আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল বিষয়ক আয়াতসমূহ ৫৩ টি
আল-আ'রাফ
৭:১৫৩ وَ الَّذِیۡنَ عَمِلُوا السَّیِّاٰتِ ثُمَّ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِهَا وَ اٰمَنُوۡۤا ۫ اِنَّ رَبَّكَ مِنۡۢ بَعۡدِهَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۵۳﴾

আর যারা খারাপ কাজ করল, তারপর তাওবা করল এবং ঈমান আনল, নিশ্চয় তোমার রব এরপরও ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আর যারা অসৎ কাজ করে, অতঃপর তাওবাহ করে আর ঈমান আনে তাহলে এ সবের পর তোমার প্রতিপালক অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

যারা খারাপ কাজ করে, এরপর তাওবাহ করলে ও ঈমান আনলে, তোমার আল্লাহতো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

But those who committed misdeeds and then repented after them and believed - indeed your Lord, thereafter, is Forgiving and Merciful. Sahih International

১৫৩. আর যারা অসৎকাজ করে, তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে আপনার রব তো এরপরও পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(১) এ আয়াতে সেসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা মূসা আলাইহিস্ সালামের সতর্কীকরণের পর নিজেদের এই অপরাধের জন্য তাওবাহ করে নিয়েছে এবং তাওবাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কঠোরতর শর্ত আরোপ করা হয়েছিল যে, তাদেরই একজন অপরজনকে হত্যা করতে থাকলেই তাওবাহ কবুল হবে- তারা সে শর্তও পালন করল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলা নির্দেশক্রমে তাদেরকে বললেনঃ তোমাদের সবার তাওবাহই কবুল হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞে যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তারা শহীদ হয়েছে আর যারা বেঁচে রয়েছে, তারা এখন ক্ষমাপ্রাপ্ত। [তাবারী]

এ আয়াতে বলা হয়েছে, যেসব লোক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তা সে কাজ যত বড় পাপই হোক, কুফরীও যদি হয়, তবুও পরবর্তীতে তাওবাহ করে নিলে এবং ঈমান ঠিক করে ঈমানের দাবী অনুযায়ী নিজের আমল বা কর্ম সংশোধন করে নিলে, আল্লাহ তাকে নিজ রহমতে ক্ষমা করে দেবেন। কাজেই কারো দ্বারা কোন পাপ হয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে তাওবাহ করে নেয়া একান্ত কর্তব্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৩) পক্ষান্তরে যারা অসৎকাজ করে, অতঃপর তারা পরে তওবা করে ও ঈমান আনে (তাদের জন্য) এসব কিছুর পরেও তোমার প্রতিপালক নিশ্চয়ই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[1]

[1] হ্যাঁ, যারা তওবা করে, আল্লাহ তাদের জন্য চরম ক্ষমাশীল পরম দয়াবান। জানা গেল যে, তওবার কারণে সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে শর্ত এই যে, তওবা বিশুদ্ধ হতে হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-আনফাল
৮:৬৯ فَكُلُوۡا مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۶۹﴾

অতএব তোমরা যে গনীমত পেয়েছ, তা থেকে হালাল পবিত্র হিসেবে খাও, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

এক্ষণে, যুদ্ধে গানীমাত হিসেবে যা তোমরা লাভ করেছ তা ভোগ কর, তা বৈধ ও পবিত্র। আল্লাহকে ভয় করে চলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

সুতরাং যুদ্ধে তোমরা যা কিছু গণীমাত রূপে লাভ করেছ তা হালাল ও পবিত্র রূপে ভোগ কর, আর আল্লাহকে ভয় কর, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। মুজিবুর রহমান

So consume what you have taken of war booty [as being] lawful and good, and fear Allah. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International

৬৯. সুতরাং তোমরা যে গনীমত লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর এবং আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) যুদ্ধে তোমরা যা কিছু (গনীমত) লাভ করেছ, তা বৈধ ও পবিত্ররূপে ভোগ কর। [1] আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

[1] এখানে গনীমতের মাল হালাল ও পবিত্র হওয়ার কথা উল্লেখ করে মুক্তিপণ গ্রহণ করার বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে এ কথার সমর্থন হয় যে, ‘লিপিবদ্ধ’ বিধানে সম্ভবতঃ গনীমতের মাল হালাল হওয়ার কথাই ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ ইউনুস
১০:১০৭ وَ اِنۡ یَّمۡسَسۡكَ اللّٰهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ ۚ وَ اِنۡ یُّرِدۡكَ بِخَیۡرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهٖ ؕ یُصِیۡبُ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ ؕ وَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۰۷﴾

‘আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু’। আল-বায়ান

আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দিতে চান তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই, আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই। তিনি তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যাকে চান অনুগ্রহ দিয়ে ধন্য করেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন তাহলে তিনি ছাড়া কেহ তা মোচনকারী নেই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ ও শান্তি পৌঁছাতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের কোন অপসারণকারী নেই; তিনি স্বীয় অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান দান করেন; এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। মুজিবুর রহমান

And if Allah should touch you with adversity, there is no remover of it except Him; and if He intends for you good, then there is no repeller of His bounty. He causes it to reach whom He wills of His servants. And He is the Forgiving, the Merciful Sahih International

১০৭. আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন ক্ষতির স্পর্শ করান, তবে তনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি আল্লাহ আপনার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করার কেউ নেই। তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার কাছে সেটা পৌঁছান। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।(১)

(১) অন্যত্রও আল্লাহ্ তা'আলা এ কথা বলেছেন। যেমন, “আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোন কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-আনআমঃ ১৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তাহলে তিনি ছাড়া তার মোচনকারী আর কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই।[1] তাঁর দাসদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করে থাকেন। আর তিনি চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

[1] মঙ্গল বা উত্তম বস্তুকে এখানে এই জন্য ‘ফায্ল’ বা অনুগ্রহ বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার সাথে যে ভাল ব্যবহার করে থাকেন, আমলের দিক থেকে যদিও বান্দা তার অধিকারী নয়; তবুও এটা তাঁর অনুগ্রহ বা দয়া যে, তিনি মানুষের আমল না দেখে তার উপর রহম ও দয়া করে থাকেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ইবরাহীম
১৪:৩৬ رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضۡلَلۡنَ كَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ ۚ فَمَنۡ تَبِعَنِیۡ فَاِنَّهٗ مِنِّیۡ ۚ وَ مَنۡ عَصَانِیۡ فَاِنَّكَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳۶﴾

‘হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। আল-বায়ান

হে আমার প্রতিপালক! এ (প্রতিমা)-গুলো বহু সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই (প্রতিমাগুলোকে বাদ দিয়ে) যারা আমাকে অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেক্ষেত্রে তুমি তো বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

হে আমার রাব্ব! এই সব মূর্তি বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে; সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে’ই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেহ আমার অবাধ্য হলে আপনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

My Lord, indeed they have led astray many among the people. So whoever follows me - then he is of me; and whoever disobeys me - indeed, You are [yet] Forgiving and Merciful. Sahih International

৩৬. হে আমার রব! এ সব মূর্তি তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে(১)। কাজেই যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে আপনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(২)

(১) এখানে পূর্ব আয়াতে বর্ণিত দোআর কারণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, মূর্তিপূজা থেকে আমাদের অব্যাহতি কামনার কারণ এই যে, এ মূর্তি অনেক মানুষকে পথ ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করেছে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় পিতা ও জাতির অভিজ্ঞতা থেকে একথা বলেছিলেন। মূর্তিপূজা তাদেরকে সর্বপ্রকার মঙ্গল ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছিল। অর্থাৎ মূর্তিগুলো মানুষকে আল্লাহর দিক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ভক্তে পরিণত করেছে। মূর্তি যেহেতু অনেকের পথভ্রষ্টতার কারণ হয়েছে তাই পথভ্রষ্ট করার কাজকে তার কৃতকর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার অনুসারী হবে তথা ঈমান ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী হবে, সে তো আমারই। উদ্দেশ্য, তার প্রতি যে দয়া ও কৃপা করা হবে, তা বলাই বাহুল্য। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করে, তার জন্য আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। এখানে অবাধ্যতার অর্থ যদি কর্মগত অবাধ্যতা অর্থাৎ মন্দকৰ্ম নেয়া হয়, তবে আয়াতের অর্থ স্পষ্ট যে, আপনার কৃপায় তারও ক্ষমা আশা করা যায়। আর যদি অবাধ্যতার অর্থ কুফর ও অস্বীকৃতি নেয়া হয়, তবে কাফের ও মুশরিকের ক্ষমা না হওয়া নিশ্চিত ছিল এবং ওদের জন্য সুপারিশ না করার নির্দেশ ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম-কে পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তাদের ক্ষমার আশা ব্যক্ত করার সঠিক অর্থ হলোঃ নবীসুলভ দয়া প্রকাশ করা। প্রত্যেক নবীর আন্তরিক বাসনা এটাই ছিল যে, প্রত্যেক কাফের ঈমান আনুক, তাই আল্লাহ তা'আলাকে “আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু” -একথা বলে তিনি এই স্বভাবসুলভ বাসনা প্রকাশ করে দিয়েছেন মাত্র। একথা বলেননি যে, এদের সাথে ক্ষমা ও দয়ার ব্যবহার করুন।

ঈসা আলাইহিস সালামও স্বীয় উম্মতের কাফেরদের সম্পর্কে এরূপ বলেছিলেনঃ (وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ) [আল-মায়েদাঃ ১১৮] অর্থাৎ “আপনি যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” আপনি সবই করতে পারেন। আপনার কাজে কেউ বাধাদানকারী নেই। [দেখুন, ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ কথা হে রব! এ মুর্তিগুলো অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। এ আয়াতাংশ এবং ঈসা আলাইহিস সালামের ‘যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা’ আয়াতাংশ তেলাওয়াত করেন।

তারপর তিনি তার দু'হাত উপরে উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মত, হে আল্লাহ! আমার উম্মত, হে আল্লাহ! আমার উম্মত। আর কাঁদতে থাকলেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা জিবরীলকে বললেন, হে জিবরীল তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও, অথচ তোমার রব জানেন - তাকে জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদছেন? তখন জিবরীল এসে রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনিও জিবরীলকে প্রশ্নোত্তর জানালেন। তখন আল্লাহ বললেন, জিবরীল যাও, মুহাম্মাদের কাছে এবং তাকে বল, আমরা অবশ্যই আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করব এবং আপনার জন্য খারাপ কোন কিছু করব না। [মুসলিম: ২০২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) হে আমার প্রতিপালক! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে;[1] সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

[1] পথভ্রষ্ট করার কাজের সম্পর্ক জোড়া হয়েছে ঐ পাথরের মূর্তিদের সাথে, মুশরিকরা যাদের পূজা-অর্চনা করত, অথচ তারা নির্বোধ, কেননা সেসব মূর্তি মানুষের পথভ্রষ্টের কারণ ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ আল-হিজর
১৫:৪৯ نَبِّیٴۡ عِبَادِیۡۤ اَنِّیۡۤ اَنَا الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿ۙ۴۹﴾

আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, আমি নিশ্চয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আমার বান্দাহদেরকে সংবাদ দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

আমার বান্দাদেরকে বলে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

[O Muhammad], inform My servants that it is I who am the Forgiving, the Merciful. Sahih International

৪৯. আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই পরম ক্ষমাশীল, পরম দিয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৯) আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, ‘নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:১৮ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۸﴾

আর যদি তোমরা আল্লাহর নিআমত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

তোমরা আল্লাহর নি‘মাতসমূহকে গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না; আল্লাহ অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবেনা; আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা পরায়ণ, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

And if you should count the favors of Allah, you could not enumerate them. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International

১৮. আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।(১)

(১) আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করার পরপরই তাঁর ক্ষমাশীল ও করুণাময় হবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার যে নেয়ামত মানুষের উপর আছে তা দাবী করছে যে মানুষ সর্বদা তাঁর শোকরগুজার হবে। কিন্তু আল্লাহ তাঁর অপার মহিমায় তাদের অপরাধ মার্জনা করেন। যদি তোমাদেরকে তার প্রতিটি নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে বাধ্য করা হতো, তবে তোমরা কেউই সেটা করতে সক্ষম হতে না। যদি এ ধরণের নির্দেশ আসতো তবে তোমরা দুর্বল হয়ে যেতে এবং তা করা ছেড়ে দিতে আর যদি তিনি এর জন্য তোমাদেরকে আযাব দিতেন তবে তিনি যালেম বিবেচিত হতেন না।

কিন্তু আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন, অল্প কিছুরই শাস্তি দিয়ে থাকেন। [ইবন কাসীর] তোমরা যদি তার কোন কোন নেয়ামতের শোকর আদায় করতে কিছুটা কসূর করে ফেল, তারপর তাওবাহ করো এবং তাঁর আনুগত্য ও সস্তুষ্টির দিকে ফিরে আসো তবে তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। তাওবাহ ও তার দিকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তো তোমাদের জন্য অতিশয় দয়ালু। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না; আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৬ আন-নাহাল
১৬:১১৯ ثُمَّ اِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِیۡنَ عَمِلُوا السُّوۡٓءَ بِجَهَالَۃٍ ثُمَّ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ وَ اَصۡلَحُوۡۤا ۙ اِنَّ رَبَّكَ مِنۡۢ بَعۡدِهَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۹﴾

তারপর নিশ্চয় তোমার রব তাদের জন্য, যারা অজ্ঞাতসারে মন্দ কাজ করেছে, এরপর তারা তওবা করেছে এবং পরিশুদ্ধ হয়েছে। নিশ্চয় তোমার রব এসবের পর পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালক তাদের জন্য যারা অজ্ঞতার কারণে খারাপ কাজ করে, অতঃপর তাওবাহ করে ও নিজেদের ‘আমাল সংশোধন করে, তোমার প্রতিপালক তাদের জন্য অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

যারা অজ্ঞতা বশতঃ খারাপ কাজ করে তারা পরে তাওবাহ করলে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্য তোমার রাব্ব অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

Then, indeed your Lord, to those who have done wrong out of ignorance and then repent after that and correct themselves - indeed, your Lord, thereafter, is Forgiving and Merciful. Sahih International

১১৯. যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকাজ করে, তারা পরে তওবা করলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্য আপনার রব অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(১) আয়াতে جهل শব্দ নয় বরং جهالة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। جهل শব্দটি علم এর বিপরীত অজ্ঞানতা ও বোধহীনতা অর্থে ব্যবহৃত হয় ৷ পক্ষান্তরে جهالة এর অর্থ হয় মূৰ্খসুলভ কান্ড, যদিও তা বুঝে-শুনে করা হয়। এজন্যই কোন কোন পূর্ববর্তী মনীষী বলেন, যাবতীয় গুণাহই মানুষ মূৰ্খসুলভ কাণ্ডের কারণে করে থাকে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৯) যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কর্ম করে, তারা পরে তওবা করলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্য তোমার প্রতিপালক অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:২৫ رَبُّكُمۡ اَعۡلَمُ بِمَا فِیۡ نُفُوۡسِكُمۡ ؕ اِنۡ تَكُوۡنُوۡا صٰلِحِیۡنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلۡاَوَّابِیۡنَ غَفُوۡرًا ﴿۲۵﴾

তোমাদের অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে তোমাদের রবই অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল। আল-বায়ান

তোমাদের প্রতিপালক খুব ভাল করেই জানেন তোমাদের অন্তরে কী আছে। তোমরা যদি সৎকর্মশীল হও, তবে যারা বার বার তাঁর দিকে ফিরে আসে তিনি তো তাদের প্রতি পরম ক্ষমাশীল। তাইসিরুল

তোমাদের রাব্ব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভাল জানেন; তোমরা যদি সৎ কর্মপরায়ণ হও তাহলে তিনি তাদের (আল্লাহ অভিমুখীদের) প্রতি ক্ষমাশীল। মুজিবুর রহমান

Your Lord is most knowing of what is within yourselves. If you should be righteous [in intention] - then indeed He is ever, to the often returning [to Him], Forgiving. Sahih International

২৫. তোমাদের রব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভাল জানেন; যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও তবেই তো তিনি আল্লাহ-অভিমুখীদের প্রতি খুবই ক্ষমাশীল।(১)

১. আয়াতটি নতুন কথাও হতে পারে, তখন অর্থ হবে, তোমাদের অন্তরে ইখলাস আছে কি না, আনুগত্যের অবস্থা কি, গোনাহ থেকে তাওবাহ করার প্রস্তুতি কেমন আছে এসব আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন। [ফাতহুল কাদীর] আবার পূর্বকথার রেশ ধরে পিতার আদব ও সম্মান সম্পর্কিত আদেশসমূহের কারণে সন্তানদের মনে এমন একটা আশঙ্কা দেখা দিতে পারে যে, পিতা-মাতার সাথে সদাসর্বদা থাকতে হবে। তাদের এবং নিজেদের অবস্থাও সবসময় সমান যায় না। কোন সময় মুখ দিয়ে এমন কথাও বের হয়ে যেতে পারে, যা উপরোক্ত আদবের পরিপন্থী। তাই বলা হয়েছে। যে, বেআদবীর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কোন সময় কোন পেরেশানী অথবা অসাবধানতার কারণে কোন কথা বের হয়ে গেলে এবং এজন্যে তওবা করলে আল্লাহ তা'আলা মনের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন যে, কথাটি বেআদবী অথবা কষ্টদানের জন্যে বলা হয়নি।

সুতরাং তিনি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদেরকে ক্ষমা করবেন। [দেখুন, ইবন কাসীর] আওয়াবীন শব্দের অর্থ নিয়ে বেশ মতভেদ থাকলেও এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, প্রত্যাবর্তনকারী। সে হিসেবে এর অর্থ দাঁড়ায়, যারা গোনাহ থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। যারাই ইখলাসহীন অবস্থা থেকে ইখলাসের দিকে ফিরে আসে তাদেরকেও তিনি পূর্বে কথা, কাজ ও বিশ্বাসে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে গেছে সেগুলো ক্ষমা করে দিবেন। মূলত: যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে আল্লাহও তার দিকে ফিরে আসেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমাদের প্রতিপালক অধিক জানেন; তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হলে, যারা সর্বদা আল্লাহ অভিমুখী আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:৪৪ تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡهِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِهٖ وَ لٰكِنۡ لَّا تَفۡقَهُوۡنَ تَسۡبِیۡحَهُمۡ ؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا ﴿۴۴﴾

সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। আল-বায়ান

সাত আসমান, যমীন আর এগুলোর মাঝে যা আছে সব কিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। এমন কোন জিনিসই নেই যা তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তোমরা বুঝতে পার না কীভাবে তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরম সহিষ্ণু, বড়ই ক্ষমাপরায়ণ। তাইসিরুল

সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অর্ন্তবর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেনা। কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারনা; তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। মুজিবুর রহমান

The seven heavens and the earth and whatever is in them exalt Him. And there is not a thing except that it exalts [Allah] by His praise, but you do not understand their [way of] exalting. Indeed, He is ever Forbearing and Forgiving. Sahih International

৪৪. সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তারই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে(১) এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্ৰশংস পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

১. ইচ্ছাগত তাসবীহ তো শুধু ফেরেশতা এবং ঈমানদার জিন ও মানবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ্ তাআলা জগতের প্রত্যেকটি অণু-পরমাণুকে তাসবীহ পাঠকারী বানিয়ে রেখেছেন। [ইবন কাসীর] কিন্তু তাদের এই সৃষ্টিগত ও বাধ্যতামূলক তাসবীহ সাধারণ মানুষের শ্রুতিগোচর হয়না। এ আয়াতেই বলা হয়েছে, (وَلَٰكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ) এ উক্তি এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিগত তাসবীহ এমন জিনিস, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম নয়। অবস্থগত তাসবীহ তো বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারে। এ থেকে জানা গেল যে, এই তাসবীহ পাঠ শুধু অবস্থাগত নয়, সত্যিকারের; কিন্তু আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির ঊর্ধ্বে। তাছাড়া মু'জেযা ও কারামত হিসেবে কখনও কখনও অচেতন বস্তু সমূহের তাসবীহও আল্লাহ্ তা'আলা মাঝে মধ্যে শুনিয়ে থাকেন। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার খেতাম, এমতাবস্থায় আমরা খাবারের তাসবীহও শুনতাম।” [বুখারীঃ ৩৫৭৯] অনুরূপভাবে মরা খেজুরগাছের কাঠের কান্না। [বুখারী: ৩৫৮৩] মক্কার এক পাথর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া। [মুসলিম: ২২৭৭]

উদাহরণতঃ সূরা ছোয়াদে দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি। তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। [সূরা ছোয়াদঃ ১৮] সূরা আল-বাকারায় পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” [সূরা আল-বাকারাহ্ঃ ৭৪]। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও চেতনা, অনুভূতি ও আল্লাহর ভয় রয়েছে। সূরা মারইয়ামে নাসারা সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বলা হয়েছেঃ “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন। তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ; যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়!”।[সূরা মার্ইয়ামঃ ৮৮-৯২] বলাবাহুল্য, এই ভয়-ভীতি তাদের চেতনা ও অনুভূতির পরিচায়ক। চেতনা ও অনুভূতি থাকলে তসবীহ পাঠ করা অসম্ভব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। [1] নিশ্চয় তিনি অতীব সহনশীল, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

[1] অর্থাৎ, সকলেই তাঁর অনুগত এবং তারা স্ব স্ব নিয়মে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় ও প্রশংসায় লিপ্ত আছে। যদিও আমরা তাদের পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করার কথা বুঝতে পারি না। এর সমর্থন কুরআনের আরো কিছু আয়াত দ্বারাও হয়। যেমন, দাঊদ (আঃ)-এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾  অর্থাৎ, আমি পর্বতসমূহকে তাঁর অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। (সূরা সাদ ১৮ আয়াত) কোন কোন পাথরের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ﴾ অর্থাৎ, কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে। (সূরা বাকারাহ ৭৪ আয়াত) কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর সাথে খাবার খাওয়ার সময় খাবার থেকে ‘তসবীহ’ পড়ার ধ্বনি শুনেছেন। (বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ৩৫৭৯নং) অপর একটি হাদীসে এসেছে যে, পিঁপড়েরাও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। (বুখারী ৩০১৯, মুসলিম ১৭৫৯নং) অনুরূপ খেজুর গাছের যে গুঁড়িতে হেলান দিয়ে রসূল (সাঃ) খুৎবা দিতেন, যখন কাঠের মিম্বর তৈরী হল এবং সেই গুঁড়িকে তিনি ত্যাগ করলেন, তখন তা থেকে শিশুর মত কান্নার শব্দ এসেছিল। (বুখারী ৩৫৮৩নং) মক্কায় একটি পাথর ছিল, যে রসূল (সাঃ)-কে সালাম দিত। (মুসলিম ১৭৮২নং) এই আয়াত এবং হাদীসসমূহ হতে স্পষ্ট হয় যে, জড় পদার্থ এবং উদ্ভিদ জিনিসের মধ্যেও এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি (জীবন) আছে, যদিও তা আমরা বুঝতে পারি না। তারা কিন্তু এই অনুভূতির ভিত্তিতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ, প্রামাণ্য তসবীহ। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলো প্রমাণ করে যে, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান কেবল মহান আল্লাহ। وَفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ آيَةٌ * تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ وَاحِدٌ ‘প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, যা প্রমাণ করে যে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (শুআবুল ঈমান বাইহাকী) তবে সঠিক কথা এটাই যে, ‘তসবীহ’ তার প্রকৃত ও মূল অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:৫৮ وَ رَبُّكَ الۡغَفُوۡرُ ذُو الرَّحۡمَۃِ ؕ لَوۡ یُؤَاخِذُهُمۡ بِمَا كَسَبُوۡا لَعَجَّلَ لَهُمُ الۡعَذَابَ ؕ بَلۡ لَّهُمۡ مَّوۡعِدٌ لَّنۡ یَّجِدُوۡا مِنۡ دُوۡنِهٖ مَوۡئِلًا ﴿۵۸﴾

আর তোমার রব ক্ষমাশীল, দয়াময়। তারা যা উপার্জন করেছে, তার কারণে তিনি যদি তাদেরকে পাকড়াও করতেন তবে অবশ্যই তাদের জন্য আযাব ত্বরান্বিত করতেন। বরং তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ার আধার। তাদের কৃতকর্মের জন্য তিনি যদি তাদেরকে পাকড়াও করতেন, তাহলে তাদের উপর অবশ্যই শীঘ্রই ‘আযার পাঠাতেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে কৃত ওয়া‘দার জন্য আছে নির্দিষ্ট সময়, যাকে পাশ কাটিয়ে তারা কক্ষনো আশ্রয়ের কোন জায়গা পাবে না। তাইসিরুল

এবং তোমার রাব্ব ক্ষমাশীল, দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহুর্ত, যা হতে তাদের পরিত্রাণ নেই। মুজিবুর রহমান

And your Lord is the Forgiving, full of mercy. If He were to impose blame upon them for what they earned, He would have hastened for them the punishment. Rather, for them is an appointment from which they will never find an escape. Sahih International

৫৮. আর আপনার রব পরম ক্ষমাশীল, দয়াবান(১)৷ তাদের কৃতকর্মের জন্য যদি তিনি তাদেরকে পাকড়াও করতেন, তবে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি তরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহুর্ত, যা থেকে তারা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।(২)

(১) এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর দুটি গুণ ব্যবহার করেছেন। এক. তিনি ক্ষমাশীল। দুই. তিনি রহমতের মালিক। যে রহমত সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। সুতরাং তিনি তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে দ্রুত শাস্তি দিচ্ছেন না। [ফাতহুল কাদীর]

(২) অর্থাৎ কেউ কোন দোষ করলে সংগে সংগেই তাকে পাকড়াও করে শাস্তি দিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোন জীব-জিন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে গেলে আল্লাহ তো আছেন তাঁর বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা ফাতের: ৪৫]

আরও বলেনঃ “মংগলের আগেই ওরা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, যদিও ওদের আগে এর বহু দৃষ্টান্ত গত হয়েছে। মানুষের সীমালংঘন সত্বেও আপনার রব তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং আপনার প্রতিপালক শাস্তি দানে তো কঠোর।” [সূরা রা'দ: ৬] তিনি সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেন, গোপন রাখেন, ক্ষমা করেন, কখনও তাদের কাউকে হেদায়াতের পথেও পরিচালিত করেন। তারপরও যদি কেউ অপরাধের পথে থাকে তাহলে তার জন্য তো এমন এক দিন রয়েছে যে দিন নবজাতক বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভধারিনী তার গর্ভ রেখে দিবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল, দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য তিনি তাদেরকে পাকড়াও করলে তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত; যা হতে তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই। [1]

[1] অর্থাৎ এটা তো ক্ষমাশীল রবের দয়া যে, তিনি পাপের দরুন সত্ত্বর পাকড়াও করেন না, বরং অবকাশ দেন। যদি এ রকম না হত, তবে (বদ)আমলের কারণে প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর আযাবের শিকলে আবদ্ধ থাকত। হ্যাঁ, এ কথা বাস্তব যে, যখন অবকাশ শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ধ্বংসের সময় এসে যায়, তখন আর পলায়ন করার কোন পথ এবং নিষ্কৃতি পাওয়ার কোন উপায় তাদের জন্য থাকে না। مَوْئِلٌ এর অর্থ, আশ্রয়স্থল, পলায়ন পথ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৪ আন-নূর
২৪:৬২ اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ اِذَا كَانُوۡا مَعَهٗ عَلٰۤی اَمۡرٍ جَامِعٍ لَّمۡ یَذۡهَبُوۡا حَتّٰی یَسۡتَاۡذِنُوۡهُ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَاۡذِنُوۡنَكَ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ۚ فَاِذَا اسۡتَاۡذَنُوۡكَ لِبَعۡضِ شَاۡنِهِمۡ فَاۡذَنۡ لِّمَنۡ شِئۡتَ مِنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمُ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۶۲﴾

মুমিন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে থাকলে অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। নিশ্চয় তোমার কাছে যারা অনুমতি চায় তারাই কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে; সুতরাং কোন প্রয়োজনে তারা তোমার কাছে বাইরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দেবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আল-বায়ান

ঈমানদার তো তারাই যারা ঈমান আনে আল্লাহর উপর ও তাঁর রসূলের উপর আর তারা যখন রসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত কাজে মিলিত হয়, তখন তার অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। যারা তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাসী। কাজেই তাদের কেউ তাদের কোন কাজে যাওয়ার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চাইলে তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে অনুমতি দিবে আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল

তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তার অনুমতি ব্যতীত তারা সরে পড়েনা; যারা অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী; অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাবার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

The believers are only those who believe in Allah and His Messenger and, when they are [meeting] with him for a matter of common interest, do not depart until they have asked his permission. Indeed, those who ask your permission, [O Muhammad] - those are the ones who believe in Allah and His Messenger. So when they ask your permission for something of their affairs, then give permission to whom you will among them and ask forgiveness for them of Allah. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih International

৬২. মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তারা অনুমতি ছাড়া সরে পড়ে না; নিশ্চয় যারা আপনার অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান রাখে। অতএব তারা তাদের কোন কাজের জন্য আপনার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে আপনি অনুমতি দেবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) তারাই বিশ্বাসী, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে এবং রসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্রিত হলে তার অনুমতি ব্যতীত সরে পড়ে না। যারা তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ এবং রসূলে বিশ্বাসী।[1] অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দাও এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ।

[1] অর্থাৎ, জুমআহ ও ঈদের সম্মেলনে অথবা ভিতর ও বাইরের কোন সমস্যার সমাধানকল্পে আহূত পরামর্শ সভায় ঈমানদাররা উপস্থিত হয়ে থাকে। আর উপস্থিত হতে না পারলে (অথবা প্রয়োজনে সভা ছেড়ে যেতে হলে) অনুমতি গ্রহণ করে। যার বিপরীত অর্থ অন্য শব্দে এই যে, মুনাফিকরা এ সমস্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা হতে এবং নবী (সাঃ)-এর কাছে অনুমতি নেওয়া হতে দূরে থাকার চেষ্টা করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৫ আল-ফুরকান
২৫:৬ قُلۡ اَنۡزَلَهُ الَّذِیۡ یَعۡلَمُ السِّرَّ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۶﴾

বল, ‘যিনি আসমান ও যমীনের রহস্য জানেন তিনি এটি নাযিল করেছেন; নিশ্চয় তিনি অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ আল-বায়ান

বল : ‘তা তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আসমান-যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় অবগত আছেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

বলঃ এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন; তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

Say, [O Muhammad], "It has been revealed by He who knows [every] secret within the heavens and the earth. Indeed, He is ever Forgiving and Merciful." Sahih International

৬. বলুন, এটা তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সমুদয় রহস্য জানেন; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) বল, ‘এ তিনিই অবতীর্ণ করেছেন, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন।[1] নিশ্চয়ই তিনি চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [2]

[1] এটি তাদের মিথ্যা ও অপবাদ আরোপের জবাবে বলা হচ্ছে যে, কুরআনের প্রতি লক্ষ্য কর, এর মধ্যে কি রয়েছে? কুরআনের কোন কথা অসত্য বা বাস্তববিরোধী কি? নিশ্চয় না। বরং প্রতিটি কথা সঠিক ও সত্য। কারণ এর অবতীর্ণকারী ঐ সত্তা, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেক গুপ্ত বিষয় সম্পর্কে অবহিত।

[2] তিনি চরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াবান; নচেৎ কুরআন রচনার অপবাদ আরোপ অতি মহাপাপ; যার কারণে শীঘ্রই তারা আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৮ আল-কাসাস
২৮:১৬ قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِیۡ فَاغۡفِرۡ لِیۡ فَغَفَرَ لَهٗ ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶﴾

সে বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

সে বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজের আত্মার উপর যুলম করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

সে বললঃ হে আমার রাব্ব! আমিতো আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

He said, "My Lord, indeed I have wronged myself, so forgive me," and He forgave him. Indeed, He is the Forgiving, the Merciful. Sahih International

১৬. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি; সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’[1] অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

[1] এই অনিচ্ছাকৃত আকস্মিক হত্যা যদিও কাবীরাহ গোনাহ ছিল না (কারণ মহান আল্লাহ নবীগণকে তা হতে সুরক্ষা করেন) তা সত্ত্বেও তিনি এই গোনাহকে এমন ভাবলেন, যার ফলে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরী মনে করলেন। দ্বিতীয়তঃ এ আশঙ্কাও তাঁর ছিল যে, ফিরআউন যদি জানতে পারে, তাহলে তার বদলা নিতে সে হয়তো তাঁকেও হত্যা করবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৪ সাবা
৩৪:২ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡهَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡهَا ؕ وَ هُوَ الرَّحِیۡمُ الۡغَفُوۡرُ ﴿۲﴾

তিনি জানেন যমীনে যা প্রবেশ করে এবং তা থেকে যা বের হয়; আর আসমান থেকে যা নাযিল হয় এবং তাতে যা উঠে* । আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল। আল-বায়ান

ভূমিতে যা প্রবেশ করে আর তাত্থেকে যা বের হয়, আর আকাশ হতে যা অবতীর্ণ হয় আর তাতে যা উত্থিত হয় তা তিনি জানেন। তিনি পরম দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল। তাইসিরুল

তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে, তা হতে যা নির্গত হয় এবং যা আকাশ হতে বর্ষিত হয় ও যা কিছু আকাশে উত্থিত হয়। তিনিই পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল। মুজিবুর রহমান

He knows what penetrates into the earth and what emerges from it and what descends from the heaven and what ascends therein. And He is the Merciful, the Forgiving. Sahih International

২. তিনি জানেন যা যমীনে প্রবেশ করে(১) এবং যা তা থেকে নিৰ্গত হয়, আর যা আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু তাতে উত্থিত হয়।(২) আর তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় ক্ষমাশীল।

(১) অর্থাৎ আসমান থেকে যে পানি নাযিল হয় সে পানির কতটুকু যমীনে প্রবেশ করে তা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। [আদওয়াউল বায়ান] যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন তারপর তা দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়।” [সূরা আয-যুমার: ২১]

(২) যমীন থেকে যা নিৰ্গত হয় যেমন, উদ্ভিদ, খনিজ সম্পদ, পানি। আর আসমান থেকে যা নাযিল হয়। যেমন, বৃষ্টির পানি, ফেরেশতা, কিতাবাদি। আকাশে যা উত্থিত হয় যেমন, ফেরেশতাগণ, মানুষের আমল। তিনি বান্দাদের প্রতি দয়াশীল বলেই তাদের অপরাধের কারণে তাদের উপর দ্রুত শাস্তি নাযিল করেন না। যারা তার কাছে তাওবা করবে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। [মুয়াস্সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনি জানেন যা ভূগর্ভে প্রবেশ করে,[1] যা তা থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ হতে অবতরণ করে[2] ও যা কিছু আকাশে উত্থিত হয়। [3] তিনিই পরম দয়ালু, চরম ক্ষমাশীল।

[1] যেমন বৃষ্টি, প্রোথিত গুপ্তধন এবং খনিজ-সম্পদ ইত্যাদি।

[2] বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, মেঘগর্জন, বিদ্যুত ও আল্লাহর বরকত, ফিরিশতা এবং আসমানী কিতাব ইত্যাদি।

[3] অর্থাৎ, ফিরিশতা এবং বান্দাদের আমল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:২৮ وَ مِنَ النَّاسِ وَ الدَّوَآبِّ وَ الۡاَنۡعَامِ مُخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُهٗ كَذٰلِكَ ؕ اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰهَ مِنۡ عِبَادِهِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ ﴿۲۸﴾

আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। আল-বায়ান

তেমনিভাবে মানুষ, জীব-জন্তু আর গৃহপালিত পশুদের মধ্যেও রয়েছে তাদের বিভিন্ন রং। আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে তারাই তাঁকে ভয় করে যারা জ্ঞানী। আল্লাহ মহা ক্ষমতাশালী, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

এভাবে রং বেরংয়ের মানুষ, জানোয়ার ও চতুস্পদ জন্তু রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। মুজিবুর রহমান

And among people and moving creatures and grazing livestock are various colors similarly. Only those fear Allah, from among His servants, who have knowledge. Indeed, Allah is Exalted in Might and Forgiving. Sahih International

২৮. আর মানুষের মাঝে, জন্তু ও গৃহপালিত জানোয়ারের মাঝেও বিচিত্র বর্ণ রয়েছে অনুরূপ। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই কেবল তাকে ভয় করে(১); নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

(১) বলা হয়েছে যে, কেবল আলেম ও জ্ঞানীগণই আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহর শক্তিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞানময়তা, ক্ৰোধ, পরাক্রম, সার্বভৌম কর্তৃত্ব-ক্ষমতা ও অন্যান্য গুণাবলী সম্পর্কে যে ব্যক্তি যতবেশী জানবে সে ততবেশী তাঁর নাফরমানী করতে ভয় পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীর ব্যাপারে যতবেশী অজ্ঞ হবে সে তাঁর ব্যাপারে তত বেশী নির্ভীক হবে। এ আয়াতে জ্ঞান অর্থ দৰ্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অংক ইত্যাদি স্কুল-কলেজে পঠিত বিষয়ের জ্ঞান নয়। বরং এখানে জ্ঞান বলতে আল্লাহর গুণাবলীর জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এ জন্য শিক্ষিত ও অশিক্ষিত হবার প্রশ্ন নেই। তাই আয়াতে العلماء বা ‘উলামা’ বলে এমন লোকদের বোঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ্ তা'আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং পৃথিবীর সৃষ্টবস্তু সামগ্ৰী, তার পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও আল্লাহর দয়া-করুণা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন।

কেবল আরবী ভাষা, ব্যাকরণ-অলংকারাদি সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই কুরআনের পরিভাষায় ‘আলেম’ বলা হয় না। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না সে যুগের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হলেও এ জ্ঞানের দৃষ্টিতে সে নিছক একজন মুর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর গুণাবলী জানে এবং নিজের অন্তরে তাঁর ভীতি পোষণ করে সে অশিক্ষিত হলেও জ্ঞানী। তবে কারও ব্যাপারে তখনই এ আয়াতটির প্রয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত হবে যখন তাদের মধ্যে আল্লাহভীতি থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এক হাদীসে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, “যদি আমি যা জানি তা তোমরা জানতে তবে হাসতে কম কাঁদতে বেশী।” [বুখারী: ৬৪৮৬, মুসলিম: ২৩৫৯]

এর কারণ, রাসূল আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী জানেন, তার তাকওয়াও সবচেয়ে বেশী। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একথাই বলেছেন, “বিপুল সংখ্যক হাদীস জানা জ্ঞানের পরিচায়ক নয় বরং বেশী পরিমাণ আল্লাহভীতিই জ্ঞানের পরিচয় বহন করে।” ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “তারাই হচ্ছে আলেম যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।” তিনি আরও বলেছেন, “সেই ব্যক্তি রহমান সম্পর্কে আলেম যিনি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেননি, তাঁর হালালকে হালাল করেছেন, হারামকে হারাম করেছেন, তাঁর অসীয়ত বা নির্দেশাবলীর পূর্ণ হিফাযত করেছেন, আর বিশ্বাস করেছেন যে, একদিন তাকে তার সাথে সাক্ষাত করতে হবে এবং তার যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে।”

হাসান বাসরী রাহেমাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহকে না দেখে বা একান্তে ও জনসমক্ষে যে ভয় করে সেই হচ্ছে আলেম। আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন সেদিকেই আকৃষ্ট হয় এবং যে বিষয়ে আল্লাহ নারাজ সে ব্যাপারে সে কোন আগ্রহ পোষণ করে না।” সুফিয়ান সাওরী বর্ণনা করেন যে, জ্ঞানী তিন ধরনের হয়। এক, আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত, তাঁর নির্দেশ সম্পর্কেও জ্ঞানী। দুই, আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত, কিন্ত তাঁর নির্দেশ সম্পর্কে অজ্ঞ। তিন, আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী, কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং যে আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত ও তার নির্দেশ সম্পর্কেও জ্ঞানী সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর ফরয ওয়াজিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।

আর যে আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহকে ভয় করে কিন্তু তাঁর ফরয ওয়াজিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেনা। আর যে আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী অথচ তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান রাখেনা সে এ ব্যক্তি যে, আল্লাহকে ভয় করে না। কিন্তু আল্লাহর ফরয ওয়াজিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। সারকথা, যার মধ্যে যে পরিমাণ আল্লাহ ভীতি হবে, সে সেই পরিমাণ আলেম হবে। আহমদ ইবনে সালেহ মিসরী বলেন, অধিক বর্ণনা ও অধিক জ্ঞান দ্বারা আল্লাহভীতির পরিচয় পাওয়া যায় না; বরং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ দ্বারা এর পরিচয় পাওয়া যায়। সুতরাং যার মধ্যে আল্লাহভীতি নেই, সে আলেম নয়। [দেখুন: তাবারী; বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) এভাবে রঙ-বেরঙের মানুষ, জন্তু ও গৃহপালিত পশু রয়েছে।[1] আল্লাহর দাসদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। [2] নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল। [3]

[1] অর্থাৎ, মানুষ এবং জীব-জন্তুও সাদা, লাল, কালো এবং হলুদ রঙের হয়।

[2] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার এই সব ক্ষমতা এবং তাঁর কর্ম-নিপুণতা একমাত্র তারাই বুঝতে সক্ষম, যারা জ্ঞানী। অবশ্য এই জ্ঞানী বলতে কুরআন ও সুন্নাহ এবং আল্লাহ সম্পর্কীয় নানা রহস্যের জ্ঞানী। বলা বাহুল্য তাঁরা যত আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন, ততই আল্লাকে ভয় করেন। সুতরাং যার মধ্যে আল্লাহ-ভীতি নেই, জেনে রাখুন যে, সে সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। সুফ্য়ান সাওরী বলেন, আলেম তিন প্রকারের; প্রথমঃ আলেম বিল্লাহ অআলেম বিআমরিল্লাহ। এই প্রকার আলেম হলেন তাঁরা, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করেন এবং তাঁর হদ্দ্ ও ফারায়েযের জ্ঞান রাখেন। দ্বিতীয়ঃ আলেম বিল্লাহ, এঁরা আল্লাহকে ভয় তো করেন; কিন্তু তাঁর হদ্দ্ ও ফারায়েয সম্পর্কে অবগত নন। তৃতীয়ঃ আলেম বিআমরিল্লাহ, এঁরা আল্লাহর হদ্দ্ ও ফারায়েয সম্পর্কে তো অবগত; কিন্তু আল্লাহ-ভীতি থেকে বঞ্চিত। (ইবনে কাসীর)

[3] এটি আল্লাহকে ভয় করার একটি কারণ যে, তিনি অবাধ্যকে শাস্তি ও তওবাকারীর গুনাহ ক্ষমা করতে সক্ষম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:৩৪ وَ قَالُوا الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡۤ اَذۡهَبَ عَنَّا الۡحَزَنَ ؕ اِنَّ رَبَّنَا لَغَفُوۡرٌ شَكُوۡرُۨ ﴿ۙ۳۴﴾

আর তারা বলবে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আমাদের রব পরম ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী’। আল-বায়ান

আর তারা বলবে- যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। আমাদের প্রতিপালক অবশ্যই পরম ক্ষমাশীল, (ভাল কাজের) বড়ই মর্যাদাদানকারী। তাইসিরুল

এবং তারা বলবেঃ প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের দুঃখ দুর্দশা দূরীভূত করেছেন! আমাদের রাববতো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। মুজিবুর রহমান

And they will say, "Praise to Allah, who has removed from us [all] sorrow. Indeed, our Lord is Forgiving and Appreciative - Sahih International

৩৪. এবং তারা বলবে, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুৰ্দশা দূরীভূত করেছেন; নিশ্চয় আমাদের রব তো পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্ৰাহী;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) তারা বলবে, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক বড় ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৫ ফাতির
৩৫:৩৫ الَّذِیۡۤ اَحَلَّنَا دَارَ الۡمُقَامَۃِ مِنۡ فَضۡلِهٖ ۚ لَا یَمَسُّنَا فِیۡهَا نَصَبٌ وَّ لَا یَمَسُّنَا فِیۡهَا لُغُوۡبٌ ﴿۳۵﴾

‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোন কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না’। আল-বায়ান

যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন। সেখানে ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না, ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না। তাইসিরুল

যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দিয়েছেন, যেখানে ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না। এবং ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। মুজিবুর রহমান

He who has settled us in the home of duration out of His bounty. There touches us not in it any fatigue, and there touches us not in it weariness [of mind]." Sahih International

৩৫. যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন যেখানে কোন ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং কোন ক্লান্তিও স্পর্শ করে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) যিনি নিজ অনুগ্রহে, আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন; যেখানে আমাদেরকে কোন প্রকার ক্লেশ স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না কোন প্রকার ক্লান্তি।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩৯ আয-যুমার
৩৯:৫৩ قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۳﴾

বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। আল-বায়ান

বল- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

বলঃ (আমার এ কথা) হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ - আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

Say, "O My servants who have transgressed against themselves [by sinning], do not despair of the mercy of Allah. Indeed, Allah forgives all sins. Indeed, it is He who is the Forgiving, the Merciful." Sahih International

৫৩. বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায় হত্যা করেছিল এবং অনেক করেছিল। আরও কিছু লোক ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করল: আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম, কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এই যে, আমরা অনেক জঘন্য গোনাহ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় ৷ [বুখারী: ৪৮১০, মুসলিম: ১২২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [1]

[1] এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর মহা ক্ষমাশীলতার কথা বর্ণনা করেছেন। إسرَاف ‘ইসরাফ’ অর্থ পাপের আধিক্য ও তার প্রাচুর্য। ‘‘আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না’’ এর অর্থ, ঈমান আনার পূর্বে অথবা তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে যতই গুনাহ করে থাক, মানুষ যেন এই মনে না করে যে, আমি তো অনেক বড় পাপী, আমাকে আল্লাহ কিভাবে ক্ষমা করবেন? বরং সত্য হৃদয়ে যদি ঈমান আনে বা নিষ্ঠার সাথে যদি তওবা করে, তবে মহান আল্লাহ সমস্ত পাপকে মাফ করে দেবেন। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণিক ঘটনা থেকেও এই অর্থই সাব্যস্ত হয়। কিছু কাফের ও মুশরিক এমন ছিল, যারা প্রচুর হত্যা ও ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। এরা নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, আপনার দাওয়াত তো সঠিক, কিন্তু আমরা অনেক পাপের পাপী। যদি আমরা ঈমান আনি, তবে এই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে কি? এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা যুমার) তবে এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় খুব পাপ করে যাও।
তাঁর যাবতীয় বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদির ব্যাপারে কোনই পরোয়া করো না এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা ও নিয়ম-নীতি নিষ্ঠুরতার সাথে লঙ্ঘন করে যাও। এইভাবে তাঁর ক্রোধ ও প্রতিশোধকে আহবান জানিয়ে তাঁর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশা করা একেবারে বোকামি ও খামখেয়ালী। এটা হল নিম ফলের বীজ লাগিয়ে আঙ্গুর ফলের আশা রাখার মতই। এই ধরনের মানুষের স্মরণ রাখা উচিত যে, তিনি যেমন তাঁর বান্দাদের জন্য غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ তেমনি তিনি তাঁর অবাধ্যজনদের জন্য عَزِيْزٌ ذُو اْنْتِقَامٍ ও বটে।

তাই তো কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে এই উভয় দিককে এক সাথেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, ﴿نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ، وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ﴾ অর্থাৎ, আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা হিজর ৪৯-৫০ আয়াত) সম্ভবতঃ এটাই কারণ যে, এখানে আয়াতের আরম্ভ يَا عِبَادِيْ (হে আমার বান্দাগণ!) দিয়ে হয়েছে। যার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে অথবা সত্য হৃদয়ে তওবা করে প্রকৃত অর্থে সে তাঁর বান্দা হয়ে যাবে, তার পাপ যদি সমুদ্রের ফেনা বরাবরও হয়, তবুও তা মাফ হয়ে যাবে। তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। যেমন, হাদীসে একশত মানুষের খুনীর তওবার ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। (বুখারীঃ আম্বিয়া অধ্যায়, মুসলিমঃ তওবা অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:৫ تَكَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرۡنَ مِنۡ فَوۡقِهِنَّ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵﴾

উপর থেকে আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হয়; আর ফেরেশতারা তাদের রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে এবং পৃথিবীতে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; জেনে রেখ, আল্লাহ, তিনি তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আকাশ উপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় (সুমহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয়ভীতিতে) আর ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যারা পৃথিবীতে আছে তাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহ, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

আকাশমন্ডলী উর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং মালাইকা/ফেরেশতারা তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং মর্তবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

The heavens almost break from above them, and the angels exalt [Allah] with praise of their Lord and ask forgiveness for those on earth. Unquestionably, it is Allah who is the Forgiving, the Merciful. Sahih International

৫. আসমানসমূহ উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়, আর ফেরেশতাগণ তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যমীনে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রাখুন, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) আকাশমন্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়[1] এবং ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং পৃথিবীর বাসিন্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।[2] জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[3]

[1] আল্লাহর মহত্ত্ব ও তাঁর প্রতাপের কারণে।

[2] এ বিষয়টি সূরা মুমিনের ৭নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।

[3] তাঁর বন্ধুদের এবং তাঁর অনুগতদের অথবা তাঁর সকল বান্দাদের জন্য। কেননা, কাফের ও অবাধ্যজনদেরকে সত্বর পাকড়াও না করে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেওয়াটাও তাঁর এক প্রকার দয়া ও ক্ষমা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২ আশ-শূরা
৪২:২৩ ذٰلِكَ الَّذِیۡ یُبَشِّرُ اللّٰهُ عِبَادَهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ قُلۡ لَّاۤ اَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَیۡهِ اَجۡرًا اِلَّا الۡمَوَدَّۃَ فِی الۡقُرۡبٰی ؕ وَ مَنۡ یَّقۡتَرِفۡ حَسَنَۃً نَّزِدۡ لَهٗ فِیۡهَا حُسۡنًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ شَكُوۡرٌ ﴿۲۳﴾

এটা তাই, যার সুসংবাদ আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দেন- যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। বল, ‘আমি এর জন্য তোমাদের কাছে আত্মীয়তার সৌহার্দ ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান চাই না’। যে উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য তাতে কল্যাণ বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, বড়ই গুণগ্রাহী। আল-বায়ান

এটা হল তাই আল্লাহ যার সুসংবাদ দিয়েছেন তাঁর সে সব বান্দাহদের জন্য যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে। বল, এ কাজের জন্য আত্মীয়তার ভালবাসা ছাড়া তোমাদের কাছে কিছুই চাই না। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, ভাল কাজের বড়ই মর্যাদাদানকারী। তাইসিরুল

এই সুসংবাদই আল্লাহ দেন তাঁর বান্দাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে। বলঃ আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাইনা। যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করি। আল্লাহ ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। মুজিবুর রহমান

It is that of which Allah gives good tidings to His servants who believe and do righteous deeds. Say, [O Muhammad], "I do not ask you for this message any payment [but] only good will through kinship." And whoever commits a good deed - We will increase for him good therein. Indeed, Allah is Forgiving and Appreciative. Sahih International

২৩. এটা হলো তা, যার সুসংবাদ আল্লাহ দেন তার বান্দাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে। বলুন, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে আত্মীয়তার সৌহাদ্য ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান চাই না।(১) যে উত্তম কাজ করে আমরা তার জন্য এতে কল্যাণ। বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, গুণগ্ৰাহী।

(১) অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। তবে القربى এর ভালবাসা অবশ্যই প্রত্যাশা করি। এই শব্দটির ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের মধ্যে বেশ মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এক দল মুফাসসির এ শব্দটিকে আত্মীয়তা (আত্মীয়তার বন্ধন) অর্থে গ্ৰহণ করেছেন এবং আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেছেন এই যে, “আমি এ কাজের জন্য তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক বা বিনিময় চাই না। তবে তোমাদের ও আমাদের মাঝে আত্মীয়তার যে বন্ধন আছে তোমরা (কুরাইশরা) অন্তত সেদিকে লক্ষ্য রাখবে এতটুকু আমি অবশ্যই চাই। তোমাদের উচিত ছিল আমার কথা মেনে নেয়া। কিন্তু যদি তোমরা তা না মানো তাহলে গোটা আরবের মধ্যে সবার আগে তোমরাই আমার সাথে দুশমনী করতে বদ্ধপরিকর হবে তা অন্তত করো না। তোমাদের অধিকাংশ গোত্রে আমার আত্মীয়তা রয়েছে। আত্মীয়তার অধিকার ও আত্মীয় বাৎসল্যের প্রয়োজন তোমরা অস্বীকার কর না। অতএব, আমি তোমাদের শিক্ষা, প্রচার ও কর্ম সংশোধনের যে দায়িত্ব পালন করি, এর কোন পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে চাই না। তবে এতটুকু চাই যে, তোমরা আত্মীয়তার অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখ। মানা না মানা তোমাদের ইচ্ছা। কিন্তু শক্রতা প্রদর্শনে তো কমপক্ষে আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত।

বলাবাহুল্য, আত্মীয়তার অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা স্বয়ং তাদেরই কর্তব্য ছিল। একে কোন শিক্ষা ও প্রচারকার্যের পারিশ্রমিক বলে অভিহিত করা যায় না। অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে এটা চাই। এটা প্রকৃতপক্ষে কোন পারিশ্রমিক নয়। তোমরা একে পারিশ্রমিক মনে করলে ভুল হবে। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়কে পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন, আমি তোমাদের মঙ্গলার্থে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তার কোন বিনিময় তোমাদের কাছে চাই না। আমার প্রাপ্য আল্লাহ তা'আলাই দেবেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের সেরা নবী হয়ে স্বজাতির কাছে কেমন করে বিনিময় চাইবেন? ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরাইশদের যে গোত্রের সাথে সম্পর্ক রাখতেন, তার প্রত্যেকটি শাখা-পরিবারের সাথে তাঁর আত্মীয়তার জন্মগত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২২৯] তাই আল্লাহ বলেছেন, আপনি মুশরিকদের বলুন, দাওয়াতের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না। আমি চাই, তোমরা আত্মীয়তার খাতিরে আমাকে তোমাদের মধ্যে অবাধে থাকতে দাও এবং আমার হেফাযত কর। আরবের অন্যান্য লোক আমার হেফাযত ও সাহায্যে অগ্রণী হলে তোমাদের জন্যে তা গৌরবের বিষয় হবে না।

কোন কোন মুফাস্সির القربى শব্দটিকে নৈকট্য (নৈকট্য অর্জন) অর্থে গ্রহণ করেন। এবং আয়াতটির অর্থ করেছেন, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নৈকট্যের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া ছাড়া আমি তোমাদের কাছে। এ কাজের জন্য আর কোন বিনিময় চাই না। অর্থাৎ তোমরা সংশোধিত হয়ে যাও। শুধু এটাই আমার পুরস্কার। এ ব্যাখ্যা হাসান বাসারী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনের অন্য এক স্থানে বিষয়টি এ ভাষায় বলা হয়েছেঃ ‘এদের বলে দাও, এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। যার ইচ্ছা সে তার রবের পথ অনুসরণ করুক, (আমার পারিশ্রমিক শুধু এটাই)।’ [সূরা আল-ফুরকান: ৫৭] [দেখুন: তাবারী, ইবনে কাসীর, সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) আল্লাহ এ সুসংবাদই তাঁর দাসদেরকে দেন, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে। বল, ‘আমি আমার আহবানের জন্য তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।’[1] আর যে উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করি।[2] নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতীব গুণগ্রাহী।[3]

[1] কুরাইশ গোত্রগুলো এবং নবী (সাঃ)-এর মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আয়াতের অর্থ একেবারে পরিষ্কার যে, আমি ওয়ায-নসীহত এবং দ্বীনের দাওয়াতের কোন পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে চাই না। তবে একটি জিনিস অবশ্যই চাই যে, আমার ও তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তা আছে, তার খেয়াল কর। আমার দাওয়াতকে তোমরা মেনে নিচ্ছ না, তো নিয়ো না। এটা তোমাদের ইচ্ছার ব্যাপার। কিন্তু আমার অনিষ্ট করা হতে তো বিরত থাক। তোমরা আমার বন্ধু ও সহায়ক হতে না পারলেও আত্মীয়তার খাতিরে আমাকে কষ্ট দিয়ো না এবং আমার পথে বাধা হয়ো না, যাতে আমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করতে পারি। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর অর্থ করেছেন, আমার ও তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তা আছে, তা বজায় রাখ। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আশ্-শুরা) নবী (সাঃ)-এর বংশ অবশ্যই মর্যাদা-সম্মানের দিক দিয়ে দুনিয়ার সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত বংশ। এই বংশের প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা রাখা এবং তাঁদেরকে ইজ্জত ও সম্মান দান করা, ঈমানের অংশ। কেননা, নবী (সাঃ) বহু হাদীসে তাঁদেরকে সম্মান ও হিফাযত করার ব্যাপারে তাকীদ করেছেন। পক্ষান্তরে এই আয়াতের কোনই সম্পর্ক সে বিষয়ের সাথে নেই, যে বিষয়কে শিয়ারা প্রমাণ করতে চেয়েছে। তারা টেনে-হেঁচড়ে এই আয়াতকে নবী-বংশের প্রতি ভালবাসার সাথে জুড়ে দেয়। আর এই বংশের আওতায় কারা পড়ে তার ব্যক্তিত্বও তারা আলী, ফাতিমা এবং হাসান-হুসাইন (রাযিবয়াল্লাহ আনহুম) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। অনুরূপ তাঁদেরকে ভালবাসার অর্থ তাদের কাছে এই যে, তাঁদেরকে নিষ্পাপ এবং ইলাহী এখতিয়ারের মালিক মনে করতে হবে। অন্য দিকে মক্কার কাফেরদের কাছে তবলীগের বিনিময় স্বরূপ স্বীয় বংশীয় ভালবাসা প্রার্থনা অতীব বিস্ময়কর ব্যাপার; যা নবী (সাঃ)-এর সুউচ্চ মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নতর। তাঁর তবলীগকে গ্রহণ না করা সত্ত্বেও তাঁর দাবী কেবল এই ছিল যে, আত্মীয়তার ভিত্তিতে ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত রাখা হোক। তাছাড়া এই আয়াত ও সূরাটি হল মক্কী। তখন আলী ও ফাতিমা (রাযিআল্লাহু আনহুমা)র মধ্যে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ, তখনও পর্যন্ত এ বংশ অস্তিত্বে আসেনি, যার প্রতি মনগড়া ভালবাসা রাখার প্রমাণ এই আয়াত থেকে করা হয়।

[2] অর্থাৎ, নেকী ও সওয়াবে বৃদ্ধি দান করি। অথবা নেকীর পর তার প্রতিদানে আরো নেকী করার তাওফীক দান করি। যেমন, পাপের প্রতিফল স্বরূপ অনেকে আরো অধিক পাপে লিপ্ত হয়ে থাকে।

[3] এই জন্য তিনি গোপন করেন ও ক্ষমা করে দেন এবং বেশী বেশী করে নেকী দান করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »