بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২৩/ আল-মুমিনুন | Al-Mu'minun | سورة المؤمنون আয়াতঃ ১১৮ মাক্কী
২৩ : ১১ الَّذِیۡنَ یَرِثُوۡنَ الۡفِرۡدَوۡسَ ؕ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۱﴾
الذین یرثون الفردوس هم فیها خلدون ﴿۱۱﴾
• যারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।

-আল-বায়ান

• তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকার লাভ করবে, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।

-তাইসিরুল

• অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা বসবাস করবে চিরকাল।

-মুজিবুর রহমান

• Who will inherit al-Firdaus. They will abide therein eternally.

-Sahih International

১১. যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের(১) যাতে তারা হবে স্থায়ী।(২)

(১) ফিরদৌস জান্নাতের সবচেয়ে বেশী পরিচিত প্রতিশব্দ। মানব জাতির বেশীরভাগ ভাষায়ই এ শব্দটি পাওয়া যায়। মুজাহিদ ও সায়ীদ ইবন জুবাইর বলেন, ফিরদৌস শব্দটি রুমী ভাষায় বাগানকে বলা হয়। কোন কোন মনীষী বলেন, বাগানকে তখনই ফেরদৌস বলা হবে, যখন তাতে আঙুর থাকবে। [ইবন কাসীর] কুরআনের দুটি স্থানে এ শব্দটি এসেছে। বলা হয়েছেঃ “তাদের আপ্যায়নের জন্য ফিরদৌসের বাগানগুলো আছে।” [সূরা আল কাহফঃ ১০৭] আর এ সূরায় বলা হয়েছেঃ “যারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী।”[১১]

অনুরূপভাবে ফিরদৌসের পরিচয় বিভিন্ন হাদীসেও বিস্তারিত এসেছে। এক হাদীসে এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, জান্নাতের রয়েছে একশটি স্তর। যা মহান আল্লাহ তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য তৈরী করেছেন। প্রতি দু’ স্তরের মাঝের ব্যবধান হলো আসমান ও যমীনের মাঝের ব্যবধানের সমান। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহ্‌র কাছে জান্নাত চাইবে তখন তার নিকট ফিরদাউস চাইবে; কেননা সেটি জান্নাতের মধ্যমনি এবং সর্বোচ্চ জন্নাত। আর তার উপরেই রয়েছে দয়াময় আল্লাহর আরশ। সেখান থেকেই জান্নাতের নালাসমূহ প্রবাহিত৷ [বুখারীঃ ২৬৩৭]

(২) উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত লোকদেরকে এই আয়াতে জান্নাতুল-ফেরদাউসের অধিকারী বা ওয়ারিশ বলা হয়েছে। ওয়ারিশ বলার মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি যেমন ওয়ারিশদের মালিকানায় আসা অমোঘ ও অনিবাৰ্য, তেমনি এসব গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিদের জান্নাত প্রবেশও সুনিশ্চিত। তাছাড়া (قَدْ أَفْلَحَ) বাক্যের পর সফলকাম ব্যক্তিদের গুণাবলী পুরোপুরি উল্লেখ করার পর এই বাক্যে আরও ইঙ্গিত আছে যে, পূর্ণাঙ্গ সাফল্য ও প্রকৃত সাফল্যের স্থান জান্নাতই। মুজাহিদ বলেন, প্রত্যেক বান্দার জন্য দু'টি স্থান রয়েছে। একটি স্থান জান্নাতে, অপর স্থানটি জাহান্নামে। মুমিনের ঘরটি জান্নাতে নির্মিত হয়, আর জাহান্নামে তার ঘরটি ভেঙে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফেরের জন্য জান্নাতে যে ঘরটি সেটা ভেঙে দেয়া হয়, আর তার জন্য জাহান্নামের ঘরটি তৈরী করা হয়। [ইবন কাসীর]

কোন কোন মনীষী বলেন, মুমিনরা জন্নাতের কাফেরদের স্থানসমূহেরও মালিক হবে। তারা আনুগত্যের মাধ্যমে এ অতিরিক্ত পুরস্কার লাভ করবে। বরং হাদীসে এটাও এসেছে যে, “কিয়ামতের দিন কিছু মুসলিম পাহাড় পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আসবে, তারপর আল্লাহ তাদের সে গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং সেগুলোকে ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর রাখবেন। [মুসলিম: ২৭৬৭] এ আয়াতটির মত অন্য আয়াত হচ্ছে, “এ সে জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে” [সূরা মারইয়াম: ৬৩] “আর এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে, তোমাদের কাজের ফলস্বরূপ।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) উত্তরাধিকারী হবে ফিরদাউসের; যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। [1]

[1] উক্ত গুণাবলীর অধিকারী মু’মিনই কেবলমাত্র সফলতা অর্জন করতে পারবে, যে জান্নাতের উত্তরাধিকারী ও হকদার বিবেচিত হবে। কেবল সাধারণ জান্নাতই নয়; বরং জান্নাতুল ফিরদাউস যা আটটি জান্নাতের সর্বোচ্চ জান্নাত; যেখান হতে জান্নাতের নদীমালা প্রবাহিত হয়েছে।

(সহীহ বুখারী জিহাদ অধ্যায়, তাওহীদ অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১২ وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ سُلٰلَۃٍ مِّنۡ طِیۡنٍ ﴿ۚ۱۲﴾
و لقد خلقنا الانسان من سللۃ من طین ﴿۱۲﴾
• আর অবশ্যই আমি মানুষকে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি।

-আল-বায়ান

• আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।

-তাইসিরুল

• আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে।

-মুজিবুর রহমান

• And certainly did We create man from an extract of clay.

-Sahih International

১২. আর অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে(১),

(১) سلالة শব্দের অর্থ সারাংশ এবং طين অর্থ আদ্ৰ মাটি। [কুরতুবী] অর্থ এই যে, পৃথিবীর মাটির বিশেষ অংশ বের করে তা দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [দেখুন, কুরতুবী] মানব সৃষ্টির সূচনা আদম আলাইহিস সালাম থেকে এবং তার সৃষ্টি মাটির সারাংশ থেকে হয়েছে। তাই প্রথম সৃষ্টিকে মাটির সাথে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। এরপর এক মানুষের শুক্র অন্য মানুষের সৃষ্টির কারণ হয়েছে। পরবর্তী আয়াতে (ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً) “তারপর আমরা তাকে করে দিয়েছি বীৰ্য” বলে এ কথাই বৰ্ণনা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, প্রাথমিক সৃষ্টি মাটি দ্বারা হয়েছে, এরপর আদম সন্তানদের সৃষ্টিধারা এই মাটির সূক্ষ্ম অংশ অর্থাৎ শুক্র দ্বারা চালু করা হয়েছে। অধিকাংশ তফসীরবিদগণ আয়াতের এ তফসীরই লিখেছেন। [দেখুন, কুরতুবী] মুজাহিদ বলেন, এখানে (سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ) বলে মানুষের শুক্রই বোঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, পরিষ্কার নিংড়ানো পানি হতে তৈরী করেছি। ইবন আব্বাস থেকেও এ অর্থ বর্ণিত আছে। ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে। [1]

[1] মাটির উপাদান হতে সৃষ্টি করার অর্থ সর্বপ্রথম মানুষ আদি পিতা আদমকে মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা মানুষ যা কিছু খাদ্য হিসাবে ভক্ষণ করে থাকে (এবং তার ফলে বীর্য তৈরী হয়), তা মাটি হতেই উৎপন্ন, সেই হিসাবে শুক্রবিন্দুর মৌলিক উপাদান; যা মানুষ সৃষ্টির কারণ, তা হল মাটি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৩ ثُمَّ جَعَلۡنٰهُ نُطۡفَۃً فِیۡ قَرَارٍ مَّكِیۡنٍ ﴿۪۱۳﴾
ثم جعلنه نطفۃ فی قرار مكین ﴿۱۳﴾
• তারপর আমি তাকে শুক্ররূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

-আল-বায়ান

• অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

-তাইসিরুল

• অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে।

-মুজিবুর রহমান

• Then We placed him as a sperm-drop in a firm lodging.

-Sahih International

১৩. তারপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ ভাণ্ডারে;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে (জরায়ুতে)। [1]

[1] নিরাপরাধ আধার বা স্থান বলতে মায়ের গর্ভাশয় বা জরায়ু, যেখানে বাচ্চা প্রায় ৯ মাস নিরাপদে লালিত-পালিত হয়ে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৪ ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَۃَ عِظٰمًا فَكَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ٭ ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰهُ خَلۡقًا اٰخَرَ ؕ فَتَبٰرَكَ اللّٰهُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِیۡنَ ﴿ؕ۱۴﴾
ثم خلقنا النطفۃ علقۃ فخلقنا العلقۃ مضغۃ فخلقنا المضغۃ عظما فكسونا العظم لحما ٭ ثم انشانه خلقا اخر فتبرك الله احسن الخلقین ﴿۱۴﴾
• তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিন্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিন্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!

-আল-বায়ান

• পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট বাঁধা রক্তে, অতঃপর মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করি মাংস দিয়ে, অতঃপর তাকে এক নতুন সৃষ্টিতে উন্নীত করি। কাজেই সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান!

-তাইসিরুল

• পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!

-মুজিবুর রহমান

• Then We made the sperm-drop into a clinging clot, and We made the clot into a lump [of flesh], and We made [from] the lump, bones, and We covered the bones with flesh; then We developed him into another creation. So blessed is Allah, the best of creators.

-Sahih International

১৪. পরে আমরা শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি আলাকা-তে, অতঃপর ‘আলাকা-কে পরিণত করি গোশতপিণ্ডে, অতঃপর গোশতপিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিতে; অতঃপর অস্থিকে ঢেকে দেই গোশত দিয়ে; তারপর তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে।(১) অতএব (দেখে নিন) সর্বোত্তম স্রষ্টা(২) আল্লাহ কত বরকতময়!(৩)

(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে মানব সৃষ্টির সাতটি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম স্তর মৃত্তিকার সারাংশ, দ্বিতীয় বীর্য, তৃতীয় জমাট রক্ত, চতুর্থ মাংসপিণ্ড, পঞ্চম অস্থি-পিঞ্জর, ষষ্ঠ অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃতকরণ ও সপ্তম সৃষ্টিটির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রূহ সঞ্চারকরণ। আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে এ শেষোক্ত স্তরকে এক বিশেষ ও স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে বর্ণনা করে বলেছেনঃ “তারপর আমরা তাকে এক বিশেষ ধরনের সৃষ্টি দান করেছি।” এই বিশেষ বর্ণনার কারণ এই যে, প্রথমোক্ত ছয় স্তরে সে পূর্ণত্ব লাভ করেনি। শেষ স্তরে এসে সে সম্পূর্ণ এক মানুষে পরিণত হয়েছে। এ কথাই বিভিন্ন তাফসীরকারকগণ বলেছেন। তারা বলেন, এ স্তরে এসে তার মধ্যে আল্লাহ তা'আলা রূহ সঞ্চার করিয়েছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাস্‌সির বলেন, “তারপর আমরা তাকে এক বিশেষ ধরনের সৃষ্টি দান করেছি।” এর অর্থ তাকে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছি। প্রথমে শিশু, তারপর ছোট, তারপর কৈশোর, তারপর যুবক, তারপর পূর্ণবয়স্ক, তারপর বৃদ্ধ, তারপর অতি বয়স্ক। বস্তুত দুটি অর্থের মধ্যে বিরোধ নেই। কারণ, রূহ ফুঁকে দেয়ার পর এসবই সংঘটিত হয়। [ইবন কাসীর]

(২) خالق এর আসল অর্থ নুতনভাবে কোন সাবেক নমুনা ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি করা যা আল্লাহ্ তা'আলারই বিশেষ গুণ। এই অর্থের দিক দিয়ে خالق একমাত্র আল্লাহ তা'আলা-ই। কিন্তু মাঝে মাঝে خلق تخليق শব্দ কারিগরীর অর্থেও ব্যবহার করা হয়। কারিগরীর স্বরূপ এর বেশী কিছু নয় যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় কুদরাত দ্বারা এই বিশ্বে যেসব উপকরণ ও উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন, সেগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে পরস্পরে মিশ্রণ করে এক নতুন জিনিস তৈরী করা। একাজ কারও কারও দ্বারা হওয়া সম্ভব। তখন এর অর্থ হবে, উদ্ভাবন করা, আকৃতি প্রদান করা, গঠন করা ইত্যাদি।

এ অর্থেই কুরআনের অন্যত্র ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মুখে এসেছে, (إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا) “তোমরা তো আল্লাহ্‌ ছাড়া শুধু মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ।” [সূরা আল-আনকাবূতঃ ১৭] অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালামও বলেছেনঃ (أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ) ‘আমি তোমাদের জন্য কর্দম দ্বারা একটি পাখিসদৃশ আকৃতি গঠন করব; তারপর ওটাতে আমি ফুঁ দেব; ফলে আল্লাহর হুকুমে ওটা পাখি হয়ে যাবে।’ [সূরা আলে ইমরানঃ ৪৯] তাছাড়া আল্লাহ্ তা'আলা নিজেও ঈসা আলাইহিস সালামকে তার উপর কৃত নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিতে বলেনঃ (وَإِذْ تَخْلُقُ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ بِإِذْنِي فَتَنْفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِي) “আপনি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখির মত আকৃতি গঠন করতেন এবং ওটাতে ফুক দিতেন, ফলে আমার অনুমতিক্রমে ওটা পাখি হয়ে যেত।” [সূরা আল মায়েদাহঃ ১১০] এসব ক্ষেত্রে خلق শব্দ কারিগরীর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সৃষ্টির অর্থে নয়। [দেখুন, বাগভী; কুরতুবী]

(৩) মূলে تبارك শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর এক অর্থ তিনি প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী। অথবা এর অর্থ, তাঁর কল্যাণ ও বরকত বৃদ্ধি পেয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি গোশতপিন্ডে এবং গোশতপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা;[1] অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে; [2] অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! [3]

[1] এর কিছু বিবরণ সূরা হজ্জের শুরুতে (৫নং আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে। এখানে আবার বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও ওখানে مُخَلَّقَة (পূর্ণাকৃতি)এর যে বর্ণনা ছিল এখানে তা স্পষ্ট করা হয়েছে এভাবে যে, مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থি বা হাড়ে পরিণত করা হয়, অতঃপর তার উপর গোশত চড়িয়ে দেওয়া হয়। مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থিতে পরিণত করার উদ্দেশ্য মানুষের কাঠামোকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো। কারণ, শুধু মাংসের মধ্যে শক্তি ও কঠিনতা নেই। আবার যদি কেবলমাত্র অস্থি-পঞ্জরের খাঁচা (কঙ্কাল)টা রাখা হত, তাহলে মানুষের সেই শোভা ও সৌন্দর্য প্রকাশ পেত না, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। সেই কারণে সেই হাড়ের উপর এক বিশেষ নিয়মে ও প্রয়োজন মাফিক গোশত চড়ানো হয়েছে; কোথাও কম, কোথাও বেশি। যাতে মানুষের দৈহিক গঠনে কোন ধরনের অসামঞ্জস্য ও অসৌন্দর্য প্রকাশ না পায়; বরং সে রূপ ও সৌন্দর্যের এক সুশোভন অবয়ব এবং আল্লাহর সৃষ্টির এক সুন্দর নমুনা হয়। এই কথাটিই কুরআনের এক জায়গায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।’ (সূরা তীন ৪ নং আয়াত)

[2] এর অর্থ সেই কচি শিশু, যে ৯ মাস পর এক বিশেষ রূপ নিয়ে মায়ের পেট হতে বের হয়ে ভুমিষ্ট হয় এবং সাথে সাথে নড়া চড়া শোনা, দেখা ও অনুভব করার শক্তিসমুহ তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।

[3] خَالِقِين (স্রষ্টাদল) বলতে সেই সমস্ত কারিগরদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা পরিমাণ ও পরিমাপ অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসকে জোড়া লাগিয়ে কোন নতুন জিনিস তৈরী করে থাকে। অর্থাৎ, সেই সকল কারিগরদের মধ্যে আল্লাহর সমতুল্য কারিগর আর কে আছে, যে এই শ্রেণীর কারিগরির নমুনা পেশ করতে পারে, যা আল্লাহ মানুষের সুন্দর অবয়ব রূপে পেশ করেছেন? অতএব সবার চেয়ে বড় কল্যাণময় সেই আল্লাহ যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা ও সর্বশ্রেষ্ঠ কারিগর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৫ ثُمَّ اِنَّكُمۡ بَعۡدَ ذٰلِكَ لَمَیِّتُوۡنَ ﴿ؕ۱۵﴾
ثم انكم بعد ذلك لمیتون ﴿۱۵﴾
• এরপর অবশ্যই তোমরা মরবে।

-আল-বায়ান

• এরপর তোমরা অবশ্যই মরবে।

-তাইসিরুল

• এরপর অবশ্যই তোমরা মৃত্যু বরণ করবে।

-মুজিবুর রহমান

• Then indeed, after that you are to die.

-Sahih International

১৫. এরপর তোমরা নিশ্চয় মরবে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৬ ثُمَّ اِنَّكُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۶﴾
ثم انكم یوم القیمۃ تبعثون ﴿۱۶﴾
• তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।

-আল-বায়ান

• তারপর কিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।

-তাইসিরুল

• অতঃপর কিয়ামাত দিবসে তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।

-মুজিবুর রহমান

• Then indeed you, on the Day of Resurrection, will be resurrected.

-Sahih International

১৬. তারপর কেয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে।(১)

(১) পূর্ববর্তী ১২-১৪ নং আয়াতে সৃষ্টির প্রাথমিক স্তর উল্লেখ করা হয়েছিল, এখন ১৫ ও ১৬ আয়াতে তার শেষ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। বলা হচ্ছেঃ তোমরা সবাই এ জগতে আসা ও বসবাস করার পর মৃত্যুর সম্মুখীন হবে। কেউ এর কবল থেকে রক্ষা পাবে না। মৃত্যুর পর আবার কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে জীবিত করে পুনরুখিত করা হবে, যাতে তোমাদের ক্রিয়াকর্মের ভাল কিংবা মন্দের হিসাবান্তে তোমাদেরকে আসল ঠিকানা জান্নাত অথবা জাহান্নামে পৌছে দেয়া হয়। [দেখুন: ইবন কাসীর] এ হচ্ছে মানুষের শেষ পরিণতি।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করা হবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৭ وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعَ طَرَآئِقَ ٭ۖ وَ مَا كُنَّا عَنِ الۡخَلۡقِ غٰفِلِیۡنَ ﴿۱۷﴾
و لقد خلقنا فوقكم سبع طرآئق ٭ و ما كنا عن الخلق غفلین ﴿۱۷﴾
• আর অবশ্যই আমি তোমাদের উপর সাতটি স্তর সৃষ্টি করেছি। আর আমি সৃষ্টি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম না।

-আল-বায়ান

• আমি তোমাদের উপরে সপ্ত স্তর সৃষ্টি করেছি, আমি (আমার) সৃষ্টির ব্যাপারে অমনোযোগী নই।

-তাইসিরুল

• আমিতো তোমাদের উর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্ত স্তর এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই।

-মুজিবুর রহমান

• And We have created above you seven layered heavens, and never have We been of [Our] creation unaware.

-Sahih International

১৭. আর অবশ্যই আমরা তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সাতটি আসমান(১) এবং আমরা সৃষ্টি বিষয়ে মোটেই উদাসীন নই(২),

(১) মানুষ সৃষ্টির কথা আলোচনা করার পর সাত আসমান সৃষ্টি করার আলোচনা করা হচ্ছে। সাধারণত: যখনই আল্লাহ আসমান যমীনের সৃষ্টির কথা আলোচনা করেন, তখনই মানুষ সৃষ্টির কথা আলোচনা করেন। যেমন, আল্লাহ বলেন, “মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি অবশ্যই বড় বিষয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরা গাফির: ৫৭] অনুরূপভাবে সূরা আস-সাজদাহ এর ৪–৯ আয়াতসমূহ। [ইবন কাসীর] আকাশ সৃষ্টির আলোচনায় বলা হয়েছে যে, “আমরা তো তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সাতটি طرائق। এ طرائق শব্দটি طريقة শব্দের বহুবচন। এর মানে পথও হয় আবার স্তরও হয়। [কুরতুবী] যদি প্রথম অর্থটি গ্রহণ করা হয় এখানে রাস্তা বলতে ফেরেশতাদের চলাচলের পথ বুঝানো হয়েছে।

কারণ, সবগুলো আসমান বিধানাবলী নিয়ে যমীনে যাতায়াতকারী ফেরেশতাদের পথ। [বাগভী; কুরতুবী] আর যদি দ্বিতীয় অর্থাটি গ্রহণ করা হয় তাহলে طرائق এর অর্থ তাই হবে যা (سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا) বা সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে [সূরা আল-মুলক: ৩; নূহ: ১৫] এর অর্থ হয়। অর্থাৎ স্তরে স্তরে সাত আসমান তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করা হয়েছে, এর দ্বারা যেন এ কথা বলাই উদ্দেশ্য যে, তোমাদের চাইতে বড় জিনিস আমি নির্মাণ করেছি সেটা হলো, এ আকাশ। মুজাহিদ বলেন, এখানে সাত আসমানই বলা উদ্দেশ্য। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বতী সব কিছু তারই পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করে”। [সূরা আল-ইসরা: ৪৪] [ইবন কাসীর]

(২) এর অর্থ আমি যা কিছুই সৃষ্টি করেছি। তাদের কারোর কোন প্রয়োজন থেকে আমি কখনো গাফিল এবং কোন অবস্থা থেকে কখনো বেখবর থাকিনি। প্রত্যেকটি বিন্দু, বালুকণা ও পত্র-পল্লবের অবস্থা আমি অবগত থেকেছি। আমি মানুষকে শুধু সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেইনি। আমি তাদের ব্যাপারে বেখবরও হতে পারি না; বরং তাদের পালন, বসবাস ও সুখের সরঞ্জামও সরবরাহ করেছি। আকাশ সৃষ্টি দ্বারা এ কাজের সূচনা হয়েছে। এরপর আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করে মানুষের জন্যে খাদ্য ও ফল-ফুল দ্বারা সুখের সরঞ্জাম সৃষ্টি করেছি। [দেখুন, কুরতুবী]

অথবা আয়াতের অর্থ, আমি আমার সৃষ্টি সম্পর্কে কখনো গাফেল নই। আমি আমার সৃষ্টির সবকিছু জানি। যমীনে যা প্রবেশ করে, যমীন থেকে যা বের হয়, আকাশ থেকে যা নাযিল হয়, যা আকাশে উঠে, তিনি সবই জানেন। তোমরা যেখানেই থাক সেখানেই তোমরা তাঁর জ্ঞানের আওতাভুক্ত। আর তোমরা যা আমল কর আল্লাহ তা সম্যক দেখছেন। তিনি এমন এক সত্তা, কোন আসমান অপর আসমানের, কোন যমীন অপর যমীনের মধ্যে তার দৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কোন পাহাড়ের কঠিন স্থানে, কোন সমুদ্রের গভীর কোণে কি আছে সবই তাঁর জানা। পাহাড়ে, টিলায়, বালু, সমুদ্রে, মরুভূমিতে, গাছে কি আছে আর পরিমাণ কত সবই তিনি জানেন। [ইবন কাসীর] আল্লাহ বলেন, “স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসাযুক্ত কিংবা শুস্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা আল-আনআমঃ ৫৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) নিশ্চয় আমি তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্ত স্তর[1] এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই। [2]

[1] طَرائِق শব্দটি طَرِيقَة এর বহুবচন। যার ভাবার্থঃ আকাশ। আরবের লোকেরা উপরের জিনিসকে طَرِيقَة বলে থাকে। আর আকাশ যেহেতু উপরে সেই জন্য তাকেও طَرائِق বলা হয়েছে। অথবা طَرِيقَة এর অর্থ পথ। যেহেতু আকাশ ফিরিশতাদের যাতায়াতের পথ বা গ্রহ-নক্ষত্রের গমনাগমনের পথ (ছায়াপথ)। সেই জন্য তাকে طَرائِق বলে অভিহিত করা হয়েছে।

[2] خَلق (সৃষ্টি) থেকে উদ্দেশ্য مَخلُوق (সৃষ্ট)। অর্থাৎ, আসমান সৃষ্টি করার পর পৃথিবীর সৃষ্টি বিষয়ে উদাসীন হয়ে যাইনি। বরং আমি আসমানকে যমীনের উপর ভেঙ্গে পড়া হতে সুরক্ষিত রেখেছি; যাতে সৃষ্টিজগৎ ধ্বংস হয়ে না যায়। অথবা অর্থ এই যে, আমি সৃষ্টি জগতের কল্যাণ ও প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে উদাসীন নই; বরং আমি তার ব্যবস্থা করে থাকি। (ফাতহুল কাদীর) আবার কেউ বলেন যে, এর অর্থ হল পৃথিবী হতে যা কিছু উদগত হয় বা যা কিছু তাতে প্রবেশ করে এবং এমনিভাবে আকাশ হতে যা কিছু অবতীর্ণ হয় এবং যা কিছু উপরে চড়ে সব কিছুর জ্ঞান আল্লাহর রয়েছে। প্রতিটি জিনিস তিনি প্রত্যক্ষ করছেন এবং নিজ জ্ঞান দ্বারা সর্বত্র তোমাদের সাথে রয়েছেন। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৮ وَ اَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۢ بِقَدَرٍ فَاَسۡكَنّٰهُ فِی الۡاَرۡضِ ٭ۖ وَ اِنَّا عَلٰی ذَهَابٍۭ بِهٖ لَقٰدِرُوۡنَ ﴿ۚ۱۸﴾
و انزلنا من السمآء مآء بقدر فاسكنه فی الارض ٭ و انا علی ذهاب بهٖ لقدرون ﴿۱۸﴾
• আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর আমি তা যমীনে সংরক্ষণ করেছি। আর অবশ্যই আমি সেটাকে অপসারণ করতেও সক্ষম।

-আল-বায়ান

• আমি আকাশ থেকে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি তা যমীনে সংরক্ষণ করি আর আমি পানিকে সরিয়ে দিতে অবশ্যই সক্ষম।

-তাইসিরুল

• এবং আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আমি ওকে অপসারিত করতেও সক্ষম।

-মুজিবুর রহমান

• And We have sent down rain from the sky in a measured amount and settled it in the earth. And indeed, We are Able to take it away.

-Sahih International

১৮. আর আমরা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে(১); অতঃপর আমরা তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আর অবশ্যই আমরা তা নিয়ে যেতেও সম্পূর্ণ সক্ষম।(২)

(১) এই আয়াতে আকাশ থেকে বারিবর্ষণের আলোচনার সাথে بقدر বা ‘পরিমিত পরিমান’ কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। কারণ, পানি প্রয়োজনের চাইতে বেশী বৰ্ষিত হয়ে গেলে প্লাবন এসে যায় এবং মানুষ ও তার জীবন-জীবিকার জন্যে বিপদ ও আযাব হয়ে পড়ে। তাই আকাশ থেকে বারিবর্ষণও পরিমিতভাবে হয়। যা মানুষের অভাব দূর করে দেয় এবং সর্বনাশের কারণ হয় না। তবে যেসব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা কোন কারণে প্লাবন-তুফান চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন, সেসব ক্ষেত্র ভিন্ন। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(২) অর্থাৎ সেটাকে অদৃশ্য করার কোন একটাই পদ্ধতি নেই। অসংখ্য পদ্ধতিতে তাকে অদৃশ্য করা সম্ভব। এর মধ্য থেকে যে কোনটিকে আমরা যখনই চাই ব্যবহার করে তোমাদেরকে জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি থেকে বঞ্চিত করতে পারি। এভাবে এ আয়াতটি সূরা আল-মুলকের আয়াতটি থেকে ব্যাপকতর অর্থ বহন করে, যেখানে বলা হয়েছেঃ “তাদেরকে বলুন, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছে , যমীন যদি তোমাদের এ পানিকে নিজের ভেতরে চুষে নেয়, তাহলে কে তোমাদেরকে বহমান ঝর্ণাধারা এনে দেবে?”[৩০] অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতের ভাষ্য সূরা আল-কাহাফে নির্দেশিত আয়াত থেকেও ব্যাপকতর, যেখানে বলা হয়েছেঃ “অথবা তার পানি ভূগর্ভে হারিয়ে যাবে এবং আপনি কখনো সেটার সন্ধান লাভে সক্ষম হবেন না।”[৪১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আমি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে,[1] অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি।[2] আর আমি ওকে অপসারিত করতেও নিশ্চিতভাবে সক্ষম। [3]

[1] অর্থাৎ, না এত বেশী যাতে বন্যা সৃষ্টি হয়ে ধ্বংসলীলা না ঘটে আর না এত অল্প যাতে ফসল উৎপন্ন ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট না হয়।

[2] আমি এ ব্যবস্থাও করেছি যে, পানি বর্ষণের পর যাতে বয়ে গিয়ে শেষ হয়ে না যায়; সুতরাং আমি ঝরনা, নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর ও কূপের সাহায্যে সংরক্ষণ করেছি। (কারণ এসবের আসল আকাশের পানিই।) যাতে সেই সময় যখন আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায় বা যেখানে বৃষ্টি অল্প হয় এবং পানির প্রয়োজন বেশি হয়, তখন সেখানে তা কাজে আসে।

[3] অর্থাৎ, যেমন আমি নিজ অনুগ্রহে ও কৃপায় পানির এ হেন সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছি, তেমনি আমি পানিকে এমন গভীর জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম যে, সেখান হতে তা বের করে আনা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ১৯ فَاَنۡشَاۡنَا لَكُمۡ بِهٖ جَنّٰتٍ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ ۘ لَكُمۡ فِیۡهَا فَوَاكِهُ كَثِیۡرَۃٌ وَّ مِنۡهَا تَاۡكُلُوۡنَ ﴿ۙ۱۹﴾
فانشانا لكم بهٖ جنت من نخیل و اعناب لكم فیها فواكه كثیرۃ و منها تاكلون ﴿۱۹﴾
• তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদের জন্য প্রচুর ফল থাকে। আর তা থেকেই তোমরা খাও।

-আল-বায়ান

• অতঃপর আমি তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি, ওতে তোমাদের জন্য আছে পর্যাপ্ত ফল, যাথেকে তোমরা খাও (আর সুখভোগ কর)।

-তাইসিরুল

• অতঃপর আমি ওটা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার কর।

-মুজিবুর রহমান

• And We brought forth for you thereby gardens of palm trees and grapevines in which for you are abundant fruits and from which you eat.

-Sahih International

১৯. তারপর আমরা তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা থেকে তোমরা খেয়ে থাক(১);

(১) এখানে হিজাযবাসীদের মোজায ও রুচি অনুযায়ী এমন কিছুসংখ্যক বস্তুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো পানি দ্বারা উৎপন্ন। বলা হয়েছে, খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান পানি সেচের দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর এ দু'টি ছাড়া অন্যান্য ফলের কথাও আলোচনা করা হয়েছে, অর্থাৎ এসব বাগানে তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুর ছাড়া হাজারো প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছি। এগুলো তোমরা শুধু মুখরোচক হিসেবেও খাও এবং কোন কোন ফল গোলাজাত করে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ কর। [দেখুনঃ ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) অতঃপর আমি ওটা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক। [1]

[1] অর্থাৎ বাগানে আঙ্গুর ও খেজুর ছাড়া আরো অন্যান্য ফল ফলে থাকে; যা তোমরা মজার সাথে খেয়ে থাকো।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৩ : ২০ وَ شَجَرَۃً تَخۡرُجُ مِنۡ طُوۡرِ سَیۡنَآءَ تَنۡۢبُتُ بِالدُّهۡنِ وَ صِبۡغٍ لِّلۡاٰكِلِیۡنَ ﴿۲۰﴾
و شجرۃ تخرج من طور سینآء تنبت بالدهن و صبغ للاكلین ﴿۲۰﴾
• আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদগত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারী উৎপন্ন করে।

-আল-বায়ান

• আর (আমি সৃষ্টি করি) এক বৃক্ষ যা সিনাই পর্বতে জন্মে, যাথেকে তেল উৎপন্ন হয়, আর ভক্ষণকারীদের জন্য রসনা তৃপ্তিকর।

-তাইসিরুল

• এবং সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মে সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।

-মুজিবুর রহমান

• And [We brought forth] a tree issuing from Mount Sinai which produces oil and food for those who eat.

-Sahih International

২০. আর সৃষ্টি করি এক গাছ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং যারা খায় তাদের জন্য খাবার তথা তরকারী।(১)

(১) এখানে বিশেষ করে যায়তুন ও তার তৈল সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। কেননা, এর উপকারিতা অপরিসীম। যয়াতুনের তৈল মালিশ ও বাতি জ্বালানের কাজেও আসে এবং ব্যঞ্জনেরও কাজ দেয়। [দেখুনঃ ইবন মাজহ: ৩৩১৯] যয়তুনের বৃক্ষ তুর পর্বতে উৎপন্ন হয় বিধায় এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে سيناء এই সায়না ও সিনিন সেই স্থানের নাম, যেখানে তুর পর্বত অবস্থিত। এ পাহাড়ের সাথে একে সম্পর্কিত করার কারণ সম্ভবত এই যে, সিনাই পাহাড় এলাকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থানই এর আসল স্বদেশ ভূমি। [দেখুনঃ কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) এবং সৃষ্টি করি এক গাছ যা জন্মে সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও তরকারী। [1]

[1] সে গাছ হল যায়তুনের গাছ। যার ফল পিষে তেল বের করা হয় এবং তা খাওয়ানো ও জ্বালানো হয়। যায়তুন ফলও তরকারী বা আচার রূপে ব্যাবহার করা হয়। তরকারিকে صبغ (রং) বলা হয়েছে। যেহেতু রুটিকে তার তরকারিতে ডুবিয়ে রাঙ্গানো হয় তাই। সিনাই পর্বত ও তার আশেপাশের এলাকা বিশেষ করে উক্ত গাছের জন্য বড় উৎকৃষ্ট ভুমি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »