শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালবাস এবং তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয়, তোমাদের উপর রাগে আঙ্গুল কামড়ায়। বল, ‘তোমরা তোমাদের রাগ নিয়ে মর’! নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত। আল-বায়ান
অবশ্য তোমরাই সেই লোক যে, তোমরা তাদেরকে মহববত কর, কিন্তু তারা তোমাদের সাথে মহববত রাখে না, উপরন্তু তোমরা সকল কিতাবের প্রতিও বিশ্বাস রাখ এবং যখন তারা তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন বলে যে, ‘আমরাও ঈমান এনেছি’ এবং যখন তারা একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি গোস্বায় নিজেদের আঙ্গুলের মাথা কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বল, ‘তোমরা নিজেদের গোস্বায় মরতে থাক’। বস্তুতঃ অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা খুব ভালভাবেই জানেন। তাইসিরুল
সাবধান হও - তোমরাই তাদেরকে ভালবাস, অথচ তারা তোমাদেরকে ভালবাসেনা; এবং তোমরা সমস্ত গ্রন্থই বিশ্বাস কর; আর তারা যখন তোমাদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং যখন তোমাদের হতে পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে আঙ্গুলের অগ্রভাগসমূহ দংশন করে। তুমি বলঃ তোমরা নিজেদের আক্রোশে মরে যাও! নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের কথা জ্ঞাত আছেন। মুজিবুর রহমান
Here you are loving them but they are not loving you, while you believe in the Scripture - all of it. And when they meet you, they say, "We believe." But when they are alone, they bite their fingertips at you in rage. Say, "Die in your rage. Indeed, Allah is Knowing of that within the breasts." Sahih International
১১৯. দেখ, তোমরাই তাদেরকে ভালবাস কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সব কিতাবে ঈমান রাখ। আর তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি; কিন্তু তারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁত দিয়ে কাটতে থাকে। বলুন, ‘তোমাদের আক্রোশেই তোমরা মর। নিশ্চয় অন্তরে যা রয়েছে সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৯) ভেবে দেখ! তোমরা (বন্ধু ভেবে) তাদেরকে ভালবাস;[1] কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবে বিশ্বাস কর, (কিন্তু তারা তোমাদের কিতাবে বিশ্বাস করে না) এবং যখন তারা তোমাদের সাক্ষাতে আসে, তখন তারা বলে, ‘আমরা বিশ্বাস করি।’ কিন্তু যখন তারা একা হয়, তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুল দাঁতে কাটে।[2] বল, আক্রোশেই মর তোমরা। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা রয়েছে, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
[1] অর্থাৎ, তোমরা ঐ মুনাফিকদের নামায এবং (মৌখিকভাবে) তাদের ঈমান প্রকাশ করার কারণে ধোঁকায় পড়ে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কর।
[2] عَضَّ يَعُضُّ এর অর্থ হল দাঁত দিয়ে কাটা। এই শব্দ দ্বারা তাদের রোষ ও ক্রোধের ভীষণতা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন পরের [اِنْ تَمْسَسْكُمْ] আয়াতেও তাদের ক্রোধের ধরন প্রকাশ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীগণ যা রেখে গেছে তার অর্ধেক, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তারা যা রেখে গেছে তা থেকে তোমাদের জন্য চার ভাগের এক ভাগ। তারা যে অসিয়ত করে গেছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর স্ত্রীদের জন্য তোমরা যা রেখে গিয়েছ তা থেকে চার ভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে। তোমরা যে অসিয়ত করেছ তা পালন অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর যদি মা বাবা এবং সন্তান-সন্ততি নাই এমন কোন পুরুষ বা মহিলা মারা যায় এবং তার থাকে এক ভাই অথবা এক বোন, তখন তাদের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের একভাগ। আর যদি তারা এর থেকে অধিক হয় তবে তারা সবাই তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে সমঅংশীদার হবে, যে অসিয়ত করা হয়েছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। কারো কোন ক্ষতি না করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে অসিয়তস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। আল-বায়ান
তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য- যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে আর যদি সন্তান থাকে, তবে তোমাদের জন্য তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ, তাদের কৃত ওয়াসীয়াত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর এবং তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির সিকি অংশ পাবে যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির আট ভাগের একভাগ- তোমাদের কৃত ওয়াসীয়ত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। যদি পিতা-মাতাহীন ও সন্তানহীন কোন পুরুষ বা নারীর শুধু বৈপিত্রেয় একটি ভাই বা একটি ভগ্নি থাকে, তবে প্রত্যেকের জন্য ছ’ ভাগের এক ভাগ। যদি তারা তার চেয়ে অধিক হয়, তবে সকলেই তৃতীয়াংশে শরীক হবে কৃত ওয়াসীয়াত কিংবা ঋণ পরিশোধের পরে, যদি কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়, এ হল আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। তাইসিরুল
আর তোমাদের পত্নীগণের যদি সন্তান-সন্ততি না থাকে তাহলে তারা যা পরিত্যাগ করে যায় তা থেকে তোমাদের জন্য উহার অর্ধাংশ; কিন্তু যদি তাদের সন্তান-সন্ততি থাকে তাহলে তারা যা অসীয়াত করেছে সেই অসীয়াত ও ঋণ পরিশোধের পর তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে তোমাদের জন্য এক চতুর্থাংশ; এবং যদি তোমাদের স্ত্রীদের কোন সন্তান-সন্ততি না থাকে তাহলে তোমরা যা পরিত্যাগ করে যাবে, তাদের জন্য তার এক চতুর্থাংশ; কিন্তু যদি তোমাদের সন্তুান-সন্ততি থাকে তাহলে তোমরা যা অসীয়াত করবে সেই অসীয়াত ও ঋণ পরিশোধের পর তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে তাদের জন্য এক অষ্টমাংশ; যদি কোন মূল ও শাখাবিহীন পুরুষ কিংবা স্ত্রী মারা যায় এবং তার এক ভাই অথবা এক ভগ্নী থাকে তাহলে এতদুভয়ের মধ্য হতে প্রত্যেকেই এক ষষ্ঠাংশ পাবে, আর যদি তারা তদপেক্ষা অধিক হয় তাহলে কৃত অসীয়াত পূরণ করার পর অথবা ঋণ শোধের পর, কারও অনিষ্ট না করে তারা উহার এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্ত হবে; এটাই আল্লাহর নির্দেশ এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সহিষ্ণু। মুজিবুর রহমান
And for you is half of what your wives leave if they have no child. But if they have a child, for you is one fourth of what they leave, after any bequest they [may have] made or debt. And for the wives is one fourth if you leave no child. But if you leave a child, then for them is an eighth of what you leave, after any bequest you [may have] made or debt. And if a man or woman leaves neither ascendants nor descendants but has a brother or a sister, then for each one of them is a sixth. But if they are more than two, they share a third, after any bequest which was made or debt, as long as there is no detriment [caused]. [This is] an ordinance from Allah, and Allah is Knowing and Forbearing. Sahih International
১২. তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ; ওসিয়ত পালন এবং ঋন পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ; তোমরা যা ওসিয়াত করবে তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর(১)। আর যদি কোন পুরুষ অথবা নারীর ‘কালালাহ(২) বা পিতা-মাতা ও সন্তানহীন উত্তরাধিকারী হয়, আর থাকে তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন, তবে প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। তারা এর বেশী হলে সবাই সমান অংশীদার হবে তিন ভাগের এক ভাগে; এটা যা ওসিয়াত করা হয় তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর, কারো ক্ষতি না করে(৩)। এ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
(১) উপরোক্ত বর্ণনায় স্ত্রীর অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে স্বামীর অংশ ব্যক্ত করা হয়েছে। মৃতা স্ত্রীর যদি কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্বামী তার সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। অবশিষ্ট অর্ধেক থেকে অন্যান্য ওয়ারিশ যেমন মৃতার পিতা-মাতা, ভাই-বোন যথারীতি অংশ পাবে। মৃতার যদি সন্তান থাকে, এক বা একাধিক - পুত্র বা কন্যা, এ স্বামীর ঔরসজাত হোক বা পূর্ববর্তী কোন স্বামীর ঔরসজাত, তবে বর্তমান স্বামী ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর মৃতার সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। অবশিষ্ট তিন-চতুর্থাংশ অন্যান্য ওয়ারশরা পাবে। পক্ষান্তরে যদি স্বামী মারা যায় এবং তার কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে, এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ পাবে।
স্ত্রী একাধিক হলেও উপরোক্ত বিবরণ অনুযায়ী এক অংশ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমহারে বন্টন করা হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রীই এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশ পাবে না, বরং সবাই মিলে এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশে অংশীদার হবে। উভয় অবস্থাতে স্বামী অথবা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তাদের অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে প্রথমে দেখা উচিত যে, যদি স্ত্রীর মাহর পরিশোধ করা না হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মতই প্রথমে মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে মাহর পরিশোধ করার পর ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হবে। মোহারানা দেয়ার পর স্ত্রী ওয়ারিশী স্বত্বে অংশীদার হবার দরুন এ অংশও নেবে। মাহর পরিশোধ করার পর যদি মৃত স্বামীর সম্পত্তি অবশিষ্ট না থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মত সম্পূর্ণ সম্পত্তি মাহর বাবদ স্ত্রীকে সমর্পণ করা হবে এবং কোন ওয়ারিশই অংশ পাবে না।
(২) আলোচ্য আয়াতে কালালাহ'র পরিত্যক্ত সম্পত্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে। কালালাহ'র অনেক সংজ্ঞা রয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে মৃত ব্যক্তির ঊর্ধ্বতন ও অধঃস্তন কেউ নেই, সে-ই কালালাহ। [তাবারী]
(৩) ‘কারো ক্ষতি না করে’ এ কথার দুটি দিক আছে। প্রথমত, মৃত ব্যক্তি যেন ওসিয়ত বা ঋণের মাধ্যমে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। ওসিয়ত করা কিংবা নিজের যিম্মায় ভিত্তিহীন ঋণ স্বীকার করার মাধ্যমে ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা লুকায়িত না রাখে। এ রকমের ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও কবিরা গোনাহ। দ্বিতীয়ত, যারা কালালাহ জনিত ওয়ারিশ তারাও যেন মৃত ব্যক্তির ন্যায়সঙ্গত অসিয়ত কার্যকরণে কোন প্রকার বাধা না দেয়। ইবন আব্বাস বলেন, ওসিয়্যতে ক্ষতিগ্রস্ত করা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে, কিন্তু তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ। [1] এ তারা যা অসিয়ৎ করে তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর। আর তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ তাদের জন্য, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ।[2] এ তোমরা যা অসিয়ৎ কর তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর। যদি কোন পুরুষ অথবা নারী পিতা-মাতা ও সন্তানহীন অবস্থায় কাউকে উত্তরাধিকারী করে[3] এবং তার এক (বৈপিত্রেয়) ভাই ও বোন থাকে,[4] তবে প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। তারা এর অধিক হলে সকলে এক-তৃতীয়াংশের অংশীদার হবে।[5] এ যা অসিয়ৎ করা হয় তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর[6] এবং এ যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়।[7] এ হল আল্লাহর নির্দেশ। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম সহনশীল।
[1] সন্তানাদি না থাকা অবস্থায় পুত্রের সন্তানরা অর্থাৎ, পোতারা সন্তানের বিধানভুক্ত হবে। এ ব্যাপারে উলামাগণ ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর) মৃত স্বামীর সন্তানাদির বিধানও অনুরূপ, তাতে তারা উত্তরাধিকারিণী এই স্ত্রীর গর্ভজাত হোক অথবা তার অপর কোন স্ত্রীর গর্ভজাত হোক। মৃতা স্ত্রীর সন্তানাদির ব্যাপারটাও অনুরূপ, তাতে তারা এই স্ত্রীর উত্তরাধিকারী স্বামীর হোক অথবা স্ত্রীর পূর্বের স্বামীর হোক।
[2] স্ত্রী একজন হলে সে এক চতুর্থাংশ অথবা এক অষ্টমাংশ পাবে। অনুরূপ একাধিক স্ত্রী হলেও এই অংশই (এক চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশ) তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। প্রত্যেকে একাকিনী এক চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশ পাবে না। এ ব্যাপারেও সকলে একমত। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] كَلالَة এর অর্থ হল, এমন মৃত যার না পিতা আছে, না পুত্র। এটা إكلِيل ধাতু থেকে গঠিত। আর তা এমন জিনিস (মুকুট)-কে বলা হয় যা মাথাকে তার চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে। ‘কালালা’কে এই জন্যই ‘কালালা’ বলা হয় যে, মূল বা শাখা হিসাবে তো তার কেউ ওয়ারিস হয় না, কিন্তু ধার-পাশ দিয়ে ওয়ারিস গণ্য হয়ে যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর) বলা হয় যে, ‘কালালা’ كلل ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ, ক্লান্ত হয়ে পড়া। অর্থাৎ, বংশ সূত্র মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, সামনে আর অগ্রসর হতে পারেনি।
[4] এ থেকে বৈপিত্রেয় (এক মাতার গর্ভে ভিন্ন পিতার ঔরসজাত) ভাই-বোনকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, সহোদর ও বৈমাত্রেয় ভাই-বোনদের অংশ এই রকম নয়। এদের বর্ণনা সূরার শেষে আসবে। আর এ মতও সর্বসম্মত মত। আসলে জন্মসূত্র সম্পর্কিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে [لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ] (একটি পুরুষের ভাগ দুটি মহিলার সমান) নিয়ম চলে। এই কারণেই বেটা-বেটীদের জন্য এখানে এবং ভাই-বোনদের জন্য সূরা নিসার শেষের আয়াতে এই নিয়মের কথাই আলোচিত হয়েছে। কিন্তু মায়ের সন্তানদের (বৈপিত্রেয় ভাই-বোনদের) যেহেতু জন্মসূত্রের নিয়মে অংশ ভাগ হয় না, তাই তাদের (নারী-পুরুষ) সকলকে সমান সমান অংশ দেওয়া হয়। কথা হল, কেবল একজন ভাই অথবা একজন বোন হলে, প্রত্যেকে এক ষষ্ঠাংশ পাবে।
[5] আর একাধিক হলে সকলে এক তৃতীয়াংশে শরীক হবে। অনুরূপ এদের মধ্যে নারী-পুরুষেরও কোন পার্থক্য হবে না। নারী-পুরুষ সকলে সমান সমান অংশ পাবে।
বিঃ দ্রষ্টব্যঃ বৈপিত্রেয় ভাই-বোন কোন কোন বিধানে অন্যান্য ওয়ারিসদের থেকে ভিন্ন। যেমনঃ (ক) এরা কেবল তাদের মায়ের কারণে ওয়ারিস হবে। (খ) এদের নারী-পুরুষের অংশ সমান সমান হবে। (গ) এরা তখনই ওয়ারিস হবে, যখন মৃত ‘কালালা’ (মূল ও শাখাবিহীন) হবে। অতএব পিতা, পিতামহ, পুত্র এবং পৌত্রের উপস্থিতিতে এরা ওয়ারিস হবে না। (ঘ) তারা নারী-পুরুষ যত জনই হোক না কেন, তাদের অংশ এক তৃতীয়াংশের বেশী হবে না এবং যেমন পূর্বে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের মৃত বৈপিত্রেয় ভাই থেকে যে মাল পাবে তাতে নারী ও পুরুষের অংশ সমান সমান হবে; পুরুষরা নারীদের দ্বিগুণ পাবে না। উমার (রাঃ) তাঁর রাজত্বকালে এই ফায়সালাই করেছিলেন। ইমাম যুহরী বলেন, উমার (রাঃ) যখন এ ফায়সালা করেছেন, তখন অবশ্যই তাঁর কাছে এ ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ) এর কোন হাদীস ছিল। (ইবনে কাসীর)
[6] মীরাসের বিধান বর্ণনা করার সাথে সাথে এখানে তৃতীয়বার বলা হচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তির ভাগাভাগি তার অসিয়ত পালন এবং ঋণ পরিশোধ করার পর হবে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই দু’টি বিষয়ের উপর আমল করা অতীব জরুরী। অতঃপর এ ব্যাপারেও সকলে একমত যে, প্রথমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, তারপর অসিয়ত কার্যকরী হবে। কিন্তু মহান আল্লাহ তিন স্থানেই অসিয়তের উল্লেখ ঋণের পূর্বে করেছেন। অথচ ক্রমানুযায়ী ঋণের উল্লেখ প্রথমে হওয়া উচিত ছিল। এর কারণ হল, ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব তো মানুষ দেয়, না দিলেও প্রাপক জোর করে তা আদায় করে নেয়। কিন্তু অসিয়তের উপর আমল করা জরুরী মনে করা হয় না। অধিকাংশ লোক এ ব্যাপারে ঢিলামি ও গড়িমসি করে। এই কারণেই অসিয়তের কথা আগে উল্লেখ করে তার গুরুত্বের কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। (রূহুল মাআ’নী)
বিঃ দ্রষ্টব্যঃ যদি স্ত্রীর দেনমোহর আদায় করা না হয়, তাহলে সেটাও ঋণ বলে গণ্য এবং ত্যক্ত সম্পত্তির ভাগাভাগির পূর্বে তা আদায় করা জরুরী হবে। আর তার (স্ত্রীর) নির্দিষ্ট অংশ হবে এ থেকে পৃথক।
[7] এটা এইভাবে যে, অসিয়তের মাধ্যমে কোন ওয়ারিসকে বঞ্চিত করা হবে অথবা কারো অংশে কমবেশী করা হবে কিংবা কেবল ওয়ারিসদের ক্ষতি করার জন্য বলে দেবে যে, অমুকের কাছ থেকে এতটা ঋণ নিয়েছি, অথচ সে কিছুই নেয়নি। অর্থাৎ, ক্ষতির সম্পর্ক অসিয়ত ও ঋণ উভয়েরই সাথে এবং এই উভয় পন্থায় ক্ষতিগ্রস্ত করা নিষেধ ও তা মহাপাপ। পরন্তু এ রকম অসিয়তও বাতিল গণ্য হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় তাওবা কবূল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
নিশ্চয়ই যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে বসে, তৎপর সত্বর তাওবাহ করে, এরাই তারা যাদের তাওবাহ আল্লাহ কবূল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল
তাওবাহ কবূল করার দায়িত্ব যে আল্লাহর উপর রয়েছে তাতো শুধু তাদেরই জন্য যারা অজ্ঞতা বশতঃ পাপ করে থাকে, অতঃপর অবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করে; সুতরাং আল্লাহ তাদেরকেই ক্ষমা করবেন; আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান
The repentance accepted by Allah is only for those who do wrong in ignorance [or carelessness] and then repent soon after. It is those to whom Allah will turn in forgiveness, and Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International
১৭. আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবাহ কবুল করবেন যারা অজ্ঞতাবশতঃ(১) মন্দ কাজ করে এবং তাড়াতাড়ি তাওবাহ করে, এরাই তারা, যাদের তাওবাহ আল্লাহ কবুল করেন(২)। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কুরআনুল কারীমে بِجَهَالَةٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায়, অজ্ঞাতসারে এবং না জেনে-শুনে গোনাহ করলে তাওবা কবুল হবে এবং জ্ঞাতসারে জেনে-শুনে গোনাহ করলে তাওবা কবুল হবে না। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম এ আয়াতের যে তাফসীর করেছেন তা এই যে, এখানে আয়াতের بِجَهَالَةٍ অর্থ এই নয় যে, সে গোনাহর কাজটি যে গোনাহ, তা জানে না কিংবা গোনাহর ইচ্ছা নেই; বরং অর্থ এই যে, গোনাহর অশুভ পরিণাম ও আখেরাতের আযাবের ব্যাপারে গাফেল বা অসতর্কতাই তার গোনাহর কাজ করার কারণ; যদিও গোনাহটি যে গোনাহ, তা সে জানে এবং তার ইচ্ছাও করে। তাই جهالة শব্দটি এখানে নির্বুদ্ধিতা ও বোকামির অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আবুল আলিয়া ও কাতাদাহর বর্ণনা মতে সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত ছিলেন যে, বান্দা যে গোনাহ্ করে- অনিচ্ছাকৃত করুক কিংবা ইচ্ছাকৃত, সর্বাবস্থায়ই তা মূর্খতা।
তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেন, যে ব্যক্তি কোন কাজে আল্লাহর নাফরমানী করছে, সে দৃশ্যতঃ বড় আলেম ও বিশেষ জানা-শোনা বিচক্ষণ হলেও সে কাজ করার সময় মূৰ্খই হয়ে যায়। ইকরিমা বলেন, দুনিয়ার যেসব কাজ আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে, সেগুলো সবই মূর্খতা। কারণ এই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করে, সে ক্ষণস্থায়ী সুখকে চিরস্থায়ী সুখের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করে। যে ব্যক্তি এই ক্ষণস্থায়ী সুখের বিনিময়ে চিরস্থায়ী কঠোর আযাব ক্রয় করে, তাকে বুদ্ধিমান বলা যায় না। তাকে সবাই মূর্খ বলবে, যদিও সে ভালভাবে জানা ও বোঝার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে সে কুকর্ম সম্পাদন করে। মোটকথা, গোনাহর কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে হোক কিংবা ভুলক্রমে, উভয় অবস্থাতেই তা মূর্খতাবশতঃ সম্পন্ন হয়। এ কারণেই সাহাবা, তাবেয়ীন ও সমগ্র উম্মতের এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন গোনাহ করে, শর্তসাপেক্ষে তার তাওবাও কবুল হতে পারে। তাছাড়া আয়াতের আরেক অর্থ এও হতে পারে যে, তারা গোনাহ করার সময় এর পরিণাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না। অথবা সে অপরাধ করার সময় আল্লাহ যে তাকে দেখছেন সে ব্যাপারে বেখবর হয়ে পড়ে। অথবা সে যখন অপরাধ করে তখন যে তার ঈমানের মধ্যে দূর্বলতা আসবে সে সম্পর্কে গাফেল হয়ে পড়ে। [তাফসীরে সা’দী]
(২) এখানে তাড়াতাড়ি তাওবাহ করা শর্তের অর্থ হলো দুটি- (এক) মৃত্যুর বড় শ্বাস বের না হওয়ার আগ পর্যন্ত করা। [তিরমিযীঃ ৩৫৩৭, ইবন মাজাহঃ ৪২৫৩] (দুই) সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত করা। [দেখুন, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) আল্লাহ অবশ্যই সেই সব লোকের তওবা গ্রহণ করবেন, যারা অজ্ঞাতসারে মন্দ কাজ করে বসে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে নেয়; এরাই তো তারা, যাদের তওবা আল্লাহ গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের নিকট সবিস্তারে বর্ণনা করতে তোমাদের আগেকার লোকেদের নিয়মনীতি তোমাদের দেখানোর গ্রহণের জন্য, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করার জন্য; বস্তুতঃ আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত, পরম কুশলী। তাইসিরুল
আল্লাহ তোমাদের জন্য সবকিছু পরিস্কার বর্ণনা করতে এবং তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের আদর্শসমূহ প্রদর্শন করতে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান
Allah wants to make clear to you [the lawful from the unlawful] and guide you to the [good] practices of those before you and to accept your repentance. And Allah is Knowing and Wise. Sahih International
২৬. আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের কাছে বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে।(১) আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মা ও কন্যাদের হারাম হওয়ার ব্যাপারটি বিস্তারিত বর্ণনা করতে চান। আর এটাও জানিয়ে দিতে চান যে, এটা পূর্বে কখনও হালাল ছিল না। সব শরীআতেই মা ও মেয়ে হারাম ছিল। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অনুরূপভাবে তিনি চান তোমাদেরকে হিদায়াত দিতে বা মিল্লাতে ইবরাহীমীর প্রতি দিকনির্দেশ করতে এবং বর্ণনা আসার পূর্বে তোমাদের কৃত এ জাতীয় গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিতে। [বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আল্লাহ (তাঁর বিধান) তোমাদের নিকট বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শে পরিচালনা করতে এবং তোমাদের তওবা কবুল করতে চান। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন ‘কালালা’* সম্পর্কে। কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোন সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (মহিলা)যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দু’জন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে’। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ’। আল-বায়ান
লোকেরা তোমার কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করছে; বল, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে ফাতাওয়া দিচ্ছেন, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার যদি সন্তান না থাকে আর তার একটি বোন থাকে, তবে রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক সে পাবে, আর সে (মৃত নারী) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে, আর দু’ বোন থাকলে তারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির দু’-তৃতীয়াংশ পাবে, আর যদি ভাই ও বোন দু’ই থাকে, তবে পুরুষ পাবে দু’জন নারীর সমান। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে তোমরা বিভ্রান্তিতে পতিত না হও। আল্লাহ যাবতীয় ব্যাপারে পূর্ণরূপে অবহিত। তাইসিরুল
তারা তোমাদের নিকট ব্যবস্থা প্রার্থনা করছে, তুমি বলঃ আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-পুত্রহীন সম্বন্ধে ব্যবস্থা দান করেছেন। যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় এবং তার ভগ্নী থাকে তাহলে সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে অর্ধাংশ পাবে; এবং যদি কোন নারীর সন্তান না থাকে তাহলে তার ভাইই তদীয় উত্তরাধিকারী হবে; কিন্তু যদি দুই ভগ্নী থাকে তাহলে তাদের উভয়ের জন্য পরিত্যক্ত বিষয়ের দুই তৃতীয়াংশ এবং যদি তার ভাই ভগ্নী-পুরুষ ও নারীগণ থাকে তাহলে পুরুষ দুই নারীর তুল্য অংশ পাবে; আল্লাহ তোমাদের জন্য বর্ণনা করছেন যেন তোমরা বিভ্রান্ত না হও, এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান
They request from you a [legal] ruling. Say, "Allah gives you a ruling concerning one having neither descendants nor ascendants [as heirs]." If a man dies, leaving no child but [only] a sister, she will have half of what he left. And he inherits from her if she [dies and] has no child. But if there are two sisters [or more], they will have two-thirds of what he left. If there are both brothers and sisters, the male will have the share of two females. Allah makes clear to you [His law], lest you go astray. And Allah is Knowing of all things. Sahih International
* যার পিতা মাতা জীবিত নেই এবং যে সন্তানহীন তাকে ‘কালালা’ বলা হয়।
১৭৬. লোকেরা আপনার কাছে ব্যবস্থা জানতে চায়(১)। বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদেরকে আল্লাহ ব্যবস্থা জানাচ্ছেন, কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক বোন থাকে(২) তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক। আর সে (মহিলা) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। অতঃপর যদি দুই বোন থাকে তবে তাদের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু'ভাগ। আর যদি ভাইবোন উভয়ে থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। তোমরা পথভ্রষ্ট হবে এ আশংকায় আল্লাহ্ তোমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন এবং আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।(৩)
(১) জাবের ইবন আবদুল্লাহ বলেন, আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তিনি অজু করে আমার উপর পানি ছিটিয়ে দিলে আমার হুশ আসে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মীরাস কারা পাবে? আমার তো ‘কালালাহ’ ছাড়া আর কোন ওয়ারিশ নেই। তখন ফারায়েযের আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী: ১৯৪; মুসলিম: ১৬১৬]
(২) আল্লামা শানকীতী বলেন, এখানে এমন সব ভাই-বোনের মীরাসের কথা বলা হচ্ছে, যারা মৃতের সাথে বাবা-মা উভয়ের দিক থেকে অথবা শুধুমাত্র বাবার দিক থেকে শরীক। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার তার এক ভাষণে এ ব্যাখ্যাই করেছিলেন। কোন সাহাবা তার এই ব্যাখ্যার সাথে মতবিরোধ করেননি। ফলে এটি একটি ইজমা বা সর্বসম্মত মতে পরিণত হয়েছে। আয়াতে এক বোনের জন্য অর্ধেক। আর দুই বোনের জন্য দুই তৃতীয়াংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি দুই এর অধিক বোন থাকে তবে তাদের ব্যাপারে এখানে কিছু বলা হয় নি। অন্য আয়াতে সেটাও বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে যে, বোনদের সর্বোচ্চ অংশ হচ্ছে, দুই তৃতীয়াংশ। তারা যত বেশীই হোক না কেন এ সীমা অতিক্রম করে যাবে না। বলা হয়েছে, অতঃপর যদি তারা দুই এর অধিক মহিলা হয়, তবে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশের মালিক হবে। [সূরা আন-নিসা ১১]
(৩) বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সবশেষে নাযিলকৃত সূরা হল সূরা বারাআত (তাওবাহ)। আর সবশেষে নাযিলকৃত আয়াত হল এই আয়াত। [বুখারীঃ ৪৩৬৪, ৪৬০৫, ৪৬৫৬, মুসলিমঃ ১৬১৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭৬) লোকেরা তোমার নিকট বিধান জানতে চায়। বল, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে বিধান জানাচ্ছেন; কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক ভগিনী থাকে, তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ[1] এবং সে (ভগিনী) যদি সন্তানহীনা হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে।[2] আর দুই ভগিনী থাকলে তাদের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ,[3] আর যদি ভাই-বোন উভয়ই থাকে, তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান।[4] তোমরা পথভ্রষ্ট হবে এ আশংকায় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
[1] ‘كلالة’ শব্দের তাৎপর্য (১২নং আয়াতে) পার হয়ে গেছে যে, ঐ মৃতব্যক্তি যার না পিতা আছে, না পুত্র। এখানে পুনরায় তার মীরাসের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কোন কোন উলামাগণ ‘কালালাহ’ এর তাৎপর্যে বলেন, ‘কালালাহ’ ঐ ব্যক্তি যে একমাত্র পুত্রহীন, অর্থাৎ পিতা বর্তমান। কিন্তু এই তাৎপর্য সঠিক নয়; বরং প্রথম তাৎপর্যটিই সঠিক। কেননা পিতার উপস্থিতিতে বোন পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারিণী (ওয়ারিস) হয় না। পিতা (মৃতের বোনের) জন্য (মীরাসের ব্যাপারে) অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক হয়ে যায়। কিন্তু এখানে আল্লাহ বলেন, যদি তার বোন থাকে তাহলে সে অর্ধেক সম্পদের উত্তরাধিকারিণী হবে। সুতরাং পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারা গেল যে, ‘কালালাহ’ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার পিতা ও পুত্র উভয়ই থাকবে না। কেননা পুত্র না থাকার কথা স্পষ্ট উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। আর পিতা না থাকার প্রমাণ উক্তির ইঙ্গিত দ্বারা প্রমাণিত।
বিঃদ্রঃ- পুত্র বলতে, পুত্র ও পৌত্র উভয়কেই বলা হয়। অনুরূপ বোন, সহোদরা ও বৈমাত্রেয় উভয় বোনকেই বলা হয়। (আইসারুত তাফাসীর) বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ‘কালালাহ’র কন্যার সঙ্গে তার বোন উভয়কেই অর্ধেক অর্ধেক সম্পদে শরীক করা হয়েছে। কিন্তু কন্যা ও পুতীনের বর্তমানে, কন্যা অর্ধেক, পুতীন একের ছয় অংশ ও বাকী একের তিন অংশ বোনকে দেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর) অতএব পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে, মৃতব্যক্তির সন্তানের বর্তমানে বোন ‘যাবীল ফুরুয’ (নির্ধারিত অংশের অধিকারী) হিসাবে কিছু পাবে না। আবার ঐ সন্তান যদি পুত্র-সন্তান হয়, তাহলে বোন কোন অবস্থাতেই কিছুই পাবে না। তবে কন্যা-সন্তান হলে সে তার সাথে ‘আস্বাবাহ’ (অবশিষ্টাংশের অধিকারী) হওয়ার কারণে অবশিষ্ট সম্পদের উত্তরাধিকারিণী হবে। একটি কন্যা থাকা অবস্থায় অর্ধেক ও একের অধিক কন্যা থাকা অবস্থায় একের তিন অংশের অধিকারিণী হবে।
[2] যদি বাপ না থাকে তবে। যেহেতু ভাইয়ের চেয়ে বাপ সম্পর্কের দিক দিয়ে নিকটতর। সুতরাং বাপের বর্তমানে ভাই উত্তরাধিকারী হবে না। যদি ঐ ‘কালালাহ’ স্ত্রীর স্বামী অথবা বৈপিত্রেয় ভাই হয়, তাহলে তাদের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদের অধিকারী ভাই হবে। (ইবনে কাসীর)
[3] এই বিধানই দুই-এর অধিক বোনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থ এই দাঁড়াল যে, যদি ‘কালালাহ’ ব্যক্তির দুই অথবা দুই-এর অধিক বোন থাকে, তাহলে তারা সমস্ত মালের দুই তৃতীয়াংশের উত্তরাধিকারিণী হবে।
[4] অর্থাৎ, ‘কালালাহ’ ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যদি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ‘এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান’ নিয়ম অনুযায়ী সম্পদ বণ্টন হবে। (যেমন ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে হয়।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর, তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত এবং তাঁর অঙ্গীকার, যা তিনি তোমাদের থেকে নিয়েছেন। যখন তোমরা বললে, ‘আমরা শুনেছি এবং আনুগত্য করেছি’ আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কে বিশেষ অবগত। আল-বায়ান
তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতের কথা স্মরণ কর আর তাঁর অঙ্গীকারের কথা যা তিনি তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন যখন তোমরা বলেছিলে- আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আল্লাহকে ভয় কর, অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত আছেন। তাইসিরুল
আর তোমরা তোমাদের প্রতি বর্ষিত আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর এবং তাঁর ঐ অঙ্গীকারকেও স্মরণ কর, যে অঙ্গীকার তিনি তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তোমরা বলেছিলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের কথাগুলিরও পূর্ণ খবর রাখেন। মুজিবুর রহমান
And remember the favor of Allah upon you and His covenant with which He bound you when you said, "We hear and we obey"; and fear Allah. Indeed, Allah is Knowing of that within the breasts. Sahih International
৭. আর স্মরণ কর, তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামত এবং যে অঙ্গীকারে তিনি তোমাদেরকে আবদ্ধ করেছিলেন তা; যখন তোমরা বলেছিলে, ‘শুনলাম এবং মেনে নিলাম’(১)। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।
(১) সত্যনিষ্ঠ মুফাসসিরদের মতে, এখানে কোন মুখ দিয়ে বের হওয়া অঙ্গীকার উদ্দেশ্য নয়। বরং ঈমান আনার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধ পালনের যে অঙ্গীকার স্বতঃই এসে যায়, তা-ই উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর, সা’দী, মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর এবং সেই অঙ্গীকারকেও তোমরা স্মরণ কর, যার দ্বারা তিনি তোমাদেরকে আবদ্ধ করেছিলেন, যখন তোমরা বলেছিলে, ‘শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম।’ আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা আছে, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার দ্বীন হতে ফিরে গেলে সত্বর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসবে, তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করবে না, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ- যাকে ইচ্ছে তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম হতে বিচ্যুত হবে, (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই, কেননা) আল্লাহ সত্ত্বরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে, তারা মুসলিমদের প্রতি মেহেরবান থাকবে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবেনা; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন; বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, whoever of you should revert from his religion - Allah will bring forth [in place of them] a people He will love and who will love Him [who are] humble toward the believers, powerful against the disbelievers; they strive in the cause of Allah and do not fear the blame of a critic. That is the favor of Allah; He bestows it upon whom He wills. And Allah is all-Encompassing and Knowing. Sahih International
৫৪. হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়(১) আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না(২); এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।(৩)
(১) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর হুশিয়ারী দেয়া হচ্ছে যে, যারাই আল্লাহর পথ ও তাঁর দ্বীন থেকে পিছু ফিরে যাবে, তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ্ তাআলা তার দ্বীনের জন্য নতুন কোন জাতিকে এগিয়ে আনবেন। [তাবারী] আইয়াদ আল আশ'আরী বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আবু মূসা, এরা হল তোমার সম্প্রদায়। আর রাসূল হাত দিয়ে ইশারা করছিলেন আবু মূসা আল-আশ'আরীর দিকে। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩১৩]
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ “তোমাদের মধ্যে কারো হক জানা থাকলে সে যেন তা বলতে কাউকে ভয় না করে। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ হাদীস বর্ণনা করে কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আল্লাহর শপথ আমরা অনেক বিষয় দেখেছি, কিন্তু ভয় করেছি। [ইবন মাজাহঃ ৪০০৭; তিরমিযী: ২১৯১]
(৩) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মুসলিমদের স্বার্থেই তাদেরকে অমুসলিমদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব ও মেলামেশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, সত্যদ্বীন ইসলামের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন। কোন ব্যক্তি কিংবা দলের বক্রতা ও অবাধ্যতা দূরের কথা, স্বয়ং মুসলিমদের কোন ব্যক্তি কিংবা দল যদি সত্যি সত্যিই ইসলাম ত্যাগ করে বসে এবং সম্পূর্ণ দ্বীনত্যাগী হয়ে অমুসলিমদের সাথে হাত মিলায়, তবে এতেও ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না- হতে পারে না। মুসলিমরাও যদি দ্বীনত্যাগী হয়ে যায়, আল্লাহ তা'আলা তাদের জায়গায় অন্য কোন জাতির অভ্যুত্থান ঘটাবেন। সে জাতির মধ্যে বেশ কিছু গুণ থাকবে। তাদের প্রথম গুণ হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে ভালবাসবেন এবং তারা নিজেরাও আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাসবে।
এ গুণটি দুটি অংশে বিভক্ত- এক. আল্লাহর সাথে তাদের ভালবাসা। একে কোন না কোন স্তরে মানুষের ইচ্ছাধীন মনে করা যায়। দুই. আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ভালবাসা। এতে বাহ্যতঃ মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের কোন ভূমিকা নেই। যে বিষয়টি মানুষের ইচ্ছা ও সামর্থ্যের বাইরে, তা মানুষকে শুনানোরও কোন বাহ্যিক সার্থকতা নেই। কিন্তু কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াতের পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, এ ভালবাসার উপায়-উপকরণগুলোও মানুষের ইচ্ছাধীন। মানুষ যদি এসব উপায়কে কাজে লাগায়, তবে তাদের সাথে আল্লাহ তা'আলার ভালবাসা অবশ্যম্ভাবী।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “হে রাসূল, আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবাস, তবে আমার অনুসরন কর। এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে ভালবাসতে থাকবেন, আর আল্লাহ তোমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা করে দিবেন; এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৩১] এ আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার ভালবাসা লাভ করতে চায়, তার উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণে অবিচল থাকা। এমনটা করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ভালবাসবেন বলে ওয়াদা দিয়েছেন। তাদের দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে যে, তারা মুসলিমদের সামনে নম্র হবে এবং কোন ব্যাপারে মতবিরোধ হলে সত্যপন্থী হওয়া সত্বেও সহজে বশ হয়ে তারা ঝগড়া ত্যাগ করবে। এ অর্থেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমি ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যস্থলে বাসস্থান দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করছি, যে সত্যপন্থী হওয়া সত্বেও ঝগড়া ত্যাগ করে’। [আবু দাউদঃ ৪৮০০]
মোটকথা, তারা মুসলিমদের সাথে স্বীয় অধিকার কাজ-কারবারের ব্যাপারে কোনরূপ ঝগড়াবিবাদ রাখবে না। তাদের তৃতীয় গুণ হচ্ছে যে, তারা কাফেরদের উপর প্রবল, শক্তিশালী ও কঠোর। উদ্দেশ্য এই যে, তারা আল্লাহ ও তার দ্বীনের শক্রদের মোকাবেলায় কঠোর ও পরাক্রান্ত। শক্ররা তাদেরকে সহজে কাবু করতে পারে না। উভয় বাক্য একত্রিত করলে সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, তারা হবে এমন এক জাতি, যাদের ভালবাসা ও শক্রতা নিজ সত্ত্বা ও সত্ত্বাগত অধিকারের পরিবর্তে শুধু আল্লাহ, তার রাসূল ও তার দ্বীনের খাতিরে নিবেদিত হবে।
এ একই বিষয়বস্তু সম্বলিত অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, (أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ) -অর্থাৎ “কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” [সূরা আল-ফাতহঃ ২৯) তাদের চতুর্থ গুণ হচ্ছে, “তারা সত্য দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জিহাদে প্রবৃত্ত হবে।” এর সারমর্ম এই যে, কুফর ও দ্বীনত্যাগের মোকাবেলা করার জন্য শুধু কতিপয় প্রচলিত ইবাদাত এবং নম্র ও কঠোর হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দীপনাও থাকতে হবে। এই উদ্দীপনাকে পূর্ণতা দানের জন্য পঞ্চম গুণ বলা হয়েছে, “দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত ও সমুন্নত করার চেষ্টায় তারা কোন ভৎসনাকারীর ভৎসনারই পরোয়া করবে না।” [ইবন কাসীর থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ ধর্ম হতে ফিরে গেলে[1] আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে,[2] তারা হবে বিশ্বাসীদের প্রতি কোমল ও অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না,[3] এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
[1] আল্লাহ তাআলা নিজের ইলম মোতাবেক বলেছেন; যা নবী করীম (সাঃ)-এর মৃত্যুর পরপরই প্রকাশ পেয়েছিল। তা হচ্ছে, ইসলাম-ত্যাগের ফিতনা; আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের নিরলস প্রচেষ্টায় যার সমাপ্তি ঘটেছিল।
[2] ধর্ম-ত্যাগীদের পরিবর্তে আল্লাহ এমন এক কওমকে নির্বাচিত করবেন, যাদের চারটি স্পষ্ট গুণ বর্ণনা করা হয়েছে; (ক) আল্লাহর প্রতি ভালবাসা রাখা ও তাঁর ভালবাসার পাত্রতে পরিণত হওয়া। (খ) ঈমানদারদের প্রতি কোমল ও বিনম্র এবং কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হওয়া। (গ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এবং (ঘ) আল্লাহর ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে পরোয়া না করা। সাহাবায়ে কেরামগণ (রাঃ) এই সমস্ত গুণের অধিকারী ছিলেন। যার কারণে আল্লাহ তাঁদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে মহা সৌভাগ্যবান বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর দুনিয়াতেই তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন।
[3] এটা ঐ ঈমানদারগণের ৪র্থ নম্বর গুণ। অর্থাৎ, মহান আল্লাহর আনুগত্য ও হুকুম পালনের ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় ও পরোয়া করবে না। এ গুণটিও বড় গুরুত্বপূর্ণ গুণ। সমাজে যখন কোন পাপের প্রচলন ব্যাপক হয়ে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে এই গুণ ছাড়া নেকীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করা সম্ভব নয়। সমাজে কত শত এমন মানুষ আছে যাঁরা পাপাচরণ, আল্লাহ-দ্রোহিতা এবং সামাজিক অশ্লীলতা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে, কিন্তু এই নিন্দুকের নিন্দা ও তিরস্কারের মোকাবেলা করার মত ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে পাপের ঐ দলদল হতে বের হতে পারে না এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার মত তওফীকও লাভ করে না। এই জন্যেই পরবর্তীতে আল্লাহ বলেছেন, যাদের মধ্যে এই চারটি গুণ বিদ্যমান আছে তাদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত করবে, যা তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি ও উপকারের ক্ষমতা রাখে না? আর আল্লাহ, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’। আল-বায়ান
বল, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কি এমন কিছুর ‘ইবাদাত করছ যাদের না আছে কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা, আর না আছে উপকার করার। আর আল্লাহ তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুর ইবাদাত কর যা তোমাদের না কোন অপকার করার ক্ষমতা রাখে, আর না কোন উপকার করার? অথচ আল্লাহই সব শুনেন, জানেন। মুজিবুর রহমান
Say, "Do you worship besides Allah that which holds for you no [power of] harm or benefit while it is Allah who is the Hearing, the Knowing?" Sahih International
৭৬. বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত কর যার কোন ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার? আর আল্লাহ তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৬) বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ ভিন্ন এমন কিছুর উপাসনা কর, যার তোমাদের ক্ষতি ও উপকার করার কোন ক্ষমতা নেই? বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।’ [1]
[1] এটাই মুশরিকদের নির্বোধ হওয়ার পরিচয় যে, তারা তাদেরই মধ্য হতে একজনকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, যে কারো কোন উপকার বা অপকার সাধন করতে পারে না। আর কারো উপকার বা অপকার সাধন করা তো দূরের কথা, সে না কারো কথা শুনতে পায়, আর না কারো অবস্থা সর্ম্পকে অবগত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বরং এই শক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর মধ্যেই আছে। আর এই জন্যই তিনি হচ্ছেন একমাত্র বিপত্তারণ ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ সম্মানিত গৃহ কা‘বাকে, সম্মানিত মাসকে*, হাদয়ি** ও কালায়িদ*** কেও মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন জানতে পার, আল্লাহ আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যা আছে তা জানেন। আর আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। আল-বায়ান
পবিত্র ক্বা‘বাগৃহকে আল্লাহ তোমাদের জন্য (জীবনে) প্রতিষ্ঠার উপকরণ করে দিয়েছেন, আর হারাম মাস, কুরবানীর উদ্দেশে ক্বা‘বায় প্রেরিত পশু এবং তাকে চিহ্নিত করার গলার মালাকেও। এটা এজন্য যাতে তোমরা জানতে পার যে, যা কিছু আসমানসমূহে আছে আর যা কিছু যমীনে আছে, আল্লাহ তা জানেন, আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবহিত। তাইসিরুল
সম্মানিত গৃহ কা‘বাকে আল্লাহ মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ রূপে তৈরী করেছেন এবং সম্মানিত মাসসমূহকে, হারামে কুরবানীর জন্তুকে এবং সেই পশুকেও যার গলায় বিশেষ ধরণের বেড়ী পড়ানো হয়েছে। এটা এ জন্য যেন তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আকাশসমূহ ও যমীনস্থিত সব বস্তুরই খবর রাখেন, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান
Allah has made the Ka'bah, the Sacred House, standing for the people and [has sanctified] the sacred months and the sacrificial animals and the garlands [by which they are identified]. That is so you may know that Allah knows what is in the heavens and what is in the earth and that Allah is Knowing of all things. Sahih International
* হিজরী মাসের মুহাররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ এ চার মাসকে সম্মানিত মাস বলা হয়।
৯৭. পবিত্র কা'বা ঘর, পবিত্র মাস, হাদঈ ও গলায় মালা পরানো পশুকে(১) আল্লাহ মানুষের কল্যাণের(২) জন্য নির্ধারিত করেছেন। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন জানতে পার, নিশ্চয় যা কিছু আসমানসমূহে ও যমীনে আছে আল্লাহ তা জানেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।
(১) এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা চারটি বস্তুকে মানুষের প্রতিষ্ঠা, স্থায়িত্ব ও শান্তির কারণ বলে উল্লেখ করছেন। প্রথমতঃ কা'বা। আরবী ভাষায় কা'বা চতুষ্কোণবিশিষ্ট গৃহকে বলা হয়। জাহেলিয়াত যুগেও আল্লাহ্ তা'আলা আরবদের মনে হারাম শরীফের সম্মান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ফলে শান্তি ও নিরাপত্তা অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে, সম্মানিত মাস। সম্মানিত মাস বলে এখানে কারও কারও মতে, জিলহজ্জ মাস বোঝানো হয়েছে। অপর কারও কারও মতে, এর দ্বারা হারাম মাসসমূহ বোঝানো হয়েছে। আর তা হচ্ছে, রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররাম।
তৃতীয় বস্তু হচ্ছে, ‘হাদঈ’। হারাম শরীফে যে জন্তুকে তামাত্তু ও কেরান হজের কারণে যবাই করতে হয়, তাকে হাদঈ বলা হয়। যে ব্যক্তির সাথে এরূপ জন্তু থাকত, সে নির্বিবাদে পথ চলতে পারত; তাকে কেউ কিছু বলত না। এভাবে কুরবানীর জন্তুও ছিল শান্তি ও নিরাপত্তার অন্যতম উপায়। চতুর্থ বস্তুটি হচ্ছে, قلائد এ শব্দটি قلادة শব্দের বহুবচন। এর অর্থ, গলার হার। আরবে প্রথা প্রচলিত ছিল যে, কেউ হজের উদ্দেশ্যে বের হলে চিহ্নস্বরূপ তার হাদঈর গলায় একটি হার পরিয়ে দিত। ফলে কেউ তাকে কোন কষ্ট দিত না। এ কারণে قلادة শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায় হয়ে যায়। [ফাতহুল কাদীর]
(২) قيام ও قوام এর অর্থ ঐসব বস্তু, যার উপর কোন বস্তুর স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। তাই (قِيَامًا لِلنَّاسِ) এর অর্থ হবে এই যে, কাবা ও তৎসম্পর্কিত বস্তুসমূহ মানুষের প্রতিষ্ঠা ও স্থায়িত্বের কারণ এবং উপায়। এর উপরই তাদের জীবিকা ও দ্বীন নির্ভরশীল। এর মাধ্যমেই তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার কর্মকাণ্ড সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের মধ্যে যারা ভীত তারা সেখানে নিরাপত্তা পায়। যারা ব্যবসায়ী তারা ব্যবসায় লাভবান হয়। যারা ইবাদাত করতে চায়, তারা নির্বিঘ্ন ইবাদাত করতে পারে [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৭) আল্লাহ পবিত্র গৃহ কা’বাকে, পবিত্র মাসকে, কুরবানীর জন্য কা’বায় প্রেরিত পশু ও গলায় মাল্যপরিহিত পশুকে মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ নির্ধারিত করেছেন।[1] এটি এ জন্য যে, তোমরা যেন জানতে পার, যা কিছু আকাশে ও ভূমন্ডলে আছে, তা নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
[1] কাবাগৃহকে শরীফ, সম্মানিত বা পবিত্র গৃহ এই জন্যই বলা হয় যে, তার সীমানায় শিকার করা, গাছ কাটা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে যদি সেখানে বাপের হত্যাকারীও সামনে পড়ে যায়, তবুও তার কিছু করা যাবে না। আর কা’বাকে মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ নির্ধারিত করা হয়েছে; যার উদ্দেশ্য হল; এর দ্বারা মক্কাবাসীর নিয়ম-শৃংখলা ও সমাজ-ব্যবস্থা ভালো থাকে এবং তাদের অর্থনৈতিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণের উপায়ও লাভ হয়। অনুরূপ পবিত্র (রজব, যুলক্বাদাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম) মাস এবং হারামে নিয়ে যাওয়া হাদী (গলায় কিছু বেঁধে চিহ্নিত কুরবানীর) পশুও মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ। কেননা, উল্লিখিত সমস্ত জিনিস দ্বারাও মক্কাবাসীরা উক্ত উপকারিতা উপভোগ করে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযা কিছু রাতে ও দিনে স্থিত হয় তা তাঁরই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
রাতে (অন্ধকারে) আর দিনে (আলোয়) যা বাস করে তা তাঁরই, তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
রাতের অন্ধকারে এবং দিনের আলোয় যা কিছু বসবাস করে ও বর্তমান রয়েছে তা সব কিছুই আল্লাহর। তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন। মুজিবুর রহমান
And to Him belongs that which reposes by night and by day, and He is the Hearing, the Knowing. Sahih International
১৩. আর রাত ও দিনে যা কিছু স্থিত হয়, তা তারই(১) এবং তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু জানেন।
(১) এখানে سُكُون অর্থ اِسْتَقَرَّ অবস্থান করা; অর্থাৎ পৃথিবীর দিবা-রাত্রিতে যা কিছু অবস্থিত আছে, তা সবই আল্লাহর। [তাবারী] অথবা এর অর্থ سُكُون وحَرْكَت এর সমষ্টি। অর্থাৎ مَا سَكَنَ ومَا تَحَرَّكَ (স্থাবর ও অস্থাবর) আয়াতে শুধু سُكُون উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, এর বিপরীত حَرْكَت আপনা-আপনিই বুঝা যায়। অথবা سَكَنَ অর্থ যাবতীয় সৃষ্টি। অর্থাৎ যাবতীয় সৃষ্টির মালিকানা আল্লাহরই। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) রাত ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর এ হচ্ছে আমার দলীল, আমি তা ইবরাহীমকে তার কওমের উপর দান করেছি। আমি যাকে চাই, তাকে মর্যাদায় উঁচু করি। নিশ্চয় তোমার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
এ হল আমার যুক্তি-প্রমাণ যা আমি ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার কাওমের বিপক্ষে, আমি যাকে ইচ্ছে মর্যাদায় উন্নীত করি। তোমাদের প্রতিপালক নিশ্চয়ই হিকমাতওয়ালা,সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
আর এটাই ছিল আমার যুক্তি প্রমাণ, যা আমি ইবরাহীমকে তার স্বজাতির মুকাবিলায় দান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা করি, সম্মান-মর্তবা ও মহত্ত্ব বাড়িয়ে দেই, নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব প্রজ্ঞাময় ও বিজ্ঞ। মুজিবুর রহমান
And that was Our [conclusive] argument which We gave Abraham against his people. We raise by degrees whom We will. Indeed, your Lord is Wise and Knowing. Sahih International
৮৩. আর এটাই আমাদের যুক্তি-প্রমাণ যা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তাঁর জাতির মোকাবেলায়, যাকে ইচ্ছা আমরা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয়ই আপনার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৩) এ আমার যুক্তি যা ইব্রাহীমকে তার সম্প্রদায়ের সাথে মুকাবিলা করতে দিয়েছিলাম।[1] যাকে ইচ্ছা আমি মর্যাদায় উন্নত করি। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ববাদের এমন যুক্তি ও দলীল, যার কোন উত্তর ইবরাহীম (আঃ)-এর জাতির কাছে ছিল না। আবার কারো নিকট তা ছিল এই উক্তি, তোমরা যাকে আল্লাহর অংশী কর, আমি তাকে কিরূপে ভয় করব? অথচ তোমরা ভয় কর না যে, তোমরা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরীক করে চলছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। সুতরাং যদি তোমরা জান (তাহলে বল,) দু’দলের মধ্যে কোন্ দলটি নিরাপত্তালাভের অধিকারী? মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর সে কথার সত্যায়ন করে বললেন, "যারা বিশ্বাস করেছে এবং তাদের বিশ্বাস (ঈমান)-কে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।"
তাফসীরে আহসানুল বায়ান(তিনি) প্রভাত উদ্ভাসক। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ। আল-বায়ান
তিনি ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনি রাত সৃষ্টি করেছেন শান্তি ও আরামের জন্য, সূর্য ও চন্দ্র বানিয়েছেন গণনার জন্য। এসব মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞাতা কর্তৃক নির্ধারিত। তাইসিরুল
তিনিই রাতের আবরণ বিদীর্ণ করে রঙ্গিন প্রভাতের উন্মেষকারী, তিনিই রাতকে বিশ্রামকাল এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরূপক করে দিয়েছেন; এটা হচ্ছে সেই পরম পরাক্রান্ত ও সর্ব পরিজ্ঞাতার (আল্লাহর) নির্ধারণ। মুজিবুর রহমান
[He is] the cleaver of daybreak and has made the night for rest and the sun and moon for calculation. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. Sahih International
৯৬. তিনি প্রভাত উদ্ভাসকৎ(১) আর তিনি রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরুপক করেছেন(২); এটা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ্র নির্ধারণ।(৩)
(১) فَالِقُ শব্দের অর্থ ফাঁককারী এবং إصباح শব্দের অর্থ এখানে প্রভাতকাল। (فَالِقُ الْإِصْبَاحِ) এর অর্থ প্রভাতের ফাঁককারী; অর্থাৎ গভীর অন্ধকারের চাদর ফাঁক করে প্রভাতের উন্মেষকারী। [জালালাইন] এটিও এমন একটি কাজ, যাতে জ্বিন, মানব ও সমগ্র সৃষ্ট জীবের শক্তিই ব্যর্থ। প্রতিটি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এ কথা বুঝতে বাধ্য যে, রাত্রির অন্ধকারের পর প্রভাতরশ্মির উদ্ভাবক জ্বিন, মানব, ফিরিশতা অথবা অন্য কোন সৃষ্টজীব হতে পারে না, বরং এটি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তা'আলারই কাজ। তিনি ধীরে ধীরে অন্ধকার চিরে আলোর উন্মেষ ঘটান। সে আলোতে মানুষ তাদের জীবিকার জন্যে বের হতে পারে। [সা’দী]
(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সূর্য ও চন্দ্রের উদয়-অস্ত এবং এদের গতিকে একটি বিশেষ হিসাবের অধীনে রেখেছেন। এর ফলে মানুষ বৎসর, মাস, দিন, ঘন্টা এমনকি মিনিট ও সেকেণ্ডের হিসাবও অতি সহজে করতে পারে। আল্লাহ্ তা'আলার অপার শক্তিই এসব উজ্জ্বল বিশাল গোলক ও এদের গতি-বিধিকে অটল ও অনড় নিয়মের অধীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার বছরেও এদের গতি-বিধিতে এক মিনিট বা এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। এ উজ্জ্বল গোলকদ্বয় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে বিচরণ করছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রমকারী হওয়া। আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটে।” [সূরা ইয়াসীন: ৪০]
পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির এ অটল ও অপরিবর্তনীয় ব্যবস্থা থেকেই মানুষ প্রতারিত হয়েছে। তারা এগুলোকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বরং উপাস্য ও উদ্দিষ্ট মনে করে বসেছে। যদি এ ব্যবস্থা মাঝে মাঝে অচল হয়ে যেত এবং কলকজা মেরামতের জন্য কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টার বিরতি দেখা দিত, তবে মানুষ বুঝতে পারত যে, এসব মেশিন আপনা আপনিই চলে না, বরং এগুলোর পরিচালক ও নির্মাতা আছে। আসমানী কিতাব, নবী ও রাসূলগণ এ সত্য উদঘাটন করার জন্যই প্রেরিত হন। কুরআনুল কারীমের এ বাক্য আরো ইঙ্গিত করেছে যে, বছর ও মাসের সৌর ও চান্দ্র উভয় প্রকার হিসাবই হতে পারে এবং উভয়টিই আল্লাহ্ তা'আলার নেয়ামত। এর মাধ্যমেই সময় ও কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে লেন-দেনের সময়ও ঠিক রাখা যায়। তাছাড়া কতটুকু সময় পার হয়েছে আর কতটুকু বাকী রয়েছে সেটা জানাও এ দুটোর কারণেই হয়ে থাকে। যদি এগুলো না থাকত, তবে এ সময় নির্ধারণের ব্যাপারটি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকত না। এর জন্য বিশেষ শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ত। যাতে দ্বীন ও দুনিয়ার অনেক স্বার্থ হানি ঘটত। [সা'দী]
(৩) অর্থাৎ এ বিস্ময়কর অটল ব্যবস্থা- যাতে কখনো এক মিনিট ও এক সেকেণ্ড এদিক-ওদিক হয় না- এটি একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই দুটি মহান গুণ অপরিসীম শক্তি ও অপার জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। [মানার] এজন্যেই বাক্যের শেষে আল্লাহর দুটি গুণ বাচক নাম পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী’ উল্লেখ করা হয়েছে। তার অপার শক্তির কারণে সমস্ত কিছু তার অনুগত বাধ্য হয়েছে। আর তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের কারণে কোন গোপন বা প্রকাশ্য সবকিছু তার আয়ত্বাধীন রয়েছে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৬) তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান,[1] আর তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত[2] এবং গণনার জন্য চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন,[3] এ সব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ কর্তৃক সুবিন্যস্ত।
[1] অন্ধকার ও আলোর স্রষ্টাও তিনিই। তিনি রাতের অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল প্রভাত সৃষ্টি করেন। ফলে প্রতিটি জিনিসই আলোকিত হয়ে যায়।
[2] অর্থাৎ, রাতকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন, যাতে মানুষ উজ্জ্বলতার সমস্ত ব্যস্ততাকে দূর করে বিশ্রাম নিতে পারে।
[3] (অথবা হিসাবমত সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন।) অর্থাৎ, উভয়ের জন্য একটি হিসাব বাঁধা আছে, যাতে কোন পরিবর্তন ও অনিয়ম ঘটতে পারে না। বরং উভয়ের রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথ, যাতে তারা শীত-গ্রীষ্মে ধাবমান থাকে। আর এরই ভিত্তিতে শীতের সময় দিন ছোট এবং রাত বড় হয়, আর গ্রীষ্ম এর বিপরীত; অর্থাৎ, দিন বড় এবং রাত ছোট হয়। এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা ইউনুসের ৫নং আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪০নং আয়াতে এবং সূরা আ’রাফের ৫৪ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। কিভাবে তার সন্তান হবে অথচ তার কোন সঙ্গিনী নেই! আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
তিনি আকাশমন্ডলী ও যমীনের উদ্ভাবক, কীভাবে তাঁর সন্তান হতে পারে যেহেতু তাঁর কোন সঙ্গীণীই নেই, সব কিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন, আর প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে তিনি পূর্ণ জ্ঞান রাখেন। তাইসিরুল
তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা; তাঁর সন্তান হবে কি করে? অথচ তাঁর জীবন সঙ্গিনীই কেহ নেই। তিনিই প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কে তাঁর ভাল রুপে জ্ঞান রয়েছে। মুজিবুর রহমান
[He is] Originator of the heavens and the earth. How could He have a son when He does not have a companion and He created all things? And He is, of all things, Knowing. Sahih International
১০১. তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তার সন্তান হবে কিভাবে? তার তো কোন সঙ্গিনী নেই। আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনি সবিশেষ অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০১) তিনি আকাশমন্ডলী ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবনকর্তা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই, তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন[1] এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।
[1] অর্থাৎ, যেমন আল্লাহ তাআলা এই সমস্ত জিনিসকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই, অনুরূপ তিনিই এই যোগ্যতার দাবী রাখেন যে, একমাত্র কেবল তাঁরই ইবাদত করা হোক। তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক স্থির করা না হোক। কিন্তু মানুষ এই একক সত্তাকে বাদ দিয়ে জ্বিনদেরকে তাঁর শরীক বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তারাও আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট। মুশরিকরা তো মূর্তির অথবা কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিবর্গের পূজা করত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে যে, তারা জ্বিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে রেখেছে। আসলে ব্যাপার হল, এখানে জ্বিনদের বলতে শয়তানদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং শয়তানদের কথা অনুযায়ীই শিরক করা হয়, তাই প্রকৃতপক্ষে পূজা ও উপাসনা শয়তানেরই করা হয়। এই বিষয়টাকে কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা নিসার ১১৭নং, সূরা মারয়্যামের ৪৪ নং, সূরা ইয়াসীনের ৬০ নং এবং সূরা সাবা’র ৪১ নং আয়াতে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার রবের বাণী সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়েছে। তাঁর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। আল-বায়ান
সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
তোমার রবের বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ, তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেহই নেই, তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। মুজিবুর রহমান
And the word of your Lord has been fulfilled in truth and in justice. None can alter His words, and He is the Hearing, the Knowing. Sahih International
১১৫. আর সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রব-এর বাণী পরিপূর্ণ।(১) তাঁর বাক্যসমূহ পরিবর্তনকারী কেউ নেই।(২) আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(৩)
(১) এ আয়াতে কুরআনুল কারীমের আরো দুটি বৈশিষ্ট্যমূলক অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোও কুরআনুল কারীম যে আল্লাহর কালাম, এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। বলা হয়েছে, আপনার রব-এর কালাম সত্যতা, ইনসাফ ও সমতার দিক দিয়ে সম্পূর্ণ। তার কালামের কোন পরিবর্তনকারী নেই। এখানে (وَتَمَّتْ) শব্দে পরিপূর্ণ হওয়া বর্ণিত হয়েছে এবং (كَلِمَتُ رَبِّكَ) বলে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] কুরআনের গোটা বিষয়বস্তু দু'প্রকার- (এক) যাতে বিশ্ব ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী, অবস্থা, সৎকাজের জন্য পুরস্কারের ওয়াদা এবং অসৎ কাজের জন্য শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন বর্ণিত হয়েছে এবং (দুই) যাতে মানব জাতির কল্যাণ ও সাফল্যের বিধান বর্ণিত হয়েছে। কুরআনুল কারীমের এ দু'প্রকার সাফল্য সম্পর্কে (صِدْقًا وَعَدْلًا) দুই অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। صدق এর সম্পর্ক প্রথম প্রকারের সাথে; অর্থাৎ কুরআনে যেসব ঘটনা, অবস্থা, ওয়াদা ও ভীতি বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো সবই সত্য ও নির্ভুল।
এগুলোতে কোনরূপ ভ্রান্তির সম্ভাবনা নেই। عدل এর সম্পর্ক দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ বিধানের সাথে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলার সব বিধান عدل তথা ন্যায়বিচার ভিত্তিক। [ইবন কাসীর] অতএব, আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর বিধান সুবিচার ও সমতার উপর ভিত্তিশীল। এতে কারো প্রতি অবিচার নেই এবং এমন কোন কঠোরতাও নেই যা মানুষ সহ্য করতে পারে না। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ (لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا) অর্থাৎ “আল্লাহ ক্ষমতা ও সামর্থ্যের বাইরে কারো প্রতি কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেননি”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৮৬]
কুরআনুল কারীমের এ অবস্থাটি অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত অতীত ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী, পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন সবই সত্য; এসব ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। কুরআন বর্ণিত যাবতীয় বিধান সমগ্র বিশ্ব ও কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী বংশধরদের জন্য সুবিচার ও সমতাভিত্তিক, এগুলোতে কারো প্রতি কোনরূপ অবিচার নেই এবং সমতা ও মধ্যবর্তিতার চুল পরিমাণও লঙ্ঘন নেই। কুরআনের এ বৈশিষ্ট্য আরো প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম।
(২) কুরআনের আরো একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, (لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ) অর্থাৎ আল্লাহর কালামের কোন পরিবর্তনকারী নেই।’ তিনি যেটা যে সময়ে হবে বলেছেন সেটা সে সময়ে অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। সেটাকে রদ বা পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা কারো নেই। [তাবারী] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর অর্থ বলেন, আল্লাহর ফয়সালাকে কেউ রদ করতে পারবে না। তার বিধানকে পরিবর্তন করার অধিকার কারও নেই। অনুরূপভাবে তাঁর ওয়াদার বিপরীতও হবার নয়। [বাগভী] পরিবর্তনের এক প্রকার হচ্ছে যে, এতে কোন ভুল প্রমাণিত করার কারণে পরিবর্তন করা। পূর্ব আয়াতে আল্লাহর কালামকে পূর্ণ বলার কারণে কারো মনে আসতে পারে যে, কোন কিছু পূর্ণ হওয়ার পর তাতে কি আবার অপূর্ণাঙ্গতা আসবে? এ রকম প্রশ্নের উত্তর এখানে দেয়া হয়েছে। আর পরিবর্তনের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে জবরদস্তিমূলকভাবে পরিবর্তন করা। যেমন এর পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জলকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আল্লাহর কালাম এ সকল প্রকার পরিবর্তনেরই ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং ওয়াদা করেছেনঃ (إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ) অর্থাৎ “আমরাই এ কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষক।” সূরা আল-হিজর: ৯]
এমতাবস্থায় কার সাধ্য আছে যে, এ রক্ষাবৃহ্য ভেদ করে এতে পরিবর্তন করে? [রুহুল মা'আনী] কুরআনের উপর দিয়ে চৌদ্দশত বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। প্রতি শতাব্দি ও প্রতি যুগে এর শক্রদের সংখ্যাও এর অনুসারীদের তুলনায় বেশী ছিল; কিন্তু এর একটি যের-যবর পরিবর্তন করার সাধ্যও কারো হয়নি। অবশ্য একটি তৃতীয় প্রকার পরিবর্তন সম্ভবপর ছিল। তা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনকে রহিত করে পরিবর্তন করতে পারতেন। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কুরআনের পরে আর কোন নবী ও কিতাব আসবে না। এমনকি ঈসা আলাইহিস সালাম যখন আবার আসবেন তিনি এ কুরআন অনুসারেই জীবন অতিবাহিত করবেন। [রুহুল মা'আনী] এ আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ রাসূল এবং কুরআন সর্বশেষ কিতাব। একে রহিতকরণের আর কোন সম্ভাবনা নেই। কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এ বিষয়বস্তুটি আরো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
(৩) আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে (وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ) অর্থাৎ তারা যেসব কথাবার্তা বলছে, আল্লাহ সব শোনেন এবং সবার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত অবস্থা জানেন। তিনি প্রত্যেকের কার্যের প্রতিফল দেবেন। [তাবারী; আল- মানার; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৫) সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী সম্পূর্ণ[1] এবং তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নেই।[2] আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [3]
[1] খবরা-খবর ও ঘটনাবলীর দিক দিয়ে তা সত্য এবং আহকাম ও মাসায়েলের দিক দিয়ে তা ন্যায়পূর্ণ। অর্থাৎ, তাঁর প্রতিটি আদেশ ও নিষেধ ন্যায় ও সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, তিনি এমন সব কথারই নির্দেশ দিয়েছেন, যেসবে আছে মানুষের লাভ ও কল্যাণ এবং সেই সব জিনিস থেকেই নিষেধ করেছেন, যেগুলোতে আছে মানুষের ক্ষতি ও অকল্যাণ, যদিও মানুষ স্বীয় অজ্ঞতা অথবা শয়তানের ধোকায় পতিত হওয়ার কারণে তা বুঝতে পারে না।
[2] অর্থাৎ, কেউ এমন নেই যে, সে প্রতিপালকের কোন বাক্য, বিধান বা নির্দেশে কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে। কারণ, তাঁর চেয়ে অধিক শক্তির মালিক কেউ নয়।
[3] অর্থাৎ, বান্দাদের যাবতীয় কথাবার্তা শ্রবণকারী এবং তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও সমস্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে জ্ঞাত। আর এই অনুযায়ী তিনি সকলকে প্রতিদানও দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাদের অন্তরসমূহের ক্রোধ দূর করবেন এবং আল্লাহ যাকে চান তার তাওবা কবুল করেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
তিনি তাদের মনের জ্বালা নিভিয়ে দিবেন, আল্লাহ যাকে চাইবেন তাওবাহ করার তাওফীক দিবেন, আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল
আর তাদের অন্তরসমূহের ক্ষোভ দূর করে দিবেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা, আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন, আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
And remove the fury in the believers' hearts. And Allah turns in forgiveness to whom He wills; and Allah is Knowing and Wise. Sahih International
১৫. আর তিনি তাদের(১) অন্তরের ক্ষোভ দূর করবেন এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে তার তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) অর্থাৎ ঈমানদারদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) এবং ওদের হৃদয়ের ক্ষোভ দূর করবেন। [1] আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তওবা করার তওফীক দিয়ে থাকেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[1] অর্থাৎ, মুসলিমরা যখন দুর্বল ছিল তখন মুশরিকরা তাদের উপর অত্যাচার করত। যার কারণে মুসলিমদের হৃদয় দুঃখ-পীড়িত ও ব্যথিত ছিল। যখন তোমাদের হাতে ওরা খুন হবে এবং অপমান ও লাঞ্ছনা তাদের ভাগে আসবে, তখন স্বাভাবিকভাবে অত্যাচারিত মুসলিমদের কলিজা ঠান্ডা হবে ও তাদের মনের রাগ ও ক্ষোভ দূর হয়ে যাবে
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক, সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয় তাদের এ বছরের পর। আর যদি তোমরা দারিদ্র্যকে ভয় কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ অনুগ্রহে তোমাদের অভাবমুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
ওহে বিশ্বাসীগণ! মুশরিকরা হল অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদে হারামের নিকট না আসে। তোমরা যদি দরিদ্রতার ভয় কর, তবে আল্লাহ ইচ্ছে করলে অচিরেই তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাব-মুক্ত করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মাসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে, আর যদি তোমরা দারিদ্রতার ভয় কর তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন, যদি তিনি চান। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় জ্ঞানী, বড়ই হিকমাতওয়ালা। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, indeed the polytheists are unclean, so let them not approach al-Masjid al-Haram after this, their [final] year. And if you fear privation, Allah will enrich you from His bounty if He wills. Indeed, Allah is Knowing and Wise. Sahih International
২৮. হে ঈমানদারগণ মুশরিকরা তো অপবিত্র(১); কাজেই এ বছরের পর(২) তারা যেন মসজিদুল হারামের ধারে-কাছে না আসে।(৩) আর যদি তোমরা দারিদ্রের আশংকা কর তবে আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে তাঁর নিজ করুণায় তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন।(৪) নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) কোন কোন মুফাসসির বলেন, কাফেরগণ ব্যহ্যিক ও আত্মিক সর্ব দিক থেকেই অপবিত্র। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] তবে অধিকাংশ মুফাসসির বলেনঃ এখানে নাপাক বলতে তাদের দেহ সত্তা বুঝানো হয়নি, বরং দ্বীনী বিষয়াদিতে তাদের অপবিত্রতা বোঝানো হয়েছে। সে হিসেবে এর অর্থ, তাদের আকীদাহ-বিশ্বাস, আখলাক-চরিত্র, আমল ও কাজ, তাদের জীবন — এসবই নাপাক। [ইবন কাসীর; সা’দী] আর এ সবের নাপাকির কারণেই হারাম শরীফের চৌহদ্দির মধ্যে তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
(২) এ বছর বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরীনদের মতে ৯ম হিজরী বুঝানো হয়েছে। কাতাদা বলেন, এটা ছিল সে বছর যে বছর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদের নিয়ে হজ করেছেন। তখন আলী এ বিষয়টির ঘোষণা লোকদের মধ্যে দিয়েছিলেন। তখন হিজরতের পর নবম বছর পার হচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তী বছর হজ করেছিলেন। তিনি এর আগেও হজ করেননি, পরেও করেননি। [তাবারী]
(৩) এখানে “মাসজিদুল হারাম” বলতে সাধারণতঃ বুঝায় বায়তুল্লাহ শরীফের চতুর্দিকের আঙ্গিনাকে যা দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। তবে কুরআন ও সুন্নার কোন কোন স্থানে তা মক্কার পূর্ণ হারাম শরীফ অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। যা কয়েক বর্গমাইল এলাকব্যাপী। যার সীমানা চিহ্নিত করেছেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। যেমন, মে'রাজের ঘটনায় মাসজিদুল হারামের উল্লেখ রয়েছে। ইমামগণের ঐক্যমতে এখানে “মাসজিদুল হারাম” অর্থ বায়তুল্লাহর আঙ্গিনা নয়। কারণ, মে'রাজের শুরু হয় উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘর থেকে, যা বায়তুল্লাহর আঙ্গিনার বাইরে। অনুরূপ সূরা তাওবার শুরুতে ৭ নং আয়াতে যে মসজিদুল হারামের উল্লেখ রয়েছে, তার অর্থও পূর্ণ হারাম শরীফ। কারণ, এখানে উল্লেখিত সন্ধির স্থান হলো ‘হুদায়বিয়া’ যা হারাম শরীফের সীমানার বাইরে তার অতি সন্নিকটে অবস্থিত। [আল-বালাদুল হারাম: আহকাম ওয়া আদাব]
(৪) ইবনে আব্বাস বলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা মুশরিকদের মাসজিদুল হারামে যাওয়া থেকে নিষেধ করলেন, তখন শয়তান মুমিনদের অন্তরে চিন্তার উদ্রেক ঘটাল যে, তারা কোত্থেকে খাবে? মুশরিকদেরকে তো বের করে দেয়া হয়েছে, তাদের বানিজ্য কাফেলা তো আর আসবে না। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। যাতে তিনি তাদেরকে আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে অমুখাপেক্ষী করে দিলেন। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) হে বিশ্বাসিগণ! অংশীবাদীরা তো অপবিত্র।[1] সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকট না আসে।[2] যদি তোমরা দারিদ্রে্র আশঙ্কা কর, তাহলে জেনে রাখ, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ করুণায় তিনি তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। [3] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[1] অংশীবাদী বা মুশরিকরা অপবিত্র কথার অর্থ হল, আকীদা-বিশ্বাস ও আমল হিসাবে তারা (অভ্যন্তরীণভাবে) অপবিত্র। কারো কারো নিকটে মুশরিক বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক উভয়ভাবে অপবিত্র। কেননা, তারা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সেইরূপ খেয়াল রাখে না, যেরূপ শরীয়ত নির্দেশ করেছে।
[2] এটা সেই হুকুম যা সন ৯ হিজরীতে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণার সাথে করা হয়েছিল। যার বিস্তারিত বর্ণনা পূর্বে (১-২নং আয়াতে) উল্লেখ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কেবল মাসজিদুল হারামের জন্য। নচেৎ প্রয়োজন মোতাবেক মুশরিকরা অন্যান্য মসজিদে প্রবেশ করতে পারে। যেমন নবী (সাঃ) সুমামাহ বিন উসালকে মসজিদে নববীর থামে বেঁধে রেখেছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে ইসলাম ও নবীর মহব্বত সৃষ্টি করেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরন্তু অধিকাংশ উলামাগণের নিকট এখানে ‘মাসজিদুল হারাম’ থেকে উদ্দেশ্য পূর্ণ হারাম এলাকা। অর্থাৎ, হারাম-সীমানার ভিতর মুশরিকদের প্রবেশ নিষেধ। কিছু আসার (সাহাবার উক্তি ও কর্ম) অনুসারে এই হুকুম থেকে যিম্মী ও খাদেমদেরকে পৃথক করা হয়েছে। উমার বিন আব্দুল আযীয (রঃ) আলোচ্য আয়াতের ভিত্তিতে নিজ রাজত্বকালে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকেও মুসলিমদের মসজিদে প্রবেশ না করার আদেশ জারী করেছিলেন। (ইবনে কাসীর)
[3] মুশরিকদের উপর হারাম প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারী হওয়ার কারণে কিছু মুসলিমদের মনে চিন্তা হল যে, হজ্জের মৌসুমে অধিকাধিক লোক জমা হওয়ার কারণে যে ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে থাকে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে। আল্লাহ তাআলা বললেন, দারিদ্রে্র ভয় করো না। তিনি অতিসত্বর নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে ধনবান বানিয়ে দেবেন। সুতরাং বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলে বহু গনীমতের মাল মুসলিমদের হস্তগত হল। অতঃপর ধীরে ধীরে সারা আরববাসী মুসলমান হয়ে গেল। পরিণামে হজ্জের মৌসুমে হাজীদের গমনাগমন ঠিক সেইরূপ হয়ে গেল যেমন পূর্বে ছিল; বরং তার থেকেও বেশী হল। আর সেই সংখ্যাবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
সদাক্বাহ হল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য) আর মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী। তাইসিরুল
সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহর (আদায়ের) জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং (দীনের ব্যাপারে) যাদের মন রক্ষা করতে (অভিপ্রায়) হয় (তাদের), আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে (কর্জ পরিশোধে), আর জিহাদে (অর্থাৎ যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য) আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
Zakah expenditures are only for the poor and for the needy and for those employed to collect [zakah] and for bringing hearts together [for Islam] and for freeing captives [or slaves] and for those in debt and for the cause of Allah and for the [stranded] traveler - an obligation [imposed] by Allah. And Allah is Knowing and Wise. Sahih International
৬০. সদকা(১) তো শুধু(২) ফকীর, মিসকীন(৩) ও সদাকা আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য(৪), যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য(৫), দাসমুক্তিতে(৬), ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য(৭), আল্লাহর পথে(৮) ও মুসাফিরদের(৯) জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত(১০)। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়ত।(১১)
(১) সাহাবা ও তাবেয়ীগনের ঐক্যমতে এ আয়াতে সেই ওয়াজিব সদকার খাতগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যা মুসলিমদের জন্যে সালাতের মতই ফরয। কারণ, এ আয়াতে নির্ধারিত খাতগুলো ফরয সদকারই খাত। হাদীস অনুযায়ী নফল সদকা আট খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরও প্রশস্ত। আয়াতে আল্লাহ তা'আলা যাকাতের ব্যয় খাত ঠিক করে দিয়ে কারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত তা বাতলে দিয়েছেন। আর দেখিয়ে দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হুকুম মতেই যাকাতের বিলি বন্টন করেছেন নিজের খেয়াল খুশীমত নয়। এক হাদীসে এ সত্যটি প্রমাণিত হয়। যিয়াদ ইবন হারিস আস-সুদায়ী বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি তার গোত্রের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে সৈন্যের একটি দল অচিরেই প্রেরণ করবেন।
আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনি বিরত হোন আমি দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তারা সবাই আপনার বশ্যতা স্বীকার করে এখানে হাযির হবে। তারপর আমি স্বগোত্রের কাছে পত্র প্রেরণ করি। পত্র পেয়ে তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। এর প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন, ‘তুমি তোমার গোত্রের একান্ত প্রিয় নেতা। আমি আরয করলাম এতে আমার কৃতিত্বের কিছুই নেই। আল্লাহর অনুগ্রহে তারা হেদায়েত লাভ করে মুসলিম হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন আমি এই বৈঠকে থাকাবস্থায়ই এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু সাহায্য চাইল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জবাব দিলেন, সদকার ভাগ বাটোয়ার দায়িত্ব আল্লাহ নবী বা অন্য কাউকে দেননি। বরং তিনি নিজেই সদকার আটটি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এই আট শ্রেণীর কোন একটিতে তুমি শামিল থাকলে দিতে পারি। [আবু দাউদ ১৬৩০; দারাকুতনী: ২০৬৩]
(২) আলোচ্য আয়াতের শুরুতে إِنَّمَا শব্দ আনা হয়। যার অর্থঃ কেবলমাত্র, শুধুমাত্র। তাই শুরু থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, সদকার যে সকল খাতের বর্ণনা সামনে দেয়া হচ্ছে কেবল সে আটটি খাতেই সকল ওয়াজিব সদকা ব্যয় করা হবে, এছাড়া অন্য কোন ভাল খাতেও ওয়াজিব সদকা ব্যয় করা যাবে না। [কুরতুবী] সদকা শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। নফল ও ফরয উভয় দানই এতে শামিল রয়েছে। নফলের জন্যে শব্দটির প্রচুর ব্যবহার, তেমনি ফরয সদকার ক্ষেত্রেও কুরআনের বহুস্থানে শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। বরং কোন কোন মুফাসসিরের তথ্য মতে কুরআনে যেখানে শুধু সদকা শব্দের ব্যবহার রয়েছে, সেখানে ফরয সদকা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [কুরতুবী]
আবার কতিপয় হাদীসে সদকা বলতে প্রত্যেক সৎকর্মকেও বোঝানো হয়েছে। যেমন, হাদীস শরীফে আছে, কোন মুসলিমের সাথে সৎ ও উত্তম কথা বলা সদকা, কোন বোঝা বহনকারীর কাঁধে ভার তুলে দেওয়াও সদকা। [মুসলিম: ১০০৯] কুপ থেকে নিজের জন্যে উত্তোলিত পানির কিছু অংশ অন্যকে দান করাও সদকা। [তিরমিযী: ১৯৫৬] এ হাদীসে সদকা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
(৩) প্রথম ও দ্বিতীয় খাত হল যথাক্রমে ফকীর ও মিসকীনের। আসল অর্থে যদিও পার্থক্য রয়েছে। যথা, ফকীর হল যার কিছুই নেই এবং মিসকীন হল যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। [কুরতুবী] ফকীর ও মিসকীনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তারা যাকাতের হুকুমে সমান। মোটকথাঃ যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ অর্থ নেই তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সে ও নিতে পারবে। প্রয়োজনীয় মালামালের মধ্যে থাকার ঘর, ব্যবহৃত বাসন-পেয়ালা, পোশাক পরিচ্ছদ ও আসবাব পত্র প্রভৃতি শামিল রয়েছে। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রূপা বা তার মূল্য যার কাছে রয়েছে এবং সে ঋণগ্রস্ত নয়, সেই নেসাবের মালিক। তাকে যাকাত দেয়া ও তার পক্ষে যাকাত নেয়া জায়েয নয়। [কুরতুবী]
অনুরূপ যার কাছে কিছু রূপা বা নগদ কিছু টাকা এবং কিছু স্বর্ণ আছে সব মিলিয়ে যদি সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় তবে সেও নেসাবের মালিক, তাকেও যাকাত দেয়া নেয়া জায়েয নয়। কারণ সে ধনী ব্যক্তি। আর ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সদকা গ্রহণ জায়েয নয় ধনীর জন্য, অনুরূপভাবে শক্তিশালী উপার্জনক্ষম ব্যক্তির জন্য [আবু দাউদ ১৬৩৪; তিরমিযী: ৬৫২] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু'জন শক্তিশালী লোককে সদকার জন্য দাঁড়াতে দেখে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তোমাদের দেব, কিন্তু এতে ধনী এবং শক্তিশালী উপার্জনক্ষমের কোন হিস্যা নেই। [আবু দাউদ: ১৬৩৩]
(৪) আমেলীনে সদক অর্থাৎ সদকা সম্পৃক্ত কাজে নিযুক্ত কর্মী। এরা ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে লোকদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে বায়তুলমালের জমা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। [কুরতুবী] এরা যেহেতু এ কাজে নিজেদের সময় ব্যয় করে, সেহেতু তাদের জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব ইসলামী সরকারের উপর বর্তায়। কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াত যাকাতের একাংশ তাদের জন্য রেখে একথা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, তাদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা হবে। এর মূল রহস্য হল এই যে, আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের থেকে যাকাত ও অপরাপর সদকা আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। সূরার শেষের দিকে এক আয়াতে বলা হয়েছে, “হে রাসূল! আপনি তাদের মালামাল থেকে সদকা গ্রহণ করুন।” [১০৩] উক্ত আয়াত মতে রাসূলের অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারী খলীফা বা আমীরুল মুমেনীন বা রাষ্ট্রপ্রধানের উপর যাকাত ও সদকা আদায়ের দায়িত্ব বর্তায়।
বলাবাহুল্য, সহকারী ব্যতীত আমীরের পক্ষে এ দায়িত্ব সম্পাদন করা সম্ভব নয়। আলোচ্য আয়াতে “আমেলীন” বলতে যাকাত আদায়কারী তথা সেসব সহকারীদের কথাই বলা হয়েছে। এ আয়াত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক সাহাবীকে বিভিন্ন স্থানে যাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। এ সকল সাহাবীর অনেকে ধনীও ছিলেন। হাদীসে এসেছে, ধনীদের জন্য সদকার অর্থ হালাল নয়, তবে পাঁচ ব্যক্তির জন্য হালাল। প্রথমতঃ যে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় অর্থ তার নেই যদিও সে স্বদেশী ধনী। দ্বিতীয়তঃ সদকা আদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি। তৃতীয়তঃ সেই অর্থশালী ব্যক্তি যার মজুদ অর্থের তুলনায় ঋণ অধিক। চতুর্থতঃ যে ব্যক্তি মূল্য আদায় করে গরীব মিসকীন থেকে সদকার মালামাল ক্রয় করে। পঞ্চমতঃ যাকে গরীব লোকেরা সদকার প্রাপ্ত মাল হাদিয়াস্বরূপ প্রদান করে। [আবু দাউদ ১৬৩৫]
(৫) যাকাতের চতুর্থ ব্যয় খাত হল ‘মুআল্লাফাতুল কুলুব’। সাধারণত তারা তিন চার শ্রেণীর বলে উল্লেখ করা হয়। এদের কিছু মুসলিম, কিছু অমুসলিম। মুসলিমদের মধ্যে কেউ ছিল চরম অভাবগ্রস্ত এবং নওমুসলিম, এদের চিত্তাকর্ষণের ব্যবস্থা এজন্যে নেয়া হয়, যেন তাদের ইসলামী বিশ্বাস পরিপক্ক হয়। আর কেউ ছিল ধনী কিন্তু তাদের অন্তর তখনো ইসলামে রঞ্জিত হয়নি। আর কেউ কেই ছিল পরিপক্ক মুসলিম, কিন্তু তার গোত্রকে এর দ্বারা হেদায়েতের পথে আনা উদ্দেশ্য ছিল। অমুসলিমদের মধ্যেও এমন অনেকে রয়েছে, যাদের শক্রতা থেকে বাঁচার জন্যে তাদের পরিতুষ্ট রাখার প্রয়োজন ছিল।
আর কেউ ছিল, যারা ওয়ায নসীহত কিংবা যুদ্ধ ও শক্তি প্রয়োগ দ্বারাও ইসলামে প্রভাবিত হচ্ছে না, বরং অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, তারা দয়া, দান ও সদ্ব্যবহারে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমগ্র জীবনের প্রচেষ্টা ছিল কুফরীর অন্ধকার থেকে আল্লাহর বান্দাদের ঈমানের আলোয় নিয়ে আসা। তাই এ ধরনের লোকদের প্রভাবিত করার জন্য যে কোন বৈধ পন্থা অবলম্বন করতেন। এরা সবাই মুআল্লাফাতুল কুলুবের অন্তর্ভুক্ত এবং আলোচ্য আয়াতে এদেরকে সদকার চতুর্থ ব্যয়খাত রূপে অভিহিত করা হয়েছে।
(৬) যাকাতের পঞ্চম ব্যয়খাত হলো, দাসমুক্তিতে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা। আর তা হলো ঐ সমস্ত দাস যাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য তাদের মনিব তাদেরকে কিছু টাকা পয়সা দেয়ার চুক্তি করেছে। আর সে দাস তা পরিশোধ করতে পারছে না।
(৭) যাকাতের ষষ্ট ব্যয়খাত হল দেনাদার বা ঋণগ্রস্ত। আয়াতে বর্ণিত “গারেমীন” হলো “গারেম” এর বহুবচন এর অর্থ দেনাদার, [জালালাইন]। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, সে ঋণগ্রস্তের কাছে এ পরিমাণ সম্পদ থাকবে না, যাতে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। কারণ, অভিধানে এমন ঋণী ব্যক্তিকেই “গারেম” বলা হয়, যে আল্লাহর আনুগত্যে তার নিজ ও পরিবারের ব্যয় মেটানোর জন্য খরচ করতে গিয়ে এমন ঋণী হয়ে গেছে যে, সেটা শোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। [আইসারুত তাফসীর] আবার কোন কোন ইমাম এ শর্ত আরোপ করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য না করে থাকে। [কুরতুবী] কোন পাপ কাজের জন্য যদি ঋণ করে থাকে-যেমন, মদ কিংবা নাজায়েয প্রথা অনুষ্ঠান প্রভূতি, তবে এমন ঋণগ্রস্তকে যাকাতের অর্থ থেকে দান করা যাবে না, যাতে তার পাপ কাজও অপব্যয়ে অনর্থক উৎসাহ দান করা না হয়।
এখানে জানা আবশ্যক যে, ঋণগ্রস্থতা কয়েক কারণে হতে পারে। এক. মানুষের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক জোড়া লাগানোর জন্য, মীমাংসার জন্য কেউ কেউ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে। যেমন, দু’দল লোকের মধ্যে সমস্যা লেগে গেছে, একজন লোক পয়সা খরচ করে দু'দলের সমস্যাটা সমাধান করে দেয়। এ ধরনের লোকের জন্য শরী’আতে যাকাতের টাকায় হিস্যা রেখেছে, যাতে করে মানুষ এ ধরনের কাজে উদ্ধৃদ্ধ হয়। দুই. যে ঋণগ্রস্থ হয় নিজের জন্য, তারপর ফকীর হয়ে যায়, তাকে তার ঋণগ্রস্থতা থেকে মুক্তির জন্য যাকাত থেকে দেয়া যেতে পারে। [বাগভী; সাদী] প্রথম প্রকারের উদাহরণ যেমন হাদীসে এসেছে, কাবীসা ইবন মুখারিক আল-হিলালী বলেন, আমি একবার পরস্পর সম্পর্ক ঠিক রাখতে গিয়ে মাথার উপর ঋণের বিরাট বোঝা বহন করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আসি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আমাদের কাছে অবস্থান কর, যাতে করে সদকা তথা যাকাতের মাল আসলে তোমাকে দিতে পারি। তারপর তিনি বললেন, হে কাবীসা! তিন জনের জন্যই কেবল চাওয়া জায়েয। এক. যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ঋণের বোঝা বহন করেছে, তার জন্য চাওয়া জায়েয, যতক্ষণ না সে তা পাবে। তারপর তাকে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দুই. আর একজন যার সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেছে। তারজন্যও কোন প্রকার জীবিকার ব্যবস্থা করা পর্যন্ত চাওয়া জায়েয। তিন. আর একজন লোক যাকে দারিদ্রতা পেয়ে বসেছে। তখন তার কাওমের তিনজন গ্রহণযোগ্য বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে যে, আল্লাহর শপথ! অমুক হত-দরিদ্র হয়ে পড়েছে। সে ব্যক্তিও জীবিকার ব্যবস্থা হওয়া পর্যন্ত যাচঞা করতে পারে। এর বাইরে যত চাওয়া আছে সবই হারাম। [মুসলিম: ১০৪৪]
(৮) সপ্তম যাকাতের ব্যয়খাত হলোঃ “ফি সাবীলিল্লাহ”। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর মর্ম সেসব গাযী ও মুজাহিদ, যাদের অস্ত্র ও জিহাদের উপকরণ ক্রয় করার ক্ষমতা নেই। এ জাতীয় কাজই নির্ভেজাল দ্বীনী খেদমত ও ইবাদাত। কাজেই যাকাতের মাল এতে ব্যয় করা খুব জরুরী। [কুরতুবী] এমনিভাবে ফেকাহবিদগণ ছাত্রদেরকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ, তারাও একটি ইবাদত আদায় করার জন্যই এ ব্রত গ্রহণ করে থাকে। [সা'দী]
(৯) যাকাতের অষ্টম ব্যয়খাত হলোঃ মুসাফির। যাকাতের ব্যয়খাতের ক্ষেত্রে এমন মুসাফির বা পথিককে বুঝানোই উদ্দেশ্য, যার কাছে সফরকালে প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ নেই, স্বদেশে তার যত অর্থ-সম্পদই থাক না কেন। এমন মুসাফিরকে যাকাতের মাল দেয়া যেতে পারে, যাতে করে সে তার সফরের প্রয়োজনাদি সমাধা করতে পারবে এবং স্বদেশ ফিরে যেতে সমর্থ হবে। [কুরতুবী; সাদী]
(১০) অধিকাংশ ফেকাহবিদ এ ব্যাপারে একমত যে, যাকাতের নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয় করার ব্যাপারেও যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত রয়েছে যে, এসব খাতে কোন হকদারকে যাকাতের মালের উপর মালিকানা স্বত্ব বা অধিকার দিয়ে দিতে হবে। মালিকানা অধিকার দেয়া ছাড়া যদি কোন মাল তাদেরই উপকার কল্পে ব্যয় করা হয়, তবুও যাকাত আদায় হবে না।
(১১) এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, এ আটটি খাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত। তিনি জানেন বান্দাদের স্বার্থ কোথায় আছে। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুসারেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লক্ষণীয় যে, এ আটটি খাতকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। এক. এমন কিছু খাত আছে যেগুলোতে ঐ লোকদেরকে তাদের প্রয়োজন পূরণার্থে ও উপকারার্থে দেয়া হচ্ছে, যেমন, ফকীর, মিসকীন ইত্যাদি। দুই. এমন কিছু খাত আছে যেগুলোতে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে তাদের প্রতি আমাদের প্রয়োজনে, ইসলামের উপকারার্থে, কোন ব্যক্তির প্রয়োজনার্থে নয়। যেমন, মুআল্লাফাতি কুলুবুহুম, আমেলীন ইত্যাদি। এভাবে আল্লাহ তা'আলা যাকাত দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমদের সাধারণ ও বিশেষ যাবতীয় প্রয়োজনীয় পূরণের ব্যবস্থা করেছেন। যদি ধনীগণ শরীআত মোতাবেক তাদের যাকাত প্রদান করত, তবে অবশ্যই কোন মুসলিম ফকীর থাকত না। তাছাড়া এমন সম্পদও মুসলিমদের হস্তগত হতো যা দিয়ে তারা মুসলিম দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে সমর্থ হতো। আর যার মাধ্যমে তারা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে পারত এবং যাবতীয় দ্বীনী স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব হতো। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) (ফরয) স্বাদক্বাসমূহ শুধুমাত্র নিঃস্ব,[1] অভাবগ্রস্ত এবং স্বাদক্বাহ (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের মনকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করা আবশ্যক তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (সংগ্রামকারী) ও (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরের জন্য।[2] এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত (ফরয বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
[1] এই আয়াতে সমালোচনার দরজা বন্ধ করার জন্য স্বাদক্বাহ পাওয়ার হকদার লোকদের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। এখানে স্বাদক্বাসমূহ থেকে উদ্দেশ্য যাকাত। আয়াতের প্রারম্ভে إنَّمَا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; যা সীমাবদ্ধ বা নির্দিষ্টীকরণের জন্য আসে। الصَّدَقَات শব্দে ال আর্টিক্যালটি শ্রেণী বুঝাবার জন্য ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, (যাকাত) শ্রেণীর স্বাদক্বাহ এই আট ধরনের লোকদের উপর সীমাবদ্ধ বা তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যাদের উল্লেখ আয়াতে এসেছে। এরা ছাড়া অন্য কারো জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা শুদ্ধ নয়। উলামাদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, এই আট প্রকার লোক সকলের মাঝেই যাকাত বণ্টন করা জরুরী। নাকি এদের মধ্য হতে যাদের মাঝে ইমাম অথবা যাকাত আদায়কারী প্রয়োজন মনে করবে প্রয়োজন মোতাবেক বণ্টন করতে পারেন? ইমাম শাফেয়ী (রঃ) প্রভৃতিগণ প্রথম রায়টিকে এবং ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফা (রঃ) প্রভৃতিগণ দ্বিতীয় রায়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় রায়টিই হল অধিক সঠিক। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)এর রায় মোতাবেক যাকাতের অর্থ কুরআনে বর্ণিত আট ধরনের লোকদের মধ্যে সকলের উপর ব্যয় করা জরুরী। অর্থাৎ, অধিকতর প্রয়োজন ও বৃহত্তর কল্যাণের খাত না দেখেই অর্থকে আট ভাগ করে আট জায়গাতেই কিছু কিছু করে খরচ করতে হবে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় রায় অনুযায়ী অধিকতর প্রয়োজন ও বৃহত্তর কল্যাণের খেয়াল রাখা জরুরী। সুতরাং যে খাতে অর্থ ব্যয় করা অধিক প্রয়োজন অথবা যদি কোন খাতে ব্যয় করা অধিক জরুরী হয়, তাহলে সেখানে প্রয়োজন মত যাকাতের মাল ব্যয় করা যাবে। যদিও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার জন্য অর্থ অবশিষ্ট না থাকে। এই রায়ে যেসব যৌক্তিকতা রয়েছে, তা প্রথম রায়ে নেই।
[2] উক্ত আট প্রকার খাতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এইরূপঃ-
(ক-খ) ‘ফকীর ও মিসকীন’ (নিঃস্ব-অভাবগ্রস্ত): যেহেতু উভয় শব্দ প্রায় সমতুল্য; একটি অপরের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ, ফকীরকে মিসকীন ও মিসকীনকে ফকীর বলা হয়ে থাকে। সেহেতু এই দুয়ের সংজ্ঞাতে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও উভয় শব্দের অর্থে এ কথা সুনিশ্চিত যে, যে অভাবী, যে নিজ প্রয়োজন ও দরকার পূর্ণ করার জন্য চাহিদা অনুযায়ী টাকা-পয়সা ও উপকরণ থেকে বঞ্চিত, তাকেই ফকীর-মিসকীন বলা হয়। মিসকীনের ব্যাপারে এক হাদীস এসেছে যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘মিসকীন’ সে নয় যে দু-এক লোকমার জন্য বা দু-একটি খেজুরের জন্য লোকের দরজায় দরজায় ঘুরে ফিরে বেড়ায়। বরং ‘মিসকীন’ তো সেই যার কাছে এতটা পরিমাণ মাল থাকে না, যাতে তার প্রয়োজন মিটে যায়। যে না নিজের দরিদ্রতাকে প্রকাশ করে যে, লোকে তাকে গরীব ও হকদার বুঝে স্বাদক্বা-খায়রাত করবে। আর না সে নিজে থেকে কারো কাছে যাচ্ঞা করে। (বুখারী ও মুসলিম যাকাত অধ্যায়) হাদীসে আসল মিসকীন উক্ত ব্যক্তিকে নির্ধারণ করা হয়েছে। নচেৎ ইবনে আব্বাস প্রভৃতিগণের নিকট ‘মিসকীন’-এর সংজ্ঞা হল, যে অভাবী এবং ঘুরে-ফিরে লোকের কাছে ভিক্ষা ও যাচ্ঞা করে বেড়ায়। আর ‘ফকীর’-এর সংজ্ঞা হল, যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া ও যাচ্ঞা করা হতে বিরত থাকে। (ইবনে কাসীর)
(গ) স্বাদক্বা (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীঃ এ থেকে উদ্দেশ্য সরকারের সেইসব কর্মচারী যারা যাকাত ও স্বাদক্বা আদায় ও বণ্টন এবং হিসাব-নিকাশ করার দায়িত্বে নিযুক্ত। (পারিশ্রমিক ও বেতন স্বরূপ এদেরকে যাকাতের মাল দেওয়া চলবে।)
(ঘ) যাদের মনকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করা আবশ্যকঃ প্রথমতঃ সেই কাফের যে কিছু কিছু ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়, এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম গ্রহণ করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই নও-মুসলিম যাকে ইসলামে দৃঢ়স্থির থাকার জন্য সাহায্য করার দরকার হয়। তৃতীয়তঃ সেই লোকও এর শামিল যাকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকদেরকে মুসলিমদের উপর হামলা করা থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে। উক্ত সকল লোক এবং এই শ্রেণীর আরো অন্যান্য লোকের উপর যাকাতের মাল ব্যয় করা যেতে পারে; চাহে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ধনবান হোক না কেন। হানাফীদের নিকটে এই খাত বর্তমানে অবশিষ্ট নেই। কিন্তু এ কথা শুদ্ধ নয়। অবস্থা ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক যামানাতে এই খাতের উপর যাকাতের অর্থ খরচ করা বৈধ।
(ঙ) দাসমুক্তিঃ কিছু কিছু উলামাগণ ‘দাস’ বলতে কেবল সেই দাস উদ্দেশ্য মনে করেছেন, যার মালিক তাকে তার ত্রুয়-মূল্য উপার্জন করে দেওয়ার শর্তে মুক্তির চুক্তি লিখে দিয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য উলামাগণ সর্বপ্রকার যুদ্ধবন্দী ও ক্রীতদাসকে বুঝিয়েছেন। ইমাম শাওকানী (রঃ) শেষোক্ত রায়কে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(চ) ঋণগ্রস্তঃ এ থেকে প্রথমতঃ সেই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে নিজ পরিবারের খরচাদি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে লোকদের কাছে ঋণ গ্রহণ করেছে। আর তার কাছে নগদ কোন টাকা পয়সা নেই এবং এমন কোন আসবাব-পত্রও (বা জমি-জায়গাও) নেই যা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। দ্বিতীয়তঃ সেই যামিন ব্যক্তি যে কারো যামিন হয়েছে, অতঃপর যামানতের টাকা তার আসল যিম্মেদার আদায় করতে না পারলে তার ঘাড়ে এসে পড়েছে। তৃতীয়তঃ যার ফল-ফসলাদি দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেছে বা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তার ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছে। এই সমস্ত লোকদেরকে যাকাতের ফান্ড্ থেকে সাহায্য করা বৈধ।
(ছ) আল্লাহর পথঃ এর অর্থ হল জিহাদ। অর্থাৎ, যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় আসবাব-পত্র ক্রয় করতে এবং মুজাহিদের জন্য (চাহে সে ধনবান হোক না কেন) যাকাতের মাল ব্যয় করা জায়েয। আর হাদীসে এসেছে যে, হজ্জ এবং উমরাহও ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ কিছু উলামাগণের নিকট ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের কাজও ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। কারণ এতেও জিহাদের মতই আল্লাহর কলেমাকে উচ্চ করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
(জ) মুসাফিরঃ অর্থাৎ, যদি কোন মুসাফির (বৈধ) সফরে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে; সে যদিও তার দেশে বা ঘরে প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে থাকে, তবুও যাকাতের খাত থেকে তার মদদ করা বৈধ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবেদুঈনরা কুফর ও কপটতায় কঠিনতর এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যা নাযিল করেছেন তার সীমারেখা না জানার অধিক উপযোগী। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
বেদুঈন আরবরা কুফুরী আর মুনাফিকীতে সবচেয়ে কঠোর, আর আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তার সীমারেখার ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার তারা অধিক উপযুক্ত, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাবান। তাইসিরুল
পল্লীবাসী লোকেরা কুফরী ও কপটতায় অতি কঠোর, আর আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তাদের ঐ সব আহকামের জ্ঞান না থাকায় তাদের এইরূপ হওয়াই উচিত; আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
The bedouins are stronger in disbelief and hypocrisy and more likely not to know the limits of what [laws] Allah has revealed to His Messenger. And Allah is Knowing and Wise. Sahih International
৯৭. আ’রাব(১) বা মরুবাসীরা কুফরী ও মুনাফেকীতে শক্ত এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর যা নাযিল করেছেন, তার সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার অধিক উপযোগী।(২) আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(১) أعراب শব্দটি عرب শব্দের বহুবচন নয়; বরং এটি একটি শব্দ পদ বিশেষ যা শহরের বাইরের অধিবাসীদের বুঝাবার জন্য ব্যবহার করা হয়। এর একজন বুঝাতে হলে أعرابي বলা হয়। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(২) আলোচ্য আয়াতে মরুবাসী বেদুঈনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এরা কুফরী ও মুনাফিকীর ব্যাপারে শহরবাসী অপেক্ষাও বেশী কঠোর। এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, এরা এলম ও আলেম তথা জ্ঞান ও জ্ঞানী লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করে। ফলে এরা আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত সীমা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। কারণ, না কুরআন তাদের সামনে আছে, না তার অর্থ মর্ম ও বিধি বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে, বিশেষ করে যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। এ জন্যই কাতাদা বলেন, এখানে রাসূলের সুন্নাত সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] এক হাদীসেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, যে কেউ মরুবাসী হবে সে অসভ্য হবে, যে কেউ শিকারের পিছনে ছুটবে সে অন্যমনস্ক হবে, আর যে কেউ ক্ষমতাশীনদের কাছে যাবে সে ফিৎনায় পড়বে। [আবু দাউদ: ২৮৫৯]
আর যেহেতু অসভ্যতা বেদুঈনদের সাধারণ নিয়ম, তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্য থেকে কোন নবী-রাসূল পাঠান নি। আল্লাহ বলেন, “আর আমরা আপনার আগে কেবল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে পুরুষদেরকে রাসূল বানিয়েছিলাম।” [সূরা ইউসুফঃ ১০৯] অন্য হাদীসে এসেছে, একবার এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু হাদীয়া দেয়। তিনি তাকে রাজী করতে দ্বিগুণ প্রদান করেন। তখন তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, হাদীয়া শুধু কুরাইশী অথবা সাকাফী অথবা আনসারী বা দাওসী থেকেই নেব। [তিরমিযীঃ ৩৯৪৫] কারণ এ গোত্রগুলো লোকালয়ে বাস করার কারণে তাদের মধ্যে সভ্যতা-সংস্কৃতি রয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৭) মরুবাসী (বেদুঈন) লোকেরা কুফরী ও কপটতায় অতি কঠোরতম।[1] আর তারা এই কথারই বেশী উপযুক্ত যে, আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তাদের ঐসব বিধি-সীমার জ্ঞান হয় না।[2] আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
[1] পূর্ব বর্ণিত আয়াতসমূহে ঐ সকল মুনাফিকদের আলোচনা ছিল, যারা মদীনা শহরে বসবাস করত। আর কিছু মুনাফিক ছিল যারা মদীনার বাইরে মরু এলাকায় বসবাস করত। মরু এলাকায় বসবাসকারীদেরকে ‘আ’রাব’ (বেদুঈন) বলা হয় যা ‘আ’রাবী’ শব্দের বহুবচন। শহরবাসীদের আচার-ব্যবহার অপেক্ষা তাদের আচার-ব্যবহারে বেশি কঠোরতা ও রুক্ষতা পাওয়া যায়। অনুরূপ তাদের মধ্যে যারা কাফের ও মুনাফিক ছিল তারা কুফরী ও মুনাফিকীর ব্যাপারে শহরবাসীদের চাইতে বেশি কঠোর ছিল এবং শরীয়তের বিধান সম্বন্ধেও বেশি অজ্ঞ ছিল। এই আয়াতে তাদের ও তাদের সেই আচরণের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীসেও তাদের চাল-চলন সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন একদা কিছু বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি তোমাদের সন্তানদেরকে চুমা দাও?’ সাহাবায়ে কিরামগণ উত্তরে বললেন ‘হাঁ।’ তারা বলল ‘আল্লাহর শপথ! আমরা তো চুমা দিই না।’ তাদের এই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের অন্তর থেকে মায়া-মমতা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন, তবে আমার আর কি করার আছে?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[2] এর কারণ হল যেহেতু তারা শহর থেকে দূরে বসবাস করত এবং আল্লাহ ও রসূল (সাঃ)-এর কথা শ্রবণ করার সুযোগ পেত না ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাদের সম্পদ থেকে সদাকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। আর তাদের জন্য দো‘আ কর, নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য প্রশান্তিকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
তাদের সম্পদ থেকে সদাকাহ গ্রহণ করবে যাতে তা দিয়ে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পার। তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে, বস্তুতঃ তোমার দু‘আ তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন সব কিছু জানেন। তাইসিরুল
(হে নাবী!) তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সাদাকাহ গ্রহণ কর, যদ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করে দিবে, আর তাদের জন্য দু‘আ কর। নিঃসন্দেহে তোমার দু‘আ হচ্ছে তাদের জন্য শান্তির কারণ, আর আল্লাহ খুব শোনেন, খুব জানেন। মুজিবুর রহমান
Take, [O, Muhammad], from their wealth a charity by which you purify them and cause them increase, and invoke [Allah 's blessings] upon them. Indeed, your invocations are reassurance for them. And Allah is Hearing and Knowing. Sahih International
১০৩. আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন(১)। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। আর আপনি তাদের জন্য দো'আ করুন। আপনার দোআ তো তাদের জন্য প্রশান্তিকর(২)। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(১) মুফাসসিরগণ এ সাদকার প্রকৃতি নির্ধারণ নিয়ে দুটি মত দিয়েছেন। কারও কারও মতে, এ আয়াতে পূর্ববর্তী আয়াতে যাদের তাওবাহ কবুল করা হয়েছে তাদের সদকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সেটা ফরয বা নফল যে কোন সদকা হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] এ মতের সমর্থনে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন পূর্বোক্ত লোকদের তাওবা কবুল করা হয়, তখন তারা তাদের সম্পদ নিয়ে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো আমাদের সম্পদ, এগুলো গ্রহণ করে আমাদের পক্ষ থেকে সদকা দিন এবং আমাদের জন্য ক্ষমার দো'আ করুন। তিনি বললেন, আমাকে এর নির্দেশ দেয়া হয়নি। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [আত-তাফসীরুস সহীহ] তবে অধিকাংশের মতে, নির্দেশটি ব্যাপক, সবার জন্যই প্রযোজ্য। তবে সেটা ফরয সদকা বা যাকাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। [ফাতহুল কাদীর] এ মতের সমর্থনে বেশ কিছু হাদীস রয়েছে, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাত প্রদানকারীদের জন্য দোআ করেছেন।
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নির্দেশ মোতাবেক সাহাবীদের মধ্যে কেউ যাকাত নিয়ে আসলে তাদের পরিবারের জন্য দো'আ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা যাকাত নিয়ে আসলে তিনি বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে ‘আলা আলে ফুলান’। (হে আল্লাহ! অমুকের বংশধরের জন্য সালাত প্রেরণ করুন) অতঃপর আমার পিতা তার কাছে যাকাত নিয়ে আসলে তিনি দো'আ করলেন, “আল্লাহুম্মা সাল্লে 'আলা আলে আবি আওফা”। হে আল্লাহ! আবু আওফার বংশধরের জন্য সালাত প্রেরণ করুন। [বুখারী: ১৪৯৭] অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার ও আমার স্বামীর জন্য দোআ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইকে ওয়া 'আলা যাওজিকে’ (আল্লাহ তোমার ও তোমার স্বামীর জন্য সালাত প্রেরণ করুন)। [আবু দাউদ: ১৫৩৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৩) তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সাদাকাহ গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে। আর তাদের জন্য দুআ কর,[1] নিঃসন্দেহে তোমার দুআ হচ্ছে তাদের জন্য শান্তির কারণ। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
[1] এটা সাধারণ আদেশ। স্বাদাক্বাহ থেকে উদ্দেশ্য ফরযকৃত স্বাদাক্বাহ অর্থাৎ যাকাত হতে পারে, আবার নফল স্বাদাক্বাহও হতে পারে। এখানে নবী (সাঃ)-কে আদেশ দেওয়া হচ্ছে যে, স্বাদাক্বাহ দ্বারা তুমি মুসলিমদেরকে পবিত্র কর। এতে এই কথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, যাকাত ও স্বাদাক্বাহ মানুষের আখলাক-চরিত্রকে পবিত্র করার একটি বড় উপায়। এ ছাড়া স্বাদাক্বাহ কে স্বাদাক্বাহ এই জন্য বলা হয় যে, স্বাদাক্বাহ দাতা নিজের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী। দ্বিতীয় বিষয় এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, স্বাদাক্বাহ উসুলকারীর উচিত, স্বাদাক্বাহদাতার জন্য দু’আ করা। যেমন এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজ পয়গম্বর (সাঃ)-কে দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন এবং নবী (সাঃ) উক্ত আদেশ অনুযায়ী দু’আ করতেন। এই সাধারণ আদেশ থেকে এটাও দলীল নেওয়া হয়েছে যে, যাকাত উসূল করার দায়িতত্ত্ব সমসাময়িক বাদশা বা শাসকের। যদি কেউ তা প্রদান করতে অস্বীকার করে, তবে আবু বাকর (রাঃ) ও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)গণের আমল অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা অপরিহার্য। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন। যতক্ষণ না তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবেন, যা থেকে তারা সাবধান থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
আল্লাহ কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে গুমরাহ করেন না যে পর্যন্ত না তিনি তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেন কোন্ বিষয়ে তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ হলেন সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক অবহিত। তাইসিরুল
আর আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে হিদায়াত করার পর পথভ্রষ্ট করেন, যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেই সব বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দেন, যে বিষয়ে তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। মুজিবুর রহমান
And Allah would not let a people stray after He has guided them until He makes clear to them what they should avoid. Indeed, Allah is Knowing of all things. Sahih International
১১৫. আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন—যতক্ষন না তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করবেন, যা থেকে তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে তা; নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৫) আর আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে পথপ্রদর্শন করার পর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেন; যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেসব বিষয় পরিষ্কারভাবে বলে দেন, যা হতে তারা বেঁচে থাকবে;[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
[1] আল্লাহ তাআলা যখন মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করে দিলেন, তখন কিছু সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ), যাঁরা এই কর্ম করেছিলেন, তাঁরা এই ভেবে চিন্তিত হলেন যে, তাঁরা তাঁদের মুশরিক আত্মীয়দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ভ্রষ্টতার কাজ করেননি তো? আল্লাহ তাআলা বললেন যে, আল্লাহ তাআলা যতক্ষণ কোন বস্তুর নিষিদ্ধতা ঘোষণা না করেন, ততক্ষণ তিনি তার উপর কোন ধর-পাকড় করেন না এবং তাকে ভ্রষ্টতাও গণ্য করেন না। তবে নিষিদ্ধ কর্ম থেকে কেউ বিরত না থাকলে আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করে দেন। ফলে যাঁরা উক্ত আদেশের পূর্বে মৃত মুশরিক আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাঁদের ধর-পাকড় হবে না, কারণ তাঁরা উক্ত নির্দেশ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান