আর যমীনে আছে পরস্পর পাশাপাশি ভূখন্ড, আঙ্গুর-বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ, যেগুলোর মধ্যে কিছু একই মূল থেকে উদগত আর কিছু ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত, যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির তুলনায় উৎকৃষ্ট করে দেই, এতে নিদর্শন রয়েছে ঐ কওমের জন্য যারা বুঝে। আল-বায়ান
যমীনে আছে বিভিন্ন ভূখন্ড যা পরস্পর সংলগ্ন, আছে আঙ্গুরের বাগান, শস্য ক্ষেত, খেজুর গাছ- একই মূল হতে উদ্গত আর একই মূল থেকে উদগত নয়- যদিও একই পানিতে সিক্ত। খাওয়ার স্বাদে এদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাইসিরুল
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড; ওতে আছে আঙ্গুর-কানন, শষ্যক্ষেত, একাধিক শির বিশিষ্ট অথবা এক শির বিশিষ্ট খেজুর-বৃক্ষ, সিঞ্চিত একই পানিতে; এবং ফল হিসাবে ওগুলির কতককে কতকের উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি, অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন। মুজিবুর রহমান
And within the land are neighboring plots and gardens of grapevines and crops and palm trees, [growing] several from a root or otherwise, watered with one water; but We make some of them exceed others in [quality of] fruit. Indeed in that are signs for a people who reason. Sahih International
৪. আর যমীনে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড(১), আঙ্গুর বাগান, শস্যক্ষেত্র, একই মূল থেকে উদগত বা ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত খেজুর গাছ(২) যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর স্বাদ-রূপের ক্ষেত্রে সেগুলোর কিছু সংখ্যককে আমরা কিছু সংখ্যকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি।(৩) নিশ্চয় বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।(৪)
(১) এখানে আল্লাহ তা'আলা নতুন করে অন্য আরেক প্রকার নিদর্শন পেশ করছেন। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ সারা পৃথিবীকে তিনি একই ধরনের একটি ভূখণ্ড বানিয়ে রেখে দেননি। বরং তার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য ভূখণ্ড, এ ভূখণ্ডগুলো পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট, শক্তি ও যোগ্যতা এবং উৎপাদনে পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। এ গুলোর কোনটি এমন যে, তাতে শস্য উৎপন্ন হয় আবার কোন কোনটি একেবারে অকেজো ভূমি যাতে কোন কিছুই উৎপন্ন হয়না অথচ এ দু'ধরনের ভূমিই পাশাপাশি অবস্থিত। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
এ বিভিন্ন ভূখণ্ডের সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে নানা প্রকার বিভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমান জ্ঞান ও কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যেতে পারে না। এ ভুখণ্ড লাল, অপরটি সাদা, কোনটি হলুদ, কোনটি মিহি, অথচ সবগুলোই পাশাপাশি। প্রতিটি তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আছে। এসব কিছুই প্রমাণ করছে যে, একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ক্ষমতাধর সত্তা রয়েছেন যিনি এগুলো করেছেন। তিনিই একমাত্র ইলাহ, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই একমাত্র রব, তিনি ব্যতীত আর কোন রব নেই। [ইবন কাসীর] তাছাড়া কোন কোন ভূমি পাশাপাশি নয় অথচ তাদের মধ্যে একই ধরণের শক্তি, যোগ্যতা পাওয়া যায়। এখানে পাশাপাশি নয় এ কথাটি উহ্য থাকতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]
(২) কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয় আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক গাছ বের হয়। [ফাতহুল কাদীর]
(৩) এ আয়াতে আল্লাহর তাওহীদ এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শনাবলী দেখানো ছাড়া আরো একটি সত্যের দিকেও সূক্ষ্ম ইশারা করা হয়েছে। এ সত্যটি হচ্ছে, আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহানের কোথাও এক রকম অবস্থা রাখেননি। একই পৃথিবী কিন্তু এর ভূখণ্ডগুলোর প্রত্যেকের বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন, স্বাদ, গন্ধ, রূপ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। একই মূল থেকে দুটি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজের একক বৈশিষ্টের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে অবশ্যই এতে একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন সত্তার কার্য সক্রিয় আছে দেখতে পাবে। যিনি তার অসীম ক্ষমতায় এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেছেন সেভাবে সৃষ্টি করেছেন। এজন্যই আল্লাহ্ তাআলা সবশেষে বলেছেন যে, নিশ্চয় বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য এতে রয়েছে প্রচুর নিদর্শন। [ইবন কাসীর]
(৪) বলা হচ্ছে, এই যে পরস্পর পাশাপাশি দুটি ভূমিতে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন প্রকার ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেন, তন্মধ্যে একই ফল একই জমিতে একই পানি দ্বারা উৎপন্ন করি তারপরও সেটার স্বাদ দু'রকমের হয়। একটি মিষ্ট অপরটি টক। একটি অত্যন্ত উন্নতমানের অপরটি অনুন্নত পর্যায়ের। একটি চিত্তাকর্ষক অপরটি তেমন নয়। এসব কিছুতে কেউ চিন্তা, গবেষণা ও বিবেক খাটালে যে কেউ অবশ্যই মেনে নিতে বাধ্য হবে যে, এর বিভিন্নতার প্রকৃত কারণ এক মহান প্রজ্ঞাময় সত্তার শক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা, সাধারণত: যে কারণে ফল-ফলাদিতে পার্থক্য সূচিত হয় তা দুটি। এক, উৎপন্নস্থানের ভিন্নতা, দুই পানির গড়মিল। কিন্তু যদি জমি ও পানি একই প্রকার হয়, তারপর যদি সেটাতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা ও ফল পরিলক্ষিত হয় তবে বিবেকবান মাত্রই এটা বলতে বাধ্য হবে যে, এটা সেই অপার শক্তি ও আশ্চর্যজনক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর]
মুজাহিদ বলেন, এটা মূলত: আদম সন্তানদের জন্য একটি উদাহরণ, তাদের মধ্যে নেককার ও বদকার হয়েছে অথচ তাদের পিতা একজনই। হাসান বসরী বলেন, এ উদাহরণটি আল্লাহ তা'আলা আদম সন্তানদের হৃদয়ের জন্য পেশ করেছেন। কারণ, যমীন মহান আল্লাহর হাতে একটি কাদামাটির পিণ্ড ছিল। তিনি সেটাকে বিছিয়ে দিলেন, ফলে সেটা পরস্পর পাশাপাশি টুকরায় পরিণত হলো, তারপর তাতে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হলো, ফলে তা থেকে বের হলো, ফুল, গাছ ফল ও উদ্ভিদ। আর এ মাটির কোনটি হল খারাপ, লবনাক্ত ও অস্বচ্ছ। অথচ এগুলো সবই একই পানি দিয়ে সিক্ত হয়েছে। অনুরূপভাবে মানুষও আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
অতঃপর আসমান থেকে তাদের জন্য স্মরণিকা (কিতাব) নাযিল হলো, কিছু অন্তর নরম হলো এবং বিনীত হলো, আর কিছু অন্তর কঠোর হলো এবং গাফেল হলো। হাসান বসরী বলেন, কুরআনের কাছে কেউ যখন বসে তখন সে সেখান থেকে বেশী বা কম কিছু না নিয়ে বের হয় না। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর আমরা নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৮২] এতে অবশ্যই বিবেকবানদের জন্য প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। [বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূ-খন্ড;[1] ওতে আছে আঙ্গুর-কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক ফেঁকড়া-বিশিষ্ট অথবা ফেঁকড়াহীন খেজুর বৃক্ষ,[2] যা একই পানিতে সিঞ্চিত হয়ে থাকে। ফল হিসাবে ওগুলির কতককে কতকের উপর আমি উৎকৃষ্টতা দিয়ে থাকি,[3] অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।
[1] مُتَجَاوِرَاتٌ এক অপরের নিকটবর্তী ও পাশাপাশি। অর্থাৎ, ভূখন্ডের একটি ক্ষেত্র শস্য-শ্যামল ও উর্বর, যা অত্যধিক ফসল উৎপন্ন করে। আর তারই পাশাপাশি অনুর্বর ভূমি রয়েছে যাতে কোন প্রকারের ফসল উৎপন্ন হয় না।
[2] صِنْوَانٌ এর একটি অর্থ মিলিত এবং غَيْرُ صِنْوَانٍএর অর্থ পৃথক পৃথক করা হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, صِنْوَانٌ একটি বৃক্ষ যার শাখা ও ফেঁকড়া রয়েছে যেমন ডালিম, ডুমুর এবং কোন কোন খেজুর গাছ। আর غَيْرُ صِنْوَانٍ যা উক্ত প্রকারের নয় বরং একটিই কান্ড বিশিষ্ট (যেমনঃ খেজুর, তাল, সুপারী ইত্যাদি)।
[3] অর্থাৎ মাটিও এক, পানি ও আলো-বাতাসও এক; কিন্তু ফল ও শস্যাদি বিভিন্ন প্রকারের এবং স্বাদ ও আকার-প্রকারও এক অপর থেকে ভিন্ন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছি যে, ‘তুমি তোমার কওমকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আন এবং আল্লাহর দিবসসমূহ* তাদের স্মরণ করিয়ে দাও’। নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। আল-বায়ান
আর অবশ্যই আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম আর বলেছিলাম, তোমার জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আন, আর তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে ঘটিত অতীতের ঘটনাবলী দিয়ে উপদেশ দাও। এতে প্রত্যেক পরম সহিষ্ণু ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অবশ্যই নিদর্শনসমূহ রয়েছে। তাইসিরুল
মূসাকে আমি আমার নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন কর, এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি দ্বারা উপদেশ দাও, এতেতো নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। মুজিবুর রহমান
And We certainly sent Moses with Our signs, [saying], "Bring out your people from darknesses into the light and remind them of the days of Allah." Indeed in that are signs for everyone patient and grateful. Sahih International
* দিবসসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য ইতঃপূর্বের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ।
৫. আর অবশ্যই আমরা মূসাকে আমাদের নিদর্শনসহ পাঠিয়েছিলাম(১) এবং বলেছিলাম, আপনার সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসুন(২), এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলোর দ্বারা উপদেশ দিন।(৩) এতে তো নিদর্শন(৪) রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।(৫)
(১) এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ আমি মূসা আলাইহিস সালাম-কে আয়াত দিয়ে প্রেরণ করেছি, যাতে তিনি স্বজাতিকে কুফর ও গোনাহর অন্ধকার থেকে দাওয়াত দিয়ে ঈমান ও আনুগত্যের আলোতে নিয়ে আসে। [বাগভী] এখানে আয়াত শব্দের অর্থ তাওরাতের আয়াতও হতে পারে। কারণ, সেগুলো নাযিল করার উদ্দেশ্যই ছিল সত্যের আলো ছড়ানো। আয়াতের অন্য অর্থ মু'জিযাও হয়। এখানে এ অর্থও উদ্দিষ্ট হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] মুজাহিদ বলেন, এখানে নয়টি বিশেষ নিদর্শন উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] মূসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ্ তা'আলা ন’টি মু'জিযা বিশেষভাবে দান করেন।
(২) এ আয়াতে ‘কাওম’ তথা “সম্প্রদায়” শব্দ ব্যবহার করে নিজ কওমকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়বস্তুটিই যখন আলোচ্য সূরার প্রথম আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বর্ণনা করা হয়েছে, তখন সেখানে ‘কওম’ শব্দের পরিবর্তে ناس (মানুষ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ (لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ) এতে ইঙ্গিত আছে যে, মূসা আলাইহিস সালাম শুধু বনী ইসরাঈল ও মিসরীয় জাতির প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন, অপরদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত সমগ্র মানুষের জন্য।
(৩) এরপর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালাম-কে নির্দেশ দেন যে, স্বজাতিকে 'আইয়্যামুল্লাহ' স্মরণ করান। কিন্তু আইয়্যামুল্লাহ কি? أيام শব্দটি يوم এর বহুবচন, এর অর্থ দিন। (أَيَّامِ اللَّهِ) শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন শাস্তির দিনগুলো, যেমন কাওমে নূহ, আদ ও সামূদের উপর আযাব নাযিল হওয়ার ঘটনাবলী। [ফাতহুল কাদীর] এসব ঘটনায় বিরাট জাতিসমূহের ভাগ্য ওলট-পালট হয়ে গেছে এবং তারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আইয়্যামুল্লাহ স্মরণ করানোর উদ্দেশ্য হবে, এসব জাতির কুফরের অশুভ পরিণতির ভয় প্রদর্শন করা এবং হুশিয়ার করা। ‘আইয়্যামুল্লাহ’র অপর অর্থ আল্লাহ তা'আলার নেয়ামত ও অনুগ্রহও হয়।
এ জাতির উপর আল্লাহর যেসব নেয়ামত দিবারাত্র বর্ষিত হয় এবং যেসব বিশেষ নেয়ামত তাদেরকে দান করা হয়েছে, সেগুলো স্মরণ করিয়ে আল্লাহর আনুগত্য ও তাওহীদের দিকে আহবান করুন; উদাহরণতঃ তীহ উপত্যকায় তাদের মাথার উপর মেঘের ছায়া, আহারের জন্য মান্না ও সালওয়ার অবতরণ, পানীয় জলের প্রয়োজনে পাথর থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া ইত্যাদি। [ইবন কাসীর] এগুলো স্মরণ করানোর লক্ষ্য হবে এই যে, ভাল মানুষকে যখন কোন অনুগ্রহদাতার অনুগ্রহ স্মরণ করানো হয়, তখন সে বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করতে লজ্জা বোধ করে। এখানে দু’টি অর্থই উদ্দেশ্য হতে পারে। বিশেষ করে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “একদিন মূসা আলাইহিসসালাম তার কাওমকে আইয়ামুল্লাহ বিপদাপদ।” [মুসলিমঃ ২৩৮০]
(৪) এখানে آيات -এর অর্থ নিদর্শন ও প্রমাণাদি। অর্থাৎ এসব ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে এমন সব নির্দশন রয়েছে যার মাধ্যমে এক ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদ ও তার ক্ষমতাবান হওয়ার সত্যতা ও নির্ভুলতার প্রমাণ পেতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] এ সংগে এ সত্যের পক্ষেও অসংখ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারে যে, প্রতিদানের বিধান পুরোপুরি হক এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য অন্য একটি জগত অর্থাৎ আখেরাতের জগত অপরিহার্য।
(৫) আয়াতে বর্ণিত صبار শব্দটি صبر থেকে مبالغة এর পদ। এর অর্থ অধিক সবরকারী। شكور শব্দটি شكر থেকে مبالغة এর পদ। এর অর্থ অধিক কৃতজ্ঞ। [ফাতহুল কাদীর] বাক্যের অর্থ এই যে, অবিশ্বাসীদের শাস্তি ও আযাব সম্পর্কিত হোক অথবা আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ সম্পর্কিত হোক, উভয় অবস্থাতে অতীত ঘটনাবলীতে আল্লাহর অপার শক্তি ও অসীম রহস্যের বিরাট শক্তি বিদ্যমান ঐ ব্যক্তির জন্য, যে অত্যন্ত সবরকারী এবং অধিক শোকরকারী। সংক্ষেপে শোকর ও কৃতজ্ঞতার স্বরূপ এই যে, আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতকে তার অবাধ্যতা এবং হারাম ও অবৈধ কাজে ব্যয় না করা, মুখেও আল্লাহ্ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং স্বীয় কাজকর্মকেও তার ইচ্ছার অনুগামী করা। সবরের সারমর্ম হচ্ছে স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাপারাদিতে অস্থির না হওয়া, কথায় ও কাজে অকৃতজ্ঞতার প্রকাশ থেকে বেঁচে থাকা এবং দুনিয়াতেও আল্লাহর রহমত আশা করা, আর আখেরাতে উত্তম পুরস্কার প্রাপ্তিতে বিশ্বাস রাখা। [দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, উদ্দাতুস সাবেরীন]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) মূসাকে আমি আমার নিদর্শনাবলীসহ প্রেরণ করেছিলাম (এবং বলেছিলাম,) তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনো[1] এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি স্মরণ করিয়ে দাও।[2] এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। [3]
[1] অর্থাৎ, হে মুহাম্মাদ! যেমন আমি তোমাকে তোমার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছি এবং কিতাব দিয়েছি যাতে তুমি স্বীয় সম্প্রদায়কে কুফরী ও শিরকের অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোর দিকে বের করে আনো, তেমনই আমি মূসাকে মু’জিযা ও দলীল-প্রমাণ দিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছি, যেন সে তাদেরকে কুফরী ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে ঈমানের আলো দান করে। আয়াতে উদ্দেশ্য হল সেই সব মুজিযা; যা মূসা (আঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিল অথবা সেই ন’টি মু’জিযা যার উল্লেখ সূরা বানী ইস্রাঈলে করা হয়েছে।
[2] أيام الله (আল্লাহর দিনগুলি) এর অর্থ আল্লাহর সেসব অনুগ্রহ, যা বানী ইসরাঈলের প্রতি করা হয়েছিল, যেসবের বিবরণ পূর্বে কয়েকবার এসেছে। অথবা أيام এর অর্থ ঘটনাবলী। অর্থাৎ ঐসব ঘটনা তাদেরকে স্মরণ করাও, যা ঘটতে তারা দেখেছে এবং যাতে তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুকম্পা অবতীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটির বর্ণনা এখানেও আসছে।
[3] ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা দুটি মহৎ গুণ; যার উপর নির্ভর করে ঈমান, এজন্য এখানে এ দু’টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ শব্দ দু’টি অতিশয়োক্তি রূপে এসেছে। صبّار অত্যধিক ধৈর্যশীল شكور অত্যধিক কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতার পূর্বে ধৈর্যের উল্লেখ এই কারণে করা হয়েছে যে কৃতজ্ঞতা ধৈর্যের ফলাফল। হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘মুমিনদের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। মহান আল্লাহ তার ক্ষেত্রে যা কিছুরই ফায়সালা করুন, তা তার জন্য মঙ্গলজনক। যদি তাকে দুঃখ পৌঁছে এবং ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে এটাও তার পক্ষে উত্তম। আর যদি তাকে সুখ পৌঁছে এবং সে এর উপর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাহলে এটাও তার পক্ষে উত্তম। (মুসলিম, কিতাবুয যুহ্দ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তদ্বারা তিনি ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে যে সম্প্রদায় কথা শোনে তাদের জন্য। আল-বায়ান
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেন। এতে ঐ সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন আছে যারা লক্ষ্য করে শুনে। তাইসিরুল
আর আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর তা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর সজীব করেছেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই কওমের জন্যা যারা শুনে। মুজিবুর রহমান
And Allah has sent down rain from the sky and given life thereby to the earth after its lifelessness. Indeed in that is a sign for a people who listen. Sahih International
৬৫. আর আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা কথা শোনে।(১)
(১) অর্থাৎ যেভাবে আল্লাহ্ তা'আলা কুরআন দ্বারা কুফরীর কারণে মৃত অন্তরসমূহকে জীবিত করেন। সেভাবে তিনি যমীনকে তার মৃত্যুর পর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে জীবিত করেন। [ইবন কাসীর] এর দ্বারা তিনি একদিকে তার অপার শক্তি, তাওহীদের উপর প্রমাণ পেশ করছেন। কারণ, তাদের উপাস্যগুলো এটা করতে সক্ষম নয়। [কুরতুবী] অপর দিকে আল্লাহ যে মৃত্যুর পর সমস্ত মানুষকে পুনর্বার জীবিত করবেন সেটার পক্ষেও প্রমাণ পাওয়া গেল। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর তার দ্বারা তিনি ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন; অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা শ্রবণ করে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর নিশ্চয় চতুষ্পদ জন্তুতে রয়েছে তোমাদের জন্য শিক্ষা। তার পেটের ভেতরের গোবর ও রক্তের মধ্যখান থেকে তোমাদেরকে আমি দুধ পান করাই, যা খাঁটি এবং পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছ্যন্দকর। আল-বায়ান
তোমাদের জন্য গবাদি পশুতেও অবশ্যই শিক্ষা নিহিত আছে। তোমাদেরকে পান করাই ওদের পেটের গোবর আর রক্তের মাঝ থেকে বিশুদ্ধ দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্য খুবই উপাদেয়। তাইসিরুল
অবশ্যই (গৃহপালিত) চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে; ওগুলির উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে আমি পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। মুজিবুর রহমান
And indeed, for you in grazing livestock is a lesson. We give you drink from what is in their bellies - between excretion and blood - pure milk, palatable to drinkers. Sahih International
৬৬. আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তার পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে(১) তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর।
(১) গোবর ও রক্তের মাঝখান দিয়ে পরিস্কার দুধ বের করা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ জন্তুর ভক্ষিত ঘাস তার পাকস্থলীতে একত্রিত হলে পাকস্থলী তা সিদ্ধ করে। পাকস্থলীর এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যের বিষ্ঠা নীচে বসে যায় এবং দুধ উপরে থেকে যায়। দুধের উপরে থাকে রক্ত। এরপর যকৃত এই তিন প্রকার বস্তুকে পৃথকভাবে তাদের স্থানে ভাগ করে দেয়, রক্ত পৃথক করে রগের মধ্যে চালায় এবং দুধ পৃথক করে জন্তুর স্তনে পৌছে দেয়। এখন পাকস্থলীতে শুধু বিষ্ঠা থেকে যায়, যা গোবর হয়ে বের হয়ে আসে। [ইবন কাসীর] প্রকৃতিতে এমন কে আছে যে চতুষ্পদ জন্তুরা যে খাবার খায়, যে পানীয় গ্রহণ করে সেটাকে দুধে রুপান্তরিত করতে পারে? [সা’দী] এ আয়াত থেকে আরও জানা গেল যে, সুস্বাদু ও উপাদেয় খাদ্য ব্যবহার করা দ্বীনদারীর পরিপন্থী নয়। [কুরতুবী]
তবে শর্ত এই যে, হালাল পথে উপার্জন করতে হবে এবং অপব্যয় যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন আহার করবে তখন বলবেঃ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ وَفي رِوَايَةٍ: وَارْزُقْنٰا خَيْراً مِنْهُ (অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এতে বরকত দিন এবং ভবিষ্যতে আরও উত্তম খাদ্য দিন। অন্য বর্ণনায়, ভবিষ্যতে আরও উত্তম রিযিক দিন।) আর যখন তোমাদেরকে দুধ পান করানো হয়, তখন বলবে, اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন এবং আরো বেশী দান করুন।) (এর চাইতে উত্তম খাদ্য চাওয়া হয়নি।) কারণ, মানুষের খাদ্য তালিকায় দুধের চাইতে উত্তম কোন খাদ্য নেই। [আবু দাউদঃ ৩৭৩০, তিরমিযীঃ ৩৪৫৫, ইবনে মাজাহঃ ৩৩২২] তাই আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মানুষ ও জন্তুর প্রথম খাদ্য করেছেন দুধ, যা মায়ের স্তন্য থেকে সে লাভ করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) অবশ্যই (গৃহপালিত) চতুষ্পদ জন্তুর[1] মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে; ওগুলির উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে আমি পান করাই বিশুদ্ধ দুধ; যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।[2]
[1] أنعام (গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু) বলতে উট, গরু, ছাগল ও ভেঁড়াকে বুঝানো হয়েছে।
[2] এই চতুষ্পদ জন্তুরা যা কিছু খায় তা পেটে যায়, আর তা থেকে দুধ, রক্ত, গোবর ও প্রস্রাব তৈরী হয়। রক্ত শিরা-উপশিরায়, দুধ স্তনে, অনুরূপ গোবর ও প্রস্রাব নিজ নিজ জায়গায় পৌঁছে যায়। দুধে না রক্তের মিশ্রণ থাকে, আর না গোবর ও প্রস্রাবের দুর্গন্ধ; বরং তা নির্মল সাদা ও পরিষ্কার হয়ে বের হয় এবং তা পানকারীর জন্য হয় সুস্বাদু।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে। আল-বায়ান
আর খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। মুজিবুর রহমান
And from the fruits of the palm trees and grapevines you take intoxicant and good provision. Indeed in that is a sign for a people who reason. Sahih International
* ইমাম তাবারী বলেন, আয়াতটি মাদক নিষিদ্দ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
৬৭. আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক(১); নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।(২)
(১) এ আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, খেজুর ও আঙ্গুরের ফলসমূহের মধ্য থেকেও মানুষ তার খাদ্য ও লাভজনক সামগ্রী তৈরী করে। এর একটি হলো- মাদকদ্রব্য, যাকে মদ্য ও শরাব বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়টি হলো উত্তম জীবনোপকরণ অর্থাৎ উত্তম রিযক। যেমন, খেজুর ও আঙ্গুরের তাজা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় অথবা শুকিয়ে তাকে মজবুতও করে নেয়া যায়। সুতরাং মর্মার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা তার অপার শক্তিবলে খেজুর ও আঙ্গুর ফল মানুষকে দান করেছেন এবং তদ্বারা খাদ্য ইত্যাদি প্রস্তুত করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। [দেখুন, সা’দী]
(২) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে سكر এর অর্থ মাদকদ্রব্য, যা নেশা সৃষ্টি করে। আলোচ্য আয়াতটি সর্বসম্মতিক্রমে মক্কায় নাযিল হয়েছে। মদের নিষেধাজ্ঞা এর পরে মদীনায় নাযিল হয়েছে। আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময় মদ নিষিদ্ধ ছিল না। মুসলিমরা সাধারণভাবে তা পান করত। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৭) আর খেজুর ও আঙ্গুর ফল হতে তোমরা মদ[1] ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
[1] এই আয়াত তখন অবতীর্ণ হয় যখন মদ হারাম হয়নি, সেই জন্য হালাল (পবিত্র) জিনিসের সাথে তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এতে سكرا এর পর رزقا حسنا এসেছে যার মধ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে মদ উত্তম খাদ্য নয়। তাছাড়া এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। যার মধ্যে মদ অপছন্দনীয় পানীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মদীনায় অবতীর্ণ সূরাগুলিতে ধীরে ধীরে তা হারাম করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার রব মৌমাছিকে ইংগিতে জানিয়েছে যে, ‘তুমি পাহাড়ে ও গাছে এবং তারা যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে নিবাস বানাও।’ আল-বায়ান
তোমার প্রতিপালক মৌমাছির প্রতি এলহাম করেছেন যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে আর উঁচু চালে বাসা তৈরি কর। তাইসিরুল
তোমার রাব্ব মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেনঃ তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়, বৃক্ষ এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। মুজিবুর রহমান
And your Lord inspired to the bee, "Take for yourself among the mountains, houses, and among the trees and [in] that which they construct. Sahih International
৬৮. আর আপনার রব মৌমাছিকে তার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন(১), ঘর তৈরী কর পাহাড়ে, গাছে ও মানুষ যে মাচান তৈর করে তাতে;
(১) অহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, এমন সূক্ষ্ম ও গোপন ইশারা, যা ইশারাকারী ও ইশারা গ্রহনকারী ছাড়া তৃতীয় কেউ টের পায় না। এ সম্পর্কের ভিত্তিতে এ শব্দটি ইলকা বা মনের মধ্যে কোন কথা নিক্ষেপ করা ও ইলহাম বা গোপনে শিক্ষা ও উপদেশ দান করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে ওহী করার অর্থ ইলহাম, হিদায়াত ও ইরশাদ। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৮) তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে প্রত্যাদেশ[1] করেছেন যে, তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে।
[1] وحي থেকে এখানে ইলহাম (অন্তরে প্রক্ষেপণ) বা এমন জ্ঞান-বুদ্ধি যা নিজ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রত্যেক জীবকে দান করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আল-বায়ান
অতঃপর প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের (শিখানো) সহজ পদ্ধতি অনুসরণ কর। এর পেট থেকে রং-বেরং এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য আছে আরোগ্য। চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে। তাইসিরুল
এর পর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর। ওর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিষেধক। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। মুজিবুর রহমান
Then eat from all the fruits and follow the ways of your Lord laid down [for you]." There emerges from their bellies a drink, varying in colors, in which there is healing for people. Indeed in that is a sign for a people who give thought. Sahih International
৬৯. এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু খাও, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর(১)। তার পেট থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন রং এর পানীয়(২); যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য(৩)। নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন।(৪)
(১) 'রবের সহজ পথ’ এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, তুমি অনুগত হয়ে সে পথে চল যে পথ তোমার রব তোমাকে শিখিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন। রবের রাস্তা বলা হয়েছে এজন্যে যে, সে রবই তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ পথে চলা শিখিয়েছেন। সুতরাং তুমি তোমার রবের শিখানো পথগুলোতে বিভিন্ন স্থানে রিযিকের খোঁজে বেরিয়ে পড়। পাহাড়ে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! তুমি যা খেয়েছ তা তোমার রবের নির্দেশক্রমে ও তাঁর শক্তিতে তোমার শরীরের মধ্য দিয়ে মধু তৈরীর প্রক্রিয়া পরিণত কর। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! যখন তুমি দূরে কোন স্থানে মধু আহরণের জন্য যাবে, তখন সেটা সংগ্রহ করে আবার তোমার গৃহে ফিরে আস, তোমার প্রভুর শিখিয়ে দেয়া পথসমূহ অবলম্বন করে। পথ হারিয়ে ফেলো না। [ফাতহুল কাদীর] মূলত: তিনটি অর্থই উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব।
(২) এখানে ওহীর মাধ্যমে প্রদত্ত এই নির্দেশের যথাযথ ফলশ্রুতি বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে, তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই কোন বিশেষ অঞ্চলে কোন বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাব ও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। মধু সাধারণতঃ তরল আকারে থাকে, তাই একে পানীয় বলা হয়েছে। এ বাক্যেও আল্লাহর একত্ব ও অপার শক্তির অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান। একটি ছোট্ট প্রাণীর পেট থেকে কেমন উপাদেয় ও সুস্বাদু পানীয় বের হয়। এরপর সর্বশক্তিমানের আশ্চর্যজনক কারিগরি দেখুন, অন্যান্য দুধের জন্তুর দুধ ঋতু ও খাদ্যের পরিবর্তনে লাল ও হলদে হয় না, কিন্তু মৌমাছির মধু সাদা, হলুদ, লাল ইত্যাদি বহু রঙের হয়ে থাকে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(৩) মধু যেমন বলকারক খাদ্য এবং রসনার জন্য আনন্দ এবং তৃপ্তিদায়ক, তেমনি রোগব্যাধির জন্যও ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র। মধু বিরেচক এবং পেট থেকে দূষিত পদার্থ অপসারক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে কোন এক সাহাবী তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবী বললেনঃ অসুখ পূর্ববৎ বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এল যে, অসুখে কোন পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেনঃ صَدَقَ اللهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أخِيْكَ অর্থাৎ আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। যাও তাকে মধু খাইয়ে দাও, তারপর লোকটি গিয়ে মধু খাওয়ানোর পর সে আরোগ্য লাভ করল। [বুখারীঃ ৫৭১৬, মুসলিমঃ ২২১৭]
এখানে আল্লাহর উক্তি সত্য এবং পেট মিথ্যাবাদী হওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, ঔষধের দোষ নাই। রুগীর বিশেষ মেজাযের কারণে ঔষধ দ্রুত কাজ করেনি। এরপর রুগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে উঠে। তবে সমস্ত রোগের জন্য সরাসরি মধু ব্যবহার করতে হবে তা এ আয়াতে বলা হয়নি। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশে তা আরোগ্য দানকারী প্রতিষেধকে পরিণত হয়। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা দুটি আরোগ্যকে আঁকড়ে ধরবে, কুরআন এবং মধু” [ইবনে মাজাহঃ ৩৪৫২, মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/২০০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর হাদীসে বলেনঃ “তিনটি বস্তুতে আরোগ্য রয়েছে, শিঙ্গা, মধু এবং আগুনের ছেক। তবে আমি আমার উম্মাতকে ছেক দিতে নিষেধ করি” [বুখারীঃ ৫৬৮০, মুসলিমঃ ২২০৫] তবে আলোচ্য আয়াতে شفاء শব্দটি থেকে মধু যে প্রত্যেক রোগের ঔষধ, তা বোঝা যায় না। কিন্তু شفاء শব্দের تنوين যা تعظيم এর অর্থ দিচ্ছে, তা থেকে অবশ্যই বোঝা যায় যে, মধুর নিরাময় শক্তি বিরাট ও স্বতন্ত্র ধরণের। যদিও কোন কোন আলেম বলেনঃ মধু সর্বরোগের প্রতিষেধক। তারা মহান পালনকর্তার উক্তির বাহ্যিক অর্থেই এমন প্রবল ও অটল বিশ্বাস রাখেন যে, তারা ফোঁড়া ও চোখের চিকিৎসাও মধুর মাধ্যমে করেন এবং দেহের অন্যান্য রোগেরও। এ কারণেই হয়তঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মধু পছন্দ করতেন [দেখুনঃ বুখারীঃ ৫৪৩১, ৫৬১৪, মুসলিমঃ ১৪৭৪, আবু দাউদঃ ৩৭৫১, তিরমিযীঃ ১৮৩২, ইবনে মাজাহঃ ৩৩২৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৯]
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোঁড়া বের হলেও তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করতেন। এর কারণ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা কুরআনে কি মধু সম্পর্কে (فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ) বলেননি? অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “এতে (অর্থাৎ মধুতে) মৃত্যু ছাড়া আর সব রকমের রোগের আরোগ্য রয়েছে।” [ইবনে মাজাহঃ ৩৪৫৭] আয়াতের মর্ম অনুযায়ী আরো জানা গেল যে, ঔষধের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা বৈধ। [কুরতুবী] কারণ, আল্লাহ তা'আলা একে নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র বলা হয়েছে- (وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ) [আল-ইসরাঃ ৮২]। হাদীসে ঔষধ ব্যবহার ও চিকিৎসার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে। মোটকথা, চিকিৎসা করা ও ঔষধ ব্যবহার করা যে বৈধ, এ বিষয়ে সকল আলেমই একমত এবং এ সম্পর্কে বহু হাদীস ও রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে।
(৪) নিশ্চয় এ ছোট প্রাণীটিকে সঠিক পথে সহজভাবে চলার ইলহাম করা, বিভিন্ন গাছ থেকে মধু নেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া, তারপর সেটাকে মোমের মধ্যে ও মধুর জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে রাখা যা অন্যতম উত্তম বস্তু হিসেবে বিবেচিত। অবশ্যই চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে বড় নিদর্শন রয়েছে। যা তার সৃষ্টিকর্তার মহত্বতার উপর প্রমাণবহ। এর দ্বারা তারা এটার উপর প্রমাণ গ্রহণ করবেন যে, তিনি সব করতে সক্ষম, প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী, দাতা, দয়ালু। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৯) এরপর প্রত্যেক ফল হতে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর;[1] ওর উদর হতে নির্গত হয় নানা রঙের পানীয়;[2] যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগমুক্তি।[3] অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
[1] মৌমাছি প্রথমে পাহাড়ে, গাছে, মানুষের ঘরের উঁচু ছাদে এমনভাবে মৌচাক তৈরী করে যে, মাঝে কোথাও ফাঁক থাকে না। তারপর বাগান, জঙ্গল, পাহাড় ও উপত্যকায় (অনুরূপ ফুলে ভরা শস্যক্ষেতে) ঘুরে বেড়ায় এবং প্রত্যেক ফুল-ফলের মধু ও রস আহরণ করে পেটে জমা করে। আর যে রাস্তায় যায় সেই রাস্তায় ফিরে এসে মৌচাকে গিয়ে বসে। যেখানে তার মুখ দিয়ে মধু উগরে দেয়, যাকে মহান আল্লাহ পানীয় বলে উল্লেখ করেছেন।
[2] লাল, সাদা, নীল, হলুদ বিভিন্ন রঙের। যে ধরনের ফুল-ফল ও ক্ষেত থেকে তারা মধু সংগ্রহ করে, সেই হিসাবে তার রঙ ও স্বাদ বিভিন্ন হয়ে থাকে।
[3] شفاء (রোগমুক্তি) অনির্দিষ্ট বাহুল্য বর্ণনার জন্য। অর্থাৎ, মধুতে বহু রোগের আরোগ্য রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটি সকল রোগের ঔষধ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, মধু অবশ্যই আরোগ্য দানকারী আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক এক পানীয়, তবে বিশেষ বিশেষ রোগের জন্য; সকল রোগের জন্য নয়। হাদীসে বর্ণিত, নবী (সাঃ) মিষ্টি জিনিস ও মধু পছন্দ করতেন। (বুখারীঃ পানীয় অধ্যায়) অন্য এক বর্ণনায় আছে তিনি (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তিনটি জিনিসে আরোগ্য রয়েছে; শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পান করাতে ও দাগানোতে। তবে আমি আমার উম্মতকে দাগাতে নিষেধ করছি।’’ (বুখারীঃ মধু দ্বারা চিকিৎসা পরিচ্ছেদ) হাদীসে একটি ঘটনাও এসেছে। নবী (সাঃ) পাতলা পায়খানার এক রোগীকে মধু পান করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তাতে তার রোগ আরো বেড়ে গেল। তিনি দ্বিতীয়বার আবার মধু পান করার পরামর্শ দিলেন। যাতে রোগীর পুরাতন মল বেরিয়ে আসতে লাগল। রোগীর বাড়ির লোকেরা ভাবল যে, রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার এক ভাই আবার নবী (সাঃ)-এর নিকট এল। তখন তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ সত্য, তোমার ভায়ের পেট মিথ্যা। যাও, তাকে আবারো মধু পান করাও।’’ অতঃপর তৃতীয়বার মধু পান করালে সে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে। (বুখারী, মুসলিম)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা কি আকাশে (উড়ন্ত অবস্থায়) নিয়োজিত পাখিগুলোর দিকে তাকায় না? আল্লাহ ছাড়া কেউ তাদেরকে ধরে রাখে না। নিশ্চয় তাতে নিদর্শনবলী রয়েছে সেই কওমের জন্য যারা বিশ্বাস করে। আল-বায়ান
আকাশের শূন্যলোকে নিয়ন্ত্রিত পাখীগুলোর প্রতি কি তারা লক্ষ্য করে না? আল্লাহ ছাড়া কেউ তাদেরকে স্থির রাখে না, এতে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
তারা কি লক্ষ্য করেনা আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহংগের প্রতি? আল্লাহই ওদেরকে স্থির রাখেন; অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য। মুজিবুর রহমান
Do they not see the birds controlled in the atmosphere of the sky? None holds them up except Allah. Indeed in that are signs for a people who believe. Sahih International
৭৯. তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহংগের প্রতি? আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই সেগুলোকে ধরে রাখেন না। নিশ্চয় এতে এমন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে যারা ঈমান আনে।(১)
(১) এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তার বান্দাদেরকে একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখার প্রতি আহবান জানাচ্ছেন। যেখানে পাখি আসমান ও যমীনের মাঝখানে ভাসমান হয়ে থাকে। কিভাবে তিনি সেটাকে দুডানা মেলে শূণ্যে ভেসে বেড়াতে দিয়েছেন। এগুলোকে তো আল্লাহই কেবল তাঁর কুদরতে ধারণ করে রাখেন। (তিনিই তো তাদেরকে ডানা মেলা ও বন্ধ করা শিখিয়েছেন। তারা সেভাবে ডানা মেলে ও বন্ধ করে যেমন কোন সাতারু পানিতে সাতার কাটার সময় করে থাকে। [ফাতহুল কাদীর]) সেখানে তিনি এমন শক্তির উদ্ভব করেছেন যে, তারা উড়ে বেড়াতে পারে। অনুরূপভাবে তিনি বাতাসকে নিয়োজিত করেছেন সেগুলোকে বহন করতে। আর পাখিও অনুরূপভাবে বাতাসে চলাফেরা করতে পারে।
অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা এ নেয়ামতের কথা ও তার কুদরতের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরে পাখিদের প্রতি, যারা পাখা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। নিশ্চয় তিনি সবকিছুর সম্যক দ্রষ্টা। [সূরা আল-মুলক ১৯] এ সবকিছুতে অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে। [ইবন কাসীর] এসবই আল্লাহর একত্ববাদ ও তার অপার ক্ষমতার উপর প্রকৃষ্ট প্রমান। কিন্তু তারাই শুধু তা দেখতে পায় ও বুঝতে পারে যারা আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত শরীআতের উপর ঈমান রাখে। [ফাতহুল কাদীর] যারা তার এ সমস্ত নিদর্শন বুঝতে পারে তারা শ্রদ্ধায় অবনত মস্তকে যিনি তাদেরকে এ নেয়ামত দান করেছেন সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৯) তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদেরকে স্থির রাখেন।[1] অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
[1] তিনি তো আল্লাহই, যিনি পক্ষীকুলকে এভাবে উড়ার এবং বাতাসকে তাদের ভাসিয়ে রাখার শক্তি দান করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি রাত ও দিনকে করেছি দু’টো নিদর্শন। অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব জানতে পার। আর আমি প্রত্যেক বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। আল-বায়ান
আমি রাত আর দিনকে দু’টো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনটিকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর যাতে বছরের সংখ্যা আর হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। তাইসিরুল
আমি রাত ও দিনকে করেছি দু’টি নিদর্শন; রাতকে করেছি নিরালোক এবং দিনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার; এবং আমি সব কিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মুজিবুর রহমান
And We have made the night and day two signs, and We erased the sign of the night and made the sign of the day visible that you may seek bounty from your Lord and may know the number of years and the account [of time]. And everything We have set out in detail. Sahih International
১২. আর আমরা রাত ও দিনকে করেছি। দুটি নিদর্শন(১) তারপর রাতের নিদর্শনকে মুছে দিয়েছি এবং দিনের নিদর্শনকে আলোকপ্ৰদ করেছি; যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ-সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আর আমরা সবকিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।(২)
১. আমার একত্ববাদ ও আমার অপার ক্ষমতার উপর প্রমাণ। [এ ধরনের আয়াত আরো দেখুন, সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৭, ইয়াসীনঃ ৩৭, ইউনুসঃ ৬, আল-মু'মিনূনঃ ৮০, আল বাকারাহঃ ১৬৪, আলে ইমরানঃ ১৯০, আন-নূরঃ ৪৪. আল-ফুরকানঃ ৬২, আল কাসাসঃ ৭৩, জাসিয়াঃ ৫]
২. আলোচ্য আয়াতে দিবারাত্রির পরিবর্তনকে আল্লাহ্ তাআলার অপার শক্তির নিদর্শন সাব্যস্ত করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে যে, রাত্রিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং দিনকে উজ্জ্বল করার মধ্যে বহুবিধ তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। রাত্রিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করার তাৎপর্য এখানে বর্ণনা করা হয়নি। অন্যান্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, রাত্রির অন্ধকার নিদ্রা ও আরামের জন্যে উপযুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, রাত্রির অন্ধকারেই প্রত্যেক মানুষ ও জন্তুর ঘুম আসে। সমগ্ৰ জগত একই সময়ে ঘুমায়।
যদি বিভিন্ন লোকের ঘুমের জন্যে বিভিন্ন সময় নির্ধারিত থাকত, তবে জাগ্রতদের হট্টগোলে ঘুমন্তদের ঘুমেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হত। এ আয়াতে দিনকে ঔজ্জ্বল্যময় করার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, দিনের আলোতে মানুষ রুযী অন্বেষণ করতে পারে। মেহনত, মজুরী, শিল্প ও কারিগরী সব কিছুর জন্যে আলো অত্যাবশ্যক। আয়াতে দ্বিতীয় আরেকটি কথা বলা হয়েছে তাহলো, দিবারাত্রির গমনাগমনের দ্বারা সন-বছরের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। এটা মূলতঃ দিন-রাত্রি উভয়টিরই উপকারিতা।
উদাহরণতঃ ৩৬০ দিন পূর্ণ হলে একটি সন পূর্ণতা লাভ করে। এমনিভাবে অন্যান্য হিসাব-নিকাশও দিবারাত্রির গমনাগমনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। দিবারাত্রির এই পরিবর্তন না হলে মজুরের মজুরী, চাকুরের চাকুরি এবং লেন-দেনের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা সুকঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া দিন-রাত্রি পরিবর্তন না হলে মানুষের পক্ষে তাদের ইবাদতসমূহের হিসাব রাখাও সম্ভব হতো না। তারা হজ্জের, সাওমের, মেয়েদের ইদ্দতের, জুম'আ ইত্যাদির হিসাব পেত না। [আদওয়াউল বায়ান থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) আমি রাত্রি ও দিবসকে করেছি দু’টি নিদর্শন ও রাত্রিকে করেছি আলোকহীন এবং দিবসকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার।[1] আর আমি সব কিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। [2]
[1] রাতকে আলোকহীন অর্থাৎ, অন্ধকার বানিয়েছি, যাতে তোমরা বিশ্রাম নিতে পার এবং তোমাদের সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আর দিনকে বানিয়েছি আলোক-উজ্জ্বল যাতে তোমরা জীবিকা উপার্জন ও প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান কর। এ ছাড়াও রাত ও দিনের দ্বিতীয় আর এক লাভ হল, এইভাবে সপ্তাহ, মাস এবং বছরের হিসাব তোমরা গণনা করতে পারবে। আর এই হিসাবেরও রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। যদি রাতের পরে দিন এবং দিনের পরে রাত না এসে সব সময়ই রাত অথবা দিন থাকত, তবে তোমরা আরাম ও স্বস্তি লাভের অথবা কাজকর্ম করার কোন সুযোগ পেতে না। অনুরূপ মাস ও বছরের হিসাব করাও সম্ভব হত না।
[2] অর্থাৎ, মানুষের জন্য দ্বীন এবং দুনিয়ার প্রয়োজনীয় সব কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। যাতে মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হয়ে স্বীয় দুনিয়াকে সুন্দর করে এবং আখেরাতকে স্মরণে রেখে তার জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তুমি দেখতে পেতে, সূর্য উদিত হলে তাদের গুহার ডানে তা হেলে পড়ছে, আর অস্ত গেলে তাদেরকে বামে রেখে কেটে যাচ্ছে, তখন তারা ছিল তার আঙিনায়। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের কিছু। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে ভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য পথনির্দেশকারী কোন অভিভাবক পাবে না। আল-বায়ান
তুমি দেখতে পেতে সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহা হতে ডান দিকে হেলে যেত, আর যখন তা অস্তমিত হত তখন তা তাদের থেকে বাম দিকে নেমে যেত, আর তারা ছিল গুহার অভ্যন্তরে বিশাল চত্বরে। এ হচ্ছে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথ দেখান সে সঠিকপথপ্রাপ্ত আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তার জন্য তুমি কক্ষনো সৎপথের দিশা দানকারী অভিভাবক পাবে না। তাইসিরুল
তুমি সূর্যকে দেখবে যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে শায়িত। এসবই আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন সে সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবেনা। মুজিবুর রহমান
And [had you been present], you would see the sun when it rose, inclining away from their cave on the right, and when it set, passing away from them on the left, while they were [laying] within an open space thereof. That was from the signs of Allah. He whom Allah guides is the [rightly] guided, but he whom He leaves astray - never will you find for him a protecting guide. Sahih International
১৭. আর আপনি দেখতে পেতেন- সূৰ্য উদয়ের সময় তাদের গুহার ডান পাশে হেলে যায় এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে অতিক্রম করে বাম পাশ দিয়ে(১), অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে, এ সবই আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথপ্ৰাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্ৰষ্ট করেন, আপনি কখনো তার জন্য কোন পথনির্দেশকারী অভিভাবক পাবেন না।
(১) আয়াতের অর্থ বর্ণনায় দু'টি মত রয়েছে। এক. তারা গুহার এক কোনে এমনভাবে আছে যে, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছে না। স্বাভাবিক আড়াল তাদেরকে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করছে। কারণ, তাদের গুহার মুখ ছিল উত্তর দিকে। এ কারণে সূর্যের আলো কোন মওসুমেই গুহার মধ্যে পৌঁছতো না এবং বাহির থেকে কোন পথ অতিক্রমকারী দেখতে পেতো না গুহার মধ্যে কে আছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
দুই. তারা একটি প্রশস্ত চত্বরে অবস্থান করা সত্বেও দিনের বেলার আলো সূর্যের উদয় বা অস্ত কোন অবস্থায়ই তাদের কাছে পৌছে না। কেননা, মহান আল্লাহ তাদের সম্মনার্থে এ অলৌকিক ব্যবস্থা করেছেন। প্রশস্ত স্থানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে কোন বাধা না থাকলেও তিনি তার স্পেশাল ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে সূর্যের আলোর তাপ থেকে রক্ষা করেছেন। এ অর্থের সপক্ষে প্রমাণ হলো এর পরে বর্ণিত মহান আল্লাহর বাণীঃ “এটা তো আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম”। যদি স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা হতো তবে আল্লাহর নিদর্শন বলার প্রয়োজন ছিল না। [ফাতহুল কাদীর] ইবনে আব্বাস বলেন, সূর্যের আলো যদি তাদের গায়ে লাগত। তবে তাদের কাপড় ও শরীর পুড়ে যেতে পারত। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) তুমি দেখলে দেখতে, সূর্য উদয়কালে তাদের গুহার ডান দিকে হেলে অতিক্রম করছে এবং অস্তকালে তাদেরকে অতিক্রম করছে বাম পাশ দিয়ে, আর তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থান করছে।[1] এসব আল্লাহর নিদর্শন;[2] আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনই তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।[3]
[1] অর্থাৎ, সূর্য উঠার সময় ডান দিকে এবং অস্ত যাওয়ার সময় বাম দিকে পাশ কেটে চলে যায়। আর এইভাবে উভয় সময়ে তাদের উপর সূর্যের আলো পড়ত না। অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে আরামে অবস্থান করছিল। فَجْوَةٌ এর অর্থ হল, প্রশস্ত স্থান।
[2] অর্থাৎ, সূর্যের এইভাবে পাশ কেটে যাওয়া এবং প্রশস্ততা সত্ত্বেও সেখানে রৌদ্র প্রবেশ না করা ইত্যাদি সবই হল আল্লাহর এক একটি নিদর্শন।
[3] যেমন, দাকয়ানুস এবং তার অনুসারীরা হিদায়াত থেকে বঞ্চিত ছিল, কেউ তাদেরকে সঠিক পথে আনতে সক্ষম হয়নি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে এবং সে ভুলে গেছে যা তার দু-হাত পেশ করেছে? নিশ্চয় আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর পর্দা দিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে। আর তাদের কর্ণসমূহে রয়েছে বধিরতা এবং তুমি তাদেরকে হিদায়াতের প্রতি আহবান করলেও তারা কখনো হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে না। আল-বায়ান
তার থেকে বড় যালিম আর কে আছে যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে সে তাত্থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর সে পূর্বে কৃত তার কর্মের (খারাপ পরিণতির) কথা ভুলে যায়। আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়ে দিয়েছি যাতে তারা তা (অর্থাৎ কুরআন) বুঝতে না পারে, আর তাদের কানে এঁটে দিয়েছি বধিরতা। তুমি তাদেরকে সৎপথে ডাকলেও তারা কক্ষনো সৎপথ গ্রহণ করবে না। তাইসিরুল
কোন ব্যক্তিকে তার রবের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায় তাহলে তার অপেক্ষা অধিক সীমা লংঘনকারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি; তুমি তাদেরকে সৎ পথে আহবান করলেও তারা কখনও সৎ পথে আসবেনা। মুজিবুর রহমান
And who is more unjust than one who is reminded of the verses of his Lord but turns away from them and forgets what his hands have put forth? Indeed, We have placed over their hearts coverings, lest they understand it, and in their ears deafness. And if you invite them to guidance - they will never be guided, then - ever. Sahih International
৫৭. আর তার চেয়ে অধিক যালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে(১) এবং সে ভুলে গেছে যা তার দু-হাত পেশ করেছে? নিশ্চয় আমরা তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা এঁটে দিয়েছি।(২) আর আপনি তাদেরকে সৎপথে ডাকলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না।
(১) এ আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা, দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন থাকা, দ্বীন শিক্ষা করতে ও করাতে আগ্রহী না হওয়া কুফারী। এসবগুলোই বড় কুফরীর অংশ। [দেখুন, নাওয়াকিদুল ইসলাম]
(২) অর্থাৎ তাদের গোনাহ ও অবাধ্যতার কারণে শাস্তিস্বরূপ তাদের অন্তরের উপর আল্লাহ আবরণ দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। যেমন সূরা আল বাকারাহ: ৭, সূরা আল-ইসরা: ৪৫–৪৭, সূরা মুহাম্মাদ: ২৩, সূরা হূদ: ২০।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৭) কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি; যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা সৃষ্টি করেছি। তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথ পাবে না। [1]
[1] অর্থাৎ, প্রতিপালকের আয়াতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মত মহা অন্যায় করার এবং নিজেদের কার্যকলাপ ভুলে থাকার কারণে তাদের অন্তঃকরণের উপর পর্দা রেখে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কানে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বধিরতার বোঝা। যার ফলে কুরআন বুঝা, শোনা এবং তা থেকে হিদায়াত গ্রহণ করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে গেছে। তাদেরকে যতই তুমি হিদায়াতের প্রতি আহবান কর, তারা কখনই হিদায়াতের পথ অবলম্বন করতে প্রস্তুত হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। আল-বায়ান
আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ আর তাকে কিয়ামাতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’ তাইসিরুল
যে আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামাত দিবসে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। মুজিবুর রহমান
And whoever turns away from My remembrance - indeed, he will have a depressed life, and We will gather him on the Day of Resurrection blind." Sahih International
১২৪. আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত(১) এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়।(২)
(১) এখানে যিকর-এর অর্থ কুরআনও হতে পারে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও হতে পারে, যেমন- অন্য আয়াতে ذِكْرًا رَّسُولًا বলা হয়েছে। [কুরতুবী] তবে অধিকাংশের নিকট এখানে কুরআন বোঝানো হয়েছে। সারমর্ম এই যে, যে ব্যক্তি কুরআনের বিধি-বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, কুরআনের নির্দেশের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; অন্যদের থেকে হিদায়াত গ্ৰহণ করে, তার পরিণাম এই যে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। [ইবন কাসীর] কুরআনের ভাষ্যে ঐ সমস্ত লোকদের জন্য সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর কুরআন ও তাঁর রাসূলের প্রদর্শিত পথে চলতে বিমুখ হয়। কিন্তু কোথায় তাদের সে সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবন হবে তা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি মত রয়েছেঃ
এক) তাদের দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হবে। তাদের কাছ থেকে অল্পে তুষ্টির গুণ ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সাংসারিক লোভ-লালসা বাড়িয়ে দেয়া হবে। যা তাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে। ফলে তাদের কাছে যত অর্থ-সম্পদই সঞ্চিত হোক না কেন, আন্তরিক শান্তি তাদের ভাগ্যে জুটবে না। সদা-সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার চিন্তা এবং ক্ষতির আশঙ্কা তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। কেননা, সুখ-শান্তি অন্তরের স্থিরতা ও নিশ্চিন্ততার মাধ্যমেই অর্জিত হয়; শুধু প্রাচুর্য্যে নয়। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
দুই) অনেক মুফাসসিরের মতে এখানে সংকীর্ণ জীবন বলতে কবরের জীবনকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাদের কবর তাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে যাবে বিভিন্ন প্রকার শাস্তির মাধ্যমে। এতে করে কবরে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে দেয়া হবে। তাদের বাসস্থান কবর তাদেরকে এমনভাবে চাপ দেবে যে, তাদের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং (مَعِيشَةً ضَنْكًا) এর তাফসীরে বলেছেন যে, এখানে কবর জগত ও সেখানকার আযাব বোঝানো হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৮১ নং ৩৪৩৯, ইবনে হিব্বানঃ ৭/৩৮৮, ৩৮৯ নং ৩১১৯]
তাছাড়া বিভিন্ন সহীহ হাদীসে কবরের যিন্দেগীর বিভিন্ন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে, তা থেকে বুঝা যায় যে, যারা আল্লাহ, কুরআন ও রাসূলের প্রদর্শিত দ্বীন থেকে বিমুখ হবে, কবরে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “মুমিন তার কবরে সবুজ প্রশস্ত উদ্যানে অবস্থান করবে। আর তার কবরকে ৭০ গজ প্রশস্ত করা হবে। পূর্নিমার চাঁদের আলোর মত তার কবরকে আলোকিত করা হবে। তোমরা কি জান আল্লাহর আয়াত (তাদের জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন) কাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে? তোমরা কি জানো সংকীর্ণ জীবন কি? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তা হল কবরে কাফেরের শাস্তি। যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ করে বলছি- তাকে ন্যস্ত করা হবে ৯৯টি বিষাক্ত তিন্নিন সাপের কাছে। তোমরা কি জানো তিন্নিন কি? তিন্নিন হল ৯৯টি সাপ। প্ৰত্যেকটি সাপের রয়েছে ৭টি মাথা। যেগুলো দিয়ে সে কাফেরের শরীরে ছোবল মারতে থাকবে, কামড়াতে ও ছিড়তে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। [ইবনে হিব্বানঃ ৩১২২, দারেমীঃ ২৭১১, আহমাদঃ ৩/৩৮, আবু ইয়া'লাঃ ৬৬৪৪, আব্দ ইবনে হুমাইদঃ ৯২৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৩/৫৫]
(২) অর্থাৎ তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় হাশার করা হবে। এখানে অন্ধ অবস্থার কয়েকটি অর্থ হতে পারে- (এক) বাস্তবিকই সে অন্ধ হয়ে উঠবে। (দুই) সে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। (তিন) সে তার পক্ষে পেশ করার মত কোন যুক্তি থেকে অন্ধ হয়ে যাবে। কোন প্রকার প্রমাণাদি পেশ করা থেকে অন্ধ হয়ে থাকবে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] তখন তার পরবর্তী আয়াতের অর্থ হবে- সে বলবেঃ হে আমার রব! আমাকে কেন আমার যাবতীয় যুক্তিহীন অবস্থায় হাশর করেছেন? আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ অনুরূপভাবে তোমার কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলো ত্যাগ করে ভুলে বসেছিলে, তাই আজকের দিনেও তোমাকে যুক্তি-প্রমাণহীন অবস্থায় অন্ধ করে ত্যাগ করা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। কারণ এটা তো তোমারই কাজের যথোপযুক্ত ফল। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৪) যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার হবে সংকীর্ণতাময় জীবন[1] এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ [2]
[1] এই ‘সংকীর্ণতাময় জীবন’ বলতে কেউ কেউ কবরের আযাব মনে করেন। আবার কেউ মনে করেন, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও ব্যাকুলতাময় জীবন যা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন বড় বড় ধনবান ব্যক্তিরা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
[2] এর অর্থ সত্যিকার চোখের অন্ধ অবস্থায়। অথবা জ্ঞান হতে বঞ্চিত অবস্থায়। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন এমন কোন প্রমাণ তার মাথায় আসবে না, যা পেশ করে সে আযাব হতে নিজেকে বাঁচাতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলবে, ‘হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন’? আল-বায়ান
সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ ক’রে উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম।’ তাইসিরুল
সে বলবেঃ হে আমার রাব্ব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমিতো ছিলাম চক্ষুস্মান! মুজিবুর রহমান
He will say, "My Lord, why have you raised me blind while I was [once] seeing?" Sahih International
১২৫. সে বলবে, হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় জমায়েত করলেন? অথচ আমি তো ছিলাম। চক্ষুষ্মান।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৫) সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? অথচ আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম!’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বলবেন, ‘এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’। আল-বায়ান
আল্লাহ বলবেন, ‘এভাবেই তো আমার নিদর্শনসমূহ যখন তোমার কাছে এসেছিল তখন তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজকের দিনে সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে। তাইসিরুল
তিনি বলবেনঃ এ রূপেই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমিতো ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। মুজিবুর রহমান
[Allah] will say, "Thus did Our signs come to you, and you forgot them; and thus will you this Day be forgotten." Sahih International
১২৬. তিনি বলবেন, এরূপই আমাদের নিদর্শনাবলী তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে।(১)
(১) বিস্মৃত হওয়া ছাড়া نسيان শব্দের আরেক অর্থ আছে ছেড়ে রাখা। অর্থাৎ যেভাবে আমার হেদায়াতকে দুনিয়াতে ছেড়ে রেখেছিলে তেমনি আজ তোমাদেরকে জাহান্নামে ছেড়ে রাখা হবে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৬) তিনি বলবেন, ‘তুমি এইরূপ ছিলে, আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। সেইভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর এভাবেই আমি প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে না। আর আখিরাতের আযাব তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী। আল-বায়ান
আমি এভাবেই প্রতিফল দেই তাদেরকে যারা সীমালঙ্ঘন করে এবং তার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস করে না। আর আখিরাতের ‘আযাব অবশ্যই সবচেয়ে বেশী কঠিন ও সবচেয়ে বেশী স্থায়ী। তাইসিরুল
এবং এভাবেই আমি প্রতিফল দিই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করেনা; পরকালের শাস্তিতো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী। মুজিবুর রহমান
And thus do We recompense he who transgressed and did not believe in the signs of his Lord. And the punishment of the Hereafter is more severe and more enduring. Sahih International
১২৭. আর এভাবেই আমরা প্রতিফল দেই তাকে যে বাড়াবাড়ি করে ও তার রব-এর নিদর্শনে ঈমান না আনে।(১) আর আখেরাতের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী।
(১) এখানে আল্লাহ “যিকির” অর্থাৎ তাঁর কিতাব ও তাঁর প্রেরিত উপদেশমালা থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের দুনিয়ায় যে “অতৃপ্ত জীবন” যাপন করানো হয় সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। অর্থাৎ এভাবেই যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর মিথ্যারোপ করে আমরা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে প্রতিফল দিয়ে থাকি। “তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! আর আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার মত তাদের কেউ নেই।” [সূরা আর-রাদ: ৩৪] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২৭) আর এইভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালংঘন করেছে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। আর পরকালের শাস্তি অবশ্যই কঠোরতর ও চিরস্থায়ী।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল*, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম, আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? আল-বায়ান
অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ আর যমীন এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম, আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? তাইসিরুল
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবেনা? মুজিবুর রহমান
Have those who disbelieved not considered that the heavens and the earth were a joined entity, and We separated them and made from water every living thing? Then will they not believe? Sahih International
* আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আদিতে আকাশ, সূর্য, নক্ষত্র ও পৃথিবী ইত্যাদি পৃথক সত্তায় ছিল না; বরং সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি। পরবর্তীকালে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ও গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়। এটিই বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ থিওরী।
৩০. যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না(১) যে, আসমানসমূহ ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, তারপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম(২); এবং প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে(৩); তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?
(১) চোখে দেখে জানা হোক কিংবা বুদ্ধি-বিবেচনা দ্বারা জানা হোক। কেননা, এরপর যে বিষয়বস্তু আসছে তার সম্পর্ক কিছু চোখে দেখার সাথে এবং কিছু ভেবে দেখার সাথে। [ফাতহুল কাদীর]
(২) رتق শব্দের অর্থ বন্ধ হওয়া, আর فتق এর অর্থ খুলে দেয়া। উভয় শব্দের সমষ্টি رتق ও فتق কোন কাজের ব্যবস্থাপনা ও তার পূর্ণ ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে আয়াতের অনুবাদ এই দাঁড়ায় যে, আকাশ ও পৃথিবী বন্ধ ছিল। আমি এদেরকে খুলে দিয়েছি। সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন এর অর্থ হচ্ছেঃ আসমান ও যমীন পরস্পর মিলিত ছিল তারপর আমরা সে দুটিকে পৃথকীকরণ করেছি। হাসান ও কাতাদা রাহেমাহুমাল্লাহ বলেনঃ এতদুভয়ের মধ্যে বাতাস দ্বারা পৃথকীকরণ করেছেন। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
মোটকথাঃ এ শব্দগুলো থেকে যে কথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, বিশ্ব-জাহান প্রথমে একটি পিণ্ডের আকারে ছিল। পরবর্তীকালে তাকে পৃথক পৃথক অংশে বিভক্ত করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহারিকা ইত্যাদি স্বতন্ত্র জগতে পরিণত করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে বন্ধ হওয়ার অর্থ আকাশের বৃষ্টি ও মাটির ফসল বন্ধ হওয়া এবং খুলে দেয়ার অর্থ এতদুভয়কে খুলে দেয়া। [কুরতুবী] তখন এ আয়াতের অর্থে আরও এসেছে, “শপথ আসমানের, যা ধারণ করে বৃষ্টি, এবং শপথ যমীনের, যা বিদীর্ণ হয়”। সূরা আত-তারেক: ১১-১২]
(৩) অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণী সৃজনে পানির অবশ্যই প্রভাব আছে। এসব বস্তু সৃজন, আবিষ্কার ও ক্রমবিকাশে পানির প্রভাব অপরিসীম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি যখন আপনার সাথে সাক্ষাৎ করি, তখন আমার অন্তর প্রফুল্ল এবং চক্ষু শীতল হয়। আপনি আমাকে প্রত্যেক বস্তু সৃজন সম্পর্কে তথ্য বলে দিন।” জওয়াবে তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক বস্তু পানি থেকে সৃজিত হয়েছে”। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/২৯৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) অবিশ্বাসীরা কি (ভেবে) দেখে না যে, [1] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একসঙ্গে মিলিত ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি[2] এবং প্রত্যেকটি সজীব বস্তুকে পানি হতে সৃষ্টি করেছি; [3] তবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না?
[1] এখানে বাহ্যিক চক্ষু দিয়ে দেখা নয় বরং অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তারা কি চিন্তা-ভাবনা করে না? তারা কি জানে না?
[2] رَتق এর অর্থ বন্ধ, মিলিত। এবং فَتق এর অর্থ বিদীর্ণ করা, খোলা, আলাদা করা। অর্থাৎ, আকাশ ও পৃথিবী শুরুতে একত্রে মিলিত ছিল অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করি। আকাশকে উপরে উঠিয়েছি, যেখান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হয়। আর পৃথিবীকে এমন এক স্থানে রেখেছি যাতে নানান উদ্ভিদ উৎপন্ন করার উপযোগী হয়। (এ আয়াত হতে মহাকাশের মহাবিস্ফোরণের তথ্য পাওয়া যায়। -সম্পাদক)
[3] পানির অর্থ বৃষ্টির পানি বা ঝরনার পানি হলেও একথা পরিষ্কার যে, পানি দ্বারা উদ্ভিদ জন্মে এবং প্রতিটি জীবের নবজীবন লাভ হয়। আর যদি এর অর্থ বীর্য হয়, তাহলেও অর্থের কোন সমস্যা হয় না। কারণ প্রতিটি জীবের অস্তিত্বের মূলে রয়েছে এই বীর্য (কারণবারি); যা পুরুষের পৃষ্ঠদেশ হতে বের হয়ে স্ত্রীর গর্ভাশয়ে স্থান লাভ করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি যমীনে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যেন তা পর্বতসমূহ নিয়ে একদিকে হেলে না পড়ে*, আর আমি তাতে তৈরী করেছি প্রশস্ত রাস্তা, যেন তারা চলতে পারে। আল-বায়ান
আর পৃথিবীতে আমি স্থাপন করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে। আর তাতে সৃষ্টি করেছি প্রশস্ত পথ যাতে তারা পথ পেতে পারে। তাইসিরুল
এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক টলে না যায় এবং আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ যাতে তারা গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে। মুজিবুর রহমান
And We placed within the earth firmly set mountains, lest it should shift with them, and We made therein [mountain] passes [as] roads that they might be guided. Sahih International
* আধুনিক ভূ-তত্ত্ববিদগণ বলেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থের তাপ ছড়ানোর কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ সঙ্কুচিত হয়ে তাতে ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং তার উপরের অংশই হল পর্বত। পর্বতমালা পৃথিবী-পৃষ্ঠের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩১. এবং আমরা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে যমীন তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায়(১) এবং আমরা সেখানে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ, যাতে তারা গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে।
(১) ميد আরবী ভাষায় অস্থির নড়াচড়াকে বলা হয়। আয়াতের অর্থ এই যে, পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্ তাআলা পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন, যাতে পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পৃথিবী অস্থির নড়াচড়া না করে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] পৃথিবী নড়াচড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারীদের অসুবিধা হত। পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে পাহাড়সমূহের প্রভাব অপরিসীম।
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি পর্বতমালা; যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়[1] এবং আমি তাতে[2] করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ; যাতে তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে।
[1] অর্থাৎ যদি পৃথিবীতে এত বড় বড় পর্বত না থাকত, তাহলে পৃথিবী সব সময় নড়াচড়া করত। যার কারণে পৃথিবী মানুষ ও জীব-জন্তুর বসবাসের উপযোগী হত না। আমি পর্বতের বোঝা দিয়ে পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছি।
[2] তাতে অর্থাৎ, পৃথিবীতে বা পর্বতমালায়। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রশস্ত পথ বা পর্বতমালার মাঝে উপত্যকা তৈরী করেছি। যাতে এক জায়গা হতে অন্যত্র যাওয়া সহজ হয়। يَهتَدُون এর অন্য এক অর্থ এও হতে পারে যে, ঐ পথ দ্বারা যাতে তারা নিজেদের জীবিকা ও জীবনযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি আসমানকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা তার নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল-বায়ান
আর আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু এ সবের নিদর্শন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাইসিরুল
এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মুজিবুর রহমান
And We made the sky a protected ceiling, but they, from its signs, are turning away. Sahih International
৩২. আর আমরা আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশে অবস্থিত নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ স্বরূপ। [1] কিন্তু তারা আকাশস্থ নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
[1] ‘সুরক্ষিত ছাদ’ অর্থাৎ, পৃথিবীর জন্য সুরক্ষিত ছাদ; যেমন তাঁবু বা গম্বুজের ছাদ হয়। অথবা এই অর্থে সুরক্ষিত যে, আল্লাহ তাকে পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। নচেৎ আকাশ যদি পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে পড়বে। অথবা তা শয়তানসমূহ হতে সুরক্ষিত, যেমন তিনি বলেছেন,{وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ} অর্থাৎ, আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান হতে সুরক্ষিত করেছি। (হিজরঃ ১৭)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানমানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়ার প্রবণতা দিয়ে। অচিরেই আমি তোমাদেরকে দেখাব আমার নিদর্শনাবলী। সুতরাং তোমরা তাড়াহুড়া করো না। আল-বায়ান
মানুষকে তাড়াহুড়াকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনগুলো দেখাব (যে সব অলৌকিক ব্যাপার বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে কাফিরদেরকে দেখানো হয়েছিল), কাজেই তোমরা আমাকে জলদি করতে বল না। তাইসিরুল
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরা প্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বলনা। মুজিবুর রহমান
Man was created of haste. I will show you My signs, so do not impatiently urge Me. Sahih International
৩৭. মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ(১), শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব; কাজেই তোমরা তাড়াহুড়া কামনা করো না।
(১) ত্বরাপ্রবণতার স্বরূপ হচ্ছে, কোন কাজ সময়ের পূর্বেই করা। এটা স্বতন্ত্র দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। কুরআনের অন্যত্রও একে মানুষের দুর্বলতারূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “মানুষ অত্যন্ত ত্বরাপ্রবন” [সূরা আল-ইসরাঃ ১১] আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, মানুষের মজ্জায় যেসব দুর্বলতা নিহিত রয়েছে, তন্মধ্যে এক দুর্বলতা হচ্ছে ত্বরা-প্রবণতা। স্বভাবগত ও মজ্জাগত বিষয়কে আরবরা এরূপ ভঙ্গিতেই ব্যক্তি করে। উদাহরণতঃ কারও স্বভাবে ক্ৰোধ প্রবল হলে আরবরা বলেঃ লোকটি ক্রোধ দ্বারা সৃজিত হয়েছে। ঠিক তেমনি এখানে অর্থ করা হবে যে, ত্বরাপ্রবণতা মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। [দেখুন, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরা-প্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলো না। [1]
[1] এ কথা কাফেরদের আযাব চাওয়ার উত্তরে বলা হয়েছে। যেহেতু মানুষের প্রকৃতিই হল জলদি ও তাড়াহুড়ো করা, সেহেতু তারা নবীর সঙ্গেও জলদি করতে চায় যে, তোমার আল্লাহকে বলে আমাদের উপর অতি শীঘ্র আযাব অবতীর্ণ করা হোক। আল্লাহ বললেন, জলদি করো না, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে নিজ নির্দশনাবলী দেখাব। এখানে নির্দশন বলতে আযাবও হতে পারে অথবা রসূল (সাঃ)-এর সত্যতার দলীল-প্রমাণাদিও হতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর নূহের কওমকে, যখন তারা রাসূলদেরকে অস্বীকার করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আর আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল-বায়ান
আর নূহের জাতি যখন রসূলদেরকে মিথ্যারোপ করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম, আর মানুষের জন্য তাদেরকে নিদর্শন বানিয়ে দিলাম। আমি যালিমদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। তাইসিরুল
আর নূহের সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করে রাখলাম; যালিমদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। মুজিবুর রহমান
And the people of Noah - when they denied the messengers, We drowned them, and We made them for mankind a sign. And We have prepared for the wrongdoers a painful punishment. Sahih International
৩৭. আর নূহের সম্প্রদায়কেও, যখন তারা রাসূলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করল(১) তখন আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম এবং তাদেরকে মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। আর শাস্তি প্ৰস্তুত করে রেখেছি।
(১) এর উদ্দেশ্য এই যে, তারা স্বয়ং নূহ আলাইহিস সালামের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। দ্বীনের মূলনীতি সকল নবীগণের বেলায়ই অভিন্ন, তাই একজনের প্রতি মিথ্যারোপ সবার প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। [বাগভী, মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) নূহের সম্প্রদায় যখন রসূলগণকে মিথ্যা মনে করল, তখন আমি ওদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং ওদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করে রাখলাম। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আমি মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান