জান্নাত বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৭৪ টি
১৩ আর-রাদ
১৩:৩৫ مَثَلُ الۡجَنَّۃِ الَّتِیۡ وُعِدَ الۡمُتَّقُوۡنَ ؕ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ؕ اُكُلُهَا دَآئِمٌ وَّ ظِلُّهَا ؕ تِلۡكَ عُقۡبَی الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا ٭ۖ وَّ عُقۡبَی الۡكٰفِرِیۡنَ النَّارُ ﴿۳۵﴾

মুত্তাকীদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সেটির দৃষ্টান্ত এরূপ, তার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তার খাদ্যসামগ্রী ও তার ছায়া সার্বক্ষণিক। যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, এটি তাদের শুভ পরিণাম আর কাফিরদের পরিণাম আগুন। আল-বায়ান

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়া‘দা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত এই যে, তার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা ফলফলাদি চিরস্থায়ী আর তার ছায়াও। যারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে তাদের পরিণাম হবে এই। আর কাফিরদের পরিণতি হবে জাহান্নামের আগুন। তাইসিরুল

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার উপমা এইরূপঃ ওর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ওর ফলসমূহ এবং ওর ছায়া চিরস্থায়ী; যারা মুত্তাকী এটা তাদের কর্মফল, এবং কাফিরদের কর্মফল আগুন। মুজিবুর রহমান

The example of Paradise, which the righteous have been promised, is [that] beneath it rivers flow. Its fruit is lasting, and its shade. That is the consequence for the righteous, and the consequence for the disbelievers is the Fire. Sahih International

৩৫. মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার উপমা এরূপঃ তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত(১), তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী।(২) যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এটা তাদের প্রতিফল আর কাফিরদের প্রতিফল আগুন(৩)।

(১) মুত্তাকীদের জন্য কি পুরষ্কার রেখেছেন এখানে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এ নহর সমূহের বিস্তারিত বর্ণনায় এসেছে যে, মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ তাতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। মুত্তাকীরা কি তাদের ন্যায় যারা জাহান্নামের স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫] অন্যত্র বলা হয়েছে যে, “এমন একটি প্রস্রবণ যা হতে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথা ইচ্ছে প্রবাহিত করবে। [সূরা আল ইনসানঃ ৬]

(২) জান্নাতের নে'আমতসমূহ সর্বদা থাকবে, তাতে কোন অভাব বা কমতি পরিলক্ষিত হবে না। একথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, “যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না” [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৩৩] এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সালাত আদায়ের সময় এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলেন তারপর আবার ফিরে আসলেন। পরে সাহাবায়ে কিরাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি জান্নাত দেখেছি, তার থেকে আঙ্গুরের একটি থোকা নিতে চাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে যতদিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা তা খেতে পারতে।” [বুখারীঃ ১০৫২, মুসলিমঃ ৯০৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তাতে কোন কমতি হতো না”। [মুসলিমঃ ৯০৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতবাসীগণ খাবে, পান করবে অথচ তাদের কোন কাশি, থুথু আসবে না, পায়খানা ও পেশাব করবে না। তাদের খাবারের ঢেকুর আসবে যার সুগন্ধ হবে মিসকের সুগন্ধির মতো, দুনিয়াতে যেভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয় তেমনি তাদেরকে সেখানে তাসবীহ ও পবিত্রতা ঘোষণার জন্য ইলহাম করা হবে।” [মুসলিমঃ ২৮৩৫]

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবুল কাশেম! আপনি মনে করেন যে, জান্নাতবাসীগণ খানাপিনা করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “অবশ্যই হ্যাঁ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! সেখানে জান্নাতবাসীদের প্রত্যেককে খানাপিনা ও কামবাসনার ক্ষেত্রে একশত জনের সমান ক্ষমতা দেয়া হবে।” লোকটি বললঃ যার খানাপিনা আছে তার তো আবার শৌচক্রিয়ারও প্রয়োজন পড়বে। অথচ জান্নাতে কোন ময়লা-আবর্জনা বা কষ্টের কিছু নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তাদের সে প্রয়োজনটুকু শুধুমাত্র একটু ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। যে ঘামের সুগন্ধ হবে মিসকের গন্ধের মত। আর এতেই তাদের পেট কৃশকায় হয়ে যাবে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৩৬৭]

আর জান্নাতের ছায়ার ব্যাপারে আয়াতে বলা হয়েছে যে, তার ছায়াও চিরস্থায়ী। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। [সূরা ইয়াসীনঃ ৫৬] আল্লাহ আরো বলেছেনঃ “মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।” [সূরা আল-মুরসালাতঃ ৪১] আরো বলেনঃ “সন্নিহিত গাছের ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। [সূরা আল-ইনসানঃ ১৪] আরো বলেছেনঃ “যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকবে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করাব। [সূরা আন-নিসাঃ ৫৭] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে এমন গাছও আছে, যার ছায়ায় অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্বারোহী উন্নত ঘোড়া নিয়ে শত বছর সফর করলেও শেষ করতে পারবে না।” [বুখারীঃ ৩২৫১, ৩২৫২, ৬৫৫৩, মুসলিমঃ ২৮২৬, ২৮২৮]

(৩) পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিফলের তুলনামূলক উল্লেখ থাকে। যাতে করে অনুসন্ধিৎসু মন কোনটা ভাল এবং কোনটা মন্দ তা সহজেই বুঝতে পারে। [যেমন, সূরা আল-হাশরঃ ২০, সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ এইরূপঃ ওর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ওর ফলমূলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী; যারা সাবধানী এটা তাদের পরিণাম।[1] আর অবিশ্বাসীদের পরিণাম হল জাহান্নাম।

[1] কাফেরদের অশুভ পরিণামের সাথে ঈমানদারদের শুভ পরিণামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে জান্নাত লাভের প্রতি আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। এই স্থানে ইমাম ইবনে কাসীর জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিশেষ অবস্থা সংক্রান্ত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছেন, যেগুলো ওখানে দেখা যেতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ইবরাহীম
১৪:২৩ وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ؕ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ﴿۲۳﴾

আর যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে। তাইসিরুল

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদেরকে দাখিল করা হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী হবে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। মুজিবুর রহমান

And those who believed and did righteous deeds will be admitted to gardens beneath which rivers flow, abiding eternally therein by permission of their Lord; and their greeting therein will be, "Peace!" Sahih International

২৩. আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে স্থায়ী হবে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।(১)

(১) এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতবাসীদের পরস্পর সাদর সম্ভাষন হবে সালাম। [আদওয়াউল বায়ান] আবার কারও কারও মতে, এ সালাম আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে। [বাগভী] অন্যত্র আছে যে, ফেরেশতাগণ জান্নাতবাসীদেরকে এ শব্দে সাদর সম্ভাষণ জানাবে। যেমনঃ “যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে ও এর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি ‘সালাম', তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।” [সূরা আয-যুমারঃ ৭৩] “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও, এবং ফিরিশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে, এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত ভাল এ পরিণাম! [সূরা আর-রাদঃ ২৩–২৪] “তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল, তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। [সূরা আল-ফুরকানঃ ৭৫] “সেখানে তাদের ধ্বনি হবেঃ হে আল্লাহ্! আপনি মহান, পবিত্র এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে, সালাম’ এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ সকল প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহর প্রাপ্য।” [সূরা ইউনুসঃ ১০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে;[1] সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। [2]

[1] এটা দুর্ভাগ্যবান ও কাফেরদের মুকাবেলায় সৌভাগ্যবান ও ঈমানদারদের বর্ণনা। এদের উল্লেখ তাদের সাথে এই জন্য করা হয়েছে যে, যাতে মানুষের মধ্যে ঈমানদারদের মত চরিত্র গ্রহণ করার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়।

[2] অর্থাৎ, তাদের পরস্পরের উপহার হবে একে অপরকে সালাম করা। এ ছাড়া ফিরিশতাবর্গও প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদেরকে সালাম পেশ করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৪৫ اِنَّ الۡمُتَّقِیۡنَ فِیۡ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوۡنٍ ﴿ؕ۴۵﴾

নিশ্চয় মুত্তাকীগণ থাকবে জান্নাত ও ঝর্ণাধারাসমূহে। আল-বায়ান

অবশ্যই মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে আর নির্ঝরিণীগুলোর মধ্যে। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবন বহুল জান্নাতে। মুজিবুর রহমান

Indeed, the righteous will be within gardens and springs. Sahih International

৪৫. নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) নিশ্চয় সাবধানীরা বাস করবে উদ্যান ও প্রস্রবণসমূহে। [1]

[1] জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসীদের পর জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে, যাতে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে মানুষ উৎসাহিত হয়। মুত্তাকীন (সাবধানী) বলতে শিরক হতে পবিত্র তওহীদবাদীদের বুঝানো হয়েছে। আবার কারো নিকট এমন মু’মিনদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা সকল পাপ হতে পবিত্র ছিল। جنة বলতে উদ্যান বা বাগান ও عيون বলতে ঝর্ণাকে বুঝানো হয়েছে। এই বাগান ও ঝর্ণায় সকল জান্নাতীর শরীকানাভুক্ত হবে। অথবা প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক একাধিক বাগান ও ঝর্ণা হবে, অথবা একটি করে বাগান ও একটি করে ঝর্ণা হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৪৬ اُدۡخُلُوۡهَا بِسَلٰمٍ اٰمِنِیۡنَ ﴿۴۶﴾

‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’। আল-বায়ান

তাদেরকে বলা হবে, ‘পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তোমরা এতে প্রবেশ কর।’ তাইসিরুল

(তাদেরকে বলা হবে) তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে এখানে প্রবেশ কর। মুজিবুর রহমান

[Having been told], "Enter it in peace, safe [and secure]." Sahih International

৪৬. তাদেরকে বলা হবে, তোমরা শান্তিতে নিরাপত্তার সাথে এতে প্রবেশ কর।(১)

(১) এখানে জান্নাতীদের সওয়াবকে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনের অন্যত্র আরো বিস্তারিতভাবে এসেছে, কোথায়ও বলা হয়েছে, “নিশ্চয় সেদিন মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে, উপভোগ করবে তা যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন; কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত, এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।” [সূরা আয-যারিয়াতঃ ১৫–১৯] এ আয়াতগুলোতে তাদের জান্নাতে যাওয়ার কিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র আরো বলেছেনঃ “মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে, তারা পরবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে; আমি তাদেরকে সংগিনী দান করব আয়তলোচনা হুর, সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন- আপনার রব নিজ অনুগ্রহে। এটাই তো মহাসাফল্য। [সূরা আদ-দুখানঃ ৫১–৫৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) (তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর।’ [1]

[1] শান্তি সকল বিপদাপদ হতে এবং নিরাপত্তা সকল প্রকার ভয় হতে। অথবা এর অর্থ এক মুসলিম অপর মুসলিমকে বা ফিরিশতাগণ জান্নাতীদেরকে শান্তির দু’আ দেবে। অথবা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাদের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তির ঘোষণা দেওয়া হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৪৭ وَ نَزَعۡنَا مَا فِیۡ صُدُوۡرِهِمۡ مِّنۡ غِلٍّ اِخۡوَانًا عَلٰی سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِیۡنَ ﴿۴۷﴾

আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে। আল-বায়ান

তাদের অন্তর থেকে আমি বিদ্বেষ দূরীভূত করব, তারা ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসনে মুখোমুখী সমাসীন হবে। তাইসিরুল

আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে। মুজিবুর রহমান

And We will remove whatever is in their breasts of resentment, [so they will be] brothers, on thrones facing each other. Sahih International

৪৭. আর আমরা তাদের অন্তর হতে বিদ্বেষ দূর করব(১) তারা ভাইয়ের মত পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে(২),

(১) অর্থাৎ সৎ লোকদের মধ্যে পারস্পারিক ভুল বুঝাবুঝির কারণে দুনিয়ার জীবনে যদি কিছু মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করার সময় তা দূর হয়ে যাবে এবং পরস্পরের পক্ষ থেকে তাদের মন একেবারে পরিস্কার করে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মু'মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার পর তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের কাছে আটকানো হবে। সেখানে দুনিয়াতে তাদের একজন অপরজনের উপর যে সমস্ত অত্যাচার করেছে সেগুলোর কেসাস নেয়া হবে। তারপর যখন তারা সম্পূর্ণভাবে সাফ ও স্বচ্ছ হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে ঢুকার অনুমতি দেয়া হবে। যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, তাদের প্রত্যেকে দুনিয়ায় তাদের অবস্থানস্থলের চেয়েও বেশী ভালোভাবে জান্নাতে তাদের অবস্থানস্থলের পথ পেয়ে যাবে।” [বুখারীঃ ৬৫৩৫]

(২) বলা হচ্ছে যে, জান্নাতবাসীগণ আসনে অবস্থান করবে। একে অপরের মুখোমুখি হয়ে আনন্দিত অবস্থায় বসবে। কুরআনের অন্যত্র এ আসনগুলোর বিভিন্ন গুণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “বহু সংখ্যক হবে পূর্ববতীদের মধ্য থেকে; এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ণ-খচিত আসনে ওরা হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ১৩–১৬] আরো বলা হয়েছে, “ওরা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।” [সূরা আর-রাহমানঃ ৭৬] আরো বলা হয়েছে, “সেখানে থাকবে বহমান প্রস্রবণ, উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা, প্রস্তুত থাকবে পানপত্র, সারি সারি উপাধান, এবং বিছানা গালিচা।” [সূরা আল গাশিয়াহঃ ১১–১৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেব;[1] তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।

[1] পৃথিবীতে তাদের মধ্যে যে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা বা শত্রুতা ছিল, তা তাদের হৃদয় থেকে বের করে নেওয়া হবে। যার ফলে তাদের অন্তর হবে এক অপরের জন্য আয়নার মত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৪৮ لَا یَمَسُّهُمۡ فِیۡهَا نَصَبٌ وَّ مَا هُمۡ مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِیۡنَ ﴿۴۸﴾

সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না। আল-বায়ান

কোন ক্লান্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে না, আর সেখান থেকে তারা কখনও বহিষ্কৃতও হবে না। তাইসিরুল

সেখানে তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবেনা এবং তারা সেখান হতে বহিস্কৃতও হবেনা। মুজিবুর রহমান

No fatigue will touch them therein, nor from it will they [ever] be removed. Sahih International

৪৮. সেখানে তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিস্কৃতও হবে না।(১)

(১) এ আয়াত থেকে জান্নাতের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য জানা গেলঃ

প্রথমতঃ সেখানে কেউ কোন ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করবে না। অন্য আয়াতেও তা বলা হয়েছে, “যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দিয়েছেন যেখানে ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং ক্লান্তিও স্পর্শ করে না।” [সূরা সাবাঃ ৩৫] দুনিয়ার অবস্থা এর বিপরীত। এখানে কষ্ট ও পরিশ্রমের কাজ করলে তো ক্লান্তি হয়ই, বিশেষ আরাম এমনকি চিত্তবিনোদনেও মানুষ কোন না কোন সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দুর্বলতা অনুভব করে, তা যতই সুখকর কাজ ও বৃত্তি হোক না কেন।

দ্বিতীয়তঃ জানা গেল যে, জান্নাতের আরাম, সুখ ও নেয়ামত কেউ পেলে তা চিরস্থায়ী হবে। এগুলো কোন সময় হ্রাস পাবে না এবং এগুলো থেকে কাউকে বহিস্কৃতও করা হবে না। অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ (إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ) অর্থাৎ, “এ হচ্ছে আমাদের রিযক, যা কোন সময় শেষ হবে না।” [সূরা সোয়াদঃ ৫৪] আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ (وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ) অর্থাৎ, তাদেরকে কোন সময় এসব নেয়ামত ও সুখ থেকে বহিস্কার করা হবে না। দুনিয়ার ব্যাপারাদি এর বিপরীত। এখানে যদি কেউ কাউকে কোন বিরাট নেয়ামত বা সুখ দিয়েও দেয়, তবুও সদাসর্বদা এ আশঙ্কা লেগেই থাকে যে, দাতা কোন সময় আবার নারাজ হয়ে তাকে বের করে দেয়। নিম্নলিখিত হাদীস থেকেও এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেনঃ “জান্নাতবাসীদেরকে বলে দেয়া হবে, এখন তোমরা সবসময় সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না। এখন তোমরা চিরকাল জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না। এখন তোমরা চির যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না। এখন হবে চির অবস্থানকারী, কখনো স্থান ত্যাগ করতে হবে না।” [মুসলিমঃ ২৮৩৭] এর আরো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এমন সব আয়াত ও হাদীস থেকে যেগুলোতে বলা হয়েছে জান্নাতে নিজের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য মানুষকে কোন শ্রম করতে হবে না। বিনা প্রচেষ্টায় ও পরিশ্রম ছাড়াই সে সবকিছু পেয়ে যাবে।

তৃতীয়তঃ আরেকটি সম্ভাবনা ছিল এই যে, জান্নাতের নেয়ামত শেষ হবে না এবং জান্নাতীকে সেখান থেকে বেরও করা হবে না, কিন্তু সেখানে থাকতে থাকতে সে নিজেই যদি অতিষ্ট হয়ে যায় এবং বাইরে চলে যেতে চায়? কুরআনুল কারীম এ সম্ভাবনাকেও একটি বাক্যে নাকচ করে দিয়েছেঃ (لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا) [সূরা আল-কাহফঃ ১০৮] অর্থাৎ, তারাও সেখান থেকে ফিরে আসার বাসনা কোন সময়ই পোষণ করবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৮) সেথায় তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেথা হতে বহিষ্কৃতও হবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৩০ وَ قِیۡلَ لِلَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا مَاذَاۤ اَنۡزَلَ رَبُّكُمۡ ؕ قَالُوۡا خَیۡرًا ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ لَدَارُ الۡاٰخِرَۃِ خَیۡرٌ ؕ وَ لَنِعۡمَ دَارُ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿ۙ۳۰﴾

আর যারা তাকওয়ার অবলম্বন করেছে, তাদের বলা হল, ‘তোমাদের রব কী নাযিল করেছেন’? তারা বলল, ‘কল্যাণ’। যারা এই দুনিয়ায় উত্তম কাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাস উত্তম এবং মুত্তাকীদের আবাস কতইনা উত্তম! আল-বায়ান

মুত্তাকীদের যখন বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন?’ তারা বলে, ‘যা কিছু উৎকৃষ্ট (তা-ই অবতীর্ণ করেছেন)।’ যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্য এ দুনিয়াতে আছে কল্যাণ, আর তাদের পরকালের ঘর তো নিশ্চিতই কল্যাণকর। মুত্তাকীদের আবাসস্থল কতই না উত্তম! তাইসিরুল

আর যারা মুত্তাকী তাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের রাব্ব কি অবতীর্ণ করেছিলেন? তারা বলবেঃ মহা কল্যাণ। যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে এই দুনিয়ার মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট; আর মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম! মুজিবুর রহমান

And it will be said to those who feared Allah, "What did your Lord send down?" They will say, "[That which is] good." For those who do good in this world is good; and the home of the Hereafter is better. And how excellent is the home of the righteous - Sahih International

৩০. আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছিল তাদেরকে বলা হল, তোমাদের রব কী নাযিল করেছেন? তারা বলল, ‘মহাকল্যাণ।(১) যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম!(২)

(১) ঈমানদারগণ তাদের কাছে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে তাকে বিরাট নেয়ামত জ্ঞান করে। তারা কাফেরদের মত এটা বলে না যে, পূর্ববর্তীদের গাঁথা। বরং তাদের কাছে এটা এক মহাকল্যাণের বস্তু, রহমত ও উত্তম জিনিস যারা তার অনুসরণ করবে ও তার উপর ঈমান আনবে। তারপর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানদারদের জন্য যে পুরস্কার রয়েছে তা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মংগল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম। [ইবন কাসীর]

যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।” [সূরা আন-নাহ্‌ল: ৯৭] ইবন কাসীর বলেন, যে কেউ দুনিয়াতে উত্তম আমল করবে, আল্লাহ তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে তার আমলটি সুন্দর করে দিবেন।

(২) এ আয়াতের সমার্থে আরো কিছু আয়াত রয়েছে। [দেখুনঃ সূরা ইউনুসঃ ২৬, সূরা আন-নাহলঃ ৯৭, সূরা আল-কাসাসঃ ৮০, সূরা আলে ইমরানঃ ১৯৮, সূরা আলআলাঃ ১৭, সূরা আদ-দোহাঃ ৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) আর যারা সাবধানী ছিল তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছিলেন?’ তারা বলবে, ‘মহাকল্যাণ।’ যারা এই দুনিয়ায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং পরকালের আবাস আরো উৎকৃষ্টতর; আর সাবধানীদের আবাসস্থল কত উত্তম!

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৩১ جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَهَا تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ لَهُمۡ فِیۡهَا مَا یَشَآءُوۡنَ ؕ كَذٰلِكَ یَجۡزِی اللّٰهُ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿ۙ۳۱﴾

স্থায়ী জান্নাতসমূহ যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। তারা চাইবে, তাদের জন্য তার মধ্যে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদের প্রতিদান দেন। আল-বায়ান

(তা হল) স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে, তার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা যা ইচ্ছে করবে সেখানে তাদের জন্য তা-ই আছে- আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করেন। তাইসিরুল

ওটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে; ওর পাদদেশে স্রোতস্বিনী নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু কামনা করবে তাতে তাদের জন্য তা’ই থাকবে; এভাবেই আল্লাহ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে। মুজিবুর রহমান

Gardens of perpetual residence, which they will enter, beneath which rivers flow. They will have therein whatever they wish. Thus does Allah reward the righteous - Sahih International

৩১. সেটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে; তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু চাইবে তাতে তাদের জন্য তা-ই থাকবে(১)। এভাবেই আল্লাহ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে,

(১) এ হচ্ছে জান্নাতের আসল পরিচয়। সেখানে মানুষ যা চাইবে তা পাবে। তার ইচ্ছা ও পছন্দ বিরোধী কোন কাজই সেখানে হবে না। দুনিয়ার কোন প্রধান ব্যক্তি, কোন প্রধান নেতা এবং কোন বিশাল রাজ্যের অধিকারী বাদশাহও কোন দিন এ নিয়ামত লাভ করেনি। দুনিয়ায় এ ধরনের নিয়ামত লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক অধিবাসীই সেখানে আনন্দ ও উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যাবে। তার জীবনে সর্বক্ষণ সবদিকে সবকিছু হবে তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। তার প্রত্যেকটি আশা সফল হবে, প্রত্যেকটি কামনা ও বাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং প্রত্যেকটি ইচ্ছা ও আকাংখা বাস্তবায়িত হবে। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আয-যুখরুফঃ ৭১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) ওটা স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে; ওর নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; তারা যা কিছু কামনা করবে তাতে তাদের জন্য তাই থাকবে; এভাবেই আল্লাহ সাবধানীদেরকে পুরস্কৃত করেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৩২ الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىهُمُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ طَیِّبِیۡنَ ۙ یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡكُمُ ۙ ادۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۳۲﴾

ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তম অবস্থায়, তারা বলে, ‘তোমাদের উপর সালাম। জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে। আল-বায়ান

ফেরেশতা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই ব’লে যে, ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে ‘আমাল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাইসিরুল

মালাইকা/ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়, (তাদেরকে) বলবেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর। মুজিবুর রহমান

The ones whom the angels take in death, [being] good and pure; [the angels] will say, "Peace be upon you. Enter Paradise for what you used to do." Sahih International

৩২. ফিরিশতাগণ(১) যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তমভাবে। ফিরিশতাগণ বলবেন, তোমাদের উপর সালাম! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।(২)

(১) এ আয়াত এবং এর পরবর্তী যে আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাকী ও ফেরেশতাদের আলাপ আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। সূরা আল-মুমিনের ৪৫–৪৬ আয়াতে এসবের চাইতে বেশী সুস্পষ্ট ভাষায় বর্‌যখের আযাবের কথা বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহ ফিরআউন ও ফিরআউনের পরিবারবর্গ সম্পর্কে বলেছেন, একটি কঠিন আযাব তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। সকাল-সাঁঝে তাদেরকে আগুনের সামনে নিয়ে আসা হয়। তারপর যখন কিয়ামতের সময় এসে যাবে তখন হুকুম দেয়া হবে- ফিরআউনের পরিবারবর্গকে কঠিনতম আযাবের মধ্যে ফেলে দাও। এখানে এটা বিশ্বাস করা জরুরী যে, কবরের শাস্তি শুধু রূহের উপর হবে না। বরং রূহ এবং দেহ উভয়টির উপরই হবে। কিয়ামতের মাঠে এবং এর পরবর্তী জীবন হবে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের যার সাথে দুনিয়ার জীবনের কোন তুলনাই চলে না। সেখানে সবকিছুর গতি প্রকৃতি ভিন্ন হবে।

(২) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা মৃত্যুর সময় ঈমানদারগণের যে অবস্থা হয় এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে কিভাবে সাদর সম্ভাষণ জানায় তা বর্ণনা করছেন। অনুরূপ আয়াত কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এসেছে। [দেখুনঃ সূরা ফুসসিলাতঃ ৩০–৩২] তবে একথা জানা আবশ্যক যে, সৎকাজ করা জান্নাতে যাওয়ার কারণ। কিন্তু শুধুমাত্র সৎকাজই মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না, যতক্ষন তার সাথে আল্লাহর রহমত না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের বিনিময়ে নাজাত পাবে না। লোকেরা বললঃ আপনিও পাবেন না? তিনি বললেনঃ না, আমিও না। তবে আল্লাহ যদি তার রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রাখেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদত করো। এসব কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো। মধ্যম পন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [বুখারীঃ ৬৪৬৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফিরিশতাগণ প্রাণ হরণ করে; ফিরিশতাগণ (তাদেরকে) বলে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি![1] তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ [2]

[1] এই আয়াতগুলিতে যালেম মুশরিকদের বিপরীতে ঈমানদার ও মুত্তাকীদের চরিত্র এবং তাদের উত্তম পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদের দলভুক্ত করুন। আমীন।

[2] সূরা আ’রাফের ৪৩নং আয়াতের টীকায় এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নিজ আমলের জোরে জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ তার প্রতি আল্লাহর দয়া না হবে। কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে যে, তোমরা নিজ আমলের বিনিময়ে বা ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর। আসলে এর মধ্যে কোন পরস্পর-বিরোধিতা নেই। কারণ আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে সৎকর্ম একান্ত জরুরী। সৎকর্ম আল্লাহর রহমত পাওয়ার একমাত্র উপায়। অতএব আমলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। আমল ছাড়া পরকালে আল্লাহর রহমত কোনক্রমেই সম্ভব নয়। সুতরাং উক্ত হাদীসের অর্থ নিজ জায়গায় সঠিক এবং আমলের প্রয়োজনীয়তাও স্বস্থানে বহাল। সেই কারণে অন্য এক হাদীসে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদ দেখবেন না, বরং তিনি দেখবেন তোমাদের হৃদয় ও কর্ম।’’ (মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:৩০ اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اِنَّا لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ مَنۡ اَحۡسَنَ عَمَلًا ﴿ۚ۳۰﴾

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে- যে উত্তমভাবে কাজ করে আমি তার কর্মফল বিনষ্ট করি না। তাইসিরুল

যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি, যে সৎ কাজ করে আমি তার কর্মফল নষ্ট করিনা। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who have believed and done righteous deeds - indeed, We will not allow to be lost the reward of any who did well in deeds. Sahih International

৩০. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে – আমরা তো তার শ্ৰমফল নষ্ট করি না- যে উত্তমরূপে কাজ সম্পাদন করেছে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) যারা বিশ্বাস রাখে ও সৎকর্ম করে, আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি। যে ভালো কর্ম করে, আমি তার কর্মফল নষ্ট করি না। [1]

[1] কুরআনের বর্ণনা-রীতি অনুযায়ী জাহান্নামীদের পর জান্নাতীদের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। যাতে মানুষের মধ্যে জান্নাত লাভের প্রেরণা ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:৩১ اُولٰٓئِكَ لَهُمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهِمُ الۡاَنۡهٰرُ یُحَلَّوۡنَ فِیۡهَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَهَبٍ وَّ یَلۡبَسُوۡنَ ثِیَابًا خُضۡرًا مِّنۡ سُنۡدُسٍ وَّ اِسۡتَبۡرَقٍ مُّتَّكِئِیۡنَ فِیۡهَا عَلَی الۡاَرَآئِكِ ؕ نِعۡمَ الثَّوَابُ ؕ وَ حَسُنَتۡ مُرۡتَفَقًا ﴿۳۱﴾

এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল ! আল-বায়ান

তাদের জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ কংকণে। সূক্ষ্ম ও গাঢ় রেশমের সবুজ পোশাক তারা পরিধান করবে। তারা গদি লাগানো উচ্চাসনে হেলান দিয়ে বসবে। কতই না উত্তম পুরস্কার! কতই না উত্তম আশ্রয়স্থল! তাইসিরুল

তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম আশ্রয়স্থল! মুজিবুর রহমান

Those will have gardens of perpetual residence; beneath them rivers will flow. They will be adorned therein with bracelets of gold and will wear green garments of fine silk and brocade, reclining therein on adorned couches. Excellent is the reward, and good is the resting place. Sahih International

৩১. তারাই এরা, যাদের জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে(১), তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্ৰ, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে(২); কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল।(৩)

(১) প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহরা সোনার কাঁকন পরতেন। [ফাতহুল কাদীর] জন্নাতবাসীদের পোশাকের মধ্যে এ জিনিসটির কথা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা জানিয়ে দেয়া যে, সেখানে তাদেরকে রাজকীয় পোশাক পরানো হবে। একজন কাফের ও ফাসেক বাদশাহ সেখানে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং একজন মুমিন ও সৎ মজদুর সেখানে থাকবে রাজকীয় জৌলুসের মধ্যে।

(২) বলা হয়েছে তারা আসন গ্ৰহণ করবে। আরাইক এ। এ ‘আরাইক’ শব্দটি বহুবচন। এর এক বচন হচ্ছে ‘আরীকাহ’ আরবী ভাষায় আরাকাহ এমন ধরনের আসনকে বলা হয় যার উপর ছত্ৰ খাটানো আছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এর মাধ্যমেও এখানে এ ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, সেখানে প্রত্যেক জান্নাতী রাজকীয় সিংহাসনে অবস্থান করবে।

(৩) সূরা আল-ফুরকানের ৭৫–৭৬ নং আয়াতেও জান্নাতবাসীদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে অনুরূপ উক্তি করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে,[1] তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ণ ও স্থূ্ল রেশমের সবুজ বস্ত্র[2] ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে আশ্রয়স্থল।

 [1] কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার যুগে এবং তারও পূর্বে প্রথা ছিল যে, বাদশাহ, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং গোত্রের সর্দাররা তাদের হাতে সোনার বালা পরিধান করত। যার দ্বারা তারা যে পৃথক মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ, সে কথা ফুটে উঠত। জান্নাতবাসীদেরকেও আল্লাহ জান্নাতে সোনার বালা পরাবেন।

[2] سُنْدُسٍ পাতলা বা মিহি রেশম। এবং اِسْتَبْرَقٍ মোটা রেশম। দুনিয়াতে পুরুষের জন্য সোনা এবং রেশমের পোশাক পরিধান করা নিষেধ। যারা এই নির্দেশের উপর আমল করে দুনিয়াতে এই সব হারাম থেকে বিরত থাকবে, তারা জান্নাতে এ সব জিনিস লাভ করবে। সেখানে কোন জিনিসই নিষিদ্ধ হবে না, বরং জান্নাতবাসী যা চাইবে, তা-ই সেখানে বিদ্যমান পাবে। وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ‘‘সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা দাবী কর।’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩১ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১০৭ اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنّٰتُ الۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ﴿۱۰۷﴾ۙ

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের বাগান। তাইসিরুল

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who have believed and done righteous deeds - they will have the Gardens of Paradise as a lodging, Sahih International

১০৭. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস।(১)

(১) فردوس এর অর্থ সবুজে ঘেরা উদ্যান। এটি আরবী শব্দ, না অনারব এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তোমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, তখন জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রার্থনা কর। কেননা, এটা জান্নাতের সর্বোৎকৃষ্ট স্তর। এর উপরেই আল্লাহর আরশ এবং এখান থেকেই জান্নাতের সব নহর প্রবাহিত হয়েছে।” [বুখারীঃ ২৭৯০, ৭৪২৩, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের অভ্যর্থনার জন্য আছে ফিরদাউস বেহেশ্ত।[1]

[1] ফিরদাউস জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানকে বলা হয়। নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জান্নাত প্রার্থনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা কর। কারণ ওটা হচ্ছে জান্নাতের সর্বোচ্চ অংশ, যেখান হতে জান্নাতের নহর (নদী)সমূহ প্রবাহিত হয়। (বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১০৮ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا لَا یَبۡغُوۡنَ عَنۡهَا حِوَلًا ﴿۱۰۸﴾

সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে চাইবে না। আল-বায়ান

সেখানে তারা স্থায়ী হয়ে থাকবে, সেখান থেকে বের হয়ে আর অন্যত্র যেতে চাইবে না। তাইসিরুল

সেখানে তারা স্থায়ী হবে; তা হতে স্থানান্তর কামনা করবেনা। মুজিবুর রহমান

Wherein they abide eternally. They will not desire from it any transfer. Sahih International

১০৮. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।(১)

(১) উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতের এ স্থানটি তাদের জন্য অক্ষয় ও চিরস্থায়ী নেয়ামত। যে জান্নাতে প্ৰবেশ করেছে, তাকে সেখান থেকে কখনো বের করা হবে না। কিন্তু এখানে একটি আশংকা ছিল এই যে, এক জায়গায় থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া মানুষের একটি স্বভাব। সে স্থান পরিবর্তনের ইচ্ছা করে। যদি জান্নাতের বাইরে কোথাও যাওয়ার অনুমতি না থাকে, তবে জান্নাতও কি খারাপ মনে হতে থাকবে?  আলোচ্য আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে, জান্নাতের নেয়ামত ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশের সামনে দুনিয়াতে দেখা ও ব্যবহার করা বস্তুসমূহ তার কাছে নগণ্য ও তুচ্ছ মনে হবে। জান্নাত থেকে বাইরে যাওয়ার কল্পনাও কোন সময় মনে জাগবে না। অৰ্থাৎ তার চেয়ে আরামদায়ক কোন পরিবেশ কোথাও থাকবে। না। ফলে জান্নাতের জীবন তার সাথে বিনিময় করার কোন ইচ্ছাই তাদের মনে জাগবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৮) সেথায় তারা স্থায়ী হবে; এর পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া কামনা করবে না।[1]

[1] অর্থাৎ জানণাতবাসীদের জান্নাত ও জান্নাতের নিয়ামতসমূহ পেয়ে কখনো তাদের মন একঘেয়েমি অনুভব করবে না, যাতে তারা জান্নাত ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬০ اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا ﴿ۙ۶۰﴾

তবে তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না। আল-বায়ান

তারা বাদে যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে। ফলে এরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এদের প্রতি এতটুকু যুলম করা হবে না। তাইসিরুল

কিন্তু তারা নয় - যারা তাওবাহ করেছে, ঈমান আনয়ন করেছে ও সৎ কাজ করেছে; তারাতো জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবেনা – মুজিবুর রহমান

Except those who repent, believe and do righteousness; for those will enter Paradise and will not be wronged at all. Sahih International

৬০. কিন্তু তারা নয়—যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে। তারা তো জান্নাতে প্ৰবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। [1]

[1] অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তওবা করে নামায ত্যাগ ও খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করা হতে ফিরে আসবে এবং ঈমান ও সৎকাজের দাবীসমূহ পূরণ করবে তারা উল্লিখিত অশুভ পরিণাম হতে পরিত্রাণ লাভ করবে এবং জান্নাতের অধিকারী বিবেচিত হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬১ جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ وَعَدَ الرَّحۡمٰنُ عِبَادَهٗ بِالۡغَیۡبِ ؕ اِنَّهٗ كَانَ وَعۡدُهٗ مَاۡتِیًّا ﴿۶۱﴾

তা চিরস্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন গায়েবের সাথে। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদাকৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী। আল-বায়ান

স্থায়ী জান্নাত, দয়াময় তাঁর বান্দাহ্কে যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূর্ণ হবে। তাইসিরুল

এটা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী। মুজিবুর রহমান

[Therein are] gardens of perpetual residence which the Most Merciful has promised His servants in the unseen. Indeed, His promise has ever been coming. Sahih International

৬১. এটা স্থায়ী জান্নাত, যে গায়েবী প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন(১)। নিশ্চয় তার প্রতিশ্রুত বিষয় আসবেই।

(১) অর্থাৎ যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় আল্লাহ তাদেরকে এমন অবস্থায় দিয়েছেন যখন ঐ জান্নাতসমূহ তাদের দৃষ্টির অগোচরে রয়েছে। সেটা একমাত্র গায়েবী ব্যাপার। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬১) সেই স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি পরম দয়াময় নিজ দাসদেরকে অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন; [1] নিশ্চয় তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।

[1] অর্থাৎ, এটি তাদের ঈমান ও ইয়াক্বীনের দৃঢ়তা যে, তারা জান্নাত তো দেখেইনি বরং আল্লাহর অদৃশ্যভাবে দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে জান্নাত পাওয়ার আশায় ঈমান ও আল্লাহ-ভীতির রাস্তা অবলম্বন করেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬২ لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡهَا لَغۡوًا اِلَّا سَلٰمًا ؕ وَ لَهُمۡ رِزۡقُهُمۡ فِیۡهَا بُكۡرَۃً وَّ عَشِیًّا ﴿۶۲﴾

তারা সেখানে ‘শান্তি’ ছাড়া কোন অর্থহীন কথা শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে তাদের রিয্ক। আল-বায়ান

সেখানে তারা শান্তির সম্ভাষণ ছাড়া কোন অপবাক্য শুনবে না। আর সকাল-সন্ধ্যা সেখানে তাদের জন্য থাকবে জীবন ধারণের উপকরণ। তাইসিরুল

সেখানে তারা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবেনা এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ। মুজিবুর রহমান

They will not hear therein any ill speech - only [greetings of] peace - and they will have their provision therein, morning and afternoon. Sahih International

৬২. সেখানে তারা ‘সালাম’ তথা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবে না(১) এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে তাদের রিযিক।(২)

(১) لغو বলে অনৰ্থক ও আসার কথাবার্তা গালিগালাজ একং পীড়াদায়ক বাক্যালাপ বোঝানো হয়েছে। যেমন দুনিয়াতে কখনও কখনও মানুষ এটা শুনে থাকে। [ইবন কাসীর] জান্নাতবাসিগণ এ থেকে পবিত্র থাকবে। কোনরূপ কষ্টদায়ক কথা তাদের কানে ধ্বনিত হবেনা। অন্য আয়াতে এসেছে, “সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার বা পাপবাক্য, ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ছাড়া।” [সূরা আল-ওয়াকি আহ: ২৫–২৬] জান্নাতীগণ একে অপরকে সালাম করবে এবং আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদের সবাইকে সালাম করবে। তারা দোষ-ত্রুটিমুক্ত হবে। জান্নাতে মানুষ যে সমস্ত নিয়ামত লাভ করবে। তার মধ্যে একটি বড় নিয়ামত হবে এই যে, সেখানে কোন আজেবাজে, অর্থহীন ও কটু কথা শোনা যাবে না। তারা শুধু তা-ই শুনবে যা তাদেরকে শান্তি দেয়। [ফাতহুল কাদীর]

(২) জান্নাতে সুযোদয়, সুৰ্য্যস্ত এবং দিন ও রাত্রির অস্তিত্ব থাকবে না। সদা সর্বদা একই প্রকার আলো থাকবে। কিন্তু বিশেষ পদ্ধতিতে দিন, রাত্রি ও সকাল সন্ধ্যার পার্থক্য সূচিত হবে। এই রকম সকাল-সন্ধ্যায় জান্নাতবাসীরা তাদের জীবনোপকরণ লাভ করবে। [ফাতহুল কাদীর] একথা সুস্পষ্ট যে, জান্নাতিগণ যখন যে বস্তু কামনা করবে, তখনই কালবিলম্ব না করে তা পেশ করা হবে। এমতাবস্থায় মানুষের অভ্যাস ও স্বভাবের ভিত্তিতে সকাল-সন্ধ্যার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ সকাল সন্ধ্যায় আহারে অভ্যস্ত। আরবরা বলেঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যার পূর্ণ আহার্য যোগাড় করতে পারে, সে সুখী ও স্বাচ্ছন্দশীল। হাদীসে এসেছে, ‘শহীদগণ জান্নাতের দরজায় নালাসমূহের উৎপত্তিস্থলে সবুজ গম্বুজে অবস্থানরত রয়েছে, তাদের নিকট জান্নাত থেকে সকাল-বিকাল খাবার যায়’ [মুসনাদে আহমাদ: ১/২৬৬]

অন্য হাদীসে এসেছে, “প্ৰথম দলটি যারা জান্নাতে প্ৰবেশ করবে, তাদের রূপ হবে চৌদ্দ তারিখের রাতের চাঁদের রূপ। সেখানে তারা থুথু ফেলবে না, শর্দি-কাশি ফেলবে না, পায়খানা-পেশাব করবে না। তাদের প্লেট হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের সুগন্ধি কাঠ হবে ভারতীয় উদ কাঠের, তাদের ঘাম হবে মিশকের। তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন করে স্ত্রী, যাদের সৌন্দর্য এমন হবে যে, গোস্তের ভিতর থেকেও হাঁড়ের ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে৷ মতবিরোধ থাকবে না, থাকবেনা ঝগড়া-হিংসা হানাহানি, তাদের সবার অন্তর এক রকম হবে। সকাল বিকাল তারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে।” [বুখারী: ৩২৪৫] কোন কোন তফসীরবিদ বলেনঃ আয়াতে সকাল-সন্ধ্যা বলে ব্যাপক সময় বোঝানো হয়েছে, যেমন দিবারাত্রি ও পূর্ব-পশ্চিম শব্দগুলোও ব্যাপক অর্থে বলা হয়ে থাকে। কাজেই আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতীদের খায়েশ অনুযায়ী তাদের খাদ্য সদাসর্বদা উপস্থিত থাকবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) সেখানে তারা ‘শান্তি’ ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবে না[1] এবং সেথায় সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ। [2]

[1] অর্থাৎ, ফিরিশতারাও চর্তুদিক হতে সালাম করবে এবং জান্নাতীরাও একে অপরকে বেশি বেশি সালাম করবে।

[2] ইমাম আহমাদ (রঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, জান্নাতে দিন-রাত হবে না। জান্নাত সর্বদা আলোয় আলোকিত থাকবে। হাদীসের মধ্যে আছে, জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটির মুখমন্ডল হবে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়। না মুখে থুথু আসবে আর না নাকে পানি, না মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হবে। (মহিলাদের মাসিক আসবে না।) তাদের বাসনপত্র ও চিরুনী হবে সোনার। তাদের সুরভিত ধোঁয়া হবে সুগন্ধ কাঠের। তাদের শরীরের ঘাম হবে মৃগনাভির ন্যায় সুগন্ধময়। প্রত্যেক জান্নাতীকে দু’জন স্ত্রী দেওয়া হবে; যাদের রূপ-সৌন্দর্য্যের কারণে বাহির হতে পায়ের হাড়ের ভিতরের মগজ দেখা যাবে। আপোসে কোন প্রকার মনোমালিন্য থাকবে না। তাদের অন্তর হবে একটি মানুষের অন্তরের মত। সকাল-সন্ধ্যা তারা আল্লাহর তসবীহ পাঠ করবে। (বুখারী, মুসলিম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬৩ تِلۡكَ الۡجَنَّۃُ الَّتِیۡ نُوۡرِثُ مِنۡ عِبَادِنَا مَنۡ كَانَ تَقِیًّا ﴿۶۳﴾

সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যারা মুত্তাকী। আল-বায়ান

এই হল সেই জান্নাত আমি যার উত্তরাধিকারী করব আমার বান্দাহদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে। তাইসিরুল

এই সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে। মুজিবুর রহমান

That is Paradise, which We give as inheritance to those of Our servants who were fearing of Allah. Sahih International

৬৩. এ সে জান্নাত, যার অধিকারী করব আমরা আমাদের বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে।(১)

(১) তাকওয়ার অধিকারীদের জন্যই জান্নাত, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ হবে একথা এখানে যেমন বলা হয়েছে কুরআনের অন্যত্রও তা বলা হয়েছে, সূরা আল-মুমিনুনের প্রারম্ভে মুমিনদের গুণাগুণ বৰ্ণনা করে শেষে বলা হয়েছে: “তারাই হবে অধিকারী—অধিকারী হবে ফিরদাওসের যাতে তারা স্থায়ী হবে। [১০–১১] আরো এসেছে, “তোমরা তীব্র গতিতে চল নিজেদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তকীদের জন্য। [সূরা আলে। ইমরান: ১৩৩] অন্যত্র বলা হয়েছে, “আর যারা তাদের প্রতিপালকের তাকওয়া অবলম্বন করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।” [সূরা আযযুমারঃ ৭৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৩) এ হল সেই জান্নাত যার অধিকারী করব আমি আমার দাসদের মধ্যে সংযমশীলকে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:৭৫ وَ مَنۡ یَّاۡتِهٖ مُؤۡمِنًا قَدۡ عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجٰتُ الۡعُلٰی ﴿ۙ۷۵﴾

আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। আল-বায়ান

যে কেউ সৎ ‘আমাল ক’রে মু’মিন অবস্থায় তাঁর নিকট হাযির হবে, তাদের জন্য আছে সুউচ্চ মর্যাদা। তাইসিরুল

আর যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মু’মিন অবস্থায়, সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা – মুজিবুর রহমান

But whoever comes to Him as a believer having done righteous deeds - for those will be the highest degrees [in position]: Sahih International

৭৫. আর যারা তাঁর কাছে সৎকর্ম করে মুমিন অবস্থায় আসবে, তাদের জন্যই রয়েছে উচ্চতম মর্যাদা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৫) আর যারা তাঁর নিকট বিশ্বাসী হয়ে ও সৎকর্ম করে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদাসমূহ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:৭৬ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ ذٰلِكَ جَزٰٓؤُا مَنۡ تَزَكّٰی ﴿۷۶﴾

স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল যারা পরিশুদ্ধ হয় তাদের পুরষ্কার। আল-বায়ান

স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে বয়ে চলছে নির্ঝরিণী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। যারা নিজেদেরকে পবিত্র করে তাদের এটাই পুরস্কার। তাইসিরুল

স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই জন্য যারা পবিত্র। মুজিবুর রহমান

Gardens of perpetual residence beneath which rivers flow, wherein they abide eternally. And that is the reward of one who purifies himself. Sahih International

৭৬. স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটা তাদেরই পুরস্কার যারা পরিশুদ্ধ হয়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৬) স্থায়ী জান্নাত যার নিচে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র।[1]

[1] জাহান্নামীদের বিপরীত ঈমানদারদেরকে জান্নাতে যে সুখময় বিলাস-জীবন দেওয়া হবে মহান আল্লাহ এখানে তার উল্লেখ করেছেন এবং পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এর উপযুক্ত তারাই হবে যারা ঈমান আনার পর ঈমানের চাহিদাও পূরণ করে। অর্থাৎ, তারা সৎকর্ম করে ও নিজের আত্মাকে পাপাচার হতে পবিত্র রাখে। মুখে কিছু বাক্য পাঠ করার নাম ঈমান নয়, বরং বিশ্বাস, স্বীকার ও আমলের সমষ্টির নাম হল ঈমান।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২২ আল-হজ্জ
২২:১৪ اِنَّ اللّٰهَ یُدۡخِلُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَفۡعَلُ مَا یُرِیۡدُ ﴿۱۴﴾

নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, আল্লাহ যা করতে চান, তাই করেন। তাইসিরুল

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah will admit those who believe and do righteous deeds to gardens beneath which rivers flow. Indeed, Allah does what He intends. Sahih International

১৪. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত(১); নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছে তা-ই করেন।(২)

(১) অর্থাৎ যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠাণ্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরষ্কার ঝরে পড়ুক সর্বাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে। তারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, খারাপ কাজ থেকে দূরে থেকেছে। সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের সেই উঁচু বাগ-বাগিচার ওয়ারিশ বানিয়েছেন। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান ছিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করারও কেউ নেই। যেহেতু তিনি কাউকে হিদায়াত করেছেন আর কাউকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাই আয়াতের শেষে বলেছেন, “তিনি যা ইচ্ছে তা করেন।” [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৪১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৭৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »