কিয়ামত বিষয়ক আয়াতসমূহ ৩৮৯ টি
১৪ ইবরাহীম
১৪:৪৮ یَوۡمَ تُبَدَّلُ الۡاَرۡضُ غَیۡرَ الۡاَرۡضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوۡا لِلّٰهِ الۡوَاحِدِالۡقَهَّارِ ﴿۴۸﴾

যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও। আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে। আল-বায়ান

যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে। তাইসিরুল

যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী। মুজিবুর রহমান

[It will be] on the Day the earth will be replaced by another earth, and the heavens [as well], and all creatures will come out before Allah, the One, the Prevailing. Sahih International

৪৮. যেদিন এ যমীন পরিবর্তিত হয়ে অন্য যমীন হবে এবং আসমানসমূহও(১) আর মানুষ উন্মুক্তভাবে উপস্থিত হবে এক, একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহর সামনে।

(১) এখানে কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা ও ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছেঃ “কেয়ামতের দিন বর্তমান পৃথিবী পাল্টে দেয়া হবে এবং আকাশও। সবাই এক ও পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে হাজির হবে।” পৃথিবী ও আকাশ পাল্টে দেয়ার এরূপ অর্থও হতে পারে যে, তাদের আকার ও আকৃতি পাল্টে দেয়া হবে; যেমন কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসে আছে যে, সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকে একটি সমতল ভূমিতে পরিণত করে দেয়া হবে। এতে কোন গৃহের ও বৃক্ষের আড়াল থাকবে না এবং পাহাড়, টিলা, গর্ত, গভীরতা কিছুই থাকবে না।

এ অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (لَا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا) [ত্বাহাঃ ১০৭] অর্থাৎ গৃহ ও পাহাড়ের কারণে বর্তমানে রাস্তা ও সড়ক বাক ঘুরে ঘুরে চলেছে। কোথাও উচ্চতা এবং কোথাও গভীরতা দেখা যায়। কেয়ামতের দিন এগুলো থাকবে না, বরং সব পরিস্কার ময়দান হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতের দিন ময়দার রুটির মত পরিস্কার ও সাদা পৃথিবীর বুকে মানবজাতিকে পুনরুত্থিত করা হবে। এতে কারো কোন চিহ্ন (গৃহ, উদ্যান, বৃক্ষ, পাহাড়, টিলা ইত্যাদি) থাকবে না। [বুখারীঃ ৬৫২১, মুসলিমঃ ২৭৯০]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এক ইয়াহুদী এসে প্রশ্ন করলঃ যেদিন পৃথিবী পরিবর্তন করা হবে, সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ পুলসিরাতের নিকটে অন্ধকারে থাকবে। [মুসলিমঃ ৩১৫] অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বলেছিলেন, “সিরাতের উপর” [মুসলিম: ২৭৯১] এ থেকে জানা যায় যে, বর্তমান পৃথিবী থেকে পুলসিরাতের মাধ্যমে মানুষকে অন্যদিকে স্থানান্তর করা হবে। ইবনে জারীর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এ মর্মে একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ীর উক্তি বর্ণনা করেছেন। বাস্তব অবস্থা আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৮) (স্মরণ কর,) যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও।[1] আর মানুষ (কবর থেকে) বের হবে একক প্রতাপশালী আল্লাহর জন্য।

[1] ইমাম শওকানী বলেন, আয়াতে দুটো সম্ভাবনাই রয়েছে যে, এই পরিবর্তন গুণগত দিক থেকেও হতে পারে এবং পদার্থগত দিক থেকেও হতে পারে। অর্থাৎ এই আকাশ ও পৃথিবী নিজ নিজ গুণগত দিক দিয়ে পরিবর্তিত হবে অথবা অনুরূপ পদার্থগত দিক থেকে তার পরিবর্তন আসবে, না এই পৃথিবী থাকবে আর না এ আকাশ। পৃথিবীও অন্য হবে এবং আকাশও অন্য। রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মানুষ সাদা ও লালচে সাদা রঙের ভূমিতে একত্রিত হবে, যা ময়দার রুটির মত হবে, তাতে কারো কোন (মালিকানার) চিহ্ন থাকবে না। (মুসলিম, সিফাতুল কিয়ামাহ) একদা আয়েশা (রাঃ)  জিজ্ঞাসা করলেন, যখন এই আকাশ ও পৃথিবী পরিবর্তন হবে, তখন সেই দিন লোকেরা কোথায় অবস্থান করবে? উত্তরে নবী (সাঃ) বললেন, পুল সিরাতের উপর। (সাবেক উদ্ধৃতি) এক ইহুদীর প্রশ্নের উত্তরে নবী (সাঃ) বলেছিলেন, ‘‘সেই দিন লোকেরা পুলের নিকট অন্ধকারে অবস্থান করবে। (মুসলিম, কিতাবুল হায়য)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ইবরাহীম
১৪:৪৯ وَ تَـرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ یَوۡمَئِذٍ مُّقَرَّنِیۡنَ فِی الۡاَصۡفَادِ ﴿ۚ۴۹﴾

আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। আল-বায়ান

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা। তাইসিরুল

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃংখলিত অবস্থায়। মুজিবুর রহমান

And you will see the criminals that Day bound together in shackles, Sahih International

৪৯. আর সেদিন আপনি অপরাধীদেরকে দেখেবেন পরস্পর শৃংখলিত অবস্থায়(১),

(১) অর্থাৎ যেদিন সমস্ত মানুষ মহান বিচারপতি আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। তখন যদি আপনি অপরাধীদের দিকে দেখতেন যারা কুফরি ও ফাসাদ সৃষ্টি করে অপরাধ করে বেড়িয়েছে, তারা সেদিন শৃঙ্খলিত অবস্থায় থাকবে। [ইবন কাসীর] এখানে কয়েকটি অর্থ হতে পারে, একঃ কাফেরগণকে তাদের সমমনা সাথীদের সাথে একসাথে শৃংখলিত অবস্থায় রাখা হবে। [ইবন কাসীর] যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে,) একত্র কর যালিম ও তাদের সহচরদেরকে এবং তাদেরকে যাদের ইবাদাত করত তারা—” [সূরা আস-সাফফাত: ২২] আরও এসেছে, “আর যখন দেহে আত্মাসমূহ সংযোজিত হবে।” [সূরা আত-তাকওয়ীরঃ ৭] যাতে করে শাস্তি বেশী ভোগ করতে পারে। কেউ কারো থেকে পৃথক হবে না। পরস্পরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। দুইঃ তারা নিজেদের হাত ও পা শৃংখলিত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। [কুরতুবী] তিনঃ কাফের ও তাদের সাথে যে শয়তানগুলো আছে সেগুলোকে একসাথে শৃংখলিত করে রাখা হবে। [বাগভী; কুরতুবী] এমনও হতে পারে যে, সব কয়টি অর্থই এখানে উদ্দেশ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৯) সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকল দ্বারা বাঁধা অবস্থায়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ইবরাহীম
১৪:৫০ سَرَابِیۡلُهُمۡ مِّنۡ قَطِرَانٍ وَّ تَغۡشٰی وُجُوۡهَهُمُ النَّارُ ﴿ۙ۵۰﴾

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার* এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। আল-বায়ান

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন করবে। তাইসিরুল

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল। মুজিবুর রহমান

Their garments of liquid pitch and their faces covered by the Fire. Sahih International

* قطران হচ্ছে এমন আলকাতরা, যাতে দ্রুত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।

৫০. তাদের জামা হবে আলকাতরার(১) এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের চেহারাসমূহকে(২);

(১) কোন কোন ব্যাখ্যাকার বলেন, قطران এর অর্থ প্রচণ্ড গরম তামা। [ইবন কাসীর] কারও কারও নিকট “কাতেরান” শব্দটি আলকাতরা, গালা ইত্যাদির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেগুলোতে সাধারণত আগুন বেশী প্রজ্জলিত হয়।

(২) এখানে বলা হচ্ছে যে, কাফেরদের মুখ আগুনে আচ্ছন্ন থাকবে। অন্যত্র আরো বলেছেনঃ “আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। [সূরা আল-মু'মিনূনঃ ১০৪] “হায়, যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের মুখ ও পিছন দিক থেকে আগুন প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না!” [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৩৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫০) তাদের জামা হবে আলকাতরার[1] এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল।

[1] যা দ্রুতদাহ্য; আগুনে সত্ত্বর জলে ওঠে। তা ছাড়া অগ্নি তাদের চেহারাকেও ঢেকে রাখবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৮৫ وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَاۤ اِلَّا بِالۡحَقِّ ؕ وَ اِنَّ السَّاعَۃَ لَاٰتِیَۃٌ فَاصۡفَحِ الصَّفۡحَ الۡجَمِیۡلَ ﴿۸۵﴾

আর আমি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যে যা আছে, তা যথার্থতা ছাড়া সৃষ্টি করিনি এবং নিশ্চয় কিয়ামত আসবে। সুতরাং তুমি সুন্দরভাবে তাদেরকে এড়িয়ে যাও। আল-বায়ান

আমি আসমানসমূহ, যমীন আর এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু আছে প্রকৃত উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করিনি। ক্বিয়ামাত অবশ্যই আসবে, কাজেই উত্তম পন্থায় (তাদেরকে) এড়িয়ে যাও। তাইসিরুল

আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এ দু’য়ের অন্তবর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি; এবং কিয়ামাত অবশ্যম্ভাবী; সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর। মুজিবুর রহমান

And We have not created the heavens and earth and that between them except in truth. And indeed, the Hour is coming; so forgive with gracious forgiveness. Sahih International

৮৫. আর আসমান, যমীন ও তাদের মাঝে অবস্থিত কোন কিছুই যথার্থতা ছাড়া সৃষ্টি করিনি(১) এবং নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই। কাজেই আপনি পরম সৌজন্যের সাথে ওদেরকে ক্ষমা করুন।(২)

(১) পৃথিবী ও আকাশের সমগ্র ব্যবস্থা হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাতিলের ওপর নয়। বিশ্ব জাহান আল্লাহ তা'আলা অনাহুত সৃষ্টি করেননি। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা বলেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না? সুতরাং আল্লাহ মহিমাম্বিত, প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোন হক্ক ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের রব।” [সূরা আল-মুমিনুন: ১১৫–১১৬ তারপর কিয়ামত সংঘটিত হওয়া যে অবশ্যম্ভাবী সেটা বলেছেন।

(২) কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতের নির্দেশ হলো, সৌজন্যমূলকভাবে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া। এ নির্দেশ পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে। এখন শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং “মুহাম্মাদুররাসূলুল্লাহ” এ কালেমাই তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে। [তাবারী] আয়াতের অন্য অর্থ হচ্ছে, সুতরাং আপনি তাদেরকে সুন্দরভাবে এড়িয়ে যান। [জালালাইন]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৫) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এই দুয়ের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি।[1] আর কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী; সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।

[1] এখানে হক (অযথা নয়) বলতে উপকার ও কল্যাণ, যার উদ্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি। অথবা হক বলতে সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের প্রতিদান ও অসৎকর্মশীলদের পাপের বদলা দেওয়া। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার।’’ (সূরা নাজম ৩১)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:২৭ ثُمَّ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یُخۡزِیۡهِمۡ وَ یَقُوۡلُ اَیۡنَ شُرَكَآءِیَ الَّذِیۡنَ كُنۡتُمۡ تُشَآقُّوۡنَ فِیۡهِمۡ ؕ قَالَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ اِنَّ الۡخِزۡیَ الۡیَوۡمَ وَ السُّوۡٓءَ عَلَی الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿ۙ۲۷﴾

অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, ‘কোথায় আমার শরীকরা, যাদের ব্যাপারে তোমরা (মুমিনদের) বিরোধীতা করতে’? যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা বলবে, ‘নিশ্চয় লাঞ্ছনা ও দুর্গতি আজ কাফিরদের উপর।’ আল-বায়ান

অতঃপর ক্বিয়ামাত দিনে তিনি তাদেরকে অপমানিত করবেন আর বলবেন, ‘আমার অংশীদাররা কোথায় যাদের সম্পর্কে তোমরা (ঈমানদারদের সঙ্গে) বাক-বিতন্ডা করতে?’ যাদেরকে (দুনিয়ায়) জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলবে, ‘আজ অপমান আর দুর্ভাগ্য তো কাফিরদের জন্য তাইসিরুল

পরে কিয়ামাত দিবসে তিনি তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেনঃ কোথায় আমার সেই সব শরীক যাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতন্ডা করতে? যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবেঃ নিশ্চয়ই আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের জন্য। মুজিবুর রহমান

Then on the Day of Resurrection He will disgrace them and say, "Where are My 'partners' for whom you used to oppose [the believers]?" Those who were given knowledge will say, "Indeed disgrace, this Day, and evil are upon the disbelievers" - Sahih International

২৭. পরে কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন(১) এবং তিনি বলবেন, কোথায় আমার সেসব শরীক(২) যাদের সম্বন্ধে তোমরা ঘোর বিতণ্ডা করতে? যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে(৩), আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের উপর–

(১) তাদের গোপন ষড়যন্ত্রসমূহ ফাঁস করে দিয়ে তাদেরকে লজ্জিত করবেন। অনুরূপ কথা সূরা আত-তারেক এর ৯ নং আয়াতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, “যে দিন গোপন তথ্যসমূহ ফাঁস করে দেয়া হবে সেদিন তাদের কোন শক্তি বা সাহায্যকারী থাকবে না”। অথচ তারা দুনিয়াতে এ শক্তি-সামর্থ্য ও সাহায্যকারীর কারণে গর্ব ও অহংকার করে বেড়াত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক গাদ্দার তথা বিশ্বাসঘাতকের পিছনের অংশে তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ একটি পতাকা লাগিয়ে দেয়া হবে। তাতে বলা থাকবেঃ এটা অমুকের পুত্র অমুকের গাদ্দারীর প্রমাণপত্ৰ”। [বুখারী: ৩১৮৭; মুসলিম: ১৭৩৬] এভাবে আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী ও ধোঁকাবাজের যাবতীয় গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে অপমানিত করবেন।

(২) এখানে শরীকদেরকে আল্লাহ তা'আলা তার নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করার মূল কারণ হচ্ছে ধমকি প্রদান। কারণ, সেদিন আল্লাহ তা'আলার সম্মান, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবাই সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারবে। আর তখন প্রত্যেকেই বুঝতে পারবে যে, আল্লাহর সাথে যে শরীক নির্ধারণ করেছিলাম তা ছিল বোকামী। [আততাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

(৩) এখানে আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞানীদের সম্মানিত করা হয়েছে। যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে সমস্ত দলীল-প্রমাণাদি স্থাপন করা শেষ হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর আযাবের বাণী প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, আর কাফেররা ওজর আপত্তি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, তখন জানবে যে, তাদের পালানোর কোন জায়গা নেই। তখন দ্বীনের জ্ঞানীরা এ কথা বলবে। তারা বলবে, আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের উপর– [ইবন কাসীর] তারা হলো আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানী। যারা দুনিয়াতে হক্ক কথা বলতে কখনো পিছপা হতো না তারা আখেরাতেও হক্ক কথা বলার সুযোগ পাবে। এটা তাদের জন্য বড় সম্মানের বিষয়। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) পরে কিয়ামতের দিনে তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, ‘কোথায় আমার সে সব অংশী যাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতন্ডা করতে?’[1] যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল[2] তারা বলবে, ‘নিশ্চয় আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল অবিশ্বাসীদের জন্য।’

[1] এ ছিল পৃথিবীর আযাব। আর কিয়ামতে মহান আল্লাহ এমনভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন যে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, যাদেরকে আমার সাথে শরীক করতে এবং যাদের জন্য তোমরা মু’মিনদের সঙ্গে ঝগড়া করতে, তারা আজ কোথায়?

[2] অর্থাৎ, যাদের দ্বীনী জ্ঞান ছিল, যারা দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, তারা উত্তর দেবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:২৮ الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىهُمُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ ظَالِمِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ ۪ فَاَلۡقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعۡمَلُ مِنۡ سُوۡٓءٍ ؕ بَلٰۤی اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌۢ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۸﴾

নিজদের উপর যুলমকারী থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটাবে। অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা কোন পাপ করতাম না।’ হ্যাঁ, নিশ্চয় তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। আল-বায়ান

ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় নিজেদের প্রতি যুলম করা অবস্থায়।’ অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ ক’রে বলবে, ‘আমরা তো কোন খারাপ কাজ করতাম না।’ (ফেরেশতারা জবাব দিবে) ‘বরং, তোমরা যা করছিলে আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত। তাইসিরুল

মালাইকা/ফেরেশতাগণ তাদের মৃত্যু ঘটায় তাদের নিজেদের প্রতি যুলম করতে থাকা অবস্থায়; অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলবেঃ আমরা কোন মন্দ কাজ করতামনা। হ্যাঁ, তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। মুজিবুর রহমান

The ones whom the angels take in death [while] wronging themselves, and [who] then offer submission, [saying], "We were not doing any evil." But, yes! Indeed, Allah is Knowing of what you used to do. Sahih International

২৮. যাদের মৃত্যু ঘটায় ফিরিশতাগণ তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করা অবস্থায়; তখন তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, আমরা কোন মন্দ কাজ করতাম না।(১) অবশ্যই হ্যাঁ, নিশ্চয় তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।

(১) এটা তাদের মিথ্যাচার। অন্য আয়াতে এসেছে, তারা বলবে “আল্লাহর শপথ আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না” [সূরা আল-আনআমঃ ২৩] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “যে দিন আল্লাহ পুনরুথিত করবেন তাদের সবাইকে, তখন তারা আল্লাহর কাছে সেরূপ শপথ করবে যেরূপ শপথ তোমাদের কাছে করে।” [সূরা আল-মুজাদালাহঃ ১৮] তাদের মিথ্যাচারের কারণে আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে, তোমাদের কথা সঠিক নয়; বরং তোমরা যাবতীয় মন্দ কাজ করতে আল্লাহ তা'আলা তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা অবস্থায় ফিরিশতাগণ যাদের প্রাণ হরণ করে, তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না।’[1] অবশ্যই! তোমরা যা করতে সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [2]

[1] এখানে মুশরিক যালিমদের মৃত্যুর সময়ের অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে। যখন ফিরিশতা তাদের রূহ ছিনিয়ে নেন, তখন তারা আত্মসমর্পণ করে মিনতি সহকারে বলে, আমরা কোন মন্দ কাজ করতাম না। যেমন তারা হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে মিথ্যা শপথ করে বলবে,{وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ}  অর্থাৎ, আল্লাহর শপথ! আমরা মুশরিক ছিলাম না। (সূরা আনআম ২৩) অন্যত্র বলেন, যেদিন আল্লাহ তাদের পুনরুত্থিত করবেন, সেদিন তারা আল্লাহর সামনে সেই ভাবেই মিথ্যা শপথ করবে, যেভাবে তোমার সামনে করে। (মুজাদালাহ ১৮)

[2] ফিরিশতা উত্তরে বলবেন, কেন নয়? তোমরা মিথ্যা বলছ। তোমাদের পুরো জীবন মন্দ কাজেই কেটেছে। আর আল্লাহর নিকট তোমাদের সকল কাজের রেকর্ড জমা রয়েছে। তোমাদের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:২৯ فَادۡخُلُوۡۤا اَبۡوَابَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ فَلَبِئۡسَ مَثۡوَی الۡمُتَكَبِّرِیۡنَ ﴿۲۹﴾

সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতএব অবশ্যই অহঙ্কারীদের আবাস অতিনিকৃষ্ট। আল-বায়ান

কাজেই জাহান্নামের দরজায় প্রবেশ কর, সেখানে তোমাদেরকে চিরকাল থাকতে হবে, দাম্ভিকদের অবাসস্থল কতই না মন্দ!’ তাইসিরুল

সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হওয়ার জন্য। দেখ, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট! মুজিবুর রহমান

So enter the gates of Hell to abide eternally therein, and how wretched is the residence of the arrogant. Sahih International

২৯. কাজেই তোমরা দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতঃপর অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলিতে প্রবেশ কর সেথায় চিরস্থায়ী থাকার জন্য।[1] দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।

[1] ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, তাদের মৃত্যুর পর পরই তাদের রূহগুলো জাহান্নামে চলে যায়। আর তাদের দেহগুলো কবরে পড়ে থাকে। (যেখানে আল্লাহ নিজ কুদরতে শরীর ও রূহের মধ্যে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও এক ধরণের সম্পর্ক সৃষ্টি করে শাস্তি দেন। সকাল-সন্ধ্যা তাদের সামনে আগুন পেশ করা হয়।) অতঃপর যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন তাদের রূহগুলো তাদের নিজ নিজ (নতুন) দেহে ফিরে আসবে এবং চিরকালের জন্য তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:৭৭ وَ لِلّٰهِ غَیۡبُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَاۤ اَمۡرُ السَّاعَۃِ اِلَّا كَلَمۡحِ الۡبَصَرِ اَوۡ هُوَ اَقۡرَبُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۷۷﴾

আর আসমানসমূহ ও যমীনে গায়েবী বিষয় আল্লাহরই। আর কিয়ামতের ব্যাপারটি শুধু চোখের পলকের ন্যায়। কিংবা তা আরো নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল-বায়ান

আকাশসমূহ ও যমীনের অদৃশ্যের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই আছে। ক্বিয়ামাতের ব্যাপার তো চোখের পলকের মত বরং তাত্থেকেও দ্রুত। আল্লাহ সব কিছু করতেই সক্ষম। তাইসিরুল

আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কিয়ামাতের ব্যাপারতো চোখের পলকের ন্যায়, বরং ওর চেয়েও সত্ত্বর; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। মুজিবুর রহমান

And to Allah belongs the unseen [aspects] of the heavens and the earth. And the command for the Hour is not but as a glance of the eye or even nearer. Indeed, Allah is over all things competent. Sahih International

৭৭. আর আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েবী বিষয় আল্লাহরই। আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায়(১), অথবা তা থেকেও সত্বর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

(১) উপরোক্ত দুটি উদাহরণ পেশ করার পর আল্লাহ তা'আলা এখানে নিজের প্রশংসা করছেন যে, তিনিই শুধু গায়বের সংবাদের মালিক। তিনি ছাড়া আর কেউ গায়েব জানে না। আসমান ও যমীনে যা বর্তমানে গায়েব আছে তা একমাত্র তিনিই জানেন। অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিনের খবরও তিনিই জানেন; বান্দাদের কাছে তা গায়েব রাখা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৭) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই[1] এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চক্ষুর পলকের ন্যায়; বরং তার চেয়েও সত্বর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।[2]

[1] অর্থাৎ, আকাশ ও পৃথিবীতে অসংখ্য অদৃশ্য ও গায়বী জিনিস ও জ্ঞান আছে, যার মধ্যে কিয়ামত কখন হবে তার জ্ঞান অন্যতম। এ সকলের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। এই কারণে ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই, ঐ সব মূর্তিরা বা মৃত ব্যক্তিরা নয়, যাদের কোন জ্ঞানই নেই এবং কারো লাভ-ক্ষতি করার ক্ষমতাও নেই।

[2] মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ ক্ষমতার একটি প্রমাণ যে, এত বিশাল পৃথিবী তাঁর আদেশে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। এটি অতিরঞ্জিত কথা নয়; বরং বাস্তব সত্য। কারণ তাঁর ক্ষমতা অপরিসীম। যার অনুমান আমরা করতেই পারি না। তিনি যা চান كُن (হও) শব্দ দিয়ে তা হয়ে যায়। কিয়ামতও তাঁর كُن বলাতেই সংঘটিত হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১৩ وَ كُلَّ اِنۡسَانٍ اَلۡزَمۡنٰهُ طٰٓئِرَهٗ فِیۡ عُنُقِهٖ ؕ وَ نُخۡرِجُ لَهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ كِتٰبًا یَّلۡقٰىهُ مَنۡشُوۡرًا ﴿۱۳﴾

আর আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার ঘাড়ে সংযুক্ত করে দিয়েছি এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি বের করব একটি কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। আল-বায়ান

আমি প্রত্যেক লোকের ভাগ্য তার কাঁধেই ঝুলিয়ে রেখেছি (অর্থাৎ তার ভাগ্যের ভাল-মন্দের কারণ তার নিজের মধ্যেই নিহিত আছে) আর ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আমি এক কিতাব বের করব যাকে সে উন্মুক্ত অবস্থায় পাবে। তাইসিরুল

প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামাত দিবসে আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। মুজিবুর রহমান

And [for] every person We have imposed his fate upon his neck, and We will produce for him on the Day of Resurrection a record which he will encounter spread open. Sahih International

১৩. আর প্রত্যেক মানুষের কাজ আমরা তার গ্ৰীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমরা তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত।(১)

১. আয়াতে উল্লেখিত طائر শব্দটির অর্থ করা হয়েছে, কাজ। মূলতঃ এ শব্দটির দুটি অর্থ হতে পারে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

এক. মানুষের তাকদীর বা তার জন্য আল্লাহর পূর্বলিখিত সিদ্ধান্ত। মানুষ দুনিয়াতে যা-ই করুক না কেন সে অবশ্যই তার তাকদীর অনুসারেই করবে। কিন্তু মানুষ যেহেতু জানে না তার তাকদীরে কি লিখা আছে তাই তার উচিত ভালো কাজ করতে সচেষ্ট থাকা। কারণ, যাকে যে কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে এবং যাকে যেখানে যাওয়ার জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। সে সমস্ত কাজ করা তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে। সুতরাং তাকদীরের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ কারো নেই কিন্তু মানুষের উচিত নিজেকে ভালো ও সৎকাজের জন্য সদাপ্রস্তুত রাখা তাহলে বুঝা যাবে যে, তার তাকদীরে ভালো আছে এবং সেটা করতে সে সমর্থও হবে। পক্ষান্তরে যারা দুর্ভাগা তারা ভালো কাজ করার পরিবর্তে তকদীরে কি আছে সেটা খোঁজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সেটার পিছনে দৌড়াতে থাকে।

ফলে সে ভালো কাজ করার সুযোগ পায় না। তাই যারা ভালো কাজ করে এবং ভালো কাজ করার প্রয়াসে থাকে তাদের কর্মকাণ্ড আল্লাহর কাছে এমন প্রশংসিত হয়ে থাকে যে, যদি কোন কারণে সে ভালো কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সেটা করতে সমর্থ না হয় তবুও আল্লাহ তার জন্য সেটার সওয়াব লিখে দেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রতিদিনের সুনির্দিষ্ট কাজের উপরই আল্লাহ তা’আলা বান্দার শেষ লিখেন তারপর যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ফেরেশতাগণ বলে, হে আমাদের প্রভু! আপনার অমুক বান্দাকে তো আপনি (ভালো কাজ করা থেকে) বাধা দিলেন। তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ তাকে তার পূর্ব কাজের অনুরূপ শেষ পরিণতি লিখ, যতক্ষন সে সুস্থ না হবে বা মারা না। যাবে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৬৪১]

দুই. মানুষের কাজ বা তার আমলনামা। অৰ্থাৎ মানুষ যে কোন জায়গায় যে কোন অবস্থায় থাকুক, তার আমলনামা তার সাথে থাকে এবং তার আমল লিপিবদ্ধ হতে থাকে। মৃত্যুর পর তা বন্ধ করে রেখে দেয়া হয়। কেয়ামতের দিন এ আমলনামা প্রত্যেকের হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হবে, যাতে নিজে পড়ে নিজেই মনে মনে ফয়সালা করে নিতে পারে যে, সে পুরস্কারের যোগ্য, না আযাবের যোগ্য। [আত তাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি[1] এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে উন্মুক্ত পাবে।

[1] طَائِرٌ এর অর্থ হল পাখী। আর عُنُقٌ এর অর্থ হল ঘাড়। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) এখানে طَائِرٌ এর অর্থ নিয়েছেন, মানুষের আমল। আর فِي عُنُقِهِ বলতে তার সেই ভাল ও মন্দ আমল, যার ভাল অথবা মন্দ প্রতিদান তাকে দেওয়া হবে। গলার হারের মত তার সাথে থাকবে। অর্থাৎ, তার সমস্ত আমল লিখা হচ্ছে। আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ এই লিখিত জিনিস সুরক্ষিত থাকবে। কিয়ামতের দিন এই অনুযায়ী তার বিচার-ফায়সালা হবে। আর ইমাম শাওকানী طَائِرٌ এর অর্থ করেছেন, মানুষের ভাগ্য। যা মহান আল্লাহ তাঁর জ্ঞানের আলোকে প্রথমেই লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। যার সৌভাগ্যবান ও আল্লাহর অনুগত হওয়ার ছিল, তা আল্লাহর জানা ছিল এবং যার অবাধ্য হওয়ার ছিল, তাও তাঁর জানা ছিল। এই ভাগ্যই (সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য) প্রত্যেক মানুষের সাথে গলার হারের মত লেগে আছে। সেই অনুযায়ী হবে তার আমল এবং কিয়ামতের দিন সেই অনুযায়ীই হবে তার ফায়সালা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১৪ اِقۡرَاۡ كِتٰبَكَ ؕ كَفٰی بِنَفۡسِكَ الۡیَوۡمَ عَلَیۡكَ حَسِیۡبًا ﴿ؕ۱۴﴾

পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট। আল-বায়ান

(তাকে বলা হবে) ‘পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তোমার হিসাব নেয়ার ব্যাপারে তুমিই যথেষ্ট।’ তাইসিরুল

(আমি বলব) তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর; আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিকাশের জন্য যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান

[It will be said], "Read your record. Sufficient is yourself against you this Day as accountant." Sahih International

১৪. তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ট।(১)

১. হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর শপথ করে বলছি, যিনি তোমার হিসাবের ভার তোমার কাছেই অৰ্পণ করেছেন তিনি অবশ্যই তোমার সাথে সবচেয়ে বড় ইনসাফের কাজ করেছেন।” [ইবন কাসীর] কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ সেদিন সবাই তাদের আমলনামা পড়তে পারবে। যদিও সে দুনিয়াতে নিরক্ষর ছিল। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) (তাকে বলা হবে,) ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ কর; আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৯৭ وَ مَنۡ یَّهۡدِ اللّٰهُ فَهُوَ الۡمُهۡتَدِ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَهُمۡ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِهٖ ؕ وَ نَحۡشُرُهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَلٰی وُجُوۡهِهِمۡ عُمۡیًا وَّ بُكۡمًا وَّ صُمًّا ؕ مَاۡوٰىهُمۡ جَهَنَّمُ ؕ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنٰهُمۡ سَعِیۡرًا ﴿۹۷﴾

আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথহারা করেন তুমি কখনো তাদের জন্য তাঁকে ছাড়া অভিভাবক পাবে না। আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। আল-বায়ান

আল্লাহ যাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন সে পথপ্রাপ্ত আর যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কক্ষনো তাদের জন্য তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক পাবে না। ক্বিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে একত্রিত করব তাদের মুখের ভরে অন্ধ, বোবা ও বধির অবস্থায়। তাদের আবাস হচ্ছে জাহান্নাম। যখনই তার আগুন নিস্তেজ হয়ে আসবে, আমি তাদের জন্য অগ্নির দহন শক্তি বৃদ্ধি করে দেব। তাইসিরুল

আল্লাহ যাদের পথ প্রদর্শন করেন তারাইতো সঠিক পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন তাদের জন্য তুমি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেনা। কিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, বোবা অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম! যখনই তা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য আগুন বৃদ্ধি করে দিব। মুজিবুর রহমান

And whoever Allah guides - he is the [rightly] guided; and whoever He sends astray - you will never find for them protectors besides Him, and We will gather them on the Day of Resurrection [fallen] on their faces - blind, dumb and deaf. Their refuge is Hell; every time it subsides We increase them in blazing fire. Sahih International

৯৭. আর আল্লাহ যাদেরকে পথনির্দেশ করেন তারা তো পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন আপনি কখনো তাদের জন্য তাকে ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক পাবেন না। আর কিয়ামতের দিন আমরা তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, বোবা ও বধির করে।(১) তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে তখনই আমরা তাদের জন্য আগুনের শিখা বৃদ্ধি করে দেব।(২)

(১) অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল, সত্যকে দেখতে পেতো না, সত্য কথা শুনতে পেতো না এবং সত্য কথা বলতো না, ঠিক তেমনিভাবেই কিয়ামতেও তাদেরকে উঠানো হবে। তারা অন্ধ হিসেবে উঠার কি অর্থ তা এ সূরার ৭২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বধির ও মূক হিসেবে হাশরের মাঠে উঠানোর অর্থ করা হয়েছে যে, তারা এমন মূক হবে যে, দুনিয়াতে তাদের যে সমস্ত আজে বাজে চিন্তাধারাকে দলীল হিসেবে পেশ করত তখন তারা তা পেশ করতে পারবে না।

অনুরূপভাবে তারা খুশীর কিছু শুনতে পাবে না। আয়াতে আরো বলা হয়েছে যে, তারা তাদের মুখের উপর দিয়ে চলবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাফের কিভাবে তার চেহারার উপর হাশরের দিন চলবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে আল্লাহ্ দুনিয়াতে পায়ের উপর হাঁটতে দিয়েছেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে পারবেন না?। [বুখারী ৪৭৬০, মুসলিমঃ ২৮০৬]

(২) আয়াতের অর্থে বলা হয়েছে যে, জাহান্নামের আগুন যখনই কিছুটা স্তিমিত হবে। তখনই তার আগুনে নতুন মাত্রা যোগ করা হবে। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হলো, যখনই তাদের চামড়া পুড়ে যাবে তখনই তাদের নতুন চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে যাতে শাস্তি ভোগ করতে পারে। [তাবারী] সে হিসেবে এ আয়াতটি সূরা আন-নিসাঃ ৫৬ নং আয়াতের সমার্থবোধক ৷

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৭) আল্লাহ যাদেরকে পথ-নির্দেশ করেন, তারা তো পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কাউকেও তাদের অভিভাবক পাবে না।[1] আর কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়; [2] কানা, বোবা ও কালা করে।[3] তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে, তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নি বৃদ্ধি করে দেব।

[1] আমার দাওয়াত ও তবলীগে কে ঈমান আনবে, আর কে আনবে না, সেটাও আল্লাহরই এখতিয়ারাধীন। আমার কাজ কেবল পৌঁছে দেওয়া।

[2] হাদীসে এসেছে যে, একদা সাহাবাগণ আশ্চর্য হন যে, মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় কিভাবে হাশর হবে? নবী (সাঃ) বললেন, ‘‘যে আল্লাহ তাদেরকে পায়ে ভর দিয়ে চলার ক্ষমতা দান করেছেন, তিনি তাদেরকে মুখে ভর দিয়ে চলানোরও ক্ষমতা রাখেন।’’

(বুখারীঃ সূরা ফুরকানের তফসীর, মুসলিমঃ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ)

[3] অর্থাৎ, যেভাবে তারা দুনিয়াতে সত্যের ব্যাপারে কানা, বোবা ও কালা হয়ে ছিল, কিয়ামতের দিনও শাস্তিস্বরূপ কানা, বোবা ও কালা হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:৯৯ وَ تَرَكۡنَا بَعۡضَهُمۡ یَوۡمَئِذٍ یَّمُوۡجُ فِیۡ بَعۡضٍ وَّ نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَجَمَعۡنٰهُمۡ جَمۡعًا ﴿ۙ۹۹﴾

আর সেদিন আমি তাদেরকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেব যে, তারা একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গমালার মত আছড়ে পড়বে এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকে একত্র করব। আল-বায়ান

আমি তাদেরকে সেদিন এমন অবস্থায় ছেড়ে দেব যে, তারা একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গমালার মত পড়বে। আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। অতঃপর আমরা সব মানুষকে একসঙ্গে একত্রিত করব। তাইসিরুল

সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব একের পর এক তরঙ্গের আকারে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব। মুজিবুর রহমান

And We will leave them that day surging over each other, and [then] the Horn will be blown, and We will assemble them in [one] assembly. Sahih International

৯৯. আর সেদিন আমরা তাদেরকে ছেড়ে দেব এ অবস্থায় যে, একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গের ন্যায় আছড়ে পড়বে।(১)। আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, অতঃপর আমরা তাদের সবাইকে(২) পুরোপুরি একত্রিত করব।

(১) بعضهم এর সর্বনাম দ্বারা বাহ্যতঃ ইয়াজুজ-মাজুজকেই বোঝানো হয়েছে। তাদের একদল অপরদলের মধ্যে ঢুকে পড়বে- বাহ্যতঃ এই অবস্থা তখন হবে, যখন তাদের পথ খুলে যাবে এবং তারা পাহাড়ের উচ্চতা থেকে দ্রুতবেগে নীচে অবতরণ করবে। [ফাতহুল কাদীর] [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল কারীম]। তাফসীরবিদগণ অন্যান্য সম্ভাবনাও লিখেছেন। যেমন তারা মানুষের সাথে মিশে যমীনের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। [ইবন কাসীর] কারও কারও মতে, এখানে কিয়ামতের সময়ের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর] কারও কারও মতে, যেদিন বাঁধ নির্মান শেষ হয়েছে সেদিন ইয়াজুজ মাজুজ বাঁধের ভিতরে পরস্পর পরস্পরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। [ফাতহুল কাদীর]

(২) فَجَمَعْنَاهُمْ এর সর্বনাম দ্বারা সাধারণ জিন ও মানবজাতিকে বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার মাধ্যমে হাশরের মাঠে সমগ্র জিন ও মানুষকে একত্রিত করা হবে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৯) সেই দিন আমি তাদেরকে এক দল অপর দলের উপর তরঙ্গায়িত অবস্থায় ছেড়ে দেব। আর শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকেই একত্রিত করব।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১০০ وَّ عَرَضۡنَا جَهَنَّمَ یَوۡمَئِذٍ لِّلۡكٰفِرِیۡنَ عَرۡضَۨا ﴿۱۰۰﴾ۙ

এবং আমি সেদিন কাফিরদের জন্য জাহান্নামকে সরাসরি উপস্থিত করব; আল-বায়ান

আমি সেদিন জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য সরাসরি হাযির করব। তাইসিরুল

আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট – মুজিবুর রহমান

And We will present Hell that Day to the Disbelievers, on display - Sahih International

১০০. আর সেদিন আমরা জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব কাফেরদের কাছে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০০) সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১০৫ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمۡ وَ لِقَآئِهٖ فَحَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فَلَا نُقِیۡمُ لَهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَزۡنًا ﴿۱۰۵﴾

‘তারাই সেসব লোক, যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে। ফলে তাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে। সুতরাং আমি তাদের জন্য কিয়ামতের দিন কোন ওজনের ব্যবস্থা রাখব না’। আল-বায়ান

তারা হল সে সব লোক যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের যাবতীয় ‘আমাল নিস্ফল হয়ে গেছে। কিয়ামাতের দিন আমি তাদের (কাজের) জন্য কোন ওজন কায়িম করব না (অর্থাৎ তাদের এ সব ‘আমাল ওজনযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে না)। তাইসিরুল

ওরাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের রবের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কাজ নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামাত দিবসে তাদের জন্য কোন ওজনের ব্যবস্থা রাখব না। মুজিবুর রহমান

Those are the ones who disbelieve in the verses of their Lord and in [their] meeting Him, so their deeds have become worthless; and We will not assign to them on the Day of Resurrection any importance. Sahih International

১০৫. তারাই সেসব লোক, যারা তাদের রব-এর নিদর্শনাবলী ও তার সাথে তাদের সাক্ষাতের ব্যাপারে কুফরি করেছে। ফলে তাদের সকল আমল নিস্ফল হয়ে গেছে; সুতরাং আমরা তাদের জন্য কেয়ামতের দিন কোন ওজনের ব্যবস্থা রাখব না।(১)

(১) অর্থাৎ তাদের আমল বাহ্যতঃ বিরাট বলে দেখা যাবে, কিন্তু হিসাবের দাঁড়িপাল্লায় তার কোন ওজন হবে না। কেননা, কুফর ও শির্কের কারণে তাদের আমল নিস্ফল ও গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতের দিন দীর্ঘদেহী স্থূলকায় ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, আল্লাহর কাছে মাছির ডানার সমপরিমাণও তার ওজন হবে না। অতঃপর তিনি বলেনঃ যদি এর সমর্থন চাও, তবে কুরআনের এই আয়াত পাঠ কর- (فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا) [বুখারীঃ ৪৭২৯, মুসলিমঃ ৪৬৭৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৫) ওরাই তারা যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে;[1] ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন ওজন রাখব না। [2]

[1] آيات ربِّهم ‘প্রতিপালকের আয়াত বা নিদর্শনাবলী’ বলতে আল্লাহর একতত্ত্ববাদের ঐ সমস্ত দলীল-প্রমাণ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। অনুরূপভাবে ঐ সমস্ত আয়াতকেও বুঝানো হয়েছে যা তিনি নিজ গ্রন্থসমূহে অবতীর্ণ করেছেন এবং তাঁর নবী ও রসূলগণ তা মানুষের নিকট পৌছে দিয়েছেন। প্রতিপালকের সাক্ষাৎকে অস্বীকার করা বলতে পরকালের জীবন বা পুনরুত্থানকে বুঝানো হয়েছে।

[2] অর্থাৎ, আমার নিকট তাদের কোন মূল্যায়ন হবে না। অথবা অর্থ এই যে, ওদের জন্য আমি ওজনের ব্যবস্থাই করব না যাতে তাদের আমলসমূহ ওজন করা যায়। কারণ আমল তো শুধুমাত্র ঐ সমস্ত তাওহীদবাদী মুসলিমদের ওজন করা হবে, যাদের আমল-নামায় পাপ-পুণ্য উভয়ই থাকবে। কিন্তু ওদের আমল-নামা পুণ্য (নেকী) হতে বিলকুল শূন্য থাকবে। যেমন হাদীসের মধ্যে এসেছে যে, কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা মানুষ আসবে, কিন্তু আল্লাহর নিকট তার ওজন মাছির ডানা সমতুল্য হবে না। অতঃপর নবী (সাঃ) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন। (বুখারী, সূরা কাহফের তাফসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:১০৬ ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمۡ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوۡا وَ اتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَ رُسُلِیۡ هُزُوًا ﴿۱۰۶﴾

‘এ জন্যই তাদের প্রতিফল জাহান্নাম। কারণ তারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহ ও আমার রাসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় বানিয়েছে’। আল-বায়ান

এটাই তাদের প্রতিফল-জাহান্নাম, কারণ তারা কুফুরী করেছে আর আমার নিদর্শন ও রসূলদেরকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়েছে। তাইসিরুল

জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয়স্বরূপ। মুজিবুর রহমান

That is their recompense - Hell - for what they denied and [because] they took My signs and My messengers in ridicule. Sahih International

১০৬. জাহান্নাম, এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্ৰহণ করেছে বিদ্ররূপের বিষয়স্বরূপ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) জাহান্নাম, ওটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলদেরকে গ্রহণ করেছে বিদ্রূপের বিষয়রূপে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৯৩ اِنۡ كُلُّ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ اِلَّاۤ اٰتِی الرَّحۡمٰنِ عَبۡدًا ﴿ؕ۹۳﴾

আসমান ও যমীনে এমন কেউ নেই, যে বান্দা হিসেবে পরম করুণাময়ের কাছে হাযির হবে না। আল-বায়ান

আকাশ আর যমীনে এমন কেউ নেই যে, দয়াময়ের নিকট বান্দাহ হয়ে হাযির হবে না। তাইসিরুল

আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেহ নেই যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবেনা বান্দা রূপে। মুজিবুর রহমান

There is no one in the heavens and earth but that he comes to the Most Merciful as a servant. Sahih International

৯৩. আসমানসমূহ ও যমীনে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৩) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে পরম দয়াময়ের নিকট দাসরূপে উপস্থিত হবে না। [1]

[1] যখন সবাই আল্লাহর দাস ও অসহায় বান্দা, তখন তাঁর সন্তানের প্রয়োজন কি? আর সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্য শোভনীয়ও নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৯৪ لَقَدۡ اَحۡصٰهُمۡ وَ عَدَّهُمۡ عَدًّا ﴿ؕ۹۴﴾

তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে গণনা করে রেখেছেন। আল-বায়ান

তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন আর তাদেরকে বিশেষভাবে গুণে গুণে রেখেছেন। তাইসিরুল

তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন। মুজিবুর রহমান

He has enumerated them and counted them a [full] counting. Sahih International

৯৪. তিনি তাদের সংখ্যা জানেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গুণে রেখেছেন,(১)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সমগ্র মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে সম্যক জানেন। তিনি সেগুলোকে সীমাবদ্ধ করে গুণে রেখেছেন সুতরাং তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন থাকতে পারে না। সৃষ্টির শুরু থেকে ছোট বড়, পুরুষ মহিলা সবই তাঁর জ্ঞানে রয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৪) তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করেছেন। [1]

[1] অর্থাৎ, আদম থেকে নিয়ে কিয়ামতের সকাল পর্যন্ত যত মানব ও দানব জন্ম নেবে সকলের পরিসংখ্যান আল্লাহর কাছে রয়েছে। সবাই তাঁর পাকড়াও ও আয়ত্তের অধীনে। কেউ তাঁর দৃষ্টিতে লুক্কায়িত নয়, লুকিয়ে থাকতেও পারে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৯৫ وَ كُلُّهُمۡ اٰتِیۡهِ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فَرۡدًا ﴿۹۵﴾

আর কিয়ামতের দিন তাদের সকলেই তাঁর কাছে আসবে একাকী। আল-বায়ান

কিয়ামাতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে আসবে একাকী অবস্থায়। তাইসিরুল

এবং কিয়ামাত দিবসে তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। মুজিবুর রহমান

And all of them are coming to Him on the Day of Resurrection alone. Sahih International

৯৫. আর কিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে আসবে একাকী অবস্থায়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৫) কিয়ামতের দিন তাদের সকলেই তাঁর নিকট আসবে একাকী অবস্থায়। [1]

[1] অর্থাৎ, কেউ কারো সাহায্যকারী হবে না, আর না মালই কারো কোন কাজে আসবে। {يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ} অর্থাৎ, সেদিন না ধন-মাল কোন কাজ দেবে, আর না সন্তান-সন্ততি। (সূরা শুআরাঃ ৮৮) প্রত্যেককেই একা একা নিজ হিসাব দিতে হবে। আর মানুষ পৃথিবীতে যাদের জন্য কিয়ামতের দিন সাহায্যকারী ও সহায়ক হবে বলে মনে করে, তারা সবাই অদৃশ্য ও উধাও হয়ে যাবে। কেউ কারো সাহায্যের জন্য উপস্থিত হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:১৫ اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَكَادُ اُخۡفِیۡهَا لِتُجۡزٰی كُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی ﴿۱۵﴾

‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়’। আল-বায়ান

কিয়ামাত আসবেই, আমি তা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুপাতে ফল লাভ করতে পারে। তাইসিরুল

কিয়ামাত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে। মুজিবুর রহমান

Indeed, the Hour is coming - I almost conceal it - so that every soul may be recompensed according to that for which it strives. Sahih International

১৫. কেয়ামত তো অবশ্যম্ভাবী(১), আমি এটা গোপন রাখতে চাই(২) যাতে প্রত্যেককে নিজ কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়।(৩)

(১) তাওহীদের পরে যে দ্বিতীয় সত্যটি প্রত্যেক যুগে সকল নবীর সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে এবং যার শিক্ষা দেবার জন্য তাদেরকে নিযুক্ত করা হয়েছে সেটি হচ্ছে আখেরাত। বলা হচ্ছে, কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আর সেটা হতেই হবে। [দেখুন, ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ কেয়ামত কখন হবে সে ব্যাপারটি আমি সব সৃষ্টজীবের কাছ থেকে গোপন রাখতে চাই; এমনকি নবী ও ফিরিশতাদের কাছ থেকেও। [ইবন কাসীর] أكاد বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কেয়ামত-আখেরাতের ভাবনা দিয়ে মানুষকে ঈমান ও সৎকাজে উদ্ধৃদ্ধ করা উদ্দেশ্য না হলে আমি কেয়ামত আসবে -একথাও প্রকাশ করতাম না। বিভিন্ন মুফাসসিরের মতে, এর অর্থ কিয়ামতকে এমন গোপন রেখেছি, মনে হয় যেন আমি আমার নিজের কাছেই গোপন রাখছি। অথচ আল্লাহর কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। [ইবন কাসীর] যেমন, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আসমানসমূহ ও যমীনে সেটা ভারী বিষয়। হঠাৎ করেই তা তোমাদের উপর আসবে।” [সূরা আল-আরাফ: ১৮৭]

(৩) “যাতে প্রত্যেকেই নিজ কাজ অনুযায়ী ফল লাভ করতে পারে” এই বাক্যটি آتِيَةٌ শব্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলে অর্থ সুস্পষ্ট যে, এখানে কেয়ামত আগমনের রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে। রহস্য এই যে, দুনিয়া প্রতিদানের স্থান নয়। এখানে কেউ সৎ ও অসৎকর্মের ফল লাভ করে না। কেউ কিছু ফল পেলেও তা তার কর্মের সম্পূর্ণ ফল লাভ নয়- একটি নমুনা হয় মাত্র। তাই এমন দিনক্ষণ আসা অপরিহার্য, যখন প্ৰত্যেক সৎ ও অসৎকর্মের প্রতিদান ও শাস্তি পুরোপুরি দেয়া হবে। [ইবন কাসীর] পক্ষান্তরে যদি বাক্যটি (أَكَادُ أُخْفِيهَا) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়, তবে অর্থ এই যে, এখানে কেয়ামত ও মৃত্যুর সময়-তারিখ গোপন রাখার রহস্য বর্ণিত হয়েছে। রহস্য এই যে, মানুষ কর্ম-প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকুক এবং ব্যক্তিগত কেয়ামত তথা মৃত্যু আর বিশ্বজনীন কেয়ামত তথা হাশরের দিনকে দূরে মনে করে গাফেল না হোক। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:১৬ فَلَا یَصُدَّنَّكَ عَنۡهَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِهَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ فَتَرۡدٰی ﴿۱۶﴾

অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন কিছুতেই তাতে ঈমান আনয়নে তোমাকে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। আল-বায়ান

কাজেই ক্বিয়ামতে যে বিশ্বাস করে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাত্থেকে কোনক্রমেই বিচ্যুত করতে না পারে, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাইসিরুল

সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামাত বিশ্বাস করেনা এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে প্রবৃত্ত না করে, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। মুজিবুর রহমান

So do not let one avert you from it who does not believe in it and follows his desire, for you [then] would perish. Sahih International

১৬. কাজেই যে ব্যক্তি কিয়ামতে ঈমান রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন আপনাকে তার উপর ঈমান আনা থেকে ফিরিয়ে না রাখে, নতুবা আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন।(১)

(১) এতে মূসা আলাইহিস সালাম-কে লক্ষ্য করে সতর্ক করা হয়েছে যে, আপনি কাফের ও বেঈমানদের কথায় কেয়ামত সম্পর্কে অসাবধানতার পথ বেছে নেবেন না। তাহলে তা আপনার ধ্বংসের কারণ হয়ে যাবে। বলাবাহুল্য, নবী ও রাসূলগণ নিষ্পাপ হয়ে থাকেন। তাদের পক্ষ থেকে এরূপ অসাবধানতার সম্ভাবনা নেই। এতদসত্বেও মূসা 'আলাইহিস সালাম-কে এরূপ বলার আসল উদ্দেশ্য তার উম্মত ও সাধারণ মানুষকে শেখানো। অর্থাৎ তোমরা তাদের অনুসরণ করো না যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং দুনিয়ার চাকচিক্যের মধ্যে পড়ে তাদের রব ও মাওলার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়েছে। আর নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। যারাই তাদের মত হবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। [1]

[1] এই জন্য যে, আখেরাতের উপর বিশ্বাস করা হতে অথবা তার স্মরণ হতে বিমুখতা অবলম্বন উভয়ই ধ্বংসের কারণ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৮৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 17 18 19 20 পরের পাতা »