-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১১. আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত-সর্বসত্তার ধারকের কাছে সবাই হবে নিম্নমুখী এবং সে-ই ব্যর্থ হবে, যে যুলুম বহন করবে।(১)
(১) যে কেউ যুলুম নিয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে তার মত হতভাগা আর কেউ নেই। কেননা, সে প্রত্যেক মজলুমকে তার হক বুঝিয়ে দিতে থাকবে, শেষ পর্যন্ত যখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না তখন তার উপর অপরের গোনাহের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা যুলুম থেকে বেঁচে থাক; কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন প্রগাঢ় অন্ধকার হিসেবে দেখা দিবে।’ [মুসলিম: ২৫৭৮] এ যুলুমের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুলুম হলো, শির্ক। কারণ এটি আল্লাহর সাথে কৃত সবচেয়ে বড় গুনাহ। যে কেউ শির্কের ভার নিয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে তার আর বাঁচার কোন পথ রইলো না। মহান আল্লাহ বলেনঃ “অবশ্যই শিৰ্ক হচ্ছে বড় যুলুম” [সূরা লুকমান: ১৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১১) সকল মুখমন্ডলই সেই চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক (আল্লাহর) জন্য অবনমিত হবে এবং সেই ব্যর্থ হবে, যে যুলুমের ভার বহন করবে।[1]
[1] কারণ, সেদিন মহান আল্লাহ সম্পূর্ণরূপে ইনসাফ করবেন। প্রত্যেক ব্যক্তি তার প্রাপ্য অধিকার প্রাপ্ত হবে। এমনকি যদি কোন শিংবিশিষ্ট ছাগল কোন বিনা শিং-এর ছাগলের উপর অত্যাচার করে থাকে, তাহলে তারও বদলা দেওয়া হবে। (আহমাদ ২/২৩৫, মুসলিম) সেই জন্য ঐ হাদীসেই মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক হকদারকে তার হক আদায় করে দাও।’’ নচেৎ কিয়ামতের দিন তা দিতে বাধ্য হবে। এক অন্য হাদীসে তিনি বলেন, ‘‘তোমরা অত্যাচার করা হতে দূরে থাকো, কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’’ আর সবার থেকে বেশী ব্যর্থ হবে সেই ব্যক্তি, যে শিরকের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে। কারণ শিরক হল বড় যুলম (মহা অন্যায়), যা ক্ষমার অযোগ্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১২. আর যে মুমিন হয়ে সৎকাজ করে, তার কোন আশংকা নেই অবিচারের এবং অন্য কোন ক্ষতির।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১২) আর যে বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করে তার কোন অবিচার ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চনার আশঙ্কা নেই। [1]
[1] বে-ইনসাফি (অন্যায় বা অবিচার) এই যে, অন্যের পাপের বোঝা কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। আর অধিকার হনন বা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এই যে, নেকীর বদলা কম করে দেওয়া হবে। কিয়ামতে এ উভয় জিনিসই হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৩. আর এভাবেই আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি আরবী ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে অথবা এটা তাদের মধ্যে স্মরণিকার উৎপত্তি করে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৩) এইরূপেই আমি কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এবং ওতে সতর্কবাণী নানাভাবেই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা সংযত হয়[1] অথবা এটা তাদের জন্য উপদেশ হয়। [2]
[1] অর্থাৎ, পাপাচার, হারাম ও কুকর্ম করা হতে বিরত হয়।
[2] অর্থাৎ, আনুগত্য, নৈকট্য লাভ করার আকাঙ্ক্ষা অথবা পূর্ববর্তী উম্মতের অবস্থা ও ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার মত চিন্তা-ভাবনা ওদের ভিতর সৃষ্টি করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৪. সুতরাং প্রকৃত মালিক আল্লাহ অতি মহান, সর্বোচ্চ স্বত্বা।(১) আর আপনার প্রতি আল্লাহর ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার আগে আপনি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করবেন না এবং বলুন, হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন।
(১) মহান আল্লাহ্ বলছেন, যখন পুনরুত্থানের দিন, ভাল-মন্দ প্রতিফলের দিন অবশ্যই ঘটবে, তখন আমরা এ কুরআন নাযিল করেছি, যাতে এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে কিছুটা স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এই পথ ভুলে চলার পরিণাম কি হবে সে সম্পর্কে এদের মনে বেশ কিছুটা অনুভূতি জগবে। সুতরাং সেই মহান হক বাদশাহর জন্যই যাবতীয় মহত্ব। যিনি হক, যাঁর ওয়াদা হক, যার সাতর্কীকরণ হক, যার রাসূলরা হক, জান্নাত হক, জাহান্নাম হক, তার থেকে যা কিছু আসে সবই হক। তাঁর আদল ও ইনসাফ হচ্ছে যে, তিনি কাউকে সাবধান না করে রাসূল না পাঠিয়ে শাস্তি দেন না। যাতে করে তিনি মানুষের ওযর আপত্তির উৎস বন্ধ করে দিতে পারেন। ফলে তাদের কোন সন্দেহ বা প্রমাণ অবশিষ্ট না থাকে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৪) আল্লাহ অতি মহান, সত্য অধীশ্বর।[1] তোমার প্রতি আল্লাহর অহী (প্রত্যাদেশ) সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াতাড়ি করো না। [2] আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর।’[3]
[1] যাঁর সুখের প্রতিশ্রুতি ও শাস্তির ধমক সত্য, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য এবং তাঁর প্রতিটি কথা সত্য।
[2] জিবরীল (আঃ) যখন অহী নিয়ে আসতেন ও শুনাতেন, তখন নবী (আঃ)ও তার কিছু ভুলে যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি পড়তেন। আল্লাহ তাঁকে এ রকম করতে নিষেধ করে বললেন, প্রথমে অহী মনোযোগ দিয়ে শোনো, তা মুখস্থ করানো ও অন্তরে স্থান করে দেওয়া আমার কাজ; যেমন এ কথা সূরা কিয়ামাহ ১৬-১৯নং আয়াতে আসবে।
[3] অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে অধিক জ্ঞান লাভের জন্য প্রার্থনা করতে থাকো। এ নির্দেশে উলামাদের জন্য উপদেশ রয়েছে যে, তাঁরা যেন ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ গবেষণা-বিবেচনা ও চিন্তা-ভাবনা করবেন। তাড়াহুড়ো থেকে দূরে থাকবেন এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করার পথ অবলম্বন করতে কোন প্রকার আলস্য ও ক্রটি করবেন না। এখানে জ্ঞান বলতে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান। কুরআনে এটিকেই ‘ইলম’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এর জ্ঞানীদেরকে উলামা বলা হয়েছে। অন্যান্য জ্ঞান যা মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্জন করে থাকে তা হল, শিল্প, পেশা ও কারিগরী। নবী (সাঃ) যে জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করতেন, তা একমাত্র অহী ও রিসালাতের জ্ঞান; যা কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান। যার দ্বারা মানুষের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, চরিত্র ও ব্যবহারে সংস্কার সাধন হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কথা বুঝতে পারা যায়। এই শ্রেণীর দু’আর মধ্যে একটি দু’আ যা তিনি বলতেন তা এই, اَللّهُمَّ انْفَعْنِيْ بِمَا عَلَّمْتَنِيْ وَعَلِّمْنِيْ مَا يَنْفَعُنِيْ وَزِدْنِيْ عِلْمًا। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যা কিছু আমাকে শিখিয়েছ তার দ্বারা আমাকে উপকৃত কর এবং আমাকে সেই জ্ঞান দান কর, যা আমাকে উপকৃত করবে। আর আমার ইলম আরো বৃদ্ধি কর। (সঃ ইবনে মাজাহ ১/৪৭)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৫. আর আমরা তো ইতোপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন; আর আমরা তার মধ্যে সংকল্পে দৃঢ়তা পাইনি।(১)
(১) উদ্দেশ্য এই যে, আপনার অনেক পূর্বে আদম আলাইহিস সালাম-কে তাকিদ সহকারে একটি নির্দেশ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট বৃক্ষ সম্পর্কে বলেছিলাম যে, এই বৃক্ষের ফল-ফুল অথবা কোন অংশ আহার করবেন না, এমনকি এর নিকটেও যাবেন না। এছাড়া জান্নাতের সব বাগ-বাগিচা ও নেয়ামত রাজি আপনাদের জন্য। সেগুলো ব্যবহার করুন। আরো বলেছিলাম যে, ইবলীস আপনাদের শত্রু। তার কুমন্ত্রণা মেনে নিলে আপনাদের বিপদ হবে। কিন্তু আদম 'আলাইহিস সালাম এসব কথা ভুলে গেলেন।
এখানে আল্লাহ্ তা'আলা আদম ‘আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন- তন্মধ্যে প্রথম শব্দটি হলো: فَنَسِيَ এ শব্দটির তিনটি অর্থ হয়ঃ (ক) ত্যাগ করা, অর্থাৎ যে কাজের অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল তা ত্যাগ করা। আর এ অর্থই এখানে অধিকাংশ মুফাসসিরগণ করেছেন। (খ) কারো কারো মতে এখানে فَنَسِيَ শব্দ দ্বারা এখানে ভুলে যাওয়া অর্থ নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন, তা তিনি ভুলে গেলেন। আদম ‘আলাইহিস সালাম-কে ভুলের কারণেও পাকড়াও করা হত। ভুলের কারণে ধরপাকড় না করা শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর সাথে সংশ্লিষ্ট। এটা উম্মতে মুহাম্মদীর বৈশিষ্ট্য। (গ) কেউ কেউ শব্দটিকে نُسِّيَ পড়েছেন। তখন তার অর্থ হবে শয়তান তাকে প্ররোচনার মাধ্যমে ভুলিয়ে দিলেন। [ফাতহুল কাদীর]
আয়াতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় শব্দটি হল- عزم-এর অর্থ দৃঢ় অঙ্গীকার। কোন কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা। আদম আলাইহিস সালাম যদিও দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ ছিলেন; কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তার দৃঢ়তায় চুতি ঘটেছিল। عزم শব্দের আরেক অর্থ হল صبر বা ধৈৰ্য্য ও প্রতিষ্ঠিত থাকা। আদম ‘আলাইহিস সালাম নিষিদ্ধ গাছ থেকে খাওয়ার সময় তার উপর অটল থাকেননি। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৫) আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে দৃঢ়সংকল্প পাইনি। [1]
[1] ভুলে যাওয়াটা প্রতিটি মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। আর ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা ও সংকল্পের অদৃঢ়তাও সাধারণতঃ মানুষের প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এই দুই দুর্বলতাই শয়তানের কুমন্ত্রণার ফাঁদে পড়ার কারণ হয়ে বসে। উক্ত দুর্বলতার মধ্যে যদি আল্লাহর আদেশের অবাধ্যাচরণ ও অন্যথাচরণের সংকল্প শামিল না থাকে, তাহলে ভুলে যাওয়া বা ইচ্ছার দুর্বলতার ফলে ঘটে যাওয়া ত্রুটি নবুঅতের নিষ্কলুষতা ও পূর্ণতার প্রতিকূল নয়। কারণ, ত্রুটির পর তড়িঘড়ি লজ্জিত হয়ে নবী আল্লাহর দরবারে মাথা নত করেন তথা তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনায় মশগুল হয়ে পড়েন। (যেমন আদম (আঃ) করেছিলেন।) আদম (আঃ)-কে আল্লাহ বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, শয়তান তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সে যেন তোমাদেরকে পাকে-প্রকারে জান্নাত হতে বের না করে দেয়। এই নির্দেশকেই মহান আল্লাহ এখানে عَهد বলে উল্লেখ করেছেন। আদম (আঃ) সে নির্দেশ ভুলে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে এক বৃক্ষের নিকট যেতে তথা সেই বৃক্ষ হতে কিছু খেতে নিষেধ করেছিলেন। আদম (আঃ)-এর অন্তরেও এ কথা ছিল যে, তিনি ঐ বৃক্ষের নিকট যাবেন না। কিন্তু যখন শয়তান আল্লাহর কসম খেয়ে এটা বুঝাতে চাইল যে, এই গাছে বা ফলে এমন প্রভাব আছে, যদি তা কেউ একবার খেয়ে নেয়, তাহলে সে অনন্তকালীন জীবন ও চিরস্থায়ী রাজত্ব লাভ করবে। তখন তিনি নিজ সংকল্পের উপর অটল থাকতে পারলেন না। আর সংকল্পে স্থির না থাকার ফলে শয়তানের চক্রান্তের শিকার হয়ে পড়লেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৬. আর স্মরণ করুন(১), যখন আমরা ফিরিশতাগণকে বললাম, তোমরা আদমের প্রতি সিজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল; সে অমান্য করল।
(১) এখান থেকে আদম ‘আলাইহিস সালাম-এর কাহিনী শুরু করা হয়েছে। এতে উম্মতে মুহাম্মদীকে হুশিয়ার করা উদ্দেশ্য যে, শয়তান মানব জাতির আদি শত্রু। সে সর্বপ্রথম তোমাদের আদি পিতা-মাতার সাথে শক্ৰতা সাধন করেছে এবং নানা রকমের কৌশল, বাহানা ও শুভেচ্ছামূলক পরামর্শের জাল বিস্তার করে তাদেরকে পদস্খলিত করে দিয়েছে। এর ফলেই তাদের উদ্দেশ্যে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণের নির্দেশ জারী হয় এবং জান্নাতের পোষাক ছিনিয়ে নেয়া হয়। তাই শয়তানী কুমন্ত্রণা থেকে মানব মাত্রেরই নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত নয়। শয়তানী প্ররোচনা ও অপকৌশল থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকেরই যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৬) (স্মরণ কর,) যখন আমি ফিরিশতাগণকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদাহ কর’, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদাহ করল; সে অমান্য করল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৭. অতঃপর আমরা বললাম, হে আদম! নিশ্চয় এ আপনার ও আপনার স্ত্রীর শত্ৰু, কাজেই সে যেন কিছুতেই আপনাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়(১), দিলে আপনারা দুঃখ-কষ্ট পাবেন।(২)
(১) আল্লাহ তা’আলা আদম 'আলাইহিস সালাম-এর কাছ থেকে যে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, এটা তারই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এতে আদম সৃষ্টির পর সব ফিরিশতাকে আদমের উদ্দেশ্যে সিজদা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ইবলীসও এই নির্দেশের আওতাভুক্ত ছিল। কেননা, তখন পর্যন্ত ইবলীস ফিরিশতাদের সাথে একত্রে বাস করত। ফিরিশতারা সবাই সিজদা করল, কিন্তু ইবলীস অস্বীকার করল। অন্য আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী এর কারণ ছিল অহংকার। সে বললঃ আমি অগ্নিসৃজিত আর সে মৃত্তিকা সৃজিত। অগ্নি মাটির তুলনায় উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। কাজেই আমি কিরূপে তাকে সিজদা করব? এ কারণে ইবলীস অভিশপ্ত হয়ে জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হল। পক্ষান্তরে আদম ও হাওয়ার জন্য জান্নাতের সব বাগ-বাগিচা ও অফুরন্ত নেয়ামতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হল।
সবকিছু ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে শুধু একটি নির্দিষ্ট বৃক্ষ সম্পর্কে বলা হল যে, এটা থেকে আহার করো না এবং এর কাছেও যেয়ো না। সূরা আল-বাকারাহ ও সূরা আল-আ’রাফে এই বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। এখানে তা উল্লেখ না করে শুধু অঙ্গীকার সংরক্ষিত রাখা ও তাতে অটল থাকা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার বাণী বৰ্ণনা করা হয়েছে। তিনি আদমকে বলেনঃ দেখুন, সিজদার ঘটনা থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে, ইবলীস আপনাদের শত্রু। যেন অপকৌশল ও ধোঁকার মাধ্যমে আপনাদেরকে অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে উদ্বুদ্ধ না করে। যদি তার প্ররোচনায় প্ৰলুব্ধ হয়ে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচারণ করেন তাহলে এখানে থাকতে পারবেন না এবং আপনাদেরকে যেসব নিয়ামত দান করা হয়েছে সেসব ছিনিয়ে নেয়া হবে।
(২) অর্থাৎ শয়তান যেন আপনাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়। ফলে, আপনারা বিপদে ও কষ্টে পড়ে যাবেন। আপনাদেরকে খেটে আহার্য উপার্জন করতে হবে। [ফাতহুল কাদীর] পরবর্তী আয়াতে জান্নাতের এমন চারটি নেয়ামত উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো প্ৰত্যেক মানুষের জীবনের স্তম্ভবিশেষ এবং জীবনধারণে প্রয়োজনীয় সামগ্ৰীর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ অন্ন, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। আয়াতে বলা হয়েছে যে, এসব নেয়ামত জান্নাতে পরিশ্রম ও উপার্জন ছাড়াই পাওয়া যায়। এ থেকে বোঝা গেল যে, এখান থেকে বহিস্কৃত হলে এসব নেয়ামতও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৭) অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা কষ্ট পাবে। [1]
[1] এখানে شقى মেহনত পরিশ্রম ও কষ্টের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ জান্নাতে খাওয়া, পান করা, পরা ও থাকার যে সুযোগ-সুবিধা বিনা পরিশ্রমে ভোগ করছ, জান্নাত হতে বের হলে এই চারটি জিনিসের জন্য মেহনত ও পরিশ্রম করতে বাধ্য হবে। যেমন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে এই মূল জিনিসের প্রাপ্তির জন্য পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, মেহনত ও পরিশ্রমের কথা বলতে শুধু আদমকে সম্বোধন করা হয়েছে; স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সম্বোধন করা হয়নি। অথচ নিষিদ্ধ ফল আদম ও হাওয়া উভয়েই ভক্ষণ করেছিলেন। এর কারণ প্রথমতঃ এই যে, মূল সম্বোধনযোগ্য আদমই ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ (পরিশ্রম ও কষ্ট করে) মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার দায়িত্ব কেবল পুরুষের; নারীর নয়। আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে এই মেহনত ও পরিশ্রম থেকে বাঁচিয়ে ‘ঘরের রানী’র মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, বর্তমানে সেই আল্লাহ প্রদত্ত এই সম্মানকে দাসত্বের বেড়ি মনে করা হচ্ছে। যার থেকে মুক্তি লাভের জন্য তারা ব্যাকুল হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। হায়! শয়তানের প্ররোচনা কতই না প্রভাবশালী এবং তার বিছানো জাল কতই না সুন্দর ও মনোলোভা!
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৮. নিশ্চয় আপনার জন্য এ ব্যবস্থা রইল যে, আপনি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবেন না, নগ্নও হবেন না;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৮) তোমার জন্য এটাই থাকল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১৯. এবং সেখানে পিপাসার্ত হবেন না, আর রোদেও আক্রান্ত হবেন না।(১)
(১) জান্নাত থেকে বের হবার পর মানুষকে যে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে তার বিবরণ এখানে দেয়া হয়েছে। এ সময় জান্নাতের বড় বড়, পূৰ্ণাংগ ও শ্রেষ্ঠ নিয়ামতগুলো উল্লেখ করার পরিবর্তে অন্ন, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান এ চারটি মৌলিক নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। বস্তুত: জীবনধারণের প্রয়োজনীয় এই চারটি মৌলিক বস্তু মানুষকে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দেয়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৯) সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রোদ্র-ক্লিষ্ট ও হবে না।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২০. অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল; সে বলল, হে আদম! আমি কি আপনাকে বলে দেব অনন্ত জীবনদায়িনী গাছের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা?(১)
(১) অন্যত্র আমরা শয়তানের কথাবার্তার আরো যে বিস্তারিত বিবরণ পাই তা হচ্ছে এই যে, “আর সে বললো, তোমাদের রব তোমাদেরকে এ গাছটি থেকে শুধুমাত্র এ জন্য বিরত রেখেছেন, যাতে তোমরা দু'জন ফেরেশতা অথবা চিরঞ্জাব না হয়ে যাও।” [সূরা আল-আ’রাফঃ ২০]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২০) অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, ‘হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষ ও অক্ষয় রাজ্যের কথা?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান