আল্লাহর রহমত ও ফযল - আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ বিষয়ক আয়াতসমূহ ৬৮ টি
৩৩ আল-আহযাব
৩৩:৪৭ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ بِاَنَّ لَهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ فَضۡلًا كَبِیۡرًا ﴿۴۷﴾

আর তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ। আল-বায়ান

তুমি মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট আছে বিশাল অনুগ্রহ। তাইসিরুল

তুমি মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা অনুগ্রহ। মুজিবুর রহমান

And give good tidings to the believers that they will have from Allah great bounty. Sahih International

৪৭. আর আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাঅনুগ্রহ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) তুমি বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট মহা অনুগ্রহ রয়েছে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:২ مَا یَفۡتَحِ اللّٰهُ لِلنَّاسِ مِنۡ رَّحۡمَۃٍ فَلَا مُمۡسِكَ لَهَا ۚ وَ مَا یُمۡسِكۡ ۙ فَلَا مُرۡسِلَ لَهٗ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۲﴾

আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

আল্লাহ মানুষের জন্য তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা খুলে দেন তা নিবারণ করার কেউ নেই। আর তিনি যা বারিত করেন অতঃপর কেউ তা প্রেরণ করতে পারে না। তিনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করলে কেহ ওটা নিবারন করতে পারেনা এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে অতঃপর কেহ ওর উম্মুক্তকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান

Whatever Allah grants to people of mercy - none can withhold it; and whatever He withholds - none can release it thereafter. And He is the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

২. আল্লাহ মানুষের প্ৰতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণকারী নেই এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে পরে কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই।(১) আর তিনি পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।(২)

(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দান করবে, যদি তিনি তাঁর রিযিক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে।” [সূরা আল-মুলকঃ ২১]

(২) এক হাদীসে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে বলেন, হে বৎস! জেনে রাখ, যদি দুনিয়ার সমস্ত জাতি তোমার কোন উপকার করতে চায়। তবে সে আল্লাহ যা নির্ধারিত করে রেখেছেন এর বাইরে তোমার কোন উপকার করতে পারবে না, পক্ষান্তরে যদি দুনিয়ার সমস্ত জাতি তোমার ক্ষতি করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার উপর লিখে রেখেছেন। [তিরমিযী: ২৫১৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন করুণা করলে কেউ তার নিবারণকারী নেই এবং তিনি যা নিবারণ করেন তারপর কেউ তার প্রেরণকারী নেই। [1] তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

[1] রসূলগণের প্রেরণ ও কিতাবসমূহের অবতারণও সেই সকল করুণার মধ্যে গণ্য। অর্থাৎ সকল বস্তুর দাতাও তিনি এবং ফিরিয়ে নেওয়া বা নিবারণ করার মালিকও তিনি। তিনি ছাড়া না কেউ দাতা ও অনুগ্রহকারী আছে, আর না কেউ রোধকারী ও নিবারণকারী আছে। যেমন নবী (সাঃ) বলতেন, (اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ) অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর, তা রোধ করার এবং যা রোধ কর, তা দান করার সাধ্য কারো নেই। (বুখারী, মুসলিম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:২৯ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ كِتٰبَ اللّٰهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً یَّرۡجُوۡنَ تِجَارَۃً لَّنۡ تَبُوۡرَ ﴿ۙ۲۹﴾

নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিয্ক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। আল-বায়ান

যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আল্লাহ তাদেরকে যে রিযক দিয়েছেন তাথেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসায়ের আশা করে যাতে কক্ষনো লোকসান হবে না। তাইসিরুল

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে তাদের এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই – মুজিবুর রহমান

Indeed, those who recite the Book of Allah and establish prayer and spend [in His cause] out of what We have provided them, secretly and publicly, [can] expect a profit that will never perish - Sahih International

২৯. নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) নিশ্চয় যারা আল্লাহর গ্রন্থ পাঠ করে,[1] যথাযথভাবে নামায পড়ে,[2] আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; [3] তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যাতে কখনোই নোকসান হবে না। [4]

[1] ‘আল্লাহর গ্রন্থ’র অর্থ হল কুরআন কারীম। ‘পাঠ করে’ অর্থাৎ, নিয়মিত তা গুরুত্ব সহকারে পাঠ করে।

[2] ইক্বামাতে স্বালাতের অর্থ হল, নামায যেভাবে কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ, তার সময়ের যথাযথ খেয়াল রাখা, আরকানসমূহ পূর্ণভাবে ধীর-স্থিরতার সাথে আদায় করা এবং বিনয় ও নম্রতার সাথে যত্ন সহকারে তা আদায় করা।

[3] অর্থাৎ, দিবারাত্রি প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয় পদ্ধতিতে প্রয়োজন মত খরচ করে। অনেকের নিকট গোপনে বলতে নফল দান এবং প্রকাশ্যে বলতে ওয়াজেব দান (যাকাত)-কে বুঝানো হয়েছে।

[4] অর্থাৎ, এই শ্রেণীর মানুষদের প্রতিদান আল্লাহর নিকট সুনিশ্চিত, যাতে নোকসান ও হ্রাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:৩০ لِیُوَفِّیَهُمۡ اُجُوۡرَهُمۡ وَ یَزِیۡدَهُمۡ مِّنۡ فَضۡلِهٖ ؕ اِنَّهٗ غَفُوۡرٌ شَكُوۡرٌ ﴿۳۰﴾

যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী। আল-বায়ান

কারণ, তিনি তাদেরকে তাদের প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো বেশি দিবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, (ভাল কাজের) বড়ই মর্যাদাদানকারী। তাইসিরুল

এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। মুজিবুর রহমান

That He may give them in full their rewards and increase for them of His bounty. Indeed, He is Forgiving and Appreciative. Sahih International

৩০. যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণভাবে দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী দেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্ৰাহী।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) এ জন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে (তাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরও বেশী দেবেন। [1] তিনি তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। [2]

[1] لِيُوَفِّيَهُمْ , لَنْ تَبُوْرَ এর সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ এই ব্যবসা নোকসান থেকে এই জন্য মুক্ত যে, আল্লাহ তাআলা তাদের নেক আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। অথবা ঊহ্য ক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত, আর তার অর্থ এই হবে যে, তারা নেক আমল এই জন্য করে অথবা আল্লাহ তাদেরকে সুপথ এই জন্য প্রদর্শন করেছেন, যাতে তিনি তাদেরকে প্রতিদান দেন।

[2] এই বাক্য দ্বারা পূর্ণ প্রতিদান ও আরো বেশী দেওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি মু’মিন বান্দাদের গুনাহ ক্ষমাকারী এই শর্তের উপর যে, তারা বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করবে। তিনি তাদের আনুগত্যের স্পৃহা ও নেক আমলের কদর বুঝেন; তিনি গুণগ্রাহী। তাই তিনি শুধু প্রাপ্য প্রতিদান দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না; বরং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অনেক বেশি প্রদান করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৬ ইয়াসীন
৩৬:৪৩ وَ اِنۡ نَّشَاۡ نُغۡرِقۡهُمۡ فَلَا صَرِیۡخَ لَهُمۡ وَ لَا هُمۡ یُنۡقَذُوۡنَ ﴿ۙ۴۳﴾

আর যদি আমি চাই তাদেরকে নিমজ্জিত করে দেই, তখন তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকে না এবং তাদেরকে উদ্ধারও করা হয় না। আল-বায়ান

আমি ইচ্ছে করলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন (তাদের ফরিয়াদ শুনার জন্য) কোন সাহায্যকারী থাকবে না, আর তারা পরিত্রাণও পাবে না তাইসিরুল

আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি; সেই অবস্থায় তারা কোন সাহায্যকারী পাবেনা এবং তারা পরিত্রাণও পাবেনা – মুজিবুর রহমান

And if We should will, We could drown them; then no one responding to a cry would there be for them, nor would they be saved Sahih International

৪৩. আর আমরা ইচ্ছে করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি; সে অবস্থায় তাদের কোন উদ্ধারকারী থাকবে না এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না—

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৩) আমি ইচ্ছা করলে ওদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি; সে অবস্থায় ওরা কোন সাহায্যকারী পাবে না এবং ওরা পরিত্রাণও পাবে না--

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৬ ইয়াসীন
৩৬:৪৪ اِلَّا رَحۡمَۃً مِّنَّا وَ مَتَاعًا اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۴۴﴾

যদি না আমার পক্ষ থেকে রহমত হয় এবং কিছু সময়ের জন্য উপভোগের সুযোগ দেয়া হয়। আল-বায়ান

আমার রহমত না হলে, আর কিছু কালের জন্য তাদেরকে জীবন উপভোগ করতে না দিলে। তাইসিরুল

আমার অনুগ্রহ না হলে এবং কিছুকালের জন্য জীবনোপকরণ ভোগ করতে না দিলে। মুজিবুর রহমান

Except as a mercy from Us and provision for a time. Sahih International

৪৪. আমার পক্ষ থেকে রহমত না হলে এবং কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে না দিলে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) ওদের প্রতি আমার করুণা না হলে এবং ওদেরকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে না দিলে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৯ আয-যুমার
৩৯:৩৮ وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ ؕ قُلۡ اَفَرَءَیۡتُمۡ مَّا تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ اَرَادَنِیَ اللّٰهُ بِضُرٍّ هَلۡ هُنَّ كٰشِفٰتُ ضُرِّهٖۤ اَوۡ اَرَادَنِیۡ بِرَحۡمَۃٍ هَلۡ هُنَّ مُمۡسِكٰتُ رَحۡمَتِهٖ ؕ قُلۡ حَسۡبِیَ اللّٰهُ ؕ عَلَیۡهِ یَتَوَكَّلُ الۡمُتَوَكِّلُوۡنَ ﴿۳۸﴾

আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে ‘আল্লাহ’। বল, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ- আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি চাইলে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাক তারা কি সেই ক্ষতি দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমাকে রহমত করতে চাইলে তারা সেই রহমত প্রতিরোধ করতে পারবে’? বল, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। তাওয়াক্কুলকারীগণ তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল করে। আল-বায়ান

তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে কে? তারা অবশ্য অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ যে, আল্লাহ আমার ক্ষতি করতে চাইলে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা কি সে ক্ষতি দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে, তারা কি তাঁর অনুগ্রহ ঠেকাতে পারবে? বল, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, নির্ভরকারীরা তাঁর উপরই নির্ভর করে। তাইসিরুল

তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ! বলঃ তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সেই অনিষ্টতা দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? বলঃ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা আল্লাহর উপর নির্ভর করে। মুজিবুর রহমান

And if you asked them, "Who created the heavens and the earth?" they would surely say, "Allah." Say, "Then have you considered what you invoke besides Allah? If Allah intended me harm, are they removers of His harm; or if He intended me mercy, are they withholders of His mercy?" Say, "Sufficient for me is Allah; upon Him [alone] rely the [wise] reliers." Sahih International

৩৮. আর আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমানসমূহ ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ আমার অনিষ্ট করতে চাইলে তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীগণ তাঁর উপরই নির্ভর করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) তুমি যদি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন?’ ওরা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তাহলে তোমরা ভেবে দেখেছ কি? আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা তাঁকে ছাড়া যাদেরকে আহবান কর, তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে?’ বল, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।[1] নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে থাকে।’[2]

[1] কেউ কেউ বলেন যে, যখন নবী (সাঃ) উল্লিখিত প্রশ্ন তাদের সামনে পেশ করলেন, তখন তারা বলল যে, সত্যিই তারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কোন জিনিসকে দূর করতে পারবে না, তবে তারা সুপারিশ করবে। এরই ভিত্তিতে এই অংশটুকু অবতীর্ণ হয়েছে যে, সমস্ত কার্যকলাপের ব্যাপারে আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

[2] যখন সমস্ত কিছু তাঁরই এখতিয়ারে, তখন অন্যের উপর নির্ভর করায় লাভ কি? এই জন্য ঈমানদারেরা কেবল তাঁরই উপর নির্ভর করে থাকে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপর তারা নির্ভর করে না, ভরসা ও আস্থা রাখে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৯ আয-যুমার
৩৯:৫৩ قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۳﴾

বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। আল-বায়ান

বল- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

বলঃ (আমার এ কথা) হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ - আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

Say, "O My servants who have transgressed against themselves [by sinning], do not despair of the mercy of Allah. Indeed, Allah forgives all sins. Indeed, it is He who is the Forgiving, the Merciful." Sahih International

৫৩. বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায় হত্যা করেছিল এবং অনেক করেছিল। আরও কিছু লোক ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করল: আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম, কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এই যে, আমরা অনেক জঘন্য গোনাহ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় ৷ [বুখারী: ৪৮১০, মুসলিম: ১২২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [1]

[1] এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর মহা ক্ষমাশীলতার কথা বর্ণনা করেছেন। إسرَاف ‘ইসরাফ’ অর্থ পাপের আধিক্য ও তার প্রাচুর্য। ‘‘আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না’’ এর অর্থ, ঈমান আনার পূর্বে অথবা তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে যতই গুনাহ করে থাক, মানুষ যেন এই মনে না করে যে, আমি তো অনেক বড় পাপী, আমাকে আল্লাহ কিভাবে ক্ষমা করবেন? বরং সত্য হৃদয়ে যদি ঈমান আনে বা নিষ্ঠার সাথে যদি তওবা করে, তবে মহান আল্লাহ সমস্ত পাপকে মাফ করে দেবেন। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণিক ঘটনা থেকেও এই অর্থই সাব্যস্ত হয়। কিছু কাফের ও মুশরিক এমন ছিল, যারা প্রচুর হত্যা ও ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। এরা নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, আপনার দাওয়াত তো সঠিক, কিন্তু আমরা অনেক পাপের পাপী। যদি আমরা ঈমান আনি, তবে এই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে কি? এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা যুমার) তবে এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় খুব পাপ করে যাও।
তাঁর যাবতীয় বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদির ব্যাপারে কোনই পরোয়া করো না এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা ও নিয়ম-নীতি নিষ্ঠুরতার সাথে লঙ্ঘন করে যাও। এইভাবে তাঁর ক্রোধ ও প্রতিশোধকে আহবান জানিয়ে তাঁর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশা করা একেবারে বোকামি ও খামখেয়ালী। এটা হল নিম ফলের বীজ লাগিয়ে আঙ্গুর ফলের আশা রাখার মতই। এই ধরনের মানুষের স্মরণ রাখা উচিত যে, তিনি যেমন তাঁর বান্দাদের জন্য غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ তেমনি তিনি তাঁর অবাধ্যজনদের জন্য عَزِيْزٌ ذُو اْنْتِقَامٍ ও বটে।

তাই তো কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে এই উভয় দিককে এক সাথেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, ﴿نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ، وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ﴾ অর্থাৎ, আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা হিজর ৪৯-৫০ আয়াত) সম্ভবতঃ এটাই কারণ যে, এখানে আয়াতের আরম্ভ يَا عِبَادِيْ (হে আমার বান্দাগণ!) দিয়ে হয়েছে। যার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে অথবা সত্য হৃদয়ে তওবা করে প্রকৃত অর্থে সে তাঁর বান্দা হয়ে যাবে, তার পাপ যদি সমুদ্রের ফেনা বরাবরও হয়, তবুও তা মাফ হয়ে যাবে। তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। যেমন, হাদীসে একশত মানুষের খুনীর তওবার ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। (বুখারীঃ আম্বিয়া অধ্যায়, মুসলিমঃ তওবা অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪০ গাফির (আল মু'মিন)
৪০:৭ اَلَّذِیۡنَ یَحۡمِلُوۡنَ الۡعَرۡشَ وَ مَنۡ حَوۡلَهٗ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۚ رَبَّنَا وَسِعۡتَ كُلَّ شَیۡءٍ رَّحۡمَۃً وَّ عِلۡمًا فَاغۡفِرۡ لِلَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اتَّبَعُوۡا سَبِیۡلَكَ وَ قِهِمۡ عَذَابَ الۡجَحِیۡمِ ﴿۷﴾

যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’। আল-বায়ান

যারা ‘আরশ বহন করে আছে, আর যারা আছে তার চারপাশে, তারা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করে আর তাঁর প্রতি ঈমান পোষণ করে আর মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তোমার রহমত ও জ্ঞান দিয়ে সব কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছ, কাজেই যারা তাওবাহ করে ও তোমার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা কর, আর জাহান্নামের ‘আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা কর। তাইসিরুল

যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, অতএব যারা তাওবাহ করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। মুজিবুর রহমান

Those [angels] who carry the Throne and those around it exalt [Allah] with praise of their Lord and believe in Him and ask forgiveness for those who have believed, [saying], "Our Lord, You have encompassed all things in mercy and knowledge, so forgive those who have repented and followed Your way and protect them from the punishment of Hellfire. Sahih International

৭. যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রাবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্ৰশংসার সাথে এবং তার উপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আপনি তাদের রক্ষা করুন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারিপাশ ঘিরে আছে তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সাথে ঘোষণা করে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব যারা তওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে, তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। [1]

[1] এখানে নিকটতম ফিরিশতাদের একটি বিশেষ দল এবং তাঁদের কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দলটি সেই ফিরিশতাদের, যাঁরা আল্লাহর আরশ তুলে ধরে আছেন এবং তাঁদের, যাঁরা তার চারিপাশে আছেন। এদের একটি কাজ হল, এঁরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর প্রশংসা করেন। অর্থাৎ, তাঁকে সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন, তাঁর পরিপূর্ণতা ও গুণাবলীকে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করেন এবং তাঁর সামনে অসহায়তা ও বিনয় (অর্থাৎ ঈমান) প্রকাশ করেন। এঁদের দ্বিতীয় কাজ হল, এঁরা ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বলা হয় যে, আরশ বহনকারী ফিরিশতার সংখ্যা হল চার। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাঁদের সংখ্যা হবে আট। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:৮ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَجَعَلَهُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ لٰكِنۡ یُّدۡخِلُ مَنۡ یَّشَآءُ فِیۡ رَحۡمَتِهٖ ؕ وَ الظّٰلِمُوۡنَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۸﴾

আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে এক জাতিভুক্ত করতে পারতেন; কিন্তু তিনি যাকে চান তাঁর রহমতে প্রবেশ করান আর যালিমদের জন্য কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই। আল-বায়ান

আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে একই উম্মত করতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছে তাঁর রহমাতের মধ্যে দাখিল করেন, আর যালিমদের জন্য নেই কোন অভিভাবক, নেই কোন সাহায্যকারী। তাইসিরুল

আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই উম্মাত করতে পারতেন। বস্তুতঃ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করেন। যালিমদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই। মুজিবুর রহমান

And if Allah willed, He could have made them [of] one religion, but He admits whom He wills into His mercy. And the wrongdoers have not any protector or helper. Sahih International

৮. আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে একই উম্মত করতে পারতেন; কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে স্বীয় অনুগ্রহে প্ৰবেশ করান। আর যালিমরা, তাদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই জাতিভুক্ত (একই মতাদর্শের অনুসারী) করতে পারতেন;[1] কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করে থাকেন। আর সীমালংঘনকারীদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।

[1] এই অবস্থায় কিয়ামতের দিন কেবল একটাই দল হত। অর্থাৎ, ঈমানদার জান্নাতীদের। কিন্তু আল্লাহর সুকৌশল ও ইচ্ছা এই বাধ্যকরণকে পছন্দ করেনি। বরং মানুষদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদেরকে (করা না করার) ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দান করেছেন। যে এই স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করে, সে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়ে যায়। আর যে তার অপব্যবহার করে, সে প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে আল্লাহর দেওয়া স্বাধীনতা ও এখতিয়ারকে আল্লাহরই অবাধ্যতায় ব্যবহার করে। সুতরাং কিয়ামতের দিন এ রকম অন্যায়কারী যালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:২২ تَرَی الظّٰلِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا كَسَبُوۡا وَ هُوَ وَاقِعٌۢ بِهِمۡ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فِیۡ رَوۡضٰتِ الۡجَنّٰتِ ۚ لَهُمۡ مَّا یَشَآءُوۡنَ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ ؕ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَضۡلُ الۡكَبِیۡرُ ﴿۲۲﴾

তুমি যালিমদেরকে তাদের কৃত কর্মের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পাবে। অথচ তা (তাদের কর্মের শাস্তি) তাদের উপর পতিত হবেই। আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা জান্নাতের উদ্যানসমূহে থাকবে। তারা যা চাইবে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য তাই থাকবে। এটাই তো মহাঅনুগ্রহ। আল-বায়ান

যালিমদেরকে তুমি তাদের কৃতকর্মের কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পাবে। তাদের কর্মের শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর পতিত হবে। আর যারা ঈমান এনেছে আর সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতের বাগিচায় অবস্থান করবে। তারা যা ইচ্ছে করবে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট তা-ই আছে। ওটাই অতি বড় অনুগ্রহ। তাইসিরুল

তুমি যালিমদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবে তাদের কৃতকর্মের জন্য; আর এটাই আপতিত হবে তাদের উপর। যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের মনোরম স্থানে। তারা যা কিছু চাবে তাদের রবের নিকট তা’ই পাবে। এটাইতো মহা অনুগ্রহ। মুজিবুর রহমান

You will see the wrongdoers fearful of what they have earned, and it will [certainly] befall them. And those who have believed and done righteous deeds will be in lush regions of the gardens [in Paradise] having whatever they will in the presence of their Lord. That is what is the great bounty. Sahih International

২২. আপনি যালিমদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন তাদের কৃতকর্মের জন্য; অথচ তা আপতিত হবে তাদেরই উপর। আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের উদ্যানসমূহে। তারা যা কিছু চাইবে তাদের রবের কাছে তাদের জন্য তা-ই থাকবে। এটাই তো মহা অনুগ্রহ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) তুমি সীমালংঘনকারীদেরকে ওদের কৃতকমের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবে;[1] অথচ ওদের ওপর আপতিত হবে তা(র শাস্তি)।[2] যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তারা জান্নাতের বাগানসমূহে প্রবেশ করবে, তারা যা কিছু চাইবে, তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাই পাবে। এটিই তো মহা অনুগ্রহ।

[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন।

[2] ভয় করায় কোন লাভ হবে না। কেননা, নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি তো তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:২৬ وَ یَسۡتَجِیۡبُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ یَزِیۡدُهُمۡ مِّنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ الۡكٰفِرُوۡنَ لَهُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ﴿۲۶﴾

আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আহবানে তিনি সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বৃদ্ধি করেন। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। আল-বায়ান

যারা ঈমান আনে আর সৎকার্ম করে তিনি তাদের আহবান শুনেন, আর তিনি তাদের প্রতি নিজ অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন আর কাফিরদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাইসিরুল

তিনি মু’মিন ও সৎকর্মশীলদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তার অনুগ্রহ বর্ধিত করেন; কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। মুজিবুর রহমান

And He answers [the supplication of] those who have believed and done righteous deeds and increases [for] them from His bounty. But the disbelievers will have a severe punishment. Sahih International

২৬. আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন; আর কাফিররা, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) তিনি বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের আহবানে সাড়া দেন[1] এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন; আর অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

[1] অর্থাৎ, তাদের দু’আ ও প্রার্থনা শোনেন এবং তাদের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন। তবে শর্ত হল, দু’আর আদবসমূহ ও তার শর্তাবলীর প্রতি পূর্ণ যত্নবান হতে হবে। আর হাদীসে এসেছে যে, ‘‘মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যার সওয়ারী মরুপ্রান্তরে খানা-পানিসহ নিখোঁজ হয়ে যায় এবং সে নিরাশ হয়ে কোন গাছের ছায়ায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর (ঘুম থেকে উঠে) হঠাৎ সে তার সাওয়ারী পেয়ে যায় এবং আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু।’ অর্থাৎ, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভুল বলে ফেলে।’’ (মুসলিম, কিতাবুত্ তাওবাহ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৩ আয-যুখরুফ
৪৩:৩১ وَ قَالُوۡا لَوۡ لَا نُزِّلَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ عَلٰی رَجُلٍ مِّنَ الۡقَرۡیَتَیۡنِ عَظِیۡمٍ ﴿۳۱﴾

আর তারা বলল, ‘এ কুরআন কেন দুই জনপদের মধ্যকার কোন মহান ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না’?। আল-বায়ান

তারা বলল- এ কুরআন (মক্কা ও তায়েফ এ) দু’ জনপদের কোন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপর কেন অবতীর্ণ হল না? তাইসিরুল

এবং তারা বলেঃ এই কুরআন কেন অবতীর্ণ করা হলনা দুই জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর? মুজিবুর রহমান

And they said, "Why was this Qur'an not sent down upon a great man from [one of] the two cities?" Sahih International

৩১. আর তারা বলে, এ কুরআন কেন নাযিল করা হল না দুই জনপদের কোন মহান ব্যক্তির উপর?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) ওরা বলে, ‘এ কুরআন কেন অবতীর্ণ করা হল না দু’টি জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির ওপর?’ [1]

[1] দু’টি জনপদ বলতে মক্কা ও তায়েফকে বুঝানো হয়েছে। আর প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট মক্কার অলীদ বিন মুগীরা এবং তায়েফের উরওয়া বিন মাসউদ সাক্বাফীর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেউ কেউ আরো কিছু নাম উল্লেখ করেছেন। তবে এর উদ্দেশ্য হল, এমন দু’টি ব্যক্তিত্বের নির্বাচন, যারা হবে পূর্ব থেকেই মহা সম্মান ও পদের অধিকারী, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বিত্তশালী এবং সব-সব গোত্রে গণ্যমান্য। অর্থাৎ, কুরআন যদি অবতীর্ণ হত, তবে দু’টি শহরের মধ্য থেকে এ রকম কোন ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হত, ঐ মুহাম্মাদের উপর নয়, যার ঘর পার্থিব ধন-সম্পদ থেকে শূন্য এবং যে তার জাতির নেতৃত্ব ও সর্দারির পদেও প্রতিষ্ঠিত নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৩ আয-যুখরুফ
৪৩:৩২ اَهُمۡ یَقۡسِمُوۡنَ رَحۡمَتَ رَبِّكَ ؕ نَحۡنُ قَسَمۡنَا بَیۡنَهُمۡ مَّعِیۡشَتَهُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ رَفَعۡنَا بَعۡضَهُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَتَّخِذَ بَعۡضُهُمۡ بَعۡضًا سُخۡرِیًّا ؕ وَ رَحۡمَتُ رَبِّكَ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ ﴿۳۲﴾

তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধিনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা যা সঞ্চয় করে তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালকের রহমত কি তারা বণ্টন করে (যে তাদের মর্জিমত কুরআন নাযিল করতে হবে)? তাদের মাঝে তাদের জীবিকা আমিই বণ্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং মর্যাদায় এককে অন্যের উপর উন্নত করি যাতে একে অপরের সহায়তায় গ্রহণ করতে পারে। তারা যা সঞ্চয় করে, তোমার প্রতিপালকের রহমত তাত্থেকে উত্তম তাইসিরুল

তারা কি তোমার রবের করুণা বন্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে জীবিকা বন্টন করি তাদের পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; এবং তারা যা জমা করে তা হতে তোমার রবের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর। মুজিবুর রহমান

Do they distribute the mercy of your Lord? It is We who have apportioned among them their livelihood in the life of this world and have raised some of them above others in degrees [of rank] that they may make use of one another for service. But the mercy of your Lord is better than whatever they accumulate. Sahih International

৩২. তারা কি আপনার রবের রহমত(১) বণ্টন করে? আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং তাদের একজনকে অন্যের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে; আর আপনার রবের রহমত তারা যা জমা করে তা থেকে উৎকৃষ্টতর।

(১) এখানে রবের রহমত অর্থ তার বিশেষ রহমত, অর্থাৎ নবুওয়াত। [সা’দী, জালালাইন]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) এরা কি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ বণ্টন করে![1] আমিই ওদের মধ্যে জীবিকা বণ্টন করেছি ওদের পার্থিব জীবনে এবং এককে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছি; যাতে ওরা একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে[2] এবং ওরা যা জমা করে, তা হতে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর। [3]

[1] ‘রহমত’ বা অনুগ্রহ-এর মানে নিয়ামত, সম্পদ। আর এখানে এর অর্থ নবুঅত; যা সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ‘ইস্তিফহাম’ (প্রশ্ন) এখানে ‘ইনকার’ (অস্বীকৃতি) এর অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, এ কাজ তাদের নয় যে, তারা প্রতিপালকের নিয়ামতকে -- বিশেষ করে নবুঅতের মত নিয়ামতকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী বণ্টন করবে। বরং এ কাজ কেবল প্রতিপালকের। কারণ, তিনিই সব কিছুর জ্ঞান রাখেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তির সমস্ত অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত। তিনিই ভাল বুঝেন যে, মানুষের মধ্য থেকে নবুঅতের মুকুট কার মাথায় অধিক শোভনীয় হবে এবং স্বীয় অহী ও রিসালাত দানে কাকে ধন্য করতে হবে।

[2] অর্থাৎ, ধনে-মালে, পদমর্যাদায় এবং বুদ্ধি-জ্ঞানে আমি মানুষের মাঝে এই পার্থক্য ও তফাৎ এই জন্য রেখেছি যে, যাতে বেশী মালের অধিকারী ব্যক্তি স্বল্প মালের অধিকারী ব্যক্তির কাছ থেকে, উচ্চ পদের মালিক তার চাইতে নিম্ন পদের মালিকের কাছ থেকে এবং অনেক বেশী জ্ঞান-বুদ্ধির মালিক তার চাইতে কম জ্ঞান-বুদ্ধির মালিকের কাছ থেকে কাজ নিতে পারে। মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ এই কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বজাহানের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যথা সকলেই যদি ধন-মালে, মান-সম্মানে, জ্ঞান-গরিমায় এবং বুদ্ধি-বিবেচনা ও অন্যান্য পার্থিব উপায়-উপকরণে সমান হত, তবে কেউ কারো কাজ করার জন্য প্রস্তুত হত না। অনুরূপ ছোট মানের ও তুচ্ছ মনে করা হয় এমন কাজও কেউ করত না। এ হল মানুষেরই প্রয়োজনীয় বিষয়; যা মহান আল্লাহ প্রত্যেককে পার্থক্য ও তফাতের মাঝে রেখেছেন এবং যার কারণে প্রত্যেক মানুষ অপর মানুষের মুখাপেক্ষী হয়। মানবিক সমস্ত প্রয়োজন কোন একজন মানুষ --তাতে সে যদি কোটিপতিও হয় তবুও --অন্য মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা না নিয়েই সে একাকী পূরণ করতে চাইলেও তা কোন দিন পারবে না।

[3] এই রহমত বা অনুগ্রহ থেকে আখেরাতের সেই সব নিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৪ আদ-দুখান
৪৪:৩ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَكَۃٍ اِنَّا كُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ ﴿۳﴾

নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। আল-বায়ান

আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে, (কেননা) আমি (মানুষকে) সতর্ককারী। তাইসিরুল

আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারাক রাতে, আমিতো সতর্ককারী। মুজিবুর রহমান

Indeed, We sent it down during a blessed night. Indeed, We were to warn [mankind]. Sahih International

৩. নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে(১); নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী।

(১) গ্ৰহণযোগ্য তাফসীরবিদদের মতে এখানে কদরের রাত্ৰি বোঝানো হয়েছে, যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয়। সূরা কদরে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, পবিত্র কুরআন শবে-কদরে নাযিল হয়েছে। এতে বোঝা গেল যে, এখানেও বরকতের রাত্রি বলে শবে-কদরই বোঝানো হয়েছে। এ রাত্রিকে “মোবারক” বলার কারণ এই যে, এ রাত্ৰিতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা পয়গম্বরগণের প্রতি যত কিতাব নাযিল করেছেন, তা সবই রমযান মাসেরই বিভিন্ন তারিখে নাযিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সহীফাসমূহ রমযানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ছয় তারিখে, যাবুর বার তারিখে, ইঞ্জল আঠার তারিখে এবং কুরআন চব্বিশ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর (পঁচিশের রাত্ৰিতে) অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১০৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) নিশ্চয় আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় (আশিসপূত শবেকদর) রাতে;[1] নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। [2]

[1] (لَيْلَةٌ مُبَارَكَةٌ) বরকতময় বা আশিসপূত রাত বলতে (لَيْلَةُ الْقَدْرِ) কদরের রাত (শবেক্বদরকে) বুঝানো হয়েছে। যেমন, অন্যত্র পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, {اِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ} অর্থাৎ, আমি এ কুরআন শবেক্বদরে (মহিয়সী রাতে) অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কদর) আর এই শবেক্বদর রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোন একটি রাত; যেমন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হয় রমযান মাসে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, {شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ} অর্থাৎ, রমযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫) এই আয়াতে কদরের এই রাতকে বরকতময় রাত গণ্য করা হয়েছে। আর এই বরকতময় হওয়াতে সন্দেহই বা কি? প্রথমতঃ এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এ রাতে বহু ফিরিশতা সহ জিবরীল আমীনও অবতরণ করেন। তৃতীয়তঃ সারা বছরে সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলীর ফায়সালা করা হয়। (যে কথা পরে আসছে।) চতুর্থতঃ এই রাতের ইবাদত হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) এর ইবাদতের থেকেও উত্তম। শবেকদর বা বরকতময় রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হল, এই রাত থেকে নবী (সাঃ)-এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয়। অর্থাৎ, সর্বপ্রথম এই রাতেই তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অথবা অর্থ হল, এই রাতে ‘লাওহে মাহফুয’ থেকে কুরআনকে ‘বায়তুল ইয্‌যাহ’তে অবতীর্ণ করা হয়, যা নিকটতম আসমানে অবস্থিত। অতঃপর সেখান থেকে প্রয়োজন ও ঘটনাঘটনের চাহিদা অনুযায়ী ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে নবী করীম (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়। কেউ কেউ لَيلَة مُبارَكَة ‘বরকতময় রাত’ বলতে শা’বান মাসের ১৫ তারীখের রাত (শবেবরাত)-কে বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। যখন কুরআনের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা এ কথা সুসাব্যস্ত যে, কুরআন শবেক্বদরে অবতীর্ণ হয়েছে, তখন এ থেকে শবেবরাত অর্থ নেওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। তাছাড়া শবেবরাত (শা’বান মাসের ১৫ তারীখের রাত) এর ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা এসেছে, যাতে এ রাতের মাহাত্ম্য ও ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে অথবা যাতে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলা হয়েছে, সে সমস্ত বর্ণনাগুলো সনদের দিক দিয়ে জাল অথবা দুর্বল। অতএব সে (বর্ণনা)গুলো কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনার মোকাবেলা কিভাবে করতে পারে?

[2] অর্থাৎ, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে শরয়ী উপকার-অপকার সম্পর্কে অবহিত ও সতর্ক করা, যাতে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৪ আদ-দুখান
৪৪:৪ فِیۡهَا یُفۡرَقُ كُلُّ اَمۡرٍ حَكِیۡمٍ ۙ﴿۴﴾

সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আল-বায়ান

এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয় তাইসিরুল

এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় – মুজিবুর রহমান

On that night is made distinct every precise matter - Sahih International

৪. সে রাতে প্রত্যেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরকৃত হয়(১),

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ কুরআন অবতরণের রাত্রি অর্থাৎ, শবে-কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয়, যা পরবর্তী শবে-কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এ বছর কারা কারা জন্মগ্রহণ করবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কি পরিমাণ রিযিক দেয়া হবে। মাহদভী বলেন এর অর্থ এই যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরে পূর্বাহ্নে, স্থিরীকৃত সকল ফয়সালা এ রাত্ৰিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অৰ্পণ করা হয়। কেননা, কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা এসব ফয়সালা মানুষের জন্মের পূর্বেই সৃষ্টিলগ্নে লিখে দিয়েছেন। অতএব, এ রাত্রিতে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে, যে ফেরেশতাগণের মাধ্যমে ফয়সালা ও তাকদীর প্রয়োগ করা হয়, এ রাত্ৰিতে সারা বছরের বিধানাবলী তাদের কাছে অৰ্পণ করা হয়। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তুমি কোন মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৪৮-৪৪৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। [1]

[1] يُفْرَقُ، يُفَصَلُ وَيُبَيَّنُ ফায়সালা করা হয় এবং এ কাজকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ফিরিশতাকে সোপর্দ করে দেওয়া হয়। حَكِيْمٍ হিকমতে পরিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রতিটি কাজই হিকমতে পরিপূর্ণ হয়। অথবা অর্থ, مُحْكَمٍ (মজবুত, পাকাপোক্ত) যাতে কোন পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। সাহাবা ও তাবেঈন থেকে এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে, এই রাতে আগামী বছরের জীবন-মরণ ও জীবিকার উপায়-উপকরণের ফায়সালা লাওহে মাহফূয থেকে অবতীর্ণ করে ফিরিশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৪ আদ-দুখান
৪৪:৫ اَمۡرًا مِّنۡ عِنۡدِنَا ؕ اِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ ۚ﴿۵﴾

আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী। আল-বায়ান

আমার আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী, তাইসিরুল

আমার আদেশক্রমে; আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি – মুজিবুর রহমান

[Every] matter [proceeding] from Us. Indeed, We were to send [a messenger] Sahih International

৫. আমাদের পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, নিশ্চয় আমরা রাসূল প্রেরণকারী

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) আমার আদেশক্রমে, [1] আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি।

[1] অর্থাৎ, সমস্ত ফায়সালা আমার নির্দেশ, অনুমতি এবং আমার নির্ধারিত ভাগ্য ও ইচ্ছা অনুসারে হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৪ আদ-দুখান
৪৪:৬ رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّكَ ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ۙ﴿۶﴾

তোমার রবের কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্বরূপ তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল

তোমার রবের অনুগ্রহ স্বরূপ, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ – মুজিবুর রহমান

As mercy from your Lord. Indeed, He is the Hearing, the Knowing. Sahih International

৬. আপনার রবের রহমতস্বরূপ: নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ—

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) এ তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে করুণা;[1] নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

[1] অর্থাৎ, গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করার সাথে সাথে রসূলগণকে প্রেরণ করা আমার করুণা ও রহমতেরই একটি অংশ। যাতে তারা আমার অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে এবং আমার যাবতীয় বিধি-বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। এইভাবে মানুষের আধিভৌতিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করার সাথে সাথে আমি আমার রহমতে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন পূরণ হওয়ারও সুব্যবস্থা করেছি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫:১২ اَللّٰهُ الَّذِیۡ سَخَّرَ لَكُمُ الۡبَحۡرَ لِتَجۡرِیَ الۡفُلۡكُ فِیۡهِ بِاَمۡرِهٖ وَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِهٖ وَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿ۚ۱۲﴾

আল্লাহ, যিনি সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন যাতে তাঁরই আদেশক্রমে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করে বেড়াতে পার এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পার। আল-বায়ান

আল্লাহ- যিনি সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন যাতে তাঁর হুকুমে তোমাদের নৌযানসমূহ তাতে চলাচল করতে পারে, আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং তোমরা (তাঁর) শোকর আদায় কর। তাইসিরুল

আল্লাহই সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। মুজিবুর রহমান

It is Allah who subjected to you the sea so that ships may sail upon it by His command and that you may seek of His bounty; and perhaps you will be grateful. Sahih International

১২. আল্লাহ, যিনি সাগরকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যেন তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে। আর যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার(১) এবং যেন তোমরা (তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

(১) পবিত্র কুরআনে ‘অনুগ্রহ তালাশ করা’ এর অর্থ সাধারণত জীবিকা উপার্জনের চেষ্টা প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। এখানে এরূপ অৰ্থ হতে পারে যে, তোমাদেরকে সমুদ্রে জাহাজ চালনার শক্তি দেয়া হয়েছে, যাতে তোমরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পার। এরূপ অৰ্থও সম্ভবপর যে, সমুদ্রে আমি অনেক উপকারী বস্তু সৃষ্টি করে সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা সেগুলো খোজ করে উপকৃত হও। [দেখুন: তাবারী, সাদী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) আল্লাহ তো সাগরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন,[1] যাতে তাঁর আদেশে তাতে জলযানসমূহ চলাচল করতে পারে[2] এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার[3] এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। [4]

[1] অর্থাৎ, তাকে এমন বানিয়ে দিয়েছেন যেন তার উপর দিয়ে তোমরা নৌকা ও জল-জাহাজের মাধ্যমে সফর করতে পার।

[2] অর্থাৎ, সমুদ্রে নৌকা ও জাহাজসমূহের গমনাগমন তোমাদের কৃতিত্ব ও দক্ষতার ফল নয়, বরং এটা চলে আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর ইচ্ছায়। তা নাহলে তিনি ইচ্ছা করলে সমুদ্র-তরঙ্গে এমন উত্তাল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন যে, কোন নৌকা ও জাহাজ তার পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারবে না। যেমন কখনো কখনো তিনি তাঁর মহাশক্তির (কিঞ্চিৎ) বিকাশ ঘটানোর জন্য এ রকম করে থাকেন। যদি অব্যাহতভাবে তরঙ্গ উত্তাল অবস্থায় থাকে, তবে তোমরা কখনোও সমুদ্রে সফর করার সুযোগই পাবে না।

[3] অর্থাৎ, সমুদ্র-পথে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে, সমুদ্রে ডুব মেরে মুক্তা-প্রবালাদি ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস বের করে এবং সমুদ্রস্থিত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) শিকার করে।

[4] এ সব কিছুই এই জন্য করেছেন যে, যাতে তোমরা এই নিয়ামতসমূহের উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যে নিয়ামতসমূহ সমুদ্রকে তোমাদের আয়ত্তে করে দেওয়ার ফলে অর্জিত হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫:২০ هٰذَا بَصَآئِرُ لِلنَّاسِ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّقَوۡمٍ یُّوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۰﴾

এ কুরআন মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত। আল-বায়ান

এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরূপ। তাইসিরুল

এই কুরআন মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও রাহমাত। মুজিবুর রহমান

This [Qur'an] is enlightenment for mankind and guidance and mercy for a people who are certain [in faith]. Sahih International

২০. একুরআন মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা এবং হেদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) এ (কুরআন) মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল[1] এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও করুণা। [2]

[1] অর্থাৎ, সেই দলীল-সমষ্টি যা দ্বীনের বিধি-বিধান সংবলিত এবং যার সাথে মানুষের যাবতীয় চাহিদা ও প্রয়োজনাদি সম্পৃক্ত। (এটি মানুষের জন্য একটি গাইডবুক ও জীবন-সংবিধান।)

[2] অর্থাৎ, ইহকালে সৎপথ দেখায় এবং পরকালে আল্লাহর করুণার অধিকারী বানায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৪১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 পরের পাতা »