আর যখন মূসা তার কওমকে বলেছিল, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামাত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে ফির‘আউন পরিবারের কবল থেকে রক্ষা করেছেন, তারা তোমাদের জঘন্য আযাব দিত। আর তারা তোমাদের ছেলেদেরকে যবেহ করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর তাতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা। আল-বায়ান
স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘মাতের কথা স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফির‘আওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছিলেন যারা তোমাদেরকে জঘন্য রকমের শাস্তিতে পিষ্ট করছিল। তোমাদের পুত্রদেরকে তারা হত্যা করত আর তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা। তাইসিরুল
যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ফির‘আউন সম্প্রদায়ের কবল হতে যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবাহ করত ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; এবং এতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ হতে এক মহা পরীক্ষা। মুজিবুর রহমান
And [recall, O Children of Israel], when Moses said to His people, "Remember the favor of Allah upon you when He saved you from the people of Pharaoh, who were afflicting you with the worst torment and were slaughtering your [newborn] sons and keeping your females alive. And in that was a great trial from your Lord. Sahih International
৬. আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর(১) যখন তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ফিরআউন গোষ্ঠীদের কবল হতে, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; আর এতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা।(২)
(১) অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ মোতাবেক তাদেরকে ‘আইয়্যামুল্লাহ’ বা নেয়ামত ও মুসিবত সম্পর্কে স্মরণ করানোর জন্য এ ভাষণটি প্রদাণ করেছিলেন। [ইবন কাসীর] এ নেয়ামতগুলো স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, নিয়ামতসমূহের কথা মুখে ও অন্তরে স্বীকার করে নেয়া। [সা’দী] অনুরূপভাবে নেয়ামতগুলোর অধিকার ও মর্যাদা চিহ্নিত করে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, সেগুলো যিনি প্রদান করেছেন তার শোকরিয়া আদায় করে তার নির্দেশের বাইরে না চলা। তাঁর বিধানের অনুগত থাকা, ইত্যাদি।
(২) আয়াতে ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে, بلاء এ শব্দটি বিপরীত অর্থবোধক, এর এক অর্থ, নেয়ামত আর অপর অর্থ, বিপদ বা পরীক্ষা। এ আয়াতে পূর্ববতী বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে যে, বনী-ইসরাঈলকে নিম্নলিখিত বিশেষ নেয়ামতটি স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মূসা আলাইহিস সালাম-কে আদেশ দেয়া হয়। মূসা আলাইহিস সালাম-এর পূর্বে ফিরআউন বনী-ইসরাঈলকে অবৈধভাবে দাসে পরিণত করে রেখেছিল। এরপর এসব দাসের সাথেও মানবোচিত ব্যবহার করা হত না। তাদের ছেলে সন্তানকে জন্মগ্রহণের পরই হত্যা করা হত এবং শুধু কন্যাদেরকে খেদমতের জন্য লালন-পালন করা হত।
মূসা আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণের পর তার দোআয় আল্লাহ্ তাআলা বনী-ইসরাঈলকে ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং একদিক থেকে তা তাদের পরীক্ষা ছিল অপর দিক থেকে সে পরীক্ষা থেকে মুক্তি দিয়ে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বিরাট নেয়ামত প্রদান করেন। উভয় অর্থটিই এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “আর আমরা তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।” [সূরা আল-আরাফ: ১৬৮] [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর; যখন তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ফিরআউনীয় সম্প্রদায়ের কবল হতে, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহাপরীক্ষা।[1]
[1] অর্থাৎ, যেরূপ এটা আল্লাহর এক বিরাট পরীক্ষা ছিল, অনুরূপ এ থেকে মুক্তিলাভ আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ ছিল। এ জন্যই কোন কোন অনুবাদক بَلَاءٌ এর অনুবাদ ‘পরীক্ষা’ এবং কেউ কেউ এর অনুবাদ ‘অনুগ্রহ’ করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি তাদেরকে দেখ না, যারা আল্লাহর নিআমতকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করেছে এবং তাদের কওমকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে দিয়েছে? আল-বায়ান
তুমি কি তাদের ব্যাপারে চিন্তা কর না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বিনিময়ে অকৃতজ্ঞতার নীতি অবলম্বন করে আর তাদের জাতিকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে আনে। তাইসিরুল
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনা যারা আল্লাহর অনুগ্রহের পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধ্বংসের আলয়ে । মুজিবুর রহমান
Have you not considered those who exchanged the favor of Allah for disbelief and settled their people [in] the home of ruin? Sahih International
২৮. আপনি কি তাদেরকে লক্ষ্য করেন না যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধবংসের ঘরে(১)—
(১) অর্থাৎ “আপনি কি তাদেরকে দেখেন না, যারা আল্লাহ তা'আলার নেয়ামতের পরিবর্তে কুফর অবলম্বন করেছে এবং তাদের অনুসারী জাতিকে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের অবস্থানে পৌছে দিয়েছে? তারা জাহান্নামে প্রজ্জ্বলিত হবে। জাহান্নাম অত্যন্ত মন্দ আবাস।” অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট এখানে মক্কার কাফেরদের বুঝানো হয়েছে। [বুখারী: ৪৭০০] মুজাহিদ বলেন, এর দ্বারা কুরাইশদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা বদরে মারা গেছে। [ইবন কাসীর] এখানে “আল্লাহর নেয়ামত” বলে সাধারণভাবে অনুভূত, প্রত্যক্ষ ও মানুষের বাহ্যিক উপকার সম্পর্কিত নেয়ামত বোঝানো যেতে পারে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বোঝানো হয়েছে। তারা তার সাথে কুফরি করে তাদের প্রতি প্রেরিত নেয়ামতকে পরিবর্তন করে নিয়েছে। [বাগভী] মূলতঃ যাবতীয় কাফের ও মুশরিকরা নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা, অবাধ্যতা ও নাফরমানী করেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যারা আল্লাহর অনুগ্রহের (কৃতজ্ঞতার) বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে এনেছে ধ্বংসের মুখে; [1]
[1] এর ব্যাখ্যা সহীহ বুখারীতে আছে যে, এ থেকে কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। (বুখারী, তাফসীর সূরা ইবরাহীম) যারা (আল্লাহর নিয়ামত) মুহাম্মাদী রিসালতকে অস্বীকার করে (কৃতঘ্ন হয়ে) এবং বদরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই লড়ে নিজ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ধ্বংস করল। তবে ভাবার্থের দিক থেকে এটা ব্যাপক। আর এর অর্থ এই যে, মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও নিয়ামত করে পাঠিয়েছেন, যে এই নিয়ামতকে গ্রহণ করে তার কদর করবে, সে কৃতঘ্ন এবং সে জান্নাতী হবে। পক্ষান্তরে যে এই নিয়ামতকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তার বদলে কুফরীকে এখতিয়ার করবে, সে কৃতঘ্ন এবং সে জাহান্নামী হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমরা যা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদের দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নিআমত গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অধিক অত্যাচারী ও অকৃতজ্ঞ। আল-বায়ান
তিনি তোমাদেরকে সে সব কিছুই দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ। তাইসিরুল
আর তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ; তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবেনা; মানুষ অবশ্যই অতিমাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ। মুজিবুর রহমান
And He gave you from all you asked of Him. And if you should count the favor of Allah, you could not enumerate them. Indeed, mankind is [generally] most unjust and ungrateful. Sahih International
৩৪. এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তার কাছে যা কিছু চেয়েছ তা থেকে(১)। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না(২)। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ।
(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে ঐ সমুদয় বস্তু দিয়েছেন, যা তোমরা চেয়েছ। [আত-তাফসীরুস সহীহ; ফাতহুল কাদীর] তবে আল্লাহর দান ও পুরস্কার কারো চাওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়। আমরা নিজেদের অস্তিত্বও তার কাছে চাইনি। তিনি নিজ কৃপায় চাওয়া ব্যতীতই দিয়েছেন। আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি সৃষ্টি করার প্রার্থনা কে করেছিল? এগুলো চাওয়া ছাড়াই আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে দান করেছেন। এ কারণেই কোন কোন মুফাসসির এ বাক্যের অর্থ এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে প্রত্যেক ঐ বস্তু দিয়েছেন, যা চাওয়ার যোগ্য; যদিও তোমরা চাওনি। [বাগভী; কুরতবী; ফাতহুল কাদীর] কিন্তু বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে তোমাদের প্রার্থিত প্রতিটি বস্তু থেকে কিছু কিছু তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। এ অর্থ নেয়া হলেও কোন অসুবিধা নেই। কারণ, মানুষ সাধারণতঃ যা যা চায়, তার কিছু অংশ তাকে দিয়েই দেয়া হয়। [ফাতহুল কাদীর]
কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে চাওয়া বলতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীকে বুঝানো হয়েছে, তখন অর্থ হবে, তোমাদের প্রকৃতির সর্ববিধ চাহিদা পূরণ করেছেন। তোমাদের মুখে চাওয়া হোক বা অবস্থায় সে চাওয়া বুঝা যাক। এসব তিনিই দান করেছেন। জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেছেন। তোমাদের বেঁচে থাকা ও বিকাশ লাভ করার জন্য যেসব উপাদান ও উপকরণের প্রয়োজন ছিল তা সবই যোগাড় করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] যেখানে বাহ্যদৃষ্টিতে তার প্রার্থনা পূর্ণ করা হয় না, সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য অথবা সারা বিশ্বের জন্য কোন না কোন উপযোগিতা নিহিত থাকে যা সে জানে না। কিন্তু সর্বজ্ঞ আল্লাহ জানেন যে, তার প্রার্থনা পূর্ণ করা হলে স্বয়ং তার জন্য অথবা তার পরিবারের জন্য অথবা সমগ্র বিশ্বের জন্য বিপদাপদের কারণ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় প্রার্থনা পূর্ণ না করাই বড় নেয়ামত। কিন্তু জ্ঞানের ক্রটির কারণে মানুষ তা জানে না, তাই দুঃখিত হয়।
(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার নেয়ামত এত অধিক যে, সব মানুষ একত্রিত হয়ে সেগুলো গণনা করতে চাইলে গুণে শেষ করতে পারবে না। মানুষের নিজের অস্তিত্বই স্বয়ং একটি ক্ষুদ্র জগৎ। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, হস্ত, পদ, দেহের প্রতিটি গ্রন্থি এবং শিরা-উপশিরায় আল্লাহ তা’আলার অন্তহীন নেয়ামত নিহিত রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] এ থেকে অনুমান করা যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলার সম্পূর্ণ দান ও নেয়ামতের গণনা করাও আমাদের দ্বারা সম্ভবপর নয়। সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত কোনভাবেই আমরা সেটা গণনা করে শেষ করতে পারব না। এই অসংখ্য নেয়ামতের বিনিময়ে অসংখ্য ইবাদাত ও অসংখ্য শোকর জরুরী হওয়াই ছিল ইনসাফের দাবী। মানুষ সে শোকর আদায়ের ব্যাপারে অতিশয় যালেম, কারণ সে এ ব্যাপারে গাফেল থাকে। [ফাতহুল কাদীর]
মূলত: মানুষের প্রকৃতিই এই যে, সে অত্যাচারী, যালেম, গোনাহ করার ব্যাপারে অতি উৎসাহী, রবের হক আদায়ে অমনোযোগী, আল্লাহর নেয়ামতের সাথে অধিক কুফরিকারী। সে শোকরিয়া তো আদায় করেই না, নেয়ামতের স্বীকারোক্তি পর্যন্ত করে না। তবে এদের ব্যতিক্রম কিছু লোক আছে যাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন, তারা ঠিকই তাঁর শোকর আদায় করতে সচেষ্ট থাকে। রবের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকে এবং সেটা আদায় করতে নিজেকে নিয়োজিত করে। উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহে আল্লাহর যে নেয়ামত তাঁর বান্দাদের জন্য রয়েছে সেগুলোর সামান্য কিছুর বর্ণনা রয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের আহবান জানিয়েছেন। যেভাবে তাঁর নেয়ামত দিন-রাত ব্যাপী তেমনি তার শোকরও দিন-রাত করার জন্য উদগ্রীব করেছেন। [সা'দী] তালক ইবন হাবীব বলেন, বান্দাদের উপর আল্লাহর নেয়ামত এত বেশী যে বান্দারা সেটা গুণে শেষ করতে পারবে না। তাই তোমরা সকাল-বিকাল তাওবা কর। [ইবন কাসীর]
এভাবে আল্লাহ্ তা'আলা দুর্বলমতি মানুষের প্রতি অনেক অনুগ্রহ করেছেন। মানুষ যখন সত্যের খাতিরে স্বীকার করে নেয় যে, যথার্থ শোকর আদায় করার সাধ্য তার নেই, তখন আল্লাহ তা'আলা এ স্বীকারোক্তিকেই শোকর আদায়ের স্থলাভিষিক্ত করে নেন। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারের পরে যে দোআ শিখিয়েছেন, তাতে এসেছে, হে আল্লাহ! আপনার জন্য যাবতীয় প্রশংসা, যথেষ্ট হয়েছে না বলে, (অর্থাৎ যে প্রশংসা আমি করছি তা আপনার নেয়ামতের বিপরীতে যথেষ্ট নয় অথবা আমাদের খাবার হিসেবেও যা খেয়েছি সেটাই যথেষ্ট নয় বরং সারা জীবন এ নেয়ামত আমাদের লাগবে) এবং যে নেয়ামত থেকেও বিদায় নিতে পারব না (বা আমরা না নিয়ে পারব না)। আর এ নেয়ামত থেকে অমুখাপেক্ষীও আমরা হতে পারব না। [বুখারী ৫৪৫৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) আর তিনি তোমাদেরকে প্রত্যেকটি সেই জিনিস দিয়েছেন যা তোমরা তাঁর নিকট চেয়েছ।[1] তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না;[2] মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় সীমালংঘনকারী অকৃতজ্ঞ। [3]
[1] অর্থাৎ, তিনি তোমাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বস্তু যা তোমরা তাঁর কাছে চাও তোমাদের জন্য সরবরাহ করে দিয়েছেন। কতিপয় উলামা বলেন যে, যা তোমরা চাও তাও দেন এবং যা চাও না, অথচ তিনি জানেন যে, তা তোমাদের প্রয়োজন তাও দেন। মোট কথা জীবনযাপন করার সমস্ত সুবিধা তোমাদেরকে যোগান।
[2] অর্থাৎ, আল্লাহর নিয়ামতরাজি অগণন, তা কেউ গুনে শেষ করতে পারে না; উক্ত নিয়ামতসমূহের যথাযথ কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারা তো দূরের কথা। একটি বর্ণনায় আছে যে, একদা দাঊদ (আঃ) বললেন, ‘হে রব! আমি তোমার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা কিভাবে প্রকাশ করব? অথচ স্বয়ং কৃতজ্ঞতা প্রকাশই তোমার পক্ষ থেকে আমার প্রতি এক নিয়ামত।’ মহান আল্লাহ বললেন, ‘‘হে দাঊদ! তুমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে, যখন তুমি স্বীকার করে বললে যে, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অপারক।’’ (তাফসীর ইবনে কাসীর)
[3] আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে গাফিলতির কারণে মানুষ সীমালংঘন করে এবং স্বীয় আত্মার প্রতি অত্যাচার করে, বিশেষ করে কাফেররা; যারা পূর্ণরূপে আল্লাহ সম্বন্ধে উদাসীন।
আর তোমাদের কাছ যে সব নিআমত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতঃপর দুঃখ-দুর্দশা যখন তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা শুধু তার কাছেই ফরিয়াদ কর। আল-বায়ান
যে নি‘মাতই তোমরা পেয়েছ তাতো আল্লাহর নিকট হতেই। আর যখন দুঃখ-কষ্ট তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তাঁর কাছেই তোমরা আকুল আবেদন জানাতে থাক। তাইসিরুল
তোমরা যে সব অনুগ্রহ ভোগ কর তাতো আল্লাহরই নিকট হতে। অধিকন্ত যখন দুঃখ দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। মুজিবুর রহমান
And whatever you have of favor - it is from Allah. Then when adversity touches you, to Him you cry for help. Sahih International
৫৩. আর তোমাদের কাছে যে সব নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহরই কাছ থেকে; তারপর যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাকেই ব্যাকুলভাবে ডাক।(১)
(১) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও দেখা যেতে পারে, সূরা আল-ইসরাঃ ৬৭৷
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৩) তোমাদের মাঝে যেসব সম্পদ রয়েছে তা তো আল্লাহরই নিকট হতে;[1] আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। [2]
[1] যখন সমস্ত নিয়ামত ও সম্পদ দাতা একমাত্র আল্লাহ, তখন ইবাদত অন্যের কোন দাবিতে?
[2] এর অর্থ এই যে, তারা যখন চতুর্দিক থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে, তখন তাদের অন্তরের অন্তস্তলে লুকিয়ে থাকা আল্লাহর বিশ্বাস তাদের সামনে এসে পড়ে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহ রিয্ক তোমাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিয্ক দাসদাসীদের ফিরিয়ে দেয় না। (এই ভয়ে যে,) তারা তাতে সমান হয়ে যাবে। তবে তারা কি আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করছে? আল-বায়ান
রিযকের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তারা তাদের রিযক থেকে তাদের অধীনস্থ চাকর- গোলামদেরকে এমনভাবে ফিরিয়ে দেয় না, যাতে এক্ষেত্রে তারা সমান হয়ে যায়। (অথচ তারা নানান কিছুকে আল্লাহর অংশীদার বানিয়ে ওগুলোকে আল্লাহর সমান করে ফেলছে) তাহলে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে? তাইসিরুল
আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয়না যাতে তারা এ বিষয়ে সমান হয়ে যায়; তাহলে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে? মুজিবুর রহমান
And Allah has favored some of you over others in provision. But those who were favored would not hand over their provision to those whom their right hands possess so they would be equal to them therein. Then is it the favor of Allah they reject? Sahih International
৭১. আর আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্ৰেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাসদাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে ওরা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়।(১) তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করছে?(২)
(১) প্রথম থেকে সমগ্র ভাষণটিই চলছে শির্ককে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও তাওহীদকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এবং সামনের দিকেও এ একই বিষয়বস্তুই একের পর এক এগিয়ে চলছে। এখানে একথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদে যখন নিজেদের গোলাম ও চাকর বাকরদেরকে সমান মর্যাদা দাও না– অথচ এ সম্পদ আল্লাহর দেয়া- তখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর সাথে তাঁর ক্ষমতাহীন গোলামদেরকেও শরীক করা এবং ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহর এ গোলামদেরকেও তাঁর সাথে সমান অংশীদার গণ্য করাকে তোমরা কেমন করে সঠিক মনে করো? [ইবন কাসীর] কুরআনের অন্যত্র এ একই যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদের সামনে একটি উপমা তোমাদের সত্তা থেকেই পেশ করেন। আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তাতে কি তোমাদের গোলাম তোমাদের সাথে শরীক আছে? আর এভাবে শরীক বানিয়ে তোমরা ও তারা কি সমান সমান হয়ে গিয়েছ? এবং তোমরা কি তাদেরকে ঠিক তেমনি ভয় পাও যেমন তোমাদের সমপর্যায়ের লোকদেরকে ভয় পাও? এভাবে আল্লাহ খুলে খুলে নিশানী বর্ণনা করেন তাদের জন্য যারা বিবেকবুদ্ধিকে কাজে লাগায়। [সূরা আর-রূম: ২৮] দুটি আয়াতের তুলনামূলক আলোচনা করলে পরিষ্কার জানা যায়, উভয় স্থানেই একই উদ্দেশ্যে একই উপমা বা দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এদের একটি অন্যটির ব্যাখ্যা করছে।
(২) এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারের অর্থ, আল্লাহই মানুষকে নেয়ামত দান করেছেন। তিনি চান এর জন্য মানুষ একমাত্র তাকেই স্মরণ করুক, তাঁরই কাছে কৃতজ্ঞ হোক। আল্লাহ্র নিয়ামতের জন্য আল্লাহ্ ছাড়া অন্য সত্তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আল্লাহ্র নিয়ামতের অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকৃতির এই তাৎপর্যটি অনুধাবন করার পর এ বাক্যাংশের অর্থ পরিষ্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, এরা যখন প্ৰভু ও গোলামের পার্থক্য ভাল করেই জানে এবং নিজেদের জীবনে সর্বক্ষণ এ পার্থক্যের দিকে নজর রাখে তখন একমাত্র আল্লাহর ব্যাপারেই কি এরা এত অবুঝ হয়ে গেছে যে, তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সাথে শরীক ও তাঁর সমকক্ষ মনে করছে?
আল্লাহর দেয়া ক্ষেত-খামার ও পশুসম্পদের একটি অংশ শুধু তারা আল্লাহর জন্য নিধারণ করে থাকে। এভাবে তারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে তার সাথে অন্যকে শরীক করে। হাসান বসরী বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু মূসা আল-আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে লিখা চিঠিতে লিখলেন, আর আপনি দুনিয়াতে আপনাকে প্রদত্ত রিযিক নিয়ে তুষ্ট থাকুন। কেননা, দয়াময় আল্লাহ তার বান্দাদের কারও উপর অপর কাউকে রিযিকের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। এটা মূলত: পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তিনি সবাইকে পরীক্ষা করেন। যার জন্য রিযিকে প্রশস্তি প্রদান করেছেন তাকে পরীক্ষা করেন যে, সে এর দ্বারা কিভাবে আল্লাহর শোকর আদায় করে, আল্লাহ তার উপর এর মধ্যে যে হক ফরয করেছেন সেটা কিভাবে আদায় করে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭১) আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়; [1] তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহকে অস্বীকার করে? [2]
[1] যখন তোমরা নিজ দাসদেরকে এত সম্পদ ও জীবনোপকরণ দাও না, যাতে তারা তোমাদের সমান হয়ে যায়, তখন আল্লাহ কিভাবে পছন্দ করতে পারেন যে, তাঁরই কিছু দাসকে তাঁর শরীক করে তাঁর সমতুল্য করে দাও। এই আয়াতে এটিও প্রমাণিত হল যে, আর্থিক বিষয়ে মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয়, তা আল্লাহর সৃষ্ট প্রাকৃতিক নিয়মের অনুসারী। পৃথিবীর কোন মানব-রচিত সংবিধান তাকে আইনের বলে দূর করতে পারে না, যেমন সমাজতন্ত্রে তা বিদ্যমান। জীবিকা বন্টনের সমতা প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপচেষ্টা না করে বরং প্রত্যেককেই জীবিকা সন্ধানের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।
[2] আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ হতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে নযর-নিয়ায বের করে, আর এভাবে তারা আল্লাহর (নিয়ামতের) অনুগ্রহের অকৃতজ্ঞতা করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও নাতিদের সৃষ্টি করেছেন আর তিনি তোমারেদকে পবিত্র রিয্ক দান করেছেন তারা কি বাতিলে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করে? আল-বায়ান
আল্লাহ তোমাদের স্বজাতির মধ্য হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদের জন্য তোমাদের জোড়া থেকে পুত্র-পৌত্রাদি বানিয়েছেন আর তোমাদেরকে উৎকৃষ্ট রিযক দিয়েছেন। তবুও কি তারা ভিত্তিহীন বাতিল জিনিসের উপর ঈমান পোষণ করবে আর আল্লাহর অনুগ্রহকে তারা অস্বীকার করবে? তাইসিরুল
আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? মুজিবুর রহমান
And Allah has made for you from yourselves mates and has made for you from your mates sons and grandchildren and has provided for you from the good things. Then in falsehood do they believe and in the favor of Allah they disbelieve? Sahih International
৭২. আর আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন(১) এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্ৰাদি সৃষ্টি করেছেন(২) এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন।(৩) তবুও কি তারা বাতিলের স্বীকৃতি দিবে(৪) আর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫)
(১) আয়াতে একটি প্রধান নেয়ামত বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরই স্বজাতি থেকে তোমাদের স্ত্রী নির্ধারণ করেছেন, যাতে পরস্পরের ভালবাসাও পূর্ণরূপে হয় এবং মানব জাতির আভিজাত্য এবং মাহাত্ম্যও অব্যাহত থাকে। যদি অন্য প্রজাতি থেকে তা নির্ধারণ করতেন তবে তাদের মধ্যে এরকমের মিল-মহব্বত থাকত না। সুতরাং তাঁর রহমতের এক নিদর্শনস্বরূপ তিনি আদম সস্তানকে পুরুষ ও নারী এ দু'ভাগে সৃষ্টি করেছেন। আর নারীদেরকে পুরুষদের স্ত্রী হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ তোমাদের স্ত্রীদের থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্র পয়দা করেছেন। এ বাক্যে পুত্রদের সাথে পৌত্রদের উল্লেখ করার মধ্যে এদিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এ দম্পতি সৃষ্টির আসল লক্ষ্য হচ্ছে মানব বংশের স্থায়িত্ব, যাতে সন্তান ও সন্তানের সন্তান হয়ে মানব জাতির স্থায়ীত্বের ব্যবস্থা হয়। কোন কোন মুফাসসির আয়াতে উল্লেখিত حفدة শব্দের অর্থ করেছেনঃ খাদেম ও সাহায্যকারীগণ। এ অর্থ শব্দের আভিধানিক অর্থের সাথে বেশী সামঞ্জস্যশীল। কেননা, আয়াতে ব্যবহৃত حَفَدَةً শব্দের আসল অর্থ সাহায্যকারী, সেবক।
অবশ্য এ অর্থ পূর্ববর্তী তাফসীর অর্থাৎ যারা শব্দটির অর্থ “নাতি” করেছেন তার বিপরীত নয়। কারণ, আরবগণ তাদের ছেলে ও নাতিদের দ্বারাই খেদমত গ্রহণ করে থাকেন। [ইবন কাসীর] সন্তানদের জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, পিতা-মাতার সেবক হওয়া সন্তানের কর্তব্য। তাই এক হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে, “তোমার সন্তান সে তো তোমার দাস তথা খাদেম” [আবু দাউদঃ ২১৩১] কোন কোন মুফাসসির حَفَدَةً শব্দের অর্থ করেছেন, শ্বশুরগোষ্ঠী, জামাতা ইত্যাদি। এ অর্থেও শব্দটি আভিধানিক অর্থের সাথে মিল আছে, কারণ মানুষ তাদের জামাতা ও শ্বশুরগোষ্ঠি দ্বারা সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাকে। [ইবন কাসীর]
(৩) এখানে (وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ) বলে মানুষের ব্যক্তিগত স্থায়িত্বের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জন্মের পর মানুষের ব্যক্তিগত স্থায়িত্বের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা তাও সরবরাহ করেছেন।
(৪) বাতিলকে মেনে নেয়ার অর্থ, মূর্তি, প্রতিমা, দেব-দেবী ইত্যাদিকে মেনে নেয়া। [ইবন কাসীর] তারা মনে করে যে, তাদের দেব-দেবী তাদের ক্ষতি কিংবা উপকার করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ তারা তাদের সম্পর্কে এ ভিত্তিহীন ও অসত্য বিশ্বাস পোষণ করে যে, তাদের ভাগ্য ভাঙ্গা-গড়া, আশা-আকাংখা পূর্ণ করা, সন্তান এবং রোগ-শোক থেকে বাঁচানোর ব্যাপারটি কতিপয় দেব-দেবী, জিন এবং অতীতের বা পরবর্তীকালের কোন মহাপুরুষ যেমন নবী-রাসূল, পীর-ফকীর ইত্যাদির হাতে রয়েছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এখানে বাতিল বলে তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যে সমস্ত পবিত্র বস্তু হারাম করে সেগুলোকে বুঝানো হয়েছে, যেমন বাহীরা, সায়েবা ইত্যাদি। [ফাতহুল কাদীর]
(৫) অর্থাৎ এরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে গোপন করে এবং সেগুলোকে অন্যদের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামতের দিন বান্দাকে তার ওপর তার দয়া প্রদর্শন করে বলবেন, আমি কি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেই নি? আমি তোমাকে নেতৃত্ব ও আরামে চলাফেরা করতে দেইনি?” [মুসলিম: ২৯৬৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭২) আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্র সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন; তবুও কি তারা মিথ্যাতে বিশ্বাস করবে[1] এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
[1] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ আয়াতে বর্ণিত নিজ নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন যে, সব কিছুর দাতা মহান আল্লাহ; কিন্তু তবুও কি তারা তাঁকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করবে ও অন্যের কথাই মানবে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদেরকে গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তার নিআমতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও। আল-বায়ান
আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাত্থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, পাহাড়-পর্বতে তোমাদের আত্মগোপনের জায়গা বানিয়েছেন। তিনি তোমাদের জন্য পোশাক দিয়েছেন যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে। আর দিয়েছেন এমন পোশাক যা তোমাদেরকে সংঘাতের সময় রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের জন্য তাঁর নি‘মাতসমূহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ কর। তাইসিরুল
আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে; এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। মুজিবুর রহমান
And Allah has made for you, from that which He has created, shadows and has made for you from the mountains, shelters and has made for you garments which protect you from the heat and garments which protect you from your [enemy in] battle. Thus does He complete His favor upon you that you might submit [to Him]. Sahih International
৮১. আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে(১) তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে(২) এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন(৩) যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
(১) এ আয়াতে আরও কিছু নেয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে তাঁবুবাসীদের বর্ণনা চলে গেছে। কিন্তু এমনও রয়েছে যাদের কোন তাবু নেই। তাদের পাকা ঘরের ব্যবস্থাও নেই, যার ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারে, দারিদ্রতা কিংবা অন্য কোন কারণে। তখন তাকে কোন গাছ বা দেয়াল অথবা আকাশের মেঘের ছায়ায় বা অনুরূপ জানিয়ে বলছেন যে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন।” কাতাদা বলেন, এর অর্থ গাছ। [ইবন কাসীর]
তবে পূর্বে উল্লেখিত সবগুলোর ছায়াই এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] তারপর মুসাফিরকে যেহেতু কখনও কখনও এমন কোন কিছুর আশ্রয় নিতে হয়, যেখানে সে অবস্থান করবে, আবার তার কাছে এমন কিছুও থাকতে হয় যা দ্বারা সে প্রচণ্ড তাপ ও খরা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ বলেন, “আর তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন”। [ফাতহুল কাদীর] পাহাড়ে তারা কিল্লা ও দূর্গ বানায় [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে সেখানে তাদের জন্য রয়েছে গিরিগুহাসমূহ যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। বিপদাপদ ও লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] আর তিনি “তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য এমন কিছু যা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। যেমন বর্ম ও লোহার অন্যান্য যুদ্ধের কাপড়। [ইবন কাসীর]
(২) ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাবার কথা না বলার কারণ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ সূরার শুরুতে (لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ) বলে পোষাকের সাহায্যে শীত থেকে আত্মরক্ষা এবং উত্তাপ হাসিল করার কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল। তাই এখানে শুধু উত্তাপ প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে। অথবা একটির কথা বলায় অপরটি এমনিতেই এসে যাবে এজন্য ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অথবা, কুরআনুল কারীম আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। সর্বপ্রথম এতে আরবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এতে আরবদের অভ্যাস ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বক্তব্য রাখা হয়েছে। আরব হলো গ্রীষ্মপ্রদান দেশ। সেখানে বরফ জমা ও শীতের কল্পনা করা কঠিন। তাই শুধু গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
কাতাদাহ বলেন, এ সূরাকে সূরাতুন নি’আম বা নেয়ামতের সূরা বলা হয়। আতা আল-খুরাসানী বলেন, কুরআন আরবদের জ্ঞান অনুসারে নাযিল হয়েছে। তুমি কি দেখনা আল্লাহ তা'আলার বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন” অথচ সমতল ভূমিতে আরও বড় ও বেশী ব্যবস্থাপনা আল্লাহ করে রেখেছেন কিন্তু সেটা উল্লেখ করেননি। কেননা, তারা ছিল পাহাড়ী জাতি। অনুরূপভাবে তুমি দেখ না আল্লাহর বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর (ব্যবস্থা করেছেন) তাদের পশম, লোম ও চুল থেকে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ” অথচ এর বাইরে আরও যে সমস্ত সামগ্রী তিনি মানুষের জন্য রেখেছেন তা অনেক বেশী কিন্তু তারা ছিল মেষপালক, পশমের বাড়িতে অবস্থানকারী গোষ্ঠী।
তদ্রুপ তুমি কি দেখ না আল্লাহর বাণীর প্রতি, যেখানে তিনি বলেছেন, “আকাশে অবস্থিত মেঘের পাহাড়ের মধ্যস্থিত শিলাস্তুপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা।” [সূরা আন-নূর: ৪৩] কারণ, তারা এটা নিয়ে আশ্চর্যবোধ করে। অথচ আল্লাহ যে বরফ নাযিল করেন তা আরও বড় ব্যাপারে ও অধিকহারেই। কিন্তু তারা সেটা জানত না। সেরকমই তুমি দেখবে আল্লাহর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করলে, যেখানে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে” অথচ ঠাণ্ডার ব্যাপারে তার ব্যবস্থাপনা আরও বড় ও বেশী। কিন্তু তারা যেহেতু গরম এলাকার লোক, তাই তাদের কাছে গরমটাই উল্লেখ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]
(৩) নিয়ামত পূর্ণ বা সম্পূর্ণ করার মানে হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি সম্পূর্ণ তার রহমতের কারণে এখানে সেখানে মানুষের উপর তার নেয়ামত দিয়েই যাচ্ছেন। এভাবে তিনি তার দয়া ও অনুগ্রহে দুনিয়া ও আখেরাতে বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করবেন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮১) আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন[1] এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; যা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে।[2] এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
[1] অর্থাৎ, গাছ সৃষ্টি করেছেন; যার থেকে ছায়া পাওয়া যায়।
[2] অর্থাৎ, উল ও সুতোর পোশাক যা সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয় এবং লোহার বর্ম, শিরস্ত্রাণ; যা যুদ্ধে পরা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা আল্লাহর নিআমত চিনে, তারপরও তারা তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই কাফির। আল-বায়ান
তারা আল্লাহর নি‘মাতকে চিনতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেগুলো অগ্রাহ্য করে, তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ। তাইসিরুল
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির। মুজিবুর রহমান
They recognize the favor of Allah; then they deny it. And most of them are disbelievers. Sahih International
৮৩. তারা আল্লাহর নি'আমত চিনতে পারে; তারপরও সেগুলো তারা অস্বীকার করে(১) এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।(২)
(১) মক্কার কাফেররা একথা অস্বীকার করতো না যে, এ সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহ তাদের প্রতি করেছেন। কিন্তু তাদের আকীদা ছিল, তাদের বুযর্গ ও দেবতাদের হস্তক্ষেপের ফলে তাদের প্রতি এসব অনুগ্রহ করা হয়েছে। আর একারণেই তারা এসব অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সময় ঐসব বুযর্গ ও দেবতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো বরং তাদের প্রতি কিছুটা বেশী করেই প্রকাশ করতো। একাজটিকেই আল্লাহ নেয়ামতর অস্বীকৃতি এবং অকৃতজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই কাফের। এখানে অধিকাংশ বলে সকলকেই বোঝানো হয়েছে। অথবা অধিকাংশ লোক বলে তাদের মধ্যকার বয়স্ক লোকদের বোঝানো হয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে শিশু সন্তানরাও রয়েছে। অথবা এর অর্থ, তাদের অধিকাংশই সাধারণ লোক, তারা তাদের বিবেক খরচ করে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে গবেষণা করতে শিখেনি। তারা যদি সত্যিকারভাবে নেয়ামতসমূহ উপলব্ধি করতে পারত তাহলে বুঝতে পারত যে, যিনি নেয়ামত দিয়েছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত অন্য কারও নয়। ফলে তারা নেয়ামতের শুকরিয়া না করে কাফির হয়েছে। আর বাকী মুশরিকরা যারা নেতৃত্বে আছে তারা জেনে-বুঝে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করছে। [ফাতহুল কাদীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৩) তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে নেয়, অতঃপর তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।[1]
[1] অর্থাৎ, তারা এ কথা জানে ও বুঝে যে, এই সকল নিয়ামতের সৃষ্টিকর্তা ও তা ব্যবহারযোগ্য করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ, তবুও তারা তাঁকে অস্বীকার করে আর অধিকাংশ অকৃতজ্ঞতা করে, অর্থাৎ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতএব আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল উত্তম রিয্ক দিয়েছেন, তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তারই ইবাদাত করে থাক। আল-বায়ান
কাজেই আল্লাহ তোমাদেরকে যে সকল বৈধ পবিত্র রিযক দিয়েছেন তা তোমরা খাও আর আল্লাহর অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় কর যদি তোমরা প্রকৃতই তাঁর বন্দেগী করতে ইচ্ছুক হও। তাইসিরুল
আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তম্মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র তা তোমরা আহার কর এবং তোমরা যদি শুধু আল্লাহরই ইবাদাত কর তাহলে তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। মুজিবুর রহমান
Then eat of what Allah has provided for you [which is] lawful and good. And be grateful for the favor of Allah, if it is [indeed] Him that you worship. Sahih International
১১৪. অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে তোমরা খাও এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদাত করে থাক।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১১৪) আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র, তা তোমরা আহার কর এবং তোমরা যদি শুধু আল্লাহরই ইবাদত কর, তবে তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [1]
[1] এর অর্থ এই যে হালাল ও পবিত্র জিনিস অতিক্রম করে হারাম ও অপবিত্র জিনিস ব্যবহার করা এবং আল্লাহর খেয়ে-পরে তিনি ছাড়া অন্যের ইবাদত করা। এটিই হল আল্লাহর অনুগ্রহের অকৃতজ্ঞতা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি যখন মানুষের উপর নিআমত দান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায় এবং যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে। আল-বায়ান
আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর অহঙ্কারে দূরে সরে পড়ে; কিন্তু যখন অমঙ্গল তাকে স্পর্শ করে তখন সে নিরাশ হয়ে যায়। তাইসিরুল
যখন আমি মানুষের উপর অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও অহংকারে দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে। মুজিবুর রহমান
And when We bestow favor upon the disbeliever, he turns away and distances himself; and when evil touches him, he is ever despairing. Sahih International
৮৩. আর আমরা যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৩) যখন আমি মানুষকে সম্পদ দান করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দূরে সরে যায়। আর তাকে অমঙ্গল স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে। [1]
[1] এতে মানুষের সেই বাস্তব অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে তারা সাধারণতঃ সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময় শিকার হয়ে থাকে। সচ্ছলতার সময় তারা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং অসচ্ছল অবস্থায় তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে ঈমানদারদের ব্যাপার এই উভয় অবস্থাতেই তাদের থেকে একেবারে ভিন্ন হয়। সূরা হূদের ৯-১১ নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি দেখনি যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। আল-বায়ান
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনের কিছু দেখাতে পারেন। এতে অবশ্যই প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
তুমি কি লক্ষ্য করনা যে, আল্লাহর অনুগ্রহে নৌযানগুলি সমুদ্রে বিচরণ করে, যদ্দবারা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলীর কিছু প্রদর্শন করেন? এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। মুজিবুর রহমান
Do you not see that ships sail through the sea by the favor of Allah that He may show you of His signs? Indeed in that are signs for everyone patient and grateful. Sahih International
* হিকমাত অর্থ: জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সুচিন্তিত মতামত ও ধর্মোপলব্ধি।
৩১. আপনি কি লক্ষ্য করেননি যে, আল্লাহর অনুগ্রহে নৌযানগুলো সাগরে বিচরণ যা দ্বারা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলীর কিছু দেখাতে পারেন? নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে, প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহর অনুগ্রহে জলযানগুলি সমুদ্রে বিচরণ করে তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখাবার জন্য?[1] অবশ্যই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির[2] জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।
[1] অর্থাৎ, সাগরে জলজাহাজ চলাচলও তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ এবং তাঁর অধীনস্থ করার ক্ষমতার একটি নমুনা। তিনি পানি ও হাওয়া উভয়কে এমন অনুকূল অবস্থায় রাখেন, যাতে সমুদ্রের বুকে জাহাজ চলাচল করতে পারে। তাছাড়া তিনি যদি চান, তাহলে হাওয়ার প্রবলতা ও ঢেউয়ের উত্তালে জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে যাবে।
[2] অর্থাৎ, কষ্টে ধৈর্যধারণকারী এবং সুখ ও খুশির সময় আল্লাহর শুকরকারী ব্যক্তির জন্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতকে স্মরণ কর, যখন সেনাবাহিনী তোমাদের কাছে এসে গিয়েছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রবল বায়ু ও সেনাদল প্রেরণ করলাম যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যখন সৈন্যবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঝড়ো হাওয়া এবং এক (ফেরেশতারূপী) সৈন্যবাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, remember the favor of Allah upon you when armies came to [attack] you and We sent upon them a wind and armies [of angels] you did not see. And ever is Allah, of what you do, Seeing. Sahih International
৯. হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল। অতঃপর আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঘূর্ণিবায়ু(১) এবং এমন বাহিনী যা তোমরা দেখনি।(২) আর তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাকে মৃদৃ বাতাস দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আর আদ সম্প্রদায়কে ঝঞ্ঝা বাতাসে ধ্বংস করা হয়েছে” [বুখারী: ১০৩৫]
(২) এমন বাহিনী বলে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। [তাবারী, ইবন কাসীর, বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি ওদের বিরুদ্ধে ঝড় এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি।[1] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার দ্রষ্টা।
[1] উক্ত আয়াতসমূহে পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত আহযাব যুদ্ধের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এই যুদ্ধকে ‘আহযাব’ এই জন্য বলা হয় যে, এই সময় ইসলামের সকল শত্রুবাহিনী একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ঘাঁটি ‘মদীনার’ উপর আক্রমণ করেছিল। ‘আহযাব’ ‘হিযব’ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ বাহিনী বা দল। একে খন্দকের যুদ্ধও বলা হয়, কারণ মুসলিমগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মদীনার একপাশে খাল খনন করেন। যাতে শত্রুবাহিনী মদীনা শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। (খন্দক মানে খাল বা পরিখা।) উক্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এইরূপ যে, ইয়াহুদী গোত্র বানু নায্বীর; যাদেরকে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তারা খায়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তারা মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য তৈরী করল। অনুরূপ গাত্বফান ইত্যাদি গোত্র নাজ্দের গোত্রগুলোকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করল।
সুতরাং ইয়াহুদীরা অনায়াসে ইসলাম ও মুসলিমদের সকল শত্রুদেরকে একত্রিত করে মদীনার উপর আক্রমণ করতে সফল হল। মক্কার মুশরিকদের কমান্ডার ছিল আবু সুফিয়ান। সে উহুদ পর্বতের আশেপাশে শিবির স্থাপন করে প্রায় পুরো মদীনাকে পরিবেষ্টন করে নিল। তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। আর মুসলিমগণ ছিলেন মাত্র তিন হাজার। এ ছাড়াও মদীনার দক্ষিণ দিকে ইয়াহুদীদের তৃতীয় গোত্র বানু কুরাইযা বাস করত; যাদের সাথে সেই সময় পর্যন্ত মুসলিমদের চুক্তি ছিল এবং তারা মুসলিমদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বানী নাযবীরের ইয়াহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখত্বাব মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফুসলিয়ে নিজেদের সাথে করে নিল। এদিকে মুসলিমগণ সর্বদিক দিয়ে শত্রুবাহিনীর পরিবেষ্টনে পড়ে গেলেন। সেই সংকটাবস্থায় সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর পরামর্শে পরিখা খনন করা হল। যার ফলে শত্রু বাহিনী মদীনার ভিতর প্রবেশ করতে সক্ষম হল না; বরং মদীনার বাইরেই থাকতে বাধ্য হল। তারপরেও মুসলিমগণ সেই পরিবেষ্টন ও সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ভীত ছিলেন।
প্রায় এক মাস যাবৎ এই পরিবেষ্টনে মুসলিমগণ কঠিন ভয় ও দুশ্চিন্তায় কালাতিপাত করেন। পরিশেষে মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে গায়বী সাহায্য করলেন। উক্ত আয়াতগুলিতে সেই কঠিন অবস্থা ও গায়বী সাহায্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম جنود থেকে উদ্দেশ্য হল কাফেরদের শত্রুবাহিনী যারা সম্মিলিত হয়ে এসেছিল। ‘ঝড়’ বলতে ঐ প্রবল হাওয়াকে বুঝানো হয়েছে, যা তুফানরূপে এসে তাদের তাঁবু উড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল, পশুর দল রশি ছিঁড়ে পালিয়েছিল, ডেগগুলি উল্টে গিয়েছিল এবং তারা সকলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এই ঝড় সম্পর্কে হাদীসে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমাকে পুবালী হাওয়া দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে এবং আদ সম্প্রদায়কে পশ্চিমী হাওয়া দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।’’ (বুখারীঃ ইস্তিস্কা অধ্যায়) (وَجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا) এর অর্থ হল ফিরিশতা; যারা মুসলিমদের সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। তাঁরা শত্রুবাহিনীর মনে এমন ভয় ও ত্রাস সঞ্চার করেন যে, তারা সেখান থেকে অবিলম্বে পালিয়ে যাওয়াকেই নিজেদের কল্যাণ মনে করেছিল।
হে মানুষ, তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমতকে তোমরা স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা আছে কি, যে, তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিয্ক দিবে? তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? আল-বায়ান
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর। তিনি ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি যে তোমাদেরকে আকাশ ও যমীন থেকে রিযক দান করে? তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাহলে কীভাবে তোমরা বিপথগামী হচ্ছ? তাইসিরুল
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রিয্ক দান করে? তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। সুতরাং কোথায় তোমরা বিপথে চালিত হচ্ছ? মুজিবুর রহমান
O mankind, remember the favor of Allah upon you. Is there any creator other than Allah who provides for you from the heaven and earth? There is no deity except Him, so how are you deluded? Sahih International
৩. হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?(১)
(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “বলুন, কে আসমানসমূহ ও যমীনের রব? বলুন, আল্লাহ। বলুন, তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্ৰহণ করেছ আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? বলুন, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? নাকি অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে?” তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক করেছে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যে কারণে সৃষ্টি তাদের কাছে সদৃশ মনে হয়েছে? বলুন, আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা; আর তিনি এক, মহা প্রতাপশালী।” [সূরা আর-রা'দ: ১৬] [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত কি কোন স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রুযী দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। সুতরাং কিরূপে তোমরা সত্যবিমুখ হচ্ছ? [1]
[1] অর্থাৎ, এই স্পষ্ট ও পরিষ্কার বর্ণনার পরেও তোমরা গায়রুল্লাহর ইবাদত করছ? تُؤْفَكُوْنَ এর উৎপত্তি যদি أَفَكَ থেকে হয়, তবে অর্থ হবে ফিরে যাওয়া; অর্থাৎ ‘‘তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ? আর যদি إِفْكٌ থেকে হয়, তবে অর্থ হবে মিথ্যা, যা সত্যবিমুখ হওয়ার নাম। উদ্দেশ্য এই যে, তোমারা তাওহীদ ও আখেরাতকে অস্বীকার করার সুযোগ কোথা থেকে পেলে? অথচ তোমরা এটা স্বীকার কর যে, তোমাদের স্রষ্টা এবং আহারদাতা একমাত্র আল্লাহ। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর কোন বিপদাপদ মানুষকে স্পর্শ করলে সে আমাকে ডাকে। তারপর যখন আমি আমার পক্ষ থেকে নি‘আমত দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করি তখন সে বলে, ‘জ্ঞানের কারণেই কেবল আমাকে তা দেয়া হয়েছে’। বরং এটা এক পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। আল-বায়ান
মানুষকে বিপদাপদ স্পর্শ করলে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নি‘মাত দিয়ে ধন্য করি তখন সে বলে- আমার জ্ঞান গরিমার বদৌলতেই আমাকে তা দেয়া হয়েছে। না, তা নয়। এটা একটা পরীক্ষা (অনুগ্রহ লাভ করে কে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হয় আর কে নিজের বড়াই প্রকাশ করে তা দেখার জন্য)। কিন্তু (এর গুঢ়তত্ত্ব) তাদের অধিকাংশই বুঝে না। তাইসিরুল
মানুষকে দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করলে সে আমাকে আহবান করে। অতঃপর যখন আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে বলেঃ আমিতো এটা লাভ করেছি আমার জ্ঞানের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝেনা। মুজিবুর রহমান
And when adversity touches man, he calls upon Us; then when We bestow on him a favor from Us, he says, "I have only been given it because of [my] knowledge." Rather, it is a trial, but most of them do not know. Sahih International
৪৯. অতঃপর যখন কোন বিপদ-আপদ মানুষকে স্পর্শ করে, তখন সে আমাদেরকে ডাকে; তারপর যখন তাকে আমরা আমাদের কোন নিয়ামতের অধিকারী করি তখন সে বলে, আমাকে এটা দেয়া হয়েছে কেবল আমার জ্ঞানের কারণে। বরং এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই তা জানে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) মানুষকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করলে সে আমাকে আহবান করে;[1] অতঃপর যখন আমি তাকে অনুগ্রহ প্রদান করি, তখন সে বলে, ‘আমি তো এ আমার জ্ঞানের মাধ্যমে লাভ করেছি।’[2] বস্তুতঃ এ এক পরীক্ষা,[3] কিন্তু ওদের অধিকাংশই জানে না। [4]
[1] এখানে মানুষের উল্লেখ ‘জাতি’ হিসাবে করা হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ মানুষেরই এই অবস্থা যে, যখন তারা রোগ, অভাব-অনটন অথবা অন্য কোন সমস্যার শিকার হয়, তখন তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তার সামনে কাকুতি-মিনতি করে।
[2] অর্থাৎ, নিয়ামত লাভ করার সাথে সাথেই অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতার পথ অবলম্বন করে নেয় এবং বলে যে, এতে আল্লাহর আবার অনুগ্রহ কি? এ তো আমার পারদর্শিতার ফল। অথবা যে জ্ঞান ও দক্ষতা আমার রয়েছে, তারই মাধ্যমে এসব নিয়ামত অর্জিত হয়েছে। কিংবা আমি জানতাম যে, দুনিয়াতে এই সমস্ত জিনিস আমি পাব। কেননা, আল্লাহর নিকট আমার সম্মান অনেক।
[3] অর্থাৎ, ব্যাপার তা নয়, যা তুমি মনে করছ অথবা বর্ণনা করছ। বরং এই নিয়ামতগুলো তোমার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এই দেখার জন্য যে, তুমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ, না অকৃতজ্ঞ হচ্ছ।
[4] এই কথা যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে অবকাশ ও পরীক্ষা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যিনি সব কিছুই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও গৃহপালিত জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ কর, আল-বায়ান
তিনি সব কিছুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, আর তোমাদের জন্য নৌযান ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা আরোহণ কর, তাইসিরুল
এবং যিনি যুগলসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুস্পদ জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর – মুজিবুর রহমান
And who created the species, all of them, and has made for you of ships and animals those which you mount. Sahih International
১২. আর যিনি সকল প্রকারের জোড়া যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও গৃহপালিত জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) যিনি সমস্ত জোড়াসমূহকে সৃষ্টি করেছেন[1] এবং তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন জলযান ও পশু, যাতে তোমরা আরোহণ কর।
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক জিনিসকে জোড়া জোড়া বানিয়েছেন; নর ও নারী। যাবতীয় উদ্ভিদ, শস্য, ফল-মূল এবং জীবজন্তু সবেই রয়েছে পুং-স্ত্রীর এই ধারা। কেউ কেউ বলেছেন, এ থেকে পরস্পর বিপরীত জিনিসগুলোকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, আলো-আঁধার, সুস্থতা-অসুস্থতা, সুবিচার-অবিচার, ভাল-মন্দ, ঈমান-কুফর, কোমলতা-কঠোরতা ইত্যাদি। কেউ বলেছেন, এখানে أزواج (জোড়া) মানে বিভিন্ন প্রকার। অর্থাৎ, সমস্ত প্রকার বস্তুর স্রষ্টা আল্লাহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযাতে তোমরা এর পিঠে স্থির থাকতে পার তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ করবে, যখন তোমরা এর উপর স্থির হয়ে বসবে আর বলবে, ‘পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না’। আল-বায়ান
যাতে তোমরা যখন তাদের পিঠে স্থির হয়ে বস, তখন যেন তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর আর বল- মহান ও পবিত্র তিনি যিনি, এগুলোকে আমাদের (ব্যবহারের জন্য) বশীভূত করে দিয়েছেন, আমরা এগুলোকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। তাইসিরুল
যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বলঃ পবিত্র ও মহান তিনি যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা সমর্থ ছিলামনা এদেরকে বশীভূত করতে। মুজিবুর রহমান
That you may settle yourselves upon their backs and then remember the favor of your Lord when you have settled upon them and say. "Exalted is He who has subjected this to us, and we could not have [otherwise] subdued it. Sahih International
১৩. যাতে তোমরা এর পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ করবে যখন তোমরা এর উপর স্থির হয়ে বসবে; এবং বলবে(১), পবিত্ৰ-মহান তিনি, যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা সমর্থ ছিলাম না। এদেরকে বশীভূত করতে।
(১) সওয়ারীর পিঠে বসার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে যেসব কথা উচ্চারিত হতো সেগুলোই এ আয়াতের উদ্দেশ্য ও অভিপ্ৰায়ের সর্বোত্তম বাস্তব ব্যাখ্যা। আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সফরে রওয়ানা হওয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীর জন্তুর উপর সওয়ার হওয়ার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলতেন। তারপর (سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ) পাঠ করতেন। তারপর এই বলে দো'আ করতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعَثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হাযাল বিররা ওয়াত তাকওয়া ওয়া মিনাল আমালে মা তারদা। আল্লাহুম্মা হাওয়িন আলাইনা সাফারানা হাযা ওয়াতওয়ে আন্না বু’দাহ। আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারে ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলে। আল্লাহুম্মা ইন্নি ‘আউযু বিকা মিন ওয়া’সা-ইস সাফারে ওয়া কাআবাতিল মানযারে ওয়া সুয়িল মুনকালাবে ফিল মালে ওয়াল আহিল। [মুসলিম: ২৩৯২]
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে রিকাবে পা রাখলেন এবং সওয়ার হওয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললেন। তারপর এ আয়াত অর্থাৎ (سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا) থেকে শুরু করে (لَمُنْقَلِبُونَ) পর্যন্ত বললেন, তারপর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তিনবার ও ‘আল্লাহু আকবার’ তিনবার বললেন এবং তারপর বললেনঃ “আপনি অতি পবিত্র। আপনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।” এরপর তিনি হেসে ফেললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি কারণে হাসলেন। তিনি বললেন, বান্দা (হে রব, আমাকে ক্ষমা করে দিন) বললে আল্লাহর কাছে তা বড়ই পছন্দনীয় হয়। তিনি বলেনঃ আমার এই বান্দা জানে যে, আমি ছাড়া ক্ষমাশীল আর কেউ নেই। [মুসনাদে আহমদ: ১/৯৭, আবু দাউদ: ২৬০২, তিরমিযী: ৩৪৪৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) যাতে তোমরা ওর পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার[1] অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সম্পদ স্মরণ কর ও বল, ‘পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন; যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। [2]
[1] لِتَسْتَوُوْا এর অর্থ, لِتَسْتَقِرُّوْا অথবা لِتَسْتَعْلُوْا স্থির হয়ে বসতে পার অথবা সওয়ার হতে পার। ظُهُوْرِهِ তে ‘য্বমীর’ (সর্বনাম) একবচন ব্যবহার হয়েছে ‘জিনস’ (শ্রেণী) এর দিকে লক্ষ্য করে।
[2] অর্থাৎ, যদি এই পশুগুলোকে আমাদের অনুগত ও বশীভূত না করে দিতেন, তবে আমরা তাদেরকে আমাদের আয়ত্তে এনে তাদেরকে বাহন ও বোঝ বহনের জন্য এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারতাম না। مُقْرِنِيْنَ অর্থ, مُطِيْقِيْنَ বশীকরণে সমর্থ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী। আল-বায়ান
আর আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যেতে হবে। তাইসিরুল
আমরা আমাদের রবের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। মুজিবুর রহমান
And indeed we, to our Lord, will [surely] return." Sahih International
১৪. আর নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।’ [1]
[1] নবী করীম (সাঃ) যখন বাহনে আরোহণ করতেন, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং سُبْحَانَ الَّذِي থেকে لَمُنْقَلِبُوْنَ পর্যন্ত আয়াতের অংশটুকু পড়তেন। এ ছাড়াও কল্যাণ ও নিরাপত্তা চেয়ে দু’আ করতেন। দু’আগুলো দু’আর বইগুলোতে দ্রষ্টব্য। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হাজ্জ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’। আল-বায়ান
আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণের। তার মা তাকে বহন করেছে কষ্টের সাথে, আর তাকে প্রসব করেছে কষ্টের সাথে। তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান ছাড়ানোয় সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন পূর্ণ শক্তি লাভ করে এবং চল্লিশ বছরে পৌঁছে যায়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে আর আমার পিতা-মাতাকে যে নি‘মাত দান করেছ তজ্জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর, আর আমাকে এমন সৎকর্ম করার সামর্থ দাও যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ ক’রে আমার প্রতি অনুগ্রহ কর, আমি অনুশোচনাভরে তোমার দিকে ফিরে আসছি, আর আমি অনুগত বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত। তাইসিরুল
আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে, তার গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল ত্রিশ মাস, ক্রমে সে পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হওয়ার পর বলেঃ হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন; আমার জন্য আমার সন্তান সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম। মুজিবুর রহমান
And We have enjoined upon man, to his parents, good treatment. His mother carried him with hardship and gave birth to him with hardship, and his gestation and weaning [period] is thirty months. [He grows] until, when he reaches maturity and reaches [the age of] forty years, he says, "My Lord, enable me to be grateful for Your favor which You have bestowed upon me and upon my parents and to work righteousness of which You will approve and make righteous for me my offspring. Indeed, I have repented to You, and indeed, I am of the Muslims." Sahih International
১৫. আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে, তাকে গৰ্ভে ধারণ করতে(১) ও তার স্তন্য ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস(২) অবশেষে যখন সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয়(৩) এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য এবং যাতে আমি এমন সৎকাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন, আর আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে সংশোধন করে দিন, নিশ্চয় আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
(১) অর্থাৎ পিতা-মাতার সেবা যত্ন ও আনুগত্য জরুরি হওয়ার এক কারণ এই যে, তারা তোমাদের জন্যে অনেক কষ্টই সহ্য করেন। বিশেষত মাতার কষ্ট অনেক বেশি হয়ে থাকে। এখানে কেবল মাতার কষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। মাতা দীর্ঘ নয় মাস তোমাদেরকে গর্ভে ধারণ করে। এছাড়া এ সময়ে তাকে অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়। এরপর প্রসবকালে অসহনীয় প্রসব বেদনার পর তোমরা ভূমিষ্ঠ হও।
আয়াতের শুরুতেই পিতা-মাতা উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এ স্থলে কেবল মাতার কষ্টের কথা উল্লেখ করার তাৎপর্য এই যে, মাতার পরিশ্রম ও কষ্ট অপরিহার্য ও জরুরী। গর্ভধারণের সময় কষ্ট, প্রসব বেদনার কষ্ট সর্বাবস্থায় ও সব সন্তানের ক্ষেত্রে মাতাকেই সহ্য করতে হয়। পিতার জন্যে লালন পালনের কষ্ট সহ্য করা সর্বাবস্থায় জরুরি হয় না। পিতা ধনাঢ্য হলে এবং তার চাকর বাকর থাকলে অপরের মাধ্যমে সন্তান দেখাশোনা করতে পারে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সন্তানের ওপর মাতার হক বেশি রেখেছেন। এক হাদীসে তিনি বলেন, ‘মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর, অতঃপর মাতার সাথে, অতঃপর মাতার সাথে, অতঃপর পিতার সাথে, অতঃপর নিকট আত্মীয়ের সাথে”। [মুসলিম ২৫৪৮]
(২) সন্তানদের যদিও মা-বাপ উভয়েরই সেবা করতে হবে কিন্তু গুরুত্বের দিক দিয়া মায়ের অধিকার এ কারণে বেশী যে, সে সন্তানের জন্য বেশী কষ্ট স্বীকার করে। এ আয়াত এ দিকেই ইংগিত করে। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়। আয়াতেও মায়ের তিনগুণ বেশী অধিকারের প্রতি ইংগিত দেয়া হয়েছেঃ (১) কষ্ট করে মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। (২) কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছে এবং (৩) গৰ্ভধারণ ও দুধ পান করাতে ৩০ মাস লেগেছে। সন্তানকে গর্ভে ধারণ ও প্রসবের কষ্টের পরও মাতা রেহাই পায় না। এর পরে সন্তানের খাদ্যও আল্লাহ তা'আলা মাতার স্তনে রেখে দিয়েছেন। মাতা তাকে স্তন্যদান করে। আয়াতে বলা হয়েছে যে, সন্তানকে গর্ভে ধারণ এবং স্তন্য ছাড়ানো ত্ৰিশ মাসে হয়। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এই আয়াত দৃষ্টি বলেন যে, গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল ছয় মাস।
কেননা সূরা আল বাকারাহ এর ২৩৩ নং আয়াতে স্তন্যদানের সর্বোচ্চ সময়কাল পূর্ণ দু’বছর নির্দিষ্ট করা হয়েছে অথচ এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, সন্তানকে গর্ভে ধারণ এবং স্তন্যদান ছাড়ানো ত্ৰিশ মাসে হয়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকালে জনৈকা মহিলার গর্ভ থেকে ছয় মাসে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে গেলে তিনি একে অবৈধ গর্ভ সাব্যস্ত করে শাস্তির আদেশ জারি করেন। কেননা, এটা সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত ছিল। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এই সংবাদ অবগত হয়ে খলিফাকে শাস্তি কার্যকর করতে বারণ করলেন এবং আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণ করে দিলেন যে, গৰ্ভধারণের সর্বনিম সময়কাল ছয় মাস। খলিফা তার যুক্তিপ্রমাণ কবুল করে শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করেন।
এ কারণেই সমস্ত আলেমগণ একমত যে, গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল ছয় মাস হওয়া সম্ভবপর। এর কম সময়ে সন্তান সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ জন্মগ্রহণ করতে পারে না। তবে সর্বোচ্চ কতদিন সন্তান গর্ভে থাকতে পারে, এ সম্পর্কে অভ্যাস বিভিন্নরূপ। এমনিভাবে স্তন্যদানের সর্বোচ্চ সময়কাল দু’বছর নির্ধারিত। কিন্তু সর্বনিম্ন সময়কাল নির্দিষ্ট নেই। কোন কোন নারীর দুধই হয় না এবং কারও কারও দুধ কয়েক মাসেই শুকিয়ে যায়। কতক শিশু মায়ের দুধ পান করে না। ফলে অন্য দুধ পান করাতে হয়। [দেখুন: ইবনে কাসীর]
(৩) أشد এর শাব্দিক অৰ্থ শক্তি সামর্থ্য। পবিত্র কুরআনের মোট ছয়টি স্থানে এ শব্দটি এসেছে। তন্মধ্যে সূরা আল-আন’আমের ১৫২, সূরা ইউসুফের ১২, সূরা আল ইসরার ৩৪, সূরা আল-কাহফ এর ৮২, সূরা আল-কাসাসের ১৪ নং আয়াতে এর তাফসীর করা হয়েছে, প্রাপ্ত বয়স বলে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে,[1] তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার জন্য স্তন্য ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস,[2] পরিশেষে যখন সে পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়[3] তখন বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও,[4] যাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি; আমার প্রতি আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকার্য করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর; আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর। নিশ্চয় আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং নিশ্চয় আমি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের অন্তর্ভুক্ত।’
[1] পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশটিকে আরো বেশী জোরদার করার লক্ষ্যে এই দুঃখ-কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে, সদ্ব্যবহারের এই আদেশে মা, বাপের উপর প্রাধান্য পাওয়ার দাবী রাখে। তার কারণ, একটানা দীর্ঘ নয় মাস পর্যন্ত গর্ভধারণের কষ্ট এবং প্রসব বেদনা একমাত্র জননী একাই সহ্য করে থাকে। পিতার এতে কোন অংশ থাকে না। তাই হাদীসেও সন্তানের সদ্ব্যবহারের শীর্ষে মাকে রাখা হয়েছে এবং বাপকে রাখা হয়েছে তিন ধাপ নিচে। একদা জনৈক সাহাবী নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকারী কে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সাহাবী আবার একই প্রশ্ন করলেন এবং তিনিও একই উত্তর দিলেন। তৃতীয় দফায় আবার সাহাবী অনুরূপ জিজ্ঞাসা করলে নবী (সাঃ)ও একই জবাব দিয়ে বললেন, তোমার মা। পুনরায় চতুর্থবারে একই প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘তোমার বাপ।’’ (মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র্ অসসিলাহ)
[2] فِصَالٌ এর অর্থ দুধ ছাড়ানো। এ থেকে কোন কোন সাহাবী প্রমাণ করেছেন যে, গর্ভধারণের কমসে কম সময়কাল হল ছয় মাস। অর্থাৎ ছয়মাস গর্ভ থাকার পরে কোন নারীর যদি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে সে ছেলে বৈধ বলেই গণ্য হবে, অবৈধ নয়। কারণ, কুরআনে দুধ পানের সময়কাল বলা হয়েছে দু’ বছর (২৪ মাস)। (দেখুনঃ সূরা লুকমান ১৪, বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত) এই হিসাবে গর্ভধারণের সময়কাল ছয় মাসই অবশিষ্ট থাকে।
[3] (أَشُدَّهُ) পূর্ণ শক্তির কাল বলতে, যৌবন কালকে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে ১৮ বছর বয়স বলেছেন। এইভাবে বাড়তে বাড়তে সে চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়। এ বয়স হল জ্ঞান ও বিবেক শক্তির পূর্ণতা ও পক্বতার বয়স। এ জন্যেই মুফাসসিরগণের মতে প্রতিটি নবীকে চল্লিশ বছর বয়সের পরেই নবুঅত দানে ধন্য করা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[4] أَوْزِعِنِيْ অর্থ হল, أَلْهِمْنِيْ (আমাকে তাওফীক, সামর্থ্য বা প্রেরণা দাও)। এটাকেই দলীল বানিয়ে উলামাগণ বলেছেন যে, এই বয়সের পর থেকে মানুষের উচিত, এই দু’আটি অধিকহারে পড়তে থাকা। অর্থাৎ, رَبِّ أَوْزِعِنِيْ থেকে منَ الْمُسْلِمِيْنَ পর্যন্ত।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি; আল-বায়ান
আমি তোমাকে দিয়েছি স্পষ্ট বিজয়। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। মুজিবুর রহমান
Indeed, We have given you, [O Muhammad], a clear conquest Sahih International
১. নিশ্চয় আমরা আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়(১),
(১) অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদদের মতে সূরা ফাতহ ষষ্ঠ হিজরীতে অবতীর্ণ হয়, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে মক্কা মুকাররম তাশরীফ নিয়ে যান এবং হারাম শরীফের সন্নিকটে হুদাইবিয়া নামক স্থান পৌছে অবস্থান গ্ৰহণ করেন। হুদাইবিয়া মক্কার বাইরে হারামের সীমানার সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্থানের নাম। আজকাল এই স্থানটিকে সুমাইছী বলা হয়। ঘটনাটি এই স্থানেই ঘটে। এই ঘটনার এক অংশ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় স্বপ্ন দেখলেন তিনি সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কায় নিৰ্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ নিয়মানুযায়ী মাথা মুণ্ডন করেছেন, কেউ কেউ চুল কাটিয়েছেন এবং তিনি বায়তুল্লাহ প্রবেশ করেছেন ও বায়তুল্লাহর চাবি তার হস্তগত হয়েছে।
এটা সূরায় বর্ণিত ঘটনার একটি অংশ। নবীরাসূলগণের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। তাই স্বপ্নটি যে বাস্তবরূপ লাভ করবে, তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু স্বপ্নে এই ঘটনার কোন সন, তারিখ বা মাস নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্নটি মক্কা বিজয়ের সময় প্রতিফলিত হওয়ার ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনালেন, তখন তারা সবাই পরম আগ্রহের সাথে মক্কা যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। সাহাবায়ে কেরামের প্রস্তুতি দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ইচ্ছা করে ফেললেন। কেননা, স্বপ্নে কোন বিশেষ সাল অথবা মাস নির্দিষ্ট ছিল না। কাজেই এই মুহূর্তেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু মক্কার কাফেররা তাকে মক্কা প্রবেশে বাধা দান করে।
অতঃপর তারা এই শর্তে সন্ধি করতে সম্মত হয় যে, এ বছর তিনি মদীনায় ফিরে যাবেন এবং পরবর্তী বছর তিনি উমরা করতে আসবেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অনেকেই বিশেষত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ধরনের সন্ধি করতে অসম্মত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সন্ধিকে পরিণামে মুসলিমদের জন্যে সাফল্যের উপায় মনে করে গ্রহণ করে নেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উমরার এহরাম খুলে হুদাইবিয়া থেকে ফেরত রওয়ানা হলেন, তখন পথিমধ্যে এই পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বপ্ন সত্য এবং অবশ্যই বাস্তবরূপ লাভ করবে। কিন্তু তার সময় এখনও হয়নি। পরে মক্কা বিজয়ের সময় এই স্বপ্ন বাস্তবরূপ লাভ করে। এই সন্ধি প্রকৃতপক্ষে মক্কা বিজয়ের কারণ হয়েছিল। তাই একে প্রকাশ্য বিজয় বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও অপর কয়েকজন সাহাবী বলেনঃ তোমরা মক্কা বিজয়কে বিজয় বলে থাক; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই বিজয় মনে করি। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি হুদাইবিয়ার সন্ধিকে বিজয় মনে করি। বারা ইবনে আযেব বলেনঃ তোমরা মক্কা বিজয়কেই বিজয় মনে কর এবং নি:সন্দেহ তা বিজয়; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার ঘটনার বাইয়াতে রিদওয়ানকেই আসল বিজয় মনে করি। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বৃক্ষের নীচে উপস্থিত চৌদশত সাহাবীর কাছ থেকে জেহাদের শপথ নিয়েছিল। [বুখারী ৪২৮, মুসলিম ৭৯৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) নিশ্চয়ই (হে রসূল!) আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন। আল-বায়ান
যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পিছের যাবতীয় ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নি‘মাত পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তাইসিরুল
যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। মুজিবুর রহমান
That Allah may forgive for you what preceded of your sin and what will follow and complete His favor upon you and guide you to a straight path Sahih International
২. যেন আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং আপনার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন। আর আপনাকে সরল পথের হেদায়াত দেন,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন[1] এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন[2] ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। [3]
[1] মহানবী (সাঃ)-এর ‘অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ’-এর অর্থ, এমন সব বিষয়াদি, যা ত্যাগ করাই উত্তম অথবা এমন সব জিনিস, যা তিনি (সাঃ) স্বীয় জ্ঞান, অনুমান ও প্রচেষ্টার আলোকে করেছেন, কিন্তু আল্লাহ তা পছন্দ করেননি। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) ইত্যাদির ঘটনা প্রভৃতি; যার উপর সূরা ‘আবাসা’ অবতীর্ণ হয়। অনুরূপ আচরণ ও বিষয়গুলি যদিও কোন পাপ এবং তাঁর নিষ্পাপ হওয়ার পরিপন্থী কাজ ছিল না, তবুও তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা হিসাবে এগুলোকেও ত্রুটি ও কমি গণ্য করা হয়েছে এবং এরই উপর ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। لِيَغْفِرَ তে ل ‘লাম’ অক্ষরটি কারণ বর্ণনার জন্য ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, সুস্পষ্ট এই বিজয় দানের তিনটি কারণ আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। এটা ত্রুটি মার্জনার কারণ এই জন্য যে, এই সন্ধির পর ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা বহু বেড়ে যায়। যার ফলে নবী করীম (সাঃ)-এর মহা পুণ্য ও সওয়াব খুব বর্ধিত হয়। আর পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মোচন করে দেয়।
[2] এই দ্বীনকে বিজয়ী করে, যার প্রতি তুমি মানুষকে দাওয়াত দাও। অথবা বিজয় ও সাফল্য দিয়ে। কেউ কেউ বলেছেন, ক্ষমা লাভ এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই হল নিয়ামতের পরিপূর্ণতা। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] অর্থাৎ, তার উপর অবিচল থাকার সৌভাগ্য দান করেন। হিদায়াতের উচ্চ থেকে উচ্চতর মর্যাদা দানে ধন্য করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান