بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১০/ ইউনুস | Yunus | سورة يونس আয়াতঃ ১০৯ মাক্কী
১০ : ১১ وَ لَوۡ یُعَجِّلُ اللّٰهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسۡتِعۡجَالَهُمۡ بِالۡخَیۡرِ لَقُضِیَ اِلَیۡهِمۡ اَجَلُهُمۡ ؕ فَنَذَرُ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا فِیۡ طُغۡیَانِهِمۡ یَعۡمَهُوۡنَ ﴿۱۱﴾
و لو یعجل الله للناس الشر استعجالهم بالخیر لقضی الیهم اجلهم فنذر الذین لا یرجون لقآءنا فی طغیانهم یعمهون ﴿۱۱﴾
• আর আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ (প্রার্থনায় সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করতেন যেভাবে তিনি তাদের কল্যাণ (প্রার্থনায় সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, তাহলে অবশ্যই তাদের সময় ফুরিয়ে যেত। সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে ঘুরতে ছেড়ে দেই।

-আল-বায়ান

• মানুষের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ করার ব্যাপারে দ্রুততা অবলম্বন করতেন যতটা দ্রুততার সঙ্গে তারা (দুনিয়ার) কল্যাণ পেতে চায়, তবে তাদের কাজ করার অবকাশ কবেই না খতম করে দেয়া হত, (কিন্তু আল্লাহ তা করেন না)। কাজেই যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর অবকাশ দেই।

-তাইসিরুল

• আর আল্লাহ যদি মানুষের উপর ত্বরিত ক্ষতি সাধন করতেন, যেমন তারা ত্বরিত উপকার লাভ করতে আগ্রহ রাখে, তাহলে তাদের অঙ্গীকার কবেই পূর্ণ হয়ে যেত! অনন্তর আমি সেই লোকদেরকে, যারা আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তা করেনা, ছেড়ে দিই তাদের অবস্থার উপর, যেন তারা তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।

-মুজিবুর রহমান

• And if Allah was to hasten for the people the evil [they invoke] as He hastens for them the good, their term would have been ended for them. But We leave the ones who do not expect the meeting with Us, in their transgression, wandering blindly

-Sahih International

১১. আর আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণে (সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, যেভাবে তাদের কল্যাণে (সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যুর সময় এসে যেত।(১)। কাজেই যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাদেরকে আমরা তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরতে ছেড়ে দেই।

(১) এ আয়াতে الشر বা খারাপ বস্তু কি? এ নিয়ে মতভেদ আছে। এক. কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে খারাপ বস্তু বলতে নদর ইবনে হারেস নামীয় কাফেরের বদদোআ বোঝানো হয়েছে। যাতে সে বলেছিলঃ হে আল্লাহ! যদি মুহাম্মাদের দ্বীন সত্য হয়, তবে আমার উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করে আমাকে ধ্বংস করে দিন। [বাগভী] এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই ক্ষমতাশীল, প্রতিশ্রুত এ আযাব এক্ষণেই নাযিল করতে পারেন। কিন্তু তিনি তার মহান হেকমত ও দয়া করুণার দরুন এ মূৰ্খরা নিজেদের জন্য যে বদদোআ করে এবং বিপদ ও অকল্যাণ কামনা করে তা নাযিল করেন না।

যদি আল্লাহ তা'আলা তাদের বদদোআগুলোও তেমনিভাবে যথাশীঘ্ৰ কবুল করে নিতেন, যেভাবে তাদের ভাল দোআগুলো কবুল করেন, তাহলে এরা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত। দুই. অধিকাংশ মুফাসসিরীনের মতে এক্ষেত্রে বদদোআর মর্ম এই যে, কোন কোন সময় কেউ কেউ রাগের বশবর্তী হয়ে নিজের সন্তান-সন্ততির কিংবা অর্থ-সম্পদ ধ্বংসের বদদোআ করে বসে কিংবা বস্তুসামগ্রীর প্রতি অভিসম্পাত করতে আরম্ভ করে- আল্লাহ তা'আলা স্বীয় করুণা ও মহানুভবতাবশতঃ সহসাই এসব দোআ কবুল করেন না। [তাবারী; কুরতুবী; বাগভী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

এতে প্রতীয়মান হয় যে, কল্যাণ ও মঙ্গলের শুভ দোআ-প্রার্থনার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার রীতি হচ্ছে যে, অধিকাংশ সময় তিনি সেগুলো শীঘ্ৰ কবুল করে নেন। অবশ্য কখনো কখনো হেকমত ও কল্যাণের কারণে কবুল না হওয়া এর পরিপন্থী নয়। কিন্তু মানুষ যে কখনো নিজেদের অজান্তে এবং কোন দুঃখ-কষ্ট ও রাগের বশে নিজের কিংবা নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য বদদোআ করে বসে, অথবা আখেরাতের প্রতি অস্বীকৃতির দরুন আযাবকে প্রহসন মনে করে নিজের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকে সেগুলো তিনি সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন না; বরং অবকাশ দেন, যাতে অস্বীকারকারীরা বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করে নিজেদের অস্বীকৃতি থেকে ফিরে আসার সুযোগ পায় এবং কোন সাময়িক দুঃখকষ্ট, রাগ-রোষ কিংবা যদি মনোবেদনার কারণে বদদোআ করে বসে, তাহলে সে যেন নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ, ভাল-মন্দ লক্ষ্য করে, তার পরিণতি বিবেচনা করে তা থেকে বিরত হবার অবকাশ পেতে পারে।

তারপরও কোন কোন সময় এমন কবুলিয়ত বা মঞ্জুরীর সময় আসে, যখন মানুষের মুখ থেকে যে কোন কথা বের হয়, তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে যায়। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ নিজের সন্তান-সন্ততি ও অর্থ-সম্পদের জন্য কখনো বদদোআ করো না। এমন যেন না হয় যে, সে সময়টি হয় মঞ্জুরীর সময় এবং দোআ সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়। [আবু দাউদঃ ১৫৩২, মুসলিমঃ ৩০০৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) যদি আল্লাহ মানুষের অকল্যাণ তরান্বিত করতেন যেভাবে তারা তাদের কল্যাণ তরান্বিত করতে আগ্রহী, তাহলে অবশ্যই তারা ধ্বংস হয়ে যেত।[1] সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে ছেড়ে দিই।

[1] এর এক অর্থ এই যে, যেমন মানুষ কোন উত্তম বস্তু অন্বেষণে তাড়াতাড়ি করে, অনুরূপ তারা শাস্তি অন্বেষণেও তাড়াতাড়ি করে, তারা পয়গম্বরদেরকে বলে যে, ‘যদি তোমরা সত্যই পয়গম্বর হও, তাহলে সেই শাস্তি আনয়ন কর, যা থেকে তোমরা আমাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন করছ।’ আল্লাহ তাআলা বলেন যে, আমি যদি তাদের চাওয়া অনুযায়ী শীঘ্র শাস্তি প্রেরণ করতাম, তবে তারা অনেক পূর্বে মৃত্যু ও ধ্বংস কবলিত হয়ে যেত। কিন্তু আমি ঢিল দিয়ে তাদেরকে পূর্ণ সুযোগ দিই। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, মানুষ যেমন নিজের জন্য ভালাই ও মঙ্গলের দু’আ করে, যা আমি মঞ্জুর করি। অনুরপ মানুষ যখন রাগান্বিত অবস্থায় বা কষ্টে থাকে, তখন নিজের জন্য ও আপন সন্তান-সন্ততি ইত্যাদির জন্য বদ্দুআ করে, তা আমি এই জন্য ছেড়ে দিই যে, সে তো মুখে ধ্বংস চাচ্ছে, কিন্তু তার অন্তরে সে ইচ্ছা নেই। কিন্তু যদি আমি মানুষের বদ্দুআ অনুযায়ী তাদেরকে সাথে সাথে ধ্বংস করতে আরম্ভ করতাম, তবে অতি সতত্ত্বর এরা মৃত্যু ও ধ্বংস কবলিত হয়ে যেত। এই জন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘তোমরা নিজেদের উপর, নিজেদের সন্তানের উপর এবং নিজেদের সম্পদ ও কারবারের উপর বদ্দুআ করো না। এমন না হয়ে যায় যে, তোমাদের বদ্দুআ এমন সময়ে হয়ে যায়, যে সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে দু’আ কবুল করা হয়, অতঃপর তিনি তোমাদের সে বদ্দুআ কবুল করে নেন।’’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১২ وَ اِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِهٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآئِمًا ۚ فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَاَنۡ لَّمۡ یَدۡعُنَاۤ اِلٰی ضُرٍّ مَّسَّهٗ ؕ كَذٰلِكَ زُیِّنَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ مَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۲﴾
و اذا مس الانسان الضر دعانا لجنبهٖ او قاعدا او قآئما فلما كشفنا عنه ضرهٗ مر كان لم یدعنا الی ضر مسهٗ كذلك زین للمسرفین ما كانوا یعملون ﴿۱۲﴾
• আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত তা শোভিত করে দেয়া হয়েছে।

-আল-বায়ান

• মানুষকে যখন দুঃখ ক্লেশ স্পর্শ করে, তখন তারা শুয়ে, বসে ও দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ ক্লেশ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলে যায়, মনে হয় যেন তাকে দুঃখ-ক্লেশ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে কখনই ডাকেনি। এভাবেই যারা সীমালঙ্ঘন করে তাদের জন্য তাদের কাজকর্মগুলোকে চাকচিক্যময় বানিয়ে দেয়া হয়েছে।

-তাইসিরুল

• আর যখন মানুষকে কোন ক্লেশ স্পর্শ করে তখন আমাকে ডাকতে থাকে শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়েও; অতঃপর যখন আমি তার সেই কষ্ট দূর করে দিই তখন সে নিজের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। যে কষ্ট তাকে স্পর্শ করেছিল তা মোচন করার জন্য সে যেন আমাকে কখনও ডাকেইনি; এই সীমা লংঘনকারীদের কার্যকলাপ তাদের কাছে এইরূপই পছন্দনীয় মনে হয়।

-মুজিবুর রহমান

• And when affliction touches man, he calls upon Us, whether lying on his side or sitting or standing; but when We remove from him his affliction, he continues [in disobedience] as if he had never called upon Us to [remove] an affliction that touched him. Thus is made pleasing to the transgressors that which they have been doing

-Sahih International

১২. আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ডেকে থাকে(১) অতঃপর আমরা যখন তার দুঃখ-দৈন্য দূর করি, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে যেন তাকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর তার জন্য সে আমাদেরকে ডাকেইনি। এভাবেই সীমালংঘনকারীদের কাজ তাদের কাছে শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে।

(১) এ আয়াতে সাধারণ মানুষের এক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তা হলো এই যে, সাধারণ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় এরা আল্লাহ ও আখেরাতের বিরুদ্ধে যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হয়, অন্যান্যদেরকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে এবং তাদেরই কাছে উদ্দেশ্য সিদ্ধির আশা করে, কিন্তু যখন কোন বিপদে পড়ে তখন এরা নিজেরাও আল্লাহ ব্যতীত সমস্ত লক্ষ্যস্থলের প্রতি নিরাশ হয়ে গিয়ে শুধু আল্লাহকেই ডাকতে আরম্ভ করে। শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় একমাত্র তাকেই ডাকতে বাধ্য হয়। [সা’দী] অথচ তারই সাথে তাদের অনুগ্রহ বিমুখতার অবস্থা হল এই যে, যখনই আল্লাহ্ তা'আলা তাদের বিপদাপদ দূর করে দেন, তখনই আল্লাহ্ তা'আলার ব্যাপারে এমন মুক্ত হয়ে যায়, যেন কখনো তাঁকে ডাকেইনি, তার কাছে যেন কোন বাসনাই প্রার্থনা করেনি। এ বিষয়টি আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করেছেন। যেমন, সূরা আয-যুমারঃ ৮, আয-যুমারঃ ৪৯, আল-ইসরাঃ ৮৩, ফুসসিলাতঃ ৫১৷

কিন্তু যাদের হেদায়াত নসীব হয়েছে এবং ঈমান এনেছে, তারা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ রাখে। আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে সূরা হুদের ১১ নং আয়াতে ব্যতিক্রম বলে ঘোষণা করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনের কাজ-কারবার দেখে আশ্চৰ্য্য হতে হয়, আল্লাহ তার জন্য যা কিছুই ঘটাক সেটাই তার জন্য কল্যাণের রূপ নেয়। যদি তার কোন ক্ষতি বা দুঃখজনক কিছু ঘটে তখন সে তাতে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোন খুশী বা লাভজনক কিছু হয় তাতে সে কৃতজ্ঞ হয়, শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। এটা একমাত্র মুমিনই পেতে পারে, আর কারো পক্ষে নয়’। [মুসলিমঃ ২৯৯৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) আর যখন মানুষকে কোন ক্লেশ স্পর্শ করে, তখন শুয়ে, বসে অথবা দাঁড়িয়েও আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর যখন আমি তার সেই কষ্ট ওর নিকট হতে দূর করে দিই, তখন সে নিজের পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে; যেন তাকে যে কষ্ট স্পর্শ করেছিল তা মোচন করার জন্য আমাকে ডাকেইনি;[1] এইভাবেই সীমালংঘনকারীদের কার্যকলাপ তাদের কাছে শোভনীয় করা হয়েছে। [2]

 [1] এটা মানুষের ঐ অবস্থার বিবরণ, যা অধিকাংশ মানুষের অভ্যাস। বরং অনেক আল্লাহতে বিশ্বাসী মানুষও এই শিথিলতার শিকার হয়ে থাকে। আর তা এই যে, মসীবতের সময় খুব ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ করা হয়, দু’আ করা হয়, তওবা-ইস্তিগফারের যথাযথ খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলা মসীবতের সেই কঠিন সময় পার করে দেন, তখন আল্লাহর দরবারে দু’আ করা থেকে গাফেল হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাআলা তাদের দু’আ কবুল করে তাদেরকে যে বালা-মসীবত থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তওফীক তাদের ভাগ্যে জোটে না।

[2] এই আমল শোভন করা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ অথবা অবকাশস্বরূপ হতে পারে। শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা দ্বারাও হতে পারে। আবার মানুষের ঐ আত্মার পক্ষ থেকেও হতে পারে, যে আত্মা মানুষকে নোংরা কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

(يوسف-৫৩) إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ বস্তুতঃ সীমালংঘনকারীরাই এর শিকার হয়। এখানে অর্থ এই দাঁড়ালো যে, দু’আ থেকে বিমুখতা, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা থেকে ঔদাস্য এবং প্রবৃত্তিপূজা ইত্যাদি কর্মকে তাদের জন্য সুশোভিত করে দেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৩ وَ لَقَدۡ اَهۡلَكۡنَا الۡقُرُوۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَمَّا ظَلَمُوۡا ۙ وَ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ مَا كَانُوۡا لِیُؤۡمِنُوۡا ؕ كَذٰلِكَ نَجۡزِی الۡقَوۡمَ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۳﴾
و لقد اهلكنا القرون من قبلكم لما ظلموا و جآءتهم رسلهم بالبینت و ما كانوا لیؤمنوا كذلك نجزی القوم المجرمین ﴿۱۳﴾
• আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছে। আর তাদের নিকট তাদের রাসূলগণ প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল, কিন্তু তারা ঈমান আনার ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী কওমকে শাস্তি প্রদান করি।

-আল-বায়ান

• তোমাদের পূর্বেকার বহু জনগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের কাছে রসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা আদৌ ঈমান আনেনি। এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে (পাপের) প্রতিদান দিয়ে থাকি।

-তাইসিরুল

• আমি তোমাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছিল, অথচ তাদের নিকট তাদের রাসূলগণও প্রমাণাদীসহ আগমন করেছিল, কিন্তু কিছুতেই তারা ঈমান আনলনা। আর আমি অপরাধীদেরকে এই রূপেই শাস্তি দিয়ে থাকি।

-মুজিবুর রহমান

• And We had already destroyed generations before you when they wronged, and their messengers had come to them with clear proofs, but they were not to believe. Thus do We recompense the criminal people

-Sahih International

১৩. আর অবশ্যই আমরা তোমাদের আগে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি যখন তারা যুলুম করেছিল। আর তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এসেছিল, কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমরা অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।(১)

(১) অর্থাৎ কেউ যেন আল্লাহ্ তা'আলার অবকাশ দানের কারণে এমন ধারণা করে না বসে যে, পৃথিবীতে আযাব আসতেই পারে না। বিগত জাতিসমূহের ইতিহাস এবং তাদের ঔদ্ধত্য ও কৃতঘ্নতার সাক্ষীস্বরূপ বিভিন্ন রকম আযাব এ পৃথিবীতেই এসে গেছে। এটা হচ্ছে জাতিসমূহের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি। [সা’দী] আল্লাহ্ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোআ কবুল করে নিয়েছেন যে, কোন সাধারণ ব্যাপক আযাব এ উম্মতের উপর আসবে না। ফলে আল্লাহ তা'আলার এহেন করুণা, অনুগ্রহ এসব লোককে এমন নির্ভয় করে দিয়েছে যে, তারা একান্ত দুঃসাহসের সাথে আল্লাহর আযাবকে আমন্ত্রণ জানাতে এবং তার দাবী করতে তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহ্ তা'আলার আযাব সম্পর্কে এ নিশ্চিন্ততা কোন অবস্থাতেই তাদের জন্য সমীচীন ও কল্যাণকর নয়। কারণ, গোটা উম্মত এবং সমগ্র বিশ্বের উপর ব্যাপক আযাব না আসলেও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের উপর আযাব নেমে আসা অসম্ভব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) আমি অবশ্যই তোমাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা সীমালংঘন করেছিল। তাদের নিকট তাদের রসূলগণও প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল; কিন্তু তারা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমি অপরাধীদেরকে এইরূপেই শাস্তি দিয়ে থাকি। [1]

[1] এটা মক্কার কাফেরদের জন্য সতর্কবাণী যে, পূর্ব জাতির ন্যায় তোমরাও ধ্বংস হতে পার।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৪ ثُمَّ جَعَلۡنٰكُمۡ خَلٰٓئِفَ فِی الۡاَرۡضِ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ لِنَنۡظُرَ كَیۡفَ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۴﴾
ثم جعلنكم خلٓئف فی الارض من بعدهم لننظر كیف تعملون ﴿۱۴﴾
• তারপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পরে স্থলাভিষিক্ত করেছি, যাতে আমি দেখি তোমরা কেমন আমল কর।

-আল-বায়ান

• অতঃপর তাদের পর আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছি এটা দেখার জন্য যে, তোমরা কী রকম ‘আমাল কর।

-তাইসিরুল

• অতঃপর আমি তাদের স্থলে তোমাদেরকে তাদের পর ভূমন্ডলে আবাদ করলাম, যেন আমি প্রত্যক্ষ করি যে, তোমরা কি রূপ কাজ কর।

-মুজিবুর রহমান

• Then We made you successors in the land after them so that We may observe how you will do.

-Sahih International

১৪. তারপর আমরা তোমাদেরকে তাদের পর যমীনে স্থলাভিষিক্ত করেছি, তোমরা কিরূপ কাজ কর তা দেখার জন্য।(১)

(১) অর্থাৎ অতঃপর পূর্ববর্তী জাতি-সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পর আমি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছি। এই মর্যাদা ও সম্মান দানের পিছনে আসল উদ্দেশ্য হলো তোমাদের পরীক্ষা নেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “দুনিয়া হলো সুফলা সুমিষ্ট জিনিস, আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধিত্ব করাবেন। এতে করে তিনি দেখতে চান তোমাদের আমল কেমন? সুতরাং তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন কর এবং মহিলাদের ব্যাপারেও তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা বনী ইসরাঈলদের প্রথম পরীক্ষা ছিল মহিলাদের দ্বারা”। [মুসলিমঃ ২৭৪২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) অতঃপর আমি তাদের স্থলে তোমাদেরকে তাদের পর ভূমন্ডলে আবাদ করলাম,[1] যেন আমি প্রত্যক্ষ করি যে, তোমরা কিরূপ কাজ কর।

[1] خلائف, خليفة এর বহুবচন। যার অর্থ হল, পূর্ব জাতির প্রতিনিধি। অথবা এক অপরের প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্ত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৫ وَ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ اٰیَاتُنَا بَیِّنٰتٍ ۙ قَالَ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا ائۡتِ بِقُرۡاٰنٍ غَیۡرِ هٰذَاۤ اَوۡ بَدِّلۡهُ ؕ قُلۡ مَا یَكُوۡنُ لِیۡۤ اَنۡ اُبَدِّلَهٗ مِنۡ تِلۡقَآیِٔ نَفۡسِیۡ ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ ۚ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اِنۡ عَصَیۡتُ رَبِّیۡ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۱۵﴾
و اذا تتلی علیهم ایاتنا بینت قال الذین لا یرجون لقآءنا ائت بقران غیر هذا او بدله قل ما یكون لی ان ابدلهٗ من تلقآیٔ نفسی ان اتبع الا ما یوحی الی انی اخاف ان عصیت ربی عذاب یوم عظیم ﴿۱۵﴾
• আর যখন তাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টরূপে পাঠ করা হয়, তখন, যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, তারা বলে, ‘এটি ছাড়া অন্য কুরআন নিয়ে এসো। অথবা একে বদলাও’। বল, ‘আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন পরিবর্তনের অধিকার নেই। আমিতো শুধু আমার প্রতি অবতীর্ণ ওহীর অনুসরণ করি। নিশ্চয় আমি যদি রবের অবাধ্য হই তবে ভয় করি কঠিন দিনের আযাবের’।

-আল-বায়ান

• যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতগুলো তাদের কাছে পঠিত হয়, তখন যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না তারা বলে, ‘এটা বাদে অন্য আরেকটা কুরআন আন কিংবা ওটাকে বদলাও’। বল, ‘‘আমার নিজের ইচ্ছেমত ওটা বদলানো আমার কাজ নয়, আমার কাছে যা ওয়াহী করা হয় আমি কেবল সেটারই অনুসরণ করে থাকি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে এক অতি বড় বিভীষিকার দিনে আমি শাস্তির ভয় করি’’।

-তাইসিরুল

• আর যখন তাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় - যা অতি স্পষ্ট, তখন ঐ সব লোক, যাদের আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তা নেই - এইরূপ বলেঃ এটা ছাড়া অন্য কোন কুরআন আনয়ন করুন অথবা এতেই কিছু পরিবর্তন করে দিন। বলঃ আমার দ্বারা ইহা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আমিতো শুধুমাত্র উহারই অনুসরণ করব যা অহীযোগে আমার কাছে পৌঁছেছে। আমি যদি আমার রবের নাফরমানী করি তাহলে আমি এক অতি ভীষণ দিনের শাস্তির আশংকা রাখি।

-মুজিবুর রহমান

• And when Our verses are recited to them as clear evidences, those who do not expect the meeting with Us say, "Bring us a Qur'an other than this or change it." Say, [O Muhammad], "It is not for me to change it on my own accord. I only follow what is revealed to me. Indeed I fear, if I should disobey my Lord, the punishment of a tremendous Day."

-Sahih International

১৫. আর যখন আমাদের আয়াত, যা সুস্পষ্ট, তাদের কাছে পাঠ করা হয় তখন যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না(১) তারা বলে, অন্য এক কুরআন আন এটা ছাড়া, বা এটাকে বদলাও। বলুন, নিজ থেকে এটা বদলানো আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী হয়, আমি শুধু তারই অনুসরণ করি(২)। আমি আমার রবের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই মহা দিনের শাস্তির আশংকা করি।

(১) এ আয়াতে আখেরাত অস্বীকারকারীদের একটি ভ্রান্ত ধারণা এবং অন্যায় আবদারের খণ্ডন করা হয়েছে। এসব লোক আল্লাহ তা'আলার ওহী ও রেসালাত সম্পর্কিত কোন পরিচয় জানত না। যে কুরআনুল কারীম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে পৌছেছে, তার সম্পর্কে এদের ধারণা ছিল এই যে, এটি স্বয়ং তারই কালাম, তারই রচনা। এ ধারণার প্রেক্ষিতেই তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দাবী জানায় যে, কুরআন এটি তো আমাদের বিশ্বাসের বিরোধী; যে মূর্তি-বিগ্রহকে আমাদের পিতা-পিতামহ সততঃ সম্মান করে এসেছে, কুরআন সে সমুদয়কে বাতিল ও পরিতাজ্য সাব্যস্ত করে। তদুপরি কুরআন আমাদের বলে যে, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হতে হবে এবং সেখানে হিসাব-নিকাশ হবে। এসব বিষয় আমাদের বুঝে আসে না। আমরা এসব মানতে রাযী নই। সুতরাং হয় আপনি এ কুরআনের পরিবর্তে অন্য কুরআন তৈরী করে দিন যাতে এসব বিষয় থাকবে না, আর না হয় অন্ততঃ এতেই সংশোধন করে সে বিষয়গুলো বাদ দিয়ে দিন। [দেখুন, বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তারা আরও চাচ্ছিল যে, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করে দিন। [তাবারী; কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হেদায়াত দান করেছেন যে, আপনি তাদের বলে দিনঃ এটি আমার কালামও নয় এবং নিজের ইচ্ছামত আমি এতে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধনও করতে পারি না। আমি তো শুধুমাত্র আল্লাহর ওহীর তাবেদার। আমি আমার ইচ্ছামত এতে যদি সামান্যতম পরিবর্তনও করি, তাহলে অতি কঠিন গোনাহগার হয়ে পড়ব এবং নাফরমানদের জন্য যে আযাব নির্ধারিত রয়েছে, আমি তার ভয় করি। কাজেই আমার পক্ষে এমনটি অসম্ভব। [ফাতহুল কাদীর]

(২) এটি হচ্ছে ওপরের দুটি কথার জবাব। এখানে একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, আমি এ কিতাবের রচয়িতা নই বরং অহীর মাধ্যমে এটি আমার কাছে এসেছে এবং এর মধ্যে কোন রকম রদবদলের অধিকারও আমার নেই। আর তাছাড়া এ ব্যাপারে কোন প্রকার সমঝোতার সামান্যতম সম্ভাবনাও নেই। যদি গ্রহণ করতে হয় তাহলে এ সমগ্র দীনকে হুবহু গ্রহণ করতে হবে, নয়তো পুরোপুরি রদ করে দিতে হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) আর যখন তাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে পাঠ করা হয়,[1] তখন যারা আমার সাক্ষাতের ভয় করে না, তারা বলে, ‘এটা ছাড়া অন্য কোন কুরআন আনয়ন কর অথবা এতে পরিবর্তন কর।’[2] তুমি বলে দাও, ‘আমার জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আমি নিজের পক্ষ হতে এতে পরিবর্তন করি।[3] আমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ হয়, আমি তো কেবল তারই অনুসরণ করি। যদি আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্য হই, তাহলে আমি এক অতি ভীষণ দিনের শাস্তির আশংকা করি।’ [4]

[1] অর্থাৎ, এমন আয়াত যার দ্বারা আল্লাহর উপাস্যতত্ত্ব ও একতত্ত্ববাদকে বুঝা যায়।

[2] অর্থ এই যে, এই কুরআন মাজীদের পরিবর্তে অন্য কুরআন আনয়ন কর অথবা এই কুরআনে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবর্তন সাধন কর।

[3] অর্থাৎ, দুটো প্রস্তাবই মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, যেহেতু এতে আমার কোন এখতিয়ার নেই।

[4] এটা পূর্ব কথার তাকীদ। আমি তো শুধু সেই কথার অনুসারী, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার প্রতি অবতীর্ণ হয়। তাতে কিছু রদবদল বা কমবেশি করলে কিয়ামতের দিনের শাস্তি থেকে আমি রক্ষা পাব না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৬ قُلۡ لَّوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا تَلَوۡتُهٗ عَلَیۡكُمۡ وَ لَاۤ اَدۡرٰىكُمۡ بِهٖ ۫ۖ فَقَدۡ لَبِثۡتُ فِیۡكُمۡ عُمُرًا مِّنۡ قَبۡلِهٖ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۶﴾
قل لو شآء الله ما تلوتهٗ علیكم و لا ادرىكم بهٖ فقد لبثت فیكم عمرا من قبلهٖ افلا تعقلون ﴿۱۶﴾
• বল, ‘যদি আল্লাহ চাইতেন, আমি তোমাদের উপর তা পাঠ করতাম না। আর তিনি তোমাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করতেন না। কেননা, ইতঃপূর্বে আমি তোমাদের মধ্যে দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করেছি। তবে কি তোমরা বুঝ না’?

-আল-বায়ান

• বল, ‘‘আল্লাহর ইচ্ছে হলে আমি তোমাদের কাছে তা তিলাওয়াত করতাম না, আর আল্লাহও তোমাদেরকে তার খবর দিতেন না। আমি তো এর পূর্বে একটা দীর্ঘ সময় তোমাদের মাঝে অতিবাহিত করেছি, তা সত্ত্বেও তোমরা কি বুঝবে না?

-তাইসিরুল

• তুমি বলে দাওঃ যদি আল্লাহর ইচ্ছা হত তাহলে, না আমি তোমাদেরকে এটা পাঠ করে শোনাতাম আর না আল্লাহ তোমাদেরকে ওটা জানাতেন। কেননা আমি এর পূর্বেওতো জীবনের এক দীর্ঘ সময় তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছি; তাহলে কি তোমরা এতটুকু জ্ঞান রাখনা?

-মুজিবুর রহমান

• Say, "If Allah had willed, I would not have recited it to you, nor would He have made it known to you, for I had remained among you a lifetime before it. Then will you not reason?"

-Sahih International

১৬. বলুন, আল্লাহ যদি চাইতেন আমিও তোমাদের কাছে এটা তিলাওয়াত করতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে জানাতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি(১); তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না?(২)

(১) এ সময়টুকু ছিল, চল্লিশ বৎসর। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “আল্লাহ্ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চল্লিশ বৎসর বয়সে নবুওয়াত দেন।” [বুখারীঃ ৩৫৪৮, মুসলিমঃ ২৩৪৭]

(২) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নিজে এ কিতাবের রচয়িতা নন বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে অহীর মাধ্যমে এটি তার ওপর নাযিল হচ্ছে, তার এ দাবীর সপক্ষে এটি একটি জোরালো যুক্তি। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন তো তাদের মাঝেই ছিল। নবুওয়াত লাভের আগে পুরো চল্লিশটি বছর তিনি তাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছিলেন। কোন লেখা পড়া জানতেন না। [কুরতুবী] তিনি তাদের শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের চোখের সামনে তাঁর শিশুকাল অতিক্রান্ত হয়। সেখানেই বড় হন। যৌবনে পদার্পণ করেন তারপর প্রৌঢ়ত্বে পৌছেন। থাকা-খাওয়া, ওঠা-বসা, লেনদেন, বিয়ে শাদী ইত্যাদি সব ধরনের সামাজিক সম্পর্ক তাদের সাথেই ছিল এবং তার জীবনের কোন দিক তাদের কাছে গোপন ছিল না।

তার এ জীবনধারার মধ্যে দুটি বিষয় একেবারেই সুস্পষ্ট ছিল। মক্কার প্রত্যেকটি লোকই তা জানতো। এক, নবুওয়াত লাভ করার আগে তার জীবনের পুরো চল্লিশটি বছরে তিনি এমন কোন শিক্ষা, সাহচর্য ও প্রশিক্ষণ লাভ করেননি এবং তা থেকে এমন তথ্যাদি সংগ্রহ করেননি যার ফলে একদিন হঠাৎ নবুওয়াতের দাবী করার সাথে সাথেই তার কণ্ঠ থেকে এ তথ্যাবলীর ঝর্ণাধারা নিঃসৃত হতে আরম্ভ করেছে। দ্বিতীয় যে কথাটি তাঁর পূর্ববর্তী জীবনে সুস্পষ্ট ছিল সেটি এই যে, নবুওয়াত লাভের পূর্ব থেকেই তিনি সততা ও আমানতদারীতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। [কুরতুবী] মিথ্যা, প্রতারণা, জালিয়াতী, ধোঁকা, শঠতা, ছলনা এবং এ ধরনের অন্যান্য অসৎগুণাবলীর কোন সামান্যতম গন্ধও তাঁর চরিত্রে পাওয়া যেতো না।

মূলতঃ এটা এমন একটি দিক যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের অত্যন্ত সুস্পষ্ট দলীল। সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তোমরা কি তাকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) এ-ধরনের (অর্থাৎ নবুওয়তের) দাবীর পূর্বে কখনো মিথ্যা বলার অপবাদ দিতে? আবু সুফিয়ান তখন বলেছিল, না-- অথচ আবু সুফিয়ান ঐ সময় কাফেরদের সর্দার ছিল। তারপরও সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে হক কথা বলতে বাধ্য হয়েছিল। আর জানা কথা যে, শক্রদের মুখ থেকে যে প্রশংসা বের হয় তা যথার্থ প্রশংসা।

মোটকথাঃ তখন সম্রাট হিরাক্লিয়াস বলেছিলেনঃ “আমি এটা অবশ্যই বুঝি যে, সে মানুষের সাথে মিথ্যা কথা ত্যাগ করেছে তারপর সে আল্লাহর উপর মিথ্যা কথা বলবে এটা কখনো হতে পারে না” [বুখারীঃ ৭, মুসলিমঃ ১৭৭৩] অনুরূপভবে জাফর ইবনে আবি তালেবও আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজাসির দরবারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বলেছেন যে, “আল্লাহ আমাদের মধ্যে এমন একজন রাসূলকে পাঠিয়েছেন যার গুণাগুণ বংশ পরিচয় ও আমানতদারী সম্পর্কে আমাদের সবাই জানে”। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২০১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) বল, ‘আল্লাহর ইচ্ছা হলে আমি তোমাদের কাছে এটা পাঠ করতাম না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে ওটা জানাতেন না।[1] আমি এর পূর্বেও তো জীবনের এক দীর্ঘ সময় তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছি; তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না?’ [2]

[1] অর্থাৎ সমস্ত কিছু আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর; তিনি চাইলে আমি তোমাদেরকে তা না পড়ে শুনাতাম, আর না তোমরা তা জানতে পারতে। অনেকে أَدْرَاكُمْ এর অর্থ أَعْلَمَكُمْ بِهِ عَلَى لِسَانِيْ অর্থাৎ, আর না তিনি তোমাদেরকে আমার মুখ দ্বারা এই কুরআন জানাতেন।

[2] অর্থাৎ, তোমরা তো জান যে, নবুঅত দাবী করার পূর্বে দীর্ঘ চল্লিশ বছর আমি তোমাদের মাঝে অতিবাহিত করেছি। আমি কি তখন কোন শিক্ষকের নিকট কিছু শিক্ষা নিয়েছিলাম? অনুরূপ তোমরা আমার আমানতদার ও সত্যবাদী হওয়ার কথাও স্বীকার করতে। এখন কি সম্ভব যে, আমি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করতে আরম্ভ করব? উক্ত দুটি কথার অর্থ এই যে, এই কুরআন একমাত্র আল্লাহরই অবতীর্ণকৃত গ্রন্থ। আমি না কারোর নিকট শ্রবণ করে বা শিখে তা বর্ণনা করেছি, আর না এমনিই মিছামিছি আমি তা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করেছি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৭ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰیٰتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ﴿۱۷﴾
فمن اظلم ممن افتری علی الله كذبا او كذب بایتهٖ انهٗ لا یفلح المجرمون ﴿۱۷﴾
• অতএব যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম কে ? নিশ্চয় অপরাধীরা সফল হবে না।

-আল-বায়ান

• তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে মিথ্যা রচনা ক’রে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় অথবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করে; নিশ্চিতই অপরাধীরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।

-তাইসিরুল

• অতএব সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী (যালিম) কে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিঃসন্দেহে এমন পাপাচারীদের কিছুতেই মঙ্গল হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• So who is more unjust than he who invents a lie about Allah or denies His signs? Indeed, the criminals will not succeed

-Sahih International

১৭. অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা বা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে?(১) নিশ্চয় অপরাধীরা সফলকাম হবে না।(২)

(১) অর্থাৎ তার চাইতে বড় যালেম আর কেউ নেই যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে এবং তাঁর বাণী পরিবর্তন করে। আর তিনি যা নাযিল করেছেন তার সাথে কোন কিছু যোগ করে দেয়। অনুরূপভাবে তোমাদের থেকে বড় যালেমও আর কেউ হবে না যদি তোমরা কুরআনকে অস্বীকার কর এবং আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দাও এবং বল যে, এটা আল্লাহর কালাম নয়। এটাই আল্লাহ তা'আলা তার রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তিনি তাদেরকে এটা জানিয়ে দেন। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ যারা আল্লাহর উপর মিথ্যাচার করে তারা কখনো সফলকাম হবে না। তাদের কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে মিথ্যা হিসেবে বিবেচিত হবেই। মূলত: নবী সত্য বা মিথ্যা এটা জানার বিভিন্ন পদ্ধতি বিদ্যমান। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দু'জনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, কথাবার্তা, চাল-চলন ইত্যাদি তুলনা করা। বিবেকবান মাত্রই এ কাজটি সহজে করতে পারে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুসাইলামা কাযযাবের কোন তুলনা কি চলে? আমর ইবনে আস একবার মুসাইলামার কাছে গেল। মুসাইলামা তার পুরাতন বন্ধু ছিল। আমর তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। তখন মুসাইলামা তাকে জিজ্ঞাসা করলঃ হে আমর! তোমাদের লোকের (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) উপর এ সময়ে কি নাযিল হয়েছে? আমর ইবনে আস জবাবে বললঃ আমি তার সাথীদের একটি সূরা পড়তে শুনেছি।

মুসাইলামা বললঃ সেটা কি? আমর বললঃ (وَالْعَصْرِ ٭ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ ٭ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ) সূরাটি শুনে মুসাইলামা কিছুক্ষণ চিন্তা করতে থাকলো, তারপর বললোঃ আমার উপরও অনুরূপ নাযিল করা হয়েছে। আমর বললোঃ সেটা কি? সে বললঃ يَاوَبَرَ إنَّهَا أنْتَ أُذْنَانِ وَصَدَرُ وَسَائِرُكَ حَقْرٌ نَقْرٌ তারপর মুসাইলামা বাহাদুরী নেয়ার আশায় আমরের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমর! কেমন লাগলো? তখন আমর বললোঃ আল্লাহর শপথ করে বলছি, তুমি অবশ্যই এটা জানো যে, আমি জানি, তুমি মিথ্যা বলছ। [ইবন কাসীর; ইবন রাজাব, জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১১২] এটাই যদি একজন কাফেরের বিশ্লেষণ তাহলে মুমিন কত সহজেই সত্য নবী ও মিথ্যা নবীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে তা বলাই বাহুল্য।

অপরদিকে আমরা সত্য নবীর ব্যাপারেও তার সততার সাক্ষ্য খুব সহজভাবেই দেখতে পাই। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ “যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমণ করলেন তখন লোকেরা চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসলো। আমিও তাদের সাথে আসার পর যখন আমি তাকে দেখলাম তখনি বুঝতে পারলাম যে, তার চেহারা কোন মিথ্যুক লোকের চেহারা নয়। তখন আমি প্রথম যে কথা কয়টি শুনেছিলাম তা হলোঃ হে মানব সম্প্রদায়! সালামের প্রসার কর, খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখো এবং রাতে মানুষেরা যখন ঘুমন্ত থাকে তখন সালাত আদায় কর, ফলে তোমরা প্রশান্তির সাথে বা সালামের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪২৮৩]।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) অতএব সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে? নিঃসন্দেহে এমন অপরাধিগণ সফলকাম হবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৮ وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَضُرُّهُمۡ وَ لَا یَنۡفَعُهُمۡ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ قُلۡ اَتُنَبِّـُٔوۡنَ اللّٰهَ بِمَا لَا یَعۡلَمُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۱۸﴾
و یعبدون من دون الله ما لا یضرهم و لا ینفعهم و یقولون هؤلآء شفعآؤنا عند الله قل اتنبـٔون الله بما لا یعلم فی السموت و لا فی الارض سبحنهٗ و تعلی عما یشركون ﴿۱۸﴾
• আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আসমানসমূহ ও যমীনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন’? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।

-আল-বায়ান

• আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে ‘ইবাদাত করে এমন কিছুর যা না পারে তাদের কোন ক্ষতি করতে, আর না পারে কোন উপকার করতে। আর তারা বলে, ‘‘ওগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী’’। বল, ‘‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও, যা তিনি অবগত নন, না আকাশমন্ডলীতে আর না যমীনে? মহান পবিত্র তিনি, তোমরা যা কিছুকে তাঁর শরীক গণ্য কর তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।

-তাইসিরুল

• আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদাত করে যারা তাদের কোন অপকার করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা। আর তারা বলে, এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আসমানে, আর না যমীনে? তিনি পবিত্র এবং তাদের মুশরিকী কার্যকলাপ হতে তিনি অনেক উর্ধ্বে।

-মুজিবুর রহমান

• And they worship other than Allah that which neither harms them nor benefits them, and they say, "These are our intercessors with Allah " Say, "Do you inform Allah of something He does not know in the heavens or on the earth?" Exalted is He and high above what they associate with Him

-Sahih International

১৮. আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত করছে যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বলুন, তোমরা কি এমন কিছুর সংবাদ দেবে যা তিনি জানেন না?(১) তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞানী। আসমান ও যমীনে যা আছে তার জ্ঞান সেটাকে ঘিরে আছে। তিনি তোমাদের জানাচ্ছেন যে, তার কোন শরীক নেই, তার সাথে কোন ইলাহ নেই। আর হে মুশরিক সম্প্রদায়! তোমরা মনে করছ যে, তাঁর শরীক পাওয়া যায়? তোমরা কি তাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তার কাছে গোপন রয়েছে এবং তোমরা জেনে নিয়েছ? এটা নিঃসন্দেহে বড় অসার কথা। এ মূৰ্খ লোকগুলো কি রাব্বুল আলামীনের চেয়ে বেশী জানে? এ বিষয়টি সম্পর্কে সামান্য চিন্তা করলেই এর অসারতা ধরা পড়ে। [সা’দী]

কারণ, কোন জিনিসের আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার মানেই হচ্ছে এই যে, সেটির কোন অস্তিত্বই নেই। কারণ, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সবই আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আল্লাহ তো জানেন না আকাশে ও পৃথিবীতে তার কোন শরীক আছে। অনুরূপভাবে তিনি জানেন না তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন সুপারিশকারী আছে, এটি সুপারিশকারীদের অস্তিত্বহীনতার ব্যাপারে একটি চমৎকার বর্ণনা পদ্ধতি। অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীতে যখন কোন সুপারিশকারী আছে বলে আল্লাহর জানা নেই এখন তোমরা কোন সুপারিশকারীদের কথা বলছ? [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা এ কথাটি বলেছেন। তিনি বলেন, “আর তারা আল্লাহর বহু শরীক সাব্যস্ত করেছে। বলুন, তাদের পরিচয় দাও। নাকি তোমরা যমীনের মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও যা তিনি জানেন না?” [সূরা আর-রাদ: ৩৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর উপাসনা করে[1] যা তাদের কোন অপকারও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না।[2] অথচ তারা বলে, এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।[3] তুমি বলে দাও, ‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আকাশসমূহে, আর না পৃথিবীতে?[4] তিনি পবিত্র এবং তারা যে অংশী করে, তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [5]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত অতিক্রম করে, পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদত বর্জন করে নয়। কারণ মুশরিকরা আল্লাহর ইবাদত করত এবং তার সাথে সাথে গায়রুল্লাহরও ইবাদত করত।

[2] অথচ প্রকৃত উপাস্যের যোগ্যতা এই থাকবে যে, তিনি তাঁর অনুগতদেরকে উত্তম প্রতিদান এবং তাঁর অবাধ্যদেরকে শাস্তি প্রদানে ক্ষমতাবান হবেন।

[3] অর্থাৎ, তাদের সুপারিশে আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। আমাদের দুরবস্থা দূর করে দেন এবং শত্রুদের সুখ নষ্ট করে দেন। অর্থাৎ, মুশরিকরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা করত, তাদেরকে উপকার ও অপকারে স্বেচ্ছাধীন (এবং স্বতন্ত্র উপাস্য) ভাবত না, বরং আল্লাহ ও নিজেদের মাঝে মাধ্যম বা অসীলা ভাবত।

[4] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা জানেন না যে, তাঁর কেউ অংশীদার আছে, বা তাঁর দরবারে সুপারিশকারীও হবে? ঠিক যেন মুশরিকরা আল্লাহ তাআলাকে জানাতে চায় যে, তুমি জান না। আমরা তোমাকে জানাচ্ছি যে, তোমার অংশীদারও আছে এবং এমন সুপারিশকারীও আছে, যারা তার বিশ্বাসীদের জন্য সুপারিশ করবে!

[5] আল্লাহ তাআলা বলেন, মুশরিকদের এসব কথা ভিত্তিহীন, আল্লাহ তাআলা এ সকল কথা থেকে পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ১৯ وَ مَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً فَاخۡتَلَفُوۡا ؕ وَ لَوۡ لَا كَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ فِیۡمَا فِیۡهِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۹﴾
و ما كان الناس الا امۃ واحدۃ فاختلفوا و لو لا كلمۃ سبقت من ربك لقضی بینهم فیما فیه یختلفون ﴿۱۹﴾
• আর মানুষ তো এক উম্মতই ছিল। পরে তারা বিভক্ত হয়ে পড়ল। আর তোমার রবের পক্ষ থেকে বাণী বিগত না হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত, যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করে।

-আল-বায়ান

• মানুষ ছিল এক উম্মতভুক্ত। পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। তোমার প্রতিপালক পূর্বেই যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতেন, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তার মীমাংসা অবশ্যই করে দেয়া হত।

-তাইসিরুল

• আর সমস্ত মানুষ (প্রথম) এক উম্মাতই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। আর যদি তোমার রবের পক্ষ হতে এক নির্দেশ বাণী প্রথমে সাব্যস্ত হয়ে না থাকত তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত।

-মুজিবুর রহমান

• And mankind was not but one community [united in religion], but [then] they differed. And if not for a word that preceded from your Lord, it would have been judged between them [immediately] concerning that over which they differ.

-Sahih International

১৯. আর মানুষ ছিল একই উম্মত, পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে(১)। আর আপনার রবের পূর্ব ঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তার মীমাংসা তো হয়েই যেত।(২)

(১) অর্থাৎ সমস্ত আদম সন্তান প্রথমে একত্ববাদে বিশ্বাসী একই উম্মত ও একই জাতি ছিল। শির্ক ও কুফরের নামও ছিল না। পরে একত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি করে বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সম্পপ্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়। একই উম্মত এবং সবার মুসলিম থাকার সময়কাল কতদিন এবং কবে ছিল তা বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নূহ আলাইহিস সালাম-এর যুগ পর্যন্ত এমনি অবস্থা ছিল।

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আদম ও নৃহের মধ্যে দশ প্রজন্ম ছিল যারা তাওহীদের উপর ছিল। [তাবারী; ইবন কাসীর]। এরপর মানুষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং ঈমানের বিরুদ্ধে কুফর ও শির্কী বিস্তার লাভ করে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার নবী-রাসূলদেরকে ভীতিপ্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদানকারী হিসেবে কিতাবসহ প্রেরণ করেন। “যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর জীবিত থাকে।” [সূরা আল-আনফাল ৪২] [ইবন কাসীর]

(২) কোন কোন মুফাসসির বলেন, সে কলেমাটি হচ্ছে এই যে, তিনি এ উম্মতকে সবশেষে আনবেন এবং তাদেরকে দুনিয়াতে আযাব না দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। যদি এ অবকাশ না থাকত তবে অবশ্যই তাদের আযাব দিয়ে শেষ করে দেয়া হতো অথবা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যেত। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, এখানে ‘কালেমা’ বলে এটাই বোঝানো হয়েছে যে, তিনি কাউকে দলীল-প্রমাণাদি ছাড়া পাকড়াও করবেন না। আর সেটা হচ্ছে, রাসূল প্রেরণ। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।” [সূরা আল-ইসরাঃ ১৫]

কারও কারও মতে, এখানে কালেমা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে বর্ণিত একটি কালেমাকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে এসেছে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রাধান্য পাবে’। [বুখারী: ৭৫৫৩; মুসলিম: ২৭৫১] যদি তা না হতো তবে তিনি অপরাধীদেরকে তাওবার সময় দিতেন না। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল।[1] যদি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্ব-ঘোষণা না থাকত, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। [2]

[1] অর্থাৎ শিরক হল মানুষের নিজেদের মনগড়া কর্ম। কেননা, প্রথমে এর কোন অস্তিতত্ত্বই ছিল না। সকল মানুষ একই দ্বীন ও একই পথের পথিক ছিল। আর সে পথ হল ইসলামের পথ, যার আসল ভিত্তি হল তাওহীদ। নূহ (আঃ) পর্যন্ত মানুষ সেই তাওহীদের উপর অটল ছিল। পরবর্তীতে তাদের মাঝে একতত্ত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং কিছু মানুষ আল্লাহর সাথে, অন্যদেরকেও উপাস্য, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দুঃখ-কষ্ট মোচনকারী ভাবতে আরম্ভ করে।

[2] অর্থাৎ যদি আল্লাহর এই ফায়সালা না হত যে, ‘‘পূর্ণ প্রমাণ সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বে কাউকে শাস্তি দিব না’’, অনুরূপ তিনি সৃষ্টি-জগতের (হিসাব-নিকাশের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না করে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের মাঝে ঘটিত মতবিরোধের ফায়সালা করে দিতেন এবং মু’মিনদেরকে বড় সুখী ও কাফেরদেরকে শাস্তি ও কষ্টের সম্মুখীন করতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ২০ وَ یَقُوۡلُوۡنَ لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡهِ اٰیَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ ۚ فَقُلۡ اِنَّمَا الۡغَیۡبُ لِلّٰهِ فَانۡتَظِرُوۡا ۚ اِنِّیۡ مَعَكُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِیۡنَ ﴿۲۰﴾
و یقولون لو لا انزل علیه ایۃ من ربهٖ فقل انما الغیب لله فانتظروا انی معكم من المنتظرین ﴿۲۰﴾
• আর তারা বলে, ‘তাঁর রবের পক্ষ থেকে তার উপর কোন নিদর্শন কেন নাযিল করা হয় না’? বল, ‘গায়েবের জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই। অতএব তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রয়েছি’।

-আল-বায়ান

• তারা বলে, ‘‘তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’’ এদের জবাবে বলে দাও, ‘‘অদৃশ্য জগতের একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ, কাজেই তোমরা অপেক্ষা কর (এবং ভবিষ্যতে কী হয় দেখ), আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান থাকলাম।

-তাইসিরুল

• আর তারা বলেঃ তার প্রতি তার রবের পক্ষ হতে কোন মু’জিযা কেন নাযিল হলনা? তুমি বলে দাওঃ গাইবের খবর শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। অতএব তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম।

-মুজিবুর রহমান

• And they say, "Why is a sign not sent down to him from his Lord?" So say, "The unseen is only for Allah [to administer], so wait; indeed, I am with you among those who wait."

-Sahih International

২০. আর তারা বলে, ‘তার রবের কাছ থেকে তার কাছে কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন?(১) বলুন, গায়েবের জ্ঞান তো শুধু আল্লাহরই আছে। কাজেই তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।(২)

(১) অর্থাৎ এ ব্যাপারে নিদর্শন যে, তিনি যথার্থই সত্য নবী এবং যা কিছু তিনি পেশ করছেন তা পুরোপুরি ঠিক। এ প্রসঙ্গে একটি কথা মনে রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে, নিদর্শন পেশ করার দাবী তারা এ জন্য করেনি যে, তারা সাচ্চা দিলে সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। আসলে নিদর্শনের এ দাবী শুধুমাত্র ঈমান না আনার জন্য একটি বাহানা হিসেবে পেশ করা হচ্ছিল। তাদেরকে যাই কিছু দেখানো হতো তা দেখার পরও তারা একথাই বলতো, আমাদের কোন নিদর্শনই দেখানো হয়নি। কারণ তারা ঈমান আনতে চাচ্ছিল না। আল্লাহ বলেনঃ “কত মহান তিনি যিনি ইচ্ছে করলে আপনাকে দিতে পারেন এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু-উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং তিনি দিতে পারেন আপনাকে প্রাসাদসমূহ! কিন্তু তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে এবং যে কিয়ামতকে অস্বীকার করে তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন। [সূরা আল-ফুরকানঃ ১০] অন্য আয়াতে বলেনঃ “পূর্ববর্তীগণের নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন পাঠান থেকে বিরত রাখে।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৯l

কারণ, তাদের চাহিদা মোতাবেক নিদর্শন পাঠানোর পর যদি ঈমান না আনে তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। কারণ, আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে যে, সুনির্দিষ্ট কোন নিদর্শন চাওয়া হলে সেটা দেয়ার পর যদি ঈমান না আনে তবে তাদের ধ্বংস করা হয়। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যখন নিদর্শন দেয়া ও অবকাশ না দেয়া আর নিদর্শন না দিয়ে অবকাশ দেয়ার মধ্যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার প্রদান করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয়টি গ্রহণ করেছিলেন [ইবন কাসীর] কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মোটেই কোন নিদর্শন দেখাননি। তাদেরকে অনেক বড় নিদর্শন দেখিয়েছেন। যেমন তাদের চাহিদা মোতাবেক চাঁদকে এমনভাবে দ্বিখণ্ডিত করে দেখিয়েছেন যে, কাফেরগন দুখণ্ডের মাঝে পাহাড় দেখতে পেয়েছিল। [বুখারীঃ ৩৬৩৬, মুসলিমঃ ২৮০০] কিন্তু তারপরও তারা ঈমান আনেনি। বরং আরো বেশী নিদর্শন দাবী করতে লাগল। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ঈমান আনা নয়, তাদের উদ্দেশ্য হঠকারিতা। আল্লাহ বলেনঃ “তারা যত নিদর্শনই দেখুক না কেন ঈমান আনবে না”। [সূরা আল-আনআমঃ ২৫] আরো বলেনঃ “তারা যাবতীয় নিদর্শন দেখলেও ঈমান আনবে না”। [সূরা আল-আরাফঃ ১৪৬]

আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না। যদিও তাদের কাছে সবগুলো নিদর্শন আসে, যতক্ষন পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখতে পাবে”। [সূরা ইউনুসঃ ৯৬–৯৭] অন্য আয়াতে বলেনঃ “আমরা তাদের কাছে ফিরিশতা পাঠালেও, মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাজির করলেও তারা কখনো ঈমান আনবে না; তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছে হয়।” [সূরা আল-আনআমঃ ১১১]।

অহংকার ও সত্যকে অস্বীকার করা তাদের মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সুস্পষ্ট বিষয়কেও জেনে বুঝে অস্বীকার করতে দ্বিধা করে না। আল্লাহ বলেনঃ “যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহন করতে থাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্ৰস্ত সম্প্রদায়।” [সূরা আল-হিজরঃ ১৪–১৫] আরো বলেনঃ “তারা আকাশের কোন খন্ড ভেংগে পড়তে দেখলে বলবে, এটা তো এক পুঞ্জিভূত মেঘ। [সূরা আত-তূরঃ ৪৪] আল্লাহ আরো বলেনঃ “আমরা যদি আপনার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি সেটা হাত দিয়ে স্পর্শও করত তবুও কাফিররা বলত, এটা স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছু নয়।” [সূরা আল-আনআমঃ ৭]

(২) অর্থাৎ আয়াত নাযিল করা একান্ত গায়েবী বিষয়। [কুরতুবী] আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তা আমি পেশ করে দিয়েছি। আর যা তিনি নাযিল করেননি তা আমার ও তোমাদের জন্য “গায়েবী বিষয়” এর ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই। তিনি চাইলে তা নাযিল করতে পারেন। এখন আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেননি তা আগে তিনি নাযিল করুন—একথার ওপর যদি তোমাদের ঈমান আনার বিষয়টি আটকে থাকে তাহলে তোমরা তার অপেক্ষায় বসে থাকো। [কুরতুবী] অথবা আয়াতের অর্থ, তোমরা আমাদের আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষা কর। তিনি হককে অবশ্যই বাতিলের উপর প্রকাশ করে দিবেন। [বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) তারা বলে, ‘তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয়নি কেন?’[1] সুতরাং তুমি বলে দাও, ‘অদৃশ্যের খবর শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন।[2] অতএব তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম।’

[1] এদের উদ্দেশ্য হল, কোন বড় ও স্পষ্ট নিদর্শন বা মু’জিযাহ; যেমন সামুদ জাতির জন্য উটনী প্রকাশ করা হয়েছিল। অনুরূপ তাদের দাবী ছিল, এ (মক্কার কাফের)-দের জন্য সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড়ে পরিবর্তন করে অথবা মক্কার সমস্ত পর্বতমালা দূর করে তার স্থলে নদী ও বাগান তৈরী করে অথবা অনুরূপ কোন মু’জিযাহ (অলৌকিক বস্তু) প্রকাশ করে দেখানো হোক।

[2] অর্থাৎ আল্লাহ যদি চান, তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মু’জিযা প্রকাশ করে দেখাতে পারেন। কিন্তু তার পরেও যদি তারা ঈমান না আনে, তবে আল্লাহর নীতি এই যে, এরূপ জাতিকে তিনি অতি সতত্ত্বর ধ্বংস করে দেন। ফলে একমাত্র তিনিই জানেন যে, কোন জাতির জন্য তাদের চাহিদা মত মু’জিযা প্রকাশ করে দেওয়া তাদের জন্য মঙ্গল হবে, না অমঙ্গল। অনুরূপ এটাও একমাত্র তিনিই জানেন যে, যদি তাদের চাহিদা মত মু’জিযা না দেখানো হয়, তাহলে তাদেরকে কতটা অবকাশ দেওয়া হবে? যার ফলে আয়াতের শেষাংশে বলেছেন, "তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।"

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 8 9 10 11 পরের পাতা »