-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* ‘কিতাব’ বলতে এখানে ‘লওহে মাহফুয’ বা সংরক্ষিত ফলককে বুঝানো হয়েছে।
১১. আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে; তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর তোমাদেরকে করেছেন যুগল! আল্লাহর অজ্ঞাতে কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না এবং প্রসবও করে না। আর কোন দীর্ঘায়ু ব্যক্তির আয়ু বৃদ্ধি করা হয় না এবং তার আয়ু হ্রাস করা হয় না, কিন্তু তা রয়েছে কিতাবে।(১) এটা আল্লাহর জন্য সহজ।(২)
(১) কিতাবে বলে লাওহে মাহফুযে রয়েছে বুঝানো হয়েছে। [মুয়াস্সার] অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে এ আয়াতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা যাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন, তা পূর্বেই লওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে। অনুরূপভাবে স্বল্প জীবনও পূর্ব থেকে লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ থাকে। যার মর্মদাঁড়াল এই যে, এখানে ব্যক্তিবিশেষের জীবনের দীর্ঘতা বা হ্রস্বতা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং গোটা মানবজাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাদের কাউকে দীর্ঘ জীবন দান করা হয় এবং কাউকে তার চেয়ে কম। কেউ কেউ বলেন, যদি আয়াতের অর্থ একই ব্যক্তির বয়সের হ্রাস-বৃদ্ধি ধরে নেয়া যায়, তবে বয়স হ্রাস করার উদ্দেশ্য এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির বয়স আল্লাহ তা’আলা যা লিখে দিয়েছেন, তা নিশ্চিত কিন্তু এই নির্দিষ্ট বয়ঃক্রম থেকে একদিন অতিবাহিত হলে একদিন হ্রাস পায়, দুদিন অতিবাহিত হলে দুদিন হ্রাস পায়। এমনিভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি নিঃশ্বাস তার জীবনকে হ্রাস করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ বলেনঃ “যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিযিক প্রশস্ত ও জীবন দীর্ঘ হোক, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” [বুখারী: ২০৬৭, মুসলিম: ২৫৫৭]
এই হাদীস থেকে বাহ্যতঃ জানা যায় যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহারের ফলে জীবন দীর্ঘ হয়। সারকথা, যেসব হাদীসে কোন কোন কর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এগুলো সম্পাদন করলে বয়স বেড়ে যায়, সেগুলোর অর্থ, পূর্বেই তার তাকদীরে লিখা আছে অমুক আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, তাই তার আয়ু বর্ধিত আকারে দেয়া হলো। সুতরাং যে কেউ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার তাওফীক পাবে সে যেন এটা বুঝে নেয় যে, এ কারণেই হয়ত: তার আয়ু বৃদ্ধি ঘটেছে।
(২) যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর—আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর ‘আলাকাহ (রক্তপিণ্ড বা লেগে থাকে এরকম পিণ্ড) হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূৰ্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে — যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে প্রত্যাবর্তিত করা হয়, যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। [সূরা আল-হাজ: ৫] আরও বলেন, “তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখুন, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!” [সূরা আন-নাহল: ৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর শুক্রবিন্দু হতে,[1] অতঃপর তোমাদেরকে করেছেন জোড়া জোড়া। আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভ ধারণ করে না অথবা সন্তানও প্রসব করে না।[2] কারও আয়ু বৃদ্ধি হলে অথবা তার আয়ু হ্রাস পেলে তা তো ‘লাওহে মাহফূয’ (সংরক্ষিত ফলক) অনুসারে হয়। [3] নিশ্চয় এ আল্লাহর জন্য সহজ।
[1] অর্থাৎ, তোমাদের পিতা আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তার পর তোমাদের বংশ অব্যাহত রাখার জন্য মানুষ সৃষ্টির মাধ্যমকে বীর্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছি; যা পুরুষের পিঠ থেকে নির্গত হয়ে নারীর গর্ভাশয়ে প্রবিষ্ট হয়।
[2] অর্থাৎ, তাঁর নিকট কোন বস্তুই লুক্কায়িত নয়, এমনকি মাটির উপর যে পাতা পড়ে তার শব্দও এবং পৃথিবীর অন্ধকারে (মাটির ভিতর) অঙ্কুরিত হতে থাকা বীজের খবরও তিনি রাখেন।
(সূরা আনআম ৫৯ আয়াত দ্রঃ)
[3] এর অর্থ এই যে, আয়ু কম-বেশি হওয়া আল্লাহর ফায়সালা ও তকদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত কিছু কারণও আছে যার ফলে আয়ু কম-বেশি হয়। আয়ু বৃদ্ধির কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ হল, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা; যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর তা কম হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে একটি কারণ বেশি বেশি পাপ করা। উদাহরণ স্বরূপঃ কোন মানুষের আয়ু সত্তর বছর। কিন্তু কখনো বৃদ্ধির কারণ বিদ্যমান থাকায় আল্লাহ তাতে বৃদ্ধি করে দেন। আর যখন হ্রাস পাওয়ার কারণ বিদ্যমান থাকে, তখন হ্রাস করে দেন। পরন্তু এ হ্রাস-বৃদ্ধির কথা তিনি ‘লাওহে মাহফুয’-এ লিখে রেখেছেন। ফলে আয়ুর কম-বেশি হওয়া (فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلا يَسْتَقْدِمُونَ) অর্থাৎ, যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না। (সূরা আ’রাফঃ ৩৪ আয়াত) এর পরিপন্থী নয়। মহান আল্লাহর এই কথা দ্বারাও তার সমর্থন পাওয়া যায় (يَمْحُوا اللهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ) অর্থাৎ, আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন। আর মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে।’’ (সূরা রা’দঃ ৩৯ আয়াত, ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* মুক্তা
১২. আর সাগর দুটি একরূপ নয়ঃ একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, অন্যটির পানি লোনা, খর। আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ কর অলংকার, যা তোমরা পরিধান কর। আর তোমরা দেখ তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) দুটি সাগর একরূপ নয়; একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, অপরটির পানি লোনা ও বিস্বাদ। প্রত্যেকটি হতে তোমরা তাজা গোশত (মাছ) ভক্ষণ করে থাক এবং তোমাদের ব্যবহার্য রত্নাবলী আহরণ কর। আর তোমরা দেখ ওর বুক চিরে জলযান চলাচল করে;[1] যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
[1] مواخر ঐ সকল জলজাহাজকে বলা হয় যা পানি চিরে চলাফেরা করতে থাকে। এই আয়াতে উল্লিখিত অন্য বস্তুসমূহের ব্যাখ্যা সূরা ফুরকানে (৫৩নং আয়াতে) অতিবাহিত হয়ে গেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৩. তিনি রাতকে দিনে প্ৰবেশ করান এবং সূর্য ও চাঁদকে করেছেন নিয়মাধীন; প্ৰত্যেকে পরিভ্রমণ করে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ তোমাদের রব। আধিপত্য তারই। আর তোমরা তো খেজুর আঁটির আবরণেরও অধিকারী নয়।(১)
(১) মূলে “কিতমীর” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিতমীর বলা হয় খেজুরের আঁটির গায়ে জড়ানো পাতলা ঝিল্লি বা আবরণকে। [মুয়াস্সার] উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, মুশরিকদের মাবুদ ও উপাস্যরা কোন তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসেরও মালিক নয়। [সা'দী] তারা যে সমস্ত মুর্তি, কতক নবী ও ফেরেশতার পূজা করে; বিপদ মুহুর্তে তাদেরকে আহবান করলে প্রথমত: তারা শুনতেই পারবে না। কেননা, তাদের মধ্যে শ্রবনের যোগ্যতাই নেই। নবী ও ফেরেশতাগণের মধ্যে যোগ্যতা থাকলেও তারা তোমাদের আবেদন পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ্ তা'আলার অনুমতি ব্যতিরেকে তারা তাঁর কাছে কারও জন্যে সুপারিশও করতে পারে না।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) তিনি রাতকে দিনে পরিণত করেন এবং দিনকে পরিণত করেন রাতে, তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন; প্রত্যেকেই এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনিই আল্লাহ,[1] তোমাদের প্রতিপালক। সার্বভৌমত্ব তাঁরই। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুরের আঁটির উপরে পাতলা আবরণ বরাবর (অতি তুচ্ছ) কিছুরও মালিক নয়। [2]
[1] অর্থাৎ, তিনিই আল্লাহ, যিনি উল্লিখিত সকল কর্মের কর্তা।
[2] অর্থাৎ, কোন সামান্য ও নগণ্য বস্তুরও মালিক নয়, আর না তা সৃষ্টি করারই ক্ষমতা রাখে । قِطْمِيْرٌ ঐ পাতলা আবরণকে বলা হয়, যা খেজুর আঁটির উপরে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪. তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তোমরা তাদেরকে যে শরীক করেছ তা তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে।(১) সর্বজ্ঞ আল্লাহর মত কেউই আপনাকে অবহিত করতে পারে না।(২)
(১) অর্থাৎ তারা পরিষ্কার বলে দেবে, আমরা কখনো এদেরকে বলিনি, আমরা আল্লাহর শরীক এবং তোমরা আমাদের ইবাদাত করো। বরং আমরা এও জানতাম না যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ রব্বুল আলমীনের সাথে শরীক করছে এবং আমাদের কাছে প্রার্থনা করছে। এদের কোন প্রার্থনা আমাদের কাছে আসেনি এবং এদের কোন নজরানা ও উৎসর্গ আমাদের হস্তগত হয়নি। বরং তারা বলবে, “আপনিই তো কেবল আমাদের অভিভাবক, তারা নয়।” [সাবা: ৪১]
(২) সর্বতোভাবে অবহিত বলে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। [সা’দী; মুয়াস্সার; জালালাইন] অর্থাৎ অন্য কোন ব্যক্তি তো বড় জোর বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে শির্ক খণ্ডন ও মুশরিকদের মাবুদদের শক্তিহীনতা বর্ণনা করবে। কিন্তু আমি সরাসরি প্রকৃত অবস্থা জানি। আমি নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমাদের জানাচ্ছি, লোকেরা যাদেরকেই আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বের মধ্যে স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন করে রেখেছে তারা সবাই ক্ষমতাহীন। তাদের কাছে এমন কোন শক্তি নেই। যার মাধ্যমে তারা কারো কোন কাজ সফল বা ব্যর্থ করে দিতে পারে। আমি সরাসরি জানি, কিয়ামতের দিন মুশরিকদের এসব মা’বুদরা নিজেরাই তাদের শির্কের প্রতিবাদ করবে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) তোমরা তাদের আহবান করলে তারা তোমাদের আহবান শুনবে না[1] এবং শুনলেও তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না।[2] তোমরা তাদেরকে যে অংশী করছ, তা ওরা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। [3] আর সর্বজ্ঞ (আল্লাহ)র ন্যায় কেউই তোমাকে অবহিত করতে পারে না।[4]
[1] অর্থাৎ, যদি তোমরা কষ্টের সময় তাদেরকে ডাক, তবে তারা তোমাদের ডাক শুনবেই না, কারণ তারা পাথর জাতীয় বস্তু অথবা মাটির গর্ভে সমাধিস্থ (জাগতিক সংস্পর্শের বাইরে)।
[2] অর্থাৎ, যদি তারা শুনতেও পায় তবুও কোন লাভ নেই, কারণ তারা তোমাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নয়।
[3] এবং বলবে (مَا كُنْتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ) অর্থাৎ, তোমরা আমাদের ইবাদত করতে না। (সূরা ইউনুস ২৮ আয়াত) (إِنْ كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِينَ) অর্থাৎ, আমরা তো তোমাদের ইবাদত থেকে উদাসীন ছিলাম।’’ (ঐ ২৯ আয়াত) এই আয়াত থেকে এটাও বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়, তারা সকলে পাথরের নিথর মূর্তিই নয়, বরং তাতে জ্ঞানসম্পন্ন (ফিরিশতা, জ্বিন, শয়তান এবং নেক মানুষ)ও আছে। তবেই না এইভাবে তারা অস্বীকার করবে। আর এটাও জানা গেল যে, প্রয়োজন পূরণের আশায় তাদেরকে আহবান করা শিরক।
[4] কারণ, তাঁর মত পরিপূর্ণ ইলম কারোর নিকট নেই। তিনিই সকল বস্তুর রহস্য ও প্রকৃতত্ব সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন। আর ঐ সকল উপাস্য যাদেরকে ডাকা হয়, তাদের যে কোন প্রকার এখতিয়ার বা ক্ষমতা নেই, তারা যে কারো ডাকে সাড়া দিতে পারে না এবং কিয়ামতের দিন তারা যে তাদের উপাসনার কথা অস্বীকার করবে -- এ সব কিছু উক্ত ইলমের শামিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৫. হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী; আর আল্লাহ, তিনিই অভাবমুক্ত, প্ৰশংসিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) হে মানুষ! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী,[1] কিন্তু আল্লাহ; তিনিই অভাবমুক্ত,[2] প্রশংসার্হ। [3]
[1]ناس (মানুষ) শব্দটি সাধারণ অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যাতে সাধারণ ও বিশেষ ব্যক্তি; এমনকি আম্বিয়া ও স্বালেহীন সকলকে বোঝানো হয়েছে। সকলেই আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।
[2] তিনি এমন অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত যে, যদি সকল মানুষ তাঁর অবাধ্য হয়ে যায়, তাহলে তাঁর রাজত্বে বিন্দুমাত্র হ্রাস পাবে না। আর যদি সকলে তাঁর অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাঁর শক্তিতে কোন বৃদ্ধি হবে না। বরং অবাধ্যতা করাতে মানুষের নিজেরই ক্ষতি এবং ইবাদত ও আনুগত্য করাতে মানুষের নিজেরই উপকার সাধন হয়।
[3] অর্থাৎ, তিনি আপন নিয়ামতের কারণে প্রশংসার্হ। সুতরাং তিনি বান্দাগণকে যে সকল নিয়ামত প্রদান করেছেন তার ফলে তিনি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার অধিকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৬. তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসৃত করতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি নিয়ে আসতে পারেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে ধ্বংস করে এক নূতন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন। [1]
[1] এটাও তাঁর অমুখাপেক্ষিতারই একটি উদাহরণ যে, যদি তিনি চান, তাহলে তোমাদেরকে ধ্বংস করে তোমাদের স্থানে অন্য এক নতুন জাতিকে সৃষ্টি করে দেবেন, যারা তাঁর আনুগত্য করবে এবং অবাধ্যতা করবে না। অথবা উদ্দেশ্য এই যে, এমন এক নতুন জাতি ও নতুন জগৎ সৃষ্টি করে দেবেন, যা তোমাদের অজানা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৭. আর এটা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) আর আল্লাহর পক্ষে তা কঠিন নয়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৮. আর কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না(১); এবং কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকেও তা বহন করতে ডাকে তবে তার থেকে কিছুই বহন করা হবে না—এমনকি নিকট আত্মীয় হলেও।(২) আপনি শুধু তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন যারা তাদের রবকে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশোধন করে, সে তো পরিশোধন করে নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
(১) অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কোন মানুষ অন্য মানুষের পাপভার বহন করতে পারবে না। প্রত্যেককে নিজের বোঝা নিজেই বহন করতে হবে। “বোঝা” মানে কৃতকর্মের দায়দায়িত্বের বোঝা। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের ওপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচাবার জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে এরও কোন সম্ভাবনা নেই।
সূরা আল-আনকাবুতে বলা হয়েছে: “যারা পথভ্রষ্ট করে, তারা নিজেদের পথভ্রষ্টতার বোঝাও বহন করবে এবং তৎসহ তাদের বোঝাও বহন করবে, যাদেরকে পথভ্ৰষ্ট করেছিল।” [সূরা আল-আনকাবুত: ১৩] এর অর্থ এমন নয় যে, যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদের বোঝা তারা কিছুটা হালকা করে দেবে। বরং তাদের বোঝা তাদের উপর পুরোপুরিই থাকবে, কিন্তু পথ-ভ্ৰষ্টকারীদের অপরাধ দ্বিগুণ হয়ে যাবে- একটি পথ ভ্ৰষ্ট হওয়ার ও অপরটি পথভ্রষ্ট করার। অতএব উভয় আয়াতে কোন বৈপরিত্য নেই।
(২) এ বাক্যে বলা হয়েছে, আজ যারা বলছে, তোমরা আমাদের দায়িত্বের কুফরী ও গোনাহের কাজ করে যাও কিয়ামতের দিন তোমাদের গোনাহর বোঝা আমরা নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নেবো তারা আসলে নিছক একটি মিথ্যা ভরসা দিচ্ছে। যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচাবার ফিকিরে লেগে যাবে। ভাই ভাইয়ের থেকে এবং পিতা পুত্রের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নিতে প্ৰস্তুত হবে না। ইকরিমা উল্লেখিত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, সেদিন এক পিতা তার পুত্ৰকে বলবে, তুমি জান যে, আমি তোমার প্রতি কেমন স্নেহশীল ও সদয় পিতা ছিলাম।
পুত্ৰ স্বীকার করে বলবে, নিশ্চয় আপনার ঋণ অসংখ্য। আমার জন্যে পৃথিবীতে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। অত:পর পিতা বলবে, বৎস, আজ আমি তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার পূণ্যসমূহের মধ্য থেকে আমাকে যৎসামান্য দিয়ে দাও এতে আমার মুক্তি হয়ে যাবে। পুত্র বলবে, পিতা আপনি সামান্য বস্তুই চেয়েছেন- কিন্তু আমি কি করব, যদি আমি তা আপনাকে দিয়ে দেই, তবে আমারও যে, সে অবস্থা হবে। অতএব আমি অক্ষম। অতঃপর সে তার স্ত্রীকেও এই কথা বলবে যে, দুনিয়াতে আমি তোমার জন্যে সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি। আজ তোমার সামান্য পূণ্য আমি চাই। তা দিয়ে দাও। স্ত্রীও পুত্রের অনুরূপ জওয়াব দেবে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না; [1] কারও পাপের বোঝা গুরুভার হলে সে যদি অন্যকে তা বহন করতে আহবান করে, তবুও কেউ তা বহন করবে না; যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়।[2] তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং যথাযথভাবে নামায পড়ে।[3] যে কেউ পরিশুদ্ধ হয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য। [4] আর প্রত্যাবর্তন আল্লাহরই নিকট।
[1] অবশ্য যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদেরকে ভ্রষ্ট করবে, সে তার নিজের পাপের বোঝার সাথে তাদের পাপের বোঝাও বহন করবে। মহান আল্লাহ বলেন, (وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَعَ أَثْقَالِهِمْ) (সূরা আনকাবূত ১৩নং) আয়াত এবং ‘‘যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতি (বা কর্মের) সূচনা করে তার জন্য রয়েছে তার পাপ এবং তাদের সমপরিমাণ পাপও যারা ঐ রীতির অনুকরণে আমল (বা কর্ম) করে। এতে তাদের কারো পাপ এতটুকু পরিমাণ হ্রাস করা হয় না।’’ (মুসলিম১০১৭নং, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী) এই হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। কিন্তু আসলে অন্য লোকের এই শ্রেণীর বোঝা তার নিজেরই বোঝা। কারণ সেই তো তাদেরকে ভ্রষ্ট করেছিল।
[2] مُثْقَلَةٌ অর্থাৎ نَفْسٌ مُثْقَلَةٌ এমন ব্যক্তি যে পাপের বোঝা বহন করবে, সে তার বোঝা বহন করার জন্য নিজের আত্মীয়দেরকে ডাকবে। কিন্তু তারা কেউ তা বহন করতে সম্মত হবে না।
[3] অর্থাৎ, তোমার সতর্কীকরণ ও তবলীগ কেবল তাদেরকেই উপকৃত করবে। যেন তুমি কেবল তাদেরকেই ভীতি প্রদর্শন করছ; তাদেরকে নয়, যাদেরকে ভীতি প্রদর্শনে কোন লাভ নেই। যেমন অন্য স্থানে বলেছেন, (إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَخْشَاهَا) অর্থাৎ, যে ওর ভয় রাখে তুমি কেবল তারই সতর্ককারী। (সূরা নাযিআত ৪৫ আয়াত) এবং (إِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمَنَ بِالْغَيْبِ) অর্থাৎ, তুমি কেবল তাদেরকে সতর্ক করতে পার, যারা উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে পরম দয়াময়কে ভয় করে। (সূরা ইয়াসীন ১১ আয়াত)
[4] تطَهُّر এবং تَزَكِّيْ এর অর্থ হল শিরক ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র হওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৯. সমান নয় অন্ধ ও চক্ষুষ্মান,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২০. আর না অন্ধকার ও আলো,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) সমান নয় অন্ধকার ও আলো, [1]
[1] অন্ধ থেকে উদ্দেশ্য কাফের (অবিশ্বাসী) এবং চক্ষুষ্মান থেকে উদ্দেশ্য মু’মিন (বিশ্বাসী), অন্ধকার থেকে বাতিল এবং আলো থেকে উদ্দেশ্য হল হক। বাতিলের যেহেতু বহু ধরন ও প্রকার আছে, সেহেতু তার জন্য বহুবচন এবং হক যেহেতু একাধিক নয়; বরং একটাই, সেহেতু তার জন্য একবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান