আল্লাহর কিতাব বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৬৩ টি
আত-তাওবা
৯:১১১ اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِكُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۱۱﴾

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য। আল-বায়ান

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। এ ওয়া‘দা তাঁর উপর অবশ্যই পালনীয় যা আছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে। আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশী নিজ ওয়া‘দা পালনকারী? কাজেই তোমরা যে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করেছ তার জন্য আনন্দিত হও, আর এটাই হল মহান সফলতা। তাইসিরুল

নিঃসন্দেহে আল্লাহ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা (কখনও) হত্যা করে এবং (কখনও) নিহত হয়, এর কারণে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ, আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah has purchased from the believers their lives and their properties [in exchange] for that they will have Paradise. They fight in the cause of Allah, so they kill and are killed. [It is] a true promise [binding] upon Him in the Torah and the Gospel and the Qur'an. And who is truer to his covenant than Allah? So rejoice in your transaction which you have contracted. And it is that which is the great attainment. Sahih International

১১১. নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।(১)

(১) আয়াতের শুরুতে ক্রয় শব্দের ব্যবহার করা হয়। মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে, ক্রয় বিক্রয়ের এই সওদা তোমাদের জন্য লাভজনক ও বরকতময়; কেননা, এর দ্বারা অস্থায়ী জান-মালের বিনিময়ের স্থায়ী জান্নাত পাওয়া গেল। মালামাল হলো আল্লাহরই দান। মানুষ শূন্য হাতেই জন্ম নেয়। তারপর আল্লাহ তাকে অর্থ সম্পদের মালিক করেন এবং নিজের দেয়া সে অর্থের বিনিময়েই বান্দাকে জান্নাত দান করেন। তাই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'এ এক অভিনব বেচা-কেনা, মালও মূল্য উভয়ই তোমাদেরকে দিয়ে দিলেন আল্লাহ। [বাগভী]

হাসান বসরী (রহ.) বলেন, লক্ষ্য কর, এ কেমন লাভজনক সওদা, যা আল্লাহ সকল মুমিনের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দান করেছেন, তা থেকে কিছু ব্যয় করে জান্নাত ক্রয় করে নাও। [বাগভী] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জামিন হয়ে যান যিনি তাঁর রাস্তায় বের হয়। তাকে শুধুমাত্র আমার রাহে জিহাদই এবং আমার রাসূলের উপর বিশ্বাসই বের করেছে। আল্লাহ্‌ তার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন যে, যদি সে মারা যায় তবে তাকে জান্নাত দিবেন অথবা সে যা কিছু গনীমতের মাল পেয়েছে এবং সওয়াব পেয়েছে তা সহ তাকে তার সে ঘরে ফিরে পৌছিয়ে দিবেন যেখান থেকে বের হয়েছে। [বুখারী: ৩১২৩; মুসলিম: ১৮৭৬]।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১১) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন;[1] তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ (যুদ্ধে)র দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুর’আনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে?[2] অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ।[3] আর এটা হচ্ছে মহাসাফল্য।

[1] এখানে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও দয়ার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তিনি মু’মিনদেরকে তাদের জান ও ঐ সম্পদ যা তাঁরা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করেছেন। অথচ এই জান ও মালও সেই আল্লাহরই দান। আবার মূল্য ও বদলা হিসাবে যা দান করেছেন, অর্থাৎ সেই জান্নাত নেহাতই মূল্যবান।

[2] এটা উক্ত ক্রয়-বিনিময়ের তা’কীদ যে, আল্লাহ তাআলা এই সত্য অঙ্গীকার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং কুরআনেও করেছেন। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক অঙ্গীকার পূরণকারী কে হতে পারে?

[3] এ কথা মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই আনন্দ তখনই করা যাবে, যখন মুসলিমগণ উক্ত ব্যবসা মেনে নেবে। অর্থাৎ, আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করতে কোন দ্বিধা করবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:৩৭ وَ مَا كَانَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لٰكِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡكِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۟۳۷﴾

এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। আল-বায়ান

এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচিত নয়। উপরন্তু তা পূর্বে যা নাযিল হয়েছিল তার সমর্থক আর বিস্তারিত ব্যাখ্যাকৃত কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই, জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে (নাযিলকৃত)। তাইসিরুল

আর এই কুরআন কল্পনা প্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, ইহাতো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে, এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের বিশদ বর্ণনাকারী, (এবং) এতে কোন সন্দেহ নেই (ইহা) বিশ্বের রবের পক্ষ হতে (নাযিল) হয়েছে। মুজিবুর রহমান

And it was not [possible] for this Qur'an to be produced by other than Allah, but [it is] a confirmation of what was before it and a detailed explanation of the [former] Scripture, about which there is no doubt, from the Lord of the worlds. Sahih International

৩৭. আর এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়ন এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা।(১) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।(২)

(১) “যা কিছু আগে এসে গিয়েছিল তার সত্যায়ন” অৰ্থাৎ তাওরাত, ইঞ্জীল সহ অন্যান্য কিতাবাদির সত্যায়ন। কারণ, সেগুলোতে এ কুরআনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। তারপর এ কুরআন সে সুসংবাদকে সত্যায়ন করে আগমন করেছে। শুরু থেকে নবীদের মাধ্যমে মানুষকে যে মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে তথা তাওহীদ, আখেরাতের উপর ঈমান ইত্যাদিকে পাকাপোক্ত করছে। কারও কারও মতে, এখানে অর্থ হচ্ছে, কিন্তু এ কুরআন তার সামনে যে নবী রয়েছেন অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার সত্যায়ন করছে। কেননা তারা কুরআন শোনার আগ থেকেই তাকে দেখেছে। [কুরতুবী]

তারপর বলা হয়েছে যে, এটি “আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা” —অর্থাৎ সমস্ত আসমানী কিতাবের সারমর্ম যে মৌলিক শিক্ষাবলীর সমষ্টি, সেগুলো এর মধ্যে দিয়ে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে উপদেশ দান ও বুঝাবার ভংগীতে, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এবং বাস্তব অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। অথবা এর অর্থ, এতে যে বিধানাবলী রয়েছে সেগুলোকে স্পষ্ট করে বিস্তারিত বর্ণনা করছে। [বাগভী; কুরতুবী]

(২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীকেই তার (যুগ) উপযোগী মু'জিযা প্রদান করা হয়েছে। সে অনুসারে মানুষ তার উপর ঈমান এনেছে। আর নিশ্চয়ই আমাকে অহী দেয়া হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলা আমার উপর নাযিল করেছেন। অতএব, আমি আশা করছি যে, কিয়ামতের দিন আমার অনুগামী তাদের থেকে বেশী হবে। [বুখারীঃ ৪৯৮১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) আর এই কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়। পক্ষান্তরে এটা তো সেই কিতাবসমূহের সমর্থক যা এর পূর্বে (অবতীর্ণ) হয়েছে[1] এবং বিধানসমূহের বিশদ বর্ণনাকারী,[2] এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।[3] (এ হল) বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ হতে (অবতীর্ণ)। [4]

[1] যা এই কথার প্রমাণ যে, এই কুরআন মিথ্যা রচিত নয়; বরং সেই সত্তার অবতীর্ণকৃত, যিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করেছেন।

[2] অর্থাৎ, হালাল-হারাম ও বৈধ-অবৈধ ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনাকারী।

[3] এই কিতাবের শিক্ষাতে, তার বর্ণিত ইতিহাস ও কাহিনীতে এবং ভবিষ্যতে ঘটিতব্য ঘটনাবলীতে কোন সন্দেহ নেই।

[4] এ সকল কথা দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এই গ্রন্থ মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে, যিনি অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্যক অবগত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:৩৮ اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِهٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۳۸﴾

নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। আল-বায়ান

তারা কি এ কথা বলে যে, সে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)] এটা রচনা করেছে? বল, তাহলে তোমরাও এর মত একটা সূরাহ (রচনা করে) নিয়ে এসো আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে পার তাকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক [যে মুহাম্মাদ (সাঃ)-ই তা রচনা করেছেন]। তাইসিরুল

তারা কি এরূপ বলে যে, এটা তার (নাবীর) স্বরচিত? তুমি বলে দাওঃ তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা রচনা কর এবং গাইরুল্লাহ হতে যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। মুজিবুর রহমান

Or do they say [about the Prophet], "He invented it?" Say, "Then bring forth a surah like it and call upon [for assistance] whomever you can besides Allah, if you should be truthful." Sahih International

৩৮. নাকি তারা বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস(১) এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

(১) এটা আল-কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তৃতীয় চ্যালেঞ্জ। [ইবন কাসীর] তারা যদি কুরআন সম্পর্কে সন্দিহান হয় তবে তারা যেন এর মত একটি সূরা নিয়ে আসে। এর পূর্বে কাফেরদেরকে কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছিল। [দেখুন, সূরা আল-ইসরাঃ ৮৮] তারপর তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, কুরআনের মত কুরআন না আনতে সক্ষম হলে কুরআনের দশটি সূরা যেন নিয়ে আসে। [দেখুন, সূরা হুদঃ ১৩] কিন্তু তারা তাতেও অপারগ হয়। তখন তাদেরকে এ আয়াতে কুরআনের সূরাসমূহের একটি সূরা নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করা হয় কিন্তু কাফের-মুশরিকগণ তাও আনতে সক্ষম হয়নি। আর তারা সেটা আনতে পারবেও না। [ইবন কাসীর] আল্লাহ বলেন, “অতএব যদি তোমরা তা করতে না পার আর কখনই তা করতে পারবে না” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৪]

এ চ্যালেঞ্জ কুরআনের শুধু ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হবার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নজিরবিহীন। কিন্তু মূলত যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোন মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত ও শিক্ষা। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) তারা কি বলে যে, ‘এটা তার (নবীর) স্বরচিত?’ তুমি বল, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন কর এবং (এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য) আল্লাহ ব্যতীত যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’[1]

[1] এই সকল তথ্য ও প্রমাণাদির পরেও যদি তোমাদের দাবী এই হয় যে, এই কুরআন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রচিত গ্রন্থ,তবে তিনিও তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমাদের ভাষাও তাঁর মতই আরবী, তিনি তো একা, তোমরা যদি নিজেদের দাবীতে সত্যবাদী হও, তাহলে পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক, ভাষাবিদ এবং শিক্ষিত জ্ঞানীদেরকে একত্রিত কর এবং এই কুরআনের সব থেকে ছোট সূরার মত একটি সূরা রচনা করে উপস্থাপন কর। কুরআন কারীমের এই চ্যালেঞ্জ আজও বিদ্যমান। এর উত্তর পাওয়া যায়নি। যাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এই কুরআন কোন মানুষের মেহনতের ফল নয়; বরং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই বাণী, যা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি তিনি অবতীর্ণ করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:৬১ وَ مَا تَكُوۡنُ فِیۡ شَاۡنٍ وَّ مَا تَتۡلُوۡا مِنۡهُ مِنۡ قُرۡاٰنٍ وَّ لَا تَعۡمَلُوۡنَ مِنۡ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَیۡكُمۡ شُهُوۡدًا اِذۡ تُفِیۡضُوۡنَ فِیۡهِ ؕ وَ مَا یَعۡزُبُ عَنۡ رَّبِّكَ مِنۡ مِّثۡقَالِ ذَرَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ وَ لَاۤ اَصۡغَرَ مِنۡ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكۡبَرَ اِلَّا فِیۡ كِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۶۱﴾

আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আর যা কিছু তিলাওয়াত কর না কেন আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআন থেকে এবং তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমি তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও। তোমার রব থেকে গোপন থাকে না যমীনের বা আসমানের অণু পরিমাণ কিছুই এবং তা থেকে ছোট বা বড়, তবে (এর সব কিছুই) রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে। আল-বায়ান

তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন, আর তুমি কুরআন থেকে যা কিছুই তিলাওয়াত কর না কেন, আর যে ‘আমালই তোমরা কর না কেন, আমি তোমাদের উপর রয়েছি প্রত্যক্ষদর্শী, যখন তোমরা তাতে পূর্ণরূপে মনোনিবেশ কর। এমন অণু পরিমাণ বা তাত্থেকে ছোট বা তাত্থেকে বড় বস্তু না আছে পৃথিবীতে, আর না আছে আসমানে যা তোমার প্রতিপালকের দৃষ্টির আড়ালে আছে। তা (লেখা) আছে এক সুস্পষ্ট কিতাবে। তাইসিরুল

আর তুমি যে অবস্থায়ই থাক না কেন, আর যে কোন অংশ হতে কুরআন পাঠ কর এবং তোমরা (অন্যান্য লোক) যে কাজই কর, আমার কাছে সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করতে শুরু কর। কণা পরিমাণও কোন বস্তু তোমার রবের (জ্ঞানের) অগোচর নয় - না যমীনে, না আসমানে। আর তা হতে ক্ষুদ্রতর, কিংবা বৃহত্তর, সমস্তই সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে) লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুজিবুর রহমান

And, [O Muhammad], you are not [engaged] in any matter or recite any of the Qur'an and you [people] do not do any deed except that We are witness over you when you are involved in it. And not absent from your Lord is any [part] of an atom's weight within the earth or within the heaven or [anything] smaller than that or greater but that it is in a clear register. Sahih International

৬১. আর আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন এবং আপনি সে সম্পর্কে কুরআন থেকে যা-ই তিলাওয়াত করেন এবং তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমরা তোমাদের সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আর আসমানসমূহ ও যমীনের অণু পরিমাণও আপনার রবের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬১) তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন, যে অবস্থাতেই তুমি কুরআন হতে যা কিছু পাঠ কর না কেন এবং তোমরা যে কাজই কর না কেন, যখন তোমরা সে কাজ করতে শুরু কর, তখন আমি তোমাদের পরিদর্শক হই; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধূলিকণা পরিমাণও কোন বস্তু তোমার প্রতিপালকের (জ্ঞানের) অগোচর নয় এবং তা হতে ক্ষুদ্রতর অথবা তা হতে বৃহত্তর কোন কিছু নেই, যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লাওহে মাহ্ফুযে লিপিবদ্ধ) নেই।[1]

[1] এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ) এবং মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন যে, তিনি সমস্ত সৃষ্টির অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন এবং সর্বক্ষণ তিনি মানুষের সকল অবস্থা অবলোকন করছেন। আকাশ ও পৃথিবীর ছোট-বড় কোন বস্তুই তাঁর নিকট লুক্কায়িত নয়। উক্ত বিষয়টি ইতিপূর্বে সূরা আন্আমের ৫৯নং আয়াতে পার হয়ে গেছে। তাঁরই নিকট অদৃশ্যের চাবি রয়েছে; তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত। তাঁর অজ্ঞাতসারে (বৃক্ষের) একটি পাতাও পড়ে না, মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণা অথবা রসযুক্ত কিম্বা শুষ্ক এমন কোন বস্তু পড়ে না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) নেই।’’ অনুরূপ সূরা আন্আমের ৩৮নং আয়াতে এবং সূরা হূদের ৬নং আয়াতেও উক্ত বিষয়কে বর্ণনা করা হয়েছে। যখন ঘটনা এই যে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীতে অবস্থিত সকল বস্তুর নড়া-চড়ার খবর রাখেন, তখন তিনি মানুষ ও জীন জাতি, যারা আল্লাহর ইবাদতের ভারপ্রাপ্ত ও আদেশপ্রাপ্ত তাদের চলা-ফেরা ও কর্মকান্ড থেকে কিভাবে বেখবর থাকবেন?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:৯৪ فَاِنۡ كُنۡتَ فِیۡ شَكٍّ مِّمَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡكَ فَسۡـَٔلِ الَّذِیۡنَ یَقۡرَءُوۡنَ الۡكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ لَقَدۡ جَآءَكَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِیۡنَ ﴿ۙ۹۴﴾

সুতরাং আমি তোমার নিকট যা নাযিল করেছি, তা নিয়ে তুমি যদি সন্দেহে থাক, তাহলে যারা তোমার পূর্ব থেকেই কিতাব পাঠ করছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর। অবশ্যই তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য এসেছে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আল-বায়ান

আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ পোষণ কর তাহলে তোমার পূর্বে থেকে যারা কিতাব পাঠ করে আসছে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রকৃত সত্য এসেছে। কাজেই তুমি কক্ষনো সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ো না। তাইসিরুল

অতঃপর (হে নাবী) যদি তুমি এ (কিতাব) সম্পর্কে সন্দিহান হও, যা আমি তোমার নিকট পাঠিয়েছি, তাহলে তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যারা তোমার পূর্বেকার কিতাবসমূহ পাঠ করে। নিঃসন্দেহে তোমার নিকট এসেছে তোমার রবের পক্ষ হতে সত্য কিতাব, সুতরাং তুমি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। মুজিবুর রহমান

So if you are in doubt, [O Muhammad], about that which We have revealed to you, then ask those who have been reading the Scripture before you. The truth has certainly come to you from your Lord, so never be among the doubters. Sahih International

৯৪. অতঃপর আমরা আপনার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে যদি আপনি সন্দেহে থাকেন তবে আপনার আগের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন; অবশ্যই আপনার রবের কাছ থেকে আপনার কাছে সত্য এসেছে(১)। কাজেই আপনি কখনো সন্দেহপ্রবণদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না,

(১) বাহ্যত এ সম্বোধনটা করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও সন্দেহে ছিলেন না। কাতাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন যে, আমি সন্দেহ করিনা এবং প্রশ্নও করিনা। [ইবন কাসীর, মুরসাল উত্তম সনদে] আসলে যারা তাঁর দাওয়াতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল তাদেরকে শুনানোই মূল উদ্দেশ্য। এ সংগে আহলে কিতাবদের উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, আরবের সাধারণ মানুষ যথার্থই আসমানী কিতাবের জ্ঞানের সাথে মোটেই পরিচিত ছিল না। তাদের জন্য এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ নতুন আওয়াজ। কিন্তু আহলে কিতাবের আলেমদের মধ্যে যারা ন্যায়নিষ্ঠ মননশীলতার অধিকারী ছিলেন তারা একথার সত্যতার সাক্ষ্য দিতে পারতেন যে, কুরআন যে জিনিসটির দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছে পূর্ববতী যুগের সকল নবী তারই দাওয়াত দিয়ে এসেছেন। তাছাড়া আরও প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ নবীর কথা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে। যা তাদের কিতাবে লিখা আছে। [ইবন কাসীর] যেমন আল্লাহ্‌ বলেন, যারা অনুসরণ করে রাসূলের, উম্মী নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জলে লিপিবদ্ধ পায়। [সূরা আল-আরাফঃ ১৫৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৪) অতঃপর (হে নবী!) আমি যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যদি তুমি সে (গ্রন্থ) সম্পর্কে সন্দিহান হও, তাহলে তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যারা তোমার পূর্বের গ্রন্থ পাঠ করে। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার নিকট সত্য এসেছে। সুতরাং তুমি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।[1]

[1] এই সম্বোধনটি হয় সাধারণ মানুষকে করা হয়েছে অথবা নবী (সাঃ)-কে এই সম্বোধন করে এর দ্বারা উম্মতকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কারণ কোন অহীর ব্যাপারে নবী (সাঃ)-এর সংশয় ও সন্দেহ হতেই পারে না। ‘‘তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যারা তোমার পূর্বের গ্রন্থ পাঠ করে।’’ কথাটির উদ্দেশ্য হল, কুরআন মাজীদের পূর্বে আসমানী কিতাব (তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি) যাদের নিকট বিদ্যমান, তাদের নিকট থেকে কুরআন সম্পর্কে জেনে নাও। কারণ সেই কিতাবসমূহে তার বহু নিদর্শন এবং শেষ পয়গম্বরের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:৯৫ وَ لَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِ اللّٰهِ فَتَكُوۡنَ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۹۵﴾

আর তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে। তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল-বায়ান

আর তুমি কক্ষনো তাদের মধ্যে শামিল হয়ো না যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যে জেনে অমান্য করে, তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তাইসিরুল

আর ঐ সব লোকেরও অন্তর্ভুক্ত হয়োনা যারা আল্লাহর আয়াতগুলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যেন তুমি ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না হও। মুজিবুর রহমান

And never be of those who deny the signs of Allah and [thus] be among the losers. Sahih International

৯৫. এবং যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে আপনি কখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না- তাহলে আপনিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৫) আর ঐসব লোকদেরও অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা মনে করেছে, নচেৎ তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [1]

[1] এটাও প্রকৃতপক্ষে উম্মতকে সম্বোধন করে বুঝানো হচ্ছে যে, মিথ্যাজ্ঞান করার পথই হচ্ছে ক্ষতি ও ধ্বংসের পথ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১ হূদ
১১:১ الٓرٰ ۟ كِتٰبٌ اُحۡكِمَتۡ اٰیٰتُهٗ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِنۡ لَّدُنۡ حَكِیۡمٍ خَبِیۡرٍ ۙ﴿۱﴾

আলিফ-লাম-রা। এটি কিতাব যার আয়াতসমূহ সুস্থিত করা হয়েছে, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্ত্বার পক্ষ থেকে। আল-বায়ান

আলিফ, লাম, রা; এটা এমন একটা গ্রন্থ, এর আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর সবিস্তারে ব্যাখ্যাকৃত মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞের নিকট হতে। তাইসিরুল

আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে। মুজিবুর রহমান

Alif, Lam, Ra. [This is] a Book whose verses are perfected and then presented in detail from [one who is] Wise and Acquainted. Sahih International

১. আলিফ-লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট(১), সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত(২) প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছে থেকে(৩);

(১) অর্থাৎ এ কিতাবে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো পাকা ও অকাট্য কথা এবং সেগুলোর কোন নড়চড় নেই। ভালোভাবে যাচাই পর্যালোচনা করে সে কথাগুলো বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন পাকের আয়াতসমূহ সামগ্রিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত, অপরিবর্তিত। বাতিল এর কাছে প্রবেশের কোন সুযোগ পায় না। [তাবারী] তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ পবিত্র কুরআন নাযিলের ফলে যেভাবে মানসূখ বা রহিত হয়েছে কুরআন পাক নাযিল হওয়ার পর যেহেতু নবীর আগমন এবং ওহীর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হয়ে গেছে সুতরাং কেয়ামত পর্যন্ত এ কিতাব আর রহিত হবে না। [কুরতুবী] এর আয়াতসমূহ শব্দের দিক থেকে মুহকাম বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও অপরিবর্তিত। হাসান ও আবুল আলীয়া বলেন, নির্দেশ ও নিষেধ দ্বারা এটাকে মজবুত করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ এ আয়াতগুলো বিস্তারিতও। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কথা খুলে খুলে ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বক্তব্য জটিল, বক্র ও অস্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কথা আলাদা আলাদা করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এর অর্থ, ওয়াদা, ধমক, সাওয়াব ও শাস্তির বিষয়াদি এতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী] কাতাদা বলেন, আল্লাহ এটাকে বাতিলের জন্য অপ্রতিরোধ করেছেন, তারপর হালাল ও হারাম সংক্রান্ত বিষয়াদি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, সামগ্রিকভাবে এটাকে মজবুত করেছেন। তারপর তাওহীদ, নবুওয়াত ও আখেরাতের পুনরুত্থানের বর্ণনা এক একটি আয়াত করে প্রদান করা হয়েছে। [কুরতুবী]

সুতরাং এতে আকায়েদ, ইবাদত, লেন-দেন আচার ব্যবহার ও নীতি নৈতিকতার বিষয়বস্তুগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর আরেক অর্থ এও হতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তো পূর্ণ কুরআন মজীদ একসাথে লাওহে মাহফুজে উৎকীর্ণ করা হয়েছে, কিন্তু তারপর স্থান কাল পাত্র পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনানুসারে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে, যাতে এর স্মরণ রাখা, মর্ম অনুধাবণ ক্রমানুসারে তদনুযায়ী আমল করা সহজ হয়। [কুরতুবী] অথবা এক এক আয়াত করে পর্যায়ক্রমে নাযিল করা হয়েছে যাতে এর মধ্যে চিন্তা-গবেষণা করা যায়। [কুরতুবী]

(৩) অর্থাৎ এসব আয়াত এমন এক মহান সত্তার পক্ষ হতে আগত হয়েছে, যিনি তার বাণীসমূহ ও বিধানসমূহে মহা প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আলিফ লা-ম রা। এ (কুরআন) এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলি মজবুত (সুবিন্যস্ত) করা হয়েছে,[1] অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে[2] প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞাতা (আল্লাহ)র পক্ষ হতে। [3]

[1] অর্থাৎ, তা এত পাকাপোক্ত যে, তার শব্দবিন্যাস ও অর্থ বিবৃতিতে কোন প্রকার ত্রুটি নেই। অথবা তার মধ্যে কোন অস্পষ্টতা ও জটিলতা নেই। অথবা তা পরিবর্তন ও রহিত হওয়ার নয়।

[2] তারপর তাতে আহকাম ও শরয়ী বিধি-বিধান, নসীহত ও কাহিনী, আক্বায়েদ ও ঈমানসংক্রান্ত বিষয় এবং চরিত্র ও ব্যবহার নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলোকে যেভাবে পরিষ্কার ও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, পূর্ব কিতাবসমূহে তার দৃষ্টান্ত মিলে না।

[3] অর্থাৎ, আপন বাণীতে তিনি প্রজ্ঞাময়, ফলে তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণকৃত বাণী হিকমত থেকে খালি নয়। তিনি মহাজ্ঞাতাও অর্থাৎ, তিনি সমস্ত বিষয় ও তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ফলে তাঁর কথার উপর আমল করার মাধ্যমেই মানুষ অমঙ্গল থেকে বাঁচতে পারবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১ হূদ
১১:১৭ اَفَمَنۡ كَانَ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّهٖ وَ یَتۡلُوۡهُ شَاهِدٌ مِّنۡهُ وَ مِنۡ قَبۡلِهٖ كِتٰبُ مُوۡسٰۤی اِمَامًا وَّ رَحۡمَۃً ؕ اُولٰٓئِكَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ ؕ وَ مَنۡ یَّكۡفُرۡ بِهٖ مِنَ الۡاَحۡزَابِ فَالنَّارُ مَوۡعِدُهٗ ۚ فَلَا تَكُ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡهُ ٭ اِنَّهُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۷﴾

যারা তার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অনুসরণ করে তাঁর পক্ষ থেকে একজন সাক্ষী* এবং যার পূর্বে রয়েছে মূসার কিতাব পথপ্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ,(তারা কি ঐ লোকদের মত, যারা দুনিয়া ও তার জৌলুস কামনায় বিভোর?) এরাই তার প্রতি ঈমান পোষণ করে। আর যে সকল দল তা অস্বীকার করে, আগুনই হবে তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। সুতরাং তুমি এতে মোটেও সন্দেহের মধ্যে থেকো না, নিশ্চয় তা তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না। আল-বায়ান

তাহলে যে লোক তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর আছে এবং তাঁর পক্ষ হতে এক সাক্ষী ওটা পড়ে শোনাচ্ছে (সে কি অবিশ্বাসীদের সমান হতে পারে?) আর তার পূর্বে পথ প্রদর্শক ও রহমত স্বরূপ এসেছিল মূসার কিতাব। ওরাই তাতে (অর্থাৎ কুরআনে) বিশ্বাসী। যারাই এটাকে অস্বীকার করবে, জাহান্নামই হল তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। কাজেই এ সম্পর্কে তুমি কোন প্রকার সন্দেহে নিপতিত হয়ো না। এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত প্রকৃত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না। তাইসিরুল

তারা কি এমন ব্যক্তিদের সমান হতে পারে যারা কায়েম আছে তাদের রবের পক্ষ হতে প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর এবং যার কাছে তাঁর প্রেরিত এক সাক্ষী আবৃত্তি করে; এবং তাদের কাছে মূসার কিতাব রয়েছে, যা পথনির্দেশ ও রাহমাত স্বরূপ? এমন লোকেরাই এর প্রতি ঈমান রাখে। আর অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে ইহা (কুরআন) অমান্য করবে, জাহান্নাম হবে তার প্রতিশ্রুত স্থান। অতএব তুমি কুরআন সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়োনা, নিঃসন্দেহে এটি সত্য কিতাব তোমার রবের সন্নিধান হতে। কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনেনা। মুজিবুর রহমান

So is one who [stands] upon a clear evidence from his Lord [like the aforementioned]? And a witness from Him follows it, and before it was the Scripture of Moses to lead and as mercy. Those [believers in the former revelations] believe in the Qur'an. But whoever disbelieves in it from the [various] factions - the Fire is his promised destination. So be not in doubt about it. Indeed, it is the truth from your Lord, but most of the people do not believe. Sahih International

* সাক্ষী দ্বারা মুহাম্মাদ সা. কে বুঝানো হয়েছে।

১৭. তারা(১) কি তার সমতুল্য যে তার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত(২) এবং যার অনুসরণ করে তার প্রেরিত সাক্ষী(৩) এবং যার আগে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ? তারাই এটাতে(৪) ঈমান রাখে। অন্যান্য দলের যারা তাতে(৫) কুফরী করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান।(৬) কাজেই আপনি এতে(৭) সন্দ্বিগ্ন হবেন না। এটা তো আপনার রবের প্রেরিত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না।(৮)

(১) অর্থাৎ পূর্ব ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে বর্ণিত কাফেরগণ কি এ আয়াতে আগত লোকদের সমতুল্য। [মুয়াসসার] অথবা যারা তাদের রবের প্রেরিত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত তারা কি তাদের মত যারা তাদের রব প্রেরিত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়? [জালালাইন]

(২) বলা হয়েছে, যে তার রবের পক্ষ থেকে আগত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা ঈমানদারগণ সবাই। [জালালাইন] আর ‘স্পষ্ট প্রমাণ’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে।

এক. এখানে ‘বাইয়েনাহ’ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে ফিতরাত তথা স্বভাবগত বিশ্বাসকে বুঝানো হয়েছে। মূলতঃ প্রত্যেক মানুষই ফিতরাত তথা স্বভাবগতভাবে দ্বীন ইসলামের উপর জন্ম গ্রহণ করে থাকে। [ইবন কাসীর] পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সঙ্গদোষ, শয়তান, গাফিলতি ইত্যাদি তাদেরকে সে স্বভাবজাত দ্বীন-ইসলামে প্রতিষ্ঠিত থাকতে দেয় না। সে হিসেবে আয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সত্যিকারের মুমিনদের অবস্থা ঐসব লোকদের মোকাবেলায় তুলে ধরা হয়েছে- যাদের চরম ও পরম লক্ষ্য হচ্ছে শুধু দুনিয়া হাসিল করা। যেন দুনিয়ার মানুষ বুঝতে পারে যে, এই দুটি শ্রেণী কখনো সমকক্ষ হতে পারে না।

দুই. অথবা আয়াতে বাইয়েনাহ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে কুরআনকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [জালালাইন] তখন আয়াতের অর্থ হবে, যিনি বা যারা অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা মুমিনগণ স্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার অনুসরণ করে একজন সাক্ষী তিনি হচ্ছেন জিবরীল। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যের উপর সাক্ষী। তাছাড়া দ্বিতীয় আরেকটি সাক্ষ্যও রয়েছে আর তা হচ্ছে এ কুরআনের পূর্বে আগত কিতাব তাওরাত যা মূসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিল হয়েছে। সে কিতাবও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য। [জালালাইন]

তিন. অথবা আয়াতে বর্ণিত বাইয়্যেনাহ বা স্পষ্ট প্রমাণ বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। এ কুরআনই নিজেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতার উপর প্রথম সাক্ষী। তার দ্বিতীয় সাক্ষী হচ্ছে জিবরীল অথবা স্বয়ং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তৃতীয় সাক্ষী হচ্ছে পূর্বে মূসা আলাইহিস সালামের উপর নাযিলকৃত কিতাব তাওরাত। যিনি এ তিন সাক্ষী-প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত তিনি কি দুনিয়া পুজারীদের মত? [মুয়াসসার]

(৩) এ আয়াতে شاهد শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারক ইমামগণের কয়েকটি অভিমত রয়েছেঃ

(১) কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে শাহেদ অর্থ পবিত্র কুরআনের إعجاز এ’জায বা মানুষের সাধ্যাতীত হওয়া যা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের সাথে বর্তমান রয়েছে। সুতরাং আয়াতের মর্ম হচ্ছে, কুরআন অমান্যকারী কি এমন ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারে যে কুরআনের উপর কায়েম রয়েছে? আর কুরআনের সত্যতার একটি সাক্ষী তো কুরআনের সাথেই বর্তমান রয়েছে। অর্থাৎ এর বিস্ময়করতা এবং মানুষের সাধ্যাতীত হওয়া এবং দ্বিতীয় সাক্ষী ইতোপূর্বে তাওরাতরূপে এসেছে, যা মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার রহমতস্বরূপ দুনিয়াবাসীর অনুসরনের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। কেননা, কুরআন যে আল্লাহ্‌ তা’আলার সত্য কিতাব এ সাক্ষ্য তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত ছিল।

(২) কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে شاهد বলতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই বুঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার]

(৩) কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে شاهد বলতে فطرة বা বুদ্ধিবৃত্তিক সাক্ষ্যকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন এসে এ প্রকৃতিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলো এবং তাকে জানালো তুমি বিশ্বপ্রকৃতিতে ও জীবন ক্ষেত্রে যার নিদর্শন ও পূর্বাভাস পেয়েছে প্রকৃতপক্ষে তাই সত্য। [ইবন কাসীর]

(৪) ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে شاهد বলতে জিবরীল আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে; কেননা এর পরে বলা হয়েছে, “যার আগে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ” আর এটা নিঃসন্দেহ যে, মুহাম্মাদ এর আগে কখনো মূসা আলাইহিস সালামের গ্রন্থ তেলাওয়াত করেননি। তাই এখানে সাক্ষ্য বলে জিবরীল আলাইহিস সালাম হওয়াই যুক্তিযুক্ত; কেননা তিনি মূসা আলাইহিস সালামের গ্রন্থও নিয়ে এসেছিলেন। [তাবারী]

(৪) অর্থাৎ এ কুরআনে ঈমান রাখে এবং এর নির্দেশ অনুসারে চলে। [মুয়াসসার]

(৫) অর্থাৎ অন্যান্য যাবতীয় লোকেরা যারা কুরআনের উপর ঈমান রাখে না এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও রাসূল হিসেবে মানে না তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।

(৬) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “এ জাতি এবং ইয়াহুদী বা নাসারা যে জাতিই হোক না কেন তাদের কেউ যদি আমার কথা শোনার পরও আমার উপর ঈমান না আনবে তারা অবশ্যই জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে”। [মুসলিম: ১৫৩] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আমি এ কথার সত্যায়নে আল্লাহর কিতাব থেকে প্রমাণাদি খুজছিলাম, শেষ পর্যন্ত এ আয়াত পেলাম “অন্যান্য দলের যারা এটাকে অস্বীকার করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান”। তারপর ইবনে আব্বাস বললেনঃ এখানে الأحزاب বলে যাবতীয় দল ও গোষ্ঠীকে বুঝানো হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৪২]

(৭) অর্থাৎ এ কুরআনের সত্যতার উপর আপনি সন্দেহে থাকবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও সন্দেহে নেই। এখানে উম্মতকে সাধারণভাবে পথ নির্দেশ দেয়াই উদ্দেশ্য। [মুয়াসসার] শানকীতী বলেন, কুরআনের অন্যত্রও এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানেও এ কুরআনকে সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, সূরা আল-বাকারাহ: ২; সূরা সাজদাহ ২। [আদওয়াউল বায়ান]

(৮) মূলত: ঈমান আনার জন্য সোজা মন ও আল্লাহর তাওফীক থাকতে হয়। সুতরাং নবী ইচ্ছা করলেই বা কুরআনের সত্যতা স্পষ্ট হলেই অধিকাংশ মানুষ ঈমান নিয়ে আসবে ব্যাপারটি এরকম নয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষের মতামতই যে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে এমন কথাও ঠিক নয়। এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ সূরা আল আনআমঃ ১১৬, ইউসুফঃ ১০৩, আর-রাদঃ ১, আল-ইসরাঃ ৮৯, আল-ফুরকানঃ ৫০, আস-সাফফাতঃ ৭১, গাফিরঃ ৫৯, আল-বাকারাহঃ ১০০, আশ-শু'আরাঃ ৮, ৬৭, ১০৩, ১২১, ১৩৯, ১৫৮, ১৭৪, ১৯০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং ওর সঙ্গে তাঁর পক্ষ হতে এক সাক্ষীও বিদ্যমান, আর ওর পূর্বে (সাক্ষী) ছিল আদর্শ ও করুণা স্বরূপ মূসার গ্রন্থ; (সে কি তার মত যে অনুরূপ নয়)?[1] এমন লোকেরাই এ (কুরআন)-এর প্রতি বিশ্বাস রাখে।[2] আর সমস্ত দলের মধ্য হতে যে ব্যক্তি এই (কুরআন) অমান্য করবে, তার প্রতিশ্রুত স্থান হবে দোযখ।[3] অতএব তুমি এ (কুরআন) সম্পর্কে সন্দেহে পড়ো না। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এটা সত্য (গ্রন্থ); কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে না। [4]

[1] কাফের ও অস্বীকারকারীদের বিপরীত মু’মিন ও দ্বীনদারদের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। ‘‘প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ’’এর অর্থ হল, সেই ‘প্রকৃতি’ যার উপর আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল এক আল্লাহকে স্বীকার ও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার প্রকৃতি। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, সকল শিশু প্রকৃতির উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে দেয়।’’ (বুখারী) يَتْلُوْهُ এর অর্থ হল, ওর পিছনে বা ওর সঙ্গে। অর্থাৎ, তার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাক্ষীও বিদ্যমান। সে সাক্ষী হল কুরআন অথবা মুহাম্মাদ (সাঃ), যিনি সেই সুস্থ মানব-প্রকৃতির দিকে আহবান করেন। আর এর পূর্বে মূসা (আঃ)-এর কিতাব তাওরাতও সাক্ষী; যা পথনির্দেশক ও রহমতের কারণও বটে। অর্থাৎ, মূসা (আঃ)-এর কিতাবও কুরআনের উপর ঈমান আনার জন্য পথ দেখায়। উদ্দেশ্য এই যে, একজন সেই ব্যক্তি, যে অস্বীকারকারী ও কাফের এবং তার বিপরীত অন্য আর এক ব্যক্তি, যে আল্লাহর সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, তার এক সাক্ষী হল কুরআন বা নবী (সাঃ), অনুরূপ পূর্বে অবতীর্ণ কিতাব তাওরাতেও তার পথনির্দেশনার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং সে বিশ্বাসী। এরা উভয়ে কি সমান হতে পারে? অর্থাৎ, উভয়ে সমান হতে পারে না। কারণ একজন মু’মিন আর দ্বিতীয়জন কাফের। একজন সর্বপ্রকার দলীল দ্বারা সমৃদ্ধ। আর অন্যজন একেবারে দলীলশূন্য।

[2] অর্থাৎ, যাদের মাঝে উক্ত গুণ পাওয়া যায়, তারা কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ) এর প্রতি ঈমান রাখে।


[3] ‘সমস্ত দল’ থেকে উদ্দেশ্য হল, সারা পৃথিবীতে যে সকল ধর্ম বা মতবাদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, পারসীক, বৌদ্ধ, অগ্নিপূজক, পৌত্তলিক ও অবিশ্বাসী ইত্যাদি থেকে যে কেউ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান না আনবে, তার স্থান হবে জাহান্নাম। উক্ত বিষয়টি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জান আছে! এই উম্মতের যে ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টান আমার নবুঅত সম্পর্কে শ্রবণ করবে অথচ আমার প্রতি ঈমান আনবে না, সে জাহান্নামে যাবে।’’ (মুসলিম) এ বিষয়টি এর পূর্বে সূরা বাক্বারার ৬২নং ও সূরা নিসার ১৫০-১৫২নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।

[4] এ বিষয়টিকে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, যেমন (وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়। (সূরা ইউসুফ ১০৩ আয়াত) (وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তাদের সম্বন্ধে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণ করল, ফলে তাদের মধ্যে একটি মু’মিন দল ব্যতীত সবাই তার অনুসরণ করল। (সূরা সাবা’ ২০ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১১ হূদ
১১:১১০ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡكِتٰبَ فَاخۡتُلِفَ فِیۡهِ ؕ وَ لَوۡ لَا كَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّهُمۡ لَفِیۡ شَكٍّ مِّنۡهُ مُرِیۡبٍ ﴿۱۱۰﴾

আর অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর তাতে মতবিরোধ করা হয়েছিল। যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত*, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত। আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে ঘোর সন্দেহে রয়েছে। আল-বায়ান

ইতোপূর্বে আমি মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও মতবিরোধ করা হয়েছিল। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি কথা যদি আগেই বলে দেয়া না হত, তাহলে তাদের মাঝে অবশ্যই ফায়সালাই ক’রে দেয়া হত, এ ব্যাপারে তারা অবশ্য সন্দেহপূর্ণ সংশয়ে পড়ে আছে। তাইসিরুল

আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর ওতে মতভেদ করা হল। আর যদি একটি উক্তি তোমার রবের পক্ষ হতে পূর্বেই স্থিরীকৃত হয়ে না থাকত তাহলে ওদের চুড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। এবং এই লোকেরা এর সম্বন্ধে এমন সন্দেহে (পতিত) আছে যা তাদেরকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলে রেখেছে। মুজিবুর রহমান

And We had certainly given Moses the Scripture, but it came under disagreement. And if not for a word that preceded from your Lord, it would have been judged between them. And indeed they are, concerning the Qur'an, in disquieting doubt. Sahih International

* অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাড়াহুড়া করবেন না, এই সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতেন।

১১০. আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। আর আপনার রবের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের মীমাংসা তো হয়েই যেত।(১) আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিপতিত।(২)

(১) এ পূর্ব সিদ্ধান্ত বা বাক্য সম্পর্কে দুটি মত প্রসিদ্ধ। এক. পূর্ব থেকেই তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অবকাশ প্রদানের সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের উপর আযাব এসে যেতো। দুই. অথবা পূর্ব থেকেই যদি আল্লাহর সিদ্ধান্ত না থাকত যে, তিনি নবী-রাসূল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিবেন না, তাহলে অবশ্যই তাদের উপর শাস্তি আপতিত হতো। যেমন আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।” [সূরা আল-ইসরা: ১৫] [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ এ কুরআন সম্পর্কে আজ বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলছে, নানা রকম সন্দেহসংশয় পোষণ করছে, এটা কোন নতুন কথা নয়। বরং এর আগে মূসাকে যখন কিতাব দেয়া হয়েছিল তখন তার ব্যাপারেও এ ধরনের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করা হয়েছিল। [কুরতুবী; সা’দী] কাজেই হে নবী! এমন সহজ, সরল ও পরিষ্কার কথা কুরআনে বলা হচ্ছে এবং তারপরও লোকেরা তা গ্রহণ করছে না-এ অবস্থা দেখে আপনার মন খারাপ করা ও হতাশ হওয়া উচিত নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর ওতে মতভেদ করা হল।[1] যদি একটি উক্তি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্বেই স্থিরীকৃত হয়ে না থাকত, তাহলে ওদের মাঝে চূড়ান্ত মীমাংসা হয়েই যেত।[2] আর অবশ্যই তারা এ (কুরআন) সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে।

[1] অর্থাৎ, কিছু লোক সেই কিতাব মেনে নিল, আর কিছু লোক তা মেনে নিল না। এই কথা বলে নবী (সাঃ)-কে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, পূর্ব নবীগণের সাথেও এই ব্যবহার হতে থেকেছে, কিছু সংখ্যক মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান আনত এবং অন্যরা মিথ্যাজ্ঞান করত। অতএব তোমাকে মিথ্যাজ্ঞান করা হলে ঘাবড়ে যাবে না।

[2] এর অর্থ এই যে, যদি আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তির জন্য একটি সময় নির্ধারিত করে না রাখতেন, তাহলে তিনি তাদেরকে অবিলম্বে ধ্বংস করে দিতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ ইউসুফ
১২:১ الٓرٰ ۟ تِلۡكَ اٰیٰتُ الۡكِتٰبِ الۡمُبِیۡنِ ۟﴿۱﴾

আলিফ-লাম-রা। এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। আল-বায়ান

আলিফ, লাম-রা, এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াতসমূহ। তাইসিরুল

আলিফ-লাম-রা এগুলি সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। মুজিবুর রহমান

Alif, Lam, Ra. These are the verses of the clear Book. Sahih International

১. আলিফ-লাম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।(১)

(১) অর্থাৎ এগুলো কুরআনের আয়াত। [ইবন কাসীর] সে গ্রন্থ যা হালাল ও হারামের বিধি-বিধান এবং প্রত্যেক কাজের সীমা ও শর্ত বর্ণনা করে। মানুষকে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রের জন্য হেদায়াত ও সঠিক পথের দিশা জানিয়ে দেয়। [বাগভী; মুয়াসসার] কাতাদা বলেন, এ কুরআন অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী। আল্লাহ্ তাঁর হেদায়াত ও পথের দিশা তাতে বর্ণনা করেছেন। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আলিফ লা-ম রা। এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ ইউসুফ
১২:২ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ قُرۡءٰنًا عَرَبِیًّا لَّعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۲﴾

নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। আল-বায়ান

আমি তা অবতীর্ণ করেছি, আরবী ভাষার কুরআন, যাতে তোমরা ভালভাবে বুঝতে পার। তাইসিরুল

আমি অবতীর্ণ করেছি আরাবী ভাষায় কুরআন যাতে তোমরা বুঝতে পার। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have sent it down as an Arabic Qur'an that you might understand. Sahih International

২. নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি(১) কুরআন হিসেবে আরবী ভাষায় যাতে তোমরা বুঝতে পার।(২)

(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন নাযিল হয়েছে রামাদান মাসের চব্বিশ দিন গত হওয়ার পর। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১০৭]

(২) অর্থাৎ আমি একে আরবী কুরআন হিসেবে নাযিল করেছি, হয়ত এতে তোমরা বুঝতে পারবে। আল্লাহ তা'আলা আরবদের ভাষায় এ কাহিনী নাযিল করেছেন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সততা ও সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাহিনীতে বর্ণিত বিধান ও নির্দেশাবলীকে চলার পথের আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করে। আরবী ভাষায় নাযিল হওয়ার পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, আরবী ভাষা সবচেয়ে প্রাঞ্জল ভাষা এবং সবচেয়ে প্রশস্ত ভাষা।

তাই আল্লাহ্ চাইলেন যে, তার সবচেয়ে সম্মানিত কিতাবটি সবচেয়ে মহৎ মাধ্যমে। আর তাও সংঘটিত হয়েছিল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভূমিতে। অনুরূপভাবে তার নাযিল হওয়াও শুরু হয়েছিল বছরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাসে। আর তা হচ্ছে রামাদান। তাই এ কুরআন সবদিক থেকেই পরিপূর্ণ। তাই এরপরই আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন যে, “আমরা আপনার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, ওহীর মাধ্যমে আপনার কাছে এ কুরআন পাঠিয়ে” অর্থাৎ এ কুরআন আপনার কাছে ওহী করার কারণেই তা বলা সম্ভব হয়েছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) নিশ্চয় আমি এটি অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআনরূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার। [1]

[1] আসমানী গ্রন্থসমূহকে অবতীর্ণ করার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে হিদায়াত ও পথ প্রদর্শন করা। আর উক্ত উদ্দেশ্য তখনই অর্জন হবে, যখন সেই গ্রন্থ এমন ভাষায় হবে, যে ভাষা তারা বুঝতে পারবে। এই জন্যই সমস্ত আসমানী গ্রন্থ যে জাতির হিদায়াতের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে সে জাতির ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআন কারীম যেহেতু সর্বপ্রথম আরববাসীদেরকে লক্ষ্য করে অবতীর্ণ করা হয়েছে, সেহেতু তা আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাছাড়া আরবী ভাষা সাহিত্য- শৈলী, শব্দালঙ্কার, অলৌকিকতা ও অর্থ প্রকাশের দিক থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। এই জন্য আল্লাহ তাআলা এই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ (কুরআন মাজীদ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ (আরবী) ভাষাতে, সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি, সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা (জিবরীল)এর মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন এবং মক্কা যেখানে অবতীর্ণ হতে আরম্ভ হয়েছে, তা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান, যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে, সে মাসটিও সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমযান মাস এবং যে রাতে অবতীর্ণ হয়েছে, সে রাতও সর্বশ্রেষ্ঠ রাত শবেকদরের রাত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ ইউসুফ
১২:৩ نَحۡنُ نَقُصُّ عَلَیۡكَ اَحۡسَنَ الۡقَصَصِ بِمَاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡكَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ ٭ۖ وَ اِنۡ كُنۡتَ مِنۡ قَبۡلِهٖ لَمِنَ الۡغٰفِلِیۡنَ ﴿۳﴾

আমি তোমার নিকট সুন্দরতম কাহিনী বর্ণনা করছি, এ কুরআন আমার ওহী হিসেবে তোমার কাছে প্রেরণ করার মাধ্যমে। যদিও তুমি এর পূর্বে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। আল-বায়ান

আমি তোমার কাছে সর্বোত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, এ কুরআন তোমার কাছে ওয়াহী যোগে পাঠিয়ে, যদিও এর পূর্বে তুমি না-জানা লোকদের মধ্যেই শামিল ছিলে। তাইসিরুল

আমি তোমার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে এই কুরআন প্রেরণ করে, যদিও এর পূর্বে তুমি ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত। মুজিবুর রহমান

We relate to you, [O Muhammad], the best of stories in what We have revealed to you of this Qur'an although you were, before it, among the unaware. Sahih International

৩. আমরা আপনার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি(১), ওহীর মাধ্যমে আপনার কাছে এ কুরআন পাঠিয়ে; যদিও এর আগে আপনি ছিলেন অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত।(২)

(১) সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর অনেকদিন থেকে বিভিন্ন আয়াত নাযিল করছিল, তখন সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাদেরকে কোন কিছছা শোনাতেন। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন এবং ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাহিনী শোনান।” [ইতহাফ আল খিয়ারাহঃ ১/২৩৮, ১৬২ মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৪৫, ইবনে হিব্বান–আল ইহসান- ৬২০৯, দিয়া আল মাকদেসীঃ আল-মুখতারাহঃ ১০৬৯]

এ কাহিনীকে উত্তম কাহিনী বলার কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত বর্ণিত হয়েছে। কারও কারও মতে, কারণ এতে রয়েছে শিক্ষা, উপদেশ, হিকমত বা প্রজ্ঞা যা অন্য কোন কাহিনীতে নেই। কারও কারও মতে, কারণ এতে রয়েছে উত্তম কথোপকথন, ইউসুফ আলাইহিস সালামের উপর তার ভাইদের অত্যাচারের বিপরীতে সবর ও তাদেরকে ক্ষমার বর্ণনা। কারও কারও মতে, কারণ এতে রয়েছে নবীদের কথা, সৎলোকদের কথা, ফিরিশতাদের কথা, শয়তানের কথা, জিন, মানব, জন্তু জানোয়ার, পাখি, রাজা-বাদশাহের চরিত, ব্যবসায়ী, আলেম, জাহেল, পুরুষ, মহিলাদের কথা। মহিলাদের বাহানা ও তাদের ষড়যন্ত্রের কথা। [ফাতহুল কাদীর]

(২) অর্থাৎ আমি এ কুরআনকে ওহীর মাধ্যমে আপনার প্রতি নাযিল করে আপনার কাছে সর্বোত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি। নিঃসন্দেহে আপনি ইতিপূর্বে এসব ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর এভাবে আমরা আপনার প্রতি আমাদের নির্দেশ থেকে রূহ ওহী করেছি; আপনি তো জানতেন না কিতাব কি এবং ঈমান কি! কিন্তু আমরা এটাকে করেছি আলো যা দ্বারা আমরা আমাদের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে হেদায়াত দান করি।” [সূরা আশ-শূরা: ৫২] [সা’দী] এতে নবুওয়াতের দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ রয়েছে। কেননা, তিনি পূর্ব থেকে নিরক্ষর এবং বিশ্ব ইতিহাস সম্পর্কে অনভিজ্ঞও ছিলেন। সুতরাং তিনি এখন যে বিজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন, তার মাধ্যম আল্লাহর শিক্ষা ও ওহী ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আল্লামা ইবন কাসীর এ আয়াত থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যনির্দেশ করেছেন। তা হচ্ছে, যেহেতু এ কুরআনে আল্লাহ তা'আলা সর্বোত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছেন সেহেতু এ কিতাব নাযিল হওয়ার পর অন্য কোন কিতাবের প্রয়োজন নেই।

কারণ, একবার উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কোন এক কিতাবী লোক থেকে একটি প্রাচীন গ্রন্থ পেয়ে তা নিয়ে এসে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত ক্রোধাম্বিত হলেন এবং বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব! তোমরা কি পেরেশান হয়ে গেছ? পরিণাম বিবেচনা না করে যা-তা করে বেড়াবে? যত্র-তত্র ঢুকে যাবে? যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, অবশ্যই আমি এটাকে শুভ্র,স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে নিয়ে এসেছি। তোমরা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করো না, ফলে তারা তোমাদেরকে কোন হক কথা জানাবে আর তোমরা মিথ্যা মনে করবে, আবার কোন বাতিল কথা জানাবে আর তোমরা সেটাকে সত্য মনে করবে। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, যদি মূসা জীবিত থাকতেন তবে আমার অনুসরণ ছাড়া তার গত্যন্তর ছিল না। [ইবন আবী আসেম: আস-সুন্নাহ ১/২৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) আমি তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ কাহিনী[1] বর্ণনা করছি, অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে এই কুরআন প্রেরণ করে; যদিও এর পূর্বে তুমি ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত। [2]

[1] قصص শব্দটি মাসদার (ক্রিয়া-বিশেষণ)। অর্থ হল কোন বস্তুর পেছনে লাগা। উদ্দেশ্য চমৎকার ঘটনা। কেচ্ছা, শুধু কোন কল্পিত কাহিনী বা মনোরঞ্জন উপন্যাসকে বলা হয় না; বরং অতীতে ঘটে গেছে এমন ঘটনার বর্ণনাকে (অর্থাৎ, তার পিছনে লাগাকে আরবীতে কিসসা) ‘কেচ্ছা’ বলা হয়। (ইউসুফ (আঃ)-এর) এ ঘটনা ঠিক অতীতে সংঘটিত ইতিহাসের বাস্তব বর্ণনা এবং এতে হিংসা ও শত্রুতার পরিণতি, আল্লাহর সাহায্যের আজব পদ্ধতি, মন্দ-প্রবণ মনের পাপাচরণের কুফল এবং মানুষের বিভিন্ন অবস্থার সুন্দর বর্ণনা এবং বড় গুরুতত্ত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যার জন্য কুরআন একে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ কাহিনী’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

[2] কুরআন কারীমের এই শব্দাবলী দ্বারাও পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, নবী করীম (সাঃ) ‘আ-লিমুল গায়েব’ ছিলেন না, নচেৎ আল্লাহ তাআলা তাঁকে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে ‘অনবহিত’ আখ্যায়িত করতেন না। দ্বিতীয় কথা এও বুঝা গেল যে, তিনি আল্লাহর সত্য নবী। কারণ তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেই এই সত্য ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি কোন শিক্ষকের ছাত্র ছিলেন না যে, তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আর না অন্য কারোর সাথে তাঁর এমন সম্পর্ক ছিল যে, তার নিকট থেকে শ্রবণ করে এরূপ ঐতিহাসিক ঘটনা তার গুরুতত্ত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি অংশ সহ বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা নিঃসন্দেহে তা অহীর মাধ্যমে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। যেমন এখানে সে কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ ইউসুফ
১২:১১১ لَقَدۡ كَانَ فِیۡ قَصَصِهِمۡ عِبۡرَۃٌ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ ؕ مَا كَانَ حَدِیۡثًا یُّفۡتَرٰی وَ لٰكِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ تَفۡصِیۡلَ كُلِّ شَیۡءٍ وَّ هُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۱۱﴾

তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হিদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য যারা ঈমান আনে। আল-বায়ান

এদের কাহিনীসমূহে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এ কুরআন কোন মিথ্যে রচনা নয়, বরং তাদের পূর্বে আগত কিতাবের প্রত্যয়নকারী আর যাবতীয় বিষয়ের বিস্তারিত বিররণে সমৃদ্ধ, আর মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য পথের দিশারী ও রহমাত। তাইসিরুল

তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা, ইহা এমন বাণী যা মিথ্যা প্রবন্ধ নয়, কিন্তু মু’মিনদের জন্য এটা পূর্ব গ্রন্থে যা আছে উহার সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত ও রাহমাত। মুজিবুর রহমান

There was certainly in their stories a lesson for those of understanding. Never was the Qur'an a narration invented, but a confirmation of what was before it and a detailed explanation of all things and guidance and mercy for a people who believe. Sahih International

১১১. তাদের বৃত্তান্তে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা(১)। এটা কোন বানানো রচনা নয় বরং এটা আগের গ্রন্থে যা আছে তার সত্যায়ন(২) ও সব কিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান আনে এমন সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত।

(১) অর্থাৎ নবীদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য বিশেষ শিক্ষা রয়েছে। এর অর্থ সমস্ত নবীর কাহিনীতেও হতে পারে এবং বিশেষ করে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাহিনীতেও হতে পারে, যা এ সূরায় বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এ ঘটনায় পূর্ণরূপে প্রতিভাত হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার অনুগত বান্দাদের কি কি ভাবে সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করা হয় এবং কূপ থেকে বের করে রাজসিংহাসনে এবং অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়ে উচ্চতম শিখরে কিভাবে পৌছে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে চক্রান্ত ও প্রতারণাকারীরা পরিণামে কিরূপ অপমান ও লাঞ্ছনা ভোগ করে।

(২) অর্থাৎ এ কুরআন কোন মনগড়া কথা নয়। এর পূর্বে যা ছিল সেগুলোর মধ্যে যা যা সত্য সেগুলোকে এ কুরআন সমর্থন করে আর যেগুলো পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে সেগুলোকে অস্বীকার করে। [ইবন কাসীর] অথবা এ কাহিনী কোন মনগড়া কথা নয়, বরং পূর্বে অবতীর্ণ গ্রন্থসমূহের সমর্থনকারী। কেননা, তাওরাত ও ইঞ্জিলে এ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১১) তাদের কাহিনীতে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। এটা এমন বাণী; যা মিথ্যা রচনা নয়, বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী, সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথ-নির্দেশ ও করুণা। [1]

[1] অর্থাৎ এই কুরআন যাতে ইউসুফ (আঃ) সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে, মনগড়া নয়। বরং তা পূর্বের গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং এতে রয়েছে দ্বীনের সমস্ত জরুরী মাসায়েলের বিবরণ। আর রয়েছে ঈমানদারদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ আর-রাদ
১৩:১ الٓـمّٓرٰ ۟ تِلۡكَ اٰیٰتُ الۡكِتٰبِ ؕ وَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ مِنۡ رَّبِّكَ الۡحَقُّ وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱﴾

আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত, আর তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না। আল-বায়ান

আলিফ-লাম-মীম-র, এগুলো কিতাবের আয়াতসমূহ, আর তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রকৃত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনে না। তাইসিরুল

আলিফ লাম মীম রা, এগুলি কুরআনের আয়াত; যা তোমার রাব্ব হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা’ই সত্য; কিন্তু অধিকাংশ এতে বিশ্বাস করেনা। মুজিবুর রহমান

Alif, Lam, Meem, Ra. These are the verses of the Book; and what has been revealed to you from your Lord is the truth, but most of the people do not believe. Sahih International

১. আলিফ লাম-মীম-রা, এগুলো কিতাবের আয়াত, আর যা আপনার রব হতে আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে তা সত্য(১); কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই ঈমান আনে না।(২)

(১) আয়াতের প্রথমে “এগুলো কিতাবের আয়াত আর যা আপনার রব হতে আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে তা সত্য” বলে কি বুঝানো হয়েছে তাতে দুটি মত রয়েছে। এক. এখানে “এগুলো কিতাবের আয়াত” বলে কুরআনের পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবসমূহকে বুঝানো হয়েছে, [তাবারী; বাগভী] আর তখন “আর যা আপনার রব হতে আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে” বলে কুরআনকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে [তাবারী] দুই. এখানে “এগুলো কিতাবের আয়াত” বলে কুরআনুল করীম আল্লাহর কালাম এবং “আর যা আপনার রব এর পক্ষ হতে আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে” বলে কুরআনই বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] সে মতে আয়াতের অর্থ এই যে, এই কুরআনে যেসব বিধি-বিধান আপনার প্রতি নাযিল হয়, সেগুলো সব সত্য এবং সন্দেহের অবকাশমুক্ত। সেগুলোকে আঁকড়ে ধরুন। [বাগভী]

(২) যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, “আর আপনি যতই চান না কেন, বেশীর ভাগ লোকই ঈমান গ্রহণকারী নয়।” [সূরা ইউসুফঃ ১০৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আলিফ লা-ম মী-ম রা। এগুলি কুরআনের আয়াত; যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাই সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ আর-রাদ
১৩:৩৬ وَ الَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ یَفۡرَحُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مِنَ الۡاَحۡزَابِ مَنۡ یُّنۡكِرُ بَعۡضَهٗ ؕ قُلۡ اِنَّمَاۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ اللّٰهَ وَ لَاۤ اُشۡرِكَ بِهٖ ؕ اِلَیۡهِ اَدۡعُوۡا وَ اِلَیۡهِ مَاٰبِ ﴿۳۶﴾

আর আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তোমার উপর যা নাযিল হয়, তাতে তারা উৎফুল্ল হয়। আর দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এর কিছু অংশকে অস্বীকার করে। বল, ‘আমাকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে শরীক না করি। আমি তাঁরই দিকে দাওয়াত দেই এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তনস্থল’। আল-বায়ান

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম তারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে উৎফুল্ল, কিন্তু কতক দল তার কোন কোন কথা মানে না। বল, ‘আমি আল্লাহর ‘ইবাদাত করার জন্য এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শারীক না করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি, আমি তাঁর দিকেই আহবান জানাই, আর আমার প্রত্যাবর্তন তাঁর দিকেই। তাইসিরুল

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আনন্দ পায়, কিন্তু কোন কোন দল ওর কতক অংশ অস্বীকার করে। তুমি বলঃ আমিতো আল্লাহরই ইবাদাত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি; আমি তাঁরই প্রতি আহবান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন। মুজিবুর রহমান

And [the believers among] those to whom We have given the [previous] Scripture rejoice at what has been revealed to you, [O Muhammad], but among the [opposing] factions are those who deny part of it. Say, "I have only been commanded to worship Allah and not associate [anything] with Him. To Him I invite, and to Him is my return." Sahih International

৩৬. আর আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা যা আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে তাতে আনন্দ পায়(১)। আর দলগুলোর(২) মধ্যে কেউ কেউ তার কিছু অংশকে অস্বীকার করে। বলুন, আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তার কোন শরীক না করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমি তারই দিকে ডাকি এবং তারই কাছে আমার ফিরে যাওয়া।

(১) আল্লাহ তা'আলা এখানে জানাচ্ছেন যে, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে, তারা যা নাযিল হয়েছে তা দেখে খুশী হয়। এখানে ‘যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে’ বলে কি বোঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে। এক. কিতাবধারী বলে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তখন অর্থ হবে, কিতাবীদের মধ্যে যারা কিতাবের বিধানকে আঁকড়ে আছে, তার উপর প্রতিষ্ঠিত, তারা আপনার কাছে যা নাযিল হয়েছে অর্থাৎ কুরআন সেটা দেখলে খুশী হয়। কারণ, তাদের কিতাবে এ রাসূলের সত্যতা ও সুসংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত আছে। [ইবন কাসীর] যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম, সালমান প্রমুখ। [কুরতুবী] দুই. কাতাদা বলেন, এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী তথা সাহাবীদের কথা বলা হয়েছে। তারা কুরআনের আলো নাযিল হতে দেখলেই খুশী হত। [তাবারী; কুরতুবী]

(২) দলগুলো বলে এখানে কাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে, এক. তারা মক্কার মুশরিক কুরাইশরা এবং ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান আনেনি তারা। [কুরতুবী] দুই. অথবা এখানে শুধু ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] তিন. অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যারা জোট বেঁধেছিল তারা সবাই এখানে উদ্দেশ্য। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা[1] যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে আনন্দিত হয়,[2] আর কোন কোন দল ওর কতক অংশকে অস্বীকার করে।[3] তুমি বল, ‘আমি তো কেবল আল্লাহরই ইবাদত করতে এবং তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহবান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।’

[1] এর অর্থ মুসলমান; যারা কুরআনের আদেশ মোতাবেক আমল করে।

[2] অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার দলীল-প্রমাণ দেখে অধিক আনন্দিত হয়।

[3] এ থেকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, কাফের ও মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। কতিপয় উলামার নিকট কিতাবের অর্থ তাওরাত ও ইঞ্জীল। তাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা আনন্দিত হয়। অস্বীকারকারী সেই ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা, যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ আর-রাদ
১৩:৩৭ وَ كَذٰلِكَ اَنۡزَلۡنٰهُ حُكۡمًا عَرَبِیًّا ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَهۡوَآءَهُمۡ بَعۡدَ مَا جَآءَكَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا وَاقٍ ﴿۳۷﴾

আর এভাবেই আমি কুরআনকে বিধানস্বরূপ আরবীতে নাযিল করেছি। তোমার নিকট জ্ঞান পৌঁছার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষাকারী নেই। আল-বায়ান

এভাবে আমি একে বিধানরূপে নাযিল করেছি আরবী ভাষায়। তোমার কাছে জ্ঞান আসার পরেও তুমি যদি তাদের খাহেশের অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর মোকাবালায় তোমার কোন অভিভাবক থাকবে না, থাকবে না কোন রক্ষাকারী। তাইসিরুল

আর এভাবে আমি ইহা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বিধান, আরাবী ভাষায়। জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবেনা। মুজিবুর রহমান

And thus We have revealed it as an Arabic legislation. And if you should follow their inclinations after what has come to you of knowledge, you would not have against Allah any ally or any protector. Sahih International

৩৭. আর এভাবেই(১) আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি আরবী ভাষায় বিধানরূপে। আর জ্ঞান পাওয়ার পরও যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেন তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে(২) আপনার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না।(৩)

(১) অর্থাৎ যেভাবে আপনার পূর্বে আমরা অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছি এবং আপনার পূর্বে যখনই প্রয়োজন মনে করেছি তখনই কিতাব পাঠিয়েছি সেভাবে আমরা আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি এবং আমরা আপনাকে কুরআন নামক গ্রন্থখানি দিয়েছি, তাকে আরবী ভাষায় নাযিল করেছি। [ইবন কাসীর; মুয়াসসার] এ কিতাব আপনার উপর নাযিল করে আমি আপনাকে সম্মানিত করেছি এবং অন্যদের উপর আপনার শ্ৰেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছি। কারণ, এ কুরআনের বৈশিষ্ট্য অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এটি এমন যে, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না-সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত [সূরা ফুসসিলাতঃ ৪২] [ইবন কাসীর] অথবা আয়াতের অর্থ যেভাবে প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে তাদের নিজস্ব ভাষায় কিতাব দিয়েছি তেমনি আপনাকে আরবী ভাষায় এ কুরআন প্রদান করলাম। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ আল্লাহর শাস্তি ও পাকড়াও এর বিপরীতে আপনার কোন সাহায্যকারী থাকবে না। [মুয়াসসার]

(৩) তাদের খেয়ালখুশীর কোন শেষ নেই। তবে বিশেষ করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই কারও খেয়াল-খুশী ও কোন মনগড়া মতের অনুসারী হতে পারেন না। এখানে রাসূলের উম্মতদেরকে সাবধান করা হচ্ছে। বিশেষ করে এ উম্মতের আলেম সম্প্রদায়কেই এখানে বেশী উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তারা যেন আল্লাহর নির্দেশ, কুরআন ও সুন্নাহ বোঝার পর অন্য কোন কারণে সেটা বাস্তবায়ন করতে পিছপা না হয়। অন্য কোন মত ও পথের অনুসারী না হয়। অন্যথা তাদের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের কোন সাহায্যকারী, উদ্ধারকারী ও অভিভাবক থাকবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) আর এভাবে আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় জীবন-বিধান স্বরূপ;[1] জ্ঞান প্রাপ্তির[2] পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর,[3] তাহলে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষাকর্তা থাকবে না।[4]

[1] অর্থাৎ, যেমন তোমার পূর্ববর্তী রসূলদের প্রতি স্থানীয় ভাষায় গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছিলাম, তেমনই তোমার উপর কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করলাম। কেননা তোমার প্রথম সম্বোধিত লোকেরা আরব, যারা কেবল আরবী ভাষাই জানে। যদি এই কুরআন অন্য কোন ভাষায় অবতীর্ণ করা হত, তাহলে তারা বুঝতে সক্ষম হতো না, ফলে হিদায়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে তাদের জন্য ওজর রয়ে যেত। সুতরাং আমি আরবী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করে তাদের এই ওজর খন্ডন করে দিলাম।

[2] এর অর্থ সেই জ্ঞান যা অহীর মাধ্যমে নবী (সাঃ)-কে প্রদান করা হয়েছে, যাতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের আকীদা-বিশ্বাসের বাস্তব রূপও তাঁর কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

[3] এ থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের কতিপয় খেয়াল-খুশী ও আকাঙ্ক্ষাকে বুঝানো হয়েছে, যার সম্বন্ধে তারা চেয়েছিল যে, শেষ নবী যেন তা পূরণ করেন, যেমন; বাইতুল মাকদিসকে সর্বদা কিবলা করে রাখা এবং তাদের আকীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা না করা প্রভৃতি।

[4] এটা বাস্তবে উম্মতের উলামাদের জন্য সতর্কবাণী যে, তারা যেন পার্থিব ক্ষণস্থায়ী সুখ-স্বার্থ লাভের জন্য কুরআন ও হাদীসের মোকাবিলায় লোকেদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ না করে। যদি তারা এমনটি করে, তাহলে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ইবরাহীম
১৪:১ الٓرٰ ۟ كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ﴿۱﴾

আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে। আল-বায়ান

আলিফ-লাম-র, একটা কিতাব যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে অন্ধকার থেকে নিয়ে আসতে পার আলোর দিকে- মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিতের পথে। তাইসিরুল

আলিফ লাম রা। এই কিতাব আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানব জাতিকে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোর দিকে; তাঁর পথে, যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসা । মুজিবুর রহমান

Alif, Lam, Ra. [This is] a Book which We have revealed to you, [O Muhammad], that you might bring mankind out of darknesses into the light by permission of their Lord - to the path of the Exalted in Might, the Praiseworthy - Sahih International

১. আলিফ-লাম্-রা, এ কিতাব, আমরা এটা আপনার প্রতি নাযিল করেছি(১) যাতে আপনি মানুষদেরকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে(২) পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে(৩),

(১) অর্থাৎ এটা ঐ গ্রন্থ, যা আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি। এতে নাযিল করার কাজটি আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা এবং সম্বোধন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে করার দ্বারা এটা বুঝা যায় যে, এ গ্রন্থ আল-কুরআন অত্যন্ত মহান। একে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেছেন। এটি আসমান থেকে নাযিল হওয়া কিতাবাদির মধ্যে অতি সম্মানিত গ্রন্থ। তিনি তা নাযিল করেছেন আরব বা অনারব যমীনের অধিবাসী সকল মানুষের কাছে প্রেরিত রাসূলদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তির উপর। [ইবন কাসীর]

(২) এখানে ناس শব্দের অর্থ সাধারণ মানুষ। এতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সকল যুগের মানুষই বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] ظلمات শব্দটি ظلمة এর বহুবচন। এর অর্থ অন্ধকার। এখানে ظلمات বলে কুফর, শির্ক ও মন্দকর্মের অন্ধকারসমূহ আবার কারও কারও মতে, বিদ'আত। অপর কারও মতে, সন্দেহ। পক্ষান্তরে نور বলে ঈমানের আলো বোঝানো হয়েছে। অথবা সুন্নাত বা ইয়াকীন বা দৃঢ়বিশ্বাস বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] ظلمات শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, কুফর ও শির্কের প্রকারভেদ অনেক। অমনিভাবে মন্দকর্মের সংখ্যাও গণনার বাইরে। বিদ'আতের সংখ্যাও অনুরূপভাবে প্রচুর। আর যে সন্দেহ মানব ও জিন শয়তান মানুষের মনে তৈরী করে তা বহু রকমের। পক্ষান্তরে نور শব্দটি একবচনে আনা হয়েছে। কেননা, ঈমান ও সত্য এক। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি এ গ্রন্থ এ জন্য আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে আপনি এর সাহায্যে বিশ্বের মানুষকে কুফর, শির্ক ও মন্দকর্মের অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের রবের আদেশক্রমে ঈমান ও সত্যের আলোর দিকে আনয়ন করেন। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করেন, তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোতে আনার জন্য [সূরা আল-হাদীদঃ ৯] [ইবন কাসীর]

(৩) এ আয়াতের শুরুতে যে অন্ধকার ও আলোর উল্লেখ করা হয়েছিল, বলাবাহুল্য তা ঐ অন্ধকার ও আলো নয়, যা সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা যায়। তাই তা ফুটিয়ে তোলার জন্য এ বাক্যে বলা হয়েছে যে, ঐ আলো হচ্ছে আল্লাহর পথ। যে সুস্পষ্ট পথ আল্লাহ মানুষের চলার জন্য প্রবর্তন করেছেন। যে পথে যেতে এবং যে পথে প্রবেশ করতে তিনি মানুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] এস্থলে আল্লাহ শব্দটি পরে এবং তার আগে তার দুটি গুণবাচক নাম عزيز حميد উল্লেখ করা হয়েছে। عزيز শব্দের অর্থ শক্তিশালী ও পরাক্রান্ত এবং حميد শব্দের অর্থ ঐ সত্তা, যিনি প্রশংসার হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। [ফাতহুল কাদীর]। তিনি তার যাবতীয় কাজ, কথা, শরীআত, নির্দেশ, ও নিষেধের ক্ষেত্রে প্রশংসিত এবং তাঁর যাবতীয় নির্দেশের ক্ষেত্রে সত্যবাদী। [ইবন কাসীর] আল্লাহর এ দুটি গুণবাচক নাম আসল নামের পূর্বে উল্লেখ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ পথ পথিককে যে সত্তার দিকে নিয়ে যায়, তিনি প্রবল পরাক্রান্ত এবং প্রশংসার হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। ‘হামীদ’ শব্দটির অপর অর্থ, প্রত্যেকের মুখেই তাঁর প্রশংসা, সকল স্থানে ও সকল অবস্থায় তিনি সম্মানিত। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আলিফ লা-ম রা। এই কিতাব এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি; যাতে তুমি মানব জাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে[1] অন্ধকার হতে আলোকের দিকে;[2] পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিতের পথে বের করে আনতে পার।

[1] অর্থাৎ, নবীর কাজ শুধু হিদায়াতের রাস্তা দেখানো। যদি কেউ হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, তাহলে তা একমাত্র আল্লাহর হুকুম ও ইচ্ছার ভিত্তিতেই করে থাকে। কেননা মূল হিদায়াতদানকারী তো তিনিই। যদি তাঁর ইচ্ছা না হয়, তাহলে নবী যতই ওয়ায-নসীহত করুক না কেন, লোকেরা হিদায়াতের পথে আসতে প্রস্তুত হবে না। এর বিভিন্ন উদাহরণ পূর্ববর্তী নবীদের জীবনে বিদ্যমান রয়েছে। স্বয়ং শেষনবী (সাঃ)-এর কঠিন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁর দয়ার্দ্র চাচা আবূ তালেবকে মুসলমান করতে পারেননি।

[2] যেমন মহান আল্লাহ অন্য স্থানেও বলেছেন, هُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ عَلَى عَبْدِهِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ অর্থাৎ, তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, তোমাদেরকে সমস্ত প্রকার অন্ধকার হতে আলোর দিকে আনার জন্য। (সূরা হাদীদ ৯) তিনি আরো বলেন, ﴿اللهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ﴾ অর্থাৎ, আল্লাহই হচ্ছেন মুমিনদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যান। (সূরা বাক্বারাহ ২৫৭)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:১ الٓرٰ ۟ تِلۡكَ اٰیٰتُ الۡكِتٰبِ وَ قُرۡاٰنٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۱﴾

আলিফ-লাম-রা; এ হল কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াতসমূহ। আল-বায়ান

আলিফ-লাম-র, এগুলো কিতাবের এবং সুস্পষ্ট কুরআনে আয়াতসমূহ। তাইসিরুল

আলিফ লাম রা। এগুলি আয়াত, মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের। মুজিবুর রহমান

Alif, Lam, Ra. These are the verses of the Book and a clear Qur'an. Sahih International

১. আলিফ-লাম-রা, এগুলো হচ্ছে আয়াত মহাগ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কুরআনের।(১)

(১) কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ আয়াতের তাফসীরে বলেন, আল্লাহর শপথ এ কুরআন হেদায়াত ও সঠিক পথ এবং কল্যাণের রাস্তাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। সুতরাং হেদায়াত চাইলে এ কুরআন অনুসরণের বিকল্প নেই। [তাবারী] এখানে তিনি হালাল, হারাম, হক ও বাতিল স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। [বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) আলিফ লা-ম রা। এগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের। [1]

[1] মহাগ্রন্থ এবং সুস্পষ্ট কুরআন থেকে নবী (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে, যেমন قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ (১৫) سورة المائدة এ নূর (আলো) এবং কিতাব উভয় থেকে কুরআন কারীমকেই বুঝানো হয়েছে। কুরআনের মর্যাদা বর্ধনের উদ্দেশ্যে কুরআনকে নাকেরা (অনির্দিষ্ট বিশেষ্য) রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই কুরআন সম্পূর্ণ এবং অত্যন্ত মর্যাদা ও মাহাত্ম্যপূর্ণ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৯ اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّكۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾

নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। আল-বায়ান

নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। তাইসিরুল

আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক। মুজিবুর রহমান

Indeed, it is We who sent down the Qur'an and indeed, We will be its guardian. Sahih International

* الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।

৯. নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক।(১)

(১) অর্থাৎ এই বাণী, যার বাহক সম্পর্কে তোমরা খারাপ মন্তব্য করছ, আল্লাহ নিজেই তা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি একে কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়া থেকে হেফাযত করবেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না—সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪২] আরও বলেছেন, “নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমাদেরই। কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই।” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৭–১৯]। সুতরাং একে বিকৃত বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কেউ কোনদিন পাবে না। আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং এর হেফাযত করার কারণে শক্ররা হাজারো চেষ্টা সত্বেও এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি।

রিসালাত আমলের পর আজ চৌদ্দশ’ বছর অতীত হয়ে গেছে। দ্বীনি ব্যাপারাদীতে মুসলিমদের ক্রটি ও অমনোযোগিতা সত্বেও কুরআনুল কারীম মুখস্ত করার ধারা বিশ্বের সর্বত্র পূর্ববৎ অব্যাহত রয়েছে। প্রতি যুগেই লাখো লাখো বরং কোটি কোটি মুসলিম যুবক-বৃদ্ধ এবং বালক ও বালিকা এমন বিদ্যমান থাকা, যাদের বক্ষ-পাজরে আগাগোড়া কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে। কোন বড় থেকে বড় আলেমের সাধ্য নেই যে, এক অক্ষর ভুল পাঠ করে। তৎক্ষনাৎ বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অনেক লোক তার ভুল ধরে ফেলবে।

প্রখ্যাত আলেম সুফিয়ান ইবন ওয়াইনা এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, কুরআনুল কারীম যেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করেছে, সেখানে বলেছেঃ (بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ) [সূরা আল-মায়েদাঃ ৪৪] অর্থাৎ ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আল্লাহর গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জীলের হেফাযতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই যখন ইয়াহুদী ও নাসারাগণ হেফাযতের কর্তব্য পালন করেনি, তখন এ গ্রন্থদ্বয় বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেল। পক্ষান্তরে কুরআনুল কারীম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ) অর্থাৎ “আমিই এর সংরক্ষক” [সূরা আল-হিজরঃ ৯]। সুতরাং এটি কখনও অসংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই। কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই ওর সংরক্ষক।[1]

[1] অর্থাৎ কুরআনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, বিকৃতি সাধন ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অতএব কুরআন সেইভাবেই আজও সুরক্ষিত আছে, যেভাবে তা অবতীর্ণ হয়েছিল। ভ্রষ্ট ফির্কাগুলো নিজ নিজ আকীদার সর্মথনে কুরআনের আয়াতের আর্থিক বিকৃতি ঘটিয়েছে এবং আজও ঘটাচ্ছে। তবে শাব্দিক বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে তা এখনও সুরক্ষিত। এ ছাড়াও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দল আর্থিক বিকৃতির পর্দা ছিঁড়ে ফেলার জন্য সর্বকালেই বিদ্যমান, যারা তাদের আকীদার ও তাদের ভুল দলীল-প্রমাণাদির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং আজও তাঁরা সেই কাজে সচেষ্ট। তাছাড়া কুরআনকে এখানে যিকর (উপদেশ) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে, যাতে বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনাদর্শ ও তাঁর অমিয় বাণীকে সুরক্ষিত করে কুরআন কারীমের বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ হওয়ার দিকটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত করা হয়েছে। অতএব কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পথ সর্বকালের জন্য খোলা রয়েছে। উক্ত মর্যাদা ও সুরক্ষার বৈশিষ্ট্য পূর্বের কোন নবী বা কিতাবকে দেওয়া হয়নি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৮৭ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰكَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾

আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন। আল-বায়ান

আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত সপ্ত আয়াত আর মহা কুরআন। তাইসিরুল

আমিতো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহান কুরআন। মুজিবুর রহমান

And We have certainly given you, [O Muhammad], seven of the often repeated [verses] and the great Qur'an. Sahih International

৮৭. আর আমরা তো আপনাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন।(১)

(১) অর্থাৎ সূরা ফাতিহার সাতটি আয়াত। এর প্রমাণ হলো আবু সাঈদ আল-মু'আল্লা বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি সালাত আদায় করছিলাম এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গমন করার সময় আমাকে ডাকলেন। আমি আসলাম না। সালাত শেষ করে তার কাছে আসলে তিনি বললেনঃ আমার ডাকে সাড়া দিতে তোমাকে কে নিষেধ করল? আমি বললামঃ আমি সালাত আদায় করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ কি বলেননিঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিও? তারপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা কি তা জানিয়ে দেব না?

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদ থেকে বের হতে যাচ্ছিলেন তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বললেনঃ “আলহামদু লিল্লাহ রাব্বিবল আলামীন” এটাই “সাবউল মাসানী” বা সাতটি আয়াত যা বার বার পড়া হয়, এবং কুরআনে কারীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।” [বুখারীঃ ৪৭০৩] অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “উম্মুল কুরআন” বা সূরা আল-ফাতিহা হলো “সাবউল মাসানী” এবং মহান কুরআন। [বুখারীঃ ৪৭০৪]

তবে কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন দু’শ আয়াত বিশিষ্ট সাতটি বড় বড় সূরা। অর্থাৎ আল-বাকারাহ, আলে ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়েদাহ, আল-আনআম, আল-আরাফ ও ইউনুস অথবা আল-আনফাল ও আততাওবাহ। [বাগভী; ইবন কাসীর] কিন্তু পূর্ববতী আলেমগণের অধিকাংশই এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে সূরা ফাতিহার কথাই বলা হয়েছে। যা সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসের ভাষ্যসমূহ থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, এখানে মহান কুরআন বলেও সূরা আল-ফাতিহাকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। সে হিসেবে সূরা ফাতেহাকে মহান কুরআন বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সূরা ফাতিহা এক দিক দিয়ে সমগ্র কুরআন। কেননা ইসলামের সব মূলনীতি এতে ব্যক্ত হয়েছে। [কুরতুবী] যদিও কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কুরআনকে ভিন্নভাবে উল্লেখ করার অর্থ হলো, “আমরা আপনাকে সাবাউল মাসানী সূরা ফাতেহা এবং পূর্ণ কুরআন দান করেছি। তখন দুটির অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৭) অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত[1] এবং মহা কুরআন।

[1] سبع مثاني (পুনঃপুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত) থেকে উদ্দেশ্য কি? এ সর্ম্পকে মুফাসসিরীনদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এর উদ্দেশ্য সূরা ফাতেহা এটাই সঠিক। যেহেতু এটি সাত আয়াতবিশিষ্ট এবং তা প্রত্যেক নামাযে বার বার পাঠ করা হয়। (মাসানীর অর্থ একাধিকবার পড়া।) হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। সুতরাং একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ-লামীন। এটি সাবএ মাসানী ও কুরআন আযীম, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হিজ্র) অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘উম্মুল কুরআনই হল সাবএ মাসানী ও কুরআনে আযীম।’’ (ঐ)  সূরা ফাতেহা কুরআনের একটি অংশ, সেই জন্য সাথে সাথে কুরআন আযীমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৮১ থেকে ১০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »