আর আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো কেবল এক ইলাহ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।’ আল-বায়ান
আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা দু’ ইলাহ গ্রহণ করো না, তিনি তো এক ইলাহ; কাজেই আমাকে- কেবল আমাকেই ভয় কর।’ তাইসিরুল
আল্লাহ বলেনঃ তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করনা; তিনিই একমাত্র ইলাহ, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর। মুজিবুর রহমান
And Allah has said, "Do not take for yourselves two deities. He is but one God, so fear only Me." Sahih International
৫১. আর আল্লাহ বলেছেন, তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না(১); তিনিই তো একমাত্র ইলাহ(২)। কাজেই তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর নিশ্চয় ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং সে কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌছিয়েছেন ও তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, তার আমল যাই হোক, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর অন্য সনদে জুনাদা এ কথাগুলো বাড়িয়ে বলেছেন, জান্নাতের আট দরজার যে কোন দরজা দিয়েই সে চাইবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [বুখারীঃ ৩৪৩৫]
(২) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মানুষকে তাঁর সাথে আর কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। সাথে সাথে এ ঘোষণাই দিচ্ছেন যে, তিনিই একমাত্র ইলাহ। তারপর তাদেরকে তাঁকেই একমাত্র ভয় করার জন্য আদেশ দিচ্ছেন। কেননা, ভাল-মন্দ তাঁর হাতেই। তিনি ব্যতীত আর কেউ কারো ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। এ বিষয়টি আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ব্যক্ত করেছেন [দেখুনঃ সূরা আয-যারিয়াতঃ ৫০, ৫১] অনুরূপভাবে একাধিক ইলাহ বিবেকের দাবীতেও অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ বলেনঃ “যদি এতদুভয়ে আল্লাহ ছাড়া আরও অনেক ইলাহ থাকত তাহলে তা ধ্বংস হয়ে যেত”। [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ২২] আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ “আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সাথে অন্য কোন ইলাহ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তার থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! [সূরা আল-মু'মিনূনঃ ৯১|
তাফসীরে জাকারিয়া(৫১) আল্লাহ বললেন, তোমরা দুইজন উপাস্য গ্রহণ কর না; তিনিই তো একমাত্র উপাস্য।[1] সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।
[1] কারণ আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্যিকার) উপাস্যই নেই। যদি পৃথিবী ও আকাশে দুই উপাস্য থাকত, তাহলে বিশ্ব-জাহানের নিয়ম-শৃঙ্খলা লন্ডভন্ড হয়ে যেত এবং উভয়ই ধ্বংসের শিকার হত।
{لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا} (سورة الأنبياء : ২২) এই কারণে দুই ঈশ্বরে বিশ্বাস যা অগ্নিপূজকদের মতবাদ বা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাস যা অধিকাংশ মুশরিকদের ধারণা; এই সকল বিশ্বাসই ভ্রান্ত ও বাতিল। পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা যখন এক, তিনিই যখন বিনা কারো অংশিদারিত্বে পৃথিবীর সব কিছু পরিচালনা করেন, তখন উপাসনার যোগ্যও একমাত্র তিনিই। যিনি একক, দুই বা দুয়ের অধিক নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে’। আল-বায়ান
বল, ‘আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ, আমার নিকট ওয়াহী করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ কেবল এক ইলাহ। কাজেই যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎ ‘আমাল করে আর তার প্রতিপালকের ‘ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’ তাইসিরুল
বলঃ আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাথে সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার রবের ইবাদাতে কেহকেও শরীক না করে। মুজিবুর রহমান
Say, "I am only a man like you, to whom has been revealed that your god is one God. So whoever would hope for the meeting with his Lord - let him do righteous work and not associate in the worship of his Lord anyone." Sahih International
১১০. বলুন, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র সত্য ইলাহ। কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রব-এর ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে(১)।
(১) এ আয়াতকে দ্বীনের ভিত্তি বলা হয়ে থাকে, এখানে এমন দু'টি শর্ত বর্ণনা করা হয়েছে যার উপরই সমস্ত দ্বীন নির্ভর করছে। এক, কার ইবাদত করছে দুই, কিভাবে করছে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। আবার সে ইবাদত হতে হবে নেক আমলের মাধ্যমে। আর নেক আমল হবে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে আমল করলেই। মোদ্দাকথা, শির্ক ও বিদ’আত থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে এ আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
এখানে উল্লেখিত শির্ক শব্দ দ্বারা যাবতীয় শির্কই বোঝানো হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু শির্ক আছে যেগুলো শির্ক হওয়া অত্যন্ত স্পষ্ট তাই তা থেকে বাঁচা খুব সহজ। এর বিপরীতে কিছু কিছু শির্ক আছে যেগুলো খুব সুক্ষ্ম বা গোপন। এ সমস্ত গোপন শির্কের উদাহরণের মধ্যে আছে, সামান্য রিয়া তথা সামান্য লোক দেখানো মনোবৃত্তি। সারমর্ম এই যে, আয়াতে যাবতীয় শির্ক হতে তবে বিশেষ করে রিয়াকারীর গোপন শির্ক থেকে বারণ করা হয়েছে। আমল আল্লাহর উদ্দেশ্যে হলেও যদি তার সাথে কোনরূপ সুখ্যাতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির বাসনা থাকে, তবে তাও এক প্রকার গোপন শির্ক। এর ফলে মানুষের আমল বরবাদ এবং ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
মাহমুদ ইবনে লবীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি তোমাদের সম্পর্কে যে বিষয়ে সর্বাধিক আশংকা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! ছোট শির্ক কি? তিনি বললেনঃ রিয়া। [আহমাদঃ ৫/৪২৮, ৪২৯] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা যখন বান্দাদের কাজকর্মের প্রতিদান দেবেন, তখন রিয়াকার লোকদেরকে বলবেনঃ তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান নেয়ার জন্য তাদের কাছে যাও, যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা কাজ করেছিলে। এরপর দেখ, তাদের কাছে তোমাদের জন্য কোন প্রতিদান আছে কি না। কেননা, আল্লাহ শরীকদের শরীকানার সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। [তিরমিযীঃ ৩১৫৪, ইবনে মাজাহঃ ৪২০৩, আহমাদঃ ৪/৪৬৬, বায়হাকী শু'আবুল ঈমানঃ ৬৮১৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা। বলেনঃ আমি শরীকদের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঊর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোন সৎকর্ম করে এবং তাতে আমার সাথে অন্যকেও শরীক করে, আমি সেই আমল শরীকের জন্য ছেড়ে দেই। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আমি সেই আমল থেকে মুক্ত; সে আমলকে আমি তার জন্যই করে দেই, যাকে সে আমার সাথে শরীক করেছিল। [মুসলিমঃ ২৯৮৫] আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি লাভের জন্য সৎকর্ম করে আল্লাহ তা'আলাও তার সাথে এমনি ব্যবহার করেন; যার ফলে সে ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়। [আহমাদঃ ২/১৬২, ১৯৫, ২১২, ২২৩]
অন্য হাদীসে এসেছে, “পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতই শির্ক তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে।” তিনি আরো বললেনঃ আমি তোমাদেরকে একটি উপায় বলে দিচ্ছি যা করলে তোমরা বড় শির্ক ও ছোট শির্ক (অর্থাৎ রিয়া) থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। তোমরা দৈনিক তিনবার এই দো’আ পাঠ করোঃ (اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ) [মুসনাদে আবু ইয়ালাঃ ১/৬০, ৬১ নং ৫৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ১০/২২৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১০) তুমি বল, ‘আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; [1] আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য;[2] সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায়[3] কাউকেও শরীক না করে।’
[1] এই কারণে আমিও প্রতিপালকের বাণী ও কথা পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত হতে সক্ষম নই।
[2] তবে অবশ্যই আমাকে এ বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যে, আমার নিকট আল্লাহর অহী আসে। সেই অহী দ্বারাই আমি ‘আসহাবে কাহফ’ (গুহাবাসী) ও যুলক্বারনাইন সম্পর্কে আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত কথা তোমাদের সামনে তুলে ধরেছি। যা ইতিহাসের অতল তলে তলিয়ে ছিল বা যার প্রকৃতত্ব রূপকথায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ঐ অহীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতত্ত্বপূর্ণ যে নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়েছে, তা হল তোমাদের মাবূদ (উপাস্য) শুধুমাত্র একজন।
[3] নেক আমল হল তাই, যা সুন্নাহর মোতাবেক হয়। অর্থাৎ যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দৃঢ়-বিশ্বাসী প্রথমতঃ তাদের উচিত প্রতিটি কাজ সুন্নাহ (সহীহ হাদীস) মোতাবেক করা, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর ইবাদতে কাউকেও শরীক না করা। যেহেতু বিদআত ও শিরক; এই দু’টি হল, আমল পন্ড হওয়ার মূল কারণ। আল্লাহ প্রতিটি মুসলিমকে শিরক ও বিদআত হতে দূরে রাখুন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। আল-বায়ান
আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। তাইসিরুল
আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোন মা‘বূদ নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। মুজিবুর রহমান
Allah - there is no deity except Him. To Him belong the best names. Sahih International
৮. আল্লাহ্, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।(১)
(১) এ আয়াতটিতে তাওহীদকে সুন্দরভাবে ফুটে তোলা হয়েছে। এখানে প্রথমেই মহান আল্লাহর নাম উল্লেখ করে তাঁর পরিচয় দেয়া হয়েছে যে, তিনি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। তারপর বলা হয়েছে যে, সুন্দর সুন্দর যত নাম সবই তাঁর। আর এটা সুবিদিত যে, যার যত বেশী নাম তত বেশী গুণ। আর সে-ই মহান যার গুণ বেশী। আল্লাহর প্রতিটি নামই অনেকগুলো গুণের ধারক। কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর অনেক নাম ও গুণ বর্ণিত হয়েছে। তার নাম ও গুণের কোন সীমা ও শেষ নেই। কোন কোন হাদীসে এসেছে যে, মহান আল্লাহর এমন কিছু নাম আছে যা তিনি কাউকে না জানিয়ে তার ইলমে গায়েবের ভাণ্ডারে রেখে দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে কেউ কোন বিপদে পড়ে নিন্মোক্ত দোআ, পাঠ করবে। মহান আল্লাহ তাকে তা থেকে উদ্ধার করবেন সেটি হচ্ছে: হে আল্লাহ! আমি আপনার দাস এবং আপনারই এক দাস ও আরেক দাসীর পুত্র। আমার ভাগ্য আপনারই হাতে, আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর। আমার প্রতি আপনার ফয়সালা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি আপনার যে সমস্ত নাম আপনি আপনার জন্য রেখেছেন অথবা আপনার যে নাম আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন বা আপনার সৃষ্টি জগতের কাউকেও শিখিয়েছেন অথবা আপন ইলমে গাইবের ভাণ্ডারে সংরক্ষণ করে রেখেছেন সে সমস্ত নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি আপনি কুরআনকে করে দিন আমার হৃদয়ের জন্য প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার চিন্তা ভাবনার অপসারণকারী এবং উৎকণ্ঠা দূরকারী।“ [সহীহ ইবন হিব্বান: ৩/২৫৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৯১]
তবে কোন কোন হাদীসে এ সমস্ত নামের মধ্যে ৯৯টি নামের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সেগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করে সেগুলো দ্বারা আহবান জানালে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অবশ্যই আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। কেউ সঠিকভাবে সেগুলোর মাধ্যমে আহবান করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [বুখারী: ২৭৩৬, মুসলিম: ২৬৭৭] কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, শুধু এ ৯৯টিই আল্লাহর নাম, বরং এখানে আল্লাহর নামগুলোর মধ্য থেকে ৯৯টি নামের ফযীলত বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য।
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। [1]
[1] অর্থাৎ, উপাস্য (ইবাদতের যোগ্য) তিনিই, যিনি উপরোক্ত গুণাবলীর অধিকারী। আর তাঁর সুন্দর নামাবলীও আছে, যা দ্বারা তাঁকে আহবান করা হয়। উপাস্য তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নয়, না তাঁর মত সুন্দর নাম কারো আছে। অতএব তাঁকে সঠিকভাবে জানা, তাঁকেই ভয় করা উচিত, তাঁকেই ভালবাসা উচিত, তাঁকেই বিশ্বাস করা উচিত এবং তাঁরই আজ্ঞা পালন করা উচিত। যাতে মানুষ যেদিন তাঁর নিকট ফিরে যাবে সেদিন লজ্জিত না হয়; বরং তাঁর কৃপা ও ক্ষমা লাভ করে আনন্দিত এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করে সৌভাগ্যবান ও সুখী হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’। আল-বায়ান
প্রকৃতই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই আমার ‘ইবাদাত কর, আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে নামায কায়িম কর।’ তাইসিরুল
আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। মুজিবুর রহমান
Indeed, I am Allah. There is no deity except Me, so worship Me and establish prayer for My remembrance. Sahih International
১৪. আমিই আল্লাহ্, আমি ছাড়া অন্য কোন হক্ব ইলাহ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করুন(১) এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।(২)
(১) লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে, এটা ছিল প্রথম নির্দেশ, যা একজন নবীর প্রতি আল্লাহ জারি করেছেন। সে হিসেবে প্রত্যেক মানুষের উপর প্রথম ওয়াজিব ও কর্তব্য হল এ কালেমার সাক্ষ্য দেয়া। [ইবন কাসীর]
(২) এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্যের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। সালাত কায়েম করুন, যাতে আমাকে স্মরণ করতে পারেন। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফেল না হয়ে যায়। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়িত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত৷ সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকারবার থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কোন কোন মুফাসসির এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো, যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি, যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “আমাকে স্মরণ করে আমি তোমাকে স্মরণ রাখবো।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৫২] [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের অর্থ করেছেন, যদি কোন সালাত ভুলে যায় যখনই মনে পড়বে তখনই সালাত পড়ে নেয়া উচিত। [ফাতহুল কাদীর] এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তি কোন সময় সালাত পড়তে ভুলে গিয়ে থাকলে যখন তার মনে পড়ে যায় তখনই সালাত পড়ে নেয়া উচিত। এছাড়া এর আর কোন কাফফারা নেই।” [বুখারীঃ ৫৭২ মুসলিমঃ ৬৮০, ৬৮৪]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ঘুমানোর কারণে কারও সালাত ছুটে গেলে অথবা সালাত আদায় করতে বেখবর হয়ে গেলে যখনই তা স্মরণ হয় তখনই তা আদায় করা উচিত; কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর আমার স্মরনার্থে সালাত কায়েম করুন”। [মুসলিম: ৩১৬] এ সমস্ত হাদীসে এ আয়াতটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা এ তাফসীরের যথার্থতার উপর প্রমাণবিহ। অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি আমরা সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকি তাহলে কি করবো? জবাবে তিনি বলেন, “ঘুমের মধ্যে কোন দোষ নেই। দোষের সম্পর্ক তো জেগে থাকা অবস্থার সাথে। কাজেই যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ভুলে যাবে অথবা ঘুমিয়ে পড়বে তখন জেগে উঠলে বা মনে পড়লে তৎক্ষণাৎ সালাত পড়ে নেবে।” [তিরমিযীঃ ১৭৭. আবু দাউদঃ ৪৪১]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; অতএব আমারই উপাসনা কর[1] এবং আমাকে স্মরণের জন্য নামায কায়েম কর।[2]
[1] এটি শরীয়তের ভারসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভার, যে ব্যাপারে প্রত্যেক ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত। এ ছাড়া তিনিই যখন একমাত্র উপাস্য হওয়ার যোগ্য, তখন তিনিই সমস্ত ইবাদতের একমাত্র অধিকারী।
[2] ব্যাপকভাবে ইবাদতের নির্দেশ দেওয়ার পর বিশেষভাবে নামায পড়তে আদেশ করা হয়েছে; যদিও ইবাদতের মধ্যে নামাযও শামিল। যাতে তার যে বিশেষ গুরুত্ব আছে তা প্রকাশ পায়। لِذِكرِي এর একটি অর্থ হল যে, তুমি আমাকে স্মরণ কর। কারণ আমাকে স্মরণ করার মাধ্যম হল ইবাদত। আর ইবাদতের মধ্যে নামায এক বিশেষ গুরুতত্ত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। দ্বিতীয় অর্থ হল, যখনই তোমার আমাকে স্মরণ হবে, তখনই তুমি নামায পড়। অর্থাৎ যদি কোন সময় ঔদাস্য, ভুল বা ঘুমের প্রভাবে আমাকে স্মরণ করতে না পার, তাহলে উক্ত অবস্থা পার হয়ে আমাকে স্মরণ হতেই তুমি নামায পড়। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিত, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।’’ (মুসলিম, মিশকাত ৬০৪নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। সকল বিষয়েই তার জ্ঞান পরিব্যাপ্ত’। আল-বায়ান
তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ, যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। যাবতীয় বিষয়ে তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। তাইসিরুল
তোমাদের ইলাহতো শুধুমাত্র আল্লাহই যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তাঁর জ্ঞান সর্ব বিষয়ে ব্যাপ্ত। মুজিবুর রহমান
Your god is only Allah, except for whom there is no deity. He has encompassed all things in knowledge." Sahih International
৯৮. তোমাদের ইলাহ তো শুধু আল্লাহই যিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সবকিছু তাঁর জ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯৮) তোমাদের উপাস্য কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই। সর্ব বিষয় তাঁর জ্ঞানায়ত্তে।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর।’ আল-বায়ান
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রসূলই পাঠাইনি যার প্রতি আমি ওয়াহী করিনি যে, আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। কাজেই তোমরা আমারই ‘ইবাদাত কর। তাইসিরুল
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই অহী ব্যতীত। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। মুজিবুর রহমান
And We sent not before you any messenger except that We revealed to him that, "There is no deity except Me, so worship Me." Sahih International
২৫. আর আপনার পূর্বে আমরা যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তার কাছে এ ওহীই পাঠিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) আমি তোমার পূর্বে ‘আমি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমারই উপাসনা কর’-এ প্রত্যাদেশ ছাড়া কোন রসূল প্রেরণ করিনি। [1]
[1] সমস্ত নবীগণও এই একেশ্বরবাদের বাণী নিয়েই আগমন করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। সুতরাং তোমরা কি আত্মসমর্পণকারী হবে’? আল-বায়ান
বল- আমার প্রতি এ ওয়াহীই করা হয়েছে যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, কাজেই তোমরা কি তাঁর নির্দেশের প্রতি মাথা নত করবে? তাইসিরুল
বলঃ আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একই মা‘বূদ; সুতরাং তোমরা হয়ে যাও আত্মসমর্পনকারী। মুজিবুর রহমান
Say, "It is only revealed to me that your god is but one God; so will you be Muslims [in submission to Him]?" Sahih International
১০৮. বলুন, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, সুতরাং তোমরা কি আত্মসমৰ্পণকারী হবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৮) বল, ‘আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্য একই উপাস্য। সুতরাং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হবে কি?’ [1]
[1] এখানে পরিষ্কার করা হয়েছে যে, প্রকৃত রহমত অর্জন হল, তাওহীদকে বরণ এবং শিরক বর্জন করা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপ্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও, আল-বায়ান
আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কুরবানীর) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিযক্ দেয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন), কারণ তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে- তাইসিরুল
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুস্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মা‘বূদ একই মা‘বূদ, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পন কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতজনদেরকে, মুজিবুর রহমান
And for all religion We have appointed a rite [of sacrifice] that they may mention the name of Allah over what He has provided for them of [sacrificial] animals. For your god is one God, so to Him submit. And, [O Muhammad], give good tidings to the humble [before their Lord] Sahih International
৩৪. আর আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য মানাসাক(১) এর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেসবের উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(২) তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, কাজেই তারই কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।(৩)
(১) আরবী ভাষায় منسك ও نسك কয়েক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, জন্তু যবেহ করা, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম, ঈদের জন্য একত্রিত হওয়া ইত্যাদি। তাফসীরকারক মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ সহ অনেকে এখানে منسك এর অর্থ হাদঈর প্রাণী যবেহ করা নিয়েছেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, এই উম্মতকে হাদঈ যবেহ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, তা কোন নতুন আদেশ নয়, পূর্ববর্তী উম্মতদেরকেও এ ধরনের আদেশ দেয়া হয়েছিল। [ইবন কাসীর] পক্ষান্তরে কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহর মতে আয়াতের অর্থ এই যে, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম যেমন এই উম্মতের উপর আরোপ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও হজ্জ ফরয করা হয়েছিল। তখন মক্কার সাথে এটি সুনির্দিষ্ট হবে। হজ্জের জায়গা মক্কা ছাড়া আর কোথাও ছিল না। তখন منسك শব্দের অর্থ হবে হজ্জ এর স্থান। [কুরতুবী] তবে প্রথম মতটি বেশী বিশুদ্ধ। পরবর্তী আয়াতাংশ এর উপর প্রমাণবাহ। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(২) أنعام বলে উট, গরু, ছাগল, মেষ, দুম্বা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। এগুলোকে যবেহ করার সময় আল্লাহর কথা স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরং যবেহ যেন একমাত্র তাঁরই উদ্দেশ্যে হয় সেটার খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে, কারণ, তিনিই তো এ রিযিক তাদেরকে দিয়েছেন। [কুরতুবী] এ প্রসংগে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর হালাল হওয়ার কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা প্রমাণ করা যে, হাদঈ বা কুরবানী কেবল চতুস্পদ জন্তু দ্বারাই সম্ভব। অন্য কিছু দ্বারা সম্ভব নয়। [ফাতহুল কাদীর]
(৩) মূলে এসেছে, الْمُخْبِتِينَ। আরবী ভাষায় خبت শব্দের অর্থ নিম্নভূমি। [ফাতহুল কাদীর] এ কারণে এমন ব্যক্তিকে خبيت বলা হয়, যে নিজেকে হেয় মনে করে। [ফাতহুল কাদীর] এ কারণেই কাতাদাহ ও দাহহাক مخبتين এর অর্থ করেছেন বিনয়ী। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ সন্তুষ্টচিত্ত মানুষ। আমর ইবন আউস বলেনঃ এমন লোকদেরকে مخبتين বলা হয়, যারা অন্যের উপর যুলুম করে না। কেউ তাদের উপর যুলুম করলে তারা তার প্রতিশোধ নেয় না। সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ যারা সুখে-দুঃখে, স্বাচ্ছন্দ্যে ও অভাবঅনটনে আল্লাহর ফায়সালা ও তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকে, তারাই مخبتين । [ইবন কাসীর] মূলতঃ কোন একটিমাত্র শব্দের সাহায্যে এর অন্তরনিহিত অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি অর্থঃ অহংকার ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয়াবনত ভোব অবলম্বন করা। তার বন্দেগী ও দাসত্বে একাগ্র ও একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। তার ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া। পরবর্তী আয়াতই এর সবচেয়ে সুন্দর তাফসীর। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি[1] সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর। আর সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে;
[1] مَنسَك শব্দটি نَسك يَنسك এর ক্রিয়ামূল। অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা। ذَبِيحَة (যবেহকৃত পশুকে)ও نَسِيكَة বলা হয়, যার বহুবচন نُسُك । এর একটি অর্থঃ আনুগত্য ও ইবাদত করাও বটে। যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় পশু কুরবানী করাও তাঁর এক প্রকার ইবাদত। আর সেই জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় জন্তু যবেহ করলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত (বা শিরক) করা হয়। অথবা مَنسَِك (সীনে যবর বা যের দিয়ে) স্থানবাচক শব্দ। অর্থঃ যবেহ বা ইবাদত করার জায়গা। এখান হতেই مَنَاسِك الحَجّ বলা হয়; অর্থাৎ ঐ সমস্ত জায়গা যেখানে হজ্জের কার্যাদি সমাধা করা হয়। যেমন আরাফাত, মুযদালিফা, মিনা ও মক্কা। সাধারণভাবে শুধু হজ্জের কার্যসমূহকেও مَنَاسِك الحَج বলা হয়ে থাকে। আয়াতের অর্থ হল, আমি পূর্বেও প্রত্যেক জাতির জন্য যবেহ বা ইবাদতের নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে এসেছি, যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করত। এর মধ্যে হিকমত এই যে, তারা আমার নাম নিবে; অর্থাৎ, ‘বিসমিল্লাহ, অল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করবে। অথবা আমাকে স্মরণে রাখবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর অবশ্যই আমি নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? আল-বায়ান
আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল : ‘হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তোমরা কি (তাঁকে) ভয় করবে না?’ তাইসিরুল
আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবেনা? মুজিবুর রহমান
And We had certainly sent Noah to his people, and he said, "O my people, worship Allah; you have no deity other than Him; then will you not fear Him?" Sahih International
২৩. আর অবশ্যই আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের কাছে।(১) তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?(২)
(১) তুলনামূলক আলোচনার জন্য দেখুন সূরা আল আ'রাফের ৫৯ থেকে ৬৪; ইউনুসের ৭১ থেকে ৭৩; হূদের ২৫ থেকে ৪৮; বনী ইসরাঈলের ৩ এবং আল আম্বিয়ার ৭৬ থেকে ৭৭ আয়াত।
(২) অর্থাৎ নিজেদের আসল ও যথার্থ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের বন্দেগী করতে, তার সাথে অন্যকে শরীক করতে তোমাদের ভয় লাগে না? [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট, সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! আল-বায়ান
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, আর তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ নেই, (থাকলে) প্রত্যেক ইলাহ আপন সৃষ্টি নিয়ে অবশ্যই চলে যেত, আর অবশ্যই একে অপরের উপর চড়াও হত, তারা তাঁর প্রতি যা আরোপ করে তাত্থেকে তিনি কত মহান ও পবিত্র! তাইসিরুল
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন মা‘বূদ নেই; যদি থাকত তাহলে প্রত্যেক মা‘বূদ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ অতি পবিত্র! মুজিবুর রহমান
Allah has not taken any son, nor has there ever been with Him any deity. [If there had been], then each deity would have taken what it created, and some of them would have sought to overcome others. Exalted is Allah above what they describe [concerning Him]. Sahih International
৯১. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত।(১) তারা যে গুণে তাকে গুণান্বিত করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্ৰ-মহান!
(১) অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্ৰভু যদি আলাদা আলাদা ইলাহ হতো তাহলে তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বজায় থাকতো না। বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবাৰ্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌছে ছাড়তো না। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতো। [সূরা আল-আম্বিয়ঃ ২২] আরও বলা হয়েছেঃ “যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো, যেমন লোকেরা বলে,তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের নৈকট্যলাভের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত থাকত।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৪২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯১) আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন উপাস্য নেই; যদি থাকত, তাহলে প্রত্যেক উপাস্য স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা হতে আল্লাহ কত পবিত্র!
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। তিনি মহা আরশের রব। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, (তিনি) মহান ‘আরশের অধিপতি।’[সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি মহাআরশের অধিপতি। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Allah - there is no deity except Him, Lord of the Great Throne." Sahih International
২৬. আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই, তিনি মহা আরশের রব।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে প্রকাণ্ড সৃষ্টি আরশের রব। আর যেহেতু হুদহুদ কল্যাণের প্রতি আহবানকারী, এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত প্রদানকারী, একমাত্র তাঁর জন্যই সিজদা করার আহবান করে থাকে, তাই হাদীসে তাকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। [দেখুন: আবু দাউদ ৫২৬৭; ইবন মাজাহ ৩২২৪]
এ আয়াত পড়ার পর সিজদা করা ওয়াজিব। [দেখুন: কুরতুবী; আদওয়াউল বায়ান] এখানে সিজদা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মুমিনের সূর্যপূজারীদের থেকে নিজেকে সচেতনভাবে পৃথক করা এবং নিজের কর্মের মাধ্যমে একথার স্বীকৃতি দেয়া ও একথা প্রকাশ করা উচিত যে, সে সূর্যকে নয় বরং একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেই নিজের সিজদার ও ইবাদাতের উপযোগী এবং যোগ্য মনে করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি মহা আরশের অধিপতি। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] মহান আল্লাহ এ বিশ্বের সকল জিনিসের মালিক। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র মহা আরশের মালিক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ আরশ বিশ্ব-জাহানের সব থেকে বড় ও শ্রেষ্ঠ জিনিস। দ্বিতীয়তঃ এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য যে, সাবা’র রাণীর সিংহাসন ছিল বিশাল। কিন্তু আল্লাহর মহাসনের তুলনায় তা নিতান্ত নগণ্য। যার উপর আল্লাহ তাঁর মহিমানুসারে সমাসীন আছেন। হুদহুদ যেহেতু একত্ববাদের উপদেশ দিয়েছে, শিরক খন্ডন করেছে এবং আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছে, সেহেতু হাদীসে এসেছে যে, চার শ্রেণীর জীবকে হত্যা করবে না; পিঁপড়ে, মৌমাছি, হুদহুদ ও শ্রাইক (শিকারী পাখি বিশেষ)। (আহমাদ ১/৩৩২, আবু দাঊদঃ আদব অধ্যায়, ইবনে মাজাহঃ শিকার অধ্যায়) শ্রাইক পাখী, যার মাথা বড়, পেট সাদা, পিঠ সবুজ ও ছোট ছোট পাখী শিকার করে খায়। (টীকা ইবনে কাসীর)
* (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই। আর তাঁর কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আল-বায়ান
আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই- প্রথমেও আর শেষেও, বিধান তাঁরই, আর তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে। তাইসিরুল
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই; দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই আয়ত্বাধীন; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান
And He is Allah; there is no deity except Him. To Him is [due all] praise in the first [life] and the Hereafter. And His is the [final] decision, and to Him you will be returned. Sahih International
৭০. আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, দুনিয়া ও আখেরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই; আর তোমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, ইহকাল ও পরকালে সকল প্রশংসা তাঁরই এবং বিধান তাঁরই; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। আল-বায়ান
আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাইসিরুল
তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকনা, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান
And do not invoke with Allah another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face. His is the judgement, and to Him you will be returned. Sahih International
* আয়াতে উল্লিখিত وجه শব্দের অর্থ চেহারা। আল্লাহর চেহারা আছে। আর তাঁর চেহারা যেমন ধ্বংসশীল নয় তেমনি তাঁর সত্ত্বাও ধ্বংসশীল নয়।
৮৮. আর আপনি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ছাড়া সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল।(১) বিধান তারই এবং তারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
(১) এখানে وجهه বলে আল্লাহ তা'আলার পুরো সত্তাকে বোঝানো হলেও অন্য দিক থেকে এটা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলার চেহারা’ রয়েছে। কারণ; যার চেহারা নেই তার সম্পর্কে এ শব্দ ব্যবহার করা যায় না। মূল উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল। কোন কোন তাফসীরকার বলেন, وجهه বলে এমন আমল বোঝানো হয়েছে, যা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য করা হয়। তখন আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, যে আমল আল্লাহর জন্য খাঁটিভাবে করা হয়, তাই অবশিষ্ট থাকবে এছাড়া সব ধ্বংসশীল। উভয় তাফসীরই বিশুদ্ধ। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮৮) তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যকে ডেকো না,[1] তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তাঁর মুখমন্ডল[2] ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই [3] এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [4]
[1] অর্থাৎ, অন্য কারো ইবাদত করো না। না দু’আর মাধ্যমে, না নযর-মানতের মাধ্যমে আর না কুরবানীর মাধ্যমে। কারণ, এগুলি ইবাদত বলে গণ্য, যা কেবলমাত্র এক আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করাকে কুরআনের ভাষায় ‘আহবান করা’ বলা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হল এ কথা স্পষ্ট করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে --যা করার তার ক্ষমতা নেই তার জন্য-- ডাকা, সাহায্য প্রার্থনা করা, তার নিকট দু’আ করা, বিনয়-নম্র হওয়া --এ সব করাই হল তার ইবাদত করা। যার কারণে মানুষ মুশরিকে পরিণত হয়।
[2] وَجهَه (তাঁর মুখমন্ডল) বলতে স্বয়ং আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুই নশ্বর।{كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ} অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর। অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা)। (সূরা রাহমান ২৬-২৭ আয়াত)
[3] অর্থাৎ, তিনি যা চান সেই ফায়সালাই মান্য হয় এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর আদেশ বলবৎ হয়।
[4] যাতে তিনি সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের ও অসৎ কর্মশীলদের অসৎ কর্মের প্রতিদান দেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মানুষ, তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমতকে তোমরা স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা আছে কি, যে, তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিয্ক দিবে? তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অতএব তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? আল-বায়ান
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর। তিনি ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি যে তোমাদেরকে আকাশ ও যমীন থেকে রিযক দান করে? তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাহলে কীভাবে তোমরা বিপথগামী হচ্ছ? তাইসিরুল
হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রিয্ক দান করে? তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। সুতরাং কোথায় তোমরা বিপথে চালিত হচ্ছ? মুজিবুর রহমান
O mankind, remember the favor of Allah upon you. Is there any creator other than Allah who provides for you from the heaven and earth? There is no deity except Him, so how are you deluded? Sahih International
৩. হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?(১)
(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “বলুন, কে আসমানসমূহ ও যমীনের রব? বলুন, আল্লাহ। বলুন, তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্ৰহণ করেছ আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? বলুন, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? নাকি অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে?” তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক করেছে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যে কারণে সৃষ্টি তাদের কাছে সদৃশ মনে হয়েছে? বলুন, আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা; আর তিনি এক, মহা প্রতাপশালী।” [সূরা আর-রা'দ: ১৬] [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত কি কোন স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রুযী দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। সুতরাং কিরূপে তোমরা সত্যবিমুখ হচ্ছ? [1]
[1] অর্থাৎ, এই স্পষ্ট ও পরিষ্কার বর্ণনার পরেও তোমরা গায়রুল্লাহর ইবাদত করছ? تُؤْفَكُوْنَ এর উৎপত্তি যদি أَفَكَ থেকে হয়, তবে অর্থ হবে ফিরে যাওয়া; অর্থাৎ ‘‘তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ? আর যদি إِفْكٌ থেকে হয়, তবে অর্থ হবে মিথ্যা, যা সত্যবিমুখ হওয়ার নাম। উদ্দেশ্য এই যে, তোমারা তাওহীদ ও আখেরাতকে অস্বীকার করার সুযোগ কোথা থেকে পেলে? অথচ তোমরা এটা স্বীকার কর যে, তোমাদের স্রষ্টা এবং আহারদাতা একমাত্র আল্লাহ। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক; আল-বায়ান
তোমাদের প্রকৃত ইলাহ অবশ্য একজন। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বূদ এক। মুজিবুর রহমান
Indeed, your God is One, Sahih International
৪. নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) নিশ্চয়ই তোমাদের উপাস্য এক। [1]
[1] صآفَّات , زاجرات , تاليات - এসব ফিরিশতাগণের গুণ। আকাশে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সারিবদ্ধ অথবা আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান, ওয়ায-নসীহতের মাধ্যমে মানুষকে ডাঁট-ধমককারী অথবা মেঘমালাকে আল্লাহর আদেশক্রমে হাঁকিয়ে নিয়ে যায় এমন ফিরিশতা এবং আল্লাহর যিকর ও কুরআন তেলাঅতকারী; এই সকল ফিরিশতাগণের শপথ করে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করলেন যে, সকল মানুষের উপাস্য এক, একাধিক নয়; যেমন মুশরিকরা বানিয়ে রেখেছে। সাধারণতঃ তাকীদের জন্য এবং সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য কথায় শপথ করা হয়। এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর একত্ব ও উপাস্য হওয়ার বিষয়ে মুশরিকদের যে সন্দেহ ছিল তা দূরীভূত করার জন্য শপথ করেছেন। এ ছাড়া সকল বস্তুই আল্লাহর সৃষ্টি ও মালিকানাধীন, ফলে যে কোন বস্তুকে সাক্ষী বানিয়ে তার শপথ করা (বা কসম খাওয়া) তাঁর জন্য বৈধ। কিন্তু মানুষের জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও শপথ করা একেবারে অবৈধ ও হারাম। কারণ শপথে, যার শপথ করা হয় তাকে সাক্ষী রাখার উদ্দেশ্য থাকে। আর গায়বী বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সাক্ষী হতে পারে না। কারণ একমাত্র ‘আলেমুল গায়েব’ তিনিই, তিনি ব্যতীত গায়বের খবর অন্য কেউ জানে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তার রব এবং রব উদয়স্থলসমূহের। আল-বায়ান
যিনি আসমান, যমীন আর এ দু’য়ের মাঝে যা আছে এবং সকল উদয় স্থলের মালিক। তাইসিরুল
যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছুর রাব্ব, এবং রাব্ব সকল উদয়স্থলের। মুজিবুর রহমান
Lord of the heavens and the earth and that between them and Lord of the sunrises. Sahih International
৫. যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের অন্তর্বর্তী সবকিছুর রব এবং রব সকল উদয়স্থলের।(১)
(১) সুদ্দী বলেন, এর বহু বচনের কারণ হচ্ছে, শীত কাল এবং গ্ৰীষ্ম কালে সূর্য উদিত হওয়ার স্থানের ভিন্নতা। তিনি আরও বলেন, সারা বছরে সূর্যের ৩৬০টি উদিত হওয়ার স্থান রয়েছে, অনুরূপভাবে সূর্যস্ত যাওয়ারও অনুরূপ স্থান রয়েছে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছুর রক্ষক, রক্ষক পূর্বাচলের।[1]
[1] উদ্দ্যেশ্য হল, উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের প্রতিপালক ও রক্ষক। বহুবচন এই জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যেমন অনেকে বলেন যে, বছরের দিনসমূহের সংখ্যা পরিমাণ উদয় ও অস্তস্থল আছে। সূর্য প্রতিদিন এক উদয়স্থল থেকে উদিত হয় এবং এক অস্তস্থলে অস্তমিত হয়। সূরা রাহমানে مشرقين এবং مغربين দ্বিবচন শব্দ ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ দুই উদয়াচল এবং দুই অস্তাচল। তার অর্থ সেই দুই উদয়াচল ও অস্তাচল যেখান থেকে সূর্য গ্রীষ্ম ও শীতকালে উদিত ও অস্তমিত হয়। অর্থাৎ প্রথমটি দূরবর্তী শেষ উদয়াচল ও অস্তাচল এবং দ্বিতীয়টি নিকটবর্তী শুরুর উদয়াচল ও অস্তাচল। আর যেখানে মাশরিক ও মাগরিব একবচন বর্ণনা করা হয়েছে তার অর্থ হল দিক; যেদিক থেকে সূর্য উদিত ও যে দিকে অস্তমিত হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আল্লাহ ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই। যিনি এক, প্রবল প্রতাপশালী।’ আল-বায়ান
বল- আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী, সার্বভৌম অপ্রতিরোধ্য এক ও একক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই। তাইসিরুল
বলঃ আমিতো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই যিনি এক, পরাক্রমশালী – মুজিবুর রহমান
Say, [O Muhammad], "I am only a warner, and there is not any deity except Allah, the One, the Prevailing. Sahih International
৬৫. বলুন, আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র এবং সত্য কোন ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া, যিনি এক, প্রবল প্ৰতাপশালী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) বল, ‘আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র[1] এবং আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই; যিনি এক, পরাক্রমশালী।
[1] অর্থাৎ, তোমরা যা ধারণা করছ, আমি তা নই। আসলে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর গজব থেকে একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করতে চাইতেন, তাহলে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতেন; কিন্তু তিনি পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, তিনি এক, প্রবল পরাক্রান্ত। আল-বায়ান
আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছে করলে তিনি তার সৃষ্টিকুল থেকে নিজ পছন্দ মত বেছে নিতেন। এসব থেকে তিনি পবিত্র। অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার অধিকারী তিনি এক ও একক আল্লাহ। তাইসিরুল
আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করতে ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন। পবিত্র ও মহান তিনি। তিনিই আল্লাহ এক, প্রবল পরাক্রমশালী। মুজিবুর রহমান
If Allah had intended to take a son, He could have chosen from what He creates whatever He willed. Exalted is He; He is Allah, the One, the Prevailing. Sahih International
৪. আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করতে চাইলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছে বেছে নিতেন। পবিত্র ও মহান তিনি! তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল প্রতাপশালী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করতে ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করতে পারতেন। পবিত্র ও মহান তিনি![1] তিনিই আল্লাহ, এক, পরাক্রমশালী।
[1] অর্থাৎ, মুশরিকদের বিশ্বাস মত, তাঁর সন্তান হওয়ার প্রয়োজনই বা কি? বরং তিনি আপন সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে পছন্দ করতেন, তাকেই সন্তানরূপে গ্রহণ করতে পারতেন। তাদেরকে নয় যাদেরকে তারা তাঁর সন্তান বলে আখ্যায়িত করে থাকে। কিন্তু আসলে আল্লাহ তো এই ত্রুটি থেকে পবিত্র। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নাফ্স থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া*; তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে; এক সৃষ্টির পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে; তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? আল-বায়ান
তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার থেকে তিনি তার জুড়ি সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের জন্য বানিয়েছেন আট গৃহপালিত পশু (চার) জোড়ায় জোড়ায়। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মায়েদের গর্ভে, এক এক পর্যায়ে এক এক আকৃতি দিয়ে, তিন তিনটি অন্ধকার আবরণের মধ্যে। এই হল তোমাদের প্রতিপালক, সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই (ভুয়ো ক্ষমতার অধিকারী, দাম্ভিক ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক) তোমাদেরকে কোন্ দিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? তাইসিরুল
তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি হতে। অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের দিয়েছেন আট প্রকার গৃহপালিত পশু। তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ! তোমাদের রাব্ব। সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ? মুজিবুর রহমান
He created you from one soul. Then He made from it its mate, and He produced for you from the grazing livestock eight mates. He creates you in the wombs of your mothers, creation after creation, within three darknesses. That is Allah, your Lord; to Him belongs dominion. There is no deity except Him, so how are you averted? Sahih International
* আট জোড়া চতুষ্পদ জন্তু: মেষের দু’টি ও ছাগলের দু’টি, উটের দু’টি ও গরুর দু’টি।
৬. তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যাক্তি হতে। তারপর তিনি তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন।(১) আর তিনি তোমাদের জন্য নাযিল করেছেন আট জোড়া আন’আম।(২) তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভের ত্ৰিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। অতঃপর তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?
(১) একথার অর্থ এ নয় যে, প্রথমে আদম থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পরে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে বক্তব্যের মধ্যে সময়ের পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বর্ণনার পরম্পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাষায়ই এ ধরনের দৃষ্টান্ত বর্তমান। যেমন, আমরা বলি তুমি আজ যা করেছো তা জানি এবং গতকাল যা করেছে তাও আমার জানা আছে। এ ধরনের বর্ণনার অর্থ এ নয় যে, গতকালের ঘটনা আজকের পরে সংঘটিত হয়েছে। [দেখুন: তাবারী]
(২) আল-আন’আম বলতে গবাদি পশু বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে আট জোড়া, কারণ; গবাদি পশু অর্থ উট, গরু, ভেড়া, বকরী। এ চারটি নর ও চারটি মাদি মিলে মোট আটটি নর ও মাদি হয়। [তাবারী, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন।[2] তিনি তোমাদের জন্য আট প্রকার পশু অবতীর্ণ করেছেন।[3] তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের তিন প্রকার অন্ধকারে[4] পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি[5] করেন। তিনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ? [6]
[1] অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকে, তাঁকে আল্লাহ তাআলা নিজ হাত দ্বারা তৈরী করেছিলেন এবং তাঁর মধ্যে নিজ রূহ ফুঁকেছিলেন।
[2] অর্থাৎ, হাওয়াকে আদম (আঃ)-এর বামপার্শ্বের অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এটাও তাঁর কুদরতের বড় কৃতিত্ব। কারণ হাওয়া ছাড়া কোন নারীর সৃষ্টি কোন পুরুষের অস্থি থেকে হয়নি। ফলে হাওয়ার সৃষ্টি সাধারণ নিয়ম-বহির্ভূত এবং আল্লাহর মহাশক্তির একটি নিদর্শন।
[3] এই আয়াতে সেই চার প্রকার চতুষ্পদ জন্তুর (ছাগল, ভেঁড়া, উট, গরু) বর্ণনা হয়েছে, যা নর ও মাদা মিলে আট প্রকার হচ্ছে, যার বর্ণনা সূরা আনআমের ১৪৩-১৪৪নং আয়াতে পার হয়ে গেছে। أَنْزَلَ خَلَقَ (সৃষ্টির) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অথবা এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা প্রথমে এই সকল চতুষ্পদ জন্তুকে জান্নাতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং পরে তাদেরকে অবতীর্ণ করেন। সুতরাং এক্ষেত্রে إنزال এর মূল অর্থ ধরতে হবে। অথবা أَنْزَلَ শব্দ এখানে রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ এসব চতুষ্পদ জন্তু ঘাস-পাতা ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর ঘাস-পাতার জন্য আকাশ থেকে অবতীর্ণ পানি নিতান্ত জরুরী। তাই মূলতঃ চতুষ্পদ জন্তু আকাশ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে বলা যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[4] প্রথম অন্ধকার মায়ের পেট, দ্বিতীয় গর্ভাশয়, তৃতীয় ঝিল্লী; সেই পাতলা আবরণ যাতে বাচ্চা জড়ানো থাকে।
[5] অর্থাৎ, ভ্রূণ মাতৃগর্ভে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে, প্রথমে বীর্য, অতঃপর রক্তপিন্ড, অতঃপর গোশতপিন্ড, অতঃপর অস্থির গঠন, তার উপর মাংসের আবরণ। এই সকল স্তর অতিক্রম করার পর পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরী হয়।
[6] অথবা কেন তোমরা হক থেকে বাতিলের দিকে এবং হিদায়াত থেকে ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে চলেছ?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানমহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে এই কিতাব নাযিলকৃত। আল-বায়ান
এ কিতাব নাযিল হয়েছে মহা প্রতাপের অধিকারী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে। তাইসিরুল
এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে – মুজিবুর রহমান
The revelation of the Book is from Allah, the Exalted in Might, the Knowing. Sahih International
২. এ কিতাব নাযিল হয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) এ গ্রন্থ পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ[1] আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়েছে--[2]
[1] তিনি পরাক্রমশালীঃ তাঁর শক্তি ও প্রতাপের সামনে কেউ লেজ হিলাতে পারে না। তিনি সর্বজ্ঞঃ তাঁর নিকটে অণুপরিমাণ কোন বস্তুও গুপ্ত নয়; যদিও তা অতি মোটা কোন পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
[2] تَنْزِيْلٌ হল مُنَزِّلٌ এর অর্থে। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে মিথ্যার কোন অবকাশ নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান