بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء আয়াতঃ ১৭৬ মাদানী
৪ : ১০১ وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡكُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَكُمُ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا ؕ اِنَّ الۡكٰفِرِیۡنَ كَانُوۡا لَكُمۡ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا ﴿۱۰۱﴾
و اذا ضربتم فی الارض فلیس علیكم جناح ان تقصروا من الصلوۃ ٭ ان خفتم ان یفتنكم الذین كفروا ان الكفرین كانوا لكم عدوا مبینا ﴿۱۰۱﴾
• আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের সালাত কসর করাতে কোন দোষ নেই। যদি আশঙ্কা কর যে, কাফিররা তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলবে*। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

-আল-বায়ান

• যখন তোমরা দেশে-বিদেশে সফর কর, তখন নামায কসর করাতে তোমাদের কিছুমাত্র দোষ নেই, যদি তোমরা ভয় কর যে, কাফিরগণ তোমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করবে। নিঃসন্দেহে কাফিরগণ তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

-তাইসিরুল

• আর যখন তোমরা ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ কর তখন সালাত সংক্ষেপ করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, যদি তোমরা আশংকা কর যে, যারা অবিশ্বাসী তারা তোমাদেরকে বিব্রত করবে; নিশ্চয়ই কাফিরেরা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

-মুজিবুর রহমান

• And when you travel throughout the land, there is no blame upon you for shortening the prayer, [especially] if you fear that those who disbelieve may disrupt [or attack] you. Indeed, the disbelievers are ever to you a clear enemy.

-Sahih International

* শত্রুদের আক্রমণের আশঙ্কা না থাকলেও সফরে সালাত ‘কসর’ করা যাবে। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল সফরেই সালাত ‘কসর’ করেছেন।

১০১. তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে সালাত ‘কসর’(১) করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শক্র।

(১) কসর শুধু চার রাকাআতের ফরয সালাতের বেলায় হবে। মাগরিব ও ফযরের সালাতে কোন কসর নেই। পূর্ণ সালাতের স্থলে অর্ধেক সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে কারো মনে এরূপ ধারণা আনাগোনা করে যে, বোধহয় এতে সালাত পূর্ণ হলো না, এটা ঠিক নয়। কারণ, কসরও শরীআতেরই নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে গোনাহ হয় না; বরং সওয়াব পাওয়া যায়। ইয়া'লা ইবন উমাইয়্যা বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাবকে এ আয়াতে বর্ণিত ‘যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে’ এটা উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করলাম যে, এখন তো মানুষ নিরাপদ হয়েছে তারপরও সালাতের কসর পড়ার কারণ কি? তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যেটাতে আশ্চর্য হয়েছ, আমিও সেটাতে আশ্চর্যবোধ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “এটা একটি সদকা যেটি আল্লাহ তোমাদের উপর সদকা করেছেন, সুতরাং তোমরা আল্লাহর সদকা গ্রহণ কর।” [মুসলিম: ৬৮৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০১) তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, অবিশ্বাসিগণ তোমাদেরকে বিপন্ন করবে, তাহলে নামায কসর (সংক্ষিপ্ত) করলে তোমাদের কোন দোষ নেই।[1] নিশ্চয় অবিশ্বাসীগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

[1] আলোচ্য আয়াতে সফরে থাকাকালীন নামায কসর (চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযগুলো দু’রাকআত করে পড়ার) অনুমতি দেওয়া হয়েছে। إِنْ خِفْتُمْ ‘‘যদি তোমাদের ভয় হয়---’’ অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। কেননা, তখন সারা আরবভূমি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। কোন দিকেরই সফর বিপদমুক্ত ছিল না। অর্থাৎ, সফর আশঙ্কাজনক হওয়া কসরের অনুমতির জন্য শর্ত নয়। কুরআনের আরো অনেক স্থানে এই ধরনের শর্তযুক্ত বহু বিষয় আলোচিত হয়েছে, যা কেবল অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে। যেমন, [لا تَأْكُلُوا الرِّبا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً] অর্থাৎ, তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ খেয়ো না। (আলে ইমরানঃ ১৩০) এর অর্থ এ নয় যে, চক্রবৃদ্ধি হারে না হলে সূদ খাওয়া যেতে পারে। অনুরূপ [وَلا تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ إِنْ أَرَدْنَ تَحَصُّنًا] ‘‘তোমাদের দাসীরা নিজেদের সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না।’’ (নূরঃ ৩৩) যেহেতু তারা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইত, তাই আল্লাহ সে কথা বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, তারা ব্যভিচার করতে ইচ্ছুক হলে তোমাদের জন্য তাদের দিয়ে ব্যভিচার করিয়ে নেওয়া বৈধ হবে। অনুরূপ [وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ] ‘‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস হয়েছে, তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যাগণ (অবৈধ) যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে।’’ (নিসাঃ ২৩) এর অর্থ এ নয় যে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে নেই, তাদের সাথে বিবাহ বৈধ। এ ছাড়াও এই শ্রেণীর আরো অনেক আয়াত আছে। কোন কোন সাহাবীর মনেও এই জটিলতা দেখা দিয়েছিল যে, এখন তো নিরাপদ অবস্থা এখন আমাদের নামাযের কসর করা উচিত নয়। নবী করীম (সাঃ) বললেন, ‘‘এটা আল্লাহর পক্ষ হতে সাদাকা, তাঁর সাদাকাকে তোমরা কবুল কর।’’ (আহমাদ ১/২৫-২৬, মুসলিম ১১১৫নং)

দ্রষ্টব্যঃ সফরের দূরত্ব এবং কত দিন পর্যন্ত কসর করা যেতে পারে এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। ইমাম শওকানী যে হাদীসে তিন ফারসাখ (অর্থাৎ, ৯ ক্রোশ, এক ক্রোশ সমান প্রায় দুই মাইল)এর কথা বর্ণিত হয়েছে সেটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (নাইনুল আওতার ৩/২২০) অনুরূপ অনেক সত্যানুসন্ধানী আলেমগণ এ কথাকে অত্যাবশ্যক বলেছেন যে, সফর করাকালীন কোন একই স্থানে তিন অথবা চার দিনের বেশী যেন অবস্থানের নিয়ত না হয়। তিন অথবা চার দিনের বেশী অবস্থানের নিয়ত হলে, নামায কসর করার অনুমতি থাকবে না। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ মিরআতুল মাফাতীহ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০২ وَ اِذَا كُنۡتَ فِیۡهِمۡ فَاَقَمۡتَ لَهُمُ الصَّلٰوۃَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَۃٌ مِّنۡهُمۡ مَّعَكَ وَ لۡیَاۡخُذُوۡۤا اَسۡلِحَتَهُمۡ ۟ فَاِذَا سَجَدُوۡا فَلۡیَكُوۡنُوۡا مِنۡ وَّرَآئِكُمۡ ۪ وَ لۡتَاۡتِ طَآئِفَۃٌ اُخۡرٰی لَمۡ یُصَلُّوۡا فَلۡیُصَلُّوۡا مَعَكَ وَ لۡیَاۡخُذُوۡا حِذۡرَهُمۡ وَ اَسۡلِحَتَهُمۡ ۚ وَدَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا لَوۡ تَغۡفُلُوۡنَ عَنۡ اَسۡلِحَتِكُمۡ وَ اَمۡتِعَتِكُمۡ فَیَمِیۡلُوۡنَ عَلَیۡكُمۡ مَّیۡلَۃً وَّاحِدَۃً ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡكُمۡ اِنۡ كَانَ بِكُمۡ اَذًی مِّنۡ مَّطَرٍ اَوۡ كُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَنۡ تَضَعُوۡۤا اَسۡلِحَتَكُمۡ ۚ وَ خُذُوۡا حِذۡرَكُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ اَعَدَّ لِلۡكٰفِرِیۡنَ عَذَابًا مُّهِیۡنًا ﴿۱۰۲﴾
و اذا كنت فیهم فاقمت لهم الصلوۃ فلتقم طآئفۃ منهم معك و لیاخذوا اسلحتهم فاذا سجدوا فلیكونوا من ورآئكم و لتات طآئفۃ اخری لم یصلوا فلیصلوا معك و لیاخذوا حذرهم و اسلحتهم ود الذین كفروا لو تغفلون عن اسلحتكم و امتعتكم فیمیلون علیكم میلۃ واحدۃ و لا جناح علیكم ان كان بكم اذی من مطر او كنتم مرضی ان تضعوا اسلحتكم و خذوا حذركم ان الله اعد للكفرین عذابا مهینا ﴿۱۰۲﴾
• আর যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে। কাফিররা কামনা করে যদি তোমরা তোমাদের অস্ত্র-শস্ত্র ও আসবাব-পত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও তাহলে তারা তোমাদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কোন কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তাহলে অস্ত্র রেখেদেয়াতে তোমাদের কোন দোষ নেই। আর তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছেন লাঞ্ছনাদায়ক আযাব।

-আল-বায়ান

• এবং যখন তুমি মু’মিনদের মাঝে অবস্থান করবে আর তাদের সঙ্গে নামায কায়িম করবে তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং সশস্ত্র থাকে, তাদের সাজদাহ করা হলে তারা যেন তোমাদের পশ্চাতে অবস্থান করে এবং অপর যে দলটি নামায আদায় করেনি তারা যেন তোমার সঙ্গে নামায আদায় করে এবং সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে; কাফিরগণ কামনা করে যে, তোমরা যেন তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামের ব্যাপারে অসতর্ক হও, যাতে তারা একজোটে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমাদের বৃষ্টির কারণে কষ্ট হয়, কিংবা তোমরা পীড়িত হও, তবে অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই, কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ কাফিরদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

-তাইসিরুল

• এবং যখন তুমি তাদের (সৈন্যদের) মধ্যে থাক, অতঃপর সালাতে দন্ডায়মান হও তখন যেন তাদের একদল তোমার সাথে দন্ডায়মান হয় এবং স্ব স্ব অস্ত্র গ্রহণ করে; অতঃপর যখন সাজদাহ্ সম্পন্ন করে তখন যেন তারা তোমার পশ্চাদ্বর্তী হয়; এবং অন্য দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন অগ্রসর হয়ে তোমার সাথে সালাত আদায় করে এবং স্ব স্ব আত্মরক্ষিকা ও অস্ত্র গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীরা ইচ্ছা করে যে, তোমরা স্বীয় অস্ত্রশস্ত্র ও দ্রব্য সম্ভার সম্বন্ধে অসতর্ক হলেই তারা একযোগে তোমাদের উপর নিপতিত হয়; এবং এতে তোমাদের অপরাধ নেই যদি তোমরা বৃষ্টিপাতে বিব্রত হয়ে অথবা পীড়িত অবস্থায় স্ব স্ব অস্ত্র পরিত্যাগ কর এবং স্বীয় আত্মরক্ষিকা সঙ্গে গ্রহণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

-মুজিবুর রহমান

• And when you are among them and lead them in prayer, let a group of them stand [in prayer] with you and let them carry their arms. And when they have prostrated, let them be [in position] behind you and have the other group come forward which has not [yet] prayed and let them pray with you, taking precaution and carrying their arms. Those who disbelieve wish that you would neglect your weapons and your baggage so they could come down upon you in one [single] attack. But there is no blame upon you, if you are troubled by rain or are ill, for putting down your arms, but take precaution. Indeed, Allah has prepared for the disbelievers a humiliating punishment.

-Sahih International

১০২. আর আপনি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন তারপর তাদের সাথে সালাত কায়েম করবেন(১) তখন তাদের একদল আপনার সাথে যেন দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তাদের সিজদা করা হলে তারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা আপনার সাথে যেন সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে(২) কাফেররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাতে তারা তোমাদের উপর একেবারে ঝাপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও বা পীড়িত থাক তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।

(১) আয়াতে বর্ণিত সালাতটিকে বলা হয়, ‘সালাতুল খাওফ’ বা ভয়-ভীতিকালীন নামায। এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ‘উসফান’ উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। কেউ বলে বসল যে, এ সময় যদি আক্রমণ করা যেতো তবে তাদেরকে জব্দ করা যেতো। তখন তাদের একজন বলল, এরপর তাদের আরেকটি সালাত রয়েছে, যা তাদের কাছে আরও প্রিয়। অর্থাৎ আসরের সালাত। তখন তাদের কেউ কেউ সে সময়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণের ইচ্ছা পোষণ করলে, আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করে ‘সালাতুল খাওফ’ পড়ার নিয়ম-পদ্ধতি বর্ণনা করে দেন। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ২/৪৬৩; মুসান্নাফ আবদির রাযযাক ২/৫০৫; মুসনাদে আহমাদ ৪/৫৯; আবু দাউদ ১২৩৬: নাসায়ী: ১৭৭; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৩০৮]

(২) আয়াতে বলা হয়েছেঃ আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকেন-এতে এরূপ মনে করার অবকাশ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিরোধানের পর এখন ‘সালাতুল খওফ’ বা ভয়-ভীতিকালীন নামায- এর বিধান নেই। কেননা, তখনকার অবস্থা অনুযায়ী আয়াতে এ শর্ত বর্ণিত হয়েছে। নবী বিদ্যমান থাকলে ওযর ব্যতীত অন্য কেউ সালাতে ইমাম হতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর এখন যে ইমাম হবেন, তিনিই তার স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং ‘সালাতুল খওফ’ পড়াবেন। সব ফেকাহবিদের মতে ‘সালাতুল খওফ’-এর বিধান এখনো অব্যাহত রয়েছে, রহিত হয়নি। মানুষের পক্ষ থেকে বিপদাশংকার কারণে ‘সালাতুল খওফ’ পড়া যেমন জায়েয, তেমনিভাবে যদি বাঘ-ভালুক কিংবা অজগর ইত্যাদির ভয় থাকে এবং সালাতের সময়ও সংকীর্ণ হয়, তাহলে তখনো সালাতুল খওফ পড়া জায়েয। আয়াতে উভয় দলের এক এক রাকাআত পড়ার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় রাকাআতের নিয়ম হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুরাকাআতের পর সালাম ফিরিয়েছেন। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, বুখারী: ৯৪২: মুসলিম: ৩০৫, ৩০৬; তিরমিযী: ৩০৩৫; আবু দাউদ: ১২৪২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) তুমি যখন তাদের মাঝে অবস্থান করবে ও তাদের নিয়ে নামায পড়বে, তখন একদল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায়, আর তারা যেন সশস্ত্র থাকে। অতঃপর সিজদাহ করা হলে তারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা নামাযে শরীক হয়নি, তারা তোমার সাথে যেন নামাযে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। অবিশ্বাসীগণ কামনা করে, যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্র-শস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, যাতে তারা তোমাদের উপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।[1] আর অস্ত্র রাখাতে তোমাদের কোন দোষ নেই; যদি বৃষ্টি-বাদলের জন্য তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমাদের অসুখ হয়। কিন্তু অবশ্যই তোমরা হুঁশিয়ার থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।

[1] এই আয়াতে ‘স্বালাতুল খাউফ’ পড়ার অনুমতি বরং নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ‘স্বালাতুল খাউফ’এর অর্থ ভয়ের নামায। এ নামায তখন বিধেয় যখন মুসলিম ও কাফেরদের সৈন্য একে অপরের সাথে যুদ্ধের জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াবে এবং ক্ষণেকের অন্যমনস্কতা মুসলিমদের কঠিন বিপদের কারণ হতে পারে, এ রকম অবস্থায় যদি নামাযের সময় হয়ে যায়, তাহলে ‘স্বালাতুল খাউফ’ পড়ার নির্দেশ আছে। এই নামাযের বিভিন্ন নিয়ম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, সৈন্য দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একদল শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে থাকল, যাতে কাফেরদলের আক্রমণ করার সাহস না হয় এবং অপর দল এসে নবী করীম (সাঃ)-এর পিছনে নামায পড়ল। এ দল নামায সমাপ্ত করে প্রথম স্থানে গিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেল এবং অপর দল নামাযের জন্য এসে গেল। কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি উভয় দলকে এক রাকআত করে নামায পড়ান। এইভাবে রসূল (সাঃ)-এর দু’রাকআত এবং সৈন্যদের এক রাকআত করে নামায হয়। কোন বর্ণনায় এসেছে, তিনি (সাঃ) তাদেরকে দুই রাকআত করে নামায পড়ান। এইভাবে রসূল (সাঃ)-এর চার রাকআত এবং সৈন্যদের দুই রাকআত করে হয়। কোন বর্ণনায় এসেছে, এক রাকআত পড়ে তাশাহহুদের মত বসে যান। সৈন্যরা নিজে থেকেই আর এক রাকআত পূর্ণ করে শত্রুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর অপর দল এসে রসূল (সাঃ)-এর পিছনে নামাযে দাঁড়ান। তিনি এদেরকেও এক রাক’আত নামায পড়িয়ে তাশাহহুদে বসে যান এবং সৈন্যদের দ্বিতীয় রাকআত পূর্ণ না করে নেওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন। অতঃপর তাদের সাথে তিনি (সাঃ) সালাম ফিরান। এইভাবে রসূল (সাঃ)-এর এবং সৈন্যদের উভয় দলেরও দুই রাকআত করে হয়। (দ্রষ্টব্যঃ হাদীস গ্রন্থ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৩ فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡكُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِكُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ كَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ كِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ﴿۱۰۳﴾
فاذا قضیتم الصلوۃ فاذكروا الله قیما و قعودا و علی جنوبكم فاذا اطماننتم فاقیموا الصلوۃ ان الصلوۃ كانت علی المؤمنین كتبا موقوتا ﴿۱۰۳﴾
• অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।

-আল-বায়ান

• যখন তোমরা নামায আদায় করে নেবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন (যথানিয়মে) নামায কায়িম করবে। নির্দিষ্ট সময়ে নামায কায়িম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

-তাইসিরুল

• অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর; অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন সালাত প্রতিষ্ঠিত কর; নিশ্চয়ই সালাত বিশ্বাসীগণের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত।

-মুজিবুর রহমান

• And when you have completed the prayer, remember Allah standing, sitting, or [lying] on your sides. But when you become secure, re-establish [regular] prayer. Indeed, prayer has been decreed upon the believers a decree of specified times.

-Sahih International

১০৩. অতঃপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে(১), অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করবে(২); নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য(৩)।

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা যখনই কোন ফরয তার বান্দাদের উপর অবধারিত করে দিয়েছেন তখনই সেটার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর যারা সেটা করতে সক্ষম হবে না তাদেরকে ভিন্ন পথ বাতলে দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, আল্লাহর যিকর। এই যিকর এর ব্যাপারে যতক্ষণ কেউ সুস্থ বিবেকসম্পন্ন থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ্ তা'আলা কাউকে ওযর আপত্তি পেশ করার সুযোগ দেন নি। সর্বাবস্থায় তাকে যিকর করতে হবে। রাত-দিন, জল-স্থল, চালিয়ে যেতে হবে। এ আয়াতের এটাই ভাষ্য। [তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ যখন তোমরা নিরাপদ হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করবে, তখন পূর্ণরূপ সালাত আদায় করবে। [তাবারী] অর্থাৎ কেউ যেন মনে না করে বসে যে, তাদের সালাত কমে গেছে বা কম পড়লেও চলবে।

(৩) এখানে নির্ধারিত সময় বলে, সালাতের জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক সালাতের জন্য নির্ধারিত ওয়াক্তসমূহকে বোঝানো হয়েছে। এখানে সে ওয়াক্তসমূহ বলে দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং ফজরের সালাত নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।” [সূরা আল-ইসরা: ৭৮] পাশাপাশি হাদীসে সালাতের ওয়াক্তের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাতের প্রথম ও শেষ সময় রয়েছে। যোহরের সালাতের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য হেলে যাবে। আর শেষ সময় হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত। অনুরূপভাবে আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন এর ওয়াক্ত হবে। আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। তদ্রুপ মাগরিবের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য ডুবে যায়। তার শেষ সময় হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর এশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, মধ্য রাত পর্যন্ত। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সুবহে সাদিক উদিত হয়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সূর্য উদিত হয়। [তিরমিযী ১৫১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) তারপর যখন তোমরা নামায শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ কর।[1] অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন যথাযথভাবে নামায পড়। [2] নিশ্চয় নামাযকে বিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত সময়ে অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। [3]

[1] উক্ত ভয়ের নামাযকেই বুঝানো হয়েছে। এ নামাযকে যেহেতু কমিয়ে হালকা করে দেওয়া হয়েছে তাই এই ঘাটতি পূরণের জন্য বলা হচ্ছে যে, দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকর করতে থেকো।

[2] অর্থাৎ, ভয় ও যুদ্ধ-অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটলে, নামাযকে তার পূর্বের নিয়মে পড়বে যেভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় পড়া হয়।

[3] এতে নামাযকে তার যথানির্ধারিত সময়ে পড়ার তাকীদ করা হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোন শরয়ী ওজর ছাড়া দুই নামাযকে একত্রে (জমা করে) পড়া শুদ্ধ নয়। কেননা, (একত্রে পড়লে) কম-সে কম একটি নামাযকে তার সময় ছাড়াই পড়া হবে যা এই আয়াতের পরিপন্থী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৪ وَ لَا تَهِنُوۡا فِی ابۡتِغَآءِ الۡقَوۡمِ ؕ اِنۡ تَكُوۡنُوۡا تَاۡلَمُوۡنَ فَاِنَّهُمۡ یَاۡلَمُوۡنَ كَمَا تَاۡلَمُوۡنَ ۚ وَ تَرۡجُوۡنَ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا یَرۡجُوۡنَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا ﴿۱۰۴﴾
و لا تهنوا فی ابتغآء القوم ان تكونوا تالمون فانهم یالمون كما تالمون و ترجون من الله ما لا یرجون و كان الله علیما حكیما ﴿۱۰۴﴾
• আর শত্রু সম্প্রদায় অনুসন্ধানে তোমরা দুর্বল হয়ো না। যদি তোমরা ব্যথা পেয়ে থাক তাহলে তারাও তো ব্যথা পাচ্ছে, যেভাবে তোমরা ব্যথা পাচ্ছ। আর তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে আশা করছ যা তারা আশা করছে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

-আল-বায়ান

• এ (শত্রু) কওমের পশ্চাদ্ধাবণে দুর্বলতা দেখাবে না, কেননা যদি তোমরা কষ্ট পাও, তবে তোমাদের মত তারাও তো কষ্ট পায়, আর তোমরা আল্লাহ হতে এমন কিছু আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।

-তাইসিরুল

• এবং সেই সম্প্রদায়ের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করনা; যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাক তাহলে তারাও তোমাদের অনুরূপ কষ্ট ভোগ করেছে; এবং তৎসহ আল্লাহ হতে তোমাদের যে ভরসা আছে তাদের সেই ভরসা নেই; এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

-মুজিবুর রহমান

• And do not weaken in pursuit of the enemy. If you should be suffering - so are they suffering as you are suffering, but you expect from Allah that which they expect not. And Allah is ever Knowing and Wise.

-Sahih International

১০৪. আর শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহর কাছে তোমরা যা আশা কর ওরা তা আশা করে না(১)। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ আল্লাহর কাছে তোমরা সওয়াব, রহমত ও উঁচু মর্যাদা আশা কর, যা তারা করে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত ও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও” [সূরা আলে ইমরান ১৩৯] আরও বলেন, “কাজেই তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না, যখন তোমরা প্রবল; আর আল্লাহ তোমাদের সংগে আছেন এবং তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো ক্ষুন্ন করবেন না।” [সূরা মুহাম্মাদ: ৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৪) আর শত্রুদলের সন্ধানে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলো না।[1] যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও, তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহর কাছে তোমরা যা আশা কর, তারা তা করে না।[2] বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] অর্থাৎ, নিজেদের শত্রুর পিছনে ধাওয়া করার ব্যাপারে দুর্বলতা না দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পুরো দমে প্রচেষ্টা চালাও এবং তাদের অপেক্ষায় ওৎ পেতে বসে থাক।

[2] অর্থাৎ, আহত তো তোমরাও হও এবং ওরাও হয়, কিন্তু তোমাদের সমূহ আঘাতের পরিবর্তে আল্লাহর নিকট নেকী পাওয়ার আশা আছে। তারা কিন্তু কোন কিছু পাওয়ার আশা রাখে না। ফলে আখেরাতে প্রতিদান পাওয়ার জন্য যে মেহনত ও পরিশ্রম তোমরা করতে পারবে তা কাফেররা পারবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৫ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡكَ الۡكِتٰبَ بِالۡحَقِّ لِتَحۡكُمَ بَیۡنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىكَ اللّٰهُ ؕ وَ لَا تَكُنۡ لِّلۡخَآئِنِیۡنَ خَصِیۡمًا ﴿۱۰۵﴾ۙ
انا انزلنا الیك الكتب بالحق لتحكم بین الناس بما ارىك الله و لا تكن للخآئنین خصیما ﴿۱۰۵﴾
• নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।

-আল-বায়ান

• অবশ্যই আমি সত্য সহকারে তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যেন তুমি যা আল্লাহ তোমাকে জানিয়েছেন, সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার ফায়সালা কর এবং খিয়ানতকারীদের পক্ষে তর্ক করো না।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি - যেন তুমি তদনুযায়ী মানবদেরকে আদেশ প্রদান কর, যা আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দান করেছেন এবং তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়োনা।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, We have revealed to you, [O Muhammad], the Book in truth so you may judge between the people by that which Allah has shown you. And do not be for the deceitful an advocate.

-Sahih International

১০৫. আমরা(১) তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবেন না(২)।

(১) সূরা আন-নিসার ১০৫ থেকে ১১৩ নং আয়াত এক বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঘটনাটি হচ্ছে, হিজরতের প্রাথমিক যুগে সাধারণ মুসলিমদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাদের সাধারণ খাদ্য ছিল যবের আট কিংবা খেজুর কিংবা গমের আটা। এগুলো প্রায়ই মদীনায় পাওয়া যেতো না। সিরিয়া থেকে কোন চালান এলে কেউ কেউ তা সংগ্রহ করে রাখত। রিফা'আ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ধরনের কিছু গমের আটা সংগ্রহ করে একটি বস্তায় রেখে দিয়েছিলেন। এ বস্তার মধ্যে কিছু অস্ত্র-শস্ত্রও রেখে একটি ছোট কক্ষে সংরক্ষিত রেখেছিলেন। মদীনাতে তখন বনু উবাইরাক গোত্রের বিশর, বশীর ও মুবাশশির নামীয় তিন লোক বিশেষ কারণে খ্যাতি লাভ করেছিল। তন্মধ্যে বশীর ছিল প্রকৃতই মুনাফিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে বদনামী করে কবিতা রচনা করে অন্যের নামে চালিয়ে দিত। সেই বশীর সিধ কেটে রিফা'আ ইবন যায়েদের সে বস্তা বের করে নেয়। সকালে রিফা'আ রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যাপারটি তার ভ্রাতুষ্পপুত্র কাতাদার কাছে বিবৃত করলেন। বনু উবায়রাক বললো, সম্ভবত এটা লবীদ ইবন সাহলের কীর্তি।

লবীদ ইবন সাহল তা শুনে অত্যন্ত ক্রোধাম্বিত হলেন এবং তরবার কোষমুক্ত করে বললেন, আমার উপর অপবাদ চাপানো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন পন্থায় কাতাদা ও রিফা'আ রাদিয়াল্লাহু আনহুমার প্রবল ধারণা জন্মেছিল যে, এটি বনী উবাইরাকের কীর্তি। তখন কাতাদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে চুরির ঘটনা এবং তদন্তক্রমে বনু উবাইরাকের প্রতি প্রবল ধারণার কথা আলোচনা করলেন। বনু উবায়রাক সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে রিফা'আ ও কাতাদার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, শরীআতসম্মত প্রমাণ ছাড়াই তারা আমাদের নামে চুরির অপবাদ আরোপ করছে। আপনি তাদেরকে বারণ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই করলেন। কিন্তু বেশীদিন অতিবাহিত না হতেই এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। যার মাধ্যমে সমস্ত ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে তুলে ধরা হয়।

প্রথমে আয়াতে বলা হয়েছে, আমরা তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারেন এবং বিশ্বাসঘাতকদের অর্থাৎ বনী উবাইরাক এর সমর্থনে তর্ক করবেন না। আর আপনি ধারণার বশবর্তী হয়ে সাহাবী কাতাদা ইবন নুমানকে যা বলা হয়েছে সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হোন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ বিশ্বাস ভংগকারী পাপীকে পছন্দ করেন না। তারা মানুষ থেকে গোপন করতে চায় কিন্তু আল্লাহর থেকে গোপন করে না, অথচ তিনি তাদের সংগেই আছেন রাতে যখন তারা, তিনি যা পছন্দ করেন না- এমন বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তারা যা করে তা সর্বতোভাবে আল্লাহর জানা রয়েছে।

দেখ, তোমরাই ইহ জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কে তাদের পক্ষে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? কেউ কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে। অর্থাৎ যদি তারা ক্ষমা প্রার্থী হতো তবে আল্লাহ অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দিতেন। আর কেউ পাপ কাজ করলে সে ওটা তার নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। কেউ কোন দোষ বা পাপ করে পরে ওটা কোন নির্দোষ ব্যক্তি অর্থাৎ লবীদ ইবন সাহলের প্রতি আরোপ করলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।

তারপর আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলকে উদ্দেশ্য করে নাযিল করলেন, আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাদের একদল আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকেও পথভ্রষ্ট করে না এবং আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। এ আয়াতসমূহ নাযিল হলে মূল ঘটনা স্পষ্ট হয়ে গেল। বনু উবাইরাকের কাছ থেকে অস্ত্ৰ-শস্ত্র নিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিফা'আর কাছে তা ফেরৎ দিলেন। তিনি সে সমুদয় আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলেন।

এদিক বিশর মুনাফেকী অবস্থা ধরা পড়ে যাওয়ার কারণে মক্কায় সুলাফা বিনতে সাদ ইবন সুমাইয়া নামীয় এক মহিলার কাছে গিয়ে সরাসরি মুর্তাদ হয়ে গেল। তখন ১১৫ নং আয়াত নাযিল হলো, যাতে হক প্রকাশিত হওয়ার পরে রাসূলের বিরুদ্ধাচারণের কারণে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। [তিরমিযী: ৩০৩৬; মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৩৮৫] ঘটনা যাই হোক, কুরআনের সাধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রদত্ত নির্দেশাবলী এ ঘটনার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতে আগমনকারী মুসলিমদের জন্য ব্যাপক। এছাড়া এসব নির্দেশের মধ্যে অনেক মৌলিক ও শাখাগত মাসআলাও রয়েছে।

(২) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি দিনে সত্তর বারেরও অধিক আল্লাহর নিকট ইস্তেগফার এবং তাওবা করে থাকি। [বুখারীঃ ৬৩০৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) তোমার প্রতি সত্য সহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর। [1] আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের স্বপক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না। [2]

[1] এই (১০৪ থেকে ১১৩ পর্যন্ত) আয়াতগুলোর শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আনসারদের যাফার গোত্রের ত্বো’মা অথবা বাশীর ইবনে উবাইরিক নামক এক ব্যক্তি অপর এক আনসারীর বর্ম চুরি করে নেয়। যখন এই চুরির চর্চা হতে লাগল এবং যখন সে অনুভব করল যে, তার চুরির কথা ফাঁস হয়ে যাবে, তখন সে (চুরিকৃত) বর্মটা এক ইয়াহুদীর বাড়িতে ফেলে দিয়ে যাফার গোত্রের কিছু লোককে সাথে নিয়ে রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল। সকলে মিলে বলল যে, বর্মটা অমুক ইয়াহুদী চুরি করেছিল। সেই ইয়াহুদীও নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ইবনে উবাইরিক বর্ম চুরি করে আমার বাড়িতে ফেলে দিয়েছিল। যাফার গোত্রের লোকেরা (ত্বো’মা অথবা বাশীর প্রভৃতি) প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল। তারা নবী করীম (সাঃ)-কে বুঝাতে চেষ্টা করছিল যে, চোর ইয়াহুদীই; ত্বো’মার উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) তাদের চমৎকার ও চতুরতাপূর্ণ কথাবার্তায় প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েন এবং আনসারীকে চুরির অপবাদ থেকে মুক্ত ঘোষণা করে ইয়াহুদীকে চুরির অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত করতে যাবেন, ঠিক এই সময়ই মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন। এ থেকে যে বিষয়গুলো জানা গেল তা হল, প্রথমতঃ নবী করীম (সাঃ) একজন মানুষ বিধায় তিনি ভুল বোঝাবুঝির শিকার হতেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন না। গায়বের খবর জানলে তিনি সত্বর তাদের প্রকৃত ব্যাপার জেনে নিতেন। তৃতীয়তঃ মহান আল্লাহ স্বীয় পয়গম্বরের হিফাযত করেন। তাই কখনোও যদি প্রকৃত ব্যাপার গুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে নবীর দ্বারা (সত্যের) বিপরীত কিছু হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছত, সঙ্গে সঙ্গেই মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে নবীকে সতর্ক করে তাঁর সংশোধন করে দিতেন। আর এটাই হল নবীদের নিষ্পাপ হওয়ার দাবী। এ এমন এক উচ্চ মর্যাদা যা আম্বিয়া ব্যতীত আর কেউ লাভ করতে পারে না।

[2] এ থেকে উবাইরিক গোত্রকেই বুঝানো হয়েছে। যারা চুরি করে নিজেদের বাকপটুতায় ইয়াহুদীকে চোর সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা করেছিল। পরের আয়াতেও তাদের ও তাদের সমর্থকদের ভুল আচরণকে প্রকাশ করে নবী করীম (সাঃ)-কে সতর্ক করা হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৬ وَّ اسۡتَغۡفِرِ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۱۰۶﴾ۚ
و استغفر الله ان الله كان غفورا رحیما ﴿۱۰۶﴾
• আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-আল-বায়ান

• আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও, নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-তাইসিরুল

• এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।

-মুজিবুর রহমান

• And seek forgiveness of Allah. Indeed, Allah is ever Forgiving and Merciful.

-Sahih International

১০৬. আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) এবং আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, [1] নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

[1] অর্থাৎ, কোন তদন্ত না করে খিয়ানতকারীদের যেহেতু তুমি সমর্থন করেছ, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উভয় দলের মধ্যে কোন এক পক্ষের সত্যতার ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চয়তা না হওয়া পর্যন্ত তার সমর্থন করা এবং তার হয়ে ওকালতি বা প্রতিনিধিত্ব করা বৈধ নয়। এ ছাড়াও যদি কোন দল ধোঁকা ও প্রতারণামূলকভাবে এবং নিজেদের বাকপটুতা দ্বারা আদালত অথবা বিচারকের কাছ থেকে নিজেদের স্বপক্ষে বিচার করিয়ে নেয়, আর তারা যদি তার অধিকারী না হয়, তাহলে আল্লাহর নিকট এ বিচারের কোন মূল্য নেই। এই কথাটাকে নবী করীম (সাঃ) একটি হাদীসে এইভাবে বর্ণনা করেছেন, "সাবধান! আমি তো একজন মানুষই। আমি আমার শোনা কথার আলোকে ফায়সালা করি। হতে পারে কোন মানুষ তার দলীল-প্রমাণ পেশ করার ব্যাপারে বড়ই দক্ষ ও হুঁশিয়ার হবে। আর আমি তার পটুতাপূর্ণ কথায় প্রভাবিত হয়ে তারই পক্ষে ফায়সালা করে দেব, অথচ সে সত্যাশ্রয়ী নয়। এইভাবে আমি অন্যের অধিকার তাকে দিয়ে দেব। তার মনে রাখা দরকার যে, এটা হবে আগুনের টুকরা। এখন তার ইচ্ছা হলে তা গ্রহণ করুক অথবা বর্জন করুক।" (বুখারী ২৪৫৮, মুসলিম ৭১৮৫নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৭ وَ لَا تُجَادِلۡ عَنِ الَّذِیۡنَ یَخۡتَانُوۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنۡ كَانَ خَوَّانًا اَثِیۡمًا ﴿۱۰۷﴾ۚۙ
و لا تجادل عن الذین یختانون انفسهم ان الله لا یحب من كان خوانا اثیما ﴿۱۰۷﴾
• আর যারা নিজদের খিয়ানত করে তুমি তাদের পক্ষে বিতর্ক করো না। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না তাকে, যে খিয়ানতকারী, পাপী।

-আল-বায়ান

• নিজেদের (বিবেক ও জ্ঞানের) প্রতি খিয়ানতকারীদের পক্ষে তুমি বাদানুবাদ করো না, কারণ আল্লাহ অতি খিয়ানতকারী চরম পাপীকে পছন্দ করেন না।

-তাইসিরুল

• এবং যারা স্বীয় জীবনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে, তুমি তাদের পক্ষে বির্তক করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসঘাতক পাপীকে ভালবাসেননা।

-মুজিবুর রহমান

• And do not argue on behalf of those who deceive themselves. Indeed, Allah loves not one who is a habitually sinful deceiver.

-Sahih International

১০৭.আর যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বিবাদ-বিসম্বাদ করবেন না, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) আর তুমি তাদের পক্ষে কথা বলো না, যারা নিজেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠকে ভালবাসেন না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৮ یَّسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ النَّاسِ وَ لَا یَسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ اللّٰهِ وَ هُوَ مَعَهُمۡ اِذۡ یُبَیِّتُوۡنَ مَا لَا یَرۡضٰی مِنَ الۡقَوۡلِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطًا ﴿۱۰۸﴾
یستخفون من الناس و لا یستخفون من الله و هو معهم اذ یبیتون ما لا یرضی من القول و كان الله بما یعملون محیطا ﴿۱۰۸﴾
• তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তারা যা করে তা পরিবেষ্টন করে আছেন।

-আল-বায়ান

• তারা মানুষ হতে গোপন করে থাকে, কিন্তু তারা আল্লাহ হতে গোপন করতে পারে না; কেননা যে সময়ে তারা রাত্রে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তখনও তিনি তাদের সঙ্গেই থাকেন; আল্লাহ তাদের সমুদয় কার্যকলাপকে বেষ্টন করে আছেন।

-তাইসিরুল

• তারা মানব হতে গোপন করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ হতে গোপন করতে পারেনা; এবং তিনি তাদের সঙ্গে রয়েছেন যখন তারা রজনীতে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে যাতে তিনি সম্মত নন; এবং তারা যা করছে আল্লাহ তার পরিবেষ্টনকারী।

-মুজিবুর রহমান

• They conceal [their evil intentions and deeds] from the people, but they cannot conceal [them] from Allah, and He is with them [in His knowledge] when they spend the night in such as He does not accept of speech. And ever is Allah, of what they do, encompassing.

-Sahih International

১০৮.তারা মানুষ থেকে গোপন করতে চায় কিন্তু আল্লাহর থেকে গোপন করে না, অথচ তিনি তাদের সংগেই আছেন রাতে যখন তারা, তিনি যা পছন্দ করেন না- এমন বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তারা যা করে আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৮) এরা মানুষকে লজ্জা করে (মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপনীয়তা অবলম্বন করে), কিন্তু আল্লাহকে লজ্জা করে না (তাঁর দৃষ্টি থেকে গোপনীয়তা অবলম্বন করতে পারে না) অথচ তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন, যখন রাত্রে তারা তাঁর (আল্লাহর) অপছন্দনীয় কথা নিয়ে পরামর্শ করে। আর তারা যা করে, তা সর্বতোভাবে আল্লাহর জ্ঞানায়ত্ত।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১০৯ هٰۤاَنۡتُمۡ هٰۤؤُلَآءِ جٰدَلۡتُمۡ عَنۡهُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۟ فَمَنۡ یُّجَادِلُ اللّٰهَ عَنۡهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَمۡ مَّنۡ یَّكُوۡنُ عَلَیۡهِمۡ وَكِیۡلًا ﴿۱۰۹﴾
هانتم هؤلآء جدلتم عنهم فی الحیوۃ الدنیا فمن یجادل الله عنهم یوم القیمۃ ام من یكون علیهم وكیلا ﴿۱۰۹﴾
• হে, তোমরাই তো তারা, যারা দুনিয়ার জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করেছ। সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের পক্ষে আল্লাহর সাথে কে বিতর্ক করবে? কিংবা কে হবে তাদের তত্ত্বাবধায়ক?

-আল-বায়ান

• দেখ, ওরা সেই লোক যাদের পক্ষে পার্থিব জীবনে তোমরা বিতর্ক করছ কিন্তু ক্বিয়ামাত দিবসে তাদের পক্ষ হতে আল্লাহর সম্মুখে কে ঝগড়া করবে? কিংবা কে তাদের উকীল হবে?

-তাইসিরুল

• সাবধান! তোমরাই ঐ লোক যারা ওদের পক্ষ হতে পার্থিব জীবন সম্বন্ধে বিতর্ক করছ; কিন্তু কিয়ামাত দিবসে তাদের পক্ষ হতে কে আল্লাহর সাথে বিতর্ক করবে এবং কে তাদের কার্য সম্পাদনকারী হবে?

-মুজিবুর রহমান

• Here you are - those who argue on their behalf in [this] worldly life - but who will argue with Allah for them on the Day of Resurrection, or who will [then] be their representative?

-Sahih International

১০৯. দেখ, তোমরাই ইহ জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কে তাদের পক্ষে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৯) দেখ, তোমরাই পার্থিব জীবনে তাদের স্বপক্ষে বিতর্ক করেছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কে তাদের স্বপক্ষে কথা বলবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? [1]

[1] অর্থাৎ, এই পাপের কারণে যখন তার পাকড়াও হবে, তখন আল্লাহর পাকড়াও থেকে তাকে কে বাঁচাতে পারবে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ : ১১০ وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا اَوۡ یَظۡلِمۡ نَفۡسَهٗ ثُمَّ یَسۡتَغۡفِرِ اللّٰهَ یَجِدِ اللّٰهَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۱۱۰﴾
و من یعمل سوٓءا او یظلم نفسهٗ ثم یستغفر الله یجد الله غفورا رحیما ﴿۱۱۰﴾
• আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-আল-বায়ান

• যে ব্যক্তি অসৎকাজ করে কিংবা নিজের আত্মার প্রতি যুলম করে, অতঃপর আল্লাহ হতে ক্ষমা ভিক্ষে করে, সে আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।

-তাইসিরুল

• এবং যে কেহ দুস্কার্য করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় দেখতে পাবে।

-মুজিবুর রহমান

• And whoever does a wrong or wrongs himself but then seeks forgiveness of Allah will find Allah Forgiving and Merciful.

-Sahih International

১১০. আর কেউ কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে পরে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।(১)।

(১) এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, বান্দার হকের সাথে কিংবা আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কযুক্ত সব গোনাহই তাওবা ও ইস্তেগফারের দ্বারা মাফ হতে পারে। তবে তাওবা ও ইস্তেগফারের স্বরূপ জানা জরুরী। শুধু মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি’ বলার নাম তাওবা ও ইস্তেগফার নয়। তাই আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি যদি সে জন্য অনুতপ্ত না হয় এবং তা পরিত্যাগ না করে কিংবা ভবিষ্যতে পরিত্যাগ করতে সংকল্পবদ্ধ না হয়, তবে মুখে মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা তাওবার সাথে উপহাস বৈ কিছু নয়। তাওবার জন্য মোটামুটি তিনটি বিষয় জরুরীঃ (১) অতীত গোনাহর জন্য অনুতপ্ত হওয়া, (২) উপস্থিত গোনাহ অবিলম্বে ত্যাগ করা এবং (৩) ভবিষ্যতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে দৃঢ়সংকল্প হওয়া। তাছাড়া বান্দাহর হকের সাথে যেসব গোনাহর সম্পর্ক, সেগুলো বান্দাহর কাছ থেকেই মাফ করিয়ে নেয়া কিংবা হক পরিশোধ করে দেয়া তাওবার অন্যতম শর্ত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু(রূপে) পাবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১০১ থেকে ১১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 8 9 10 11 12 · · · 15 16 17 18 পরের পাতা »