৩৪ সূরাঃ সাবা | Saba | سورة سبإ - আয়াতঃ ২৮
৩৪:২৮ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۸﴾
و ما ارسلنک الا کافۃ للناس بشیرا و نذیرا و لکن اکثر الناس لا یعلمون ۲۸

আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না, আল-বায়ান

আমি তোমাকে সমগ্র মানবমন্ডলীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। তাইসিরুল

আমিতো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা। মুজিবুর রহমান

And We have not sent you except comprehensively to mankind as a bringer of good tidings and a warner. But most of the people do not know. Sahih International

২৮. আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।(১); কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।

(১) আলোচ্য আয়াতে রেসালাতের বিষয় বর্ণিত হয়েছে এবং বিশেষভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আমাদের রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বের সমগ্র জাতিসমূহের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। [তাবারী, ইবন কাসীর]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেবল তার নিজের দেশ বা যুগের জন্য নয় বরং কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্ৰ মানব জাতির জন্য পাঠানো হয়েছে, একথা কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছেঃ “আর আমার প্রতি এ কুরআন অহীর সাহায্যে পাঠানো হয়েছে যাতে এর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে এবং যার কাছে এ বাণী পৌঁছে যায় তাকেই সতর্ক করে দেই।” [সূরা আল আন’আম: ১৯৭] “হে নবী! বলে দিন, হে মানবজাতি, আমি হচ্ছি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল।” [সূরা আল-আরাফ: ১৫৮] “আর হে নবী! আমি পাঠিয়েছি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যই রহমত হিসেবে।” [সূরা আল আম্বিয়া: ১০৭] “বড়ই বরকতসম্পন্ন তিনি যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান নাযিল করেছেন যাতে তিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারীতে পরিণত হন।” [সূরা আল-ফুরকান: ১]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এই একই বক্তব্য বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে পেশ করেছেন। যেমন, “আমাকে সাদা কালো সবার কাছে পাঠানো হয়েছে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩০৪, ৪/৪১৬] “আমাকে ব্যাপকভাবে সমস্ত মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছে অথচ আমার আগে যে নবীই অতিক্রান্ত হয়েছেন তাঁকে নির্দিষ্ট জাতির কাছে পাঠানো হতো।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/২২২] “প্ৰথমে প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তার জাতির কাছে পাঠানো হতো আর আমাকে সমগ্ৰ মানব জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে। [বুখারী: ৩৩৫, মুসলিম: ৫২১] “আমার আগমন ও কিয়ামতের অবস্থান এরূপ, একথা বলতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দু'টি আঙুল উঠান।” [বুখারী: ৪৯৩৬, মুসলিম: ৮৬৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। [1]

[1] এই আয়াতে প্রথমতঃ আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-এর বিশ্বজনীন রসূল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁকে সকল মানুষের হিদায়াতকারী ও পথপ্রদর্শকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এই যে, নবী (সাঃ)-এর কামনা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেকেই ঈমান থেকে বঞ্চিত থাকবে। অন্য স্থানেও উক্ত দুই বিষয়ের কথা তিনি বর্ণনা করেছেন। যেমন, নবী (সাঃ)-এর সর্বজনীন রসূল হওয়ার ব্যাপারে বলেছেন, (قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ) অর্থাৎ, বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর (প্রেরিত) রসূল। (সূরা আ’রাফ ১৫৮ আয়াত) (تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا) অর্থাৎ, কত প্রাচুর্যময় তিনি যিনি তাঁর দাসের প্রতি ফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (সূরা ফুরকান ১ আয়াত)

এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমাকে এমন পাঁচটি বস্তু প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। এক মাসের পথ চলার মত দূরত্বেও আমার ভীতি দুশমনদের মনে ঢুকিয়ে দিয়ে আমার সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য সারা পৃথিবীকে মসজিদ ও পবিত্র করে দেওয়া হয়েছে; অতএব আমার উম্মত যেখানেই থাকুক নামাযের সময় হয়ে গেলে সেখানেই সে যেন নামায পড়ে নেয়। আমার জন্য (যুদ্ধলব্ধ) গনীমতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে অন্য কারোর জন্য বৈধ ছিল না। আমাকে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর অন্য সকল নবীকে নির্দিষ্ট গোত্রের নিকট পাঠানো হয়েছিল, আর আমাকে সকল মানুষের জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে।’’ (বুখারীঃ কিতাবুত তায়াম্মুম, মুসলিমঃ কিতাবুল মাসাজিদ) অন্য এক হাদীসে বলেছেন, আমি লাল ও কালো সকলের জন্য প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিমঃ কিতাবুল মাসাজিদ) লাল ও কালো থেকে অনেকে জ্বিন ও মানুষ উদ্দেশ্য নিয়েছেন, আবার অনেকে আরবী ও অনারবী উদ্দেশ্য নিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, উভয় অর্থই সঠিক। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ অধিকাংশ মানুষের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার কথাও বর্ণনা করেছেন। (وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তুমি যতই আগ্রহী হও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়। (সূরা ইউসুফ ১০৩ আয়াত) (وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ) অর্থাৎ, যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা আনআম ১১৬ আয়াত) মোটকথা বিপথগামীদের সংখ্যাই বেশি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান