-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪১. আর স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদেরকে ফিরআউনের অনুসারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। তারা তোমাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; এতে ছিল তোমাদের রবের এক মহাপরীক্ষা।(১)
(১) অর্থাৎ আমরা বনী-ইসরাঈলকে সাগর পার করে দিয়েছি। ফিরআউন সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় বনী-ইসরাঈলের যে অলৌকিক কৃতকার্যতা ও প্রশান্তি লাভ হয়, তার সে প্রতিক্রিয়াই হয়েছে যা সাধারণতঃ প্রাচুর্য আসার পর বস্তুবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারাও ভোগবিলাসের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করল। ঘটনাটি হল এই যে, এই জাতি মূসা আলাইহিস সালামের মু'জিযা বলে সদ্য লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল এবং গোটা ফিরআউন সম্প্রদায়ের সাগরে ডুবে মরার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল, কিন্তু তা সত্বেও একটু অগ্রসর হতেই তারা এমন এক মানব গোষ্ঠীর বাসভূমির উপর দিয়ে অতিক্রম করল, যারা বিভিন্ন মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল।
এই দেখে বনী ইসরাঈলেরও তাদের সেসব রীতি-নীতি পছন্দ হতে লাগল। তাই মূসা আলাইহিস সালামের নিকট আবেদন জানাল, এসব লোকের যেমন বহু উপাস্য রয়েছে, আপনি আমাদের জন্যও এমনি ধরণের কোন একটা উপাস্য নির্ধারণ করে দিন, যাতে আমরা একটা দৃষ্ট বস্তুকে সামনে রেখে ইবাদাত করতে পারি, আল্লাহর সত্তা তো আর সামনে আসে না।
মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমাদের মধ্যে বড়ই মূর্খতা রয়েছে।” যাদের রীতি-নীতি তোমরা পছন্দ করছ, তাদের সমস্ত আমল তো বিনষ্ট ও বরবাদ হয়ে গেছে। এরা মিথ্যার অনুগামী। তাদের এসব ভ্রান্ত রীতি-নীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি তোমাদের জন্য অন্য কোন উপাস্য বানিয়ে দেব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়াবাসীর উপর বিশিষ্টতা দান করেছেন। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্ববাসীর উপর মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। কারণ, তখন মূসা আলাইহিস সালামের উপর যারা ঈমান এনেছিল, তারাই ছিল অন্যান্য লোক অপেক্ষা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন ও উত্তম।
অতঃপর বনী-ইস্রাঈলকে তাদের বিগত অবস্থা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে যে, ফিরআউনের কওমের হাতে তারা এমনই নির্যাতিত ও দুর্দশাগ্রস্ত ছিল যে, তাদের ছেলেদেরকে হত্যা করে নারীদেরকে অব্যাহতি দেয়া হত সেবাদাসী বানিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ মূসা 'আলাইহিস সালামের বদৌলতে এবং তার দোআর বরকতে তাদেরকে সে আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এই অনুগ্রহের প্রভাব কি এই হওয়া উচিত যে, তোমরা সেই রাব্বুল আলামীনের সাথে দুনিয়ার নিকৃষ্টতম পাথরকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে। এযে মহা যুলুম। এই থেকে তাওবাহ কর।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪১) আর স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ফিরআউন বংশীয়দের হাত হতে উদ্ধার করেছি, যারা তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দিত; তারা তোমাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে তোমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের মহাপরীক্ষা ছিল।[1]
[1] এসব ঐ সকল পরীক্ষা, যার কথা সূরা বাক্বারাহ ৪৯নং আয়াত ও সূরা ইবরাহীম ৬নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪২. আর মূসার জন্য আমরা ত্রিশ রাতের ওয়াদা করি(১) এবং আরো দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাতে(২) পূর্ণ হয়। এবং মূসা তার ভাই হারূনকে বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আপনি আমার প্রতিনিধিত্ব করবেন, সংশোধন করবেন আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেন না।(৩)
(১) وَاعَدْنَا শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল দু'পক্ষ থেকে প্রতিজ্ঞা বা প্রতিশ্রুতি দান করা। এখানেও আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে ছিল তাওরাত দানের প্রতিশ্রুতি আর মূসা আলাইহিস্ সালামের পক্ষ থেকে চল্লিশ রাত এবং এ’তেকাফের প্রতিজ্ঞা। কাজেই وَوَعَدْنَا না বলে وَوَاعَدْنَا বলা হয়েছে। ওয়াদার তাৎপর্য হল, কাউকে লাভজনক কোন কিছু দেয়ার পূর্বে তা প্রকাশ করে দেয়া যে, তোমার জন্য অমুক কাজ করব।
এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি স্বীয় কিতাব নাযিল করার ওয়াদা করেছেন এবং সেজন্য শর্ত আরোপ করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম ত্রিশ রাত্রি তুর পর্বতে আল্লাহর ইবাদাতে অতিবাহিত করবেন। অতঃপর এই ত্রিশ রাত্রির উপর আরো দশ রাত্রি বাড়িয়ে চল্লিশ রাত্রি করে দিয়েছেন।
(২) এখান থেকে একটি বিষয় সাব্যস্ত হয় যে, নবী-রাসূলগণের শরীআতে তারিখের হিসাব ধরা হতো রাত থেকে। কারণ, এ আয়াতে ত্রিশ দিনের ক্ষেত্রে ত্রিশ রাত্রি আর চল্লিশ দিনের ক্ষেত্রে চল্লিশ রাত্রি উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ সৌর হিসাব পার্থিব লাভের জন্য, আর চান্দ্র হিসাব হলো ইবাদতের জন্য। [কুরতুবী]
(৩) মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তা'আলার ওয়াদা অনুসারে তুর পর্বতে গিয়ে যখন এতেকাফ করার ইচ্ছা করেন, তখন স্বীয় ভাই হারূন আলাইহিস সালামকে বললেনঃ “আমার অবর্তমানে আপনি আমার সম্প্রদায়ে আমার স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করুন।” এতে প্রমাণিত হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত হন তবে প্রয়োজনবোধে কোথাও যেতে হলে সে কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য কোন লোক নিয়োগ করে যাওয়া উত্তম। [কুরতুবী]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ রীতি এই ছিল যে, কখনো যদি তাকে মদীনার বাইরে যেতে হত, তখন তিনি কাউকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে যেতেন। একবার তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন এবং একবার আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খলীফা নিযুক্ত করেন। এমনিভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে মদীনায় খলীফা নিযুক্ত করে তিনি বাইরে যেতেন। [কুরতুবী]
মূসা আলাইহিস সালাম হারূন আলাইহিস সালামকে খলীফা নিযুক্ত করার সময় তাকে কয়েকটি উপদেশ দান করেন। তাতে প্রমাণিত হয় যে, কাজের সুবিধার জন্য প্রতিনিধিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা উপদেশ দিয়ে যেতে হয়। এই হেদায়াত বা নির্দেশাবলীর মধ্যে প্রথম নির্দেশ হল وَأَصْلِحْ এখানে أَصْلِحْ এর কোন কর্ম উল্লেখ করা হয়নি যে, কার ইসলাহ বা সংশোধন করা হবে। এতে বুঝা যায় যে, নিজেরও ইসলাহ করবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় সম্প্রদায়েরও ইসলাহ করবেন। অর্থাৎ তাদের মাঝে দাঙ্গা-হাঙ্গামাজনিত কোন বিষয় আঁচ করতে পারলে তাদেরকে সরল পথে আনয়নের চেষ্টা করবেন।
দ্বিতীয় হেদায়াত হল এই যে, (وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ) অর্থাৎ দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেন না। বলাবাহুল্য, হারূন আলাইহিস সালাম হলেন আল্লাহ্র নবী, তার নিজের পক্ষে ফাসাদে পতিত হওয়ার কোন আশংকাই ছিল না। কাজেই এই হেদায়াতের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কোন সাহায্য-সহায়তা করবেন না।
সুতরাং হারূন আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন, তার সম্প্রদায় ‘সামেরী’-এর অনুগমন করতে শুরু করে দিয়েছে, তখন তার সম্প্রদায়কে এহেন ভণ্ডামী থেকে বাধা দান করলেন এবং সামেরীকে সে জন্য শাসলেন। অতঃপর ফিরে এসে মূসা আলাইহিস সালাম যখন ধারণা করলেন যে, হারূন আলাইহিস সালাম আমার অবর্তমানে কর্তব্য পালনে অবহেলা করেছেন, তখন তার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করলেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪২) আরো স্মরণ কর, মূসার জন্য আমি ত্রিশ রাত্রি নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়।[1] আর মূসা তার ভ্রাতা হারূনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে (চল্লিশ দিন) আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। [2]
[1] ফিরআউন ও তার দলবলকে ধ্বংস করার পর প্রয়োজন দেখা দিল যে, বানী ইস্রাঈলদের হিদায়াত ও পথ নির্দেশনার জন্য কোন ধর্মগ্রন্থ তাদেরকে দেওয়া হোক। সেই জন্য মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে ত্রিশ রাত্রির জন্য ত্বূর পাহাড়ে আহবান করলেন, পরে আরো দশ রাত্রি যোগ করে পুরো চল্লিশ রাত্রি করা হল। মূসা (আঃ) যাওয়ার সময় তাঁর সহোদর ভাই নবী হারূন (আঃ)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করলেন; যাতে তিনি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে হিদায়াত ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যান এবং তাদেরকে সকল বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। এই আয়াতে এ সব কথাই বর্ণিত হয়েছে।
[2] হারূন (আঃ) নিজেও নবী ছিলেন, সংশোধনের দায়িত্বভার তাঁর উপরও ছিল। মূসা (আঃ) শুধুমাত্র উপদেশ ও সতর্কতা স্বরূপ এ কথাগুলো বলেছিলেন। ميقات অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়, মেয়াদ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৩. আর মূসা যখন আমাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন(১), তখন তিনি বললেন, হে আমার রব! আমাকে দর্শন দান করুন, আমি আপনাকে দেখব। তিনি বললেন, আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না(২)। আপনি বরং পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে দেখুন(৩), সেটা যদি নিজের জায়গায় স্থির থাকে তবে আপনি আমাকে দেখতে পাবেন। যখন তার রব পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন(৪) তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন(৫)। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন তখন বললেন, মহিমাময় আপনি, আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার কাছে তাওবাহ করছি এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।
(১) কুরআনের প্রকৃষ্ট শব্দের দ্বারাই প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন। তার এ কালাম দ্বারা উদ্দেশ্য প্রথমতঃ সেসব কালাম যা নবুওয়াত দানকালে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়তঃ সেসব কালাম যা তাওরাত দানকালে হয়েছিল এবং যার আলোচনা এ আয়াতে করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলার সাথে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলা হক ও বাস্তব। এতে বিশ্বাস করতেই হবে। এর মাধ্যমে আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ কথা বলা সাব্যস্ত হচ্ছে। [দেখুন, সিফাতুল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াসসুন্নাহ, ২১৬–২১৯]
(২) দর্শন যদিও অসম্ভব নয়, কিন্তু যার প্রতি সম্বোধন করা হয়েছে অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম বর্তমান অবস্থায় তা সহ্য করতে পারবেন না। পক্ষান্তরে দর্শন যদি আদৌ সম্ভব না হত, তাহলে لَنْ تَرَانِي না বলে বলা হত لَنْ أرى “আমার দর্শন হতে পারে না।” এতে প্রমাণিত হয় যে, যৌক্তিকতার বিচারে পৃথিবীতে আল্লাহর দর্শন লাভ যদিও সম্ভব, কিন্তু তবুও এতে তার সংঘটনের অসম্ভবতা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আর এটাই হল অধিকাংশ আহলে সুন্নাহর মত যে, এ পৃথিবীতে আল্লাহর দীদার বা দর্শন লাভ যুক্তিগতভাবে সম্ভব হলেও শরীআতের দৃষ্টিতে সম্ভব নয়। যেমন হাদীসে রয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে পারবে না। [মুসলিমঃ ২৯৩১, আবু দাউদঃ ৪৩২০, ইবন মাজাহঃ ৪০৭৭] এ ব্যাপারে সূরা আল-আন’আমের ১০নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
(৩) এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমান অবস্থায় দর্শক আল্লাহর দর্শন সহ্য করতে পারবে না বলেই পাহাড়ের উপর যৎসামান্য ছটা বিকিরণ করে বলে দেয়া হয়েছে যে, তাও আপনার পক্ষে সহ্য করা সম্ভবপর নয়; মানুষ তো একান্ত দুর্বলচিত্ত সৃষ্টি; সে তা কেমন করে সহ্য করবে?
(৪) আরবী অভিধানে تَجَلَّىٰ অর্থ প্রকাশিত ও বিকশিত হওয়া। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলির মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলিটি রেখে ইঙ্গিত করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলার এতটুকু অংশই শুধু প্রকাশ করা হয়েছিল, যাতে পাহাড় পর্যন্ত ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল। অবশ্য এতে গোটা পাহাড়ই যে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে হবে তা অপরিহার্য নয়; বরং পাহাড়ের যে অংশে আল্লাহর তাজাল্লী বিচ্ছুরিত হয়েছিল, সে অংশটিই হয়ত প্রভাবিত হয়ে থাকবে। [আহমাদঃ ৩/১২৫, তিরমিযীঃ ৩০৭৪, হাকেমঃ ২/৩২০]
(৫) মূসা আলাইহিস সালাম সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলায় তার পুরস্কারস্বরূপ হাশরের মাঠে তাকে প্রথম সচেতন হিসাবে দেখা যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের মাঠে মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে, আমিই সর্বপ্রথম সংজ্ঞা ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা আল্লাহর আরশের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না তিনি কি আমার আগে সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছেন, না কি তুর পাহাড়ে যে সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন, তার বিনিময়ে তিনি সচেতনই ছিলেন। [বুখারীঃ ৪৬৩৮, মুসলিমঃ ২৩৭৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৩) মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনই দেখবে না।[1] তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, যদি তা স্ব-স্থানে স্থির থাকে, তাহলে তুমি আমাকে দেখবে।’ সুতরাং যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতিষ্মান হলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল।[2] অতঃপর যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল, তখন বলল, ‘মহিমময় তুমি! আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে আমিই প্রথম।’[3]
[1] যখন মূসা (আঃ) ত্বূর পাহাড়ে গেলেন। সেখানে মহান আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি কথা বললেন। মূসা (আঃ)-এর অন্তরে আল্লাহকে দেখার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হল এবং নিজের মনের কথা رَبِّ أرِني (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও) বলে প্রকাশ করলেন। যার উত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, لَن تَراني (তুমি আমাকে কখনই দেখবে না)। মু’তাযিলা ফির্কা এখান থেকে প্রমাণ করতে চায় যে, لن শব্দটি নাবাচক অর্থে সর্বকালের জন্য ব্যবহার হয়। সেই জন্য মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ না পৃথিবীতে সম্ভব, আর না পরকালে। কিন্তু মু’তাযিলাদের এই মত সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীত। বলা বাহুল্য, সহীহ ও শক্তিশালী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কিয়ামত দিবসে মু’মিনরা আল্লাহ তাআলাকে দেখবেন এবং জান্নাতেও আল্লাহর মুখমন্ডল দর্শন লাভে ধন্য হবেন। সকল আহলে সুন্নাহর এই আকীদাহ বা বিশ্বাস। এখানে যে (‘তুমি আমাকে কখনই দেখবে না’ বলে) দর্শনের কথা খন্ডন করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র পৃথিবীর ক্ষেত্রে। পৃথিবীর মানুষের কোন চোখ মহান আল্লাহকে দেখতে সক্ষম নয়। কিন্তু পরকালে মহান আল্লাহ এই চোখে এমন দৃষ্টিশক্তি দান করবেন, যা আল্লাহর নূরকে সহ্য করতে পারবে।
[2] অর্থাৎ, ঐ পাহাড়ও মহান আল্লাহর প্রকাশ হওয়াকে সহ্য করতে পারল না এবং মূসা (আঃ)ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। হাদীসে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কিয়ামত দিবসে সবাই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। (এই জ্ঞানশূন্যতা ইবনে কাসীরের মতে ঐ সময় হবে যখন হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহ বিচারের জন্য আবির্ভূত হবেন।) অতঃপর যখন সবাই জ্ঞান ফিরে পাবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম জ্ঞানপ্রাপ্ত হব এবং দেখব যে, মূসা (আঃ) আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু আমি জানি না যে, তিনি আমার আগেই জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন, নাকি ত্বূর পাহাড়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে হাশরের ময়দানে সংজ্ঞাহীন হওয়া থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরাতুল আরাফ, মুসলিমঃ মূসা (আঃ)-এর ফযীলত)
[3] ‘বিশ্বাসীদের মধ্যে আমিই প্রথম’ তোমার মর্যাদা ও মাহাত্ম্যে এবং সেই সাথে এ কথায় যে, আমি তোমার অসহায় ও দুর্বল বান্দা; পৃথিবীতে তোমার দর্শনলাভে অক্ষম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৪. তিনি বললেন, হে মূসা আমি আপনাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দিয়ে মানুষের উপর বেছে নিয়েছি; কাজেই আমি আপনাকে যা দিলাম তা গ্রহণ করুন এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৪) তিনি বললেন, হে মূসা! আমি আমার রিসালাত ও বাক্য দ্বারা লোকের মধ্যে তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, সুতরাং আমি যা দিলাম, তা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। [1]
[1] এটি সরাসরি কথা বলার দ্বিতীয় সুযোগ, মহান আল্লাহ যে সুযোগ মূসা (আঃ)-কে দিয়ে ধন্য করলেন। এর পূর্বে যখন মূসা (আঃ) আগুন নেওয়ার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন, তখনও তিনি সরাসরি কথা বলে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন এবং নবুঅত দান করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৫. আর আমরা তার জন্য ফলকসমূহে(১) সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে(২) দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধরুন এবং আপনার সম্প্রদায়কে তার যা উত্তম তাই গ্রহণ করতে নির্দেশ দিন(৩)। আমি শীঘ্রই(৪) ফাসেকদের বাসস্থান(৫) তোমাদেরকে দেখাব।
(১) এতে প্রতীয়মান হয় যে, পূর্ব থেকে লেখা তাওরাতের পাতা বা তখতী মূসা 'আলাইহিস সালামকে অর্পণ করা হয়েছিল। আর সে তখতীগুলোর নামই হল ‘তাওরাত’। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ তখতীগুলো তাওরাতের আগে প্রদত্ত। [ইবন কাসীর]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম এবং মূসা আলাইহিমাস সালাম তর্ক করলেন। মূসা বললেন, আপনিই তো আমাদের পিতা, আশা-ভরসা সব শেষ করে দিয়ে আমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে নিয়ে আসলেন। আদম বললেন, হে মূসা, আল্লাহ আপনাকে তার সাথে কথা বলার জন্য পছন্দ করেছেন, স্বহস্তে আপনার জন্য লিখে দিয়েছেন। আপনি আমাকে এমন বিষয়ে কেন তিরস্কার করছেন, যা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বেই আমার তাকদীরে লিখেছেন। এভাবে আদম মূসার উপর তর্কে জিতে গেলেন। তিনবার বলেছেন। [বুখারীঃ ৬৬১৪]
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ্ তা'আলা নিজ হাতে তাওরাত লিখেছেন এবং আদম 'আলাইহিস সালামের জান্নাত থেকে বের হওয়াটা যেহেতু বিপদ ছিল সেহেতু তিনি তাকদীরের দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। মূলতঃ তাকদীরের দ্বারা দলীল গ্রহণ শুধুমাত্র বিপদের সময়ই জায়েয। গোনাহর কাজের মধ্যে জায়েয নাই। [মাজমু ফাতাওয়া ৮/১০৭; দারয়ূ তা'আরুযুল আকলি ওয়ান নাকলি: ৪/৩০৩]
(৩) অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের ওয়াজিব ও মুস্তাহাবগুলো গ্রহণ কর। আর নিষেধকৃত বস্তু পরিত্যাগ কর। [সাদী, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] অথবা আয়াতের অর্থ, আল্লাহর বাণীর যদি কয়েক ধরনের অর্থ হয়, তখন যেন তারা কেবল উত্তম ও আল্লাহর শানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থটিই গ্রহণ করে। [ইবন কাসীর; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ]
(৪) অর্থাৎ সামনে অগ্রসর হয়ে তোমরা এমন সব জাতির প্রাচীন ধ্বংশাবশেষ দেখবে যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং ভুল পথে চলার ব্যাপারে অবিচল ছিল। সেই ধ্বংশাবশেষগুলো দেখে এ ধরনের কর্মনীতি অবলম্বনের পরিণাম কি হয় তা তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে।
(৫) আয়াতের এক অর্থ উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি শীঘ্রই ফাসেকদের বাসস্থান তোমাদের দেখাব।” এ হিসেবে এখানে ফাসেকদের বাসস্থান বলতে কি বুঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মিসর, অপরটি শাম বা সিরিয়া। কারণ, মূসা আলাইহিস সালামের বিজয়ের পূর্বে মিসরে ফিরআউন এবং তার সম্প্রদায় ছিল শাসক ও প্রবল। এ হিসাবে মিসরকে ‘দারুল ফাসেকীন’ বা পাপাচারীদের আবাসস্থল বলা যায়। [ফাতহুল কাদীর] আর সিরিয়ায় যেহেতু তখন আমালেকা সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং যেহেতু ওরাও ছিল ফাসেক বা পাপাচারী, সেহেতু তখন সিরিয়াও ছিল ফাসেকদেরই আবাসভূমি। [ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর] এতদুভয় অর্থের কোনটি যে এখানে উদ্দেশ্য, সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।
আর তার ভিত্তি হল এই যে, ফিরআউনের সম্প্রদায় ডুবে মরার পর বনী-ইস্রাঈলরা মিসরে ফিরে গিয়েছিল কি না? যদি মিসরে ফিরে গিয়ে থাকে এবং মিসর সাম্রাজ্যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে থাকে; যেমন (وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ) আয়াতের দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়, তবে মিসরে তাদের আধিপত্য আলোচ্য তুর পর্বতে তাজাল্লী বা জ্যোতি বিকিরণের ঘটনার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে এ আয়াতে (دَارَ الْفَاسِقِينَ) অর্থ শাম দেশ বা সিরিয়াই নির্ধারিত হয়ে যায়। কিন্তু যদি তখন তারা মিসরে ফিরে না গিয়ে থাকে, তাহলে উভয় দেশই উদ্দেশ্য হতে পারে। আয়াতের অপর অর্থ হচ্ছে, শীঘ্রই আমি যারা ফাসেক তাদেরকে তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণাম ফল কি হবে তা দেখাব। এ হিসেবে পরিণাম ফল হিসেবে তীহ মাঠে তাদের যে কি মারাত্মক অবস্থা হয়েছে সে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৫) আর আমি তোমার জন্য ফলকসমূহের উপর সর্ব বিষয়ের উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি,[1] সুতরাং এগুলিকে শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে ঐগুলির মধ্যে যা শ্রেষ্ঠ তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও।[2] আমি শীঘ্রই সত্যত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখাব।’[3]
[1] তাওরাত কাষ্ঠফলক বা তক্তি রূপে দান করা হয়েছিল। যাতে তাদের ধর্মীয় আহকাম, আদেশ-নিষেধ, অনুপ্রেরণা দান, ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি সকল কিছুর বিস্তারিত আলোচনা বিদ্যমান ছিল।
[2] অর্থাৎ, তারা যেন তাই গ্রহণ করে যা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। যাতে অনুমতি আছে তা নয়; যেমন সুবিধাবাদী ও সুযোগ-সন্ধানীরা করে থাকে; যারা আমলে ফাঁকি দেওয়ার জন্য কেবল ফাঁক ও অনুমতি খুঁজে বেড়ায়।
[3] বাসস্থান বলতে তাদের পরিণাম, অর্থাৎ, ধ্বংস। অথবা এর অর্থ ফাসেক (সত্যত্যাগী)-দের দেশে তোমাদেরকে শাসনক্ষমতা দান করব। আর তা হল শাম দেশ। যেখানে আমালেকাদের আধিপত্য ছিল; যারা ছিল আল্লাহর অবাধ্য। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৬. যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৬) পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব করে বেড়ায়, তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী হতে ফিরিয়ে দেব; তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও ওতে বিশ্বাস করবে না।[1] তারা সৎপথ দেখলেও ওকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে, তাকেই পথ হিসাবে গ্রহণ করবে।[2] এটি এ কারণে যে, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা উদাসীন ছিল।[3]
[1] এখানে গর্ব বা অহংকারের অর্থ হল, মহান আল্লাহর আয়াত ও আহকামের মোকাবেলায় নিজেকে বড় মনে করা এবং অন্য লোকদের তুচ্ছ মনে করা। এই শ্রেণীর অহংকার মানুষের জন্য মোটেই শোভনীয় নয়। কারণ আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা আর মানুষ সৃষ্ট। সৃষ্ট হয়ে সৃষ্টিকর্তার মোকাবেলা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, তার আহকাম ও হিদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা উদাসীন হওয়া কোন মতেই বৈধ নয়। সেই কারণে অহংকার মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত ঘৃণ্য জিনিস। এই আয়াতে অহংকারের পরিণতিও ব্যক্ত করা হয়েছে। আর তা এই যে, মহান আল্লাহ নিজ আয়াত (নিদর্শন) হতে দূরে রাখেন এবং সে এত দূরে সরে যায় যে, কোন প্রকার নিদর্শন তাকে হকের (সত্যের) পথে আনতে সফল হয় না। যেমন, অন্যত্র বলা হয়েছে, {إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ، وَلَوْ جَاءتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الأَلِيمَ} অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে যাদের সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সত্য হয়েছে, তারা বিশ্বাস করবে না; যদিও তাদের নিকট সমস্ত নিদর্শন আগত হয়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করেছে। (সূরা ইউনুস ৯৬-৯৭ আয়াত)
[2] এখানে আল্লাহর বিধি-বিধান থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে রাখে তাদের আরো একটি আচরণ ও অভ্যাসের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর তা এই যে, হিদায়াতের কোন কথা তাদের সামনে এলে তারা তা মেনে নেয় না; কিন্তু ভ্রষ্টতার কোন জিনিস দেখলেই তারা তা সাদরে গ্রহণ করে। কুরআন কারীমের বর্ণিত এই বাস্তবতা সকল যুগেই লক্ষণীয়। আজ আমরাও সকল স্থানে ও সব সমাজেই এমন কি মুসলিম সমাজেও দেখতে পাচ্ছি যে, নেকী মুখ ঢেকে বেড়াচ্ছে। আর পাপকে প্রত্যেকেই লুফে লুফে গ্রহণ করছে।
[3] এখানে এই কথার কারণ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, মানুষ নেকীর পরিবর্তে গোনাহ ও হকের তুলনায় বাতিলকে কেন বেশি গ্রহণ করে? কারণ হল, আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যাজ্ঞান এবং তা হতে ঔদাস্য ও বৈমুখ্য প্রকাশ করা। আর এ আচরণ প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক সমাজেই প্রচলিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৭. আর যারা আমাদের নিদর্শন ও আখেরাতের সাক্ষাতে মিথ্যারোপ করেছে তাদের কাজকর্ম বিফল হয়ে গেছে। তারা যা করে সে অনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৭) যারা আমার নিদর্শনসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলে, তাদের কার্য নিষ্ফল হবে। তারা যা করবে সেই অনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেওয়া হবে।[1]
[1] এই আয়াতে যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা ভাবে ও পরকালকে অবিশ্বাস করে তাদের পরিণাম ব্যক্ত করা হয়েছে। যেহেতু তাদের কর্মের বুনিয়াদ ন্যায় ও হক নয় বরং অন্যায় ও বাতিলের উপর, সেই জন্য তাদের (কর্ম আপাতদৃষ্টিতে ভালো হলেও) আমলনামায় কেবল পাপই লিখিত হবে; যার কোন মূল্যই মহান আল্লাহর নিকট নেই। পরন্তু তাদের অন্যায়ের প্রতিফল সেখানে অবশ্যই দেওয়া হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৮. আর মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা ‘হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা এটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম।(১)
(১) এ থেকে বুঝা গেল যে, যারা গো বাচ্চার পূজা করেছিল তাদের বিবেক সঠিকভাবে কাজ করেনি। তারা দেখতেই পাচ্ছিল যে, শুধু হাম্বা রব ছাড়া আর কোন কথাই তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না। তার কাছ থেকে কোন হিদায়াতের কথা আসছে না, তারপরও সে কিভাবে ইলাহ হতে পারে? অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা আরও স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে, “তবে কি তারা ভেবে দেখে না যে, ওটা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না।” [সূরা ত্বা-হা: ৮৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৮) (আরও স্মরণ কর) মূসার লোকেরা তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুরের মূর্তি তৈরী করল, যার শব্দ ছিল গরুর মতই। তারা কি দেখল না যে, ঐটি তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে পথও দেখায় না। তারা ঐটিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল। আর তারা ছিল অত্যাচারী।[1]
[1] মূসা (আঃ) যখন চল্লিশ রাত্রির জন্য ত্বূর পাহাড়ে গেলেন, তখন সামেরী নামক এক ব্যক্তি সম্প্রদায়ের সোনার অলংকার জমা করে তা থেকে একটি বাছুর তৈরী করল। যার মধ্যে জিবরীল (আঃ)-এর ঘোড়ার পায়ের নীচের কিছু মাটি মিশিয়ে দিল যা তার কাছে রাখা ছিল এবং যার মধ্যে মহান আল্লাহ প্রাণ-প্রতিষ্ঠার শক্তি রেখেছিলেন। যার কারণে বাছুরটি গরুর মত শব্দ করত। (যদিও পরিষ্কার কথা বলতে ও পথ-নির্দেশ করতে অক্ষম ছিল; যেমন কুরআনের ভাষায় স্পষ্ট।) এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, সেটি সত্যি সত্যি রক্ত-মাংসের বাছুরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, নাকি সেটি ছিল সোনারই, কিন্তু কোন প্রকারে তাতে হাওয়া প্রবেশ করার ফলে গরুর মত শব্দ বের হত। (ইবনে কাসীর) এই শব্দ দ্বারাই সামেরী বানী ইস্রাঈলকে এই বলে পথভ্রষ্ট করল যে, এটিই তোমাদের মাবূদ (উপাস্য)। মূসা (আঃ) ভুলে গেছেন এবং তিনি উপাস্যের খোঁজে ত্বূর পাহাড়ে গেছেন। এই ঘটনা সূরা ত্বাহা ৮৮-৮৯নং আয়াতেও বর্ণিত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪৯. আর তারা যখন অনুতপ্ত হল এবং দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, আমাদের রব যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই।(১)
(১) মূসা আলাইহিস সালাম যখন তাওরাত গ্রহণ করার জন্য তুর পাহাড়ে ইবাদাত করতে গেলেন এবং ইতোপূর্বে ত্রিশ দিন ও ত্রিশ রাত ইবাদাতের যে নির্দেশ হয়েছিল; সে মতে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলে গিয়েছিলেন যে, ত্রিশ দিন পরে আমি ফিরে আসব, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা যখন আরো দশ দিন মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেন, তখন ইসরাঈলী সম্প্রদায় তাদের চিরাচরিত তাড়াহুড়া ও ভ্রষ্টতার দরুন নানা রকম মন্তব্য করতে আরম্ভ করল। তার সম্পপ্রদায়ে ‘সামেরী’ নামে একটি লোক ছিল। সে ছিল একান্তই দুর্বল বিশ্বাসের লোক। কাজেই সে সুযোগ বুঝে বনী-ইসরাঈলের লোকদের বললঃ তোমাদের কাছে ফিরআউন সম্প্রদায়ের যেসব অলংকারপত্র রয়েছে, সেগুলো তো তোমরা কিবতীদের কাছ থেকে ধার করে এনেছিলে, এখন তারা সবাই ডুবে মরেছে, আর অলংকারগুলো তোমাদের কাছেই রয়ে গেছে, কাজেই এগুলো আমাকে দাও।
বনী-ইসরাঈলরা তার কথামত সমস্ত অলংকারাদি তার (সামেরীর) কাছে এনে জমা দিল। সে এই সোনা-রুপা দিয়ে একটি বাছুরের প্রতিমূর্তি তৈরী করল এবং জিবরীল 'আলাইহিস সালাম এর ঘোড়ার খুরের তলার মাটি যা পূর্ব থেকেই তার কাছে রাখা ছিল, সোনা-রূপাগুলো আগুনে গলাবার সময় সে তাতে ঐ মাটি মিশিয়ে দিল। ফলে বাছুরের প্রতিমূর্তিটিতে জীবনী শক্তির নিদর্শন সৃষ্টি হল এবং তার ভিতর থেকে গাভীর মত হাম্বা রব বেরুতে লাগল। এ ক্ষেত্রে (عِجْلًا) শব্দের ব্যাখ্যায় (جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ) বলে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]
সামেরীর এ আবিস্কার যখন সামনে উপস্থিত হল, তখন সে বনী-ইসরাঈলদেরকে কুফরীর প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল, “এটাই হল ইলাহ। মূসা আলাইহিস সালাম তো আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য গেছেন তুর পাহাড়ে। মূসা আলাইহিস সালামের সত্যিই ভুলই হয়ে গেল।” বনী-ইসরাঈলদের সবাই পূর্ব থেকেই সামেরীর কথা শুনত। আর এখন তার এই অদ্ভুত ম্যাজিক দেখার পর তো আর কথাই নেই; সবাই একেবারে তার ভক্তে পরিণত হয়ে গেল এবং সে বাছুরকে ইলাহ মনে করে তারই ইবাদাতে প্রবৃত্ত হল।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৯) তারা যখন অনুতপ্ত হল[1] ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
[1] سُقط في أيديهم এটি একটি পরিভাষা, যার অর্থঃ লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া। তাদের এ অনুতাপ মূসা (আঃ)-এর ফিরে আসার পর হল, যখন তিনি তাদেরকে এর উপর তিরস্কার করলেন ও ধমক দিলেন; যেমন সূরা ত্বাহা ৯৭নং আয়াতে আছে। এখানে আগে এই জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাদের কাজ ও কথার বর্ণনা একত্রে হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৫০. আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের রবের আদেশের আগেই তোমরা তাড়াহুড়ো করলে? এবং তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন(১) আর তার ভাইকে চুল ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগলেন। হারূন বললেন, হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিল। সুতরাং তুমি আমার সাথে এমন করবে না যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত মনে করবে না।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কানে শুনা খবর কখনো চাক্ষুষ দেখার মত হয় না। মহান আল্লাহ্ মূসাকে বাছুর নিয়ে কি করেছে তা জানানোর পরে তিনি তখতিগুলোকে ফেলে দেন নি, তারপর যখন তাদের কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখলেন। তখন তখতীগুলোকে ফেলে দিলেন। ফলে সেগুলো ভেঙ্গে যায়। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/২৭১]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫০) আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও দুঃখিত অবস্থায় স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা কিই না জঘন্য কাজ করেছ! তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বেই কেন তোমরা তাড়াহুড়া করতে গেলে?’ সে ফলকগুলি ফেলে দিল[1] এবং তার ভাইকে মাথায় ধরে নিজের দিকে টেনে আনল। হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পুত্র (সহোদর)![2] লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল।[3] সুতরাং তুমি আমাকে নিয়ে শত্রু হাসায়ো না[4] এবং আমাকে অনাচারীদের দলভুক্ত গণ্য করো না।’ [5]
[1] মূসা (আঃ) যখন এসে দেখলেন যে, তারা বাছুরের পূজা শুরু করেছে, তখন অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। আর তাড়াহুড়োয় কাষ্ঠফলকগুলো -- যা তিনি ত্বূর পাহাড় হতে এনেছিলেন -- এমনভাবে রাখলেন যাতে দর্শকের মনে হল, যেন তিনি তা নীচে ফেলে দিলেন; যেটাকে কুরআন ‘ফেলে দিল’ বলে ব্যক্ত করেছে। তা সত্ত্বেও যদি তিনি ফেলেও থাকেন, তাহলেও এটি বেআদবী নয়। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ফলকের অসম্মান ছিল না; বরং দ্বীনী আত্মসম্মানবোধে আত্মহারা হয়ে বিনা ইচ্ছায় তিনি এ রকমটি করে ফেলেছিলেন।
[2] (মাথায় ধরে অথবা চুলে ধরে।) হারূন (আঃ) এখানে (মূসা (আঃ)-কে ভাই না বলে) মায়ের পুত্র বললেন। কারণ এ শব্দে মমতা বোধ ও ভালবাসা বেশি পাওয়া যায়।
[3] হারূন (আঃ)-এর এই ওযর ছিল; যার কারণে তিনি জাতিকে শিরকের মত ভয়ানক পাপ থেকে বাধা দিতে সক্ষম হননি। এক তো নিজের দুর্বলতা, আর দুই বানী ইস্রাঈলের বিরোধিতা ও ঔদ্ধত্য; এমনকি (বারণ করার ফলে) তারা তাঁকে হত্যা পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়। ফলে তাঁকে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য চুপ থাকতে হয়। আর এ মত ক্ষেত্রে চুপ থাকার অনুমতি মহান আল্লাহও দিয়ে রেখেছেন।
[4] আমাকে বকা-ঝকা করলে শত্রুরাই আনন্দিত হবে। অথচ এ সময় শত্রুদেরকে শায়েস্তা করা এবং তাদের প্রভাব থেকে জাতিকে বাঁচানোর সময়।
[5] আর এমনিতেই আমাকে আকীদা ও আমলের দিক দিয়ে তাদের দলভুক্ত কিভাবে করা যেতে পারে? আমি না শিরক করেছি, না তাদেরকে শিরকের অনুমতি দিয়েছি, আর না আমি তাতে সন্তুষ্ট। শুধু মাত্র চুপ থেকেছি, তার জন্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ওজরও রয়েছে। সুতরাং আমার গণনা যালেম (মুশরিক)-দের মধ্যে কিভাবে হতে পারে? সেই জন্য মূসা (আঃ) নিজের জন্য ও ভাই হারূনের জন্য ক্ষমা ও দয়া চেয়ে দু’আ করলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান