-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১১. তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বললেন, সত্য বটে, আমরা তোমাদের মত মানুষই কিন্তু আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন এবং আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ উপস্থিত করার সাধ্য আমাদের নেই।(১) আর আল্লাহর উপরই মুমিনগণের নির্ভর করা উচিত।
(১) অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আমরা তো মানুষই। তবে আল্লাহ নবুওয়াত ও রিসালাতের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে আমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন। এখানে আমাদের সামর্থের কোন ব্যাপার নেই। এ তো আল্লাহর পূর্ণ ইখতিয়ারের ব্যাপার। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যা ইচ্ছা দেন। আমাদের কাছে যা কিছু এসেছে তা আমরা তোমাদের কাছে পাঠাতে বলতে পারি না এবং আমাদের কাছে যে সত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে আমরা নিজেদের চোখ বন্ধ করে নিতেও পারি না। আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ বা মু'জিযা নিয়ে আসতে পারি না। যতক্ষণ না আল্লাহর কাছে আমরা তা চাইব এবং তিনি তা অনুমোদন করবেন। দেখুন, [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) তাদের রসূলগণ তাদেরকে বলল, ‘(সত্য বটে) আমরা তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করে থাকেন;[1] আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের নিকট প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়।[2] আর বিশ্বাসীদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। [3]
[1] রসূলগণ প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিলেন যে, অবশ্যই আমরা তোমাদের মত মানুষ, সুতরাং মানুষ রসূল হতে পারে না, তোমাদের এই ধারণা ভুল। মহান আল্লাহ মানবকুলের হিদায়াতের জন্য তাদের মধ্য থেকেই কতিপয় মানুষকে নির্বাচন করে নেন এবং তোমাদের মধ্য হতে এই অনুগ্রহ আমাদের প্রতি করেছেন।
[2] তাদের মন মোতাবেক মু’জিযা প্রদর্শনের ব্যাপারে রসূলগণ জবাব দিলেন যে, মু’জিযা প্রদর্শনের এখতিয়ার আমাদের হাতে নয়, বরং তা শুধু মাত্র আল্লাহর হাতে।
[3] এখানে ‘বিশ্বাসীদের’ বলে উদ্দেশ্য প্রথমত নবীগণ। অর্থাৎ আমাদের উচিত, আল্লাহর উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা রাখা, যেমন পরবর্তী আয়াতে বলেছেন, ‘‘আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না কেন?’’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১২. আর আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করব না? অথচ তিনিই তো আমাদেরকে আমাদের পথ দেখিয়েছেন।(১) আর তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ, আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব।(২) সুতরাং নির্ভরকারীগণ আল্লাহর উপরই নির্ভর করুক।
(১) অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে সবচেয়ে সঠিক ও সবচেয়ে স্পষ্ট ও প্রকাশমান পথটির দিশা দিয়েছেন। [ইবন কাসীর]
(২) এভাবে যখনই কোন নবী বা রাসূল কোন কাওমের কাছে এসেছে তখনই তাদের নেতা গোছের লোকেরা নবী-রাসূলদেরকে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে রাখত। কখনও তাদেরকে দেশান্তর করার ভয় দেখাত। আবার কখনও তাদেরকে হত্যা করতে উদ্যত হত। যেমন শু'আইব আলাইহিস সালামের কাওম তাকে বলেছিল, “তার সম্প্রদায়ের অহংকারী নেতারা বলল, হে শু'আইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। তিনি বললেন, যদিও আমরা ওটাকে ঘৃণা করি তবুও? [সূরা আল-আরাফঃ ৮৮] লুত আলাইহিস সালামের জাতি তাকে বলেছিলঃ “উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, 'লুত-পরিবারকে তোমরা জনপদ থেকে বহিষ্কার কর, এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র সাজতে চায়।” [সূরা আননামলঃ ৫৬]
তদ্রুপ অন্যত্রও এসেছে যে, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও তারা অনুরূপ কথা বলেছিল, যেমনঃ “তারা আপনাকে দেশ থেকে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল আপনাকে সেখান থেকে বহিস্কার করার জন্য; তাহলে আপনার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকত।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৭৬] “স্মরণ করুন, কাফিররা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা করার বা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। [সূরা আল-আনফালঃ ৩০]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না কেন? তিনিই তো আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন; তোমরা আমাদেরকে যে ক্লেশ দিচ্ছ, আমরা অবশ্যই তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করব। আর নির্ভরকারীদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।’ [1]
[1] নির্ভর এই যে, তিনিই কাফেরদের বদমায়েশি ও মূর্খামি থেকে রক্ষাকারী। এই অর্থও হতে পারে যে, আমাদের কাছে মু’জিযা তলব না করে আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত। তাঁর ইচ্ছা হলে তিনি মু’জিযা প্রকাশ করবেন, না হলে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৩. আর কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বলেছিল, আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে অবশ্যই বহিস্কৃত করব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসবে।(১) অতঃপর রাসূলগণকে তাদের রব ওহী পাঠালেন, যালিমদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব;
(১) এর মানে এ নয় যে, নবুওয়াতের মর্যাদায় সমাসীন হবার আগে নবীগণ নিজেদের পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের মিল্লাত বা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতেন। বরং এর মানে হচ্ছে, নবুওয়াত লাভের পূর্বে যেহেতু তারা এক ধরনের নীরব জীবন যাপন করতেন, তাই তাদের সম্প্রদায় মনে করতো তারা তাদেরই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] তারপর নবুওয়াতের কাজ শুরু করে দেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা হতো যে, তারা বাপ-দাদার দ্বীন ত্যাগ করেছেন। অথচ নবুওয়াত লাভের আগেও তারা কখনো মুশরিকদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে দ্বীনচ্যুতির অভিযোগ করা যেতে পারে। অথবা আয়াতের অর্থ, তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শের অনুসারী হয়ে যাবে। অথবা কাফেররা এটা দ্বারা নবীদের অনুসারীদের উদ্দেশ্য নিয়েছে। যারা নবীর উপর ঈমান আনার আগে তাদের ধর্মাদর্শে ছিল। নবীকেও তারা নবীর অনুসারীদের সাথে একসাথে সম্বোধন করে নিয়েছে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) অবিশ্বাসীগণ তাদের রসূলদেরকে বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ হতে বহিষ্কৃত করব, অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হতেই হবে।’[1] অতঃপর রসূলদের প্রতিপালক তাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করলেন, ‘সীমালংঘনকারীদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব।[2]
[1] এখানে অনেকে ধর্মাদর্শে ফিরে আসার অনুবাদ করেছেন। কিন্তু নবীগণ আদৌ কুফরী ধর্মাদর্শে ছিলেন না। অতএব ফিরে আসার অনুবাদ না করাই উত্তম। (ফাতহুল কাদীর) (সূরা আ’রাফ ৮৮নং আয়াতের টীকা দ্রঃ)
[2] যেমন আরো কয়েক জায়গাতে মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ. إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ. وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ অর্থাৎ, আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী। (সূরা সাফ্ফাত ১৭১-১৭৩) كَتَبَ اللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي অর্থাৎ, আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছেন যে, আমি এবং আমার রসূল অবশ্যই বিজয়ী হব। (সূরা মুজাদালা ২১)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৪. আর অবশ্যই তাদের পরে আমরা তোমাদেরকে দেশে বাস করাব(১); এটা তার জন্য যে ভয় রাখে আমার সামনে উপস্থিত হওয়ার এবং ভয় রাখে আমার শাস্তির।(২)
(১) অন্যত্রও আল্লাহ তা'আলা এ ওয়াদা করেছেন, যেমন বলেছেনঃ “আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ বাক্য আগেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।” [সূরা আস-সাফফাতঃ ১৭১–১৭৩] আরো বলেছেনঃ “আল্লাহ সিদ্ধান্ত করেছেন, আমি অবশ্যই বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণও নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী [সূরা আল-মুজাদালাহঃ ২১] আরও এসেছে, “যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমরা আমাদের কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি” [সূরা আল-আরাফ: ১৩৭] আরও এসেছে, “আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন তাদের ভূমি, ঘরবাড়ী ও ধন-সম্পদের।” [সূরা আল-আহযাব: ২৭] কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করার এবং আখেরাতে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। [তাবারী]
(২) যদিও আল্লাহর ওয়াদা সবার জন্যই কিন্তু এর থেকে উপকার ও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে শুধু দু’শ্রেণীর লোকেরাই। যারা কিয়ামতের মাঠে তাদের প্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখার কারণে তাদের মধ্যে ভাবান্তর হয় এবং সে ভয়ে সদা কম্পমান থাকে। আর যারা আল্লাহর ওয়াদাকে ভয় করে এবং এটা বিশ্বাস করে যে, তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়িত হবেই। অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ “তারপর যে সীমালংঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়। জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে স্বীয় রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।” [সূরা আন-নাযি আতঃ ৩৭–৪১] আরো বলেছেনঃ “আর যে তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।” [সূরা আর-রাহমানঃ ৪৬] আয়াতের অপর অর্থ হচ্ছে, যারা দুনিয়াতে আমার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সাবধান হয়ে এটা বিশ্বাস করে যে, আমি অবশ্যই তাকে দেখছি, তার কর্মকাণ্ড আমার সার্বিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে, তারাই ওয়াদা ও ধমকি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) তাদের পরে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে দেশে পুনর্বাসিত করব;[1] এটা তাদের জন্য যারা ভয় রাখে আমার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার এবং ভয় রাখে আমার (শাস্তির) হুমকির।’ [2]
[1] এ বিষয়ও মহান আল্লাহ কয়েক জায়গাতে বর্ণনা করেছেন; যেমন, وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ অর্থাৎ, আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে। (সূরা আম্বিয়া ১০৫) (আরো দেখুন সূরা আ‘রাফ: ১২৮-১৩৭) অতএব এই মোতাবেক মহান আল্লাহ নাবী (সাঃ)-এর সাহায্য করেন। তাঁকে বড় দুঃখ-বেদনা নিয়ে মক্কা থেকে বের হতে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কয়েক বছর পরেই তিনি বিজয়ী রূপে মক্কা প্রবেশ করেন এবং তাঁকে বের হতে বাধ্যকারী যালেম মুশরিকরা তাঁর সামনে অবনত মস্তকে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর চোখের ইশারার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তিনি মহান চরিত্রের প্রমাণ দিলেন এবং ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই’ বলে সকলকে ক্ষমা করে দিলেন।
[2] যেমন অন্যত্র বলেছেন, وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى، فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى ‘অর্থাৎ, যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার অবস্থান ক্ষেত্র। (সূরা নাযিআত ৪০-৪১) وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি জান্নাত। (সূরা রাহমান ৪৬)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৫. আর তারা বিজয় কামনা করলো(১) আর প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ মনোরথ হল(২)।
(১) এ আয়াতে কারা বিজয় কামনা করল এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। এক. এখানে রাসূলগণই বিজয় কামনা করেছিলেন। দুই. কাফেরগণ উদ্ধত ও কুফর এবং শির্কী ব্যবস্থাপনার উপর থাকা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য বিজয় কামনা করল। [ফাতহুল কাদীর] এ অর্থের সমর্থনে অন্যত্র বর্ণিত একটি আয়াত পেশ করা যায় যেখানে বলা হয়েছে যে, কাফেররা তাদের দো'আয় বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! এগুলো যদি আপনার কাছ থেকে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করুন কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তদ শাস্তি দিন।” [সূরা আল-আনফালঃ ৩২] আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এটি উভয় সম্প্রদায়েরই কামনা হতে পারে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(২) جبار অর্থ, নিজের মতকে প্রাধান্যদানকারী এবং অপরের উপর নিজের মত চাপানোর প্রয়াস যিনি চালান। হক্ক গ্রহণের মানসিকতা যার নেই। অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা এ ধরনের লোকদের পরিণতি সম্পর্কে বলেছেনঃ “আদেশ করা হবে, তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে, যে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর সংগে অন্য ইলাহ গ্রহণ করত তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর [সূরা ক্কাফঃ ২৪–২৬] তদ্রুপ হাদীসেও এসেছে, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে তখন সে সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ডেকে বলবে, আমাকে প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারী, উদ্ধতের ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।” [তিরমিযীঃ ২৫৭৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) তারা ফায়সালা কামনা করল[1] এবং প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী ব্যর্থকাম হল।
[1] ‘তারা’ বলতে অত্যাচারী মুশরিকরাও হতে পারে। অর্থাৎ, তারা শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ফায়সালা তলব করল যে, এই রসূল যদি সত্য হন, তাহলে হয় আল্লাহ আমাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দিন; যেমন মক্কার মুশরিকরা বলেছিল, اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَاء أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! এই কুরআন যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ কর অথবা আমাদের উপর কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি এনে দাও! (সূরা আনফাল ৩২) আর না হয় যেমন বদর যুদ্ধের সময়েও মক্কার মুশরিকরা এই ধরনেরই কামনা করেছিল, যার উল্লেখ মহান আল্লাহ সূরা আনফালের ১৯নং আয়াতে করেছেন। অথবা ‘তারা’ বলতে রসূলগণ হতে পারেন। অর্থাৎ, তাঁরা আল্লাহর কাছে বিজয় ও সাহায্য চেয়ে দু’আ করলেন, যা মহান আল্লাহ কবুল করলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৬. তার সামনে রয়েছে জাহান্নাম এবং পান করানো হবে গলিত পুঁজ;(১)
(১) আয়াতে এসেছে যে, তাদেরকে صديد পান করানো হবে। صديد শব্দের অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত রয়েছে। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, পুঁজ ও রক্ত। [তাবারী] কাতাদা বলেন, এর দ্বারা কাফেরদের চামড়া ও গোস্ত থেকে যা গলিত হয়ে বের হবে তাই উদ্দেশ্য। [তাবারী] কারও কারও মতে, এর দ্বারা কাফেরদের পুঁজ ও রক্তের সাথে তাদের পেট থেকে যা বের হবে তা মিললে যা হয় তা বুঝানো হয়েছে। [তাবারী; বাগভী; ফাতহুল কাদীর] মোটকথা, এটা এমন খারাপ পানীয় যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। ইবনে কাসীর রাহেমাহুল্লাহ বলেন, জাহান্নামবাসীদের পানীয় দু’ধরনের, হামীম অথবা গাসসাক, তন্মধ্যে হামীম হলো সবচেয়ে গরম।
আর গাসসাক হলো সবচেয়ে ঠান্ডা ও ময়লা দুৰ্গন্ধযুক্ত গলিত পানীয়। এ আয়াতের সমার্থে অন্যত্র এসেছে, “এটা সীমালংঘনকারীদের জন্য কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি। [সূরা ছোয়াদঃ ৫৭–৫৮] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫] আরো বলেছেন “তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট আশ্রয়! [সূরা আল-কাহফঃ ২৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) তাদের প্রত্যেকের সম্মুখে রয়েছে জাহান্নাম এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে পূঁজমিশ্রিত পানি।[1]
[1] صَدِيْدٌ জাহান্নামীদের শরীর ও চামড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। কতিপয় হাদীসে বলা হয়েছে, (عُصَارَةُ أهْلِ النَّارِ) (জাহান্নামীদের দেহ-নিঃসৃত রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি) এবং কতিপয় হাদীসে আছে যে, উক্ত পুঁজ ও রক্ত এত গরম ও ফুটন্ত অবস্থায় হবে যে, তাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই তাদের মুখমন্ডলের চামড়া ঝলসে খসে পড়বে এবং এর এক ঢোক পান করতেই তাদের পেটের নাড়ীভুঁড়ি পায়খানা-দ্বার দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৭. যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গিলবে এবং তা গিলা প্রায় সহজ হবে না। সকল স্থান থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু(১) অথচ তার মৃত্যু ঘটবে না(২)। আর এরপরও রয়েছে কঠোর শাস্তি।(৩)
(১) ইবরাহীম আত-তাইমী বলেন, সবদিক থেকে মৃত্যু আসার অর্থ, শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে মৃত্যুর কষ্ট আসতে থাকবে। [তাবারী]
(২) আল্লাহ বলেন, “এবং তাদের জন্য থাকবে লোহার মুগুর।” [সূরা আল-হাজ্জঃ ২১], তারা সেটা গিলতে চেষ্টা করলেও সেটার দুর্গন্ধ, তিক্ততা, ময়লা আবর্জনা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা গরম হওয়ার কারণে সহজে গিলতে সমর্থ হবে না। এভাবে তার শাস্তি চলতেই থাকবে, তার সমস্ত শরীরে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করবে কিন্তু মৃত্যু তার আসবে না। তার অগ্র, পশ্চাত, উপর বা নীচ সবদিক থেকে তার শাস্তি এমন হবে যে, এর সবগুলিই তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ “কিন্তু যারা কুফরী করে তাদের জন্য আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর আদেশ দেয়া হবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না।” [সূরা ফাতিরঃ ৩৬]
(৩) অর্থাৎ এটাই তাদের শাস্তির শেষ নয়। এর পরও তাদের জন্য আরো ভয়াবহ, কঠোর ও মারাত্মক শাস্তি অপেক্ষা করছে। [ইবন কাসীর] অন্যত্র বলেছেনঃ “যাক্কুম গাছ, যালিমদের জন্য আমি এটা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ, এ গাছ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। তারা এটা থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে। তার উপর তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্বলিত আগুনের দিকে [সূরা আস-সাফফাতঃ ৬২–৬৮]
এভাবেই তারা কখনো যাক্কুম গাছ থেকে খাবে, আবার কখনো তারা ফুটন্ত পানি পান করবে যা তাদের পেটের নাড়ীভুড়ি ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। আবার কখনো তাদেরকে জাহান্নামের কঠোর শাস্তির দিকে ফেরত পাঠানো হবে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে তাদের শাস্তি হতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এটাই সে জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত, ওরা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে।” [সূরা আর-রাহমানঃ ৪৩–৪৪] আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে—পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মত, তাদের পেটে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত। তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে, তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও- এবং বলা হবে, আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত! এ তো তা-ই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।” [সূরা আদ-দোখানঃ ৪৩–৪৯]
আরো বলেনঃ “আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! ওরা থাকবে অত্যন্ত উষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে, কালোবর্ণের ধোয়ার ছায়ায়, যা শীতল নয়, আরামদায়কও নয়। [সুরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৪১–৪৪] আরো বলেনঃ “আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম পরিণাম— জাহান্নাম, সেখানে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! এটা সীমালংঘনকারীদের জন্য। কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।” [সূরা ছোয়াদঃ ৫৫–৫৮]।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) যা সে অতি কষ্টে এক ঢোক এক ঢোক করে গিলতে থাকবে এবং তা গিলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু-যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না[1] এবং তার পরে থাকবে কঠোর শাস্তি।
[1] অর্থাৎ, বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি আস্বাদন করতে করতে তারা মৃত্যু-কামনা করবে, কিন্তু সেথায় মৃত্যু কোথায়? সেখানে তো তাদের এই ধরনের অবিরাম শাস্তি হতেই থাকবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৮. যারা তাদের রবের সাথে কুফর করে তাদের উপমা হল, তাদের কাজগুলো ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়(১)। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি।
(১) উদ্দেশ্য এই যে, কাফেরদের ক্রিয়াকর্ম বাহ্যতঃ সৎ হলেও তা আল্লাহ তা'আলার কাছে গ্রহণীয় নয়। তাই সব অর্থহীন ও অকেজো। তারা দুনিয়াতে যা করেছে সবই বৃথা ও নিষ্ফল হবে। অন্যত্র আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ “আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, তারপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ২৩] “এ পার্থিব জীবনে যা তারা ব্যয় করে তার দৃষ্টান্ত হিমশীতল বায়ু, ওটা যে জাতি নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে তাদের শষ্যক্ষেত্রকে আঘাত করে ও বিনষ্ট করে।” [সূরা আলে ইমরানঃ ১১৭] “হে মু’মিনগণ! দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফল করো না যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। তার উপমা একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, তারপর ওটার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত ওটাকে পরিস্কার করে রেখে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৬৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদের বিবরণ এই যে, তাদের কর্মাবলী ভষ্মের মত যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়।[1]যা তারা উপার্জন করে, তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না; এটাই তো ঘোর বিভ্রান্তি।
[1] কিয়ামতের দিন কাফেরদের ভালো কর্মসমূহেরও এই অবস্থা হবে যে তারা তার কোন প্রতিফল ও নেকী পাবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১৯. আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীন যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন?(১) তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন,
(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে স্বশরীরে আবার পুনরায় নিয়ে আসতে তিনি যে সক্ষম সেটার পক্ষে দলীল পেশ করে বলছেন যে, মানুষ তো কোন ব্যাপার নয়। যে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা কোন ব্যাপারই নয় কারণ, মানুষের সৃষ্টির চেয়ে আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা বড় ব্যাপার। [ইবন কাসীর]
আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও এটাকে তুলে ধরেছেন। যেমনঃ তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এসবের সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তি বোধ করেননি, তিনি মৃতের জীবন দান করতেও সক্ষম? বস্তুত তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। [সূরা আল-আহকাফঃ ৩৩] “মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। এবং সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি কথা ভুলে যায়। সে বলে, কে অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে যখন তা পচে গলে যাবে? বলুন, তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত কর। যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তার ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছে করেন, তিনি বলেন, হও, ফলে তা হয়ে যায়। অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যার হাতেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব; আর তারই কাছে তোমরা ফিরে যাবে [সূরা ইয়াসীনঃ ৭৭–৭৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যথার্থই সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২০. আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়।(১)
(১) অর্থাৎ তোমাদেরকে ধ্বংস করে সেখানে অন্যদের প্রতিষ্ঠিত করা তার জন্য কোন ব্যাপারই নয়। কোন বড় ব্যাপার নয় আবার কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। বরং এটা তার জন্য সহজ। যদি তোমরা তাঁর নির্দেশ অমান্য কর, তখন তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস করে তোমাদের স্থলে অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন করবেন। [ইবন কাসীর] অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ “হে মানুষ! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী; কিন্তু আল্লাহ, তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসার যোগ্য। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসৃত করতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি নিয়ে আসতে পারেন।” [সূরা ফাতিরঃ ১৫–১৭] “যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন, তারা তোমাদের মত হবে না।” [সূরা মুহাম্মাদঃ ৩৮] “হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে।” |সূরা আল-মায়িদাহঃ ৫৪] “হে মানুষ। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসারিত করতে ও অপরকে আনতে পারেন; আল্লাহ তা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম [সূরা আন-নিসাঃ ১৩৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) আর এটা আল্লাহর জন্য আদৌ কঠিন নয়। [1]
[1] অর্থাৎ, তোমরা যদি অবাধ্যতা হতে বিরত না হও, তাহলে মহান আল্লাহ এটা করতে সক্ষম যে, তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদের স্থলে নতুন সৃষ্টিকুল সৃষ্টি করবেন। উক্ত বিষয়টিই মহান আল্লাহ সূরা ফাতির ১৫-১৭, সূরা মুহাম্মাদ ৩৮, সূরা মাইদা ৫৪ এবং সূরা নিসার ১৩৩নং আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান