আল্লাহর কার্যাবলী বিষয়ক আয়াতসমূহ ১১১ টি
২৮ আল-কাসাস
২৮:৭০ وَ هُوَ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ لَهُ الۡحَمۡدُ فِی الۡاُوۡلٰی وَ الۡاٰخِرَۃِ ۫ وَ لَهُ الۡحُكۡمُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۷۰﴾

আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই। আর তাঁর কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আল-বায়ান

আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই- প্রথমেও আর শেষেও, বিধান তাঁরই, আর তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। তাইসিরুল

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই; দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই আয়ত্বাধীন; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান

And He is Allah; there is no deity except Him. To Him is [due all] praise in the first [life] and the Hereafter. And His is the [final] decision, and to Him you will be returned. Sahih International

৭০. আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, দুনিয়া ও আখেরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই; আর তোমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭০) তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, ইহকাল ও পরকালে সকল প্রশংসা তাঁরই এবং বিধান তাঁরই; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ আল-কাসাস
২৮:৮৮ وَ لَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۘ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۟ كُلُّ شَیۡءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجۡهَهٗ ؕ لَهُ الۡحُكۡمُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۸۸﴾

আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। আল-বায়ান

আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাইসিরুল

তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকনা, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান

And do not invoke with Allah another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face. His is the judgement, and to Him you will be returned. Sahih International

* আয়াতে উল্লিখিত وجه শব্দের অর্থ চেহারা। আল্লাহর চেহারা আছে। আর তাঁর চেহারা যেমন ধ্বংসশীল নয় তেমনি তাঁর সত্ত্বাও ধ্বংসশীল নয়।

৮৮. আর আপনি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ছাড়া সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল।(১) বিধান তারই এবং তারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

(১) এখানে وجهه বলে আল্লাহ তা'আলার পুরো সত্তাকে বোঝানো হলেও অন্য দিক থেকে এটা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলার চেহারা’ রয়েছে। কারণ; যার চেহারা নেই তার সম্পর্কে এ শব্দ ব্যবহার করা যায় না। মূল উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল। কোন কোন তাফসীরকার বলেন, وجهه বলে এমন আমল বোঝানো হয়েছে, যা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য করা হয়। তখন আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, যে আমল আল্লাহর জন্য খাঁটিভাবে করা হয়, তাই অবশিষ্ট থাকবে এছাড়া সব ধ্বংসশীল। উভয় তাফসীরই বিশুদ্ধ। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৮) তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যকে ডেকো না,[1] তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তাঁর মুখমন্ডল[2] ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই [3] এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [4]

[1] অর্থাৎ, অন্য কারো ইবাদত করো না। না দু’আর মাধ্যমে, না নযর-মানতের মাধ্যমে আর না কুরবানীর মাধ্যমে। কারণ, এগুলি ইবাদত বলে গণ্য, যা কেবলমাত্র এক আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করাকে কুরআনের ভাষায় ‘আহবান করা’ বলা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হল এ কথা স্পষ্ট করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে --যা করার তার ক্ষমতা নেই তার জন্য-- ডাকা, সাহায্য প্রার্থনা করা, তার নিকট দু’আ করা, বিনয়-নম্র হওয়া --এ সব করাই হল তার ইবাদত করা। যার কারণে মানুষ মুশরিকে পরিণত হয়।

[2] وَجهَه (তাঁর মুখমন্ডল) বলতে স্বয়ং আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুই নশ্বর।{كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَى  وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ}  অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর। অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা)। (সূরা রাহমান ২৬-২৭ আয়াত)

[3] অর্থাৎ, তিনি যা চান সেই ফায়সালাই মান্য হয় এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর আদেশ বলবৎ হয়।

[4] যাতে তিনি সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের ও অসৎ কর্মশীলদের অসৎ কর্মের প্রতিদান দেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৯ আল-আনকাবূত
২৯:৬২ اَللّٰهُ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۶۲﴾

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা করেন রিয্ক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। আল-বায়ান

আল্লাহ্ই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিযক প্রশস্ত করেন আর যার জন্য ইচ্ছে সীমাবদ্ধ করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক অবগত। তাইসিরুল

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিয্ক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুজিবুর রহমান

Allah extends provision for whom He wills of His servants and restricts for him. Indeed Allah is, of all things, Knowing. Sahih International

৬২. আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে তার রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) আল্লাহ তাঁর দাসদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রুযী বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা হ্রাস করেন।[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। [2]

[1] এটা মুশরিকদের প্রশ্নের উত্তর, তারা মুসলিমদেরকে প্রশ্ন করেছিল যে, যদি তোমরা হকের উপর আছ, তাহলে তোমরা দরিদ্র ও দুর্বল কেন? আল্লাহ তাআলা তার উত্তরে বলেন যে, রুযীর প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতার ব্যাপার আল্লাহর হাতে, তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী যাকে চান কম ও যাকে চান বেশি রুযী দান করেন, তাঁর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

[2] এটাও তিনি জ্ঞাত আছেন যে, বেশি রুযী কার জন্য মঙ্গলদায়ক এবং কার জন্য মঙ্গলদায়ক নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩০ আর-রুম
৩০:৪০ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ ثُمَّ رَزَقَكُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُكُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡكُمۡ ؕ هَلۡ مِنۡ شُرَكَآئِكُمۡ مَّنۡ یَّفۡعَلُ مِنۡ ذٰلِكُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۴۰﴾

আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, পরে আবার তোমাদের জীবন দেবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এ থেকে কোন কিছু করতে পারবে? তিনি পবিত্র এবং তারা যাদের শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযক দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর) অংশীদার মান্য কর তাদের মধ্যে কেউ আছে কি এ সবের কোন কিছু করতে পারে? তারা যাদেরকে অংশীদার গণ্য করে আল্লাহ তাদের থেকে পবিত্র, বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন; তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের দেব-দেবীগুলোর এমন কেহ আছে কি, যে এ সবের কোন একটিও করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান। মুজিবুর রহমান

Allah is the one who created you, then provided for you, then will cause you to die, and then will give you life. Are there any of your "partners" who does anything of that? Exalted is He and high above what they associate with Him. Sahih International

৪০. আল্লাহ্‌(১) যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিয্‌ক দিয়েছেন, তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন অবশেষে তিনি তোমাদেরকে জীবিত করবেন। (আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্তকৃত) তোমাদের মা’বুদগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোন কিছু করতে পারে?(২) তারা যাদেরকে শরীক করে, তিনি (আল্লাহ) সে সব (শরীক) থেকে মহিমাময়-পবিত্র ও অতি ঊর্ধ্বে।

(১) এখান থেকে আবার মুশরিকদেরকে বুঝাবার জন্য বক্তব্যের ধারা তাওহীদ ও আখেরাতের বিষয়বস্তুর দিকে ফিরে এসেছে। [আইসারুতি-তাফসীর]

(২) অর্থাৎ তোমাদের তৈরী করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা? জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতার আওতাভুক্ত আছে? অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে? তাহলে তাদের কাজ কি? তোমরা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো কেন? [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রুযী দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের এমন কেউ আছে কি, যে এ সমস্তের কোন একটি করতে পারে? ওরা যাদেরকে শরীক স্থাপন করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৪ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ مَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا شَفِیۡعٍ ؕ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوۡنَ ﴿۴﴾

আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই এবং নেই কোন সুপারিশকারী। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? আল-বায়ান

আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দু’এর মাঝে যা কিছু আছে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন- অতঃপর তিনি ‘আরশে সমুন্নত হন। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই, সুপারিশকারীও নেই। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তাইসিরুল

আল্লাহ, তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই, তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবেনা? মুজিবুর রহমান

It is Allah who created the heavens and the earth and whatever is between them in six days; then He established Himself above the Throne. You have not besides Him any protector or any intercessor; so will you not be reminded? Sahih International

৪. আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু'য়ের অন্তর্বর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করবে না?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) আল্লাহ; যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।[1] তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের কোন অভিভাবক অথবা সুপারিশকারী নেই;[2] তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?[3]

[1] এ ব্যাপারে সূরা আ’রাফের ৫৪নং আয়াতের টীকা দেখুন। এখানে উক্ত বিষয়কে পুনরায় উক্ত করার উদ্দেশ্য এই হতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা ও বিস্ময়কর সৃষ্টির কথা শুনে হয়তো বা তারা কুরআন শ্রবণ করবে এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।

[2] অর্থাৎ সেখানে এমন কোন বন্ধু হবে না, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারবে ও তোমাদের নিকট থেকে আল্লাহর শাস্তিকে দূর করতে পারবে এবং সেখানে এমন কোন সুপারিশকারীও হবে না, যে তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারবে।

[3] অর্থাৎ, হে গায়রুল্লাহর পূজারী ও আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের উপর ভরসা স্থাপনকারী! তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৫ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یَعۡرُجُ اِلَیۡهِ فِیۡ یَوۡمٍ كَانَ مِقۡدَارُهٗۤ اَلۡفَ سَنَۃٍ مِّمَّا تَعُدُّوۡنَ ﴿۵﴾

তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে। যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর। আল-বায়ান

তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত কার্য পরিচালনা করেন, অতঃপর সকল বিষয়াদি তাঁরই কাছে একদিন উত্থিত হবে যার পরিমাপ তোমাদের গণনা অনুযায়ী হাজার বছর। তাইসিরুল

তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সব কিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে, যে দিনের পরিমাপ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান। মুজিবুর রহমান

He arranges [each] matter from the heaven to the earth; then it will ascend to Him in a Day, the extent of which is a thousand years of those which you count. Sahih International

৫. তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, তারপর সব কিছুই তাঁর সমীপে উত্থিত হবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনা অনুসারে হাজার বছর।(১)

(১) অর্থাৎ সেদিনের পরিমাণ তোমাদের গণনানুসারে এক হাজার বছর হবে। কাতাদাহ বলেন, দুনিয়ার দিনের হিসেবে সে সময়টি হচ্ছে, এক হাজার বছর। তন্মধ্যে পাঁচশত বছর হচ্ছে নাযিল হওয়ার জন্য, আর পাঁচ শত বছর হচ্ছে উপরে উঠার জন্য। মোট: এক হাজার বছর। [তাবারী] অন্যত্র বলা হয়েছে, “সেদিনের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর হবে।” [সূরা আল-মা'আরিজ: ৪] এর এক সহজ উত্তর তো এই যে, সেদিনটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হবে বিধায় মানুষের নিকট অতিশয় দীর্ঘ বলে মনে হবে। এরূপ দীর্ঘানুভূতি নিজ নিজ ঈমান ও আমলানুপাতে হবে। যারা বড় অপরাধী তাদের নিকট সুদীর্ঘ এবং যারা কম অপরাধী তাদের নিকট কম দীর্ঘ বলে বোধ হবে। এমনকি সেদিন কিছু লোকের নিকট এক হাজার বছর বলে মনে হবে, আবার কারো কারো নিকট পাঁচশত বছর বলে মনে হবে। আবার কারো কারো নিকট পঞ্চাশ হাজার বছর বলে মনে হবে। [তাবারী, বাগভী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন,[1] অতঃপর সমস্ত কিছুই তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে -- যা তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।[2]

[1] ‘আকাশ হতে’ যেখানে আল্লাহর আরশ ও ‘লাওহে মাহফূয’ আছে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে নির্দেশাবলী অবতীর্ণ করেন; অর্থাৎ বিশ্ব পরিচালনা করেন এবং পৃথিবীতে তাঁর হুকুম বাস্তবায়িত হয়। যেমন জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, চাওয়া-পাওয়া, ধনবত্তা-দরিদ্রতা, যুদ্ধ-সন্ধি, সম্মান-অসম্মান ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা আরশের উপর থেকে তাঁর লিখিত ভাগ্য অনুযায়ী এ সব কিছুর তদবীর ও ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।

[2] অর্থাৎ, তাঁর ঐ সকল ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশাবলী তাঁর নিকট একই দিনে ফিরে আসে যা ফিরিশতাগণ নিয়ে অবতীর্ণ হন। তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হতে যে সময় লাগে তা ফিরিশতা ছাড়া অন্যদের জন্য এক হাজার বছর হবে। অথবা এর অর্থ হল, ‘‘অতঃপর একদিন সমস্ত কিছুই (বিচারের জন্য) প্রত্যাবর্তিত হবে-- যে দিনের দৈর্ঘ্য হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।’’ উদ্দেশ্য হল কিয়ামতের দিন; যেদিন মানুষের সকল আমল আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। উক্ত ‘দিন’ কোন্ দিন তা নির্দিষ্ট করে বলতে ও ব্যাখ্যা করতে মুফাসসিরগণের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাওকানী (রঃ) এই বিষয়ে ১৫/১৬ টি মত উল্লেখ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে নীরব থাকতে পছন্দ করেছেন এবং তার প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আয়সারুত তাফাসীরের লেখক বলেন, এ কথা কুরআন মাজীদের তিন জায়গায় এসেছে এবং তিন জায়গাতেই আলাদা আলাদা দিনের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। সূরা হজ্জের ৪৭নং আয়াতে ‘দিন’ বলতে আল্লাহর নিকট যে সময় তা বুঝানো হয়েছে এবং সূরা মাআরিজের ৪নং আয়াতে দিনের দৈর্ঘ্য পঞ্চাশ হাজার বছর বলা হয়েছে। তার উদ্দেশ্য কিয়ামত দিবস। আর এখানে ‘দিন’ বলতে উদ্দেশ্য হল, দুনিয়ার শেষ দিন; যখন দুনিয়ার সকল ব্যাপার নিঃশেষ হয়ে আল্লাহর নিকট ফিরে যাবে। (অল্লাহু আ’লাম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৬ ذٰلِكَ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ۙ﴿۶﴾

তিনিই গায়েব ও হাযির সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

এমনই তিনি, অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু – মুজিবুর রহমান

That is the Knower of the unseen and the witnessed, the Exalted in Might, the Merciful, Sahih International

৬. তিনি, গায়েব ও উপস্থিত (যাবতীয় বিষয়ে) জ্ঞানী, প্রবল পরাক্রমশালী(১), পরম দয়ালু।(২)

(১) অর্থাৎ প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর প্রাধান্যের অধিকারী। [মুয়াস্‌সার]

(২) অর্থাৎ তিনি নিজের সৃষ্টির প্রতি দয়ার্দ্র ও করুণাময়। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৭ الَّذِیۡۤ اَحۡسَنَ كُلَّ شَیۡءٍ خَلَقَهٗ وَ بَدَاَ خَلۡقَ الۡاِنۡسَانِ مِنۡ طِیۡنٍ ۚ﴿۷﴾

যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। আল-বায়ান

যিনি সব কিছুকে উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন, আর মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে। তাইসিরুল

যিনি তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে এবং কাদা মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। মুজিবুর রহমান

Who perfected everything which He created and began the creation of man from clay. Sahih International

৭. যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে(১) এবং কাদা হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

(১) অর্থাৎ তিনি যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেটাই উত্তম ও সুন্দর। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, তিনি প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টি অত্যন্ত মজবুত ও নৈপুণ্য সহকারে সম্পন্ন করেছেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন[1] এবং মাটি হতে মানব-সৃষ্টির সূচনা করেছেন।[2]

[1] অর্থাৎ, যা কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা যেহেতু আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছা অনুযায়ী সেহেতু প্রতিটি বস্তুতেই এক বিশেষ সৌন্দর্য ও উৎকৃষ্টতা আছে। বলা বাহুল্য, তাঁর সৃষ্টির সকল জিনিসই সুন্দর। অনেকে أَحسَنَ শব্দটিকে أَتقَنَ أحكَمَ এর অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ তিনি যাবতীয় বস্তুকে সুনিপুণ ও মজবুত করে সৃষ্টি করেছেন। অনেকে তাকে أَلهَمَ এর অর্থে মনে করেছেন। অর্থাৎ যাবতীয় সৃষ্টিকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ইলহাম (জ্ঞানসঞ্চার) করেছেন।

[2] অর্থাৎ, সর্বপ্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যাঁর নিকট থেকে মানব জন্মের সূচনা হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে তাঁর বাম পার্শেবর অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন; তা হাদীস দ্বারা বুঝা যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৮ ثُمَّ جَعَلَ نَسۡلَهٗ مِنۡ سُلٰلَۃٍ مِّنۡ مَّآءٍ مَّهِیۡنٍ ۚ﴿۸﴾

তারপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। আল-বায়ান

অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে। তাইসিরুল

অতঃপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। মুজিবুর রহমান

Then He made his posterity out of the extract of a liquid disdained. Sahih International

৮. তারপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) অতঃপর তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে[1] তার বংশ উৎপন্ন করেছেন।

[1] অর্থাৎ বীর্য হতে। উদ্দেশ্য হল যে, মানুষের জোড়া তৈরী করার পর তার বংশ বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ এই নিয়ম নির্ধারণ করেছেন যে, পুরুষ ও নারী উভয়ে বিবাহ করবে, অতঃপর তাদের মিলনের ফলে পুরুষের বীর্যের যে ফোঁটা নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করবে তার দ্বারা তিনি সুন্দর অবয়বে মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ আস-সাজদাহ
৩২:৯ ثُمَّ سَوّٰىهُ وَ نَفَخَ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِهٖ وَ جَعَلَ لَكُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۹﴾

তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল-বায়ান

অতঃপর তিনি তাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন আর তার ভিতরে স্বীয় রূহ হতে ফুঁক দিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণেন্দ্রীয়, দর্শনেন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণ; কৃতজ্ঞতা তোমরা সামান্যই প্রকাশ কর। তাইসিরুল

পরে তিনি ওকে করেছেন সুষম এবং ওতে ফুঁকে দিয়েছেন রুহ্ তাঁর নিকট হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ; তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। মুজিবুর রহমান

Then He proportioned him and breathed into him from His [created] soul and made for you hearing and vision and hearts; little are you grateful. Sahih International

৯. পরে তিনি সেটাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রূহ থেকে। আর তোমাদেরকে দিয়েছেন কান, চোখ ও অন্তঃকরণ, তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।(১)

(১) আয়াতের সমার্থে আরও দেখুন, সূরা আল-মুমিনুন: ১৩–১৪৷

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) পরে তিনি ওকে সুঠাম করেছেন এবং তাঁর নিকট হতে ওতে জীবন সঞ্চার করেছেন[1] এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন চোখ, কান ও অন্তর।[2] তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[3]

[1] অর্থাৎ, মায়ের পেটে ভ্রূণকে বড় করে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরী করে, অতঃপর তাতে রূহ দান করেন।

[2] অর্থাৎ, এই সকল কিছু তিনি তার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাঁর সৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ লাভ করে এবং তোমরা সকল শ্রাব্য শব্দ শ্রবণ করতে পার, দৃশ্য বস্তু দর্শন করতে পার এবং বোধ্য বস্তু বোধ করতে পার।

[3] অর্থাৎ, এত অনুগ্রহ দানের পরেও মানুষ এমন অকৃতজ্ঞ যে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা অতি অল্প মাত্রায় স্বীকার করে অথবা কৃতজ্ঞ ব্যক্তি অতি নগণ্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪ সাবা
৩৪:৬ وَ یَرَی الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ مِنۡ رَّبِّكَ هُوَ الۡحَقَّ ۙ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ﴿۶﴾

আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য এবং তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথের দিকে হিদায়াত করে। আল-বায়ান

যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে সত্য বলে জানে এবং (তারা আরো জানে যে) তা মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত (আল্লাহ)’র পথে পরিচালিত করে। তাইসিরুল

যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে যে, তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য। ইহা মানুষকে পরাক্রমশালী ও প্রশংসা আল্লাহর পথ নির্দেশ করে। মুজিবুর রহমান

And those who have been given knowledge see that what is revealed to you from your Lord is the truth, and it guides to the path of the Exalted in Might, the Praiseworthy. Sahih International

৬. আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা জানে যে, আপনার রবের কাছ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা-ই সত্য; এবং এটা পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর পথ নির্দেশ করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তারা সুনিশ্চিতভাবে জানে যে, তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা সত্য;[1] এবং তা মানুষকে পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর পথ নির্দেশ করে। [2]

[1] এখানে يَرَى দেখার অর্থ হল অন্তর-চক্ষু দিয়ে দেখা; শুধু চোখের দেখা নয়। অর্থাৎ, ‘ইলমে ইয়াকীন’ দ্বারা সুনিশ্চিতরূপে জানে। ‘যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে’ বলে সাহাবায়ে-কিরামগণ অথবা আহলে কিতাবদের মু’মিন বা সকল মু’মিনদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিনগণ তা জানেন ও তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন।

[2] এর সংযোগ ‘সত্য’ শব্দের সাথে। অর্থাৎ, তারা এটাও জানে যে, এই কুরআন কারীম ঐ পথের দিশা দেয়, যা সেই আল্লাহর পথ, যিনি সৃষ্টি জগতে সকলের উপর প্রতাপশালী এবং আপন সৃষ্টির মাঝে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সে পথ হল তাওহীদের পথ, যে পথের দিকে সকল পয়গম্বরগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৭ আস-সাফফাত
৩৭:৪ اِنَّ اِلٰـهَكُمۡ لَوَاحِدٌ ﴿ؕ۴﴾

নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক; আল-বায়ান

তোমাদের প্রকৃত ইলাহ অবশ্য একজন। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বূদ এক। মুজিবুর রহমান

Indeed, your God is One, Sahih International

৪. নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) নিশ্চয়ই তোমাদের উপাস্য এক। [1]

[1] صآفَّات , زاجرات , تاليات - এসব ফিরিশতাগণের গুণ। আকাশে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সারিবদ্ধ অথবা আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান, ওয়ায-নসীহতের মাধ্যমে মানুষকে ডাঁট-ধমককারী অথবা মেঘমালাকে আল্লাহর আদেশক্রমে হাঁকিয়ে নিয়ে যায় এমন ফিরিশতা এবং আল্লাহর যিকর ও কুরআন তেলাঅতকারী; এই সকল ফিরিশতাগণের শপথ করে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করলেন যে, সকল মানুষের উপাস্য এক, একাধিক নয়; যেমন মুশরিকরা বানিয়ে রেখেছে। সাধারণতঃ তাকীদের জন্য এবং সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য কথায় শপথ করা হয়। এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর একত্ব ও উপাস্য হওয়ার বিষয়ে মুশরিকদের যে সন্দেহ ছিল তা দূরীভূত করার জন্য শপথ করেছেন। এ ছাড়া সকল বস্তুই আল্লাহর সৃষ্টি ও মালিকানাধীন, ফলে যে কোন বস্তুকে সাক্ষী বানিয়ে তার শপথ করা (বা কসম খাওয়া) তাঁর জন্য বৈধ। কিন্তু মানুষের জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও শপথ করা একেবারে অবৈধ ও হারাম। কারণ শপথে, যার শপথ করা হয় তাকে সাক্ষী রাখার উদ্দেশ্য থাকে। আর গায়বী বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সাক্ষী হতে পারে না। কারণ একমাত্র ‘আলেমুল গায়েব’ তিনিই, তিনি ব্যতীত গায়বের খবর অন্য কেউ জানে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৭ আস-সাফফাত
৩৭:৫ رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ رَبُّ الۡمَشَارِقِ ؕ﴿۵﴾

তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তার রব এবং রব উদয়স্থলসমূহের। আল-বায়ান

যিনি আসমান, যমীন আর এ দু’য়ের মাঝে যা আছে এবং সকল উদয় স্থলের মালিক। তাইসিরুল

যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছুর রাব্ব, এবং রাব্ব সকল উদয়স্থলের। মুজিবুর রহমান

Lord of the heavens and the earth and that between them and Lord of the sunrises. Sahih International

৫. যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের অন্তর্বর্তী সবকিছুর রব এবং রব সকল উদয়স্থলের।(১)

(১) সুদ্দী বলেন, এর বহু বচনের কারণ হচ্ছে, শীত কাল এবং গ্ৰীষ্ম কালে সূর্য উদিত হওয়ার স্থানের ভিন্নতা। তিনি আরও বলেন, সারা বছরে সূর্যের ৩৬০টি উদিত হওয়ার স্থান রয়েছে, অনুরূপভাবে সূর্যস্ত যাওয়ারও অনুরূপ স্থান রয়েছে। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছুর রক্ষক, রক্ষক পূর্বাচলের।[1]

[1] উদ্দ্যেশ্য হল, উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের প্রতিপালক ও রক্ষক। বহুবচন এই জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যেমন অনেকে বলেন যে, বছরের দিনসমূহের সংখ্যা পরিমাণ উদয় ও অস্তস্থল আছে। সূর্য প্রতিদিন এক উদয়স্থল থেকে উদিত হয় এবং এক অস্তস্থলে অস্তমিত হয়। সূরা রাহমানে مشرقين এবং مغربين দ্বিবচন শব্দ ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ দুই উদয়াচল এবং দুই অস্তাচল। তার অর্থ সেই দুই উদয়াচল ও অস্তাচল যেখান থেকে সূর্য গ্রীষ্ম ও শীতকালে উদিত ও অস্তমিত হয়। অর্থাৎ প্রথমটি দূরবর্তী শেষ উদয়াচল ও অস্তাচল এবং দ্বিতীয়টি নিকটবর্তী শুরুর উদয়াচল ও অস্তাচল। আর যেখানে মাশরিক ও মাগরিব একবচন বর্ণনা করা হয়েছে তার অর্থ হল দিক; যেদিক থেকে সূর্য উদিত ও যে দিকে অস্তমিত হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৯ আয-যুমার
৩৯:৫ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ۚ یُكَوِّرُ الَّیۡلَ عَلَی النَّهَارِ وَ یُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَی الَّیۡلِ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ كُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ اَلَا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفَّارُ ﴿۵﴾

তিনি যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর এবং দিনকে রাতের উপর জড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন সূর্য ও চাঁদকে। প্রত্যেকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলছে। জেনে রাখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। আল-বায়ান

তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। রাত দিনকে ঢেকে নেয়, আর দিন ঢেকে নেয় রাতকে। তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন সুরুজ আর চাঁদকে, প্রত্যেকেই চলছে নির্দিষ্ট সময় অনুসারে। জেনে রেখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল (মহাশক্তিধর হওয়া সত্ত্বেও বার বার ক্ষমা করেন)। তাইসিরুল

তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। সূর্য ও চন্দ্রকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই পরিক্রমন করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। জেনে রেখ, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। মুজিবুর রহমান

He created the heavens and earth in truth. He wraps the night over the day and wraps the day over the night and has subjected the sun and the moon, each running [its course] for a specified term. Unquestionably, He is the Exalted in Might, the Perpetual Forgiver. Sahih International

৫. তিনি যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।(১) সূর্য ও চাঁদকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই পরিক্রমণ করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। জেনে রাখ, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

(১) تكوير অর্থ এক বস্তুকে অপর বস্তুর উপর রেখে তাকে আচ্ছাদিত করে দেয়া। কুরআন পাক দিবারাত্রির পরিবর্তনকে এখানে সাধারণের জন্য تكوير শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছে। রাত্রি আগমন করলে যেন দিনের আলোর উপর পর্দা রেখে দেয়া হয় এবং দিনের আগমনে রাত্রির অন্ধকার যেন যবনিকার অন্তরালে চলে যায়। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা,[1] চন্দ্র ও সূর্যকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। জেনে রাখ, তিনি পরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।

[1] تَكْوِيْرٌ -এর অর্থ এক বস্তুকে অপর বস্তুর উপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়া, রাত্রিকে দিনের উপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, রাত্রি আনয়ন করে দিনকে ঢেকে দিয়ে তার আলো শেষ করে দেওয়া এবং দিনকে রাত্রির পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, দিন আনয়ন করে রাত্রিকে ঢেকে দিয়ে তার অন্ধকার শেষ করে দেওয়া। এর অর্থ এবং (يُغْشِيْ الَّيْلَ النَّهَارَ) (الأعراف-৫৪) এর অর্থ একই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৯ আয-যুমার
৩৯:৬ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ اَنۡزَلَ لَكُمۡ مِّنَ الۡاَنۡعَامِ ثَمٰنِیَۃَ اَزۡوَاجٍ ؕ یَخۡلُقُكُمۡ فِیۡ بُطُوۡنِ اُمَّهٰتِكُمۡ خَلۡقًا مِّنۡۢ بَعۡدِ خَلۡقٍ فِیۡ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍ ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ لَهُ الۡمُلۡكُ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ فَاَنّٰی تُصۡرَفُوۡنَ ﴿۶﴾

তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নাফ্স থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া*; তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে; এক সৃষ্টির পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে; তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? আল-বায়ান

তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার থেকে তিনি তার জুড়ি সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের জন্য বানিয়েছেন আট গৃহপালিত পশু (চার) জোড়ায় জোড়ায়। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মায়েদের গর্ভে, এক এক পর্যায়ে এক এক আকৃতি দিয়ে, তিন তিনটি অন্ধকার আবরণের মধ্যে। এই হল তোমাদের প্রতিপালক, সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই (ভুয়ো ক্ষমতার অধিকারী, দাম্ভিক ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক) তোমাদেরকে কোন্ দিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? তাইসিরুল

তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি হতে। অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের দিয়েছেন আট প্রকার গৃহপালিত পশু। তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ! তোমাদের রাব্ব। সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ? মুজিবুর রহমান

He created you from one soul. Then He made from it its mate, and He produced for you from the grazing livestock eight mates. He creates you in the wombs of your mothers, creation after creation, within three darknesses. That is Allah, your Lord; to Him belongs dominion. There is no deity except Him, so how are you averted? Sahih International

* আট জোড়া চতুষ্পদ জন্তু: মেষের দু’টি ও ছাগলের দু’টি, উটের দু’টি ও গরুর দু’টি।

৬. তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যাক্তি হতে। তারপর তিনি তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন।(১) আর তিনি তোমাদের জন্য নাযিল করেছেন আট জোড়া আন’আম।(২) তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভের ত্ৰিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। অতঃপর তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?

(১) একথার অর্থ এ নয় যে, প্রথমে আদম থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে বক্তব্যের মধ্যে সময়ের পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বর্ণনার পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাষায়ই এ ধরনের দৃষ্টান্ত বর্তমান। যেমন, আমরা বলি তুমি আজ যা করেছো তা জানি এবং গতকাল যা করেছে তাও আমার জানা আছে। এ ধরনের বর্ণনার অর্থ এ নয় যে, গতকালের ঘটনা আজকের পরে সংঘটিত হয়েছে। [দেখুন: তাবারী]

(২) আল-আন’আম বলতে গবাদি পশু বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে আট জোড়া, কারণ; গবাদি পশু অর্থ উট, গরু, ভেড়া, বকরী। এ চারটি নর ও চারটি মাদি মিলে মোট আটটি নর ও মাদি হয়। [তাবারী, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন।[2] তিনি তোমাদের জন্য আট প্রকার পশু অবতীর্ণ করেছেন।[3] তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের তিন প্রকার অন্ধকারে[4] পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি[5] করেন। তিনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ? [6]

[1] অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকে, তাঁকে আল্লাহ তাআলা নিজ হাত দ্বারা তৈরী করেছিলেন এবং তাঁর মধ্যে নিজ রূহ ফুঁকেছিলেন।

[2] অর্থাৎ, হাওয়াকে আদম (আঃ)-এর বামপার্শ্বের অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এটাও তাঁর কুদরতের বড় কৃতিত্ব। কারণ হাওয়া ছাড়া কোন নারীর সৃষ্টি কোন পুরুষের অস্থি থেকে হয়নি। ফলে হাওয়ার সৃষ্টি সাধারণ নিয়ম-বহির্ভূত এবং আল্লাহর মহাশক্তির একটি নিদর্শন।

[3] এই আয়াতে সেই চার প্রকার চতুষ্পদ জন্তুর (ছাগল, ভেঁড়া, উট, গরু) বর্ণনা হয়েছে, যা নর ও মাদা মিলে আট প্রকার হচ্ছে, যার বর্ণনা সূরা আনআমের ১৪৩-১৪৪নং আয়াতে পার হয়ে গেছে। أَنْزَلَ خَلَقَ (সৃষ্টির) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অথবা এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা প্রথমে এই সকল চতুষ্পদ জন্তুকে জান্নাতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং পরে তাদেরকে অবতীর্ণ করেন। সুতরাং এক্ষেত্রে إنزال এর মূল অর্থ ধরতে হবে। অথবা أَنْزَلَ শব্দ এখানে রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ এসব চতুষ্পদ জন্তু ঘাস-পাতা ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর ঘাস-পাতার জন্য আকাশ থেকে অবতীর্ণ পানি নিতান্ত জরুরী। তাই মূলতঃ চতুষ্পদ জন্তু আকাশ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে বলা যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[4] প্রথম অন্ধকার মায়ের পেট, দ্বিতীয় গর্ভাশয়, তৃতীয় ঝিল্লী; সেই পাতলা আবরণ যাতে বাচ্চা জড়ানো থাকে।

[5] অর্থাৎ, ভ্রূণ মাতৃগর্ভে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে, প্রথমে বীর্য, অতঃপর রক্তপিন্ড, অতঃপর গোশতপিন্ড, অতঃপর অস্থির গঠন, তার উপর মাংসের আবরণ। এই সকল স্তর অতিক্রম করার পর পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরী হয়।

[6] অথবা কেন তোমরা হক থেকে বাতিলের দিকে এবং হিদায়াত থেকে ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে চলেছ?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:২৮ وَ هُوَ الَّذِیۡ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا قَنَطُوۡا وَ یَنۡشُرُ رَحۡمَتَهٗ ؕ وَ هُوَ الۡوَلِیُّ الۡحَمِیۡدُ ﴿۲۸﴾

আর তারা নিরাশ হয়ে পড়লে তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন। আর তিনিই তো অভিভাবক, প্রশংসিত। আল-বায়ান

মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন, তিনি-ই সকল গুণে প্রশংসিত প্রকৃত অভিভাবক। তাইসিরুল

তারা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই অভিভাবক, প্রশংসা। মুজিবুর রহমান

And it is He who sends down the rain after they had despaired and spreads His mercy. And He is the Protector, the Praiseworthy. Sahih International

২৮. আর তাদের নিরাশ হওয়ার পরে তিনিই বৃষ্টি প্রেরণ করেন এবং তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন; এবং তিনিই অভিভাবক, অত্যন্ত প্রশংসিত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) ওদের হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন[1] এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই তো অভিভাবক, প্রশংসার্হ। [2]

[1] যা বিভিন্ন প্রকারের রুযী উৎপাদনের ব্যাপারে সর্বাধিক উপকারী এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টি যখন হতাশার পর হয়, তখনই এই নিয়ামতের প্রতি সঠিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর মহান আল্লাহর এ রকম করার কৌশলও হল এটাই, যাতে বান্দা আল্লাহর নিয়ামতের কদর করে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।

[2] তিনি সমস্ত কৃতিত্বের মালিক। তিনিই তাঁর নেক বান্দাদের আহারের ব্যবস্থা করেন। সর্বপ্রকার উপকারী জিনিস দানে ধন্য করেন। যাবতীয় অনিষ্টকর এবং ক্ষতিকর জিনিস হতে তাদেরকে হিফাযত করেন। তিনি তাঁর অসংখ্য নিয়ামত এবং সীমাহীন অনুগ্রহের দরুন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৭ আল-হাদীদ
৫৭:৩ هُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاهِرُ وَ الۡبَاطِنُ ۚ وَ هُوَ بِكُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۳﴾

তিনিই প্রথম ও শেষ এবং প্রকাশ্য ও গোপন; আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। আল-বায়ান

তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশিত আবার গুপ্ত, তিনি সকল বিষয় পূর্ণরূপে জ্ঞাত। তাইসিরুল

তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই ব্যক্ত, তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুজিবুর রহমান

He is the First and the Last, the Ascendant and the Intimate, and He is, of all things, Knowing. Sahih International

৩. তিনিই প্রথম ও শেষ; প্রকাশ্য (উপরে) ও গোপন (নিকটে) আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।(১)

(১) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ কোন সময় তোমার অন্তরে আল্লাহ তাআলা ও ইসলাম সম্পর্কে শয়তানী কুমন্ত্রণা দেখা দিলে (هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ) আয়াতখানি আস্তে পাঠ করে নাও। [আবু দাউদ: ৫১১০] এই আয়াতের তাফসীর এবং “আউয়াল”, “আখের”, “যাহের” ও “বাতেন” এ শব্দ চারটির অর্থ সম্পর্কে তফসীরবিদগণের বহু উক্তি বৰ্ণিত আছে। তন্মধ্যে “আউয়াল” শব্দের অর্থ তো প্ৰায় নির্দিষ্ট; অর্থাৎ অস্তিত্বের দিক দিয়ে সকল সৃষ্টজগতের অগ্রে ও আদি। কারণ, তিনি ব্যতীত সবকিছু তাঁরই সৃজিত। তাই তিনি সবার আদি। “আখের” এর অর্থ কারও কারও মতে এই যে, সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়ার পরও তিনি বিদ্যমান থাকবেন। [সা’দী] যেমন (كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ) [সূরা আল-কাসাস: ৮৮] আয়াতে এর পরিষ্কার উল্লেখ আছে।

ইমাম বুখারী বলেন, ‘যাহের’ অর্থ জ্ঞানে তিনি সবকিছুর উপর, অনুরূপ তিনি ‘বাতেন’ অৰ্থাৎ জ্ঞানে সবকিছুর নিকটে। বিভিন্ন হাদীসে এ আয়াতের তাফসীর এসেছে, এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেন, “হে আল্লাহ! সাত আসমানের রব, মহান আরশের রব, আমাদের রব এবং সবকিছুর রব, তাওরাত, ইঞ্জীল ও ফুরকান নাযিলকারী, দানা ও আঁটি চিরে বৃক্ষের উদ্ভাবকারী, আপনি ব্যতীত কোন হক্ক মা’বুদ নেই, যাদের কপাল আপনার নিয়ন্ত্রণে এমন প্ৰত্যেক বস্তুর অনিষ্ট হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, আপনি অনাদি, আপনার আগে কিছু নেই, আপনি অনন্ত আপনার পরে কিছুই থাকবে না। আপনি সবকিছুর উপরে, আপনার উপরে কিছুই নেই, আপনি নিকটবর্তী, আপনার চেয়ে নিকটবর্তী কেউ নেই, আমার পক্ষ থেকে আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিন। [মুসলিম: ২৭১৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৪০৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) তিনিই আদি, অন্ত, ব্যক্ত ও গুপ্ত[1] এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

[1] তিনিই আদি বা প্রথম; তাঁর পূর্বে কিছু ছিল না। তিনিই অন্ত বা সর্বশেষ; তাঁরপর কিছু থাকবে না। তিনি ব্যক্ত বা প্রকাশমান। অর্থাৎ, তিনি সবার উপর জয়ী, তাঁর উপর কেউ জয়ী নয়। তিনি গুপ্ত বা অপ্রকাশমান। অর্থাৎ, যাবতীয় গোপন খবর একমাত্র তিনিই জানেন। অথবা তিনি মানুষের দৃষ্টি ও জ্ঞানের অন্তরালে। (ফাতহুল ক্বাদীর) নবী করীম (সাঃ) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে এই দু’আটি পাঠ করতে তাকীদ করেছিলেনঃ

اَللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنِّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنِا مِنْ الْفَقْرِ

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! হে আকাশ মন্ডলী, পৃথিবী ও মহা আরশের অধিপতি। হে আমাদের ও সকল বস্তুর  প্রতিপালক!  হে  শস্যবীজ  ও  আঁটির  অঙ্কুরোদয়কারী!  হে তাওরাত,  ইনজীল  ও  ফুরকানের অবতারণকারী! আমি তোমার নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি- যার ললাটের কেশগুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ। হে আল্লাহ! তুমিই আদি তোমার পূর্বে কিছু নেই। তুমিই অন্ত তোমার পরে কিছু নেই। তুমিই ব্যক্ত (অপরাজেয়), তোমার ঊর্ধ্বে কিছু নেই এবং তুমিই (সৃষ্টির গোচরে) অব্যক্ত, তোমার নিকট অব্যক্ত কিছু নেই। আমাদের তরফ থেকে আমাদের ঋণ পরিশোধ করে দাও এবং আমাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছল (অভাবশূন্য) করে দাও। (মুসলিমঃ যিকর ও দু’আ অধ্যায়) ঋণ পরিশোধের জন্য পঠনীয় এই দু’আর মধ্যে ‘আওয়াল’, ‘আখির’ এবং ‘যাহির’ ও ‘বাতিন’এর ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৯ আল-হাশর
৫৯:২২ هُوَ اللّٰهُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ ۚ هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ ﴿۲۲﴾

তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করুণাময়, দয়ালু। আল-বায়ান

তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, অদৃশ্য ও দৃশের জ্ঞানের অধিকারী, পরম দয়াময়, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

He is Allah, other than whom there is no deity, Knower of the unseen and the witnessed. He is the Entirely Merciful, the Especially Merciful. Sahih International

২২. তিনিই আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি গায়েব ও উপস্থিত বিষয়াদির জ্ঞানী(১); তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু।(২)

(১) অর্থাৎ সৃষ্টির কাছে যা গোপন ও অজানা তিনি তাও জানেন আর যা তাদের কাছে প্রকাশ্য ও জানা তাও তিনি জানেন। এই বিশ্ব-জাহানের কোন বস্তুই তার জ্ঞানের বাইরে নয়। [ইবন কাসীর বাগভী]

(২) অর্থাৎ তিনি রহমান ও রহীম বা দাতা ও পরম দয়ালু। একমাত্র তিনিই এমন এক সত্তা যার রহমত অসীম ও অফুরন্ত। সমগ্র বিশ্ব চরাচরব্যাপী পরিব্যাপ্ত এবং বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি জিনিসই তাঁর বদান্যতা ও অনুগ্রহ লাভ করে থাকে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি অদৃশ্য[1] এবং দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনিই অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।

[1] গায়েব (অদৃশ্য) সৃষ্টিকুলের জন্য। নচেৎ আল্লাহর জন্য কোন জিনিস গায়েব বা অদৃশ্য নয়। অর্থাৎ, (তাঁর কাছে সবই দৃশ্য।) তিনি পৃথিবীর সমস্ত জিনিস সম্পর্কে অবগত; তাতে তা আমাদের দৃশ্য হোক অথবা অদৃশ্য। এমনকি তিনি অন্ধকারে চলমান কালো পিঁপড়েরও খবর রাখেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৯ আল-হাশর
৫৯:২৩ هُوَ اللّٰهُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلۡمَلِكُ الۡقُدُّوۡسُ السَّلٰمُ الۡمُؤۡمِنُ الۡمُهَیۡمِنُ الۡعَزِیۡزُ الۡجَبَّارُ الۡمُتَكَبِّرُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۲۳﴾

তিনিই আল্লাহ; যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে তা হতে পবিত্র মহান। আল-বায়ান

তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, অতি পবিত্র, পূর্ণ শান্তিময়, নিরাপত্তা দানকারী, প্রতাপশালী, পর্যবেক্ষক, মহা পরাক্রমশালী, অপ্রতিরোধ্য, প্রকৃত গর্বের অধিকারী। তারা যাকে (তাঁর) শরীক করে তাত্থেকে তিনি পবিত্র, মহান। তাইসিরুল

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; যারা তাঁর শরীক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান। মুজিবুর রহমান

He is Allah, other than whom there is no deity, the Sovereign, the Pure, the Perfection, the Bestower of Faith, the Overseer, the Exalted in Might, the Compeller, the Superior. Exalted is Allah above whatever they associate with Him. Sahih International

২৩. তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, মহাপবিত্র(১), শান্তি-ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত। তারা যা শরীক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।

(১) মূল ইবারতে الْقُدُّوسُ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা আধিক্য বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মূল ধাতু قدس। এর অর্থ সবরকম মন্দ বৈশিষ্ট মুক্ত ও পবিত্র হওয়া। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তিনিই অধিপতি, পবিত্র, নিরবদ্য, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, গর্বের অধিকারী। যারা তার শরীক স্থির করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র মহান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৯ আল-হাশর
৫৯:২৪ هُوَ اللّٰهُ الۡخَالِقُ الۡبَارِئُ الۡمُصَوِّرُ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۲۴﴾

তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

তিনিই আল্লাহ সৃষ্টিকারী, উদ্ভাবনকারী, আকার আকৃতি প্রদানকারী। সমস্ত উত্তম নামের অধিকারী। আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তাঁর গৌরব ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত মহা প্রজ্ঞাবান। তাইসিরুল

তিনিই আল্লাহ, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

He is Allah, the Creator, the Inventor, the Fashioner; to Him belong the best names. Whatever is in the heavens and earth is exalting Him. And He is the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

২৪. তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবন কর্তা, রূপদাতা, তাঁরই সকল উত্তম নাম।(১) আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, সবকিছুই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরীক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার উত্তম উত্তম নাম আছে। হাদীসে বলা হয়েছে, “আল্লাহর এমন নিরানব্বইটি নাম রয়েছে যে কেউ এগুলোর (সঠিকভাবে) সংরক্ষণ করবে (হক আদায় করবে) সে জান্নাতে যাবে”। [বুখারী: ২৭৩৬, মুসলিম: ২৬৭৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা,[1] রূপদাতা। সকল উত্তম নাম তাঁরই।[2] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।[3] আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [4]

[1] বলা হয় যে, خلق ‘খালক্ব’ এর অর্থ, স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী আন্দাজ ও অনুমান করা। আর برأ ‘বারাআ’ অর্থ, সেটাকে সৃষ্টি করা, গড়া এবং অস্তিত্বে নিয়ে আসা।

[2] ‘আসমায়ে হুসনা’ (সুন্দর নামাবলী) এর আলোচনা সূরা আ’রাফের ১৮০নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে।

[3] অবস্থার ভাষায় এবং কথ্য ভাষাতেও। যেমন, পূর্বে বর্ণনা হয়েছে।

[4] যে জিনিসেরই তিনি ফায়সালা করেন, তা হিকমত, কৌশল ও প্রজ্ঞা হতে শূন্য থাকে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৮১ থেকে ১০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »