জান্নাত বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৭৪ টি
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩২ وَّ فَاكِهَۃٍ كَثِیۡرَۃٍ ﴿ۙ۳۲﴾

আর প্রচুর ফলমূলে, আল-বায়ান

আর পর্যাপ্ত ফলমূল পরিবেষ্টিত হয়ে, তাইসিরুল

ও প্রচুর ফলমূল – মুজিবুর রহমান

And fruit, abundant [and varied], Sahih International

৩২. ও প্রচুর ফলমূল,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) এবং প্রচুর ফলমূল;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৩ لَّا مَقۡطُوۡعَۃٍ وَّ لَا مَمۡنُوۡعَۃٍ ﴿ۙ۳۳﴾

যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না। আল-বায়ান

যা কখনও শেষ হবে না, কক্ষনো নিষিদ্ধও হবে না। তাইসিরুল

যা শেষ হবেনা এবং যা নিষিদ্ধও হবেনা, মুজিবুর রহমান

Neither limited [to season] nor forbidden, Sahih International

৩৩. যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না।(১)

(১) দুনিয়ার সাধারণ ফলের অবস্থা এই যে, মওসুম শেষ হয়ে গেলে ফলও শেষ হয়ে যায়। কোন ফল গ্ৰীষ্মকালে হয় এবং মওসুম শেষ হয়ে গেলে নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার কোন ফল শীতকালে হয় এবং শীতকাল শেষ হয়ে গেলে ফলের নাম-নিশানাও অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক ফল চিরস্থায়ী হবে- কোন মওসুমের মধ্যে সীমিত থাকবে না। এমনিভাবে দুনিয়াতে বাগানের পাহারাদাররা ফল ছিড়তে নিষেধ করে কিন্তু জান্নাতের ফল ছিড়তে কোন বাধা থাকবে না। [ইবন কাসীর; বাগভী, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) যা শেষ হবে না ও নিষিদ্ধও হবে না। [1]

[1] অর্থাৎ, এই ফলগুলো এমন মৌসমী ফল হবে না যে, মৌসম শেষ হয়ে গেলেই এই ফলগুলো আগামী মৌসম পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফলগুলো এ ধরনের ফুল-মুকুলের ঋতুর অধীনস্থ হবে না। বরং তা সদা-সর্বদা পাওয়া যাবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৪ وَّ فُرُشٍ مَّرۡفُوۡعَۃٍ ﴿ؕ۳۴﴾

(তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে; আল-বায়ান

আর উঁচু উঁচু বিছানায়। তাইসিরুল

আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ। মুজিবুর রহমান

And [upon] beds raised high. Sahih International

৩৪. আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ(১);

(১) فرش শব্দটি فراش এর বহুবচন। অর্থ বিছানা। উচ্চস্থানে বিছানো থাকবে বিধায় জান্নাতের শয্যা সমুন্নত হবে। দ্বিতীয়ত, এই বিছানা মাটিতে নয়, পালঙ্কের উপর থাকবে। তৃতীয়ত, স্বয়ং বিছানাও খুব পুরু হবে। কারও কারও মতে এখানে বিছানা বলে শয্যাশায়িনী নারী বোঝানো হয়েছে। কেননা, নারীকেও বিছানা বলে ব্যক্ত করা হয়। এই অর্থ অনুযায়ী مرفوعة এর অর্থ হবে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও সম্রান্ত। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ। [1]

[1] কেউ কেউ فُرُشٍ থেকে অর্থ নিয়েছেন স্ত্রীগণ। আর مَرفوعة এর নিয়েছেন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্না। যেহেতু পরবর্তীতে তাদের কথাই আলোচনা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৫ اِنَّاۤ اَنۡشَاۡنٰهُنَّ اِنۡشَآءً ﴿ۙ۳۵﴾

নিশ্চয় আমি হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব। আল-বায়ান

তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে, তাইসিরুল

তাদের জন্য আমি করেছি বিশেষ সৃষ্টি। মুজিবুর রহমান

Indeed, We have produced the women of Paradise in a [new] creation Sahih International

৩৫. নিশ্চয় আমরা তাদেরকে সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে(১)—

(১) أنشأ শব্দের অর্থ সৃষ্টি করা। هُنَّ সর্বনাম দ্বারা জান্নাতের নারীদেরকে বোঝানো হয়েছে। পূর্বোক্ত আয়াতে فرش এর অর্থ জান্নাতে নারী হলে তার স্থলেই এই সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া শয্যা, বিছানা ইত্যাদি ভোগবিলাসের বস্তু উল্লেখ করায় নারীও তার অন্তর্ভুক্ত আছে বলা যায়। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি জান্নাতের নারীদেরকে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছি। [কুরতুবী] জান্নাতী হুরদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়া এই যে, তাদেরকে জান্নাতেই প্রজননক্রিয়া ব্যতিরেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুনিয়ার যেসব নারী জান্নাতে যাবে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষভঙ্গি এই যে, যারা দুনিয়াতে কুশ্ৰী, কৃষ্ণাঙ্গ অথবা বৃদ্ধ ছিল; জান্নাতে তাদেরকে সুশ্ৰী দূরবর্তী ও লাবণ্যময়ী করে দেয়া হবে। আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৃহে আগমন করলেন। তখন এক বৃদ্ধা আমার কাছে বসা ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এ কে? আমি আরয করলামঃ সে সম্পর্কে আমার খালা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসচ্ছলে বললেনঃ “জান্নাতে কোন বৃদ্ধা প্রবেশ করবে না”। একথা শুনে বৃদ্ধ বিষন্ন হয়ে গেল। কোন কোন বর্ণনায় আছে কাঁদতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং স্বীয় উক্তির অর্থ এই বর্ণনা করলেন যে, বৃদ্ধারা যখন জান্নাতে যাবে, তখন বৃদ্ধা থাকবে না; বরং যুবতী হয়ে প্ৰবেশ করবে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াত পাঠ করে শোনালেন। [শামায়েলে তিরমিযী: ২৪০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) তাদেরকে (হুরীগণকে) আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৬ فَجَعَلۡنٰهُنَّ اَبۡكَارًا ﴿ۙ۳۶﴾

অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, আল-বায়ান

আর তাদেরকে করেছি কুমারী, তাইসিরুল

তাদেরকে করেছি কুমারী, মুজিবুর রহমান

And made them virgins, Sahih International

৩৬. অতঃপর তাদেরকে করেছি কুমারী(১),

(১) أبكار শব্দটি بكر এর বহুবচন। অর্থ কুমারী বালিকা। [আইসারুত-তাফসীর] উদ্দেশ্য এই যে, জান্নাতের নারীদেরকে কুমারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদেরকে কেউ কখনো স্পর্শ করেনি। অথবা তাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হবে যে, প্রত্যেক সঙ্গম-সহবাসের পর তারা আবার কুমারী হয়ে যাবে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) তাদেরকে করেছি কুমারী। [1]

[1] أَنْشَأْنَاهُنَّ এর মধ্যে সর্বনাম যদিও নিকটের কোন বিশেষ্যকে জ্ঞাপন করছে না, তবুও আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা এটা প্রমাণ করছে যে, এ থেকে উদ্দেশ্য হল সেই নারী ও হুরগণ, যা জান্নাতবাসীরা লাভ করবে। জান্নাতী হুরগণ সাধারণ জন্ম পদ্ধতির মাধ্যমে জন্ম লাভকারিণী নয়, বরং মহান আল্লাহ জান্নাতে তাদেরকে তাঁর বিশেষ কুদরতে বিশেষ পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেছেন। আর হুর ছাড়া পার্থিব স্ত্রীগণকেও জান্নাতবাসীরা স্ত্রী হিসাবে পাবে। এদের মধ্যে বৃদ্ধা, কালো ও কুশ্রী যে যাই হবে, সবাইকে মহান আল্লাহ জান্নাতে যৌবন ও রূপ-লাবণ্য দানে ধন্য করবেন। না কোন বৃদ্ধা বৃদ্ধা থাকবে, আর না কোন কুশ্রী কুশ্রী থাকবে। বরং সবাই হবে কুমারী এবং অনিন্দ্য সুন্দরী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৭ عُرُبًا اَتۡرَابًا ﴿ۙ۳۷﴾

সোহাগিনী ও সমবয়সী। আল-বায়ান

স্বামী ভক্তা, অনুরক্তা আর সমবয়স্কা, তাইসিরুল

সোহাগিনী ও সমবয়স্কা – মুজিবুর রহমান

Devoted [to their husbands] and of equal age, Sahih International

৩৭. সোহাগিনী(১) ও সমবস্কা(২),

(১) عرب শব্দটি عروبة এর বহুবচন। অর্থ স্বামী সোহাগিনী ও প্রেমিকা নারী। আরবী ভাষায় এ শব্দটি মেয়েদের সর্বোত্তম মেয়েসুলভ গুণাবলী বুঝাতে বলা হয়। এ শব্দ দ্বারা এমন মেয়েদের বুঝানো হয় যারা কামনীয় স্বভাব ও বিনীত আচরণের অধিকারিনী, সদালাপী, নারীসুলভ আবেগ অনুভূতি সমৃদ্ধা, মনে প্রাণে স্বামীগত প্রাণ এবং স্বামীও যার প্রতি অনুরাগী। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

(২) أتراب শব্দটি ترب এর বহুবচন। অর্থ সমবয়স্ক। এর দুটি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে তারা তাদের স্বামীদের সমবয়সী হবে। অন্য অর্থটি হচ্ছে, তারা পরস্পর সমবয়স্ক হবে। অর্থাৎ জান্নাতের সমস্ত মেয়েদের একই বয়স হবে এবং চিরদিন সেই বয়সেরই থাকবে। যুগপৎ এ দু'টি অর্থই সঠিক হওয়া অসম্ভব নয়। অর্থাৎ এসব জান্নাতী নারী পরস্পরও সমবয়সী হবে এবং তাদের স্বামীদেরকেও তাদের সমবয়সী বানিয়ে দেয়া হবে। [ইবন কাসীর] “জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্ৰবেশ করলে তাদের শরীরে কোন পশম থাকবে না। দাড়ি থাকবে না। ফর্সা শ্বেত বর্ণ হবে। কুঞ্চিত কেশ হবে। কাজল কাল চোখ হবে এবং সবার বয়স ৩৩ বছর হবে” [তিরমিযী: ২৫৪৫, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৯৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। [1]

[1] عُرُبٌ হল عَرُوْبَةٌ এর বহুবচন। এমন নারী, যে তার রূপ-সৌন্দর্য ও অন্যান্য গুণের কারণে স্বীয় স্বামীর কাছে অত্যন্ত প্রিয়া। أَتْرَابٌ হল تِرْبٌ এর বহুবচন। অর্থ সমবয়স্কা। অর্থাৎ, যেসব নারীদেরকে জান্নাতবাসীরা স্ত্রীরূপে পাবে, তারা সবাই সমবয়স্কা হবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সকল জান্নাতী তেত্রিশ বছর বয়সের হবে। (তিরমিযী) অথবা অর্থ হল, নিজ নিজ স্বামীর সমবয়স্কা হবে। উভয় অবস্থাতে অর্থ একই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৮ لِّاَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ۳۸﴾

ডানদিকের লোকদের জন্য। আল-বায়ান

(এ সব হল) ডান দিকের লোকদের জন্য, তাইসিরুল

(এ সবই) ডান দিকের লোকদের জন্য। মুজিবুর রহমান

For the companions of the right [who are] Sahih International

৩৮. ডানদিকের লোকদের জন্য।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৩৯ ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۳۹﴾

তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। আল-বায়ান

(যারা হবে) পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে বহু সংখ্যক তাইসিরুল

তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে। মুজিবুর রহমান

A company of the former peoples Sahih International

৩৯. তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্যে হতে। [1]

[1] অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকে নিয়ে নবী করীম (সাঃ) পর্যন্ত মানুষদের মধ্য থেকে অথবা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরই উম্মতের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৪০ وَ ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿ؕ۴۰﴾

আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। আল-বায়ান

আর পরবর্তীদের মধ্য থেকে বহুসংখ্যক তাইসিরুল

এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। মুজিবুর রহমান

And a company of the later peoples. Sahih International

৪০. এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।(১)

(১) আয়াতের এক অর্থ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, أَوَّلِينَ বলে এই উম্মতেরই প্রাথমিক লোকদের বোঝানো হয়েছে। আর آخِرِينَ বলে এ উম্মতেরই পরবর্তী লোকদের বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের অর্থ স্পষ্ট। অর্থাৎ এ উম্মতের আসহাবুল ইয়ামীন উম্মতের প্রাথমিক লোকদের থেকে একটি বড় দল হবে। আর শেষের লোকদের থেকেও একটি বড় দল হবে। আর যদি আয়াতে أَوَّلِينَ বলে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সময়ের লোকদের বোঝানো হয় এবং آخِرِينَ বলে এ উম্মতে মুহাম্মদীকেই বোঝানো হয়ে থাকে তবে আয়াতের সারমর্ম এই হবে যে, ‘আসহাবুল-ইয়ামীন’ তথা মুমিন-মুত্তাকীগণ পূর্ববর্তী সমগ্র উম্মতের মধ্য থেকে একটি বড় দল হবে এবং একা উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্য থেকে একটি বড় দল হবে। [দেখুন: কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। [1]

[1] নবী করীম (সাঃ)-এর উম্মতের মধ্য হতে অথবা তাঁর উম্মতের পরবর্তীদের মধ্য থেকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৮৮ فَاَمَّاۤ اِنۡ كَانَ مِنَ الۡمُقَرَّبِیۡنَ ﴿ۙ۸۸﴾

অতঃপর সে যদি নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম হয়, আল-বায়ান

অতএব সে যদি (আল্লাহর) নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয় তাইসিরুল

যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয় – মুজিবুর রহমান

And if the deceased was of those brought near to Allah, Sahih International

৮৮. অতঃপর যদি সে নৈকট্যপ্ৰাপ্তদের একজন হয়,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৮) সুতরাং যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, [1]

[1] সূরার শুরুতে নিজ নিজ কর্ম হিসাবে মানুষের যে তিনটি শ্রেণী উল্লেখ করা হয়েছে, তারই পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। আলোচ্য আয়াতে তার প্রথম শ্রেণীর কথা বলা হচ্ছে, যাদেরকে ‘নৈকট্যপ্রাপ্ত’ ছাড়া অগ্রবর্তীও বলা হয়। কেননা তারা নেকী ও পুণ্যের প্রত্যেক কাজে সর্বদা আগে আগে থাকে এবং ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারেও তারা সবার অগ্রণী হয়। আর এই সদগুণের জন্যই তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত গণ্য হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৮৯ فَرَوۡحٌ وَّ رَیۡحَانٌ ۬ۙ وَّ جَنَّتُ نَعِیۡمٍ ﴿۸۹﴾

তবে তার জন্য থাকবে বিশ্রাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় জান্নাত। আল-বায়ান

তাহলে (তার জন্য আছে) আরাম-শান্তি, উত্তম রিযক আর নি‘মাতে-ভরা জান্নাত। তাইসিরুল

তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় উদ্যান; মুজিবুর রহমান

Then [for him is] rest and bounty and a garden of pleasure. Sahih International

৮৯. তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখদ উদ্যান(১),

(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের প্রাণ তো জান্নাতের গাছে পাখির আকারে থাকবে, পুনরুত্থান দিবসে তার প্রাণকে তার শরীরে ফেরৎ দেয়া পর্যন্ত এভাবেই সে থাকবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৫৫, ইবনে মাজাহঃ ৪২৭১, মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৪৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) তাহলে (তার জন্য রয়েছে) আরাম উত্তম রুযী ও সুখময় জান্নাত;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৯০ وَ اَمَّاۤ اِنۡ كَانَ مِنۡ اَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ۙ۹۰﴾

আর সে যদি হয় ডানদিকের একজন, আল-বায়ান

আর যদি সে ডান দিকের একজন হয় তাইসিরুল

আর যদি সে ডান দিকের একজন হয় – মুজিবুর রহমান

And if he was of the companions of the right, Sahih International

৯০. আর যদি সে ডান দিকের একজন হয়,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯০) আর যদি সে ডান হাত-ওয়ালাদের একজন হয়, [1]

[1] এরা দ্বিতীয় শ্রেণীর সাধারণ মু’মিন। এরাও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাবে। তবে মর্যাদায় অগ্রবর্তীদের তুলনায় কম হবে। মৃত্যুর সময় ফিরিশতারা এদেরকেও নিরাপত্তার সুসংবাদ দিয়ে থাকেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬:৯১ فَسَلٰمٌ لَّكَ مِنۡ اَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ۹۱﴾

তবে (তাকে বলা হবে), ‘তোমাকে সালাম, যেহেতু তুমি ডানদিকের একজন’। আল-বায়ান

তাহলে হে ডানের বাসিন্দা! তোমার জন্য আছে শান্তি ও নিরাপত্তা। তাইসিরুল

তাকে বলা হবেঃ হে দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী! তোমার প্রতি শান্তি। মুজিবুর রহমান

Then [the angels will say], "Peace for you; [you are] from the companions of the right." Sahih International

৯১. তবে তাকে বলা হবে, তোমাকে সালাম যেহেতু তুমি ডান দিকের একজন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯১) তাহলে (তাকে বলা হবে,) তোমার প্রতি শান্তি;[1] কারণ তুমি ডান হাত-ওয়ালাদের একজন।

[1] অথবা (হে মুহাম্মাদ!) ডান হাত-ওয়ালাদের তরফ থেকে তোমার জন্য সালাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৭ আল-হাদীদ
৫৭:২১ سَابِقُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُهَا كَعَرۡضِ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ ۙ اُعِدَّتۡ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ ؕ ذٰلِكَ فَضۡلُ اللّٰهِ یُؤۡتِیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۲۱﴾

তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। আল-বায়ান

তোমরা এগিয়ে যাও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি তা দেন যাকে ইচ্ছে করেন, আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল। তাইসিরুল

তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি এটা দান করেন; আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। মুজিবুর রহমান

Race toward forgiveness from your Lord and a Garden whose width is like the width of the heavens and earth, prepared for those who believed in Allah and His messengers. That is the bounty of Allah which He gives to whom He wills, and Allah is the possessor of great bounty. Sahih International

২১. তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের রবের ক্ষমা ও সে জান্নাত লাভের প্রয়াসে, যা প্রশস্ততায় আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত(১), যা প্ৰস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনে। এটা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তিনি এটা দান করেন(২); আর আল্লাহ্‌ মহাঅনুগ্রহশীল।

(১) সারমর্ম এই যে, অক্ষমতা ও মৃত্যু আসার আগেই তুমি সৎকাজের পুঁজি সংগ্ৰহ করে নাও, যাতে জান্নাতে পৌছতে পার। অগ্ৰে ধাবিত হওয়ার দ্বিতীয় অর্থ এই যে, সৎকাজে অপরের অগ্রণী হওয়ার চেষ্টা কর। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উপদেশাবলীতে বলেনঃ তুমি মসজিদে সর্বপ্রথম গমণকারী এবং সর্বশেষ নিৰ্গমণকারী হও। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সালাতের জামাতে প্রথম তকবিরে উপস্থিত থাকার চেষ্টা কর। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] জান্নাতের পরিধি প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ এর প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান। সূরা আলে-ইমরানে এই বিষয়বস্তুর আয়াতে سموات বহুবচন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, সপ্ত আকাশ ও পৃথিবীর বিস্তৃতি একত্রিত করলে জান্নাতের প্রস্থ হবে। বলাবাহুল্য, প্রত্যেক বস্তুর দৈর্ঘ্য প্রস্থ অপেক্ষা বেশী হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, জান্নাতের বিস্তৃতি সপ্ত আকাশ ও পৃথিবীর বিস্তৃতির চাইতে বেশী। তাছাড়া عرض শব্দটি কোনো সময় কেবল বিস্তৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। তখন দৈর্ঘ্যের বিপরীত অর্থ বোঝানো উদ্দেশ্য থাকে না। উভয় অবস্থাতেই জান্নাতের বিশাল বিস্তৃতিই বোঝা যায়। [দেখুন: কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহ ও কৃপার বদৌলতেই মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের আমল তোমাদের কাউকে মুক্তি দিতে পারে না। সাহাবায়ে-কেরাম আরয করলেনঃ আপনিও কি তদ্রূপ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমিও আমার আমল দ্বারা জান্নাত লাভ করতে পারি না-আল্লাহ তা'আলার দয়া ও অনুকম্প হলেই লাভ করতে পারি। [বুখারী: ৫৬৭৩, মুসলিম: ২৮১৬]

তাছাড়া জান্নাত যেমন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে লাভ করা যায় তেমনিভাবে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য ও আল্লাহর আনুগত্যে প্রতিযোগিতা করার সামৰ্থ কেবল তাঁরই অনুগ্রহে লাভ করা যায়। তিনি যাকে এ ব্যাপারে সুযোগ দিবেন তিনিই কেবল তা লাভ করতে পারে। সুতরাং তাঁর কাছেই এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তৌফিক চাইতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাতের পরে এ কথাটি স্মরণ করে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে ভালবাসি, সুতরাং তুমি সালাতের পরে اللَّهُمَّ أعِنَّا عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ হে আল্লাহ্‌! আমাকে আপনার যিকর, শুকর এবং সুন্দর পদ্ধতিতে ইবাদত করার তৌফিক দিন। [আবু দাউদ: ১৫২২]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অসচ্ছল সাহাবীগণ এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরা উঁচু মর্যাদা ও স্থায়ী নেয়ামতের অধিকারী হয়ে গেল। রাসূল বললেন, সেটা কি করে? তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও তা করে, আমরা সাওম পালন করি, তারাও করে, অধিকন্তু তারা সাদাকাহ দেয়। কিন্তু আমরা তা দিতে পারি না। তারা দাসমুক্ত করে আমরা তা পারি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন বস্তু বলে দিব না যা করলে তোমরা অন্যদের প্রতিযোগিতায় অগ্রণী হয়ে যাবে? কেউ তোমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ হতে পারবেনা। তবে যদি কেউ তোমাদের মত কাজ করে সেটা ভিন্ন কথা। তোমরা প্রতি সালাতের পরে তেত্রিশ বার করে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহমীদ করবে। (সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও আলহামদুলিল্লাহ পড়বে)। পরবর্তীতে অসচ্ছল সাহাবাগণ ফিরে এসে বললেন, আমাদের পয়সাওয়ালা ভাইরা আমরা যা করছি তা শুনে ফেলেছে এবং তারাও তা করতে আরম্ভ করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। [বুখারী: ৮৪৩, মুসলিম: ৫৯৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা[1] ও সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত,[2] যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। [3] আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। [4]

[1] অর্থাৎ, সৎকর্ম ও নিষ্ঠাপূর্ণ তওবার দিকে অগ্রণী হও। কেননা, এ জিনিসগুলোই প্রতিপালকের ক্ষমা লাভের মাধ্যম ও উপকরণ।

[2] আর যার প্রশস্ততা বা প্রস্থ এত, তার দৈর্ঘ্যের পরিমাপ কত হবে? কেননা, দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় সাধারণতঃ বেশীই হয়।

[3] আর এ কথা পরিষ্কার যে, তিনি তারই জন্য ইচ্ছা করেন, যে কুফরী ও পাপাচার থেকে তওবা করে ঈমান ও সৎকর্মের জীবন গড়ে তুলে। সুতরাং তিনি এই ধরনের লোকদেরকে ঈমান গ্রহণ ও সৎকর্ম করার তওফীক দানে ধন্য করেন।

[4] তিনি যাকে চান, তাকে স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন। যাকে তিনি কিছু দিতে চান, তা কেউ রোধ করতে পারে না। আর যা তিনি রোধ করে নেন, তা কেউ দিতে পারে না। যাবতীয় কল্যাণ তাঁরই হাতে। তিনিই এমন অনুকম্পাশীল এবং প্রকৃত মহাদাতা যে, তাঁর মাঝে কৃপণতা কল্পনাই করা যায় না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৮ আল-মুজাদালা
৫৮:২২ لَا تَجِدُ قَوۡمًا یُّؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ یُوَآدُّوۡنَ مَنۡ حَآدَّ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَوۡ كَانُوۡۤا اٰبَآءَهُمۡ اَوۡ اَبۡنَآءَهُمۡ اَوۡ اِخۡوَانَهُمۡ اَوۡ عَشِیۡرَتَهُمۡ ؕ اُولٰٓئِكَ كَتَبَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمُ الۡاِیۡمَانَ وَ اَیَّدَهُمۡ بِرُوۡحٍ مِّنۡهُ ؕ وَ یُدۡخِلُهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ اُولٰٓئِكَ حِزۡبُ اللّٰهِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ حِزۡبَ اللّٰهِ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۲۲﴾

তুমি পাবে না এমন জাতিকে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে, বন্ধুত্ব করতে তার সাথে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম। আল-বায়ান

আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় তুমি পাবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালবাসে- হোক না এই বিরোধীরা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা তাদের ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠী। আল্লাহ এদের অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন, আর নিজের পক্ষ থেকে রূহ দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তাদেরকে তিনি দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী-নালা, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল; জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সাফল্যমন্ডিত। তাইসিরুল

আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় তুমি পাবেনা যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে, হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠি। তাদের অন্তরে (আল্লাহ) ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা; তিনি তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। মুজিবুর রহমান

You will not find a people who believe in Allah and the Last Day having affection for those who oppose Allah and His Messenger, even if they were their fathers or their sons or their brothers or their kindred. Those - He has decreed within their hearts faith and supported them with spirit from Him. And We will admit them to gardens beneath which rivers flow, wherein they abide eternally. Allah is pleased with them, and they are pleased with Him - those are the party of Allah. Unquestionably, the party of Allah - they are the successful. Sahih International

২২. আপনি পাবেননা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালবাসে তাদেরকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে—হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্ৰ, ভাই অথবা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। এদের অন্তরে আল্লাহ লিখে দিয়েছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা।(১) আর তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহ্‌র দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্‌র দলই সফলকাম।

(১) এখানে কেউ কেউ রূহ এর তাফসীর করেছেন নূর, যা মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয়। এই নূরই তার সৎকর্ম ও আন্তরিক প্রশান্তির উপায় হয়ে থাকে। বলাবাহুল্য এ প্রশান্তি একটি বিরাট শক্তি। আবার কেউ কেউ রূহ এর তাফসীর করেছেন, কুরআন ও কুরআনের প্রমাণাদি। [বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবে না,[1] যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে; হোক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জাতি-গোত্র।[2] তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন[3] এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ হতে রূহ (জ্যোতি ও বিজয়) দ্বারা।[4] তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।[5] তারাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো যে, আল্লাহর দলই সফলকাম। [6]

[1] এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমানে এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসে পরিপূর্ণ হয়, সে আল্লাহ এবং রসূলের শত্রুদের সাথে ভালবাসা এবং আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। অর্থাৎ, ঈমান এবং আল্লাহ ও রসূল (সাঃ)-এর শত্রুদের প্রতি ভালবাসা ও সহযোগিতা কোন একটি অন্তরে একত্রিত হতে পারে না। এই বিষয়টিকে কুরআন মাজীদের আরো কয়েকটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সূরা আলে ইমরানের ২৮ ও সূরা তওবার ২৪নং আয়াত ইত্যাদিতে।

[2] কারণ, এদের ঈমান এদেরকে তাদের সাথে ভালবাসা রাখতে বাধা দেয়। আর ঈমানের প্রতি যত্ন, মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং ভাই-বোন ও জাতি-গোত্রের ভালবাসা ও যত্ন অপেক্ষা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম বাস্তবে তা করে দেখিয়েছেন। একজন মুসলিম সাহাবী তাঁর নিজের বাপ, বেটা, ভাই, চাচা এবং মামা ও অন্যান্য আত্মীয়দেরকে হত্যা করতে পিছপা হননি, যখন তারা কুফরীর সমর্থনে কাফেরদের স্বপক্ষে যুদ্ধে শামিল হয়েছে। এই ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে বদর যুদ্ধের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য; যখন যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ হল যে, তাদেরকে বিনিময় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে, না হত্যা করা হবে? তখন উমার (রাঃ)-এর পরামর্শ ছিল যে, কাফের বন্দীদের মধ্য হতে প্রত্যেক বন্দীকে তার আত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক, সে নিজ হাতে তাকে হত্যা করবে। আর মহান আল্লাহ উমার (রাঃ)-এর পরামর্শকেই পছন্দ করেছিলেন। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ সূরা আনফালের ৬৭নং আয়াতের টীকা)

[3] অর্থাৎ, মজবুত ও সুদৃঢ় করেছেন।

[4] ‘রূহ’ অর্থ তাঁর বিশেষ সাহায্য অথবা ঈমানের জ্যোতি যা তাঁরা তাদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের বদৌলতে লাভ করেছেন।

[5] অর্থাৎ, যখন অগ্রণী মুসলিমগণ, সাহাবা (রাঃ)গণ ঈমানের ভিত্তিতে নিজেদের প্রিয়জন এবং আত্মীয়-স্বজন থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, এমন কি তাদেরকে নিজ হাতে হত্যা করতেও কোন দ্বিধা করেননি, তখন এরই প্রতিদান স্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি দানে ধন্য করলেন এবং তাঁদেরকে এমনভাবে পুরস্কৃত করলেন যে, তাঁরা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। এই জন্য আয়াতে বর্ণিত ﴿رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ﴾ এই সম্মান বিশেষ করে সাহাবাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ না হলেও তাঁরাই সর্বপ্রথম ও পরিপূর্ণরূপে এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কাজেই এর ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত প্রত্যেক মুসলিমই رَضِيَ اللهُ عَنه দু’আ লাভের যোগ্য হতে পারে। যেমন, ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের ক্ষেত্রে عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ (দু’আর বাক্যস্বরূপ ) বলা যেতে পারে। তবে আহলে-সুন্নাহ এর ভাষাগত অর্থকে দৃষ্টিচ্যুত করে (বিশেষ পরিভাষারূপে) তা (রায্বিয়াল্লাহু আনহু এবং আলাইহিসসালাম) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম) ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে বলা ও লেখা বৈধ গণ্য করেননি। অর্থাৎ, এটা যেন তাঁদের একটি প্রতীক বা নিদর্শনে পরিণত হয়ে গেছে; رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ সাহাবাদের ক্ষেত্রে এবং عَلَيْهِمُ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ নবীদের ক্ষেত্রে। এটা ঠিক ঐ রকম, যে রকম رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ (তাঁর উপর আল্লাহর রহমত হোক অথবা আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) এর ব্যবহার ভাষাগত অর্থের দিক দিয়ে জীবিত এবং মৃত উভয়ের জন্য হতে পারে। কেননা, এটা একটি দু’আর বাক্য। এর মুখাপেক্ষী জীবিত এবং মৃত উভয়েই। কিন্তু এর ব্যবহার মৃতদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছে, তাই এটাকে জীবিতদের জন্য ব্যবহার করা হয় না।

[6] অর্থাৎ, মু’মিনদের এই দলই সাফল্য লাভ করবে। এঁদের তুলনায় অন্যদের অবস্থা এমন হবে যে, যেন তারা সাফল্য লাভ হতে একেবারে বঞ্চিত। আর আখেরাতে বাস্তবিকই তারা সাফল্য লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৯ আল-হাশর
৫৯:২০ لَا یَسۡتَوِیۡۤ اَصۡحٰبُ النَّارِ وَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ؕ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ هُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ ﴿۲۰﴾

জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসীরা সমান নয়; জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। আল-বায়ান

জাহান্নামের অধিবাসী আর জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না, জান্নাতের অধিবাসীরাই সফল। তাইসিরুল

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম। মুজিবুর রহমান

Not equal are the companions of the Fire and the companions of Paradise. The companions of Paradise - they are the attainers [of success]. Sahih International

২০. জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই তো সফলকাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। [1] জান্নাতের অধিবাসীরাই সফলকাম। [2]

[1] যারা আল্লাহকে ভুলে এ কথাও ভুলে গেছে যে, তারা এইভাবে নিজেদেরই উপর অত্যাচার করছে এবং এক দিন এমন আসবে যে, এর ফলস্বরূপ তাদের এই দেহ, যার জন্যে তারা দুনিয়াতে বহু কষ্ট ও অনেক দৌড়-ঝাঁপ করছে, তা জাহান্নামের আগুনের জ্বালানী হবে। আর এদের বিপরীত কিছু লোক এমন আছে, যারা আল্লাহকে স্মরণে রাখে। তাঁর যাবতীয় বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। এক দিন আসবে, যেদিন আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেবেন এবং স্বীয় জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যেখানে তাদের আরাম ও শান্তির জন্য সব রকমের নিয়ামত ও সুখ-সুবিধা থাকবে। এই উভয় দল অর্থাৎ, জান্নাতী ও জাহান্নামী সমান হবে না। আর উভয় দল সমান কিভাবেই বা হতে পারে? এক দল নিজের পরিণামকে স্মরণে রেখে তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দল নিজের পরিণাম থেকে ছিল উদাসীন। তাই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার ব্যাপারে অপরাধমূলক উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে।

[2] যেমন, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী সফলকাম হয় এবং ভিন্নজন অসফল হয়, অনুরূপ আল্লাহভীরু মু’মিন জান্নাত লাভের সফলতা অর্জন করবে। কারণ, এর জন্য সে দুনিয়াতে সৎকর্মের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ, দুনিয়া হল কর্মক্ষেত্র ও পরীক্ষালয়। যে এই বাস্তবতাকে বুঝে নেবে এবং পরিণাম থেকে উদাসীন হয়ে জীবন-যাপন করবে না, সে সফলতা অর্জন করবে। পক্ষান্তরে যে পার্থিব জীবনের বাস্তবতাকে বুঝতে না পেরে পরিণাম থেকে উদাসীন হয়ে অন্যায়-অনাচারে লিপ্ত থাকবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবে। اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الْفَائْزِيْنَ

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬১ আস-সফ
৬১:১০ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّكُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡكُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿۱۰﴾

হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? আল-বায়ান

হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে মর্মান্তিক ‘আযাব থেকে রক্ষা করবে? তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে? মুজিবুর রহমান

O you who have believed, shall I guide you to a transaction that will save you from a painful punishment? Sahih International

১০. হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, [1] যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে?

[1] এই আমল (অর্থাৎ, ঈমান ও জিহাদ)-কে বাণিজ্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ এতেও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের মত লাভ হবে। আর সে লাভ কি? জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ। এ থেকে বড় লাভ আর কি হতে পারে? এই লাভকে আল্লাহ অন্যত্র এইভাবে বর্ণনা করেছেন, إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ‘‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’’ (সূরা তাওবাহঃ ১১১)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬১ আস-সফ
৬১:১১ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِكُمۡ وَ اَنۡفُسِكُمۡ ؕ ذٰلِكُمۡ خَیۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿ۙ۱۱﴾

তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। আল-বায়ান

(তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনো আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর; এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে! তাইসিরুল

তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। মুজিবুর রহমান

[It is that] you believe in Allah and His Messenger and strive in the cause of Allah with your wealth and your lives. That is best for you, if you should know. Sahih International

১১. তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্ৰেয় যদি তোমরা জানতে!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬১ আস-সফ
৬১:১২ یَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ وَ یُدۡخِلۡكُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَ مَسٰكِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿ۙ۱۲﴾

তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম আবাসগুলোতেও (প্রবেশ করবেন)। এটাই মহাসাফল্য। আল-বায়ান

(তোমরা যদি আল্লাহর সন্ধান দেয়া ব্যবসা কর তাহলে) তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতে অতি উত্তম ঘর তোমাদেরকে দান করবেন। এটাই বিরাট সাফল্য। তাইসিরুল

আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। মুজিবুর রহমান

He will forgive for you your sins and admit you to gardens beneath which rivers flow and pleasant dwellings in gardens of perpetual residence. That is the great attainment. Sahih International

১২. আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) আল্লাহ তোমাদের পাপরাশিকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬৫ আত-ত্বলাক্ব
৬৫:১১ رَّسُوۡلًا یَّتۡلُوۡا عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتِ اللّٰهِ مُبَیِّنٰتٍ لِّیُخۡرِجَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَ مَنۡ یُّؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ وَ یَعۡمَلۡ صَالِحًا یُّدۡخِلۡهُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ قَدۡ اَحۡسَنَ اللّٰهُ لَهٗ رِزۡقًا ﴿۱۱﴾

একজন রাসূল, যে তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে; যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে যাতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনতে পারেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তো তাকে অতি উত্তম রিয্ক দেবেন। আল-বায়ান

(তদুপরি তিনি পাঠিয়েছেন) একজন রসূল যে তোমাদের কাছে আল্লাহর স্পষ্ট আয়াত পাঠ করে, যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে গাঢ় অন্ধকার থেকে আলোতে আনার জন্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে নির্ঝরিণী। তাতে তারা চিরকাল সর্বকাল থাকবে। আল্লাহ তার জন্য অতি উত্তম রিযকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তাইসিরুল

প্রেরণ করেছেন এমন এক রাসূল যে তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করে, যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনার জন্য। যে কেহ আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাকে উত্তম জীবনোপকরণ দিবেন। মুজিবুর রহমান

[He sent] a Messenger [Muhammad] reciting to you the distinct verses of Allah that He may bring out those who believe and do righteous deeds from darknesses into the light. And whoever believes in Allah and does righteousness - He will admit him into gardens beneath which rivers flow to abide therein forever. Allah will have perfected for him a provision. Sahih International

১১. এক রাসূল, যে তোমাদের কাছে আল্লাহ্‌র সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করে তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনার জন্য। আর যে কেউ আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তিনি তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ্‌ তো তাকে উত্তম রিযিক দেবেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) (প্রেরণ করেছেন) এমন এক রসূল,[1] যে তোমাদের নিকট আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, যাতে যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোকে বের করে আনে।[2] যে কেউ আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে,[3] তিনি তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাকে উত্তম রুযী দান করবেন।

[1] رَسُول শব্দটি ذِكْر শব্দের বদল বা তার পরিবর্ত স্বরূপ ব্যবহার হয়েছে। ‘মুবালাগা’ তথা আধিক্য বুঝানোর জন্য রসূলকে যিকর (উপদেশ) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন عَدل মানে ন্যায়পরায়ণতার মূর্তপ্রতীক (তেমনি ذِكر মানে উপদেশের মূর্তপ্রতীক)। অথবা ذِكْر অর্থ কুরআন এবং رسولًا এর পূর্বে أَرسَلْنَا ক্রিয়াপদ ঊহ্য মেনে নিতে হবে। অর্থ দাঁড়াবে, অবতীর্ণ করেছেন উপদেশ (কুরআন) এবং প্রেরণ করেছেন এক রসূল।

[2] এখানে রসূলের মর্যাদা ও তাঁর দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে, তিনি কুরআনের মাধ্যমে নৈতিকতার অধঃপতন এবং শিরক ও ভ্রষ্টতার অন্ধকার থেকে বের করে ঈমান ও নেক আমলের জ্যোতির দিকে নিয়ে এসেছেন। আর রসূল বলতে এখানে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।

[3] নেক আমলের মধ্যে দু’টি জিনিস শামিল থাকে। যথা, আদেশাবলী ও যাবতীয় ফরয কাজগুলো আদায় করা এবং সকল প্রকার অবাধ্যতা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ, জান্নাতে কেবল সেই ঈমানদাররাই প্রবেশ করবেন, যাঁরা শুধুমাত্র মৌখিকভাবেই ঈমানের দাবী করেননি, বরং তাঁরা ঈমানের দাবীসমূহ অনুযায়ী ফরয কাজগুলো আদায় করেছেন এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২০১ থেকে ২২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৭৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 8 9 10 11 12 13 14 পরের পাতা »