-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১. আর সে মূসার বোনকে বলল, এর পিছনে পিছনে যাও। সে দূর থেকে তাকে দেখছিল। অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারছিল না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) সে মূসার ভগিনীকে[1] বলল, ‘এর পিছনে পিছনে যাও।’ সুতরাং সে ওদের অজ্ঞাতসারে দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করছিল। [2]
[1] মূসা (আঃ)-এর ভগ্নির নাম ছিল মারয়্যাম বিন্তে ইমরান। যেমন, ঈসার মাতার নামও ছিল মারয়্যাম বিন্তে ইমরান। উভয়ের নামে ও পিতার নামে ছিল অভিন্নতা।
[2] অতএব তিনি নদীর ধারে ধারে দেখতে দেখতে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে তিনি দেখতে পেলেন যে, তাঁর ভাই ফিরআউনের প্রাসাদে পৌঁছে গেল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২. আর পূর্ব থেকেই আমরা ধাত্রী-স্তন্যপানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর মূসার বোন বলল, তোমাদেরকে কি আমি এমন এক পরিবারের সন্ধান দেব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালন-পালন করবে এবং এর মঙ্গলকামী হবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) আমি পূর্ব হতেই ধাত্রীস্তন্য পানে তাকে বিরত রেখেছিলাম।[1] মূসার ভগিনী বলল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন পরিবারের কথা বলব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালন-পালন করবে এবং এর হিতাকাঙ্ক্ষী হবে?’ [2]
[1] অর্থাৎ, আমি আমার কুদরতে ও সৃষ্টিগত নির্দেশে মূসাকে তাঁর মাতা ছাড়া অন্য সব ধাত্রীর দুধ পান করা নিষেধ করেছিলাম। সুতরাং বহু চেষ্টা-চরিত্র করার পর কোন ধাত্রী তাঁকে দুধ পান করাতে ও চুপ করাতে সফল হল না।
[2] এ সকল দৃশ্য তাঁর বোন চুপি চুপি প্রত্যক্ষ করছিলেন। পরিশেষে বলে ফেললেন যে, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি পরিবারের কথা বলব, যারা এই শিশুর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে?’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৩. তার জননীর কাছে, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না করে, আর সে জেনে নেয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এটা জানে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) অতঃপর আমি তাকে তার জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম,[1] যাতে তার চক্ষু জুড়ায়, সে দুঃখ না পায় এবং জানতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য।[2] কিন্তু ওদের অধিকাংশই এ জানে না। [3]
[1] অতঃপর তারা মূসার বোনকে বলল, ‘যাও! সেই মহিলাকে ডেকে আনো।’ সুতরাং তিনি দ্রুত গিয়ে নিজ মা (যিনি মূসারও মা ছিলেন তাঁকে) ডেকে নিয়ে এলেন।
[2] মূসা (আঃ) যখন নিজ মায়ের দুধ পান করে ফেললেন তখন ফিরআউন মূসা (আঃ)-এর মাতাকে রাজ-প্রাসাদে থাকার আহবান জানাল, যাতে সঠিকভাবে শিশুর লালন-পালন ও দেখাশোনা হয়। কিন্তু তিনি বললেন, আমি স্বামী ও অন্য সন্তানদেরকে ছেড়ে থাকতে পারি না। শেষ পর্যন্ত এটাই ঠিক হল যে, তিনি শিশুকে নিজ ঘরে নিয়ে যাবেন ও সেখানেই লালন-পালন করবেন এবং রাজকোষ হতে তার মজুরী ও পারিশ্রমিক তাঁকে দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহর কি অপার মহিমা! তিনি নিজ সন্তানকে দুধ পান করাবেন, আর পারিশ্রমিক (দুশমন) ফিরআউন হতে পাবেন! মহান আল্লাহ মূসাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কি সুন্দরভাবেই না পূর্ণ করলেন।{فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ} একটি মুরসাল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে কারিগর নিজ তৈরী জিনিসের মধ্যে নেকী ও কল্যাণের নিয়ত রাখে, তার উদাহরণ মূসার মায়ের মত; যে নিজ সন্তানকে দুধ পান করায়, উপরন্তু তার উপর পারিশ্রমিকও লাভ করে! (মারাসীলে আবী দাউদ)
[3] এমন বহু কাজ আছে যার বাস্তব পরিণামের কথা অধিকাংশ লোকের অজানা থাকে। কিন্তু আল্লাহর নিকট রয়েছে তার শুভ পরিণামের জ্ঞান। সেই জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা যা অপছন্দ কর, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারাহ ২১৬ আয়াত) অন্যত্র বলেছেন, ‘‘এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ।’’ (সূরা নিসা ১৯ আয়াত) এই কারণে মানুষের উচিত, নিজ পছন্দ-অপছন্দ দৃষ্টিচ্যুত করে প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা। কারণ এর মধ্যেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও শুভ পরিণাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪. আর যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হল(১) তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম(২); আর এভাবেই আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কার প্রদান করে থাকি।
(১) اشد শব্দের আভিধানিক অর্থ, শক্তি ও জোরের চরম সীমায় পৌঁছা। মানুষ শৈশবের দুর্বলতা থেকে আস্তে আস্তে শক্তি-সামর্থ্যের দিকে অগ্রসর হয়। তারপর এমন এক সময় আসে, যখন অস্তিত্বে যতটুকু শক্তি আসা সম্ভবপর, সবটুকুই পূর্ণ হয়ে যায়। এই সময়কেই اشد বলা হয়। এটা বিভিন্ন ভূখণ্ড ও বিভিন্ন জাতির মেজায অনুসারে বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে। কারও এই সময় তাড়াতাড়ি আসে এবং কারও দেরীতে। কোন কোন মুফাসসির এটাকে ৩৪ বছর বলে মত প্ৰকাশ করেছেন। যাকে আমরা পরিণত বয়স বলে থাকি এখানে সেটাই বোঝানো হয়েছে। এতে দেহের বৃদ্ধি একটি বিশেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে থেমে যায়। এরপর চল্লিশ বছর পর্যন্ত বিরতিকাল। একে استوى শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল যে, استوى তথা পরিণত বয়স ত্রিশ বছর থেকে শুরু করে চল্লিশ বছর পর্যন্ত বর্তমান থাকে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর; তাছাড়া সূরা আল-আন’আমের ১৫২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় কিছু আলোচনা এসেছে]
(২) হুকুম অর্থ হিকমত, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা-ধী-শক্তি ও বিচারবুদ্ধি। আর জ্ঞান বলতে বুঝানো হয়েছে দ্বীনী জ্ঞান বা ফিকহ। অথবা নিজের দ্বীন সম্পপর্কিত জ্ঞান ও তার পিতৃপুরুষদের দ্বীন। [ফাতহুল কাদীর] কারণ নিজের পিতামাতার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে তিনি নিজের বাপ-দাদা তথা ইউসুফ, ইয়াকুব ও ইসহাক আলাইহিমুস সালামের শিক্ষার সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে ও পরিণত বয়সে উপনীত হল, তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম; [1] এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
[1] ‘প্রজ্ঞা ও জ্ঞান’ বলতে যদি নবুঅত বুঝানো হয়, তাহলে এই মর্যাদায় তিনি কিভাবে পৌঁছলেন তার বিবরণ পরে আসছে। আবার কিছু ব্যাখ্যাদাতার নিকট এর অর্থ নবুঅত নয়; বরং সাধারণ জ্ঞান যা তিনি পারিবারিক পরিবেশে থেকে শিখেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৫. আর তিনি নগরীতে প্রবেশ করলেন, যখন এর অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক।(১) সেখানে তিনি দুটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখলেন, একজন তার নিজ দলের এবং অন্যজন তার শক্রদলের। অতঃপর মূসার দলের লোকটি ওরা শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করল, তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন(২); এভাবে তিনি তাকে হত্যা করে বসলেন। মূসা বললেন, এটা শয়তানের কাণ্ড(৩) সে তো প্ৰকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।
(১) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, মূসা আলাইহিস সালাম দুপুর সময়ে শহরে প্রবেশ করেছিলেন। এ সময় মানুষ দিবানিদ্রায় মশগুল থাকত। [ফাতহুল কাদীর] কারণ, তিনি তার সঠিক দ্বীন সম্পর্কে জানার পর ফিরআউনের দ্বীনের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতে আরম্ভ করলে, সেটা প্ৰসিদ্ধি লাভ করে। তাই তিনি বাইরে বের হতেন না। [কুরতুবী]
(২) وكز শব্দের অর্থ ঘুষি মারা। ঘুষির সাথেই লোকটি মারা গেল। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(৩) কিবতী লোকটিকে হত্যা করা শয়তানের কারসাজী ছিল। কারণ, যে স্থানে মুসলিম এবং কিছুসংখ্যক অমুসলিম অন্য কোন রাষ্ট্রে পরস্পর শান্তিতে বসবাস করে, একে অপরের উপর হামলা করা অথবা লুটতরাজ করাকে উভয়পক্ষে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে; সেইস্থানে এ ধরনের জীবন যাপন ও আদান-প্ৰদানও এক প্রকার কার্যগত চুক্তি যা অবশ্য পালনীয় এবং বিরুদ্ধাচারণ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। [ফাতহুল কাদীর]
সারকথা এই যে, কার্যগত চুক্তির কারণে কিবতীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে তা জায়েয হত না, কিন্তু মূসা আলাইহিস সালাম তাকে প্ৰাণে মারার ইচ্ছা করেননি; বরং ইসরাঈলী লোকটিকে তার যুলুম থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হাতে প্রহার করেছিলেন। এটা স্বভাবতঃ হত্যার কারণ হয় না। কিন্তু কিবতী এতেই মারা গেল। [ফাতহুল কাদীর] মুসা আলাইহিস সালাম অনুভব করলেন যে, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আরও কম মাত্রার প্রহারও যথেষ্ট ছিল কাজেই এই বাড়াবাড়ি না করলেও চলত। এ কারণেই তিনি একে শয়তানের কারসাজী আখ্যা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) সে নগরীতে প্রবেশ করল এমন এক সময়ে যখন এর অধিবাসীরা অসতর্ক অবস্থায় ছিল,[1] সেখানে সে দু’টি লোককে মারামারি করতে দেখল; একজন তার নিজ দলের এবং অপরজন তার শত্রু দলের।[2] মূসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মূসা ওকে ঘুষি মারল; এভাবে সে তাকে হত্যা করে বসল। মূসা বলল, ‘এ তো শয়তানের কাজ।[3] নিশ্চয় সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’ [4]
[1] এ অবস্থাকে কিছু লোক মাগরেব ও এশার মধ্যকার সময়, আবার কেউ কেউ দুপুরের সময় মনে করেছেন, যখন মানুষ বিশ্রাম নেয়।
[2] অর্থাৎ, ফিরআউনের সম্প্রদায়ভুক্ত কিবত্বীদের একজন ছিল।
[3] একে ‘শয়তানের কাজ’ এই কারণে বলা হয়েছে, যেহেতু হত্যা একটি জঘন্যতম অপরাধ; যদিও মূসা (আঃ)-এর ইচ্ছা হত্যা করা ছিল না।
[4] মানুষের সঙ্গে যার শত্রুতা সুস্পষ্ট এবং মানুষকে পথভ্রষ্ট করার যে চেষ্টা সে করে থাকে, তাও কারো নিকট অস্পষ্ট নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৬. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’[1] অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] এই অনিচ্ছাকৃত আকস্মিক হত্যা যদিও কাবীরাহ গোনাহ ছিল না (কারণ মহান আল্লাহ নবীগণকে তা হতে সুরক্ষা করেন) তা সত্ত্বেও তিনি এই গোনাহকে এমন ভাবলেন, যার ফলে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরী মনে করলেন। দ্বিতীয়তঃ এ আশঙ্কাও তাঁর ছিল যে, ফিরআউন যদি জানতে পারে, তাহলে তার বদলা নিতে সে হয়তো তাঁকেও হত্যা করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৭. তিনি বললেন, হে আমার রব! আপনি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।(১)
(১) মূসা আলাইহিস সালামের এই বিচ্যুতি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করলেন। তিনি এর শোকর আদায় করণার্থে আরয করলেন, আমি ভবিষ্যতে কোন অপরাধীকে সাহায্য করব না। এর অর্থ কেবল এই নয় যে, আমি কোন অপরাধীর সহায়ক হবো না বরং এর অর্থ এটাও হয় যে, আমার সাহায্য-সহায়তা কখনো এমন লোকদের পক্ষে থাকবে না যারা দুনিয়ায় যুলুম ও নিপীড়ন চালায়। মুসলিম আলেমগণ সাধারণভাবে মূসার এ অঙ্গীকার থেকে একথা প্রমাণ করেছেন যে, একজন মুমিনের কোন যালেমকে সাহায্য করা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা উচিত। প্রখ্যাত তাবেঈ আতা ইবন আবী রাবাহির কাছে এক ব্যক্তি বলে, আমার ভাই বনী উমাইয়া সরকারের অধীনে কুফার গভর্ণরের কাতিব বা লিখক, বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা তার কাজ নয়, তবে যেসব ফায়সালা করা হয় সেগুলো তার কলমের সাহায্যেই জারী হয়। এ চাকুরী না করলে সে ভাতে মারা যাবে।
আতা জবাবে এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন, তোমার ভাইয়ের নিজের কলম ছুঁড়ে ফেলে দেয়া উচিত, রিযিকদাতা হচ্ছেন আল্লাহ্। আর একজন কাতিব আমের শা'বীকে জিজ্ঞেস করেন, হে আবু ‘আমার! আমি শুধুমাত্র হুকুমনামা লিখে তা জারী করার দায়িত্ব পালন করি মূল ফায়সালা করার দায়িত্ব আমার নয়। এ জীবিকা কি আমার জন্য বৈধ? তিনি জবাব দেন, হতে পারে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যার ফায়সালা করা হয়েছে এবং তোমার কলম দিয়ে তা জারী হবে। হতে পারে, কোন সম্পদ অন্যায়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অথবা কারো গৃহ ধসানোর হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমার কলম দিয়ে জারী হচ্ছে। তারপর ইমাম এ আয়াতটি পাঠ করেন। আয়াতটি শুনেই কাতিব বলে ওঠেন, আজকের পর থেকে আমার কলম বনী উমাইয়ার হুকুমনামা জারী হবার কাজে ব্যবহৃত হবে না। ইমাম বললেন, তাহলে আল্লাহও তোমাকে রিযিক থেকে বঞ্চিত করবেন না।” [কুরতুবী]
আব্দুর রহমান ইবনে মুসলিম যাহহাককে শুধুমাত্র বুখারায় গিয়ে সেখানকার লোকদের বেতন বণ্টন করে দেবার কাজে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব গ্রহণ করতেও অস্বীকার করেন। তাঁর বন্ধুরা বলেন, এতে ক্ষতি কি? তিনি বলেন, আমি জালেমদের কোন কাজেও সাহায্যকারী হতে চাই না। [কুরতুবী] পূর্ববর্তী মনীষীগণের কাছ থেকে এ সম্পর্কে আরও বহু বৰ্ণনা এসেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) সে আরও বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ, সুতরাং আমি কখনও অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক হব না।’ [1]
[1] অর্থাৎ, তুমি যে অনুগ্রহ আমার প্রতি করেছ তার ফলে আমি সেই ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষক হব না, যে কাফের এবং তোমার বিধানের বিরোধী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৮. অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সে নগরীতে তার ভোর হল। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন আগের দিন যে ব্যক্তি গতকাল তার সাহায্য চেয়েছিল, সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। মূসা তাকে বললেন, তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্ৰান্ত ব্যক্তি।(১)
(১) অর্থাৎ তুমি ঝগড়াটে স্বভাবের বলে মনে হচ্ছে। প্রতিদিন কারো না কারো সাথে তোমার ঝগড়া হতেই থাকে। গতকাল একজনের সাথে ঝগড়া বাধিয়েছিলে, আজ আবার আরেকজনের সাথে বাধিয়েছো। [বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) অতঃপর ভীত-সতর্ক অবস্থায়[1] সে নগরীতে তার প্রভাত হল। হঠাৎ সে শুনতে পেল, গতকাল যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল, সে তার সাহায্যের জন্য চীৎকার করছে। মূসা তাকে বলল, ‘নিশ্চয় তুমি একজন সুস্পষ্ট বিভ্রান্ত ব্যক্তি।’ [2]
[1] خَائِفًا ভয়ে ভয়ে يَتَرَقّب এদিক-ওদিক দেখে আর নিজের ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে। অর্থাৎ, ভীত-সতর্ক অবস্থায়।
[2] অর্থাৎ, মূসা (আঃ) তাকে ধমক দিয়ে বললেন, তোমাকে গত কাল একজনের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখেছিলাম আবার আজও একজনের সাথে ঝগড়া করছ? ‘তুমি একজন সুস্পষ্ট বিভ্রান্ত ব্যক্তি’ কথার অর্থঃ সত্যই তুমি একজন ঝগড়াটে মানুষ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৯. অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শক্রকে ধরতে উদ্যত হলেন, তখন সে ব্যক্তি বলে উঠল(১), হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাচ্ছে? তুমি তো যমীনের বুকে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছ, তুমি তো চাও না শান্তি স্থাপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে!
(১) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এ কথাটি ইসরাঈলী লোকটিই বলেছিল। সে মূসা আলাইহিস সালামের পূর্ববর্তী সম্বোধনের কারণে এ ভয় করেছিল যে, মূসা আলাইহিস সালাম বুঝি তাকেই আক্রমণ করতে উদ্যত হচ্ছে। আর মূসা আলাইহিস সালামের আক্রমণ মানেই নিৰ্ঘাত মৃত্যু; কারণ গতকালই এক লোককে আক্রমণ করে শেষ করে দিয়েছে। আজ বুঝি আমাকেই শেষ করে দেবে। তাই সে গতকালের কিবতী হত্যার গোপণ কথা ফাঁস করে দিয়েছে। আর তাতেই কিবতী, লোকটি সুযোগ পেয়ে তা ফের'আউনের পরিষদবর্গের কাছে জানিয়ে দিলে তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হয়। [ইবন কাসীর]
তবে কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ কথাটি ইসরাঈলী লোকটির নয় বরং এটা কিবতী লোকেরই কথা। সে মূসা আলাইহিস সালামের ভয়াল চিত্র দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল যে, আজ যে আমাকে এমনভাবে মারার জন্য এগিয়ে আসছে সেই নিশ্চয়ই গতকালের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সে ছাড়া আর কার এমন বুকের পাটা আছে যে, আমাদের শাসকগোষ্ঠীর গায়ে হাত তুলে? তাই সে অনুমান নির্ভর হয়ে বলে বসে যে, তুমি কাল যেভাবে হত্যা করেছ আজ কি সে রকমই আমাকে হত্যা করতে চাচ্ছ? [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে পাকড়াও করতে উদ্যত হল,[1] তখন সে ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, তেমনি আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে কেবল স্বেচ্ছাচারী হতে চাও এবং শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না!’ [2]
[1] মূসা (আঃ) কিবতীকে ধরে নিতে চাইলেন। কারণ সেই ছিল মূসা ও ইস্রাঈলীর শত্রু, যাতে ঝগড়া না বাড়তে পায়।
[2] সাহায্যপ্রার্থী (ইস্রাঈলী) মনে করল, হয়তো মূসা (আঃ) তাকেও পাকড়াও করবেন, এই ভয়ে সে বলে উঠল, ‘‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, তেমনি আমাকেও কি হত্যা করতে চাও?’’ যার ফলে কিবতী জানতে পারে, গতকাল যে হত্যা হয়েছিল তার হত্যাকারী মূসা। সে গিয়ে ফিরআউনকে এ কথা বলে দেয়। যার জন্য ফিরআউন বদলাস্বরূপ মূসাকে হত্যা করার মনস্থ করে। (মতান্তরে উক্ত উক্তি কিবতীর; যেমন বাহ্যার্থে স্পষ্ট। আর কিবতী কোন ইস্রাঈলীর নিকট থেকে মূসা (আঃ)-এর হত্যা করার কথা আগেই শুনেছিল।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২০. আর নগরীর দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে এসে বলল, হে মূসা! পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে।(১) কাজেই তুমি বাইরে চলে যাও, আমি তো তোমার কল্যাণকামী।
(১) অর্থাৎ এ দ্বিতীয় ঝগড়ার ফলে হত্যা রহস্য প্রকাশ হয়ে যাবার পর সংশ্লিষ্ট মিসরীয়টি যখন গিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিল তখন এ পরামর্শের ঘটনা ঘটে। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) নগরীর দূরপ্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এল ও বলল,[1] ‘হে মূসা! (ফিরআউনের) পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র করছে। সুতরাং তুমি বাইরে চলে যাও, আমি অবশ্যই তোমার মঙ্গলকামী।’
[1] এ ব্যক্তি কে ছিল? কেউ কেউ বলেন, সে ছিল ফিরআউনের জাতিভুক্তই একটি লোক; কিন্তু সে গোপনভাবে মূসা (আঃ)-এর হিতাকাঙ্ক্ষী ছিল। আর এ কথা স্পষ্ট যে, শত্রুপক্ষের গুপ্ত ষড়্যন্ত্রের সংবাদ এই রকম লোক দ্বারা আসাটা অসম্ভব নয়। আবার কেউ বলেন, এ ব্যক্তি ছিল মূসা (আঃ)-এর এক ইস্রাঈলী নিকটাত্মীয়। ‘নগরীর দূর প্রান্ত হতে’ বলতে ‘মানাফ’কে বুঝানো হয়েছে যেখানে ছিল ফিরআউনের রাজ প্রাসাদ ও রাজধানী, যা ছিল নগরীর শেষ প্রান্তে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান