بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৭/ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) | Al-Isra (Bani-Israil) | اٌلاِسْرٰاء (بَنِي إِسْرَائِيل) আয়াতঃ ১১১ মাক্কী

১৭ : ১০১

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسٰی تِسۡعَ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ فَسۡـَٔلۡ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِذۡ جَآءَهُمۡ فَقَالَ لَهٗ فِرۡعَوۡنُ اِنِّیۡ لَاَظُنُّكَ یٰمُوۡسٰی مَسۡحُوۡرًا ﴿۱۰۱﴾

و لقد اتینا موسی تسع ایت بینت فسـٔل بنی اسرآءیل اذ جآءهم فقال لهٗ فرعون انی لاظنك یموسی مسحورا ﴿۱۰۱﴾
আর আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম, সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞাসা কর, যখন সে তাদের কাছে আসল তখন ফির‘আউন তাকে বলল, ‘হে মূসা, আমিতো ধারণা করি তুমি যাদুগ্রস্ত’।

-আল-বায়ান

আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যখন সে তাদের (অর্থাৎ ফির‘আওন ও তার প্রধানদের) নিকট আসল তখন ফির‘আওন তাকে বলল, ‘ওহে মূসা! আমি তোমাকে অবশ্যই যাদুগ্রস্ত মনে করি।’

-তাইসিরুল

তুমি বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, আমি মূসাকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম; যখন সে তাদের নিকট এসেছিল তখন ফির‘আউন তাকে বলেছিলঃ হে মূসা! আমিতো মনে করি তুমি যাদুগ্রস্ত।

-মুজিবুর রহমান

And We had certainly given Moses nine evident signs, so ask the Children of Israel [about] when he came to them and Pharaoh said to him, "Indeed I think, O Moses, that you are affected by magic."

-Sahih International

১০১. আর আমরা মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম;(১) সুতরাং আপনি বনী-ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখুন; যখন তিনি তাদের কাছে এসেছিলেন, অতঃপর ফিরআউন তাঁকে বলেছিল, হে মুসা! আমি মনে করি নিশ্চয় তুমি জাদুগ্ৰস্ত।

(১) এখানে আবার মক্কার কাফেরদের মু'জিযা পেশ কবার দাবীর জবাব দেয়া হয়েছে এবং এটি তৃতীয় জবাব। কাফেররা বলতো, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো না যতক্ষণ না তুমি অমুক অমুক কাজগুলো করে দেখাবে। জবাবে তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমাদের পূর্বে ফিরআউন মুসা আলাইহিস সালামের কাছে এ ধরনের আয়াত চেয়েছে। (পবিত্র কুরআনে “আয়াত” শব্দটি দু'টি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক, নিদর্শন দুই, কিতাবের আয়াত অৰ্থাৎ আহকামে এলাহীর অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ স্থলে উভয় অর্থের সম্ভাবনা আছে। তবে অধিকাংশ তাফসীরবিদ এখানে “আয়াত” দ্বারা নিদর্শন বা মু'জেযা অর্থ নিয়েছেন।) তখন মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ নয়টি প্রকাশ্য “আয়াত” দিয়েছিলেন। অর্থাৎ একটি দু'টি নয় পরপর ৯টি সুস্পষ্ট মু'জিযা দেখানো হয়েছিল। তারপর এতসব মু'জিযা দেখার পরও যখন সে নবীকে অস্বীকার করলো তখন তার পরিণতি কি হলো তা তোমরা জানো।

এখানে নয় সংখ্যা উল্লেখ করায় আয়াতের সংখ্যা নয়ের বেশী না হওয়া জরুরী নয়। কিন্তু এখানে বিশেষ গুরুত্বের কারণে নয় উল্লেখ করা হয়েছে। সে নয়টি নিদর্শন নির্দিষ্টকরণে অনেক মতভেদ আছে, তবে তন্মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত হলো, (১) মুসা আলাইহিস সালাম এর লাঠি, যা অজগর সাপ হয়ে যেত, (২) শুভ্ৰ হাত, যা জামার নীচ থেকে বের করতেই চমকাতে থাকত, (৩) ফল-ফলাদির অভাব হওয়া। (৪) দুর্ভিক্ষ লাগা (৫) অস্বাভাবিকভাবে পঙ্গপালের আযাব প্রেরণ করা, (৬) তুফান প্রেরণ করা, (৭) শরীরের কাপড়ে এত উকুন সৃষ্টি করা, যা থেকে আত্মরক্ষার কোন উপায় ছিল না, (৮) ব্যাঙের আযাব চাপিয়ে দেয়া, ফলে প্রত্যেক পানাহারের বস্তুতে ব্যাঙ কিলবিল করতো এবং (৯) রক্তের আযাব প্রেরণ করা। ফলে প্রত্যেক পাত্রে ও পানাহারের বস্তুতে রক্ত দেখা যেত। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০১) অবশ্যই আমি মূসাকে ন’টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম;[1] সুতরাং তুমি বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞাসা করে দেখ। যখন সে তাদের নিকট এসেছিল, তখন ফিরআউন তাকে বলেছিল, ‘হে মূসা! আমি তো মনে করি, তুমি নিশ্চয়ই যাদুগ্রস্ত।’

[1] নয়টি মুজিযা (অলৌকিক ঘটনা) হল; শুভ্র হাত, লাঠি, অনাবৃষ্টি, ফল-ফসলে কমি, তুফান, পঙ্গপাল, উকুন (ছারপোকা), ব্যাঙ এবং রক্ত। ইমাম হাসান বাসরী (রঃ) বলেন, অনাবৃষ্টি এবং ফল-ফসলে কমি একই জিনিস। আর নবম মুজিযা ছিল লাঠির যাদুকরদের ভেল্কিকে গিলে ফেলা। এ ছাড়াও মূসা (আঃ)-কে আরো মু’জিযা দেওয়া হয়েছিল। যেমন, লাঠিকে পাথরে মারলে তা থেকে ১২টি ঝরনা প্রবাহিত হয়েছিল। মেঘের ছায়া করা এবং মান্ন্ ও সালওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এখানে ৯টি নিদর্শন বলতে কেবল সেই ৯টি মু’জিযাকেই বুঝানো হয়েছে, যেগুলো ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় দর্শন করেছিল। এই জন্য ইবনে আব্বাস (রাঃ) সমূদ্র বিদীর্ণ হয়ে পথ তৈরী হয়ে যাওয়াকেও সেই ৯টি মু’জিযার অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন এবং অনাবৃষ্টি ও ফল-ফসলে কমি এই উভয়কে একটি গণ্য করেছেন। তিরমিযীর একটি বর্ণনায় নয়টি নিদর্শনের ব্যাখ্যা এর বিপরীত করা হয়েছে। তবে সনদের দিক দিয়ে এ হাদীস দুর্বল। অতএব ন’টি স্পষ্ট নিদর্শন বলতে উল্লিখিত মু’জিযাগুলিই উদ্দেশ্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০২

قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَاۤ اَنۡزَلَ هٰۤؤُلَآءِ اِلَّا رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ بَصَآئِرَ ۚ وَ اِنِّیۡ لَاَظُنُّكَ یٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُوۡرًا ﴿۱۰۲﴾

قال لقد علمت ما انزل هؤلآء الا رب السموت و الارض بصآئر و انی لاظنك یفرعون مثبورا ﴿۱۰۲﴾
সে বলল, ‘তুমি জান যে, এ সকল বিষয় কেবল আসমানসমূহ ও যমীনের রবই নাযিল করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে। আর হে ফির‘আউন, আমি তো ধারণা করি তুমি ধ্বংসপ্রাপ্ত।

-আল-বায়ান

মূসা বলল, ‘তুমি তো জান যে, এসব চোখ-খুলে-দেয়া নিদর্শন আসমানসমূহ ও যমীনের প্রতিপালক ছাড়া অন্য কেউ অবতীর্ণ করেনি, হে ফির‘আওন! আমি তো তোমাকে মনে করি এক ধ্বংসপ্রাপ্ত লোক।’

-তাইসিরুল

মূসা বলেছিলঃ তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এই সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাব্বই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ। হে ফির‘আউন! আমিতো দেখছি, তুমি ধ্বংস হয়ে গেছ।

-মুজিবুর রহমান

[Moses] said, "You have already known that none has sent down these [signs] except the Lord of the heavens and the earth as evidence, and indeed I think, O Pharaoh, that you are destroyed."

-Sahih International

১০২. মূসা বললেন, তুমি অবশ্যই জান(১) যে, এ সব স্পষ্ট নিদর্শন আসমানসমূহ ও যমীনের রবই নাযিল করেছেন—প্ৰত্যক্ষ প্ৰমাণস্বরূপ। আর হে ফির'আউন! আমি তো মনে করছি তুমি হবে ধ্বংসপ্রাপ্ত।

(১) এখানে ফিরআউনকে বলা হচ্ছে যে, মূসা আলাইহি সসালাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা রাব্বুল আলামীনই যে নাযিল করেছেন তা সে জানে। এভাবে কুরআনের অন্য আয়াতেও তাই বলা হয়েছে, যেমন, সূরা আন-নামলে বলা হয়েছে, “তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্ৰহণ করেছিল। দেখুন, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!” [সূরা আন-নামলঃ ১৪] এতে করে একথা স্পষ্ট হলো যে, ফিরআউন অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিল। কিন্তু সে তা অহংকার বশতঃ অস্বীকার করেছিল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) মূসা বলেছিল, ‘তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এই সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শনাবলী আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ; হে ফিরআউন! আমি তো দেখছি যে, তুমি ধ্বংস হয়ে গেছ।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৩

فَاَرَادَ اَنۡ یَّسۡتَفِزَّهُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ فَاَغۡرَقۡنٰهُ وَ مَنۡ مَّعَهٗ جَمِیۡعًا ﴿۱۰۳﴾ۙ

فاراد ان یستفزهم من الارض فاغرقنه و من معهٗ جمیعا ﴿۱۰۳﴾
অতঃপর সে তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করার ইচ্ছা করল; তখন আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে ডুবিয়ে দিলাম।

-আল-বায়ান

অতঃপর ফিরআউন তাদেরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাইল। তখন আমি তাকে আর তার সঙ্গী-সাথীদের সব্বাইকে ডুবিয়ে মারলাম।

-তাইসিরুল

অতঃপর ফির‘আউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল; তখন ফির‘আউন ও তার সঙ্গীদের সকলকে আমি নিমজ্জিত করলাম।

-মুজিবুর রহমান

So he intended to drive them from the land, but We drowned him and those with him all together.

-Sahih International

১০৩. অতঃপর ফিরআউন তাদেরকে দেশ থেকে উচ্ছেদ করার ইচ্ছা করলা; তখন আমরা তাকে ও তার সঙ্গীদের সবাইকে নিমজ্জিত করলাম।(১)

(১) এটিই হচ্ছে এ কাহিনীটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য। মক্কার মুশরিকরা মুসলিমদেরকে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরবের মাটি থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আর তারা আপনাকে দেশ থেকে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল আপনাকে সেখান থেকে বহিস্কার করার জন্য; তাহলে আপনার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকত। |সূরা আল-ইসরাঃ ৭৬]

তাই তাদেরকে শুনানো হচ্ছে, ফিরআউন এসব কিছু করতে চেয়েছিল মূসা ও বনী ইসরাঈলের সাথে। কিন্তু কার্যত হয়েছে এই যে, ফিরআউন ও তার সাথীদেরকে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এবং পৃথিবীতে মূসা ও তার অনুসারীদেরকে বসবাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন তোমরাও যদি এ একই পথ অবলম্বন করো তাহলে তোমাদের পরিণামও এর থেকে ভিন্ন কিছু হবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) অতঃপর ফিরআউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করবার ইচ্ছা করল; তখন আমি ফিরআউন ও তার সঙ্গীগণ সকলকে নিমজ্জিত করলাম ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৪

وَّ قُلۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ لِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اسۡكُنُوا الۡاَرۡضَ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ الۡاٰخِرَۃِ جِئۡنَا بِكُمۡ لَفِیۡفًا ﴿۱۰۴﴾ؕ

و قلنا من بعدهٖ لبنی اسرآءیل اسكنوا الارض فاذا جآء وعد الاخرۃ جئنا بكم لفیفا ﴿۱۰۴﴾
আর আমি এরপর বনী ইসরাঈলকে বললাম, ‘তোমরা যমীনে বাস কর, অতঃপর যখন আখিরাতের ওয়াদা আসবে তখন আমি তোমাদেরকে জড়ো করে নিয়ে আসব’।

-আল-বায়ান

এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বললাম, ‘তোমরা যমীনের উপর বসবাস কর, অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত ক্বিয়ামাত আসবে তখন আমি তোমাদেরকে সংমিশ্রিত দলবলে হাজির করব।’

-তাইসিরুল

এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বললামঃ তোমরা এই দেশে বসবাস কর এবং যখন কিয়ামাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।

-মুজিবুর রহমান

And We said after Pharaoh to the Children of Israel, "Dwell in the land, and when there comes the promise of the Hereafter, We will bring you forth in [one] gathering."

-Sahih International

১০৪. আর আমরা এরপর বনী ইসরাঈলকে বললাম, তোমরা যমীনে বসবাস কর এবং যখন আখেরাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সবাইকে আমরা একত্র করে উপস্থিত করব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৪) এরপর আমি বানী ইস্রাঈলকে বললাম, ‘তোমরা এই দেশে বসবাস কর।[1] অতঃপর যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের সকলকেই আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।’

[1] বাহ্যিকভাবে ‘এই দেশে’ বলতে মিসরই উদ্দেশ্য; যেখান থেকে ফিরআউন মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে বের করে দেওয়ার ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু বানী-ইস্রাঈলের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তারা মিসর থেকে বের হওয়ার পর পুনরায় মিসর যায়নি। বরং চল্লিশ বছর ‘তীহ’ প্রান্তরে থাকার পর ফিলিস্তীনে প্রবেশ করে। আর এই সাক্ষ্য সূরা আ’রাফ ইত্যাদিতে কুরআনের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। কাজেই সঠিক উক্তি হল, এ দেশ থেকে ফিলিস্তীনকে বুঝানো হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৫

وَ بِالۡحَقِّ اَنۡزَلۡنٰهُ وَ بِالۡحَقِّ نَزَلَ ؕ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ اِلَّا مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا ﴿۱۰۵﴾ۘ

و بالحق انزلنه و بالحق نزل و ما ارسلنك الا مبشرا و نذیرا ﴿۱۰۵﴾
আর আমি তা যথাযথভাবে নাযিল করেছি এবং যথাযথভাবে তা নাযিল হয়েছে। আমি তো তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।

-আল-বায়ান

এ কুরআনকে আমি সত্যতা সহকারে নাযিল করেছি আর সত্যতা সহকারেই তা নাযিল হয়েছে। আমি তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি।

-তাইসিরুল

আমি সত্য সত্যই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং তা সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে; আমিতো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি।

-মুজিবুর রহমান

And with the truth We have sent the Qur'an down, and with the truth it has descended. And We have not sent you, [O Muhammad], except as a bringer of good tidings and a warner.

-Sahih International

১০৫. আর আমরা সত্য-সহই কুরআন নাযিল করেছি এবং তা সত্য-সহই নাযিল হয়েছে।(১) আর আমরা তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।

(১) আয়াতের ভাবাৰ্থ হলো, আমরা এ কুরআনকে হক তথা সঠিক তথ্যসম্বলিত করে নাযিল করেছি। তাতে আল্লাহ তাঁর আপনি ইলম যা তিনি তোমাদেরকে জানাতে চেয়েছেন যেমন তার নির্দেশ, নিষেধ, হুকুম-আহকামসমূহ সম্বলিত করেছেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, “আর এ কুরআন হক তথা সঠিকভাবেই নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ হে নবী! এ কুরআন আপনার কাছে সংরক্ষিত, অবিকৃত ও অমিশ্রিতভাবে, কোন কিছু বেশী বা কম না করেই নাযিল হয়েছে। কেননা, এটা তো সে মহাশক্তিশালী স্বত্তার পক্ষ থেকে এসেছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) আমি সত্যসহই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং সত্যসহই তা অবতীর্ণ হয়েছে;[1] আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। [2]

[1] অর্থাৎ, সুরক্ষিত অবস্থায় তোমার কাছে পৌঁছে গেছে। পথে এর মধ্যে কোন প্রকারের কম-বেশী এবং কোন প্রকারের পরিবর্তন ও (এর সাথে) কোন কিছুর মিশ্রণ ঘটেনি। কারণ, এটাকে নিয়ে আগমনকারী ফিরিশতা হলেন, شَدِيْدُ الْقُوَى، الأَمِيْنُ، المَكِيْنُ، المُطَاعُ فِي الْمَلاءِ الأَعْلَى (অর্থাৎ, চরম শক্তিশালী বিশ্বস্ত-আমানতদার, মর্যাদাপ্রাপ্ত, ফিরিশতার মাঝে তাঁর আনুগত্য করা হয়। তিনি হলেন ফিরিশতাদের সর্দার ও মান্যবর) এগুলি এমন গুণাবলী, যা জিবরীল (আঃ)-এর ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।

[2] সুসংবাদদাতা আনুগত্যশীল মু’মিনদের জন্য এবং সতর্ককারী অবাধ্যজনদের জন্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৬

وَ قُرۡاٰنًا فَرَقۡنٰهُ لِتَقۡرَاَهٗ عَلَی النَّاسِ عَلٰی مُكۡثٍ وَّ نَزَّلۡنٰهُ تَنۡزِیۡلًا ﴿۱۰۶﴾

و قرانا فرقنه لتقراهٗ علی الناس علی مكث و نزلنه تنزیلا ﴿۱۰۶﴾
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।

-আল-বায়ান

আমি এ কুরআনকে ভাগে ভাগে বিভক্ত করেছি যাতে তুমি থেমে থেমে মানুষকে তা পাঠ করে শুনাতে পার, কাজেই আমি তা ক্রমশঃ নাযিল করেছি।

-তাইসিরুল

আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।

-মুজিবুর রহমান

And [it is] a Qur'an which We have separated [by intervals] that you might recite it to the people over a prolonged period. And We have sent it down progressively.

-Sahih International

১০৬. আর আমরা কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে; যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন। ক্রমে ক্রমে এবং আমরা তা পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।(১)

(১) এখানে কুরআনকে একত্রে নাযিল না করে খন্ড খন্ড ভাবে নাযিল করার একটি কারণ বর্ণনা হয়েছে। আর তা হল, পরিবেশ পরিস্থিতি, প্রশ্নোত্তর ও রাসূলের অন্তরকে প্রশান্তি প্ৰদান করা। তবে আল্লাহ তা'আলা লাইলাতুল কদরের রাত্ৰিতে এ কুরআনকে পুরোপুরি নাযিল করে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে নাযিল করেছেন বলে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়। [মুস্তাদরাকে হাকোমঃ ২/৩৬৮, ইবনে হাজার আল-আসকালানীঃ ফাতহুল বারীঃ ৪/৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড-খন্ডভাবে[1] যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।

[1] فَرَقْنَاهُ এর দ্বিতীয় এক অর্থ, بَيَّنَّاهُ وَأَوْضَحْنَاهُ (এটাকে আমি খুলে খুলে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি)ও করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৭

قُلۡ اٰمِنُوۡا بِهٖۤ اَوۡ لَا تُؤۡمِنُوۡا ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ مِنۡ قَبۡلِهٖۤ اِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ سُجَّدًا ﴿۱۰۷﴾ۙ

قل امنوا بهٖ او لا تؤمنوا ان الذین اوتوا العلم من قبلهٖ اذا یتلی علیهم یخرون للاذقان سجدا ﴿۱۰۷﴾
বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।

-আল-বায়ান

বল, ‘তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর কিংবা বিশ্বাস না কর, ইতোপূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদেরকে যখন কুরআন পাঠ করে শুনানো হয়, তখন তারা অধোমুখে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে।’

-তাইসিরুল

বলঃ তোমরা বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের সামনে যখন আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বিনয়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে ।

-মুজিবুর রহমান

Say, "Believe in it or do not believe. Indeed, those who were given knowledge before it - when it is recited to them, they fall upon their faces in prostration,

-Sahih International

১০৭. বলুন, তোমরা কুরআনে ঈমান আন আর নাই ঈমান আন, নিশ্চয় যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা তেলাওয়াত করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) তুমি বল, ‘তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয়, তখনই তারা চেহারা লুটিয়ে সিজদায় পড়ে।[1]

[1] অর্থাৎ, সেই আলেমগণ যাঁরা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বিগত কিতাবগুলো পড়েছেন এবং তাঁরা অহীর প্রকৃতত্ব ও রিসালাতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সিজদায় পড়ে যান যে, তিনি তাঁদেরকে শেষ রসূল (সাঃ)-কে চেনার তওফীক দিয়েছেন এবং কুরআন ও রিসালাতের উপর ঈমান আনার সৌভাগ্য দান করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৮

وَّ یَقُوۡلُوۡنَ سُبۡحٰنَ رَبِّنَاۤ اِنۡ كَانَ وَعۡدُ رَبِّنَا لَمَفۡعُوۡلًا ﴿۱۰۸﴾

و یقولون سبحن ربنا ان كان وعد ربنا لمفعولا ﴿۱۰۸﴾
আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’।

-আল-বায়ান

আর তারা বলে, ‘আমাদের রব্ব মহান, পবিত্র; আমাদের রব্বের ও‘য়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।

-তাইসিরুল

এবং বলেঃ আমাদের রাব্ব পবিত্র, মহান! আমাদের রবের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। [সাজদাহ]

-মুজিবুর রহমান

And they say, "Exalted is our Lord! Indeed, the promise of our Lord has been fulfilled."

-Sahih International

১০৮. আর তারা বলে, আমাদের রব পবিত্ৰ, মহান। আমাদের রবের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে৷

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৮) এবং বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান! অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। [1]

[1] অর্থাৎ, মক্কার এই কাফেররা যারা প্রত্যেক বিষয়ে অজ্ঞ, তারা যদি ঈমান না আনে, তবে তুমি কোন পরোয়া করো না। কারণ, যারা জ্ঞানী এবং অহী ও রিসালাতের প্রকৃতত্ব যারা বোঝে, তারা ঈমান এনেছে। এমন কি কুরআন শুনে আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে গেছে। আর তারা তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং প্রতিপালকের অঙ্গীকারসমূহের উপর পূর্ণ বিশ্বাসও রাখে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১০৯

وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡكُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا ﴿۱۰۹﴾ٛ (سُجود‎‎)

و یخرون للاذقان یبكون و یزیدهم خشوعا ﴿۱۰۹﴾ٛ (سجود‎‎)
‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’। [সাজদাহ] ۩

-আল-বায়ান

তারা কাঁদতে কাঁদতে অধোমুখে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে আর তা তাদের বিনয় ও নম্রতা বাড়িয়ে দেয়। [সাজদাহ] ۩

-তাইসিরুল

এবং কাঁদতে কাঁদতে তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এতে তাদের বিনয়ই বৃদ্ধি পায়। [সাজদাহ] ۩

-মুজিবুর রহমান

And they fall upon their faces weeping, and the Qur'an increases them in humble submission.

-Sahih International

১০৯. আর তারা কাঁদতে কাঁদতে নতমস্তকে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। [সাজদাহ] ۩

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৯) আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে চেহারা লুটিয়ে (সিজদা) দেয় এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ [1] [সাজদাহ] ۩

[1] চেহারা লুটিয়ে সিজদায় পড়ে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারণ, প্রথম সিজদা ছিল আল্লাহর মাহাত্ম্য, তাঁর পবিত্রতার বর্ণনা এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এবং কুরআন শুনে যে ভীতি ও বিনয়ভাব তাদের মধ্যে জন্ম নেয় এবং কুরআনের আকর্ষণ ও চমৎকারিত্বে এত বেশী তারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে যে, তা পুনরায় তাদেরকে সিজদায় পতিত করে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

১৭ : ১১০

قُلِ ادۡعُوا اللّٰهَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّامَّا تَدۡعُوۡا فَلَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ لَا تَجۡهَرۡ بِصَلَاتِكَ وَ لَا تُخَافِتۡ بِهَا وَ ابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِكَ سَبِیۡلًا ﴿۱۱۰﴾

قل ادعوا الله او ادعوا الرحمن ایاما تدعوا فله الاسمآء الحسنی و لا تجهر بصلاتك و لا تخافت بها و ابتغ بین ذلك سبیلا ﴿۱۱۰﴾
বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর।

-আল-বায়ান

বল, ‘তোমরা আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো, যে নামেই তাঁকে ডাকো না কেন (সবই ভাল) কেননা সকল সুন্দর নামই তো তাঁর।’ তোমার সলাতে স্বর উচ্চ করো না, আর তা খুব নীচুও করো না, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর।

-তাইসিরুল

বলঃ তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান করনা কেন, সব সুন্দর নামইতো তাঁর! তোমরা সালাতে তোমাদের স্বর উচু করনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করনা; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর।

-মুজিবুর রহমান

Say, "Call upon Allah or call upon the Most Merciful. Whichever [name] you call - to Him belong the best names." And do not recite [too] loudly in your prayer or [too] quietly but seek between that an [intermediate] way.

-Sahih International

১১০. বলুন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক বা রাহমান নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। আর আপনি সালাতে স্বর খুব উচ্চ করবেন না আবার খুব ক্ষীণও করবেন না; বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করুন।(১)

(১) এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে এসেছে যে, মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করতেন, তখন মুশরিকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত এবং কুরআন, জিবরীল ও স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলত এর জওয়াবে আয়াতের শেষাংশ অবতীর্ণ হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২২, মুসলিমঃ ৪৪৬] এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সশব্দ ও নিঃশব্দ উভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, মধ্যবর্তী শব্দে পাঠ করলেই প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যেত এবং সশব্দে পাঠ করলে মুশরিকরা নিপীড়নের যে সুযোগ পেত, তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে সালাতে কুরআন তেলাওয়াতের আদব বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, খুব উচ্চঃস্বরে না হওয়া চাই এবং এমন নিঃশব্দেও না হওয়া চাই যে, মুক্তাদীরা শুনতে পায় না। বলাবাহুল্য এ বিধান বিশেষ করে সশব্দে পঠিত সালাতসমূহের জন্যে। যোহর ও আসরের নামাযে নিঃশব্দে পাঠ করা মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। জাহরী বা উচ্চঃস্বরে পড়তে হয় এমন সালাত বলতে ফজর, মাগরিব ও এশার সালাত বোঝায়। তাহাজ্জুদের সালাতও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, এক হাদীসে রয়েছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছ দিয়ে গেলে আবু বকরকে নিঃশব্দে এবং ওমরকে উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াতরত দেখতে পান।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদি'আল্লাহু আনহু–কে বললেনঃ আপনি এত নিঃশব্দে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ যাকে শোনানো উদ্দেশ্য তাকে শুনিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ্ তা'আলা গোপনতম আওয়াযও শ্রবণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সামান্য শব্দ সহকারে পাঠ করুন। অতঃপর ওমরকে বললেনঃ আপনি এত উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ আমি নিদ্রা ও শয়তানকে বিতাড়িত করে দেয়ার জন্যে উচ্চঃস্বরে পাঠ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দিলেন, যে একটু অনুচ্চ শব্দে পাঠ করুন। [তিরমিযীঃ ৪৪৭]

তবে তাহাজুদের সালাতে ইচ্ছা করলে কেরাত উচ্চস্বরে পড়তে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিচুস্বরেও পড়তে পারে। এ ব্যাপারে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। [দেখুনঃ তিরমিযীঃ ৪৪৮] তবে এ আয়াতে বর্ণিত “সালাত” শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আরো কিছু মত রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ আয়াতে সালাত বলতে দোআ বুঝানো হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২৩, মুসলিমঃ ৪৪৭]। সুতরাং সে অনুসারে দোআ করতে স্বর খুব উচু করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর, সকল সুন্দর নামাবলী তাঁরই।[1] আর তুমি নামাযে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এই দুই-এর মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর।[2]

[1] যেমন পূর্বেও অতিবাহিত হয়েছে যে, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘রাহমান’ ও ‘রাহীম’এর সাথে পরিচিত ছিল না। আর কোন ‘আষার’ (সাহাবীর উক্তি)-তে এসেছে যে, মুশরিকদের কেউ কেউ যখন নবী (সাঃ)-এর পবিত্র মুখ থেকে ‘ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম’ শব্দ শুনল, তখন বলে উঠল যে, এই লোক তো আমাদেরকে বলে যে, কেবল এক আল্লাহকেই ডাক, আর সে নিজে দু’জন উপাস্যকে ডাকছে! তাদের এই কথার জবাবে এ­ই আয়াত নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর)

[2] এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, মক্কায় রসূল (সাঃ) আত্মগোপন করে থাকতেন। যখন তিনি তাঁর সাহাবীদের নামায পড়াতেন, তখন শব্দ একটু উঁচু করতেন। মুশকিরা কুরআন শুনে কুরআনকে এবং আল্লাহকে গালি-গালাজ করত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, তোমার আওয়াজ এতটা উঁচু করো না যে, মুশরিকরা তা শুনে কুরআনকে গালি-গালাজ করে। আর এত আস্তেও পড়ো না যে, সাহাবীগণ তা শুনতেই না পায়। (বুখারীঃ তাওহীদ অধ্যায়, মুসলিমঃ নামায অধ্যায়) স্বয়ং নবী (সাঃ)-এর ঘটনা যে, কোন এক রাতে তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন যে, আবূ বাকর (রাঃ) খুব মৃদু আওয়াজে নামায পড়ছেন। অতঃপর উমার (রাঃ)-কেও দেখলেন যে, তিনি উঁচু শব্দে নামায পড়ছেন। তিনি তাঁদের উভয়কে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। আবূ বাকার (রাঃ) বললেন, আমি যাঁর সাথে মুনাজাতে ব্যস্ত ছিলাম, তিনি আমার শব্দ শুনছিলেন। আর উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমার উদ্দেশ্য ঘুমন্তদেরকে জাগানো এবং শয়তানকে ভাগানো। তিনি আবূ বাকার (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু উঁচু করে নিও এবং উমর (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু নীচু করে নিও। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী) আয়েশা (রাঃ)  বলেন, এই আয়াতটি দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম- ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১০১ থেকে ১১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »