৩৩ সূরাঃ আল-আহযাব | Al-Ahzab | سورة الأحزاب - আয়াতঃ ২৯
৩৩:২৯ وَ اِنۡ کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ فَاِنَّ اللّٰهَ اَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنٰتِ مِنۡکُنَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۲۹﴾
و ان کنتن تردن الله و رسولهٗ و الدار الاخرۃ فان الله اعد للمحسنت منکن اجرا عظیما ۲۹

‘আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকালীন নিবাস কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই মহান প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন’। আল-বায়ান

আর তোমরা যদি আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকালের গৃহ কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। তাইসিরুল

আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাত কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ কর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। মুজিবুর রহমান

But if you should desire Allah and His Messenger and the home of the Hereafter - then indeed, Allah has prepared for the doers of good among you a great reward." Sahih International

২৯. আর যদি তোমরা কামনা কর আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতের আবাস, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীলা আল্লাহ তাদের জন্য মহাপ্রতিদান প্ৰস্তুত রেখেছেন।(১)

(১) এ আয়াতে সকল পুণ্যবতী স্ত্রীগণকে অধিকার প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বর্তমান দারিদ্র্যপীড়িত চরম আর্থিক সঙ্কটপূৰ্ণ অবস্থা বরণ করে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক অক্ষুন্ন রেখে জীবন যাপন করবেন অথবা তালাকের মাধ্যমে তার থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। প্রথমাবস্থায় অন্যান্য স্ত্রীলোকের তুলনায় পুরস্কার এবং আখেরাতে স্বতন্ত্র ও সুউচ্চ মর্যাদাসমূহের অধিকারী হবেন। আর দ্বিতীয় অবস্থা, অর্থাৎ তালাক গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতেও তাদেরকে দুনিয়ার অপরাপর লোকের ন্যায় বিশেষ জটিলতা ও অগ্ৰীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না; বরং সুন্নত মোতাবেক যুগল বস্ত্ৰ প্রভৃতি প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দেয়া হবে। ইসলামী পরিভাষায় একে বলা হয় “তাখঈর”। অর্থাৎ স্ত্রীকে তার স্বামীর সাথে থাকার বা আলাদা হয়ে যাবার মধ্য থেকে যে কোন একটিকে বাছাই করে নেবার ফায়সালা করার ইখতিয়ার দান করা। [ফাতহুল কাদীর; বাগাবী]

হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন অধিকার প্রদানের এ আয়াত নাযিল হয়, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এটি প্রকাশ ও প্রচারের সূচনা করেন। আয়াত শোনানোর পূর্বে বলেন যে, আমি তোমাকে একটি কথা বলব-উত্তরটা কিন্তু তাড়াহুড়া করে দেবে না। বরং তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শের পর দেবে। আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমাকে আমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে মতামত প্রকাশ করা থেকে যে বারণ করেছিলেন, তা ছিল আমার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক অপার অনুগ্রহ। কেননা, তার অটুট বিশ্বাস ছিল যে, আমার পিতা-মাতা কখনো আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনের পরামর্শ দেবেন না। এ আয়াত শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আরয করলাম যে, এ ব্যাপারে আমার পিতা-মাতার পরামর্শ গ্রহণের জন্য যেতে পারি কি? আমি তো আল্লাহ্ তা'আলা, তাঁর রাসূল ও আখেরাতকে বরণ করে নিচ্ছি। আমার পরে অন্যান্য সকল পুণ্যবতী স্ত্রীগণকে কুরআনের এ নির্দেশ শোনানো হলো। আমার মত সবাই একই মত ব্যক্ত করলেন; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দাম্পত্য সম্পর্কের মোকাবেলায় ইহলৌকিক প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কেউ গ্রহণ করলেন না। [মুসলিম: ১৪৭৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) পক্ষান্তরে তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং পরকাল কামনা করলে, তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীলা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’ [1]

[1] বিভিন্ন দেশ জয়লাভ করার পর যখন মুসলিমদের অবস্থা পূর্বের তুলনায় কিছুটা সচ্ছল হল, তখন মুহাজির ও আনসারদের স্ত্রীদের দেখাদেখি মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণও খোরপোষের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবী জানালেন। নবী (সাঃ) যেহেতু বিলাসহীন জীবন-যাত্রা পছন্দ করতেন, সেহেতু স্ত্রীদের এই দাবীতে বড় দুঃখিত হলেন এবং এক মাসের জন্য স্ত্রীদের নিকট থেকে আলাদা হয়ে একাকী বাস করলেন।
অবশেষে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন। উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সর্বপ্রথম তিনি আয়েশা (রাঃ) -কে উক্ত আয়াত শুনিয়ে তাঁকে তাঁর সংসারে থাকা ও না থাকার ব্যাপারে এখতিয়ার দিলেন এবং বললেন, নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে পিতা-মাতার পরামর্শ নিয়ে যা করার করবে। আয়েশা (রাঃ)  বললেন, আপনার বিষয়ে পরামর্শ করব তা কি করে হয়? বরং আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে পছন্দ করি। অন্য সকল স্ত্রীগণও এই একই মত ব্যক্ত করলেন এবং কেউ নবী (সাঃ)-কে ত্যাগ করে পার্থিব প্রাচুর্য ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিলেন না। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা আহযাব) সেই সময় নবী (সাঃ)-এর সংসারে নয়জন স্ত্রী ছিলেন; পাঁচজন ছিলেন কুরাইশ বংশের। আয়েশা, হাফস্বা, উম্মে হাবীবা, সাওদা ও উম্মে সালামা (রাঃ)  এবং এ ছাড়া বাকি চার জন হলেন; সাফিয়্যা, মাইমুনা, যায়নাব ও জুওয়াইরিয়া (রাঃ) । অনেকে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে পৃথক হয়ে যাওয়ার এখতিয়ারকে ত্বালাক বলে গণ্য করেন। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। সঠিক মাসআলা এই যে, এখতিয়ার দেওয়ার পর যদি স্ত্রী পৃথক হয়ে যাওয়াকে বেছে নেয়, তাহলে অবশ্যই ত্বালাক হয়ে যাবে। (আর তা হবে ত্বালাকে রাজয়ী; ত্বালাকে বায়েনাহ নয়, যেমন কিছু উলামার মত।) আর যদি স্ত্রী পৃথক হয়ে যাওয়াকে বেছে না নেয়, তাহলে ত্বালাক হবে না। যেমন নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ পৃথক না হয়ে তাঁর সাথে থাকাকে বেছে নিয়েছিলেন। অথচ এই বেছে নেওয়াকে ত্বালাক গণ্য করা হয়নি। (বুখারীঃ ত্বালাক অধ্যায়, মুসলিম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান