৩৩ সূরাঃ আল-আহযাব | Al-Ahzab | سورة الأحزاب - আয়াতঃ ৪০
৩৩:৪০ مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا ﴿۴۰﴾
ما کان محمد ابا احد من رجالکم و لکن رسول الله و خاتم النبیٖن و کان الله بکل شیء علیما ۴۰

মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী।* আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান

মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা। তাইসিরুল

মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা। মুজিবুর রহমান

Muhammad is not the father of [any] one of your men, but [he is] the Messenger of Allah and last of the prophets. And ever is Allah, of all things, Knowing. Sahih International

* মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী; তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না-এ বিষয়টি আল-কুরআনের এই আয়াত দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

৪০. মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন(১); বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সর্বকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।

(১) উল্লেখিত আয়াতে সেসব লোকের ধারণা অপনোদন করা হয়েছে যারা বর্বর যুগের প্রথা অনুযায়ী যায়েদ বিন হারেসাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তান বলে মনে করতো এবং তিনি যায়নবকে তালাক দেয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তার বিয়ে সংঘটিত হওয়ায় তার প্রতি পুত্রবধুকে বিয়ে করেছেন বলে কটাক্ষ করত। এ ভ্রান্ত ধারণা অপনোদনের জন্য এটুকু বলাই যথেষ্ট ছিল যে, যায়েদের পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন। বরং তার পিতা হারেসা। কিন্তু এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ তাকীদ দেয়াচ্ছলে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন’। যে ব্যক্তি সন্তান-সন্তুতিদের মধ্যে কোন পুরুষ নেই, তার প্রতি এরূপ কটাক্ষ করা কিভাবে যুক্তিসংগত হতে পারে যে, তার পুত্র রয়েছে এবং তার পরিত্যক্ত স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুত্রবধূ বলে তার জন্য হারাম হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী খাদিজার গর্ভস্থ তিন পুত্র-সন্তান কাসেম, তাইয়্যেব ও তাহের এবং মারিয়ার গর্ভস্থ এক সন্তান ইবরাহীম—মোট চার পুত্র-সন্তান ছিলেন। কিন্তু এরা সবাই শৈশবাবস্থায় মারা যান। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর; বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়,[1] বরং সে আল্লাহর রসূল ও শেষ নবী।[2] আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।

[1] এই জন্য তিনি যায়েদ বিন হারেসা (রাঃ)-এরও পিতা নন, যার ফলে তাঁকে মন্তব্যের নিশানা বানানো যাবে যে, তিনি আপন পুত্রবধূকে কেন বিয়ে করলেন? বরং শুধু যায়েদ কেন তিনি কোন পুরুষেরই পিতা নন। কারণ যায়েদ তো হারেসার পুত্র ছিলেন। নবী (সাঃ) তো তাঁকে শুধু পোষ্যপুত্র বানিয়েছিলেন এবং জাহেলী নিয়মে তাঁকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলা হত মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তিনি নবী (সাঃ)-এর পুত্র ছিলেন না। যার ফলে (اُدْعُوْهُمْ لآبآئِهم) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর তাঁকে যায়েদ বিন হারেসা নামেই ডাকা হত। এ ছাড়া খাদীজার গর্ভে নবী (সাঃ)-এর তিন ছেলে; ক্বাসেম, ত্বাহের ও ত্বাইয়েব জন্ম নিয়েছিলেন। আর মারিয়া কিবত্বিয়ার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন ইবরাহীম। কিন্তু সকলেই শিশু অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। তাঁরা কেউ পুরুষত্বের বয়স পাননি। সুতরাং নবী (সাঃ)-এর পুত্রদের কেউ পুরুষ হননি; যাঁর তিনি পিতা ছিলেন। (ইবনে কাসীর)

[2] خَاتَمٌ মোহরকে বলা হয়। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা হয়। (যেমন পত্রের শেষে মোহর মারা হয়।) অর্থাৎ নবী (সাঃ) থেকে নবুঅত ও রিসালাতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পর যে কেউ নবী হওয়ার দাবী করবে, সে নবী নয়; বরং মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলে পরিগণিত হবে। উক্ত বিষয়ে হাদীস গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাতে সকল উম্মত একমত। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ হবে, যা সহীহ ও সূত্রবহুল প্রসিদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। তবে তিনি নবী হয়ে আসবেন না; বরং শেষ নবী (সাঃ)-এর উম্মত হয়ে আসবেন। যার ফলে তাঁর অবতরণ হওয়া ‘খাতমে নবুঅত’-এর আকীদার পরিপন্থী নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান