بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৬/ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل আয়াতঃ ১২৮ মাক্কী
১৬ : ১০১ وَ اِذَا بَدَّلۡنَاۤ اٰیَۃً مَّكَانَ اٰیَۃٍ ۙ وَّ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا یُنَزِّلُ قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُفۡتَرٍ ؕ بَلۡ اَكۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾
و اذا بدلنا ایۃ مكان ایۃ و الله اعلم بما ینزل قالوا انما انت مفتر بل اكثرهم لا یعلمون ﴿۱۰۱﴾
• আর যখন আমি একটি আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই- আল্লাহ ভাল জানেন সে সম্পর্কে, যা তিনি নাযিল করেন- তখন তারা বলে, তুমি তো কেবল মিথ্যা রটনাকারী; রবং তাদের অধিকাংশই জানে না।

-আল-বায়ান

• আমি যখন এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত নাযিল করি- আর আল্লাহ ভালভাবেই জানেন, যা তিনি নাযিল করেন- তখন এই লোকেরা বলে, ‘তুমি তো মিথ্যা রচনাকারী।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, এ সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই কোন জ্ঞান নেই।

-তাইসিরুল

• আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি, আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলেঃ তুমিতো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And when We substitute a verse in place of a verse - and Allah is most knowing of what He sends down - they say, "You, [O Muhammad], are but an inventor [of lies]." But most of them do not know.

-Sahih International

১০১. আর যখন আমরা এক আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে অন্য আয়াত দেই— আর আল্লাহই ভাল জানেন যা তিনি নাযিল করবেন সে সম্পর্কে–, তখন তারা বলে, আপনি তো শুধু মিথ্যা রটনাকারী, বরং তাদের অধিকাং জানে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০১) আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত অবতীর্ণ করি -- আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা তিনিই ভাল জানেন -- তখন তারা বলে, ‘তুমি তো শুধু একজন মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। [1]

[1] একটি বিধান রহিত করার পর অন্য একটি অবতীর্ণ করেন। যার হিকমত, যৌক্তিকতা ও কারণ আল্লাহই জানেন এবং তিনি সেই অনুসারে বিধানের মধ্যে পরিবর্তন আনেন। তা শুনে কাফেররা বলে, হে মুহাম্মাদ! এই বাণী তোমার নিজস্ব রচনা। কারণ আল্লাহ এ রকম রদবদল করতে পারেন না। মহান আল্লাহ বলেন, যাদের অধিকাংশই অজ্ঞ, তারা রহিত করার যুক্তি ও মর্ম কি বুঝবে। (আরো দেখুন সূরা বাক্বারার ১০৬ নং আয়াতের টীকা।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০২ قُلۡ نَزَّلَهٗ رُوۡحُ الۡقُدُسِ مِنۡ رَّبِّكَ بِالۡحَقِّ لِیُـثَبِّتَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ هُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾
قل نزلهٗ روح القدس من ربك بالحق لیـثبت الذین امنوا و هدی و بشری للمسلمین ﴿۱۰۲﴾
• বল, রুহুল কুদস (জীবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।

-আল-বায়ান

• বল, ‘এ কুরআন তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রুহুল কুদূস (জিবরীল) ঠিক ঠিকভাবে নাযিল করেছেন ঈমানদারদেরকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এবং মুসলিমদের হিদায়াত ও সুসংবাদ দানের জন্য।’

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ তোমার রবের নিকট হতে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং হিদায়াত ও সুসংবাদ স্বরূপ আত্মসমর্পনকারীদের জন্য।

-মুজিবুর রহমান

• Say, [O Muhammad], "The Pure Spirit has brought it down from your Lord in truth to make firm those who believe and as guidance and good tidings to the Muslims."

-Sahih International

১০২. বলুন, আপনার রবের কাছ থেকে রূহুল-কুদুস(১) (জিবরীল) যথাযথ ভাবে একে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।

(১) “রুহুল কুদুস” এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে ‘পবিত্র রূহ বা ‘পবিত্রতার রূহ’। পারিভাষিকভাবে এ উপাধিটি দেয়া হয়েছে জিবরীল আলাইহিস সালামকে। এখানে অহী বাহক ফেরেশতার নাম না নিয়ে তার উপাধি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রোতাদেরকে এ সত্যটি জানানো যে, এমন একটি রূহ এ বাণী নিয়ে আসছেন যিনি সকল প্রকার মানবিক দুর্বলতা ও দোষ-ত্রুটি মুক্ত। তিনি একটি নিখাদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রূহ। আল্লাহর কালাম পূর্ণ আমানতদারীর সাথে পৌছিয়ে দেয়াই তার কাজ। তিনি যে যথার্থ কাজই করেন এবং কেবলমাত্র আল্লাহর নির্দেশেরই পূর্ণ বাস্ত বায়ন করেন তা আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আল-বাকারাহঃ ৯৭, সূরা আস-শু'আরাঃ ১৯২–১৯৪, সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) তুমি বল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে জিবরীল সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছে,[1] যারা বিশ্বাসী তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য[2] এবং তা আত্মসমর্পণকারীদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ।’ [3]

[1] অর্থাৎ, এই কুরআন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রচনা নয়। বরং তা জিবরীল (আঃ)-এর মত পবিত্র সত্তা সত্যসহ রবের নিকট হতে তা অবতীর্ণ করেছেন। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে {نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ عَلَى قَلْبِكَ} এ (কুরআন)-কে রূহুল আমীন (বিশ্বস্ত রূহ) জিবরীল তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছে। (সূরা শু'আরা ১৯৩-১৯৪)

[2] এই জন্য যে, তারা বলে নাসেখ-মানসূখ (রহিত ও রহিতকারী) উভয় বিধানই আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া রহিত করণের উপকারিতা যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়, তখন তাদের হৃদয়ে দৃঢ়তা ও ঈমানী মজবুতি সৃষ্টি হয়।

[3] আর এই কুরআন মুসলিমদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ। কারণ কুরআন বৃষ্টির মত যার দ্বারা কিছু কিছু মাটি প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে কিছু মাটি কাঁটাগাছ ও আগাছা ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না। মুমিনের অন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যা কুরআনের বর্কতে এবং ঈমানের আলোকে আলোকিত হয়। আর কাফেরের অন্তর লবণাক্ত মাটির মত যা কুফর ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে ডুবে থাকে, যেখানে কুরআনের বৃষ্টি ও আলো কোন কাজে লাগে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৩ وَ لَقَدۡ نَعۡلَمُ اَنَّهُمۡ یَقُوۡلُوۡنَ اِنَّمَا یُعَلِّمُهٗ بَشَرٌ ؕ لِسَانُ الَّذِیۡ یُلۡحِدُوۡنَ اِلَیۡهِ اَعۡجَمِیٌّ وَّ هٰذَا لِسَانٌ عَرَبِیٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۰۳﴾
و لقد نعلم انهم یقولون انما یعلمهٗ بشر لسان الذی یلحدون الیه اعجمی و هذا لسان عربی مبین ﴿۱۰۳﴾
• আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।

-আল-বায়ান

• আমি জানি, তারা বলে, ‘এক মানুষ তাকে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-কে] শিখিয়ে দেয়।’ অথচ দুষ্টবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে তারা যে লোকটির কথা বলছে তার ভাষা তো অনারব, অপরপক্ষে কুরআনের ভাষা হল স্পষ্ট আরবী।

-তাইসিরুল

• আমিতো জানিই তারা বলেঃ তাকে শিক্ষা দেয় জনৈক ব্যক্তি। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষাতো আরাবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরাবী ভাষা।

-মুজিবুর রহমান

• And We certainly know that they say, "It is only a human being who teaches the Prophet." The tongue of the one they refer to is foreign, and this Qur'an is [in] a clear Arabic language.

-Sahih International

১০৩. আর আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো কেবল একজন মানুষ(১) শিক্ষা দেয়। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয়; অথচ এটা (কুরআন) হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।

(১) বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মক্কার কাফেররা তাদের মধ্য থেকে কারো সম্পর্কে এ ধারণা করতো। এক হাদীসে তার নাম বলা হয়েছে ‘জাবর’। সে ছিল আমের আল হাদরামীর রোমীয় ক্রীতদাস। অন্য এক বর্ণনায় খুয়াইতিব ইবনে আবদুল উযযার এক গোলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার নাম ছিল ‘আইশ বা ইয়াঈশ’। তৃতীয় এক বর্ণনায় ইয়াসারের নাম নেয়া হয়েছে। তার ডাকনাম ছিল আবু ফুকাইহাহ। সে ছিল মক্কার এক মহিলার ইহুদী গোলাম। অন্য একটি বর্ণনায় বিল’আম নামক একটি রোমীয় গোলামের কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

মোটকথা: এদের মধ্য থেকে যেই হোক না কেন, মক্কার কাফেররা শুধুমাত্র এক ব্যক্তি তাওরাত ও ইন্জিল পড়ে এবং তার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতও হয়েছে শুধুমাত্র এটা দেখেই নিসংকোচে এ অপবাদ তৈরী করে ফেললো যে, আসলে এ ব্যক্তিই এ কুরআন রচনা করছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নামে নিজের পক্ষ থেকে এটিই পেশ করছেন। এভাবে মক্কার কুরাইশ কাফেররা সামান্য কিছু তাওরাত ও ইনজিল পড়তে পারতো এমন একজন অখ্যাত দাসকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান ব্যক্তিত্বের মোকাবিলায় যোগ্যতর বিবেচনা করছিল। তারা ধারণা করছিল, এ দুর্লভ রত্নটি ঐ কয়লা খণ্ড থেকেই দ্যুতি লাভ করছে। কাফের কুরাইশদের এ ধারণাটি নিশ্চয় হাস্যকর। [দেখুন, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) আমি তো জানিই, তারা বলে, ‘তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ।’[1] তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; আর এ তো স্পষ্ট আরবী ভাষা। [2]

[1] কিছু (গোলাম) দাস ছিল, যারা তওরাত ও ইঞ্জীল সর্ম্পকে অবগত ছিল। প্রথমে তারা খ্রিষ্টান বা ইয়াহুদী ছিল, পরে মুসলমান হয়ে যায়। তাদের ভাষাও ছিল অশুদ্ধ। মক্কার কাফেররা এদের প্রতিই ইঙ্গিত করে বলত যে, অমুক দাস মুহাম্মাদকে কুরআন শিক্ষা দেয়!

[2] মহান আল্লাহ উত্তরে বললেন, এরা যাদের কথা বলে, তারা তো শুদ্ধভাবে আরবীও বলতে পারে না, অথচ কুরআন এমন বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট আরবী ভাষায়, যার সাহিত্যশৈলী সুউচ্চ এবং যার অলৌকিকতা অতুলনীয়। চ্যালেঞ্জের পরও আজ পর্যন্ত তার মত একটি সূরা কেউ আনতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক মিলেও এর সমতুল বাণী রচনা করতে অক্ষম। কেউ বিশুদ্ধ আরবী বলতে না পারলে আরবের লোকেরা তাকে বোবা বলত এবং অনারবীকেও বোবা বলত। যেহেতু অলংকার ও শব্দস্বাচ্ছন্দ্যে অন্যান্য ভাষা আরবী ভাষারপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৪ اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ ۙ لَا یَهۡدِیۡهِمُ اللّٰهُ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۰۴﴾
ان الذین لا یؤمنون بایت الله لا یهدیهم الله و لهم عذاب الیم ﴿۱۰۴﴾
• নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রদায়ক আযাব।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না, আর তাদের জন্য আছে ভয়ানক শাস্তি।

-তাইসিরুল

• যারা আল্লাহর আয়াত বিশ্বাস করেনা তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেননা এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, those who do not believe in the verses of Allah - Allah will not guide them, and for them is a painful punishment.

-Sahih International

১০৪. নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৪) যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথনির্দেশ করেন না এবং তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৫ اِنَّمَا یَفۡتَرِی الۡكَذِبَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ ۚ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡكٰذِبُوۡنَ ﴿۱۰۵﴾
انما یفتری الكذب الذین لا یؤمنون بایت الله و اولٓئك هم الكذبون ﴿۱۰۵﴾
• একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে না, তারাই মিথ্যে রচনা করে আর তারাই মিথ্যাবাদী।

-তাইসিরুল

• যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করেনা তারাতো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবক এবং তারাই মিথ্যাবাদী।

-মুজিবুর রহমান

• They only invent falsehood who do not believe in the verses of Allah, and it is those who are the liars.

-Sahih International

১০৫. যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, তারাই তো শুধু মিথ্যা রটনা করে, আর তারাই মিথ্যাবাদী।(১)

(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তার রাসূলের পক্ষ থেকে যে কিছু মিথ্যা বানিয়ে বলা সম্ভব নয় তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ বলছেনঃ ঐ সমস্ত লোকেরাই শুধু মিথ্যা বানিয়ে বলতে পারে যারা আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনাবলীর উপর ঈমান রাখে না। [ইবন কাসীর] নবী-রাসূলগণ তো এ রকম নয়! তারা সর্বদা আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর আয়াতসমূহে ঈমান রাখে এবং সেগুলোর প্রতি ঈমানের জন্য মানুষকে আহবান করতে থাকে। রাসূল নবুওয়াতের আগেও কোনদিন মিথ্যা বলেননি, তাহলে তার প্রতি এ অপবাদ কেন? এ ব্যাপারটিই রোম সম্রাটকে নাড়া দিয়েছিল। তিনি তৎকালিন কাফের সর্দারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ তোমরা কি তাকে ইতোপূর্বে এ কথা (নবী হওয়ার) দাবী করার পূর্বে কখনো মিথ্যার অপবাদ দিতে? সে জবাবে বলেছিলঃ না, তখন হিরাক্লিয়াস বলেছিলঃ সে মানুষের সাথে মিথ্যা পরিত্যাগ করে আল্লাহর উপর মিথ্যা বলার মত কাজে জড়াতে পারে না। [বুখারীঃ ৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তারাই শুধু মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী। [1]

[1] আমার নবী ঈমানদার লোকেদের সর্দার ও নেতা। সে কেমন করে আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করতে পারে যে, এই কিতাব আল্লাহর পক্ষ হতে তার উপর অবতীর্ণ হয়নি অথচ সে বলবে যে, এই কিতাব আমার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব আমার নবী মিথ্যাবাদী নয়; বরং মিথ্যুক তারাই, যারা কুরআনকে আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অস্বীকার করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৬ مَنۡ كَفَرَ بِاللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِهٖۤ اِلَّا مَنۡ اُكۡرِهَ وَ قَلۡبُهٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ وَ لٰكِنۡ مَّنۡ شَرَحَ بِالۡكُفۡرِ صَدۡرًا فَعَلَیۡهِمۡ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰهِ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۰۶﴾
من كفر بالله من بعد ایمانهٖ الا من اكره و قلبهٗ مطمئن بالایمان و لكن من شرح بالكفر صدرا فعلیهم غضب من الله و لهم عذاب عظیم ﴿۱۰۶﴾
• যে ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং যারা তাদের অন্তর কুফরী দ্বারা উন্মুক্ত করেছে, তাদের উপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব। ঐ ব্যক্তি ছাড়া যাকে বাধ্য করা হয় (কুফরী করতে) অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত।

-আল-বায়ান

• কোন ব্যক্তি তার ঈমান গ্রহণের পর আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে এবং কুফরীর জন্য তার হৃদয় খুলে দিলে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে আর তার জন্য আছে মহা শাস্তি, তবে তার জন্য নয় যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয় অথচ তার দিল ঈমানের উপর অবিচল থাকে।

-তাইসিরুল

• কেহ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য আছে মহা শাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।

-মুজিবুর রহমান

• Whoever disbelieves in Allah after his belief... except for one who is forced [to renounce his religion] while his heart is secure in faith. But those who [willingly] open their breasts to disbelief, upon them is wrath from Allah, and for them is a great punishment;

-Sahih International

১০৬. কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি(১); তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য(২) করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত।(৩)

(১) দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় স্থানেই মুরতাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। মুরতাদ আখেরাতে চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাবে। দুনিয়াতে তার শাস্তি হলোঃ মৃত্যুদণ্ড। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে তার দ্বীন (ইসলাম) পরিবর্তন করে তাকে তোমরা হত্যা কর”। [বুখারীঃ ৬৯২২] এটা এ জন্যই যে, সে হক্ক দ্বীনের প্রতি অপবাদ দিচ্ছে। যে শুধু নিজেকে ধ্বংস করছেন তার সাথে হাজারো মানুষের মনে দ্বীন সম্পর্কে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এতে করে সে মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তাকে বাধ্য করা হয়নি। সে বুঝে-শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছে সুতরাং এর বিপরীতটি তার থেকে গ্রহণ করা যাবে না।

(২) إكراه এর শাব্দিক অর্থ এই যে, কোন ব্যক্তিকে এমন কথা বলতে অথবা এমন কাজ করতে বাধ্য করা, যা বলতে বা করতে সে সম্মত নয়। আয়াতের অর্থ হচ্ছে এমন জোর-জবরদস্তি, যা মানুষকে ক্ষমতাহীন ও অক্ষম করে দেয়। এমন জবরদস্তির অবস্থায় অন্তর ঈমানের উপর স্থির ও অটল থাকার শর্তে মুখে কুফর কালেমা উচ্চারণ করা জায়েয। [কুরতুবী]

(৩) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে কুফরী কালাম উচ্চারণ করতে বাধ্য করা হয়, যদি প্রবল বিশ্বাস থাকে যে, হুমকিদাতা তা কার্যে পরিণত করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে এমন জবরদস্তির ক্ষেত্রে সে যদি মুখে কুফরী কালাম উচ্চারণ করে, তবে তাতে কোন গোনাহ নেই এবং তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হবে না। তবে শর্ত এই যে, তার অন্তর ঈমানে অটল থাকতে হবে এবং কুফরী কালামকে মিথ্যা ও মন্দ বলে বিশ্বাস করতে হবে। আলোচ্য আয়াতটি কতিপয় সাহাবী সম্পর্কে নাযিল হয়, যাদেরকে মুশরিকরা গ্রেফতার করেছিল এবং হত্যার হুমকী দিয়ে কুফরী অবলম্বন করতে বলেছিল।

যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তারা ছিলেন আম্মার, তদীয় পিতা ইয়াসির, মাতা সুমাইয়্যা, সুহায়েব, বেলাল এবং খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাদের মধ্যে ইয়াসির ও তার স্ত্রী সুমাইয়্যা কুফরী কালাম উচ্চারণ করতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। ইয়াসিরকে হত্যা করা হয় এবং সুমাইয়্যাকে দুই উটের মাঝখানে বেঁধে উট দুটিকে দু’দিকে হাকিয়ে দেয়া হয়। ফলে তিনি দ্বিখণ্ডিত হয়ে শহীদ হন। এ দু’জন মহাত্মাই ইসলামের জন্য সর্বপ্রথম শাহাদাত বরণ করেন। [দেখুন, বাগভী; কুরতুবী]

তবে আয়াতের অর্থ এ নয় যে, প্রাণ বাঁচাবার জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি “রুখসাত” তথা সুবিধা দান ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুন্ন রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে তাহলে তাকে কোন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে না। অন্যথায় আযীমাত তথা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ঈমানের পরিচয়ই হচ্ছে এই যে, মানুষের এ রক্তমাংসের শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললেও সে যেন সত্যের বাণীরই ঘোষণা দিয়ে যেতে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক যুগে এ উভয় ধরনের ঘটনার নজির পাওয়া যায়। একদিকে আছেন খাব্বাব ইবনে আরত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে জ্বলন্ত অংগারের ওপর শোয়ানো হয়। এমনকি তাঁর শরীরের চর্বি গলে পড়ার ফলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এরপরও তিনি দৃঢ়ভাবে ঈমানের ওপর অটল থাকেন। বিলাল হাবশীকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) লোহার বর্ম পরিয়ে দিয়ে কাঠফাটা রোদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর উত্তপ্ত বালুকা প্রান্তরে শুইয়ে দিয়ে তার ওপর দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি আহাদ আহাদ শব্দ উচ্চারণ করে যেতেই থাকেন। [দেখুনঃ ইবনে মাজাহঃ ১৫০]

আর একজন সাহাবী ছিলেন হাবীব ইবন যায়েদ ইবন আসেম রাদিয়াল্লাহু আনহু। মুসাইলামা কাযযাবের হুকুমে তাঁর শরীরের প্রত্যেটি অংগ-প্রত্যংগ কাটা হচ্ছিল এবং সেই সাথে মুসাইলামাকে নবী বলে মেনে নেবার জন্য দাবী করা হচ্ছিল। কিন্তু প্রত্যেক বারই তিনি তার নবুওয়াত দাবী মেনে নিতে অস্বীকার করছিলেন এভাবে ক্রমাগত অংগ-প্রত্যংগ কাটা হতে হতেই তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। অন্যদিকে আছেন আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু। আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুর চোখের সামনে তাঁর পিতা ও মাতাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে দিয়ে শহীদ করা হয়।

তারপর তাকে এমন কঠিন অসহনীয় শাস্তি দেয়া হয় যে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তিনি কাফেরদের চাহিদা মত সবকিছু বলেন। এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হন এবং আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে মন্দ এবং তাদের উপাস্যদেরকে ভাল না বলা পর্যন্ত তারা আমাকে ছেড়ে দেয়নি” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন “তোমার মনের অবস্থা কি?” জবাব দিলেন “ঈমানের ওপর পরিপূর্ণ নিশ্চিত।” একথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “যদি তারা আবারো এ ধরনের জুলুম করে তাহলে তুমি তাদেরকে আবারো এসব কথা বলে দিয়ো।” [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৫৭, বাইহাকীর আস-সুনানুল কুবরা ২/২০৮-২০৯]।

তবে ঈমানের উপর অবিচল থাকার কিছু নিদর্শন সাহাবাদের জীবনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরবর্তী সময়েও পাওয়া যায়। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফাহ আস-সাহমীকে রোমের নাসারাগণ কয়েদ করে তাদের রাজার কাছে নিয়ে গেলে তাদের রাজা তাকে বললঃ নাসারাদের দ্বীন গ্রহণ কর, আমি তোমাকে আমার রাজত্বের ভাগ দেব এবং আমার কন্যাকে তোমার সাথে বিয়ে দেব। তিনি তাকে বললেনঃ যদি আমাকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন থেকে বিচ্যুত হওয়ার বিনিময়ে তুমি যা কিছুর মালিক তা এবং আরবদের সমস্ত সাম্রাজ্যও দাও, তবুও আমি ক্ষণিকের জন্যও তা করব না। রাজা বললঃ তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব।

তিনি বললেনঃ তুমি সেটা করতে পার। তারপর রাজা তাকে শূলে চড়াবার আদেশ করল। এরপর তীরন্দাযদের তাকে কাছ থেকে তার হাত ও পায়ের পার্শ্বে তীর নিক্ষেপের নির্দেশ দিল। রাজা তখনও তাকে নাসারাদের দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকল। তিনি অস্বীকার করতে থাকলেন। রাজা তাকে শূল থেকে নামানোর নির্দেশ দিলেন। তারপর একটি বড় ডেকচি আনার নির্দেশ দিলেন। তাতে পানি দিয়ে গরম করা হলো, তারপর তার সামনেই একজন মুসলিম কয়েদীকে এনে তাতে ফেলা হলো, ক্ষনিকেই কয়েদীটি হাডিতে পরিণত হলো। এমতাবস্থায়ও তার কাছে নাসারাদের দ্বীন গ্রহণের দাওয়াত দেয়া হলো কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। তখন তাকে এ ডেকচির মধ্যে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হলো। তারপর তাকে যখন নিক্ষেপ করার জন্য উপরে উঠানো হলো তখন তিনি কাঁদলেন। তখন রাজা আশ্বস্ত হলো এবং তাকে ডাকল।

তখন তিনি বললেনঃ আমি তো এজন্যই কেঁদেছি যে, আমার আত্মাতো একটি মাত্র যা এ মূহুর্তে ডেকচিতে আল্লাহর ওয়াস্তে নিক্ষেপ করা হচ্ছে, আমার আকাংখা হলো যে, হায়! যদি আমার শরীরের প্রত্যেক পশমের পরিমাণ আত্মা হতো এবং সবগুলি আত্মা আল্লাহর জন্য এধরনের শাস্তি পেত। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, রাজা তাকে কয়েদ করে রেখে তাকে কয়েকদিন কোন খাবার সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকল। তারপর তাকে মদ এবং শুকরের গোস্ত দেয়া হলো। কিন্তু তিনি এর কাছেও ঘেষলেন না। তখন রাজা তাকে ডেকে বললোঃ তোমাকে খেতে বারণ করেছে কিসে? তিনি তখন বললেনঃ যদিও আমার জন্য এ অবস্থায় এ দু’টো বস্তু খাওয়া বৈধ তবুও আমি তোমাকে আমার বিপদগ্ৰস্ততা থেকে খুশী হতে দিতে পারি না। তখন রাজা তাকে বললোঃ তাহলে তুমি আমার মাথায় চুমু খাও, আমি তোমাকে ছেড়ে দেব।

তিনি বললেনঃ আমার সাথী সমস্ত মুসলিম কয়েদীকেও ছেড়ে দেবে? রাজা বললোঃ হ্যাঁ। তখন তিনি রাজার মাথায় চুম্বন করলেন। রাজা তাকে ছেড়ে দিল এবং তার সাথের সমস্ত মুসলিম কয়েদীকেও ছেড়ে দিল। তারপর যখন তিনি উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে ফিরে আসলেন তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উচিত আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফার মাথায় চুমু খাওয়া। আর সেটা আমার দ্বারা শুরু হোক। এ কথা বলে তিনি দাঁড়ালেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফার মাথায় চুমু খেলেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আরদাহুম। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) কেউ বিশ্বাস করার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং অবিশ্বাসের জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি;[1] তবে তার জন্য নয়, যাকে অবিশ্বাসে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত বিশ্বাসে অবিচল।[2]

[1] এ হল মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হওয়ার শাস্তি; সে আল্লাহর গযব ও মহাশাস্তির উপযুক্ত হবে। আর (শাসকের নিকট) তার পার্থিব শাস্তি হল হত্যা। যেমন হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
(বিস্তারিত দেখুনঃ সূরা বাক্বারার ২১৭ ও ২৫৬নং আয়াতের টীকায়।)

[2] উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যে ব্যক্তিকে কুফরের জন্য বাধ্য করা হয়েছে সে যদি জীবন বাঁচানোর জন্য কুফরী কোন বাক্য বলে ফেলে বা কর্ম করে বসে অথচ তার অন্তর ঈমানে অবিচল, তাহলে সে কাফের বলে গণ্য হবে না। না তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হবে, আর না তার উপর কুফরীর অন্য কোন বিধান প্রয়োগ হবে। (এ উক্তি কুরত্বুবীর, ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৭ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اسۡتَحَبُّوا الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا عَلَی الۡاٰخِرَۃِ ۙ وَ اَنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۱۰۷﴾
ذلك بانهم استحبوا الحیوۃ الدنیا علی الاخرۃ و ان الله لا یهدی القوم الكفرین ﴿۱۰۷﴾
• এটা এ জন্য যে, তারা আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করেছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফির কওমকে হিদায়াত করেন না।

-আল-বায়ান

• এর কারণ এই যে, তারা আখিরাত অপেক্ষা দুনিয়ার জীবনকে বেশি ভালবাসে, আর আল্লাহ ঈমান প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে সঠিক পথ দেখান না।

-তাইসিরুল

• এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং এ জন্য যে, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেননা।

-মুজিবুর রহমান

• That is because they preferred the worldly life over the Hereafter and that Allah does not guide the disbelieving people.

-Sahih International

১০৭. এটা এ জন্যে যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং এই জন্য যে, আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।[1]

[1] এটি ঈমান আনার পর কাফির (মুরতাদ) হয়ে যাওয়ার কারণ। প্রথমতঃ তারা ইহকালকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয়, দ্বিতীয়তঃ তারা আল্লাহর নিকট হিদায়াত পাবার যোগ্যই নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৮ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ طَبَعَ اللّٰهُ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ وَ سَمۡعِهِمۡ وَ اَبۡصَارِهِمۡ ۚ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ ﴿۱۰۸﴾
اولٓئك الذین طبع الله علی قلوبهم و سمعهم و ابصارهم و اولٓئك هم الغفلون ﴿۱۰۸﴾
• এরাই তারা, যাদের অন্তরসমূহ, শ্রবণসমূহ ও দৃষ্টিসমূহের উপর আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই হচ্ছে গাফেল।

-আল-বায়ান

• এরা ঐ সব লোক আল্লাহ যাদের অন্তর, কান আর চোখে মোহর মেরে দিয়েছেন আর তারা বে-খেয়াল, উদাসীন।

-তাইসিরুল

• ওরাই তারা, আল্লাহ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই গাফিল।

-মুজিবুর রহমান

• Those are the ones over whose hearts and hearing and vision Allah has sealed, and it is those who are the heedless.

-Sahih International

১০৮. এরাই তারা, আল্লাহ যাদের অন্তর, কান ও চোখ মোহর করে দিয়েছেন। আর তারাই গাফিল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৮) ওরাই তারা; আল্লাহ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চক্ষু মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই উদাসীন।[1]

[1] অতএব তারা না ওয়ায-নসীহতের কথা শোনে, না তা বুঝে। না ঐ সকল নিদর্শন তারা দেখে, যা তাদের সত্যের পথ দেখাতে পারে। তারা এমন ঔদাস্যের শিকার, যা তাদের হিদায়াতের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১০৯ لَاجَرَمَ اَنَّهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۱۰۹﴾
لاجرم انهم فی الاخرۃ هم الخسرون ﴿۱۰۹﴾
• সন্দেহ নেই, তারাই আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত।

-আল-বায়ান

• এতে কোন সন্দেহই নেই যে, আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত এরাই হবে।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই তারা আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

-মুজিবুর রহমান

• Assuredly, it is they, in the Hereafter, who will be the losers.

-Sahih International

১০৯. নিঃসন্দেহ, নিশ্চিত যে, তারাই আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৯) নিঃসন্দেহে তারা পরকালে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ : ১১০ ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِیۡنَ هَاجَرُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا فُتِنُوۡا ثُمَّ جٰهَدُوۡا وَ صَبَرُوۡۤا ۙ اِنَّ رَبَّكَ مِنۡۢ بَعۡدِهَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۰﴾
ثم ان ربك للذین هاجروا من بعد ما فتنوا ثم جهدوا و صبروا ان ربك من بعدها لغفور رحیم ﴿۱۱۰﴾
• তারপর তোমার রব তাদের জন্য, যারা বিপর্যস্ত হওয়ার পর হিজরত করেছে, অতঃপর জিহাদ করেছে এবং সবর করেছে, এ সবের পর তোমার রব অবশ্যই ক্ষমাশীল, দুয়ালু।

-আল-বায়ান

• অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের জন্য যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরাত করে, অতঃপর জিহাদ করে, অতঃপর ধৈর্যধারণ করে, এ সবের পর তোমার প্রতিপালক অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

-তাইসিরুল

• (তোমার রবের পথে থেকে) যারা নির্যাতিত হবার পর হিজরাত করে এবং পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে; তোমার রাব্ব এসব কিছুর পর, তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-মুজিবুর রহমান

• Then, indeed your Lord, to those who emigrated after they had been compelled [to renounce their religion] and thereafter fought [for the cause of Allah] and were patient - indeed, your Lord, after that, is Forgiving and Merciful

-Sahih International

১১০. তারপর যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, নিশ্চয় আপনার রব এ সবের পর, তাদের প্রতি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) যারা নির্যাতিত হবার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ (ধর্মের জন্য দেশত্যাগ ও যুদ্ধ) করে এবং ধৈর্যধারণ করে; তোমার প্রতিপালক এই সবের পর, তাদের প্রতি অবশ্যই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[1]

[1] এখানে মক্কার ঐ সকল মুসলিমদের কথা বলা হয়েছে, যাঁরা ছিলেন দুর্বল এবং ইসলাম গ্রহণ করার জন্য কাফেরদের অত্যাচারের শিকার। অবশেষে তাঁদেরকে হিজরত করার আদেশ দেওয়া হল, আর তাঁরা আত্মীয়-স্বজন, প্রিয় মাতৃভূমি, ধন সম্পদ, ঘর বাড়ি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে হাবশা বা মদীনা চলে গেলেন। আবার যখন কাফেরদের সাথে যুদ্ধের অবকাশ এল তখন শৌর্য-বীর্য সহকারে তাঁরা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলেন। তারপর তাঁর রাস্তায় নির্যাতন ও কষ্ট ধৈর্য সহকারে বরণ করে নিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, এ সবের পর তোমার প্রতিপালক তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া পাওয়ার জন্য ঈমান ও সৎকর্মের প্রয়োজন। যেমন উক্ত মুহাজিরগণ ঈমান ও সৎকর্মের সুন্দর নমুনা পেশ করলেন, ফলে তাঁরা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ায় পুরস্কৃত হলেন। رضي الله عنهم ورضوا عنه

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১০১ থেকে ১১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »