আমরা তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি’।

-আল-বায়ান

• নগরীর কতক মহিলা বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক ক্রীতদাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে, ভালবাসা তাকে উন্মাদ করে ফেলেছে, আমরা নিশ্চিতই তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে নিপতিত দেখছি।’

-তাইসিরুল

• নগরে কতিপয় নারী বললঃ আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎ কাজ কামনা করেছে; প্রেম তাকে উম্মত্ত করেছে, আমরাতো তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।

-মুজিবুর রহমান

• And women in the city said, "The wife of al-'Azeez is seeking to seduce her slave boy; he has impassioned her with love. Indeed, we see her [to be] in clear error."

-Sahih International

৩০. আর নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই নিপতিত দেখছি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) নগরে কতিপয় মহিলা বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাসের কাছে যৌন-মিলন কামনা করে; তার প্রেম তাকে উন্মত্ত করে ফেলেছে। আমরা তো তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।’ [1]

[1] যেরূপ পর্দা দ্বারা সুবাস গোপন করা যায় না, প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টিও অনুরূপ। মিসরের আযীয ইউসুফ (আঃ)-কে উক্ত ঘটনা ভুলে যাওয়ার জন্য বললেন। আর সত্যই তিনি তাঁর পবিত্র মুখে এর কোন চর্চাই করেননি। তার পরেও ঘটনাটি জঙ্গলের আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ল এবং মিসরের মহিলাদের মাঝে এর দারুণ চর্চা হতে লাগল। মহিলারা আশ্চর্য হল এই ভেবে যে, (স্বামী থাকতেও যুলাইখা অন্যাসক্তা!) যদি প্রেম করার খুব ইচ্ছাই ছিল, তাহলে একজন সুদর্শন (স্বাধীন) পুরুষের সাথে করত। সে আপন দাসের প্রতি প্রেমে উন্মত্তা হয়ে পড়েছে! এটা তার বড় মূর্খামি!

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »