بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৯৬/ আল-আলাক | Al-Alaq | سورة العلق আয়াতঃ ১৯ মাক্কী
৯৬ : ১১ اَرَءَیۡتَ اِنۡ كَانَ عَلَی الۡهُدٰۤی ﴿ۙ۱۱﴾
ارءیت ان كان علی الهدی ﴿۱۱﴾
• তুমি কি দেখেছ, যদি সে হিদায়াতের উপর থাকে,

-আল-বায়ান

• তুমি কি ভেবে দেখেছ (যাকে নিষেধ করা হচ্ছে) সে যদি সৎ পথে থাকে,

-তাইসিরুল

• তুমি লক্ষ্য করেছ কি যদি সে সৎ পথে থাকে?

-মুজিবুর রহমান

• Have you seen if he is upon guidance

-Sahih International

১১. আমাকে বল! যদি তিনি হিদায়াতের উপর থাকেন,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১১। তুমি কি মনে কর, যদি সে সৎপথে থাকে। [1]

[1] অর্থাৎ, যাকে নামায পড়া হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১২ اَوۡ اَمَرَ بِالتَّقۡوٰی ﴿ؕ۱۲﴾
او امر بالتقوی ﴿۱۲﴾
• অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়?

-আল-বায়ান

• আর তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দেয় (তাহলে তার এ কাজগুলো কেমন মনে কর?)

-তাইসিরুল

• অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়?

-মুজিবুর রহমান

• Or enjoins righteousness?

-Sahih International

১২. অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেন; (তারপরও সে কিভাবে বাধা দেয়?!)

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১২। অথবা তাকওয়া (আল্লাহভীতি)র নির্দেশ দেয়। [1]

[1] অর্থাৎ, ইখলাস, তাওহীদ এবং নেক আমলের শিক্ষা দেয়; যাতে মানুষ জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। তাহলে এই (নামায পড়া এবং তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নির্দেশ দেওয়ার) কাজ কি এমন আচরণ যার বিরোধিতা করা হবে এবং তার জন্য হুমকি ও ধমকি দেওয়া হবে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৩ اَرَءَیۡتَ اِنۡ كَذَّبَ وَ تَوَلّٰی ﴿ؕ۱۳﴾
ارءیت ان كذب و تولی ﴿۱۳﴾
• যদি সে মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়?

-আল-বায়ান

• তোমার কী ধারণা যদি সে (অর্থাৎ নিষেধকারী ব্যক্তি) সত্যকে অস্বীকার করে আর মুখ ফিরিয়ে নেয় (তাহলে তার এ কাজ কেমন মনে কর?)

-তাইসিরুল

• তুমি লক্ষ্য করেছ কি যদি সে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়?

-মুজিবুর রহমান

• Have you seen if he denies and turns away -

-Sahih International

১৩. আমাকে বল! যদি সে (নিষেধকারী) মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১৩। তুমি লক্ষ্য করেছ কি, যদি সে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়? [1]

[1] অর্থাৎ, আবু জাহল আল্লাহর পয়গম্বরকে মিথ্যা ভাবে এবং ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।  এখানে أرَأيتَ (তুমি লক্ষ্য করেছ কি)-এর মানে أَخبِرنِي (আমাকে বল।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৪ اَلَمۡ یَعۡلَمۡ بِاَنَّ اللّٰهَ یَرٰی ﴿ؕ۱۴﴾
الم یعلم بان الله یری ﴿۱۴﴾
• সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন?

-আল-বায়ান

• সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন?

-তাইসিরুল

• তাহলে সে কি অবগত নয় যে, আল্লাহ দেখছেন?

-মুজিবুর রহমান

• Does he not know that Allah sees?

-Sahih International

১৪. সে কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ দেখেন?!(১)

(১) এখানে আশ্চর্যবোধক এবং তিরস্কারসূচক প্রশ্ন করা হয়েছে যে, সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখছেন; তার এ কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন? তবুও সে অবাধ্যতা করছে ও সৎকাজে বাধা প্রদান করছে কেন? [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৪। তবে কি সে অবগত নয় যে, আল্লাহ (তার সবকিছু) দেখছেন? [1]

[1] এর মতলব হল যে, এই ব্যক্তি (আবু জাহল) যে এইরূপ আচরণ করছে সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখছেন? এবং তিনি তাকে এর প্রতিফল ভোগাবেন। অর্থাৎ, أَلَم تَعلَم হল পূর্বে উল্লিখিত إن كَانَ علَى الهُدَى، إن كَذَّبَ وتَوَلَّى শর্ত বাক্যের পরিপূরক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৫ كَلَّا لَئِنۡ لَّمۡ یَنۡتَهِ ۬ۙ لَنَسۡفَعًۢا بِالنَّاصِیَۃِ ﴿ۙ۱۵﴾
كلا لئن لم ینته لنسفعا بالناصیۃ ﴿۱۵﴾
• কখনো নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি তাকে কপালের সম্মুখভাগের চুল ধরে টেনে- হিঁচড়ে নিয়ে যাব।

-আল-বায়ান

• না, (সে যা করতে চায়) তা কক্ষনো করতে পারবে না, সে যদি বিরত না হয় তাহলে আমি অবশ্যই তার মাথার সামনের চুলগুচ্ছ ধরে হেঁচড়ে নিয়ে যাব-

-তাইসিরুল

• সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয় তাহলে আমি তাকে অবশ্যই হেচড়িয়ে নিয়ে যাব মাথার সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে –

-মুজিবুর রহমান

• No! If he does not desist, We will surely drag him by the forelock -

-Sahih International

১৫. কখনো নয়, সে যদি বিরত না হয় তবে আমরা তাকে অবশ্যই হেঁচড়ে নিয়ে যাব, মাথার সামনের চুলের গুচ্ছ ধরে(১)—

(১) سفع এর অর্থ কোন কিছু ধরে কঠোরভাবে হেঁচড়ানো। আর ناصية শব্দের অর্থ কপালের উপরিভাগের কেশগুচ্ছ। আরবদের মধ্যে রীতি ছিল যে, কারও অতি অসম্মান করার জন্য এই কেশগুচ্ছ মুঠোর ভেতরে নেয়া হত। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৫। সাবধান! সে যদি নিবৃত্ত না হয় তাহলে আমি (তাকে) অবশ্যই টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাব, মাথার সামনের চুলের ঝুঁটি ধরে। [1]

[1] অর্থাৎ, নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ ও দুশমনী করা হতে এবং তাঁকে নামায পড়া থেকে বাধা দেওয়া হতে বিরত না হয়, তাহলে আমি তার কপালে উপরিভাগের কেশগুচ্ছ ধরে টান দেব। হাদীসে বর্ণিত যে, একদা আবু জাহল বলেছিল যে, ‘যদি মুহাম্মাদ কা’বার নিকট নামায পড়া হতে বিরত না হয়, তাহলে আমি তার গর্দানে পা রেখে দেব।’ অর্থাৎ, তাকে পদদলিত করব এবং দস্তরমত লাঞ্ছিত করব। নবী (সাঃ) এর কানে এ কথা পৌঁছলে তিনি বললেন, ‘‘যদি সে তা করত, তাহলে ফিরিশতা তাকে ধরে ফেলতেন।’’ (সহীহ বুখারী তাফসীর সূরা আলাক পরিচ্ছেদ।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৬ نَاصِیَۃٍ كَاذِبَۃٍ خَاطِئَۃٍ ﴿ۚ۱۶﴾
ناصیۃ كاذبۃ خاطئۃ ﴿۱۶﴾
• মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ কপাল।

-আল-বায়ান

• মিথ্যাচারী পাপাচারী চুলগুচ্ছ

-তাইসিরুল

• মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ।

-মুজিবুর রহমান

• A lying, sinning forelock.

-Sahih International

১৬. মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠ সম্মুখ-চুলের-গুচ্ছ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১৬। যা মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ চুলের ঝুঁটি। [1]

[1] চুলের ঝুঁটির উক্ত গুণ রূপক হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। (আসলে এ গুণ ঐ চুলের ঝুঁটি-ওয়ালার। যে) মিথ্যাবাদী নিজের কথায় ও পাপাচারী নিজের কর্মে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৭ فَلۡیَدۡعُ نَادِیَهٗ ﴿ۙ۱۷﴾
فلیدع نادیهٗ ﴿۱۷﴾
• অতএব, সে তার সভাসদদের আহবান করুক।

-আল-বায়ান

• কাজেই সে তার সভাষদদের ডাকুক।

-তাইসিরুল

• অতএব সে তার পার্শ্বচরদের আহবান করুক।

-মুজিবুর রহমান

• Then let him call his associates;

-Sahih International

১৭. অতএব সে তার পারিষদকে ডেকে আনুক!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১৭। অতএব সে তার পারিষদবর্গকে আহবান করুক।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৮ سَنَدۡعُ الزَّبَانِیَۃَ ﴿ۙ۱۸﴾
سندع الزبانیۃ ﴿۱۸﴾
• অচিরেই আমি ডেকে নেব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।

-আল-বায়ান

• আমিও ‘আযাবের ফেরেশতাদেরকে ডাকব,

-তাইসিরুল

• আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।

-মুজিবুর রহমান

• We will call the angels of Hell.

-Sahih International

১৮. শীঘ্রই আমরা ডেকে আনব যাবানিয়াদেরকে।(১)

(১) এখানে যাবানিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাহান্নামের প্রহরী কঠোর ফেরেশতাগণ। কাতাদাহ বলেন, আরবী ভাষায় الزبانية ‘যাবানিয়াহ’ শব্দের অর্থই হলো প্রহরী পুলিশ। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি আরবী ভাষায় বিশেষ বাহিনীর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর যাবান’ শব্দের আসল মানে হচ্ছে, ধাক্কা দেয়া। সে হিসেবে ‘যাবানিয়াহ’ এর অন্য অর্থ, প্ৰচণ্ডভাবে পাকড়াওকারী, প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়ে নিক্ষেপকারী। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৮। আমিও অচিরে আহবান করব (জাহান্নামের) প্রহরীবর্গকে।[1]

[1] হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী (সাঃ) কা’বাগৃহের পাশে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় আবু জাহল তাঁর পাশ দিয়ে পার হয়ে বলল, ‘ওহে মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে নামায পড়া হতে নিষেধ করিনি?’ অনুরূপ সে আরো তাঁর সাথে কঠিনভাবে ধমক দিয়ে কথা বলল। নবী (সাঃ) তার কথার কড়া জওয়াব দিলেন। তখন সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম! এই উপত্যকায় সব থেকে আমার পারিষদ ও পৃষ্ঠপোষক বেশী আছে।’ তখন এই আয়াত নাযিল হয়।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি আবু জাহল নিজের পারিষদবর্গকে আহবান করত, তাহলে তাদেরকে তখনই শাস্তিদাতা ফিরিশতাগণ পাকড়াও করতেন। (তিরমিযী, তাফসীর সূরা ইকরা পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমাদ ১/৩২৯ ও তাফসীর ইবনে জারীর)

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এইভাবে রয়েছে যে, সে অগ্রসর হয়ে তাঁর গর্দানে পা রাখার মনস্থ করেছিল। ইতি অবসরে সে উল্টা পা ফিরে গেল এবং নিজ হাত দ্বারা নিজেকে বাঁচাতে লাগল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি ব্যাপার? সে বলল, ‘আমার ও মুহাম্মাদের মাঝে আগুনের পরিখা, ভয়ংকর দৃশ্য এবং বহু পাখা দেখলাম!’ রসূল (সাঃ) বললেন, ‘‘যদি সে আমার নিকটবর্তী হত, তাহলে ফিরিশতাগণ তার এক একটা অঙ্গকে নুচে নিত।’’ (কিয়ামতের বিবরণ অধ্যায়)

 الزَّبَانِية শব্দের অর্থ হল দারোগা এবং পুলিশ (বা প্রহরী)। অর্থাৎ, এমন শক্তিশালী সৈন্য যার কেউ মুকাবিলা করতে পারে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯৬ : ১৯ كَلَّا ؕ لَا تُطِعۡهُ وَ اسۡجُدۡ وَ اقۡتَرِبۡ ﴿ٛ۱۹﴾ (سُجود‎‎)
كلا لا تطعه و اسجد و اقترب ﴿ٛ۱۹﴾ (سجود‎‎)
• কখনো নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। আর সিজদা কর এবং নৈকট্য লাভ কর। [সাজদাহ] ۩

-আল-বায়ান

• না, তুমি কক্ষনো তার অনুসরণ করো না, তুমি সাজদাহ কর আর (আল্লাহর) নৈকট্য লাভ কর। [সাজদাহ] ۩

-তাইসিরুল

• সাবধান! তুমি তার অনুসরণ করনা। সাজদাহ কর ও আমার নিকটবর্তী হও। [সাজদাহ] ۩

-মুজিবুর রহমান

• No! Do not obey him. But prostrate and draw near [to Allah].

-Sahih International

১৯. কখনো নয়! আপনি তার অনুসরণ করবেন না। আর আপনি সিজদা করুন এবং নিকটবর্তী হোন।(১) [সাজদাহ] ۩

(১) এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আবু জাহলের কথায় কর্ণপাত করবেন না এবং সেজদা ও সালাতে মশগুল থাকুন। সিজদা করা মানে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ হে নবী! আপনি নিৰ্ভয়ে আগের মতো সালাত আদায় করতে থাকুন। এর মাধ্যমে নিজের রবের নৈকট্য লাভ করুন। কারণ, এটাই আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের উপায়। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বান্দা যখন সেজদায় থাকে, তখন তার পালনকর্তার অধিক নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সেজদায় বেশী পরিমাণে দোআ কর।” [মুসলিম: ৪৮২, আবু দাউদ: ৮৭৫, নাসায়ী: ২/২২৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৭০] অন্য এক হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “সাজ্‌দার অবস্থায় কৃত দো'আ কবুল হওয়ার যোগ্য”। [মুসলিম: ৪৭৯. আবু দাউদ: ৮৭৬, নাসায়ী: ২/১৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/২১৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৯। সাবধান! তুমি তার অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা কর ও আমার নিকটবর্তী হও। [1] [সাজদাহ] ۩

[1] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ১৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2