হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
ওহে মু’মিনগণ! তোমরা (কোন বিষয়েই) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আগে বেড়ে যেয়ো না, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রনী হয়োনা এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, do not put [yourselves] before Allah and His Messenger but fear Allah. Indeed, Allah is Hearing and Knowing. Sahih International
১. হে ঈমানদারগণ(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না আর তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার ঘটনা এই যে, একবার বনী তামীম গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়। এই গোত্রের শাসনকর্তা কাকে নিযুক্ত করা হবে তখন এ বিষয়েই আলোচনা চলছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাকা’ ইবন মা'বাদ ইবন যুরারাহর নাম প্রস্তাব করলেন এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আকরা’ ইবন হাবিসের নাম প্রস্তাব করলেন এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মধ্যে মজলিসেই কথাবার্তা হলো এবং ব্যাপারটি শেষ পর্যন্ত কথা কাটাকাটিতে উন্নীত হয়ে উভয়ের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতসমূহ নাযিল হয় ৷ [বুখারী: ৪৮৪৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না[1] এবং আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[1] এর অর্থ হলো, দ্বীনের ব্যাপারে নিজে থেকে কোন ফায়সালা করো না (কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না, কোন ফতোয়া দিয়ো না)। এবং স্বীয় বিবেক-বুদ্ধিকে তার উপর প্রাধান্য দিয়ো না। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। নিজের পক্ষ থেকে দ্বীনের সাথে কোন কিছু সংযোজন বা বিদআত রচনা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অতিক্রম করার এমন দুঃসাহসিকতা, যা কোন ঈমানদারের জন্য শোভনীয় নয়। অনুরূপ কুরআন ও হাদীস নিয়ে যথাযথ গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা না করে কোন ফতোয়া দেওয়া যাবে না এবং ফতোয়া দেওয়ার পর যদি এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তা শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধির প্রতিকূল, তবে তার উপর অটল থাকাও এই আয়াতে বর্ণিত নির্দেশের পরিপন্থী। মু’মিনের কর্তব্যই হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলীর সামনে আনুগত্যের মস্তক নত করে দেওয়া। নিজের কথা অথবা কোন ইমামের মতের উপর অনড় থাকা তার কর্তব্য নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। আল-বায়ান
হে মানুষ! তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই লোকই অধিক সম্মানীয় যে লোক অধিক মুত্তাক্বী। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব খবর রাখেন। তাইসিরুল
হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। মুজিবুর রহমান
O mankind, indeed We have created you from male and female and made you peoples and tribes that you may know one another. Indeed, the most noble of you in the sight of Allah is the most righteous of you. Indeed, Allah is Knowing and Acquainted. Sahih International
১৩. হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে(১), আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার।(২) তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
(১) আল্লাহর এ বাণীটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিভিন্ন বক্তৃতা ও উক্তিতে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমন-মক্কা বিজয়ের সময় কা'বার তাওয়াফের পর তিনি যে বক্তৃতা করেছিলেন তাতে বলেছিলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের দোষ-ত্রুটি ও অহংকার দূর করে দিয়েছেন। হে লোকেরা! সমস্ত মানুষ দু’ ভাগে বিভক্ত। এক, নেককার ও পরহেজগার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদার অধিকারী। দুই, পাপী ও দুরাচার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট। অন্যথায় সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির সৃষ্টি।” [তিরমিযী: ৩১৯৩]
অনুরূপভাবে, বিদায় হজ্জের সময় আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, “হে লোকজন! সাবধান তোমাদের আল্লাহ একজন। কোন অনারবের ওপর কোন আরবের ও কোন আরবের ওপর কোন অনারবের কোন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোন শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। আমি কি তোমাদেরকে পৌঁছিয়েছি? তারা বলল, আল্লাহর রাসূল পৌঁছিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে যারা এখানে উপস্থিত আছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বাণী পৌছিয়ে দেয়।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৪১১]
অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা সবাই আদমের সন্তান। আর আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। লোকজন তাদের বাপদাদার নাম নিয়ে গর্ব করা থেকে বিরত হোক। তা না হলে আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা নাক দিয়ে পায়খানা ঠেলে এমন নগণ্য কীট থেকেও নীচ বলে গণ্য হবে।” [মুসনাদে বাযযার: ৩৫৮৪] আর একটি হাদীসে তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তোমাদের বংশ ও আভিজাত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না। তোমাদের মধ্যে যে বেশী আল্লাহভীরু সে-ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী”। [ইবনে জারীর: ৩১৭৭২] আরো একটি হাদীসের ভাষা হচ্ছেঃ “আল্লাহ তা'আলা তোমাদের চেহারা-আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজ-কর্ম দেখেন।” [মুসলিম: ২৫৬৪, ইবনে মাজাহ: ৪১৪৩]
(২) কোন কোন মুফাসসিরের মতে, বড় বড় গোত্রকে سعوب আর তার চেয়ে ছোট গোত্রকে قبائل বলা হয়। অপর কারও মতে, অনারব জাতিসমূহের বংশ পরিচয় যেহেতু সংরক্ষিত নেই সেহেতু তাদেরকে سعوب বলা হয় এবং আরব জাতিসমূহের বংশ পরিচয় সংরক্ষিত আছে, তাদেরকে قبائل বলা হয়। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে,[1] পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার।[2] তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহ-ভীরু।[3] আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।
[1] অর্থাৎ, আদম ও হাওয়া عليهما السلام থেকে। অর্থাৎ, তোমাদের সকলের মূল একই। তোমরা সকলে একই পিতা-মাতার সন্তান। অতএব কারো কেবল কুলমান ও বংশের ভিত্তিতে অহংকার করার কোন অধিকার নেই। কারণ, সকলের বংশ আদম (আঃ)-এর সাথে গিয়ে মিলে যায়।
[2] شُعُوْبٌ হল شَعْبٌ-এর বহুবচন। জাতি বা বিরাট গোত্র। (আরবী ভাষায় অপেক্ষাকৃত ছোট বংশ ও গোত্র অর্থে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি পরিভাষা ব্যবহার হয়। যেমন,) شعب এর পরে আসে قبيلة তারপর عمارة তারপর بطن তারপর فصيلة তারপর عشيرة (ফাতহুল ক্বাদীর) উদ্দেশ্য হল, বিভিন্ন জাতি, বংশ ও গোত্রের এই বণ্টন কেবল পরস্পর পরিচিতির জন্য। যাতে তোমরা আপোসের জ্ঞাতি-বন্ধন বজায় রাখতে পার। এর অর্থ এই নয় যে, একে অপরের উপর নিজের আভিজাত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন কর। যেমন দুর্ভাগ্যবশতঃ (আজকাল) বংশ ও আভিজাত্যকেই শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি বানিয়ে নেওয়া হয়। অথচ ইসলাম এসে এটাকে মিটিয়ে দিয়েছে এবং এটাকে জাহেলী যুগের কর্ম তথা মূর্খতা বলে আখ্যায়িত করেছে।
[3] অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট মর্যাদা ও উৎকৃষ্টতার মাপকাঠি এমন বংশ, গোত্র ও আভিজাত্য নয়, যা গ্রহণ করা কোন মানুষের এখতিয়ারেই নেই, বরং মাপকাঠি হল আল্লাহভীরুতা; যা অবলম্বন করা মানুষের ইচ্ছা ও এখতিয়ারভুক্ত। এই আয়াতই হল সেই উলামাদের দলীল যাঁরা বিবাহে বরকনের বংশীয় সমতাকে জরুরী মনে করেন না এবং কেবল দ্বীনদারির ভিত্তিতে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াকে পছন্দ করেন। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘তোমরা কি তোমাদের দীন সম্পর্কে আল্লাহকে শিক্ষা দিচ্ছ? অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু আছে যমীনে। আর আল্লাহ সকল কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত’। আল-বায়ান
বল, ‘তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহকে অবগত করতে চাও’? আল্লাহ তো জানেন যা আছে আসমানে আর যা আছে যমীনে। আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। তাইসিরুল
বলঃ তোমরা কি তোমাদের দীন সম্পর্কে আল্লাহকে অবহিত করছ? অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুজিবুর রহমান
Say, "Would you acquaint Allah with your religion while Allah knows whatever is in the heavens and whatever is on the earth, and Allah is Knowing of all things?" Sahih International
১৬. বলুন, তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহকে অবগত করাচ্ছ? অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু আছে যমীনে। আর আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) বল, ‘তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহকে অবহিত করছ? [1] অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ [2]
[1] تعليم এখানে إعلام (জানানোর) ও إخبار (সংবাদ দেওয়ার) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, آمَنَّا (আমরা ঈমান এনেছি) বলে তোমরা আল্লাহকে তোমাদের দ্বীন এবং ঈমান সম্পর্কে অবহিত করছ? অথবা নিজেদের অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহকে জানাচ্ছ?
[2] তাহলে তিনি কি তোমাদের মনের অবস্থা কিংবা তোমাদের ঈমানের বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞাত নন?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনিই প্রথম ও শেষ এবং প্রকাশ্য ও গোপন; আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। আল-বায়ান
তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশিত আবার গুপ্ত, তিনি সকল বিষয় পূর্ণরূপে জ্ঞাত। তাইসিরুল
তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই ব্যক্ত, তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুজিবুর রহমান
He is the First and the Last, the Ascendant and the Intimate, and He is, of all things, Knowing. Sahih International
৩. তিনিই প্রথম ও শেষ; প্রকাশ্য (উপরে) ও গোপন (নিকটে) আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।(১)
(১) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ কোন সময় তোমার অন্তরে আল্লাহ তাআলা ও ইসলাম সম্পর্কে শয়তানী কুমন্ত্রণা দেখা দিলে (هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ) আয়াতখানি আস্তে পাঠ করে নাও। [আবু দাউদ: ৫১১০] এই আয়াতের তাফসীর এবং “আউয়াল”, “আখের”, “যাহের” ও “বাতেন” এ শব্দ চারটির অর্থ সম্পর্কে তফসীরবিদগণের বহু উক্তি বৰ্ণিত আছে। তন্মধ্যে “আউয়াল” শব্দের অর্থ তো প্ৰায় নির্দিষ্ট; অর্থাৎ অস্তিত্বের দিক দিয়ে সকল সৃষ্টজগতের অগ্রে ও আদি। কারণ, তিনি ব্যতীত সবকিছু তাঁরই সৃজিত। তাই তিনি সবার আদি। “আখের” এর অর্থ কারও কারও মতে এই যে, সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়ার পরও তিনি বিদ্যমান থাকবেন। [সা’দী] যেমন (كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ) [সূরা আল-কাসাস: ৮৮] আয়াতে এর পরিষ্কার উল্লেখ আছে।
ইমাম বুখারী বলেন, ‘যাহের’ অর্থ জ্ঞানে তিনি সবকিছুর উপর, অনুরূপ তিনি ‘বাতেন’ অৰ্থাৎ জ্ঞানে সবকিছুর নিকটে। বিভিন্ন হাদীসে এ আয়াতের তাফসীর এসেছে, এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেন, “হে আল্লাহ! সাত আসমানের রব, মহান আরশের রব, আমাদের রব এবং সবকিছুর রব, তাওরাত, ইঞ্জীল ও ফুরকান নাযিলকারী, দানা ও আঁটি চিরে বৃক্ষের উদ্ভাবকারী, আপনি ব্যতীত কোন হক্ক মা’বুদ নেই, যাদের কপাল আপনার নিয়ন্ত্রণে এমন প্ৰত্যেক বস্তুর অনিষ্ট হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, আপনি অনাদি, আপনার আগে কিছু নেই, আপনি অনন্ত আপনার পরে কিছুই থাকবে না। আপনি সবকিছুর উপরে, আপনার উপরে কিছুই নেই, আপনি নিকটবর্তী, আপনার চেয়ে নিকটবর্তী কেউ নেই, আমার পক্ষ থেকে আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিন। [মুসলিম: ২৭১৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৪০৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তিনিই আদি, অন্ত, ব্যক্ত ও গুপ্ত[1] এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।
[1] তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর) নবী করীম (সাঃ) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে এই দু’আটি পাঠ করতে তাকীদ করেছিলেনঃ
اَللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنِّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنِا مِنْ الْفَقْرِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! হে আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী ও মহা আরশের অধিপতি। হে আমাদের ও সকল বস্তুর প্রতিপালক! হে শস্যবীজ ও আঁটির অঙ্কুরোদয়কারী! হে তাওরাত, ইনজীল ও ফুরকানের অবতারণকারী! আমি তোমার নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- যার ললাটের কেশগুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ। হে আল্লাহ! তুমিই আদি তোমার পূর্বে কিছু নেই। তুমিই অন্ত তোমার পরে কিছু নেই। তুমিই ব্যক্ত (অপরাজেয়), তোমার ঊর্ধ্বে কিছু নেই এবং তুমিই (সৃষ্টির গোচরে) অব্যক্ত, তোমার নিকট অব্যক্ত কিছু নেই। আমাদের তরফ থেকে আমাদের ঋণ পরিশোধ করে দাও এবং আমাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছল (অভাবশূন্য) করে দাও। (মুসলিমঃ যিকর ও দু’আ অধ্যায়) ঋণ পরিশোধের জন্য পঠনীয় এই দু’আর মধ্যে ‘আওয়াল’, ‘আখির’ এবং ‘যাহির’ ও ‘বাতিন’এর ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর তিনি অন্তরসমূহের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। আল-বায়ান
তিনিই রাতকে প্রবেশ করান দিনের ভিতর, আর দিনকে ঢুকিয়ে দেন রাতের ভিতর, অন্তরের গোপনতত্ত্ব সম্পর্কে তিনি পূর্ণরূপে অবগত। তাইসিরুল
তিনিই রাতকে প্রবেশ করান দিনে এবং দিনকে প্রবেশ করান রাতে, এবং তিনি অর্ন্তযামী। মুজিবুর রহমান
He causes the night to enter the day and causes the day to enter the night, and he is Knowing of that within the breasts. Sahih International
৬. তিনিই রাতকে প্রবেশ করান দিনে আর দিনকে প্ৰবেশ করান রাতে এবং তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তিনিই রাত্রিকে প্রবেশ করান দিনে এবং দিনকে প্রবেশ করান রাত্রিতে।[1] আর তিনি অন্তর্যামী।
[1] অর্থাৎ, সমস্ত জিনিসের মালিক তিনিই। তিনি যেভাবে চান তাতে কর্তৃত্ব করেন। তাঁর নির্দেশে কখনো রাত বড় ও দিন ছোট হয়। আবার কখনো এর বিপরীত দিন বড় ও রাত ছোট হয়। কখনো রাত ও দিন সমান সমান হয়। অনুরূপ কখনো শীত, কখনো গ্রীষ্ম, কখনো বসন্ত ও কখনো হেমন্তকাল, নানা অবস্থার রূপান্তর ও ঋতুর পরিবর্তনও তাঁর নির্দেশ ও ইচ্ছায় ঘটে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত। আল-বায়ান
তুমি কি জান না যে, যা আকাশে আছে আর যা যমীনে আছে আল্লাহ সব জানেন। তিনজনের মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন আল্লাহ হন না, আর পাঁচজনেও হয় না, ষষ্ঠজন তিনি ছাড়া, এর কম সংখ্যকেও হয় না, আর বেশি সংখ্যরেও হয় না, তিনি তাদের সঙ্গে থাকা ব্যতীত, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তিনি জানিয়ে দেবেন যা তারা ‘আমাল করেছিল। আল্লাহ সকল বিষয়ে পূর্ণভাবে অবগত। তাইসিরুল
তুমি কি অনুধাবন করনা, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয়না যাতে চতুর্থ হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেননা; এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয়না যাতে ষষ্ঠ হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেননা; তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশি হোক, তারা যেখানেই থাকুকনা কেন তিনি তাদের সাথে আছেন। তারা যা করে, তিনি তাদেরকে কিয়ামাত দিবসে তা জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান
Have you not considered that Allah knows what is in the heavens and what is on the earth? There is in no private conversation three but that He is the fourth of them, nor are there five but that He is the sixth of them - and no less than that and no more except that He is with them [in knowledge] wherever they are. Then He will inform them of what they did, on the Day of Resurrection. Indeed Allah is, of all things, Knowing. Sahih International
৭. আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি থাকেন। না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ট জন হিসেবে তিনি থাকেন না। তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশী হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন তারা যেখানেই থাকুক না কেন।(১) তারপর তারা যা করে, তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
(১) তবে মনে রাখতে হবে যে, সাথে থাকার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কোন সৃষ্টির ভিতরে বা সৃষ্টির সাথে লেগে আছেন। বরং এখানে সাথে থাকার অর্থ জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের সাথে থাকা। কারণ, আয়াতের শেষে “নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।” এ কথাটি বলে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ্ তাঁর আরশের উপর, তাঁর সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা অবস্থানে রয়েছেন। স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে লেগে আছে বা প্রবিষ্ট হয়ে আছে মনে করা শির্ক ও কুফরী। এ তাফসীরের অন্যান্য স্থানেও এ বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন সূরা ত্বা-হা: ৪৬; সূরা আশ-শু'আরা: ১৫; সূরা আল-হাদীদ: ৪। এ সব আয়াতের সব স্থানেই এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলার জ্ঞান তাঁর বান্দাকে পরিবেষ্টন করে আছে।
তার জ্ঞান ও ক্ষমতার বাইরে কেউ নেই। এরই নাম হচ্ছে, সাধারণভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দার সাথে থাকা। তবে এর পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলা তার মুমিন বান্দাদের সাথে বিশেষভাবেও সাথে থাকেন। আর সে সাথে থাকা বলতে বুঝায় সাহায্য-সহযোগিতা ও প্রতিষ্ঠা করা। যেমন সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৪; সূরা আল আনফাল: ১৯; সূরা আত-তাওবাহঃ ৩৬; ১২৩; সূরা আন-নাহল: ১২৮; সূরা আল আনকাবূত: ৬৯ ও সূরা মুহাম্মাদ: ৩৫ নং আয়াত। এ সব আয়াতে ‘সাথে থাকা’ সাহায্য-সহযোগিতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি সৎ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক জানেন ও তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেন।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তুমি কি অনুধাবন কর না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না, যাতে চতুর্থজন হিসাবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে ষষ্ঠজন হিসাবে তিনি থাকেন না; তারা এ অপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক[1] এবং যেখানেই থাকুক না কেন,[2] তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন জানিয়ে দেবেন তারা যা করে।[3] নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত।
[1] অর্থাৎ, উক্ত সংখ্যাগুলোকে বিশেষ করে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, তার থেকে কম বা তার থেকে বেশী সংখ্যক লোকের মাঝে হওয়া কথাবার্তা তিনি জানতে পারেন না, বরং এ সংখ্যা কেবল দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হল এ কথা জানিয়ে দেওয়া যে, সংখ্যা কম হোক অথবা বেশী, তিনি সকলের সাথে আছেন এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রতিটি কথার খবর রাখেন।
[2] নির্জন স্থানে হোক অথবা লোকালয়ে, শহরে হোক অথবা জঙ্গল-মরুভূমিতে, আবাদ-জনপদে হোক অথবা জনশূন্য পাহাড়, প্রান্তর বা গুহাতে, যেখানেই হোক না কেন তাঁর দৃষ্টি ও জ্ঞান থেকে গোপন থাকতে পারবে না।
[3] অর্থাৎ, সেই অনুযায়ী প্রত্যেককে প্রতিদান দেবেন। নেককারদেরকে তাদের নেকীর প্রতিদান এবং বদকারদেরকে তাদের বদীর প্রতিফল দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তারা, তাদের হাত যা আগে পাঠিয়েছে সে কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আল-বায়ান
কিন্তু তাদের হাত যে সব (কৃতকর্ম) আগে পাঠিয়েছে, সে কারণে তারা কক্ষনো মৃত্যুর কামনা করবে না। আর আল্লাহ যালিমদেরকে খুব ভাল করেই জানেন। তাইসিরুল
কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনও মৃত্যু কামনা করবেনা। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান
But they will not wish for it, ever, because of what their hands have put forth. And Allah is Knowing of the wrongdoers. Sahih International
৭. কিন্তু তারা তাদের হাত যা আগে পাঠিয়েছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।(১)
(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা ইয়াহুদীদের আসল চরিত্র তুলে ধরছেন। তা হচ্ছে, ইয়াহুদীরা কখনও মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ, তারা আখেরাতের জন্যে কুফর, শিরক ও কুকর্ম ব্যতীত আর কিছুই পাঠায়নি। অতএব তারা ভালরূপে জানে যে, আখেরাতে তাদের জন্যে জাহান্নামের শাস্তিই অবধারিত রয়েছে। তারা আল্লাহর প্রিয়জন হওয়ার যে দাবি করে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা স্বয়ং তাদের অজানা নেই। তবে দুনিয়ার উপকারিতা লাভ করার জন্যে তারা এ ধরনের দাবি করে। তারা আরও জানে যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথায় তারা মৃত্যু কামনা করে তবে তা অবশ্যই কবুল হবে এবং তারা মরে যাবে। তাই বলা হয়েছে, ইয়াহুদীরা মৃত্যু কামনা করতেই পারে না। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি সে সময় তাদের কেউ মৃত্যু কামনা করত, তবে তারা তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হত। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২৪৮, মুসনাদে বাযযার: ২১৮৯ (কাশফুল আসতার), আসসুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী: ১১০৬১, মুসনাদে আবি। ইয়া'লা: ২৬০৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না।[1] আর আল্লাহ যালেমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।
[1] অর্থাৎ, কুফরী, পাপ এবং আল্লাহর কিতাবে হেরফের ও পরিবর্তন ইত্যাদি করার কারণে কখনও এরা মৃত্যু কামনা করবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। আল-বায়ান
তিনি জানেন যা কিছু আসমান ও যমীনে আছে, আর তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর আর প্রকাশ কর। অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে তিনি পূর্ণরূপে অবগত। তাইসিরুল
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন, তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর এবং তিনি অন্তর্যামী। মুজিবুর রহমান
He knows what is within the heavens and earth and knows what you conceal and what you declare. And Allah is Knowing of that within the breasts. Sahih International
৪. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্তই তিনি জানেন এবং তিনি জানেন তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর। আর আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। তিনি জানেন তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর এবং আল্লাহ অন্তর্যামী। [1]
[1] অর্থাৎ, তাঁর জ্ঞান আসমান ও যমীনে সারা বিশ্বেই পরিব্যাপ্ত। বরং তোমাদের অন্তরের গোপনীয় বিষয় সম্পর্কেও তিনি সম্যক অবগত। ইতিপূর্বে যেসব প্রতিশ্রুতি ও ধমকের কথা বর্ণিত হয়েছে এটা হচ্ছে তারই তাকীদ স্বরূপ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদ আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সকল বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তাইসিরুল
আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয়না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান
No disaster strikes except by permission of Allah. And whoever believes in Allah - He will guide his heart. And Allah is Knowing of all things. Sahih International
১১. আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং কেউ আল্লাহর উপর ঈমান রাখলে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না।[1] আর যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন।[2] আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত।
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক বিপদই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং তাঁরই ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াত অবতীর্ণের কারণ হল কাফেরদের এই উক্তি, যদি মুসলমানরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে দুনিয়াতে কোন বালা-মুসীবত তাদের উপর আসত না। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[2] অর্থাৎ, সে জেনে নেয় যে, তার উপর যে বিপদই এসেছে, তা আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তাঁর নির্দেশে এসেছে। ফলে সে ধৈর্য ধরে এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তার অন্তরে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করে দেন। ফলে সে জেনে যায় যে, তার উপর যে বিপদ আসার আছে, তা টলতে পারে না এবং যা তার উপর আসার নয়, তা আসতে পারে না।(ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় তোমাদের জন্য শপথ হতে মুক্তির বিধান দিয়েছেন; আর আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান। আল-বায়ান
আল্লাহ তোমাদের জন্য নিজেদের কসমের বাধ্যবাধকতা থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ তোমাদের মালিক-মনিব-রক্ষক, আর তিনি সর্বজ্ঞাতা, মহা প্রজ্ঞার অধিকারী। তাইসিরুল
আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ তোমাদের সহায়; তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
Allah has already ordained for you [Muslims] the dissolution of your oaths. And Allah is your protector, and He is the Knowing, the Wise. Sahih International
২. অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের কসম হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন। আর আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে অব্যাহতি লাভের ব্যবস্থা করেছেন,[1] আল্লাহ তোমাদের সহায় এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[1] অর্থাৎ, কাফফারা আদায় করে সেই কাজ করার অনুমতি দিলেন, যে কাজ না করার জন্য তিনি কসম খেয়েছিলেন। কসমের এই কাফফারা সূরা মায়েদার ৮৯নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তাই নবী (সাঃ)ও কাফফারা আদায় করলেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে যে, কেউ যদি কোন জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নেয়, তাহলে তার বিধান কি? কোন কোন উলামার নিকট স্ত্রী ছাড়া কোন জিনিসকে হারাম করে নিলে, না সে জিনিস হারাম হবে, আর না তার কাফফারা আদায় করতে হবে। (কিন্তু আলোচ্য আয়াত তাঁদের বিপক্ষে দলীল। যেহেতু এখানে মধু হারাম করার পর কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।) পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নেয় এবং এতে যদি তার উদ্দেশ্য তালাক হয়, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না থাকে, তবে সঠিক উক্তি অনুযায়ী এটা কসম হবে এবং কসমের কাফফারা আদায় করা তার উপর জরুরী হবে। (আইসারুত তাফাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমরা তোমাদের কথা গোপন কর অথবা তা প্রকাশ কর, নিশ্চয় তিনি অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত। আল-বায়ান
তোমরা তোমাদের কথা চুপেচাপেই বল আর উচ্চৈঃস্বরেই বল, তিনি (মানুষের) অন্তরের গোপন কথা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। তাইসিরুল
তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনিতো অন্তর্যামী। মুজিবুর রহমান
And conceal your speech or publicize it; indeed, He is Knowing of that within the breasts. Sahih International
১৩. আর তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরসমূহে যা আছে তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে,[1] নিশ্চয় তিনি অন্তর্যামী।[2]
[1] এখানে আবারও কাফেরদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে। অর্থাৎ, তোমরা রসূল (সাঃ)-এর ব্যাপারে গোপনে কথা বল অথবা প্রকাশ্যে, সব কিছুই আল্লাহ অবগত আছেন। কোন কথাই তাঁর কাছে গোপন থাকে না।
[2] এখানে তাঁর গোপনীয় ও প্রকাশ্য বিষয় জানার কারণ বর্ণনা করে বলা হচ্ছে যে, তিনি তো মনের ও অন্তরের গুপ্ত রহস্যসমূহের ব্যাপারেও অবহিত। অতএব তোমাদের কথাসমূহ কিভাবে তাঁর কাছে গোপন থাকতে পারে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। আল-বায়ান
তোমরা ইচ্ছে কর না আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত। (অর্থাৎ আল্লাহ কোন কিছু কার্যকর করতে চাইলে তোমাদের মাঝে ইচ্ছে ও শক্তি সঞ্চার করতঃ তোমাদের মাধ্যমে তা কার্যকর করেন)। আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল
তোমরা ইচ্ছা করবেনা যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
And you do not will except that Allah wills. Indeed, Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International
৩০. আর তোমরা ইচ্ছে করতে সক্ষম হবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছে করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) তোমরা ইচ্ছা করবে না; যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।[1] আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। [2]
[1] (অর্থাৎ, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে তোমাদের কোন ইচ্ছা সফল হতে পারে না।) অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কারো এ সামর্থ্য নেই যে, সে নিজেকে হিদায়াতের পথে প্রতিষ্ঠিত এবং নিজের জন্য কোন কল্যাণের ব্যবস্থা করে নেবে। হ্যাঁ, যদি আল্লাহ চান তবে এ রকম করা সম্ভব হবে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পারবে না। তবে মনের নিয়ত (সংকল্প) সৎ ও সঠিক হলে তিনি নেকী অবশ্যই দেন। إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ‘‘সমস্ত কাজ (এর নেকী) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার সে নিয়ত করবে।’’ (বুখারী)
[2] যেহেতু তিনি প্রজ্ঞাময় ও সুকৌশলী, তাই তাঁর প্রতিটি কাজে হিকমত ও যৌক্তিকতা আছে। অতএব হিদায়াত এবং ভ্রষ্টতার ফায়সালাও কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই যে হয়, তা নয়। বরং যাকে তিনি হিদায়াত দান করেন প্রকৃতপক্ষে সে হিদায়াতের যোগ্য থাকে। আর যার ভাগে ভ্রষ্টতা জোটে, সে আসলেই তার উপযুক্ত থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান