সূরাঃ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء - আয়াতঃ ৫১
৪:৫১ اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ اُوۡتُوۡا نَصِیۡبًا مِّنَ الۡكِتٰبِ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡجِبۡتِ وَ الطَّاغُوۡتِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا هٰۤؤُلَآءِ اَهۡدٰی مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا سَبِیۡلًا ﴿۵۱﴾
الم تر الی الذین اوتوا نصیبا من الكتب یؤمنون بالجبت و الطاغوت و یقولون للذین كفروا هؤلآء اهدی من الذین امنوا سبیلا ﴿۵۱﴾

তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে? তারা জিবত* ও তাগূতের প্রতি ঈমান আনে এবং কাফিরদেরকে বলে, এরা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত। আল-বায়ান

যারা কিতাবের জ্ঞানের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে, সেই লোকদের প্রতি তুমি কি লক্ষ্য করনি, তারা অমূলক যাদু, প্রতিমা ও তাগূতের প্রতি বিশ্বাস করে এবং কাফিরদের সম্বন্ধে বলে যে তারা মু’মিনগণের তুলনায় অধিক সঠিক পথে রয়েছে। তাইসিরুল

তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদেরকে গ্রন্থের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে? তারা মূর্তি ও শাইতানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাফিরদেরকে বলে, মুসলিমদের অপেক্ষা তারাই অধিকতর সুপথগামী। মুজিবুর রহমান

Have you not seen those who were given a portion of the Scripture, who believe in superstition and false objects of worship and say about the disbelievers, "These are better guided than the believers as to the way"? Sahih International

* জিবত (الجبت) অর্থ: মূর্তি , প্রতিমা, যাদুকর, ভেলকিবাজ, যাদু, ভেলকি ইত্যাদি।

৫১. আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল, তারা জিব্‌ত ও তাগুতে বিশ্বাস করে?(১) তারা কাফেরদের সম্বন্ধে বলে, এদের পথই মুমিনদের চেয়ে প্রকৃষ্টতর।(২)

(১) আয়াতে ‘জ্বিবত’ ও ‘তাগূত’ শীর্ষক দুটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। শব্দ দুটির মর্ম সম্পর্কে তাফসীরকার মনীষীবৃন্দের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আবিসিনীয় ভাষায় জ্বিবত বলা হয় জাদুকরকে। আর তাগূত বলা হয় গণক বা জ্যোতিষীকে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, জ্বিবত অর্থ জাদু এবং তাগুত অর্থ শয়তান। মালেক ইবন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, আল্লাহ ব্যতীত যে সমস্ত জিনিসের উপাসনা করা হয়, সে সবই তাগূত বলে অভিহিত হয়। ইমাম কুরতুবী বলেন যে, মালেক ইবন আনাস এর উক্তিটিই অধিক পছন্দনীয়। তার কারণ, কুরআন থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক। [সূরা আন-নাহ্‌ল: ৩৬]

কিন্তু উল্লেখিত বিভিন্ন মতের মাঝে কোন বিরোধ নেই। কাজেই এর যে কোনটিই গ্রহণ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে ‘জ্বিবত' প্রতিমাকেই বোঝাত, পরে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য পূজ্য বস্তুতে এর প্রয়োগ হতে আরম্ভ করে। [রুহুল মা'আনী] তাগূতের অর্থ ও প্রকারভেদ এবং প্রধান প্রধান তাগুত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা আল-বাকারাহর ২৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে।

(২) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, ইয়াহুদীদের সর্দার হুইয়াই ইবন আখতাব ও কাব ইবন আশরাফ ওহুদ যুদ্ধের পর নিজেদের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে কুরাইশদের সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে মক্কায় এসে উপস্থিত হয়। ইয়াহুদী সর্দার কাব ইবন আশরাফ আবু সুফিয়ানের কাছে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন মক্কাবাসীরা কাব ইবন আশরাফকে বলল, তোমরা হলে একটি প্রতারক সম্প্রদায়। সত্য সত্যই যদি তোমরা তোমাদের এই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সত্য হয়ে থাক, তবে আমাদের এ দুটি মূর্তির (জ্বিবত ও তাগূতের) সামনে সিজদা কর।

সুতরাং সে কুরাইশদেরকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে তাই করল। তারপর কা'ব কুরাইশদেরকে বলল, তোমাদের মধ্য থেকে ত্রিশ জন এবং আমাদের মধ্য থেকে ত্ৰিশ জন লোক এগিয়ে আস, যাতে আমরা সবাই মিলে কা'বার প্রভূর সামনে দাঁড়িয়ে এ ওয়াদা করে নিতে পারি যে, আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। কা’বের এ প্রস্তাব কুরাইশরাও পছন্দ করল এবং সেভাবে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যজোট গঠন করল। অতঃপর আবু সুফিয়ান কা’বকে বলল, তোমরা হলে শিক্ষিত লোক; তোমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব রয়েছে, কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ মূর্খ।

সুতরাং তুমিই আমাদেরকে বল, প্রকৃতপক্ষে আমরা ন্যায়ের উপর রয়েছি, নাকি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ন্যায়ের উপর রয়েছেন? তখন কাব জিজ্ঞেস করল, তোমাদের দ্বীন কি? আবু সুফিয়ান উত্তরে বলল, আমরা হজের জন্য নিজেদের উট জবাই করি এবং সেগুলোর দুধ খাওয়াই, মেহমানদিগকে দাওয়াত করি, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখি এবং বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর)-এর তাওয়াফ করি, পক্ষান্তরে এর বিপরীতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পৈত্রিক দ্বীন পরিহার করেছেন, নিজের আত্মীয়-স্বজন থেকে পৃথক হয়ে গেছেন এবং সর্বোপরি তিনি আমাদের সনাতন দ্বীনের বিরুদ্ধে নিজের এক নতুন দ্বীন উপস্থাপন করেছেন। এসব কথা শোনার পর কা’ব ইবন আশরাফ বলল, তোমরাই ন্যায়ের উপর রয়েছ। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোমরাহ হয়ে গেছেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা আলোচ্য আয়াতটি নাযিল করে ওদের মিথ্যা ও প্রতারণার নিন্দা করেন। [দেখুনঃ সহীহ ইবন হিব্বানঃ ৬৫৭২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছিল? তারা জিব্‌ত (শয়তান, শিরক, যাদু প্রভৃতি) ও তাগূত (বাতিল উপাস্যে) বিশ্বাস করে এবং অবিশ্বাসী (কাফের)দের সম্বন্ধে বলে যে, এদের পথ বিশ্বাসী (মুমিন)দের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর। [1]

[1] এই আয়াতে ইয়াহুদীদের আর এক কর্মের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করা হচ্ছে। তারা কিতাবধারী হওয়া সত্ত্বেও ‘জিব্‌ত’ (শয়তান, মূর্তি, গণক অথবা যাদুকর) এবং ‘তাগূত’ (মিথ্যা উপাস্য)-এর উপর বিশ্বাস রাখে এবং মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের চেয়ে বেশী হিদায়াতপ্রাপ্ত মনে করে। উল্লিখিত সব অর্থেই ‘জিব্‌ত’ শব্দ ব্যবহার হয়। একটি হাদীসে এসেছে যে, ‘‘পাখি উড়িয়ে এবং রেখা টেনে শুভাশুভ নির্ণয় করা হল জিবতের (প্রতি ঈমানের) অন্তর্ভুক্ত।’’ (আবূ দাউদ) অর্থাৎ, এগুলো সব শয়তানী কাজ। ইয়াহুদীদের মধ্যে এর প্রচলন ছিল ব্যাপক। ‘তাগূত’এর একটি অর্থ শয়তানও করা হয়েছে। আসলে বাতিল মা’বুদের পূজা করার অর্থই হল শয়তানের আনুগত্য করা। কাজেই শয়তান অবশ্যই তাগূতের মধ্যে শামিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান