بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭/ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف আয়াতঃ ২০৬ মাক্কী
৭ : ১৮১ وَ مِمَّنۡ خَلَقۡنَاۤ اُمَّۃٌ یَّهۡدُوۡنَ بِالۡحَقِّ وَ بِهٖ یَعۡدِلُوۡنَ ﴿۱۸۱﴾
و ممن خلقنا امۃ یهدون بالحق و بهٖ یعدلون ﴿۱۸۱﴾
• আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একদল আছে যারা যথাযথভাবে পথ দেখায় এবং তদ্বারা ইনসাফ করে।

-আল-বায়ান

• আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল আছে যারা সঠিকভাবে পথ নির্দেশ দেয়, আর তার মাধ্যমেই সুবিচার করে।

-তাইসিরুল

• আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একটি দলও রয়েছে যারা সত্য পথের দা‘ওয়াত দেয় এবং ন্যায় বিচার করে।

-মুজিবুর রহমান

• And among those We created is a community which guides by truth and thereby establishes justice.

-Sahih International

১৮১. আর যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল লোক আছে যারা ন্যায়ভাবে পথ দেখায়(১) ও সে অনুযায়ীই (বিচারে) ইনসাফ করে।

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে একদল আল্লাহ্‌র সুনির্দিষ্ট নির্দেশ আসা পর্যন্ত  আল্লাহ্‌র আদেশকে বাস্তাবায়ন করার জন্য সদা-সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। তাদেরকে কেউ মিথ্যারোপ করবে অথবা অপমান করবে তার পরোয়া তারা করবে না। [বুখারীঃ ৭৪৬০, মুসলিমঃ ১০৩৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮১) আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল লোক আছে, যারা (অন্যকে) ন্যায় পথ দেখায় এবং ন্যায় বিচার করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮২ وَ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُمۡ مِّنۡ حَیۡثُ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۲﴾ۚۖ
و الذین كذبوا بایتنا سنستدرجهم من حیث لا یعلمون ﴿۱۸۲﴾
• আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না।

-আল-বায়ান

• যারা আমার আয়াতগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাদেরকে ধাপে ধাপে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা টেরও করতে পারে না।

-তাইসিরুল

• যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাব।

-মুজিবুর রহমান

• But those who deny Our signs - We will progressively lead them [to destruction] from where they do not know.

-Sahih International

১৮২. আর যারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, অচিরেই আমরা তাদেরকে এমনভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতেও পারবে না।(১)

(১) অর্থাৎ দুনিয়াতে রিযিক ও জীবনোপকরণের ভাণ্ডার তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন। ফলে তারা মনে করবে যে, তারা যা করে চলছে তা গ্রহণযোগ্য। এভাবেই তারা প্রতারিত হতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করবেন। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও এসেছে, “অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমরা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল। ফলে যালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল এবং সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই [সূরা আল-আনআমঃ ৪৪–৪৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮২) যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে আমি তাদেরকে ক্রমে ক্রমে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতেও পারবে না!

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৩ وَ اُمۡلِیۡ لَهُمۡ ؕ۟ اِنَّ كَیۡدِیۡ مَتِیۡنٌ ﴿۱۸۳﴾
و املی لهم ان كیدی متین ﴿۱۸۳﴾
• আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কৌশল শক্তিশালী।

-আল-বায়ান

• আমি তাদেরকে অবকাশ ও সুযোগ দেই, আমার কুশলী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত মযবুত।

-তাইসিরুল

• আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আমার কৌশল অতি শক্ত।

-মুজিবুর রহমান

• And I will give them time. Indeed, my plan is firm.

-Sahih International

১৮৩. আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৩) আর আমি তাদেরকে ঢিল দেব, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। [1]

[1] এ হল সেই ঢিল; যাতে অবকাশ দিয়ে ধীরে ধীরে পাকড়াও করা হয়; যা মহান আল্লাহ পরীক্ষাস্বরূপ ব্যক্তি ও জাতিকে দিয়ে থাকেন। তারপর যখন তার পাকড়াও করার ইচ্ছা হয়, তখন তাঁর শক্তি থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। কারণ তাঁর কৌশল অতি শক্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৪ اَوَ لَمۡ یَتَفَكَّرُوۡا ٜ مَا بِصَاحِبِهِمۡ مِّنۡ جِنَّۃٍ ؕ اِنۡ هُوَ اِلَّا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۸۴﴾
او لم یتفكروا ٜ ما بصاحبهم من جنۃ ان هو الا نذیر مبین ﴿۱۸۴﴾
• তারা কি চিন্তা করেনি যে, তাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন মস্তিষ্ক বিকৃতি নেই; সে তো স্পষ্ট সতর্ককারী।

-আল-বায়ান

• তারা কি চিন্তা-ভাবনা করে না সে তাদের সঙ্গী (আমার রসূল) তো উম্মাদ নয়, সে তো প্রকাশ্য এক সতর্ককারী।

-তাইসিরুল

• তারা কি এটা চিন্তা করেনা যে, তাদের সঙ্গী পাগল নয়? সে নিছক একজন সুস্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী!

-মুজিবুর রহমান

• Then do they not give thought? There is in their companion [Muhammad] no madness. He is not but a clear warner.

-Sahih International

১৮৪. তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদের সাথী মোটেই উন্মাদ নন(১); তিনি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী।

(১) সাথী বলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা এ ঘোষণা দিয়েছেন, “আর তোমাদের সাথী উন্মাদ নন” [আত-তাকওয়ীর: ২২] আরও বলেন, “বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু-দুজন অথবা এক-একজন করে দাঁড়াও, তারপর তোমরা চিন্তা করে দেখ—তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন উন্মাদন নেই। আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তিনি তোমাদের জন্য একজন সতর্ককারী মাত্র।” [সাবা: ৪৬] অর্থাৎ তিনি তাদের মধ্যেই জন্মলাভ করেন। তাদের মধ্যে বসবাস করেন। শৈশব থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পন করেন। নবুওয়াত লাভের পূর্বে সমগ্র জাতি তাকে একজন অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট-ভারসাম্যপূর্ণ স্বভাব প্রকৃতি ও সুস্থ মন-মগজধারী মানুষ বলে জানতো।

নবুওয়াত লাভের পর যে-ই তিনি মানুষের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পৌছাতে শুরু করলেন, অমনি তাকে পাগল বলা আরম্ভ হয়ে গেল। একথা সুস্পষ্ট, নবী হওয়ার আগে তিনি যেসব কথা বলতেন সেগুলোর জন্য তাকে পাগল বলা হয়নি বরং নবী হওয়ার পর তিনি যেসব কথা প্রচার করতে থাকেন সেগুলোর জন্য তাকে পাগল বলা হতে থাকে। তাই এখানে বলা হচ্ছে, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছে, যে কথাগুলো তিনি বলছেন তার মধ্যে কোনটি পাগলামির কথা? কোন কথাটি অর্থহীন, ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক? যদি তারা চিন্তা করতো তাহলে তারা নিজেরাই বুঝতে পারতো যে, শিরকের মতবাদ খণ্ডন, তাওহীদের প্রমাণ, রবের বন্দেগীর দাওয়াত এবং মানুষের দায়িত্ব পালন ও জবাবদিহি সম্পর্কে তাদের সাথী তাদেরকে যা কিছু বুঝাচ্ছেন তা কোন পাগলের কথা নয়। তার স্বভাব ও চরিত্র সবচেয়ে উন্নত। তার কথা সবচেয়ে সুন্দর। তিনি তো শুধু কল্যাণের দিকেই আহবান করেন। অন্যায় ও অকল্যাণ থেকেই শুধু নিষেধ করেন। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৪) তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদের সঙ্গী (নবী) উন্মাদ নয়, সে তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী। [1]

[1] صاحب (সঙ্গী) বলতে নবী (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। যাঁর সম্পর্কে মুশরিকরা কখনও যাদুকর, কখনো বা পাগল বলত। (নাউযু বিল্লাহ) মহান আল্লাহ বলেন, এ হল তোমাদের চিন্তা-ভাবনা না করার ফল। সে তো আমার বার্তাবাহক, যে আমার আদেশ পৌঁছিয়ে থাকে এবং যারা তা হতে উদাসীন ও বৈমুখ থাকে, তাদের জন্য সতর্ককারী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৫ اَوَ لَمۡ یَنۡظُرُوۡا فِیۡ مَلَكُوۡتِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ مِنۡ شَیۡءٍ ۙ وَّ اَنۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّكُوۡنَ قَدِ اقۡتَرَبَ اَجَلُهُمۡ ۚ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَهٗ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾
او لم ینظروا فی ملكوت السموت و الارض و ما خلق الله من شیء و ان عسی ان یكون قد اقترب اجلهم فبای حدیث بعدهٗ یؤمنون ﴿۱۸۵﴾
• তারা কি দৃষ্টিপাত করেনি আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্বে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি? আর (এর প্রতি যে) হয়তো তাদের নির্দিষ্ট সময় নিকটে এসে গিয়েছে? সুতরাং তারা এরপর আর কোন্ কথার প্রতি ঈমান আনবে?

-আল-বায়ান

• তারা কি আসমান-যমীনের রাজত্বে আর আল্লাহ যে সব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তাতে কিছুই দেখে না? তারা কি চিন্তা করে না যে হয়ত তাদের জীবনের মেয়াদ নিকটেই এসে গেছে? এরপর তারা কোন বাণীর উপর ঈমান আনবে?

-তাইসিরুল

• তারা কি আল্লাহর সৃষ্টি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোন গভীর চিন্তা করেনা? এবং তাদের জীবনে নির্দিষ্ট মেয়াদটি পূর্ণ হওয়ার সময়টি হয়তো বা নিকটে এসে পড়েছে, তারা কি এটাও চিন্তা করেনা? এরপর তারা আর কোন কথায় ঈমান আনবে?

-মুজিবুর রহমান

• Do they not look into the realm of the heavens and the earth and everything that Allah has created and [think] that perhaps their appointed time has come near? So in what statement hereafter will they believe?

-Sahih International

১৮৫. তারা কি লক্ষ্য করে না, আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা করেছেন তার সম্পর্কে?(১) আর এর সম্পর্কেও যে, সম্ভবত তাদের নির্ধারিত সময় নিকটে এসে গিয়েছে, কাজেই এরপর তারা আর কোন কথায় ঈমান আনবে?

(১) অর্থাৎ আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা তারা কি আসমান ও যমীনে আল্লাহর রাজত্ব ও ক্ষমতা, এতদুভয়ে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারে না? তাহলে তারা এর মাধ্যমে শিক্ষা নিতে পারত যে, এগুলো একমাত্র সে সত্ত্বার জন্য যার কোন দৃষ্টান্ত নেই, নেই কোন সমকক্ষ, ফলে তারা তার উপর ঈমান আনত, তার রাসূলকে সত্য বলে মানত। তার আনুগত্যের দিকে ফিরে আসত। তার জন্য সাব্যস্ত করা যাবতীয় শরীক ও মূর্তি থেকে নিজেদেরকে বিমুক্ত ঘোষণা করত। তাছাড়া তারা এটাও বুঝতে সক্ষম হতো যে, এভাবে তাদের জীবনের মেয়াদও ফুরিয়ে আসছে, তখন যদি কুফরি অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয় তবে তাদের স্থান হবে আল্লাহর আযাবেই। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৫) তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের প্রতি, আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি এবং এর প্রতিও যে, তাদের (মরণের) নির্ধারিতকাল সম্ভবতঃ নিকটবর্তী হয়ে গেছে।[1] সুতরাং এর পর তারা আর কোন্ কথায় বিশ্বাস করবে? [2]

[1] অর্থাৎ, এই সকল জিনিস নিয়েও যদি তারা চিন্তা-ভাবনা করত, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহর উপর ঈমান আনত, তার রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত ও তাঁর অনুসরণ করত, তারা যে আল্লাহর সাথে শিরক করে তা ত্যাগ করত এবং এ ব্যাপারে ভয় করত যে, তাদের মৃত্যু যেন তাদের কুফরীর অবস্থায় থাকাকালীন না আসে।

[2] حديث (কথা বা বাণী) বলতে কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, নবী (সাঃ)-এর সতর্ক করা ও ভয় দেখানো এবং কুরআন মাজীদ (পড়া বা শোনার) পরও যদি তারা ঈমান না আনে, তাহলে তাদেরকে সতর্ক করার জন্য আর কি হতে পারে, যা আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হলে তারা ঈমান আনবে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৬ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَلَا هَادِیَ لَهٗ ؕ وَ یَذَرُهُمۡ فِیۡ طُغۡیَانِهِمۡ یَعۡمَهُوۡنَ ﴿۱۸۶﴾
من یضلل الله فلا هادی لهٗ و یذرهم فی طغیانهم یعمهون ﴿۱۸۶﴾
• আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন হিদায়াতকারী নেই এবং তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় ছেড়ে দেন, তারা দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ায়।

-আল-বায়ান

• আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন হিদায়াত নেই। তিনি তাদেরকে তাদের বিদ্রোহী ভূমিকায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরপাক খেতে ছেড়ে দেন।

-তাইসিরুল

• যাদেরকে আল্লাহ বিপথগামী করেন, তাদের কোন পথ প্রদর্শক নেই, আর আল্লাহ তাদেরকে তাদেরই বিভ্রান্তির মধ্যে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।

-মুজিবুর রহমান

• Whoever Allah sends astray - there is no guide for him. And He leaves them in their transgression, wandering blindly.

-Sahih International

১৮৬. আল্লাহ যাদেরকে বিপথগামী করেন তাদের কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেন।(১)

(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, আর আল্লাহ্‌ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান তার জন্য আল্লাহর কাছে আপনার কিছুই করার নেই। [সূরা আল-মায়েদাহ: ৪১] আরও বলেন, “বলুন, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য কর। আর যারা ঈমান আনে না, নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন এমন সম্প্রদায়ের কোন কাজে আসে না।” [সূরা ইউনুস: ১০১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৬) আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৭ یَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰهَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ رَبِّیۡ ۚ لَا یُجَلِّیۡهَا لِوَقۡتِهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕۘؔ ثَقُلَتۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَا تَاۡتِیۡكُمۡ اِلَّا بَغۡتَۃً ؕ یَسۡـَٔلُوۡنَكَ كَاَنَّكَ حَفِیٌّ عَنۡهَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ اللّٰهِ وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۷﴾
یسـٔلونك عن الساعۃ ایان مرسها قل انما علمها عند ربی لا یجلیها لوقتها الا هو ثقلت فی السموت و الارض لا تاتیكم الا بغتۃ یسـٔلونك كانك حفی عنها قل انما علمها عند الله و لكن اكثر الناس لا یعلمون ﴿۱۸۷﴾
• তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও যমীনের উপর তা (কিয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’।

-আল-বায়ান

• তারা তোমাকে ক্বিয়ামাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে কখন তা সংঘটিত হবে। বল, ‘এ বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে আমার প্রতিপালকের নিকট। তিনি ছাড়া কেউ প্রকাশ করতে পারে না কখন তা ঘটবে। আসমান ও যমীনে তা হবে বড় এক কঠিন দিন। আকস্মিকভাবে তা তোমাদের উপর এসে পড়বে।’ লোকেরা তোমাকে এ সম্পর্কে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে যেন তুমি আগ্রহ সহকারে এটার খোঁজে ব্যস্ত আছ। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান তো শুধু আল্লাহরই নিকট আছে। কিন্তু (এ সত্যটা) অধিকাংশ লোকই জানে না।’

-তাইসিরুল

• তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামাত কখন সংঘটিত হবে? তুমি বলে দাওঃ এ বিষয়ে আমার রাব্বই একমাত্র জ্ঞানের অধিকারী, শুধু তিনিই ওটা ওর নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন, তা হবে আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এক ভয়ংকর ঘটনা। তোমাদের উপর ওটা আকস্মিকভাবেই আসবে। তুমি যেন এ বিষয় সবিশেষ অবগত, এটা ভেবে তারা তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলে দাওঃ এ সম্পর্কীয় জ্ঞান একমাত্র আমার রবেরই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ কথা বুঝেনা।

-মুজিবুর রহমান

• They ask you, [O Muhammad], about the Hour: when is its arrival? Say, "Its knowledge is only with my Lord. None will reveal its time except Him. It lays heavily upon the heavens and the earth. It will not come upon you except unexpectedly." They ask you as if you are familiar with it. Say, "Its knowledge is only with Allah, but most of the people do not know."

-Sahih International

১৮৭. তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) তা কখন ঘটবে?(১) বলুন, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন; আসমানসমূহ ও যমীনে সেটা ভারী বিষয়(২)। হঠাৎ করেই তা তোমাদের উপর আসবে(৩)। আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞানী মনে করে তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। বলুন, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই নিকট, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।(৪)

(১) এ আয়াতগুলো নাযিলের পেছনে বিশেষ একটি ঘটনা কার্যকর ছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, জাবাল ইবন আবি কুশাইর ও শামওয়াল ইবন যায়দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের নিকট ঠাট্টা ও বিদ্রুপচ্ছলে জিজ্ঞাসা করল যে, আপনি কেয়ামত আগমনের সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন- এ ব্যাপারে যদি আপনি সত্য নবী হয়ে থাকেন, তবে নির্দিষ্ট করে বলুন, কেয়ামত কোন সালের কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে তো আমরাও জানি। এ ঘটনার ভিত্তিতেই আয়াতটি নাযিল হয়। [তাবারী]

(২) এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে, এক. কিয়ামতের জ্ঞান অত্যন্ত ভারী বিষয়, আসমান ও যমীনের অধিবাসীদের থেকে তা গোপন রাখা হয়েছে। সুতরাং কোন নবী-রাসূল বা ফেরেশতাকেও আল্লাহ সে জ্ঞান দেননি। আর যে কোন জ্ঞান গোপন রাখা হয় তা অন্তরের উপর ভারী হয়ে থাকে। দুই. কিয়ামত এত ভারী সংবাদ যে আসমান ও যমীন সেটাকে সহ্য করতে পারে না। কারণ, আসমানসমূহ ফেটে যাবে, তারকাসমূহ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। আর সাগরসমূহ শুকিয়ে যাবে। তিন. কিয়ামতের গুণাগুণ বর্ণনা আসমান ও যমীনের অধিবাসীদের উপর কঠিন। চার. কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা তাদের জন্য এক ভারী বিষয়। [ফাতহুল কাদীর]

(৩) এ আয়াতে উল্লেখিত السَّاعَة শব্দটি আরবী ভাষায় সামান্য সময় বা মুহুর্তকে বলা হয়। আভিধানিকভাবে যার কোন বিশেষ পরিসীমা নেই। আর গাণিতিকদের পরিভাষায় রাত ও দিনের চব্বিশ অংশের এক অংশকে বলা হয় “সা'আহ”, যাকে বাংলায় ঘন্টা নামে অভিহিত করা হয়। কুরআনের পরিভাষায় এ শব্দটি সে দিবসকে বুঝাবার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা হবে সমগ্র সৃষ্টির মৃত্যুদিবস এবং সেদিনকেও বলা হয় যাতে সমগ্র সৃষ্টি পুনরায় জীবিত হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে উপস্থিত হবে। أَيَّانَ (আইয়্যানা) অর্থ কবে। আর مُرسى (মুরসা) অর্থ অনুষ্ঠিত কিংবা স্থাপিত হওয়া। يُجَلِّيهَا শব্দটি تجلية থেকে গঠিত। এর অর্থ প্রকাশিত এবং খোলা। بغتة (বাগতাতান) অর্থ অকস্মাৎ। حفي (হাফিয়ূন) অর্থ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, জ্ঞানী ও অবহিত ব্যক্তি। প্রকৃতপক্ষে এমন লোককে ‘হাফী’ বলা হয়, যে প্রশ্ন করে বিষয়ের পরিপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করে নিতে পারে। [তাবারী] কাজেই আয়াতের মর্ম দাড়াল এই যে, এরা আপনার নিকট কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে যে, তা কবে আসবে? আপনি তাদেরকে বলে দিন, এর নির্দিষ্টতার জ্ঞান শুধুমাত্র আমার পালনকর্তারই রয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্ব থেকে কারো জানা নেই এবং সঠিক সময়ও কেউ জানতে পারবে না। নির্ধারিত সময়টি যখন উপস্থিত হয়ে যাবে, ঠিক তখনই আল্লাহ্ তা'আলা তা প্রকাশ করে দেবেন।

এতে কোন মাধ্যম থাকবে না। কেয়ামতের ঘটনাটি আসমান ও যমীনের জন্যও একান্ত ভয়ানক ঘটনা হবে। সেগুলোও টুকরো টুকরো হয়ে উড়তে থাকবে। সুতরাং এহেন ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে পূর্ব থেকে প্রকাশ না করাই বিচক্ষণতার দাবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের আকস্মিক আগমন সম্পর্কে বলেছেন, মানুষ নিজ নিজ কাজে পরিব্যস্ত থাকবে। এক লোক খরিদদারকে দেখাবার উদ্দেশ্যে কাপড়ের থান খুলে সামনে ধরে থাকবে, সে (সওদাগর) এ বিষয়টিও সাব্যস্ত করতে পারবে না, এরই মধ্যে কেয়ামত এসে যাবে। এক লোক তার উটনীর দুধ দুইয়ে নিয়ে যেতে থাকবে এবং তখনো তা ব্যবহার করতে পারবে না, এরই মধ্যে কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।

কেউ নিজের হাউজ মেরামত করতে থাকবে- তা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বেই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ হয়ত খাবারের লোকমা হাতে তুলে নেবে, তা মুখে দেবার পূর্বেই কেয়ামত হয়ে যাবে। [বুখারীঃ ৬৫০৬, মুসলিমঃ ২৯৫৪] সুতরাং যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুর তারিখ ও সময়-ক্ষণ অনির্দিষ্ট ও গোপন রাখার মাঝে বিরাট তাৎপর্য নিহিত রয়েছে, তেমনিভাবে কেয়ামতকেও-যা সমগ্র বিশ্বের সামগ্রিক মৃত্যুরই নামান্তর-তাকে গোপন এবং অনির্দিষ্ট রাখার মধ্যেও বিপুল রহস্য ও তাৎপর্য বিদ্যমান।

(৪) বলা হয়েছে, আপনি লোকদিগকে বলে দিন যে, প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের সঠিক তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তার কোন ফিরিশতা কিংবা নবী-রাসূলগণেরও জানা নেই। তবে হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে কেয়ামতের কিছু নিদর্শন ও লক্ষণাদি সম্পর্কিত জ্ঞান দান করা হয়েছে। আর তা হল এই যে, এখন তা নিকটবর্তী। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম বহু বিশুদ্ধ হাদীসে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমার আবির্ভাব এবং কেয়ামত এমনভাবে মিশে আছে, যেমন মিশে থাকে হাতের দু’টি আঙ্গুল।” [বুখারীঃ ৬৫০৩-৬৫০৫, মুসলিমঃ ২৯৫০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৭) তারা তোমাকে কিয়ামত[1] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে?’[2] বল, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের নিকটেই আছে।[3] কেবল তিনিই যথাকালে তা প্রকাশ করবেন। তা হবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা।[4] আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের নিকট আসবে। তুমি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করেই তারা তোমাকে প্রশ্ন করে।[5] তুমি বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকটেই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’

[1] ساعة সময় (ক্ষণ বা মুহূর্ত)এর অর্থে ব্যবহার হয়। কিয়ামত দিবসকে الساعة বলা হয়েছে, যেহেতু তা হঠাৎ এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, ক্ষণিকের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। অথবা দ্রুত হিসাব-নিকাশের দিকে লক্ষ্য করে কিয়ামতের সময়কে الساعة (সময়) বলা হয়েছে।

[2] أرسي يرسى এর অর্থঃ সংঘটিত হওয়া। অর্থাৎ, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে?

[3] অর্থাৎ, তার সত্যিকার জ্ঞান না কোন ফিরিশতার আছে আর না কোন নবীর। আল্লাহ ছাড়া কিয়ামতের সময়জ্ঞান কারো নেই। তিনিই তা যথাসময়ে প্রকাশ করবেন।

[4] এর এক দ্বিতীয় অর্থ রয়েছে, তার জ্ঞান আকাশ ও পৃথিবীবাসীদের জন্য ভারী। কারণ তা গুপ্ত, আর গুপ্ত বস্তু হৃদয়ের জন্য ভারীই হয়ে থাকে।

[5] حَفِي এর অর্থ কারো পিছনে লেগে জিজ্ঞাসা ও যাচাই করা। অর্থাৎ, তারা কিয়ামত সম্বন্ধে তোমাকে এমনভাবে জিজ্ঞাসা করছে, যেন তুমি নিজ প্রভুর পিছনে লেগে কিয়ামতের আবশ্যিক জ্ঞান অর্জন করে রেখেছ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৮ قُلۡ لَّاۤ اَمۡلِكُ لِنَفۡسِیۡ نَفۡعًا وَّ لَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُ ؕ وَ لَوۡ كُنۡتُ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ لَاسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ الۡخَیۡرِۚۖۛ وَ مَا مَسَّنِیَ السُّوۡٓءُ ۚۛ اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِیۡرٌ وَّ بَشِیۡرٌ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۸۸﴾
قل لا املك لنفسی نفعا و لا ضرا الا ما شآء الله و لو كنت اعلم الغیب لاستكثرت من الخیر و ما مسنی السوٓء ان انا الا نذیر و بشیر لقوم یؤمنون ﴿۱۸۸﴾
• বল, ‘আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে’।

-আল-বায়ান

• বল, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তাহলে নিজের জন্য অনেক বেশি ফায়দা হাসিল করে নিতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। যারা ঈমান আনবে আমি সেই সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু নই।

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "I hold not for myself [the power of] benefit or harm, except what Allah has willed. And if I knew the unseen, I could have acquired much wealth, and no harm would have touched me. I am not except a warner and a bringer of good tidings to a people who believe."

-Sahih International

১৮৮. বলুন, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তবে তো আমি অনেক কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আমি তো আর কিছুই নই।(১)

(১) এ আয়াতে মুশরিক ও সাধারণ মানুষের সেই ভ্রান্ত আকীদার খণ্ডন করা হয়েছে; যা তারা নবী-রাসূলগণের ব্যাপারে পোষণ করত যে, তারা গায়েবী বিষয়েও অবগত রয়েছেন। তাদের এই শির্কী আকীদার খণ্ডন উপলক্ষে বলা হয়েছে যে, ইলমে-গায়েব এবং সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর ব্যাপক ইলম শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। এটা তারই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এতে কোন সৃষ্টিকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, তা ফিরিশতাই হোক আর নবী ও রাসূলগণই হোক, শির্ক এবং মহাপাপ। তেমনিভাবে প্রত্যেক লাভ-ক্ষতি কিংবা মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক হওয়াও এককভাবে আল্লাহ তা'আলারই গুণ। এতে কাউকে অংশীদার দাঁড় করানোও শির্ক।

বস্তুতঃ এই শির্ক বা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে কোন অংশীদারিত্বের আকীদাকে খণ্ডন করার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটেছে। তাই এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি ঘোষণা করে দিন যে, আমি আলেমুল-গায়েব নই যে, যাবতীয় পূর্ণ জ্ঞান আমার থাকা অনিবার্য হবে। তাছাড়া আমার যদি গায়বী জ্ঞান থাকতই, তবে আমি প্রত্যেকটি লাভজনক বস্তুই হাসিল করে নিতাম, কোন একটি লাভও আমার হাতছাড়া হতে পারত না। আর প্রতিটি ক্ষতিকর বিষয় থেকে সর্বদা রক্ষিত থাকতাম। কখনো কোন ক্ষতি আমার ধারে-কাছে পর্যন্ত পৌছাতে পারত না। অথচ এতদুভয় বিষয়ের কোনটিই বাস্তব নয়। বহু বিষয় রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়ত্ত করতে চেয়েছেন, কিন্তু তা করতে পারেননি।

তাছাড়া বহু দুঃখ-কষ্ট রয়েছে যা থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি ইচ্ছা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে পতিত হতে হয়েছে। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধে সাহাবায়ে কেরামের সাথে উমরা করার উদ্দেশ্যে হারাম শরীফের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে যান, কিন্তু হারাম শরীফে প্রবেশ কিংবা উমরা করা তখনো সম্ভব হতে পারেনি; সবাইকে ইহরাম খুলে ফিরে আসতে হয়েছে। তেমনিভাবে ওহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত হন এবং মুসলিমদেরকে সাময়িক পরাজয় বরণ করতে হয়। এমনি আরো বহু অতি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে সংঘটিত হয়েছে। এ সবগুলো থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি গায়েবের জ্ঞান রাখেন না। শুধু ততটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানিয়েছেন। আর আল্লাহ তাদেরকে জানিয়ে দেয়ার পর সেটা জানাকে আর গায়েবের জ্ঞান বলা যাবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৮) বল, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরই আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তাহলে তো আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী।’[1]

[1] এই আয়াত এ বিষয়টিকে কত স্পষ্ট করে যে, নবী (সাঃ) গায়বের খবর জানতেন না। গায়েবের জ্ঞান কেবল মহান আল্লাহর আছে। কিন্তু অন্যায় ও অজ্ঞতা এমন সীমা ছাড়িয়ে গেছে যে, এ সত্ত্বেও বিদআতীরা নবী (সাঃ)-কে গায়বের খবর জানতেন বলে মনে করে! যুদ্ধে তাঁর দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছে, তাঁর মুখ মন্ডলও রক্তাক্ত হয়েছে। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, ‘‘সেই জাতি কিভাবে সফল হতে পারে, যে জাতি তার নবীর মাথা যখম করে দেয়!’’ (হাদীস গ্রন্থে উক্ত ঘটনা ও নিমেনর ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে,) আয়েশা (রাঃ) র চরিত্রে যখন কলঙ্ক দেওয়া হয়, তখন পূর্ণ একমাস নবী (সাঃ) অত্যন্ত অস্থিরতা ও পেরেশানী ভোগ করেন। একটি ইয়াহুদী মহিলা তাঁকে দাওয়াত দিয়ে খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়; যা তিনি ও সাহাবাগণও খেয়ে ফেলেন। এমন কি ঐ বিষাক্ত খাবার খেয়ে একজন সাহাবীর মৃত্যুও ঘটে। আর খোদ নবী (সাঃ) জীবনভোর বিষের প্রতিক্রিয়া ভোগ করেন। এই ঘটনা ও অন্যান্য বহু ঘটনা প্রমাণ করে যে, গায়বের খবর না জানার ফলেই তাঁকে এরূপ কষ্ট যাতনা ভোগ করতে হয়েছিল। যাতে কুরআনের এই সত্যতাই প্রমাণিত হয় যে, ‘‘যদি আমি গায়ব জানতাম, তাহলে আমার কোন অমঙ্গল হত না।’’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৮৯ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ جَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا لِیَسۡكُنَ اِلَیۡهَا ۚ فَلَمَّا تَغَشّٰهَا حَمَلَتۡ حَمۡلًا خَفِیۡفًا فَمَرَّتۡ بِهٖ ۚ فَلَمَّاۤ اَثۡقَلَتۡ دَّعَوَا اللّٰهَ رَبَّهُمَا لَئِنۡ اٰتَیۡتَنَا صَالِحًا لَّنَكُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِیۡنَ ﴿۱۸۹﴾
هو الذی خلقكم من نفس واحدۃ و جعل منها زوجها لیسكن الیها فلما تغشها حملت حملا خفیفا فمرت بهٖ فلما اثقلت دعوا الله ربهما لئن اتیتنا صالحا لنكونن من الشكرین ﴿۱۸۹﴾
• তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হল, তখন সে হালকা গর্ভ ধারণ করল এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। অতঃপর যখন সে ভারী হল, তখন উভয়ে তাদের রব আল্লাহকে ডাকল, ‘যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’।

-আল-বায়ান

• তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন আর তাত্থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। যখন সে স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হয় তখন সে লঘু গর্ভধারণ করে আর তা নিয়ে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন ভারী হয়ে যায় তখন উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ডেকে বলে, ‘যদি তুমি আমাদেরকে (গঠন ও স্বভাবে) ভাল সন্তান দান কর তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’

-তাইসিরুল

• তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি হতেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যেন সে তার নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর যখন সে তার সাথে মিলনে প্রবৃত্ত হয় তখন সেই মহিলাটি এক গোপন ও লঘু গর্ভ ধারণ করে, আর ওটা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকে। যখন তার গর্ভ গুরুভার হয় তখন তারা উভয়েই তাদের রবের কাছে প্রার্থনা করেঃ আপনি যদি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করেন তাহলে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হব।

-মুজিবুর রহমান

• It is He who created you from one soul and created from it its mate that he might dwell in security with her. And when he covers her, she carries a light burden and continues therein. And when it becomes heavy, they both invoke Allah, their Lord, "If You should give us a good [child], we will surely be among the grateful."

-Sahih International

১৮৯. তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।(১) তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গৰ্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।

(১) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, হাওয়াকে আদম থেকে সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে, তার কাছে গেলে মন প্রশান্ত হবে। তার সাথে সহজ সম্পর্ক তৈরী হবে, সন্তুষ্টি আসবে। অন্য জায়গায় বলা হয়েছে যে, তিনি সন্তান-সন্তুতিদেরকেও একই উদ্দেশ্যে মানুষকে প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং সৃজন করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সহমর্মিতা। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। [সূরা আর-রূম: ২১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮৯) তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন[1] এবং তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন,[2] যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়।[3] অতঃপর যখন সে তার সাথে মিলন করে,[4] তখন সে এক লঘু গর্ভ ধারণ করে এবং এ নিয়ে সে (চলা-ফেরা করে) কাল অতিবাহিত করে।[5] অতঃপর তার গর্ভ যখন গুরুভার হয়, তখন তারা উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, ‘যদি তুমি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান কর, তাহলে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’[6]

[1] অর্থাৎ, আদম (আঃ) হতে সৃষ্টির সূচনা। সেই কারণে তাঁকে প্রথম মানব বা মানব-পিতা বলা হয়।

[2] এর থেকে হাওয়া (আলাইহাস সালাম)-কে বুঝানো হয়েছে; যিনি আদমের জীবন-সঙ্গিনী ছিলেন। তাঁর সৃষ্টি আদম হতেই হয়েছিল। যা منها এর সর্বনাম হতে বুঝা যায়। (বিস্তারিত দেখুন সূরা নিসা ১নং আয়াতের টীকায়।)

[3] অর্থাৎ, যাতে সে তাঁর নিকট প্রশান্তি ও সুখ লাভ করে। কারণ, প্রত্যেক জীব কেবল স্বজাতির কাছেই নৈকট্য লাভ করে ও শান্তি পায়; যা মানসিক প্রশান্তির জন্য একান্ত জরুরী। নৈকট্য বিনা তা স‎‎ম্ভব নয়। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, {وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً} অর্থাৎ, তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম ২১ আয়াত) অর্থাৎ, মহান আল্লাহ নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক যে টান ও আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির এই চাহিদা জোড়া সৃষ্টির মাধ্যমে পূরণ হয় এবং এক অপরের নৈকট্য ও ভালবাসা অর্জন করে। সুতরাং বাস্তব এই যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে প্রেম-ভালবাসা দেখা যায়, তা পৃথিবীর আর কারো মাঝে দেখা যায় না।

[4] অর্থাৎ, এইভাবেই মানব-বংশ বিস্তার লাভ করে ও পরবর্তীতে এক জোড়া স্বামী-স্ত্রী এক অপরের সাথে মিলিত হয়। تَغَشَّاها এর আসল অর্থ ঢেকে নেওয়া, উদ্দেশ্য যৌন-মিলনে লিপ্ত হওয়া।

[5] অর্থাৎ, গর্ভের শুরু দিনগুলিতে। শুক্র হতে রক্তপিন্ড এবং তা হতে গোশতপিন্ডে পরিণত হওয়া পর্যন্ত গর্ভ হাল্কাই থাকে, অনুভবও হয় না, আর মহিলাদের বিশেষ কোন কষ্টও হয় না।

[6] ভারী হয়ে যাওয়ার অর্থ যখন ভ্রূণ পেটে বড় হয়ে যায়। আর জন্মের সময় যত নিকটবর্তী হয়, পিতা-মাতার অন্তরে নানান দুশ্চিন্তা ও আশংকা উঁকি মারে। আর এটি মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস যে, বিপদের সময় আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়। অতএব তারা দু’জন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ১৯০ فَلَمَّاۤ اٰتٰهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهٗ شُرَكَآءَ فِیۡمَاۤ اٰتٰهُمَا ۚ فَتَعٰلَی اللّٰهُ عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۱۹۰﴾
فلما اتهما صالحا جعلا لهٗ شركآء فیما اتهما فتعلی الله عما یشركون ﴿۱۹۰﴾
• অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে এক সুসন্তান দান করলেন, তখন তাদেরকে তিনি যা প্রদান করেছেন সে বিষয়ে তারা তাঁর বহু শরীক নির্ধারণ করল। বস্তুত তারা যাদের শরীক করে তাদের থেকে আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে।

-আল-বায়ান

• যখন তিনি তাদেরকে সর্বাঙ্গ-সুন্দর সন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেয়া হয় তাতে অন্যকে আল্লাহর শরীক গণ্য করে। তারা যাদেরকে শরীক গণ্য করে আল্লাহ তাদের থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।

-তাইসিরুল

• অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে সৎ ও সুস্থ সন্তান দান করেন তখন তারা আল্লাহর দেয়া এই দানে অংশী স্থাপন করে, কিন্তু তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তার অনেক উর্ধ্বে।

-মুজিবুর রহমান

• But when He gives them a good [child], they ascribe partners to Him concerning that which He has given them. Exalted is Allah above what they associate with Him.

-Sahih International

১৯০. অতঃপর তিনি (আল্লাহ) যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে তিনি যা দিয়েছেন সেটাতে আল্লাহ্‌র বহু শরীক নির্ধারণ করে(১), বস্তুত তারা যাদেরকে (তার সাথে) শরীক করে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে।(২)

(১) কাতাদা বলেন, হাসান বসরী বলতেন, এর দ্বারা ইয়াহুদী ও নাসারাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদেরকে সন্তান-সন্তুতি দান করেন, কিন্তু তারা সেগুলোকে ইয়াহুদী কিংবা নাসারা বানিয়ে ছাড়ে। [তাবারী; ইবন কাসীর]

(২)  ইয়াহুদী ও নাসারা ছাড়াও বাস্তবে যারাই আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অন্যের জন্য নির্দিষ্ট করে তারাও এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহই সর্বপ্রথম মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। মুশরিকরাও এ কথা অস্বীকার করে না। তারপর পরবর্তী কালের প্রত্যেকটি মানুষকেও তিনি অস্তিত্ব দান করেন। আর একথাটিও মুশরিকরা জানে। তাই দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হবার ব্যাপারে আল্লাহর উপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়।

কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মত ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকাণ্ড নবতর রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অবতার, অলী ও পীরের নামে নজরানা ও শিন্নি নিবেদন করা হয় এবং শিশুকে এমন সব নামে অভিহিত করা হয় যেন মনে হয় সে আল্লাহর নয়, বরং অন্য কারোর অনুগ্রহের ফল। যেমন তার নামকরণ করা হয় হোসাইন বখশ, (হোসাইনের দান) পীর বখশ (পীরের দান), আব্দুর রাসূল (রাসূলের দাস), আবদুল উযযা (উযযার দাস), আবদে শামস (সূর্য দেবতার দাস) ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আরবের মুশরিক সম্প্রদায়ের অপরাধ ছিল এই যে, তারা সুস্থ, সবল ও পূর্ণ অবয়ব সম্পন্ন সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করতো কিন্তু সন্তানের জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করতো। নিঃসন্দেহে তাদের এ অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে আমরা যে শির্কের চেহারা দেখছি তা তার চাইতেও খারাপ।

এ তাওহীদের তথাকথিত দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভ সঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মানত মানে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় গিয়ে নজরানা নিবেদন করে। এরপরও জাহেলী যুগের আরবরাই কেবল মুশরিক, আর এরা নাকি পাক্কা তাওহীদবাদী!

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯০) সুতরাং তিনি যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে যা দেওয়া হয়, সে সম্বন্ধে আল্লাহর অংশী করে।[1] কিন্তু তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে।

[1] এখানে শরীক করার অর্থ এমন নামকরণ করা, যাতে শিরক হয়; যেমন ইমাম বখশ, গোলাম পীর, আব্দুর রসূল, বান্দা (বন্দে) আলী ইত্যাদি। যাতে প্রকাশ হয় যে, এই সন্তান অমুক সাহেবের দান অথবা তার দাস। ‘নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।’ অথবা এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আমি অমুক পীরের মাযারে গিয়েছিলাম, আর সেখান থেকেই এই সন্তান লাভ হয়েছে। অথবা সন্তান লাভের পর কোন মৃত ব্যক্তির নামে নযর-নিয়ায দেওয়া। অথবা সন্তানকে কোন মাযারে নিয়ে গিয়ে তার মাথা সেখানে ঠেকানো; এই ধারণায় যে, তারই বর্কতেই এই সন্তান হয়েছে। এই সকল কর্মই আল্লাহর সাথে শরীক করার পর্যায়ভুক্ত; যা দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম জনসাধারণের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছে। পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ শিরকের খন্ডন করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১৮১ থেকে ১৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 18 19 20 21 পরের পাতা »