আল্লাহর কিতাব বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৬৩ টি
১৬ আন-নাহাল
১৬:৪৪ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ ؕ وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡكَ الذِّكۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡهِمۡ وَ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَكَّرُوۡنَ ﴿۴۴﴾

(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। আল-বায়ান

(অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। তাইসিরুল

তাদের প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্ট নিদর্শন ও গ্রন্থসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে। মুজিবুর রহমান

[We sent them] with clear proofs and written ordinances. And We revealed to you the message that you may make clear to the people what was sent down to them and that they might give thought. Sahih International

৪৪. স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ(১)। আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে(২), তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে।

(১) আয়াতের এ অংশটুকু পূর্ববর্তী আয়াতের “আমরা পাঠিয়েছিলাম” এর সাথে সংশ্লিষ্ট। [ইবন কাসীর] তখন আয়াতের পূর্ণ অর্থ হবেঃ “আমরা আপনার পূর্বেই শুধুমাত্র পুরুষ মানুষকেই ওহী দিয়ে পাঠিয়েছিলাম, তাদেরকে পাঠিয়েছিলাম স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহকারে।” আয়াতের অপর অর্থ হচ্ছে যে, এ আয়াতটি পূর্বোক্ত আয়াতের ‘তোমরা যদি না জান’ কথার সাথে সংশ্লিষ্ট। তখন অর্থ হবে, যদি তোমরা স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থ সম্পর্কে না জান তবে পূর্ববর্তী যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। [ফাতহুল কাদীর]

(২) এ আয়াতে ذكر এর অর্থ সর্বসম্মতভাবে কুরআনুল কারীম৷ [ইবন কাসীর] আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আদেশ করা হয়েছে যে, আপনি লোকদের কাছে কুরআনের আয়াত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে দিন। কারণ, আপনি আপনার কাছে যা নাযিল হয়েছে সেটা সম্পর্কে ভাল জানেন। আর আপনি এটার উপর অত্যন্ত যত্নবান। আপনি এটার অনুসরণ করেই যাচ্ছেন। এটা এজন্যে যে, আমরা জানি আপনি সবচেয়ে উত্তম সৃষ্টি এবং আদম সন্তানদের সর্দার বা নেতা। সুতরাং যা সংক্ষিপ্ত হিসেবে আছে তা আপনি তাদের কাছে বিবৃত করুন, যা তাদের কাছে খটকা লাগে তা বর্ণনা করুন। যাতে তারা তাদের নিজেদের জন্য দেখে-শুনে হিদায়াত গ্রহণ করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা লাভ করতে পারে। [ইবন কাসীর]

সুতরাং আপনি তাদের কাছে এ কিতাবের প্রতিটি বিধি-বিধান, ওয়াদা ও ধমকি সবই আপনার কথা ও কাজের মাধ্যমে বর্ণনা করে দিন। এতে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন বর্ণনাকারী। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ কিতাবের যাবতীয় সংক্ষিপ্ত হুকুম সালাত, যাকাত ইত্যাদি যে সমস্ত আহকাম বিস্তারিতভাবে আসেনি সেগুলোকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করবেন। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) স্পষ্ট প্রমাণ ও গ্রন্থসহ। আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দাও, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৬৪ وَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡكَ الۡكِتٰبَ اِلَّا لِتُبَیِّنَ لَهُمُ الَّذِی اخۡتَلَفُوۡا فِیۡهِ ۙ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۶۴﴾

আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে এবং (এটি) হিদায়াত ও রহমত সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে। আল-বায়ান

আমি তোমার প্রতি কিতাব এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি সে সকল বিষয় স্পষ্ট করে দিতে পার যে বিষয়ে তারা মতভেদ করেছিল, আর (এ কিতাব) বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথপ্রদর্শক ও রহমাত স্বরূপ। তাইসিরুল

আমিতো তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং মু’মিনদের জন্য পথ-নির্দেশ ও দয়া স্বরূপ। মুজিবুর রহমান

And We have not revealed to you the Book, [O Muhammad], except for you to make clear to them that wherein they have differed and as guidance and mercy for a people who believe. Sahih International

৬৪. আর আমরা তো আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং যারা ঈমান আনে এমন সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।(১)

(১) অন্য কথায় এ কিতাব নাযিল হওয়ার কারণে এরা একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে। তাওহীদ ও পুনরুত্থানের বিভিন্ন অবস্থা ও শরীআতের বিধানের মধ্যে যে সব মতবাদ ও ধর্মে এরা বিভক্ত হয়ে গেছে সেগুলোর পরিবর্তে সবাই একমত হতে পারে এ কুরআনের কাছে ফিরে আসার মাধ্যমে। [ফাতহুল কাদীর] এখন এ নিয়ামতটি এসে যাওয়ার পরও যারা অতীতের অবস্থাকেই প্রাধান্য দিয়ে যাওয়ার মত নিৰ্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছে তাদের পরিণাম ধ্বংস ও লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু নয়। এখন যারা এ কিতাবকে মেনে নেবে একমাত্র তারাই সত্য-সরল পথ পাবে এবং তারাই অঢেল বরকত ও রহমতের অধিকারী হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৪) আমি তো তোমার প্রতি গ্রন্থ এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি; যাতে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করে, তাদেরকে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে পার[1] এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথ নির্দেশ ও দয়া স্বরূপ।

[1] এতে নবী (সাঃ)-এর দায়িত্ব বিবৃত হয়েছে যে, বিশ্বাস ও শরীয়তের বিধি-বিধানের ব্যাপারে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের মাঝে, অনুরূপ অগ্নিপূজক ও মুশরিকদের মাঝে এবং অনান্য ধর্মাবলম্বী লোকেদের মাঝে যে সব মতপার্থক্য রয়েছে, তা এমনভাবে আলোচনা কর, যাতে ন্যায়-অন্যায় ও হক-বাতিল স্পষ্ট হয়ে যায়। যাতে মানুষ হককে গ্রহণ করতে ও বাতিলকে বর্জন করতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৯৮ فَاِذَا قَرَاۡتَ الۡقُرۡاٰنَ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ ﴿۹۸﴾

সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও। আল-বায়ান

তুমি যখনি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়ত্বান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। তাইসিরুল

যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শাইতান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। মুজিবুর রহমান

So when you recite the Qur'an, [first] seek refuge in Allah from Satan, the expelled [from His mercy]. Sahih International

৯৮. সুতরাং যখন আপনি কুরআন পাঠ করবেন(১) তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন।(২)

(১) কোন কোন মুফাস্‌সির এ আয়াত এবং এর পূর্বের আয়াতসমূহের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে গিয়ে বলেনঃ পূর্ববতী আয়াতসমূহে প্রথমে অঙ্গীকার পূর্ণ করার প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ ও উৎসাহিত করা হয়েছে। শয়তানের প্ররোচনায়ই মানুষ এসব বিধি-বিধানে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। তাই এই আয়াতে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সৎকর্মের বেলায় এর প্রয়োজন রয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] আলোচ্য আয়াতে বিশেষভাবে কুরআন পাঠের সাথে এর উল্লেখ রয়েছে। ইমাম তাবারী বলেন, সর্বসম্মত মত হচ্ছে যে, এ নির্দেশটি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। কুরআন তেলাওয়াতের প্রথমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার কারণ হচ্ছে, যাতে শয়তান কুরআন তিলাওয়াতের সময় কোন প্রকার ঝামেলা করতে না পারে। কোন প্রকার সন্দেহে নিপতিত করতে না পারে এবং চিন্তা ও গবেষণা থেকে দূরে না রাখে। [ইবন কাসীর]

(২) এর অর্থ কেবল এতটুকুই নয় যে, মুখে শুধুমাত্র “আউযুবিল্লাহ” উচ্চারণ করলেই হয়ে যাবে। বরং এ সংগে কুরআন পড়ার সময় যথার্থই শয়তানের বিভ্রান্তিকর প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার বাসনা পোষণ করতে হবে এবং কার্যত তার প্ররোচনা থেকে নিস্কৃতি লাভের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া অন্য কোন কালাম অথবা কিতাব পাঠ করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়া সুন্নত নয়। [ইবনুল কাইয়্যেম; ইগাসাতুল লাহফান] সে ক্ষেত্রে শুধু বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। তবে বিভিন্ন কাজ ও অবস্থায় আউযুবিল্লাহর শিক্ষা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। উদাহরণতঃ কারো অধিক ক্রোধের উদ্রেক হলে হাদীসে আছে যে, “আউযুবিল্লাহি মিনাস শায়তানির রাজীম” পাঠ করলে ক্রোধ দমিত হয়ে যায়। [দেখুনঃ বুখারী ৩২৮২ মুসলিম: ২৬১০] পায়খানায় প্রবেশ করার পূর্বে 'আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িস’ পাঠ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। [দেখুনঃ বুখারী: ১৪২ মুসলিম: ৩৭৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৮) যখন তুমি কুরআন পাঠ (করার ইচ্ছা) করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। [1]

[1] যদিও সম্বোধন নবী (সাঃ)-কে করা হয়েছে; কিন্তু উদ্দেশ্য সকল উম্মত। অর্থাৎ কুরআন পাঠের পূর্বে أَعُوذُْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ পাঠ কর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:১০১ وَ اِذَا بَدَّلۡنَاۤ اٰیَۃً مَّكَانَ اٰیَۃٍ ۙ وَّ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا یُنَزِّلُ قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُفۡتَرٍ ؕ بَلۡ اَكۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾

আর যখন আমি একটি আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে আরেকটি আয়াত দেই- আল্লাহ ভাল জানেন সে সম্পর্কে, যা তিনি নাযিল করেন- তখন তারা বলে, তুমি তো কেবল মিথ্যা রটনাকারী; রবং তাদের অধিকাংশই জানে না। আল-বায়ান

আমি যখন এক আয়াতের বদলে অন্য আয়াত নাযিল করি- আর আল্লাহ ভালভাবেই জানেন, যা তিনি নাযিল করেন- তখন এই লোকেরা বলে, ‘তুমি তো মিথ্যা রচনাকারী।’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, এ সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই কোন জ্ঞান নেই। তাইসিরুল

আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি, আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলেঃ তুমিতো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেনা। মুজিবুর রহমান

And when We substitute a verse in place of a verse - and Allah is most knowing of what He sends down - they say, "You, [O Muhammad], are but an inventor [of lies]." But most of them do not know. Sahih International

১০১. আর যখন আমরা এক আয়াতের স্থানে পরিবর্তন করে অন্য আয়াত দেই— আর আল্লাহই ভাল জানেন যা তিনি নাযিল করবেন সে সম্পর্কে–, তখন তারা বলে, আপনি তো শুধু মিথ্যা রটনাকারী, বরং তাদের অধিকাং জানে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০১) আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত অবতীর্ণ করি -- আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা তিনিই ভাল জানেন -- তখন তারা বলে, ‘তুমি তো শুধু একজন মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। [1]

[1] একটি বিধান রহিত করার পর অন্য একটি অবতীর্ণ করেন। যার হিকমত, যৌক্তিকতা ও কারণ আল্লাহই জানেন এবং তিনি সেই অনুসারে বিধানের মধ্যে পরিবর্তন আনেন। তা শুনে কাফেররা বলে, হে মুহাম্মাদ! এই বাণী তোমার নিজস্ব রচনা। কারণ আল্লাহ এ রকম রদবদল করতে পারেন না। মহান আল্লাহ বলেন, যাদের অধিকাংশই অজ্ঞ, তারা রহিত করার যুক্তি ও মর্ম কি বুঝবে। (আরো দেখুন সূরা বাক্বারার ১০৬ নং আয়াতের টীকা।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:১০২ قُلۡ نَزَّلَهٗ رُوۡحُ الۡقُدُسِ مِنۡ رَّبِّكَ بِالۡحَقِّ لِیُـثَبِّتَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ هُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾

বল, রুহুল কুদস (জীবরীল) একে তোমার রবের পক্ষ হতে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। আল-বায়ান

বল, ‘এ কুরআন তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রুহুল কুদূস (জিবরীল) ঠিক ঠিকভাবে নাযিল করেছেন ঈমানদারদেরকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এবং মুসলিমদের হিদায়াত ও সুসংবাদ দানের জন্য।’ তাইসিরুল

তুমি বলঃ তোমার রবের নিকট হতে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং হিদায়াত ও সুসংবাদ স্বরূপ আত্মসমর্পনকারীদের জন্য। মুজিবুর রহমান

Say, [O Muhammad], "The Pure Spirit has brought it down from your Lord in truth to make firm those who believe and as guidance and good tidings to the Muslims." Sahih International

১০২. বলুন, আপনার রবের কাছ থেকে রূহুল-কুদুস(১) (জিবরীল) যথাযথ ভাবে একে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।

(১) “রুহুল কুদুস” এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে ‘পবিত্র রূহ বা ‘পবিত্রতার রূহ’। পারিভাষিকভাবে এ উপাধিটি দেয়া হয়েছে জিবরীল আলাইহিস সালামকে। এখানে অহী বাহক ফেরেশতার নাম না নিয়ে তার উপাধি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রোতাদেরকে এ সত্যটি জানানো যে, এমন একটি রূহ এ বাণী নিয়ে আসছেন যিনি সকল প্রকার মানবিক দুর্বলতা ও দোষ-ত্রুটি মুক্ত। তিনি একটি নিখাদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রূহ। আল্লাহর কালাম পূর্ণ আমানতদারীর সাথে পৌছিয়ে দেয়াই তার কাজ। তিনি যে যথার্থ কাজই করেন এবং কেবলমাত্র আল্লাহর নির্দেশেরই পূর্ণ বাস্ত বায়ন করেন তা আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আল-বাকারাহঃ ৯৭, সূরা আস-শু'আরাঃ ১৯২–১৯৪, সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) তুমি বল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে জিবরীল সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছে,[1] যারা বিশ্বাসী তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য[2] এবং তা আত্মসমর্পণকারীদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ।’ [3]

[1] অর্থাৎ, এই কুরআন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রচনা নয়। বরং তা জিবরীল (আঃ)-এর মত পবিত্র সত্তা সত্যসহ রবের নিকট হতে তা অবতীর্ণ করেছেন। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে {نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ عَلَى قَلْبِكَ} এ (কুরআন)-কে রূহুল আমীন (বিশ্বস্ত রূহ) জিবরীল তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছে। (সূরা শু'আরা ১৯৩-১৯৪)

[2] এই জন্য যে, তারা বলে নাসেখ-মানসূখ (রহিত ও রহিতকারী) উভয় বিধানই আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া রহিত করণের উপকারিতা যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়, তখন তাদের হৃদয়ে দৃঢ়তা ও ঈমানী মজবুতি সৃষ্টি হয়।

[3] আর এই কুরআন মুসলিমদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ স্বরূপ। কারণ কুরআন বৃষ্টির মত যার দ্বারা কিছু কিছু মাটি প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে কিছু মাটি কাঁটাগাছ ও আগাছা ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না। মুমিনের অন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন যা কুরআনের বর্কতে এবং ঈমানের আলোকে আলোকিত হয়। আর কাফেরের অন্তর লবণাক্ত মাটির মত যা কুফর ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে ডুবে থাকে, যেখানে কুরআনের বৃষ্টি ও আলো কোন কাজে লাগে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:১০৩ وَ لَقَدۡ نَعۡلَمُ اَنَّهُمۡ یَقُوۡلُوۡنَ اِنَّمَا یُعَلِّمُهٗ بَشَرٌ ؕ لِسَانُ الَّذِیۡ یُلۡحِدُوۡنَ اِلَیۡهِ اَعۡجَمِیٌّ وَّ هٰذَا لِسَانٌ عَرَبِیٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۰۳﴾

আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা। আল-বায়ান

আমি জানি, তারা বলে, ‘এক মানুষ তাকে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-কে] শিখিয়ে দেয়।’ অথচ দুষ্টবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে তারা যে লোকটির কথা বলছে তার ভাষা তো অনারব, অপরপক্ষে কুরআনের ভাষা হল স্পষ্ট আরবী। তাইসিরুল

আমিতো জানিই তারা বলেঃ তাকে শিক্ষা দেয় জনৈক ব্যক্তি। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষাতো আরাবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরাবী ভাষা। মুজিবুর রহমান

And We certainly know that they say, "It is only a human being who teaches the Prophet." The tongue of the one they refer to is foreign, and this Qur'an is [in] a clear Arabic language. Sahih International

১০৩. আর আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো কেবল একজন মানুষ(১) শিক্ষা দেয়। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয়; অথচ এটা (কুরআন) হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।

(১) বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মক্কার কাফেররা তাদের মধ্য থেকে কারো সম্পর্কে এ ধারণা করতো। এক হাদীসে তার নাম বলা হয়েছে ‘জাবর’। সে ছিল আমের আল হাদরামীর রোমীয় ক্রীতদাস। অন্য এক বর্ণনায় খুয়াইতিব ইবনে আবদুল উযযার এক গোলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার নাম ছিল ‘আইশ বা ইয়াঈশ’। তৃতীয় এক বর্ণনায় ইয়াসারের নাম নেয়া হয়েছে। তার ডাকনাম ছিল আবু ফুকাইহাহ। সে ছিল মক্কার এক মহিলার ইহুদী গোলাম। অন্য একটি বর্ণনায় বিল’আম নামক একটি রোমীয় গোলামের কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

মোটকথা: এদের মধ্য থেকে যেই হোক না কেন, মক্কার কাফেররা শুধুমাত্র এক ব্যক্তি তাওরাত ও ইন্জিল পড়ে এবং তার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতও হয়েছে শুধুমাত্র এটা দেখেই নিসংকোচে এ অপবাদ তৈরী করে ফেললো যে, আসলে এ ব্যক্তিই এ কুরআন রচনা করছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নামে নিজের পক্ষ থেকে এটিই পেশ করছেন। এভাবে মক্কার কুরাইশ কাফেররা সামান্য কিছু তাওরাত ও ইনজিল পড়তে পারতো এমন একজন অখ্যাত দাসকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান ব্যক্তিত্বের মোকাবিলায় যোগ্যতর বিবেচনা করছিল। তারা ধারণা করছিল, এ দুর্লভ রত্নটি ঐ কয়লা খণ্ড থেকেই দ্যুতি লাভ করছে। কাফের কুরাইশদের এ ধারণাটি নিশ্চয় হাস্যকর। [দেখুন, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) আমি তো জানিই, তারা বলে, ‘তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ।’[1] তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; আর এ তো স্পষ্ট আরবী ভাষা। [2]

[1] কিছু (গোলাম) দাস ছিল, যারা তওরাত ও ইঞ্জীল সর্ম্পকে অবগত ছিল। প্রথমে তারা খ্রিষ্টান বা ইয়াহুদী ছিল, পরে মুসলমান হয়ে যায়। তাদের ভাষাও ছিল অশুদ্ধ। মক্কার কাফেররা এদের প্রতিই ইঙ্গিত করে বলত যে, অমুক দাস মুহাম্মাদকে কুরআন শিক্ষা দেয়!

[2] মহান আল্লাহ উত্তরে বললেন, এরা যাদের কথা বলে, তারা তো শুদ্ধভাবে আরবীও বলতে পারে না, অথচ কুরআন এমন বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট আরবী ভাষায়, যার সাহিত্যশৈলী সুউচ্চ এবং যার অলৌকিকতা অতুলনীয়। চ্যালেঞ্জের পরও আজ পর্যন্ত তার মত একটি সূরা কেউ আনতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক মিলেও এর সমতুল বাণী রচনা করতে অক্ষম। কেউ বিশুদ্ধ আরবী বলতে না পারলে আরবের লোকেরা তাকে বোবা বলত এবং অনারবীকেও বোবা বলত। যেহেতু অলংকার ও শব্দস্বাচ্ছন্দ্যে অন্যান্য ভাষা আরবী ভাষারপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:২ وَ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡكِتٰبَ وَ جَعَلۡنٰهُ هُدًی لِّبَـنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَلَّا تَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِیۡ وَكِیۡلًا ؕ﴿۲﴾

আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তা বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ বানিয়েছি। যেন তোমরা আমাকে ছাড়া কোন কর্মবিধায়ক না বানাও। আল-বায়ান

আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম আর সেটাকে করেছিলাম ইসরাঈল বংশীয়দের জন্য সত্যপথের নির্দেশক। (তাতে নির্দেশ দিয়েছিলাম) যে, আমাকে ছাড়া অন্যকে কর্ম নিয়ন্তা গ্রহণ করো না। তাইসিরুল

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাকে করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্য পথ নির্দেশক। আমি আদেশ করেছিলাম, তোমরা আমি ব্যতীত অপর কেহকেও কর্ম বিধায়করূপে গ্রহণ করনা। মুজিবুর রহমান

And We gave Moses the Scripture and made it a guidance for the Children of Israel that you not take other than Me as Disposer of affairs, Sahih International

২. আর আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তাকে করেছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক(১) যাতে তোমরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কর্মবিধায়করূপে গ্রহন না করো;(২)

১. মাত্র একটি আয়াতে মি'রাজের কথা আলোচনা করে তারপর হঠাৎ বনী ইসরাঈলের আলোচনা শুরু করে দেয়া হয়েছে। এটি মূলত: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করা। কারণ হচ্ছে, সাধারণত কুরআনের বহু স্থানে মূসা ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা, তাওরাত ও কুরআনের আলোচনা একসাথে থাকে। [ইবন কাসীর]

২. কর্মবিধায়ক তথা অভিভাবক অর্থাৎ বিশ্বস্ততা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভরসার ভিত্তিস্বরূপ যার উপর নির্ভর করা যায়। নিজের যাবতীয় বিষয় হাতে সোপর্দ করে দেয়া যায়। পথনির্দেশনা ও সাহায্য লাভ করার জন্য যার দিকে রুজু করা যায়। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তা'আলা। তাঁকে ব্যতীত আর কাউকে অভিভাবক, বন্ধু, সাহায্যকারী, ইলাহ যেন না মানা হয়। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক নবীর কাছেই এই বলে পাঠিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া যেন আর কারও ইবাদাত করা না হয়। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তা(কে) করেছিলাম বানী ইস্রাঈলের জন্য পথ-নির্দেশক; (বলেছিলাম,) তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকেও কর্মবিধায়ক রূপে গ্রহণ করো না ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৪ وَ قَضَیۡنَاۤ اِلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ فِی الۡكِتٰبِ لَتُفۡسِدُنَّ فِی الۡاَرۡضِ مَرَّتَیۡنِ وَ لَتَعۡلُنَّ عُلُوًّا كَبِیۡرًا ﴿۴﴾

আর আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম যে, তোমরা যমীনে দু’বার অবশ্যই ফাসাদ করবে এবং ঔদ্ধত্য দেখাবে মারাত্মকভাবে। আল-বায়ান

আমি কিতাবের মাধ্যমে বানী ইসরাঈলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, তোমরা অবশ্য অবশ্যই পৃথিবীর বুকে দু’ দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর অবশ্য অবশ্যই অত্যধিক গর্বে ফুলে উঠবে। তাইসিরুল

এবং আমি কিতাবে (তাওরাতে) প্রত্যাদেশ দ্বারা বানী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় উদ্ধত্যকারী হবে। মুজিবুর রহমান

And We conveyed to the Children of Israel in the Scripture that, "You will surely cause corruption on the earth twice, and you will surely reach [a degree of] great haughtiness. Sahih International

৪. আর আমরা কিতাবে বনী ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম(১) যে, অবশ্যই তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হবে।

১. কোন কোন মুফাস্‌সির বলেন, এখানে কিতাব বলতে এমন কিতাব বুঝানো হয়েছে। যার মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে এ বিষয়ে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখানে قَضَيْنَا শব্দের অর্থ হবে, ফয়সালা জানিয়ে দেয়া, খবর দেয়া। [আত-তাফসীরুস সহীহ] এ অর্থে কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। বলা হয়েছে, (وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ) “আমি তাকে এ বিষয়ে ফয়সালা জানিয়ে দিলাম যে, ভোরে ওদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।” [সূরা আল-হিজরঃ ৬৬] কারও কারও মতে, এখানে قَضَيْنَا শব্দটির অর্থ أَوْحَيْنَا বা আমরা ওহী প্রেরণ করেছি। এর কারণ এখানে শব্দটির পরে إِلَىٰ এসেছে। যদি জানানো বা খবর দেয়ার অর্থ হতো, তবে এর পরে إِلَىٰ ব্যবহৃত হতো না। আর যদি ফয়সালা করা বা বিচার করা অর্থ হতো, তবে শব্দটির পরে على আসতো। আর যদি পূর্ণ করার অর্থ হতো, তবে শব্দটির পরে ل আসত। সুতরাং এখানে قَضَيْنَا শব্দের অর্থ, أَوْحَيْنَا বা আমরা ওহী প্রেরণ করেছি হওয়াই বেশী যুক্তিযুক্ত। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) আর আমি (তাওরাত) কিতাবে বানী ইস্রাঈলকে জানিয়েছিলাম যে, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দু-দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হবে ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৯ اِنَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَهۡدِیۡ لِلَّتِیۡ هِیَ اَقۡوَمُ وَ یُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا كَبِیۡرًا ۙ﴿۹﴾

নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই এ কুরআন সেই পথ দেখায় যা সোজা ও সুপ্রতিষ্ঠিত, আর যারা সৎ কাজ করে সেই মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। তাইসিরুল

এই কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশ করে এবং সৎ কর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। মুজিবুর রহমান

Indeed, this Qur'an guides to that which is most suitable and gives good tidings to the believers who do righteous deeds that they will have a great reward. Sahih International

৯. নিশ্চয় এ কুরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে যা আকওয়াম(১) (সরল, সুদৃঢ়) এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

১. কুরআন যে পথনির্দেশ করে, তাকে ‘আকওয়াম’ বলা হয়েছে। ‘আকওয়াম’ সে পথ, যা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিকটবর্তী, সহজ এবং বিপদাপদমুক্তও। সুতরাং কুরআনের প্রদর্শিত পথটি সহজ, সরল, সঠিক, কল্যাণকর, ইনসাফপূর্ণ। [আদওয়াউল বায়ান] এ থেকে বোঝা গেল যে, কুরআন মানুষের জীবনের জন্যে যেসব বিধি-বিধান দান করে, সেগুলোতে এ উপরোক্ত গুণগুলো বিদ্যমান রয়েছে। তাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। যদিও মুলহিদ ও আল্লাহবিরোধী মানুষ স্বল্পবুদ্ধির কারণে মাঝে মাঝে এ পথকে দুৰ্গম ও বিপদসংকুল মনে করতে থাকে এবং দ্বীনে ইসলামে বিভিন্নভাবে বদনামী করে থাকে। তারা মূলত আল্লাহর বিধানসমূহের হিকমত ও রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞ ও জানতে অপারগ। [আদওয়াউল বায়ান]

কিন্তু রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি জগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং ভূত ও ভবিষ্যৎ তাঁর কাছে সমান। একমাত্র তিনিই এ সত্য জানতে পারেন যে, মানুষের উপকার কোন কাজে ও কিভাবে বেশী। স্বয়ং মানুষ যেহেতু সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, তাই সে নিজের ভালমন্দও পুরোপুরি জানতে পারে না। কুরআন যে উত্তম পথের পথনির্দেশ করে তার উদাহরণ হলো, কুরআন তাওহীদের দিকে পথ নির্দেশ করে, যা মানবজীবনের সবচেয়ে চরম ও পরম পাওয়া। কুরআন তাওহীদের তিনটি অংশ অর্থাৎ প্রভুত্বে, নাম ও গুণে এবং ইবাদতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয় যা মানুষের জীবনকে এক সুন্দর ও সাবলীল গতিতে নিয়ে যায়। কুরআন তালাকের ক্ষমতা পুরুষের হাতে দিয়েছে।

কারণ, ক্ষেতের মালিকই জানেন কিভাবে তিনি সেটা পরিচালনা করবেন। কুরআন মিরাসের ক্ষেত্রে ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দিয়েছে। এটা তাঁর প্রাজ্ঞতার প্রমাণ। অনুরূপভাবে কুরআন কিসাসের প্রতি পথনির্দেশ করে যা মানুষের জানের নিরাপত্তা বিধান করে। তদ্রুপ কুরআন মানুষকে চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটার নির্দেশ দেয় যা মানুষের মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তেমনিভাবে কুরআন মানুষকে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর মেরে হত্যা এবং বেত্রাঘাতের প্রতি দিকনির্দেশনা দেয় যা মানুষের সম্মানের হেফাজতের গ্যারান্টি দেয়। সুতরাং কুরআন সত্যিকার অর্থেই এমন পথের দিকনির্দেশনা দেয় যা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে নিকটবর্তী, সহজ ও বিপদমুক্ত। [আদওয়াউল বায়ান; সংক্ষেপিত]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথনির্দেশ করে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৪১ وَ لَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِیۡ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لِیَذَّكَّرُوۡا ؕ وَ مَا یَزِیۡدُهُمۡ اِلَّا نُفُوۡرًا ﴿۴۱﴾

আর অবশ্যই আমি এ কুরআনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করে। আল-বায়ান

আমি এ কুরআনে নানাভাবে (বিষয়াবলী) ব্যাখ্যা করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে, কিন্তু তা তাদের (সত্য হতে) পলায়নের মনোবৃত্তিই বৃদ্ধি করেছে। তাইসিরুল

এই কুরআনে বহু নীতিবাক্য আমি বারবার বিবৃত করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তাতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। মুজিবুর রহমান

And We have certainly diversified [the contents] in this Qur'an that mankind may be reminded, but it does not increase the disbelievers except in aversion. Sahih International

৪১. আর অবশ্যই আমরা এ কুরআনে (বহু বিষয়) বারবার বিবৃত করেছি। যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে। কিন্তু এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) এই কুরআনে বহু কথাই আমি বারবার (বিভিন্নভাবে) বিবৃত করেছি,[1] যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তাতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।

[1] ‘বারবার (বিভিন্নভাবে) বিবৃত’ করার অর্থ, কখনো ওয়াজ ও নসীহত রূপে, কখনো প্রমাণাদি পেশ করে, আশা দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে এবং বহু দৃষ্টান্ত ও উপমা দিয়ে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী উল্লেখ করে বিভিন্নভাবে একই কথা বারবার বিবৃত হয়েছে; যাতে মানুষ বুঝতে ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তারা কুফরী ও শিরকের অন্ধকারে এমনভাবে ডুবে আছে যে, তারা সত্যের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে তা হতে আরো দূরে সরে গেছে। কারণ, তারা মনে করে যে, এই কুরআন যাদু, গণকের কথা এবং কবির কাব্যগ্রন্থ। অতএব এই কুরআন থেকে কিভাবে তারা সুপথ পেতে পারে? কেননা, কুরআনের দৃষ্টান্ত হল বৃষ্টির মত। যদি তা (বৃষ্টি) উর্বর ভূমিতে বর্ষায়, তবে তার দ্বারা শস্য-শ্যামল ভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু যদি তা কোন নোংরা ভূমিতে পড়ে, তবে বৃষ্টির কারণে তার দুর্গন্ধ আরো বেড়ে যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৪৫ وَ اِذَا قَرَاۡتَ الۡقُرۡاٰنَ جَعَلۡنَا بَیۡنَكَ وَ بَیۡنَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ حِجَابًا مَّسۡتُوۡرًا ﴿ۙ۴۵﴾

আর তুমি যখন কুরআন পড় তখন তোমার ও যারা আখিরাতে ঈমান আনে না তাদের মধ্যে আমি এক অদৃশ্য পর্দা দিয়ে দেই। আল-বায়ান

তুমি যখন কুরআন পাঠ কর তখন আমি তোমার আর যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা স্থাপন ক’রে দিয়েছি। তাইসিরুল

তুমি যখন কুরআন পাঠ কর তখন তোমার ও যারা পরলোকে বিশ্বাস করেনা তাদের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা টেনে দিই। মুজিবুর রহমান

And when you recite the Qur'an, We put between you and those who do not believe in the Hereafter a concealed partition. Sahih International

৪৫. আর আপনি যখন কুরআন পাঠ করেন তখন আমরা আপনার ও যারা আখিরাতের উপর ঈমান রাখে না তাদের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) তুমি যখন কুরআন পাঠ কর, তখন তোমার ও যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তাদের মধ্যে এক আবরক পর্দা করে দিই। [1]

[1] مَسْتُوْرٌ অর্থ হল سَاتِر (আবরক বা অন্তরাল) অথবা مستور عن الأبصار (চোখের অন্তরালে) তাই তারা তা দেখে না। এ ছাড়াও তাদের ও হিদায়াতের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৪৬ وَّ جَعَلۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ اَكِنَّۃً اَنۡ یَّفۡقَهُوۡهُ وَ فِیۡۤ اٰذَانِهِمۡ وَقۡرًا ؕ وَ اِذَا ذَكَرۡتَ رَبَّكَ فِی الۡقُرۡاٰنِ وَحۡدَهٗ وَلَّوۡا عَلٰۤی اَدۡبَارِهِمۡ نُفُوۡرًا ﴿۴۶﴾

আর আমি তাদের অন্তরের উপর ঢাকনা রেখে দিয়েছি, যাতে তারা তা বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে দিয়েছি বধিরতা। আর যখন তুমি কুরআনে তোমার রব এক হওয়ার কথা উল্লেখ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালায়। আল-বায়ান

আর আমি তাদের অন্তরের উপর এক আবরণ দিয়ে দিয়েছি যাতে তারা কুরআন বুঝতে না পারে, আর তাদের কানে সৃষ্টি করেছি বধিরতা। আর যখন তুমি কুরআনে তোমার প্রতিপালকের একত্বের উল্লেখ কর, তখন তারা (সত্য থেকে) পালিয়ে পিছনে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাইসিরুল

আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি। তোমার রাব্ব এক, এটা যখন তুমি কুরআন হতে আবৃত্তি কর তখন তারা সরে পড়ে। মুজিবুর রহমান

And We have placed over their hearts coverings, lest they understand it, and in their ears deafness. And when you mention your Lord alone in the Qur'an, they turn back in aversion. Sahih International

৪৬. আর আমরা তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দিয়েছি যেন তারা তা বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে দিয়েছি বধিরতা; আপনার রব এক, এটা যখন আপনি কুরআন থেকে উল্লেখ করেন তখন তারা পিঠ দেখিয়ে সরে পড়ে।(১)

১. অর্থাৎ আপনি যে একমাত্র আল্লাহকে নিজের রব গণ্য করেন, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করেন, তারা যাদের ভক্তি করে তাদের কোন কথা বলেন না, এটা তাদের কাছে বড়ই বিরক্তিকর ঠেকে। মানুষ কেবল আল্লাহর কথা বলতে থাকবে, বুযর্গদের কার্যকলাপের কোন কথা বলবে না, মাযার, পবিত্ৰস্থান ইত্যাদির অনুগ্রহ ও দাক্ষিণ্যলাভের কোন স্বীকৃতি দেবে না এবং তাদের উদ্দেশ্যে কোন প্রশংসাবাণীও নিবেদন করবে না, এ ধরনের আচরণ তাদের একদম পছন্দ নয়। কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ কথাটির প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পাই। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে যে, “শুধু এক আল্লাহর কথা বলা হলে যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয়। এবং আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্যগুলোর উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়”। [সূরা আয-যুমারঃ ৪৫]

কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন, মুসলিমরা যখন বলতঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই), তখন কাফেররা সেটা অস্বীকার করত। আর এটা তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিত। অনুরূপভাবে তা ইবলীস ও তার দলবলকে ক্লিষ্ট করত। তখন আল্লাহ চাইলেন যে, তিনি তাঁর কালেমাকে প্রসার করবেন, উন্নত করবেন, সাহায্য করবেন এবং যারা এটার বিরোধিতা করবে তাদেরও বিপক্ষে এটাকেই বিজয়ী করবেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি, যেন তারা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা দিয়েছি। আর যখন তুমি তোমার প্রতিপালকের একত্বের কথা কুরআনে উল্লেখ কর, তখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে সরে পড়ে। [1]

[1] أَكِنَّةٌ হল, كِنَانٌ এর বহুবচন। এমন পর্দা, যা অন্তঃকরণে পড়ে। وَقْرٌ কানের এমন বোঝা বা ছিদ্র বন্ধ করার এমন জিনিস যা কুরআন শোনার পথে প্রতিবন্ধক হয়। অর্থাৎ, তাদের অন্তর কুরআন উপলব্ধি করতে অক্ষম এবং কান কুরআন শুনে হিদায়াত লাভ করতে অপারগ। আর আল্লাহর তাওহীদকে তারা এত ঘৃণা করে যে, তা শুনে পালিয়ে যায়। আল্লাহর সাথে এই কাজগুলোর সম্পর্ক কেবল সৃষ্টির দিক দিয়ে, অন্যথা হিদায়াত থেকে তাদের বঞ্চিত হওয়া তাদেরই অবাধ্যতার ফল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৮২ وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا ﴿۸۲﴾

আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়। আল-বায়ান

আমি কুরআন হতে (ক্রমশঃ) অবতীর্ণ করি যা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমাত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। তাইসিরুল

আমি অবতীর্ণ করেছি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া, কিন্তু তা সীমা লংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। মুজিবুর রহমান

And We send down of the Qur'an that which is healing and mercy for the believers, but it does not increase the wrongdoers except in loss. Sahih International

৮২. আর আমরা নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত(১) কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।(২)

১. কুরআন যে অন্তরের ঔষধ এবং শির্ক, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগসমূহ থেকে মনের মুক্তিদাতা, এটা সৰ্বজনস্বীকৃত সত্য। মুমিনরা এর দ্বারা উপকৃত হয় আর কাফেররা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না।

২. অর্থাৎ যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথ প্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের জন্য তা নিরাময়। কিন্তু যেসব যালেম একে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এ কুরআন তাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। একথাটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ছোট্ট তাৎপর্যবহ বাক্যের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কুরআন হয় তোমার সপক্ষে প্রমাণ আর নয়তো তোমার বিপক্ষে প্রমাণ। [মুসলিমঃ ২২৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮২) আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও করুণা, কিন্তু তা সীমালংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। [1]

[1] এই অর্থই সূরা ইউনুসের ৫৭নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। তার টীকা দ্রষ্টব্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৮৮ قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِهٖ وَ لَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ ظَهِیۡرًا ﴿۸۸﴾

বল, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’। আল-বায়ান

বল, ‘এ কুরআনের মত একখানা কুরআন আনার জন্য যদি সমগ্র মানব আর জ্বীন একত্রিত হয় তবুও তারা তার মত আনতে পারবে না, যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।’ তাইসিরুল

বলঃ যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবেনা। মুজিবুর রহমান

Say, "If mankind and the jinn gathered in order to produce the like of this Qur'an, they could not produce the like of it, even if they were to each other assistants." Sahih International

৮৮. বলুন, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৮) বল, ‘যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জীন সমবেত হয় ও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না।’ [1]

[1] কুরআন মাজীদের ব্যাপারে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ ইতিপূর্বেও কয়েকটি স্থানে উল্লিখিত হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ আজও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং তার জবাবের পিপাসা আজও পর্যন্ত অনিবৃত্তই আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৮৯ وَ لَقَدۡ صَرَّفۡنَا لِلنَّاسِ فِیۡ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ مِنۡ كُلِّ مَثَلٍ ۫ فَاَبٰۤی اَكۡثَرُ النَّاسِ اِلَّا كُفُوۡرًا ﴿۸۹﴾

আর অবশ্যই মানুষের জন্য এ কুরআনে আমি নানাভাবে বিভিন্ন উপমা বর্ণনা করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী না করে থাকেনি। আল-বায়ান

আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য যাবতীয় দৃষ্টান্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ঈমান গ্রহণ করতে অস্বীকার করে কেবল কুফরিই করল। তাইসিরুল

আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য বিভিন্ন উপমা দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয়না। মুজিবুর রহমান

And We have certainly diversified for the people in this Qur'an from every [kind] of example, but most of the people refused [anything] except disbelief. Sahih International

৮৯. আর অবশ্যই আমরা মানুষের জন্য এ কুরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি; কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয়নি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) আমি অবশ্যই মানুষের জন্য এই কুরআনে সর্বপ্রকার উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সত্য প্রত্যাখ্যান ব্যতীত ক্ষান্ত হল না। [1]

[1] এই অর্থ এই সূরার ৪১ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১০৫ وَ بِالۡحَقِّ اَنۡزَلۡنٰهُ وَ بِالۡحَقِّ نَزَلَ ؕ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ اِلَّا مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا ﴿۱۰۵﴾ۘ

আর আমি তা যথাযথভাবে নাযিল করেছি এবং যথাযথভাবে তা নাযিল হয়েছে। আমি তো তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি। আল-বায়ান

এ কুরআনকে আমি সত্যতা সহকারে নাযিল করেছি আর সত্যতা সহকারেই তা নাযিল হয়েছে। আমি তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি। তাইসিরুল

আমি সত্য সত্যই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং তা সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে; আমিতো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। মুজিবুর রহমান

And with the truth We have sent the Qur'an down, and with the truth it has descended. And We have not sent you, [O Muhammad], except as a bringer of good tidings and a warner. Sahih International

১০৫. আর আমরা সত্য-সহই কুরআন নাযিল করেছি এবং তা সত্য-সহই নাযিল হয়েছে।(১) আর আমরা তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।

(১) আয়াতের ভাবাৰ্থ হলো, আমরা এ কুরআনকে হক তথা সঠিক তথ্যসম্বলিত করে নাযিল করেছি। তাতে আল্লাহ তাঁর আপনি ইলম যা তিনি তোমাদেরকে জানাতে চেয়েছেন যেমন তার নির্দেশ, নিষেধ, হুকুম-আহকামসমূহ সম্বলিত করেছেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, “আর এ কুরআন হক তথা সঠিকভাবেই নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ হে নবী! এ কুরআন আপনার কাছে সংরক্ষিত, অবিকৃত ও অমিশ্রিতভাবে, কোন কিছু বেশী বা কম না করেই নাযিল হয়েছে। কেননা, এটা তো সে মহাশক্তিশালী স্বত্তার পক্ষ থেকে এসেছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) আমি সত্যসহই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং সত্যসহই তা অবতীর্ণ হয়েছে;[1] আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। [2]

[1] অর্থাৎ, সুরক্ষিত অবস্থায় তোমার কাছে পৌঁছে গেছে। পথে এর মধ্যে কোন প্রকারের কম-বেশী এবং কোন প্রকারের পরিবর্তন ও (এর সাথে) কোন কিছুর মিশ্রণ ঘটেনি। কারণ, এটাকে নিয়ে আগমনকারী ফিরিশতা হলেন, شَدِيْدُ الْقُوَى، الأَمِيْنُ، المَكِيْنُ، المُطَاعُ فِي الْمَلاءِ الأَعْلَى (অর্থাৎ, চরম শক্তিশালী বিশ্বস্ত-আমানতদার, মর্যাদাপ্রাপ্ত, ফিরিশতার মাঝে তাঁর আনুগত্য করা হয়। তিনি হলেন ফিরিশতাদের সর্দার ও মান্যবর) এগুলি এমন গুণাবলী, যা জিবরীল (আঃ)-এর ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।

[2] সুসংবাদদাতা আনুগত্যশীল মু’মিনদের জন্য এবং সতর্ককারী অবাধ্যজনদের জন্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১০৬ وَ قُرۡاٰنًا فَرَقۡنٰهُ لِتَقۡرَاَهٗ عَلَی النَّاسِ عَلٰی مُكۡثٍ وَّ نَزَّلۡنٰهُ تَنۡزِیۡلًا ﴿۱۰۶﴾

আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে। আল-বায়ান

আমি এ কুরআনকে ভাগে ভাগে বিভক্ত করেছি যাতে তুমি থেমে থেমে মানুষকে তা পাঠ করে শুনাতে পার, কাজেই আমি তা ক্রমশঃ নাযিল করেছি। তাইসিরুল

আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি। মুজিবুর রহমান

And [it is] a Qur'an which We have separated [by intervals] that you might recite it to the people over a prolonged period. And We have sent it down progressively. Sahih International

১০৬. আর আমরা কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে; যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন। ক্রমে ক্রমে এবং আমরা তা পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।(১)

(১) এখানে কুরআনকে একত্রে নাযিল না করে খন্ড খন্ড ভাবে নাযিল করার একটি কারণ বর্ণনা হয়েছে। আর তা হল, পরিবেশ পরিস্থিতি, প্রশ্নোত্তর ও রাসূলের অন্তরকে প্রশান্তি প্ৰদান করা। তবে আল্লাহ তা'আলা লাইলাতুল কদরের রাত্ৰিতে এ কুরআনকে পুরোপুরি নাযিল করে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে নাযিল করেছেন বলে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়। [মুস্তাদরাকে হাকোমঃ ২/৩৬৮, ইবনে হাজার আল-আসকালানীঃ ফাতহুল বারীঃ ৪/৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড-খন্ডভাবে[1] যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।

[1] فَرَقْنَاهُ এর দ্বিতীয় এক অর্থ, بَيَّنَّاهُ وَأَوْضَحْنَاهُ (এটাকে আমি খুলে খুলে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি)ও করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১০৭ قُلۡ اٰمِنُوۡا بِهٖۤ اَوۡ لَا تُؤۡمِنُوۡا ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ مِنۡ قَبۡلِهٖۤ اِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ سُجَّدًا ﴿۱۰۷﴾ۙ

বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আল-বায়ান

বল, ‘তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর কিংবা বিশ্বাস না কর, ইতোপূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদেরকে যখন কুরআন পাঠ করে শুনানো হয়, তখন তারা অধোমুখে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে।’ তাইসিরুল

বলঃ তোমরা বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের সামনে যখন আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বিনয়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে । মুজিবুর রহমান

Say, "Believe in it or do not believe. Indeed, those who were given knowledge before it - when it is recited to them, they fall upon their faces in prostration, Sahih International

১০৭. বলুন, তোমরা কুরআনে ঈমান আন আর নাই ঈমান আন, নিশ্চয় যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা তেলাওয়াত করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) তুমি বল, ‘তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয়, তখনই তারা চেহারা লুটিয়ে সিজদায় পড়ে।[1]

[1] অর্থাৎ, সেই আলেমগণ যাঁরা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বিগত কিতাবগুলো পড়েছেন এবং তাঁরা অহীর প্রকৃতত্ব ও রিসালাতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সিজদায় পড়ে যান যে, তিনি তাঁদেরকে শেষ রসূল (সাঃ)-কে চেনার তওফীক দিয়েছেন এবং কুরআন ও রিসালাতের উপর ঈমান আনার সৌভাগ্য দান করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ عَلٰی عَبۡدِهِ الۡكِتٰبَ وَ لَمۡ یَجۡعَلۡ لَّهٗ عِوَجًا ؕ﴿ٜ۱﴾

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা । আল-বায়ান

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, আর তাতে কোন বক্রতার অবকাশ রাখেননি। তাইসিরুল

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর দাসের প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এতে তিনি অসঙ্গতি রাখেননি। মুজিবুর রহমান

[All] praise is [due] to Allah, who has sent down upon His Servant the Book and has not made therein any deviance. Sahih International

১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন(১) এবং তাতে তিনি বক্রতা রাখেননি;(২)

(১) সূরার শুরুতে মহান আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন। এ ধরনের প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। প্রথম ও শেষ সর্বাবস্থায় শুধু তাঁরই প্রশংসা করা যায়। তিনি তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কিতাব নাযিল করেছেন সুতরাং তিনি প্রশংসিত; কারণ এর মাধ্যমে তিনি মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছেন। এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কী-ই বা আছে। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ এর মধ্যে এমন কোন কথাবার্তা নেই যা বুঝতে পারা যায় না। আবার সত্য ও ন্যায়ের সরল রেখা থেকে বিচুত এমন কথাও নেই যা মেনে নিতে কোন সত্যপন্থী লোক ইতস্তত করতে পারে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এতে তিনি কোন প্রকার বক্রতা রাখেননি।[1]

[1] ‘বক্রতা’ অর্থাৎ, অসঙ্গতি, পরস্পরবিরোধিতা, মতবিরোধিতা বা জটিলতা রাখেননি। অথবা এতে (যে পথ নির্দেশিত হয়েছে তার মধ্যে) কোন বক্রতা রাখেননি এবং মধ্যম পন্থা হতে বিচ্যুতি ঘটার কোন কিছু এতে নেই। বরং এটাকে সুপ্রতিষ্ঠিত, সরল ও সোজা রাখা হয়েছে। অথবা قَيِّم অর্থ, এমন কিতাব, যাতে বান্দাদের সেই সব ব্যাপারের প্রতি খেয়াল রাখা ও যত্ন নেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার মঙ্গল নিহিত আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:২ قَیِّمًا لِّیُنۡذِرَ بَاۡسًا شَدِیۡدًا مِّنۡ لَّدُنۡهُ وَ یُبَشِّرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا حَسَنًا ۙ﴿۲﴾

সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। আল-বায়ান

(তিনি সেটাকে করেছেন) সত্য, স্পষ্ট ও অকাট্য তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য। আর যারা সৎকাজ করে সেই মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম প্রতিফল। তাইসিরুল

একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং বিশ্বাসীগণ, যারা সৎকাজ করে তাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার – মুজিবুর রহমান

[He has made it] straight, to warn of severe punishment from Him and to give good tidings to the believers who do righteous deeds that they will have a good reward Sahih International

২. সরলরূপে(১), তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং মুমিনগণ যারা সৎকাজ করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার,

(১) এমন সরল ও সহজরূপে যে তাতে নেই কোন স্ববিরোধিতা। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনি একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত; যাতে ওটা তাঁর নিকট হতে (অবতীর্ণ)[1] কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সৎকর্মশীল বিশ্বাসীগণ এই সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার (জান্নাত);

[1] مِنْ لَّدُنْهُ (তাঁর নিকট হতে) অর্থাৎ, আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১০১ থেকে ১২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »