-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০১. যাদের চোখ ছিল অন্ধ আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অক্ষম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০১) যাদের চক্ষু ছিল আমার স্মরণ (কুরআন)এর ব্যাপারে অন্ধ এবং যারা শুনতেও ছিল অপারগ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০২. যারা কুফরী করেছে তারা কি মনে করেছে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে (১) অভিভাবকরূপে গ্ৰহণ করবে(২)? আমরা তো কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম।
(১) عِبَادِي (আমার দাস) বলে এখানে ফিরিশতা, নেককার লোক এবং সেসব নবীগণকে বোঝানো হয়েছে দুনিয়াতে যাদেরকে উপাস্য ও আল্লাহর শরীকরূপে স্থির করা হয়েছে; যেমন, উযায়ের ও ঈসা ‘আলাইহিস সালাম। কিছুসংখ্যক আরব ফিরিশতাদেরও উপাসনা করত, [ফাতহুল কাদীর] তাই আয়াতে (الَّذِينَ كَفَرُوا) বলে কাফেরদের এসব দলকেই বোঝানো হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির “আমার বান্দা” অর্থ সৃজিত এবং মালিকানাধীন বস্তু গ্ৰহণ করে একে ব্যাপকাকার করে দিয়েছেন। ফলে আগুন, মূর্তি, তারকা, এমনকি গরু ইত্যাদি মিথ্যা উপাস্যও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল কারীম]
(২) উদ্দেশ্য এই যে, এসব কাফেররা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে; তারা কি মনে করে যে, এ কাজ তাদেরকে উপকৃত করবে এবং এ দ্বারা তাদের কিছুটা কল্যাণ হবে? [ফাতহুল কাদীর] এই জিজ্ঞাসা অস্বীকারবোধক৷ অর্থাৎ এরূপ মনে করা ভ্রান্তি ও মূর্খতা। অন্য আয়াতে আল্লাহ এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কখনই নয়, ওরা তো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।” [সূরা মারইয়াম: ৮২]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০২) যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার দাসদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম। [1]
[1] حَسب অর্থ ধারণা করা, عِبادي আমার দাস বা বান্দা বলতে ফিরিশতা, ঈসা (আঃ) ও অন্যান্য আওলিয়াগণ যাঁদেরকে সাহায্যকারী, দাতা বা বিপত্তারণ মনে করা হয়। অনুরূপভাবে শয়তান ও জীন যাদের ইবাদত করা হয় তারাও। এখানে প্রশ্নবোধক বাক্য ধমক ও তিরস্কারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত যারা অন্যের ইবাদত (উপাসনা বা পূজা) করে তারা কি মনে করে যে, আমাকে ছেড়ে আমাদের বান্দাদের ইবাদত করলে তারা তাদেরকে আমার আযাব হতে বাঁচিয়ে নেবে? এটা একদম অসম্ভব। আমি তো কাফেরদের জন্য জাহান্নাম তৈরী করে রেখেছি। নিজেদের ত্রাণকর্তা মনে করে যাদের ইবাদত করা হচ্ছে, তারা তাদেরকে জাহান্নামে যাওয়া হতে রক্ষা করতে পারবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৩. বলুন, আমরা কি তোমাদেরকে এমন লোকদের কথা জনাব, যারা আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্ৰস্ত?(১)
(১) এখানে প্রথম দুই আয়াত এমন ব্যক্তি ও দলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যারা কোন কোন বিষয়কে সৎ মনে করে তাতে পরিশ্রম করে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তাদের সে পরিশ্রম বৃথা এবং সে কর্মও নিস্ফল। কুরতুবী বলেনঃ এ অবস্থা দুটি কারণে সৃষ্টি হয়। (এক) ভ্ৰান্তবিশ্বাস এবং (দুই) লোক দেখানো মনোবৃত্তি। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৩) তুমি বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব তাদের যারা কর্মে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৪. ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৪) ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পন্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।[1]
[1] অর্থাৎ, তাদের আমলগুলো এমন, যা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নয়, কিন্তু তাদের ধারণা যে তারা (আল্লাহর পছন্দনীয়) নেক আমলই করছে। এই আয়াতে কাদের কথা বলা হয়েছে? কেউ কেউ বলেন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের, কেউ বলেন খাওয়ারিজ (রাজদ্রোহী) সম্প্রদায় ও অন্যান্য বিদআতীদের, কেউ বলেন মুশরিকদের। কিন্তু সঠিক কথা হল, এই আয়াতে ব্যাপকভাবে ঐ সমস্ত ব্যক্তি বা দলকে বুঝানো হয়েছে, যাদের মধ্যে উক্ত গুণাবলী বিদ্যমান। পরের আয়াতে এই ধরনের লোকেদের জন্য আরো কিছু শাস্তির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৫. তারাই সেসব লোক, যারা তাদের রব-এর নিদর্শনাবলী ও তার সাথে তাদের সাক্ষাতের ব্যাপারে কুফরি করেছে। ফলে তাদের সকল আমল নিস্ফল হয়ে গেছে; সুতরাং আমরা তাদের জন্য কেয়ামতের দিন কোন ওজনের ব্যবস্থা রাখব না।(১)
(১) অর্থাৎ তাদের আমল বাহ্যতঃ বিরাট বলে দেখা যাবে, কিন্তু হিসাবের দাঁড়িপাল্লায় তার কোন ওজন হবে না। কেননা, কুফর ও শির্কের কারণে তাদের আমল নিস্ফল ও গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতের দিন দীর্ঘদেহী স্থূলকায় ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, আল্লাহর কাছে মাছির ডানার সমপরিমাণও তার ওজন হবে না। অতঃপর তিনি বলেনঃ যদি এর সমর্থন চাও, তবে কুরআনের এই আয়াত পাঠ কর- (فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا) [বুখারীঃ ৪৭২৯, মুসলিমঃ ৪৬৭৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৫) ওরাই তারা যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে;[1] ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন ওজন রাখব না। [2]
[1] آيات ربِّهم ‘প্রতিপালকের আয়াত বা নিদর্শনাবলী’ বলতে আল্লাহর একতত্ত্ববাদের ঐ সমস্ত দলীল-প্রমাণ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। অনুরূপভাবে ঐ সমস্ত আয়াতকেও বুঝানো হয়েছে যা তিনি নিজ গ্রন্থসমূহে অবতীর্ণ করেছেন এবং তাঁর নবী ও রসূলগণ তা মানুষের নিকট পৌছে দিয়েছেন। প্রতিপালকের সাক্ষাৎকে অস্বীকার করা বলতে পরকালের জীবন বা পুনরুত্থানকে বুঝানো হয়েছে।
[2] অর্থাৎ, আমার নিকট তাদের কোন মূল্যায়ন হবে না। অথবা অর্থ এই যে, ওদের জন্য আমি ওজনের ব্যবস্থাই করব না যাতে তাদের আমলসমূহ ওজন করা যায়। কারণ আমল তো শুধুমাত্র ঐ সমস্ত তাওহীদবাদী মুসলিমদের ওজন করা হবে, যাদের আমল-নামায় পাপ-পুণ্য উভয়ই থাকবে। কিন্তু ওদের আমল-নামা পুণ্য (নেকী) হতে বিলকুল শূন্য থাকবে। যেমন হাদীসের মধ্যে এসেছে যে, কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা মানুষ আসবে, কিন্তু আল্লাহর নিকট তার ওজন মাছির ডানা সমতুল্য হবে না। অতঃপর নবী (সাঃ) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন। (বুখারী, সূরা কাহফের তাফসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৬. জাহান্নাম, এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্ৰহণ করেছে বিদ্ররূপের বিষয়স্বরূপ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৬) জাহান্নাম, ওটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলদেরকে গ্রহণ করেছে বিদ্রূপের বিষয়রূপে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৭. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস।(১)
(১) فردوس এর অর্থ সবুজে ঘেরা উদ্যান। এটি আরবী শব্দ, না অনারব এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তোমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, তখন জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রার্থনা কর। কেননা, এটা জান্নাতের সর্বোৎকৃষ্ট স্তর। এর উপরেই আল্লাহর আরশ এবং এখান থেকেই জান্নাতের সব নহর প্রবাহিত হয়েছে।” [বুখারীঃ ২৭৯০, ৭৪২৩, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৩৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৭) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের অভ্যর্থনার জন্য আছে ফিরদাউস বেহেশ্ত।[1]
[1] ফিরদাউস জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানকে বলা হয়। নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জান্নাত প্রার্থনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা কর। কারণ ওটা হচ্ছে জান্নাতের সর্বোচ্চ অংশ, যেখান হতে জান্নাতের নহর (নদী)সমূহ প্রবাহিত হয়। (বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৮. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।(১)
(১) উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতের এ স্থানটি তাদের জন্য অক্ষয় ও চিরস্থায়ী নেয়ামত। যে জান্নাতে প্ৰবেশ করেছে, তাকে সেখান থেকে কখনো বের করা হবে না। কিন্তু এখানে একটি আশংকা ছিল এই যে, এক জায়গায় থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া মানুষের একটি স্বভাব। সে স্থান পরিবর্তনের ইচ্ছা করে। যদি জান্নাতের বাইরে কোথাও যাওয়ার অনুমতি না থাকে, তবে জান্নাতও কি খারাপ মনে হতে থাকবে? আলোচ্য আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে, জান্নাতের নেয়ামত ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশের সামনে দুনিয়াতে দেখা ও ব্যবহার করা বস্তুসমূহ তার কাছে নগণ্য ও তুচ্ছ মনে হবে। জান্নাত থেকে বাইরে যাওয়ার কল্পনাও কোন সময় মনে জাগবে না। অৰ্থাৎ তার চেয়ে আরামদায়ক কোন পরিবেশ কোথাও থাকবে। না। ফলে জান্নাতের জীবন তার সাথে বিনিময় করার কোন ইচ্ছাই তাদের মনে জাগবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৮) সেথায় তারা স্থায়ী হবে; এর পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া কামনা করবে না।[1]
[1] অর্থাৎ জানণাতবাসীদের জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতসমূহ পেয়ে কখনো তাদের মন একঘেয়েমি অনুভব করবে না, যাতে তারা জান্নাত ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০৯. বলুন, আমার রব-এর কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সাগর যদি কালি হয়, তবে আমার রব-এর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাগর নিঃশেষ হয়ে যাবে— আমরা এর সাহায্যের জন্য এর মত আরো সাগর আনলেও।(১)
(১) অর্থাৎ যদি সাগরের পানি আল্লাহর কালেমাসমূহ লেখার কালি হয়ে যায়, তবে আল্লাহর কালেমাসমূহ শেষ হওয়ার আগেই সাগরের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। যদিও এর কালি বাড়ানোর জন্য আরও সাগর এর সাথে যুক্ত করা হয়। [আদওয়াউল বায়ান] অনুরূপ অন্য স্থানেও আল্লাহ বলেছেন। যেমন, “আর যমীনের সব গাছ যদি কলম হয় এবং সাগর, তার পরে আরো সাত সাগর কালি হিসেবে যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।” [সূরা লুকমান: ২৭]
এ আয়াতসমূহ প্রমাণ করছে যে, আল্লাহর কালেমাসমূহ কখনও শেষ হবে না। [আদওয়াউল বায়ান] হাদীসে এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ বর্ণিত হয়েছে। তা হচ্ছে, কুরাইশ সর্দাররা ইয়াহুদীদের কাছে এসে বলল, আমাদেরকে এমন কিছু দাও যা আমরা ঐ লোকটাকে প্রশ্ন করতে পারি। তারা বলল, তাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন কর। তারা তাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে নাযিল হল, (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا) অর্থাৎ আর আপনাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, ‘রূহ আমার রবের আদেশঘটিত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে অতি সামান্যই।” [সূরা আল-ইসরা: ৮৫] এটা শুনে ইয়াহুদীরা বলতে লাগল, আমাদেরকে তো অনেক জ্ঞান দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে তাওরাত। আর যাকে তাওরাত দেয়া হয়েছে তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়েছে। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়। [তিরমিযী: ৩১৪০]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৯) তুমি বল, ‘আমার প্রতিপালকের বাণী[1] লিপিবদ্ধ করবার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তাহলে আমার প্রতিপালকের বাণী শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে; সাহায্যার্থে যদিও এর মত আরো একটি সমুদ্র আনয়ন করি।’
[1] كلمات এর অর্থঃ মহান আল্লাহর পরিব্যাপ্ত জ্ঞান, তাঁর হিকমত এবং ঐ সমস্ত দলীল-প্রমাণ যা তাঁর একতত্ত্ববাদকে প্রমাণ করে, যা মানুষের পক্ষে পূর্ণমাত্রায় জ্ঞাত হওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীর সমস্ত গাছপালাকে যদি কলম বানানো যায় এবং সমস্ত সমুদ্র; বরং তার সমপরিমাণ আরো সমুদ্রের পানিকে যদি কালি তৈরী করা যায়, তাহলে কলমসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে এবং সমস্ত কালি নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর বাণী ও হিকমত ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করে কখনই শেষ হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১০. বলুন, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র সত্য ইলাহ। কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে(১)।
(১) এ আয়াতকে দ্বীনের ভিত্তি বলা হয়ে থাকে, এখানে এমন দু'টি শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে যার উপরই সমস্ত দ্বীন নির্ভর করছে। এক, কার ইবাদত করছে দুই, কিভাবে করছে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। আবার সে ইবাদত হতে হবে নেক আমলের মাধ্যমে। আর নেক আমল হবে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে আমল করলেই। মোদ্দাকথা, শির্ক ও বিদ’আত থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে এ আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
এখানে উল্লেখিত শির্ক শব্দ দ্বারা যাবতীয় শির্কই বোঝানো হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু শির্ক আছে যেগুলো শির্ক হওয়া অত্যন্ত স্পষ্ট তাই তা থেকে বাঁচা খুব সহজ। এর বিপরীতে কিছু কিছু শির্ক আছে যেগুলো খুব সুক্ষ্ম বা গোপন। এ সমস্ত গোপন শির্কের উদাহরণের মধ্যে আছে, সামান্য রিয়া তথা সামান্য লোক দেখানো মনোবৃত্তি। সারমর্ম এই যে, আয়াতে যাবতীয় শির্ক হতে তবে বিশেষ করে রিয়াকারীর গোপন শির্ক থেকে বারণ করা হয়েছে। আমল আল্লাহর উদ্দেশ্যে হলেও যদি তার সাথে কোনরূপ সুখ্যাতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির বাসনা থাকে, তবে তাও এক প্রকার গোপন শির্ক। এর ফলে মানুষের আমল বরবাদ এবং ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
মাহমুদ ইবনে লবীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি তোমাদের সম্পর্কে যে বিষয়ে সর্বাধিক আশংকা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ছোট শির্ক কি? তিনি বললেনঃ রিয়া। [আহমাদঃ ৫/৪২৮, ৪২৯] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা যখন বান্দাদের কাজকর্মের প্রতিদান দেবেন, তখন রিয়াকার লোকদেরকে বলবেনঃ তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান নেয়ার জন্য তাদের কাছে যাও, যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা কাজ করেছিলে। এরপর দেখ, তাদের কাছে তোমাদের জন্য কোন প্রতিদান আছে কি না। কেননা, আল্লাহ শরীকদের শরীকানার সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। [তিরমিযীঃ ৩১৫৪, ইবনে মাজাহঃ ৪২০৩, আহমাদঃ ৪/৪৬৬, বায়হাকী শু'আবুল ঈমানঃ ৬৮১৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা। বলেনঃ আমি শরীকদের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঊর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোন সৎকর্ম করে এবং তাতে আমার সাথে অন্যকেও শরীক করে, আমি সেই আমল শরীকের জন্য ছেড়ে দেই। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আমি সেই আমল থেকে মুক্ত; সে আমলকে আমি তার জন্যই করে দেই, যাকে সে আমার সাথে শরীক করেছিল। [মুসলিমঃ ২৯৮৫] আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি লাভের জন্য সৎকর্ম করে আল্লাহ তা'আলাও তার সাথে এমনি ব্যবহার করেন; যার ফলে সে ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়। [আহমাদঃ ২/১৬২, ১৯৫, ২১২, ২২৩]
অন্য হাদীসে এসেছে, “পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতই শির্ক তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে।” তিনি আরো বললেনঃ আমি তোমাদেরকে একটি উপায় বলে দিচ্ছি যা করলে তোমরা বড় শির্ক ও ছোট শির্ক (অর্থাৎ রিয়া) থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। তোমরা দৈনিক তিনবার এই দো’আ পাঠ করোঃ (اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ) [মুসনাদে আবু ইয়ালাঃ ১/৬০, ৬১ নং ৫৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ১০/২২৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১০) তুমি বল, ‘আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; [1] আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য;[2] সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায়[3] কাউকেও শরীক না করে।’
[1] এই কারণে আমিও প্রতিপালকের বাণী ও কথা পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত হতে সক্ষম নই।
[2] তবে অবশ্যই আমাকে এ বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যে, আমার নিকট আল্লাহর অহী আসে। সেই অহী দ্বারাই আমি ‘আসহাবে কাহফ’ (গুহাবাসী) ও যুলক্বারনাইন সম্পর্কে আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত কথা তোমাদের সামনে তুলে ধরেছি। যা ইতিহাসের অতল তলে তলিয়ে ছিল বা যার প্রকৃতত্ব রূপকথায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ঐ অহীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতত্ত্বপূর্ণ যে নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়েছে, তা হল তোমাদের মাবূদ (উপাস্য) শুধুমাত্র একজন।
[3] নেক আমল হল তাই, যা সুন্নাহর মোতাবেক হয়। অর্থাৎ যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দৃঢ়-বিশ্বাসী প্রথমতঃ তাদের উচিত প্রতিটি কাজ সুন্নাহ (সহীহ হাদীস) মোতাবেক করা, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর ইবাদতে কাউকেও শরীক না করা। যেহেতু বিদআত ও শিরক; এই দু’টি হল, আমল পন্ড হওয়ার মূল কারণ। আল্লাহ প্রতিটি মুসলিমকে শিরক ও বিদআত হতে দূরে রাখুন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান